Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ – ডেল কার্নেগি

    ডেল কার্নেগি এক পাতা গল্প286 Mins Read0

    ০৭. ভালো বক্তা হওয়া যায় কী করে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ
    ভালো বক্তা হওয়া যায় কী করে

    সম্প্রতি আমি এক ব্রিজ খেলায় আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি ব্রীজ খেলি না, সেখানে স্বর্ণকেশী একটি মেয়েও ছিল যে ব্রিজ খেলে না। সে জানতো লাওয়েল টমাস রেডিওয় যোগ দেবার আগে আমি তার ম্যানেজার ছিলাম। সে আরও জানতো আমি তার সঙ্গে ইউরোপ ভালোভাবে ঘুরেছি আর তার বক্তৃতাও বানিয়ে দিয়েছি। মেয়েটি তাই বললো : ‘ওহ, মিঃ কার্নেগী, আপনার দেখা সব জায়গা আর সুন্দর দৃশ্যগুলোর কথা আমাকে বলুন।’

    ‘আমরা সোফায় বসার পর সে জানালো স্বামীর সঙ্গে ও ইদানীং আফ্রিকা ভ্রমণ করে এসেছে। ‘আফ্রিকা!’ আমি প্রশংসা করে বলে উঠলাম। কী চমৎকার! আমি নিজেও আফ্রিকায় বেড়াতে চেয়েছি, কিন্তু একবার কেবল আলজিয়ার্সে চব্বিশ ঘন্টা থাকা ছাড়া আর যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। তোমরা

    সেখানে বড় শিকারের এলাকায় গিয়েছো নাকি? গেছো! বাঃ! দারুণ! কি সৌভাগ্য। তোমাকে দেখে হিংসে হচ্ছে আমার। তোমার আফ্রিকার গল্প শোনাও।

    পঁয়তাল্লিশ মিনিট মেয়েটি ওর কাহিনী শুনিয়ে গেল। সে আর একবারও জানতে চাইলো না আমি কোথায় গিয়েছি বা দেখেছি। সে আমার বেড়ানোর গল্প আর শুনতে চায়নি। সে যা চাইছিলো তা হলো একজন আগ্রহী শ্রোতা। যাতে সে কোথায় গিয়েছিল শুনিয়ে আত্মগর্বে ফুলে উঠতে পারে।

    মেয়েটি কি অস্বাভাবিক কিছু? মোটেই না। অনেকেই এই রকম।

    যেমন একটা উদাহরণ দিচ্ছি, সম্প্রতি আমি নিউইয়র্কের প্রকাশক কে. ডব্লিউ গ্রীণবর্ণের দেওয়া এক ডিনার পার্টিতে একজন বিখ্যাত বোটানিস্টের সঙ্গে সাক্ষাত করি। কোন বোটানিস্টের সঙ্গে আগে আমার আলাপ হয়নি। তাই তাকে আমার দারুণ মনে হলো। আমি চেয়ারের প্রায় হাতলে কোন রকমে বসেই তার কথা গিলছিলাম। তিনি নানা রকম বিষয়ে তাঁর কথা শোনালেন। গাঁজা, সাধারণ আলু, ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি আশ্চর্য সব কথা শোনালেন। আমার নিজের একটা ছোট্ট বাগান আছে–তিনি আমায় সে সম্বন্ধে নানা সমস্যা মেটানোর উপদেশ দিলেন।

    যা বলছি, আমরা ডিনার পার্টিতে ছিলাম। সেখানে আরও বহু নিমন্ত্রিত নিশ্চয়ই ছিলেন। কিন্তু আমি চিরাচরিত ভদ্রতা ত্যাগ করে ওই উদ্ভিদতত্ববিদের সঙ্গে কথা বলে কাটাই।

    মাঝরাত এসে গেল। সকলের কাছে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। উদ্ভিদতত্ত্ববিদ এবার আমার নিমন্ত্রণকারীকে আমার সম্পর্কে প্রশংসাচ্ছলে অনেক কথা বললেন। আমি নাকি দারুণ উদ্দীপনায় ‘ভরপুর’, আমি ‘এই’, ‘তাই’ ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত তিনি বললেন কথাবার্তায় আমি চমৎকার।

    আমি কথাবার্তায় চমৎকার? আমি? সে কি। ভদ্রলোকের সঙ্গে বোধ হয় দুএকটার বেশি কথাই বলিনি-বলার কিছু বোধ হয় ছিলও না কারণ উদ্ভিদতত্ত্ব সম্বন্ধে আমার কোনই জ্ঞান নেই। তবে আমি একটা কাজই করেছি–তাহলো গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনেছি। তার কারণ আমার আগ্রহ বাঁধ মানে নি। তিনি তা অনুভব করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি তাতে খুশি হন। এ ধরনের শোনার ব্যাপারই হলো সম্মান জানাবার সেরা পথ! জ্যাক উডফোর্ড তার ‘স্ট্রেঞ্জার্স ইন লাভ’ বইতে লিখেছেন খুব কম লোকই গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনে। আমি আরও কিছুটা বেশিই করি–আমি কথার মাঝখানে তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলাম।

    আমি তাঁকে বলেছিলাম তার কথায় আমার দারুণ উপকার হলো–আর সত্যিই তাই। আমি এও তাকে বলি, তাঁর মতো জ্ঞান থাকলে ভালো হতো। এ কথাও বলেছিলাম তার সঙ্গে মাঠে মাঠে ঘুরতে পারলে মজা হতো। তার সঙ্গে আবার দেখা করতেও চেয়েছিলাম।

    এই কারণেই তিনি আমার কথাবার্তায় দক্ষ বলেন–আসলে আমি একজন ভালো শ্রোতা, আর তাকে কথা বলায় উৎসাহিত করেছি মাত্র।

    ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সফল সাক্ষাতের কাজের রহস্যটা কি? এ বিষয়ে চার্লস্ এলিয়ট বলেছেন, ‘সকল ব্যবসায়িক সাক্ষাতের ব্যাপারে কোন রহস্য নেই …. যিনি কথা বলছেন তার কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনাই গুরুত্বপূর্ণ। এর চেয়ে স্তাবকতা আর হয় না।’

    .

    এ তো জানা কথা, তাই না? হার্ভার্ডে চার বছর পড়ে সেটা জানতে হয় না। অথচ আমরা জানি যে আপনারা জানেন ব্যবসায়ীরা প্রচুর খরচ করে বড় জায়গা নেন, পয়সা খরচ করে তাদের দোকান সাজানোর ব্যবস্থা করেন। তারপর যে সব কেরাণী নিয়োগ করেন তারা কিন্তু ভালো শ্রোতা না হওয়ায় ক্রেতাদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেয়। তারা ক্রেতাদের বিরক্তি উৎপাদন করার ফলে দোকান থেকে তাদের প্রায় পালাতে হয়।

    জে. সি. উটনের কথাটাই ধরুন। তিনি আমার ক্লাসে এটা বলেন। একবার কোন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে তিনি একটা সুট কেনেন। সেটা খারাপ হয়ে যায়-রঙ উঠে গিয়ে সেটা কালারটাকে নষ্ট করে দেয়।

    সুটটা নিয়ে গিয়ে তিনি বিক্রেতা লোকটিকে দেখান। লোকটি কোন কথাই শোনে না বরং নিজের কথাই বলতে চায়। তিনি অভিযোগ জানাবার আগেই সে বলতে থাকে, আমরা এরকম সুট হাজার হাজার বিক্রি করেছি, আর এরকম অভিযোগ এই প্রথম পেলাম।

    লোকটার ব্যবহার জঘন্য হয়ে উঠলো। অপমানজনক ভঙ্গিতে সে বলল, আপনি মিথ্যা কথা বলছেন। আমাদের উপর জোর করে এসব চাপাবার চেষ্টা করছেন। আমাদের ঠকাতে চান আপনি।

    কথাবার্তার ফাঁকে আরও একজন এসে যোগ দিল তার সঙ্গে। সে বলল, ‘এতে কিছু করার নেই। এরকম দামে এর থেকে ভালো সুট পাওয়া যায় না।’

    ইতিমধ্যে আমারও মাথা গরম হয়ে উঠেছিল। উটন কাহিনীটি বলতে গিয়ে বলেছিলেন, প্রথমতঃ বিক্রেতা আমার সততা সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলে, দ্বিতীয় জন মন্তব্য করে আমি সস্তায় মাল কিনেছি। আমি রাগে ফেটে পড়তে চাইছিলাম। আমি যখন বলতে চাইছিলাম ওরা ওদের সুট নিয়ে চুলোয় যাক, ঠিক তখনই দোকানের মালিক এসে পড়লেন। নিজের ব্যবসা তিনি ভালোই জানতেন। তিনি আমায় একদম বদলে দিলেন। একজন ক্রুদ্ধ ক্রেতাকে তিনি সন্তুষ্ট মানুষে বদলে দিলেন। তিনি এটা কিভাবে করলেন জানেন? তিনটি উপায়ে :

    প্রথমতঃ, তিনি কোন কথা না বলে আমার কথা গোড়া থেকে শুনে গেলেন।

    দ্বিতীয়তঃ, আমার কথা শেষ হতেই বিক্রেতারা যখন আবার কথা বলার চেষ্টা করতে চাইছিল তিনি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের সঙ্গে তর্ক আরম্ভ করলেন। তিনি শুধু যে ওদের দেখালেন আমার কালারটা সত্যিই নষ্ট হয়ে গেছে তাই নয়, বরং বললেন সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট করা যায় না এমন কিছু যেন দোকান থেকে বিক্রি করা না হয়।

    তৃতীয়তঃ, তিনি স্বীকার করলেন গোলমালের ব্যাপারটা তার জানান ছিল না। তারপর তিনি সরলভাবেই বললেন, এই সুট সম্পর্কে কি করতে বলছেন বলুন। যা বলবেন তাই করবো।

    ক’মিনিট আগেই তাদের চুলোর সুট নিয়ে গোল্লায় যেতে বলব ভাবছিলাম, কিন্তু এখন বললাম, ‘আমি আপনার পরামর্শ চাইছি। আমি জানতে চাই এ অবস্থাটা সাময়িক কিনা এবং কিছু করা সম্ভব কিনা।‘

    তিনি পরামর্শ দিলেন সুটটা আরও এক সপ্তাহ ব্যবহার করতে। তাতে যদি দোষ দূর না হয় তাহলে সেটা নিয়ে আসতে, তিনি সেটা বদলে দেবেন। আপনার সুসবিধের জন্য সত্যিই দুঃখিত।

    আমি খুশি মনেই দোকান ছেড়ে এলাম। সপ্তাহের শেষে সুটটা ঠিকই হয়ে গেল। আর ওই দোকান সম্পর্কে আমার বিশ্বাসও বেড়ে গেল।

    এত আশ্চর্যের কিছু নেই যে ভদ্রলোক দোকানের কর্তা–আর ওই দুজন বিক্রেতা সারা জীবন কেরাণীই থেকে যাবে। না, তাদের সম্ভবতঃ প্যাক করার দপ্তরে পাঠানো হবে যাতে তারা কোন ক্রেতার সংস্পর্শে না আসে।

    সমস্ত সময়েই আঘাতবিলাসী বা সমালোচকও প্রায়ই মনোযোগী শ্রোতা পেলে বেশ নরম হয়ে প্রায়ই মনোযোগ এই কাতার বিষ বাইরে পড়েন–এমন শ্রোতা যে চুপচাপ শুনে যাওয়ার মুহূর্তে গোখরো সাপের মত মানুষেও তার বিষ বাইরে ঢেলে ফেলে। নিউইয়র্ক টেলিফোন কোম্পানীর একটা উদাহরণ দিই। তারা একজন গ্রাহককে নিয়ে সাংঘাতিক বিব্রত হয়। ভদ্রলোক গালমন্দ দিয়ে রাগের বশে টেলিফোনের তার আর খুঁটি উপড়ে ফেলতে চান। তিনি কিছু কল’ এর চার্জ মিথ্যা বলে দিতেও অস্বীকার করেন। খবরের কাগজেও তিনি লেখালেখি করেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনেও তিনি অজস্র অভিযোগ করেন আর টেলিফোন কোম্পানীর বিরুদ্ধে মামলাও করেন।

    শেষ পর্যন্ত কোম্পানি তাদের অত্যন্ত দক্ষ একজন কুশলী লোককে মারাত্মক ওই গ্রাহককে ঠাণ্ডা করতে পাঠান। এই লোকটি ওই খিটখিটে গ্রাহকের সব কথা মন দিয়ে শোনেন। লোকটি ঠাণ্ডা মাথায় সব গালাগাল শুনে গেলেন আর মাঝে মাঝে গ্রাহক যে ঠিক বলছেন তাই জানালেন।

    ভদ্রলোক তিন ঘন্টা ধরে গালাগাল দিয়েছিলেন আর আমিও তা শুনে যাই, আমার ক্লাসে টেলিফোনের সেই লোকটি জানিয়ে ছিলেন। এরপরেও তিনি গ্রাহকের কাছে আবার যান-বারবার চার বার। চার বারের পর লোকটি একটা টেলিফোন গ্রাহক স্বার্থরক্ষা সমিতির সদস্যও হন। তিনি এখনও তার সদস্য আছেন–অবশ্য আরও একজন সদস্য আছেন তিনি সেই মিঃ।

    আমি ভদ্রলোকের কথা ধৈর্য ধরেই শুনেছিলাম বলে লোকটি জানিয়েছিলেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার সঙ্গে আমি একমত হই। ভদ্রলোক শেষ পর্যন্ত প্রায় বন্ধু হয়ে ওঠেন। প্রথমবার তাঁর অভিযোগের কথা উঠল না, দ্বিতীয় বারেও না। চতুর্থবারে মামলাটাই বদলে গেল–তিনি বিলের সব টাকাই মিটিয়ে দিলেন। আর এই প্রথম টেলিফোন কোম্পানির ইতিহাসে তিনি মামলা প্রত্যাহার করে নেন।

    সন্দেহ নেই মি.নিজেকে একজন গ্রাহকের স্বার্থরক্ষাকারী নিঃসঙ্গ যোদ্ধা বলেই ভাবতে চাইছিলেন। বাস্তবে কিন্তু তিনি চাইছিলেন কিছুটা গুরুত্ব। প্রথমে গালাগাল দিয়ে সেটা পান তিনি, তারপর কোম্পানির এক প্রতিনিধি এলে তার কাল্পনিক অভিযোগ বাতাসে মিলিয়ে যায়। এমন তিনি আশাই করেন নি।

    একদিন সকালে বেশ ক’বছর আগে ডেটমার উলেন কোম্পানির জুলিয়ান এফ. ডেটমারের অফিসে ঝড়ের বেগে ঢুকলেন এক ক্রুদ্ধ ক্রেতা।

    লোকটির কাছে আমাদের প্রতিষ্ঠান পনেরো ডলার পেত, মি. ডেটমার পরে আমায় বলেছিলেন। ক্রেতা সেটা অস্বীকার করলো, তবে আমরা জানতাম ওরই ভুল হচ্ছে। তাই আমরা তার কাছে সেটা দাবি করি। ভদ্রলোক রাগে একেবারে শিকাগোয় এসে হাজির হলেন–শুধু আমাকে জানাতে যে টাকা তিনি কখনই দেবেন না, আর আমার দোকান থেকে এক ডলারেরও জিনিস কিনবেন না।

    আমি বেশ ধৈর্য নিয়েই ভদ্রলোকের সব কথা শুনে গেলাম। বাধা দেবার কিছু ইচ্ছে যে হয়নি তাও নয়–তবে তাতে খারাপ হবে ভেবেই চেপে গেলাম। তাকে তাই কথা বলে যেতে দিলাম। তারপর সে একটু কথা শোনার মত অবস্থায় এলে বেশ শান্ত স্বরে আমি বললাম : ‘আপনি যে শিকাগোয় এসে আমাকে এ কথাটা বলেছেন তার জন্য ধন্যবাদ। আমার খুব উপকার করেছেন আপনি। কারণ আমার প্রতিষ্ঠান আপনার বিরক্তি উৎপাদন করে থাকলে আরও অনেকেরই হয়তো করবে। সেটা খুব খারাপ হতো। আপনার বলার চেয়েও আমার শোনার আগ্রহ বেশি বিশ্বাস করুন।

    এরকম কিছু তিনি একেবারেই আশা করেন নি। আমার ধারণা তিনি একটু হতাশই হলেন, কারণ শিকাগোয় এসে দু চার কথা তিনি শোনাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার বদলে পেলেন ধন্যবাদ। আমি তাকে বললাম, ‘ওই পনেরো ডলার আমরা বাতিল করে দেবো কারণ তিনি খুবই সাবধানী মানুষ। তাকে মাত্র একটাই হিসাব রাখতে হয় তাই ভুল হবার সম্ভাবনা কম–যেখানে আমাদের রাখতে হয় হাজার হাজার।‘

    আমি তাকে আরও বললাম, ‘তাঁর মনের ভাব কি রকম হয়েছে, তার জায়গায় থাকলে আমারও তাই হতো। যেহেতু তিনি আমাদের কাছ থেকে আর কিছু কিনবেন না, আমি বললাম অন্য কয়েকটা উলের দোকানের নাম আমি বলতে পারি।’

    আগে উনি শিকাগো এলে আমরা একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারতাম, আজও তাই তাকে আমন্ত্রণ জানালাম। তিনি গররাজী হলেন। এরপর আবার অফিসে ফিরে এলে তিনি বেশ বড় বায়না দিলেন। বাড়ি ফেরার সময় তাঁর মন বেশ প্রফুল্ল হয়ে রইলো। আমার ভদ্রতার বদলে তিনিও ভদ্র হতে চাইছিলেন। বাড়ি ফিরে কাগজপত্রের মধ্যে তিনি সেই পনেরো ডলারের বিলটা খুঁজে পেয়ে আমাদের কাছে মার্জনা চেয়ে টাকাটা পাঠিয়েও দিলেন।

    পরে তাঁর স্ত্রীর একটি ছেলে হলে তার নাম রাখলেন ‘ডেটমার। এরপর থেকে তিনি আজীবন আমার বন্ধু ছিলেন আর এরও বাইশ বছর পর তাঁর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছেন।

    বেশ কয়েক বছর আগে এক গরীব ডাচ্ ছেলে স্কুলের পর একটা রুটির দোকানের কাঁচ সাফাই করতো, তার জুটতো মাত্র সপ্তাহে পনেরো সেন্ট। ওরা এমনই গরীব ছিল যে প্রতিদিন কয়লার গাড়ি চলে যাওয়ার পর একটা ঝুড়ি নিয়ে, রাস্তা থেকে কয়লার টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিত। ছেলেটি অর্থাৎ যার নাম এডওয়ার্ড বব জীবনে ছ’বছরের বেশি স্কুলে যায়নি, অথচ সেই আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল সাময়িক পত্রিকার সম্পাদক হতে পেরেছিল। কিভাবে তার পক্ষে এটা সম্ভব হয়? সেটা বেশ বিরাট গল্প–কিন্তু তার শুরু করার ব্যাপারটা অল্প কথায় বলা যেতে পারে। যে নীতি তিনি নিয়েছিলেন সেটাই এই পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে।

    .

    মাত্র তের বছর বয়সে তাঁকে স্কুলের পাঠ সাঙ্গ করতে হয়। তিনি একটা অফিসে প্রতি সপ্তাহে দু’ডলার পঁচিশ সেন্ট মাইনের অফিস-বয়ের কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাতে তার পড়াশোনার আগ্রহ চলে যায়নি। বরং তিনি নিজেই পড়াশোনার ব্যবস্থা করলেন। গাড়ী ভাড়া আর মধ্যাহ্নভোজের খরচ বাঁচিয়ে তিনি আমেরিকান মনীষীদের একসেট জীবনী বা এনসাইক্লোপেডিয়া কিনে নিলেন। তার পরেই তিনি অদ্ভুত একটা কাজ করলেন–বিখ্যাত সব মানুষের জীবনী পড়ে তাদের কাছে চিঠি লিখে জীবনের আর ছোটবেলার আজানা কথা জানতে চাইলেন। তিনি বিখ্যাতদের তাদের সম্বন্ধে কথা বলায় উৎসাহিত করলেন। তিনি চিঠি লিখলেন জেনারেল জেমস এ গারফিল্ডকে, যিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি গারফিল্ডের কাছে জানতে চান এটা সত্য কিনা যে ছেলেবেলায় তিনি কোন খালের নৌকোর গুণ টানতেন কিনা। গারফিল্ড উত্তরও দেন। একটা বিশেষ যুদ্ধের কথা জানতে চেয়ে তিনি জেনারেল গ্র্যান্টকে চিঠি লেখেন। গ্র্যান্ট তাঁকে একটা মানচিত্র এঁকে পাঠিয়ে ওই চৌদ্দ বছরের ছেলেটিকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান আর সারা সন্ধ্যা কথা বলেন কাটান।

    তিনি এমার্সনকেও চিঠি লিখে কথা বলায় উদ্বুদ্ধ করেন। এই সামান্য পশ্চিমী ছেলেটি এক এক করে আমেরিকার এই সব বিখ্যাত মানুষকে চিঠি লেখেন–এমার্সন, ফিলিপ্স ব্রুকস, অলিভার, ওয়েণ্ডেল হোমস, লঙফেলো, মিসেস আব্রাহাম লিঙ্কন, লুইসা মেরি অ্যালকট, জেনারেল শেরম্যান আর জেভারসন ডেভিস। তিনি শুধু যে এইসব নামী মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগই করেন তাই নয়, বরং তাকে প্রায়ই দেখা যেত তিনি ওইসব নামী মানুষদের বাড়ীতে ছুটি কাটাতে ব্যস্ত। তাদের অভিজ্ঞতা ওঁকে নানা ভাবেই উদ্বুদ্ধ করেছিল। এই সব নামী স্ত্রী পুরুষ তার জীবনকে প্রায় বৈপ্লবিক অবস্থায় এনে দেয়। মনে রাখবেন এই সব নীতি প্রয়োগের কথাই এই পরিচ্ছেদে আমরা আলোচনা করছি।

    পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান সাক্ষাৎকারী মানুষটির নাম হলো আইজ্যাক মার্কোসন। তাঁর বক্তব্য হলো বহু মানুষ অপ্রীতিকর হন কারণ তাঁরা মন দিয়ে কথা শুনতে চান না। মার্কোসন বলেছেন : তাঁরা নিজেদের কথাতেই এমন ব্যস্ত থাকেন যে চোখ কান খোলা রাখতে ভুলে যান … খ্যাতিমান মানুষেরা আমাকে বলেছেন যে ভালো কথা বলা লোকের চেয়ে তারা ভালো শ্রোতাই পছন্দ করেন। অথচ ভালো শ্রোতার সংখ্যা অন্যসব ভালো কাজের মানুষের মতই কম।’

    শুধু যে নামী মানুষরাই কেবল ভালো শ্রোতা খোঁজেন তাই নয়, সাধারণ মানুষই তাই। রীডার্স ডাইজেস্টে একবার লেখা হয় : বহুলোক ডাক্তার ডাকেন শুধু কথা শোনাবার জন্যই।

    গৃহযুদ্ধের অন্ধকার দিনগুলোয় লিঙ্কন একবার ইলিনয়ের স্প্রিংফিল্ডে তাঁর এক পুরনো বন্ধুকে চিঠি লিখে ওয়াশিংটনে আসতে বলেন। লিঙ্কন লিখেছিলেন কোন একটা সমস্যা নিয়ে তিনি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে চান। পুরনো সেই বন্ধু হোয়াইট হাউসে এসে পৌঁছলে লিঙ্কন তার সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ক্রীতদাসদের মুক্তিদানের ব্যাপারে কথা বলে গেলেন। সেটা ছিল একটা ঘোষণাপত্র জারি করা। লিঙ্কন-এর পক্ষে আর বিপক্ষে বলা সব রকম বক্তব্য আর খবরের কাগজের বক্তব্যও উল্লেখ করলেন। ক্রীতদাসদের মুক্তিদান করার ব্যাপারে কেউ তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিল আবার কেউ কেউ নিন্দা করতেও ছাড়েনি। কথা শেষ হওয়ার পর লিঙ্কন বন্ধুর করমর্দন করে ইলিনয়ে ফেরত পাঠালেন, আর আশ্চর্য ব্যাপারে একবারও তার মতামত চাইলেন না। সারাক্ষণ লিঙ্কন একাই কথা বলে গেলেন। এতে তার মন ঠিক হয়ে গেল। বন্ধুটি বলেছিলেন ‘কথা শেষ হওয়ার পর তাঁকে সহজ মনে হচ্ছিল’, আসলে লিঙ্কন মোটেই কোন পরামর্শ চাননি–তিনি কেবল চাইছিলেন ধৈর্যশীল বন্ধুর মত কোন শ্রোতা যার কাছে কথা বলে তিনি মনের ভার লাঘব করতে পারেন। ঝামেলায় পড়লে আমরা সবাই তাই চাই-আর বিরক্ত ক্রেতারাও তাই চান। এরকমই চায় অসন্তুষ্ট কর্মচারিরা বা আহত বন্ধুও।

    আপনি যদি চান লোকে আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করুক বা আপনার পিছনে টিটকিরি দিক বা নিন্দে করুক তাহলে এই রকম করে দেখতে পারেন : কারও কথা বেশিক্ষণ শুনবেন না। খালি নিজের সম্পর্কে। কথা বলে যান। আপনি যদি বোঝেন অন্যজন কি বলতে যাচ্ছে তাকে শেষ করতে দেবেন না। সে হয়তো আপনার মত চালাক নয়, তাহলে তাকে আজেবাজে বকতে দেবেন কেন? তার কথার মাঝখানে তাই বাধা দিতে চেষ্টা করুন।

    এ ধরনের কাউকে চেনেন নাকি? দুর্ভাগ্যবশত আমি চিনি, আর তাদের কারও কারও নাম আবার সামাজিক উচ্চ স্তরেও আছে।

    এরা সবাই নেহাত বিরক্তি উদ্রেককারী মানুষ-বিরক্তিসর্বস্ব মানুষ, যারা খালি নিজেদের অহংভাব নিয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করে স্ফীত হয়ে থাকে।

    যে লোক কেবল নিজের কথা বলে সে শুধু নিজের কথাই ভাবে। ড. নিকোলাস মারে বাটলার, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন, “যে লোক কেবল নিজের কথাই ভাবে সে নেহাতই অশিক্ষিত। যত শিক্ষাই তার থাক না কেন সে শিক্ষিত হতে পারে না।

    অতএব আপনি যদি ভালো কথক হতে চান তাহলে ভালো শ্রোতা হওয়ার চেষ্টা করুন। মিসেস চার্লস্ নর্দান কী বলেন : ‘নিজেকে ভালো লাগাতে গেলে অন্যের প্রতি আগ্রহ দেখান।’ এমন প্রশ্ন করুন অন্যে যার উত্তর দিতে চাইবে। তাকে তার নিজের কাজ সম্বন্ধে বলতে উৎসাহিত করুন।

    মনে রাখবেন যার সঙ্গে কথা বলছেন সে নিজের সম্পর্কে একশ ভাগ আগ্রহী, তার নিজের চাহিদা আর সমস্যাকে যে আপনার চেয়ে ঢের বেশি মূল্য দেয়। চীন দেশে দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ মরলেও তার চেয়ে নিজের দাঁতের ব্যথায় সে বেশি নজর দেয়। আফ্রিকার চল্লিশটা ভূমিকম্পের চেয়ে সে তার ঘাড়ের ফোড়া নিয়ে বেশি চিন্তিত হবে। অতএব এবার কথাবার্তা বলার আগে এটা স্মরণ রাখবেন।

    অতএব অন্যেরা আপনাকে পছন্দ করুক তাই যদি চান তাহলে ৪ নম্বর নিয়ম হল : ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন। অন্যদের নিজেদের কথা বলায় উৎসাহ দিন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবক্তৃতা শিখবেন কীভাবে – ডেল কার্নেগি
    Next Article বিক্রয় ও জনসংযোগ প্রতিনিধি হবেন কীভাবে – ডেল কার্নেগি

    Related Articles

    ডেল কার্নেগি

    সুখীজীবন ও কাজের সন্ধানে – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    বিক্রয় ও জনসংযোগ প্রতিনিধি হবেন কীভাবে – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    বক্তৃতা শিখবেন কীভাবে – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    স্ত্রী যখন বান্ধবী – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    ডেল কার্নেগি

    বরণীয় যারা স্মরণীয় যারা – ডেল কার্নেগি

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.