Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    নাজমুছ ছাকিব এক পাতা গল্প493 Mins Read0

    ২.১ প্রথম ক্লীয়ন

    দ্বিতীয় পর্ব : প্রথম ক্লীয়ন

    প্রথম ক্লীয়ন… যদিও সর্বশেষ সম্রাট হিসেবে তিনি বহুল আলোচিত যার অধীনে প্রথম গ্যালাকটিক এম্পায়ার সত্যিকার অর্থেই সংগঠিত এবং উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল, তথাপি প্রথম ক্লীয়নের সিকি শতাব্দীর শাসন কাল ছিল অনবরত পতনের যুগ। এতে অবশ্য তার সরাসরি কোনো দায় দায়িত্ব ছিল না যেহেতু এম্পায়ারের পতনের পিছনে যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপাদানগুলো ছিল সেগুলো ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী যা ওই সময়ে কারো পক্ষেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ছিল না। ফার্স্ট মিনিস্টার নির্বাচনে তিনি ছিলেন ভাগ্যবান। ইটো ডেমারজেল এবং পরে হ্যারি সেলডন, যার সাইকোহিস্টোরির উপর সম্রাট কখনো বিশ্বাস হারান নি। ক্লীয়ন এবং সেলডন জোরানুমাইট ষড়যন্ত্রের

    — এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা

    .

    ১.

    ম্যান্ডেল গ্রুবার একজন সুখী মানুষ। অন্তত হ্যারি সেলডনের তাই মনে হয়। সকালের কাজ থামিয়ে সেলডন তাকে দেখতে লাগলেন।

    গ্রুবার, সম্ভবত চল্লিশোর্ধ, সেলডনের চেয়ে কয়েক বছরের ছোট, ইম্পেরিয়াল প্যালেস গ্রাউন্ডে কাজ করার সুবাদে খানিকটা পেশীবহুল। তবে চমৎকার কামানো হাসিখুশি মুখ, পাতলা বালু রঙের চুল তার গোলাপী টাক ঢেকে রাখতে পারে নি। ছোট উদ্ভিদ ঝাড়গুলোতে পোকার আক্রমণ হয়েছে কি না সেটা দেখতে দেখতে আপন মনেই শিস বাজাল।

    সে অবশ্য চীফ গার্ডেনার নয়। ইম্পেরিয়াল প্যালেস গ্রাউন্ডের চীফ গার্ডেনার অত্যন্ত উঁচু একটা পদ, এই বিশাল প্যালেস কমপ্লেক্সে নিজস্ব রাজকীয় অফিস রয়েছে তার। যার অধীনে নারী পুরুষের বিশাল এক সেনাবাহিনী কাজ করে। সে হয়তো বছরে দুই একবার প্যালেস গ্রাউন্ড পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পায়।

    গ্রুবার সেই বিশাল কর্মীদলেরই একজন। সেলডনের জানামতে তার পদবী গার্ডেনার ফার্স্ট ক্লাস। ত্রিশ বছরের বিশ্বস্ত সেবার বিনিময়ে যথেষ্ট ভালো মজুরী পায় সে।

    নুড়ি বিছানো চমৎকার মসৃণ পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সেলডন তাকে ডাকলেন, “চমৎকার দিন, গ্রুবার।”

    বারের দৃষ্টি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। “অবশ্যই, ফার্স্ট মিনিস্টার। আর যারা ভেতরে বসে আছে তাদের জন্য আমি দুঃখিত।”

    “যেমন আমি।”

    “আপনার মতো মানুষের ব্যাপারে কিছু বলার নেই, ফার্স্ট মিনিস্টার, তবে এমন চমৎকার একটা দিনে আপনি যদি ওই ভবনগুলোর ছাদের নীচে হারিয়ে যান তাহলে আমাদের মতো ভাগ্যবান কয়েকজন আপনার জন্য দুঃখ বোধ করতেই পারে।”

    “তোমার সমবেদনার জন্য ধন্যবাদ, রুবার। কিন্তু তুমি জানো গম্বুজগুলোর নীচে চল্লিশ বিলিয়ন মানুষ বাস করে। তুমি কি ওদের জন্যও দুঃখ বোধ কর?”

    “অবশ্যই। ট্র্যানটরিয়ান নই বলে আমি খুশি, সেজন্যই গার্ডেনার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছি। এই গ্রহে অল্প কয়েকজনই আছে যারা এই উন্মুক্ত প্রান্তরে কাজ করতে পারে। আমি সেই অল্প কয়েকজন ভাগ্যবানদের একজন।”

    “আবহাওয়া সবসময় এমন চমৎকার থাকে না।”

    “সত্যি কথা। আমি প্রচন্ড বৃষ্টি, ঠান্ডা, ঝড়ো বাতাসেও এখানে কাজ করেছি। উপযুক্ত পোশাক পরে রাখলে… দেখুন–“ মুখের হাসির মতো হাত দুটোকেও দুপাশে ছড়ালো সে যেন বিশাল প্রান্তরটাকে জড়িয়ে ধরবে। “আমার অনেক বন্ধু আছে–গাছ, লনের ঘাস, কীট পতঙ্গ আর পশুপাখিগুলো আমাকে সঙ্গ দেয় এবং জ্যামিতিক নক্সাটা ঠিক রাখতে আমাকে সাহস যোগায়, এমন কি শীতকালেও। গ্রাউন্ডের জ্যামিতিক নক্সাটা কখনো দেখেছেন ফার্স্ট মিনিস্টার?”

    “এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছি, তাই না?”

    “আমি বলছি পুরোটা একসাথে কখনো দেখেছেন–চমৎকার পরিকল্পনা। তৈরি করেছিলেন ট্যাপার সাভান্ড, প্রায় একশ বছর আগে, তারপর থেকে খুব একটা পরিবর্তন হয় নি। ট্যাপার ছিল খুব বড় মাপের হর্টিকালচারিস্ট, সবার সেরা–এবং সে এসেছিল আমার গ্রহ থেকে।”

    “এ্যানাক্রন, তাই না?”

    “হ্যাঁ, অনেক দূরের একটা গ্রহ, প্রায় গ্যালাক্সির শেষ প্রান্তে এবং ওখানে আকাশ আর প্রকৃতি এখনো উন্মুক্ত। ট্র্যানটরে যখন আসি আমি তখন ছোট বাচ্চা, বর্তমান চীফ গার্ডেনার যখন আগের সম্রাটের অধীনে তার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এখন আবার গ্রাউন্ডটাকে নতুন করে সাজানোর কথা চলছে।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়ল গ্রুবার। “ভুল হবে কাজটা। এখন যেভাবে আছে তার চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। চমৎকার বিন্যাস, সঠিক ভারসাম্য, দৃষ্টি এবং মনের জন্য উপাদেয়। অবশ্য আগেও কয়েকবার গ্রাউন্ডের নকশা পাল্টানো হয়েছে। সম্রাটরা পুরনো জিনিস দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পরেন, সবসময় নতুন জিনিস চান। যেন নতুন কিছু হলেই সেটা ভালো হবে। বর্তমান সম্রাট, তার দীর্ঘজীবন কামনা করি, চীফ গার্ডেনারের সাথে নকশার পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমি এইরকমই শুনেছি আরকি।” শেষ মন্তব্যটা দ্রুত যোগ করল সে, যেন প্রাসাদে গুজব ছড়ানোর জন্য লজ্জিত।

    “সেরকম কিছু হয়তো হবে না।”

    “আমিও আশা করি যে হবে না, ফার্স্ট মিনিস্টার। দমবন্ধ করা কাজ থেকে একটু অবসর পেলে বাগানে এসে কিছুক্ষণ বেড়াবেন। এটা দুর্লভ এক সৌন্দর্য। কোথাও কোনো বিচ্যুতি পাবেন না। গাছের পাতা, ফুল, খরগোস, সবকিছু নিখুঁতভাবে খাপে খাপে বসানো।”

    হাসলেন সেলডন। “তুমি সত্যিকারের একজন নিবেদিত কর্মী, গ্রুবার। একদিন চীফ গার্ডেনার হলে আমি অবাক হব না।”

    “ভাগ্য সহায় হোক। চীফ গার্ডেনার কখনো বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করেন না, কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখেন না, প্রকৃতির কাছ থেকে যা শিখেছেন সব ভুলে গেছেন। তিনি বাস করেন ওখানে-” বিতৃষ্ণা নিয়ে আঙ্গুল তুলে দেখাল বার। “আমার মনে হয় না তিনি নিজে থেকে বাগানের কোনো অংশ চিনতে পারবেন, অধীনস্তদের কেউ যদি তাকে দেখিয়ে না দেয়।”

    “তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগল, গ্রুবার। দিনের কাজ শেষে যদি সময় পাই তাহলে মাঝে মাঝে তোমার জীবন দর্শন শুনতে ভালোই লাগবে।”

    “ফার্স্ট মিনিস্টার, আমি দার্শনিক নই। আমি লেখাপড়া শিখি নি।”

    “দার্শনিক হওয়ার জন্য লেখাপড়া শিখতে হয় না। ভোলা মন আর জীবনের ব্যাপক অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। নিজের যত্ন নিও, গ্রুবার। আমি তোমার পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দেব।”

    “আপনি চাইলেই পারবেন, ফার্স্ট মিনিস্টার, কিন্তু আমি যেমন আছি তেমন থাকতে দিলেই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।”

    ঘোরার সময়ও হাসছিলেন সেলডন, কিন্তু বর্তমান সমস্যাটা মনে পড়তেই মুখের হাসি মুছে গেল। দশ বছর হয়ে গেল ফাস্ট মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন গ্রুবার যদি জানত যে দায়িত্বটা কি ভীষণ ক্লান্তিকর তাহলে তার সমবেদনা আরো বেড়ে যেত। গ্রুবার কি বুঝতে পারবে যে সাইকোহিস্টোরির অগ্রগতি থেকে সেলডন একটা মারাত্মক উভয় সংকট পরিস্থিতির আভাস পাচ্ছেন।

    .

    ২.

    বাগানে সেলডনের চিন্তিত পায়চারি দেখে মনে হবে তিনি ভীষণ শান্তিতে আছেন। বিষয়টা সত্যিই অবিশ্বাস্য যে সম্রাটের বাসস্থানের এই অংশটুকু ছাড়া পুরো গ্রহটাই ধাতুর তৈরি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। এখানে, ঠিক এইখানে এলেই মনে হয় তিনি যেন তার নিজ গ্রহ হ্যাঁলিকন অথবা এবারের গ্রহ এ্যানাক্রনের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন।

    যদিও মনের শান্তি একটা কল্পনা মাত্র, বাগানের চারপাশেই গার্ড, কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

    এক সময়, প্রায় হাজার বছর আগে, ইম্পেরিয়াল প্যালেস গ্রাউন্ড এতোটা রাজকীয় ছিল না, গ্রহের অন্যান্য অংশের সাথে পার্থক্য ছিল না খুব বেশী। কিছু কিছু অঞ্চলে গম্বুজ নির্মাণ সবে মাত্র শুরু হয়েছে তখন। এই অংশটা ছিল সকলের জন্য উন্মুক্ত। সম্রাট কোনো দেহরক্ষী ছাড়াই প্রাসাদের শান বাঁধানো পথে হেঁটে বেড়াতেন, প্রজাদের উদ্দেশ্যে মাথা নাড়তেন।

    সময় বদলে গেছে। এখন চারপাশে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং ট্রানটরের কারো পক্ষেই সেটা ভেদ করা সম্ভব নয়। তাতে বিপদ কমে নি যদিও, কারণ বিপদ যদি আসে তা আসবে অসম্ভষ্ট কোনো রাজকর্মচারী এবং দুর্নীস্তি সৈনিকদের কাছ থেকেই। আসলে এই প্যালেস গ্রাউন্ডেই সম্রাট এবং তার বিশ্বস্ত কর্মচারীরা সবসময় বিপদের মধ্যে থাকেন। দশ বছর আগে কি হতো, যদি ডর্স ভেনাবিলি না থাকত সেলডনের সাথে?

    সেটা ছিল তার ফার্স্ট মিনিস্টারশীপের প্রথম বছর। এবং তিনি জানতেনই যে এই পদে তার নিয়োগ ইম্পেরিয়াল কোর্টের অনেকেই ভালো চোখে দেখবে না। কারণ তারা অনেক বেশী প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ এবং দীর্ঘদিন থেকেই সম্রাটের সেবা করছে। তারা। রাগান্বিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। তারা তো আর সাইকোহিস্টোরির কথা জানে না, জানে না স্মাট এই বিজ্ঞানের উপর কতখানি নির্ভর করছেন। কাজেই তারা ফার্স্ট মিনিস্টারের দেহরক্ষীদের একজনকে লোভ দেখিয়ে হাত করে ফেলল।

    ডর্স নিশ্চয়ই আরো অনেকগুন বেশী সতর্ক ছিল। অথবা দৃশ্যপট থেকে ডেমারজেলের অন্তর্ধানের পর সেলডনের নিরাপত্তার বিষয়টা তার কাছে আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। যাই হোক, সত্যি কথাটা হলো, ফার্স্ট মিনিস্টারশীপের প্রথম কয়েকটা বছর ডর্স তার সাথে ছায়ার মতো ঘুরত।

    চমৎকার রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের পড়ন্ত বেলায় অস্তগামী সূর্যের আলোর ঝলকানি চোখে পড়ল ডর্সের–কিন্তু ট্রানটরের গম্বুজের নিচে তো সূর্য থাকার কথা নয় আসলে তা ছিল ব্লাস্টারের উপর আলোর প্রতিফলন।

    “শুয়ে পড়ো, হ্যারি!” হঠাৎ চীৎকার করে বলল সে, তারপর ঘাসের উপর দিয়ে দৌড় দিল সার্জেন্টকে লক্ষ্য করে।

    “ব্লাস্টারটা আমার হাতে দাও সার্জেন্ট।” হিসহিসিয়ে বলল সে।

    সম্ভাব্য খুনী প্রথমে খানিকটা হতভম্ব হয়ে গেল, কারণ একটা মেয়ে তার দিকে ছুটে আসবে এটা সে আশা করে নি। তবে সামলে নিল দ্রুত, ব্লাস্টার তুলতে লাগল।

    কিন্তু ডর্স এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে। সার্জেন্টের ডান হাত মুচড়ে খানিকটা উপরে তুলল। দাঁতে দাঁত চেপে নির্দেশ দিল, “ফেলে দাও।”

    হাত ছাড়াতে গিয়ে ব্যথায় সার্জেন্টের মুখ বিকৃত হয়ে গেল।

    “চেষ্টা করে লাভ নেই, সার্জেন্ট। আমার হাটু তোমার কুঁচকি থেকে মাত্র তিন। ইঞ্চি দূরে, তুমি চোখের পলক ফেললেও এমন গুতো মারব যে নিজেকে আর পুরুষ। বলে পরিচয় দিতে পারবে না। কাজেই জমে যাও। চমঙ্কার। ঠিক আছে, এবার হাত খোলো। এই মুহূর্তে ব্লাস্টার ফেলে না দিলে আমি তোমার হাত ভেঙ্গে দেব।”

    গার্ডেনারদের একজন লম্বা একটা নিড়ানি নিয়ে দৌড়ে এল কিন্তু হাতের ইশারায় তাকে দূরে থাকতে বলল ডর্স। সার্জেন্ট ব্লাস্টার মাটিতে ফেলে দিয়েছে।

    সেলডনও এসে পৌঁছলেন, “আমার হাতে ছেড়ে দাও, ডর্স।”

    “মোটেই না। ব্লাস্টার নিয়ে ঐ গাছগুলোর আড়ালে চলে যাও। আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে–তৈরি থাকবে।”

    ডর্স হাতের বাঁধন একটুও শিথিল করে নি। বলল, “এবার, সার্জেন্ট, ফার্স্ট মিনিস্টারকে হত্যা করার নির্দেশ তোমাকে কে দিয়েছে–আর কে কে জড়িত এই চক্রান্তে তাদের প্রত্যেকের নাম।”

    সার্জেন্ট জবাব দিল না।

    “বোকামী করো না। কথা বল!” হাতে আরেকটু মোচড় দিতেই হাটু গেড়ে বসে পড়ল সার্জেন্ট। তার গলার উপর পা রেখে ডর্স বলল, “যদি বোবা সেজে থাক তাহলে আমি তোমার কণ্ঠনালী ভেঙ্গে ফেলব, সারা জীবনের জন্য বোবা হয়ে যাবে। অবশ্য তার। আগে একটা একটা করে শরীরের প্রত্যেকটা হাড় ভাঙব। কথা বললেই ভালো হবে।”

    মুখ খুলল সার্জেন্ট।

    সেলডন পরে তাকে বলেছিলেন, “তুমি পারতে, ডর্স? আমার বিশ্বাস হয় না তুমি এতো দয়া মায়াহীন।”

    “আমি লোকটাকে তেমন আঘাত করি নি, হ্যারি।” ঠান্ডা স্বরে জবাব দিয়েছিল ডর্স। “হুমকিটাই যথেষ্ট ছিল। যাই হোক তোমার নিরাপত্তা অন্য সবকিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

    “আমার হাতে ছেড়ে দিতে পারতে।”

    “কেন? পৌরুষ দেখানোর জন্য? প্রথমত তুমি দ্রুত এ্যকশনে যেতে পারতে না। দ্বিতীয়ত: তুমি পুরুষ, তোমার কাছ থেকে সে ওরকম নৃশংসতাই আশা করত। আমি নারী আর প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে যে নারীরা পুরুষের মতো হিংস্র এবং সবল নয়। গল্পটা ছড়িয়ে পড়বে এবং সবাই আমাকে ভয় করবে। আমার ভয়েই কেউ তোমার ক্ষতি করার কথা চিন্তা করবে না।”

    “তোমার ভয়ে এবং মৃত্যুদন্ডের ভয়ে। তুমি জানো, সার্জেন্ট আর তার সঙ্গীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।”

    এই কথায় ডর্সের স্বভাবজাত নির্বিকার মুখেও অস্বস্তির ছায়া পড়ল, যেন মৃত্যুদন্ডের কথাতে সে মর্মাহত। যদিও সার্জেন্ট দ্বিতীয়বার চিন্তা না করেই তার প্রিয় হ্যারিকে খুন করত।

    “মেরে ফেলার কি দরকার। নির্বাসনই তো যথেষ্ট।” বিস্মিত হয়ে বলল সে।

    “না, যথেষ্ট নয়,” সেলডন বললেন। “অনেক দেরী হয়ে গেছে। ক্লীয়ন মৃত্যুদন্ড ছাড়া আর কিছু মানবেন না।”

    “তুমি বলতে চাও সম্রাট এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন?”

    “সাথে সাথেই। আমি নির্বাসন অথবা যাবজ্জীবনের কথা বলেছিলাম, কিন্তু তিনি বলেছেন, এটা তার প্রাসাদ, তার নিরাপত্তা রক্ষী। এদের আনুগত্যের উপরই তার নিরাপত্তা নির্ভর করছে। কাজেই অবাধ্যতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। না দিলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তবে আমার অনুরোধে একটা লোকদেখানো বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন মৃত্যুদন্ড ছাড়া অন্য কিছু তিনি বরদাস্ত করবেন না।”

    “তুমি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটা গ্রহণ করেছ। এতে তোমারও সম্মতি আছে?”

    অস্বস্তির সাথে মাথা নাড়লেন সেলডন “হ্যাঁ, আছে।”

    “কারণ তোমার জীবনের উপর আঘাত এসেছিল। প্রতিশোধ না নেয়ার লক্ষ্য থেকে তুমি সরে এসেছ?”

    “ডর্স, আমি প্রতিহিংসা পরায়ণ মানুষ নই। কিন্তু শুধু আমার জীবন বা সম্রাটের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছিল তা ভাববার মতো কোনো বিষয় নয়। এম্পায়ারের সাম্প্রতিক ইতিহাস শুধু একটা বিষয়েই আমাদের পরিষ্কার ধারণা দিতে পারে, আর তা হলো সম্রাটরা আসে আর যায়। মূল কথা হচ্ছে সাইকোহিস্টোরি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। নিঃসন্দেহে, যদি আমার কিছু হয়ে যায় তারপরেও সাইকোহিস্টোরি একদিন গড়ে উঠবে। কিন্তু এম্পায়ার দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে, অপেক্ষা করার সময় নেই এবং একমাত্র আমিই সময়মতো প্রয়োজনীয় কৌশলগুলো তৈরি করার ক্ষেত্রে অনেকদূর অগ্রসর হতে পারব।”।

    “তাহলে তুমি যা জানো তা অন্যদের শিখিয়ে দাও।” গম্ভীর সুরে বলল ডর্স।

    “তাই করছি। ইউগো এমারিল আমার যথার্থ উত্তরসূরি। তাছাড়া একদল প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। একদিন তারাও কাজে আসবে। কিন্তু তাদের কেউই–“ থামলেন তিনি।

    “তাদের কেউই তোমার মতো দক্ষ নয়–মেধাবী নয়, যোগ্য নয়? সত্যিই?”

    “আমি তাই মনে করি,” জবাব দিলেন সেলডন। “তাছাড়া আমি মানুষ। সাইকোহিস্টোরি আমার এবং যদি তা কোনোদিন গড়ে উঠে, পুরো কৃতিত্বটাই আমি নিতে চাই।”

    “হায়রে মানুষ, প্রায় বিষণ্ণ ভঙ্গীতে মাথা নেড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ডর্স।

    যথাসময়েই শাস্তির কাজ সম্পন্ন হলো। গত এক শতাব্দীতে এমন নজিরবিহীন বিচার কেউ দেখে নি। দুইজন মন্ত্রী, পাঁচ জন নিম্নপদস্থ কর্মচারী, হামলাকারী সার্জেন্ট সহ চারজন সৈনিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো বিনা বাধায়। যে সকল গার্ড তদন্তকারীদের সম্ভষ্ট করতে পারল না তাদেরকে তৎক্ষণাৎ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রত্যন্ত আউটার ওয়ার্ল্ডে নির্বাসন দেয়া হলো।

    তারপর থেকেই অবাধ্যতার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি আর ফাস্ট মিনিস্টারের নিরাপত্তার ব্যাপারে সীমাহীন কড়াকড়ি আরোপ করা হলো। ডর্স, সেই ভয়ংকর মহিলা–আড়ালে সবাই তাকে ডাকতে শুরু করে দ্য টাইগার ওমেন ‘–প্রতিটি মুহূর্ত সেলডনের সাথে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস কমিয়ে আনল, কারণ তার অদৃশ্য অনুপস্থিতিই সেলডনের জন্য অপ্রতিরোধ্য নিরাপত্তা বেষ্টনি হয়ে উঠে। সম্রাট ক্লীয়নও গত প্রায় দশটা বছর সীমাহীন নিরাপত্তায় এবং নির্বিঘ্নে শাসনকার্য চালিয়ে আসছেন।

    যাইহোক, সাইকোহিস্টোরি এখন সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে কোনো এক ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব হতে পারে। সেলডন তার অফিস (ফার্স্ট মিনিস্টার) থেকে গবেষণাগারে (সাইকোহিস্টোরিয়ান) যাওয়ার সময়ে এই ভেবে আতংকিত হয়ে পড়লেন যে শান্তির যুগ বোধহয় শেষ হতে যাচ্ছে।

    .

    ৩.

    যাই হোক, নিজের গবেষণাগারে ঢোকার সময় আত্মতৃপ্তির ভাবটা লুকিয়ে রাখতে পারলেন না সেলডন।

    কি ভাবে সব পাল্টে গেছে।

    শুরু হয়েছিল বিশ বছর আগে কিছু এলোমেলো ধারণা আর পুরনো একটা হ্যাঁলিকনিয়ান কম্পিউটার দিয়ে। সেটাই ছিল কালক্রমে অবিশ্বাস্য জটিল গণিতে পরিণত হওয়ার প্রথম হালকা আভাস। মেঘের আঁড়াল থেকে সূর্য যেমন হঠাৎ হঠাৎ উঁকি দেয় ঠিক সেভাবেই ধারণাটা তার মাথায় আসতে থাকে।

    তারপর অনেকগুলো বছর কেটেছে স্ট্রিলিং বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি আর ইউগো এমারিল একসাথে কাজ করেছেন। সমীকরণগুলো সরলীকরণের চেষ্টা করেছেন, অপ্রয়োজনীয় ইনফিনিটিগুলো দূর করার চেষ্টা করেছেন, চরম বিশৃঙ্খলার প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করেছেন। অবশ্য সাফল্যের পরিমাণ খুবই কম।

    কিন্তু এখন, দশ বছর ফার্স্ট মিনিস্টারের দায়িত্ব পালনের বদৌলতে, বিশাল এক অফিসে অত্যাধুনিক কম্পিউটার নিয়ে অগণিত কর্মী বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কাজ করে চলেছে।

    প্রয়োজনের খাতিরেই তার কর্মীদের কেউই। অবশ্য ইউগো আর তিনি বাদে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ছাড়া আর বেশী কিছু জানে না। তারা শুধু পাহাড়ের মতো বিশাল সাইকোহিস্টোরির ছোট একটা গিরিখাত বা ঝোঁপঝাড়পূর্ণ একটা ঢালু পথ নিয়ে কাজ করছে। শুধু সেলডন আর এমারিলই পুরো পাহাড়টাকে জানেন, যদিও তারা নিজেরাও ভালো ভাবে জানেন না। এই পাহাড়ের শীর্ষ এখনো মেঘের আড়ালে ঢাকা, ঢালু পথগুলো এখনো কুয়াশাচ্ছন্ন।

    ডর্স ঠিকই বলেছে। এখন থেকেই বাছাই করা কর্মীদের ধীরে ধীরে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে পরিচিত করে তোলা উচিত। দুজন মানুষের পক্ষে পুরো কৌশলটা সামলানো এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সেলডনের বয়স হচ্ছে। তিনি হয়তো আরো দশ-বিশ বছর বাঁচবেন কিন্তু নিঃসন্দেহে যৌবনের উদ্যম আর কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলবেন।

    এমন কি কয়েক মাসের ভেতরেই এমারিল ঊনচল্লিশে পা দেবে। ঠিক বুড়ো বলা যাবে না আবার গণিতবিদ হওয়ার মতো তরুণও নয়। হয়তো তার নতুন এবং ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনী ক্ষমতাটা আর থাকবে না।

    তাকে ঢুকতে দেখে এমারিল এগিয়ে এল। স্নেহের দৃষ্টিতে সেলডন তাকে দেখতে লাগলেন। রাইখের মতো এমারিলও ডালাইট ছিল। কিন্তু এখন খাটো কিন্তু সবল দেহাবয়ব থাকা সত্ত্বেও এমারিলকে কেউ ডালাইট বলবে না। তার। গোঁফ নেই, ডাহ্‌লাইট বাচনভঙ্গী নেই, তার চিন্তা ধারণা ডাহ্‌লাইটদের মতো নয়। জো-জো-জোরানিউমের মতবাদও তাকে প্রভাবিত করতে পারে নি, অথচ প্রত্যেকটা ডাহ্‌লাইট জোরানিউমের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পর্যন্ত তৈরি ছিল।

    কোনো সেক্টর, কোনো গ্রহ বা এমন কি ইম্পেরিয়াম এর জন্যও এমারিলের কোনো মমতা নেই। তার একমাত্র ভালোবাসা–নিজেকে সে সম্পূর্ণ এবং পুরোপুরি উৎসর্গ করেছে–সাইকোহিস্টোরির জন্য।

    খানিকটা অপূর্ণতা বোধ করলেন সেলডন। তিনি যে হ্যাঁলিকনিয়ান এটা কখনো ভুলতে পারেন না। মাঝে মাঝে ভয় পান এতে তার কাজের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না। কারণ নিখুঁতভাবে সাইকোহিস্টোরি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শুধু বিশ্বসমূহ এবং সেক্টরসমূহের উর্ধ্বে উঠে মানবতা এবং চোখে দেখা যায় না এমন সব কাঠামো নিয়ে কাজ করতে হবে–আর এমারিল ঠিক তাই করছে।

    কিন্তু সেলডন তা করতে পারছেন না, নীরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বীকার করলেন তিনি।

    “অগ্রগতি হচ্ছে, হ্যারি। মনে হয়।” এমারিল বলল।

    “মনে হয়, ইউগো? শুধুই মনে হয়।”

    “স্পেস স্যুট না পড়ে আমি মহাকাশে ঝাঁপ দিতে চাই না,” গুরুত্বের সাথেই কথাগুলো বলল সে। (তার যে সেন্স-অব-হিউমার বলতে কিছু নেই এটা জানেন সেলডন। কথা বলতে বলতে দুজনে ব্যক্তিগত অফিসে ঢুকলেন। কামরাটা ছোট কিন্তু নিরাপদ।)

    পায়ের উপর পা তুলে বসল এমারিল। “বিশৃঙ্খলার কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য নতুন যে পরিকল্পনা করেছ সেটা হয়তো আংশিক কাজ করবে। কিন্তু তার ফলে তীক্ষ্ণতা বাড়বে অনেকখানি।”

    “অবশ্যই। সরাসরি পদ্ধতিতে আমরা যা অর্জন করি, ফিরতি পথে সেটা আবার হারিয়ে যায়। মহাবিশ্ব এভাবেই কাজ করে। যেভাবেই হোক আমাদেরকে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”

    “কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, অনেকটা ঘষা কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখার মতো।”

    “সামনে থেকে দেখার চেষ্টায় যে বছরগুলো নষ্ট করেছি তার চেয়ে তো ভালো।”

    আপন মনেই কি যেন বিড়বিড় করল এমারিল, তারপর বলল, “আমরা আলো আঁধারি ধরতে পারব।”

    “বুঝিয়ে বল।”

    “পারব না, তবে প্রাইম রেডিয়্যান্ট তৈরি হয়েছে, ওটার পেছনে এতো খেটেছি, একেবারে—একেবারে–“

    “ল্যামেজ এর কথা বলতে পার। ভারবাহী পশু–হ্যাঁলিকনে দেখা যায়। ট্র্যানটরে নেই।”

    “যদি ল্যামেজ অত্যাধিক কঠোর পরিশ্রমী প্রাণী হয়ে থাকে তাহলে প্রাইম রেডিয়্যান্টের জন্য আমার পরিশ্রমও ওটার মতো ছিল।”

    ডেস্কের নিরাপত্তা বোম চেপে গোপন ড্রয়ার খুলল এমারিল। স্বচ্ছ একটা কিউব বের করে আনল। অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে বস্তুটা পরীক্ষা করতে লাগলেন সেলডন। প্রাইম রেডিয়্যান্টের মূল সার্কিট এবং যন্ত্রপাতিগুলো তিনি নিজে তৈরি করেছেন, কিন্তু সেগুলো কার্যকরী করে তুলেছে এমারিল। এই কাজে সে সবার সেরা।

    কামরাটা অন্ধকার হয়ে গেল। সমীকরণ আর সহসম্বন্ধগুলো ভেসে উঠল বাতাসে। তার নীচেই ভেসে উঠল অসংখ্য সংখ্যা, ডেস্কের পৃষ্ঠদেশের ঠিক উপরেই ঝুলে আছে, যেন অদৃশ্য কোনো তার ওগুলোকে ধরে রেখেছে।

    “চমঙ্কার।” বললেন সেলডন। কোনো একদিন, যদি ততদিন বেঁচে থাকতে পারি, এই প্রাইম রেডিয়্যান্ট অসংখ্য গাণিতিক প্রতীক তৈরি করবে যেখানে ফুটে উঠবে অতীত এবং ভবিষ্যৎ ইতিহাস। এখানেই আমরা গতিপথ এবং ব্যতিক্রমগুলো খুঁজে পাব এবং সেগুলো সংশোধন করতে পারব এবং প্রত্যাশিত পথে ফিরিয়ে আনতে পারব।”

    “হ্যাঁ,” শুকনো’ গলায় বলল এমারিল, “যদি আমরা সর্বোত্তম মঙ্গলের জন্য যে পথ বেছে নিয়েছি তার ফলাফল সবচেয়ে নিকৃষ্ট না হয়ে পড়ে।”

    “বিশ্বাস কর, এমারিল, আমি প্রতিদিন এই দুঃশ্চিন্তা নিয়েই ঘুমাতে যাই। যদিও এখনো ওই পর্যায়ে আমরা পৌঁছাই নি। করতে পেরেছি শুধু এইটুকুই যা তোমার মতে ঘষা কাঁচের ভেতর দিয়ে আলো আর আঁধারি দেখা।”

    “কথাটা সত্যি।”

    “কি দেখছ তুমি, ইউগো?” সেলডন আরো তীক্ষ্ণ ভাবে এমারিলকে পর্যবেক্ষণ করছেন, খানিকটা গম্ভীর। এমারিলের ওজন বেড়েছে, শরীরে চর্বি জমেছে। প্রতিটি মুহূর্ত কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করে সে (আর এখন প্রাইম রেডিয়্যান্ট নিয়ে) শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কোনো কাজ সে করে না। যদিও দুএকজন মেয়েকে তার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতে দেখা গেছে, কিন্তু সেলডন জানেন যে সে বিয়ে করে। নি। মারাত্মক ভুল! সঙ্গীকে সময় দেয়ার জন্য, সন্তানের যত্ন নেয়ার জন্য এমনকি কাজ পাগল একজন মানুষও খানিকটা অবসর কাটাতে বাধ্য হয়।

    সেলডন এখনো সুঠাম দেহী এবং মেদহীন। ডর্স তাকে শরীর ঠিক রাখার জন্য প্রতিটি মুহূর্ত সাহায্য করছে।

    “কি দেখছি আমি?” এমারিল বলল। “এম্পায়ার জটিল সমস্যায় পড়েছে।”

    “এম্পায়ার সবসময় সমস্যার মধ্যেই ছিল।”

    “হ্যাঁ, কিন্তু বর্তমান সমস্যাটা অনেক বেশী নির্দিষ্ট। কেন্দ্রে হওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশী।”

    ‘ট্রানটরে?”

    “মনে হয়। অথবা পেরিফেরিতে। হয়তো এখানে একটা খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হবে–খুব সম্ভবত গৃহযুদ্ধ অথবা কাছাকাছি আউটার ওয়ার্ল্ডগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।”

    “এই সম্ভাবনা বের করার জন্য সাইকোহিস্টোরির দরকার নেই।”

    “মজার ব্যাপার হচ্ছে দুটো সম্ভাবনার মধ্যে সুন্দর একটা বোঝাঁপড়া আছে। দুটো একসাথে ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। এটা দেখো! তোমার নিজের তৈরি করা সমীকরণ। ভালো করে দেখো।”

    দুজনেই প্রাইম রেডিয়্যান্টের উপর ঝুঁকে থাকল অনেকক্ষণ।

    তারপর সেলডন বললেন, “বুঝতে পারছি না দুটোর মাঝে কেমন করে বোঝাঁপড়া থাকতে পারে।”

    “আমিও বুঝতে পারি নি, হ্যারি, কিন্তু আমরা যা দেখতে চাই সেটাই যদি প্রমাণিত হয় তাহলে সাইকোহিস্টোরির মূল্য থাকল কই। এটা এমন জিনিস প্রমাণ করছে যা আমরা দেখব না। এটা থেকে প্রমাণ হচ্ছে না কোন বিকল্প পথ সবচেয়ে ভালো হবে, এবং দ্বিতীয় কথা হলো কিভাবে সবচেয়ে ভালো পথটাকে সবল করে খারাপটাকে দুর্বল করে তোলা যাবে।”

    সেলডন ঠোঁট বাঁকা করলেন, তারপর ধীরে ধীরে বললেন, “আমি বলতে পারি কোনটা সবচেয়ে ভালো হবে। পেরিফেরি ছেড়ে দিয়ে ট্র্যানটর ধরে রাখতে হবে।”

    “তাই?”

    “কোনো দ্বিমত নেই। প্রধান কারণ আমরা এখানে আছি।”

    “আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চয়ই প্রধান বিবেচ্য বিষয় নয়।”

    “না, কিন্তু সাইকোহিস্টোরির নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। যদি ট্র্যানটরের পরিস্থিতি আমাদেরকে বাধ্য করে সাইকোহিস্টোরির গবেষণা বন্ধ করে দিতে তাহলে পেরিফেরি ধরে রেখে কী লাভ? বলছি না যে আমাদেরকে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাইকোহিস্টোরির অগ্রগতির উপরই আমাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। এম্পায়ারের ক্ষেত্রে বলতে পারি যে পেরিফেরিতে হয়তো ভাঙ্গন শুরু হবে কিন্তু দীর্ঘ সময় লাগবে কেন্দ্রে পৌঁছতে।

    “তোমার কথা সঠিক হলেও ট্রানটরকে স্থিতিশীল রাখার জন্য কি করা যায়?”

    “ভেবে দেখতে হবে।”

    খানিক বিরতির পর সেলডন বললেন, “চিন্তা করতে আমার কখনোই ভালো লাগে না। ধরো যদি এমন হয় যে এম্পায়ার ভুল পথে চলছে এবং হয়তো শুরু থেকেই ভুল পথে ছিল? বারের সাথে যতবার কথা বলি ততবারই আমার এই কথা মনে হয়।”

    “গ্রুবার কে?”

    “মেন্ডেল গ্রুবার। গার্ডেনার।”

    “ও, তোমার উপর হামলার সময় যে তোমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিল?”

    “হ্যাঁ। এই জন্য আমি ওর প্রতি কৃতজ্ঞ। ওর হাতে ছিল শুধু একটা নিড়ানি যেখানে সম্ভাব্য খুনীদের হাতে ছিল ব্লাস্টার। এটাই হলো আনুগত্য। ওর সাথে কথা বলা বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করার মতো। সবসময় তো কোর্ট অফিশিয়াল আর সাইকোহিস্টোরিয়ানদের সাথে কথা বলা যায় না।”

    “ধন্যবাদ।”

    “তুমি জানো আমি কি বোঝাতে চাইছি। গ্রুবার ভোলা জায়গা পছন্দ করে। সে বাতাস, বৃষ্টি, হুল ফোঁটানো ঠান্ডা আর নগ্ন প্রকৃতিতে যা পাওয়া যায় তার সবকিছুই পছন্দ করে। মাঝে মাঝে আমিও এই জিনিসগুলোর অভাব বোধ করি।”

    “আমি করি না। ভোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর কোনো শখ আমার নেই।”

    “তুমি বেড়ে উঠেছ গম্বুজের নীচে–কিন্তু যদি অতি সাধারণ আর শিল্প বিহীন গ্রহ। নিয়ে এম্পায়ার তৈরি হতো, যেখানে জনসংখ্যা অত্যন্ত কম, প্রচুর খালি জায়গা রয়েছে, পশুপালন আর কৃষিকাজই মূল পেশা। আমরা তাহলে আরো ভালোভাবে থাকতে পারতাম না?”

    “শুনেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।”

    “অবসর সময়ে বিষয়টা আমি একটু ভেবে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে এটা আসলে অস্থিতিশীল ভারসাম্য অবস্থা। স্বল্প জনসংখ্যার যে গ্রহের কথা বলেছি। সেগুলো হয় দরিদ্রতর এবং মৃতপ্রায় হয়ে পড়বে–পশুর জীবন স্তরে পতিত হবে অথবা শিল্পোন্নয়নে মনোনিবেশ করবে। গ্রহটা দাঁড়িয়ে থাকবে পাতলা একটা দড়ির উপর। যে কোনো দিকেই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এবং প্রায় ক্ষেত্রেই গ্যালারি অধিকাংশ গ্রহ শিল্পোন্নয়নের দিকে ঝুঁকে পড়ে।”

    “কারণ সেটাই ভালো।”

    “হয়তো। কিন্তু সারাজীবন এভাবে চলতে পারে না। একদিকে বেশী বুকে। পড়ার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। এম্পায়ার আর বেশীদিন টিকবে না। কারণ–অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। এরচেয়ে ভালো কোনো শব্দ আমার মাথায়। আসছে না। তারপরে কি হবে আমরা জানি না। যদি সাইকোহিস্টোরির মাধ্যমেই ভাঙ্গন ঠেকানো যায়, অথবা এই কথা বলাই বোধহয় যথাযথ হবে যে ভাঙ্গন পরবর্তী পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা যায়, সেটা কি আরেকটা অধিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির সূত্রপাত হবে? এটাই কি মানবজাতির ভবিষ্যত? সিসিপাস এর মতো বিশাল এক পাথর ঠেলে ঠেলে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাবার পর অসহায়ের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা পাথরটা আবার পাহাড়ের পাদদেশে গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে?”

    “সিসিপাস কে?”

    “প্রাগৈতিহাসিক পুরাকাহিনীর একটা চরিত্র। ইউগো, তোমার আরো বেশী বেশী পড়া উচিত।”

    “যেন সিসিপাস কে তা জানতে পারি। কোনো দরকার নেই। হয়তো সাইকোহিস্টোরি আমাদেরকে সম্পূর্ণ নতুন এক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ দেখাবে, যা হবে আমাদের জানা এবং দেখা সবকিছু থেকে ভিন্ন, অনেক বেশী। স্থিতিশীল এবং যথাযথ।”

    “আমিও আশা করি, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন সেলডন। “আমিও আশা করি কিন্তু কোনো আলো দেখছি না। অদূর ভবিষ্যতের জন্য আমাদেরকে শুধু পেরিফেরিগুলোর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করাতেই মনযোগ দিতে হবে। এটাই হবে গ্যালাকটিক এম্পায়ারের পতনের সূত্রপাতের নিদর্শন।”

    .

    ৪.

    “ঠিক এই কথাগুলোই বলেছি আমি,” বললেন হ্যারি সেলডন। “এটাই হবে গ্যালাকটিক এম্পায়ারের পতনের সূত্রপাতের নিদর্শন, এবং তাই হবে, ডর্স।”

    মনযোগ দিয়ে শুনছে ডর্স। সেলডনের ফার্স্ট মিনিস্টারশীপ সে ঠিক সেই ভাবেই মেনে নিয়েছে যেভাবে অন্যসব কিছু মেনে নেয়–শান্ত ভাবে। তার একমাত্র দায়িত্ব। সেলডন এবং সাইকোহিস্টোরির নিরাপত্তা, কিন্তু সে জানে এই কাজটা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে সেলডনের নতুন গুরু দায়িত্বের কারণে। সবচেয়ে ভালো নিরাপত্তা হচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এবং, মহাকাশযান আর নক্ষত্র চিহ্ন–এম্পায়ারের প্রতীক–যতদিন সেলডনের কাঁধে জ্বলজ্বল করবে, যত কড়া নিরাপত্তাই থাকুক না কেন সে নিশ্চিত হতে পারবে না।

    এখন তারা বিলাসিতার মধ্যে বাস করছে–স্পাই বীম থেকে রক্ষার জন্য সতর্ক শীল্ড, দেহরক্ষী; তার নিজের গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এবং সুযোগ সুবিধা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। স্ট্রিলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো কোয়ার্টারের বিনিময়ে এই সব কিছু সে খুশি মনে ছেড়ে দিতে রাজী। অথবা আরো ভালো হয় যদি অচেনা কোনো সেক্টরে চলে যেতে পারে যেখানে কেউ তাদেরকে চিনবে না।”

    “খুব ভালো কথা, হ্যারি।” সে বলল, “কিন্তু এইটুকুই যথেষ্ট নয়।”

    “কি যথেষ্ট নয়?”

    “যে তথ্য আমাকে দিচ্ছ। তুমি বলছ হয়তো পেরিফেরির নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাত থেকে চলে যাবে। কিভাবে? কেন?”

    মৃদু হাসলেন সেলডন। “সেটা জানলে কত ভালোই না হতো। কিন্তু সাইকোহিস্টোরি এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায় নি।”

    “তাহলে তোমার ধারণা কোনো গভর্নর উচ্চাভিলাষী হয়ে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করতে পারে?”

    “সেটা অবশ্যই বিবেচ্য। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে–আমার চেয়ে তুমিই ভালো জানো–তবে টিকতে পারে নি। এবার মনে হচ্ছে স্থায়ী হবে।”

    “কারণ এম্পায়ার দুর্বল হয়ে পড়েছে?”

    “হ্যাঁ, কারণ বাণিজ্য এখন অতীতের তুলনায় অনেক কম অবাধ, কারণ অতীতে যোগাযোগ যতটা নিয়ন্ত্রণহীন ছিল এখন তা নেই, কারণ পেরিফেরির গভর্নররা এখন অতীতের তুলনায় আরো বেশী স্বাধীন। যদি তারা উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠে “ ।

    “তুমি বলতে পারবে কোন পেরিফেরি হতে পারে?”

    “মোটেই না। সাইকোহিস্টোরি থেকে এই মুহূর্তে আমরা নিশ্চিত করে শুধু এইটুকুই নির্ণয় করতে পারব যে যদি কোনো বেপরোয়া গভর্নর উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিতে চায় তখন সে দেখবে যে পারিপার্শ্বিক অবস্থা তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য অতীতের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশী সহায়ক। অন্যরকমও হতে পারে ব্যাপক আকারের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা দূরবর্তী কোনো আউটার ওয়ার্ল্ড কোয়ালিশনের মাঝে গৃহযুদ্ধ। কি ঘটবে তা এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়, তবে এটা বলা যায় যে যাই ঘটুক না কেন তাতে বিপদের ঝুঁকি অতীতের তুলনায় এখন অনেক গুণ বেশী।”

    “কিন্তু যদি নির্দিষ্ট করে না বলতে পারো পেরিফেরিতে কি ঘটবে তাহলে কিভাবে ঘটনাসমূহকে এমন পথে পরিচালিত করবে যাতে ট্রানট বাদে পেরিফেরিগুলোর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নিশ্চিত করা যায়?”

    “উভয় দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, ট্রানটরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করে এবং পেরিফেরিতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখার প্রয়াস ছেড়ে দিয়ে। সাইকোহিস্টোরি কিভাবে কাজ করে বিশদভাবে তা না জেনেই আমরা আশা করতে পারি না যে এটা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই ঘটনা সাজিয়ে দেবে। কাজেই আমাদেরকে ম্যানুয়াল কন্ট্রোল ব্যবহার করতে হবে। আগামী দিনে হয়তো কৌশলটা আরো উন্নত হবে এবং ম্যানুয়াল কন্ট্রোলের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে।”

    “কিন্তু সেটা ভবিষ্যতের কথা, তাই না?”

    “ঠিক। এবং শুধু আশা করছি যে হবে।”

    “আর ট্র্যানটরে কি ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে–যদি আমরা পেরিফেরি ধরে রাখতে চাই?”

    “একই রকম–অর্থনৈতিক এবং সামাজিক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, উচ্চাভিলাষী পদস্থ অফিসারদের বিদ্রোহ। এবং আরো বেশী কিছু। ইউগোকে আমি উদাহরণ দিয়ে বলেছি যে এম্পায়ার অতিরিক্ত উত্তপ্ত এবং তার মাঝে ট্র্যানটর সবচেয়ে বেশী উত্তপ্ত। মনে হয় গ্রহের সবকিছু ভেঙ্গে পড়ছে। কাঠামো–পানি সরবরাহ, তাপ সঞ্চালন, বর্জ্য নিষ্কাষন, জ্বালানী সরবরাহ, সবকিছু মনে হয় সবখানেই অস্বাভাবিক সমস্যা শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে এই বিষয়গুলোতেই অধিক মনযোগ দিচ্ছি আমি।”

    “সম্রাট মারা যেতে পারেন?”

    দুপাশে হাত ছড়ালেন সেলডন। “সেটা তো হতেই পারে, কিন্তু ক্লীয়নের স্বাস্থ্য চমৎকার। বয়স আমার সমান, খুব বেশী বৃদ্ধ হন নি। তার ছেলে এখনো উপযুক্ত হয় ওঠে নি। কিন্তু দাবীদার আরো আছে, সমস্যা তৈরি করার জন্য যথেষ্ট পরিমানেই আছে। কিন্তু সেটা বড় কিছু না অন্তত ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে।”

    “যদি তাকে হত্যা করা হয়?”

    সেলডনকে শংকিত দেখাল। “এই কথা বলল না। শীল্ড আছে যদিও তারপরেও শব্দটা ব্যবহার না করাই ভালো।”

    “হ্যারি, বোকার মতো কথা বলো না। এই বিষয়টা আমাদের বিবেচনা করতেই হবে। জোরামাইটরা একসময় ক্ষমতা দখলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। তারা সফল হলে সম্রাট কোনো না কোনো ভাবে-”

    “মনে হয় না। ফিগারহেড হিসেবে তাকে আরো বেশী কাজে লাগানো যেত। যাই হোক ব্যাপারটা ভুলে যেতে পার। জোরানিউম কিছুদিন আগে নিশায়াতে মারা গেছে, ভাগ্যহীন এক লোক।”

    “তার অনুসারী আছে।”

    “অবশ্যই। সবারই অনুসারী আছে। তুমি তো ইতিহাস নিয়ে গবেষণা কর। কখনো হ্যাঁলিকনের গ্লোবালিস্ট পার্টির কথা শুনেছ?”।

    “না, শুনি নি। তোমার মনে কষ্ট দিতে চাইনি, হ্যারি। কিন্তু হ্যাঁলিকন ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবদান রাখতে পেরেছে তেমন কোনো প্রমাণ আমি কখনো পাইনি।”

    “দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, ডর্স। আমি সবসময়ই বলি–যে বিশ্বের কোনো ইতিহাস নেই তারাই সবচেয়ে সুখী। যাই হোক, প্রায় দুই হাজার চারশ বছর আগে হ্যাঁলিকনে একদল মানুষ প্রচার করতে শুরু করে যে মহাবিশ্বে হ্যাঁলিকনই একমাত্র বসতি গ্রহ। হ্যাঁলিকনই মহাবিশ্ব এবং এর চারপাশে রয়েছে নীরেট মেঘস্তর আর অসংখ্যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নক্ষত্র।”

    “এই কথা মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করল। গ্রহটা তখনই এম্পায়ারের অংশ ছিল।”

    “হ্যাঁ, কিন্তু গ্লোবালিস্টরা বোঝাতে শুরু করল যে এম্পায়ারের অস্তিত্বের যত প্রমাণ আছে তার সবই কল্পনা অথবা সাজানো নাটক। ইম্পেরিয়াল প্রশাসক এবং অফিসাররা সব হ্যাঁলিকনিয়ান যারা কোনো উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এই সাজানো নাটকে অভিনয় করছে।”

    “তারপর?”

    “ভাবতে সবসময়ই ভালো লাগে যে তোমার নিজের গ্রহটাই মহাবিশ্বের একমাত্র গ্রহ। গ্লোবালিস্টরা খুব সম্ভবত মোট জনসংখ্যার ১০ পার্সেন্টকে তাদের ধারণায় বিশ্বাস করাতে পেরেছিল। মাত্র ১০ পার্সেন্ট, কিন্তু ক্ষুদ্র এই দলটাই সংখ্যাগরিষ্ঠদের হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।”

    “নিশ্চয়ই সফল হয়নি। তাই না?”

    “না, হয় নি। গ্লোবালিজম এর কারণে ইম্পেরিয়াল বাণিজ্য হ্রাস পায়, হ্যাঁলিকনের অর্থনীতিতে বিশাল চাপ পড়ে। তাদের বিশ্বাস যখন জনগণের আয় উপার্জনে বাধা সৃষ্টি করতে শুরু করে তখনই তা সমর্থন হারাতে থাকে। তাদের উত্থান এবং পতনের ঘটনাটা সেই সময়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সাইকোহিস্টোরি, আমার বিশ্বাস প্রমাণ করবে যে এর কোনো বিকল্প নেই।”

    “বুঝলাম। কিন্তু, হ্যারি, এই গল্প বলার উদ্দেশ্য কি। আমার ধারণা যে বিষয়ে আলোচনা করছিলাম তার সাথে এই গল্পের কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে।”

    “সম্পর্কটা হচ্ছে আসলে এই যেযত হাস্যকরই হোক না কেন এই ধরনের আন্দোলন কখনোই পুরোপুরি নিঃশেষ হয় না। হ্যাঁলিকনে এখনো গ্লোবালিস্টরা আছে। সংখ্যায় খুব বেশী না, কিন্তু প্রায়ই সত্তর থেকে আশিজন সম্মিলিত হয় যার নাম তারা দিয়েছে গ্লোবাল কংগ্রেস। ওই সম্মেলনে তারা পরস্পরের সাথে বেশ আনন্দের সাথে গ্লোবালিজম নিয়ে আলোচনা করে। মাত্র দশ বছর আগে জোরামাইট আন্দোলন এই গ্রহের জন্য ভয়ানক হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছিল। তাদের কিছু অংশ এখনো টিকে না থাকাটাই অবাক ব্যাপার। হয়তো এক হাজার বছর পরে ও থাকবে।”

    “যে অংশটা এখনো টিকে আছে সেটা বিপজ্জনক হতে পারে?”

    “এই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। জো–জো’র ব্যক্তিত্বই মূলত: এই আন্দোলনটাকে বিপজ্জনক করে তুলেছিল–সে মারা গেছে। তার মৃত্যুটা বিরোচিত গোছের কিছু হয় নি; অনুসারীদের বিপদে ফেলে সে পালিয়ে যায় এবং পলাতক অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়।”

    উঠে কামরার অপর প্রান্তে চলে গেল ডর্স। হাত দুটো মুষ্ঠিবদ্ধ করে রেখেছে। ফিরে এসে দাঁড়াল সেলডনের সামনে।

    “হ্যারি,” সে বলল, “আমার মনের কথাটা তোমাকে বলছি। যদি সাইকোহিস্টোরি বলতে পারে যে ট্র্যানটরে কোনো একটা সমস্যা হতে যাচ্ছে, তাহলে জোরামাইটরা যদি এখনো থাকে, তারাই সম্ভবত সম্রাটকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে।”

    শঙ্কিত ভঙ্গীতে হাসলেন সেলডন। “ডর্স, তুমি ছায়া দেখেই ভয় পাচ্ছ। শান্ত হও।”

    কিন্তু দুশ্চিন্তাটা তিনি মন থেকে দূর করতে পারলেন না।”

    .

    ৫.

    এ্যান্টান রাজবংশের সর্বশেষ উত্তরপুরুষ সম্রাট প্রথম ক্লীয়ন। আর এই রাজবংশের বিরোধিতা করা ওয়ি সেক্টরের একটা প্রথায় পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এম্পায়ার শাসন করছে এ্যান্টান রাজবংশ। বিরোধিতা শুরু হয় বহু আগে যখন ওয়ির মেয়রদের একজন সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। ওয়িয়ান রাজবংশ দীর্ঘজীবী হয়নি, সফল ও হয়নি, কিন্তু ওয়ির শাসক এবং জনগনের পক্ষে এই কথা ভোলা সত্যি কঠিন যে তারা একসময়–তা যতই ব্যর্থ এবং ক্ষণস্থায়ী হোক না কেন–ক্ষমতার শীর্ষে ছিল। স্বঘোষিত মেয়র রিশেলি, যে প্রায় আঠার বছর আগে এম্পায়ারকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, তার ক্ষণস্থায়ী শাসন কাল ওয়ির অহংকার এবং হতাশা দুটোই বাড়িয়ে দেয়।

    কাজেই ষড়যন্ত্রকারীরা যে ট্র্যানটরের অন্যান্য সেক্টরের চেয়ে ওয়িতেই বেশী নিরাপদ বোধ করবে সেটাই স্বাভাবিক।

    সেক্টরের দরিদ্রতম অংশের কোনো এক ঘরে টেবিল ঘিরে পাঁচজন লোক বসে আছে। আসবাবপত্রে দারিদ্রের ছোঁয়া থাকলেও কামরাটা যথেষ্ট নিরাপদ।

    পাঁচটি চেয়ারের মধ্যে একটি চেয়ারের গুণগত মান এবং কারুকার্য অন্যগুলোর তুলনায় খানিকটা ভালো। ওই আসনে যে লোকটি বসে আছে তাকে দেখেই বুঝে নেয়া যাবে যে সেই দলের নেতা। লোকটির মুখ সরু, গায়ের রং ফ্যাকাশে, এবং প্রশস্ত মুখ, ঠোঁট এতো বেশী ফ্যাকাশে যে চোখেই পড়ে না। চুলের রং ধূসর হতে শুরু করেছে, কিন্তু তার চোখ দুটো সারাক্ষণই ভীষণ রাগে জ্বলছে।

    তাকিয়ে আছে বিপরীত দিকে ঠিক মুখোমুখি বসা সদস্যের দিকে এই লোকটি বৃদ্ধ, মাথার চুল সব সাদা, যখন কথা বলে তখন বয়সের ভারে ঝুলে পড়া চোয়ালের মাংস কেঁপে কেঁপে উঠে।

    “তো?” ধারালো গলায় জিজ্ঞেস করল নেতা। “পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে তুমি কিছুই করনি। ব্যাখ্যা কর।”

    “আমি একজন বয়স্ক জোরানুমাইট, নামাত্রি,” বৃদ্ধ জবাব দিল। “আমাকে জবাবদিহি করতে হবে কেন?”

    গ্যাম্বল ডীন নামাত্রি, একসময় ছিল লাসকিন “জো-জো” জোরানিউম এর ডানহাত, বলল, “বয়স্ক জোরামাইট অনেক আছে। তাদের কেউ অক্ষম, কেউ নরম হয়ে পড়েছে, কেউ ভুলে গেছে। বৃদ্ধ জোরানুমাইট হওয়ার অর্থ বুড়ো ভাম ছাড়া আর কিছু না।”

    চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল বৃদ্ধ। “তুমি আমাকে বুড়ো ভাম বলছ? আমাকে? কাসপাল কাসপালভ কে? আমি যখন জোরানিউমের সাথে ছিলাম তুমি তখনো দলে যোগ দাওনি, রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াতে।”

    “আমি তোমাকে বুড়ো ভাম বলছি না।” ধারালো গলায় বলল নামাত্রি। “শুধু বলেছি যে বৃদ্ধ জোরানুমাইটদের অনেকেই বুড়ো ভাম। তুমি একটা সুযোগ পেয়েছ প্রমাণ করার যে তুমি তা নও।”

    “জো-জোর সাথে আমার সম্পর্ক–”

    “ভুলে যাও। সে মারা গেছে।”

    “কিন্তু তার আদর্শ বেঁচে থাকবে।”

    “এই বিশ্বাস যদি আমাদের লড়াইয়ে সাহায্য করে তাহলে তার আদর্শ অবশ্যই বেঁচে থাকবে। কিন্তু অন্যদের কাছে আমাদের কাছে না। আমরা জানি সে ভুল। করেছিল।”

    “আমি মানি না।”

    “ভুল করেছিল এমন এক সাধারণ লোককে বীরপুরুষ প্রমাণ করার চেষ্টা করো না। সে ভেবেছিল শুধুমাত্র বাগাড়ম্বর করেই এম্পায়ারের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারবে, শুধু কথা দিয়ে-”

    “ইতিহাসে প্রমাণ আছে যে অতীতে অনেকেই কথা দিয়েই পর্বত পর্যন্ত নাড়িয়ে দিতে পেরেছিল।”

    “কিন্তু জোরানিউমের কথায় সেই জোর ছিল না, কারণ সে ভুল করেছিল। সে তার মাইকোজেনিয়ান পরিচিতি বোকার মতো গোপন করার চেষ্টা করে। সবচেয়ে খারাপ, সে ফাঁদে পা দিয়ে ডেমারজেলকে রোবট বলে অভিযুক্ত করে। আমি নিষেধ করেছিলাম কিন্তু আমার কথায় সে কান দেয়নি–আর নির্বুদ্ধিতাই তাকে শেষ করে দেয়। এখন আমরা নতুনভাবে শুরু করব, ঠিক? জোরানিউমের স্মৃতি জনতার জন্য তুলে রাখো। আমরা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাব না।”

    নিপ বসে আছে কাসপালভ। বাকী তিনজন নামাত্রি আর কাসপালভের দিকে পালা করে তাকাচ্ছে বার বার, নামাত্রিকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।

    “নিশায়াতে জোরানিউম নির্বাসিত হওয়ার কারণে জোরামাইট আন্দোলন স্থবির হয়ে পড়ে এবং মনে হচ্ছিল পুরোপুরিই শেষ হয়ে যাবে।” কর্কশ গলায় বলল নামাত্রি। “ঠিকই শেষ হয়ে যেত, হয়নি কারণ আমি। একটু একটু করে, তিল তিল করে আমি আবার এই আন্দোলনটাকে পুনরুজ্জীবিত করেছি, পুরো ট্রানটরে একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। আশা করি এটা তুমি জানো?”

    “আমি জানি, চীফ,” বিড় বিড় করে বলল কাসপালভ। সম্বোধনেই পরিষ্কার হয়ে গেল যে সে সংশোধনের উপায় খুঁজছে।

    কঠিনভাবে হাসল নামাত্রি। এইভাবে সম্বোধন করার কথা সে বলে দেয়নি, কিন্তু উপভোগ করে। সে বলল, “তুমি এই নেটওয়ার্কের অংশ এবং তোমার কিছু দায়িত্ব আছে।”

    এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কাসপালভ। পরিষ্কার বোঝা যায় লোকটা নিজের সাথে তর্ক করছে। তারপর বলল, “চীফ, জোরানিউমকে তুমি পরামর্শ দিয়েছিলে যেন ফার্স্ট মিনিস্টার একটা রোবট এই অভিযোগ না তুলে। এটাও বলেছ যে সে তোমার কথা শুনেনি। কিন্তু তুমি অন্তত তোমার মতামত প্রকাশ করতে পেরেছিলে। সেই একই সুযোগ কি আমাকে দেবে? বুঝিয়ে বলতে পারি কেন আমি মনে করছি যে ভুল হচ্ছে, জোরানিউমের মতো তুমি কি আমার কথা শুনবে, যদিও জানি যে ঠিক তার মতোই আমার পরামর্শ তুমি মানবে না?”

    “অবশ্যই, তুমি বলতে পার, কাসপালভ। সেজন্যই তোমাকে এখানে ডাকা হয়েছে।”

    “চীফ, আমাদের নতুন পরিকল্পনাগুলোই ভুল। ওগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে।”

    “অবশ্যই! সেটাই তো উদ্দেশ্য।” চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল নামাত্রি। রাগ সামলানোর জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাকে। “জোরানিউম বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, লাভ হয়নি। আমরা কৌশল দিয়ে ট্র্যানটরকে বশে আনব।”

    “কিন্তু কতদিন এইভাবে চলবে? কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে?”

    “যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন এবং সত্যি কথা বলতে কি খুব অল্প পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে। কোথাও শক্তি সরবরাহ থেমে যাবে, কোথাও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে, কোথাও পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে, কোথাও এয়ার কন্ডিশনিং থেমে যাবে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে সমস্যা এবং অস্বস্তি তৈরি করা এটাই মূল উদ্দেশ্য।”

    মাথা নাড়ল কাসপালভ। “এই জিনিসগুলো ক্রমশই পুঞ্জিভুত হতে থাকে।”

    “নিশ্চয়ই কাসপালভ, এবং আমরা চাই যে মানুষের মনেও ক্ষোভ আর ক্রোধ পুঞ্জিভুত হয়ে জমে উঠুক। শোনো, কাসপালভ, এম্পায়ার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কথাটা সবাই জানে। বুদ্ধি বিবেচনা আছে এমন প্রতিটি মানুষই জানে। আমরা কিছু না করলেও এই প্রযুক্তিগুলো আস্তে আস্তে থেমে যাবে। আমরা শুধু একটু সাহায্য করছি।”

    “বিপজ্জনক চীফ। ট্র্যানটরের অবকাঠামো অসম্ভব রকমের জটিল। অসতর্ক একটা ধাক্কাই পুরোপুরি ধ্বংস ডেকে আনবে। ভুল সুতাতে টান পড়লেই তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়বে ট্রানটর।”

    “সেরকম বিপজ্জনক এখনো হয়নি।”

    “ভবিষ্যতে হতে পারে। আর মানুষ যদি জানতে পারে যে এর পিছনে আমাদের হাত রয়েছে? আমাদেরকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। নিরাপত্তা বাহিনী বা আর্মড ফোর্স ডাকতে হবে না। জনতাই ওদের হয়ে কাজটা করে দেবে।”

    “মানুষ কিভাবে জানবে? ওদের ক্ষোভ আর ঘৃণার লক্ষ্য হবে প্রশাসন–সম্রাটের উপদেষ্টাগণ। এর বেশী কিছু ওদের মাথাতে আসবে না।”

    “আর নিজের বিবেকের কাছে আমরা কি জবাব দেব?” ফিসফিস করে প্রশ্নটা করল বৃদ্ধ, সীমাহীন আবেগ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে সে। টেবিলের অন্যদিকে বসা নেতার দিকে প্রায় অনুনয়ের দৃষ্টিতে তাকালো। এই মানুষটার কাছে সে তার আনুগত্য প্রকাশ করেছে। কাজটা সে করেছে এই বিশ্বাসে যে নামাত্রি সত্যিকার অর্থেই জো-জো জোরানিউমের সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করবে; কিন্তু এখন সে দ্বিধায় পড়ে গেছে–জোরানিউম কি এই প্রক্রিয়ায় তার মতবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল?

    নামাত্রি জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করল, অনেকটা অবুঝ বাচ্চার জিদ দেখে বাবা মা যেভাবে বিরক্তি প্রকাশ করে সেভাবে।

    “কাসপালভ, আবেগ দিয়ে কোনো কাজ হয় না, হয় নি? ক্ষমতায় যাওয়ার পর সিস্টেমগুলো আমরা নতুন করে গড়ে তুলব। প্রতিনিধিত্বমূলক প্রশাসন এবং প্রশাসনে জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ–জোরানিউমের এই লোকপ্রিয় উক্তিগুলো জনগণকে একমঞ্চে সংগঠিত করার ব্যাপারে সাহায্য করবে, ভালোমতো ক্ষমতায়। বসার পর আমরা একটা দক্ষ এবং শক্তিশালী সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলব। তখন ট্র্যানটর হয়ে উঠবে আরো উন্নত আর এম্পায়ার হয়ে উঠবে আরো স্থিতিশীল, খোলাখুলি মত প্রকাশের একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলব যেখানে অন্যান্য বিশ্বের প্রতিনিধিরা পূর্বের তুলনায় স্বাধীনভাবে তাদের মতো প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু মূল নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমাদের হাতে।”

    কাসপালভ অবুঝের মতো বসেই রইল।

    নির্দয় ভঙ্গীতে হাসল নামাত্রি। “তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? কোনোকিছুই আমাদের রুখতে পারবে না। সবকিছুই আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে এবং এভাবেই হতে থাকবে। সম্রাট জানেই না কি ঘটছে, সামান্য ধারণাও নেই। তার ফার্স্ট মিনিস্টার একজন গণিতবিদ। সত্যি কথা যে সে নামাত্রিকে শেষ করে দিয়েছিল, কিন্তু তারপর আর উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি।”

    “তার কাছে একটা বিজ্ঞান আছে। নাম–নাম—”

    “ভুলে যাও। জোরানিউম এই ব্যাপারটাতে অনেক বেশী গুরুত্ব দিয়েছিল, সম্ভবত মাইকোজেনিয়ান বলেই, অনেকটা তার রোবট ম্যানিয়ার মতো। এই গণিতবিদের কাছে কিছুই নেই।”

    “হিস্টোরিক্যাল সাইকো এ্যানালাইসিস বা এধরনেরই কি যেন একটা বিষয়। জোরানিউমকে বলতে শুনেছিলাম-”

    “ভুলে যাও। শুধু নিজের দায়িত্বটুকু পালন কর। তুমি এ্যানিমোরিয়া সেক্টরের বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছ, তাই না? বেশ এমন কিছু কর যেন বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়। তোমার যেভাবে খুশি করতে পার। পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পার, অথবা এমন কিছু কর যেন কড়া গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে অথবা যাইহোক একটা কিছু কর। এতে কারো মৃত্যু হবে না কাজেই তোমাকেও সারাজীবন অণুতাপ করতে হবে না। তুমি শুধু মানুষের প্রাত্যহিক নাগরিক জীবনের সুযোগ সুবিধাগুলোর কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি তাদের মনের ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলবে। আমরা তোমার উপর নির্ভর করতে পারি?”

    “কিন্তু তরুণ এবং সুস্থ সবল মানুষগুলো হয়তো সামলে নিতে পারবে। অসুস্থ, বৃদ্ধ আর বাচ্চাদের কি হবে?”

    “তুমি কি বলতে চাও একজনেরও কোনো ক্ষতি হবে না?”

    বিড় বিড় করে কি যেন বলল কাসপালভ।

    “একজন মানুষেরও কোনো ক্ষতি হবে না এমন নিশ্চয়তা দিয়ে কোনো কাজ করা অসম্ভব। তুমি শুধু তোমার দায়িত্ব পালন কর। এমনভাবে কর যেন যতদূর . সম্ভব কম মানুষের ক্ষতি হয় কিন্তু কাজটা শেষ কর।”

    “আমার আরেকটা কথা বলার আছে, চীফ।”

    “বল, ক্লান্তসুরে অনুমতি দিল নামাত্রি।

    “অবকাঠামোগুলোতে খোঁচা মেরে আমরা বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে পারি। কিন্তু একটা সময় আসবে যখন মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ব্যবহার করে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তুমি কিভাবে সেটা করবে?”।

    “খুটিনাটি সব জানতে চাও?”

    “হ্যাঁ। যত তাড়াতাড়ি আঘাত করতে পারব, ক্ষতির পরিমাণ তত কম হবে।”

    ধীরে ধীরে জবাব দিল নামাত্রি। “এখনো ঠিক করিনি। সময়মতো সব ব্যবস্থা হবে। তার আগ পর্যন্ত তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করে যাবে?”

    হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গীতে মাথা নাড়ল কাসপালভ, “হ্যাঁ, চীফ।”

    “যাও তাহলে,” হাত নেড়ে আলোচনা শেষ হওয়ার ইঙ্গিত দিল নামাত্রি।

    উঠে দাঁড়াল কাসপালভ, ঘুরল, তারপর বেরিয়ে গেল কামরা থেকে। তার চলে যাওয়া দেখল নামাত্রি। ডানপাশের লোকটাকে বলল, “কাসপালভকে বিশ্বাস করা যায় না। সে বিক্রি হয়ে গেছে আর তাই আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চেয়েছিল। ওর ব্যবস্থা কর।”

    মাথা নাড়ল লোকটা। নামাত্রিকে কামরায় একা রেখে চলে গেল তিনজনেই। সুইচ টিপে ওয়াল প্যানেলের আলো নিভিয়ে দিল নামাত্রি, ছাদে চারকোণা ছোট একটা অংশের আলো জ্বলছে যেন তাকে পুরোপুরি অন্ধকারে বসে থাকতে না হয়।

    সে ভাবছে : প্রতিটা শিকলেই কিছু দুর্বল আংটা আছে, ওগুলো খুলে ফেলে দিতে হবে। অতীতে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি বলেই আজকে একটা অসম্ভব শক্তিশালী সংগঠন দাঁড় করাতে পেরেছি।

    নিষ্ঠুর একটুকরো হাসি ফুটে উঠল নামাত্রির মুখে, অস্পষ্ট আলোতে সেটা আরো ভয়ংকর দেখাল। যত যাইহোক তার নেটওয়ার্ক প্রাসাদেও পৌঁছেছে–তেমন মজবুত নয়, তেমন বিশ্বস্তও নয়, কিন্তু পৌঁছতে পেরেছে। এবং কিছুদিনের মধ্যে তা শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

    .

    ৬.

    ইম্পেরিয়াল প্যালেস গ্রাউণ্ড–গ্রহের একমাত্র যে অংশ ধাতব গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত নয় সেই অংশের আবহাওয়া আজকে উষ্ণ এবং রৌদ্রকরোজ্জ্বল।

    এমন আবহাওয়া খুব একটা দেখা যায় না। হ্যারির মনে আছে ডর্স বলেছিল কিভাবে প্রচণ্ড শীত এবং বৃষ্টিবহুল এই অংশটুকু বেছে নেয়া হয়।

    “আসলে ঠিক বেছে নেয়া হয়নি,” ডর্স বলেছিল। “কিংডম অব ট্র্যানটরের প্রাথমিক যুগে এই অংশটা ছিল মোরাভিয়ান পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। কিংডম যখন এম্পায়ারে পরিণত হচ্ছে তখন সম্রাটদের অসংখ্য বাসস্থান তৈরি হতে থাকে গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান, শীতকালীন বাসস্থান, স্পোর্টস লজ, সৈকত। যখন পুরো গ্রহে গম্বুজ আকৃতির ধাতব ছাদ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন তৎকালীন সম্রাট এখানে বাস করছিলেন। জায়গাটা তার ভীষণ পছন্দ হয়ে যায় আর তাই শুধু এই অংশেই গম্বুজের ছাদ তৈরি করা হয়নি, ফলে জায়গাটা একটা বিশেষত্ব লাভ করে–সব কিছু থেকে আলাদা–এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরবর্তী সম্রাটকে আকৃষ্ট করে… তার পরবর্তী… তার পরবর্তী… এভাবেই চলতে থাকে, একটা ঐতিহ্য গড়ে উঠে।”

    এই ধরনের কথা শুনলে সেলডন সবসময়ই ভাবেন : সাইকোহিস্টোরি কিভাবে এই বিষয়টা সামলাবে? এই বিজ্ঞান কি বলতে পারবে যে কোনো একটা অংশ গম্বুজের ছাদ দিয়ে ঢেকে ফেলা হবে না অথচ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না ঠিক কোন অংশ? বিষয়টা কি আরো জটিল হয়ে উঠবে? এর সাহায্যে কি অনুমান করা যাবে যে একাধিক অংশ থাকবে গম্বুজবিহীন অথবা কোনোটাই না–এবং ভুল হবে? ক্রান্তিলগ্নে যে সম্রাট ক্ষমতায় থাকে, খেয়ালের বশে মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয় সেই সম্রাটের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ কিভাবে বিবেচনায় আনা যাবে? এতে শুধু বিভ্রান্তি তৈরি হয়–এটা পাগলামী।

    নিঃসন্দেহে প্রথম ক্লীয়ন চমৎকার আবহাওয়াটা উপভোগ করছেন।

    “আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, সেলডন,” তিনি বললেন। “অবশ্য তোমাকে বলার দরকার নেই। আমরা সমবয়সী। তুমি আর আমি। তবে এটা নিঃসন্দেহে বয়সের লক্ষণ যেহেতু এখন আর আমি টেনিস খেলা বা মাছ শিকারে কোনো উৎসাহ পাই না। যদিও ওরা লেকটাকে নতুনভাবে মাছের চাষ করে ভরিয়ে তুলেছে। কিন্তু আমার এই বাগানের পথেই হাঁটতে ভালো লাগে।

    কথা বলতে বলতে তিনি বাদাম খাচ্ছেন। জিনিসটা দেখতে সেলডনের নিজ গ্রহ হ্যাঁলিকনের কুমড়ো বিচির মতো, তবে ওগুলো ছিল আরো বড় এবং সুস্বাদু। ক্লীয়ন নিপুণ ভাবে দুপাটি দাঁতের মাঝে রেখে খোসা ভেঙে ভেতরের শাস খেয়ে যাচ্ছেন।

    সেলডন স্বাদটা পছন্দ করেন না, তারপরও সম্রাটের বাড়ানো হাত থেকে কিছু তুলে নিলেন, দুএকটা মুখেও দিলেন।

    সম্রাটের হাতে অনেকগুলো খোসা জমা হয়েছে। চারপাশে তাকালেন আবর্জনা ডিজপোজ করার যন্ত্রের খোঁজে। পেলেন না, কিন্তু খেয়াল করলেন কিছু দূরে সশ্রদ্ধভাবে মাথা নুইয়ে (সম্রাটের উপস্থিতিতে এটাই নিয়ম) একজন গার্ডেনার দাঁড়িয়ে আছে।

    “গার্ডেনার!” ক্লীয়ন ডাক দিলেন।

    দ্রুত এগিয়ে এল গার্ডেনার। “সায়ার!”

    “খোসাগুলো নিয়ে ডিজপোজ কর,” খোসাগুলো তিনি গার্ডেনারের হাতে দিলেন।

    “জ্বী, সায়ার।”

    সেলডন বললেন, “আমারগুলোও নিয়ে যাও, গ্রুবার।”

    হাত বাড়ালো গ্রুবার। প্রায় লজ্জিত সুরে বলল, “জ্বী, ফার্স্ট মিনিস্টার।”

    গার্ডেনার চলে গেল আর সম্রাট কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকে দেখছেন। “তুমি ওকে চেন, সেলডন?”।

    “জ্বী, সায়ার। পুরনো বন্ধু।”

    “গার্ডেনার তোমার পুরনো বন্ধু? কি সে? সহকর্মী গণিতবিদ হঠাৎ করে দারুণ অর্থকষ্টে পড়েছে?”

    “না, সায়ার। হয়তো আপনার মনে আছে। যখন-” গলা পরিষ্কার করে নিলেন, কৌশলে ঘটনাটা মনে করিয়ে দেয়ার উপায় খুঁজতে লাগলেন–“আপনার মহানুভবতায় আমি বর্তমান পদে নিয়োগ পাই, এক সার্জেন্ট আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছিল।”

    আকাশের দিকে তাকালেন ক্লীয়ন, যেন ওখান থেকে ধৈর্য ধরার শক্তি পাবেন। “তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বুঝতে পারি না কেন সবাই এই শব্দটা বলতে ভয় পায়।”

    “সম্ভবত,” অনভ্যস্ত তোষামুদির সুরে বললেন সেলডন, “আপনার কিছু হওয়া বা হওয়া নিয়ে আপনি নিজে যতটা উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশী উদ্বিগ্ন আমরা।”

    ক্লীয়নের ঠোঁটে শ্লেষাত্মক হাসি ফুটে উঠল। “মনে হয় না। যাই হোক, ওই ঘটনার সাথে গ্রুবারের সম্পর্ক কি? এটাই তো ওর নাম?”

    “জ্বী সায়ার। ম্যানডেল গ্রুবার। আমার বিশ্বাস একটু কষ্ট করে স্মৃতি হাতড়ালে আপনার মনে পড়বে যে সার্জেন্টের আগ্নেয়াস্ত্রের মুখ থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য গার্ডেনারদের একজন লম্বা নিড়ানি হাতে দৌড়ে এসেছিল।”

    “ও হ্যাঁ। এই সেই গার্ডেনার?”

    “এই সেই লোক, সায়ার। তারপর থেকেই ওকে আমি বন্ধু মনে করি এবং যখনই বাগানে আসি ওর সাথে দেখা করে যাই। মনে হয় আমার প্রতি সে লক্ষ্য রাখে, আমার প্রতি কিছুটা অধিকারবোধও হয়তো জন্মেছে তার। আর আমি ওর সাথে সদয় আচরণ করার চেষ্টা করি।”

    “তোমাকে দোষ দেয়া যায় না। যাই হোক, বিষয়টা যখন উঠলই ড. ভেনাবিলি কেমন আছে? অনেকদিন দেখি না।”

    “সে একজন ইতিহাসবিদ, সায়ার, অতীত নিয়ে ডুবে থাকে।”

    “তোমাকে সে ভয় পাওয়াতে পারেনি। আমাকে পেরেছে। সার্জেন্টকে যেভাবে সামলেছিল তা শুনে সার্জেন্টের জন্য আমার দুঃখই হয়েছে।”

    “আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে সে ভীষণ রকম নাছোড় বান্দা, যদিও পরে আর তেমন সুযোগ খুব একটা পায়নি। পরিস্থিতি এখন অনেক শান্ত।”

    গার্ডেনারের গমনপথের দিকে তাকিয়ে সম্রাট জিজ্ঞেস করলেন, “এই আনুগত্যের জন্য আমরা ওকে পুরস্কৃত করেছি?”

    “আমি চেষ্টা করেছি, সায়ার। ওর স্ত্রী এবং দুই মেয়ে আছে। দুই মেয়ের শিক্ষার খরচ ছাড়াও আলাদা কিছু অর্থ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”

    “চমৎকার। কিন্তু ওর পদোন্নতি হওয়া দরকার। আমার মনে হয়–গার্ডেনার হিসেবে কেমন সে?”

    “প্রথম শ্রেণীর, সায়ার।”

    “চীফ গার্ডেনার ম্যালকোম্বার–এটাই ওর নাম কিনা মনে পড়ছে না–অবসর নিতে যাচ্ছে। তার বয়স সত্তরের উপর। তোমার কি মনে হয় বার এই দায়িত্ব নিতে পারবে?”

    “পারবে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই, সায়ার। কিন্তু বর্তমান দায়িত্বেই সে খুশি। এতে সে যে কোনো আবহাওয়াতেই খোলা প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতে পারে।”

    “চাকরির জন্য অদ্ভুত সুপারিশ। আমার বিশ্বাস সে দ্রুত প্রশাসনিক কাজে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, তাছাড়া নতুন ভাবে বাগানের পুনর্বিন্যাসের জন্য একজন দক্ষ লোক দরকার। তোমার বন্ধু গ্রুবারই হয়তো সেই লোক।–ভালো কথা, সবকিছুই এখন শান্ত বলে তুমি কি বোঝাতে চেয়েছ?”

    “বোঝাতে চেয়েছি, সায়ার, যে ইম্পেরিয়াল কোর্টে এখন কোনো মত বিরোধ নেই। ষড়যন্ত্রের মনোভাবও এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে।”

    “তুমি সম্রাট হলে আর এই কথা বলতে না, সেলডন, অফিসারদের হাজার রকম অভিযোগও শুনতে হতো না। প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন স্থান থেকে জনসেবামূলক খাতগুলোর মুখ থুবড়ে পড়ার খবর আসছে। তুমি কিভাবে বলছ সবকিছু শান্ত?”

    “এগুলো তো ঘটবেই।”

    “কিন্তু আগে কখনো এতো দ্রুত আর বেশী ঘটেছে বলে আমার মনে পড়ছে না।”

    “সম্ভবত এই কারণে যে আগে কখনো এমন ঘটেনি, সায়ার। সময়ের সাথে সাথে অবকাঠামোগুলো পুরনো হচ্ছে। পর্যাপ্ত মেরামতের জন্য দরকার সময়, শ্রম এবং অবিশ্বাস্য পরিমাণ অর্থ। কিন্তু এই মুহূর্তে অতিরিক্ত কর জনগণ মেনে নেবে না।

    “কখনোই মেনে নেয় না। বুঝতে পারছি এই বিপর্যয়ের কারণে মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই দুর্যোগ থামাতে হবে এবং সেটা করতে হবে তোমাকেই, সেলডন। সাইকোহিস্টোরি কি বলে?”

    “ঠিক তাই বলছে স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেচনা যা বলে, সবকিছু পুরনো হচ্ছে।”

    “বেশ, চমৎকার দিনটা মাটি হয়ে গেল। ব্যাপারটা তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম, সেলডন।”

    “জ্বী, সায়ার।”

    চলে গেলেন সম্রাট আর সেলডন মনে মনে ভাবলেন যে তারও দিনটা মাটি হয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে কেন্দ্রে কোনো বিপর্যয় তিনি চাননি। কিন্তু তিনি কিভাবে ঠেকাবেন আর ক্রাইসিসটাকে পেরিফেরিতে ঠেলে দেবেন?

    সাইকোকিস্টোরি কোনো জবাব দিতে পারে নি।

    .

    ৭.

    রাইখ সেলডন ভীষণ খুশী, কারণ বেশ অনেক দিন পরে যে দুজন মানুষকে বাবা-মা হিসেবে জানে তাদের সাথে ডিনার করতে পারছে। পুরোপুরি একটা পারিবারিক ডিনার। ভালো করেই জানে এই দুজনের সাথে তার রক্তের সম্পর্ক নেই, কিন্তু সেটা কোনো ব্যাপার নয়।

    পরিবেশটা তাদের স্ট্রিলিং-এর ছোট বাড়িটার মতো আন্তরিক নয়। সেটা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল আবাসিক জঙ্গলে ছোট একটা স্বর্গ। আর এখন ফার্স্ট মিনিস্টারের রাজকীয় পোশাক কোনোভাবেই আড়াল করর উপায় নেই।

    মাঝে মাঝে আয়নায় তাকিয়ে রাইখ অবাক হয়ে ভাবে কিভাবে সব বদলে গেল। লম্বা নয় সে, মাত্র ১৬৩ সেন্টিমিটার, বাবা মা দুজনের চেয়েই খাটো। পেশীবহুল নয়, একটু গাট্টাগোট্টা ধরনের–তবে দেহে চর্বি নেই। কালো চুল এবং ডাহলাইট বৈশিষ্ট্যের গোঁফ, অসম্ভব কালো আর ঘন।

    আয়নায় তাকিয়ে এখনো সে অসম্ভব ভাগ্যবান হিসেবে হ্যারি এবং ডর্সের সাথে পরিচয় হওয়ার আগের সেই ভিখিরি ছেলেটাকে খুঁজে পায়। সেলডনের বয়স তখন আরো কম ছিল। তার বর্তমান অবয়বে বোঝা যায় যে সেলডন তখন যে বয়সের ছিলেন রাইখ এখন সেই বয়সে পা রেখেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ডর্সের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সে এখনো ঠিক সেইরকমই আছে রাইখ যখন তাকে আর হ্যারিকে মাদার রিটার বাড়ী চিনিয়ে দিয়েছিল তখনকার মতো। আর সে, রাইখ, যার জন্ম দারিদ্র আর দুঃখ কষ্টের মাঝে সে এখন পাবলিক সার্ভিসের একজন সদস্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের ছোটখাট একজন হর্তাকর্তা।

    “মন্ত্রণালয়ের কি অবস্থা, রাইখ? কোনো অগ্রগতি?” সেলডন জিজ্ঞেস করলেন।

    “কিছু কিছু, বাবা। আইনগুলোর অনুমোদন হয়ে গেছে, আদালতের সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে। খুটিনাটি সব ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে। তারপরেও মানুষকে বোঝানো বা রাজী করানো কঠিন। ভ্রাতৃত্ব বোধ নিয়ে সবাই বক্তৃতা দেয় কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে কেউই আর কাউকে ভাই মনে করে না। আর আমি যা বুঝতে পেরেছি তাতে মনে হয় ডালাইটরাই বেশী খারাপ। তারা সমান অধিকারের কথা বলে, সেটা তাদের দেয়াও হয়েছে, কিন্তু একটু সুযোগ পেলেই আর অন্যদের সমান অধিকার দেয়ার কোনো আগ্রহ ওদের মাঝে দেখা যায় না।”

    ডর্স বলল, “মানুষের মন এবং অভ্যাস পরিবর্তন করা অসম্ভব, রাইখ। চেষ্টা করা এবং সম্ভব হলে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবিচারগুলো দূর করতে পারাই যথেষ্ট।”

    “সমস্যা হচ্ছে,” সেলডন বললেন, “মানবসভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে কেউ মনযোগ দেয়নি। আমিই সবার সেরা, এই আনন্দদায়ক কিন্তু বিপজ্জনক খেলা চালিয়ে যেতে মানুষকে কখনো বাধা দেয়া হয়নি। এই আবর্জনা দূর করা সহজ কাজ নয়। হাজার হাজার বছর ধরেই আমরা যদি ঘটনাসমূহকে তাদের নিজস্ব গতিপথে চলতে থাকার সুযোগ দেই, তাহলে এই ধরা যাক মাত্র একশ বছরের পরিশ্রম দ্বারা অতি সামান্য অগ্রগতি হলেও আমাদের অভিযোগ করা উচিত নয়।”

    “মাঝে মাঝে মনে হয়, বাবা,” রাইখ বলল, “তুমি আমাকে শাস্তি দেয়ার জন্য এই কাজটা দিয়েছ।”

    ভুরু কুঁচকালেন সেলডন। “তোমাকে শাস্তি দেব কেন?”

    “সব সেক্টরের সমান অধিকার এবং প্রশাসনে জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ জোরানিউমের এই কর্মসূচীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণে।”

    “সেজন্য আমি তোমাকে কখনো দোষ দেইনি। পরামর্শগুলো ভালো, কিন্তু তুমি জানো জোরানিউম আর তার অনুসারীরা এই স্লোগানগুলো ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছিল। পরে”।

    “জোরানিউমের মতবাদের প্রতি আমি আকৃষ্ট, তারপরেও লোকটাকে ফাঁদে ফেলার জন্য তুমি আমাকেই পাঠিয়েছিলে।”

    “সেটা আমার জন্য ছিল ভীষণ কঠিন একটা কাজ।”

    “আর এখন তুমি আমাকে জোরানিউমের কর্মসূচী বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছ, শুধু দেখানোর জন্য কাজটা বাস্তবে আসলে কত কঠিন।”

    ডর্সকে বললেন সেলডন, “কেমন লাগছে তোমার, ডর্স? ছেলেটা আমার উপর জঘন্য ধূর্ততার অভিযোগ আনছে। যা আমার চরিত্রেই নেই।”

    “নিশ্চয়ই,” চোখে পড়ে না এমন এক ধরনের ভুতুরে হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে ডর্স বলল, “তুমি তোমার বাবার উপর এমন কোনো অভিযোগ করছ না।”

    “না। সত্যি কথা বলতে কি, সারাজীবনে আমি তোমার মতো স্পষ্টভাষী লোক দ্বিতীয় আরেকজন দেখিনি, বাবা। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয় তাহলে খুব ভালো করেই জানো যে তুরুপের তাস নিজের হাতে টেনে নিতে পারবে। সাইকোহিস্টোরি তোমার এই কাজটা আরো সহজ করে তুলবে বলে আশা করছ, তাই না?”

    বিষণ্ণ সুরে জবাব দিলেন সেলডন। মোটামুটি তাই। সাইকোহিস্টোরি নিয়ে। কিছুই করতে পারি নি।”

    “খুব খারাপ কথা। আমি সবসময় নিজেকে বলতাম যে মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর : করার জন্য সাইকোহিস্টোরিক্যাল সমাধান পাওয়া যাবেই।”

    “হয়তো আছে, কিন্তু আমি এখনো পাইনি।” ডিনার শেষ হওয়ার পর সেলডন বললেন, “আমি আর তুমি, রাইখ, এবার কিছু আলোচনা করব।”

    “অবশ্যই?” ডর্স বলল। “ধরে নিচ্ছি সেখানে আমার কোনো অংশ নেই।”

    “মন্ত্রণালয়ের কাজ, ডর্স।”

    “মন্ত্রণালয়ের কাজ না কচু, হ্যারি। তুমি আসলে বাচ্চা ছেলেটাকে এমন কোনো কাজ করতে বলবে যা আমি ওকে দিয়ে করাতে চাই না।”

    দৃঢ় গলায় বললেন সেলডন, “আমি ওকে দিয়ে এমন কোনো কাজ করাব না যা সে করতে চায় না।”

    “ঠিক আছে, মা,” রাইখ বলল। “বাবার সাথে আলোচনা করতে দাও। কথা দিচ্ছি পরে তোমাকে সব জানাবো।”

    মাথা উঁচু না করেই শুধু চোখ নাড়িয়ে উপরে তাকালো ডর্স। “দুজনেই বলবে যে রাষ্ট্রের গোপন ব্যাপার। আমি জানি।”

    “সত্যি কথা বলতে কি,” এবারো দৃঢ় গলায় বললেন সেলডন, “ঠিক সেরকম বিষয়েই আলোচনা করব, এবং তা প্রথম শ্রেণীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

    দাঁড়ালো ডর্স, দুই ঠোঁট দৃঢ়ভাবে সেঁটে রেখেছে। চলে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো বলল, “ছেলেটাকে নেকড়ের মুখে ছেড়ে দিও না, হ্যারি।”

    এবং সে চলে যাওয়ার পর শান্ত সুরে সেলডন বললেন, “তোমাকে হয়তো সত্যি সত্যি নেকড়ের মুখে ছেড়ে দিতে হবে, রাইখ।”

    .

    ৮.

    সেলডনের অফিস কক্ষ, প্রায়শই তিনি বলেন “ভাবনাঘর, এখানেই তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছেন অতীত খুড়ে এবং ইম্পেরিয়াল আর ট্র্যানটরিয়ান প্রশাসনের জটিলতায় পথ খুঁজে।

    “প্ল্যানেটরি সার্ভিসগুলো যে অচল হয়ে পড়ছে এই খবরটা কি তুমি জানো, রাইখ?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন।

    “হ্যাঁ,” রাইখ বলল, “কিন্তু কি জানো বাবা, আমাদের গ্রহটা পুরনো হয়ে গেছে। এখন যা করতে হবে তা হলো প্রত্যেকটা মানুষকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে, পুরনো সব কিছু ফেলে দিয়ে গড়ে তুলতে হবে নতুনভাবে, সর্বাধুনিক কম্পিউটারাইজড প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, তারপর আবার সবাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে বা মাত্র অর্ধেক। ট্র্যানটর আরো বেশী বাসযোগ্য হয়ে উঠবে যদি জনসংখ্যা মাত্র বিশ বিলিয়ন হয়।”

    “কোন বিশ বিলিয়ন?” হাসি মুখে বললেন সেলডন।

    “যদি জানতাম,” গোমড়া মুখে জবাব দিল রাইখ। “সমস্যা হচ্ছে পুরো গ্রহটা আমরা বদলে ফেলতে পারব না, কাজেই জোড়া তালি দিয়েই চলতে হবে।”

    “আমারও তাই মনে হয়, রাইখ, কিন্তু এখন যা ঘটছে তার মধ্যে অদ্ভুত কিছু ব্যাপার আছে। আমি চাই বিষয়টা তুমি শুধু অনুসন্ধান করে দেখ। মোটামুটি একটা পরিকল্পনা করে রেখেছি।”

    পকেট থেকে তিনি একটা ছোট গোলাকার বস্তু বের করে আনলেন।

    “কি এটা?”

    “ট্রানটরের মানচিত্র, সতর্কভাবে প্রোগ্রাম করা। একটা কাজ কর, রাইখ টেবিলের উপর থেকে সব জিনিস সরিয়ে ফেল।”

    গোলাকার বস্তুটাকে টেবিলের প্রায় মাঝখানে বসালেন সেলডন। চেয়ারের হাতলের কী প্যাডের উপর হাত রেখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঘরের ভেতরের আলো নিভিয়ে দিলেন। প্রায় এক সেন্টিমিটার গভীর মোলায়েম সাদা আলোয় টেবিলের উপরটা আলোকিত হয়ে উঠল। গোলাকার অবয়বটা চ্যাপ্টা হয়ে ছড়িয়ে পড়ল টেবিলের প্রান্তসীমা পর্যন্ত।

    ধীরে ধীরে আরো গম্ভীর হয়ে বিন্দুর রূপ নিল আলোটা। একটা প্যাটার্ন তৈরি হলো। প্রায় তিরিশ সেকেণ্ড পরে বিস্মিত সুরে রাইখ বলল, “ট্রানটরের মানচিত্র।”

    “হ্যাঁ, তোমাকে তো বললামই। যে কোনো সেক্টর মলেই এই জিনিস কিনতে পারবে। তবে এটা সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত জিনিস, আরো উন্নত। এখানে ট্রানটকে বৃত্তাকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, অবশ্য আমি যা দেখাতে চাই তার জন্য সমতল প্রজেকশন হলেই ভালো হতো।”

    “তুমি কি দেখাতে চাও, বাবা?”

    “গত দুই তিন বছরে অনেক কিছু অচল হয়ে পড়েছে। তোমার মতে গ্রহের সবকিছুই পুরনো হচ্ছে তাই এটা স্বাভাবিক, কিন্তু ঘটনাগুলো খুব দ্রুত আর ধারাবাহিক ভাবে ঘটছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘটছে মানুষের ভুলের কারণে।”

    “স্বাভাবিক, তাই না?”

    “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। কিন্তু সীমা থাকা দরকার। এমনকি ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি ।”

    “ভূমিকম্প? ট্রানটরে?”

    “মেনে নিচ্ছি যে ট্র্যানটর পুরোপুরি ভূ-কম্পনহীন গ্রহ–এবং তাতে ভালো হয়েছে, কারণ গম্বুজ দিয়ে পুরো গ্রহ ঢেকে ফেলার পর বছরে দুই তিনবার যদি সেই গম্বুজের নানা জায়গা ভেঙ্গে চুরে যায় সেটা হতো আরো ক্ষতিকর। তোমার মা বলেছে অন্যান্য বিশ্ব বাদ দিয়ে ট্রানটরকে ইম্পেরিয়াল রাজধানী হিসেবে বেছে নেয়ার মূল কারণ গ্রহটা ভূ-তাত্ত্বিকভাবে মৃত। কিন্তু হয়তো মৃতপ্রায়, পুরোপুরি মৃত্যু ঘটেনি। মাঝে মাঝেই ছোটখাটো ভূমিকম্প হয়–গত দুই বছরেই তিনটা হয়েছে।”

    “আমি টের পাইনি, বাবা।”

    “বলতে গেলে কেউই পায়নি। গম্বুজ তো আর একটা না, শত শত সেকশনে ছড়িয়ে আছে। ভূমিকম্প হলে যে কোনো গম্বুজের মুখ খুলে ভেতরের চাপ বের করে দেয়া যায়। যেহেতু ভূমিকম্প স্থায়ী হয় মাত্র দশ সেকেণ্ড থেকে এক মিনিট তাই মাত্র কয়েক সেকেন্দ্রের জন্য গম্বুজের মুখ খুললেই হয়। এতো দ্রুত ব্যাপারটা ঘটে যে নিচে বসবাসকারী ট্র্যানটরিয়ানরা কিছুই টের পায় না। গম্বুজের খোলা এবং বন্ধ হওয়ার চাইতে তারা বরং তৈজসপত্রের ঝনঝনানি, হালকা ঝাঁকুনি আর উপরের উন্মুক্ত আবহাওয়া কিছুটা টের পায়।”

    “চমৎকার, তাই না?”

    “হ্যাঁ। পুরোটাই কম্পিউটারাইজড। কোথাও ভূমিকম্প হলে ওই সেকশনের গম্বুজ খোলা এবং বন্ধ করার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করে যেন বিধ্বংসী হয়ে উঠার আগেই কম্পনটা বের হয়ে যায়।”

    “আরো ভালো।”

    “কিন্তু গত দুই বছরে সংঘটিত তিনটা ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেই, গম্বুজের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়। গম্বুজ খোলা যায়নি এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেরামতের দরকার হয়েছে। এর জন্য সময় লেগেছে, অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং বেশ একটা দীর্ঘ সময়ই আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে নিম্নমানের। তিনবারই যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে এমন সম্ভাবনা কতটুকু, রাইখ?”

    “বেশী না।”

    “মোটেই বেশী না। একশ ভাগের এক ভাগেরও কম। মনে করা যেতে পারে যে কেউ হয়তো ভূমিকম্পের আগেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করে দিয়েছিল। শতাব্দীর সর্ববৃহৎ বিপর্যয় এটা, যা সামলানো সত্যিই কঠিন হতো এবং সময়মতো বিষয়টা নজরে না আসলে কি ঘটত তা ভাবতেই আমার ভয় লাগে। যাই হোক ভাগ্যক্রমে তেমন কিছু ঘটেনি, ঘটা উচিত নয়। কিন্তু গত দুই বছরে বিভিন্ন স্থানে যে অচলাবস্থা মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে তার জন্য দায়ী মানুষের ভুল ত্রুটি, যদিও কার ভুল বা দোষ সেটা আমরা বের করতে পারি নি।”

    “কারণ সবাই নিজের গা বাঁচিয়ে চলে।”

    “ঠিকই বলেছ। এটা আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এবং ট্র্যানটর ইতিহাসের সর্ববৃহৎ আমলাতান্ত্রিক–কিন্তু লোকেশনগুলো দেখে তোমার কি মনে হয়?”

    মানচিত্রে কতগুলো উজ্জ্বল লাল বর্ণের বিন্দু ফুটে উঠল, দেখে মনে হয় ট্র্যানটরের সমতলে অসংখ্য ফুসকুঁড়ি।

    “বেশ,” সাবধানে জবাব দিল রাইখ, “দেখে মনে হয় নিয়মিত ব্যবধানে ছড়ানো।”

    “ঠিক–আর এটাই হচ্ছে মজার ব্যাপার। সবাই আশা করবে যে ট্র্যানটরের পুরনো অংশসমূহ–সবচেয়ে দীর্ঘ গম্বুজওয়ালা সেকশনগুলোর অবকাঠামোই বেশী নষ্ট হয়েছে, সেই ক্ষেত্রে মানুষকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় যার ফলে ভুল হতেই পারে। মানচিত্রে ট্রানটরের পুরনো অংশসমূহ নীল রঙে ফুটিয়ে তুলছি। খেয়াল করে দেখো নীল অংশগুলোতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ার ঘটনা এতো ঘন ঘন হয়নি।”

    “তো?”

    “তো, রাইখ, আমি যা ভাবছি তার অর্থ হলো এই যে এগুলো কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা নয় বরং ইচ্ছে করেই ঘটানো এবং এইভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যেন যত বেশী সম্ভব মানুষকে অতি প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যায়। এভাবেই তাদের মনের অসন্তোষ যতদূর সম্ভব তীব্র করে তোলা যাবে।”

    “স্বাভাবিক মনে হয় না।”

    “মনে হয় না? ঠিক আছে, স্থানভেদে না দেখে একটা ঘটনার সাথে আরেকটা ঘটনার সময়ের ব্যবধান খেয়াল কর।”

    নীল অঞ্চল এবং লাল বিন্দুগুলো অদৃশ্য হয়ে গেল, কিছুক্ষণের জন্য মানচিত্রে কোনো চিহ্নই থাকল না–তারপর আবার চিহ্নগুলো একটার পর একটা ফুটে উঠেই মিলিয়ে যেতে লাগল, এখানে সেখানে।

    “লক্ষ্য কর,” সেলডন বললেন, “একই সময়ে একাধিক আলো জ্বলছে না। প্রথমে একটা, তারপর আরেকটা, তারপর আরেকটা। নিখুঁত ছন্দ।

    “তোমার কি মনে হয় এইগুলাও কেউ ইচ্ছা কইরা করছে?”

    “এছাড়া আর কোনো জবাব নেই। যেই করে থাকুক তার উদ্দেশ্য অল্প পরিশ্রমে যতদূর সম্ভব বেশী ক্ষতি করা, তাই একসাথে দুটো ঘটনা ঘটালে লাভ হবে না কারণ একটা ঘটনা আরেকটা ঘটনার গুরুত্ব ম্লান করে দেবে এবং মানুষও মনযোগী হবে না। প্রতিটি ঘটনা থেকে একশ ভাগ ফায়দা নিতে হবে।”

    মানচিত্রটা সংকুচিত হয়ে পূর্বের গোলাকার অবস্থায় ফিরে এল। সেলডন জিনিসটা পকেটে রেখে দিলেন।

    “এই ঘটনাগুলোর পেছনে কার হাত আছে?” জিজ্ঞেস করল রাইখ।

    চিন্তিত সুরে জবাব দিলেন সেলডন, “কিছুদিন আগে ওয়ি সেক্টরে একটা খুনের রিপোর্ট পেয়েছি।”

    “অস্বাভাবিক কিছু না। যদিও ওয়ির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো, তারপরেও নিশ্চয় সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য খুনের ঘটনা ঘটে।”

    “শত শত,” মাথা নেড়ে বললেন সেলডন। “এমনও দিন গেছে যখন ট্র্যানটরে সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা লাখের উপরে ছিল। প্রত্যেক অপরাধী বা খুনীকে ধরা অসম্ভব। মৃত ব্যক্তির নামটা পরিসংখ্যানের বইয়ে জায়গা করে নেয়। কিন্তু এই ঘটনাটা অস্বাভাবিক। লোকটাকে ছুরি দিয়ে মারা হয়েছে–অদক্ষভাবে। তাকে যখন পাওয়া যায় তখনো সে জীবিত ছিল। মৃত্যুর আগে শুধু একটা কথাই বলে যেতে পেরেছে, তা হলো, ‘চীফ।

    “এটাই কৌতূহল জাগায় এবং তদন্ত করে লোকটার পরিচয় বের করা হয়। সে এ্যানিমোরিয়া সেক্টরে কাজ করত কিন্তু ওয়ি সেক্টরে কি করছিল তা জানা যায়নি। নাছোড়বান্দা একজন অফিসার তদন্তের মাধ্যমে বের করে যে সে ছিল পুরনো জোরানুমাইট। লাসকিন জোরানিউমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহকর্মী।”

    ভুরু কোঁচকালো রাইখ, “তোমার কি মনে হয় আরেকটা জোরানুমাইট ষড়যন্ত্র, বাবা? জোরানুমাইটদের আর কোনো অস্তিত্ব নেই।”

    “কিছুদিন আগে তোমার মাও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে জোরানুমাইটরা এখনো সক্রিয় কথাটা আমি বিশ্বাস করি কিনা। আমি জবাব দিয়েছিলাম যে এই ধরনের অদ্ভুত বিশ্বাসগুলো কখনো পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয় না। মাঝে মাঝে শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে থাকে। তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু থাকে না, বড়জোর ছোট একটা উপদল। যাই হোক, জোরামাইটদের একটা সংগঠন এখনো থাকতে পারে, তারা যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে, হয়তো একজন বিশ্বাসঘাতককে খুন করার ক্ষমতা তাদের আছে এবং হয়তোবা ক্ষমতা দখলের প্রাথমিক পরিকল্পনা হিসেবে এই অচলাবস্থাগুলো তারাই সৃষ্টি করছে।”

    “বাবা, তোমার বক্তব্যে অনেকগুলো বিরক্তিকর যদি’ আছে।”

    “জানি। আমার ভুলও হতে পারে। খুনটা হয়েছে ওয়িতে এবং এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়নি।”

    “তাতে কি প্রমাণ হয়?”

    “প্রমাণ করা যেতে পারে যে ষড়যন্ত্রকারীদের আস্তানা ওয়িতে এবং তারা নিজেদেরকে কোনো রকম অসুবিধায় ফেলতে চায় না। এটাও প্রমাণ হতে পারে যে জোরানুমাইটরা নয় আসলে ওয়ির শাসক পরিবার আবারো এম্পায়ারের শীর্ষ ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে।”

    “ওহ, বাবা, তুমি ছোট সূত্র থেকে অনেক বড় কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা করছ।”

    “জানি। ধরো এটা জোরানুমাইট ষড়যন্ত্র। জোরানিউমের ডান হাত ছিল গ্যাম্বল ডীন নামাত্রি। নামাত্রির মৃত্যুর কোনো খবর আমরা পাইনি, ট্র্যানটর ছেড়ে চলে গেছে এই তথ্যও পাইনি, গত দশ বছরে সে কোথায় কি করেছে তার কিছুই জানি ন। এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। চারশ কোটি মানুষের মাঝে হারিয়ে যাওয়া সহজ কাজ। একবার আমিও চেষ্টা করেছিলাম, অবশ্য নামাত্রি মারা যেতে পারে। সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা। কিন্তু মারা নাও তো যেতে পারে।”

    “এখন কি করতে চাও?”

    দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সেলডন। “সবচেয়ে ভালো হবে বিষয়টা নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে ছেড়ে দিলে, কিন্তু তা সম্ভব নয়। ডেমারজেলের ক্ষমতা আমার নেই। সে মানুষকে দিয়ে ইচ্ছামতো কাজ করিয়ে নিতে পারত, আমি পারি না। তার ব্যক্তিত্ব। ছিল অসাধারণ, আমি শুধু একজন গণিতবিদ। আমার ফার্স্ট মিনিস্টার হওয়া মোটেই উচিত হয়নি; আমি এর যোগ্য নই। হতে পারতামও না–যদি সম্রাট সাইকোহিস্টোরির উপর যা প্রাপ্য তার চেয়েও বেশী গুরুত্ব না দিতেন।”

    “নিজের উপর তুমি খানিকটা অবিচার করতাছ, তাই না, বাবা?”

    “হয়তো, কিন্তু আমি নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে গেলে কি হবে তার একটা পরিষ্কার ছবি মনের ভেতর তৈরি হয়ে আছে। যেমন ধরো, মানচিত্রে এইমাত্র তোমাকে যা দেখালাম”–ফাঁকা টেবিলের দিকে নির্দেশ করলেন তিনি–“গিয়ে বললাম যে আমরা একটা অজানা অচেনা বিপদের সম্মুখীন। ওরা মন দিয়ে আমার কথা শুনবে। আমি চলে আসার পর ‘পাগলা গণিতবিদ’কে নিয়ে হাসাহাসি করবে–তারপর কিছুই করবে না।”

    “তাহলে আমরা কি করব?” মূল প্রসঙ্গে ফিরে এল রাইখ।

    “তুমি করবে, রাইখ। আমার আরো প্রমাণ দরকার, সেটা তুমি এনে দেবে। তোমার মাকে পাঠাতে পারতাম, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আমাকে ফেলে সে যাবে না। আমিও এই মুহূর্তে প্যালেস গ্রাউণ্ড ছেড়ে যেতে পারব না। বাকী রইলে তুমি, যাকে আমি বিশ্বাস করতে পারি। সত্যি কথা বলতে কি ডর্স এবং নিজের চাইতেও বেশী বিশ্বাস করি। তুমি এখনো তরুণ, শক্তিশালী, আমার চেয়েও দক্ষ হ্যাঁলিকনিয়ান ট্যুইস্টার এবং তুমি বুদ্ধিমান।

    “তবে একটা কথা মনে রাখবে, আমি চাই না তুমি জীবনের ঝুঁকি নাও। নায়ক হওয়ার চেষ্টা করবে না, বেপরোয়া কাজ করবে না। খারাপ কিছু হয়ে গেলে তোমার মার সামনে আমি দাঁড়াতে পারব না। যা পার খুঁজে বের কর। হয়তো জানতে পারবে যে ওয়ির শাসক পরিবার এখনো ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে–অথবা তা নয়। তথ্যগুলোর যে কোনো একটাই যথেষ্ট কাজের–কিন্তু অপরিহার্য নয়। তোমার কাছে আমি যা চাই সেটা হলো জানার চেষ্টা কর আমার অনুমান সঠিক কিনা অর্থাৎ এই অচলাবস্থাগুলো মানুষের তৈরি কিনা। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা তোমাকে বের করে আনতে হবে সেটা হলো যদি এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়ে থাকে তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের পরিকল্পনা কি। আমার ধারণা তারা বড় ধরনের অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করবে। যদি তাই হয় সেটা কি ধরনের, কবে, কখন, কোথায় কিভাবে ঘটবে আমি জানতে চাই।”

    “কিভাবে শুরু করমু তোমার কোনো পরিকল্পনা আছে?” জিজ্ঞেস করল রাইখ।

    “অবশ্যই। আমি চাই কাসপাল কাসপালভ ওয়ির যে অঞ্চলে খুন হয়েছে তুমি সেখানে যাও। সম্ভব হলে জানার চেষ্টা কর লোকটা সক্রিয় জোরানুমাইট ছিল কিনা এবং তুমি নিজে জোরানুমাইটদের কোনো একটা দলে যোগ দিতে পারে কি না।”

    “পরের কাজটা হয়তো সহজেই হয়ে যাবে। আমি সবসময়ই ভান করি যে আমি একজন জোরানুমাইট ছিলাম। অবশ্য জোরানিউম যখন তার মতবাদ প্রচার করছিল তখন আমার বয়স আরো কম ছিল। কিন্তু আমি তার বক্তব্যে আকৃষ্ট হয়েছিলাম। এটা সত্যি কথা,”

    “হ্যাঁ, কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যাচ্ছ। সবাই তোমাকে চিনে ফেলবে। হাজার হোক, তুমি ফার্স্ট মিনিস্টারের ছেলে। যখন তখন হলোভশনে দেখানো হয়।

    প্রতি সেক্টরের সমান অধিকার নিয়ে তোমার ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে অনেক বার।”

    “নিশ্চয়, কিন্তু—”

    “কোনো কিন্তু নয়, রাইখ। উঁচু হিলের জুতা পড়লে তোমার উচ্চতা তিন সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে। একজন লোকের ব্যবস্থা করে দেব যে তোমাকে শিখিয়ে দেবে কিভাবে ভুরুর আকৃতি বদলাতে হয়, মুখ ভরাট রাখতে হয়, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করতে হয়।”

    হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গীতে কাঁধ নাড়ল রাইখ। “অযথা হাজার হাজার ঝামেলা পোহাতে হবে।”

    “এবং,” কণ্ঠে অদ্ভুত একটা কম্পন তুলে সেলডন বললেন, “তুমি গোঁফ ফেলে দেবে।”

    রাইখের চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল, আতংকিত হয়ে নিঃশব্দে বসে রইল অনেকক্ষণ। শেষ পর্যন্ত ফিসফিস কণ্ঠে বলল, “গোঁফ কামিয়ে ফেলতে হবে?”

    “একেবারে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। গোঁফ ছাড়া তোমাকে কেউ চিনবে না।”

    “অসম্ভব। গোঁফ ফেলে দেয়া মানে–মানে–পুরুষত্বহীন হয়ে যাওয়া।”

    হতাশ ভঙ্গীতে মাথা নাড়লেন সেলডন। “এটা শুধু একটা সামাজিক বিশ্বাস। ইউগো এমারিল একজন ডালাইট কিন্তু তার গোঁফ নেই।”

    “ইউগো একটা পাগল। গণিত ছাড়া কিছু বোঝে না। সে বেঁচে আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়।”

    “সে গণিতবিদ হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠদের একজন এবং তার গোঁফহীনতা তাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে নি। আর এটা পুরুষত্বহীনতা নয়। দুই সপ্তাহের ভেতরেই আবার গোঁফ গজাবে।”

    “দুই সপ্তাহ! দুই বছর লাগবে এই–এই–“ হাত দিয়ে মুখ আড়াল করল যেন সাধের গোঁফ রক্ষা করতে চায়।

    নরম হলেন না সেলডন। “রাইখ, এই আত্মত্যাগ তোমাকে করতেই হবে। গোঁফ সহ আমার গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে গেলে তোমার বিপদ হতে পারে। সেই ঝুঁকি আমি নিতে পারব না।”

    “বরং জান দিয়ে দেব,” হিংস্র কণ্ঠে বলল রাইখ।

    “নাটক করো না,” কঠিন সুরে বললেন সেলডন। “তুমি জান দেবে না বরং গোঁফ কামাবে। যাইহোক-” একটু ইতস্ততঃ করলেন–“তোমার মাকে এই ব্যাপারে কিছু বলার দরকার নেই। যা বলার আমি বলব।”

    হতাশ হয়ে বাবার দিকে তাকালো রাইখ, তারপর গোমড়া মুখে বলল, “ঠিক আছে, বাবা।”

    “তোমাকে সাহায্য করার জন্য একজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওয়িতে যাবে এয়ার জেটে করে। পাছা তোল, রাইখ, এখনো কেয়ামত আসে নি।”

    নিস্তেজভাবে হাসল রাইখ, একরাশ দুঃশ্চিন্তা নিয়ে তার চলে যাওয়া দেখলেন সেলডন। গোঁফ ফেলে দিলে আবার গজাবে কিন্তু ছেলে হারালে আর পাবেন না। সেলডন খুব ভালো করেই জানেন যে রাইখকে তিনি ভয়ানক বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।

    .

    ৯.

    আমাদের সবারই ছোট বড় কল্পনা আছে আর ক্লীয়ন–গ্যালাক্সির সম্রাট, ট্রানটরের রাজা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এগুলো সহ আরো অসংখ্য উপাধি তার নামের সাথে সুর করে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করা হয়–দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে তিনি গণতান্ত্রিক মনের মানুষ।

    ব্যাপারটা তাকে প্রায়ই রাগিয়ে তোলে যখন কোনো একটা কাজ করতে গেলেই ডেমারজেল (অথবা সেলডন) তাকে এই বলে বাধা দেয় যে কাজটা হবে “স্বৈরাচারী” অথবা “রক্তলোলুপ” আচরণ।

    ক্লীয়ন মোটেই স্বৈরাচারী বা রক্তলোপ নন, এই ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত; তিনি শুধু দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে চান।

    তিনি প্রায়ই সেইসব দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেন যখন সম্রাটরা তাদের প্রজাদের সাথে খুব সহজেই মিশতে পারতেন। কিন্তু এখন সহিংস উপায়ে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা আর গুপ্তহত্যা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রয়োজনের খাতিরেই সম্রাটকে বাকী বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়।

    এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে যে ক্লীয়ন, যে ব্যক্তি কোনোদিনই কড়া আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া মানুষের সাথে দেখা করেন নি, অপরিচিত মানুষের সাথে হঠাৎ কথা বলার সময় স্বস্তি বোধ করতে পারবেন, কিন্তু তিনি সবসময়ই কল্পনা করেন যে বিষয়টা তার জন্য উপভোগ্য হবে। আর তাই গ্রাউঞ্জে নিচু শ্রেণীর একজন কর্মচারীর সাথে কথা বলার দুর্লভ সুযোগ পেয়ে তিনি ভীষণ উচ্ছ্বসিত হলেন। তিনি মনে করেন খানিকক্ষণের জন্য ইম্পেরিয়াল নিয়ম কানুন ঝেড়ে ফেলে একজন সাধারণ মানুষ হয়ে যেতে পারাটা অনেক বেশী গণতান্ত্রিক।

    সেলডন যে গার্ডেনারের কথা বলেছে, একটু দেরী করে হলেও তার সাহসিকতা ও আনুগত্যের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা উচিত এবং কাজটা অধীনস্তদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে নিজের হাতে করাতে আরো বেশী আনন্দ পাচ্ছেন তিনি।

    চমৎকার একটা গোলাপ বাগানে গার্ডেনারের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে বললেন। সেটাই ভালো হবে, ক্লীয়ন মনে করেন, কিন্তু অবশ্যই গার্ডেনারকে আগে নিয়ে আসতে হবে। সম্রাটকে অপেক্ষা করিয়ে রাখা অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার। একদিক দিয়ে তিনি গণতান্ত্রিক আবার অন্যদিকে নিজের অসুবিধাও করতে চান না।

    একরাশ প্রস্ফুটিত গোলাপের মাঝে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিল গার্ডেনার, দৃষ্টি বিস্ফারিত, ঠোঁট কাঁপছে, ক্লীয়ন ধরে নিলেন আজকের সাক্ষাতের কারণ কেউ তাকে জানায়নি। বেশ, তিনি তাকে সহৃদয় ব্যবহার দ্বারা আশ্বস্ত করতে পারবেন। শুধু একটাই সমস্যা, লোকটার নাম ভুলে গেছেন।

    পাশে দাঁড়ানো অফিসারকে জিজ্ঞেস করলেন, “গার্ডেনারের নাম কি?”

    “সায়ার, ম্যান্ডেল গ্রুবার। ত্রিশ বছর ধরে গার্ডেনারের দায়িত্ব পালন করছে।”

    মাথা নেড়ে সম্রাট বললেন, “আহ্, গ্রুবার। সৎ এবং পরিশ্রমী একজন গার্ডেনারের দেখা পেয়ে আমি ভীষণ খুশী হয়েছি।”

    “সায়ার,” তোতলাচ্ছে গ্রুবার, দাঁতে দাঁতে বাড়ি খেয়ে ঠক ঠক শব্দ হচ্ছে। “আমি নিতান্তই সাধারণ মানুষ, তবে মহানুভবের সন্তুষ্টির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”

    “নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই,” সম্রাট ঠিক বুঝতে পারছেন না সামনে দাঁড়ানো লোকটা তাকে সার্কাসের ভার মনে করছে কিনা। নিচু শ্রেণীর এই মানুষগুলোর আসলে সূক্ষ্ম ও পরিমার্জিত রুচিবোধ নেই। পরিশীলিত মার্জিত আচরণই রুচিবোধ গড়ে তোলে, অবশ্য এটাই আবার গণতান্ত্রিক চর্চা কঠিন করে তোলে।

    ক্লীয়ন বললেন, “আমার ফাস্ট মিনিস্টারের কাছে শুনেছি তোমার আনুগত্য এবং সাহসিকতার কথা, আরো শুনেছি যে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত তুমি এই বাগানটাকে সাজিয়ে তুলেছ। ফার্স্ট মিনিস্টার আমাকে বলেছেন যে তোমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু।”

    “সায়ার, ফাস্ট মিনিস্টার আমার উপর অনেক বেশী সদয়, কিন্তু আমার অবস্থান। জানি। তিনি নিজে থেকে কিছু না বললে আমি কখনো আগ বাড়িয়ে কথা বলিনি।”

    “চমৎকার, গ্রুবার। এটা তোমার মার্জিত রুচির পরিচয় বহন করে। কিন্তু ফার্স্ট মিনিস্টার, আমার মতোই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং মানুষের ব্যাপারে তার বিচার বিশ্লেষণের উপর আমি আস্থা রাখি।”

    গ্রুবার কুর্নিশ করল।

    সম্রাট বললেন, “তুমি জানো, গ্রুবার, চীফ গার্ডেনারের বয়স হয়েছে এবং অবসর নেয়ার কথা ভাবছেন। দায়িত্বের বোঝা তার জন্য বেশী হয়ে গেছে।”

    “সায়ার, চীফ গার্ডেনারকে আমরা সকলেই অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। আশা করি তিনি আরো দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে যাবেন যেন আমরা গার্ডেনাররা তার অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের দ্বারা উপকৃত হতে পারি।”

    “চমৎকার বলেছ, গ্রুবার,” নিরাসক্ত ভঙ্গীতে বললেন সম্রাট, “কিন্তু তুমি ভালো করেই জানো এগুলো সব অর্থহীন কথা। তিনি আর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন

    , অন্তত এই পদের জন্য যে সামর্থ্য আর মানসিক ক্ষিপ্রতা প্রয়োজন সেটা তার নেই। তিনি নিজেই অবসরে যাওয়ার আবেদন করেছেন এবং আমিও তা মঞ্জুর। করেছি। এখন তার যোগ্য উত্তরসূরি নির্বাচন করা প্রয়োজন।”

    “ওহ, সায়ার, এই সুবিশাল বাগানে কমপক্ষে পঞ্চাশজন নারী পুরুষ রয়েছে যারা প্রত্যেকেই চীফ গার্ডেনার হওয়ার যোগ্য।”

    “হয়তোবা আছে,” সম্রাট বললেন, “কিন্তু আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি তুমি।” উদার ভঙ্গীতে হাসলেন সম্রাট। এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তিনি। গ্রুবার এখনই হাঁটু গেড়ে এই দুর্লভ সৌভাগ্যের জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।

    কিন্তু তেমন কিছুই হলো না আর সম্রাট ভুরু কুঁচকালেন। গ্রুবার বলল, “সায়ার, এই সম্মান আমার জন্য অনেক বেশী হয়ে যায়–আমি এর যোগ্য নই।”

    “বোকা,” তার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে খানিকটা রেগে গেলেন ক্লীয়ন। “তোমার যোগ্যতা বুঝতে সময় লেগেছে। কিন্তু এখন আর তোমাকে সারাবছর বাইরের নগ্ন আবহাওয়ায় কষ্ট করতে হবে না। চীফ গার্ডেনারের অফিসটা তোমাকে দেয়া হবে, চমৎকার অফিস, তোমার জন্য নতুন করে সাজিয়ে দেব, এবং তুমি তোমার পরিবার নিয়ে ওখানে থাকতে পারবে। তোমার পরিবার আছে, তাই না, গ্রুবার?”

    “জ্বী, সায়ার। স্ত্রী, দুই মেয়ে। আর বড় মেয়ের জামাই।”

    “খুব ভালো। তুমি আরামে থাকতে পারবে এবং নতুন জীবনটা উপভোগ করবে, গ্রুবার। তুমি ভেতরে থাকবে, গ্রুবার, নগ্ন আবহাওয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে, সত্যিকার একজন ট্র্যানটরিয়ানের মতো।”

    “সায়ার, আমি বেড়ে উঠেছি এ্যানাক্রনে, ভেবে দেখুন

    “ভেবে দেখেছি, গ্রুবার। সম্রাটের কাছে প্রতিটি বিশ্বই সমান। আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এই সম্মান তোমার প্রাপ্য।”

    মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেলেন ক্লীয়ন। উদারতার এই প্রদর্শনী করতে পেরে ভীষণ খুশি। অবশ্য লোকটার কাছ থেকে আরো বেশী কৃতজ্ঞতা এবং প্রশংসা আশা। করেছিলেন, তবে যাই হোক কাজটা তিনি করতে পেরেছেন।

    এবং গ্রহের স্থাপনাগুলোতে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে সেটা সামলানোর চেয়ে এই কাজটা অনেক সহজভাবে হয়েছে।

    ক্লীয়ন ঘোষণা করেছিলেন যে এই ঘটনাগুলোর পিছনে দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেলে তার অপরাধ প্রমাণিত হোক বা না হোক তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।

    “মাত্র দুই তিনটা কঠিন শাস্তি, ক্লীয়ন বলেছিলেন, “দেখবে সবাই কেমন সোজা হয়ে যায়।”

    “আমার মতে, সায়ার,” সেলডন বলেছিলেন, “এধরনের কঠোর আচরণ আপনার মনোবাসনা পূর্ণ করবে না। এর ফলে শ্রমিকরা ধর্মঘট করবে–আপনি যদি বল প্রয়োগ করে তাদেরকে কাজে ফিরে যেতে বাধ্য করেন, তখন বিদ্রোহ দেখা। দেবে–আর আপনি যদি শ্রমিকদের স্থলে সৈনিকদের দিয়ে কাজ করাতে চান তখন দেখবেন যে সৈনিকরা জানেই না যন্ত্রপাতিগুলো কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ফলে সবকিছু আরো দ্রুত অচল হয়ে পড়বে।”

    কাজেই ক্লীয়ন স্বাধীনভাবে চীফ গার্ডেনার নিয়োগ করতে পেরে যে খুশি হয়েছেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

    আর গ্রুবার অপসৃয়মান সম্রাটের দিকে সীমাহীন এক ঠাণ্ডা আতংক নিয়ে তাকিয়ে আছে। মুক্ত বায়ু সেবন করার অধিকার তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে, বন্দী হতে যাচ্ছে চার দেয়ালে। কিন্তু সম্রাটকে প্রত্যাখ্যান করবে কেমন করে?

    .

    ১০.

    ওয়ির জরাজীর্ণ এক হোটেলে উঠেছে রাইখ, উদ্দেশ্য নিজেকে হতদরিদ্র প্রমাণ করা। আয়নার দিকে তাকাল সে। যা দেখল সেটা তার ভালো লাগল না। পরিষ্কার করে গোঁফ কামানো; জুলফি কেটে ছোট করে ফেলা হয়েছে; মাথার চুল পাশে এবং পিছনে ক্লিপ দিয়ে আটকানো।

    তাকে দেখাচ্ছে–অদ্ভুত।

    সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার। খানিক পরিবর্তনের কারণে তার চেহারাটা হয়ে উঠেছে আরো বালক সুলভ।

    জঘন্য।

    তাছাড়া কাজেরও কোনো অগ্রগতি হয় নি। সেলডন তাকে কাসপাল কাসপালভের খুনের তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছিলেন, পুরোটাই স্টাডি করেছে সে। বেশী তথ্য পায় নি। শুধু এইটুকুই যে কাসপালভ খুন হয়েছে এবং স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মীরা এই খুনের ব্যাপারে কাজে লাগানোর মতো কোনো তথ্য পায়নি। পরিষ্কার বোঝা। যায় যে নিরাপত্তা কর্মীরা এই খুনের ব্যাপারে সামান্য বা একেবারেই গুরুত্ব দেয় নি।

    অবাক হওয়ার কিছু নেই। গত শতাব্দী থেকেই অধিকাংশ বিশ্বে অপরাধের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। নিরাপত্তাকর্মীরা কোথাও সফল হতে পারছে না। সবচেয়ে বড় কথা প্রায় সবখানেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংখ্যা এবং দক্ষতায় কমাতে হয়েছে এবং (যদিও প্রমাণ করা কঠিন) আরো বেশী দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ জীবন যাত্রার ব্যয়ের সাথে তাদের স্বল্প বেতন তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। প্রশাসনে নিযুক্ত কর্মচারীদের সততা বজায় রাখতে হলে তাদেরকে পর্যাপ্ত বেতন দিতে হবে। তা না করতে পারলে কর্মচারীরা উপার্জনের অবৈধ উপায় খুঁজে নেবেই।

    গত কয়েক বছর ধরেই সেলডন এই বিষয়ে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো লাভ হয় নি। কর না বাড়িয়ে মজুরী বাড়ানোর বিকল্প উপায় নেই আর জনগণ কর বৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজী নয়।

    এগুলো সবই (সেলডন বলেছিলেন) ইম্পেরিয়াল সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয়ের লক্ষণ যা গত দুই শতাব্দী ধরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

    বেশ, রাইখ কি করতে পারে? সে যে হোটেলে উঠেছে খুন হওয়ার ঠিক আগের দিন কাসপালভ এখানেই ছিল। হোটেলের কোথাও কেউ একজন আছে যে এই ঘটনার সাথে জড়িত অথবা জড়িত ব্যক্তিকে সে চেনে।

    রাইখের মনে হচ্ছে নিজের গতিবিধি সন্দেহজনক করে তোলা দরকার। কাসপালরে মৃত্যুর ব্যাপারে তার আগ্রহ প্রকাশ করা উচিত, ফলে কেউ একজন তার। প্রতি আগ্রহী হবে, তাকে ধরে নিয়ে যাবে। বিপদ হতে পারে, কিন্তু সে যদি নিজেকে বোকা প্রমান করতে পারে তাহলে হয়তো সাথে সাথে কোনো ক্ষতি করবে না।

    তো— নিচের বারে, হয়তো সবাই ডিনার পূর্ববর্তী পানউৎসবে মেতে আছে। সেও তাদের সাথে যোগ দিয়ে কিছু ঘটার অপেক্ষা করতে পারে–যদি আদৌ কিছু ঘটে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ
    Next Article সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন্স এজ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    প্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন -আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.