Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফাউণ্ডেশন্স এজ – আইজাক আসিমভ

    নাজমুছ ছাকিব এক পাতা গল্প463 Mins Read0

    ৮. পেলোরেটের নির্বিকার মুখ

    ৭১.

    পেলোরেটের নির্বিকার মুখ বোকার মতো হয়ে গেছে। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল, তুমি মানুষ?

    মেয়েটা ভুরু উঁচু করে ঠোঁট ফাঁক করল। আচরণ দেখে বোঝার উপায় নেই সে ভাষা বুঝেছে কি না নাকি ভাষা বুঝেছে কিন্তু প্রশ্ন শুনে অবাক হয়েছে।

    ডানদিকে হাত বাড়িয়ে স্যুট এর একটা অংশ সে খুলে ফেলল। তারপর বেরিয়ে এল। ভিতরের উপাদান ছাড়াই স্পেস স্যুট স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর মৃদু শব্দ করে ঠিক মানুষের মতো এলিয়ে পড়ল।

    এখন আরো কম বয়স্ক মনে হচ্ছে। অস্বচ্ছ আলোকভেদী ঢোলা পোশাক। ভিতরের ছোট অংশগুলো ছায়ার মতো দেখা যাচ্ছে। পোশাকের নিচের অংশ পৌঁছেছে হাঁটু পর্যন্ত।

    ছোট বুক, চিকন কোমর, গোলাকার হিপ। সুগঠিত থাই, লম্বা পা দুটো চমৎকার গোড়ালীতে গিয়ে মিশেছে। কাঁধ পর্যন্ত লম্বা কালো চুল, বড় বড় দুটো বাদামী চোখ। পরিপূর্ণ ঠোঁট। সব মিলিয়ে অসাধারণ।

    একবার নিজের দিকে তাকিয়ে মেয়েটা ভাষা সমস্যার সমাধান করল, আমাকে মানুষ মনে হচ্ছে না?

    একটু জড়ানো হলেও চমৎকার গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ডে কথা বলে। পরিষ্কার উচ্চারণের জন্য প্রতিটা শব্দ জোর দিয়ে বলে।

    পেলোরেট মাথা নেড়ে হেসে বলল, অস্বীকার করতে পারব না। আসলেই মানুষ। চমৎকার মানুষ।

    তরুণী এমনভাবে হাত বাড়িয়ে দিল যেন আরো কাছ থেকে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ দিচ্ছে। আমিও তাই আশা করি, জেন্টলম্যান। পুরুষরা এই শরীরের জন্য মারা যায়।

    আমি বরং এটার জন্য বেঁচে থাকব, পেলোরেট বলল, নিজের স্তুতিবাক্য শুনে নিজেই অবাক হচ্ছে।

    চমৎকার নির্বাচন, তরুণী গম্ভীর গলায় বলল। একবার এই দেহ পাওয়ার পর সব দীর্ঘশ্বাস পরমানন্দের দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়। হেসে ফেলল, সাথে সাথে পেলোরেটও হাসল।

    ট্র্যাভিজ বিরক্ত হয়ে পড়েছে এ ধরনের কথাবার্তা শুনে। বেরসিকের মতো বাধা দিল। তোমার বয়স কত?

    তেইশ, জেন্টলম্যান। তরুণী একটু লজ্জা পেয়েছে।

    এখানে কেন এসেছ? কি উদ্দেশ্যে?

    আমি এসেছি তোমাদের গায়ায় নিয়ে যেতে। তার গ্যালাকটিক শব্দগুলো একটু বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। এসেছি কে বলল এইসেছি, গায়াকে বলল গেইয়াহ্।

    একটা মেয়ে এসেছে আমাদের নেয়ার জন্য।

    আমি হচ্ছি গায়া। সেই সাথে অন্যরা। স্টেশনে এটাই আমার সীমিত দায়িত্ব।

    তোমার সীমিত দায়িত্ব? তুমি একাই এসেছ?

    শুধু আমাকেই প্রয়োজন।

    এখন সেটা খালি?

    আমি এখন সেখানে নেই, জেন্টলম্যান, কিন্তু সে খালি না। সে ওখানে আছে।

    সে? কি বোঝাচ্ছ?

    স্টেশন। সেই গায়া। আমাকে তার প্রয়োজন নেই। সেই তোমাদের মহাকাশযান ধরে রেখেছে।

    তাহলে তুমি স্টেশনে কি কর?

    এটা আমার সীমিত দায়িত্ব।

    পেলোরেট ট্র্যাভিজের হাত ধরে টান দিল। গোলান, তাগাদা দেয়ার ভঙ্গিতে সে বলল ফিসফিস করে, ওর সাথে এভাবে চিৎকার করে কথা বলোনা। একটা মেয়ে। আমাকে সামলাতে দাও।

    ট্র্যাভিজ রাগের সাথে মাথা নাড়ল, কিন্তু পেলোরেট তাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে নিজেই কথা বলল, ইয়ং ওম্যান, তোমার নাম কি?

    হঠাৎ নরম সুর শুনে মেয়েটা হাসল চমৎকারভাবে। ব্লিস।

    ব্লিস? সুন্দর নাম। নিশ্চয়ই এটাই সব না।

    অবশ্যই না। একটা অংশ বললে সুবিধা হয়। ব্লিসেনোবিয়ারেলা আমার পুরো নাম।

    অনেক বড় নাম।

    কি? সাতটা অংশ? যথেষ্ট না। আমার অনেক বন্ধুর নামের পনেরটা অংশ রয়েছে। পনের বছর বয়স থেকে আমাকে ব্লিস ডাকা হয়। তার আগে মা ডাকত। ন্যাবি বলে।

    গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ডে ব্লিস অর্থ পরমানন্দ বা অধিক সুখ।

    গায়ান ভাষাতেও তাই। স্ট্যান্ডার্ডের সাথে খুব বেশি পার্থক্য নেই এবং আমি পরমানন্দ ছড়িয়ে দিতে চাই।

    আমার নাম জেনভ পেলোরেট।

    জানি, আর এই ভদ্রলোক এই গলাবাজ লোকটার নাম গোলান ট্র্যাভিজ। আমরা সেশেল থেকে খবর পেয়েছি।

    চোখ ছোট করে ট্র্যাভিজ সাথে সাথে জিজ্ঞেস করল, তুমি কিভাবে খবর পেয়েছ?

    ব্লিস তার দিকে ঘুরে ঠাণ্ডা গলায় বলল, আমি পাইনি। গায়া পেয়েছে।

    মিস. ব্লিস, আমি আর আমার সঙ্গী কিছুক্ষণ একা কথা বলতে পারি? পেলোরেট বলল।

    হ্যাঁ, অবশ্যই, কিন্তু তাড়াতাড়ি করতে হবে।

    বেশি সময় লাগবে না। জোর করে টেনে সে ট্র্যাভিজকে নিয়ে গেল পাশের ঘরে।

    কি ব্যাপার? ফিসফিস করে বলল ট্র্যাভিজ। আমি নিশ্চিত সে আমাদের কথা শুনতে পারবে। হয়তো আমাদের মাইন্ড পড়তে পারছে।

    পারুক আর না পারুক, মানসিকভাবে আমাদের একটু একা থাকা দরকার। দেখ, ওল্ড চ্যাপ, ওকে ছেড়ে দাও। আমাদের কিছু করার নেই। মেয়েটা শুধু সংবাদবাহক। আসলে ওর কারণেই আমরা এখনো নিরাপদ। এই মহাকাশযান ধ্বংস করে ফেলার ইচ্ছা থাকলে তাকে ওরা পাঠাতো না। কিন্তু বেশি হুমকি-ধামকি। করলে মেয়েটাকে সরিয়ে নিয়ে ওরা আমাদের ধ্বংস করে দেবে।

    অসহায় অবস্থায় থাকতে আমার ভালো লাগেনা, ট্র্যাভিজ গজগজ করে বলল।

    কার ভালো লাগে? কিন্তু তর্জনগর্জন করে কোনো লাভ হবে না। বরং আরো অসহায় হয়ে পড়ব। কিন্তু মেয়েটাকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই।

    জেনভ, সে তোমার সবচেয়ে ছোট মেয়ের বয়সী।

    পেলোরেট সরাসরি বলল, ভালো আচরণ করার সবচেয়ে বড় কারণ। তোমার। কথার অর্থ আমি বুঝতে পেরেছি।

    একমুহূর্ত চিন্তা করে ট্র্যাভিজ বলল, বেশ, তোমার কথাই ঠিক। আমি ভুল করেছি। কিন্তু ওরা একজন সামরিক অফিসারকে পাঠাতে পারত, আমাদেরকে আরেকটু গুরুত্ব দিতে পারত। তা না করে পাঠিয়েছে একটা মেয়েকে। আর সে সমস্ত দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে গায়ার উপর।

    হয়তো সে শাসকের কথা বলছে যে গ্রহের নাম উপাধি হিসেবে গ্রহণ করে–অথবা প্ল্যানেটারি কাউন্সিলের কথা বলছে। আমরা জেনে নেব। তবে সরাসরি কোনো প্রশ্ন নয়।

    পুরুষরা তার শরীরের জন্য মারা যায়! হাহ!–পিছন দিকটা ভারী!

    সে জন্য তোমাকে কেউ মরতে বলছে না, গোলান, পেলোরেট দ্র গলায় বলল। শোন। নিজেকে নিয়ে তাকে তামাশা করতে দাও। আমার বেশ ভালো লাগছে।

    ব্লিস কম্পিউটারের উপর ঝুঁকে যন্ত্রাংশগুলো দেখছিল, হাতদুটো পিছনে। যেন কোনো কিছু ধরতে ভয় পাচ্ছে। দুজন ভিতরে ঢুকতেই চোখ তুলল সে। অদ্ভুত যান। কোনোকিছুই আমি চিনতে পারছি না। তবে আমাকে কোনো উপহার দিতে চাইলে এটা চমৎকার একটা উপহার।

    তার মুখে গভীর কৌতূহলের ছাপ পড়ল, তোমরা আসলেই ফাউণ্ডেশন থেকে এসেছ?

    ফাউণ্ডেশনের কথা কিভাবে জানলে? জিজ্ঞেস করল পেলোরেট।

    স্কুলে শিখেছি। বিশেষ করে মিউলের জন্য।

    মিউলের জন্য কেন, ব্লিস?

    সে ছিল আমাদেরই একজন, জেন্টল নামের কোনো অংশ ব্যবহার করব, জেন্টলম্যান?

    জেন অথবা পেল। যেটা তোমার ভালো লাগে।

    সে আমাদেরই একজন, পেল, ব্লিস আন্তরিক হেসে বলল। সে জন্মেছিল গায়ায়, তবে ঠিক কোনখানে কেউ বলতে পারে না।

    নিশ্চয়ই সে একজন গায়ান হিরো, ব্লিস, তাই না? ট্র্যাভিজ বলল। চেষ্টা করছে ভদ্র আচরণ করার। আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে একবার পেলোরেট-এর দিকে তাকালো। আমাকে ট্রাভ ডাকতে পারো।

    না, ট্রাভ। সে একজন অপরাধী। অনুমতি ছাড়াই গায়া ত্যাগ করেছিল। বলতে পারব না কিভাবে করেছিল। আমার অনুমান এই কারণেই তার শেষ পরিণতি ভালো হয়নি। ফাউণ্ডেশন তাকে পরাজিত করেছিল।

    দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন?

    আরো আছে? একটু চিন্তা করলেই হয়তো বুঝতে পারতাম। কিন্তু ইতিহাস আমার ভালো লাগে না। ব্যাপারটা এরকম গায়া যা ভাবে সেটা নিয়েই আমার আগ্রহ। ইতিহাস না জানার অর্থ হচ্ছে আরো অনেক ইতিহাসবিদ রয়েছে বা আমি এই কাজের উপযুক্ত নই। আমাকে হয়তো স্পেস টেকনিশিয়ান হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সীমিত দায়িত্ব পালন করে যাবো। কাজটা আমার ভালো লাগে এবং ভালো না লাগার কারণ

    মেয়েটা নিঃশ্বাস না ফেলেই কথা বলছে, ট্র্যাভিজ অনেক কসরত করে মাঝখানে একটা প্রশ্ন করল, গায়া কে?

    দ্বিধায় পড়ে গেল ব্লিস। শুধুই গায়া।-আর না। আমাদের সারফেসে নামতে হবে।

    সেদিকেই যাচ্ছি, তাই না?

    হা, কিন্তু ধীরে ধীরে। গায়া মনে করে তোমাদের মহাকাশযানের শক্তি ব্যবহার করে আরো দ্রুত নামা সম্ভব। তুমি সেটা ব্যবহার করবে?

    করতে পারি, ট্র্যাভিজ হাসি মুখে বলল। কিন্তু মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়ে আমি অন্যদিকে চলে যেতে পারি?

    ব্লিস হাসল। তুমি বেশ মজার লোক। গায়া না চাইলে তুমি কোনোদিকেই যেতে পারবে না। কিন্তু গায়া যেদিকে চায় সেদিকে তুমি দ্রুত এগোতে পারবে। চেষ্টা করে দেখ।

    দেখা যাক। সারফেসে আমরা কোথায় নামব?

    সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি শুধু নেমে যাও, ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে। গায়া সব নিয়ন্ত্রণ করবে।

    তুমি আমাদের সাথে থাকবে, ব্লিস, যেন আমরা ভালো আচরণ পাই? পেলোরেট বলল।

    মনে হয় থাকব। এখন দেখা যাক, আমার সেবার স্বাভাবিক ফি–অর্থাৎ এই সেবাগুলোর ফি–সরাসরি আমার ব্যালেন্স-কার্ডে দিয়ে দিতে পারো।

    আর অন্য সেবাগুলো?

    ব্লিস খিল খিল করে হেসে উঠল। তুমি চমৎকার বুড়ো মানুষ।

    লজ্জা পেল পেলোরেট।

    .

    ৭২.

    মহাকাশযান তীব্র গতিতে গায়ার দিকে নামছে। ব্লিস বেশ উত্তেজিত। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

    এটা গ্র্যাভিটিক, পেলোরেট বলল। সবকিছুর ভেতর একসাথে গতির সঞ্চার হয়। আমাদের ভেতরও। তাই বোঝা যায় না।

    কিভাবে কাজ করে, পেল?

    পেলোরেট কাঁধ নাড়ল। ট্রাভ জানে। কিন্তু ওর বোধহয় এখন কথা বলার মুড নেই।

    ট্র্যাভিজ বেপরোয়া গতিতে গায়ার মাধ্যাকর্ষণে নেমে এসেছে। কম্পিউটার তার নির্দেশ মানছে। কিন্তু ব্লিস এর কথা অনুযায়ী আংশিক। উপরে উঠার যে কোনো নির্দেশ অগ্রাহ্য করছে।

    পুরো নিয়ন্ত্রণ এখনো পায়নি।

    পেলোরেট হালকা গলায় বলল, আমরা খুব দ্রুত নিচে নামছি না, গোলান?

