Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল – মিচিও কাকু

    মিচিও কাকু এক পাতা গল্প488 Mins Read0
    ⤷

    ১. বলক্ষেত্র

    ১. নামকরা ও বয়স্ক কোনো বিজ্ঞানী যখন বলেন, কোনো কিছু সম্ভব, নিঃসন্দেহে তিনি তখন প্রায় সঠিক কথাই বলেন। তিনি যখন বলেন, কোনো কিছু অসম্ভব, সম্ভবত তখন তিনি ভুল বলেন।

    ২. সম্ভাবনার সীমানা আবিষ্কারের একমাত্র উপায় হলো, তা থেকে কিছু দূর অতীতের অসম্ভব থেকে ঘুরে আসা।

    যথেষ্ট উন্নত কোনো প্রযুক্তিকে ম্যাজিক থেকে আলাদা করা যায় না। —আর্থার সি ক্লার্কের তিনটি সূত্র

    ‘শিল্ড আপ’

    স্টার ট্রেকের অনেকগুলো পর্বে এটিই হলো ক্রুদের প্রতি ক্যাপ্টেন কার্কের প্রথম আদেশ। ফোর্স ফিল্ড বা বলক্ষেত্র উঠিয়ে স্টারশিপ এন্টারপ্রাইজকে শত্রুপক্ষের গোলা থেকে রক্ষা করার আদেশ এটা।

    স্টার ট্রেকে ফোর্স ফিল্ড এতই অপরিহার্য যে বলক্ষেত্রটি কীভাবে ওঠানো হয়েছে, তা দেখে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করা যায়। যখনই এই ফোর্স ফিল্ড থেকে শক্তি ক্রমাগত বেরিয়ে যেতে থাকে, এন্টারপ্রাইজের কাঠামোতে ক্ষতি হয়ে ততই ভুগতে থাকে। এর ফলে সবশেষে তাদের আত্মসমৰ্পণ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

    তাহলে এই ফোর্স ফিল্ড বা বলক্ষেত্র আসলে কী? বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে এটি বেশ সহজ কাজ, কিন্তু বিভ্রান্তিকর। সেখানে একটা পাতলা, অদৃশ্য হলেও অপ্রবেশ্য দেয়াল দেখানো হয়। এই দেয়াল লেজার ও রকেটের মতো কোনো কিছুকে ঠেকিয়ে পথচ্যুত করে দিতে পারে। প্রথম দর্শনে বলক্ষেত্র দেখতে এতই সরল ব্যাপার বলে দেখা যায় যে যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের দেয়াল বানানো অপরিহার্য মনে হবে। এতে অনেকে আশা করে বসতে পারে, যেকোনো দিন কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবক হয়তো প্রতিরক্ষা বলক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু প্রকৃত সত্যটা আসলে এর চেয়েও অনেক জটিল।

    এডিসনের লাইট বাল্ব আধুনিক সভ্যতায় যেভাবে বিপ্লব এনে দিয়েছিল, একইভাবে বলক্ষেত্রও আমাদের জীবনের প্রতিটি দিকে গভীরভাবে প্রভাব ফেলতে পারবে। কোনো সেনাবাহিনী বলক্ষেত্র ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের কাছে অভেদ্য হয়ে উঠতে পারবে। এর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও বুলেটের বিরুদ্ধে একটা অপ্রবেশ্যযোগ্য দেয়াল গড়ে তুলতে পারবে তারা। তাত্ত্বিকভাবে স্রেফ একটা বোতাম টিপেই নিমেষে সেতু, সুপারহাইওয়ে আর রাস্তা বানানো যাবে। আবার মুহূর্তের মধ্যে আস্ত এক শহর গড়ে তোলা যাবে কোনো ধু ধু মরুপ্রান্তরে। সেখানে একগাদা আকাশছোঁয়া ভবনও বানানো যাবে শুধু এই বলক্ষেত্র ব্যবহার করে। আবার শহরগুলোতে বলক্ষেত্র ব্যবহার করে সেখানকার অধিবাসীরা ইচ্ছেমতো আবহাওয়া (তীব্র বাতাস, বরফঝড়, টর্নেডো) বদলাতে পারবে। বলক্ষেত্রের নিরাপদ শামিয়ানার মধ্যে মহাসাগরের তলদেশেও আস্ত শহর বানানো যাবে। সে জন্য গ্লাস, ইস্পাত ও মর্টার (দেয়াল বা অন্য কিছু গাঁথার জন্য চুন, বালু ও পানির মিশ্রণ) লাগবে না।

    তারপরও গবেষণাগারে বানানোর জন্য সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন যন্ত্রটির নাম বলক্ষেত্র। সত্যি বলতে, অনেক পদার্থবিদ বিশ্বাস করেন, ধর্ম পরিবর্তন না করে এ ধরনের যন্ত্র তৈরি করা অসম্ভব।

    মাইকেল ফ্যারাডে

    ফোর্স ফিল্ড বা বলক্ষেত্রের ধারণার উদ্ভব হয় উনিশ শতকের অন্যতম সেরা ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের গবেষণা থেকে।

    ১৮০০ সালের শুরুর দিকে শ্রমিকশ্রেণির এক পিতা-মাতার ঘরে জন্মেছিলেন ফ্যারাডে। তাঁর বাবা ছিলেন কামার। পরিবারকে কোনোমতে সহায়তা করতে সামান্য এক শিক্ষানবিশ বই বাঁধাইকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন ফ্যারাডে। তরুণ ফ্যারাডে দুটি নতুন বলের রহস্যময় ধর্ম উন্মোচনে বিপুল সাফল্য পান। বল দুটি হলো বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্ব। এসব বিষয়ে যেখানে যা লেখা পেতেন, তাই গ্রোগ্রাসে গিলতেন ফ্যারাডে। ওই আগ্রহের জেরে লন্ডনের রয়্যাল ইনস্টিটিউটে হাজির হতেন প্রফেসর হামফ্রে ডেভির বক্তৃতা শুনতে।

    একদিন এক রাসায়নিক দুর্ঘটনায় প্রফেসর ডেভির চোখ গুরুতর জখম হয়। তখন ফ্যারাডেকে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। শুরুতে তাঁকে প্রায়ই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হলেও আস্তে আস্তে রয়্যাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের আস্থা অর্জন করতে থাকেন ফ্যারাডে। ফলে নিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালানোর অনুমতি পান তিনি। বছরের পর বছর নিজের তরুণ সহকারীর মেধার স্বাক্ষর দেখে প্রফেসর ডেভি ধীরে ধীরে ঈর্ষায় জ্বলে উঠতে থাকেন। এভাবে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানীদের দলে উদীয়মান এক নক্ষত্র হিসেবে আবির্ভূত হন ফ্যারাডে। বিপরীতে মুছে যেতে থাকে ডেভির নাম-নিশানা। ১৮২৯ সালে ডেভির মৃত্যুর পর ফ্যারাডের বিস্ময়কর কিছু সফলতা অর্জনের পথ খুলে যায়। এ সুযোগটাই তাঁকে জেনারেটর উদ্ভাবনের পথে নিয়ে যায়। তাঁর এই উদ্ভাবন একসময় গোটা শহরে শক্তি সরবরাহে সক্ষম করে তোলে, এমনকি পাল্টে দেয় বিশ্ব সভ্যতার গতিপথটাও।

    ফ্যারাডের সেরা আবিষ্কারগুলোর অন্যতম চাবিকাঠি ছিল তাঁর ফোর্স ফিল্ড। একটি চুম্বকের ওপর লোহার গুঁড়া রাখলে গুঁড়াগুলো মাকড়সার মতো একটা নকশা তৈরি হতে দেখা যায়, যা ওই জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। এগুলো হলো ফ্যারাডের বলের রেখা। বিদ্যুৎ ও চুম্বকের বলক্ষেত্র স্থানের মধ্যে কীভাবে বিস্তৃত থাকে, সেটিই চিত্রের মতো ব্যাখ্যা করে এ বলরেখা। যেমন পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্র আঁকা হলে রেখাগুলোকে উত্তর মেরু অঞ্চল থেকে উদ্ভূত হয়ে পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে নেমে আসতে দেখা যাবে।

    একইভাবে বজ্রপাতে কোনো বজ্রপাত দণ্ডের (লাইটিং রড) বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের রেখা আঁকা হলেও বলের রেখাগুলো ঘনীভূত হতে দেখা যাবে লাইটিং রডের ডগার দিকে। ফ্যারাডের কাছে খালি জায়গা বা শূন্যস্থান বলতে কিছু ছিল না। বরং সেগুলোও বলের রেখা দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল, যা দূরের বস্তুকে নাড়াতে পারে। (দারিদ্র্য ও দুর্দশার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠার কারণে ফ্যারাডে বলতে গেলে গণিতে নিরক্ষর ছিলেন। ফলে তাঁর নোটবুকে কোনো সমীকরণ লেখা থাকত না। তাঁর বদলে সেখানে থাকত বলের রেখাগুলোর হাতে আঁকা নকশা। মজার ব্যাপার হলো, গণিতে তাঁর শিক্ষা কম থাকার কারণে তাঁর তৈরি করা চমৎকার এসব বলরেখার নকশা এখনো যেকোনো পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে দেখা যাবে। আসলে বিজ্ঞানে কোনো ভৌত চিত্র প্রায়ই গাণিতিকভাবে বর্ণনার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।)

    ফোর্স ফিল্ড নামের বিজ্ঞানের অন্যতম সেরা ও গুরুত্বপূর্ণ এই ধারণা ফ্যারাডে কীভাবে আবিষ্কার করলেন, তা নিয়ে ইতিহাসবিদেরা যথেষ্ট জল্পনা-কল্পনা করেছেন। সত্যি বলতে, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সবকিছুই লেখা হয়েছে ফ্যারাডের বলক্ষেত্রের ভাষা ব্যবহার করে। ১৮৩১ সালে বলক্ষেত্র-সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেন ফ্যারাডে। এটিই সভ্যতাকে চিরতরে বদলে দেয়। একদিন একটি ছোট চুম্বক তারের কুণ্ডলীর ওপর নড়াচড়া করছিলেন তিনি। হঠাৎ খেয়াল করেন, ওই তারে কোনো স্পর্শ না করেই তিনি সেখানে বিদ্যুৎপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এর মানে হলো, চুম্বকের অদৃশ্য ক্ষেত্রও শূন্যস্থানে জুড়ে থাকা তারের ভেতরের ইলেকট্রনকে ধাক্কা দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ তৈরি করতে পারে।

    ফ্যারাডের বলক্ষেত্রগুলোকে একসময় অকেজো, নিরর্থক হিজিবিজি বলে ভাবা হতো। কিন্তু সেগুলোই আসলে বাস্তব ও বস্তুগত বল, যা বস্তুকে নড়াচড়া করাতে পারে আর শক্তি উৎপাদনও করতে পারে। এখন আপনি যে আলো জ্বালিয়ে বইয়ের এই পৃষ্ঠাটি পড়ছেন, তা-ও শক্তি পাচ্ছে ফ্যারাডের বিদ্যুৎ- চুম্বকীয় সম্পর্ক আবিষ্কারের মাধ্যমে। ঘূর্ণমান চুম্বক একটি বলক্ষেত্র সৃষ্টি করে। সেটি তারের ভেতরের ইলেকট্রনকে ধাক্কা দিতে পারে। সে কারণে ইলেকট্রনগুলো চলাচল করে বিদ্যুৎপ্রবাহের সৃষ্টি করে। তারের ভেতরের এই বিদ্যুৎপ্রবাহ পরে ব্যবহার করা যায় লাইট বাল্ব জ্বালাতে। ঠিক একই নীতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শক্তি সরবরাহ করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন শহরে। যেমন বাঁধ দিয়ে পানির স্রোত তৈরি করে টারবাইনে বিশাল আকৃতির এক চুম্বক ঘোরানো হয়। আসলে এটিই তারের ভেতরের ইলেকট্রনগুলোকে অনবরত ধাক্কা দিতে থাকে। এতে তারের ভেতর বৈদ্যুতিক প্রবাহের সৃষ্টি হয়, যা উচ্চ ভোল্টেজের তারের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয় আমাদের বাসাবাড়িতে।

    অন্য কথায়, মাইকেল ফ্যারাডের বলক্ষেত্র বৈদ্যুতিক বুলডোজার থেকে শুরু করে আধুনিক কালের কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও আইপড তথা আধুনিক সভ্যতার সবকিছুর মূল চালিকা শক্তি।

