Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    প্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন -আইজাক আসিমভ

    নাজমুছ ছাকিব এক পাতা গল্প535 Mins Read0

    ৮. পরাজয়

    পরাজয়

    থালুস, এমার… প্রাচীন ট্র্যান্টরের ওয়ি সেক্টরের সশস্ত্র বাহিনীর একজন সার্জেন্ট..
    গুরুত্বহীন এই তথ্যগুলো ছাড়া লোকটির ব্যাপারে আর বিশেষ কোনো কিছু। জানা যায়নি। শুধু একটা কারণেই তার নাম ইতিহাসে স্থান পেয়েছে, সেটা হলো। মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য গ্যালাক্সির ভাগ্য তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল।
    —-এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাক্টিকা

    .

    ৮৭.

    তিনজনই বন্দী কিন্তু তাদের থাকার জন্য রাজকীয় বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছে। পরেরদিন সকালে নাস্তা পরিবেশন করা হলো কামরার সাথে লাগোয়া ব্যালকনিতে। বিভিন্ন রকমের খাবার এবং পরিমাণে প্রচুর।

    সেলডন প্রচুর মশলাযুক্ত বিশাল এক সসেজ সামনে নিয়ে বসলেন। বদহজম বা পেটের অন্য কোনো সমস্যা নিয়ে ডর্সের সাবধান বাণীতে মোটেই কান দিলেন না।

    ওই ব্যাডি… শুরু করেই হোঁচট খেল রাইখ। তারপর শুদ্ধ করে বলল, ম্যাডাম মেয়র যখন গতরাতে আমার লগে দেহা করতে আইছিল-

    তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল? জিজ্ঞেস করলেন সেলডন।

    হ। কইল সে আমার কুনো অসুবিদা হইতাছে কী না দেখবার আইছে। কইছে। যে সুযোগ পাইলে আমারে চিড়িয়াখানায় লইয়া যাইব।

    চিড়িয়াখানা? ডর্সের দিকে তাকালেন সেলডন। ট্র্যান্টরে কী ধরনের প্রাণী আছে? শুধু কুকুর আর বিড়াল?

    কিছু বন্য প্রাণী আছে, ডর্স বলল, আমার ধারণা অন্যান্য গ্রহ থেকেও বন্য প্রাণী আমদানী করা হয়। এছাড়াও আছে শংকর প্রজাতির প্রাণী। অবশ্য শংকর প্রাণীর সংখ্যা অন্যান্য গ্রহে বেশি। তবে ট্র্যান্টরে ইম্পেরিয়াল চিড়িয়াখানার পরেই ওয়ির চিড়িয়াখানার স্থান।

    বুড়ি খুব ভালো। রাইখ বলল।

    অতটা বুড়ি এখনো হয়নি, জবাব দিল ডর্স, তবে আমাদের খাওয়াচ্ছে। ভালোই।

    ঠিকই বলেছ। একমত হলেন সেলডন।

    নাস্তা শেষে রাইখ ঘুরতে বেরলো।

    ডর্সের কামরায় একা হওয়ার পর বিরক্তির সুরে সেলডন বললেন, জানি না কতক্ষণ একা থাকতে পারব। কোনো সন্দেহ নেই যে আমরা কখন কী করব সেটা রিশেলি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে।

    সত্যি কথা বলতে কী, এটা নিয়ে আমাদের অভিযোগ করা একেবারেই অনুচিত। ডর্স বলল। মাইকোজেন বা ডাল-এর তুলনায় এখানে আমরা রাজার হালে আছি।

    রিশেলি মোটেই তোমাকে প্রভাবিত করতে পারেনি, তাই না ডর্স?

    আমাকে? রিশেলি? কথাটা তুমি ভাবলে কী করে?

    আসলে এখানে তুমি যথেষ্ট আরামে থাকতে পারছ। ভালো খেতে পারছ। কাজেই একটু আশ্বস্ত হয়ে সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়াটাই তো স্বাভাবিক।

    হ্যাঁ, খুবই স্বাভাবিক। আমরা সেটাই করছি না কেন?

    দেখ, যদি রিশেলি জয়ী হয় তাহলে কী ঘটবে সেটা তুমি গতরাতে আমাকে বলেছ। ইতিহাস হয়তো তেমন জানি না, তাই তোমার কথা আমি বিশ্বাস করেছি আর সত্যি কথা বলতে কী এটা বোঝার জন্য ইতিহাসবিদ হওয়া লাগে না। এম্পায়ার ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে এবং প্রতিটি ভাঙা টুকরা পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে যাবে… হয়তো… অনন্তকাল। রিশেলিকে থামাতেই হবে।

    আমি একমত। অবশ্যই থামাতে হবে। শুধু বুঝতে পারছি না অতি সহজ এই কাজটা এই মুহূর্তে আমরা কীভাবে করব। চোখ সরু করে সেলডনের দিকে তাকালো ডর্স। হ্যারি, গতরাতে তুমি ঘুমাওনি, তাই না?

    তুমি ঘুমিয়েছ? জবাব শুনেই বুঝা গেল যে তিনি ঘুমাননি।

    এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ডর্স, চেহারায় দুঃশ্চিন্তার ছাপ। আমার কথা শুনে তোমার ধারণা হয়েছে গ্যালাক্সির ধ্বংস অনিবার্য। আর তাই নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করে সারারাত জেগে কাটিয়েছ?

    সেই সাথে আরো অনেক কিছু। চ্যাটার হামিনের সাথে যোগাযোগ করা কি সম্ভব? শেষ কথাটা বললেন প্রায় ফিসফিস করে।

    ডাহলে থাকতেই আমি চেষ্টা করেছি। সে আসেনি। খবর যে পেয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু আসেনি। তার অনেকগুলো কারণের ভিতর একটা কারণ হতে পারে এই যে এখন সে আসতে পারছে না কিন্তু যখন পারবে তখন ঠিকই আসবে।

    তোমার কি মনে হয় তার কোনো বিপদ হয়েছে?

    না, ধৈর্যের সাথে জবাব দিল ডর্স। আমার তা মনে হয় না।

    তুমি কীভাবে জানো?

    হলে কোনো না কোনোভাবে আমি খবর পেতাম। কিন্তু পাইনি।

    ভুরু কুঁচকালেন সেলডন। তোমার মতো আত্মবিশ্বাস আমার নেই। সত্যি কথা বলতে কী কখনোই ছিল না। তাছাড়া হামিন যদি আসেও এই ক্ষেত্রে সে কী করতে পারবে? পুরো ওয়ির বিরুদ্ধে সে একা লড়তে পারবে না। রিশেলির দাবী অনুযায়ী যদি আসলেই তাদের সেনাবাহিনী সেরকম বড়ো এবং প্রশিক্ষিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সে কী করবে?

    এসব আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। তোমার কী ধারণা? রিশেলিকে তুমি বোঝাতে পারবে–তার উর্বর মস্তিষ্কে এই কথাটা ঢুকিয়ে দিতে পারবে যে–তোমার কাছে সাইকোহিস্টোরি নেই?

    এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই, যদি কখনো হয়ও তা আগামী দুই এক বছরের ভেতর হবে না–এই কথাটা যে সে ভালোভাবে জানে আমার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সে সবাইকে বলবে যে আমি সাইকোহিস্টোরি তৈরি করেছি এবং যদি সেরকম চাতুর্যের সাথে কথাটা প্রচার করতে পারে তাহলে জনগণ বিশ্বাস করবে এবং আমার প্রেডিকশন অনুযায়ী আচরণ করবে–এমনকি আমি কিছু না বললেও রিশেলির উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে।

    নিশ্চয়ই তার জন্য অনেক সময় লাগবে। সে তো আর এক রাত বা এক সপ্তাহের মধ্যেই তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে পারবে না। কম করে হলেও একটা বছর লাগবে।

    কামরার লম্ব দৈর্ঘ্য বরাবর অনবরত পায়চারী করছেন সেলডন। হয়তো বা, আমি ঠিক জানি না। সে ভীষণ চাপের মধ্যে আছে এবং খুব দ্রুত সব শেষ করে ফেলতে চাইবে। তাকে আমার ধৈর্য ধরার মতো মানুষ বলে মনে হয়নি। চতুর্থ ম্যানিক্স-এর ধৈর্য তো আরো কম। কারণ লোকটা জানে যে তার মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসছে। চাইবে সারাজীবনের স্বপ্নটা যেন মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেই পূরণ হয়–মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে নয়। তাছাড়া- থামলেন সেলডন।

    তাছাড়া কী?

    আমাদের মুক্ত হতেই হবে। কারণ আমি সাইকোহিস্টোরি সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি।

    বিস্ময়ে ডর্সের দৃষ্টি বিস্ফারিত হয়ে গেল। হয়ে গেছে! তুমি পেরেছ।

    পেরেছি ঠিক সেটা বলা যাবে না। তার জন্য হয়তো ঘাম ঝরানো দশটা বছর… একশটা বছর লাগবে। কিন্তু এখন আমি জানি যে এটা শুধু তাত্ত্বিকই নয় প্র্যাক্টিক্যালও বটে। আমি জানি যে সাইকোহিস্টোরি তৈরি করা যাবে। কিন্তু তার জন্য আমার দরকার সময়, শান্তি এবং পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। যতদিন পর্যন্ত না আমি বা আমার উত্তরাধিকারীরা ভালোভাবে এটাকে পরিচালনা করে ভয়াবহ। বিপর্যয়ের মাত্রা এবং ব্যাপ্তিকে কমিয়ে আনার কৌশল শিখতে পারছে–ততদিন পর্যন্ত এম্পায়ারকে একত্র করে রাখতে হবে। এটা শুধু আমার কাজটা শুরু করার। একটু সূত্রপাত, পুরো কাজটা নয়। এবং এই চিন্তাই আমাকে সারারাত জাগিয়ে রেখেছিল।

    .

    ৮৮.

    পাঁচটা দিন পেরিয়ে গেল উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা ছাড়াই। পঞ্চম দিন সকালে ডর্স নতুন একটা পোশাক পরতে সাহায্য করছে রাইখকে।

    বিস্ময় এবং বেশ খানিকটা সন্দেহ নিয়েই হলোমিররে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো রাইখ। প্রতিবিম্বটা তার প্রতিটি আচরণ নকল করছে। হলোমিররে কখনো সাধারণ আয়নার মতো বিপরীত প্রতিবিম্ব হয় না। রাইখ এর আগে আর কখনো এই বস্তুটা ব্যবহার করেনি, তাই হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখার লোভ সম্বরণ করতে পারল না। তার হাত হলোমিররের ভিতর দিয়ে ওপাশে চলে গেল আর প্রতিবিম্বের হাত নিষ্ফলভাবে তার দেহের ভেতর দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে চলল।

    আমারে ক্যামন হাস্যকর দেখাইতাছে। বলল সে।

    পোশাকটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগল রাইখ, জিনিসটা অত্যন্ত মসৃণ কোনো বস্তু দিয়ে তৈরি। পোশাকের কলার অত্যন্ত দৃঢ়, দেখতে অনেকটা বিশাল এক পেয়ালার মতো।

    আমার মাথাডারে মনে হইতাছে গামলার মইধ্যে বসানো বল।

    কিন্তু ওয়িতে ধনী মানুষদের ছেলেমেয়েরা এমন পোশাকই পরে। ডর্স বলল। দেখবে সবাই তোমাকে কেমন আদর করে।

    হ, মাথার চুলগুলানরে এলোমেলো কইরা দিব।

    নিশ্চয়ই। তবে এই টুপিটা তুমি পরে নিতে পার।

    তাইলে আমার মাথাডারে সত্যি সত্যিই বল মনে করব।

    তাহলে খেয়াল রাখবে কেউ যেন লাথি না মেরে বসে। আমি যা বলেছি মনে রাখবে ভালোমতো। বেশি বেয়াড়াপনা করবে না আর বাচ্চাদের মতো আচরণ করবে না।

    কিন্তু আমি তো বাচ্চাই, বড়ো বড়ো চোখেমুখে একটা নিদারুণ নিষ্পাপ ভাব ফুটিয়ে তুলে ডর্সের দিকে তাকালো সে।

    তোমার মুখে এই কথা শুনে অবাক হলাম। আমি তো ভেবেছি তুমি নিজেকে মনে কর বারো বছরের সমর্থ পুরুষ।

    দাঁত বের করে হাসল রাইখ, ঠিক আছে। আমি ভালো মতোই স্পাইং করমু।

    দরজার পিছনে আড়ি পেতে কারো কথা শুনবে না। যদি ওইভাবে ধরা পড়। তাহলে অবস্থা আরো বেগতিক হবে। বিশেষ করে তোমার জন্য।

    হুনেন, মিসাস, আমারে কী মনে করেন? বাইচ্চা পোলাপান?

    তুমি যে বাচ্চা সেটাতো এইমাত্রই স্বীকার করলে, করনি রাইখ? তুমি শুধু আশেপাশের মানুষেরা যা বলবে সেটা শুনবে এবং মনে রাখবে। তুমি যে শুনছ সেটা যেন কেউ বুঝতে না পারে। ফিরে এসে সব জানাবে আমাদের। খুব সহজ।

    আপনার জইন্য বলা সহজ, আবারো দাঁত বের করে হাসল রাইখ। আর আমার জইন্য করাও খুব সহজ।

    রিশেলি একজন ভৃত্য পাঠালো রাইখকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

    ওদের গমনপথের দিকে তাকিয়ে সেলডন বললেন, ছেলেটার আর চিড়িয়াখানা দেখা হবে না, মানুষজনের কথা শুনতেই ব্যস্ত থাকবে। ওকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়াটা ভালো হলো কি না বুঝতে পারছি না।

    বিপদ? আমার সন্দেহ আছে। রাইখ বিলিবটনের বস্তিতে বড়ো হয়েছে। এসব। কাজে সে আমাদের দুজনের চেয়েও বেশি দক্ষ। তাছাড়া রিশেলি ওকে খুব পছন্দ করে এবং ও কিছু জানতে চাইলে কোনো সন্দেহ না করেই জানাবে–বেচারি রিশেলি।

    মহিলার জন্য কি তোমার আসলেই করুণা হচ্ছে, ডর্স?

    সে একজন মেয়রের সন্তান এবং রক্তের জোরে নিজেকেও মেয়র মনে করছে এবং সে বোকার মতো ঝুঁকি নিয়ে এম্পায়ার ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা করছে। তোমার কি মনে হয় না শুধু এই কারণেই তার কিছুটা সমবেদনা পাওয়া উচিত? হয়তো তোমার ধারণাই ঠিক, কিন্তু তার জীবনে এমন কিছু ঘটনা আছে যার জন্য সমবেদনা পাওয়া উচিত। যেমন, সে প্রেমে ব্যর্থ হয়েছে, কোনো সন্দেহ নেই। নিঃসন্দেহে এই ঘটনা তাকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছিল–অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও।

    তুমি কখনো প্রেমে ব্যর্থ হয়েছ, ডর্স?

    ডর্স কিছুক্ষণ ভেবে জবাব দিল, না। আমি নিজের কাজ নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে প্রেম করার সময় পাইনি।

    আমিও সেরকমই ভেবেছি।

    তাহলে জিজ্ঞেস করলে কেন?

    আমার তো ভুলও হতে পারে।

    তোমার জীবনে?

    মনে হলো সেলডন অস্বস্তি বোধ করছেন। হ্যাঁ, ঘটনাটা ভুলতে আমার বেশ সময় লেগেছিল।

    আমিও সেরকমই ভেবেছি।

    তাহলে জিজ্ঞেস করলে কেন?

    বিশ্বাস কর আমার ভুল হতে পারে এটা ভেবে বলিনি। শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তুমি মিথ্যা কথা বল কি না। সত্যি কথা বলেছ এবং সেজন্য আমি খুশি।

    কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে সেলডন বললেন, পাঁচদিন পার হয়ে গেল কিন্তু কিছুই ঘটল না।

    তবে আমরা বেশ আরামেই আছি, হ্যারি।

    পশুপাখি যদি চিন্তা করতে পারত তাহলে ওরাও ভাবত যে জবাই করার জন্য খাইয়ে দাইয়ে মোটা করা হচ্ছে।

    স্বীকার করছি যে রিশেলি আসলে এম্পায়ার ধ্বংস করার জন্য ছুরিতে শান দিচ্ছে।

    কিন্তু কখন?

    আমার ধারণা যখন সে পুরোপুরি তৈরি হবে।

    বড়াই করে তো বলেছে যেকোনো মুহূর্তে অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে এবং আমি যতদূর বুঝতে পেরেছি তাতে মনে হচ্ছে আসলেই যেকোনো দিন সে ঘটনাটা ঘটাবে।

    যদি পারেও, প্রথমে তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে ইম্পেরিয়াল পাল্টা আক্রমণ ঠেকাতে পারবে এবং সে জন্য সময় প্রয়োজন

    কত সময়? আমাকে সে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেরকম কোনো প্রচেষ্টাই চোখে পড়ছে না। এমন কোনো লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে আমাকে সে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। ওয়ির রাস্তায় যখন বের হই তখন কেউ আমাকে চিনতে পারে না। ওয়ির জনগণ আমাকে। দেখে হর্ষধ্বনি দেয় না। নিউজ হলোকাস্টে আমাকে নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাস নেই।

    হাসল ডর্স। তোমার কথা শুনে যে কেউ ভাবতে পারে যে বিখ্যাত না হতে পেরে তুমি ভীষণ দুঃখ পেয়েছ। তুমি একটা বোকা, হ্যারি। অথবা বলা উচিত, তুমি ইতিহাসবিদ নও, দুটো একই কথা। আমার মতে তোমার শুধু এই কারণেই খুশি হওয়া উচিত যে সাইকোহিস্টোরিই তোমাকে ইতিহাসবিদ বানাবে এবং সেটাই হয়তো এম্পায়ারকে রক্ষা করবে। মানুষ যদি ইতিহাস বুঝত তাহলে একই ভুল বারবার করত না।

    আমি কী বোকামী করেছি? মাথা উঁচু করে পিছনে হেলিয়ে নাকের উপর দিয়ে তেরছাভাবে ডর্সের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন সেলডন।

    রাগ করো না, হ্যারি। আমার কাছে তোমার এই আচরণটা ভীষণ আকর্ষণীয় মনে হয়।

    আমি জানি। এটা তোমার ভেতরে সন্তানের প্রতি মায়ের যে মমতা সেইরকম মমতা জাগিয়ে তোলে। আর তোমাকে তো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে দেখভাল। করার। কিন্তু আমি কোন দিক দিয়ে বোকা?

    তুমি বোকা এই কারণে যে তুমি ভাবছ রিশেলি তোমাকে এম্পায়ারের জনগণের সামনে ত্রাণকর্তা হিসেবে জাহির করবে। এটা করে তার কোনো লাভ হবে না। গ্যালাক্সির কোয়াড্রিলিয়ন জনসংখ্যাকে একসাথে এক পথে পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। শারীরিক সামর্থ্যের পাশাপাশি সামাজিক এবং মানসিক প্রভাবগুলোও। বিবেচনা করতে হবে। তাছাড়া, এভাবে খোলাখুলি প্রচারণা চালিয়ে সে আসলে ডেমারজেলকে সতর্ক করে তুলবে।

    তাহলে কী করছে সে?

    আমার ধারণা তোমার কথাটা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে প্রচার করা হচ্ছে–তোমাকে অত্যন্ত কৌশলে মহান ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে–শুধু বাছাই করা অল্প কয়েকজন মানুষের কাছে। সেইসব ভাইসরয়, সেইসব ফ্লীট অ্যাডমিরাল, সেইসব প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা তার প্রতি খানিকটা সদয় বা সম্রাটকে পছন্দ করে না। কারণ তারা সম্রাটের অনুগতদের উপর প্রভাব বিস্তার করে রিশেলিকে। যেকোনো পাল্টা আক্রমণ ঠেকানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সময় পাইয়ে দিতে পারে।

    এবং এখনো হামিনের কাছ থেকে কোনো খবর আসেনি!

    আমি নিশ্চিত সে কিছু একটা করছে। ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    সে মারা যেতে পারে। এমন কখনো মনে হয়েছে তোমার?

    সেই সম্ভাবনা তো সব সময়ই আছে, কিন্তু আমার মনে হয় না সে মারা গেছে। ওরকম কিছু হলে আমার কাছে খবর আসত।

    এখানেও?

    এমনকি এখানেও।

    ভুরু কুঁচকালেন সেলডন, কিছু বললেন না।

    রাইখ ফিরল বিকেল বেলা। খুশি এবং প্রচণ্ড উত্তেজিত। মুখে কথার খই ফুটছে। ডিনারের পুরোটা সময়ই সে শুধু বাদর এবং অন্যান্য জন্তু জানোয়ারের বর্ণনা দিয়ে গেল।

    ডিনারের পর নিজেদের কামরায় ফিরে আসার পর আসল কথা জিজ্ঞেস করল ডর্স। এবার, ম্যাডাম মেয়রের সাথে যতক্ষণ ছিলে সেই সময়ের মাঝে কী কী ঘটেছে সব খুলে বললো, রাইখ। তার এমন কোনো কথা বা আচরণ কি তোমার কাছে। গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে যা আমাদের জানা উচিত।

    শুধু একটা ব্যাপার, বলল রাইখ, চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বাজী ধইরা কইতে পারি যে এই কারণেই রিশেলি ডিনারে ছিল না।

    খুলে বলো।

    চিড়িয়াখানায় শুধু আমরাই আছিলাম। আমি, রিশেলি, ইউনিফর্ম পরা অনেক পুরুষমানুষ আর সুন্দর সুন্দর পোশাক পরা অনেক মাইয়া মানুষ। হগলের লাইগা। চিড়িয়াখানা আজকে বন্ধ আছিল। তারপর আতকা ইউনিফর্ম পরা আরেকটা বেডা আইল–হে প্রথম থিক্কা আমগোর লগে ছিল না। একটা কিছু কইতেই রিশেলি ব্যবাকতেরে ওইহানেই থাকতে কইল। তারপর দুইজনে একটু দূরে সইরা গেল। আমি ভান করতে লাগলাম যে এক খাঁচা থিক্কা আরেক খাঁচার সামনে গিয়া জন্তু জানোয়ার দেখতাছি। এইভাবে রিশেলির কিছু ধারে গিয়া খাড়াইলাম।

    তারে কইতে হুনলাম, এত সাহস? মনে হইতাছিল যেন রাগে পাগল হইয়া। যাইব আর ব্যাডাডারে মনে হইতাছিল যেন ভয়ে কইলজা শুকাইয়া গ্যাছে–একবার মাত্র তাকাইছি আমি কারণ ওগোরে বুঝাইবার চাইছিলাম যে আমি আসলে পশুপাখি দেখতাছি। নতুন লোকটা এক জেনারেল বা অইরকমই বড়ো কোনো অফিসারের কথা কইতাছিল–নামডা আমার মনে নাই। ওই জেনারেল নাকি তার অফিসারগো লইয়া রিশেলির বুড়া বাপের কাছে আনুগত্য স্বীকার করছে

    তাই? ডর্স বলল।

    হ, ওরা নাকি কোনো বেডি মাইনসের আদেশ মানব না। ওগোর দাবি বুড়াই ওগোর নেতা অইব, হ্যায় যদি না পারে তাইলে অন্য কোনো ব্যাডারে ঠিক কইরা দিতে অইব। কিন্তু কোনো বেডি মাইনসেরে নেতা বানান যাইব না।

    মেয়ে মানুষের আদেশ ওরা মানবে না? তুমি নিশ্চিত?।

    ঠিক এই কথাগুলাই কইছে। রিশেলি যে ক্ষেপা ক্ষেপছে। কইতাছিল, আমি ওর মাথা কেটে ফেলব। আগামীকাল ওদের সবাইকে আমার কাছে আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। আমার কথা যে মানবে না সে আর অনুতাপ করারও সময় পাবে না। ঠিক এই কথাগুলাই কইছিল। এরপরই আমরা ফিরত আসি। ফিরার পথে রিশেলি আমার লগে একটা কথাও কয় নাই। রাইগা মাইগা জানলা দিয়া বাইরে তাকাইয়া। আছিল।

    চমৎকার। এই কথাগুলো তুমি অন্য কাউকে বলনি তো?

    অবশ্যই না। আপনে কি এই খবরটাই চাইছিলেন?

    এর চাইতে ভালো খবর আর হতেই পারে না। চমৎকার কাজ করেছ, রাইখ। এবার নিজের ঘরে যাও, এবং ভুলে যাও সবকিছু। এমনকি স্বপ্নেও এই কথাগুলো ভাববে না।

    রাইখ চলে যাওয়ার পর সেলডনের দিকে ঘুরে ডর্স বলল, অদ্ভুত। বাবা অথবা মায়ের উত্তরসূরি হিসেবে মেয়ে উঁচুপদে বা মেয়র হয়েছে এমন ঘটনা প্রচুর। তুমিও নিশ্চয়ই জানো যে বেশ কয়েকজন সম্রাজ্ঞীও হয়েছিল যারা শুধু উত্তরসূরি হিসেবেই ইম্পেরিয়াল ক্ষমতায় বসেছিল। কই তখন তো একটা মেয়ের আদেশ পালন করা। নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। তাহলে ওয়িতে এখন কেন সেই প্রশ্ন উঠছে?

    উঠবে নাই বা কেন? সেলডন বললেন। মাত্র কিছুদিন আগেই আমরা মাইকোজেন ঘুরে এসেছি। ওখানে মেয়েদের কোনো ক্ষমতা নেই। সবসময় দমিয়ে রাখা হয়।

    হ্যাঁ, কিন্তু ওটা ব্যতিক্রম। আরো অনেক জায়গাতেই মেয়েরা শাসন করছে। সরকার এবং ক্ষমতার ভেতরে নারী পুরুষ ভেদাভেদ এখানে নেই। যদিও পুরুষরাই বেশিরভাগ উঁচুপদগুলো দখল করে রেখেছে। তার কারণ একটাই। মেয়েরা বায়োলজিক্যালি আটকা পড়ে যায় তাদেরকে সন্তান ধারণ করতে হয়।

    কিন্তু ওয়ির অবস্থা কী?

    যতদূর জানি নারী-পুরুষ ভেদাভেদহীন। রিশেলি দ্বিধাহীনচিত্তে মেয়রের পদ গ্রহণ করেছে এবং তার বাবাও কোনো দ্বিধা না করেই মেয়ের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে। আর এধরনের পুরুষতান্ত্রিক আচরণ দেখে সে একই সাথে বিস্মিত এবং রাগান্বিত। এমনটা সে আশা করেনি।

    তোমাকে বেশ খুশি মনে হচ্ছে। কেন?

    কারণ ব্যাপারটা এত বেশি অস্বাভাবিক যে আমার ধারণা কৌশলে এটাকে তৈরি করা হচ্ছে এবং এর পিছনে হামিনের হাত আছে।

    তোমার তাই মনে হয়? চিন্তিত সুরে জিজ্ঞেস করলেন সেলডন।

    হ্যাঁ। জবাব দিল ডর্স।

    তুমি জানো, সেলডন বললেন, আমারও তাই ধারণা।

    .

    ৮৯.

    ওয়িতে আসার পর দশম দিন সকালবেলা। সেলডনের কামরার ডোর বেল প্রচণ্ড জোরে বেজে উঠল, বাইরে থেকে শোনা গেল রাইখের চিৎকার। মিস্টার! মিস্টার সেলডন! যুদ্ধ লাগছে!

    পুরোপুরি সচেতন হতে সেলডনের মাত্র কয়েকটা সেকেন্ড লাগল। হুড়মুড় করে বিছানা থেকে নামলেন। খানিকটা কেঁপে উঠলেন ঠাণ্ডায় (এখানে আসার পরপরই তিনি আবিষ্কার করেছেন যে ওয়িয়ানরা সবসময়ই ঠাণ্ডা জায়গায় ঘরবাড়ি তৈরি করে)।

    দরজা খুলতেই রাইখ হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল। প্রচণ্ড উত্তেজিত, বিস্ফারিত দৃষ্টি। মিস্টার সেলডন, হ্যারা ম্যানিক্সরে ধইরা ফালাইছে, বুড়া মেয়ররে। হ্যারা-

    কারা মেয়রকে ধরে ফেলেছে রাইখ?।

    ইম্পেরিয়ালরা। কালকে রাত্রে সব জায়গাতে ওগোর জেট নামছে। নিউজ হলোকাস্টে দেখাইতাছে সব। জিনিসটা মিসাস-এর ঘরে আছে। উনি অবশ্য আপনারে জাগাইতে নিষেধ করছিল। কিন্তু আমার মনে অইল এমন একটা গরম খবর আপনে নিশ্চয়ই শুনবার চাইবেন।

    ঠিক কাজই করেছ তুমি। বললেন সেলডন। কয়েকটা সেকেন্ড মাত্র নষ্ট করলেন একটা বাথরোব গায়ে চড়ানোর জন্য। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লেন ডর্সের কামরায়। ডর্স ব্যালকনিতে বসে হলোভিশন দেখছে।

    হলোভিশনে দেখা যাচ্ছে পরিস্কার ঝকঝকে ডেস্কের পিছনে একজন সৈনিক বসা, টিউনিকের বা কাঁধে নক্ষত্র এবং মহাকাশযানের চিহ্ন জ্বলজ্বল করে ফুটে আছে। তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আরো দুজন সশস্ত্র সৈনিক। তাদের কাঁধেও একই চিহ্ন। ডেস্কে বসা সৈনিক বলছিল, হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির নিয়ন্ত্রণে। মেয়র ম্যানিক্স সুস্থ। এবং নিরাপদে আছেন। বন্ধুভাবাপন্ন ইম্পেরিয়াল বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তিনি পরিপূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে শাসন চালিয়ে যাবেন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি আপনাদের সামনে হাজির হবেন। তিনি আপনাদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করবেন এবং যেসব সৈনিক এখনো প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে আদেশ দেবেন।

    আরো অনেক নিউজ হলোকাস্ট প্রচার করা হচ্ছে, বিভিন্ন সাংবাদিকরা নিরাবেগ গলায় সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। প্রত্যেকের বাহুতে ইম্পেরিয়াল আর্মব্যান্ড। প্রতিটা খবরের মূল বক্তব্য একই : ওয়িয়ান সিকিউরিটি ফোর্সের এই ইউনিট বা ওই ইউনিট সামান্য প্রতিরোধের পরেই আত্মসমর্পণ করেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোটেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এই শহর এবং ওই শহর দখলে চলে এসেছে এবং প্রতিটি খবরের সাথে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি–ওয়ির নাগরিকরা গম্ভীরভাবে নিজেদের মাটিতে ইম্পেরিয়াল বাহিনীর মার্চ করা দেখছে।

    নিখুঁতভাবে কাজটা শেষ হয়েছে, হ্যারি। ইম্পেরিয়াল বাহিনী চমৎকারভাবে বিস্ময়ের ধাক্কা দিতে পেরেছে। আসলে প্রতিরোধ করার কোনো সুযোগই ছিল না এবং সেইরকম কোনো সুযোগও ওয়িয়ানদের দেওয়া হয়নি।

    পর্দায় পূর্ব ঘোষিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছুক্ষণ বাদেই মেয়র ম্যানিক্সের চেহারা দেখা গেল। দৃঢ়, ঋজু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, এবং সম্ভবত জনগণকে ধোকা দেবার জন্য তার আশেপাশে কোনো ইম্পেরিয়াল সৈনিক নেই, যদিও সেলডন পুরাপুরি নিঃসন্দেহ যে ক্যামেরার বাইরে প্রচুর আছে।

    ম্যানিক্স বৃদ্ধ, কিন্তু ভঙ্গুর দেহেও শক্তি এবং সামর্থ্যের ছাপ স্পষ্ট। সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকালেন ভদ্রলোক এবং কথা শুনে মনে হলো যেন সেগুলো তাকে দিয়ে কেউ জোর করে বলিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু, যেমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সেই অনুযায়ী তিনি জনগণকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানালেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না করলেন, যেন ওয়ির কোনো ক্ষতি না হয়। অনুরোধ করলেন সম্রাটের সাথে সহযোগিতা করার এবং এই আশাও ব্যক্ত করলেন যে সম্রাট আরো দীর্ঘদিন সিংহাসনে টিকে থাকবেন।

    রিশেলির ব্যাপারে কোনো খবর নেই, সেলডন বললেন। মনে হচ্ছে যেন তার মেয়ের কোনো অস্তিত্বই নেই।

    কেউই তার কথা বলছে না, ডর্স বলল, এই জায়গাটা তার বাসস্থান–বা অনেকগুলো বাসস্থানের একটা–এখানে হামলা হয়নি। সে যদি পালিয়ে প্রতিবেশী সেক্টরগুলোর কোনোটাতে আশ্রয় নিয়েও থাকে ট্র্যান্টরের কোথাও বেশিদিন নিরাপদে থাকতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।

    সম্ভবত না, কে যেন পিছন থেকে বলল, কিন্তু এখানে আমি অন্তত কিছুক্ষণের জন্য নিরাপদ।

    ভিতরে ঢুকল রিশেলি। পরিপূর্ণ পোশাক পরিহিত এবং পুরোপুরি শান্ত। এমনকি সে হাসছে, তবে সেটা আনন্দের হাসি নয়; বরং বলা যায় শুধু দাঁত দেখানো।

    বাকি তিনজন অবাক হয়ে রিশেলির দিকে তাকিয়ে আছে, সেলডন ঠিক নিশ্চিত হতে পারছেন না যে চাকরবাকরেরা তার সাথে আছে নাকি হামলা শুরু হওয়ার পরপরই সব তাকে ফেলে পালিয়েছে।

    ডর্স কিছুটা ঠাণ্ডা গলায় বলল, তো, ম্যাডাম মেয়র, আপনার অভ্যুত্থানের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। শুরু হওয়ার আগেই আপনার খেলা শেষ করে দেওয়া হয়েছে।

    আমাকে শেষ করা হয়নি, আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। আমার অফিসারদেরকে কোনো না কোনোভাবে ওরা পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং সকল যুক্তির উর্ধ্বে উঠে তারা একজন মেয়েমানুষের জন্য লড়াই না করে তাদের বৃদ্ধ প্রভুর কাছে আনুগত্য স্বীকার করেছে। আর বিশ্বাসঘাতকগুলো বুড়ো লোকটাকেও শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছে যেন সে আর প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিতে না পারে।

    একটা চেয়ার দেখতে পেয়ে তাতে বসল রিশেলি। আর এখন এম্পায়ার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে অথচ আমি তাতে নতুন জীবন দিতে চেয়েছিলাম।

    আমার মতে, ডর্স বলল, এম্পায়ার দীর্ঘ অপ্রয়োজনীয় লড়াই এবং ধ্বংস এড়িয়ে গেল। এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারেন, ম্যাডাম মেয়র।

    মনে হলো রিশেলি কথাটা শুনেনি। এতগুলো বছরের প্রস্তুতি মাত্র এক রাতেই ব্যর্থ হয়ে গেল। ক্লান্ত, পরাজিত, বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে রইল সে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে বয়স বিশটা বছর বেড়ে গেছে মুহূর্তের মধ্যেই।

    মাত্র একরাতের মধ্যে এটা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব না। যদি আপনার অনুগত অফিসারদের আপনার বিপক্ষে যাওয়ার জন্য প্রভাবিত করা হয়–যদি আসলেই সেরকম কিছু ঘটে থাকে তার জন্য প্রচুর সময় লেগেছে।

    এই ব্যাপারে ডেমারজেল ভীষণ দক্ষ এবং নিঃসন্দেহে আমি তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করিনি। সে কীভাবে করেছে আমি জানি না–হুমকি, ঘুষ, অনবরত যুক্তি তর্কের মাধ্যমে দলে টানা। চুরি এবং বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ডেমারজেল নিপুণ এক শিল্পী–আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।

    খানিক বিরতি নিয়ে আবার কথা শুরু করল রিশেলি, সে যদি তার সেনাবাহিনী পাঠাতো আমি তা ঠেকাতে পারতাম, কোনো সমস্যাই হত না। কিন্তু কে ভেবেছিল যে আমার নিজের লোকেরাই বিশ্বাসঘাতকতা করবে, শপথ নিয়ে যে আনুগত্য প্রকাশ করেছিল তা এমন করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে?

    সেলডনের মুখ থেকে আপনাআপনিই বোঝানোর মতো সুর বেরলো, কিন্তু আমার মনে হয় ওরা শপথ করেছিল ম্যানিক্সের কাছে, আপনার কাছে নয়।

    ননসেন্স, রেগে গেল রিশেলি। আমার বাবা যখন আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তখন তার নিকট অনুগত সবকিছুই আমার অনুগত হয়ে যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। নতুন শাসকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করা শুধুই একটা ঐতিহ্য আর কিছুই না। আমার অফিসাররা কথাটা জানত কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুলে যাওয়ার। ইম্পেরিয়াল প্রতিহিংসাকে ওরা ভয় পেয়েছে অথচ সেরকম কিছুই ঘটত না। নিশ্চয়ই সম্রাটের কাছ থেকে অনেক ভালো প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। যদিও তার কোনোটাই বাস্তবায়িত হবে না।

    ঝট করে সেলডনের দিকে ঘুরল সে, সে আপনাকে চায়, বুঝতে পেরেছেন। ডেমারজেল আমাদের উপর হামলা করেছে আপনার জন্য।

    আমার জন্য? কেন?

    বোকা সাজবেন না। আমি যে কারণে চেয়েছিলাম ঠিক সেই কারণে… আপনাকে ব্যবহার করার জন্য। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। যাইহোক সবাই বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। এখনো আমার অনুগত অনেক সৈনিক রয়েছে। সার্জেন্ট!

    সতর্কভাবে ভিতরে ঢুকল সার্জেন্ট এমার থালুস, তার মসৃণ পদক্ষেপ দেহের আকৃতির সাথে পুরোপুরি বেমানান। নিভাজ ইউনিফর্ম, গোঁফের কিনারা দুটো মনে ভয় জাগিয়ে তোলার মতো।

    মেঝেতে পা ঠুকে স্যালুট করল সার্জেন্ট। ম্যাডাম মেয়র।

    লোকটাকে এখনো মনে হবে একতাল মাংসপিণ্ড হ্যারি সেলডন তার এই নামই দিয়েছেন–অন্ধের মতো শুধু আদেশ পালন করে চলেছে, পরিস্থিতি সম্বন্ধে কোনো ধারণাই নেই।

    রাইখের দিকে তাকিয়ে বিষণ্ণভাবে হাসল রিশেলি। কেমন আছ রাইখ খোকা? তোমাকে আমি অনেক বড়ো বানাব কথা দিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সেটা আর সম্ভব হবে না।

    হ্যালো মিসাস… ম্যাডাম, অস্বস্তি নিয়ে বলল রাইখ।

    এবং আপনাকেও বিখ্যাত করে দেব কথা দিয়েছিলাম, ড. সেলডন, সেজন্যও। ক্ষমা চাইছি। কারণ আমি কথা রাখতে পারছি না।

    আমার জন্য আপনাকে দুঃখ পেতে হবে না, ম্যাডাম।

    কিন্তু আমি দুঃখিত। আপনি ডেমারজেলের হাতে পড়বেন তা হতে দিতে পারি না। সেটা হবে আমার আরেকটা পরাজয় এবং এই পরাজয় আমি ঠেকাতে পারব।।

    আমি তার জন্য কাজ করব না, ম্যাডাম। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।

    প্রশ্ন কাজ করা নিয়ে নয়, আসল প্রশ্ন হচ্ছে ব্যবহার হওয়া নিয়ে। বিদায় ড. সেলডন–সার্জেন্ট, ব্লাস্ট হিম।

    সার্জেন্ট একটা মুহূর্তও নষ্ট না করেই ব্লাস্টার তুলল আর ডর্স একটা চিৎকার দিয়ে সামনে বাড়তে শুরু করল। কিন্তু সেলডন হাত বাড়িয়ে তাকে ধরে ফেললেন।

    পিছিয়ে এসো, ডর্স, চিৎকার করে বললেন তিনি, ও তোমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে মারবে না। তুমিও, রাইখ। ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো, নড়বে না।

    সার্জেন্টের মুখোমুখি হলেন সেলডন। আপনার হাত কাঁপছে, সার্জেন্ট, কারণ ভালো করেই জানেন আপনি আমাকে শু্যট করতে পারবেন না। দশদিন আগে আমি আপনাকে খুন করতে পারতাম, কিন্তু করিনি। সেই সময় আপনি কথা দিয়েছিলেন। আমাকে রক্ষা করবেন।

    দেরী করছ কেন? রিশেলি বলল। আমি বলছি ওকে মারো, সার্জেন্ট।

    সেলডন কিছুই বললেন না। সার্জেন্ট-এর চোখের পাতা কয়েকবার কাপল। এখনো ব্লাস্টার সেলডনের দিকে তাক করে রেখেছে।

    তুমি তোমার আদেশ পেয়েছ! চিৎকার করল রিশেলি।

    আপনি আমাকে কথা দিয়েছেন, শান্ত ভঙ্গিতে বললেন সেলডন।

    সার্জেন্ট থালুস ফিসফিস করে বলল, হ্যাঁ, কথা দিয়েছি। তারপর হাত নামিয়ে নিল। ব্লাস্টার ফেলে দিল মেঝেতে।

    আর্তনাদ করে উঠল রিশেলি, তুমিও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে!

    সেলডন নড়ার আগেই বা ডর্স সেলডনের বজ্রমুষ্ঠি থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আগেই রিশেলি নিচু হয়ে মেঝে থেকে ব্লাস্টার তুলে নিল, তারপর ফায়ার করল সার্জেন্টের বুক বরাবর।

    ব্লাস্টারের আঘাতে এর আগে কাউকে মরতে দেখেননি সেলডন। কেন যেন তার ধারণা হয়েছিল, সম্ভবত অস্ত্রটার নামের গুণেই, তিনি মনে করেছিলেন ফায়ার করলে প্রচণ্ড শব্দ হবে এবং যাকে আঘাত করবে তার পুরো দেহটা বিস্ফারিত হবে। এই ওয়িয়ান ব্লাস্টারে অবশ্য সে ধরনের কিছু হলো না। সার্জেন্টের দেহের ভেতরে কী ক্ষতি হয়েছে বলতে পারবেন না তিনি, কিন্তু আঘাতের সাথে সাথেই পরে গেল সে, মুখে ব্যথা বা কষ্টের কোনো চিহ্নই ফুটল না। মাটিতে পড়ার আগেই মারা গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

    এদিকে রিশেলি ব্লাস্টার সেলডনের দিকে ঘুরিয়ে ফেলেছে, তার দৃঢ় ভঙ্গি দেখে নিজের পরিণতি সম্পর্কেও একরকম নিশ্চিতই হয়ে গেলেন তিনি।

    রাইখ সামলে উঠল সবার আগে, দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো সেলডন আর রিশেলির মাঝখানে। চিৎকার করে বলল, মিসাস, মাইরেন না।

    মুহূর্তের জন্য দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল রিশেলি। বলল, সরে যাও, রাইখ। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই না।

    এই সময়টাই দরকার ছিল ডর্সের। দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে ডাইভ দিয়ে রিশেলির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দুজনেই একসাথে পড়ে গেল মাটিতে, সেই সাথে ব্লাস্টারটাও একই দিনে দ্বিতীয়বারের মতো মেঝের আলিঙ্গনাবদ্ধ হলো। অস্ত্রটা তুলে নিল রাইখ।

    ওটা আমাকে দাও, রাইখ, সেলডন বললেন।

    কিন্তু রাইখ পিছিয়ে গেল। আপনি উনারে মারবেন না, মিস্টার সেলডন, তাই না? উনি আমার লগে খুব ভালো ব্যবহার করছে।

    আমি কাউকেই মারব না, রাইখ। ও সার্জেন্টকে খুন করেছে, হয়তো আমাকেও করত, কিন্তু তোমার গায়ে লাগবে সেইজন্য শু্যট করেনি এবং শুধু এই কারণেই আমরা ওকে ছেড়ে দেব।

    পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এবার সেলডন বসে আছেন চেয়ারে, ব্লাস্টারটা অলস ভঙ্গিতে ধরে রেখেছেন তিনি। অন্যদিকে সার্জেন্টের দ্বিতীয় হোলস্টার থেকে নিউরোনিক হুইপটা সরিয়ে নিল ডর্স।

    নতুন একটা কণ্ঠ শোনা গেল, এবার আমি ওর দায়িত্ব নিতে পারব, সেলডন।

    নতুন কণ্ঠের দিকে তাকালেন সেলডন, তারপর হঠাৎ উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, হামিন! এলেন শেষ পর্যন্ত!

    দেরী করার জন্য দুঃখিত, সেলডন। অনেক কিছু সামলে আসতে হয়েছে। কেমন আছ ড. ভেনাবিলি? আমার ধারণা ইনিই ম্যানিক্সের মেয়ে, রিশেলি। কিন্তু এই ছেলেটা কে?

    রাইখ, আমাদের ডালাইট বন্ধু।

    অনেক সৈনিক কামরার ভেতর ঢুকছে। হামিন-এর ইশারা পেয়ে তাদের কয়েকজন রিশেলিকে সসম্মানে মাটি থেকে তুলে দাঁড় করালো।

    ডর্স হাত দিয়ে কাপড়ের ভাজ সমান করছে। সেলডনের খেয়াল হলো তিনি এখনো বাথরোব পরে রেখেছেন।

    ঝটকা মেরে সৈনিকদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল রিশেলি। হামিনের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে সেলডনকে জিজ্ঞেস করল, এই লোকটা কে?

    চ্যাটার হামিন, সেলডন জবাব দিলেন। আমার বন্ধু এবং এই গ্রহে সে-ই আমার রক্ষাকর্তা, প্রটেকটর।

    আপনার প্রটেকটর? পাগলের মতো হেসে উঠল রিশেলি। বোকা! গর্দভ! এই লোকটাই ডেমারজেল। ভেনাবিলিও সেটা জানে। আপনি ওর মুখ দেখলেই বুঝতে পারবেন। প্রথম থেকেই আপনি ফাঁদে আটকা পড়ে আছেন। আমার কাছ থেকে যতটুকু বিপদের ভয় ছিল তারচেয়েও ভয়ংকর বিপদ আপনি শুরু থেকেই কাঁধে নিয়ে ঘুরছেন।

    .

    ৯০.

    সেদিনই হামিন আর সেলডন লাঞ্চ করতে বসেছেন, সাথে অন্য কেউ নেই। দুজনের মাঝে অস্বস্তিকর একটা নীরবতা বিরাজ করছে।

    লাঞ্চ যখন শেষ পর্যায়ে, সেলডন উৎফুল্ল সুরে বললেন, তো, স্যার, আমি আপনাকে কীভাবে সম্বোধন করব? আমার কাছে এখনো আপনি চ্যাটার হামিন, কিন্তু আপনার অন্য পরিচয়টা যদি মেনেও নেই তারপরেও আমি নিশ্চয়ই আপনাকে ইটো ডেমারজেল বলে ডাকতে পারব না। অন্য পরিচয়টাকে সম্বোধন করার নিশ্চয়ই আলাদা নিয়ম আছে, আমি জানি না সেটা কী।

    অন্যজন গম্ভীর গলায় জবাব দিল, হামিন–অথবা চ্যাটার, যা খুশি ডাকতে পারো (দুজনের অজান্তেই সম্বোধন আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে)। হ্যাঁ, আমিই ইটো ডেমারজেল, কিন্তু তোমার কাছে হামিন। সত্যি কথা বলতে কী দুটোর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তোমাকে বলেছি যে এম্পায়ার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ডেমারজেল বা হামিন। আমার দুটো সত্তাই কথাটা বিশ্বাস করে। তোমাকে বলেছি যে আমি সাইকোহিস্টোরিকে ব্যবহার করে এই ধ্বংস ঠেকাতে চাই, যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে পরবর্তী পুনর্গঠনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। দুই পরিচয়েই আমি এই কথাটাও বিশ্বাস করি।

    কিন্তু আমি তো তোমার হাতের মুঠোতেই ছিলাম আমার ধারণা সম্রাটের সাথে যখন দেখা করি তখন তুমি আশেপাশেই ছিলে।

    ক্লীয়নের সাথে। হ্যাঁ, অবশ্যই।

    তখনই তুমি আমার সাথে কথা বলতে পারতে, পরে হামিন সেজে এই কাজটাই করেছ।

    কী লাভ হতো তাতে? ডেমারজেল হিসেবে, আমার প্রচুর দায়িত্ব। ক্লীয়নকে সামলাতে হয়, ভালো মানুষ কিন্তু দক্ষ প্রশাসক নয়, যতদূর সম্ভব লক্ষ্য রাখতে হয়। যেন সে কোনো ভুল না করে। ট্র্যান্টর সেই সাথে পুরো এম্পায়ার চালানোর কিছু কাজ আমাকে করতে হয়। আর, ওয়ি যেন কোনো ক্ষতি করতে না পারে তার জন্যও প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে।

    হ্যাঁ, আমি জানি, বিড়বিড় করলেন সেলডন।

    কাজটা সহজ ছিল না, আরেকটু হলেই সর্বনাশ ঘটে যেত, বিগত বছরগুলোতে আমি শুধু ম্যানিক্স-এর উপরেই নজর রেখেছি, তাকে এবং তার চিন্তাধারা, পরিকল্পনা বোঝার চেষ্টা করেছি, তার প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতিকূলে আমি কী পদক্ষেপ নেব তা স্থির করেছি। কিন্তু একবারও চিন্তা করিনি যে সে বেঁচে থাকতেই পুরো ক্ষমতা মেয়ের। হাতে ছেড়ে দেবে। রিশেলির জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। বাপের মতোই সেও ক্ষমতা পাওয়ার জন্য লালায়িত ছিল কিন্তু এই ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা তার জানা ছিল না। তাই সে তোমাকে বন্দী করে আমাকে পুরো প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই মাঠে নামতে বাধ্য করল।

    আরেকটু দেরী হলেই আমাকে হারাতে তুমি। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুদুবার ব্লাস্টারের মাজলের সামনে দাঁড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়।

    আমি জানি, মাথা নেড়ে হামিন বলল। তোমাকে আমরা আপারসাইডেও হারাতে পারতাম–আরেকটা দুর্ঘটনা যা আমার হিসাবে ছিল না।

    কিন্তু তুমি আমার আসল প্রশ্নের জবাব দাওনি এখনো, তুমি কেন আমাকে ডেমারজেলের ভয়ে ট্র্যান্টরে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করলে যেখানে তুমি নিজেই ডেমারজেল।

    ক্লীয়নকে তুমি বলেছিলে যে সাইকোহিস্টোরি পুরোপুরি তাত্ত্বিক ধারণা, একটা গাণিতিক ধাঁধা যার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। ব্যাপারটা হয়তো তাই, কিন্তু আমি যদি অফিসিয়ালি তোমাকে প্রস্তাব দিতাম তাহলে সম্ভবত নিজের ধারণাতেই অনড় থাকতে। কিন্তু সাইকোহিস্টোরির ধারণাটা ততক্ষণে আমাকে প্রচণ্ডভাবে আকৃষ্ট করে ফেলেছে। ভাবলাম এটাতো শুধু গাণিতিক খেলা নাও হতে পারে। বিশ্বাস কর আমি কখনোই তোমাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইনি, চেয়েছি সত্যিকার বাস্তবসম্মত এবং কার্যকরি সাইকোহিস্টোরি।

    আর তাই তোমাকে বাধ্য করলাম পাষণ্ড খুনি ডেমারজেলের হাত থেকে পালিয়ে বেড়াতে। আমি ভেবেছিলাম এর ফলে তুমি আরো গভীরভাবে চিন্তা করতে পারবে। এবং তাতে হয়তো সাইকোহিস্টোরি গাণিতিক ধাঁধার মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হবে। আদর্শবান দায়িত্বশীল হামিনের জন্য তুমি হয়তো কাজটা করার চেষ্টা করবে, কিন্তু শয়তানের দোসর ডেমারজেলের জন্য তুমি যে কিছুই করতে না তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাছাড়া এভাবে পালিয়ে বেড়ানোর ফলে ট্র্যান্টরের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা হবে যা তোমার কাজের জন্য অত্যন্ত দরকারী–অন্তত সুসজ্জিত প্রাসাদে সহকর্মী গণিতবিদদের মাঝখানে থাকার চেয়ে অনেক বেশি উপকার হবে। আমার সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিল? কোনো অগ্রগতি কি হয়েছে?

    সাইকোহিস্টোরির ব্যাপারে কিছুটাতো হয়েছে, হামিন। ভেবেছিলাম তুমি জানো।

    কীভাবে জানব?

    ডর্সকে জানিয়েছিলাম আমি।

    কিন্তু আমাকে বলনি। যাইহোক, এখন তো বললে। সুখবর।

    সুখবর ঠিক না, আমি এখন অন্তত কাজটা শুরু করতে পারব। তবে শুরু যে করা যাচ্ছে এটাকে সুখবর হিসাবে ধরতে পার।

    শুরু কীভাবে হবে সেটা কি গণিতবিদ নয় এমন একজনের কাছে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যাবে?

    বোধহয় যাবে। হামিন, একেবারে শুরুতেই আমি সাইকোহিস্টোরির মূল ভিত্তি ধরে নিয়েছিলাম পঁচিশ মিলিয়ন গ্রহের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। প্রতিটি গ্রহের জনসংখ্যা হবে গড়পড়তা চার হাজার মিলিয়ন। অত্যন্ত বেশি। এত জটিল একটা বিষয় সামলানোর কোনো উপায়ই নেই। আমাকে সফল হতে হলে, ব্যবহার উপযোগী সাইকোহিস্টোরি তৈরি করার পথ পেতে হলে, আমার প্রথম কাজটাই ছিল অত্যন্ত সরল একটা সিস্টেম তৈরি করা।

    তাই ভাবলাম যে আমাকে সময়ের পিছন দিকে যেতে হবে এবং শুধু একটা গ্রহ নিয়ে কাজ করতে হবে, সেই গ্রহ যা গ্যালাক্সিতে কলোনাইজেশন শুরু হওয়ারও বহুকাল আগের অজানা অতীতে মানব জাতির একমাত্র বাসস্থান ছিল। মাইকোজেনে ওরা অরোরা নামের এক অরিজিন ওয়ার্ল্ডের কথা বলল আর ডাহলে এসে শুনলাম পৃথিবী নামের অরিজিন ওয়ার্ল্ডের কথা। ভেবেছিলাম দুটো একই গ্রহ শুধু নামটা আলাদা। কিন্তু দুটোর মাঝে একটা ক্ষেত্রে এত বেশি পার্থক্য যে ধারণাটা বাদ দিতে হলো। দুটো গ্রহের কোনোটার ব্যাপারেই তেমন কোনো তথ্য নেই। সামান্য যেটুকু আছে তাও পুরাকাহিনী আর কিংবদন্তীতে ঢাকা পড়ে গেছে। তার উপর ভিত্তি করে। সাইকোহিস্টোরি গড়ে উঠতে পারে না।

    ঠাণ্ডা জুসে চুমুক দেবার জন্য থামলেন সেলডন, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন হামিনের মুখের দিকে।

    বেশ, তারপর? জিজ্ঞেস করল হামিন।

    এরই মাঝে, ডর্স আমাকে একটা গল্প শোনালো, গল্পটার নাম দিয়েছি হ্যান্ড অন-থাই স্টোরি। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। অত্যন্ত হাস্যকর এবং খেলো একটা গল্প। যদিও ডর্স যৌনতার বিষয়ে ট্র্যান্টরের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের বিভিন্ন মানসিকতার কথা বোঝানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমার মনে হলো সে যেন বোঝাতে চাইছে ট্র্যান্টরের প্রতিটি সেক্টরই একেকটা আলাদা গ্রহ, আলাদা বিশ্ব। ভাবলাম পঁচিশ মিলিয়নের সাথে আরো আটশ যোগ হলো। কিন্তু পার্থক্যটা তেমন বেশি নয় বলে ব্যাপারটা আমি ভুলে গেলাম।

    কিন্তু ইম্পেরিয়াল সেক্টর থেকে স্ট্রিলিং, মাইকোজেন, ডাল, ওয়ি, চলার পথে আমি নিজের চোখেই দেখলাম, বুঝলাম পার্থক্যটা কত প্রকট, একজনের চেয়ে অন্যজন কত বেশি আলাদা। ট্র্যান্টর আসলে একটা বিশ্ব নয় বরং অনেকগুলো বিশ্বের সম্মিলিত এক ব্যবস্থা–এই ধারণাটা আমার ভেতরে বদ্ধমূল হতে লাগল, কিন্তু তখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাবিটা আমি পাইনি।

    পেলাম তখনই যখন রিশেলির কথা শুনলাম–আসলে ওয়ির হাতে আমার ধরা পড়া, আমাকে ব্যবহার করে সম্রাজ্ঞী হওয়ার জন্য রিশেলির তাড়াহুড়া সুফল বয়ে এনেছে–যাইহোক, যা বলছিলাম, রিশেলির মুখে শুনলাম যে সে আসলে শুধু ট্র্যান্টর এবং এর অত্যন্ত কাছাকাছি কয়েকটা প্ল্যানেটরি সিস্টেম দখল করতে চায়। তার মতে ট্র্যান্টরই একটা এম্পায়ার এবং আউটওয়ার্ল্ডগুলো হচ্ছে অতি দূরের শূন্যতা।

    ঠিক সেই মুহূর্তেই বিদ্যুৎ চমকের মতো বুঝে ফেললাম আমি যা পাগলের মতো খুঁজছি তা কোথায় আছে। ট্র্যান্টরের রয়েছে অত্যন্ত জটিল এক সামাজিক ব্যবস্থা, আটশ ছোট ছোট বিশ্বের সমন্বয়ে গড়ে উঠা এক সামগ্রিক বিশ্ব। সাইকোহিস্টোরিকে অর্থবহ করে তোলার জন্য ট্র্যান্টর যথেষ্ট জটিল, আবার সাইকোহিস্টোরি বাস্তবসম্মত করে তোলার জন্য ট্রান্টর যথেষ্ট সরল।

    আর পঁচিশ মিলিয়ন আউটার ওয়ার্ল্ডগুলো? ওগুলো আসলেই দূরবর্তী শূন্যতা। কোনো সন্দেহ নেই ওই গ্রহগুলো ট্র্যান্টরকে যেমন প্রভাবিত করে নিজেরাও সেরকম প্রভাবিত হয়। কিন্তু তা শুধু দ্বিতীয় মাত্রার প্রভাব। যদি শুধু ট্র্যান্টরকে প্রথম অনুমিতি ধরে সাইকোহিস্টোরি তৈরি করতে পারি তাহলে আউটার ওয়ার্ল্ডের গৌন প্রভাব। পরবর্তী মডিফিকেশন হিসেবে যুক্ত করা যাবে। কী বলছি বুঝতে পারছ? আমি যে সিঙ্গেল ওয়ার্ল্ড খুঁজছিলাম তা সবসময়ই ছিল আমার পায়ের নিচে।

    স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে উষ্ণু গলায় হামিন বলল, চমৎকার!

    কিন্তু কাজ পুরোটাই বাকি রয়ে গেছে, হামিন। ট্র্যান্টরকে খুব নিপুণভাবে বুঝতে হবে আমার। সেই জন্য প্রয়োজনীয় গাণিতিক কৌশল তৈরি করতে হবে। ভাগ্য যদি ভালো হয় এবং সারাজীবন কাজ করে যেতে পারি তাহলে হয়তো মৃত্যুর পূর্বে ফলাফলটা দেখে যেতে পারব। তা সম্ভব না হলে, আমার উত্তরসূরীরা আমাকে অনুসরণ করবে। কার্যকরী কৌশল হিসেবে সাইকোহিস্টোরি গড়ে উঠার আগেই হয়তো এম্পায়ার ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে।

    তোমাকে সাহায্য করার জন্য আমি সব করব।

    আমি জানি।

    তুমি তাহলে আমাকে বিশ্বাস করছ, আমি ডেমারজেল এটা জানার পরেও?

    পুরোপুরি। নিঃসন্দেহে। কিন্তু বিশ্বাস করছি এই কারণে যে তুমি ডেমারজেল নও।

    কিন্তু আমিই ডেমারজেল।

    না, তুমি তা নও। তোমার হামিন পরিচয়টা যেমন মিথ্যে তেমনি ডেমারজেল পরিচয়টাও মিথ্যে।

    কী বলছ তুমি? দৃষ্টি বিস্ফারিত হলো ডেমারজেলের, সেলডনের কাছ থেকে পিছিয়ে গেল সে।

    বলতে চাইছি হামিন নামটা তুমি বেছে নিয়েছ এই জন্য যে শব্দটা আসলে হিউম্যান-এর বিকৃত উচ্চারণ। তাই না?

    জবাব দিল না হামিন, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেলডনের দিকে।

    শেষ পর্যন্ত সেলডনই বললেন, কারণ তুমি আসলে মানুষ নও, হামিন/ ডেমারজেল, তাই না? তুমি রোবট।

    .

    ডর্স

    সেলডন হ্যারি… সাইকোহিস্টোরি এবং হ্যারি সেলডন সমার্থক এইভাবে চিন্তা করাটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, একজন গণিতবিদ এবং সামাজিক ধারা পরিবর্তনের বিজ্ঞ মহাপুরুষ। কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি নিজেই মানুষকে উৎসাহিত করেছেন এইভাবে চিন্তা করতে, কারণ তার লেখনিতে কোথাও উল্লেখ করেননি তিনি কীভাবে সাইকোহিস্টোরির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছেন। তিনি যা বলেছেন তাতে এই ধারণা হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে তার চিন্তা ভাবনাগুলো হঠাৎ করেই শূন্য থেকে উদয় হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সুসম্পন্ন করতে তিনি যে কতবার ব্যর্থ হয়েছেন কতবার যে কানাগলিতে হোঁচট খেয়েছেন সেই সম্বন্ধেও কিছু বলেননি।
    … তার ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধেও কিছু জানা যায়নি। তার পিতা মাতা এবং ভাইবোনের ব্যাপারে আমরা শুধু গুটিকয়েক তথ্য জানি, এর বেশি কিছু না। তার একমাত্র পুত্র, রাইখ সেলডন, জানা যায় যে রাইখ ছিল তার দত্তক পুত্র। কিন্তু রাইখকে তিনি কোথায় কীভাবে খুঁজে পেলেন সেই ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। আমরা শুধু জানি যে তার একজন স্ত্রী ছিল। এটা পরিস্কার যে সাইকোহিস্টোরি ব্যতিরেকে অন্য সকল বিষয়ে তিনি নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে চেয়েছিলেন। যেন তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন অথবা চেয়েছিলেন সবাই এইভাবে অনুভব করুক–যে তিনি আসলে বেঁচে নেই, সাইকোহিস্টোরিফাইড হয়ে গেছেন।
    —এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাক্টিকা

    .

    ৯১.

    চুপচাপ শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে হামিন, কোনো ভাবান্তর নেই, তাকিয়ে আছে সেলডনের দিকে। আর সেলডন অপেক্ষা করছেন। তার মতে এবার হামিনের কথা বলার পালা।

    হামিন বলল ঠিকই, কিন্তু শুধু এইটুকুই, রোবট? আমি? আমার ধারণা রোবট বলতে তুমি বোঝাচ্ছ একটা কৃত্রিম সত্তা, মাইকোজেনের স্যাক্রাটোরিয়ামে যেমন দেখেছ।

    না, ওরকম নয়। জবাব দিলেন সেলডন।

    ধাতব নয়? চকচকে দেহ নয়? শুধু নিষ্প্রাণ প্রতিকৃতি নয়? কাষ্ঠ গলায়। কথাগুলো বলল হামিন।

    না। কৃত্রিম সত্তা হলেই যে ধাতব হবে তা কিন্তু নয়। আমি এমন এক রোবটের কথা বলছি যার অন্তত বাহ্যিক রূপ দেখে মানুষের সাথে কোনো পার্থক্য করা যাবে না।

    যদি মানুষের সাথে কোনো পার্থক্য না-ই করা যায় তুমি কীভাবে বুঝলে?

    বাহ্যিক রূপ নয়, আমি অন্য কিছু দেখে বুঝেছি।

    একটু ব্যাখ্যা কর।

    হামিন, যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম তোমার ভয়ে–মানে ডেমারজেলের ভয়ে, আমি দুটো প্রাচীন গ্রহের কথা জানতে পারি। যাদের কাছ থেকে শুনেছি তাদের কাছে দুটো গ্রহই আদি এবং একমাত্র গ্রহ। দুটোর বেলাতেই রোবটের কথা বলা হয়েছে তবে একটা থেকে আরেকটা ভিন্ন।

    টেবিলের বিপরীত দিকে বসা লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সেলডন, এমন কোনো ইশারা বা চিহ্ন খুঁজছেন যা দেখে বোঝা যাবে সে কি আসলেই রোবট না মানুষ। বললেন, অরোরা গ্রহটিকে যারা আদি গ্রহ বলে মনে করে তারা যে রোবটের কথা বলেছে সেই রোবট তাদের শত্রু, বিশ্বাসঘাতক। পৃথিবী গ্রহটিকে যারা আদি গ্রহ বলে মনে করে তারা যে রোবটের কথা বলেছে সেই রোবট তাদের কাছে মহানায়ক, উদ্ধারকর্তা। এখন যদি ধরে নেই যে দুটো রোবটই আসলে এক সেটা কি খুব বাড়াবাড়ি হবে?

    হবে কী? বিড়বিড় করে হামিন বলল।

    আমিও সেটাই অনুমান করেছিলাম, হামিন। ভেবেছি যে অরোরা আর পৃথিবী দুটো আলাদা গ্রহ, একই সময়ে সেখানে মানব বসতি ছিল। কোনটা আগে কোনটা পরে আমি জানি না। মাইকোজেনিয়ানদের অহংকার এবং আত্মম্ভরিতা দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে অরোরাই ছিল আদি গ্রহ এবং তারা পৃথিবীর মানুষদের ঘৃণা করত যারা ছিল তাদেরই বংশধর বা যারা তাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

    অন্যদিকে, মাদার রিটার কাছ থেকে আমি পৃথিবীর কথা শুনলাম। তার মতে পৃথিবীই মানবজাতির প্রথম উৎপত্তিস্থল এবং বাসস্থান আর মাইকোজেনিয়ানদের আচার, সংস্কৃতি এবং গ্যালাক্সির বাকি কোয়াড্রিলিয়ন মানুষ যাদের মাঝে মাইকোজেনিয়ান ধ্যান ধারণা নেই সেটার কারণে ধরে নেওয়া যায়। যে পৃথিবীই আদি গ্রহ। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারব না কিন্তু আমার চিন্তা ভাবনা করার পদ্ধতিটা তোমার কাছে খুলে বলছি যাতে তুমি বুঝতে পার আমি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

    হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। বলে যাও। মাথা নেড়ে বলল হামিন।

    গ্রহগুলো ছিল একে অপরের শত্রু। মাদার রিটার কথাতে সেরকমই মনে হয়। মাইকোজেনিয়ান, যারা অরোরার সমর্থক এবং ডালাইট, যারা পৃথিবীর সমর্থক তাদের মাঝে তুলনা করে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে অরোরা ছিল প্রযুক্তিতে অনেক বেশি অগ্রসর। এত বেশি উন্নত যে তারা এমন রোবট তৈরি করতে পেরেছিল যা দেখতে হুবহু মানুষের মতো, কোনো পার্থক্য নেই। এমন একটা রোবট নিশ্চয়ই তারা। তৈরি করেছিল, কিন্তু যেহেতু সে ছিল অরোরার শত্রু সেহেতু নিশ্চয়ই সে অরোরাবাসীদের ছেড়ে চলে যায়, অন্য দিকে সে ছিল পৃথিবীবাসীদের বন্ধু, তাহলে নিশ্চয়ই সে পৃথিবীর মানুষদের পক্ষে যোগ দিয়েছিল, কেন সে এই কাজ করেছে, কী উদ্দেশ্যে সে এই কাজ করেছে আমি জানি না।

    আসলে তুমি বলতে চাইছ যে ওটা কেন এই কাজ করেছে, কী উদ্দেশ্য ছিল।

    হয়তো বা, কিন্তু তোমার সামনে আমি বস্তুবাচক সর্বনাম ব্যবহার করতে চাচ্ছি না। মাদার রিটার দৃঢ় বিশ্বাস সেই মহানায়ক রোবট–তার মহানায়ক রোবট এখনো। টিকে আছে এবং ঠিক প্রয়োজনের মুহূর্তে সে আবার ফিরে আসবে। আমার মনে হয়েছে যে একটা রোবটের অমর হওয়া অসম্ভব কিছু না যদি তার যন্ত্রাংশগুলো নিয়মিত ব্যবধানে পরিবর্তন করা হয়।

    এমনকি ব্রেইনও? জিজ্ঞেস করল হামিন।

    এমনকি ব্রেইনও। আমি আসলে রোবট সম্বন্ধে তেমন কিছু জানি না, তবে আমার মনে হয় পুরনো ব্রেইনের সকল তথ্য নতুন ব্রেইনে পুনরায় রেকর্ড করে রাখা যাবে।–এবং মাদার রিটা অদ্ভুত মেন্টাল পাওয়ারের কথাও বলেছিল। আমারও মনে হয়েছে : সেরকমই তো হওয়া উচিত। হয়তো একটু বেশিই কল্পনা করে ফেলেছি, কিন্তু এত বেশি কল্পনাপ্রবণ নই যে ধরে নেব একটা রোবট দুই একটা কলকাঠি নেড়েই ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেবে। একটা রোবট পৃথিবীর বিজয় নিশ্চিত করতে পারবে না, পারবে না অরোরার পরাজয় নিশ্চিত করতে যদি না তার ভেতর কিছুটা অদ্ভুত কিছুটা অস্বাভাবিক কোনো গুণ না থাকে।

    তোমার কি মনে হয়নি, হ্যারি, যে তুমি প্রাচীন কিংবদন্তীর উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছ। এমন কিংবদন্তী যা শতাব্দী এবং বহু সহস্রাব্দের পরিবর্তনের ফলে অতি স্বাভাবিক কোনো ঘটনাকেও অলৌকিক করে তুলে? তুমি কি এটা বিশ্বাস। করতে পারবে যে একটা রোবট শুধু যে দেখতে পুরোপুরি মানুষের মতো তাই নয় বরং তা অমর এবং মেন্টাল পাওয়ার আছে? তুমি কি আসলে সুপারহিউম্যানে বিশ্বাস। করতে শুরু করেছ?

    কিংবদন্তী কী সেটা আমি ভালো করেই জানি এবং আমি রূপকথা বিশ্বাস করার মতো মানুষ নাই। তারপরে, অদ্ভুত কিছু ঘটনা যখন সেগুলোর পিছনে সমর্থন যোগায়–যা আমি নিজে দেখেছি–অনুভব করেছি-

    যেমন?

    হামিন, প্রথম দেখেই আমি তোমাকে বিশ্বাস করে ফেলি। যদিও তুমি আমাকে সেই গুন্ডা দুটোকে শায়েস্তা করার ব্যাপারে সাহায্য করেছিলে। ইচ্ছে হলে নিজের গা বাঁচিয়ে চলে যেতে পারতে। অবশ্য তখন আমি জানতাম না যে ওরা তোমারই ভাড়া করা গুন্ডা ছিল, শুধু তুমি যা বলেছ ওরা তাই করেছে। যাইহোক কিছু মনে করিনি।

    সত্যি, শেষ পর্যন্ত হামিনের গলায় খানিকটা আমোদের সুর ফুটে উঠল।

    আমি তোমাকে বিশ্বাস করে ফেলি। তোমার কথা মেনে নিয়ে আমি নিজের গ্রহে না ফিরে ট্র্যান্টরে পালিয়ে বেড়াতে শুরু করি। বিনা প্রশ্নে তোমার প্রতিটি কথা আমি। মেনে নিই। নিজেকে পুরোপুরি তোমার হাতে ছেড়ে দেই। পিছনের ঘটনাগুলো চিন্তা করলে মনে হয় সেই সময় আমি আসলে আমার মাঝে ছিলাম না। আমাকে কেউ সহজে নিজের ইচ্ছামতো চালাতে পারে না, অথচ ঠিক তাই ঘটেছে। সবচেয়ে বড়ো কথা, এইরকম স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করাটা আমার কাছে মোটেও অস্বাভাবিক মনে। হয়নি।

    তোমাকে তুমি নিজেই সবচেয়ে ভালো চিনবে, হ্যারি। হামিন বলল।

    শুধু আমিই না। ডর্স ভেনাবিলি, চমৎকার মহিলা, উজ্জ্বল ক্যারিয়ার, কেন সবকিছু বাদ দিয়ে বিপদের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমার সাথে ঘুরতে লাগল। কেন সে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল এবং এমন ভাব করতে লাগল যেন আমাকে রক্ষা করাটা অত্যন্ত পবিত্র দায়িত্ব? শুধু এই কারণে যে তুমি তাকে করতে বলেছ?

