Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ – ডেল কার্নেগি

    ডেল কার্নেগি এক পাতা গল্প286 Mins Read0

    ০৬. এ রকম না করলে ঝামেলায় পড়বেন

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
    এ রকম না করলে ঝামেলায় পড়বেন

    ১৮৯৮ সালে নিউইয়র্কের রকল্যান্ড কাউন্টিতে একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। একটি শিশু মারা যাওয়ায় ওই দিন পড়শীরা তার শোকযাত্রার ব্যবস্থা করেছিল। জিম ফারলি নামে একজন তার ঘোড়াকে জলপান করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বরফ পড়ায় রাস্তাটা পিছল হয়ে ছিল আবহাওয়াও বেশ ঠাণ্ডা, ঘোড়াটাকে বেশ। কদিন বাইরে আনা হয়নি। তাই বাইরে আনতেই সে আনন্দে পা ছুঁড়তে আরম্ভ করতেই তার আঘাতে জিম ফারলি মারা গেলেন। অতএব ছোট্ট স্টোনি পয়েন্ট গ্রামে দুটো শবযাত্রার ব্যবস্থা করতে হয়।

    জিম ফারলি মৃত্যুর সময় তার বিধবা স্ত্রী আর তিনটে ছেলে এবং কয়েক শ ডলারের বীমা পত্র রেখে যান।

    তাঁর বড় ছেলে জিমের বয়স তখন দশ, তাকে কাজ করতে যেতে হলো একটা ইট তৈরির কারখানায়। ওর কাজ ছিল বালি মাখা থেকে আরম্ভ করে, ইট সাজানো এমন কি রোদ্দুরে শুকিয়ে নেওয়াও। জিম ছেলেটি লেখাপড়ার কোন সুযোগই পায়নি তা সত্তেও ওর আইরিশ সুলভ ভদ্র ব্যবহার তাকে মানুষের কাছে প্রিয় পাত্র তুলতো, সবাই ওকে পছন্দ করত। ও তাই রাজনীতিতে যোগ দেয়। বেশ ক’বছর কাটার পর ওর একটা অপার্থিব ক্ষমতা জন্মালো, মানুষের নাম মনে রাখা।

    তিনি জীবনে কোনদিন উচ্চ বিদ্যালয়ে চৌকাঠ পার হতে পারেন নি তবু ওঁর ছেচল্লিশ বছর বয়স হওয়ার আগেই চারটে কলেজ তাঁকে ডিগ্রী প্রদান করে সম্মানিত করে, আর তিনি ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোস্ট মাষ্টার জেনারেল হন।

    আমি একবার জিম ফারলির সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁকে তাঁর সাফল্যের গোপন রহস্যের কথা জিজ্ঞাসা করি। তিনি জবাব দেন ‘কঠিন পরিশ্রম’। আমি তাকে বলি, ‘ঠাট্টা করবেন না, সত্যি কথাটা বলুন না।’

    তিনি তখন আমাকে প্রশ্ন করেন তার সাফল্যের কারণ সম্বন্ধে আমার ধারণা কি? আমি জবাব দিই, ‘আমার মনে হয় আপনি দু’শ মানুষকে তাদের প্রথম নামে চেনেন।‘

    তিনি জবাব দেন : না, সব ভুল। আমি পঞ্চাশ হাজার মানুষকে তাদের প্রথম নাম ধরে ডাকতে পারি।’

    এ ব্যাপারে সন্দেহ করবেন না; জিম ফারলির ওই ক্ষমতার জন্যেই ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট হোয়াইট হাউসে ঢুকতে পেরেছিলেন।

    জিম ফারলি গোড়ায় যখন এক জিপসাম কোম্পানীর হয়ে কাজে ঘুরছিলেন আর স্টোনি পয়েন্টে যখন কেরানীর কাজ করতেন তার কাজই ছিল নাম মনে রাখার কাজ করা।

    গোড়ায় ব্যাপারটা বেশ সহজই ছিল। যখনই তার সঙ্গে নতুন কারও দেখা হতো তিনি তাঁর পুরো নাম, বাড়িতে কে কে আছেন, কাজ কর্ম কি করেন, রাজনৈতিক মতবাদ কি সব জেনে নিতেন। এসব তিনি মনে একেবারে গেঁথে রাখতেন, তারপর লোকটির সঙ্গে যখনই দেখা হোক, তা সে এক বছর পরে হলেও তিনি তাঁর পিঠ চাপড়ে জিজ্ঞাসা করতেন স্ত্রী ছেলে মেয়েরা কেমন আছে। বাগানে ফুলগাছগুলো কেমন ফুল দিচ্ছে ইত্যাদি। এতে যে তাকে সবাই পছন্দ করতো সন্দেহ নেই।

    রুজভেল্টের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের প্রচার আরম্ভ হওয়ার ঢের আগে থেকেই জিম ফারলি প্রত্যেক দিন প্রায় শ খানেক চিঠি লিখতে আরম্ভ করেন পশ্চিম আর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যের জনসাধারণের কাছে। তারপর একটা ট্রেনে চড়ে উনিশ দিনের মধ্যে কুড়িটা রাজ্য আর বারো হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছিলেন। মাঝখানে চড়েছেন কখনও বা বগিগাড়ি, রেল, মোটর গাড়ি ইত্যাদি। কোন শহরে নেমে বন্ধুদের সঙ্গে প্রাতরাশ, চা, বা নৈশভোজ সারার ফাঁকে তাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলে যেতেন। তারপর আবার রওয়ানা হতেন তার ভ্রমণে।

    পূব দিকে হাজির হয়ে তিনি তাঁর একজন বন্ধুকে চিঠি লিখে যাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এসেছেন তাদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠালেন। শেষ তালিকায় দেখা গেল হাজার হাজার নাম। তা সত্ত্বেও ফারলি প্রত্যেকের কাছে ব্যক্তিগত চিঠি পাঠালেন। এইসব চিঠি তিনি আরম্ভ করতেন ‘প্রিয় বিল’ বা ‘প্রিয় জো’ বলে শেষে নাম লিখনেত ‘তোমার জিম’ বলে।

    জীবনের গোড়াতেই জিম ফাররি আবিষ্কার করেন যে সাধারণ মানুষ পৃথিবীর সমস্ত নামের চেয়ে নিজের নামকেই বেশি ভালোবাসে। ওই নাম স্মরণে রেখে সহজে সেটা বলে ডাকলেই বুঝতে হবে তাকে আপনি সবচেয়ে বেশি সম্মান দিয়েছেন। কিন্তু একবার সেটা ভুলে গেলে বা ভুল করলে, মনে রাখবেন বিরাট একটা গণ্ডগোলে পড়ে গেলেন আপনি। উদাহরণ হিসেবে জানাই যে একবার প্যারী শহরে আমি একটা বক্তৃতার ব্যবস্থা করে ওখানকার সব আমেরিকানদের নিমন্ত্রণ করি। চিঠিগুলো টাইপ করেছিল সামান্য ইংরেজী জানা ফারসী টাইপিস্টরা, স্বাভাবিকভাবেই তারা নানা গণ্ডগোল করে ফেলে। একজন, প্যারীর কোন আমেরিকান ব্যাঙ্কের ম্যানেজার তার নাম ভুল করার জন্য আমায় বেশ বকুনি দিয়েই চিঠি লেখেন।

    অ্যান্ড্রু কার্নেগীর বিরাট যে সাফল্য তার কারণ জানেন?

    তাকে ইস্পাতের রাজা বলা হতো, তা হলেও ইস্পাত তৈরি ব্যাপারটার তিনি প্রায় কিছুই জানতেন না। তার হয়ে কাজ করতো শয়ে শয়ে কর্মচারী–আর তারা ইস্পাত সম্বন্ধে তার চেয়ে ঢের বেশি জানতো।

    কিন্তু তিনি যা জানতেন সেটা হলো মানুষকে কি করে ব্যবহার করতে হয়–আর এতেই তিনি ধনী হয়ে ওঠেন। জীবনের গোড়াতেই কোন প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে আর নেতৃত্বদানে তিনি অদ্ভুত ক্ষমতার পরিচয় রাখেন। মাত্র দশ বছর বয়সেই তিনি বুঝতে পারেন মানুষ তাদের নিজের নাম কতটা ভালোবাসে, এই আবিষ্কারটাই তিনি কাজে লাগান সহযোগিতা পেতে। একটা উদহারণ দিই : অল্প বয়সে কার্নেগী যখন স্কটল্যাণ্ডে যান তিনি একটা খরগোশ ধরেন–এটা মা খরগোশ। কিছুদিন পরেই সেটা থেকে একগাদা খরগোশ হয়ে গেলো তার–কিন্তু তাদের কি খাওয়ানো যায় কিছুই তো নেই। তখন তার মাথায় দারুণ একটা মতলব খেলে গেল। আশে পাশের ছেলেদের ডেকে তিনি বললেন, তারা যদি জঙ্গল থেকে কচি ফল আর ডালপালা আনতে পারে তাহলে বাচ্চা খরগোশের নাম তাদের নামেই রাখা হবে।

    মতলবটায় ম্যাজিকের মতই কাজ হল। কার্নেগী ব্যাপারটা কোনদিন ভোলেন নি।

    বহু বছর পরে তিনি একই মনস্তত্বের কৌশল কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা করেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় তার পেনসিলভেনিয়া রেল রোডের জন্য ইস্পাত বিক্রির চেষ্টা। সে সময় ওই রেলপথের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জে. এডগার টমসন। অতএব অ্যান্ড্রু কার্নেগী একটা বিরাট ইস্পাতের কারখানা গড়লেন পিটসবার্গে। তার নাম দিলেন এডগার টমসন স্টীল ওয়ার্ক।

    একটা ধাঁধা দিচ্ছি। দেখুন বলতে পারেন কিনা। পেনসিলভেনিয়া রেল লাইনের জন্য যখন ইস্পাতের দরকার হল জে. এডগার টমসন কোথা থেকে তা কিনেছিলেন জানেন? … সীয়ার্স বা রোবাডের কাছে থেকে? মোটেই না, আপনার ভুল হচ্ছে। আবার ভাবুন।

    .

    কার্নেগি আর জর্জ পুলম্যান যখন রেল গাড়ির ঘুমের কামরার ব্যবসাতে লড়াই চালাচ্ছিলেন, ইস্পাতের রাজা তখনও সেই খরগোশের কাহিনী ভোলেন নি।

    অ্যান্ড্রু কার্নেগীর সেন্ট্রাল ট্রান্সপোর্টেশান কোম্পানীর সঙ্গে পুলম্যানের কোম্পানীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। তারা দুজনেই বারবার দাম কমিয়ে এমন অবস্থায় এসে পৌঁছলেন যে লাভের কোন আশা ছিল না। দুজনে নিউইয়র্কে পৌঁছলে তাঁদের হঠাৎ দেখা হলে সেন্ট নিকোলাস হোটেলে। কার্নেগী তখন বললেন ‘শুভসন্ধ্যা, মিঃ পুলম্যান, আমরা কি দুজন মস্ত বোকার মতই ব্যবহার করছি না?’

    ‘আপনি কি বলতে চান?’ পুলম্যান জানতে চাইলেন।

    এবার কার্নেগী তার মনের কথাটা বললেন–দুটো প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ একীকরণ। বেশ ফলাও করেই তিনি একসঙ্গে কাজ করার সুবিধা আর বিরুদ্ধাচারণের অসুবিধার কথাটা বুঝিয়ে বললেন। বেশ মন দিয়ে শুনে গেলেন পুলম্যান, তবে তিনি পুরোপুরি মেনে নিতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রশ্ন কররেন : ‘কোম্পানীর নাম কি হবে?’ কার্নেগী তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন : ‘কেন, অবশ্যই পুলম্যান প্যালেস কার কোম্পানী।‘

    পুলম্যানের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ‘আমার ঘরে আসুন’, তিনি আহ্বান জানালেন, ‘কথা বলা যাক।‘ ওই কথাবার্তার পরিণতিতে তৈরী হয়েছিল শিল্প জগতের এক ইতিহাস।

    বন্ধু বান্ধব আর ব্যবসার সহযোগিদের নাম মনে রাখা আর তাকে সম্মান জানানোর নীতিই ছিল অ্যান্ড্রু কার্নেগীর নেতৃত্ব দানের রহস্য। তাঁর গর্ব ছিল যে তিনি তাঁর বহু শ্রমিককে তাদের প্রথম নাম ধরে ডাকতে পারতেন। তিনি অহঙ্কার করেই বলতেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে যতদিন দায়িত্বে ছিলেন ততদিন তাঁর সুন্দর ইস্পাত কারখানায় কখনও ধর্মঘট হয়নি।

    পেডেরুস্কি আবার তার কৃষ্ণকায় পাঁচককে সব সময় ‘মি. কপার’ বলে সম্বোধন করতেন। অন্ততঃ পনেরো বার নানা অনুষ্ঠানে পেডেরুস্কি আমেরিকা ভ্রমণ করে শ্রোতাদের নানাভাবে মনোরঞ্জন করেছেন আর প্রতিবারই তিনি একটা গাড়িতে তাঁর পাঁচককে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। প্রতি ক্ষেত্রেই সে মাঝরাতে পেডেরুস্কির খাবার তৈরি করে দিয়েছে। আমেরিকানদের মত পেডেরুস্কি কখনই তার পাঁচককে ‘জর্জ’ বলে সম্বোধন করেন নি, প্রত্যেকবার ডেকেছেন ‘মিঃ কপার’ বলে আর মিঃ কপারও সেটা ভালোবাসতো।

    মানুষ তার নিজের নাম নিয়ে এমনই গর্ব বোধ করে যে সেটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য তার চেষ্টার অন্ত নেই। অমন যে শক্ত ধাচের মানুষ পি.টি. বারনাম, তিনিও হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন যেহেতু তাঁর নাম বহন করার জন্য তাঁর কোন ছেলে ছিল না। নিজের নামকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি তার নাতি মি. এইচ সীলি’কে পঁচিশ হাজার ডলার দেন শুধু তার নামে নাম জড়িয়ে নিজেকে ‘বারনাম সীলি’ বলে প্রচার করতে।

    দু’শ বছর আগে ধনী ব্যক্তিরা তাদের নামে বই উৎসর্গ করার জন্য লেখকদের টাকা দিতেন।

    পাঠাগার আর যাদুঘরগুলোয় যে দামী সব সংগ্রহ রয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় মানুষকেই। বিশ্বের বহু পাঠাগারেই অনেকে বই দান করে নাম কিনতে আর তা রক্ষা করতে চেয়েছেন। নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরী বা মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামে এরকম সংগ্রহ আছে। তাছাড়া প্রতিটি গির্জার জানালার কাঁচেও বহু দাতা মানুষের নাম খোদাই করা থাকে।

    বহু লোক নাম মনে রাখতে পারছেন না এই সকল কারণেই যে তারা তাদের শোনা নামগুলো কষ্ট করে মনের পর্দায় চিরকালীন করে গেঁথে রাখার চেষ্টা করেন না। ওজর হল তাঁরা বড় ব্যস্ত মানুষ।

    কিন্তু যত ব্যস্তই তাঁরা হোন নিশ্চয়ই ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের মত ব্যস্ত নন। রুজভেল্ট বেশ সময় ব্যয় করেই এমন কি কোন মেকানিকের সংস্পর্শে এলে তারও নাম মনে মনে রাখতেন।

    একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ক্রাইসলার প্রতিষ্ঠান একবার মিঃ রুজভেল্টের জন্য বিশেষ ধরনের একখানা গাড়ি তৈরি করে। সে গাড়ি পৌঁছে দিতে ডব্লিউ. এফ. চেম্বারলেনের আর এক মেকানিক হোয়াইট হাউসে আসেন। আমার সামনেই রয়েছে মিঃ চেম্বারলেনের লেখা একখানা চিঠি–তিনি এটায় তাঁর সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি লেখেন : ‘আমি প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে গাড়িটা চালানো সম্বন্ধে সব বুঝিয়ে দিতে থাকি, কিন্তু তিনি আমাকে শিখিয়ে দেন মানুষকে কেমন করে চালাতে হয়।’

    ‘আমি হোয়াইট হাউসে যেতেই, মি. চেম্বারলেন লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট চমৎকার খুশি হয়ে দেখা করলেন।‘ আমায় তিনি নাম ধরে ডাকলেন, আমায় বেশ সহজ হতে দিলেন। আমার আরও ভালো লাগলো এটাই দেখে যে আমি তাকে যা দেখাচ্ছিলাম সেটা তিনি বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখতে লাগলেন। গাড়িটা এমনভাবে বানানো হয়েছিল যে শুধু এক হাত দিয়েই চালানো যায়। গাড়িটা দেখতে বেশ লোকও জমায়েত হয়। তিনি বললেন : ‘ভারি চমৎকার গাড়ি। শুধু বোতাম টিপলেই চালানো যায়। আমার কাছে এটা দারুণ–কি করে এমন হয় জানি না, আমার এখনই চালিয়ে ঘুরে আসতে ইচ্ছে করছে।

    রুজভেল্টের বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয় স্বজন গাড়িটার প্রশংসা করতে তিনি বললেন : ‘মি. চেম্বারলেন, এটা তৈরি করার জন্য আপনারা যে সময় আর পরিশ্রম করেছেন আমি তার প্রশংসা করছি। এরপর তিনি গাড়ির সব যন্ত্রপাতি খুঁটিনাটির প্রশংসা করলেন। মিসেস রুজভেল্ট আর নিজের সেক্রেটারি মিস পার্কিনসকেও দেখালেন। তারপর পুরনো কৃষ্ণাঙ্গ চাকর জর্জকে বললেন : ‘জর্জ, তুমি সুটকেসের দায়িত্ব নেবে।’

    ‘শেষ পর্যন্ত চালানোর কৌশল শেখা হলে তিনি বললেন: ‘মি. চেম্বারলেন, আমি ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডকে ত্রিশ মিনিট বসিয়ে রেখেছি। এবার তাই কাজে যাই, কেমন?’

