Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা – ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক

    ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক এক পাতা গল্প9 Mins Read0

    মইষাল বন্ধু-সাঁজুতী কন্যার পালা

    মইষাল বন্ধু-সাঁজুতী কন্যার পালা

    ভূমিকা

    মইষাল বন্ধু পালা মাননীয় দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয় তাঁহার সম্পাদিত পূর্ববঙ্গ গীতিকা দ্বিতীয় খণ্ডে দুই প্রস্থে প্রকাশ করিয়াছেন, এবং ঘটনার অংশ বিশেষের বর্ণনাও দুই প্রকায়, অধিকন্তু তাহার দুইটি সংগ্রহই অসমাপ্ত ও সামঞ্জস্যহীন। এই সম্পাদনায় এক প্রস্থে সম্পূর্ণ পালা প্রকাশিত হইল।

    এই সম্পাদনায় পালার ছাত্র সংখ্যা ৮০৬। ইহার ৫৮০ ছত্র সেন মহাশয়ের সংগ্রহে পাওয়া যাইবে, ২০৬টি ছত্র নূতন। সেন মহাশয় সম্পাদিত উক্ত ৫৮০ টি ছত্রের মধ্যে ৬৮টি ছত্রের সঙ্গে এই সম্পাদনার ছত্রের তাৎপর্যে পার্থক্য ঘটায় সেন মহাশয়ের পাঠ তৎতৎ স্থলেই পাদটীকায় দেওয়া হইল। আমার নূতন সংগ্রহ বুঝাইতে ছত্রের শেষে ‘+’ চিহ্ন দেওয়া হইয়াছে।

    মাননীয় সেন মহাশয় সম্পাদিত পালার প্রথম প্রস্থে ঘটনা টী মধুরীর পরিচয় ঘটে নাই। বিবাহের পর স্নানের ঘাটে সাঁজুতীকে দেখিয়া লম্পট মছুয়া অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ডিঙ্গাধরের গৃহে অতিথি হইয়া বন্ধুত্ব স্থাপন করে, এবং আড়ং-এর দেশ উত্তর পাটন-এ বাণিজ্যে প্রচুর লাভের প্রলোভন দেখায়। ইহার পরে সেন মহাশয়ের সম্পাদনার বর্ণনা—যাহা এই সম্পদনায় নাই, তাহা

    এই সব শুনিয়া তবে সাধু ডিঙ্গাধর।
    বাণিজ্য করিতে যায় উত্তর নগর।।
    সাঁজুতী কন্যার কাছে লইয়া বিদায়।
    ছয় মাসের পথ সাধু ছয় দিনে যায়।।
    নগর নাগরীয়া যত বড় বড় দেশ।
    কত না ছড়াইয়া চলে কহিতে সবিশেষ।।

    সাম গুঞ্জরিয়া যায় ববি পাটে বসে।
    উইড়্যাছে ডিঙ্গার পাল লীলুয়ারী বাতাসে।।
    মনে বিষ মছুয়া কয় মাঝি মাল্লা গণে।
    আইজ রাইতের লাইগা ডিঙ্গা বান্ধ এইখানে
    খেলায় খেলুনী পাশা রাত্রি নিশি পাইয়া।
    মধুয়ার নায়ে ডিঙ্গাধর পড়ে ঘুমাইয়া।।
    তবেত দুষমণ মঘুষা কোন কাম করে।
    কাটিয়া ডিঙ্গার কাছি ভাষায় সায়রে॥
    সাধু লইয়া মধুয়ার ডিঙ্গা সুতে ভাইস্যা যায়।
    ডিঙ্গাধরের মাঝিমাল্লা সুখে নিদ্রা যায়।।
    ঠার পাইয়া মথুয়ার যত মাঝিমাল্লাগণ।
    উজান সুতে উড়ায় পাল পৃষ্ঠেতে পবন।।
    ***

    একেলা আছয়ে ঘরে সাঁজুতী সুন্দরী।
    দুই চার দাসী তার আছে পাটুয়ারী।।
    বিয়ান বেলা বুন্ধা আইস্যা খবর জানায়।
    সাধুত আইস্যাছে ঘাটে শব্দ শুনা যায়।।
    এই কথা শুনিয়া তবে ডিঙ্গাধরের নামী।
    কোমরে বান্ধিয়া পরে ময়ুরপঙ্খী শারী।।
    হাতেতে পরে তার-বাজু করিয়া যতন।
    চম্পাফুল দিয়া কন্যা বান্ধিল লুটন।।
    লুটনে তুলিয়া দিল সোনার ভোমরা।
    কপালে কাটিয়া দিল সুবর্ণের তারা।।
    নাকেতে বেশর দিল কানে ঝুকাফুল।
    কপালে সিন্দুর দিল পক্ষী সমতুল।।
    পায়ে দিল গোল খাড়, পঞ্চম গুঞ্জয়ী।
    এই মতে সাজন করে ডিঙ্গাধরের নারী।।
    ডালা সাজাইল কন্যা ধান্য দুর্বা দিয়া।
    বনদুর্গার আগ লইল আইঞ্চল বান্ধিয়া।।
    ছয় মাস পরে সাধু ফিরা আইল, দেশে।
    ডিঙ্গা অর্গিবারে কন্যা চলিল বিশেষে।।
    আপন ঘাটের ডিঙ্গা দেইখ্যা খুসী হইল।
    ডিঙ্গা আনিবারে কন্যা ত্বরিতে চলিল।।
    অর্গিয়া পুছিয়া ডিঙ্গা তুইল্যা লইব ধন।
    হাটু জলে লাইম্যা কন্যা কোন কাম করিল।
    ঘলুইয়ে সিন্দুর ফোটা ধান্য দুর্বা দিল।।
    স্বামীত ফিরিয়া আইছে বহুদিন পরে
    ভরা বুক হাসি খুসী মুখে নাহি ধরে।।
    তবেত দুষমণ মধুয়া কোন কাম করে।
    চিলে যেমত থাপা দিয়া কাটুনীর মাছ ধরে।।
    হাতেতে ধরিয়া তুলে ডিঙ্গার উপরে।
    ইঙ্গিত পাইয়া মাল্লা ডিঙ্গা দিল ছেড়ে।।
    একে ত ভাটিয়াল পানি জোরে বয় হাওয়া।
    পালেতে বান্ধিল বাতাস আশমানে ডাকে দেওয়া।।
    দেখ দেখ না দেখ দেখ চলিল ভাসিয়া।
    পারে থাইক্যা পারের লোক রহিল চাহিয়া।।
    সাজুতা সুন্দরী কন্যা কান্দে থাপাইয়া মাথা।
    রাক্ষসে হরিল যেমন জঙ্গলার সীতা।।

    মাননীয় দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয় পালাটির প্রথম প্রস্থ এইখানেই শেষ করিয়া মন্তব্য করিয়াছেন, পালাটি অসমাপ্ত রহিয়াছে।

    পালাটি দ্বিতীয় প্রস্থের সঙ্গে আমার নিজ সংগ্রহের অধিকাংশ মিল আছে। মধ্যে মধ্যে আমার সংগ্রহে বেশী ছল আছে, এবং ঘটনার পারম্পর্য রক্ষার জন্য সেন মহাশয়ের সম্পাদিত ছত্রগুলি স্থানে স্থানে পূর্বাপর হইয়া গিয়াছে।

    সেন মহাশয়ের সম্পাদনায় দ্বিতীয় প্রস্থের শেষের দিকে অসমাপ্ত ভাবে আছে–

    কাঙ্গু রাজার বিচার কথা শুন দিয়া মন।
    না জানি সুন্দর নারী দেখিতে কেমন।।
    আরদালী পেদালী দুই ত্বরিত পাঠাইয়া।
    মইনার সহিতে আনে ক্যারে ধরিরা।।
    শূলের হুকুম হইল মইষালের উপরে।
    এমন কালে সাঁজুতী কন্যা কোন কাম করে।।

    *** ***
    *** ***

    ভাই হইয়া দুষমণ হইল…।
    মইনার কানে কান্দে বনের পশু পক্ষী।

    এই আটটি ছত্রের সঙ্গে ঘটনায় আমার সংগ্রহের মিল আছে এবং ইহার পর আমার সংগ্রহে ঘটনার পরিসমাপ্তি ৩৬টি নূতন ছত্র আছে।

    সেন মহাশয় সম্পাদিত পালাটিতে কোনো কোনো স্থলে ছত্রের মইষাল বন্ধু-সাঁজুতী কন্যার পালা পরিবর্তে স্টার চিহ্ন থাকায় বুঝা যায়, ঐ সব জায়গায় আরও ছত্র আছে বলিয়া তিনিও সন্দেহ করিয়াছেন।

    এই পালাটি আমি বহুবার শুনিয়াছি, পালাটি সঙ্গীতবহুল। ১৯৪২ খৃষ্টাব্দে হবিগঞ্জে পূর্ণ গায়েনের খাতা হইতে যে ভাবে পালাটি পাইয়াছি তাহাই এখানে দেওয়া হইল।

    পূর্ববঙ্গে ‘মইষাল বন্ধুর গান’ বহু আছে। সেগুলি ‘ছুটাগান’, এই পালার গান নহে। এই পালাটির রচইতা কবির নাম পাওয়া যা না। পালাটি বোধ হয় প্রাক মুসলিম যুগের কাহিনী অবলম্বনে রচিত।

    শ্রীক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক
    আগমেশ্বরী পাড়া রোড,
    নবদ্বীপ
    মাঘ ১৩৭৬

    ———–

    মইষাল বন্ধু-সাঁজুতী কন্যার পালা

    (১)

    চলে নদী শিঙ্গাখালি সুতে খরষাণ।
    যার জলে আশ্বিন মাসে খাইছে বাঁকের ধান।।
    সুজন গিরস্থ তথায় বসত যে করে।
    তার কথা সভাজন শুন সুবিস্তারে।।
    তের আড়া ভুইয়ের মধ্যে মইষে বায় হাল।
    গোলাতে ভরিয়া তুলে ধরু ধান চাল।।
    এক পুওর আছে তার পূন্নু মাসীর চান্দ।
    বাপ-মাও রাইখ্যাছে তার ডিঙ্গাধর নাম।।

    দশনা বচ্ছরের পুত্র হাইস্যা খেলায় পাড়া।
    এমন কালে মরুল মাও দুখু হইল বাড়া।।
    একে একে তার ঘরের লক্ষী গেল ছাড়ি।
    আগুন লাইগা পুইড়া গেল তিন খণ্ড বাড়ী।।
    আরে ভাইরে বিধির কিবা কাম।
    কপাল যইখন ভাঙ্গে রে ভাই পাথরে হয় ঘাম॥+

    বাতানে মইষ মইল পালে মরল গাই।
    বিপদ কালে রাখে তারে এমন বান্ধব নাই।।
    আইশ্‌না পানিতে খাইল ক্ষেতের পাকা ধান।
    নদীর বাঁকের ধান খাইল সুতে খরষাণ॥+
    যেইনা দিগে ছাইয়া দেখে কিছু নাইত পায়।+
    কেমন কইরা বাড়ীঘর গিরস্থী বাচায় ৷৷+
    গরু নাই মইষ নাই নাই বীজ ধান।+
    দুঃখের দরদী নাই করিতে আসান।।
    কানাকড়ার সম্বল নাই ভাবে মনে মনে।
    কি দিয়া বাইব হাল মাঠের জমিনে।।
    পোষ মাসের পোষা শীত গায়ে বস্তর নাই।+
    দেয়ানের তাগিদদার খাজনা তার চাই।।+
    ঘরে যা আছিল সব বেইচ্যা খাজনা দিল।+
    কলার পাত পাইতা দোয়ে খুদের জাউ খাইল॥+

    ভাবিয়া চিন্তিয়া সুজন কোন কাম করে।
    গিষ্ঠেতে বান্ধিয়া চিড়া যায় শিঙ্গাপুরে।।
    শিঙ্গাপুরের বলরাম ধনী মহাজন।
    ধনের লাগিয়া তার নাই অনাটন।।

    ধারে সুদে কত লোক ট্যাকা লইয়া যায়।
    সেই সুদে বলরাম সংসার চালায়।।
    বারো মাসে তের পার্বণ মণ্ডলের রাজা।
    আশ্বিন মাসে বলরাম করে দুর্গা পূজা।।
    কাত্তিক মাসে কাত্তিক পূজা করে জাকাইয়া।
    আগণ মাসে লক্ষীপূজা নয়া ধান দিয়া।।
    তার বাড়ী গেল সুজন ধারের লাগিয়া।+
    কইতে লাগিল তারে কাতর হইয়া।।+

    দয়া যদি কর পরভু কিরপা যদি কর।
    গণিয়া দিবা সুদ দেও কিছু ধার।।
    সোনার জমিন পইড়া রইছে হাল গরু নাই।
    পইড়্যাছে দুঃখের দিন কিছু ট্যাকা চাই।।

    একশ ট্যাকা কর্জ কৈল কইরা লেখাপড়া।
    বাড়ীতে ফিরিল সুজন হইয়া গোয়াড়া।।
    আগুনে পুড়িয়া গেছে বান্ধে নয়া ঘর।
    হালের মৈষ কিন্যা লইল হরিষ অন্তর।।
    জমিনে বাইয়া হাল বুনন, কল ধান।
    চৈত মাসে দিল সুজন জমিনে নিড়ান।।
    বৈশাক জষ্টি দুই মাস গেল এই মতে।
    আষাঢ় মাসে পাকা ধান লাগিল কাটিতে।।
    কার ধান কেবা কাটে সুজন মৈল জ্বরে।
    ক্ষেতের ধান ক্ষেতে রইল এইত প্রকারে।।
    আশা কইরা করে কাম নৈরাশে ডুবায়।
    কার ধান জমিন বাড়ী কুথায় রাইখা যায়।।

    [১। সুতে = স্রোত। ২। খরষাণ = ক্ষুরধার, তীব্ৰবেগ। ৩। বাঁকের = নদীর বক্র স্থানের। ৪। গিরস্থ=কৃষক। ৫। আড়া=চার বা ছয় বিঘায় এক আড়া। ৬। ষরু = সরিষা প্রভৃতি শীতের ফসল। ৭। পূন্ন মাসীর -পূর্ণিমার। ৮। বাড়া = বড়ো বেশী। ৯। তিনখণ্ড বাড়ী = প্রথম খণ্ডে গোশালা, দ্বিতীয়খণ্ডে শয়ন গৃহ গোলা প্রভৃতি, তৃতীয় খণ্ডে রন্ধনশালা অন্দরমহল। ১০। পাখর=পাথর। ১১। ঘাম=ঘর্ম। ১২। মইল = মরিল। ১৩। আসান – সান্ত্বনা। ১৪। দোয়ে দুইজনে। ১৫। গিষ্ঠেতে=পরিধান বস্ত্রের এক প্রান্তে। ১৬। অনাটন = অনটন, অভাব। ১৭। জাকাইয়া – জাঁক জমক্‌ করিয়া। ১৮। ধারের = কর্জের। ১৯। পভু= প্রভু। ২০। গোয়াড় = দৃঢ়সঙ্কল্প, (গোয়ার শব্দের অপভ্রংশ, সেন মহাশয়ের মতে-প্রফুল্ল।)।

    পাঠান্তর :-

    আইশনা পাণিতে তার খাইল বাঁকের ধান।

    কি দিয়া বাইব হাল বাঁকের জমিনে।।

    ভাবিয়া চিন্তিয়া সাধু কোন কাম করে।]

     

    (২)

    কান্দে পুত্র ডিঙ্গাধর–আগে মৈল মাও।
    অয়রাণে ফেলিয়া বাপ কুথায় চইলা যাও।।
    তুমি ছাড়া এই সংসারে আর লক্ষ্য নাই।
    আছে গেরামে কেউ জ্ঞিয়াতি বন্ধু ভাই।।
    কান্দে বালক ডিঙ্গাধর কইরা হায় হায়।
    পাড়া পতিবাসী আইসা ছাওয়ালে বুঝায়।।
    বাপ-মাও লয়্যা কেউ জন্ম ভইরা নাই ত থাকে।
    ডিঙ্গাধর কান্দে বিধি ফেলিল বিপাকে।।
    জ্ঞিয়াতি নাই বন্ধু নাই মায়ের পেটের ভাই।
    অকূলে ভাইছি অখন কার বাড়ী যাই।।

    হালের মইষ বেইচা বাপের শেষ কাম করে।
    তিন বচ্ছর ডিঙ্গাধর কাটাইল ঘরে।।
    বাপে ত কইরাছে ঋণ পুত্র নাই সে জানে।
    বলরাম আইসা বাড়ী জানায় এক দিনে।।

    সুজন ধার্মিক বড় ছিল তোমার বাপ।
    অকালে মরিয়া গেল পাইলাম বড়ো তাপ।।
    একশ ট্যাকা কর্জ করে বিপাকে পড়িয়া।
    পরমাণ করিল কর্জ খত দেখাইয়া।।
    গাও-গেরামের লোক তার খতে সাক্ষী আছে।
    দিবা কি না দিবা ট্যাকা বলরাম পুছে।।
    আশমান ভাঙ্গিয়া পড়ে ডিঙ্গাধরের শিরে।
    দুই মাস সময় চায় মাহাজনের পায় ধরে।।
    হায় ভালা–
    কান্দে পুত্র ডিঙ্গাধর না দেইখা উপায়।
    কিমতে বাপের দেনা সুজন সে যায়।।
    ধার রাইখা মইরাছে বাপ না হইব গতি।
    ঋণের পাপেতে তার নরকে বসতি।।
    গাছ হইয়া জন্মিলে ঋণ লতা হইয়া বেড়ে।
    ঋণ পাপে মুক্তি নাই জন্ম-জন্মান্তরে।।
    গরু হইয়া খাইট্যা সুজে মহাজনের ধার।
    ভাইব্যা চিন্তা হইল কাইল পুত্র ডিঙ্গাধর।।
    শশ বল্লার কামড়ে যেমুন মানুষ হয় ফানা।
    সকল দুঃখের অধিক দুঃখ যার আছে দেনা।।

    মাথার বিষ নাই বেথা দিনে দিনে বাড়ে।
    একপয়সা সুদ পাইলে কড়া নাই সে ছাড়ে।।
    অভাবে পড়িয়া বাপ বেইচ্যাছে ক্ষেত-খলা।
    ঘর-বাড়ী ভাইঙ্গ্যা পড়ছে নাই ছানি-পালা।।
    হালের মইষ বেইচ্যা আগে কইরাছে পিতৃকাম।
    কি দেইখ্যা সুদের উসুল দিব বলরাম।।
    ভাইব্যা চিন্ত্যা ডিঙ্গাধর কোন কাম করে।
    দুইপর বেলা উপনীত মাহাজনের দুয়ারে।।
    ছান নাই খাওয়া নাই বালক দিনের উপবাসী।
    বলরামের ঘরে গেল বড়ো দুঃখ বাসি।।
    বইসা আছে বলরাম বাড়ীর বাইর ময়ালে।
    পায়ে ধইরা ডিঙ্গাধর মাহাজনে বলে।।
    সুজিতে বাপের দেনা কইরাছি আমি মনে।
    তুমি যদি কিরপ কইরা রাখো ছিচরণে।।
    বাপের সে ধার যত পুত্রের হয় দেনা।
    আমি পুত্র সুজিয়া দিবা তোমায় পাওনা।।+

    বলরাম কয় আমি কইরাছি হিসাব।
    কত ট্যাকা আইনাছ দেখি হিসাব কিতাব।।
    তোমার কাছেতে বাপু নাই সে চাই সুদ।
    আসলে উসুল হইলে তোমার দেনা শোধ।।+

    খালি হাত দেখাইয়া কান্দে ডিঙ্গাধর।
    কড়ার ভিখারী আমি তোমার চাকর।।
    আইসছি তোমার কাছে বড়ো আশা করি।
    বাপের ঋণ শোধ দিবাম্ করিয়া চাকুরি।।
    সাত পাঁচ ভাইবা তবে কয় বলরাম।
    চ্যাংড়া চাকরে এক আছে মোর কাম।।
    আইজ থাইকা করব। তুমি মইষের রাখালী।
    ছয় বচ্ছর খাইট্যা দিলে তবে হইব ফালি॥

    বড়ো দুঃখে ডিঙ্গাধরের হাসি আইল মুখে।
    আইজ থাইকা বাপের ঋণ সুজব একে একে।।
    নদীর পাড়ে বড়ো মাঠ মইষের বাথান।+
    মইষ চড়ায় বাঁশি বাজায় আর গায় গান॥+
    সইন্ধ্যা বেলা ঘরে আইসা খায় ভাত পানি।+
    পরভাতকালে মইষ লইয়া বাথানে মেলানি॥+
    এইমতে ডিঙ্গাধরের পাঁচ বচ্ছর যায়।+
    বিপাকে ফেইলাছে বিধি কি হইব উপায়॥+

    ———–
    ১। আয়রণে = অরণ্যে, নিরাশ্রয়ে। ২। অখন = এখন। ৩। শেষকাম =শ্রাদ্ধ। ৪। পরমাণ = প্রমাণ। ৫। সুজন = পরিশোধকরা। ৬। বেডে =বেষ্টন করে। ৭। কাইল= কাহিল, শীর্ণকায়। ৮। বল্লা =বোলতা। ৯। ফানা=পাগল, অস্থির। ১০। খলা = খোলা, ধানের বীজতলা ও ধান মাড়াই করার জায়গা। ১১। ছানিপালা = ছাউনী ও খুটি। ১২। পিতৃকাম=পিতার শ্রাদ্ধ। ১৩। বাসি =মনে করিয়া। ১৪। বাইর ময়ালে = বাহির মহলে। ১৫। সুজিতে পরিশোধ করিতে। ১৬। ফালি=পরিশোধ, খালাস। ১৭। মেলানি =গমন।

    পাঠান্তর :
    হয়রাণে ফেলিয়া বাপ কুথায় চইলা যাও।।

    হালের না মইষ বেইচ্যা শেষ কাম করে।।

    তের বচ্ছর ডিঙ্গাধর কাটাইল ঘরে।।

    সময় লইল দুইমাস বলরামের কাছে।।

    কিমতে বাপের ডিঙ্গা সুজন সে যায়।।

    গরু হইয়া খাট্যা মহাজনের ধার।

    ঋণ পাপের মুক্তি নাই জন্ম জন্মান্তর।।

    জ্বর মাথাবিষ নাই দিনে দিনে বাড়ে।

    বলরাম কয় কাল কইরাছ হিসাব।

    তোমার কাছেতে বাপু নাহি চাই লাভ।

    1 2
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসহস্র এক আরব্য রজনী
    Next Article পদবীর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস – খগেন্দ্রনাথ ভৌমিক
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.