Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গোয়েন্দা কৃষ্ণা – প্রভাবতী দেবী সরস্বতী

    September 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    প্রমথ চৌধুরী এক পাতা গল্প736 Mins Read0

    সুরের কথা

    আপনারা দেশী বিলেতি সংগীত নিয়ে যে বাদানুবাদের সৃষ্টি করেছেন, সে গোলযোগে আমি গলাযযাগ করতে চাই।

    এবিষয়ে বক্তৃতা করতে পারেন এক তিনি, যিনি সংগীতবিদ্যার পারদশী; আর-এক তিনি, যিনি সংগীতশাস্ত্রের সারদর্শী অর্থাৎ যিনি সংগীত সম্বন্ধে হয় সর্বজ্ঞ, নয় সর্বজ্ঞ। আমি শেষোক্ত শ্রেণীর লোক, অতএব এবিষয়ে আমার কথা বলবার অধিকার আছে।

    আপনাদের সুরের আলোচনা থেকে আমি যা সার সংগ্রহ করেছি সংক্ষেপে তাই বিবত করতে চাই। বলা বাহুল্য, সংগীতের সুর ও সার পরস্পর পরস্পরের বিরোধী। এর প্রথমটি হচ্ছে কানের বিষয়, আর দ্বিতীয়টি জ্ঞানের। আমরা কথায় বলি সরসার, কিন্তু সে দ্বন্দ্বসমাস হিসেবে।

    সব বিষয়েরই শেষকথা তার প্রথমকথার উপরেই নির্ভর করে; যে বস্তুর আমরা আদি জানি নে, তার অন্ত পাওয়া ভার। অতএব কোনো সমস্যার চড়ান্ত মীমাংসা করতে হলে তার আলোচনা ক-খ থেকে শুরু করাই সনাতন পদ্ধতি; এবং এক্ষেত্রে আমি সেই সনাতন পদ্ধতিই অনুসরণ করব।

    অবশ্য একথা অস্বীকার করা যায় না যে, এমন লোক ঢের আছে যারা দিব্যি বাংলা বলতে পারে অথচ ক-খ জানে না; আমাদের দেশের বেশির ভাগ স্ত্রী-পুরুষই তো ঐ দলের। অপরপক্ষে, এমন প্রাণীরও অভাব নেই, যারা ক-খ জানে অথচ বাংলা ভালো বলতে পারে না— যথা আমাদের ভদ্রশিশুর দল। অতএব এরূপ হওয়াও আশ্চর্য নয় যে— এমন গুণী ঢের আছে, যারা দিব্যি গাইতে-বাজাতে পারে অথচ সংগীতশাস্ত্রের ক-খ জানে না; অপরপক্ষে এমন জ্ঞানীও ঢের থাকতে পারে, যারা সংগীতের শুধু ক-খ নয় অনুঘরবিসর্গ পর্যন্ত জানে, কিন্তু গানবাজনা জানে না।

    তবে যারা গানবাজনা জানে, তারা গায় ও বাজায়; যারা জানে না, তারা ও-বস্তু নিয়ে তর্ক করে। কলধনি না করতে পারি, কলরব করবার অধিকার আমাদের সকলেরই আছে। সুতরাং এই তকে যোগ দেওয়াটা আমার পক্ষে অনধিকারচর্চা হবে না। অতএব আমাকে ক-খ থেকেই শুরু করতে হবে, অ-আ থেকে নয়। কেননা, আমি যা লিখতে বসেছি, সে হচ্ছে সংগীতের ব্যঞ্জনলিপি, স্বরলিপি নয়। আমার উদ্দেশ্য সংগীতের তত্ত্ব ব্যক্ত করা, তার স্বত্ব সাব্যস্ত করা নয়। আমি সংগীতের সারদর্শী, সুরস্পর্শী নই।

     

    ২.

    হিন্দুসংগীতের ক-খ-জিনিসটে কি?–বলছি।

    আমাদের সকল শাস্ত্রের মুল যা, আমাদের সংগীতেরও মূল তাই–অর্থাৎ শ্রুতি।

    শুনতে পাই, এই শ্রুতি নিয়ে সংগীতাচার্যের দল বহুকাল ধরে বহু বিচার করে আসছেন, কিন্তু আজ-তক, এমন-কোনো মীমাংসা করতে পারেন নি, যাকে ‘উত্তর’ বলা যেতে পারে অর্থাৎ যার আর উত্তর নেই।

    কিন্তু যেহেতু আমি পণ্ডিত নই, সে কারণ আমি ওবিষয়ের একটি সহজ মীমাংসা করেছি, যা সহজ মানুষের কাছে সহজে গ্রাহ্য হতে পারে।

    আমার মতে শ্রুতির অর্থ হচ্ছে সেই ঘর, যা কানে শোনা যায় না; যেমন দর্শনের অর্থ হচ্ছে সেই সত্য, যা চোখে দেখা যায় না। যেমন দর্শন দেখবার জন্য দিব্যচক্ষু, চাই, তেমনি শ্ৰতি শোনবার জন্য দিব্যকণ চাই। বলা বাহুল্য, তোমার-আমার মত সহজ মানুষদের দিব্যচক্ষুও নেই, দিব্যকণও নেই; তবে আমাদের মধ্যে কারও কারও দিব্যি চোখও আছে, দিব্যি কানও আছে। ওতেই তো হয়েছে মুশকিল। চোখ ও কান সম্বন্ধে দিব্য এবং দিব্যি— এ দুটি বিশেষণ, কানে অনেকটা এক শোনালেও মানেতে ঠিক উলটো।

    সংগীতে যে সাতটি শাদা আর পাঁচটি কালো সুর আছে, এ সত্য পিয়ানো কিংবা হারমোনিয়ামের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে সকলেই দেখতে পাবেন। এই পাঁচটি কালো সুরের মধ্যে যে, চারটি কোমল আর একটি তীব্র তা আমরা সকলেই জানি এবং কেউ-কেউ তাদের চিনিও। কিন্তু চেনাশনোজিনিসে পণ্ডিতের মনস্তুষ্টি হয় না। তাঁরা বলেন যে, এদেশে ঐ পাঁচটি ছাড়া আরও কালো এবং এমন কালো সুর আছে, যেমন কালো বিলেতে নেই। শাস্ত্রমতে সেসব হচ্ছে অতিকোমল ও অতিতীব্র। ঐ নামই প্রমাণ যে, সেসব অতীন্দ্রিয় সুর এবং তা শোনবার জন্যে দিব্যকর্ণ চাই–যা তোমার-আমার তো নেই, শাস্ত্রীমহাশয়দেরও আছে কি না সন্দেহ। আমার বিশ্বাস, তাঁদেরও নেই। শ্ৰতি সেকালে থাকলেও একালে তা স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। স্মৃতিই যে শ্ৰতিধরদের একমাত্র শক্তি, এ সত্য তো জগদ্বিখ্যাত। সুতরাং একথা নির্ভয়ে বলা যেতে পারে যে, সংগীত সম্বন্ধে পরের মুখে ঝাল খাওয়া, অর্থাৎ পরের কানে মিষ্টি শোনা, যাঁদের অভ্যাস শুধু তাঁদের কাছেই শ্রুতি এতিমধুর। আমি স্থির করেছি যে, আমাদের পক্ষে ঐ বারোই ভালো; অবশ্য সাতপাঁচ ভেবেচিন্তে। ও দ্বাদশকে ছাড়াতে গেলে, অর্থাৎ ছাড়লে, আমাদের কানকে একাদশী করতে হবে।

    আর ধরুন, যদি ঐ দ্বাদশ সরের ফাঁকে ফাঁকে সত্যসত্যই শ্ৰতি থাকে, তাহলে সেসব স্বর হচ্ছে অনুঘর। সা- এবং নি-র অন্তর্ভূত দশটি সুরের গায়ে যদি কোনো অসাধারণ পণ্ডিত দশটি অনুঘর জুড়ে দিতে পারেন, তাহলে সংগীত এমনি সংস্কৃত হয়ে উঠবে যে, আমাদের মত প্রাকৃতজনেরা তার এক বর্ণও বুঝতে পারবে না।

     

    ৩.

    এসব তো গেল সংগীতের বর্ণপরিচয়ের কথা, শব্দবিজ্ঞানের নয়। শব্দেরও যে একটা বিজ্ঞান আছে, এ জ্ঞান সকলের নেই। সুতরাং সরের। সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব গ্রাহ্য না হলেও আলোচ্য।

    শব্দজ্ঞানের মতে শ্রুতি অপৌরুষেয়; অর্থাৎ স্বরগ্রাম কোনো পুরুষ কতৃক রচিত হয় নি, প্রকৃতির বক্ষ থেকে উত্থিত হয়েছে। একটি একটানা তারের গায়ে ঘা মারলে প্রকৃতি অমনি সাত-সরে কেঁদে ওঠেন। এর থেকে বৈজ্ঞানিকেরা ধরে নিয়েছেন যে, প্রকৃতি তাঁর একতারায় যে সকাতর সাগম আলাপ করেন, মানুষে শুধু তার নকল করে। কিন্তু সে নকলও মাছিমারা হয় না। মানুষের গলগ্রহ কিংবা যন্ত্রস্থ হয়ে প্রকৃতিদত্ত স্বরগ্রামের কোনো সুর একটু চড়ে, কোনো সুর একটু ঝুলে যায়। তা তো হবারই কথা।  প্রকৃতির হদয়তলী থেকে এক ঘায়ে যা বেরয়, তা যে একঘেয়ে হবে–এ তো স্বতঃসিদ্ধ। সুতরাং মানুষে এইসব প্রাকৃত সরকে সংস্কৃত করে নিতে বাধ্য।

    এ মত লোকে সহজে গ্রাহ্য করে; কেননা, প্রকৃতি যে একজন মহা ওস্তাদ— এ সত্য লৌকিক ন্যায়েও সিদ্ধ হয়। প্রকৃতি অন্ধ, এবং অন্ধের সংগীতে বৎপত্তি যে সহজ, এ সত্য তো লোকবিশ্রত।

    প্রকৃতির ভিতর যে শব্দ আছে শুধু শব্দ নয়, গোলযোগ আছেএকথা সকলেই জানেন; কিন্তু তাঁর গলায় যে সুর আছে, একথা সকলে মানেন না। এই নিয়েই তো আট ও বিজ্ঞানে বিরোধ।

    আর্টিস্টরা বলেন, প্রকৃতি শুধু অন্ধ নন, উপরন্তু বধির। যাঁর কান নেই, তাঁর কাছে গানও নেই। সাংখ্যদর্শনের মতে পুরুষ দ্রষ্টা এবং প্রকৃতি নর্তকী; কিন্তু প্রকৃতি যে গায়িকা এবং পুরুষ শ্রোতা–একথা কোনো দর্শনেই বলে না। আর্টিস্টদের মতে তৌত্রিকের একটিমাত্র অঙ্গ-নৃত্যই প্রকৃতির অধিকারভুক্ত, অপর দুটি— গীত বাদ্য— তা নয়।

    এর উত্তরে বিজ্ঞান বলেন, এ বিশ্বের সকল রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দের উপাদান এবং নিমিত্তকারণ হচ্ছে ঐ প্রকৃতির নত্য। কথাটা উড়িয়ে দেওয়া চলে না, অতএব পুড়িয়ে দেখা যাক ওর ভিতর কতটুকু খাঁটি মাল আছে।

    শাস্ত্রে বলে, শব্দ আকাশের ধর্ম; বিজ্ঞান বলে, শব্দ আকাশের নয় বাতাসের ধর্ম। আকাশের নত্য অর্থাৎ সর্বাগের স্বচ্ছন্দ কম্পন থেকে যে আলোকের, এবং বাতাসের উত্তরপ কম্পন থেকে যে ধনির উৎপত্তি হয়েছেতা বৈজ্ঞানিকেরা হাতে-কলমে প্রমাণ করে দিতে পারেন। কিন্তু আর্ট বলে, আত্মার কম্পন থেকে সরের উৎপত্তি, সতরাং জড়প্রকৃতির গভে তা জন্মলাভ করে নি। আত্মা কাঁপে আনন্দে, সৃষ্টির চরম আনন্দে; আর আকাশ-বাতাস কাঁপে বেদনায়, সৃষ্টির প্রসববেদনায়। সুতরাং আর্টিস্টদের মতে সুর শব্দের অনুবাদ নয়, প্রতিবাদ।

    যেখানে আটে ও বিজ্ঞানে মতভেদ হয়, সেখানে আপোস-মীমাংসার জন্য দর্শনকে সালিশ মানা ছাড়া আর উপায় নেই। দার্শনিকেরা বলেন, শব্দ হতে সুরের কিংবা সুর হতে শব্দের উৎপত্তি— সে বিচার করা সময়ের অপব্যয় করা। এস্থলে আসল জিজ্ঞাস্য হচ্ছে, রাগ ভেঙে সুরের, না সুর জুড়ে রাগের সৃষ্টি হয়েছে এককথায়, সর আগে না রাগ আগে। অবশ্য রাগের বাইরে সাগমের কোনো অস্তিত্ব নেই, এবং সাগমের বাইরে রাগের কোনো অস্তিত্ব নেই। সুতরাং সর পর্বরাগী কি অনুরাগী, এই হচ্ছে আসল সমস্যা। দার্শনিকেরা বলেন যে, এ প্রশ্নের উত্তর তাঁরাই দিতে পারেন যাঁরা বলতে পারেন বীজ আগে কি বক্ষ আগে; অর্থাৎ কেউ পারেন না।

    আমার নিজের বিশ্বাস এই যে, উক্ত দার্শনিক সিদ্ধান্তের আর-কোনো খণ্ডন নেই। তবে বক্ষায়ুর্বেদীরা নিশ্চয়ই বলবেন যে, বক্ষ আগে কি বীজ আগে, সে রহস্যের ভেদ তাঁরা বালাতে পারেন। কিন্তু তাতে কিছু আসেযায় না। কেননা, ওকথা শোনবামাত্র আর-এক দলের বৈজ্ঞানিক, অর্থাৎ পরমাণবাদীরা, জবাবু দেবেন যে সংগীত আয়ুর্বেদের নয় বায়ুর্বেদের অন্তর্ভূত; অর্থাৎ বিজ্ঞানের বিষে বিষক্ষয় হয়ে যাবে।

    আসল কথা এই যে, আমি কর্তা তুমি ভোত্তা এ জ্ঞান যার নেই, তিনি আর্টিস্ট নন। সুতরাং সংগীত সম্বন্ধে প্রকৃতিকে সম্বােধন করে— তুমি কর্তা আমি ভোক্তা–একথা কোনো আর্টিস্ট কখনো বলতে পারবেন না, এবং ওকথা মুখে আনবার কোনো দরকারও নেই। প্রকৃতির হাতে-গড়া এই বিশ্বসংসার যে আগাগোড়া বেসুরো, তার অকাট্য প্রমাণ আমরা পৃথিবীসদ্ধ লোক পৃথিবী ছেড়ে সরলোকে যাবার জন্য লালায়িত।

    অতএব দাঁড়াল এই যে, সংগীতের উৎপত্তির আলোচনায় তার লয়ের সম্ভাবনাই বেড়ে যায়। তাই সহজ মানুষে চায় তার স্থিতি, ভিত্তি নয়।

     

    ৪.

    অতঃপর দেশী বিলেতি সংগীতের ভেদাভেদ নির্ণয় করবার চেষ্টা করা যাক।

    ।এ দুয়ের মধ্যে আর যা প্রভেদই থাক, তা অবশ্য ক-খ-গত নয়। যে বারো সরে এদেশের সংগীতের মূলধন, সেই বারো সুরই যে সেদেশের সংগীতের মূলধন–একথা সর্ববাদিসম্মত। তবে আমরা বলি যে, সে মূলধন আমাদের হাতে সদে বেড়ে গিয়েছে। আমাদের হাতে কোনো ধন যে সুদে বাড়ে, তার বড়-একটা প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাছাড়া আমি পূর্বে দেখিয়েছি যে, সরের এই অতিসদের লোভে আমরা সংগীতের মূলধন হারাতে বসেছি। সুতরাং এবিষয়ে আর বেশিকিছু বলা নিষ্প্রয়োজন।

    দেশীর সঙ্গে বিলেতি সংগীতের আসল প্রভেদটা ক-খ নিয়ে নয়, করখল নিয়ে। BLA=ব্লে –CLA=ক্লের সঙ্গে কর-খলের, কানের দিক থেকেই হোক আর মানের দিক থেকেই হোক, একটা-যে প্রকাণ্ড প্রভেদ আছে— এ হচ্ছে একটি প্রকাণ্ড সত্য। এ প্রভেদ উপাদানের নয়, গড়নের। অতএব রাগ ও মেলডির ভিতর পার্থক্য হচ্ছে ব্যাকরণের, এবং একমাত্র ব্যাকরণেরই।

    সুতরাং আমরা যদি বিলেতি ব্যাকরণ অনুসারে সুর সংযোগ করি তাহলে তা রাগ না হয়ে মেলডি হবে, এবং তাতে অবশ্য রাগের কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। আমরা ইংরেজি ব্যাকরণ অনুসারে ইংরেজিভাষা লিখলে সে লেখা ইংরেজিই হয়, এবং তাতে বাংলাসাহিত্যের কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না, যদিচ এক্ষেত্রে শুধু ব্যাকরণ নয় শব্দও বিদেশী। কিন্তু যেমন কতকটা ইংরেজি এবং কতকটা বাংলা ব্যাকরণ মিলিয়ে, এবং সেইসঙ্গে বাংলা শব্দের অনুবাদের গোঁজামিলন দিলে, তা বাবু ইংলিশ হয়, এবং উক্ত পদ্ধতি অনুসারে বাংলা লিখলে তা সাধুভাষা হয় তেমনি ঐ দুই ব্যাকরণ মেলাতে বসলে সংগীতেও আমরা রাগ-মেলডির একটি খিচুড়ি পাকাব। সাহিত্যের খিচুড়িভোগে যখন আমার রুচি নেই, তখন সংগীতের ও-ভোগ যে আমি ভোগ করতে চাই নে, সেকথা বলাই বাহুল্য।

     

    ৫.

    দেশী বিলেতি সংগীতের মধ্যে আর-একটা স্পষ্ট প্রভেদ আছে। বিলেতি সংগীতে হারমনি আছে, আমাদের নেই।

    এই হারমনি-জিনিসটে ঘরের যুক্তাক্ষর বই আর-কিছুই নয়, অর্থাৎ ও-বস্তু হচ্ছে সংগীতের বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয়ভাগের অধিকারে। আমাদের সংগীত এখনও প্রথমভাগের দখলেই আছে। আমাদের পক্ষে সংগীতের দ্বিতীয়ভাগের চর্চা করা উচিত কি না, সেবিষয়ে কেউ মনস্থির করতে পারেন নি। অনেকে ভয় পান যে, দ্বিতীয়ভাগ ধরলে তাঁরা প্রথমভাগ ভুলে যাবেন। তা ভুলন আর না-ভুলন, তাঁরা যে প্রথমভাগকে আর আমল দেবেন না, সেবিষয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের সাহিত্য থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, একবার যুক্তাক্ষর শিখলে আমরা অযুক্তাক্ষরের ব্যবহার যুক্তিযুক্ত মনে করি নে এবং অপর-কেউ করতে গেলে অমনি বলে উঠি, সাহিত্যের সর্বনাশ হল, ভাষাটা একদম অসাধ এবং অশদ্ধ হয়ে গেল। তবে সংগীতে এ বিপদ ঘটবার বিশেষ সম্ভাবনা নেই। সেদিন একজন ইংরেজ বলছিলেন যে, যে সংগীতে ছয়টি রাগ এবং প্রতি রাগের ছয়টি করে স্ত্রী আছে, সেখানে হারমনি কি করে থাকতে পারে। আমি বলি, ও তো ঠিকই কথা, বিশেষত স্বামী যখন মতিমান রাগ আর স্ত্রীরা প্রত্যেকেই এক-একটি মতিমতী রাগিণী। অবশ্য এরূপ হবার কারণ আমাদের সংগীতের কৌলিন্য। আমাদের রাগসকল যদি কুলীন না হত, তাহলেও আমরা হারমনির চর্চা করতে পারতুম না; কেননা, ও-বস্তু আমাদের ধাতে নেই। আমাদের সমাজের মত আমাদের সংগীতেও জাতিভেদ আছে, আর তার কেউ আরকারও সঙ্গে মিশ্রিত হতে পারে না। মিশ্রিত হওয়া দূরে থাক, আমরা পরস্পর পরস্পরকে স্পর্শ করতে ভয় পাই; কেননা, জাতির ধর্মই হচ্ছে জাত বাঁচিয়ে মরা। আর মিলে-মিশে এক হয়ে যাবার নামই হচ্ছে হারমনি।

    পৌষ ১৩২৩

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    Related Articles

    প্রমথ চৌধুরী

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Our Picks

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025

    গোয়েন্দা কৃষ্ণা – প্রভাবতী দেবী সরস্বতী

    September 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.