Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – আশাপূর্ণা দেবী

    লেখক এক পাতা গল্প62 Mins Read0
    ⤶

    সেবাধর্মে নারী

    সেবাধর্মে নারী

    সেবাধর্ম অবশ্যই মানুষমাত্রেরই ধর্ম। মানবিক সকল গুণের মধ্যে সেবার প্রেরণাই বোধ করি শ্রেষ্ঠ গুণ–স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে। তবু আমাদের চিরন্তন সংস্কারে আর চিরকালীন সংস্কৃতিতে সেবা শব্দটির সঙ্গে নারী শব্দটি যেন একান্তভাবে জড়িত। যেন ঐ নারী শব্দটিই মূর্তিমতী সেবা, মূর্তিমতী করুণা। আমাদের ভাষার ভাণ্ডারে স্ত্রীজাতি সম্পর্কে অনেক প্রতিশব্দই তো রয়েছে, কিন্তু এই শব্দটির মধ্যে যে-লালিত্য, যে-সুষমা, যে-মর্যাদার ব্যঞ্জনা তেমনটি বুঝি আর কোনটিতেই নেই। এ যেন মায়া দয়া স্নেহ মমতা করুণা সান্ত্বনার একটির প্রতীকী নাম।

    আমাদের চিন্তায় ও চেতনায় মানবিক সমস্ত গুণগুলির রূপকল্পনাও তো নারীরূপে। দয়া ক্ষমা শ্রদ্ধা ভক্তি স্নেহ। আবার ঐশ্বর্যরূপেও। নারী লক্ষ্মী, নারী অন্নপূর্ণা।

    হয়তো বলা হতে পারে, এসব কবি-কল্পনা। ভাবুকের ভাবাবেগের ফসল। কিন্তু সত্যিই কি শুধু তাই? ভাল করে ভেবে দেখলে কি বোঝা যায় না, নারী হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার একটি একান্ত যত্নের সৃষ্টি? এটিকে তিনি একটি বিশেষ অভিপ্রায়ে বিশেষভাবে গড়ে তুলেছেন। তাই তার ওপরেই তার একান্ত বিশ্বাস আর আস্থা। নারীর কাছেই তো গচ্ছিত রাখার ব্যবস্থা জীবজগতের প্রথম প্রাণস্পন্দনটুকু। নারী সেই স্পন্দনের রক্ষয়িত্রী, পালয়িত্রী।

    কেবলমাত্র মানবসমাজেই তো নয়, সমগ্র জীবজগতের মধ্যেই তো সৃষ্টিকর্তার এই নিয়মটি বিদ্যমান।

    এই নিয়মটিকে কার্যকরী করে তুলতে এবং অব্যাহত ধারায় চালু রাখতে মেয়ে জাতটির মধ্যে বেশ ভালভাবেই তিনি ঠেসে ভরে দিয়ে রেখেছিলেন মমতা আর সেবার প্রেরণা। সেবা হচ্ছে নারীর সহজাত প্রবণতা। বাল্য থেকেই তাদের মধ্যে এই প্রবণতার বিকাশ দেখা যায়। ঘরে ঘরেই দেখা যায়–জননীর প্রতিনিধি অতি ছোট দিদি।

    অবশ্য আজকের দিনে নেহাত আধুনিক নাগরিক জীবনে একমেবাদ্বিতীয় সন্তানের ব্যবস্থায় এই দৃশ্যটি বিরল হয়ে আসছে, কিন্তু ঐটুকুই তো সমগ্র সমাজ নয়। গ্রামে গঞ্জে সাধারণ গৃহস্থ সংসারে এই দৃশ্যটি নিতান্ত পরিচিত। পাঁচ-সাত বছরের মেয়েটিও জননীর কর্মর্ভার লাঘব করতে ছোট্ট ভাইবোনকে দেখাশোনা করছে, আগলাচ্ছে, ভিজে কথা বদলে দিচ্ছে। আবার আপন স্নেহ সাধে তাকে টিপ কাজল পরিয়ে, চুল আঁচড়ে দিয়ে সাজাবার চেষ্টায় আলোড়িত হচ্ছে।

    ছেলেদের মধ্যে কি এমন প্রবণতা দেখা যায়?

    গরিবের বাড়িতে একটি মাতৃহীন সংসারে এমন দৃশ্য বিরল নয় যে, একটি বছর আষ্টেকের মেয়েও তার অপটু হাতে বাপ ভাইয়ের জন্য ভাত রাঁধছে, খাবার জল রাখছে, সাধ্যমতো যত্ন করছে। অথচ তার দশ-বারো বছরের দাদাটি হয়তো এর ওপরও মেয়েটার ত্রুটি ধরছে, ফরমাস করছে। মেয়েটি তবুও দাদার আরাম-আয়েসের ব্যবস্থায় সচেষ্ট সযত্ন। খেটে-খাওয়া গরিব বাপটি গৃহস্থালীর ব্যাপারে ঐ আট বছরের মেয়েটার ওপরই নির্ভরশীল। মেয়েটার আগ্রহ আর দায়িত্ববোধই তাকে নিপুণতার শিক্ষা দেয়।

    মেয়েরা সহজাতভাবেই ধরে নেয়, পরিবার-পরিজনদের সেবা করবার, যত্ন করবার আর ব্যবস্থাপনায় নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখবার দায়িত্বটি তারই। এটি যে সবসময় জোর করে বা শাসন করে তার ওপর চাপানো হয়, তা নয়। স্বভাবধর্মেই এ ভার সে নিজের ঘাড়ে তুলে নেয়।

    বিত্তবানদের ঘরে অবশ্যই ছবিটি আলাদা। আর যে-ঘরে গৃহিণী নিজেই খুব করিতকর্মা, একাই একশো, সে-ঘরে বালিকা কন্যার হৃদয়বৃত্তির অনুশীলনটি হয়তো বিকশিত হবার সুযোগ পায় না। তবু বাড়ির কেউ যদি এক গ্লাস জল চায়, তাহলে বাড়ির ছোট্ট মেয়েটিই জলের গ্লাসটি এনে তার হাতে ধরে দেয়–মেয়েটির থেকে বড় তার দাদাটি নয়। মেয়েটিও ভাবে না, দাদা দিক।

    যে তুলনাগুলি দেওয়া হলো সেগুলি অবশ্য নেহাত ক্ষুদ্র তুচ্ছ ঘরোয়া। আসলে বলতে হয়, এই ভাবধারা আমাদের ভারতীয় জীবনের ভাবধারা। আমাদের মেয়েদের মানসিকতাই শৈশব বাল্য থেকে এই দায়িত্ববোধের অনুপ্রেরণা জোগায়। আর ঐ বালিকা-মূর্তিতে স্নেহ-করুণা সেবার আধার ভাবতে গেলেই মনে ভেসে ওঠে, মা সারদাদেবীর সেই মূর্তিটি

    দুর্ভিক্ষের সময় বাবার দাঁতব্যছত্রে ক্ষুধার্তদের সামনে গরম খিচুড়ি ধরে দেওয়া হচ্ছে দেখে ছোট্ট হাতে তালপাতার পাখা নিয়ে সেই খিচুড়িকে ঠাণ্ডা করার প্রয়াস।

    এই সেবাময়ী মূর্তিই নারীর আদর্শ। সৃষ্টিকর্তা তাকে সেইভাবেই গড়েছেন। সেবাই নারীর প্রকৃত ধর্ম।

    কিন্তু এযুগে–সর্ববিষয়েই যেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে আর সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে একটা জেহাদ ঘোষণাই সমাজজীবনে একটি প্রধান কর্ম বলে বিবেচিত হচ্ছে। হয়তো বা বিরুদ্ধতা করার জন্যেই করা। পরিণামটি শুভ কি অশুভ, সে-চিন্তা না করেই। প্রযুক্তি বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর অবিশ্বাস্য সাফল্যের উল্লাসে উল্লসিত মানবসমাজ নিজেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় দাঁড় করিয়ে যে উন্মত্ত লড়ালড়ি চালিয়ে চলেছে তার শেষ পরিণাম বিশ্বধ্বংস কিনা কে জানে! যে বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জনের জন্য পৃথিবীর সমস্ত সঞ্চিত সম্পদ লুঠ করে নিয়ে তাকে নিঃস্ব করে ছেড়ে আপন আপন বিজয় পতাকা ওড়াচ্ছেন, তাঁদেরই কেউ কেউ এখন হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন : বিজ্ঞানের এই শুভাশুভবোধহীন স্বেচ্ছাচারিতার ফলে আজ আকাশে দূষণ, পাতালে দূষণ, সমুদ্রগর্ভে দূষণ, পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণুতে দূষণ! এ চলতে থাকলে পৃথিবীর শেষদিন আসন্ন হয়ে আসবে।

    কিন্তু এ প্রসঙ্গ থাক। আমাদের পূর্ব প্রসঙ্গেই ফিরে আসা যাক। তবু একথা বলা যায়, আমাদের আজকের সমাজজীবনেও অনেক ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র ফ্যাশনের খাতিরেই যে নারী হৃদয়ের সহজাত ধর্মকে ত্যাগ করে একটি বিকৃত আদর্শকে ডেকে আনবার প্রবণতা নারীসমাজকে বেশ বিভ্রান্ত করে তুলছে তাতে কি সংশয় আছে?

    প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের আদর্শ কখনোই এক ছিল না। হওয়া সম্ভবও নয়। এই বিপরীত দুই মেরুর দেশের মধ্যে আর্থিক, সামৰ্থিক, ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক এবং মানসিক–সর্ববিধ পরিবেশেরই আকাশ-পাতাল তফাৎ। কাজেই সমাজজীবনেও আদর্শের তফাৎ থাকবেই।

    স্বামীজীর উদাত্ত ভাষণে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এই বৈপরীত্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা আমাদের সামনে ধরা আছে। অবশ্য সেই তুলনামূলক সমালোচনায় তিনি কখনোই কোন পক্ষের আদর্শকে একমাত্র এবং শেষ আদর্শ বলে ঘোষণা করেন নি। পক্ষপাতশূন্য নির্মোহ দৃষ্টিতে বিচার করে দেখিয়েছেন, কোন্ সমাজে কোথায় কি ত্রুটি, কোথায় কি ভুল, আর কোনখানে কাদের শুভবুদ্ধির প্রকাশ। তবে তার পক্ষপাতশূন্য দৃঢ় বলিষ্ঠ বক্তব্যের মধ্যে ঘোষিত হয়েছে, নারীধর্মের পরম আদর্শই হচ্ছে–সেবাধর্ম। যে-ধর্মটি মাতৃধর্ম বলেই বিবেচিত। কারণ মা মানেই তো একটি সর্বংসহা আত্মস্বার্থবোধহীন স্নেহ আর সেবার প্রতিমূর্তি। মা যেন কল্যাণ আর মঙ্গলের একটি ভাবরূপ। সন্তানের কল্যাণই তার ধ্যান, জ্ঞান। তার প্রার্থনার মন্ত্রই হচ্ছে সন্তানের শুভ কামনা। বলা হয়-কুপুত্র যদ্যপি হয়, কুমাতা কখনো নয়। পুত্র শত অন্যায়কারী, শত অত্যাচারী নিষ্ঠুর নির্মায়িক হোক, মা কখনোই তার অনিষ্ট চিন্তা করতে পারেন না। (পুত্র অর্থে এখানে ছেলে নয়, পুত্র অর্থে সন্তান। ছেলেই তোক অথবা মেয়েই হোক–শত অপরাধ করলেও মা কখনোই সন্তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন না।)।

    স্বামীজী বলেছেন, ভারতীয় নারীর বিভিন্ন আদর্শের মধ্যে মাতার আদর্শই শ্রেষ্ঠ, স্ত্রী অপেক্ষা তাঁহার স্থান উচ্চে। স্ত্রী-পুত্র হয়তো কখনো পুরুষকে ত্যাগ করিতে পারে, কিন্তু মা কখনো তাহা করিতে পারেন না।…মায়ের ভালবাসায় জোয়ারভাটা নাই, কেনাবেচা নাই, জরা মরণ নাই। ..মাতৃপদই জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ পদ! কারণ উহাতে সর্বাপেক্ষা অধিক নিঃস্বার্থপর শিক্ষা, নিঃস্বার্থপর কার্য করিবার অবসর প্রাপ্ত হওয়া যায়।

    স্বামীজী বলেছেন, আমি বলিতেছি না যে, আমাদের সমাজের নারীগণের বর্তমান অবস্থায় আমি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট। কিন্তু নারীদিগের সম্বন্ধে আমাদের হস্তক্ষেপের অধিকার কেবলমাত্র তাহাদিগের শিক্ষা দেওয়া পর্যন্ত; নারীগণকে এমন যোগ্যতা অর্জন করিতে হইবে, যাহাতে তাহারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই নিজেদের ভাবে মীমাংসা করিয়া লইতে পারে।

    সে-যুগে যখন দেশে সনাতনপন্থীরা স্ত্রীশিক্ষাকে আদৌ সুনজরে দেখতেন না এবং প্রয়োজনীয় বোধ করতেন না (অনেক পণ্ডিতজনও না), তখন স্বামীজীর হৃদয়ের একান্ত চিন্তা-মেয়েদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা। উচ্চশিক্ষা। উপযুক্ত শিক্ষা। স্বাবলম্বী হবার শিক্ষা। মেয়েরা শিক্ষায় দীক্ষায় অগ্রসর হতে না পারলে যে জাতির অনগ্রসরতা ঘুচবে না, এ চিন্তার প্রতিফলন দেখা যেত স্বামীজীর নারীজাতি সম্পর্কে সকল উপদেশের মধ্যেই। মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পাক। সত্যকার শিক্ষা পাক।

    আজকের সমাজ অবশ্যই নারীজাতিকে সে সুযোগ দিয়েছে। ঢালাও সুযোগই দিয়েছে। দেশের দারিদ্র্য, অসামর্থ্য, অসুবিধা ইত্যাদি প্রতিবন্ধকে যার ভাগ্যে যতটুকু জুটুক, অধিকার হীনতার প্রতিবন্ধকতা কোথাও নেই। আইন এবং সমাজ আজকের নারীকে বেঁধে রাখে নি কোথাও।

    কিন্তু স্বামীজীর সেই স্বপ্ন কি সফল হয়েছে? নিজেদের সমস্যা কি তারা নিজেরা একটুও সমাধান করে উঠতে পেরেছে বা পারছে?

    সমাজ এখনো পুরুষশাসিত বলে আক্ষেপই দেখতে পাওয়া যায়। সেই শাসনটি যদি নিতান্তই অপশাসন হয় তো তা থেকে মুক্ত হবার চেষ্টার শক্তি দেখা যায় কই? কিছু আধুনিক চিন্তাসম্পন্ন মেয়ের তো মুখের ক্রুদ্ধ ক্ষুব্ধ বুলিই হচ্ছে–মনু বলে গেছেন–মেয়েরা বাল্যে পিতার, যৌবনে পতির এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকুক। এসব মেয়েদের পায়ে দলার ষড়যন্ত্র। এই নিয়ে সেই কোন্ আদ্যিকালের বুড়ো ভদ্রলোকের ওপর আক্রোশের শেষ নেই এঁদের। অথচ কেন কী সূত্রে আর কোন্ পরিবেশে এই অনুশাসন রচিত হয়েছিল তা ভেবে দেখবার ধৈর্য নেই। আর এ চিন্তারও খেয়াল নেই, এখনো সেই অনুশাসন মেনেই বা চলছি কেন আমরা? না মানলে কি সেই মনু এসে শাস্তিবিধান করতে বসবেন?

    আসলে, মূলে একটু ভুল রয়ে গেছে। শিক্ষা এসে গেছে। কিন্তু নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করবার চিন্তায় দীক্ষা আসে নি! তার বদলে প্রবল দীক্ষা এসে যাচ্ছে পশ্চিমী সমাজ থেকে! সেটি শুভকারী কি অশুভকারী তা ভেবে দেখা হচ্ছে না। পুরো দেশটাই যে আমাদের শত সমস্যায় দীর্ণ, কোটি কোটি জন যে বঞ্চনা, অবিচার আর অবহেলার শিকার। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সে কথাটি মাথায় না রেখে নিজেদেরকে পৃথক একটা সমস্যার বোঝা করে তোলা হয়ে চলেছে শিক্ষিত নারীসমাজের ভ্রান্ত চিন্তার ফলে।

    সেদিন এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক ক্ষুব্ধচিত্তে আক্ষেপ জানাচ্ছিলেন : সমান অধিকার! সমান অধিকার! তো সমানটা কোথায়? তোমরা মেয়েরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে জায়গা দখল করতে পার। কারুর কিছু বলার নেই। কিন্তু একটা বুড়ো মানুষ নিরুপায় হয়ে রেলগাড়িতে একটা লেডিস কামরায় উঠে পড়ায় একপাল মেয়ে ঝাঁপিয়ে এসে বুড়োকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে নামিয়ে দিলে! এটা কি সমান অধিকারের নমুনা? নেহাত কপাল জোর ছিল তাই পৈতৃক প্রাণটা বেঁচে গেছে। অন্য কোন সভ্যদেশে এমনটা হতে পারবে?

    শুনে সত্যিই বড় দুঃখ আর লজ্জাবোধ হয়েছিল।

    সমান অধিকারের সীমানা নির্ণয় হবে কোন মাপকাঠিতে? এই যে সমান অধিকারের দাবিতে সোচ্চার বেশ কিছু মেয়ে দাবি তুলছেন–ঘর-সংসারের গৃহস্থালীর কাজটাজ ভাগাভাগি করে পুরুষরাও করুক। সেই ক্ষেত্রে বিদেশের নজির দেখিয়ে দাবি জোরালো করতে যান এঁরা। আর সেই ছাঁচে ঢালাই হতে চেয়ে নিজেরা ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন, সেবা মানে দাস্যবৃত্তি। সংসারে স্বামী-পুত্র পরিজনের সেবা মানে দাসীত্ব! এই নিয়ে আন্দোলনে নামারও পরিকল্পনা চলে সম-চিন্তাধারিণী বান্ধবীমহলে।

    এও কিন্তু সেই ফ্যাশনের খাতিরে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাওয়ার ভ্রান্ত চেষ্টা! প্রিয়জন আপনজনকে সেবা করা, যত্ন করা নারীর সহজাত প্রকৃতি। তাই হয়তো খোঁজ নিলে দেখা যাবে, পুরুষরা তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে ঘরকন্নার কাজ করতে এলেই বরং তারা দারুণ অস্বস্তিবোধ করবেন এবং স্বামীকে প্রায় তাড়া দিয়েই রান্নাঘর ছাড়া করে ছাড়বেন।

    স্বামী এবং স্ত্রী দুজনে একই সময় অফিস থেকে ফিরেছেন, দুজনেই সমান ক্লান্ত। তবু যে মহিলাটি তৎপর হয়ে খাবার বানানোর ব্যবস্থায় হাত লাগাতে ছোটেন, সে কি পুরুষের শাসনে? তার নিজের ভিতরকার মমতা আর সহজাত দায়িত্ববোধই তাকে ঠেলে পাঠায়।

    মুখে যতই দাসীত্ব বাঁদীত্ব বলে তারা রাগারাগি দেখান, কখনোই দেখা যায় না যে এমন ক্ষেত্রে মেয়েটি নিজ বিছানায় এলিয়ে পড়ে (পুরুষের মতো) প্রত্যাশা করছেন ঐ কর্মভারটি সম্পন্ন করতে স্বামীই এগিয়ে যাবেন (ব্যতিক্রম বাদে)।

    আমাদের মেয়েরা মুখে যতই ঐসব প্রগতিমার্কা কথা বলুক বা কাগজে কলমে ঝাঁজালো ভাষায় লিখুক, ভিতরে কিন্তু সেই সাবেকি ভারতীয় নারী! যার মধ্যে এই সংস্কারটি বদ্ধমূল– পরিবার-পরিজনের যত্ন, তদ্বির, সেবা, পরিচর্যা তারই করণীয়।

    ছেলেমেয়ের অসুখ করলে মা-ই দেখাশোনা করেন, বাবা নয়। তার জন্যে কর্মস্থলে ছুটি নিতে হলে, নেহাত অন্য পরিস্থিতি না ঘটলে, ছুটি নেন মা-ই, বাবা নন। অসুস্থ সন্তানের সেবা পরিচর্যার ভারটি নিজে না নিতে পারলে স্বস্তি আছে নাকি?

    যদিও বাইরের জগতে মুক্তি আন্দোলনের শরিক সখীদের কাছে খুব উত্তেজিত আলোচনা হয় এই নিয়ে। সংসারজীবনে নারী-পুরুষের এই বৈষম্যের ব্যবস্থাকেও দাসীত্ব বাঁদীত্ব বলেই অভিহিত করা হয়। আসলে কিন্তু নারী যা-কিছু করে আপন হৃদয়ের অনুশাসনেই করে। তবে যেহেতু পুরুষের বিরুদ্ধে একটি জেহাদ জিইয়ে রাখা আধুনিকতা, তাই মুখে এসব বলতেই হয়। না বললে মানায় না। শত কাজের মধ্যে রান্নায় এত পরিপাট্য কেন? প্রশ্ন করলে মহিলা অবশ্যই ঝঙ্কার দিয়ে উঠবেন–না হলে বাবুর মুখে রুচবে? না রুচলে তোমার কী বয়ে গেল?–এ প্রশ্নের উত্তর কি?

    শুধু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কই নয়, শুধু মাতাপুত্রের সম্পর্কই নয়, সকল ক্ষেত্রেই নারী আত্মশাসনেই সংসারের সেবা-পরিচর্যা করে মরে। এখনো দেখা যায়, হয়তো সংসারে আর দ্বিতীয় কেউ নেই–পুরুষটি ও তার কোন একটি বৃদ্ধা বিধবা পিসি বা মাসি ছাড়া। সেই বৃদ্ধাই বকুনি খেয়েও যাকে বলে মরে মরে সেই ছেলেটার খাওয়া-শোওয়ার তদ্বির তদারক না করে ছাড়ছেন না-গঞ্জনা খেয়েও না। মনোভাব এই–আহা এটুকুতে আর আমার এত কী কষ্ট? অভ্যাসের হাত। কিন্তু নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নিতে হলে বাছার কষ্টের একশেষ।

    এই মমতা নারী-হৃদয়ের চিরন্তন ধর্ম। বাল্য থেকেই যার বিকাশ। কিন্তু এই চিরন্তন নারী-হৃদয়ের সহজ প্রবণতাকে পাথর চাপিয়ে রুদ্ধ করে ফেলতে হবে কেবলমাত্র একটি বিভ্রান্তিকর মতবাদে আক্রান্ত হয়ে? একান্ত আপনজনের প্রিয়জনের সেবা পরিচর্যাও দাসত্ব বলে গণ্য করতে হবে?

    তাই যদি হয় তো ব্যক্তিগত জীবনের অপরিসর ক্ষেত্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে জীবনকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেবার, নিজেকে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণকর্মের শরিক হতে পারার উদার চেতনা আসবে কোথা থেকে?

    অথচ আজকের মেয়েদের কাছে সে-প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা ছিল–আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার পাওয়া নারী নিজেকে বিস্তৃত করতে শিখবে, বিকশিত করতে শিখবে সেবায় কর্মে মহত্ত্বে উদারতায়। সে-প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার কোথায়? কতটুকু?

    শুভবোধহীন বিশেষ কোন একটি মতবাদের অন্ধ অনুসরণও কি একরকম দাসত্ব নয়?

    সেবাকর্মের মধ্যেই তো আসে হৃদয়ের শুদ্ধতা। সেবার মধ্য দিয়েই আসে ভালবাসা।

    সামান্য একটি গাছকেও যদি নিত্য পরিচর্যা করা যায়, সেই গাছটির প্রতি পরম ভালবাসা এসে যায়। একটি পাখি, জীব-জন্তুকেও যদি শখের ছলে নিত্য একটু আহার দেওয়া হয়, তাদের ওপর মমতা ভালবাসা আসবেই। হয়তো অর্থের বিনিময়েও, কেবলমাত্র করণীয় কাজ হিসাবেও যদি নিত্য একটি বিগ্রহ সেবা করতে হয়, কি একটি মন্দির মার্জনা করতে হয়, তাহলে সেই জড়বস্তুর ওপরও একটি বিশেষ ভালবাসা জন্মে যায়। সেবা এমনই পবিত্র সুন্দর কাজ যে, ক্রমশই কর্ম থেকে তা ধর্মে উন্নীত হয়ে ওঠে।

    অবশ্যই কেবলমাত্র নারীজীবনের জন্যই নয়। সেবাধর্ম নারী-পুরুষ সকল জীবনের জন্যই মনুষ্যজীবনমাত্রেই।

    কিন্তু সেই সেবাধর্মটি কেবলমাত্র কিছু মার্কামারা সমাজসেবামূলক সঙ্-সমিতি, প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং মানবধর্ম-চেতনাশ্রয়ী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমেই অনুশীলিত হয়ে চলবে? আর কারও কোন দায় নেই?

    সাধারণ সংসারীজনের মধ্যেও কি এই চেতনা আসতে পারবে না–আমিও এই নিখিল বিশ্বের একজন। আমারও কিছু করবার আছে?

    ক্ষমতার সীমিত সীমায় কারও কোন বিশেষ ভাল করতে না পারলেও ভালবাসতেও তো পারা যায়? ভালবাসাও তো একটি সেবা। স্নেহ, সহানুভূতি, সান্ত্বনা, করুণা, একটুখানি হৃদয়ের স্পর্শ। হতাশ হৃদয়ের কাছে আশার কথা শোনানো, নিরুৎসাহ জীবনে উৎসাহ এনে দেবার চেষ্টা, ব্যর্থ জীবনের কাছে নতুন জীবনের প্রেরণা এনে দিতে পারার চেষ্টা, আর উত্তেজিত অশান্ত বিক্ষুব্ধ বিধ্বস্ত জীবনের কাছে শান্তির স্নিগ্ধতা নিয়ে এসে দাঁড়ানো–এগুলি তো সেবাই; যে সেবাটি বিক্ষিপ্ত চিত্তের মর্মমূলে গিয়ে পৌঁছাতে পারে। এমন সেবাটি নারীই পারে অনায়াসে অবলীলায়।

    নারী কল্যাণরূপা, সেবারূপা, মাতৃরূপা। তাই নারী-হৃদয়ই সহজে পৌঁছাতে পারে জগতের যত তাপিত হৃদয়ের কাছাকাছি, যে-পৌঁছানোটা ব্যথিতজনের কাছে পরম সেবাস্বরূপ। সে-সেবা তাদের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছেই গিয়ে পৌঁছায়! সকলু ভালবাসা, সকল সান্ত্বনা, সকল সেবা তো তার কাছ থেকেই আসে। আবার তার কাছেই গিয়ে পৌঁছায়!

    ⤶
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরাতের পাখি – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article গল্পসমগ্র – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }