Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – আশাপূর্ণা দেবী

    লেখক এক পাতা গল্প62 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কথামৃতের কথায়

    কথামৃতের কথায়

    মনে হয়েছিল, এ আর এমন কি! এতবার পড়া, এমন আকর্ষণীয় প্রিয় গ্রন্থ কথামৃত, তার সম্পর্কে কিছু একটু লিখে ফেলা, এই তো? খুবই তো সহজ, দুদিনেই হয়ে যাবে।

    কিন্তু দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে, হচ্ছে না। লিখতে গিয়ে দেখছি, যা নেহাৎ সহজ ভেবেছিলাম, তা মোটেই সহজ নয়। শক্ত করে তুলেছে নিজের মধ্যেই হঠাৎ জেগে-ওঠা প্রশ্নের কাটা।

    কথামৃত আমার কাছে একটি আকর্ষণীয় প্রিয় গ্রন্থ–এ কথা বলা কি আমার পক্ষে ধৃষ্টতা নয়? আমি কি একথা বলবার অধিকারী?

    আমি কি কখনও ঈশ্বরচিন্তায় ব্যাকুলতা অনুভব করেছি? জিজ্ঞাসু হৃদয় নিয়ে, ঈশ্বরের স্বরূপ জানবার চেষ্টা করেছি, আর কথামৃতের অমৃতধারার মধ্যে তার সমাধান খুঁজে পেয়ে কৃতার্থবোধ করেছি?

    কাকে বলে নিশ্চলাভক্তি, কাকে বলে শুদ্ধাভক্তি, আর কেমন করে তা আসে, তা বোঝবার জন্যে অন্তরের মধ্যে কোনও প্রেরণা পেয়েছি? অথবা ওই অমৃতবাণীর সাগরের মধ্যে আমাদের এই অতি সাধারণ গৃহীজীবনের জন্যে সহজ সরল ভাষায় সর্বশাস্ত্র মন্থন করা যে-অনন্ত উপদেশরাশি বিধৃত রয়েছে, সে উপদেশের অনুসরণ করবার সামান্যতম সাধনা করেছি? সেই শিক্ষায় জীবনকে গড়ে তোলবার মানসে মনকে নির্মল, চিত্তকে অহমিকা, অসূয়াশূন্য করে তোলবার ইচ্ছেটুকুও মাত্র কখনও পোষণ করেছি?

    কোনও প্রশ্নেরই তো অনুকূল উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। কথামৃতে বহমান রসধারা তো এই দীর্ঘজীবনের শুকনো মাঠে-মাঠেই মারা গেছে। কিছুই তো গ্রহণ করতে পারি নি।

    তবে? তবে কেন প্রিয়? কেন ভাল লাগে?

    তবে কি কথামৃতের মধ্যে যে-পরম সাহিত্যমূল্য রয়েছে, সেই বস্তুটিই আমায় বরাবর আকৃষ্ট করে এসেছে?

    কথামৃতের ছত্রে-ছত্রে যে-গভীর জীবনবোধের প্রকাশ, উপলব্ধির যে-ব্যঞ্জনাময় সঙ্কেত, উদার জীবনদর্শনের যে সীমাহীন বিস্তার, অতুলনীয় তুলনাপ্রয়োগকৌশল, আর ছোট-ছোট গল্পকাহিনী পরিবেশনার মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় মানবচরিত্রের যে-নিপুণ বিশ্লেষণ এবং তার সঙ্গে সরস বাকবৈদগ্ধ্য, সূক্ষ্ম প্রসাদগুণ–তা অবশ্যই উচ্চমানের সাহিত্যের দাবি রাখে। সর্বোপরি বিশ্বাসের সততা চিরায়ত সাহিত্যের মূলধন।

    আপন হৃদয়সত্যকে অপরের হৃদয়ে সঞ্চারিত করতে পারার শক্তি, আপন বিশ্বাসকে অপরের বিশ্বাসের ভূমিতে স্থাপন করার দৃঢ়তা, জীবসত্তার মধ্যে শিবসত্তার উন্মোচন, এইগুলিই তো মহৎ সাহিত্যের লক্ষণ, কথামৃত গ্রন্থে এইসব গুণগুলিই তো বর্তমান।

    সেই সাহিত্যই স্রষ্টাকে অমরত্ব দান করে, যে-সাহিত্য পৃথিবীকে ভালবাসতে শেখায়। কথামৃতের মধ্যে তো সেই অফুরন্ত ভালবাসার শিক্ষা।

    মনে হয়, আজ ঘরে-ঘরে গীতার মত নিত্যপাঠ্য এই অমূল্য গ্রন্থখানি ভবিষ্যকালের মূল্যায়নের কষ্টিপাথরে কেবলমাত্র মানবজীবনের পরমার্থ-নিদের্শক গ্রন্থ হিসেবেই নয়, চিরায়ত সাহিত্যগ্রন্থ হিসেবেও মূল্যায়িত হবে।

    কথামৃতের শতবার্ষিকী সহস্র-সহস্র বৎসরের সূচনা মাত্র। বুদ্ধের বাণী, খৃষ্টের বাণী তো আজও অম্লান। কথামৃত হাজার-হাজার বছর ধরে মানবজীবনকে আশ্রয় দেবে।

    তবু বলব, কথামৃত–এই গুণগুলি ব্যতীতও আমার কাছে আরও কিছু, অধিক কিছু। কথামৃত দুঃখের দিনে, বেদনার দিনে, অস্থিরতার ক্ষণে, যেন একটি শান্ত সান্ত্বনা এনে দেয়। যেন মনের জন্যে মানসিক একটি আশ্রয় মজুত আছে, প্রয়োজনের সময় সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেই হল।

    অথবা শুধুই কথামৃত নয়, শ্রীশ্রীমা সারদামণির আর শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের পুণ্যজীবনী এই গ্রন্থের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অখণ্ড একটি আশ্রয়।

    তবু এও জানি, একথা বলার যোগ্যতা আমার নেই। ভালো লাগে, শান্তি পাই, চাঞ্চল্যও দূর হয়, কিন্তু নির্দেশ-উপদেশগুলি গ্রহণ করতে পারি কই?

    স্মৃতি হাতড়ালে–

    কথামৃতের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় অতি বাল্যে। আমার বইপাগল মার সংগ্রহভাণ্ডারে ছিল তঙ্কালীন বসুমতী সাহিত্য মন্দিরের যত গ্রন্থাবলী। এবং বহুবিধ পত্রপত্রিকা। চালু-অচালু প্রায় সব। তবে মনে হয়, মলাটছেঁড়া বড়মাপের কোনও পুরনো পত্রিকার মধ্যে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে লেখা এই কথামৃত কিছু কিছু পড়ে থাকব। কারও মেয়েও তো মায়ের মতই পড়াপাগল। (স্কুল পাঠশালার বালাই তো ছিল না। অখণ্ড অবসরের সুযোগ পাই তাই পড়া চলে। এমন কি মুদি-মশলার দোকানের ঠোঙাতেও যদি বাংলা হরফে কিছু ছাপা লেখা থাকে তো, ঠোঙাটিকে সাধধানে খুলে নিয়ে পড়ে ফেলে।)

    একথা বলব না যে, সেই পত্রিকার (কোন পত্রিকা মনে নেই) পৃষ্ঠায় পড়ার সময় বিশেষ আকৃষ্ট হয়েছিলাম। পড়েছি এইটুকু মনে আছে। যা পাই তাই পড়ি তো।

    অতঃপর একসময় কথামৃত আস্ত একটি গ্রন্থ পড়ার সুযোগ হল, শ্বশুরবাড়িতে এক প্রতিবেশিনী মহিলার মাধ্যমে। যদিও তখন সেকালের নিয়মে নতুন বৌকে গুরুজনস্থানীয়া মহিলাদের সামনেও ঘোমটা দিতে হয়, গলার স্বর নামিয়ে কথা বলতে হয়, তবু তিনি একদা দুপুরে এসে হানা দিলেন দুতিন খানা বই হাতে নিয়ে। বললেন, বৌমা গো, চোখ থাকতে অন্ধ। একটু পড়ে শোনাও, শুনি।

    বিয়ের সময়ই জানা হয়ে আছে, এবাড়ির নতুন বৌয়ের স্বরচিত,লেখা নাকি বইকাগজে ছাপা হয়, অতএব সে তো রীতিমত চক্ষুষ্মন। কাজেই চক্ষুম্মান বৌকে নিজের পাঠযোগ্য বইটই রেখে দিয়ে সারা দুপুর পাঠের আসর খুলতে হয়। তবে একটা মস্ত লাভ হয়, ফাঁকতালে বৌয়ের ঘোমটা কমে এবং গলার স্বর ওঠে। কারণ সে আসরে গুটিগুটি অনেকগুলি মহিলারই সমাবেশ হয়, তাঁরাই উদারকণ্ঠে আদেশ দেন, আর একটু জোরে পড়ো বৌমা। যতদূর মনে পড়ে, বইগুলির মধ্যে ছিল বোধহয় দুতিন খণ্ড অমিয় নিমাই চরিত, একখানি কুলদানন্দ ব্রহ্মচারীর জীবনী, আর একখানি কথামৃত। বোধহয় প্রথম খণ্ডই। মলাট ছেঁড়া, টাইটেলপেজও অন্তর্হিত।নাম দেখেই ছেলেবেলার সেই কিছু খানিকটা পড়ার কথা মনে পড়ে যায়।

    এই বইখানি দেখে কিছু কথা হয়। সমাগতারা সকলেই তো চোখ থাকতে অন্ধ নয়। একজন বললেন, দক্ষিণেশ্বরে রানী রাসমণির ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে নাকি তিনি এই পরমহংসের ঘর দেখেছেন। একজন বললেন, কোথায় নাকি তিনি পরমহংসের পরিবারকে দেখেছেন। (তখন ওই ভাবেই বলতে শুনেছি।) আর বাড়ির একজন আত্মীয়া গুরুজন সগর্বে ঘোষণা করলেন, এই শ্ৰীম আমাদের স্বজাতি। এমন কি শাখা-প্রশাখায় কিছু আত্মীয়তাও আবিষ্কার করলেন মনে হয়। হওয়া অসম্ভব নয়, গুপ্তদের সঙ্গে গুপ্তদের কিছু না কিছু যোগসূত্র থাকেই।

    সে যাক, এত কথার পর প্রথমে কিন্তু অমিয় নিমাই চরিতই ধরা হল। সে আসরে মাঝে মাঝেই ধ্বনি উঠত, আহা! আহা! মধু! মধু!

    তা পাঠিকারও বেশ আকর্ষণ লেগে গিয়েছিল। দুপুরটা গেল বলে আর আক্ষেপ আসত না।

    অমিয় নিমাই চরিতের খণ্ডগুলি সাঙ্গ হবার পর ধরা হয়েছিল কথামৃত। শুরু হতেই আকর্ষণ। শ্রীরামকৃষ্ণের সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত, আর বিশেষ করে মা ভবতারিণীর মন্দির, আর মন্দিরসংলগ্ন পারিপার্শ্বিকতার নিখুঁত নিপুণ বর্ণনাটি যেন ছবির মত লাগে।

    জন্মগৃহ উত্তর কলকাতার প্রায় শেষপ্রান্তে শ্যামবাজার অঞ্চলে, ছেলেবেলায় মা বাবা ভাই বোন মিলে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে যাওয়া হয়েছে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে, সে এক উত্তেজনাময় আনন্দের ভ্রমণ! (সে যুগে অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের জন্যে কীই-বা আয়োজন ছিল?)

    কথামৃতের সূচনায় লিখিত বর্ণনার সঙ্গে-সঙ্গে তাই ছবিটি চোখের সামনে ফুটে উঠত। সেই প্রথম ঠাকুরের ঘরটি দেখে অতি বাল্যেও মনে হয়েছিল, যেন এইমাত্র ঘর ছেড়ে কোথাও উঠে গেছেন, এইমাত্র আসবেন। পরবর্তীকালে দীর্ঘ দিনই তো সেই রকমই ছিল। মাঝে অবশ্য অনেক দিনই যাওয়া হয় নি। কিছুদিন আগে দেখলাম, সে ঘরের মেঝে মোজাইকে মোড়া। কেন জানি না, ঘরের এই উন্নতি দেখে হঠাৎ বুকটা যেন খাঁ-খাঁ করে উঠেছিল, মনে হয়েছিল মস্তবড় কী একটা হারিয়ে গেল। মেঝের মাঝামাঝি জায়গায় একটুখানি লম্বা দাগবাজী করা লাল সিমেন্টের সেই মেঝেটি খুঁড়ে তুলে ফেলার সময় কারও মনে কোনও ক্ষতিবোধ এল না? মনে হয়েছিল, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদামণি, নরেন আর অসংখ্য ভক্তবৃন্দের পদধূলিস্পর্শে ধন্য সেই সিমেন্টের চাপড়াগুলি কি ফেলে দেওয়া হয়েছে? কোথাও রেখে দেওয়া হয় নি?

    যাক ও কথা! (বয়স হলেই বোধহয় ভাবপ্রবণতা বাড়ে)। সেই অনেকদিন আগের কথাই বলি–পাঠের আসর যখন বেশ জমজমাটি, এবাড়ি ওবাড়ি থেকে দুপুরের গ্রাবু খেলার আড্ডা ভেঙে আরও দুচারজন মহিলার আবির্ভাব ঘটছে, সহসাই একদিন সেই আসর ভঙ্গ হয়ে গেল। কারণ, গ্রন্থগুলির মালিকানী ভক্তিমতী সেই মহিলাটিকে হঠাৎ সে পাড়া থেকে চলে যেতে হল। ভাড়াটে বাড়ি, বদল হল আর কি।

    তিনি গেলেন, বইগুলিও তার সঙ্গে চলে গেল, কথামৃত তখনো শেষ হয় নি।

    শ্ৰোত্রীদের মধ্যে হায় হায়! আহা দুপুরটা একটু ভালয় যাচ্ছিল। কী সব জ্ঞানগর্ভো কথা শুনছিলাম।

    তবে ওই পর্যন্তই। সেই পাঠের আসর চালু রাখার প্রেরণা বিশেষ কেউ অনুভব করলেন না!

    এদিকে পাঠিকার মধ্যে তুমুল হায় হায়। বইটা শেষ হল না। তাছাড়া মহিলা বলেছিলেন, যার কাছ থেকে বইটি এনেছিলেন, তার কাছে পরবর্তী আরও খণ্ড আছে।

    এমন দাবি করব না যে, ধর্মকথার জন্যেই এত আগ্রহ আকুলতা। বইটা শেষ হল না, এটাই আক্ষেপের কারণ। তখনকার আমলে গেরস্থ ঘরের বৌ-টৌয়ের কোনও ব্যাপারেই ব্যাকুলতা প্রকাশের আইন ছিল না। এমন কি–মা-বাপের অসুখ করেছে শুনলেও নীরবে অপেক্ষা করতে হত, ওপরওলাদের বিবেচনার উদারতা কতটা তা দেখতে।

    তবে পাড়ার একটা লাইব্রেরীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, কিছুদিন চেষ্টা চালানোর চেষ্টা করলাম, সেখান থেকে পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু বারে বারে খোঁজ করিয়েও মিলল না। আর অস্বীকার করব না, ক্রমশ আগ্রহটাও কমতে কমতে থেমে গেল। লাইব্রেরীতে গল্প উপন্যাসের তো অভাব নেই। তা ছাড়া–যদিও তখন নেহাতই শিশুসাথী, খোকাখুকুর লেখিকা, তবু তার তাগাদা আছে–আছে মনের মধ্যেও তাগিদ।

    সে যাক, সেই আমার কথামৃতের সঙ্গে প্রথম পরিচয়। তারপর জীবনের অনেকখানি পথ পার হয়ে প্রথম দ্বিতীয় দুটি খণ্ড হাতে এল। বিশেষ একটি বিষণ্ণতার দিনে একজন উপহার দিয়ে গেল। পড়লাম পরম আগ্রহে। জ্ঞানাবধি রবীন্দ্রনাথকেই জীবনের পরম আশ্রয় ভেবে এসেছি। দেখলাম, তেমন আশ্রয় এখানেও বিদ্যমান।

    পড়তে দারুণ ভালবাসি, পড়াই প্রাণ, তবু বিধিবদ্ধভাবে নিয়ম করে কখনোই কিছু পড়বার সুযোগ ঘটে নি। না বা পড়ায়, না লেখায়। সাংসারিক জীবনের রোগ শোক সুখ দুঃখ, অভাব অসুবিধে, সবকিছুর মধ্যে থেকে এলোমেলো ভাবে লেখা, আর এলোমেলো ভাবে পড়া হয়েছে। আর লেখাটা বাড়তে বাড়তে-পড়াটাকে প্রায় কোণঠাসা করে রেখেছে।

    কত বইই পড়বো বলে সরিয়ে-সরিয়ে রাখি পড়ার জন্যে, আর সময় বার করা যায় না; জীবনের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছি। তবু কোনও কিছুই নিত্যপাঠের অভ্যাস বজায় রাখতে পারা যায় না। একবার পড়ে শেষ করে ফেলার বস্তু তো নয়?

    শেষ নাহি যার, শেষ তারে কে করবে?

    তবু যখনই পড়ি সমান ভালো লাগে। যেন নতুন লাগে, নতুন করে ভালো লাগে। দুঃখের দিনে, বেদনার দিনে, ক্ষতির দিনে, শরণ নিতে ইচ্ছে হয়।

    পড়তে-পড়তে কল্পনার চোখে ভেসে ওঠে, সেইকালের পরিপ্রেক্ষিতে, মা ভবতারিণীর মন্দির প্রাঙ্গণ। গঙ্গার ধারের সেইঘরে বারান্দায় এক জীবন্ত বিগ্রহ–জিজ্ঞাসু শ্রোতাদের সামনে অনর্গল বর্ষণ করে চলেছেন, অমৃতময়ী কথার ধারা। উপলক্ষ হয়তো সেই জিজ্ঞাসু ব্যক্তিরা, লক্ষ্য তো অনন্ত কালের পৃথিবী।

    শ্রীশ্রীঠাকুরের তো অনন্ত ভাব, অনন্ত বৈচিত্র্য, তবু কেন জানি না মনে হয়–সেই কথামৃতবর্ষী মুখটি যেন একটু মধুর সূক্ষ্ম কৌতুক-হাস্যোদ্ভাসিত। যেন মানবচরিত্রের যাবতীয় দুর্বলতা তার কাছে কৌতুকের বিষয়। কথার ধারাস্রোতের মধ্যেও মাঝে মাঝেই ঝিলিক দিয়ে উঠছে সেই কৌতুকের কণা। ঝিলিক দিয়ে উঠছে–চোখের কোণায়, ঠোঁটের রেখায়। অথচ তার অন্তরালে রয়েছে গভীরতর বেদনার আভাস।

    লোক না পোক, এই মন্তব্যটির মধ্যে যেমন রয়েছে মজার ভঙ্গি, তেমনি রয়েছে বেদনা। মানুষ শব্দটার প্রকৃত অর্থ যে, মান সম্পর্কে হুঁশ থাকা–এমন সহজ সরল ব্যাখ্যা আগে কবে শুনেছে লোকে?

    সকলের জন্যে, সর্বসাধারণের জন্যে, ঠাকুর আশ্চর্য সহজ ভাষায় দিয়ে গেছেন সর্ববিধ শিক্ষা, সর্বোত্তম শিক্ষা। কিন্তু আপাতসহজ এই কথাগুলি কি সত্যিই সহজ? সেই আশ্চর্য সহজ কথাগুলিই তো আজ প্রবল প্রাণশক্তির জোরে বিশ্বময় ব্যাপ্ত হতে চলেছে। দিনে দিনে উন্মোচিত হচ্ছে তার সহজতার মোড়ক, উঘাটিত হচ্ছে গভীর ভিতরের গভীর অসীম অর্থ। মানবজীবনে যে-কোনও স্তরে, যে-কোনও অবস্থায়, আর যে-কোনও চিন্তায় যত প্রশ্ন উঠতে পারে–মনে হয় বোধহয় সেই সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর আছে এর মধ্যে।

    এই উঘাটন তো আরোই হতে থাকবে, যুগে-যুগে আসবেন নতুন ব্যাখ্যাকার, দেশে-দেশে অনূদিত হবে, ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নয়, আগ্রহী মানুষের নিজস্ব প্রয়োজনে। এযুগ হয়তো এখনও সমুদ্রের তীরে বসে ঝিনুক কুড়োচ্ছ মাত্র।

    এসব কথা বলা আমার পক্ষে ধৃষ্টতাই, কতটুকু জেনেছি, কতটুকু বুঝেছি? পৃথিবীকেই বা কতটা জানি? ঠাকুরের কথাতেই বলতে হয়–একসের ঘটিতে কি চারসের দুধ ধরে? একথা শুধু আমার নিজস্ব বিশ্বাসের ধারণা।

    শ্রীরামকৃষ্ণ আমার কাছে বিশাল একটি জিজ্ঞাসার চিহ্ন। কে ইনি? ছদ্মবেশী স্বয়ং তিনিই? সম্ভবামি যুগে যুগের অঙ্গীকার পালনার্থে এ যুগের এই রূপ? তবে এ রূপটি বড় করুণাঘন। বিনাশের ব্যবস্থা নেই, শুধুই পরিত্রাণ। এই পরিত্রাণের মন্ত্র ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্যে সঞ্চিত থাকবে কাল থেকে কালান্তরে।

    সমকাল কখনোই কোনও কিছুরই সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করতে পারে না, বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় বিভ্রান্ত হয়। বিতর্কের ঝড় ওঠে, অথবা ঔদাসীন্যের নিথরতা দেখা যায়। বিজ্ঞানের আশ্চর্য আবিষ্কারগুলিও যেমন, জ্ঞানের পরমাশ্চর্য আবির্ভাবও তেমন, গ্রহণ করতে সময় লাগে, বুঝতে সময় লাগে। তাই শ্রীরামকৃষ্ণের সময়সীমার মধ্যে প্রবাহিত অসীম অপার কথামৃত, সাগরের অনেকখানিই অ-সঞ্চিত রয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে অনেক অমূল্য বাণী।

    পরম শ্রদ্ধেয় পরম ভক্ত শ্ৰীম আপন নামটুকু পর্যন্ত আড়ালে রেখে ঠাকুরের লীলার শেষের কটি বছরের অমূল্য কথাগুলি লিপিবদ্ধ করে রেখে জগতের যে উপকার করে গেছেন, তার জন্য তিনি চিরকাল নমস্য হয়ে থাকবেন। আক্ষেপ হয়, যদি তিনি আরও আগে ঠাকুরের সান্নিধ্যে আসতেন।

    তবে আবার ঠাকুরের কথার মধ্যেই সব আক্ষেপের সমাধান। অমৃত কলসী কলসী খেলেও যা, একফোঁটা খেলেও তা। অর্থাৎ ওই এক ফোঁটার মধ্যেই আছে অমরত্ব দানের শক্তি। অবশ্য খেতে হবে। ওই একফোঁটাটুকুও সত্যিকার নিষ্ঠার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমরা তো সব জ্ঞানপাপী। জানি, বুঝি, ইচ্ছেও আছে, তবু হয়েও ওঠে না। আমার জীবনে কথামৃত–এই প্রশ্নটি চিন্তা করতে গিয়ে নতুন করে এই সত্যটির মুখোমুখি হতে হল। তবু বলি–কথামৃত আমার বড় প্রিয় গ্রন্থ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরাতের পাখি – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article গল্পসমগ্র – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }