Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রাচীন চীনা দর্শন : লাওসি ও কনফুসিয়াস – হেলাল উদ্দিন আহমেদ

    কনফুসিয়াস এক পাতা গল্প78 Mins Read0

    কনফুসিয়াসের জীবন ও দর্শন

    কনফুসিয়াস (খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫১-৪৭৯)

    চীনা ভাষায় কং ফুসি বা প্রভু কং, লাতিনে কনফুসিয়াস; জন্মেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫১ সালে, চীনের লু নামক ক্ষুদ্র রাজ্যে। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট চীনা দার্শনিক যাঁর মতবাদ ও দর্শন পূর্ব এশিয়ায় চীনা, জাপানি, কোরীয় এবং ভিয়েতনামি সমাজের জীবন, কর্ম, নৈতিকতা ও আদর্শকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। এমনকি বর্তমানকালের মার্কসবাদী চীনেও তাওবাদ ও বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি মূলত কনফুসীয় দর্শনই সমাজ ও সংস্কৃতির ভিত্তি হিসেবে বিরাজমান।

    কনফুসিয়াসের দর্শন ব্যক্তিগত ও সরকারি কর্মে সদাচরণ, যথাযথ সামাজিক সম্পর্ক, ন্যায়বিচার ও আন্তরিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। হ্যান আমলে অন্যান্য মতবাদের তুলনায় এসব মূল্যবোধ চীনে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। কালক্রমে কনফুসিয়াসের ধ্যান-ধারণাকে একটি দার্শনিক মতবাদে (কনফুসিয়ানিজম) রূপান্তরিত করা হয়েছিল। জেসুইট মাতিও রিচ্চি একে সর্বপ্রথম ইউরোপে পরিচয় করিয়ে দেন।

    মূলত তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অ্যানালেক্টস’ বা কথোপকথন’এর মাধ্যমে কনফুসিয়াসের ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়, যেটা তাঁর মৃত্যুর পর শিষ্যরা সংকলিত করেছিল।

    ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার

    দর্শনের শতধারা আন্দোলনের সূচনালগ্নে চীনের লু প্রদেশের কুফু শহরে (বর্তমানে শ্যানডঙ প্রদেশের অন্তর্গত) কনফুসিয়াসের জন্ম। তাঁর পরিবার ছিল আদিতে সম্ভ্রান্ত বংশের। তবে তারা স্থানচ্যুত হয়ে সঙ প্রদেশ থেকে পালিয়ে এসে দারিদ্র্যে নিপতিত হয়েছিল। জন্মের সময় তাঁর পিতার বয়স ছিল সত্তর আর মায়ের মাত্র আঠারো। তিন বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর তাঁর মাতাই তাঁকে দারিদ্র্যের মধ্যে লালন-পালন করেন। তাঁর সামাজিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে তিনি পুরোনো অভিজাত-সম্প্রদায় এবং সাধারণ জনগণের মধ্যবর্তী ‘শি’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

    শোনা যায়, শিশুকালে কনফুসিয়াস ধর্মীয় উৎসর্গ-মন্ডপে প্রার্থনার পাত্র রেখে আনন্দ পেতেন। উনিশ বছর বয়সে তিনি ছু ছুয়ান নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন যার ঔরসে তাঁর প্রথম সন্তান কংলি’র জন্ম হয়। বিশ বছর বয়সে কনফুসিয়াস একজন রাখাল, মেষপালক, কেরানি ও হিসাব- রক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। তেইশ বছর বয়সে তাঁর মাতার মৃত্যু হয় এবং একে কেন্দ্র করে তিনি তিন বছরব্যাপী শোকপালন করেন।

    যৌবনকালে লু রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনি পুলিশ কমিশনার এবং শেষে তিপ্পান্ন বছর বয়সে বিচারমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। লু রাজ্যে আরো দু’বছর চাকরি করার পর ডিউকের রাজনৈতিক কর্মকান্ড অপছন্দ হওয়ায় তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

    কনফুসীয় মতবাদের উপর প্রধান গ্রন্থ ‘লুনইউ’ বা ‘অ্যানালেক্টস’-এর বিবরণ অনুযায়ী অংশত কনফুসিয়াসের বিচক্ষণ শাসন— পদ্ধতির কারণে লু রাজ্য সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল। কথিত আছে, লু রাজ্যের ক্রমবর্ধমান শক্তিতে পার্শ্ববর্তী ছি রাজ্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরপর লু’র সংস্কার প্রয়াস বাধাগ্রস্ত করতে ছি রাজ্য উপহার হিসেবে একশত উঁচুমানের অশ্ব এবং আশিজন সুন্দরী নর্তকী লু রাজ্যের ডিউকের জন্য প্রেরণ করে। ডিউক এদেরকে নিয়ে আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে উঠেন এবং পরপর তিন দিন সরকারি দায়িত্ব পালনে বিরত থাকেন। এরপর পশু বলি দেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি রীতি অনুযায়ী সভাসদদের মধ্যে মাংস বিতরণ করলেন না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কনফুসিয়াস লু রাজ্য ত্যাগ করেন।

    পরবর্তী সময়ে কনফুসিয়াস ওয়াই, সঙ, চেন ও কাই রাজ্যসহ উত্তর- মধ্য চীনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো পরিভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক ধারণাগুলো প্রচার করেন, যদিও নিজ রাজ্যসহ কোথাও তিনি সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেন নি।

    অ্যানালেক্টস-এর ভাষ্য অনুযায়ী আটষট্টি বছর বয়সে কনফুসিয়াস নিজগৃহে ফিরে আসেন। ‘পাঁচটি ক্লাসিক’ নামক গ্রন্থাবলির মাধ্যমে শিষ্যদের মাঝে প্রাচীন প্রাজ্ঞতা প্রচার করে তিনি তাঁর অন্তিম বছরগুলো অতিক্রান্ত করেছিলেন।

    তাঁর পুত্র এবং প্রিয় শিষ্যের প্রয়াণে শোকগ্রস্ত হয়ে কনফুসিয়াস বাহাত্তর (মতান্তরে তিয়াত্তর) বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।

    ‘লুনইউ’ বা ‘কথপোকথন’

    ‘লুনইউ’ (ইংরেজিতে ‘অ্যানালেক্টস’ বা কথপোকথন) ছিল কনফুসিয়াসের কর্ম ও দর্শনের উপর লিখিত প্রধান গ্রন্থ। এতে মূলত বিভিন্ন বিষয়ে শিষ্যদের সঙ্গে কনফুসিয়াসের সংলাপ বা আলাপ-আলোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭৫ হতে ৪২১ সালের মধ্যে কনফুসিয়াসের অনুসারীরা তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে এ গ্রন্থটি রচনা করে। কনফুসীয় মতবাদের প্রতিনিধিত্বশীল গ্রন্থ হিসেবে চীন ও পূর্ব এশিয়ার সমাজ, দর্শন ও মূল্যবোধে এর এখনও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

    কনফুসিয়াসের শিক্ষা

    অ্যানালেক্টস’এ কনফুসিয়াস নিজেকে একজন ‘সঞ্চারক’ হিসেবে পরিচয় দেন যিনি নিজে কোনো কিছু উদ্ভাবন করেন নি। তিনি ‘অধ্যয়ন’এর উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন এবং এ সংক্রান্ত চীনা চিত্রাক্ষর দিয়েই বইটির সূচনা। জীবন ও সমাজের উপর একটি সুশৃঙ্খল তত্ত্ব দাঁড় করানোর পরিবর্তে তিনি জীবনযাত্রায় কিছু আচার-আনুষ্ঠানিকতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। প্রধানত প্রাচীন গ্রন্থের ক্রমাগত অধ্যয়ন, অতীতের ঘটনাবলী ও মানুষের অনুভূতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বাহ্যিক জগত সম্পর্কে ধারণা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিভাজন, বিশৃঙ্খলা ও রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্তহীন যুদ্ধের সময় তিনি স্বর্গের রীতি অবলম্বনের আহ্বান জানাতেন, যাতে করে মানুষের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।

    কনফুসিয়াসকে অনেক সময় রক্ষণশীলতার প্রবক্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু আরো কাছ থেকে দেখতে গেলে এটা স্পষ্ট হয় যে কনফুসিয়াস এমন এক নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন যাতে প্রাচীন প্ৰতিষ্ঠান ও আচারকে ভিত্তি করে গণমুখী ও যোগ্যতাভিত্তিক শাসকশ্রেণি গড়ে ওঠে। আইন-কানুন দ্বারা প্রজাদের উপর কাঙ্ক্ষিত আচার-আচরণ চাপিয়ে না দিয়ে এ ধরনের শাসক নিজের গুণাবলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণের মধ্যে সঞ্চার করেন।

    কনফুসিয়াসের দর্শনে আচরণের সুনির্দিষ্ট নিয়মের পরিবর্তে দৃষ্টান্তমূলক আচরণের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গুণকেন্দ্রিক নীতিশাস্ত্রের মধ্যে তাঁর নীতিশাস্ত্রকে অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লক্ষ্য অর্জনে পরোক্ষ পন্থার প্রয়োগ তাঁর রচনায় প্রায়শই দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে অ্যানালেট্স’এর দু’টি পংক্তি উল্লেখ করা যায়:

    “আস্তাবল যখন পুড়ে গেল তখন দরবার থেকে ফিরে কনফুসিয়াস জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেউ কি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে’? তিনি সুনির্দিষ্টভাবে অশ্ব সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না”।

    সে যুগে অশ্ব অনেক মূল্যবান হলেও কনফুসিয়াস আস্তাবলের ঘোড়া সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করলেন না। এর মাধ্যমে ঘোড়ার বিপরীতে মানুষের জীবনের গুরুত্বই তিনি তুলে ধরেছিলেন। তাই কনফুসিয়াসের শিক্ষাকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেক পন্ডিত মানবতাবাদেরই একটি রূপ হিসেবে দেখেন।

    তাঁর অনেক বিখ্যাত উক্তির মধ্যে একটি ছিল নিম্নরূপ:

    “কুং জিজ্ঞেস করলো: ‘এমন কোনো বাক্য আছে কি যা একজন ব্যক্তিকে সারাজীবন সঠিক পথ দেখাবে’? প্রভু জবাব দিলেন: তুমি নিজের জন্য যা গ্রহণ করবে না তা অন্যের উপর কখনো চাপিও না’।

    তাঁর অসংখ্য শিষ্য ও অনুসারীরা কনফুসিয়াসের শিক্ষাকে বিস্তারিত বিধি ও আচারে রূপান্তরিত করেছিল। তাঁর মৃত্যুর পর মেনসিয়াস ও সুন যি নামক দার্শনিক কনফুসিয়াসের দর্শনের উপর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। প্রায় এক হাজার বছর পরে ঝু শি তাঁর দর্শনের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, যা নব্য কনফুসিয়ানিজম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ও উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত চীন ও ভিয়েতনামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

    কনফুসিয়াসের দর্শন ও নীতিশাস্ত্র

    যদিও চীনারা কনফুসিয়াসের মতবাদকে ধর্মের মতোই অনুসরণ করে থাকে, এটা কি ধর্ম না অন্য কিছু, এ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহতই আছে। এ মতবাদে কোনো পরকাল নেই, নেই কোনো দেব-দেবী। আত্মার স্বরূপের মতো আধ্যাত্মিক বিষয়াদির ব্যাপারেও এটা উদাসীন।

    এ মতবাদ ব্যাপক হারে গৃহীত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ ছিল সাধারণ চীনা মতামতের সঙ্গে তার সাযুজ্য। কনফুসিয়াসের বিধানাবলির মধ্যে ছিল পারিবারিক আনুগত্যের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা, পুর্বপুরুষের পুজা, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শিশুদের এবং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন, এবং একটি আদর্শ সরকারের ভিত্তি হিসেবে পরিবার গড়ে তোলা। তাঁর বিখ্যাত উদ্ধৃতি ছিল, “তোমার নিজের ক্ষেত্রে যা তুমি কামনা কর না তা অন্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ কোরো না”। তিনি স্মৃতিবিধুরভাবে অতীতকালের কথা স্মরণ করতেন এবং চীনাদেরকে, বিশেষত রাজনীতিকদেরকে পূর্বতন দৃষ্টান্তের আলোকে নিজেদের গড়ে তুলতে বলতেন। “উত্তম মানব খোঁজে নিজের মধ্যে; অধম মানব খোঁজে অন্যের মধ্যে” ছিল তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি।

    কনফুসিয়াসের নীতিশাস্ত্র তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছিল। তিনি যখন বেড়ে উঠছিলেন তখন ‘লি’ ধারণাটি জীবনের তিনটি দিক সম্পর্কে নির্দেশ করতো। এগুলো ছিল: দেবতাদের জন্য উৎসর্গ করা, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, এবং প্রাত্যহিক আচরণ। বিশ্বাস করা হতো যে ‘লি’র উৎপত্তি স্বর্গ হতে। কনফুসিয়াস দাবি করলেন ‘লি’র উৎপত্তি স্বর্গ হতে নয়, বরং মানবতা থেকে। তিনি ‘লি’কে পুনঃসংজ্ঞায়িত করে বললেন, একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে যে সকল ক্রিয়া বা কর্মের প্রয়োজন সেগুলোই ‘লি’। এ সকল ক্রিয়া ভালো বা মন্দ দুটোই হতে পারে। স্বল্পমেয়াদি সুখের জন্য পরিচালিত ক্রিয়াদি সাধারনত মন্দ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত; অন্যদিকে যেসব দীর্ঘমেয়াদি ক্রিয়া মানুষের জীবন উন্নততর করে সেগুলো ভালো শ্রেণিতে পড়ে। এ ধারণাটির মূল কথা হলো সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা।

    কনফুসিয়াসের মতে, ‘লি’র উৎস হলো ‘ঈ’ বা ‘প্রতিদান’, যাকে ‘ন্যায়নিষ্ঠা’ হিসেবেও সংজ্ঞায়িত করা যায়। নিজস্ব কামনা-বাসনা চরিতার্থকারী ‘লি’র পরিবর্তে ‘ঈ’ অবলম্বন করে মানুষ জীবনে অধিকতর পরোপকারী ও ন্যায়নিষ্ঠ হতে পারে। অর্থাৎ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার পরিবর্তে মানুষের উচিত নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক কাজটি করা। অন্যভাবে বলতে গেলে, এর অর্থ সঠিক কারণে সঠিক কাজটি করা। ‘ঈ’র ভিত্তি হলো পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা। এর একটি উদাহরণ হলো পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তিন বছর শোক পালন করা। যেহেতু পিতা-মাতা শিশুর জীবনের প্রথম তিন বছর তার সেবা-যত্ন করেছে, তাই এর বিনিময়ে তারও উচিত হবে পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তিন বছর শোক পালন করা।

    ‘লি’ যেমন ‘ঈ’ থেকে উদ্ভূত, তেমনি ‘ঈ’ প্রবাহিত হয় ‘রেন’ থেকে ‘রেন’এর অর্থ দয়া। স্বর্গীয় রীতির পরিবর্তে কনফুসিয়াসের নীতিশাস্ত্রের ভিত্তি হলো অন্যকে বোঝা ও অন্যের অনুভূতির সাথে একাত্ম হওয়া। ‘রেন’ মোতাবেক জীবন নির্বাহ করা তাই ‘ঈ’ অনুযায়ী চলার চেয়েও শ্ৰেয়। মানুষ নিজের প্রতি যেমন আচরণ আশা করে, অন্যের সাথেও তার তদ্রুপ আচরণ করা উচিত। তাই সদগুণ বলতে কনফুসিয়াস অন্যদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ও সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করাকে বুঝিয়েছেন।

    রাজনীতি প্রসঙ্গে

    কনফুসিয়াসের রাজনৈতিক দর্শন তাঁর নীতিশাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে রচিত। তাঁর মতে সেই সরকারই সেরা যে ঘুষ ও বলের পরিবর্তে আচার-আচরণ ও মানুষের নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অ্যানালেক্টস’এ যেমন তিনি বলেছেন: “যদি শাস্তির মাধ্যমে সমতা আনয়নকারী আইন দ্বারা জনগণ পরিচালিত হয়, তাহলে তারা শাস্তি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো লজ্জা থাকবে না। কিন্তু তারা যদি আচরণ ও নীতি-নিয়মের শুদ্ধতা হতে সৃষ্ট সদগুণ ও সমতা দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে তাদের মধ্যে লজ্জাবোধ থাকবে এবং তারা ভালো হয়ে পড়বে”। এই লজ্জাবোধ থেকে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হবে, যার ফলে আইন অনুযায়ী মন্দকাজের পরে শাস্তির পরিবর্তে মন্দকাজ করার পূর্বেই শাস্তির কথা মনে হবে।

    কনফুসিয়াস মহা ক্ষমতাধর সম্রাটের ধারণা সমর্থন করলেও, তাঁর দর্শনে শাসকের ক্ষমতা খর্ব করার অনেকগুলো উপাদান ছিল। সততা ছিল একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রজা ও রাজার (অথবা পুত্র ও পিতার সম্পর্ক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি উর্ধ্বতনদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এর অর্থ ছিল উর্ধ্বতন ব্যক্তির কার্যপ্রণালীতে কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা তুলে ধরা বা সে ব্যাপারে উপদেশ দেওয়ার দায়িত্ব অধস্তনের। রাজা যদি রাজার মতো আচরণ না করে তাহলে সে স্বর্গের ম্যান্ডেট হারাবে ও ক্ষমতাচ্যুত হবে। কনফুসিয়াসের মতে, “একটি নিপীড়ক সরকার বাঘের চাইতেও অধিক ভীতিকর। কারো যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তবে সেগুলো ত্যাগ করতে যেন সে ভয় না পায়”।

    এ প্রসঙ্গে কনফুসিয়াস বলেছেন: “নিজের ক্ষেত্রে তুমি যা ঘটতে দেখতে চাও না, অন্যের ক্ষেত্রেও তা ঘটিও না”। তিনি আরো বলেছেন, “খাওয়ার জন্য সাদা মোটা ভাত, পান করার জন্য জল, আর বালিশ হিসেবে আমার গুটানো হাত – এতেই আমি সুখ খুঁজে পাবো। অন্যায়ভাবে ধনদৌলত ও সম্মান প্রাপ্তি আমার কাছে ভাসমান মেঘের মতো, যা অতি ক্ষণস্থায়ী”।

    কনফুসিয়াসের উত্তরাধিকার

    তাঁর মৃত্যুর পর কনফুসিয়াসের শিষ্য ও একমাত্র পৌত্র যি-সি তাঁর দার্শনিক মতবাদের উপর কাজ অব্যাহত রাখেন। তাঁর নীতিবিদ্যা ও রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার উপর নির্ভর করে কনফুসিয়াসের দু’জন বিখ্যাত শিষ্য তাঁর শিক্ষা সম্পর্কে বিপরীতমুখী ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। মেনসিয়াস মানুষের মধ্যে বিরাজমান অপরিসীম সদগুণের কথা বলেছেন। অন্যদিকে সুন যি কনফুসীয় মতবাদের বাস্তববাদী ও বস্তুবাদী দিকগুলো তুলে ধরেছেন।

    সং বংশের রাজত্বের সময় ঝু শি নামক জনৈক পন্ডিত তাওবাদ ও বৌদ্ধ ধর্মের ধারণা কনফুসীয় মতবাদের সঙ্গে সন্নিবেশিত করেন। জীবদ্দশায় ঝু শি’কে খুব একটা কেউ গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু মৃত্যুর পর তাঁর ধারণাগুলো কনফুসীয় মতবাদের নতুন ব্যাখ্যা হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়। আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে ঝু শি নতুন কিছু সৃষ্টি করেছিলেন; তাই তাঁর মতামতকে নব্য কনফুসীয় মতবাদ হিসেবে দেখা হয়। বর্তমান যুগেও বেশ কিছু কনফুসীয় পন্ডিত আছেন।

    তাঁর মৃত্যুর কিছুকাল পরেই কনফুসিয়াসের নিজ শহরটি তাঁকে স্মরণ ও তাঁর প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের তীর্থস্থানে রূপান্তরিত হয়। শহরটি এখনো সাংস্কৃতিক পর্যটনের একটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে বিদ্যমান। প্রতি বছর অসংখ্য চীনা নাগরিক তাঁর সমাধিস্থল ও চতুর্দিকের মন্দির পরিদর্শন করতে যায়। চীনা সংস্কৃতিতে এমন অসংখ্য মন্দির আছে যেখানে বুদ্ধ, লাওসি এবং কনফুসিয়াসের মুর্তি একসঙ্গে রাখা হয়। এছাড়া কেবল কনফুসিয়াসকে উৎসর্গ করা অনেক মন্দিরও আছে যেখানে কনফুসীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়।

    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবরফকল – ওয়াসি আহমেদ
    Next Article আমার ছোটবেলা – কবীর চৌধুরী
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.