    ‘আমি হোয়াইট হাউসে একজন মেকানিককে নিয়ে যাই। রুজভেল্টের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। প্রেসিডেন্ট তাঁর সঙ্গে আগে কথা বলেন নি, শুধু নামটাই শুনেছিলেন। মেকানিক একটু লাজুক মানুষ। বিদায় নেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট মেকানিককে তার নাম ধরে ডেকে করমর্দন করে ওয়াশিংটনে আসার জন্য ধন্যবাদ দিলেন। এই ধন্যবাদ দেবার মধ্যে কৃত্রিমতা ছিল না। সত্যিই তা ছিল আন্তরিকতা মাখা।’

    ‘নিউইয়র্ক ফেরার পর আমি প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সই করা একটা আলোকচিত্র পাই তার সঙ্গে আমার কাজের জন ধন্যবাদও। এসব করার সময় তিনি কোথায় পেলেন এটাই আমার কাছে এক রহস্য।’

    ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট জানতেন মানুষের সবচেয়ে ভালো ধারণা তৈরির সরল প্রয়োজনীয় আর গুরুত্বপূর্ণ উপায়টি হলো, মানুষের নাম মনে রাখা আর তাদের নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে দেওয়া–তবুও কজনেই বা সেটা করে?

    বেশির ভাগ সময়েই কোন অচেনা মানুষের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটলে আমরা কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর যখন বিদায় নিই তার নাম আর মনে রাখি না।

    কোন রাজনৈতিক নেতা প্রথমেই যা শেখেন তা হলো : ‘কোন ভোটদাতার নাম মনে রাখা বিচক্ষণ নেতার কাজ। সেটা ভুলে যাওয়া মানে নিজে ডুবে যাওয়া।’

    আর এই নাম মনে রাখার দক্ষতা রাজনীতির মত ব্যবসা আর সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

    নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ভাইপো ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন অহঙ্কার করে বলতেন যে, রাজকীয় কাজকর্মের ব্যস্ততা সত্ত্বেও যাদের সঙ্গে দেখা হতো তাদের নাম ভুলতেন না।

    এ কাজে তার কৌশল কি রকম? খুবই সরল। নামটা পরিষ্কার না শুনতে পেলে তিনি বলতেন : ‘খুব দুঃখিত, নামটা ভালো করে শুনিনি। তারপর নামটা একটু অসাধারণ হলে তিনি বলতেন : নামের বানানটা কি রকম একটু বলবেন?’

    কথাবার্তা চলার ফাঁকে তিনি বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করতেন, যাতে মনে সেটা গেঁথে রাখা যায়। সঙ্গে মনে রাখতেন লোকটির বাচনভঙ্গী, আকৃতি সব কিছু।

    লোকটি নামী কেউ হলে নেপোলিয়ন আরও একটু খাটতেন। রাজামশাই একা হলেও একখণ্ড কাগজে নামটা লিখে ফেলতেন তারপর বার কয়েক চোখ বুলিয়ে মনে গেঁথে নিয়ে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলতেন। এইভাবেই তিনি লোকটির পরিপূর্ণ একটা ছবি এঁকে ফেলতেন।

    এসব করতে সময় লাগে, তবে ভালো ব্যবহার করতে গেলে, এমার্সন বলেছেন, ‘ছোটখাটো স্বার্থত্যাগ করতেই হয়।’

    অতএব আপনি যদি চান লোকে আপনাকে পছন্দ করুক, তাহলে তিন নম্বর নিয়ম হলো : মনে রাখবেন কোন মানুষের কাছে তার নিজের নামই হলো সব ভাষাতেই সব চেয়ে মিষ্টি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবক্তৃতা শিখবেন কীভাবে – ডেল কার্নেগি
    Next Article বিক্রয় ও জনসংযোগ প্রতিনিধি হবেন কীভাবে – ডেল কার্নেগি

    Related Articles

    ডেল কার্নেগি

    সুখীজীবন ও কাজের সন্ধানে – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    বিক্রয় ও জনসংযোগ প্রতিনিধি হবেন কীভাবে – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    বক্তৃতা শিখবেন কীভাবে – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    স্ত্রী যখন বান্ধবী – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    বরণীয় যারা স্মরণীয় যারা – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.