Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গোয়েন্দা কৃষ্ণা – প্রভাবতী দেবী সরস্বতী

    September 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    প্রমথ চৌধুরী এক পাতা গল্প736 Mins Read0

    আমাদের ভাষা-সংকট

    আমাদের ভাষাসংকট

    শ্রীযুক্ত বারীন্দ্রকুমার ঘোষ সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন যে, আমার ভাষা সংকর; অর্থাৎ আমার বাংলার ভিতর থেকে ইংরেজি শব্দ স্ব-রূপে মাঝে মাঝে দেখা দেয়। এ অপবাদ সত্য। তবে বাংলার ভিতর ইংরেজি ঢুকলে ভাষা যদি সংকর হয়, তা হলে শুধু আমার নয়, দেশসুদ্ধ লোকের ভাষা সংকর হয়ে গেছে।

    বাংলার ইংরেজিশিক্ষিত সম্প্রদায়ের কথোপকথনের দিকে কান দিলেই টের পাবেন যে, তাদের মৌখিক ভাষার বিশেষ্য বিশেষণ সব বেশির ভাগ ইংরেজি; তার ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম ই শুধু বাংলা। তার পর জনগণের মুখেও যে কত ইংরেজি কথা তদ্ভব আকারে নিত্য চলছে তা সে শ্রেণীর বাঙালির সঙ্গে কার্যগতিকে যাঁর নিত্য কথাবার্তা কইতে হয় তিনিই জানেন। রাজমিস্ত্রি- ছুতোরমিস্ত্রিদের অধিকাংশ যন্ত্রপাতির নামের যে বিলেতে জন্ম তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই; কেননা মিস্ত্রি কথাটাই বিলেতি। ‘বিলেতি’ শব্দের অর্থ বিদেশী; আমি তাই ও শব্দটা ‘ইউরোপীয়’ এই অর্থেই এ পত্রে ব্যবহার করছি, ইংরেজির প্রতিশব্দ হিসেবে নয়।

    ইংরেজি কথা যেমন হালে আমাদের ভাষার ভিতর প্রবেশ করেছে, ইংরেজ রাজা হবার পূর্বে অপর নানাজাতীয় বিলেতি কথা তেমনি আমাদের পূর্বপুরুষদের ভাষার ভিতর অবলীলাক্রমে ঢুকে গেছে, আর বাংলা ভাষার অঙ্গে সে-সব এমনি বেমালুম ভাবে বসে গিয়েছে যে, সেগুলি যে আসলে বিলেতি তাও আমরা ভুলে গিয়েছি। পশ্চিম-ইউরোপের ভাষাগুলিকে মোটামুটি দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়, প্রথম Romance language, দ্বিতীয় Germanic। এখন দেখা যাক এ দুয়ের ভিতর কোন্ ভাষার কাছে আমাদের মুখের ভাষা বেশি ঋণী।

    নবাবি আমলের কবি ভারতচন্দ্রের মুখে শুনতে পাই যে, তাঁর কালে বাংলায় এই-সব বিলেতি জাতি বাস করত—যথা ১. ফিরিঙ্গি, ২. ফরাসি, ৩. আলেমান, ৪. ওলন্দাজ, ৫. দিনেমার, ৬. ইংরেজ। ফরাসি অবশ্য French, আলেমান German, ওলন্দাজ Dutch, দিনেমার Dane, আর ইংরেজ English, তা হলে ফিরিঙ্গি হচ্ছে নিশ্চয়ই পোর্তুগিজ; French ফিরিঙ্গি না হয়ে পোর্তুগিজ যে কেন তা হল, সে রহস্যের সন্ধান আমি জানি নে। শব্দের রূপান্তরের আইনকানুন আমি জানি নে।

    ভারতচন্দ্রের সঙ্গে সব জাতের চাক্ষুষ পরিচয় ছিল; তিনি বহুকাল ফরাসডাঙায় বাস করেছিলেন, আর পোর্তুগিজদের আড্ডা ছিল হুগলি, ওলন্দাজদের চুঁচুড়া, দিনেমারদের শ্রীরামপুর সব-শেষ ইংরেজদের কলকাতা। মধ্য থেকে আলেমান কোত্থেকে এসে জুটল আর তাদের বসতিই বা ছিল কোথায়, তা আমার অবিদিত। ফরাসডাঙায় যে জার্মানরা ছিল না, সেটা নিশ্চিত; আর কলকাতায় যে ছিল সে বিষয়েও সন্দেহ আছে। তবে সেকালে কোন্ জাতের সঙ্গে অপরকার যে entente cordiale ছিল সে কথা আমি বলতে পারি নে; যেহেতু আমি ঐতিহাসিক নই। আমার বিশ্বাস আলেমানরা তখন আসমানে বাস করত, অর্থাৎ তারা সর্বত্রই ছিল।

    উল্লিখিত ছটি জাতের মধ্যে প্রথম দুটির ভাষা Romance. বাকি চারটির Germanic i এই Romance ভাষার দেদার কথা বাঙালির অজ্ঞাতসারে বাংলা ভাষার অন্তর্ভূত হয়ে গেছে। বহুকাল পূর্বে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় বাংলার অঙ্গীভূত পোর্তুগিজ শব্দাবলীর একটি ফর্দ দেখে আমার চক্ষু স্থির হয়ে যায়, কেননা সে ফর্দ ছিল দশ পাতা লম্বা। তার পর আমাদের ভাষায় ফরাসি শব্দও বড়ো কম নেই। তাসখেলার ‘জুয়ো’ থেকে আরম্ভ করে প্রমারার ‘দুস’ ‘ত্ৰেস’ ‘তেরান্তা’ ‘কোরেন্তা’ ‘মাছ’ ‘কাতুর’ পর্যন্ত প্রায় সকল কথাই ফরাসি। ঐ সূত্রে দেখতে পাই জার্মানিক ভাষারও দু-চার কথা আমাদের ভাষায় ঢুকে গিয়েছে। শুনতে পাই ‘হরতন’ ‘রুইতন’ হচ্ছে খাস-ওলন্দাজি। এ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, নবাবের আমলে দু হাতে বিলেতি কথা আত্মসাৎ করে বাংলা ভাষা তার দেহ পুষ্ট করেছে। এতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই, বিদেশী শব্দকে স্বদেশী করা হচ্ছে আমাদের ভাষার চিরকেলে ধৰ্ম।

    মুসলমান যুগে কত ফারসি ও আরবি শব্দ যে বাংলা হয়ে গেছে তা কি আর বলা প্রয়োজন? আমরা হচ্ছি কৃষিজীবী জাত, অথচ ‘জমি’ থেকে ‘ফসল’ পর্যন্ত কৃষিসংক্রান্ত প্রায় সকল কথাই হয় ফারসি নয় আরবি। আর জমিদারি সংক্রান্ত সকল কথাই ঐ আরবি-ফারসির দান; ও-ভাষার ভিতর সংস্কৃতের লেশমাত্র নেই। আমাদের কর্মজীবনের যা ভিত্তি, অর্থাৎ দেশের মাটি, তারও নাম জমি। বাংলার মতো মিশ্রভাষা এক উর্দু বাদ দিলে ভারতবর্ষে বোধ হয় আর দ্বিতীয় নেই। তার পর আমাদের কর্মজীবনের যা চূড়া, অর্থাৎ আইন-আদালত, তার ভাষাও আগাগোড়া আরবি- ফারসি। আরজি থেকে রায় ফয়সালা পর্যন্ত মামলার আদ্যোপান্ত সকল কথাই বাংলা ভাষাকে মুসলমানের দান। ইংরেজরা আজকাল ডিক্রি দেন বটে কিন্তু তা ‘জারি’ করতে হলেই ইংরেজি ছেড়ে ফারসির শরণাপন্ন হতে হয়। এ কথা যে সত্য, তা যে-কোনো মোক্তারি সেরেস্তার আমলা হলপ করে বলবে।

    ৩

    পরের ধনে পোদ্দারি করা হচ্ছে যখন বাংলা ভাষার চিরকেলে বদ অভ্যাস, তখন এ যুগে যে তা অসংখ্য ইংরেজি শব্দ শুধু মুখস্থ নয় উদরস্থও করবে সে তো ধরা কথা। এতে বাংলা তো তার স্বধর্মই পালন করে চলেছে। তবে আমাদের ভাষার পরকে আপন করার স্বভাবের বিরুদ্ধে আজ কেন আপত্তি উঠেছে? এর একটি কারণ, পূর্বে বাংলা ভাষা বিদেশী শব্দ বেমালুম আত্মসাৎ করেছে; অপরপক্ষে আজ তার এই চুরি-বিদ্যেটা এক ক্ষেত্রে সহজেই ধরা পড়ে। সেকালে বাংলা মুসলমানদের কাছ থেকে কর্মের ভাষা নিয়েছিল, পোর্তুগিজ-ফরাসিদের কাছ থেকে নিয়েছিল শুধু জিনিসের নাম, আর আজ আমরা ইংরেজি থেকে ও দুই জাতীয় কথা তো নিচ্ছিই, উপরন্তু তার জ্ঞানের ভাষাও আত্মসাৎ করছি। প্রথম দুটির ব্যবহার হচ্ছে লৌকিক আর শেষটির সাহিত্যিক; লৌকিক কথার চুরিকে চুরি বলে ধরা যায় না, কেননা তার ভিতর অসংখ্য লোকের হাত আছে, ও হচ্ছে সামাজিক আত্মার কাজ, ওর জন্য ব্যক্তিবিশেষকে দায়ী করা চলে না। অপরপক্ষে সাহিত্যিক চৌর্য ব্যক্তিবিশেষের কাজ, অতএব সেটা ধরাও যায়, ও সে কথা-চোরকে শাসন করাও যায়।

    ৪

    কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই দেখতে পাবেন যে, উক্ত লৌকিক ও সাহিত্যিক চুরি, উভয় ব্যাপারেরই মূলে আছে একই গরজ।

    মুসলমানরা আমাদের দেশে যে-সব নতুন কছমের আদালত-কাছারি আইন-কানুন এনেছে তাদের সঙ্গে তাদের বিদেশী নামও এসেছে। এবং সেই আইন-আদালত যেমন সমাজের উপর চেপে বসেছে, তাদের নামও তেমনি ভাষার ভিতর ঢুকে বসেছে।

    ফিরিঙ্গিরা যে-সব নতুন জিনিস এ দেশে নিয়ে এসেছে আর আমাদের ঘরে ঘরে যার স্থান হয়েছে, তাদের নামও আমাদের মুখে মুখে চলেছে। তাস হিন্দুরা খেলত না, তারা খেলত পাশা; মুসলমানরাও খেলত না, তারা খেলত হয় সতরঞ্চ নয় গঞ্জিফা। ফিরিঙ্গিরা যখন দেশে তাস আনলে তখন শুধু বিন্তি নয় প্রমারা খেলতেও আমরা শিখলুম, ফলে ফরাসি কথা জুয়ো বাংলা হয়ে গেল, আর সেই সঙ্গে জুয়ো-খেলিয়ে বাঙালিরা ফরাসিতে যাকে বলে জুয়াড়ি তাই হয়ে উঠল

    এ যুগে ইংরেজেরা আমাদের অনেক জিনিস দিয়েছে, যা আমাদের ভাষায় স্বনামে ও আমাদের ঘরে স্বরূপে আছে ও থেকেও যাবে। একটা সর্বলোকবিদিত উদাহরণ দেওয়া যাক। বোতল গেলাস বাংলা ভাষা থেকে কখনো বেরিয়ে যাবে না, কেননা ও দুই চিজও বাংলাদেশ থেকেও কখনো বেরিয়ে যাবে না। বাংলা যদি একদম বেসুরা হয়ে যায়, তা হলেও বাঙালিরা ওষুধ খাবে, আর মাথা ঠাণ্ডা করবার জন্য তেল মাখবে। অতএব আমাদের কাচের পাত্র চাই। তার পর ইংরেজ-প্রবর্তিত নূতন কর্মজীবনও তৎসম অবস্থায় না হোক তদ্ভব অবস্থায় থেকে যাবে। আর সে কারণ বাংলা ভাষায় সে জীবনের বিলেতি নাম সব, তৎসম-রূপে না হোক তদ্ভব-রূপে বজায় থাকবে।

    এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ইংরেজি জ্ঞানের ভাষাও কতক পরিমাণে বাংলা ভাষার অন্তরঙ্গ হয়ে থাকবে। ইংরেজি শিক্ষার প্রসাদে অনেক নূতন জ্ঞান, অনেক নূতন ভাব আমাদের মনের ভিতর ঢুকে গিয়েছে, তাই তাদের বিলেতি নামও আমাদের মুখে মুখে চলেছে। যেহেতু দেশের জনগণ ইংরেজি-শিক্ষিত নয়, সে কারণ ঐ-সব ইংরেজি কথা স্বল্পসংখ্যক লোকের মুখেই শোনা যায়; আর তাদের বিদেশী ধ্বনি আমাদের কানে সহজেই ধরা পড়ে। আর সেই কারণেই বাংলা ভাষা থেকে অনেকে চান ‘আইডিয়া’কে গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দিতে।

    বাঙালির মুখ থেকে বিলেতি কথা কেউ খসাতে পারবেন না, অতএব সে চেষ্টা কেউ করেন ও না। আমরা চাই শুধু লিখিত ভাষায় বিদেশী শব্দ বয়কট করতে। কিন্তু আমাদের এই সাতশো বছরের বর্ণসংকর ভাষাকে যদি আবার আর্য করতে হয়, তা হলে ভাষার আর্যসমাজীদের আগে সে ভাষাকে শুদ্ধ করতে হবে, তার পরে তার পৈতে দিতে হবে।

    এ চেষ্টা বাংলায় ইতিপূর্বে একবার মহাবাক্যাড়ম্বরের সঙ্গে হয়ে গেছে। ফোর্ট উইলিয়মের পণ্ডিত মহাশয়েরা যে গদ্য রচনা করে গিয়েছেন তাতে ফারসি-আরবির স্পর্শমাত্র নেই। তাঁদের ঐ তিরস্করণী বুদ্ধির প্রতাপে বাংলা ভাষা থেকে শুধু যে আরবি-ফারসি বেরিয়ে গেল তাই নয়, সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য তদ্ভব কথাও সাহিত্য হতে বহিষ্কৃত হল। কিছুকাল পূর্বে বাংলা সাহিত্যে কারো বিয়ে করবার সাধ্য ছিল না, সকলেই বিবাহ করতে বাধ্য হত। আর বিবাহ করেও কারো নিস্তার ছিল না, কেননা ও-সাহিত্যে স্ত্রীকে কেউ ভালোবাসতে পারত না, সকলকে তার সঙ্গে প্রণয় করতে হত। শুধু অসংখ্য কথা যে বেরিয়ে গেল তাই নয়, ভাষার কলকব্জাও সব বদলে গেল। দ্বারা সহিত কর্তৃক পরন্তু অপিচ যদ্যপিস্যাৎ প্রভৃতির সাহায্য ব্যতীত উক্ত সাধুভাষায় পদ আর বাক্য হতে পারত না। ফলে বাঙালির মুখে যা ছিল active, বাঙালির লেখায় তা passive হয়ে পড়ল। বাংলা ভাষার উপর এই আর্য অত্যাচার বাঙালি যে বেশিদিন সহ্য করতে পারে নি, তার সাক্ষাৎপ্রমাণ স্বরূপ ষাট বৎসর আগে বাঙালির ওড়ানো বিদ্রোহের দুটি লাল পতাকা আজও আমাদের সাহিত্যগগনে জ্বলজ্বল করছে। আলালের ঘরের দুলাল আর হুতোম প্যাঁচার নক্শা যে বাংলা সাহিত্যে যুগান্তর এনেছিল তার সাক্ষী স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র।

    পণ্ডিত মহাশয়েরা যখন বাংলা ভাষার যবন-দোষ ঘোচাতে পারেন নি তখন আমরাও তা পারব না, কেননা আমাদের আধুনিক সাহিত্যের সংস্কৃত বেশধারী বহু শব্দকে আঁচড়ালেই তার ভিতর থেকে আহেল বিলেতি ভাব বেরিয়ে পড়ে। ‘আইডিয়া’ বাদ দিয়ে বাংলা আজ আমরা কেউ লিখতে পারি নে। অতএব আমার নিবেদন এই যে, কোনো নতুন বিদেশী কথাকে বয়কট করা কিংবা পুরনো বিদেশী শব্দকে বাংলা ভাষা থেকে বহিষ্কৃত করবার চেষ্টা করা, শুধু বৃথা সময় নষ্ট করা। আমাদের ভাষায় অনেক নতুন কথা আপনা হতেই ঢুকবে, আর অনেক পুরনো কথা আপনা হতেই বেরিয়ে যাবে, আর তা হবে তাদের জাতিবর্ণনির্বিচারে।

    এ পত্রের যবনিকা পতনের পূর্বে আর-একটি কথা বলব। এ সত্যটা এখন ধরা পড়েছে যে, বাংলা ভাষা বাঙালির ভাষা নয়। বংশে বাঙালি হচ্ছে মঙ্গল-দ্রারিড়, আর তার ভাষা হচ্ছে সংস্কৃতের প্রপৌত্রী। ‘বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহাতি নরোহপরাণি’ বাংলার আদিম অধিবাসীরা তথা স্বভাষা ত্যাগ করে মাগধী প্রাকৃত গ্রহণ করেছিল। সেই দিন থেকে এ দেশের লোকের মনেরও পুনর্জন্ম হয়েছে, কেননা মন আর ভাষা একই জিনিস। আমরা যদি এখন বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় ফিরে যেতে চাই তা হলে আমাদের ফিরতে হবে আদি-দ্রাবিড়+আদি-মঙ্গল ভাষায়; কিন্তু সে ভাষাও হবে সংকর।

    বাঙালি যে দেহে সংকর, মনে সংকর, ভাষায় সংকর—এর জন্যে দোষী আমরা নই, কেননা বাঙালি জাতি আমাদের সৃষ্টি করেছে, আমরা বাঙালি জাতিকে সৃষ্টি করি নি।

    এই জাতিভেদের দেশে বাস ক’রে শুধু দেহে নয় মনেও ছুঁতমার্গী হওয়া আমাদের পক্ষে স্বাভাবিক; তবে এই মিশ্রণের জন্য দুঃখ করা বৃথা, কেননা ও-পাপ নিজের দেহ-মন থেকে দূর করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। এ অবস্থায় বাইরের জিনিসকে আত্মসাৎ করা যে প্রাণের লক্ষণ, নব- আয়ুর্বেদের এই মতকে মেনে নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকাই ভালো। ২৪ জুন ১৯২২।

    জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩২৯

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    Related Articles

    প্রমথ চৌধুরী

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Our Picks

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গোয়েন্দা কৃষ্ণা – প্রভাবতী দেবী সরস্বতী

    September 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.