    ফ্যারাডের বলক্ষেত্র গত প্রায় দেড় শ বছর পদার্থবিদদের অনুপ্রাণিত করে আসছে। আইনস্টাইন এতে এতই অনুপ্রাণিত হন যে তিনি তাঁর মহাকর্ষের তত্ত্ব লেখেন বলক্ষেত্রের শর্ত ব্যবহার করে। ফ্যারাডের গবেষণায় অনুপ্রাণিত হয়েছি আমি নিজেও। বেশ কয়েক বছর আগে আমি সফলভাবে স্ট্রিং থিওরি লিখি ফ্যারাডের বলক্ষেত্রের শর্তাবলি ব্যবহার করে। এভাবে একদিন স্ট্রিং ফিল্ড থিওরিও খুঁজে পাই আমি। পদার্থবিদ্যায় যখন কেউ বলে, ‘তিনি বলের রেখামতো চিন্তা করেন’, তা দিয়ে আসলে অসাধারণ প্রশংসা বোঝানো হয়।

    চারটি বল

    গত দুই হাজারের বেশি কাল পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান অর্জন হলো মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণকারী চারটি বলকে আলাদা করে শনাক্ত করা। এদের প্রতিটি ফ্যারাডের প্রবর্তিত বলক্ষেত্রের ভাষা দিয়ে বর্ণনা করা যায়। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে বেশির ভাগ বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে এদের বলক্ষেত্রের ধর্মগুলো সঠিকভাবে দেখানো হয় না। যা-ই হোক, এ বলগুলো হলো :

    ১. মহাকর্ষ বল : মহাকর্ষ হলো নীরব বল। আমাদের পাগুলো এ বলটি মাটির সঙ্গে আটকে রাখে। পৃথিবী ও নক্ষত্রগুলোর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ঠেকিয়ে রাখে মহাকর্ষ। একই সঙ্গে সৌরজগৎ ও ছায়াপথকে একত্রে বেঁধে রেখেছে। মহাকর্ষ বল না থাকলে গ্রহের ঘূর্ণনের কারণে আমরা পৃথিবী ছেড়ে সেকেন্ডে ১০০০ মাইল বেগে মহাশূন্যে ছিটকে যেতাম। সমস্যাটি হলো, বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে যেমন বলক্ষেত্র দেখা যায় মহাকর্ষের ধর্ম আসলে ঠিক তার বিপরীত। মহাকর্ষ আকর্ষণধর্মী, বিকর্ষণধর্মী নয়। অন্য বলের সঙ্গে তুলনা করলে এটি খুব দুর্বল। তবে তা বিপুল দূরত্ব থেকেও ক্রিয়া করতে পারে। অন্য কথায়, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি বইয়ে পড়া বা মুভিতে দেখা সেই সমতল, পাতলা, অপ্রবেশযোগ্য দেয়ালের প্রায় বিপরীত চরিত্রের এ বলটি। যেমন মেঝেতে একটা পালক আকর্ষণ করতে পুরো পৃথিবী প্রয়োজন। কিন্তু আমরা শুধু একটা আঙুল দিয়ে পালকটি তুলে পৃথিবীর মহাকর্ষের বিপরীতে কাজ করতে পারি। কাজেই আমাদের হাত ছয় ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোগ্রাম ওজনের পুরো একটি গ্রহের মহাকর্ষের বিপরীতে কাজ করতে পারে।

    ২. বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বল : ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম (ইএম) বা বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বল আমাদের শহরগুলোকে আলোকিত রাখে। লেজার, রেডিও, টিভি, আধুনিক ইলেট্রনিকস, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, চুম্বকত্ব—সবই বিদ্যুৎ- চুম্বকীয় বলের পরিণতি। মানবজাতির পোষ মানানো সবচেয়ে উপকারী বল সম্ভবত এটিই। মহাকর্ষের বিপরীতে, এটি আকর্ষণ ও বিকর্ষণ দুটোই করতে পারে। তবে বলক্ষেত্র হিসেবে এটি অনুপযোগী হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথমত, একে খুব সহজেই নিষ্ক্রিয় করা যায়। যেমন প্লাস্টিক ও অন্য রোধকগুলো সহজেই একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক বা চুম্বকীয় ক্ষেত্রে ঢোকানো যায়। কোনো চুম্বকীয় ক্ষেত্রে এক টুকরো প্লাস্টিক ছুড়ে দিলে কোনো বাধা ছাড়াই সেটি সরাসরি অন্যপাশে চলে যাবে। দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎ-চুম্বকত্ব বড় দূরত্বে কাজ করতে পারে না এবং কোনো সমতলে সহজে কেন্দ্রীভূত করা যায় না। জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বলের সূত্রগুলো ব্যাখ্যা করে। এই সমীকরণগুলো সমাধান হিসেবে এ ধরনের কোনো বলক্ষেত্র স্বীকার করে বলে মনে হয় না।

    ৩ ও ৪ দুর্বল ও সবল নিউক্লিয়ার বল : দুর্বল বল তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের বল। বলটি পৃথিবীর তেজস্ক্রিয় কেন্দ্রকে উষ্ণ রাখছে। আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প ও মহাদেশীয় চলনের পেছনে কাজ করে বলটি। অন্যদিকে পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে একসঙ্গে আটকে রাখে শক্তিশালী পারমাণবিক বল বা সবল নিউক্লিয়ার বল। সূর্য ও নক্ষত্রে শক্তি উৎপন্ন হয় এই সবল নিউক্লিয়ার বল থেকে, যা মহাবিশ্বকে আলোকিত করার জন্য দায়ী। সমস্যা হলো, নিউক্লিয়ার বল খুব স্বল্প পাল্লার, যা মূলত নিউক্লিয়াসের দূরত্বে কার্যকর। বলটি নিউক্লিয়াসের ধর্মের সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার কারণে একে কাজে লাগানো খুব কঠিন। বর্তমানে এই বলকে কাজে লাগানোর একমাত্র উপায়, অ্যাটম স্ম্যাশার বা পরমাণু চূর্ণকারক যন্ত্রে অতিপারমাণবিক কণায় বিভক্ত করা কিংবা কোনো পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো।

    .

    বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে বলক্ষেত্রকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়, তা হয়তো পদার্থবিজ্ঞানের জানা সূত্রগুলোর সঙ্গে খাপ খায় না। তবে এমন কোনো কিছু থাকাও সম্ভব, যা থেকে এ ধরনের বলক্ষেত্র সৃষ্টি করা যাবে। প্ৰথমত, পঞ্চম বলের অস্তিত্বও হয়তো থাকতে পারে। তবে এটি গবেষণাগারে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ রকম বল হয়তো বিশাল দূরত্বের বদলে মাত্র কয়েক ইঞ্চি থেকে কয়েক ফুট পর্যন্ত কাজ করবে। (অবশ্য এমন পঞ্চম বলের অস্তিত্ব পরিমাপের প্রাথমিক প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত নেতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।)

    দ্বিতীয়ত, বলক্ষেত্রের কিছু কিছু ধর্ম অনুকরণ করতে প্লাজমা ব্যবহার করা সম্ভব হতে পারে। প্লাজমা পদার্থের চতুর্থ অবস্থা। আমাদের কাছে কঠিন, তরল ও গ্যাস পদার্থের সুপরিচিত অবস্থা। কিন্তু মহাবিশ্বে পদার্থের সবচেয়ে সাধারণ অবস্থা হলো প্লাজমা। এটি আসলে আয়োনিত পরমাণুর গ্যাস। একটি প্লাজমার পরমাণুগুলো ভেঙে ফেলার কারণে (বা ইলেকট্রন পরমাণুকে ভেঙে ফেলা হলে) পরমাণুগুলো বৈদ্যুতিকভাবে চার্জিত হয়। এরপর তাকে খুব সহজেই বৈদ্যুতিক ও চুম্বকীয় ক্ষেত্র হিসেবে কাজে লাগানো যায়।

    মহাবিশ্বের দৃশ্যমান বস্তু সবচেয়ে বেশি দেখা যায় প্লাজমারূপে। সূর্য, নক্ষত্র ও আন্তনাক্ষত্রিক গ্যাস এতেই তৈরি হয়। প্লাজমা আমাদের কাছে তেমন পরিচিত নয়, কারণ এগুলো পৃথিবীতে খুব কমই দেখা যায়। তবে এদের পাওয়া যায় বজ্রপাতের আলোর ঝলকানিতে, সূর্যে ও আপনার বাসার প্লাজমা টিভিতে।

    প্লাজমা জানালা

    আগেই বলেছি, কোনো গ্যাস যথেষ্ট উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হলে প্লাজমা তৈরি হয়। একে চুম্বকীয় ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ছাঁচ ও আকার দেওয়া যায়। যেমন চাদর বা জানালার মতো আকার দেওয়া যায় এভাবে। তা ছাড়া সাধারণ বাতাস থেকে কোনো বায়ুশূন্য জায়গা আলাদা করতে ব্যবহার করা যায় এই প্লাজমা উইন্ডো বা জানালাকে। তাত্ত্বিকভাবে, এভাবে স্পেসশিপ থেকে মহাকাশে বাতাস বেরিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। ফলে বাইরের মহাকাশ ও স্পেসশিপের মাঝখানে উপযুক্ত স্বচ্ছ তল তৈরি করা যাবে।

    স্টার ট্রেক টিভি সিরিজে, এমন বলক্ষেত্র ব্যবহার করা হয় শাটল বে (যেখানে ছোট শাটল ক্র্যাফট থাকে) থেকে বাইরের বায়ুশূন্য মহাকাশকে আলাদা করতে। এটি সিনেমায় শুধু টাকা বাঁচানোর কৌশলী উপায়ই নয়, বরং যন্ত্রটি সত্যি সত্যি বানানোও সম্ভব।

    প্লাজমা উইন্ডো উদ্ভাবন করেন পদার্থবিদ অ্যাডি হার্সকোভিচ। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের ব্রুকহ্যাভেনের ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে ১৯৯৫ সালে কাজটি করেছিলেন তিনি। ইলেকট্রন বিম ব্যবহার করে ধাতব বস্তু ঝালাইয়ের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে হার্সকোভিচ এটি বানিয়েছিলেন। কোনো কিছু গলাতে অ্যাসিটাইলিন টর্চ ব্যবহার করে উত্তপ্ত গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটান ঝালাইকারীরা। পরে তা দিয়ে ধাতব টুকরোগুলো ঝালাই করা হয়। কিন্তু ইলেকট্রন বিম দিয়ে ধাতব টুকরো আরও দ্রুত ও পরিষ্কারভাবে, এমনকি প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে আরও সস্তায় ঝালাই করা যায়। তবে ইলেকট্রন বিম দিয়ে ঝালাইয়ের সমস্যাটি হলো, কাজটি করতে হয় বায়ুশূন্য জায়গায়। এই আবশ্যিক শর্ত মেটানো বেশ অসুবিধাজনক। কারণ তার জন্য আস্ত একটা ঘরের সমান ভ্যাকুয়াম বক্স বানাতে হয়।

    সমস্যাটি সমাধান করতে এই প্লাজমা উইন্ডো বানান ড. হার্সকোভিচ। মাত্র ৩ ফুট লম্বা আর ১ ফুটের কম ব্যাসের এ প্লাজমা উইন্ডো গ্যাসকে ১২ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে প্লাজমা তৈরি করে। আর সেগুলো বৈদ্যুতিক ও চুম্বকীয় ক্ষেত্রের ভেতর আটকা পড়ে। যেকোনো গ্যাসের মতো এই কণাগুলোও চাপ প্রয়োগ করে। এতে বাতাসকে ভ্যাকুয়াম চেম্বারের দিকে ছুটে যেতে বাধা দেয়। কাজেই বাতাসকে ভ্যাকুয়াম থেকে আলাদা করে রাখে এটি। (প্লাজমা উইন্ডোতে আর্গন গ্যাস ব্যবহার করা হলে অনেকটা স্টার ট্রেকের বলক্ষেত্রের মতোই এটি নীল দীপ্তি ছড়িয়ে জ্বলে ওঠে।)

    মহাকাশ ভ্রমণ ও শিল্পকারখানার জন্য প্লাজমা উইন্ডোর বেশ কিছু ব্যবহার রয়েছে। শিল্পকারখানায় অনেক সময় উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় মাইক্রোফেব্রিকেশন ও শুষ্ক নকশাকাটার জন্য ভ্যাকুয়াম বা বায়ুশূন্যতার প্রয়োজন পড়ে। ভ্যাকুয়ামের মধ্যে কাজ করা বেশ ব্যয়বহুল। কিন্তু প্লাজমা উইন্ডো দিয়ে কম খরচে একটি বোতামে আলতো ছোঁয়াতেই জলজ্যান্ত একটি ভ্যাকুয়াম পাওয়া সম্ভব।

    কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্লাজমা উইন্ডো দিয়ে কি কোনো দিন অপ্রবেশযোগ্য ঢাল বানানো সম্ভব? কামান থেকে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা কোনো বিস্ফোরককে কি ঠেকিয়ে দিতে পারবে? ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ও আরও বেশি তাপমাত্রার প্লাজমা উইন্ডো বানানো সম্ভব হবে, তা কল্পনা করাই যায়। সেটি হয়তো বিপুল বেগে ধেয়ে আসা কোনো ক্ষেপণাস্ত্রকে চোখের পলকে ধ্বংস করতে বা স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে যেমনটি দেখা যায়, তেমন বাস্তবসম্মত কোনো বলক্ষেত্র তৈরি করতে হলে আরও কিছু প্রযুক্তি স্তরে স্তরে গাদা করে সমন্বয় করা প্রয়োজন। প্রতিটি স্তর হয়তো কোনো কামানের গোলা ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য একাই যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে। তবে সে জন্য সব কটি স্তরের সমন্বয় পর্যাপ্ত হতে হবে।

    বাইরের স্তরটি হতে পারে সুপারচার্জড বা অতিচার্জিত প্লাজমা উইন্ডো। হয়তো সেটি এতই উচ্চ তাপমাত্রার হয়ে উঠবে যে তা ধাতব কোনো বস্তুকেও বাষ্পীভূত বা নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে। দ্বিতীয় স্তরটি হতে পারে উচ্চশক্তির লেজার বিম ঠেকানোর মতো কোনো পর্দা। এই পর্দায় আড়াআড়িভাবে হাজারো লেজার বিম থাকতে পারে। সেগুলো একটা জাফরি বা জালি তৈরি করবে। জালিগুলোর ভেতর দিয়ে কোনো বস্তু গেলেই তাকে অতি উত্তপ্ত করে তুলতে পারবে। তারপর বস্তুটিকে বাষ্পীভূত করে ফেলতে পারবে সফলভাবে। পরের অধ্যায়ে লেজার নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে।

    এই লেজারের পর্দার পেছনে কার্বন ন্যানোটিউব দিয়ে বানানো জাফরির কথা কল্পনা করা যাক। কার্বন ন্যানোটিউব হলো অতিক্ষুদ্রাকার টিউব আলাদা আলাদা কার্বন পরমাণু দিয়ে বানানো হয় এটি। কার্বন ন্যানোটিউব পরমাণুর মতো পুরু হলেও তা ইস্পাতের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। বর্তমানে বিশ্বে মাত্র ১৫ মিলিমিটার লম্বা কার্বন ন্যানোটিউব বানানো সম্ভব হয়েছে। তবে কল্পনা করা যায়, একদিন আমরা হয়তো ইচ্ছেমতো লম্বা কার্বন ন্যানোটিউব বানাতে পারব। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এ ধরনের জাফরি বোনা যাবে কার্বন ন্যানোটিউব দিয়ে। এটি দিয়ে এমন অতি শক্তিশালী স্ক্রিন বা পর্দা বানানো যাবে, যা অধিকাংশ বস্তুকে বিকর্ষণ করতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই পর্দা হবে অদৃশ্য। কারণ প্রতিটি কার্বন ন্যানোটিউবের আকার হবে পারমাণবিক পরিসরের। তবু কার্বন ন্যানোটিউবের তৈরি জাফরি প্রচলিত যেকোনো বস্তুর চেয়ে শক্ত হবে।

    সুতরাং প্লাজমা উইন্ডো, লেজারের পর্দা আর কার্বন ন্যানোটিউবের পর্দার সমন্বয়ে এমন এক অদৃশ্য দেয়ালের কথা কল্পনা করা যায়, যা অধিকাংশ বস্তুর ক্ষেত্রে প্রায় অভেদ্য হয়ে উঠবে

    এত কিছুর পরও আমাদের এই বহুস্তরবিশিষ্ট শিল্ড বা ঢালে বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে দেখানো বলক্ষেত্রের সব বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। কারণ এই ঢালটি স্বচ্ছ হবে। সে কারণে লেজার বিম ঠেকাতে পারবে না এই ঢাল। যুদ্ধের সময় কোনো লেজারের কামানের সামনে এই বহুস্তরবিশিষ্ট ঢালও চরমভাবে ব্যর্থ হবে, তা বলা বাহুল্য।

    কোনো লেজার বিমকে ঠেকাতে এই সুরক্ষা কবচ বা ঢালকে উন্নত ধরনের ফটোক্রোমাটিকের প্রক্রিয়াজাত করাও প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া সানগ্লাসেও ব্যবহার করা হয়। ইউভি বা অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণে এই সানগ্লাস নিজে নিজেই গাঢ় হয়ে যায়। যেসব অণু অন্তত দুটি অবস্থায় থাকতে পারে তাদের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে ফোটোক্রোমাটিক। এখানে অণুর একটি অবস্থা হলো স্বচ্ছতা। কিন্তু অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ পড়লে অণুগুলো দ্বিতীয় অবস্থায় বদলে যায়। আর সেই অবস্থাটি হলো অস্বচ্ছ।

    ভবিষ্যতে কোনো একদিন আমরা হয়তো ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে কার্বন ন্যানোটিউবের মতো শক্ত কোনো বস্তু তৈরি করতে পারব। আর তার ওপর লেজার রশ্মি পড়লে বস্তুটির আলোকধর্ম বদলে যাবে হয়তো। এভাবে কোনো ঢাল হয়তো লেজার বিস্ফোরণসহ কণার বিম বা কামানের গোলাকেও ঠেকিয়ে দিতে পারবে। তবে লেজার রশ্মি ঠেকিয়ে দিতে পারার মতো কোন ফটোক্রোমাটিক এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই।

    চুম্বক দিয়ে শূন্যে ভাসা

    বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে রে-গান বিস্ফোরণ ঠেকানোর পাশাপাশি বলক্ষেত্রের আরেকটি লক্ষ্যও আছে। সেটি হলো মহাকর্ষকে অগ্রাহ্য করে কোনো প্ল্যাটফর্মের মতো কাজ করা। ব্যাক টু দ্য ফিউচার মুভিতে মাইকেল জে ফক্সকে একটি হোভার বোর্ডে চড়তে দেখা যায়। স্কেটবোর্ডের মতো দেখতে এই হোভার বোর্ড রাস্তার ওপর ভেসে থাকতে পারে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমাদের জানা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রমতে, মহাকর্ষবিরোধী এ ধরনের কোনো যন্ত্র বানানো অসম্ভব (১০ম অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচিত হবে)। কিন্তু চুম্বকীয় তীব্রতা বাড়ানো কোনো হোভার বোর্ড ও হোভার কার ভবিষ্যতে বাস্তব হয়েও উঠতে পারে। এর মাধ্যমে আমরা বিশাল আকারের বস্তু শূন্যে ইচ্ছেমতো ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারব। ভবিষ্যতে কক্ষ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টর বা অতিপরিবাহিতা বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব হলে চুম্বকীয় বলক্ষেত্রের শক্তি ব্যবহার করে বস্তুকেও শূন্যে ভাসিয়ে তোলা সম্ভব।

    দুটি দণ্ড চুম্বককে তাদের উত্তর মেরু বরাবর পরস্পরের কাছাকাছি আনা হলে চুম্বক দুটো পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। (একটি চুম্বককে ঘুরিয়ে তার দক্ষিণ মেরুকে অন্যটির উত্তর মেরুর দিকে আনলে চুম্বক দুটি পরস্পরকে আকর্ষণ করবে।) উত্তর মেরুগুলো পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে—এই একই নীতি কাজে লাগিয়ে বিপুল ভরের কোনো বস্তু ভূমি থেকে ওপরে তোলা সম্ভব। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র উন্নত ধরনের ম্যাগনেটিক লেভিটেশন বা চুম্বকীয় ভাসমান ট্রেন তৈরি করেছে (যেমন ম্যাগলেভ ট্রেন)। এখানে সাধারণ চুম্বক ব্যবহার করে রেলপথের লাইনের একটু ওপরে ভেসে থাকে ট্রেন। এদের ঘর্ষণ শূন্য হওয়ার কারণে স্রেফ বাতাসে ভর করে ভাসমান অবস্থায় ট্রেনগুলো রেকর্ডভাঙা গতিতে ছুটতে পারে।

    ১৯৮৪ সালে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক স্বয়ংক্রিয় ম্যাগলেভ সিস্টেম চালু হয় যুক্তরাজ্যে। ট্রেনটি বার্মিংহাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পার্শ্ববর্তী বার্মিংহাম আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে যাতায়াত করে। জার্মানি, জাপান ও কোরিয়াও ম্যাগলেভ ট্রেন বানিয়েছে। এদের অধিকাংশই উচ্চ গতিবেগের জন্য নকশা করা হয়নি। প্রথম উচ্চ গতিবেগের বাণিজ্যিক ম্যাগলেভ ট্রেন ইনিশিয়াল অপারেটিং সেগমেন্ট (আইওএস) পরীক্ষা করে দেখা হয় সাংহাইতে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬৮ মাইল গতিতে ছুটতে পারে এটি। ইমানাশিতে জাপানি ম্যাগলেভ ট্রেন ঘণ্টায় ৩৬১ মাইল গতিবেগ তুলতে পেরেছে। এটি সাধারণ চাকার ট্রেনের তুলনায় অনেক দ্রুতগতির

    কিন্তু সমস্যা হলো, ম্যাগলেভ যন্ত্র খুব ব্যয়বহুল। এর কার্যকারিতা বাড়ানোর একটি উপায় হতে পারে সুপারকন্ডাক্টর ব্যবহার করা। তাতে এগুলো ঠান্ডা হয়ে বা পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে এই অতিপরিবাহী সব ধরনের বৈদ্যুতিক রোধ কমিয়ে দেবে। সুপারকন্ডাক্টর বা অতিপরিবাহিতা ১৯১১ সালে আবিষ্কার করেন হেইক অনেস। নির্দিষ্ট পদার্থকে ২০ কেলভিনের নিচে ও পরম শূন্য তাপমাত্রার ওপরে ঠান্ডা করা হলে পদার্থটির সব ধরনের বৈদ্যুতিক রোধ হারিয়ে যায়। সাধারণত আমরা যখন কোনো ধাতুর তাপমাত্রা কমাই, তার রোধও ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। (এর কারণ তারের ভেতর পরমাণুর এলোমেলো কম্পন ইলেকট্রনের প্রবাহে বাধা দেয়। তাপমাত্রা কমিয়ে এই এলোমেলো চলাফেরা কমানো যায়। তাতে বিদ্যুৎপ্রবাহের রোধও কমে।) কিন্তু নির্দিষ্ট পদার্থের রেজিস্ট্যান্স বা রোধ একটি ক্রান্তীয় তাপমাত্রায় হঠাৎ করে শূন্যে নেমে আসতে দেখে চোখ কপালে উঠেছিল হেইক অনেসের।

    এই ফলাফলের গুরুত্ব বেশ দ্রুতই বুঝতে পারেন পদার্থবিদেরা। দূরবর্তী কোথাও বিদ্যুৎ পাঠাতে গেলে বিদ্যুতের লাইনগুলোতে বেশ ভালো পরিমাণ শক্তি খরচ হয়। কিন্তু বিদ্যুতের লাইনের সব রকম রোধ দূর করা সম্ভব হলে বৈদ্যুতিক শক্তি প্রায় মুক্তভাবে স্থানান্তর করা যায়। সত্যি বলতে কি, কোনো তারের কয়েলে বিদ্যুৎপ্রবাহ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে কোনো শক্তি ক্ষয় না করেই ওই বিদ্যুৎ কয়েক লাখ বছর ধরে প্রবাহিত হতে থাকবে। আবার এই বিপুল বিদ্যুৎপ্রবাহ থেকে অবিশ্বাস্য শক্তিশালী চুম্বক বানানোও যাবে অনায়াসে। তা ছাড়া বিপুল পরিমাণ বস্তু সহজে ওপরেও তোলা যাবে এসব চুম্বক ব্যবহার করে।

    বিস্ময়কর এমন সব শক্তি থাকা সত্ত্বেও অতিপরিবাহিতার সমস্যা হলো, বড় কোনো চুম্বক অতিশীতল তরলের চৌবাচ্চায় ডুবিয়ে রাখা অনেক ব্যয়বহুল। কোনো তরলকে অতিশীতলতা বজায় রাখতে বিশাল আকারের রেফ্রিজারেশন প্ল্যান্ট দরকার। এটিই আসলে অতিপরিবাহী চুম্বককে ব্যয়বহুল করে তোলার জন্য যথেষ্ট।

    তবে ভবিষ্যতে কোনো দিন হয়তো কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী বানাতে পারবেন পদার্থবিদেরা। সেটি হবে সলিড-স্টেট পদার্থবিদদের কাছে পরম আরাধ্যের বস্তু। গবেষণাগারে কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহীর উদ্ভাবন দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেবে। তখন গাড়ি ও ট্রেন ওপরে তুলতে পারা শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র এতই সস্তা হবে যে হোভার কার বা বাতাসে ভাসতে পারা গাড়ি আর্থিকভাবে লাভজনক হয়ে উঠবে। ব্যাক টু দ্য ফিউচার, মাইনোরিটি রিপোর্ট এবং স্টার ওয়ারস মুভিতে দেখানো কক্ষ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টরযুক্ত বিস্ময়কর উড়ন্ত গাড়ি হয়তো বাস্তবেই দেখা যাবে একসময়।

    তাত্ত্বিকভাবে, সুপারকন্ডাক্টিং চুম্বক দিয়ে বানানো এমন বেল্ট পরে ভূমি থেকে ওপরে বিনা কষ্টে বাতাসে ভেসে থাকা সম্ভব। এ রকম বেল্ট পরে যে কেউ বাতাসে উড়ে বেড়াতে পারবে সুপারম্যানের মতো। কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী অতি দারুণ ব্যাপার। সে কারণে এর উল্লেখ দেখা যায় অসংখ্য বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে (১৯৭০ সালে রিংওয়ার্ল্ড নামে এ রকম এক সিরিজ লেখেন ল্যারি নিভেন)।

    কয়েক দশক ধরে কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী খুঁজছেন পদার্থবিদেরা। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। একের পর এক পদার্থ পরীক্ষা করে দেখা বেশ ক্লান্তির কাজ। তবে ১৯৮৬ সালে নতুন ধরনের এক পদার্থ খুঁজে পাওয়া যায়। একে বলা হচ্ছে উচ্চ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী। পদার্থটি প্রায় ৯০ ডিগ্রি থেকে পরম শূন্য বা ৯০ কেলভিন তাপমাত্রার ওপরে অতিপরিবাহী হিসেবে কাজ করে। এতে মনে হয়েছিল, এবার বুঝি সব বাধা দূর হয়ে গেল। এরপর পদার্থবিদেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লেন। কে কার আগে অতিপরিবাহিতার বিশ্ব রেকর্ড ভাঙবেন, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলল মাসের পর মাস। সাময়িকভাবে মনে হলো, এবার বুঝি কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে হুস করে লাফ দিয়ে আমাদের বসার ঘরে ঢুকে পড়বে। কয়েক বছর বিপজ্জনক গতিতে এগিয়ে চলল উচ্চতাপমাত্রার অতিপরিবাহীবিষয়ক গবেষণা। এরপর সে গবেষণা স্রেফ মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে।

    বর্তমানে বিশ্বে উচ্চতাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টরের রেকর্ড গড়েছে মার্কারি-থ্যালিয়াম-বেরিয়াম-ক্যালসিয়াম-কপার অক্সাইড নামের এক পদার্থ। ১৩৮ কেলভিন (-১৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় এটি অতিপরিবাহীতে পরিণত হয়। তুলনামূলক এই উচ্চতাপমাত্রা এখনো কক্ষ তাপমাত্রার চেয়ে অনেক দূরে। তবে ১৩৮ কেলভিন এখনো গুরুত্বপূর্ণ। নাইট্রোজেন ৭৭ কেলভিন তাপমাত্রায় তরলে পরিণত হয়। আর তরল নাইট্রোজেনের দাম প্রায় সাধারণ দুধের সমান। কাজেই উচ্চতাপমাত্রার অতিপরিবাহী ঠান্ডা করতে অনেক সস্তায় সাধারণ তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা যেতে পারে। (কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহীকে অবশ্য ঠান্ডা করার দরকার নেই। )

    কিন্তু বিব্রতকর ব্যাপার হলো, বর্তমানে উচ্চতাপমাত্রার অতিপরিবাহী ধর্মগুলো ব্যাখ্যার জন্য কোনো তত্ত্ব নেই। আসলে উচ্চতাপমাত্রার অতিপারিবাহিতা যিনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন, সেই উদ্যমী পদার্থবিদের জন্য অপেক্ষা করছে নোবেল পুরস্কার। (উচ্চতাপমাত্রার এই অতিপরিবাহী তৈরি করা হয় পরমাণুকে আলাদা স্তরে সাজিয়ে। অনেক পদার্থবিদের মতে, সিরামিকজাতীয় পদার্থের এসব স্তর ইলেকট্রনের প্রবাহকে প্রতিটি স্তরে অবাধ করে তোলে। তাতে সেটি অতিপরিবাহীতে পরিণত হয়। কিন্তু কীভাবে সেটি ঘটে, তা এখনো রহস্য।)

    এই জ্ঞানের অভাবে পদার্থবিদেরা দুর্ভাগ্যক্রমে দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন ধরনের উচ্চতাপমাত্রার অতিপরিবাহীর খোঁজে নেমেছেন। এর মানে, কাল্পনিক কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী আগামীকাল বা আগামী বছর আবিষ্কৃত হতে পারে, কিংবা হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না। এ ধরনের পদার্থ আদৌ পাওয়া যাবে কি না, তা-ও কেউ জানে না।

    কিন্তু কক্ষ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টর বা অতিপরিবাহী যদি সত্যি সত্যিই আবিষ্কৃত হয়, তাহলে বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিপুল ঢেউ চারদিকে আছড়ে পড়তে শুরু করবে। পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্রের (যার পরিমাণ ০.৫ গাউস চেয়ে ১০ লাখ গুণ বেশি শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র তখন একদম সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে।