    ট্র্যাভিজ চেষ্টাকৃত সহজ গলায় বলল, ইয়ং লেডী বলেছে গায়া সব নিয়ন্ত্রণ করবে।

    নিশ্চয়ই, পেল। গায়া এই মহাকাশযানকে বিপজ্জনক কিছু করতে দেবে না। তোমাদের কাছে খাওয়ার কিছু আছে?

    নিশ্চয়ই। কি খাবে?

    মাংস বাদ। মাছ বা ডিম খেতে পারি, সাথে যদি কানো সজী থাকে।

    সেশেলিয়ান কিছু খাবার আছে। কি জিনিস বলতে পারব না। তোমার ভালো লাগতে পারে।

    বেশ, খেয়ে দেখা যাক। ব্লিস হাসিমুখে বলল।

    গায়ার সবাই কি নিরামিষভোজী?

    অধিকাংশই। ব্যাপারটা নির্ভর করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শরীরে কি ধরনের খাদ্য প্রয়োজন। বহুদিন থেকে আমার মাংস খাওয়ার ইচ্ছে হয় না, তাই ধরে নিয়েছি শরীরে মাংসের প্রয়োজন নেই। মিষ্টি খেতে ভালো লাগে না। পনির আর চিংড়ি মাছ ভালো লাগে। আমার বোধহয় ওজন কমানো দরকার।

    দরকার নেই। তোমাকে ভালোই লাগছে।

    ওহ্, কোনো ব্যাপার না। ওজন বারুক বা কমুক, আমাকে ভাবতে হবে না।

    ট্র্যাভিজ চুপচাপ। কারণ ফার স্টারকে সে সামলাতে পারছেনা। ধীরে ধীরে। যানটা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন বাইরে থেকে কেউ গ্র্যাভিটিক ইঞ্জিন চালাচ্ছে। ফার স্টার এখন চলছে নিজে নিজেই।

    ব্লিস সাবধানে ধোয়া ওঠা কৌটোর গন্ধ শুকল। ঠিকই আছে, পেল। নইলে গন্ধটা ভালো হত না, আর আমিও খেতে চাইতাম না। আঙ্গুল দিয়ে খাবার বের করে মুখে দিল, চমৎকার।

    শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে ট্র্যাভিজ কম্পিউটার ছেড়ে দিল। ইয়ং ওম্যান, এমনভাবে বলল যেন এই প্রথম তাকে দেখছে।

    আমার নাম ব্লিস।

    ব্লিস! তুমি আমাদের নাম জানো?

    জানি, ট্রাভ।

    কিভাবে জানো?

    আমার কাজের জন্য তোমাদের নাম জানা জরুরী হয়ে পড়েছিল। তাই জানি।

    মান-লী-কম্পরকে চেন?

    চিনতাম–যদি তাকে চেনা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতো। যেহেতু চিনিনা, মি. কম্পর এখানে আসছে না। আসলে তোমরা দুজন ছাড়া আর কেউ আসবে না।

    দেখা যাবে।

    ট্র্যাভিজ নিচে তাকালো। মেঘাচ্ছন্ন গ্রহ। তবে গভীর কোনো মেঘস্তর নেই। ঘনভাবে ছড়ানো আছে পাতলা মেঘের স্তর, ভূ-পৃষ্ঠের মাঝখানে বাধার সৃষ্টি করেছে।

    মাইক্রোওয়েভ আর রাডার চালু করল সে। ভূ-পৃষ্ঠও আকাশের হুবহু প্রতিচ্ছবি। দ্বীপ প্রধান গ্রহ–টার্মিনাসের মতো। দ্বীপগুলোর কোনোটাই খুব বড় না এবং পরস্পরের কাছ থেকে বেশি দূরেও না। কোনো আইসক্যাপ চোখে পড়ছে না।

    জনসংখ্যার অসম বণ্টনেরও কোনো চিহ্ন নেই, রাতের অংশের আলোকসজ্জা। থেকে সেটা বোঝা যেত।

    আমরা কি রাজধানী দ্বীপের কাছাকাছি নামব, ব্লিস? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।

    ব্লিস নিরাসক্ত গলায় বলল, গায়া তোমাকে সুবিধামতো জায়গায় নামিয়ে নেবে।

    আমার বড় শহর পছন্দ।

    অর্থাৎ যেখানে মানুষের বড় দল বাস করে?

    হ্যাঁ।

    গায়ার ব্যাপার।

    ট্র্যাভিজ ভেবে বের করার চেষ্টা করল কোন দ্বীপে তারা নামবে। যেখানেই হোক,আর একঘণ্টার মধ্যেই নামবে।

    .

    ৭৩.

    হালকা একটা পালকের মতো মহাকাশযান অবতরণ করল। কোনো ঝাকুনী নেই, মধ্যাকর্ষণের টান নেই। একে একে তিনজন বেরিয়ে এল: প্রথমে ব্লিস, তারপর পেলোরেট, সবার শেষে ট্র্যাভিজ।

    টার্মিনাসের গ্রীষ্মকালের সাথে এখানকার আবহাওয়ার তুলনা করা যায়। হালকা বাতাস বইছে। সূর্যের আলো বেশ উজ্জ্বল। পায়ের নিচে মাটি সবুজ। একদিকে সারিবদ্ধ গাছ দেখে বোঝা যায় কোন ধরনের বাগান, অন্যদিকে দূরে দেখা যাচ্ছে। সমুদ্র সৈকত।

    এক পাশে এবং মাথার উপরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে–কীটপতঙ্গ, পাখি বা অন্য কোনো উড়ন্ত প্রাণী হতে পারে, আর যে ক্ল্যাক ক্ল্যাক শব্দ শোনা যাচ্ছে সেটা সম্ভবত ফার্মের কোনো যন্ত্র।

    পেলোরেটই প্রথম কথা বলল। কিছু শুনেছে বা দেখেছে কি না বলল না। তার বদলে গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, আহ্, চমৎকার গন্ধ, একেবারে আপেল সসের মতো।

    সামনের ওটা সম্ভবত আপেল বাগান, ট্র্যাভিজ বলল, বোধহয় ওখানেই তৈরি হচ্ছে।

    আর তোমাদের জাহাজে, ব্লিস বলল, গন্ধটা ছিল খুব খারাপ গন্ধ ছিল।

    ভিতরে যতক্ষণ ছিলে তখন তো কিছু বলেনি, ট্র্যাভিজ গজগজ করে বলল।

    ভদ্র আচরণ করেছি। তোমাদের জাহাজে আমি ছিলাম অতিথি। ভদ্র আচরণ করলে কি ক্ষতি হতো?

    আমি এখন নিজের গ্রহে চলে এসেছি। তোমরা অতিথি। তোমরাই ভদ্র থাকবে।

    গন্ধের ব্যাপারে ও ঠিকই বলেছে, গোলান। পেলোরেট বলল। দূর করার কোনো উপায় আছে?

    হ্যাঁ, করা যেতে পারে যদি এই ছোট মেয়েটা নিশ্চয়তা দেয় আমার জাহাজে কেউ হাত দেবে না। এরই মধ্যে প্রমাণ করেছে যে তার অস্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে।

    ব্লিস বুক টান-টান করে দাঁড়ালো, আমি ছোট না, আর যদি তোমার জাহাজে হাত না দিলেই পরিষ্কার হয়ে যায়, খুশী হয়েই এটাকে এখানে ফেলে রাখব।

    তারপর আমাদেরকে গায়ার কাছে নিয়ে যাবে?

    কৌতুক ঝিলিক দিয়ে উঠল ব্লিসের চোখে। জানি না বিশ্বাস করবে কিনা, ট্র্যাভ। আমিই গায়া।

    ট্র্যাভিজ তাকিয়ে আছে। তারপর বলল, তুমি?

    হ্যাঁ। এবং মাটি। এবং ঐ গাছগুলো। এবং ঘাসের ফাঁকে বসে থাকা ঐ খরগোশ। এবং ঐ যে মানুষগুলো দেখছ তারা। পুরো গ্রহ এবং এই গ্রহের সবকিছুই হচ্ছে গায়া। আমরা সবাই আলাদা আমরা সবাই পৃথক প্রাণীসত্তা–কিন্তু সকলেই এক সামগ্রিক মহাচেতনার অংশ। নিষ্প্রাণ গ্রহের অংশ সবচেয়ে কম। বিভিন্ন প্রাণীর বিভিন্ন অংশ রয়েছে। মানুষের অংশ সবচেয়ে বেশি কিন্তু সকলেই এবং সবকিছুই অংশীদার।

    আমার মনে হয়, ট্র্যাভিজ, সে বলতে চাইছে গায়া কোনো ধরনের সম্মিলিত সচেতনতা।

    ট্র্যাভিজ মাথা নাড়ল। আমি বুঝতে পেরেছি–সেক্ষেত্রে ব্লিস, এই গ্রহ চালায় কে?

    সে নিজেই চলে। ঐ গাছগুলো নিজেই সারিবদ্ধভাবে জন্মায় এবং নিজের চেষ্টায় বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। যখন কোনো গাছ মারা যায় শুধু তখনই নতুন গাছ জন্মায়। মানুষ আপেল চাষ করে ঠিক যতটুকু প্রয়োজন; অন্যান্য কীটপতঙ্গ তাদের অংশ ভোগ করে শুধু তাদের অংশ।

    কীটপতঙ্গ জানে তাদের অংশ কতটুকু, তাই না? হা, জানে। ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বৃষ্টি হবে। যখন প্রয়োজন হয় তখন গভীর বৃষ্টিপাত হয়; যখন প্রয়োজন হয়না তখন একেবারেই বৃষ্টিপাত হয় না।

    বৃষ্টি জানে কি করতে হবে, তাই না?

    হ্যাঁ, জানে, ব্লিস বেশ আন্তরিকতার সাথে বলল। তোমার নিজের শরীরে প্রতিটা কোষ জানে না কি করতে হবে? কখন বাড়তে হবে, কখন থামতে হবে। কখন শরীর গঠন করতে হবে, কতটুকু করতে হবে –কমও না বেশিও না? প্রতিটি কোষ নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত স্বাধীন রসায়নাগার হিসেবে কাজ করে এবং একই সাধারণ উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে সাধারণ পথে সরবরাহ করে এবং একই সাধারণ পথে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয় এবং সবাই মিলে তৈরি করে এক সামগ্রিক মহাচেতনা।

    পেলোরেট প্রবল উৎসাহে বলল, চমৎকার। তুমি বলতে চাও এই গ্রহ মহাপ্রাণীসত্তা এবং তুমি সেই প্রাণীসত্তার কোষ।

    আমি উদাহরণ দিচ্ছিলাম। কোষের সাথে আমাদের সাদৃশ্য আছে, কিন্তু আমরা কোষ না-বুঝতে পেরেছ?

    কিভাবে তুমি কোষ না?

    আমরা নিজেরাই অনেকগুলো কোষের সমন্বয়ে গঠিত এবং কোষগুলোর ভেতর রয়েছে সম্মিলিত চেতনা। এই সম্মিলিত চেতনা, একক প্রাণীসত্তার চেতনা আমার মতো একজন মানুষ আমার চেতনা একটা কোষের থেকে অনেক উন্নত অনেক বেশি উন্নত। কারণ আমরা আবার এক শক্তিশালী সম্মিলিত মহাচেতনার অংশ। আমি একজন আলাদা মানুষ কিন্তু সম্মিলিত মহাচেতনার অংশ যা আমার শরীরের কোনো কোষের চেতনার থেকে বহুগুণ শক্তিশালী।

    নিশ্চয়ই কেউ একজন আমাদের মহাকাশযান আটকানোর আদেশ দিয়েছিল। ট্র্যাভিজ বলল।

    না, কেউ একজন না! গায়া দিয়েছিল। আমরা সবাই দিয়েছি।

    গাছ এবং মাটিও, ব্লিস?

    ওগুলোর অবদান খুব সামান্য, তবে আছে। মনে করো একজন সঙ্গীতজ্ঞ একটা সুর তৈরি করলেন। এখন তুমি কি জিজ্ঞেস করবে তার শরীরের নির্দিষ্ট কোনো কোষ এই সুর তৈরি করার আদেশ দিয়েছে এবং গঠন করেছে?

    পেলোরেট বলল, আমি বুঝতে পারছি, গ্রুপমাইন্ড বা সম্মিলিত মহাচেতনা একক মাইন্ডের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, যেমন একটা পেশীকোষের চেয়ে পেশী অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। স্বাভাবিকভাবেই গায়া অনেক দূর থেকে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মহাকাশযান দখল করে ফেলেছে, যদিও গ্রহের কোনো একক মাইন্ড সেটা পারত না।

    তুমি চমৎকার বুঝেছ, পেল। ব্লিস বলল।

    আমিও বুঝেছি, ট্র্যাভিজ বলল। কঠিন কিছু না। কিন্তু তুমি আমাদের কাছে কি চাও? আমরা তোমাদের ক্ষতি করতে আসিনি। কিছু তথ্য জানতে এসেছি। আটক করলে কেন?

    তোমার সাথে কথা বলতে চাই।

    মহাকাশযানেই কথা বলতে পারতে।

    ব্লিস গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ল, আমি করতে পারি না।

    তুমি তো সম্মিলিত মহাচেতনার অংশ, তাই না?

    হ্যাঁ, কিন্তু আমি পাখির মতো উড়তে পারি না, গাছের মতো লম্বা হতে পারি না। আমার জন্য যতটুকু ভালো আমি ততটুকুই করি এবং তোমাকে তথ্যগুলো জানানো আমার জন্য ভালো হতো না যদিও সহজেই সেগুলো আমি জানতে পারি।

    তোমাকে না জানানোর সিদ্ধান্ত কে নিয়েছে?

    আমরা সবাই নিয়েছি।

    তথ্যগুলো আমাকে কে জানাবে?

    ডম।

    ডম কে?

    তার পুরো নাম ইনডোমানডিওভিজামেরনডিয়াসো–তারপরে আরো আছে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন সময়ে তাকে বিভিন্ন নামে ডাকে। আমি তাকে ডম নামে ডাকি। তোমরাও ডাকতে পারো। গায়াতে তার অংশ সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। সে এই দ্বীপে বাস করে, তোমাদের সাথে সে দেখা করতে চেয়েছে এবং অনুমতি দেয়া হয়েছে।

    কে দিয়েছে? ট্র্যাভিজ বলল–তারপর নিজেই উত্তর দিল, জানি, তোমরা সবাই দিয়েছ।

    ব্লিস মাথা নাড়ল।

    ডমের সাথে কখন দেখা হবে, ব্লিস? পেলোরেট জিজ্ঞেস করল।

    এখনই। আমার সাথে এস, তোমাদেরকে তার কাছে নিয়ে যাব।

    তারপর তুমি চলে যাবে? পেলোরেট আবার জিজ্ঞেস করল।

    তুমি চাওনা আমি চলে যাই, পেল?

    না।

    এটাই হয় বাগান ঘিরে তৈরি করা বাঁধানো পথ ধরে এগুনোর সময় ব্লিস বলল, পুরুষরা সহজেই আমার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি বয়স্ক লোকরাও আচরণ করে ছেলেমানুষের মতো।

    পেলোরেট হেসে ফেলল। ট্র্যাভিজ অধৈর্য গলায় বলল, ওখানে গিয়ে ডমের জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?

    সে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আসলে ডম–গায়ার মাধ্যমে অনেকদিন থেকে তোমাদের এখানে আনার জন্য কাজ করছে।

    ট্র্যাভিজ মাঝরাস্তায় থেমে গিয়ে পেলোরেটের দিকে দ্রুত তাকালো। পেলোরেট নিঃশব্দে বলল, তোমার কথাই ঠিক।

    ব্লিস তাকিয়ে আছে সামনে, শান্ত সুরে বলল, আমি জানি, ট্র্যাভ, তুমি সন্দেহ করেছ আমি/আমরা/গায়া তোমার প্রতি আগ্রহী।

    আমি/আমরা/গায়া? পেলোরেট মৃদু সুরে বলল।

    গায়াতে বিদ্যমান একক সত্তাকে বর্ণনা করার জন্য অনেক ধরনের সর্বনাম আছে। পরে ব্যাখ্যা করে বলব। আপাতত আমি/আমরা/গায়া দিয়েই কাজ চালিয়ে নাও। চল ট্র্যাভ, ডম অপেক্ষা করছে। চাইনা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার পায়ের উপর জোর খাটাতে। খুব অস্বস্তিকর অনুভূতি হবে।

    ট্র্যাভিজ হাঁটতে লাগল। একরাশ সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ব্লিসের দিকে।

    .

    ৭৪.

    ডম বয়স্ক মানুষ। অনেকটা সুর করে এবং সমান গুরুত্ব দিয়ে তার নামের দুইশ তিপ্পান্নটা শব্দাংশ আবৃত্তি করে গেল।

    সংক্ষেপে এটাই আমার পরিচয়। এটা শুনেই শ্রোতা-পাঠক-অনুভবকারী বুঝতে পারে সমগ্রকে আমার ভূমিকা কি, আমি কি করতে পেরেছি। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি ডম নামে সন্তুষ্ট। যদি অন্য কাউকে ডম নাম দেয়া হয় তখন। আমাকে ডাকা হয় ডমানডিও–এবং আমার বিভিন্ন পেশায় নামের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। প্রতি গায়ান বছরে-আমার জন্মদিনে-পুরো নাম মাইন্ডে আবৃত্তি করা হয়, তোমাদের সামনে যেভাবে মুখে আবৃত্তি করলাম। প্রয়োজন হলেও ব্যাপারটা আমার জন্য বিব্রতকর।

    ডম লম্বা হালকা পাতলা। গভীর চোখদুটো তারুণ্যদীপ্ত যদিও চলনে বলনে ধীর স্থির। অস্বাভাবিক তীক্ষ্ণ নাক। হাতের শিরা বেরিয়ে পড়েছে, কিন্তু কাজ করতে সক্ষম। গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা আলখাল্লা পড়ে আছে, রংটা মাথার চুলের মতোই ধূসর। পায়ে স্যান্ডেল।

    আপনার বয়স কত, স্যার? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।

    শুধু ডম বলবে, ট্রাভ। অন্য কোনো সম্বোধন সহজভাবে আলোচনায় বাধা তৈরি করবে। গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আমার তিরানব্বই চলছে। আর গায়ান স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কয়েক মাস পরে নব্বই বছরে পা দেব।

    আমি অনুমান করেছিলাম পঁচাত্তর এর বেশি হবে না, স্যা–ডম।

    গায়ান স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আমি উল্লেখযোগ্য কিছু না। যাই হোক আমাদের খাওয়া হয়েছে?

    পেলোরেট প্লেটের দিকে তাকালো। বিস্বাদ খাবারের সবটাই পড়ে আছে। আত্মপ্রত্যয়হীন গলায় বলল, ডম, একটা বিব্রতকর প্রশ্ন করতে পারি? অবশ্য আপত্তি থাকলে বলব না।

    বল, ডম হাসিমুখে বলল, গায়া নিয়ে তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর আমি দেব।

    কেন? সাথে সাথে জিজ্ঞেস করল ট্র্যাভিজ।

    তোমরা আমাদের সম্মানিত অতিথি–পেলোরেট, প্রশ্নটা জানতে পারি?

    যেহেতু গায়ার সকল বস্তুই এক সম্মিলিত মহাচেতনার অংশ, এক উপাদান। আরেক উপাদানকে খায় কিভাবে?

    সত্যি! কিন্তু সবকিছু রিসাইকল হয়। আমাদের খেতে হবে এবং সব খেতে পারি গাছপালা, প্রাণী। গায়ানরা প্রয়োজন না হলে খায়না। হয়তো তেমন সুস্বাদু খাবার হয় না। তোমাদের ভালো লাগেনি, ট্র্যাভ? বেশ, খাবার উপভোগ করার জন্য না।

    যাই হোক, যা খাওয়া হয় সেটা টিকে থাকে। একটা অংশ আমার শরীরের সাথে একত্র হয়ে যায়, তখন সামগ্রিক সচেতনতার বৃহৎ অংশে যোগ দেয়। যখন আমি মারা যাবো, আমাকেও খাওয়া হবে–অনুজীবগুলো আমাকে খাবে তখন সামগ্রিকে আমার অংশ হবে খুব কম। কিন্তু একদিন আমার অংশ অন্য মানুষের অংশের সাথে যোগ দেবে, অনেকের অংশ হবে।

    মৃত্যুর পরে অন্য দেহে আত্মার স্থানান্তর। পেলোরেট বলল।

    কি, পেল?

    একটা পৌরাণিক কাহিনীর কথা বলছিলাম।

    আহ্, আমি জানি না। একদিন সময় করে শুনতে হবে।

    ট্র্যাভিজ বলল, কিন্তু আপনার ব্যক্তিক সচেতনতা–যা আপনাকে ডম হিসেবে চিহ্নিত করে কখনোই পুরোপুরি আগের মতো হবে না।

    না, অবশ্যই না। কিন্তু তাতে কি হয়েছে? আমি তখনো গায়ার অংশ, সেটাই বড় ব্যপার। আমাদের অনেকেই মনে করে অতীত অস্তিত্বের সামগ্রিক স্মৃতি তৈরি করা উচিত। কিন্তু গায়ার অনুভূতি হচ্ছে সেটা করা যাবে না। করলে বর্তমান সচেতনতা নষ্ট হবে। হয়তো পরিস্থিতি বদলাবে, গায়ার অনুভূতিরও পরিবর্তন হবে। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে আমি তার কোনো সম্ভাবনা দেখছিনা।

    আপনাকে মরতেই হবে কেন? নব্বই বছর বয়সেও আপনি যথেষ্ট শক্ত সমর্থ। সম্মিলিত মহাচেতনা-

    এই প্রথম ডম ভুরু কোঁচকালো। কখনোই না। প্রতিটি নতুন ব্যক্তিসত্তা পুনর্বিন্যাসকৃত নতুন অণু এবং নতুন জিন বহন করে। নতুন প্রতিভা, নতুন সামর্থ্য, গায়াতে নতুন অবদান। তাদের প্রয়োজন আছে। আর একমাত্র উপায় হচ্ছে তাদের জন্য জায়গা করে দেয়া। আমি অনেক কিছু করেছি। এখন সময় এসেছে নতুনদের সুযোগ দেবার।

    তারপর বুঝতে পারল বৈকালিক পরিবেশটাকে সে বিষণ্ণ করে তুলেছে। উঠে দাঁড়িয়ে হাত দুটো ছড়িয়ে বলল, এসো ট্র্যাভিজ পেল–আমার স্টুডিওতে চলল, ব্যক্তিগত কিছু চিত্র সংগ্রহ দেখাব। আশা করি এই বুড়ো মানুষটার সামান্য অহংকার ক্ষমা করবে।

    পথ দেখিয়ে দুজনকে সে অন্য একটা ঘরে নিয়ে এল, সেখানে একটা গোলাকার টেবিলের উপর জোড়ায় জোড়ায় সংযুক্ত কতগুলো ঝাপসা লেন্স রাখা আছে।

    এগুলো, ডম বলল, পার্টিসিপেশন, আমি তৈরি করেছি। আমি তেমন পারদর্শী না, তবে বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছি নিষ্প্রাণ বস্তুকে।

    আমি একটা তুলতে পারি? এগুলো কি ভঙ্গুর? পেলোরেট জিজ্ঞেস করল।

    না, না, ইচ্ছে হলে মেঝেতে আছড়ে ফেলতে পারো।–তবে না ফেলাই ভালো। ধাক্কা লাগলে দৃশ্যের তীক্ষ্ণতা নষ্ট হয়ে যাবে।

    কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, ডম?

    চোখে পড়। জিনিসগুলো শরীরের সাথে এঁটে থাকবে। এগুলো আলো পরিবহন করে না, বরং পরিবহনে বাধা দেয়–যদিও অপটিকনাৰ্ভ বেয়ে অনুভূতি তোমার ব্রেইনে পৌঁছে যাবে। একই সাথে তোমার চেতনা আরো প্রখর হবে এবং তুমি গায়ার বিশেষ অংশের সাথে যুক্ত হতে পারবে। অন্য কথায়, যদি তুমি ঐ দেয়ালের দিকে তাকাও, তাহলে তুমি বুঝতে পারবে দেয়াল তার নিজের সম্বন্ধে কি ধারণা রাখে।

    চমৎকার, পেলোরেট ফিসফিস করে বলল। আমি চেষ্টা করে দেখি।

    নিশ্চয়ই, পেল। একটা একটা করে দেখতে পারো। প্রতিটা লেন্স ভিন্নভাবে গঠিত, ঐ দেয়াল বা অন্য যে কোনো নিষ্প্রাণ বস্তুর দিকে তুমি তাকাও প্রতিটি বস্তুর চেতনার বিভিন্ন রূপ প্রদর্শন করবে।

    পেলোরেট একজোড়া চোখে লাগিয়ে অনেকক্ষণ স্থির হয়ে রইল।

    অন্যদিকে হাত দিয়ে পার্টিসিপেশন দুটোকে আরো কাছাকাছি নিয়ে যাও। তাহলে ভালো দেখবে।

    পেলোরেট তাই করল, তারপর দ্রুত কয়েকবার চোখ পিট পিট করে সেগুলো ডলতে থাকল।

    কি বুঝলে?

    ব্যাখ্যা করা কঠিন। দেয়ালটা মনে হলো যেন ভেজা চকচকে, মিটমিট করে জ্বলছে, একই সাথে তরল পদার্থে পরিণত হয়েছে। যেন দেয়ালের অনেক শিরা উপশিরা রয়েছে এবং অণুবন্ধনগুলো পরিবর্তন হচ্ছে। আমি-আমি দুঃখিত ডম, আমার ভালো লাগেনি।

    ডম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তুমি গায়ার সাথে অংশগ্রহণ করছ না। তাই আমরা যা দেখি তুমি দেখতে পারছ না সেটা। খুব খারাপ। পার্টিসিপেশনগুলো প্রথমত সৌন্দর্য্যের জন্য ব্যবহার করা হলেও এগুলো কাজের জিনিস। একটা সুখী দেয়াল হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী প্রয়োজনীয় দেয়াল।

    সুখী দেয়াল? ট্র্যাভিজ বাঁকা হেসে বলল।

    দেয়ালের একটা অনুভূতি আছে যা আমাদের সুখী শব্দের সমার্থক। সুখী দেয়াল তখনই সম্ভব যখন তার ডিজাইন ভালো হবে, ভিত্তি মজবুত হবে, সঠিক ভারসাম্য থাকবে এবং কোনো অপ্রয়োজনীয় চাপ থাকবে না। গাণিতিক নীতিতে একটা চমৎকার ডিজাইন তৈরি করা যাবে, কিন্তু পার্টিসিপেশন দিয়ে দেয়ালের আণুবিক্ষনিক মাত্রা পর্যন্ত ফাইন টিউন করা যাবে। গায়ার কোনো শিল্পীই পার্টিসিপেশন ছাড়া প্রথম শ্রেণীর শিল্প তৈরি করতে পারে না এবং আমি যেগুলো তৈরি করেছি সেগুলোকে সর্বোচ্চ মানের বিবেচনা করা হয়।

    পার্টিসিপেশন জীবন্ত করে তোলা আমার কাজ না, ডম তার শখের কথা বলে যেতে লাগল। উদাহরণ দিয়ে ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্সের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা আমাদের বোঝাতে পারবে। অন্যান্য গ্রহের মতো গায়ার ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স সরল, কিন্তু আমরা অন্তত আশা করি এটাকে আরো জটিল করে সামগ্রিক মহাচেতনা অর্জন করব।

    ট্র্যাভিজ হাত তুলে পেলোরেটকে থামিয়ে দিল। আপনি কিভাবে জানেন যে একটা গ্রহের সবকিছু সরল হওয়ার পরেও সেখানে জটিল ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স থাকতে পারে?

    আহ, ডম বলল, চোখের তারা মিটমিট করছে, তুমি বুড়ো মানুষটাকে পরীক্ষা করছ। আমার মতো তুমিও জানো মানবজাতির আসল বাসস্থান, পৃথিবীর ছিল অস্বাভাবিক জটিল ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স। শুধু দ্বিতীয় পর্যায়ের গ্রহগুলো–বসতিস্থাপনকৃত গ্রহগুলো ছিল সরল।

    পেলোরেট আর চুপ থাকতে পারল না। এই প্রশ্নের উত্তরই আমি সারাজীবন খুঁজেছি। কেন শুধু পৃথিবীতেই জটিল ইকোলজী ছিল? কেন গ্যালাক্সির মিলিয়ন মিলিয়ন গ্রহ–যেখানে প্রাণের বিকাশ সম্ভব ছিল–শুধু নিচু শ্রেণীর উদ্ভিদ এবং বুদ্ধিহীন প্রাণের বিকাশ ঘটিয়েছে?

    এটা নিয়ে আমাদের এখানে একটা গল্প চালু আছে–একটা রূপকথা। এর সত্যতার ব্যাপারে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারব না। শুনলে মনে হবে কল্পকাহিনী।

    ঠিক সেই মুহূর্তে ব্লিস এসে ঢুকল পেলোরেটের দিকে তাকিয়ে হাসল। রূপালী রঙের একটা ব্লাউজ পরেছে, বেশ স্বচ্ছ।

    পেলোরেট সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়েছে। আমি ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছ।

    মোটেই না। কিছু কাজ ছিল। আমি এখন আপনার সাথে যোগ দিতে পারি, ডম?

    ডমও উঠে দাঁড়িয়েছে (ট্র্যাভিজ অবশ্য বসে আছে)। অবশ্যই, আর তুমি এই বুড়ো চোখ দুটোকে অন্ধ করে দিয়েছ।

    আপনাকে অন্ধ করে দেয়ার জন্যই আমি এই পোশাক পড়েছি। পেল এসবের অনেক ঊর্ধ্বে, আর ট্র্যাভিজ পছন্দ করেনা।

    পেলোরেট বলল, তুমি যদি মনে করো, ব্লিস, আমি এসবের অনেক উর্ধ্বে তাহলে তোমাকে একদিন চমকে দেব।

    নিশ্চয়ই খুব আনন্দের হবে। ব্লিস বসতে বসতে বলল। পুরুষ দুজনও বসল।

    ডম বলল, আমি ওদেরকে ইটারনিটির গল্পটা বলতে যাচ্ছিলাম। এই গল্প বোঝার আগে তোমাদেরকে বুঝতে হবে যে একই সাথে অনেকগুলো মহাজগৎ থাকতে পারে প্রকৃতপক্ষে অসীম সংখ্যক। যে ঘটনাটা ঘটে সেটা ঘটতেও পারে। নাও ঘটতে পারে, কিংবা এভাবে ঘটল বা অন্যভাবে ঘটল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতের জন্য বিপুলসংখ্যক বিকল্প ঘটনার জন্ম হয়।

    ব্লিস এই মুহূর্তে নাও আসতে পারত, কিছুক্ষণ আগে আসতে পারত; বা আরো আগে আসতে পারত; বা এখনই এলো কিন্তু অন্য পোশাক পরে এলো; একই পোশাক পরে এলো কিন্তু দুজন বুড়ো লোকের দিকে তাকিয়ে সহৃদয় ভঙ্গিতে হাসল না। এই একটা ঘটনার এতগুলো বিকল্প বা আরো অধিকসংখ্যক বিকল্পের ক্ষেত্রে মহাজগৎ সম্পূর্ণ ভিন্ন পথ অনুসরণ করে। একটা বিকল্প ধরে নিলে অন্যগুলো তখন গৌণ হয়ে পড়ে।

    ট্র্যাভিজ তাকিয়ে আছে নিষ্পলক চোখে। আমার ধারণা এটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের খুব সাধারণ একটা অনুসিদ্ধান্ত–যদিও বেশ পুরনো।

    আহ্, তুমি জানো। তারপরেও বলছি। মনে করো মানুষ সক্ষম হলো অসীম সংখ্যক মহাজগৎকে থামিয়ে দিতে, ইচ্ছা মতো একটা থেকে আরেকটাতে যাওয়ার উপায় বের করল। সেখান থেকে তারা একটাকে নির্বাচন করল রিয়েল মহাজগৎ হিসেবে শব্দটার অর্থ যাই হোক।

    শব্দটা শুনেছি, আপনি যে ধারণা দিতে চাইছেন সেটাও বুঝেছি, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না এমন ঘটনা ঘটেছে।

    আমিও করিনা। সেজন্যই তো বলেছি এটা একটা রূপকথা। যাই হোক গল্পে বলা হয়েছে যে কিছু মানুষ সময় অতিক্রম করে বেরিয়ে এসে সম্ভাব্য রিয়েলিটি পরীক্ষা করার কৌশল বের করেছিল। এই লোকগুলোকে বলা হতো ইটারনাল এবং যখন তারা সময় থেকে বেরিয়ে যেত বলা হতো ইটারনিটিতে পৌঁছে গেছে।

    তাদের দায়িত্ব ছিল মানবজাতির জন্য একটা উপযুক্ত রিয়েলিটি নির্বাচন করা। তাদের প্রচেষ্টার কোনো সীমা পরিসীমা থাকল না। গল্পটা অনেক বড়, বিশাল এক মহাকাব্য। শেষপর্যন্ত তারা একটা মহাজগৎ পেল যেখানে পুরো গ্যালাক্সিতে পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যার ইকোলজিক্যাল সিস্টেম অত্যন্ত জটিল, সেই সাথে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি তৈরিতে সমর্থ অতি বুদ্ধিমান প্রাণী।

    তখনই তারা স্থির করে দিল কোন পরিস্থিতিতে মানবজাতি সবচেয়ে নিরাপদ থাকবে। ঘটনার প্রবাহকে তারা রিয়েলিটি হিসেবে স্থির করে দিল। শেষ হলো তাদের দায়িত্ব। এখন আমরা এমন এক গ্যালাক্সিতে রয়েছি যেখানে বাস করে শুধু মানুষ সেই সাথে রয়েছে তাদের বহন করে আনা উদ্ভিত এবং প্রাণী।

    হয়তো আরো অনেক রিয়েলিটি আছে যেখানে গ্যালাক্সি অনেক বুদ্ধিমান প্রাণীর আবাসস্থল। কিন্তু সেখানে পৌঁছানো যায়না। আমাদের রিয়েলিটিতে আমরা একা। হয়তো আমাদের পাশাপাশি আরো অনেক মহাবিশ্ব সম্ভবত অসীম সংখ্যক মহাজগৎ যার সবগুলোতেই মাত্র একটা বুদ্ধিমান প্রাণী বাস করে। কে বলতে পারে।

    ডম থেমে কাঁধ ঝাঁকালো, তারপর বলল, এখানেই শেষ। এই গল্পের উৎপত্তি গায়ার জন্মেরও আগে। কাজেই আমি সত্যমিথ্যা বলতে পারব না।

    বাকী তিনজন মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। ব্লিস এমনভাবে মাথা নাড়ল যেন ডমের কাহিনীর সাথে নিজেরটা মিলিয়ে নিচ্ছে।

    পেলোরেট গম্ভীর, তারপর ঠাস করে হাতদুটো চেয়ারের হাতলের উপর নামিয়ে আনল।

    না, পেলোরেট রুদ্ধ গলায় বলল, গল্পটা অনুমান ছাড়া কিছুই না। তারপরেও ধরা যাক এটা সত্যি! আমাদের মহাজগতে একমাত্র পৃথিবীতে বিচিত্র প্রাণ এবং বুদ্ধিমান প্রাণী তৈরি হয়েছিল। এখন এই মহাজগত–একমাত্র মহাজগৎ বা অনেকগুলোর মাঝে একটা হোক পৃথিবী নামক গ্রহের নিশ্চয়ই কোনো অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কথাই আমরা জানতে চাই।

    সবাই চুপ, ট্র্যাভিজ মাথা নেড়ে বলল, না জেনভ, এভাবে ভাবলে চলবে না। ধরা যাক সম্ভাবনাটা হচ্ছে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ–১০ ভাগের ১ ভাগ –অর্থাৎ গ্যালাক্সির বিলিয়ন বিলিয়ন বাসযোগ্য গ্রহ থেকে একমাত্র পৃথিবীর ইকোলজী হবে জটিল এবং বুদ্ধিমান প্রাণের বিকাশ ঘটবে। যদি তাই হয় তাহলে সম্ভাব্য রিয়েলিটির ১০ সংখ্যক বিভিন্ন ধারা ঠিক এধরনের একটা গ্যালাক্সি তৈরি করবে এবং ইটারনালরা সেটা অবশ্যই বেছে নিত। পৃথিবীতে বুদ্ধিমান প্রাণ বিকাশের কোনো অসাধারণ বৈশিষ্ট্য নেই বরং সেটা কাকতালীয় ঘটনা।

    আমার ধারণা, ট্র্যাভিজ চিন্তিত সুরে বলতে লাগল, রিয়েলিটির এমন ধারাও রয়েছে যেখানে, শুধু গায়াতে বুদ্ধিমান প্রাণের বিকাশ ঘটেছে, বা সেশেলে বা টার্মিনাসে বা অন্য কোনো গ্রহে, এই রিয়েলিটিতে যে গ্রহে জীবন ধারণ অসম্ভব। আর প্রতিটা ক্ষেত্রেই গ্যালাক্সিতে একাধিক বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার সম্ভাবনা অত্যধিক কম। ইটারনালরা যদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করত তাহলে তারা হয়তো রিয়েলিটির এমন এমন ধারা পেত যেখানে প্রতিটা বাসযোগ্য গ্রহেই বুদ্ধিমান প্রাণের বিকাশ ঘটেছে।

    পেলোরেট বলল, তুমি বলতে চাও, এমন একটা রিয়েলিটি পাওয়া গেল যেখানে পৃথিবী অন্য ধারাগুলো থেকে আলাদা, বিশেষভাবে বুদ্ধিমান প্রাণ তৈরির উপযুক্ত। হয়তো আরো বলবে যে এই রিয়েলিটিতে গ্যালাক্সি অন্য ধারাগুলো থেকে আলাদা এবং এমন অবস্থায় আছে যেখানে পৃথিবী একমাত্র বুদ্ধির বিকাশ ঘটাবে।

    তুমি যেভাবে খুশী ব্যাখ্যা করতে পারো, তবে আমার ধারণা আমার মন্তব্য ঠিকই আছে।

    কিন্তু এগুলো শুধুই অনুমান, পেলোরেট রাগের সাথে শুরু করল, ডম বাধা দিল, এগুলো যুক্তি খণ্ডন। এসো, এই বুড়োমানুষটার খাতিরে চমৎকার সন্ধ্যাটা মাটি করে দিওনা।

    শান্ত হয়ে গেল পেলোরেট। হেসে বলল, আপনি যা বলেন, ডম। ব্লিস মুখে প্রশান্ত হাসি নিয়ে বসে আছে, হাত দুটো কোলের উপর। ট্র্যাভিজ আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, এই বিশ্ব কিভাবে তৈরি হলো ডম? গায়া এবং তার সামগ্রিক মহাচেতনা?

    পিছনে মাথা হেলিয়ে ডম উঁচু গলায় হেসে উঠল। কথা বলার সময় অসংখ্য ভাজ পড়ল মুখে, আবারো পৌরাণিক কাহিনী! আমাদের কাছে যত ইতিহাস আছে সেগুলো পড়ার সময় মাঝে মাঝেই ভাবি। যত ভালোভাবেই রেকর্ড সংরক্ষণ করি না কেন সময়ের সাথে সাথে সেগুলো ধূসর হয়ে পড়বে। নতুন নতুন গল্প তৈরি হবে। সময় যত বেশি পার হবে ইতিহাস তত ধূলি-ধূসরিত হবে–শেষ পর্যন্ত সেগুলো পরিণত হবে রূপকথায়।

    প্রক্রিয়াটার সাথে আমরা ইতিহাসবিদরা পরিচিত, পেলোরেট বলল। পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে একটা কথা প্রচলিত আছে, নীরস সত্য থেকে উদ্ভূত বানোয়াট নাটকীয়তা কথাটা বলেছিলেন লিয়েবেল জেনেরাট, প্রায় পনের শতাব্দী আগে। এটাকে বলা হয় জেনেরাট বিধি।

    তাই, মনে করেছিলাম এটা আমিই তৈরি করেছি। যাই হোক আমাদের পুরনো ইতিহাস ছিল জাকজমকপূর্ণ কিন্তু অনিশ্চয়তায় ভরা।-রোবট কি, তোমরা জানো?

    সেশেলে শুনেছি, ট্র্যাভিজ শুকনো গলায় বলল।

    দেখেছ?

    না, তবে বর্ণনা শুনেছি।

    বুঝতে পেরেছি। মানুষ একসময় রোবটের সাথে বাস করত, কিন্তু লাভ হয় নি।

    আমরাও তাই শুনেছি।

    রোবট তিনটি নিয়ম মেনে চলত, সেগুলোকে বলা হতো রোবটিক্সের তিন নিয়ম। নিয়মগুলোকে অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করে। তবে প্রচলিত ব্যাখ্য হচ্ছে:(১) রোবট কখনো মানুষের ক্ষতি করবে না বা মানুষের ক্ষতি হয় এমন কাজ করবে না; (২) রোবট মানুষের আদেশ পালন করতে বাধ্য, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা প্রথম নিয়মের বিরোধিতা করে; (৩) রোবট অবশ্যই তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অস্তিত্ব রক্ষা প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়মের বিরোধিতা করে।

    রোবট যতই বুদ্ধিমান হতে লাগল, ততই এই নিয়মগুলো, বিশেষ করে প্রথম নিয়মটাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মানবজাতির রক্ষকের ভূমিকা পালন করতে লাগল। তাদের এই ভূমিকা মানুষের কাছে হয়ে উঠল অসহনীয়।

    রোবটরা ছিল দয়ালু। তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ছিল মানবিক এবং সামগ্রিক কল্যাণের জন্য ব্যাপারটা তাদের করে তুলল আরো অসহনীয়।

    প্রতিটা রোবটিক অগ্রগতি পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলল। এমন রোবট তৈরি হলো যাদের রয়েছে টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা, অর্থাৎ মানুষের চিন্তাও তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। ফলে মানুষের আচরণ পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে গেল রোবটিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর। শেষ দিকে ঠিক মানুষের মতো দেখতে বা হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি হলো, যা ছিল আরো বিরক্তিকর। কারণ এগুলো মানুষের মতো দেখতে হলেও আচরণ ছিল রোবটের। ফলে সবাই অনুধাবন করল যে এবার সমাপ্তি টানতে হবে।

    রোবটরা এত বেশি উন্নত হয়ে গিয়েছিল যে তারা প্রায় মানুষের মতো চিন্তা ভাবনা শুরু করে দেয়। তারা ভাবতে থাকে কেন মানুষ সবকিছুই তার নিজের ভালোর জন্য করবে। শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় যে সবচেয়ে ভালো হবে যদি মানুষ নিজেই তার ভালো মন্দের দায়িত্ব নেয়।

    অতএব, ধারণা করা হয় রোবটরাই ইটারনিটি তৈরি করেছিল, তারাই ছিল ইটারনাল। এমন একটা রিয়েলিটি তারা খুঁজে বের করে, যেখানে মানুষ যতদূর সম্ভব নিরাপদ থাকবে–গ্যালাক্সিতে একা। এভাবেই তারা আমাদের রক্ষা করার ব্যবস্থা করে এবং প্রকৃত অর্থেই রোবটিক্সের প্রথম নিয়ম পালন করার ব্যবস্থা করে তারা নিজেদের সরিয়ে নেয়। তারপর থেকে আমরা মানুষ–এগিয়ে চলেছি, একা।

    ডম থেমে একবার ট্র্যাভিজ একবার পেলোরেটের মুখের দিকে তাকালো। তারপর বলল, বেশ, তোমারা বিশ্বাস করেছ?

    ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল ট্র্যাভিজ। না, কোনো ঐতিহাসিক রেকর্ডে আমি এ ধরনের কোনো কাহিনী পাইনি। তুমি পেয়েছ, জেনভ?

    কিছু পৌরাণিক কাহিনী আছে যার সাথে সামান্য মিলে।

    শোন, জেনভ, যে কোনো পৌরাণিক কাহিনীর সাথে মিল রেখে আমরা নিজেরাই একটা গল্প তৈরি করে নিতে পারব। আমি বলছি ইতিহাসের কথা -বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের কথা।

    বেশ, আমার জানামতে নেই।

    ডম বলল, আমি অবাক হইনি। রোবটরা নিজেদের সরিয়ে নেয়ার আগে অনেক মানুষ সুদূর মহাকাশে রোবটবিহীন কলোনি স্থাপনের জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। বেশির ভাগই এসেছিল পৃথিবী থেকে। নিজেদের চেষ্টায় তারা নতুন গ্রহে বসতি স্থাপন করে। রোবট নার্সমেইডদের অধীনে তিক্ত জীবনের কথা তারা ভুলে যেতে চেয়েছিল। তাই কোনো রেকর্ড তারা রাখেনি।

    অস্বাভাবিক। ট্র্যাভিজ বলল।

    পেলোরেট তার দিকে ঘুরে বলল, না, গোলান। একেবারে অস্বাভাবিক না। প্রতিটা সমাজই তার প্রথম দিককার অসহায় অবস্থার কথা মুছে ফেলতে চায়, হয় ভুলে যায় বা বিরোচিত কোনো গল্প তৈরি করে। ইম্পেরিয়াল প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছিল প্রি-ইম্পেরিয়াল যুগের সব রেকর্ড মুছে ফেলতে। হাইপারস্পেসাল ট্রাভেল শুরুর আগের দিনগুলোর কোনো রেকর্ড নেই। আর তুমি তো জানোই, পৃথিবীর অস্তিত্বের কথা আজকে কেউ জানে না।

    দুদিক থেকেই ব্যাপারটা বিবেচনা করা যাবে না, জেনভ। যদি গ্যালাক্সির সবাই রোবটের কথা ভুলে যায়, গায়া কিভাবে মনে রেখেছে?

    ব্লিস হেসে উঠল উঁচু গলায়। আমরা ব্যতিক্রম।

    কিভাবে ব্যতিক্রম?

    ঠিক আছে, ব্লিস, ডম বলল, আমাকে বলতে দাও। আমরা ব্যতিক্রম, টার্মিনাসের মানুষ। রোবটিক সাম্রাজ্য থেকে যতগুলো শরণার্থী দল বেরিয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে আমা গায়াতে পৌঁছাই। একমাত্র আমরাই রোবটের কাছ থেকে টেলিপ্যাথির কৌশল শিখে রাখি।

    এটা একটা শিল্প, মানুষের ভিতরে সুপ্ত থাকে, জটিল এবং কঠিন উপায়ে তাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। কিন্তু ভালো মতো শুরু করতে পারলে আর কোনো চিন্তা নেই। যদিও চূড়ান্ত মাত্রা অর্জন করতে পার হয়ে যাবে বহু প্রজন্ম। আমরা বিশ হাজার বছর ধরে এটা নিয়ে সাধনা করছি এবং চূড়ান্ত মাত্রা –গায়ার অনুভূতি–এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। বহুদিন আগেই আমরা সম্মিলিত মহাচেতনার ব্যাপারটা উপলব্ধি করি–প্রথমে অন্তর্ভুক্ত করি মানুষ; তারপর পশুপাখি; তারপর গাছপালা; এবং সবার শেষে, বেশি শতাব্দী আগেনা, গ্রহের নিষ্প্রাণ কাঠামো।

    যেহেতু রোবটদের কাছ থেকে শিখেছি, আমরা তাদেরকে ভুলে যাইনি। তাদেরকে আমরা নার্সমেইড মনে করিনা, মনে করি শিক্ষক। আমাদের সামনে যে অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

    আসলে একসময় আপনারা ছিলেন রোবটের সন্তান, আর এখন সম্মিলিত মহাচেতনার সন্তান। তখনকার মতো এখনো আপনারা মানবসত্তা হারিয়ে ফেলেন নি?

    এই ব্যাপারটা ভিন্ন, ট্র্যাভ। এখন যা করছি সেটা আমাদের নিজেদের ইচ্ছা নিজেদের নির্বাচন। এটা আমাদের উপর বাইরে থেকে কেউ চাপিয়ে দেয়নি। তাছাড়া অন্যদিক দিয়েও আমরা ব্যতিক্রম। গ্যালাক্সিতে আমরা অনন্যসাধারণ। গায়ার মতো আর কোনো গ্রহ নেই।

    কিভাবে নিশ্চিত হলেন?

    আমরা ধরতে পারতাম, ট্র্যাভ। গ্যালাক্সির অপর প্রান্তেও যদি কোনো গ্রহের আমাদের মতো চেতনা থাকে আমরা ধরতে পারতাম। তোমাদের দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনে এ ধরনের চেতনার শুরুটা আমরা ধরতে পারতাম। যদিও মাত্র দুই শতাব্দী আগে ধরা পড়েছে।

    মিউলের সময়ে?

    হ্যাঁ। আমাদেরই একজন। সে ছিল বিদ্রোহী। আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায়। ভেবেছিলাম যেতে পারবে না। তাই সময়মতো থামানোর চেষ্টা করিনি। যখন নজর দিলাম বাইরের বিশ্বের দিকে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ব্যপারটা চোখে পড়ল। মিউলকে থামানোর দায়িত্ব ছেড়ে দিলাম তাদের উপর।

    ট্র্যাভিজ অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল ফাঁকা দৃষ্টিতে। তারপর জোরালো গলায় বলল, এটা গায়ার কাপুরুষের মতো আচরণ। তাকে থামানো আপনাদের দায়িত্ব ছিল।

    ঠিকই বলেছ। কিন্তু যখন গ্যালাক্সিতে চোখ ফেরাই আমরা এমন একটা ব্যাপার ধরতে পারি যার প্রতি এতদিন ছিলাম অন্ধ। মিউলের ঘটনা আমাদের জীবন রক্ষা করে। বুঝতে পারি ভয়ানক বিপদ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।

    কি ধরনের বিপদ?

    যে বিপদ আমাদের ধ্বংস করে দেবে।

    বিশ্বাস করতে পারলাম না। আপনারা এম্পায়ার, মিউল, সেশেলকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। আপনাদের সম্মিলিত মহাচেতনা মহাকাশের কয়েক মিলিয়ন কিলোমিটার দূরের মহাকাশযান ধরে ফেলতে পারে। আপনাদের ভয় কি?–ব্লিসকে দেখুন। দেখে তো মনে হচ্ছে না ভয় পেয়েছে।

    ব্লিস পায়ের উপর পা তুলে বলল, অবশ্যই আমি ভয় পাচ্ছি না, ট্র্যাভ। বিপদটা তুমি সামলাবে।

    আমি? ট্র্যাভিজ চিৎকার করে বলল।

    ডম বলল, গায়া অনেক কৌশলে তোমাকে এখানে এনেছে। আমাদের বিপদের মুখোমুখি হতে হবে তোমাকেই।

    ট্র্যাভিজ তাকিয়ে আছে। ধীরে ধীরে রাগে বিকৃত হয়ে গেল মুখ। আমি? স্পেস, আমি কেন? আমি কিছু করতে পারবো না।

    পারবে, ট্র্যাভ, ডম সম্মোহন করার মতো শান্ত সুরে বলল, তুমি। একমাত্র তুমিই পারবে। পুরো মহাবিশ্বে, একমাত্র তুমি।

    .

    সংঘর্ষ

    ৭৫.

    স্টর জেনডিবল গায়ার দিকে এগোচ্ছে ঠিক ট্র্যাভিজের মতো সতর্ক হয়ে –গায়ার সূর্যকে এখন দেখাচ্ছে গোলাকার চ্যাপ্টা বস্তুর মতো, খালি চোখে তাকানো যায় না, এত কাছে।

    সুরা নোভী বসে আছে পাশে। ভীত চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে।

    মাস্টার? সে নরম সুরে ডাকল।

    জেনডিবল অন্যমনস্ক। কি ব্যাপার, নোভ?

    আপনি কি অসুখী?

    দ্রুত চোখ তুলে তাকালো সে। না, সচেতন। শব্দটা মনে আছে? আমি ঠিক করার চেষ্টা করছি দ্রুত এগোেব না আরো অপেক্ষা করব। আমার কি আরো সাহসী হওয়া উচিত, নোভী?

    আমার কাছে আপনাকে সবসময় সাহসী মনে হয় মাস্টার।

    বেশি সাহস অনেক সময় বোকামী হয়ে যায়।

    নোভী হাসল। একজন মাস্টার স্কলার কিভাবে বোকা হতে পারে?–ওটা একটা সূর্য, তাই না, মাস্টার? স্ক্রিনের দিকে দেখিয়ে বলল।

    মাথা নাড়ল জেনডিবল।

    এই সূর্যটাই কি ট্র্যানটরে আলো দেয়? এটা কি হ্যামিশ সূর্য?

    না, নোভী। এটা আলাদা একটা সূর্য। অনেক সূর্ষ আছে, বিলিয়ন বিলিয়ন।

    আহ্! আমার মস্তিষ্কেই ছিল। কিন্তু বিশ্বাস করিনি। এটা কিভাবে হয়, মাস্টার, মস্তিষ্ক জানে অথচ–বিশ্বাস হয়না?

    জেনডিবল মুচকি হেসে বলল,তোমার মস্তিষ্ক, নোভ- বলার সাথে সাথেই নিজেকে সে আবিষ্কার করল নোভীর মস্তিষ্কের ভেতর। সে মৃদু স্পর্শ দ্বারা তাকে শান্ত করতে লাগল, মেন্টাল প্রবাহকে মসৃণ করে তুলল, সবসময় যা করে তারপর বেরিয়ে আসতে গেল, কিন্তু পারল না। চমকে উঠল।

    সে যা উপলব্ধি করল সেটা মেন্টালিক শব্দ ছাড়া ব্যাখ্যা সম্ভব না, কিন্তু রূপক শব্দে বলা যায় নোভীর স্নায়ু কেন্দ্র উত্তপ্ত হচ্ছে। খুব সামান্য।

    এটা এখানে থাকার কথা না। থাকার সম্ভাব্য কারণ, হয়তো কোনো মেন্টালিক ফিল্ড এটা চাপিয়েছে–এত ক্ষুদ্র মেন্টালিক ফিল্ড যা জেনডিলের সু-প্রশিক্ষিত মাইন্ডের গ্রাহক স্নায়ুতে ধরা পড়েনি, এমনকি নোভীর মসৃণ মাইন্ড স্ট্রাকচার থাকার পরেও।

    ধারালো গলায় সে জিজ্ঞেস করলো, নোভী, তোমার কেমন লাগছে?

    চোখ বড় করে নোভী বলল, ভালো লাগছে, মাস্টার।

    তোমার ঘুম পাচ্ছে, দ্বিধাগ্রস্ত। চোখ বন্ধ কর এবং আমি এখন না বলা পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকো।

    বাধ্য মেয়ের মতো সে চোখ বন্ধ করল। জেনডিবল যত্নের সাথে তার মাইন্ডের সমস্ত বাইরের অনুভূতি মুছে ফেলল, চিন্তা শান্ত করে দিল, আবেগ প্রশমিত করে দিল, আলতো স্পর্শ করতে লাগল। সবকিছু মুছে ফেলল, শুধু উত্তপ্ত অবস্থা ছাড়া, সেটা এতই হালকা যে মনে হলো আসলে ওখানে নেই।

    এখন, বলার সাথে সাথে নোভী চোখ খুলল।

    কেমন লাগছে, নোভী?

    খুব ভালো, মাস্টার, সতেজ।

    উত্তাপটা এতই নিস্তেজ যে তার উপর কোনো বড় রকম প্রভাব ফেলেনি।

    জেনডিবল ঘুরে কম্পিউটারের সাথে যুদ্ধ শুরু করল। স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে। যে সে আর কম্পিউটার ভালো মতো মিশ খায়নি। কারণ সম্ভবত সে কোনো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি মাইন্ড ব্যবহার করে অভ্যস্ত। কিন্তু সে কোনো মাইন্ড খুঁজছেনা, খুঁজছে একটা মহাকাশযান, তার জন্য কম্পিটারই ভালো হবে।

    যা খুঁজছিল পেয়ে গেল সে। আধা মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে রয়েছে, তার মহাকাশযানের মতোই ডিজাইন তবে অনেক বড়। কম্পিউটারের সাহায্যে খুঁজে বের করার পর, জেনডিবল দায়িত্ব ছেড়ে দিল সরাসরি মাইন্ডের উপর। শক্তিশালী তরঙ্গের মতো মাইন্ডকে পাঠালো সে বাইরের দিকে তার সাহায্যে দূরের মহাকাশযানের বাইরে ভিতরে অনুভব করল।

    তারপর মাইন্ড পাঠালো সে গায়ার দিকে। মুহূর্তের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন কিলোমিটার মহাকাশ অতিক্রম করে আবার ফিরে এল। নিঃসন্দেহ হতে পারলনা মহাকাশযান না গায়া–কোনোটা মেন্টালিক ফিল্ডের উৎস।

    নোভী, সে বলল, আমি চাই তুমি আমার পাশে বসে থাকবে।

    মাস্টার, বিপদ আসছে?

    তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না, নোভী। আমি দেখব তুমি যেন নিরাপদ থাকো।

    মাস্টার, আমার নিরাপত্তা নিয়ে আমি ভাবছি না। যদি কোনো বিপদ হয় আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই।

    জেনডিবল নরম হলো। নোভী, তুমি এরই মধ্যে যথেষ্ট সাহায্য করেছ। তোমার কারণেই আমি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে সতর্ক হতে পেরেছি। তোমাকে ছাড়া সবকিছু এত ভালোভাবে সামলাতে পারতাম না, বরং সমস্যায় পড়ে যেতাম।

    সব কাজ কি আমি আমার মাইন্ড দিয়ে করেছি, মাস্টার? নোভী অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।

    ঠিক তাই, নোভী। কোনো যন্ত্রই এত প্রবল অনুভূতিশীল না। আমার মাইন্ডও না, বরং অনেক জটিল।

    খুশির আলো ছড়িয়ে পড়ল নোভীর মুখে, আপনাকে সাহায্য করতে পেরে আমি খুব খুশি।

    হেসে মাথা নাড়ল জেনডিবল–তারপরই মলিন হয়ে গেল চেহারা। তার অন্য সাহায্য লাগতে পারে। ভিতর থেকে ছেলেমানুষি একটা প্রবল বাধা অনুভব করছে। কাজটা তার তার একার।

    কিন্তু সে একা সামলাতে পারবে না। অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে।

    .

    ৭৬.

    ট্র্যানটর।

    ফার্স্ট স্পিকারের দায়দায়িত্ব কুইন্ডর স্যান্ডেস এর উপর পাহাড়ের মতো চেপে বসে আছে। জেনডিবলের মহাকাশযান অন্ধকার মহাকাশে চলে যাওয়ার পর তিনি কোনো মিটিং ডাকেন নি। নিজের চিন্তায় ডুবে আছেন।

    জেনডিবলকে এভাবে ছেড়ে দেয়া কি ঠিক হয়েছে? সে মেধাবী, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা ঠেকানোর মতো মেধাবী না। জেনডিবলের সবচেয়ে বড় দোষ ঔদ্ধত্য যেমন স্যান্ডেস এর নিজের দোষ (তিক্ত মনে ভাবলেন) বয়সের ক্লান্তি।

    বারবার তার মনে হতে লাগল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য প্রীম পালভারের গ্যালাক্সিতে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনাটা ছিল মারাত্মক ভুল। সবাই কি প্রীম পালভার হতে পারে? জেনডিবল পারবে? আর পালভারের সাথে ছিল তার স্ত্রী।

    জেনডিবলের সাথে হ্যামিশ মেয়েটা রয়েছে, কিন্তু সে কি কাজে আসবে। পালভারের স্ত্রী নিজের যোগ্যতায় স্পিকার হয়েছিলেন।

    স্যান্ডেশ বুঝতে পারছেন দিনের পর দিন জেনডিবলের কাছ থেকে কোনো খবর না পেয়ে তিনি আরো বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন তার অস্থিরতা বাড়ছে।

    শেষ পর্যন্ত যখন খবর এলো তখন ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি-অস্বস্তিকর নিদ্রা, ক্লান্তি দূর না করে বরং বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রচণ্ড বাতাস বইছিল। মনে হচ্ছিল যেন শিশুবেলার মতো বাতাসে তিনি কণ্ঠস্বর শুনতে পারছেন। বিরক্তিকর তন্দ্রাতে ঢলে পড়ার আগে তার শেষ চিন্তা ছিল একটা পদত্যাগপত্র রচনার।

    ঠিক সেই সময় ডাক এল, বিছানায় উঠে বসলেন তিনি, সম্পূর্ণ সজাগ।

    তুমি ঠিক আছ? জিজ্ঞেস করলেন।

    ঠিক আছি, ফার্স্ট স্পিকার, জেনডিবল বলল। ভালোভাবে কথা বলার জন্য ভিজুয়াল কানেকশনের ব্যবস্থা করবেন?

    পরে, স্যান্ডেস বললেন। প্রথমে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা কর।

    জেনডিবল বুঝতে পারছে ফার্স্ট স্পিকার ঘুম থেকে উঠেছেন এইমাত্র এবং তিনি ক্লান্ত। সে সতর্কতার সাথে বলতে লাগল, আমি এখন গায়া নামের একটা বসতি গ্রহের কাছাকাছি রয়েছি, যার অস্তিত্বের কথা আমার জানামতে কোনো গ্যালাকটিক রেকর্ডে নেই।

    তাদের গ্রহ, যারা সেলডন প্ল্যানকে নিখুঁত করার জন্য কাজ করছে? এন্টি মিউল?

    সম্ভবত ফার্স্ট স্পিকার। ভেবে নেয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমত ট্র্যাভিজ এবং পেলোরেটকে বহনকারী মহাকাশযান গায়ার দিকে গেছে এবং সম্ভবত সেখানে অবতরণ করেছে। দ্বিতীয়ত মহাকাশে আমার অবস্থান থেকে প্রায় আধা মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে ফাউণ্ডেশনের একটা যুদ্ধযান।

    কোনো কারণ ছাড়া নিশ্চয়ই সবাই আগ্রহী হয়ে উঠেনি।

    ফার্স্ট স্পিকার, হয়তো ঘটনাগুলোর মধ্যে যোগসূত্র আছে। আমি ট্র্যাভিজকে অনুসরণ করে এখানে এসেছি–যুদ্ধযানও সম্ভবত একই কারণে এসেছে। বাকী থাকল শুধু জিজ্ঞেস করা ট্র্যাভিজ কেন এখানে এসেছে।

    তুমি তাকে অনুসরণ করে ঐ গ্রহ পর্যন্ত যেতে চাও, স্পিকার?

    সেটাকে একটা সম্ভাবনা হিসেবে রেখেছিলাম, কিন্তু অন্য একটা ঘটনা ঘটেছে। আমি এখন রয়েছি গায়া থেকে একশ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে এবং আমার চারপাশের মহাকাশে একটা মেন্টালিক ফিল্ড অনুভব করছি–সমমাত্রার কিন্তু হালকা। প্রথমে ধরা পড়েনি, হ্যামিশ মেয়েটার মাইন্ডের কারণে ধরতে পারি। অস্বাভাবিক মাইন্ড। সে কারণেই তাকে সাথে নিয়েছিলাম।

    তুমি সেটা করেছ বলে আমি খুশী। তোমার মতে, স্পিকার জেনডিবল, গ্রহই হচ্ছে এই ফিল্ডের কেন্দ্রবিন্দু?

    সেজন্য আমাকে আরো ব্যাপক এলাকা পরীক্ষা করে দেখতে হবে ফিল্ডে কোনো গোলাকার সামঞ্জস্য আছে কি না। তাছাড়া নিশ্চিত হতে পারব না। আর ফাউণ্ডেশনের যুদ্ধযান থাকা অবস্থায় আরো অনুসন্ধান করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

    নিশ্চয়ই ওটা কোনো হুমকি না।

    হতে পারে। আমি এখনো নিশ্চিত হয়ে বলতে পারব না ওটাই ফিল্ডের কেন্দ্রবিন্দু কি না, ফাস্ট স্পিকার?

    কিন্তু ওরা।

    ফার্স্ট স্পিকার, শ্রদ্ধার সাথে বলছি, প্রথম ফাউণ্ডেশন প্রযুক্তির দিক দিয়ে কতদূর এগিয়েছে আমরা জানি না। ওরা একটা অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসী আচরণ করছে, আমাদেরকে হয়তো কোনো চমক দেখাতে চায়। ভেবে দেখতে হবে মেন্টালিক্স সামলানোর জন্য ওরা কোনো যন্ত্র তৈরি করেছে কি না। সংক্ষেপে, ফার্স্ট স্পিকার, আমি মেন্টালিক্সদের একটা যুদ্ধযান বা গ্রহের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি।

    উৎস যদি যুদ্ধযান হয়, তাহলে ওরা অনেক দুর্বল হবে কিন্তু আমাকে ধীর করে দিতে পারবে, আর এর মধ্যে তাদের অস্ত্র আমাকে ঘায়েল করবে। উৎস যদি গ্রহ হয় তাহলে যে ফিল্ড এতদূর ছড়িয়ে আছে সারফেসে সেটা আরো জোরালো হবে–আমি সামলাতে পারব না।

    দুটো ক্ষেত্রেই একটা নেটওয়ার্ক প্রয়োজন স্বয়ংসম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক–যাতে প্রয়োজনের সময় ট্রানটরের সমস্ত শক্তি আমার হাতে চলে আসে।

    ফার্স্ট স্পিকার দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেলেন। মিউলের সময় ছাড়া এই কাজটা কখনো করা হয় নি।

    এখনকার বিপদ মিউলের থেকেও বড় বিপদ।

    বুঝতে পারছি না টেবিল রাজী হবে কি না।

    আপনি তাদেরকে রাজী হতে বলবেন না, ফার্স্ট স্পিকার, জরুরী অবস্থা ঘোষণা করবেন।

    কি কারণ দেখাব?

    আমি যা বলেছি তাই বলবেন, ফার্স্ট স্পিকার।

    স্পিকার ডেলারমী বলবে যে তুমি একটা কাপুরুষ। ভয়ে পাগল হয়ে গেছ।

    উত্তর দেয়ার আগে জেনডিবল অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, তার যা খুশী ভাবতে দেন, ফার্স্ট স্পিকার। আমার কিছু হবে না। এই মুহূর্তে আমি নিজের অহংকার বা জীবনের কথা ভাবছিনা, ভাবছি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্বের কথা।

    .

    ৭৭.

    হারলা ব্র্যান্নো নিষ্ঠুরভাবে হাসলেন, মুখের বলিরেখাগুলো আরো প্রকট হয়ে উঠল। বললেন, মনে হয় এবার শুরু করা যায়। আমি ওদের জন্য তৈরি।

    আপনি এখনো নিশ্চিত জানেন তো কি করছেন? কোডেল প্রশ্ন করল।

    তুমি যেমন মনে করছ, লিয়নো, আমি যদি ঠিক সেরকম পাগল হই, এই জাহাজে তুমি আমার সাথে থাকবে?

    কোডেল কাঁধ নেড়ে বলল,  সম্ভবত। তখন হয়তো, ম্যাডাম মেয়র, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাওয়ার আগেই, একটু সুযোগ পাব আপনাকে থামানোর, বোঝানোর, অন্তত পিছিয়ে দেয়ার। আর যদি আপনি পাগল নাই হন-

    হ্যাঁ?

    তাহলে কেন ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদদের সুযোগ দেব সমস্ত কৃতিত্ব আপনাকে দেয়ার। বরং তাদেরকে বলার সুযোগ দেব এখানে আপনার সাথে আমিও ছিলাম। বলা যায় না আসল কৃতিত্বটা কার ভাগে পড়বে, তাই না মেয়র?

    চালাক, লিয়নো, সত্যিই চালাক–কিন্তু অন্তঃসারশূন্য। আমার হাতেই ছিল সমস্ত ক্ষমতা। কেউ বিশ্বাস করবে না যে আমার প্রশাসনে আমি এধরনের ঘটনা ঘটতে দেব।

    দেখা যাবে।

    না, আমরা দেখব না। কারণ ঐতিহাসিক বিচার বিশ্লেষণ শুরু হবে আমাদের মৃত্যুর পরে। যাই হোক, আমি ভয় পাইনা। ইতিহাসে আমার জায়গা নিয়ে না, ঐটা নিয়েও না। তিনি স্ক্রিনের দিকে দেখালেন।

    কম্পরের মহাকাশযান, কোডেল বলল।

    কম্পরের মহাকাশযান, সত্য, কিন্তু ভেতরে কম্পর নেই। আমাদের একটা স্কাউটশিপ বদলাবদলিটা দেখে ফেলেছে। আরেকটা মহাকাশযান কম্পরের যান থামায়, দ্বিতীয়টা থেকে দুজন যাত্রী এটাতে উঠে। কিছুক্ষণ পর কম্পর অন্য যানে চড়ে।

    দুহাত ঘষলেন ব্র্যান্নো। ট্র্যাভিজ তার ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করেছে। আমি তাকে পাঠিয়েছিলাম লাইটনিং রড হিসেবে যেন মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। সে ভালোভাবেই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। যে মহাকাশযান কম্পরের যান। থামিয়েছিল সেটা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের।

    ভেবে পাচ্ছিনা আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন? কোডেল বলল, পাইপে তামাক ভরছে।

    কারণ আমি সবসময় ধারণা করেছি কম্পরকে নিয়ন্ত্রণ করছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন। তার জীবন খুব বেশি জটিলতাবিহীন। যা চেয়েছে তাই পেয়েছে এবং হাইপারস্পেসাল ট্র্যাকিং-এ সে অস্বাভাবিক রকম দক্ষ। ট্র্যাভিজ এর সাথে তার বেঈমানী হতে পারে একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোকের সাধারণ কৌশল–কিন্তু চিন্ত ভািবনা না করেই সে কাজটা করেছে, মনে হয় ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়াও অন্য কিছু ছিল।

    সবই অনুমান, মেয়র!

    অনুমানটা সত্যে পরিণত হয় যখন কম্পর অনায়াসে ট্র্যাভিজের ধারাবাহিক জাম্পগুলো এমনভাবে অনুসরণ করে যেন একটা জাম্প অনুসরণ করছে।

    সে কম্পিউটারের সাহায্যে পেয়েছে, মেয়র।

    ব্র্যান্নো পিছনে মাথা হেলিয়ে হেসে ফেললেন। মাই ডিয়ার লিয়নো, তুমি জটিল সব যুক্তি তৈরিতে এতই ব্যস্ত যে সাধারণ যুক্তিগুলো ভুলে গেছ। শুধু ট্র্যাভিজকে অনুসরণ করার জন্য কম্পরকে পাঠাইনি। আসলে ট্র্যাভিজকে অনুসরণ করার প্রয়োজনই ছিল না। তার কাছে আছে সবচেয়ে আধুনিক ন্যাভাল ভেসেল,ফাউণ্ডেশন, ক্রেডিট, শক্ত ফাউণ্ডেশন বাচন ভঙ্গিতে কথা বলে। এগুলোর কারণেই নিজেকে গোপন রাখতে পারত না, সবার চোখে পড়ত। তাছাড়া প্রয়োজন হলেই সে নিকটস্থ ফাউণ্ডেশন অফিসিয়ালের কাছে ছুটে যেত, সেশেলে যেমন গিয়েছিল। সেজন্য কষ্পরের দরকার নেই।

    না, তিনি চিন্তিত সুরে বলছেন, কম্পরকে পাঠানো হয়েছিল পরীক্ষা করার জন্য। সেটা সফল হয়েছে। কারণ একটা ত্রুটিযুক্ত কম্পিউটার দেয়া হয়েছিল কম্পরকে। মহাকাশযান চালাতে পারবে ঠিকই কিন্তু ধারাবাহিক জাম্পগুলো অনুসরণ করতে সাহায্য করবে না। অথচ কম্পর অনায়াসে পেরেছে।

    দেখা যাচ্ছে, অনেক কথাই আপনি আমাকে বলেন নি, মেয়র।

    আমি শুধু বিষয়গুলো তোমার কাছ থেকে দূরে রেখেছি, লিয়নো, এতে তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। তোমাকে আমি পছন্দ করি, কিন্তু আমার বিশ্বাসের একটা সীমা আছে, আমাকেও তুমি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বিশ্বাস করো–দয়া করে অস্বীকার করো না।

    করব না, কোডেল শুকনো গলায় বলল, এবং একদিন, মেয়র, কথাটা আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেব।–এখন, আর কি কথা আছে যা আমার জানা উচিত? দ্বিতীয়যান কি প্রকৃতির? যদি কম্পর দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের হয়, যানটাও দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের হবে।

    তোমার সাথে কথা বলা সত্যি আনন্দের, লিয়নো। আসল ব্যাপারটা চট করে বুঝে ফেলল। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন ট্র্যাক গোপন করার কোনো চেষ্টাই করেনি, ভালোমতই জানে এনার্জি প্যাটার্ন থেকে আমরা সহজেই ধরতে পারব মহাকাশযান কোত্থেকে এসেছে। কেউ যদি জেনেই ফেলে তার মাইন্ড থেকে তথ্যটা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন মুছে ফেলতে পারবে অনায়াসে। যাই হোক, আমাদের স্কাউটশীপ দেখামাত্রই দ্বিতীয় মহাকাশযানকে চিনতে পেরেছ।

    এখন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন আমাদের মাইন্ড থেকে তথ্যটা মুছে ফেলবে।

    যদি পারে, ব্র্যান্নো বললেন। হয়তো তারা দেখবে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

    আগেও বলেছেন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন কোথায় আপনি জানেন। প্রথমে আপনি সামলাবেন গায়া তারপর ট্র্যানটর। কাজেই ধারণা করা যায় যে দ্বিতীয় মহাকাশযানটা ছিল ট্রানটরের

    তোমার অনুমান সঠিক। অবাক হয়েছ?

    কোডেল ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। না। মিউলকে যে সময়ে থামানো হয় তখন এবলিং মিস, টোরান ডেরিল, বেইটা ডেরিল ট্রানটরে ছিল। আর্কেডি ডেরিলের জন্ম হয় ট্রানটরে। যখন ধারণা করা হয় যে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশকে থামানো হয়েছিল, তখন পুনরায় তাকে ট্র্যানটরে নেয়া হয়। তার বর্ণনায় প্রীম পালভার নামে একজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ট্রানটোরিয়ান বণিক, ঠিক সঠিক মুহূর্তে হাজির হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন ট্রানটরে হওয়াই স্বাভাবিক।

    পুরোপুরি স্বাভাবিক। শুধু সম্ভাবনাটার কথা কেউ ভাবেনি। সে কারণেই তখন। বলেছিলাম যে তারা ট্র্যাক গোপন করার চেষ্টা করেনি। অথচ সহজেই গোপন করতে পারত।

    তাহলে ওরা যেদিকে চায় তাড়াহুড়ো করে আমাদের সেদিকে তাকানো উচিত হবেনা। আপনার কি মনে হয়, ট্র্যাভিজ কিভাবে বুঝতে পারল দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন টিকে আছে? ওরা তাকে থামাল না?

    ব্র্যান্নো আঙ্গুলে গুনে গুনে বলতে লাগলেন, প্রথমত ট্র্যাভিজ অস্বাভাবিক এক মানুষ, তার ভেতর কিছু একটা আছে আমি ধরতে পারিনি। দ্বিতীয়ত দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন একেবারে অন্ধকারে ছিল না। কম্পর সবসময় ট্র্যাভিজের লেজে লেগেছিল। ওরা আশা করেছিল আমি তাকে থামাবো। তৃতীয়ত যখন আমি কিছুই করলাম না–কোনো শাস্তি না দিয়ে ট্র্যাভিজকে মহাকাশে পাঠিয়ে দিলাম, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনও সরাসরি তার পেছনে তাদের একটা মহাকাশযান পাঠিয়ে দিল।

    তারপর আমুদে ভঙ্গিতে যোগ করলেন, ওহ্, চমৎকার লাইটনিং রড।

    এখন আমরা কি করব? কোডেল জিজ্ঞেস করল।

    ওই, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারকে চ্যালেঞ্জ করব। এরই মধ্যে আমরা তারদিকে এগোতে শুরু করেছি।

    .

    ৭৮.

    জেনডিবল এবং নোভী বসে আছে পাশাপাশি। দৃষ্টি স্ক্রিনের উপর।

    নোভী ভয় পেয়েছে, স্বাভাবিক। মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে ভয় কাটানোর। জেনডিবল কোনো সাহায্য করতে পারছে না, কারণ এই মুহূর্তে তার মাইন্ড ছোঁয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

    ফাউণ্ডেশন ওয়ারশিপ এগিয়ে আসছে মন্থর গতিতে কিন্তু দৃঢ়ভাবে। অনেক বড় যুদ্ধযান, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জেনডিবলের ধারণা হলো ক্রু-এর সংখ্যা হবে। ছয়জন। যে পরিমাণ অস্ত্র আছে তা দিয়ে দ্বিতীয় ফাউন্ডেশনের সমস্ত যুদ্ধযান ধ্বংস করে দেয়া যাবে যদি সেগুলো শুধুমাত্র অস্ত্রের উপর নির্ভর করে।

    একজন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারের সামনে একটা যুদ্ধযান এগিয়ে এলে পরিণতি সহজেই অনুমেয়। এমনকি মেন্টালিক ক্ষমতা থাকলেও এভাবে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের দাঁতের ফাঁকে চলে আসা স্বাভাবিক না। হয়তো না জেনেই এগিয়ে আসছে।

    তার মানে যুদ্ধযানের ক্যাপ্টেন জানে না কম্পর নেই এখানে, বা জানলেও এটা জানে না যে তার বদলে এসেছে একজন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার, অথবা হয়তো জানে না একজন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারের কি ক্ষমতা।

    এমনও হতে পারে (জেনডিবল সব সম্ভাবনাই বিবেচনা করছে) ওদের হাতে মেন্টালিক ফোর্স আছে, তাই এগিয়ে আসছে এমন আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে। তার মানে যুদ্ধযানের চালক একটা উন্মাদ অথবা ওটার ক্ষমতা সম্পর্কে জেনডিবলের কোনো। ধারণাই নেই।

    তবে তার বিবেচনাই চূড়ান্ত না

    সতর্কতার সাথে সে নোভীর মাইন্ড অনুভব করল। সচেতনভাবে নোভী মেন্টালিক ফিল্ড অনুভব করতে পারছে না, জেনডিবল পারছে অথচ জেনডিবলের মাইন্ড নোভীর মতো সূক্ষ্মভাবে নিস্তেজ মেন্টালিক ফিল্ড ধরতে পারছে না। এই। একটা ধাঁধা ভবিষ্যতে সমাধান করতে হবে, আশা করা যায় ভালো ফল হবে।

    জেনডিবলের মাইন্ডে স্বাভাবিক গতিতে বিভিন্ন চিন্তা উদয় হতে লাগল একই সাথে সে নোভীর স্নায়ুকেন্দ্রের উত্তপ্ত অবস্থা অনুভব করল। ফাউণ্ডেশন ওয়ারশিপ কাছে চলে আসার পরেও সেটা বাড়ছে না।

    এর থেকে অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়না যে যুদ্ধযানের মেন্টালিক ক্ষমতা নেই। যদি থাকত এবং নিশ্চিত জানত যে একজন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারের দিকে এগোচ্ছে তাহলে নিশ্চয়ই ফিল্ডের ঘনত্ব সর্বোচ্চ করে নিত? সেই সাথে নোভীর মাইন্ডও বর্ধিত হারে সাড়া দিত।

    -কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।

    আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠল জেনডিবল। বুঝে গেছে যুদ্ধযানের মেন্টালিক ক্ষমতা নেই। না জেনেই এগোচ্ছে।

    মেন্টালিক ফিল্ড অবশ্য এখনো আছে, তবে উৎস হচ্ছে গায়া। চিন্তার বিষয়। কিন্তু বর্তমান সমস্যা হচ্ছে যুদ্ধযান। এটার ব্যাপারে ফয়সালা করেই সে এন্টি মিউলের গ্রহের দিকে মনযোগ দেবে।

    সে অপেক্ষা করছে। আরো কাছে এগিয়ে আসতে দিতে হবে, যেন তার আক্রমণ ব্যর্থ না হয়।

    যুদ্ধযান এখনো এগোচ্ছে দ্রুত গতিতে কিন্তু কিছু করল না। শেষ পর্যন্ত জেনডিবল হিসাব করে দেখল এখন তার আক্রমণের শক্তি হবে যথেষ্ট। কোনো ব্যথা না, অস্বস্তি বোধ না, শুধু ভিতরে যারা রয়েছে তারা অনুভব করবে যে তাদের পেশী নড়ছে না।

    জেনডিবল তার মাইন্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকা মেন্টাল ফিল্ড সংকুচিত করল। সেটা আরো ঘন হয়ে দুই জাহাজের মধ্যবর্তী দূরত্ব অতিক্রম করল আলোর গতিতে।

    আর জেনডিবল বিপুল বিস্ময় নিয়ে পিছনে আছড়ে পড়ল।

    ফাউণ্ডেশন ওয়ারশিপের কাছে শক্তিশালী মেন্টালিক শীল্ড রয়েছে। জেনডিবলের মেন্টালিক ফিল্ডের ঘনত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে শীল্ডের ঘনত্ব বেড়েছে সমহারে। যুদ্ধযান জেনে এগোচ্ছে না এবং তার কাছে রয়েছে অপ্রতিরোধী অস্ত্র।

    .

    ৭৯.

    আহ্ ব্র্যান্নো বললেন, আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে, লিয়নো। দেখ!

    সাইকোমিটারের কাটাগুলো কেঁপে উঠছে।

    মেন্টালিক শীল্ড এর উন্নয়ন একশ বিশ বছর ধরে বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে গোপন প্রজেক্ট। পাঁচটা প্রজন্ম ধারাবাহিকভাবে শ্রম দিয়েছে এর পিছনে।

    তবে সাইকোমিটার আবিষ্কার না হলে কোনো অগ্রগতি সম্ভব হতো না। জিনিসটা কাজ করে পথ প্রদর্শক হিসেবে। কিভাবে কাজ করে কেউ বলতে পারবে না। তবে এটা অপরিমেয় বিষয়কে পরিমাপ করে, ব্যাখ্যাতীত বিষয়কে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করে। কিছু বিজ্ঞানীর মতো মেয়রও মনে করেন যদি ফাউণ্ডেশন সাইকোমিটারের কার্যপ্রণালী বুঝতে পারে তবে মাইন্ড নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের সমকক্ষ হবে।

    সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার। এখনকার জন্য শীল্ড যথেষ্ট।

    মেসেজ পাঠালেন ব্র্যান্নো, যন্ত্রের সাহায্যে কণ্ঠস্বর পাল্টে নিয়েছেন নিরাবেগ পুরুষ কণ্ঠে, মসৃণ, মৃত্যুশীতল।

    ব্রাইট স্টার এবং তার আরোহীকে ডাকা হচ্ছে। তুমি ফাউণ্ডেশন ফেডারেশনের একটা মহাকাশযান জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছ। এই মুহূর্তে যানসহ আত্মসমর্পণ কর, নয়তো আক্রমণ করা হবে।

    উত্তর এলো স্বাভাবিক গলায়, টার্মিনাসের মেয়র ব্র্যান্নো, আমি জানি আপনি ওখানে আছেন। ব্রাইট স্টার জোরপূর্বক দখল করা হয়নি। এই যানের বৈধ চালক মান-লী-কম্পর এর আমন্ত্রণে আমি এখানে এসেছি। আমি আপনার কাছে পারস্পরিক লাভের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার সময় চাই।

    কোডেল ফিসফিস করে বলল, আমাকে কথা বলতে দিন, মেয়র।

    অধৈর্য হয়ে হাত নাড়লেন তিনি, সব দায়দায়িত্ব আমার, লিয়নো।

    ট্রান্সমিটার এ্যাডজাস্ট করে নিয়ে তিনি আগের মতো নিরাবেগ কৃত্রিম গলায় বললেন:

    দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের মানুষ, নিজের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করো। আত্মসমর্পণ না করলে, এখান থেকে আলো যেতে যে সময় লাগবে সেই সময়ের মধ্যে তোমাকে মহাকাশে মিলিয়ে দেব। তাতে আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা জানি তুমি ট্র্যানটর থেকে এসেছ, এবং তোমার একটা ব্যবস্থা করে ট্রানটরের ব্যবস্থা করব। নিজের কথা বলার জন্য কিছু সময় তোমাকে দিচ্ছি। অপ্রয়োজনীয় কিছু বলবে না, বেশি সময় আমরা তোমার কথা শুনবনা।

    সে ক্ষেত্রে, জেনডিবল বলল, আমি দ্রুত আসল কথা বলছি। আপনাদের শীল্ড নিখুঁত হয়নি, হবেও না। এটার উপর বেশি ভরসা করে আমাকে ছোট করে দেখছেন। আপনাদের মাইন্ড আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। শীল্ড না থাকলে যত সহজ হতো, তত সহজ হয়তো হবে না, তবে পারব। আপনারা অস্ত্র ব্যবহার করলেই আমি আঘাত করব আর আপনার বোঝার জন্য বলছিঃ শীল্ড না থাকলে আপনার মাইন্ড আমি নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম, কোনো ক্ষতি হতো না। শীল্ড থাকায় আমাকে প্রচণ্ড আঘাত করতে হবে, তখন আর নিখুঁতভাবে মাইন্ড নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবেনা। শীল্ডের মতো আপনার মাইন্ডও গুঁড়িয়ে যাবে, ক্ষতি হবে অপূরণীয়। অন্য কথায়, আপনি আমাকে থামাতে পারবেন না, আমি আপনাকে থামাতে পারব। এমন অবস্থা করব যা হবে মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর। অনুভূতিহীন মানুষ বানিয়ে দেব। আপনি ঝুঁকি নিতে চান?

    যা বলেছ সেটা তুমি করতে পারবে না।

    আপনি ঝুঁকি নিতে চান? জেনডিবল ঠাণ্ডা গলায় বলল।

    কোডেল সামনে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল, সেলডনের কসম মেয়র-

    জেনডিবল বলল (ঠিক সাথে সাথে না, কারণ আলোর গতিতে যাই প্রবাহিত হোক, এক ভেসেল থেকে অন্য ভেসেলে যেতে সময় লাগছে এক সেকেণ্ডের বেশি), আমি আপনার চিন্তা অনুসরণ করতে পারছি, কোডেল। ফিসফিস করার দরকার নেই। মেয়রের চিন্তাও অনুসরণ করতে পারছি। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি, কাজেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনাদের শীল্ড যে দুর্বল এটাই হচ্ছে তার প্রমাণ।

    এর শক্তি বাড়ানো যাবে। মেয়র অবজ্ঞার সাথে বললেন।

    আমার মেন্টালিক ফোর্সও বাড়ানো যাবে।

    কিন্তু এখানে আমি সুবিধা পাচ্ছি, শীল্ড চালু রাখার জন্য শুধু ফিজিক্যাল এনার্জি খরচ করতে হচ্ছে। আমার প্রচুর ফিজিক্যাল এনার্জি রয়েছে। শীল্ড ভেদ করার জন্য তোমাকে ব্যবহার করতে হবে মেন্টালিক এনার্জি এবং ক্লান্ত হয়ে পড়বে তুমি।

    আমি ক্লান্ত হইনি। এই মুহূর্ত থেকে দুজনের কেউই জাহাজের নাবিকদের কোনো নির্দেশ দিতে পারবেন না, অন্য জাহাজের নাবিকদেরও দিতে পারবেন না। কোনো ক্ষতি না করেই আমি এই ব্যবস্থা করতে পারব। এই নিয়ন্ত্রণ পার হওয়ার কোনো চেষ্টা করবেন না, তাহলে ক্ষতি হবে।

    আমি অপেক্ষা করব, কোলের উপর হাত রেখে মেয়র বললেন, চেহারায় অসীম ধৈর্যের ছাপ। একসময় তুমি ক্লান্ত হবে, তারপর যে আদেশ দেব সেটা তোমাকে হত্যা করার জন্য না। কারণ তখন তোমার আর কোনো ক্ষমতা থাকবে না। আমি ফাউণ্ডেশন ফ্লীটকে আদেশ দেব ট্র্যানটরে হামলা করার। নিজের গ্রহ বাঁচাতে চাইলে আত্মসমর্পণ কর। মহাবিপর্যয়ের সময় প্রথম হামলা থেকে বেঁচে গেলেও এবার আর তোমার সংগঠন রক্ষা পাবে না।

    আপনি বুঝতে পারছেন না মেয়র, আমি ক্লান্ত হব না। যদি ক্লান্তি অনুভব করি খুব সহজেই নিজের গ্রহ বাঁচাতে পারব। শক্তি নিঃশেষ হওয়ার আগেই আমি আপনাকে শেষ করে ফেলব।

    তুমি সেটা করবেনা। তোমার আসল কাজ হচ্ছে সেলডন প্ল্যান রক্ষা করা। টার্মিনাসের মেয়রকে হত্যা করলে এবং সম্মান ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত করার কারণে নড়বড়ে হয়ে যাবে ফাউণ্ডেশনের ক্ষমতার ভিত্তি। সব জায়গায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে তার শত্রুরা। ফলে সেলডন প্ল্যানের যে ক্ষতি হবে সেটা তোমার জন্য ট্র্যানটরকে ধ্বংস করে ফেলার চেয়েও খারাপ। আত্মসমর্পণ করলেই ভালো করবে।

    আপনি জুয়া খেলতে চান?

    ব্র্যান্নো লম্বা শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়লেন। তারপর দৃঢ় গলায় বললেন, হ্যাঁ।

    কোডেল তার পাশে বসে পড়ল, মুখ ফ্যাকাশে।

    .

    ৮০.

    জেনডিবল সামনের দেয়ালে সুপারইমপোজ করা ব্র্যান্নোর কাঠামোর দিকে তাকালো–কাঁপাকাঁপা অস্পষ্ট কাঠামো, শীল্ডের কারণে। তার পাশের লোকটা আরো বেশি ঝাপসা, আকৃতিহীন। কারণ জেনডিবল তার জন্য কোনো শক্তি খরচ করছে না। তাকে শুধু মেয়রের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

    অন্যদিকে মেয়র তাকে দেখতে পারছেন না। জানতে পারছেন না জেনডিবলের সাথেও একজন আছে। তার অনুভুতি, শারীরিক ভাষা থেকে তিনি কিছু অনুমান করতে পারছেন না। এটা মেয়রের অসুবিধা।

    সে যা বলেছে সবই সত্য। প্রচুর মেন্টালিক ফোর্স ব্যয় করে সে মেয়রকে শেষ করে দিতে পারে ধ্বংস করে দিতে পারে তার মাইন্ড।

    আবার মেয়র যা বলেছেন সেগুলোও সত্য। তাকে মেরে ফেললে সেলডন প্ল্যানের বিশাল ক্ষতি হবে, মিউল যে ক্ষতি করেছিল তারচেয়েও বেশি। তাছাড়া এই ক্ষতি হবে আরো মারাত্মক। কারণ, সেলডনের শুরু করা খেলার অর্ধেক হয়ে গেছে, এখন কোনো ভুল পদক্ষেপ নিলে সেটা শোধরাবার বেশি সময় পাওয়া যাবে না।

    সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার, পাশেই রয়েছে গায়া–যেখানে রয়েছে অজানা পরিমাণ মেন্টালিক ফোর্স।

    একবার সে নোভীর মাইন্ড স্পর্শ করল। নিশ্চিত হয়ে নিল স্নায়ু কেন্দ্রের উত্তপ্ত অবস্থা এখনো আছে। আছে, কোনো পরিবর্তন হয় নি।

    এই স্পর্শ সে অনুভব করেনি, কিন্তু ঘুরে ভয় পাওয়া গলায় ফিসফিস করে বলল, মাস্টার, ওখানে ঝাপসা কুয়াশার মতো কিছু একটা আছে। আপনি ওটার সাথেই কথা বলছেন?

    দুজনের মাইন্ডের হালকা যোগাযোগের কারণেই সে কুয়াশা অনুভব করতে পারছে। জেনডিবল তার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলল, ভয় পেয়োনা, নোভী। চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নাও।

    সে গলা উঁচু করে বলল, মেয়র ব্র্যান্নো, আপনার জুয়া খেলাটা চমৎকার হয়েছে। আমি এখনই আপনাকে হত্যা করতে চাইনা। কারণ আমি মনে করি যদি যুক্তি দিয়ে আপনাকে কিছু বিষয় বুঝাতে পারি, তাহলে আর হত্যা করার প্রয়োজন হবে না।

    ধরা যাক, মেয়র, আপনি জয়ী হলেন, আমি আত্মসমর্পণ করলাম। কি লাভ হবে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে এবং মেন্টালিক শীল্ডের উপর ভরসা করে আপনি আর আপনার উত্তরসূরিরা গ্যালাক্সিতে অন্যায্যভাবে দ্রুত ক্ষমতা বিস্তার করতে চাইবেন। এটা করতে গিয়ে আপনারা ধ্বংস করে ফেলবেন সেলডন প্ল্যান।

    আমি অবাক হইনি, ব্র্যান্নো বললেন। এবং আমার ধারণা তুমি বুঝতে পেরেছ ওখানে বসে আমাকে হত্যা করা সম্ভব নয়।

    নিজেকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করবেন না। আমার কথা শুনুন। গ্যালাক্সির অধিকাংশই এখনো ফাউণ্ডেশনে যোগ দেয়নি বরং তারা এর বিরোধী। ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত অনেকেই তাদের স্বাধীনতার কথা ভুলে যায়নি। আমার আত্মসমর্পণের পর যদি ফাউণ্ডেশন দ্রুত পদক্ষেপ নেয় গ্যালাক্সির সামনে সে তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা প্রকাশ করবে–একতার অভাব এবং সিদ্ধান্তহীনতা। আপনি ভয় দেখিয়ে এবং বল প্রয়োগ করে তাদেরকে একত্র রাখতে পারবেন কিন্তু সেই সাথে বিদ্রোহের বীজ বপন করবেন।

    তুমি ফাঁকা ভয় দেখাচ্ছ। যে কোনো শত্রুর মোকাবেলা করার শক্তি আমাদের আছে, এমনকি যদি গ্যালাক্সির সবগুলো নন-ফাউণ্ডেশন গ্রহ আমাদের বিরুদ্ধে একত্র। হয়, এমনকি ফেডারেশনের অর্ধেকও যদি বিদ্রোহ করে, কোনো সমস্যা হবে না।

    এখনই কোনো সমস্যা হবেনা, মেয়র। কিন্তু তাৎক্ষণিক ফলাফল দেখে ভুল। করবেন না। আপনি এই মুহূর্তে এম্পায়ার গড়ে তুলতে পারেন, কিন্তু ধরে রাখতে পারবেন না। প্রতি দশবছর পর পর আপনাকে পুনর্দখল করতে হবে।

    তাই করব যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

    ওরা ক্লান্ত হবে না। এভাবে আপনি চালাতেও পারবেন না বেশিদিন, কারণ এই নকল এম্পায়ারের আরেকটা বড় বিপদ রয়েছে। যেহেতু অন্তত কিছুদিন সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে হবে, প্রথমবারের মতো ফাউণ্ডেশনের জেনারেলরা বেসামরিক প্রশাসকদের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। নকল এম্পায়ার বিভক্ত হয়ে পড়বে কতগুলো সামরিক অঞ্চলে, যেখানে একেকজন কমান্ডার হবে প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী। একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে–যে বিশৃঙ্খলা হয়তো সেলডনের অনুমান করা ত্রিশ হাজার বছরের বেশি সময় থাকবে।

    ছেলেমানুষি হুমকি। সেলডনের গণিতেও যদি এই সব ভবিষ্যবাণী হয়ে থাকে, সেখানে বলা হয়েছে সম্ভাবনার কথা অবশ্যই ঘটবে এমন কথা বলা হয় নি।

    মেয়র ব্র্যান্নো, জেনডিবল আন্তরিক গলায় বলল, সেলডন প্ল্যানের কথা ভুলে যান। গণিত আপনি বুঝবেন না, বোঝার দরকারও নেই। আপনি পরীক্ষিত। রাজনীতিবিদ; সফল এবং সাহসী। কাজেই আপনার রাজনৈতিক ধীশক্তি ব্যবহার করুন। মানবজাতির রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাস বিবেচনা করুন, তার সাথে মানুষের প্রকৃতিকে মেলান–জনগণ, রাজনীতিবিদ এবং সামরিক অফিসাররা কিভাবে পারস্পরিক আচরণ করে বিবেচনা করে দেখুন আমি ঠিক বলেছি কি না।

    তোমার কথা যদি ঠিকও হয়, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার,এই ঝুঁকিটা আমরা নেব। সঠিক নেতৃত্ব, প্রযুক্তির উন্নয়ন মেন্টালিক এবং ফিজিক্স–এর মাধ্যমে আমরা জয়ী হবো। হ্যারি সেলডন এই অগ্রগতির কথা বিবেচনা করেন নি, করতে পারেন নি। তার প্ল্যানের কোথায় বলা আছে প্রথম ফাউণ্ডেশন মেন্টালিক শীল্ড তৈরি করবে। কাজেই প্ল্যানের প্রয়োজন কি? এটাকে ছাড়াই আমরা নতুন এম্পায়ার গড়ে তোলার ঝুঁকি নেব। আমরা এমন এম্পায়ার চাইনা যেখানে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের লুকানো পরিচালকদের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হবে।

    একথা বলছেন কারণ বুঝতে পারছেন না গ্যালাক্সির মানুষের কি দুর্দশা হবে।

    হয়তো, ব্র্যান্নো কঠিন গলায় বললেন, তুমি কি ভয় পেতে শুরু করেছ, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার?

    মোটেই না আমি আরেকটা পরামর্শ দিচ্ছি যেন আমাকে আপনার কাছে বা আপনাকে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করতে না হয়। আমরা গায়া নামক একটা গ্রহের কাছাকাছি রয়েছি।

    আমি জানি।

    আপনি কি জানেন, সম্ভবত এটাই মিউলের জন্মস্থান?

    তোমার মুখের কথায় হবে না, শক্ত প্রমাণ চাই।

    গ্রহের চারপাশে একটা মেন্টালিক ফিল্ড রয়েছে। এটা হচ্ছে অনেক মিউলের বাসস্থান। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনকে ধ্বংস করার স্বপ্ন পুরণ করতে পারলে আপনি নিজেকে এই গ্রহের মিউলদের দাস বানাবেন। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন আপনার কি ক্ষতি করেছে নির্দিষ্ট করে বলুন। তারপর চিন্তা করে দেখুন একজন মিউল আপনার কি ক্ষতি করেছিল।

    তোমার বিবৃতি ছাড়া এখনো কিছু পাইনি।

    এখানে বসে থাকলে এর বেশি কিছু দিতে পারবনা।–আমার প্রস্তাব, কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকুক আমাদের লড়াই। আমাকে বিশ্বাস না হলে শীল্ড চালু রাখতে পারেন, কিন্তু আপনার সহযোগিতা চাই। আমরা একসাথে এই গ্রহের দিকে এগোব–যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে ওরা বিপজ্জনক, তখন আমি গ্রহের মেন্টালিক ফিল্ড নিস্তেজ করে দেব আর আপনি আপনার যুদ্ধযানকে আদেশ দেবেন সেটা দখল করার।

    তারপর?

    তারপর অন্তত প্রথম ফাউণ্ডেশন এবং দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন মুখোমুখি হবে, একা। বাইরের কেউ নাক গলাবেনা। তখন লড়াইটা হবে পরিষ্কার, কিন্তু এখন আমরা লড়তে পারিনা, কারণ দুই ফাউণ্ডেশনই বিপদের মুখে।

    কথাগুলো আগে বলোনি কেন?

    ভেবেছিলাম, আপনাকে বোঝাতে পারব, আমরা শত্রু নই, পরস্পরকে সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। এখন যেভাবেই হোক আপনার সহযোগিতা চাই।

    ব্র্যান্নো চুপ, চিন্তার ভারে মাথা নুয়ে পড়েছে। তারপর বললেন, তুমি আমাকে ঘুমপাড়ানি গান শোনাতে চাইছ। কিভাবে তুমি একা মিউলদের পুরো গ্রহের মেন্টালিক ফিল্ড নিস্তেজ করবে? চিন্তাটা এত বেশি অবাস্তব যে আমি তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারছি না।

    আমি একা নই, জেনডিবল বলল। আমার পেছনে রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের পুরো শক্তি এবং সেই শক্তি আপনার শীল্ড পাতলা কাগজের মতো ছিঁড়ে ফেলবে।

    যদি তাই হয়, আমার সাহায্য প্রয়োজন কেন?

    কারণ শুধু নিস্তেজ করলেই চলবেনা। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন এখন বা কখনোই লৌকিক কাজের সাথে জড়াবে না নিজেকে, আমিও আপনার সাথে এই আলোচনা চালিয়ে যেতে পারবনা সারাজীবন। আমাদের দরকার অস্ত্র, সেটা দিতে পারবেন আপনি।

    ব্র্যান্নো আবার কিছুক্ষণ চিন্তা করে নিয়ে বললেন, আমিও গায়ার আরো কাছাকাছি যেতে চাই। যদি সম্ভব হয়, আমরা একসাথে এগোতে পারি। এর বেশি প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না।

    এতেই চলবে, বলল জেনডিবল, তারপর কম্পিউটারের দিকে ঝুঁকল।

    নোভী বলল, না, মাস্টার, এখন পর্যন্ত সব ঠিক আছে, কিন্তু আপনি আর কিছু করবেন না। আমাদেরকে টার্মিনাসের কাউন্সিলম্যান ট্র্যাভিজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন -আইজাক আসিমভ
    Next Article ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    প্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন -আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.