    আমিই তাকে এই দায়িত্ব নিতে বলেছি।

    কিন্তু ডর্সকে আমার সেইরকম মনে হয়নি যে কেউ কোনো কাজের কথা বললেই অন্ধের মতো তাতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এটাও বিশ্বাস করি না যে সে প্রথম দেখেই আমার প্রেমে পড়ে গেছে, তার আর কোনো উপায় নেই। ওরকম কিছু হলে আমি খুশি হতাম, কিন্তু ডর্সকে আমার অতটা নরম মনে হয়নি। তোমাকে সব সরাসরিই বলছি এবং বিশ্বাস করো আমি ওকে শ্রদ্ধা করি।

    ডর্স চমৎকার মহিলা, তোমাকে দোষ দেওয়া যায় না।

    সেলডন বলতেই লাগলেন, সানমাস্টার ফোরটিন, উদ্ধত এক লোক এবং এমন মানুষদের নেতা যারা নিজেদের সমাজের বাইরের অন্যসব মানুষকে নোংরা পোকামাকড়ের মতো ঘৃণা করে। অথচ তারা কেন দুজন ট্রাইবসপিওপিলকে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিল, তাদের পক্ষে যতদূর সম্ভব আপ্যায়ন করল। আমরা যখন ওদের প্রতিটি নিয়ম ভঙ্গ করলাম, তাদের ধর্ম বিরোধী কাজ করলাম, তারপরেও কীভাবে তুমি ওদের সাথে কথা বলে আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করলে?

    টিসালভারদের মতো উন্নাসিক অহংকারী মানুষগুলোকে তুমি কীভাবে রাজী করালে। এই গ্রহের প্রতিটি স্থানেই তোমার অবাধ যাতায়াত। কেন? যেকোনো মানুষ। যতই অস্বাভাবিকতা থাকুক না কেন খুব সহজেই তুমি তাদের বন্ধু হয়ে উঠতে পার, তাদেরকে প্রভাবিত করতে পার। ক্লীয়নের মতো মানুষকে তুমি কীভাবে নিজের ইচ্ছামতো চালাও? ধরে নিলাম সে নরম কাদামাটির মতো, কিন্তু তার বাবাকে তুমি কীভাবে সামলেছ যে ছিল রক্তলোলুপ স্বেচ্ছাচারী?

    সবচেয়ে বড়ো কথা চতুর্থ ম্যানিক্স কীভাবে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত দক্ষ একটা সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে পারল, অথচ তার মেয়ে যখন এই সেনাবাহিনী। ব্যবহার করতে চাইল মুহূর্তের মধ্যে সব ব্যর্থ হয়ে গেল? কীভাবে তুমি ওদের সবাইকে সপক্ষ ত্যাগ করতে রাজী করালে, ঠিক তুমি যা করেছিলে?

    তোমার কী মনে হয় না যে আমি আসলে বিভিন্ন রকম মানুষ সামলাতে অত্যন্ত দক্ষ, আমি এমন একটা পদে আছি যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনেক সুবিধা দিতে পারি এবং ভবিষ্যতে আরো বেশি কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারি? এমন কিছু তো করিনি যা অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা বলে মনে হতে পারে।

    কিছুই করোনি? ওয়িয়ান আর্মি নিরস্ত্র করাটাকেও তুমি কিছুই করোনি বলবে?

    ওরা একজন মহিলার অধীনে যুদ্ধ করতে রাজী হয়নি।

    ওরা ভালো করেই জানত ম্যানিক্স যেকোনো দিন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, মারা যেতে পারে, রিশেলি হবে তাদের মেয়র। তখন তো ওদের অনীহা প্রকাশ পায়নি। পেল ঠিক তখনই যখন তুমি সিদ্ধান্ত নিলে যে এবার তা প্রকাশ করার সময় হয়েছে। ডর্স বলেছিল মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা তোমার অত্যন্ত বেশি। আসলেই তাই। যেকোনো সাধারণ মানুষের চেয়ে তোমার এই ক্ষমতা বহুগুণ বেশি। কারণ তুমি আসলে মেন্টাল পাওয়ারের অধিকারী অমর এক রোবট।–তো, হামিন?।

    কী আশা কর তুমি? তোমার কাছে স্বীকার করব যে আমি রোবট? আমি শুধু দেখতেই মানুষের মতো? আমি অমর? আমার মেন্টাল পাওয়ার আছে?

    বসা অবস্থাতেই হামিনের দিকে ঘুরলেন সেলডন। হ্যাঁ, হামিন। আমি ঠিক তাই আশা করি এবং প্রশ্নের আকারে যে কথাগুলো বললে কোনো সন্দেহ নেই ওগুলো সত্যি কথা। তুমি, হামিন, একটা রোবট, মাদার রিটা যার নাম বলেছিল ডা-নী, বা লির বন্ধু। এটা তোমাকে স্বীকার করতেই হবে। অন্য কোনো পথ নেই।

    .

    ৯২.

    মনে হয় যেন দুজনেই নিজেদের অতি ক্ষুদ্র মহাবিশ্বে বসে আছে। ওয়ির ঠিক কেন্দ্রস্থলে, বাইরে ইম্পেরিয়াল ফোর্স ওরিয়ান আর্মিকে নিরস্ত্র করার কাজ করে চলেছে নির্বিঘ্নে, ওরা দুজন স্থির নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। ঘটনাটা ট্রান্টর এবং সম্ভবত পুরো গ্যালাক্সিই হলোভিশনে অবলোকন করছে তার মাঝেই সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন এক বিন্দু যার ভেতরে সেলডন এবং হামিন আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেলডন জোর করেই নতুন এক বাস্তবতাকে সামনে টেনে আনার চেষ্টা করছেন আর হামিন কোনোভাবেই তা মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।

    এখানে এসে কেউ তাদেরকে বিরক্ত করবে সেই ভয় করছেন না সেলডন। তিনি নিশ্চিত, যে বিন্দুর ভিতরে দুজনে বসে আছেন তার একটা সীমারেখা আছে, যে। সীমারেখা কেউ অতিক্রম করতে পারবে না, কারণ হামিন–না, রোবটের ক্ষমতা সবাইকে দূরে সরিয়ে রাখবে খেলাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

    শেষ পর্যন্ত হামিন বলল, তুমি অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ, হ্যারি, কিন্তু বুঝতে পারছি না কেন আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে আমি রোবট এবং কেন সেটা স্বীকার না করে কোনো উপায় নেই। হয়তো তুমি যা বলেছ ঘটনা হিসেবে তা সত্যি তোমার নিজের আচরণ, ডর্সের আচরণ, সানমাস্টার, টিসালভার, ওয়িয়ান জেনারেলদের আচরণ–সব, সবই হয়তো তুমি যেভাবে বলেছ সেভাবেই ঘটেছে, কিন্তু তাতেই প্রমাণ হয় না যে ঘটনাগুলো যেভাবে ব্যাখ্যা করেছ তা সত্যি। নিঃসন্দেহে প্রতিটি ঘটনারই স্বাভাবিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছ কারণ আমি যা বলেছি তা তোমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলে গেছে; ডর্স মনে করেছিল তোমার নিরাপত্তাই সবচেয়ে জরুরি, কারণ একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে সে বিশ্বাস করে যে সাইকোহিস্টোরিই পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। সানমাস্টার, টিসালভার অনেক কারণেই আমার কাছে ঋণী, ওয়িয়ান জেনারেলরা একজন মেয়ের শাসন মেনে নিতে চায়নি, ব্যস এর বেশি কিছু না। কেন ঘটনাগুলোকে অতিপ্রাকৃত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা?

    শোনো, হামিন, সেলডন বললেন, তুমি কী সত্যিই বিশ্বাস করো যে এম্পায়ার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের উচিত বসে না থেকে এই পতন ঠেকানোর চেষ্টা করা বা অন্তত তারপরে যে অরাজকতা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে তা সামলানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা?

    আমি সত্যিই বিশ্বাস করি। এবং সেলডন জানেন যে হামিন সত্যি কথাই বলছে।

    এবং তুমি চাও আমি সাইকোহিস্টোরিকে সঠিকভাবে কার্যকরী করে তুলি, কারণ তুমি সেটা পারবে না?

    আমার সেই যোগ্যতা নেই।

    এবং তুমি বিশ্বাস করো যে একমাত্র আমিই সাইকোহিস্টোরি নিখুঁতভাবে সামলাতে পারব–যদিও মাঝে মাঝে আমার নিজেরই সন্দেহ হয়?

    হ্যাঁ।

    তাহলে ধরে নিতে পারি যে, যদি তোমার পক্ষে কোনোভাবে সাহায্য করা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই করবে?

    কোনো সন্দেহ নেই।

    ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব–ব্যক্তিগত স্বার্থ কোনো প্রভাব ফেলবে না?

    হামিনের মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠল এবং মুহূর্তের জন্য তার ধীরস্থির স্বভাবের পেছনে লুকানো সীমাহীন ক্লান্তি সেলডনের কাছে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল। আমি সারাজীবনে কখনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে কাজ করিনি।

    তাহলে আমি তোমার সাহায্য চাই। শুধু ট্র্যান্টরকে ভিত্তি করে সাইকোহিস্টোরি তৈরি করতে পারব কিন্তু তাতে অনেক ধরনের সমস্যা থেকে যাবে। ধীরে ধীরে হয়তো সেই সমস্যাগুলো দূর করতে পারব, কিন্তু কাজটা আমার জন্য অনেকগুণ সহজ হবে যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সহজে জেনে নিতে পারি। যেমন অরোরা না পৃথিবী, কোনটা মানব জাতির আদি গ্রহ, নাকি অন্য কোনো গ্রহ ছিল? পৃথিবী এবং অরোরার মাঝে সম্পর্ক কী ছিল? দুটোর যেকোনো একটা নাকি দুটো গ্রহই একসাথে গ্যালাক্সিতে কলোনী তৈরি করে? যদি একটা করে তাহলে অন্যটা করেনি কেন? যদি দুটোই করে তাহলে তাদের মাঝে কীভাবে সমঝোতা হয়েছিল? গ্যালাক্সিতে বর্তমানে যে গ্রহগুলো আছে সেগুলোতে কী দুটো গ্রহেরই বংশধরেরা বসতি স্থাপন করে নাকি যেকোনো একটা গ্রহের বংশধরেরা বসতি তৈরি করে? মানব জাতি কেন রোবটের সংস্পর্শ ত্যাগ করে? অন্য কোনো গ্রহ না হয়ে ট্র্যান্টরই কেন ইম্পেরিয়াল ওয়ার্ল্ড হলো? পৃথিবী এবং অরোরার ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছে? এইরকম হাজারো প্রশ্ন এখনই আমি তোমাকে করতে পারি, আর কাজ করতে করতে আরো বহু হাজার প্রশ্নের উদয় হবে। এখন, হামিন যেখানে তুমি সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই জানো সেখানে কী আমাকে না জানিয়ে বসে বসে তুমি আমার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়া দেখবে?

    আমি যদি রোবট হইও, তোমার কী ধারণা মিলিয়ন মিলিয়ন গ্রহের বিশ হাজার বছরের ইতিহাস আমার ব্রেইনে ধারণ করা সম্ভব?

    রোবটিক ব্রেইনের ক্ষমতা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। জানি না তোমার ক্ষমতা কতটুকু। যদি তোমার ব্রেইনের সেইরকম ক্ষমতা না-ই থাকে তাহলে নিশ্চয় তুমি তথ্যগুলো নিরাপদ স্থানে রেকর্ড করে রেখেছ এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে তা বের করে আনতে পারবে। তোমার কাছে যদি তথ্যগুলো থাকেই এবং আমার যদি তা প্রয়োজন হয় তখন তুমি কী না জানিয়ে পারবে? আর তুমি যদি আমাকে তথ্যগুলো জানাতে পারো, তখন কীভাবে অস্বীকার করবে যে–তুমি রোবট নও–সপক্ষত্যাগী সেই রোবট?

    হেলান দিয়ে বসলেন সেলডন, লম্বা দম নিলেন। কাজেই তোমাকে আরেকবার জিজ্ঞেস করছি, তুমি কী রোবট? যদি সাইকোহিস্টোরি চাও এটা তোমাকে স্বীকার করতেই হবে। যদি অস্বীকার কর এবং আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করো যে তুমি আসলে রোবট নও তাহলে সাইকোহিস্টোরি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে দাঁড়াবে। সব নির্ভর করছে তোমার উপর। তুমি কি রোবট? তুমি কি ডা-নী?

    এবং হামিন বরাবরের মতোই নিরাবেগ আর ভাবলেশহীন গলায় জবাব দিল, তোমার যুক্তি অখণ্ডনীয়। আমি আর. ডানীল অলিভো। আর হচ্ছে রোবট শব্দের প্রথম অক্ষর।

    .

    ৯৩.

    আর, ডানীল অলিভভা এখনো কথা বলছে শান্ত ভঙ্গিতে। তার ভেতরে কোনো উচ্ছ্বাস নেই, উত্তেজনা নেই। তবে এক ধরনের স্বস্তি প্রকাশ পেল। কারণ সম্ভবত এই যে এখন তাকে অভিনয় করতে হচ্ছে না।

    বিশ হাজার বছরে, ডানীল বলল, কেউ অনুমানও করতে পারেনি যে আমি রোবট। বুঝতে পেরেছে তখনই যখন আমি বুঝতে বা জানাতে চেয়েছি। তার প্রথম কারণ, মানুষ বহু বহু যুগ পূর্বেই রোবটের সংস্পর্শ ত্যাগ করে। এখন সম্ভবত কেউ জানেই না যে রোবট বলে কিছু একটা এক সময় ছিল। দ্বিতীয় কারণ আমার সত্যি সত্যিই মানুষের ইমোশন ডিটেক্ট এবং অ্যাফেক্ট করার ক্ষমতা আছে। ডিটেকশন কোনো সমস্যা না কিন্তু অ্যাফেক্ট করার কাজটা সত্যিই জটিল এবং কঠিন। কারণ আমার রোবোটিক প্রকৃতি–যদিও ইচ্ছে হলেই আমি তা করতে পারি। ক্ষমতাটা আমার আছে কিন্তু ভীষণ সতর্কতার সাথে তা ব্যবহার করতে হয়। আমি কখনোই নিতান্ত বাধ্য না হলে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করিনি। আর যখন করি তখন সেটা আর কিছু না, শুধু মানুষের ভেতরের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাটাকেই একটু বাড়িয়ে তুলি। চেষ্টা করি যতদূর সম্ভব কম প্রয়োগ করতে।

    তোমাকে নিজের সমাজে জায়গা করে দেওয়ার জন্য সানমাস্টারকে টেম্পার করার দরকার হয়নি–খেয়াল করো, আমি বলেছি টেম্পারিং, কারণ কাজটা আনন্দদায়ক কিছু না। তাকে আমার টেম্পার করতে হয়নি কারণ সে অনেকভাবে আমার কাছে ঋণী। টেম্পারিং করেছি দ্বিতীয়বার যখন তুমি এমন একটা কাজ করলে যা ছিল তার দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ, কিন্তু আমার ইন্টারফেয়ার ছিল যতদূর সম্ভব সংক্ষিপ্ত। তোমাকে ইম্পেরিয়াল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার তেমন কোনো আগ্রহ। সানমাস্টারের ছিল না, কারণ সে ওদেরকে ঘৃণা করে। আমি শুধু সেই ঘৃণাটাকেই একটু বাড়িয়ে তুলি এবং সে তোমাকে আমার হাতে ছেড়ে দেয়, আমার যুক্তি মেনে নেয়। অন্য সময় হয়তো এই যুক্তিগুলো তার কাছে অসম্ভব মনে হতো।

    তোমাকেও আমি তেমনভাবে টেম্পার করিনি। তুমিও ইম্পেরিয়ালদের পছন্দ করো না। আজকাল কোনো মানুষই করে না, এবং এম্পায়ার-এর ভেঙে পড়ার এটাও একটা প্রধান কারণ। তাছাড়া সাইকোহিস্টোরির ধারণার জন্য তুমি গর্বিত ছিলে। সেটাকে কার্যকর করে তোলার সুযোগ পেলে তুমি ছাড়তে না। তোমার অহংকার আরো বাড়ত।

    সেলডন ভুরু কুঁচকে বললেন, পার্ডন মি, মাস্টার রোবট, নিজেই জানতাম না যে আমি এত অহংকারী।

    হালকা চালে জবাব দিল হামিন, তুমি মোটেই অহংকারী নও। ভালো করেই জানো অহংকার দিয়ে পরিচালিত হওয়াটা কাজের কাজ নয় আবার শুধু হার্ট বিট দিয়ে বেঁচে থাকাটাও তোমার অপছন্দ। মনের শান্তির জন্য অহংকার বোধটা তুমি নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলেও আমার কাছ থেকে লুকাতে পারোনি। যত নিপুণভাবেই তা লুকিয়ে রাখো না কেন আমি ঠিকই টের পেয়েছি। আমি শুধু সেই বোধটাকেই একটু জোরালো করে তুলি, তোমার অন্য কোনো প্রবণতা বা আবেগের কোনোই পরিবর্তন করিনি। সাথে সাথেই তুমি ডেমারজেলের কাছ থেকে পালাতে উঠে পড়ে লাগলে, অথচ তার একটু আগে তুমি মোটেই রাজী ছিলে না। একই সাথে সাইকোহিস্টোরি নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠলে, অথচ তার একটু আগে তোমার কোনো আগ্রহই ছিল না।

    শুধু এই আগ্রহটুকু বাড়িয়ে তোলা ছাড়া আমি তোমার অন্য কোনো ইমোশনের কোনোরকম পরিবর্তন করিনি। সেই কারণেই তুমি দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বের করে ফেললে যে আমি রোবট। যদি আগেই বুঝতে পারতাম তাহলে নিশ্চয়ই ঠেকানোর চেষ্টা করতাম। কিন্তু আমারও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। অবশ্য নিজেকে লুকিয়ে রাখতে আমি ব্যর্থ হয়েছি তাতে কোনো দুঃখ নেই কারণ তোমার যুক্তিগুলো ছিল চমৎকার, জোরালো এবং সবচেয়ে বড়ো কারণ আমি কে বা কী সেটা অবশ্যই তোমার জানা উচিত।

    ইমোশন, প্রিয় সেলডন, মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন, মানুষ যা ভাবে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী। তুমি ধারণাও করতে পারবে না অতি সামান্য ইন্টারফেয়ার-এর সাহায্যে কী অসাধ্য সাধন করা যায় এবং আমি তা করতে কতখানি অনিচ্ছুক।

    সেলডন সশব্দে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন ছাড়ছেন। নিজেকে এমন একজন মানুষ হিসেবে ভাবার চেষ্টা করছেন যে অহংকার দ্বারা পরিচালিত হয় অথচ ব্যাপারটা পছন্দ করে না। কেন? অনিচ্ছুক কেন?

    কারণ বাড়াবাড়ি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেলির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এম্পায়ার ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যেত। তার ফলে প্রতিটি ভাঙা অংশের মাঝে রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু হতো। সেটা ঠেকানোর ব্যবস্থা আমাকে নিতে হয়েছে। আমি হয়তো দ্রুত মাইন্ড অ্যাডজাস্ট করতে পারতাম কিন্তু তার ফলাফল হতো ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী লড়াই। ওয়িয়ান জেনারেলরা অধিকাংশই পুরুষ। তাই তাদের ভেতর মেয়ে মানুষের আধিপত্য মেনে না নেওয়ার আগ্রহ খানিকটা প্রবল করে তুলতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। ব্যাপারটা হয়তো বায়োলজিক্যাল, যেহেতু আমি রোবট, তাই ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারব না।

    আমাকে শুধু তার পরিকল্পনায় একটা ছিদ্র তৈরি করতে হয়েছে। আমার ইন্টারফেয়ার যদি এক মিলিমিটারও এদিক সেদিক হয়ে যেত, তাহলে আর যা যা করতে চেয়েছি তা হত না–বহুলোকের প্রাণহানি ঘটত। শুধু এটাই চেয়েছিলাম যে আমার সৈনিকরা যখন আসবে তখন যেন ওরা প্রতিরোধ না করে।

    থামল ডানীল, চিন্তা করছে, যেন চেষ্টা করছে শব্দগুলো গুছিয়ে নেওয়ার। তারপর বলল, আমার পজিট্রনিক ব্রেইন কীভাবে কাজ করে সেটা তোমাকে বিশদ ব্যাখ্যা করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আমি জানি যে বললে তুমি ঠিকই বুঝবে। সেই রকম গাণিতিক মেধা তোমার আছে। যাইহোক আমাকে যেকোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনটা আইন মেনে চলতে হয়। এই তিন রোবটিক্স লই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর বাইরে আমি যেতে পারি না। সুদূর অতীতে এগুলো তৈরি হয়েছিল। আইন তিনটা হচ্ছে

    এক, রোবট কখনো মানুষের ক্ষতি করবে না বা এমন কোনো কাজ করবে না। যার ফলে মানুষের ক্ষতি হতে পারে।

    দুই, রোবট সবসময় মানুষের আদেশ পালন করবে যদি না তা প্রথম আইনের পরিপন্থী হয়।

    তিন, রোবট নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করবে যদি না তা প্রথম দুটো আইনের পরিপন্থী হয়।

    কিন্তু আমার… এক বন্ধু ছিল বিশ হাজার বছর আগে। আরেকটা রোবট। তবে আমার মতো না, তাকে দেখে মানুষ ভাবার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না, কিন্তু মেন্টাল পাওয়ার তারই ছিল এবং তার কাছ থেকেই আমি পেয়েছি।

    তার মতে এই তিনটা আইন ছাড়া আরো গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক একটা আইন থাকা উচিত। আমার বন্ধু সেই আইনটাকে বলত জিরোয়েথ ল যেহেতু শূন্য এক এর আগে আসে। আইনটা হলো :

    জিরো, রোবট কখনো মানবজাতির ক্ষতি করবে না বা এমন কোনো কাজ করবে না যার ফলে মানবজাতির ক্ষতি হতে পারে।

    তখন প্রথম আইনটা পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায়।

    এক, রোবট কখনো মানুষের ক্ষতি করবে না বা এমন কিছু করবে না যার ফলে মানুষের ক্ষতি হতে পারে যদি না তা জিরোয়েথ ল-এর পরিপন্থী হয়।

    বাকি দুটো আইন একইভাবে পরিবর্তিত হয়। বুঝতে পেরেছ?

    ডানীলের বলার ভঙ্গিটা সত্যিই আন্তরিক। সেলডন বললেন, বুঝতে পেরেছি।

    ডানীল আবার বলা শুরু করল, সমস্যা হচ্ছে, হ্যারি, একজন মানুষকে বেছে নেওয়া খুব সহজ। খুব সহজেই বোঝা যাবে কোন কাজটা এই মানুষের ক্ষতি করবে কোন কাজটা করবে না। অন্তত তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু হিউম্যানিটি কী? কোন কাজটাতে একজনের উপকার হচ্ছে কিন্তু তাতে যে হিউম্যানিটির ক্ষতি হচ্ছে না সেটা কে বলবে? যে রোবট প্রথম জিরোয়েথ ল তৈরি করেছিল মারা গেল সে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল–কারণ তার ধারণা সে এমন একটা কাজ করেছে যাতে হিউম্যানিটি রক্ষা পাবে, যদিও তা হয়েছে কি না সঠিকভাবে কেউ বলতে পারবে না। নিজের ইনঅ্যাক্টিভেশনের আগে গ্যালাক্সির দায়িত্ব সে আমার হাতে ছেড়ে দেয়।

    তারপর থেকেই আমি অবিরাম চেষ্টা করে চলেছি। যতদূর সম্ভব কম ইন্টারফেয়ার করেছি, মানুষের নিজের বিচার বিবেচনার হাতেই ছেড়ে দিয়েছি প্রায়। সবকিছু, তারাই সিদ্ধান্ত নিক কোনটা ভালো কোনটা মন্দ। মানুষ জুয়া খেলতে পারে; আমি পারি না। তারা লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হতে পারে; আমার সেই সাহস নেই। না জেনেই নিজেদের ক্ষতি করে ফেলতে পারে; আমি সেরকম কিছু করলে আমার। পজিট্রনিক ব্রেইন সাথে সাথে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।

    কিন্তু মাঝে মাঝেই জরুরি পদক্ষেপ নিতে আমি বাধ্য হই। যেহেতু আমি এখনো সক্রিয় তাতে প্রমাণ হয় আমার সিদ্ধান্তগুলো সঠিক ছিল। যাইহোক, এম্পায়ারে যখন পতন শুরু হয়, আমি ঘন ঘন ইন্টারফেয়ার করতে বাধ্য হই। গত দশ বছর ধরে আমি ডেমারজেলের ভূমিকা পালন করে চলেছি। এমনভাবে প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছি যেন পতনটা ঠেকানো যায় এবং এখনো আমি সক্রিয় দেখতেই পারছ।

    ডিসেনিয়াল কনভেনশনে তোমার বক্তৃতা শুনেই আমার মনে হলো যে সাইকোহিস্টোরি হতে পারে সেই হাতিয়ার যা দিয়ে বোঝা যাবে কোনটা হিউম্যানিটির ক্ষতি করবে কোনটা করবে না। এর সাহায্যে আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব তা হয়তো আর অন্ধের মতো হবে না। আমি আবার মানুষের হাতে নিজের ভালো মন্দের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারব এবং শুধু অত্যন্ত জরুরি মুহূর্তে সাহায্য করার জন্য আমি নিজেকে আলাদা করে রাখতে পারব। তাই দ্রুত ব্যবস্থা করলাম যাতে ক্লীয়নের কানে। তোমার কথা যায় এবং তোমাকে প্রাসাদে ডাকে। যখন শুনলাম যে তুমি অস্বীকৃতি জানিয়েছ তখন অন্য ব্যবস্থা করতে হলো। বুঝতে পেরেছ, হ্যারি?।

    চরম বিস্মিত সুরে জবাব দিলেন সেলডন, হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি, হামিন।

    তোমার কাছে আমি অবশ্যই হামিন, যখন তোমার সাথে বিশেষভাবে দেখা। করার সুযোগ হবে। তাও হবে খুব কম। তোমার যা যা তথ্যের প্রয়োজন হবে সব। আমি তোমাকে সরবরাহ করব এবং ডেমারজেল হিসেবে যতদূর সম্ভব তোমাকে রক্ষা করব। আর ডানীল হিসেবে, তুমি কখনো আমার সাথে কথা বলনি, বলবেও না।

    আমি তা চাইও না, সেলডন দ্রুত বললেন। যেহেতু তোমার সাহায্য আমার প্রয়োজন, তোমার পরিচয় প্রকাশ পেলে সব ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে।

    হ্যাঁ, আমি জানি তুমি তা চাও না। ডানীলের হাসিতে সীমাহীন ক্লান্তি ঝরে পড়ল। হাজার হোক সাইকোহিস্টোরির একক কৃতিত্বটা তো তোমাকে নিতে হবে। তুমি এটাতো চাইতেই পারো না কেউ জানুক–কখনো সাইকোহিস্টোরি গড়ে তুলতে একটা রোবট তোমাকে সাহায্য করেছিল।

    লজ্জা পেলেন সেলডন, আমি-

    কিন্তু তুমি তাই চাও, যদিও তোমার এই স্বভাবটা খুব দক্ষতার সাথে লুকিয়ে রাখতে পার তুমি। এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, আমি তোমার এই ইমোশন খুব সূক্ষ্মভাবে বাড়িয়ে তুলেছি যেন কখনোই কারো কাছে আমার কথা বলতে না পারো। এমনকি তুমি কখনো ভাববেও না।

    আমার ধারণা ডর্স জানে

    জানে। এবং সেও আমার কথা অন্য কারো কাছে বলতে পারবে না। এখন আমি আসলে কী সেটা তোমরা দুজনেই জানো।

    উঠে দাঁড়ালো ডানীল, হ্যারি, এবার আমাকে যেতে হবে। প্রচুর কাজ বাকি। কিছুক্ষণ পরেই আমার লোকেরা তোমাকে আর ডর্সকে ইম্পেরিয়াল সেক্টরে নিয়ে যাবে।

    রাইখ ছেলেটাও আমার সাথে যাবে। ওকে আমি ফেলে যাব না। আর ইউগো এমারিল নামে তরুণ এক ডাহলাইট-

    বুঝতে পেরেছি। রাইখকে নেওয়ার ব্যবস্থা হবে। তোমার যেকোনো বন্ধুকে সাথে নিতে পারবে তুমি। সাইকোহিস্টোরি নিয়ে কাজ করার জন্য তোমার যত স্টাফ দরকার, প্রয়োজনীয় কম্পিউটার, রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল সব দেওয়া হবে। আমি চেষ্টা করব যতদূর সম্ভব দূরে সরে থাকতে। যদি সেরকম ভয়ংকর কোনো বিপদ বা সমস্যা দেখা না দেয় তাহলে সবকিছু তোমাকে একাই সামলাতে হবে।

    দাঁড়াও হামিন, জরুরি ভঙ্গিতে বললেন সেলডন। যদি আমি ব্যর্থ হই, যদি তোমার সাহায্য, আমার প্রচেষ্টার ফলেও সাইকোহিস্টোরিকে একটা প্র্যাক্টিক্যাল ডিভাইসে পরিণত করা না যায়, তখন কী হবে?

    আমার দ্বিতীয় আরেকটা পরিকল্পনা আছে। অন্য একটা গ্রহে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে আমি দ্বিতীয় পরিকল্পনাটা নিয়ে বহুদিন থেকেই কাজ করছি। সেটাও অনেক জটিল এবং সাইকোহিস্টোরির চেয়েও অনেক বেশি সামাজিক পরিবর্তনে সক্ষম। সত্যি কথা বলতে কী সেটা সামাজিক কাঠামোর আমুল পরিবর্তন করবে। ওই পরিকল্পনাটাও ব্যর্থ হতে পারে, কিন্তু আমাদের সামনে যদি দুটো বিকল্প পথ খোলা থাকে তখন সফল হওয়ার সম্ভাবনা খানিকটা হলেও আশা করা যায়।

    যদি এমন কোনো ডিভাইস কখনো তৈরি করতে পারো যার সাহায্যে বিপদ ঠেকানো যাবে, তাহলে চেষ্টা করবে যেন দুটো ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব হয় যেন একটা ব্যর্থ হলে অন্যটা কাজ চালিয়ে যেতে পারে। এম্পায়ারকে অবশ্যই নতুন এক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে হবে অথবা সম্পূর্ণ নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। চেষ্টা করো, একটার বদলে যেন দুটো পথ তৈরি করা যায়।

    এবার আমাদের দুজনকে যার যার স্বাভাবিক কাজ কর্মে ফিরে যেতে হবে, হ্যারি। তোমাদের কোনো সমস্যা হবে না।

    একবার মাত্র মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেল সে।

    তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে সেলডন আপন মনেই বললেন, প্রথমে আমাকে ডর্সের সাথে কথা বলতে হবে।

    .

    ৯৪.

    প্যালেস এখন খালি। ডর্স বলল। রিশেলির শারীরিক কোনো ক্ষতি হবে না। আর তুমিও ইম্পেরিয়াল সেক্টরে ফিরে যাচ্ছ, হ্যারি।

    আর তুমি, ডর্স? সেলডন নিচু কিন্তু কঠোর গলায় জিজ্ঞেস করলেন।

    আমি বোধহয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাচ্ছি। কাজ কর্মের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

    না, ডর্স, তার চেয়েও অনেক বিশাল এবং মহৎ একটা কাজ তোমার রয়েছে।

    কী সেটা?

    সাইকোহিস্টোরি। তোমাকে ছাড়া এত বড়ো প্রজেক্ট আমি একা সামলাতে পারব না।

    অবশ্যই পারবে। গণিত সম্বন্ধে আমার মোটেই ধারণা নেই।

    আর আমার ইতিহাস সম্বন্ধে আমাদের দুজনেরই দুজনকে দরকার।

    হাসল ডর্স। আমার ধারণা গণিতবিদ হিসেবে তুমি সবচেয়ে সেরাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। আমি ইতিহাসবিদ হিসেবে মোটামুটি, অবশ্যই প্রথম সারির কেউ নই। আমার চেয়ে হাজার গুণ ভালো ইতিহাসবিদ তুমি খুঁজে নিতে পারবে যারা সাইকোহিস্টোরির ব্যাপারে আরো বেশি সাহায্য করতে পারবে।

    আমাকে একটু ব্যাখ্যা করার সুযোগ দাও, ডর্স। সাইকোহিস্টোরির জন্য একজন গণিতবিদ বা ইতিহাসবিদের চেয়েও এমন মানুষেরই প্রয়োজন যাদের সারাজীবন শ্রম এবং মেধা বিনিয়োগ করার ইচ্ছাশক্তি আছে। তোমাকে ছাড়া, ডর্স, আমার সেই ইচ্ছা শক্তি কোনোদিনই জাগ্রত হবে না।

    অবশ্যই তোমার সেই ইচ্ছাশক্তি আছে।

    ডর্স, তুমি যদি আমার সাথে নাই থাকো, তাহলে আমার সেই প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন নেই।

    চিন্তিত দৃষ্টিতে সেলডনের দিকে তাকালো ডর্স। অবান্তর আলোচনা, হ্যারি। নিঃসন্দেহে সব সিদ্ধান্ত নেবে হামিন। সে যদি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত পাঠায়।

    পাঠাবে না।

    তুমি কীভাবে জানো?

    কারণ তাকে আমি সরাসরি বলব। সে যদি তোমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত পাঠায়, আমি হ্যালিকনে ফিরে যাব, এম্পায়ার ধ্বংস হলো না থাকল তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

    তুমি নিশ্চয়ই তা করবে না।

    অবশ্যই করব।।

    বুঝতে পারছ না কেন হামিন তোমার ইমোশন এমনভাবে পাল্টে দিতে পারবে যে তুমি আমাকে ছাড়াই সাইকোহিস্টোরি নিয়ে কাজ করবে।

    মাথা নাড়লেন সেলডন। হামিন ওরকম কাজ করবে না। ওর সাথে আমি কথা বলেছি। হিউম্যান মাইন্ড নিয়ে ও খুব বেশি ঘাটাঘাটি করতে চায় না কারণ রোবটিক্স আইনের মারপ্যাঁচে আটকা পড়ে আছে। আমার মাইন্ড যদি সে এমনভাবে পাল্টে দেয় যেন তোমাকে ছাড়াই আমি কাজ করি, তাহলে, ডর্স, সেটা হবে ভয়ংকর ঝুঁকি।

    অন্যদিকে সে যদি আমাকে আমার মতো থাকতে দেয় আর তুমি আমাকে ছেড়ে না। যাও তাহলে সে যা চাইছে তা পেতে পারে–সাইকোহিস্টোরি। তাহলে কেন সে বাধা দেবে?

    ডর্সও মাথা নাড়ল। হয়তো তার অন্য কোনো কারণ আছে।

    কেন সে অমত করবে? তোমার দায়িত্ব আমার নিরাপত্তা দেখা। হামিন কি তোমাকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে?

    না।

    তাহলে সে চায় তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করে যাও, আর তোমার প্রটেকশন আমার দরকার।

    কীসের বিরুদ্ধে? তাছাড়া এখন তুমি হামিনের মাধ্যমে ডেমারজেল এবং ডানীল এর প্রটেকশন পাচ্ছ এবং ওটাই তোমার দরকার।

    যদি গ্যালাক্সির প্রতিটা মানুষ, প্রতিটা নিরাপত্তা বাহিনী আমাকে প্রটেকশন দেয় তারপরেও তোমাকেই আমার দরকার।

    তাহলে তুমি আমাকে সাইকোহিস্টোরির জন্য চাও না, চাও প্রটেকশনের জন্য?

    ভুরু কুঁচকালেন সেলডন। না! কেন তুমি আমার কথার বিপরীত অর্থ করছ? তুমি যে কথাটা খুব ভালো করেই জানো কেন আমাকে সেটাই বলতে বাধ্য করছ? সাইকোহিস্টোরি বা প্রটেকশন কোনো কারণেই আমি তোমাকে থাকতে বলছি না। ওগুলো কৈফিয়ত, প্রয়োজন হলে এমন কৈফিয়ত আরো দেব। আমি তোমাকে চাই শুধু তোমাকে। আর যদি সত্যিকার কারণটা জানতে চাও, কারণ হলো তুমি তোমার মতোই।

    আমাকে ভালোমতো চেনই না তুমি।

    সেটা কোনো ব্যাপার না। আমি পরোয়া করি না। তাছাড়া তোমাকে খানিকটা হলেও চিনতে পেরেছি। তুমি যা আশা করছ তার চেয়েও অনেক ভালোভাবে।

    তাই?

    অবশ্যই। তুমি বিনা প্রশ্নে আদেশ পালন করো এবং বিনা দ্বিধায় আমার জন্য বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়, তোমার কী হবে না হবে সেটা নিয়ে পরোয়া করো না। কীভাবে টেনিস খেলতে হয় খুব দ্রুত শিখে ফেললে তুমি। একবার দেখেই কীভাবে দ্রুত ছুরি চালাতে হয় তাও শিখে ফেললে। ম্যারনের সাথে অস্বাভাবিক দক্ষতার সাথে লড়াই করলে–বলতে বাধ্য হচ্ছি একেবারে দানবের মতো। তোমার পেশী অত্যন্ত শক্তিশালী। এবং তোমার রিঅ্যাকশন টাইম অত্যধিক ফাস্ট। তুমি হামিনের সাথে এমন এক পদ্ধতিতে যোগাযোগ করতে পারো যার জন্য কোনো যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না।

    এবং এই সবকিছু থেকে তুমি কী সিদ্ধান্ত নিলে?

    আমার মনে হয়েছে আর ডানীল অলিভো হিসেবে হামিন যে কাজ করার চেষ্টা করছে, সেটা অসম্ভব একটা কাজ। মাত্র একটা রোবট কেমন করে এম্পায়ার পরিচালনা করবে? অবশ্যই তার অনেক সাহায্যকারী আছে।

    নিঃসন্দেহে। কয়েক মিলিয়ন হবে, আমার ধারণা। আমি একজন সাহায্যকারী, তুমি একজন সাহায্যকারী। ছোট রাইখ একজন সাহায্যকারী।

    তুমি বিশেষ ধরনের সাহায্যকারী।

    কীভাবে? বলো, হ্যারি। যদি কিছু শুনে থাকো বলো সেটা।

    অনেকক্ষণ ডর্সের দিকে তাকিয়ে রইলেন সেলডন, তারপর নিচু সুরে বললেন, না, আমি বলব না, কারণ… আমি পরোয়া করি না।

    সত্যি? আমি যেমন ঠিক সেভাবেই আমাকে গ্রহণ করবে তুমি?

    তোমাকে যেভাবে গ্রহণ করা উচিত সেভাবেই গ্রহণ করব। তুমি ডর্স বা অন্য যা কিছুই হওনা কেন, এই মহাবিশ্বে একমাত্র তোমাকে ছাড়া আর কিছু চাই না আমি।

    নরম সুরে ডর্স বলল, হ্যারি, আমার প্রকৃতির কারণেই আমি তোমার ভালো চাই। আমি অন্যরকম হলেও তোমার ভালোই চাইতাম। কিন্তু আমি নিজে তোমার জন্য ভালো কিছু হতে পারব না।

    ভালো বা মন্দ নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কয়েক পা সামনে বাড়লেন সেলডন, চোখ নামিয়ে রেখেছেন মেঝের দিকে। ভাবছেন এর পরে কী বলবেন। ডর্স, তোমাকে কেউ কখনো চুমু খেয়েছে?

    অবশ্যই, হ্যারি। এটা সামাজিকতারই অংশ এবং আমি সমাজেই বাস করি।

    না, না। আমি বলতে চেয়েছি কখনো কোনো পুরুষকে প্রগাঢ় ভালোবাসার সাথে চুমু খেয়েছ?

    হ্যাঁ, হ্যারি। সেই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে।

    তুমি উপভোগ করেছিলে?

    কিছুক্ষণ দ্বিধা করল ডর্স। তারপর বলল, ব্যাপারটা আমি এইভাবে উপভোগ করেছি যে, যদি চুমু দিতে না দেই তাহলে আমি খুব পছন্দ করি এমন একজন হয়তো মনে কষ্ট পাবে, তার মনে কষ্ট না দেওয়াটাই আমি উপভোগ করেছি? এই পর্যায়ে এসে ডর্সের গাল দুটো লাল হয়ে গেল, মুখ ঘুরিয়ে নিল অন্যদিকে, প্লীজ, হ্যারি, আমার পক্ষে বুঝিয়ে বলা কঠিন।

    কিন্তু হ্যারি এখন আগের চেয়েও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আরো কয়েক পা সামনে বাড়লেন। তার মানে তুমি আসলে ভুল কারণে চুমু খেয়েছ। অর্থাৎ শুধু কারো মনে আঘাত দিতে চাওনি।

    হয়তো সবাই তাই করে।

    মন্তব্যটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন সেলডন, তারপর হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করলেন, কেউ তোমাকে কখনো চুমু দেবার প্রস্তাব দিয়েছিল?

    জবাব দেওয়ার আগে কিছুটা সময় নিল ডর্স, যেন অতীত জীবনটা খুঁজে দেখছে। না।

    একবার কাউকে চুমু দেওয়ার পর তোমার নিজের কী আবার সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করার ইচ্ছা কখনো হয়েছে?

    না।

    কখনো কোনো পুরুষমানুষের সাথে শুয়েছ? মৃদু কিন্তু নাছোড়বান্দার মতো জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

    অবশ্যই। এগুলোও জীবনেরই অংশ।

    হ্যারি এমনভাবে ডর্সের দুই কাঁধ চেপে ধরলেন যেন প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেবেন। কিন্তু তোমার নিজের কী কখনো সেই ইচ্ছা হয়েছিল, বিশেষ একজনের খুব কাছাকাছি যাওয়া, তার কাছে নিজেকে পুরোপুরি সপে দেওয়ার? ডর্স তুমি কী কখনো প্রেমে পড়েছ?

    ধীরে ধীরে চোখ তুলল ডর্স, অনেকটা বিষণ্ণ ভঙ্গিতে, সরাসরি সেলডনের চোখে চোখ রাখল। আমি দুঃখিত, হ্যারি। না।

    তাকে ছেড়ে দিলেন সেলডন, হাত দুটো নিজের শরীরের দুপাশে পরাজিতের মতো ঝুলে পড়তে দিলেন।

    আলতোভাবে তার বাহু ছুলো ডর্স, বলল, বুঝতেই পারছ, হ্যারি। তুমি যা চাইছ আমি ঠিক তা নই।

    মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলেন সেলডন। পুরো বিষয়টা যুক্তি দিয়ে ভাবার চেষ্টা করছেন। তারপর হাল ছেড়ে দিলেন। যা তিনি চেয়েছেন তা প্রবলভাবেই চেয়েছেন। এর পিছনে কোনো যুক্তি নেই।

    মাথা তুললেন তিনি। ডর্স, তারপরেও আমি পরোয়া করি না।

    আলতোভাবে দুই হাতে তাকে জড়িয়ে ধরলেন সেলডন, নিজের মুখ এগিয়ে নিলেন ডর্সের মুখের কাছে, ধিরে ধিরে যেন ডর্স বাধা দেওয়ার সময় পায়।

    কিন্তু ডর্স নড়ল না, দাঁড়িয়ে আছে মূর্তির মতো–তার ঠোঁটে আলতোভাবে চুমু দিলেন সেলডন, অত্যন্ত ধিরে, ইতস্তত ভঙ্গিতে। তারপর প্রগাঢ় ভালোবাসা এবং টের পেলেন যে ডর্সের বাহু তাকে শক্ত আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরছে।

    যখন তিনি থামলেন ডর্স চোখ তুলল, দৃষ্টিতে তার হাসি প্রতিফলিত হচ্ছে এবং বলল :

    আবার, হ্যারি। প্লীজ।

    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজাদুর লাটিম – নাগিব মাহফুজ
    Next Article ফাউণ্ডেশন্স এজ – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন্স এজ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.