    অতিপরিবাহিতার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে বলে মাইসনার ইফেক্ট। কোনো অতিপরিবাহীর ওপর চুম্বক রাখা হলে চুম্বকটি এমনভাবে শূন্যে ভেসে উঠবে, যেন কোনো অদৃশ্য বল তাকে ওপরে তুলে ধরে রেখেছে। (মাইসনার ইফেক্টের কারণ, চুম্বকটি অতিপরিবাহীর মধ্যে একটি চুম্বকের দর্পণ প্ৰতিবিম্ব তৈরি করতে প্রভাবিত করতে পারে। কাজেই আসল চুম্বক ও তার দর্পণ প্রতিবিম্ব পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। আরেকভাবেও দেখা যায় একে। সেটি হলো, চুম্বকীয় ক্ষেত্রগুলো অতিপরিবাহীর ভেতরে ঢুকতে পারে না। তার বদলে চুম্বকীয় ক্ষেত্রগুলো অপসারিত হয়। তাই অতিপরিবাহীর ওপরে চুম্বক রাখা হলে তার বলরেখাগুলো ওই অতিপরিবাহীর দ্বারা অপসারিত হয়। এতে বলরেখাগুলো ওপরের দিকে ঠেলে দেয় চুম্বকটিকে। তাতে চুম্বকটি শূন্যে ভাসতে থাকে।)

    মাইসনার ইফেক্ট ব্যবহার করে কল্পনা করা যায়, ভবিষ্যতের রাস্তাগুলো বানানো হবে এ রকম বিশেষ সিরামিক দিয়ে। এরপর আমাদের বেল্টে বা কিংবা গাড়ির টায়ারে চুম্বক বসানো থাকবে। এর মাধ্যমে কোনো ঘৰ্ষণ বা শক্তি ক্ষয় না করে ম্যাজিকের মতো গন্তব্যে ভেসে ভেসে যেতে পারব আমরা।

    মাইসনার ইফেক্ট শুধু ধাতুর মতো চুম্বকজাতীয় পদার্থেই কাজ করে। তবে অতিপরিবাহী চুম্বক ব্যবহার করে অচুম্বকীয় পদার্থও শূন্যে ভাসানো সম্ভব, যাদের বলা হয় প্যারাম্যাগনেট এবং ডায়াম্যাগনেট। এসব পদার্থের নিজেদের কোনো চুম্বকীয় ধর্ম নেই। তবে বাইরের চুম্বকীয় ক্ষেত্রের উপস্থিতিতে তাদের মধ্যে চুম্বকীয় ধর্ম দেখা দেয়। প্যারাম্যাগনেটকে বাইরের একটি চুম্বক আকর্ষণ করে, আর ডায়াম্যাগনেটকে বাইরের চুম্বক বিকর্ষণ করে।

    যেমন পানি ডায়াম্যাগনেট। সব জীবই পানি দিয়ে তৈরি। তাই তারা শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্রের উপস্থিতিতে শূন্যে ভাসতে পারে। প্রায় ১৫ টেসলা (পৃথিবী ক্ষেত্রের চেয়ে ৩০ হাজার গুণ) চুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে ব্যাঙের মতো ছোট প্রাণীকে শূন্যে ভাসাতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী বাস্তবে বানানো সম্ভব হলে ডায়াম্যাগনেটিক ধর্ম কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের অচুম্বকীয় বস্তুদের শূন্যে ভাসানো যাবে।

    উপসংহারে বলা যায়, বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে ফোর্স ফিল্ড বা বলক্ষেত্র যত্রতত্র যেভাবে ব্যবহার করা হয়, তা মহাবিশ্বের চারটি বলের বর্ণনার সঙ্গে মেলে না। তারপরও বহুস্তরবিশিষ্ট ঢাল ব্যবহার করে বলক্ষেত্রের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য তৈরি করা সম্ভব। এর মধ্যে থাকবে প্লাজমা উইন্ডো, লেজারের পর্দা, কার্বন ন্যানোটিউব আর ফটোক্রোমাটিক। কিন্তু এ রকম কোনো শিল্ড বা সুরক্ষা ঢাল বানানো কয়েক দশক কিংবা কয়েক শতাব্দীতেও সম্ভব না-ও হতে পারে। আর কক্ষ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী পাওয়া গেলে বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতো গাড়ি ও ট্রেন শূন্যে ভাসানোর চুম্বকীয় ক্ষেত্র হয়তো তৈরি করা যাবে।

    এসব কথা বিবেচনা করে, বলক্ষেত্রকে আমি প্রথম শ্রেণির অসম্ভাব্যতার অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মানে হলো, বর্তমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো অসম্ভব এটি। কিন্তু এক শতক বা তারও পরে কিছুটা রূপান্তরিত অবস্থায় এটি বানানো সম্ভব।

    তথ্যনির্দেশ

    শক্তিশালী বল : চারটি মৌলিক বলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। সে কারণে একে শক্তিশালী বল (Strong force) বলা হয়। এর প্রভাব স্বল্প পরিসরে। এই বল প্রোটন ও নিউট্রনের ভেতর কোয়ার্কগুলো ধরে রাখে এবং প্রোটন ও নিউট্রন একসঙ্গে ধরে রেখে পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠন করে।

    স্ট্রিং থিওরি : পদার্থবিদ্যার এই তত্ত্বে কণাকে সুতার ওপর তরঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতাগুলোর দৈর্ঘ্য আছে, কিন্তু কোনো মাত্রা নেই। সুতোর ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কম্পনের প্যাটার্নের কারণে মৌলিক কণাগুলোর ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন হতে দেখা যায়। তত্ত্বটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দুটোকে ঐক্যবদ্ধ করে। একে সুপারস্ট্রিং থিওরিও বলা হয়।

    স্ট্রিং : স্ট্রিং থিওরিতে একমাত্রিক মৌলিক বস্তু। এগুলো কাঠামোহীন মৌলিক কণার ধারণাকে প্রতিস্থাপন করেছে। তত্ত্বমতে, স্ট্রিং বা সুতার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কম্পনের প্যাটার্নের কারণে মৌলিক কণাগুলোর ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন হতে দেখা যায়।

    কেলভিন : তাপমাত্রার একটি স্কেল। এই স্কেলের শূন্য তাপমাত্রাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা বলা হয়।

    চুম্বকীয় ক্ষেত্র : বৈদ্যুতিক বলের জন্য দায়ী ক্ষেত্র। বলটি এখন বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু
    Next Article দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

    Related Articles

    মিচিও কাকু

    প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    দ্য গড ইকুয়েশন : থিওরি অব এভরিথিংয়ের খোঁজে – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    ফিজিক্স অব দ্য ফিউচার – মিশিও কাকু

    November 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }