Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল – মিচিও কাকু

    মিচিও কাকু এক পাতা গল্প488 Mins Read0
    ⤶

    শেষ কথা : অসম্ভবের ভবিষ্যৎ

    কোনো কাজ যতই বড় কিংবা উদ্ভট হোক না কেন, কাজটি জাগতিক দৃষ্টিকোণে সম্ভব হয়ে থাকলে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা লাখ লাখ গোষ্ঠীর কেউ না কেউ কাজটি করে ফেলতে প্রেরণা পাবেই।

    —ফ্রিম্যান ডাইসন

    গন্তব্য ভাগ্যের নয়, পছন্দের বিষয়। এর জন্য অপেক্ষায় থাকা নয়, বরং একে অর্জন করতে হয়।

    —উইলিয়াম জেনিংস ব্রায়ান

    এমন কোনো সত্য কি আছে, যা চিরকাল আমাদের হাতের মুঠোর বাইরে রয়ে যাবে? যত উন্নত সভ্যতাই হোক না কেন, জ্ঞানের কি এমন কোনো জগৎ আছে, যা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে? এখানে এ পর্যন্ত যতগুলো প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে শুধু অবিরাম গতিযন্ত্র ও ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতাকে তৃতীয় শ্রেণির অসম্ভাব্যতা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আরও কোনো প্রযুক্তি কি থাকতে পারে, যেগুলো বানানো একই রকম অসম্ভব?

    উপপাদ্যের বিশুদ্ধ গণিত প্রমাণ করে যে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সত্যিই অসম্ভব। এ রকম সহজ একটা উদাহরণ হলো, শুধু একটি কম্পাস আর রুলার ব্যবহার করে একটি কোণকে সমান তিন ভাগে ভাগ করা অসম্ভব। এটি প্রমাণ করা হয়েছিল সেই ১৮৩৭ সালে।

    আরও দেখুন
    গণিতের
    বৈজ্ঞানিক
    astronomical
    সায়েন্স
    বিজ্ঞান
    জ্যোতির্বিদ
    গণিত
    বিজ্ঞানের
    আলো
    গণিতে

    এমনকি পাটিগণিতের মতো সরল সিস্টেমেও অসম্ভাব্যতা আছে। আগেই বলেছি, পাটিগণিতের সত্যি সব বক্তব্য পাটিগণিতের স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে প্ৰমাণ করা অসম্ভব। তাই পাটিগণিত অসম্পূর্ণ। পাটিগণিতে সব সময় কিছু সত্য বক্তব্য থাকবে, যাকে আরও বড় কোনো সিস্টেমে সরিয়ে নিলেই কেবল প্রমাণ করা যাবে। আর সেখানে পাটিগণিত নিজেই একটি সাবসেট হিসেবে বর্তমান থাকবে।

    আরও দেখুন
    জ্যোতির্বিদ
    গাণিতিক
    light
    গণিতে
    আলোর
    বৈজ্ঞানিক
    গণিত
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    বিজ্ঞান
    আলো

    গণিতে অনেক কিছু করা অসম্ভব হলেও ভৌত বিজ্ঞানের কোনো কিছু পরমভাবে অসম্ভব বলে ঘোষণা করা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আলবার্ট এ মাইকেলসন ১৮৯৪ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রায়ারসন ফিজিক্যাল ল্যাবে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেটি একবার মনে করিয়ে দিতে চাই। সেখানে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, নতুন কোনো পদার্থবিজ্ঞান আবিষ্কার করা অসম্ভব : ‘ভৌত পদার্থবিজ্ঞানের আরও গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সূত্র ও তথ্যের সব আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। এগুলো এখন এতই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে তাদের স্থানচ্যুত করার আশঙ্কা অত্যন্ত সামান্য। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ আবিষ্কারগুলো অবশ্যই দশমিকের পর ছয় ঘর পর্যন্ত নির্ভুল করার দিকে এখন মনোযোগ দেওয়া উচিত।’

    আরও দেখুন
    astronomical
    গণিতে
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    গণিত
    গণিতের
    জ্যোতির্বিদ
    বৈজ্ঞানিক
    জ্যোতির্বিদ্যার
    সায়েন্স
    আলো

    তিনি এমন মন্তব্য ছুড়ে দেন বিজ্ঞানের ইতিহাসের বড় ধরনের টালমাটাল এক সময়ে। সেটি ছিল ১৯০০ সালের কোয়ান্টাম বিপ্লব আর ১৯০৫ সালের আপেক্ষিকতা বিপ্লব। এখানে মূল কথা হলো, আজ যেটা অসম্ভব, যা আমাদের জানা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো অমান্য করে, খোদ সেই সূত্রগুলোই একদিন বদলে যেতে পারে।

    ১৮২৫ সালে ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোমে তাঁর লেখা কোর্স ডি ফিলোসফিতে ঘোষণা দেন, নক্ষত্র কী দিয়ে তৈরি তা নির্ধারণ করা বিজ্ঞানের পক্ষে অসম্ভব। এটা সে সময় নিরাপদ একটি বাজি বলে মনে হয়েছিল। কারণ, নক্ষত্রের প্রকৃতি সম্পর্কে তখন কিছুই জানা যাচ্ছিল না। তাদের অবস্থান এত বেশি দূরে যে সেখানে সশরীর যাওয়াও অসম্ভব। কিন্তু তাঁর এহেন দাবির মাত্র কয়েক বছর পরই পদার্থবিদেরা (স্পেকট্রোস্কপি ব্যবহার করে) ঘোষণা দিলেন, সূর্য হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরি। আসলে আমরা এখন জানি, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে নক্ষত্র থেকে নিঃসৃত বর্ণালি রেখা বিশ্লেষণ করে মহাবিশ্বের অধিকাংশের রাসায়নিক প্রকৃতি নির্ধারণ করা সম্ভব।

    আরও দেখুন
    বিজ্ঞান
    সায়েন্স
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    আলোর
    জ্যোতির্বিদ
    গণিতের
    গণিত
    বিজ্ঞানের
    জ্যোতির্বিদ্যার
    আলো

    কোমে আরও কিছু অসম্ভাব্যতার তালিকা তৈরি করে বিজ্ঞানবিশ্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন :

    -তিনি দাবি করেছিলেন, বস্তুর চূড়ান্ত কাঠামো সব সময় অনিবার্যভাবে আমাদের জ্ঞানের পরিধির বাইরে রয়ে যাবে। অন্য কথায়, বস্তুর সত্যিকার প্রকৃতি জানা অসম্ভব।

    আরও দেখুন
    আলোর
    জ্যোতির্বিদ
    গণিত
    গাণিতিক
    বৈজ্ঞানিক
    গণিতে
    light
    বিজ্ঞানের
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    গণিতের

    -তিনি মনে করতেন, গণিত ব্যবহার করে কখনো জীববিজ্ঞান ও রসায়ন ব্যাখ্যা করা যাবে না। তাঁর দাবি, বিজ্ঞানের এই বিষয়গুলোকে কমিয়ে গণিতের আওতায় আনা সম্ভব নয়।

    -তিনি মনে করতেন, আকাশের বস্তুগুলো নিয়ে গবেষণা করে মানুষের ওপর কোনো প্রভাব ফেলা অসম্ভব।

    আরও দেখুন
    বিজ্ঞানের
    জ্যোতির্বিদ
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    গণিত
    জ্যোতির্বিদ্যার
    গণিতে
    আলোর
    light
    গাণিতিক
    astronomical

    উনিশ শতকে মৌলিক বিজ্ঞান সম্পর্কে খুব অল্পই জানা গিয়েছিল। তাই সেকালে এসব ব্যাপার অসম্ভব মনে করা যুক্তিসংগত। বস্তু ও প্রাণ সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানা ছিল না তখন। কিন্তু আমাদের কাছে এখন পারমাণবিক তত্ত্ব আছে। এটি বস্তুর কাঠামোর ভেতর বৈজ্ঞানিক তদন্তের পুরোপুরি নতুন এক জগৎ খুলে দিয়েছে। ডিএনএ ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব সম্পর্কেও আমরা জানি। প্রাণ ও রসায়নের গোপন রহস্য উন্মোচন করেছে এটি। আমরা মহাকাশের উল্কাপাতের প্রভাব সম্পর্কেও জানি। এটি শুধু পৃথিবীতে প্রাণের ওপর প্রভাব ফেলে না, সেই সঙ্গে এর অস্তিত্ব রূপ দিতেও সহায়তা করে।

    আরও দেখুন
    আলোর
    জ্যোতির্বিদ
    বৈজ্ঞানিক
    আলো
    গণিতের
    গণিতে
    সায়েন্স
    বিজ্ঞানের
    জ্যোতির্বিদ্যার
    গাণিতিক

    জ্যোতির্বিদ জন ব্যারো লিখেছিলেন, ‘কোমের দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে ফরাসি বিজ্ঞানের ক্রমান্বয়ে অবনতি আংশিকভাবে দায়ী ছিল বলে দাবি করা হয়। তবে তা নিয়ে এখনো বিতর্ক করেন ইতিহাসবিদেরা।

    কোমের দাবি নাকচ করে গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট লিখেছেন, “আমার মতে, কোমে কেন অমীমাংসিত সমস্যা খুঁজে পায়নি, তার সত্যিকার কারণ হলো, সেখানে অমীমাংসিত কোনো সমস্যা ছিলই না।’

    আরও দেখুন
    গাণিতিক
    জ্যোতির্বিদ্যার
    গণিতে
    আলোর
    আলো
    astronomical
    গণিত
    বিজ্ঞান
    light
    গণিতের

    কতিপয় বিজ্ঞানী নতুন একগুচ্ছ অসম্ভাব্যতা তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো, মহাবিস্ফোরণের আগে কী ঘটেছিল, আমরা তা কখনো জানতে পারব না (কিংবা মহাবিস্ফোরণ হয়েছিল কেন)। এমনকি আমরা থিওরি অব এভরিথিং কখনো অর্জন করতে পারব না।

    পদার্থবিদ জন হুইলার প্রথম অসম্ভাব্যতা নিয়ে মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘দুই শ বছর আগে, আপনি যে কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন, “আমরা কি কোনো দিন বুঝতে পারব প্রাণ কীভাবে বাস্তবে রূপ নিল?” তিনি হয়তো বলতেন, “উদ্ভট! অসম্ভব!” কেউ যখন আমাকে প্রশ্ন করে, “মহাবিশ্ব কীভাবে বাস্তব রূপ লাভ করল, তা কি আমরা কখনো বুঝতে পারব?” তখন আমারও ঠিক একই অনুভূতি হয়।’

    আরও দেখুন
    বৈজ্ঞানিক
    light
    বিজ্ঞান
    গণিত
    সায়েন্স
    গণিতে
    আলোর
    বিজ্ঞানের
    গণিতের
    আলো

    জ্যোতির্বিদ জন ব্যারো আরও বলেছেন, ‘আলোর গতি সীমাবদ্ধ। তাই মহাবিশ্বের কাঠামো সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানও সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। আমরা কখনো জানতে পারব না মহাবিশ্ব অসীম, নাকি সসীম, এর কোনো শুরু ছিল, নাকি এর কোনো শেষ আছে। আমরা এটাও জানতে পারব না যে মহাবিশ্বের সব জায়গায় পদার্থবিজ্ঞানের কাঠামো একই কি না, কিংবা মহাবিশ্ব চূড়ান্তভাবে একটা সুশৃঙ্খল, নাকি শৃঙ্খলাহীন জায়গা…। মহাবিশ্বের শুরু থেকে এর শেষ পর্যন্ত মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে বড় প্রশ্নগুলোও জানতে পারব না। এ সবই অমীমাংসিত থেকে যাবে।’

    আরও দেখুন
    light
    বিজ্ঞান
    বৈজ্ঞানিক
    গণিতের
    গাণিতিক
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    আলোর
    গণিত
    সায়েন্স
    জ্যোতির্বিদ্যার

    আমরা কখনোই জানতে পারব না—এ কথা বলে ব্যারো নিশ্চিতভাবেই মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক কথা বলেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এসব শাশ্বত প্রশ্ন দূর করা সম্ভব এবং তার কাছে যাওয়াও সম্ভব। আমাদের জ্ঞানের পরম সীমানার প্রতিনিধিত্ব করার বদলে এসব অসম্ভাব্যতাকে হয়তো পরের প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের জন্য অপেক্ষমাণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখাই ভালো। এই সীমাবদ্ধতাগুলো পাই ক্রাস্টের মতো, যা বানানোই হয় ভেঙে ফেলার জন্য।

    মহাবিস্ফোরণের আগে যুগ শনাক্ত করা

    মহাবিস্ফোরণের ক্ষেত্রে, একটি নতুন ধরনের শনাক্তকারী যন্ত্র বানাতে হবে। সনাতন এসব প্রশ্নের অনেকগুলোর হয়তো মীমাংসা করতে পারবে যন্ত্রটি। মহাকাশে বর্তমানে আমাদের বিকিরণ শনাক্তকারী যন্ত্রটি শুধু মহাবিস্ফোরণের ৩ লাখ বছর পরের নিঃসৃত বিকিরণ শনাক্ত করতে পারে। তখন কেবল প্রথম পরমাণু গঠিত হয়েছে। এই মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনকে মহাবিস্ফোরণের পরের ৩ লাখ বছরের আগের কোনো সময়ে অনুসন্ধান চালানো অসম্ভব। কারণ মহাবিস্ফোরণের প্রকৃত অগ্নিগোলা এতই উত্তপ্ত আর এলোমেলো ছিল যে সেখান থেকে ব্যবহারযোগ্য কোনো তথ্য তুলে আনা সম্ভব নয়।

    আরও দেখুন
    বৈজ্ঞানিক
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    আলোর
    গাণিতিক
    astronomical
    বিজ্ঞান
    জ্যোতির্বিদ
    গণিত
    আলো
    বিজ্ঞানের

    কিন্তু আমরা যদি অন্য কোনো ধরনের বিকিরণ বিশ্লেষণ করি, তাহলে হয়তো মহাবিস্ফোরণের আরও কাছের কোনো সময়ে পৌঁছানো যাবে। যেমন নিউট্রিনোর পথ অনুসরণ করলে মহাবিস্ফোরণের আরও কাছে যাওয়া সম্ভব (নিউট্রিনো অধরা, কোথাও বাধা পড়ে না। তাই গোটা সৌরজগৎ কঠিন সিসা দিয়ে বানানো হলেও নির্বিঘ্নে তা পাড়ি দিয়ে চলে যেতে পারে তারা)। নিউট্রিনো বিকিরণ আমাদের মহাবিস্ফোরণের কয়েক সেকেন্ড পরের সময়ে নিয়ে যেতে পারবে।

    তবে মহাবিস্ফোরণের চরম রহস্য হয়তো উন্মোচিত হবে গ্র্যাভিটি ওয়েভ (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) বা মহাকর্ষ তরঙ্গ পরীক্ষার মাধ্যমে। এটি এমন ধরনের তরঙ্গ যা স্থান-কালের বুননের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। এ ব্যাপারে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ রকি কোব বলেন, ‘নিউট্রিনো পটভূমি ধর্ম পরিমাপ করে আমরা মহাবিস্ফোরণের এক সেকেন্ড পরের অবস্থা দেখতে পারব। তবে স্ফীতি এলাকা থেকে আসা মহাকর্ষ তরঙ্গ মহাবিস্ফোরণের ১০^-৩৫ পরের মহাবিশ্বের ধ্বংসাবশেষ।

    মহাকর্ষ তরঙ্গ সম্পর্কে প্রথম অনুমান করেছিলেন আইনস্টাইন, ১৯১৬ সালে। এরপর ধীরে ধীরে জ্যোতির্বিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান হাতিয়ারে পরিণত হয় এটি। ঐতিহাসিকভাবে যখনই নতুন ধরনের বিকিরণ ব্যবহার করা হয়েছে, তখনই নতুন এক যুগের সূচনা হয়েছে। বিকিরণের প্রথম রূপটি ছিল দৃশ্যমান আলো। সেটি ব্যবহার করে সৌরজগৎ নিয়ে অনুসন্ধান চালান গ্যালিলিও। দ্বিতীয় ধরনের বিকিরণটি ছিল রেডিও ওয়েভ বা বেতার তরঙ্গ। এ তরঙ্গের মাধ্যমে আমরা ছায়াপথের মাঝখানে অনুসন্ধান চালিয়ে একসময় কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে পেয়েছি। মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তকারী যন্ত্র হয়তো সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করতে পারবে।

    এক অর্থে মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্ব থাকতেই হবে। বহু পুরোনো সেই প্রশ্নটির কথা ভাবুন : হঠাৎ করে সূর্য হারিয়ে গেলে কী ঘটবে? নিউটনের মতে, এই প্রভাব সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারব আমরা। পৃথিবী শিগগিরই তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গাঢ় অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। এমন প্রভাবের কারণ হলো, নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রে বেগের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। তাই বলগুলো নিমেষেই গোটা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আইনস্টাইনের মতে, কোনো কিছুই আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে চলতে পারে না। কাজেই সৌরজগৎ থেকে হঠাৎ সূর্য হারিয়ে গেলে সে তথ্য পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৮ মিনিট। অন্য কথায়, মহাকর্ষের গোলীয় শক ওয়েভ সূর্য থেকে নির্গত হয়, তারপর একসময় পৃথিবীতে আঘাত হানে। এই মহাকর্ষ তরঙ্গের গোলক বা বলয়ের বাইরে, দেখা যাবে যে সূর্য তখনো স্বাভাবিকভাবে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ সূর্যের হারিয়ে যাওয়ার তথ্য তখনো পৃথিবীতে পৌঁছায়নি। তবে মহাকর্ষ তরঙ্গের এই বলয়ের ভেতরে সূর্য ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে। কারণ এখানে মহাকর্ষের প্রসারিত শক ওয়েভ আলোর গতিতে ভ্রমণ করে।

    মহাকর্ষ তরঙ্গের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার আরেকটা উপায় হচ্ছে, অনেক বড় একটি বিছানার চাদরের কথা কল্পনা করা। আইনস্টাইনের মতে, স্থান-কাল হলো একটি বুনন, যা সংকুচিত বা প্রসারিত হতে পারে। ঠিক যেন বিছানার চাদরের মতো। আমরা যদি বিছানার চাদরটি আঁকড়ে ধরে বারবার ঝাড়তে থাকি, তাহলে দেখতে পাব যে বিছানার চাদরের পৃষ্ঠ বরাবর তরঙ্গের ঢেউ উঠছে এবং তা একটি নির্দিষ্ট বেগে চলাচল করছে। একই উপায়ে মহাকর্ষ তরঙ্গকেও ভ্রমণরত তরঙ্গ হিসেবে দেখা যায়, যা স্থান-কালের বুনন বরাবর চলাচল করে।

    পদার্থবিজ্ঞানে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো মহাকর্ষ তরঙ্গ। বড় ধরনের মহাকর্ষ শনাক্তকারী যন্ত্র ২০০৩ সালে প্রথমবার কাজে নেমেছে। এই ডিটেক্টরের নাম লাইগো (লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি)। ২৫ মাইল লম্বা এই ডিটেক্টরটির একটি ওয়াশিংটনের হ্যানফোর্ডে এবং আরেকটি লুইজিয়ানার লিভিংস্টোন প্যারিসে অবস্থিত। ৩৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বানানো এই লাইগো নিউট্রন স্টার ও কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে সৃষ্ট বিকিরণ শনাক্ত করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। [লাইগোতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি লাইগো এবং ভারগো যৌথভাবে প্রথমবার মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করার ঘোষণা দেয়। প্রায় ৫ মাস আগে ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই তরঙ্গ শনাক্ত করে লাইগো। পৃথিবী থেকে ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের বিশাল ভরের দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের কারণে এই মহাকর্ষ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল। কৃষ্ণগহ্বর দুটির মধ্যে একটি ছিল সূর্যের চেয়ে ৩০ গুণ ও আরেকটি ৩৫ গুণ ভারী। এই তরঙ্গ শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে ২০১৭ সালে নোবেল পুরস্কার পান রেইনার ওয়েস, কিপ থর্ন ও ব্যারি ব্যারিস।—অনুবাদক]

    পরবর্তী বড় পদক্ষেপ শুরু হবে ২০১৫ সালে। তখন মহাবিশ্ব সৃষ্টির মুহূর্তের মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করতে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে পুরোপুরি নতুন ধরনের কয়েকটি স্যাটেলাইট। তিনটি স্যাটেলাইট নতুন ডিটেক্টর লিসা (লেজার ইন্টারফেরোমিটার স্পেস অ্যানটেনা) বানানো হবে। এটি নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির যৌথ প্রজেক্ট। লিসাকে (LISA) সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। মহাবিস্ফোরণের ১ সেকেন্ডের ট্রিলিয়ন ভাগের ১ ভাগ সময় পরের মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারবে এই স্যাটেলাইটগুলো। মহাবিস্ফোরণ থেকে আসা মহাকর্ষ তরঙ্গ যদি এখনো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকে, তাহলে তা এই স্যাটেলাইটে আঘাত হানবে। এই তরঙ্গ লেজার বিমকে ব্যাঘাত ঘটাবে। এই বিঘ্ন থেকেই নিখুঁতভাবে মহাবিশ্বের সৃষ্টি মুহূর্তের বা শিশু মহাবিশ্বের ছবি পাওয়া যাবে। [২০১৭ সালে লিসা স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর কথা থাকলেও পরে তা উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়। ২০৩০ সালের দিকে এটি উৎক্ষেপণ করা হতে পারে।—অনুবাদক]

    লিসা তিনটি স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত, যারা সূর্যের চারপাশে তিনটি বিন্দুতে অবস্থান করে একটি ত্রিভুজ গঠন করে পাক খাবে। প্রতিটি স্যাটেলাইটে ৩০ লাখ (৩ মিলিয়ন) মাইল লম্বা লেজার বিম সংযুক্ত থাকবে। এর মাধ্যমে এটি হয়ে উঠবে সর্বকালের সবচেয়ে বড় যন্ত্র। তিনটি স্যাটেলাইটের এ ব্যবস্থাটি পৃথিবী থেকে ৩০ মিলিয়ন মাইল দূর থেকে সূর্যের চারপাশে ঘুরবে।

    প্রতিটি স্যাটেলাইট যে লেজার রশ্মি নিঃসরণ করবে, তার শক্তির পরিমাণ মাত্র অর্ধেক ওয়াট। অন্য দুটি স্যাটেলাইট থেকে আসা লেজার রশ্মির সঙ্গে তুলনা করলে প্রতিটি স্যাটেলাইট আলোর একটি ব্যতিচার নকশা গঠন করবে। কোনো মহাকর্ষ তরঙ্গ এই লেজার রশ্মিগুলোতে আঘাত হানলে এই ব্যতিচার নকশা বদলে যাবে এবং স্যাটেলাইটগুলো এই বাধা শনাক্ত করতে পারবে। (মহাকর্ষ তরঙ্গ স্যাটেলাইটকে কাঁপায় না। এটি আসলে তিনটি স্যাটেলাইটের মধ্যখানের স্থানে একটি বিকৃতির সৃষ্টি করবে।)

    লেজার রশ্মিগুলো খুব দুর্বল হলেও তাদের যথার্থতা অবাক করার মতো। তারা বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ভাগের মধ্যে ক্ষুদ্র ১ ভাগ কম্পন শনাক্ত করতে পারবে। অনেকটা পরমাণুর আকারের ১০০ ভাগের মধ্যে ১ ভাগ পরিমাণ করার মতো। প্রতিটি লেজার রশ্মি ৯ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূর থেকে আসা মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারবে। এটিই দৃশ্যমান মহাবিশ্বের অধিকাংশ এলাকা।

    মহাবিস্ফোরণের আগের বিভিন্ন চিত্রের মধ্যে সম্ভাব্য পার্থক্য করার মতো সংবেদনশীল হবে লিসা। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে এখন অন্যতম জনপ্রিয় বিষয় মহাবিশ্বের মহাবিস্ফোরণের আগের (প্রাক্-মহাবিস্ফোরণ) চরিত্র গণনা করা। মহাবিস্ফোরণের পর মহাবিশ্ব কীভাবে বিবর্তিত হলো, তা বর্তমানে বেশ ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে স্ফীতি তত্ত্ব। কিন্তু মহাবিস্ফোরণ কেন সংঘটিত হলো, তা স্ফীতি তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে পারে না। মহাবিস্ফোরণের আগের যুগের অনুমিত মডেলগুলো ব্যবহার করে মহাবিস্ফোরণ থেকে নিঃসৃত মহাকর্ষ বিকিরণ গণনা করাই এখন আমাদের লক্ষ্য। প্রাক্-মহাবিস্ফোরণ নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব ভিন্ন ভিন্ন অনুমান করে। যেমন মহাবিস্ফোরণ থেকে নিঃসৃত বিকিরণের অনুমান করেছিল বিগ স্প্যালা থিওরি। স্ফীতি তত্ত্বের অনুমিত বিকিরণ থেকে এটি আবার আলাদা। কাজেই লিসা হয়তো বিভিন্ন তত্ত্ব বাতিল করে দিতে পারবে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এই প্রাক্-মহাবিস্ফোরণ মডেলগুলোকে সরাসরি পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব নয়। কারণ, এর সঙ্গে স্বয়ং সময় সৃষ্টির আগের মহাবিশ্ব সম্পর্কে উপলব্ধিও জড়িত। তবে এই মডেলগুলো পরোক্ষভাবে পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব। কারণ, এসব তত্ত্বের প্রতিটিই মহাবিস্ফোরণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বিকিরণ বর্ণালির নিঃসরণের কথা অনুমান করে।

    পদার্থবিদ কিপ থর্ন লিখেছেন, ‘২০০৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে মহাবিস্ফোরণের পরম বিন্দু থেকে আসা মহাকর্ষ তরঙ্গ আবিষ্কৃত হবে। এতে নতুন একটা যুগের সূচনা করবে, যা স্থায়ী হবে অন্তত ২০৫০ সাল পর্যন্ত। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে মহাবিস্ফোরণের পরম বিন্দু সম্পর্কে বিস্তারিত উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে যে স্ট্রিং থিওরির কিছু সংস্করণ মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব হিসেবে সঠিক।

    প্রাক্-মহাবিস্ফোরণ নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বের মধ্যে যদি লিসা কোনো পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এর উত্তরসূরি বিগ ব্যাং অবজারভার (বিবিও) হয়তো সেটি করতে পারবে। এর চালু করার সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সাল। গোটা মহাবিশ্বের নিউট্রন স্টার, কৃষ্ণগহ্বরসহ বাইনারি সিস্টেমগুলো স্ক্যান করতে পারবে বিবিও স্যাটেলাইট। নিউট্রন স্টার ও কৃষ্ণগহ্বরগুলোর ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে ১০০০ ভাগ কম হলেও বিবিও (BBO) তা শনাক্ত করতে পারবে। তবে এর প্রধান লক্ষ্য হলো মহাবিস্ফোরণের স্ফীতি পর্যায় শুরু হওয়ার সময়ে যে মহাকর্ষ তরঙ্গ নিঃসৃত হয়েছিল, তা বিশ্লেষণ করা। সে জন্য বিবিও বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে তা স্ফীতিশীল মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের অনুমান অনুসন্ধান চালাতে পারে।

    কিছু ক্ষেত্রে লিসার সঙ্গে বিবিওর ডিজাইনের মিল আছে। এতেও তিনটি স্যাটেলাইট থাকবে, যারা সূর্যের চারপাশে আবর্তন করবে। প্রতিটি স্যাটেলাইট পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব হবে ৫০ হাজার কিলোমিটার (লিসার স্যাটেলাইটগুলোর চেয়ে এই স্যাটেলাইটগুলো অনেক বেশি কাছাকাছি থাকবে)। ৩০০ ওয়াটের লেজার রশ্মি ছুড়তে সক্ষম হবে প্রতিটি স্যাটেলাইট। এর মাধ্যমে লাইগো ও লিসার মহাকর্ষ তরঙ্গের কম্পাঙ্কের মধ্যবর্তী কম্পাঙ্ক অনুসন্ধান করতে পারবে এটি। এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ শূন্যস্থান পূরণ হবে। (১০ থেকে ৩০০০ হার্জের মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারবে লিসা। অন্যদিকে ১০ মাইক্রোহার্জ থেকে ১০ মিলিহার্জ কম্পাঙ্কের মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে লাইগো। তবে বিবিও এই উভয় পরিসরের কম্পাঙ্ক শনাক্ত করতে পারবে।)

    ‘২০৪০ সালের মধ্যে আমরা কোয়ান্টাম মহাকর্ষের সূত্রগুলো ব্যবহার করে অনেকগুলো গভীর ও ধাঁধার মতো অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দিতে পারব।’ কিপ থর্ন লিখেছেন, ‘এর মধ্যে থাকবে মহাবিস্ফোরণের পরম বিন্দুর আগে কী ছিল, কিংবা পরম বিন্দুর আগে আসলেই ‘আগে’ বলতে কিছু আছে কি না? এর বাইরেও কি অন্য কোনো মহাবিশ্বের অস্তিত্ব আছে? আর তা-ই যদি হয়, তাদের পরস্পরের সঙ্গে বা আমাদের মহাবিশ্বের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কী? পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কি ইন্টারস্টেলার ভ্রমণের জন্য অতি উন্নত কোনো সভ্যতাকে ওয়ার্মহোল বানানোর ও তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিয়েছে? সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে টাইম মেশিন বানিয়ে তা দিয়ে সময়ের পেছনে পরিভ্রমণ করার ক্ষমতা দিয়েছে?’

    এখানে মূল ব্যাপারটি হলো, কয়েক দশক পর মহাকাশে স্থাপিত মহাকর্ষ তরঙ্গ ডিটেক্টরগুলো থেকে পাওয়া পর্যাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে প্রাক্- মহাবিস্ফোরণ-সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোর মধ্যে পার্থক্য করা যাবে।

    মহাবিশ্বের সমাপ্তি

    কবি টি এস ইলিয়ট একবার প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মহাবিশ্বের সমাপ্তি কি কোনো বিস্ফোরণ, নাকি মৃদু গর্জনের মধ্য দিয়ে হবে?’ আর কবি রবার্ট ফ্রস্টের জিজ্ঞাসা ছিল, ‘আমরা কি আগুন নাকি বরফে পরিণত হয়ে শেষ হয়ে যাব?’ সর্বশেষ পাওয়া প্রমাণ ইঙ্গিত করছে, বিগ ফ্রিজ বা মহাশীতলতার মাধ্যমে মহাবিশ্বের অন্তিম সমাপ্তি ঘটবে। তখন মহাবিশ্বের তাপমাত্রা দাঁড়াবে পরম শূন্যের কাছাকাছি। ভয়াবহ ওই অবস্থায় সব বুদ্ধিমান প্রাণের জীবনপ্রদীপ দপ করে নিভে যাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা কি কখনো নিশ্চিত হতে পারব?

    কয়েকজন আবার আরেকটি অসম্ভব রকম প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা, মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে, সেটি কি আমরা কখনো জানতে পারব? কারণ, ভবিষ্যতে এ ঘটনাটি ঘটবে আরও ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছর পর। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, ডার্ক এনার্জি বা গুপ্তশক্তি বা ভ্যাকুয়াম এনার্জি ছায়াপথগুলোকে পরস্পরের কাছ থেকে সর্বোচ্চ হারে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মহাবিশ্ব কোনো পলায়নরত অবস্থায় আছে। এ ধরনের প্রসারণ মহাবিশ্বের তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে। তাতে চূড়ান্তভাবে বিগ ফ্রিজের দিকে নিয়ে যাবে মহাবিশ্বকে। কিন্তু এই প্রসারণ কি ক্ষণস্থায়ী? ভবিষ্যতে কি এই প্রসারণ উল্টো দিকে যাবে?

    যেমন, বিগ স্প্যালা থিওরির (Big Splat theory) স্তরের মধ্যে সংঘর্ষ হয় ও মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। দেখে মনে হচ্ছে, স্তরগুলো পর্যায়ক্রমে সংঘর্ষের মুখে পড়ে। তা-ই যদি হয়, তাহলে এখন যে প্রসারণ বিগ ফ্রিজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তা সাময়িক অবস্থামাত্র। এটি পরে নিজে থেকেই উল্টো দিকে প্রবাহিত হবে।

    মহাবিশ্বের বর্তমানের ত্বরণ নিয়ন্ত্রণ করছে ডার্ক এনার্জি বা গুপ্তশক্তি। এই শক্তির পেছনে হয়তো মহাজাগতিক ধ্রুবক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কাজেই এই রহস্যময় ধ্রুবক বা ভ্যাকুয়ামের শক্তি সম্পর্কে বোঝাটা জরুরি। এই ধ্রুবক কি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, নাকি তা আসলে ধ্রুব রাশি? বর্তমানে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কেউ কিছু জানে না। পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণনরত ডব্লিউএমএপি স্যাটেলাইট থেকে আমরা জানি, এই মহাজাগতিক ধ্রুবক হয়তো মহাবিশ্বের বর্তমান ত্বরণের পেছনে কাজ করছে। কিন্তু এটি চিরস্থায়ী নাকি চিরস্থায়ী নয়, তা এখনো জানা যায়নি।

    সমস্যাটি বেশ পুরোনো। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন প্রথম এই কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট বা মহাজাগতিক ধ্রুবকের সূচনা করেন। তার আগের বছর সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রস্তাব করার পর, নিজের তত্ত্বের মহাজাগতিক প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করছিলেন তিনি। বিস্ময়ের সঙ্গে তিনি দেখতে পান, মহাবিশ্ব গতিশীল। মানে হলো, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে, নয়তো তা গতিশীল। কিন্তু এই ধারণাটিকে সেকালের জানা তথ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে হলো আইনস্টাইনের কাছে।

    বেন্টলি প্যারাডক্স মোকাবিলা করলেন আইনস্টাইন। খোদ নিউটনও বিশ্বাস করতেন এ প্যারাডক্সে। ১৬৯২ সালে রেভারেন্ড রিচার্ড বেন্টলি নির্দোষ এক চিঠি লেখেন নিউটনকে। চিঠিতে ছিল এক বিধ্বংসী প্রশ্ন। বেন্টলির জিজ্ঞাসা, নিউটনের মহাকর্ষ যদি সর্বদা আকর্ষণধর্মী হয়, তাহলে মহাবিশ্ব চুপসে বা ভেঙে পড়ছে না কেন? মহাবিশ্বে পরস্পরকে আকর্ষণ করা সসীমসংখ্যক নক্ষত্র থাকলে নক্ষত্রদের পরস্পরের কাছে চলে আসা উচিত। এভাবে মহাবিশ্ব চুপসে অগ্নিগোলায় পরিণত হওয়ার কথা। চিঠির এই প্রশ্নে বেশ বেকায়দায় পড়েন নিউটন। কারণ, এটি তার মহাকর্ষ তত্ত্বের গুরুতর ত্রুটির ইঙ্গিত করে। মহাকর্ষের যেকোনো তত্ত্ব আকর্ষণধর্মী হলে সহজাতভাবে মহাবিশ্ব অস্থিতিশীল হয়। সসীমসংখ্যক নক্ষত্র মহাকর্ষের অধীনে পতিত হয়ে অনিবার্যভাবে চুপসে যাবে।

    চিঠির উত্তরে নিউটন লেখেন, স্থিতিশীল মহাবিশ্ব সৃষ্টির একমাত্র উপায় নক্ষত্রের সংখ্যা অসীম ও সুষম হওয়া। তাতে সব দিকে আকর্ষণ অনুভব করবে প্রতিটি নক্ষত্র। ফলে সব বল বাতিল হয়ে যাবে। এটা বেশ চতুর কৌশল। তবে যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার কারণে নিউটন একসময় বুঝতে পারেন, এ ধরনের স্থিতিশীলতা বিভ্রান্তিকর। তাসের ঘরের মতো ক্ষুদ্র কম্পনেও পুরো ব্যাপারটা ধসে পড়বে। এটা আপাতস্থিতিশীলতা। অর্থাৎ সামান্যতম উত্তেজনার কারণে ধসে পড়ার আগ পর্যন্ত এটা সাময়িকভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে। নিউটন সিদ্ধান্তে আসেন, স্বয়ং ঈশ্বর অনিবার্যভাবে পর্যায়ক্রমে নক্ষত্রগুলোকে কিছুটা ধাক্কা দেন। তাতে মহাবিশ্ব আর চুপসে যায় না।

    অন্য কথায়, মহাবিশ্বকে সুবিশাল একটি ঘড়ি হিসেবে দেখতে পেলেন নিউটন। সময়ের শুরুতে এর চাবি টেনে দিয়েছেন ঈশ্বর। এরপর তা নিউটনের সূত্রগুলো মেনে চলছে। স্বর্গীয় কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই এরপর থেকে চিরকাল মহাবিশ্ব চলছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তবে নিউটনের মতে, ঈশ্বর প্রয়োজনমতো নক্ষত্রগুলোতে হস্তক্ষেপ করেন। এ কারণে মহাবিশ্ব চুপসে কোনো অগ্নিগোলায় পরিণত হয়নি।

    বেন্টলির এই প্যারাডক্সে ১৯১৬ সালে হোঁচট খেলেন স্বয়ং আইনস্টাইনও। তাঁর সমীকরণগুলো সঠিকভাবেই বলল যে মহাবিশ্ব গতিশীল। মহাবিশ্ব হয় প্রসারিত হচ্ছে, নয়তো সংকুচিত হচ্ছে। আবার স্থির মহাবিশ্ব অস্থিতিশীল ও তা মহাকর্ষের কারণে ভেঙে পড়ে। কিন্তু তখনকার জ্যোতির্বিদেরা জোর দাবি জানাতে লাগলেন, মহাবিশ্ব স্থিতিশীল ও অপরিবর্তনীয়। কাজেই জ্যোতির্বিদদের পর্যবেক্ষণের কাছে নত হলেন আইনস্টাইন। এরপর তিনি তাঁর সমীকরণে মহাজাগতিক ধ্রুবক যোগ করেন। এটি মহাকর্ষের বিপরীত বল, যা মহাকর্ষের টানের কারণে মহাবিশ্বের চুপসে যাওয়া ঠেকাতে নক্ষত্রগুলোকে পরস্পরের কাছে আসতে দূরে ঠেলে দেয়। (এই মহাকর্ষের বিপরীত বল শূন্যস্থানের মধ্যে ধারণকৃত শক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এতে স্থানের অনেক বড় শূন্যতার মধ্যে বড় ধরনের অদৃশ্য শক্তি থাকে।) ধ্রুবকটি নিখুঁতভাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল মহাকর্ষের আকর্ষী বলকে বাতিল করতে।

    পরে এডুইন হাবল ১৯২৯ সালে প্রমাণ করলেন, মহাবিশ্ব সত্যিই প্রসারিত হচ্ছে। তখন আইনস্টাইন বললেন, মহাজাগতিক ধ্রুবক তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল। কিন্তু ৭০ বছর পর দেখা যাচ্ছে, আইনস্টাইনের সেই মহাভুল বা মহাজাগতিক ধ্রুবক হয়তো মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তির জোগানদাতা। এটি মহাবিশ্বের ৭৩ শতাংশ বস্তুশক্তির আধার। (অন্যদিকে আমাদের দেহের গাঠনিক উপাদানের পরিমাণ মহাবিশ্বের মাত্র ০.০৩ শতাংশ। আইনস্টাইনের মহাভুলই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণ করবে বলে মনে হচ্ছে।

    কিন্তু এই মহাজাগতিক ধ্রুবক এল কোথা থেকে? বর্তমানে এর উত্তর জানা নেই। কালের শুরুতে মহাকর্ষের বিপরীত বল (প্রতি-মহাকর্ষ) হয়তো বেশি ছিল। সে কারণে মহাবিশ্ব স্ফীত হয়ে জন্ম দেয় এক মহাবিস্ফোণের। তারপর হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এটি। কিন্তু কেন তা হারিয়ে গেল, তা এখনো অজানা। (মহাবিশ্ব এখনো প্রসারিত হচ্ছে, কিন্তু বেশ ধীরগতিতে।) তারপর মহাবিস্ফোরণের প্রায় ৮ বিলিয়ন বছর পর প্রতি-মহাকর্ষ বল আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এর কারণেই ছায়াপথগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ও মহাবিশ্বের ত্বরণ ঘটছে।

    কাজেই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণ করা কি অসম্ভব? হয়তো না। বেশির ভাগ পদার্থবিদ বিশ্বাস করেন, কোয়ান্টাম প্রভাবই চূড়ান্তভাবে মহাজাগতিক ধ্রুবকের আকার নির্ধারণ করে। কোয়ান্টাম তত্ত্বের একটি আদি সংস্করণ ব্যবহার করে এক সরল গণনায় দেখা যায়, মহাজাগতিক ধ্রুবক ১০১২০ গুণ কম-বেশি হচ্ছে। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় অসংগতি।

    তবে পদার্থবিদেরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে এই অস্বাভাবিকতার সহজ অর্থ হলো আমাদের একটি কোয়ান্টাম মহাকর্ষের তত্ত্ব দরকার। যেহেতু মহাজাগতিক ধ্রুবক কোয়ান্টাম সংশোধনের মাধ্যমে উঠে আসে, কাজেই একটি থিওরি অব এভিরিথিং বা সর্বজনীন তত্ত্বের প্রয়োজন। অর্থাৎ এমন একটি তত্ত্ব, যা শুধু স্ট্যান্ডার্ড মডেলই গণনা করার অনুমোদন দেবে না, সেই সঙ্গে মহাজাগতিক ধ্রুবকের মানও নির্ণয় করতে পারবে। এর মাধ্যমেই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণ করা যাবে।

    কাজেই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণের জন্য একটি সর্বজনীন তত্ত্বের প্রয়োজন। মজার ব্যাপার হলো, কিছু পদার্থবিদের বিশ্বাস, কোনো সর্বজনীন তত্ত্ব অর্জন করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।

    থিওরি অব এভরিথিং

    আগেই বলেছি, থিওরি অব এভরিথিংয়ের দাবিদার প্রধান প্রার্থী হলো স্ট্রিং থিওরি। অবশ্য স্ট্রিং থিওরি এই দাবি করতে পারে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও আছে। এদের একটি দলে আছে এমআইটির অধ্যাপক ম্যাক্স টেগমার্কের মতো কিছু মানুষ। টেগমার্ক লিখেছেন, ‘আমার ধারণা, ২০৫৬ সালে আমরা এমন টি-শার্ট কিনতে পারব, যার গায়ে মহাবিশ্বের ভৌত সূত্রগুলো ঐক্যবদ্ধ করে বর্ণিত সমীকরণ ছাপা থাকবে।’ অন্যদিকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সমালোচকদের উদীয়মান একটি দলও আছে এখানে। তাদের দাবি, স্ট্রিং মেনে নেওয়ার কোনো কারণ এখনো পাওয়া যায়নি। অনেকে বলেন, স্ট্রিং থিওরি নিয়ে কতটা শ্বাসরুদ্ধকর লেখা ছাপা হলো বা কতটা টিভি ডকুমেন্টারি তৈরি হলো, তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ, এ তত্ত্বের এখনো কোনো পরীক্ষাযোগ্য সত্যতা পাওয়া যায়নি। সমালোচকেরা দাবি করেন, তত্ত্বটি থিওরি অব এভরিথিং তো নয়ই, বরং এটি অন্তঃসারশূন্য। ২০০২ সালে স্টিফেন হকিং পক্ষ পরিবর্তন করার পর এই বিতর্ক বেশ জমে উঠেছিল। একে অসম্পূর্ণ উপপাদ্য হিসেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, থিওরি অব এভরিথিং থাকা হয়তো গাণিতিকভাবেও অসম্ভব।

    বিস্ময়ের ব্যাপার, এ বিতর্কে পদার্থবিদদের বিরুদ্ধে লড়ছেন খোদ পদার্থবিদেরা। কারণ, এর লক্ষ্য অধরা হলেও বেশ অভিজাত। প্রকৃতির সব সূত্র ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা দার্শনিক ও পদার্থবিদদের প্রায় হাজার বছর ধরে উত্তেজিত ও প্রলুব্ধ করে রেখেছে। সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘সবকিছুর ব্যাখ্যা জানা আমার কাছে দুর্দান্ত ব্যাপার মনে হয়, এটি কেন এল, এটি কেন ধ্বংস হয়, এটি কেন হয়।’

    থিওরি অব এভরিথিংয়ের প্রথম গুরুতর প্রস্তাব ওঠে সেই খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে। তখন গ্রিক পিথাগোরিয়ানরা সংগীতের গাণিতিক সূত্র উদ্ঘাটনের কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন। লির বাদ্যযন্ত্রের তারের কম্পন ও নোড বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখালেন, সংগীত অসাধারণ সরল গণিত মেনে চলে। এরপর তাঁরা অনুমান করলেন, প্রকৃতির সবকিছুকে লির তারের ঐকতান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। (এক অর্থে পিথাগোরিয়ানদের সেই স্বপ্নই আবার ফিরিয়ে এনেছে স্ট্রিং থিওরি।)

    আধুনিক যুগে বিশ শতকের পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সব বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী একটি ঐক্যবদ্ধ ফিল্ড থিওরি প্রণয়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তবে ফ্রিম্যান ডাইসন সতর্ক করে বলেছেন, ‘পদার্থবিদ্যার জমিন বিভিন্ন ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বের মৃতদেহ বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে।

    ১৯২৮ সালে নিউইয়র্ক টাইমস বেশ চটকদার হেডলাইন করেছিল, ‘আইনস্টাইন অনেক বড় আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে; অনুপ্রবেশে ক্ষুব্ধ।’ এই খবর গণমাধ্যমে থিওরি অব এভরিথিং নিয়ে সাধারণের উন্মাদনা উসকে দিয়েছিল। শিরোনামে বেশ জোরের সঙ্গে বলা হলো, ‘তত্ত্ব সম্পর্কে আলোড়ন দেখে আইনস্টাইন বিস্মিত। এক সপ্তাহ ধরে সাগরতীরে ১০০ সাংবাদিক অপেক্ষমাণ।’ সে সময় কয়েক শ সাংবাদিক বার্লিনে তাঁর বাড়ির চারপাশে দঙ্গল বেঁধে ছিলেন। এই জিনিয়াস বিজ্ঞানীকে শুধু একঝলক দেখার জন্য এবং একটা চটকদার শিরোনাম বাগানোর জন্য নিদ্রাহীনভাবে অবিরাম সেখানে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। তাঁদের কাছ থেকে বাঁচতে সেবার আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন আইনস্টাইন।

    আইনস্টাইনকে জ্যোতির্বিদ আর্থার এডিংটন লিখলেন, ‘জেনে হয়তো খুশি হবেন, আমাদের লন্ডনের অন্যতম বড় একটি দোকানের (সেলফ্রিজেস) জানালায় আপনার গবেষণাপত্রের (ছয় পৃষ্ঠা) লটকে দেওয়া হয়েছে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পথচারীরা যাতে সবটুকু পড়তে পারে, সে জন্যই এ ব্যবস্থা। এটা পড়ার জন্য বিপুল লোকসমাগম হয়।’ (১৯২৩ সালে এডিংটন তাঁর নিজের ঐক্যবদ্ধ ক্ষেত্রতত্ত্বের প্রস্তাব করেন। সেটি নিয়ে ১৯৪৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে গেছেন তিনি।)

    কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আরউইন শ্রোডিঙ্গার ১৯৪৬ সালে এক প্রেস কনফারেন্স আহ্বান করে নিজের ঐক্যবদ্ধ ক্ষেত্র তত্ত্বটির প্রস্তাব পেশ করেন। মজার ব্যাপার হলো, সেখানে উপস্থিত ছিলেন আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইমন ডি ভ্যালেরা। এক রিপোর্টার জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর তত্ত্বটি ভুল প্রমাণিত হলে তিনি কী করবেন। শ্রোডিঙ্গার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জবাব দিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমি সঠিক আছি। আর যদি ভুল হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমি চরম বোকামি করেছি।’ (আইনস্টাইন বিনীতভাবে এই তত্ত্বের ত্রুটিগুলোর দিকে ইঙ্গিত করলে সেবার বেশ অপদস্থ হতে হয়েছিল শ্রোডিঙ্গারকে।)

    ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বের সবচেয়ে কঠোর সমালোচক ছিলেন পদার্থবিদ ওলফগ্যাং পাউলি। আইনস্টাইনকে তিরস্কার করে তিনি বলেছিলেন, “ঈশ্বর যা ছিন্ন করেছেন, তা কোনো মানুষের একত্র করার সাধ্য নেই।’ যেকোনো অর্ধসমাপ্ত তত্ত্বকে তিনি নির্দয়ভাবে বিদ্রূপ করে বলতেন, ‘এটা এমনকি ভুলও নয়।’ কাজেই তিনি নিজেই যখন ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বের জ্বরে আক্রান্ত হলেন, তখন অবাক না হয়ে পারা যায় না। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৫০-এর দশকে তিনি নিজের ঐক্যবদ্ধ ক্ষেত্র তত্ত্বের প্রস্তাব করে বসেন পাউলি।

    ১৯৫৮ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইজেনবার্গ-পাউলি একীভূত তত্ত্ব উত্থাপন করেন পাউলি। দর্শকসারিতে সেদিন বসে ছিলেন স্বয়ং পদার্থবিদ নীলস বোর। কিন্তু তিনি মুগ্ধ হতে পারেননি। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে বোর চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে বসলেন, ‘পেছনে বসে থাকা আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তোমার তত্ত্বটি বেশ উদ্ভট। কিন্তু তত্ত্বটি যথেষ্ট উদ্ভট কি না, তা নিয়ে আমরা দ্বিধাবিভক্ত।’ সমালোচনাটি ছিল এক বিপর্যয়ের মতো। কারণ, এর আগে নিশ্চিত দাবি করা সবগুলো তত্ত্ব একে একে বাতিল করা হয়েছিল। তাই সত্যিকার একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বটিকে অবশ্যই অতীতের তত্ত্বগুলো থেকে আলাদা কিছু হতে হবে। হাইজেনবার্গ-পাউলির তত্ত্বটি এতই গতানুগতিক ছিল যে তা কোনোভাবে সত্য হতে পারে না। (সে বছর হাইজেনবার্গ রেডিওতে মন্তব্য করলেন, তাঁদের তত্ত্বে শুধু কয়েকটি তাত্ত্বিক বিবরণ যোগ করা বাকি আছে। তা শুনে পাউলি বেশ বিরক্ত হন। পাউলি তাঁর বন্ধুকে ফাঁকা আয়তক্ষেত্র এঁকে চিঠি পাঠান। তাতে ক্যাপশন লেখা ছিল, “বিশ্ব দেখুক আমি ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী টিটিয়ানের মতো আঁকতে পারি। এখানে শুধু তাত্ত্বিক বিবরণ নেই।’)

    স্ট্রিং থিওরির সমালোচনা

    আগে বলেছি, বর্তমানে থিওরি অব এভরিথিংয়ের মুখ্য (ও একমাত্র) পদপ্রার্থী হলো স্ট্রিং থিওরি। কিন্তু আবারও এতে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধীদের দাবি, শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী পদ পেতে হলে স্ট্রিং থিওরি নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতেই হবে। আপনার যদি সে যোগ্যতা না থাকে, তাহলে স্রেফ বেকার হয়ে যাবেন। এ মুহূর্তের প্রবণতা এটি, যা পদার্থবিদ্যার জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়।

    এই সমালোচনা শুনে আমি হাসি। কারণ, সব মানুষের উদ্যমের মতো পদার্থবিজ্ঞান হলো ট্রেন্ড ও ফ্যাশনের বিষয়। অসাধারণ তত্ত্বগুলোর ভাগ্য, বিশেষ করে সম্পূর্ণ নতুন মানবজ্ঞানের উত্থান-পতন তো থাকবেই। আসলে স্ট্রিং থিওরি ঐতিহাসিকভাবে পরিত্যক্ত, ধর্মভ্রষ্ট তত্ত্ব। আর ট্রেন্ডের প্রভাবের শিকার।

    স্ট্রিং থিওরির জন্ম ১৯৬৮ সালে। তখন একটি সূত্রে হোঁচট খেয়ে পড়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল ভেনেডিয়ানো আর ম্যাহিকো সুজুকি নামের পোস্টডকের দুই তরুণ। সূত্রটি দেখে মনে হচ্ছিল, অতিপারমাণবিক কণাদের সংঘর্ষের ব্যাখ্যা দিতে পারবে। কিন্তু বেশ অচিরেই বোঝা গেল, চমৎকার সূত্রটি কম্পমান স্ট্রিং বা সুতোর সংঘর্ষ থেকে পাওয়া সম্ভব। তবে ১৯৭৪ সালে তত্ত্বটি মারা পড়ল নিজের পথেই। কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিকস (কিউসিডি) বা কোয়ার্কের তত্ত্ব নামের নতুন এক তত্ত্ব ও শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ার চাপে অন্য সব তত্ত্ব সে সময় আক্ষরিক অর্থেই ঘুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে পড়ল। কিউসিডি নিয়ে কাজ করতে দলে দলে হামলে পড়তে লাগল লোকজন। তাতে স্ট্রিং থিওরির কথা সবাই বেমালুম ভুলে গেল। কোয়ার্ক মডেল নিয়ে যাঁরা কাজ করতেন, সেই পদার্থবিদদের ঝুলিতে সব ধরনের অর্থ তহবিল, লোভনীয় চাকরি আর বিভিন্ন স্বীকৃতি একে একে চলে যেতে লাগল।

    সেই অন্ধকার বছরগুলোর কথা আমার এখনো বেশ ভালোই মনে আছে। শুধু গোঁয়ারগোবিন্দ ও একগুঁয়ে জেদি কয়েকজন তখন স্ট্রিং থিওরি গবেষণা নিয়ে পড়েছিল। একসময় জানা গেল, স্ট্রিংগুলো শুধু ১০ মাত্রাতে কম্পিত হয়। তখন স্বভাবতই কৌতুকের নিশানায় পরিণত হলো তত্ত্বটি। স্ট্রিং থিওরির পথিকৃৎ ক্যাল টেকের জন সোয়ার্জের সঙ্গে মাঝে মাঝে এলিভেটরে ফাইনম্যানের দেখা হয়ে যেত। সর্বকালের সেরা রসিক বিজ্ঞানী ফাইনম্যান তখন জিজ্ঞেস করতেন, ‘আচ্ছা, জন, আজ তাহলে কয় মাত্রার মধ্যে আছ?’ আমরা মজা করে বলতাম, স্ট্রিং তাত্ত্বিকদের শুধু বেকারত্বের লাইনে খুঁজে পাওয়া যায়। (কোয়ার্ক মডেলের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী মারি গেল-মান আমাকে বিশ্বাস করে একবার বলেছিলেন, তিনি স্ট্রিং তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীদের প্রতি মমতা বোধ করেন। সে জন্য তিনি ‘বিপন্ন স্ট্রিং তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীদের জন্য প্রকৃতি সংরক্ষণ’ খুলেছেন, যাতে জন সোয়ার্জের মতো কোনো লোককে চাকরি হারাতে না হয়। )

    আজকের দিনে অনেক তরুণ পদার্থবিদ স্ট্রিং থিওরির ওপর গবেষণায় ব্যস্ত। এটি উল্লেখ করে স্টিভ ভাইনবার্গ লিখেছেন, ‘চূড়ান্ত তত্ত্বের জন্য বর্তমানে একমাত্র পদপ্রার্থীর উৎস হলো স্ট্রিং থিওরি। কাজেই এতে যে বহুসংখ্যক মেধাবী তরুণ তাত্ত্বিক কাজ করবে না, সেটা আশা করেন কীভাবে?’

    স্ট্রিং থিওরি কি পরীক্ষা করে দেখা অসম্ভব?

    বর্তমানে স্ট্রিং থিওরি নিয়ে অন্যতম বড় সমালোচনা হলো এটি পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব নয়। সমালোচকদের দাবি, এটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য ছায়াপথের সমান অ্যাটম স্ম্যাশার লাগবে।

    কিন্তু সমালোচকেরা একটি সত্য ভুলে যান যে বেশির ভাগ বিজ্ঞান প্রত্যক্ষভাবে নয়, পরোক্ষভাবে সম্পন্ন করা হয়। সূর্যকে সরাসরি পরীক্ষা করে দেখতে এখন পর্যন্ত কেউই সূর্যে যায়নি। কিন্তু তারপরও আমরা জানি সূর্য গঠিত হয়েছে হাইড্রোজেন দিয়ে। কারণ, তার বর্ণালি রেখা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়।

    কিংবা কৃষ্ণগহ্বরের কথাই ধরুন। কৃষ্ণগহ্বরের তত্ত্ব অনেক পুরোনো। ১৭৮৩ সালে এ বিষয়ে রয়্যাল সোসাইটির ফিলোসফিক্যাল ট্রান্সসেকশন্স-এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন জন মিশেল। সেখানে তিনি দাবি করেন, একটি নক্ষত্র এতই ভারী হতে পারে যে ‘ওই বস্তুর দেহ থেকে নিঃসৃত সব আলো তার নিজের মহাকর্ষের টানে আবারও তার কাছেই ফিরে যাবে।’ মিশেলের ডার্ক স্টার তত্ত্ব বহু শতাব্দী ধরে স্থবির হয়ে পড়ে ছিল। কারণ, এ বিষয়ে সরাসরি পরীক্ষা অসম্ভব ছিল সেকালে। ১৯৩৯ সালে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লেখেন স্বয়ং আইনস্টাইন। তাতে তিনি দেখান, প্রাকৃতিকভাবে এ ধরনের ডার্ক স্টার গঠিত হওয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সমালোচনাটি ছিল যে এসব ডার্ক স্টার সহজাতভাবেই পরীক্ষাযোগ্য নয়, কারণ, সংজ্ঞানুসারে তারা অদৃশ্য। তারপরও কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে আমাদের দারুণ সব প্রমাণ দিয়েছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। আমরা এখন বিশ্বাস করি, কোটি কোটি কৃষ্ণগহ্বর বিভিন্ন ছায়াপথের মাঝখানে লুকিয়ে থাকতে পারে। এমনকি অসংখ্য ভবঘুরে কৃষ্ণগহ্বর আমাদের নিজেদের ছায়াপথের মধ্যেও থাকতে পারে। কিন্তু মূল ব্যাপার হলো, কৃষ্ণগহ্বরের সব প্রমাণই পরোক্ষ। অর্থাৎ কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে আমরা তথ্য জোগাড় করি তার চারপাশে ঘূর্ণনরত অ্যাক্রিশন ডিস্ক বিশ্লেষণ করে। [কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে এতকাল পরোক্ষ প্রমাণ থাকলেও ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো একটি কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়ানো ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ ওই বছরের ১০ এপ্রিল এ বিষয়ে ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন।—অনুবাদক]

    আবার অনেক ‘অপরীক্ষাযোগ্য’ তত্ত্ব একসময় চূড়ান্তভাবে পরীক্ষাযোগ্য হয়ে ওঠে। ডেমোক্রিটাস প্রথম পরমাণুর প্রস্তাব করার দুই হাজার বছর পর পরমাণুর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। অথচ পরমাণুতত্ত্বে বিশ্বাস করার জন্য উনিশ শতকে লুডভিগ বোলজম্যানের মতো পদার্থবিদদের পেছনে মৃত্যু তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল। অথচ এখন পরমাণুর দুর্দান্ত ছবি আছে আমাদের কাছে। পাউলি নিজেই ১৯৩০ সালে নিউট্রিনোর ধারণার সূচনা করেন। অধরা এই কণাটি কোথাও শোষিত না হয়ে পুরো সৌরজগতের সমান কঠিন সিসার দেয়ালের বাধা পেরিয়ে যেতে পারে। পাউলি একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি চরম পাপ করেছি। এমন এক কণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি, যাকে কখনোই পর্যবেক্ষণ করা যায় না।’ একসময় নিউট্রিনোকে শনাক্ত করা অসম্ভব ছিল। কাজেই বেশ কয়েক দশক ধরে একে বিজ্ঞান কল্পকাহিনির চেয়েও বেশি কিছু নয় বলে ভাবা হতো। অথচ আমরা এখন নিউট্রিনো বিম তৈরি করতে পারি

    আসলে বেশ কিছুসংখ্যক পরীক্ষা রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পরোক্ষভাবে স্ট্রিং থিওরি পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব হবে বলে আশা করেন পদার্থবিদেরা। সেগুলো হলো :

    -লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার বা এলএইচসি একদিন হয়তো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠবে, যা দিয়ে এসপার্টিকেল বা সুপারপার্টিকেল তৈরি করা যাবে। সুপারপার্টিকেল হলো সুপারস্ট্রিং থিওরির (একই সঙ্গে অন্য সুপারসিমেট্রিক তত্ত্বগুলোও) ভবিষ্যদ্বাণী করা উচ্চতর কম্পন।

    -আগেই বলেছি, ২০১৫ সালে লেজার ইন্টারফেরোমিটার স্পেস অ্যানটেনা বা লিসা মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। লিসা ও তার ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি বিগ ব্যাং অবজারভার হয়তো স্ট্রিং থিওরির কয়েকটি সংস্করণসহ প্রাক্‌- মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বগুলো পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট সংবেদনশীল হবে। [লিসা উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে নাসা। ২০৩০ সালে এটি উৎক্ষেপিত হতে পারে।—অনুবাদক]

    -মিলিমিটার পরিসরে নিউটনের বিখ্যাত বিপরীত বর্গীয় সূত্র থেকে বিচ্যুতি অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনেকগুলো গবেষণাগারে উচ্চমাত্রার উপস্থিতি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। (যদি চতুর্থ স্থানিক মাত্রা থাকে, তাহলে মহাকর্ষ টান বিপরীত বর্গীয় নয়, বিপরীত ঘন সূত্র হবে।) স্ট্রিং থিওরির সর্বশেষ সংস্করণ বা এম-থিওরি ১১ মাত্রার ভবিষ্যদ্বাণী করে।

    -অনেক পরীক্ষাগারে ডার্ক ম্যাটার বা গুপ্তবস্তু শনাক্তের চেষ্টা চলছে। কারণ, গুপ্তবস্তুর মহাজাগতিক বাতাসে চলাচল করছে আমাদের পৃথিবী। গুপ্তবস্তুর ভৌত ধর্ম সম্পর্কে স্ট্রিং থিওরি নির্দিষ্ট ও পরীক্ষণযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। কারণ, গুপ্তবস্তু হয় স্ট্রিং বা সুতোর উচ্চতর কোনো কম্পন (যেমন ফোটিনো)।

    -আশা করা হয়, বেশ কিছু ধারাবাহিক পরীক্ষায় (যেমন দক্ষিণ মেরুতে নিউট্রিনো পোলারাইজেশন বা মেরুকরণ) মহাজাগতিক রশ্মির অনিয়ম বিশ্লেষণ করে মিনি কৃষ্ণগহ্বর ও অন্যান্য অদ্ভুত বস্তুদের উপস্থিতি শনাক্ত করা যাবে। মহাজাগতিক রশ্মির শক্তি খুব সহজে এলএইচসির সীমা ছাড়িয়ে যায়। মহাজাগতিক রশ্মির পরীক্ষা ও এলএইচসি স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সীমা ছাড়িয়ে নতুন আর উত্তেজক নতুন এক দিগন্ত খুলে দেবে।

    -কিছু পদার্থবিদ একটি সম্ভাবনা আঁকড়ে ধরে আছেন। সেটি হলো : মহাবিস্ফোরণ এতই বিস্ফোরণোন্মুখ ছিল যে হয়তো কোনো অতি ক্ষুদ্র সুপারস্ট্রিং বিপুল অনুপাতে উড়িয়ে দিয়েছে। যেমন টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ভিলেনকিন লিখেছেন, ‘খুব উত্তেজক সম্ভাবনা হলো সুপারস্ট্রিং অনেক বড় মাত্রাও থাকতে পারে, যাকে আকাশে দেখতে পাব আমরা। এর মাধ্যমে সুপারস্ট্রিং থিওরি সরাসরি পরীক্ষা করে দেখা যাবে।’ (মহাবিস্ফোরণের সময় বিস্ফোরিত বিপুল আকারের, ধ্বংসাবশেষে পরিণত হওয়া সুপারস্ট্রিং বা অতিতন্তু খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। )

    পদার্থবিজ্ঞান কি অসম্পূর্ণ?

    স্টিফেন হকিং ১৯৮০ সালের দিকে থিওরি অব এভরিথিংয়ের প্রতি সবার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেন। তার পেছনের কারণটি ছিল ‘ইজ দ্য এন্ড ইন সাইট ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিকস’ শিরোনামের এক বক্তৃতা। এতে তিনি বলেন, ‘এখানে যাঁরা উপস্থিত আছেন, তাঁদের অনেকের জীবনকালে আমরা হয়তো একটি পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব দেখে যেতে পারব।’ তিনি দাবি করেছিলেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি। কিন্তু ২০০০ সাল যখন এল, তখন দেখা গেল থিওরি অব এভরিথিং নিয়ে কোনো ঐকমত্য নেই। তখন হকিং মত বদলে বললেন, আরও ২০ বছরের মধ্যে এ তত্ত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি।

    এরপর ২০০২ সালে আরেকবার মত বদলে স্টিফেন ঘোষণা করলেন, গোডেলের অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য হয়তো তাঁর মৌলিক চিন্তার মারাত্মক ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে। তিনি লিখলেন, “নির্দিষ্ট সংখ্যানীতির কারণে সিদ্ধান্তে আসা যায়, চূড়ান্ত কোনো তত্ত্ব না থাকলে অনেকে খুব হতাশ হবে। আমি নিজেও এই দলে। কিন্তু আমি মত বদলে ফেলেছি…গোডেলের উপপাদ্য নিশ্চিত করে, গণিতবিদদের জন্য সর্বদা কোনো না কোনো কাজ থেকেই যাবে। আমার ধারণা, এম-থিওরি পদার্থবিদদের জন্য একই কাজ করে যাবে।’

    তাঁর যুক্তিটি বেশ পুরোনো, কারণ গণিত অসম্পূর্ণ। আর পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা হলো গণিত। কাজেই সব সময় এমন কোনো ভৌত বিবৃতি থাকবে, যা আমাদের নাগালের বাইরে থেকে যাবে। তাই থিওরি অব এভরিথিং পাওয়া সম্ভব নয়। অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য গ্রিকদের গণিতে সত্যি বিবৃতি পাওয়ার স্বপ্ন হত্যা করেছিল। একই সঙ্গে থিওরি অব এভরিথিং চিরকাল আমাদের হাতের নাগালের বাইরে থেকে যাবে এর কারণে।

    ফ্রিম্যান ডাইসন দারুণভাবে লিখেছেন, ‘গোডেল প্রমাণ করেছেন বিশুদ্ধ গণিতের জগৎ অফুরান; এমন কোনো নির্দিষ্টসংখ্যক স্বতঃসিদ্ধ ও অনুমানের নিয়ম নেই, যা চিরতরে গোটা গণিতবিদ্যাকে আবৃত করতে পারে। আশা করি, ভৌত বিশ্বেও একই রকম পরিস্থিতি বিদ্যমান। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক হওয়ার মানে হলো, পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যার জগৎত্ত অফুরান। ভবিষ্যতে আমরা কত দূর পৌঁছাব, তা এখানে ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কারণ, সব সময়ই নতুন নতুন ঘটনা ঘটতেই থাকবে, আসতে থাকবে নতুন তথ্য, অনুসন্ধানের জন্য পাওয়া যাবে নিত্যনতুন বিশ্বও এবং জীবন, সচেতনতা আর স্মৃতির প্রসারিত রাজ্যও পাওয়া যাবে প্রতিনিয়ত।’ জ্যোতিঃপদার্থবিদ জন ব্যারো যুক্তিটিকে এভাবে সংক্ষিপ্ত করেছেন, “বিজ্ঞানের ভিত্তি হলো গণিত। গণিত সব সত্য আবিষ্কার করতে পারে না। কাজেই বিজ্ঞানও সব সত্য আবিষ্কার করতে পারে না।’

    এই যুক্তি সত্যি হতেও পারে, আবার না-ও পারে। কিন্তু এখানে সম্ভাব্য কিছু ত্রুটি রয়েছে। পেশাদার গণিতবিদদের বেশির ভাগ তাঁদের গবেষণায় অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য উপেক্ষা করেন। এর কারণ হলো অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য নিজের সম্পর্কে উল্লেখ করা বিবৃতি বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। অর্থাৎ তারা স্বনির্দেশক। যেমন নিচের বিবৃতিগুলো বিভ্রান্তিকর :

    এই বাক্যটি মিথ্যা।

    আমি মিথ্যুক।

    এই বিবৃতিটি প্রমাণ করা যাবে না।

    প্রথম ক্ষেত্রে, বাক্যটি সত্য হওয়ার মানে সেটি মিথ্যা। আবার বাক্যটি মিথ্যা হলে, বিবৃতিটি সত্য। একইভাবে আমি যদি সত্যি বলি, তাহলে আমি একটি মিথ্যা কথা বলছি। আর আমি যদি মিথ্যা বলি, তাহলে আমি সত্যি বলছি। সবশেষের বাক্যটি সত্য হলে তাকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করা যাবে না।

    (দ্বিতীয় বিবৃতিটি লায়ারস প্যারাডক্স হিসেবে বিখ্যাত। ক্রিটানের দার্শনিক এপিমেনিডেস এই প্যারাডক্স ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘সব ক্রিটানই মিথ্যাবাদী।’ তবে সেন্ট পল পুরো ব্যাপারটি লক্ষ না করেই টাইটাসের কাছে লেখা এক চিঠিতে লিখেছেন, “ক্রিটের অন্যতম ভাববাদী বলেছেন, ক্রিটানরা সব সময় মিথ্যাবাদী, দুষ্ট প্রকৃতির, অলস ও পেটুক। নিঃসন্দেহে তিনি সত্যি কথা বলেছেন।’)

    অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য ‘এই বাক্যটি গণিতের স্বতঃসিদ্ধ ব্যবহার করে প্রমাণ করা যাবে না’ টাইপের বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এভাবে স্বনির্দেশিত প্যারাডক্সের একটি বাস্তবধর্মী জাল তৈরি করে।

    তবে হকিং এই অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, থিওরি অব এভরিথিং বা সর্বজনীন তত্ত্ব থাকা সম্ভব নয়। তিনি দাবি করেন, গোডেলের অসম্পূর্ণতার উপপাদ্যের মূল চাবিকাঠি হলো এর গণিত স্বনির্দেশিত। পদার্থবিজ্ঞানও একইভাবে এই রোগে ভুগছে। পর্যবেক্ষককে যেহেতু পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়, তাই এর মানে হলো পদার্থবিজ্ঞান সব সময় নিজেকেই নির্দেশ করবে। কারণ, আমরা মহাবিশ্ব ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারব না। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, পর্যবেক্ষক নিজেও পরমাণু ও অণু দিয়ে তৈরি। কাজেই তিনি যে পরীক্ষাটি চালাচ্ছেন, তারও অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি নিজেও।

    কিন্তু হকিংয়ের সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়ার একটি উপায় আছে। গোডেলের উপপাদ্যের সহজাত প্যারাডক্স এড়িয়ে যেতে পেশাদার গণিতবিদেরা এখন সাধারণত বলেন, তাঁদের গবেষণা সব ধরনের স্বনির্দেশিত বিবৃতিমুক্ত। এরপর তাঁরা অসম্পূর্ণতার উপপাদ্যকে বোকা বানান। গোডেলের কালের পর থেকে গণিতে বেশ বড় মাত্রায় বিকশিত হয়েছে। আর তা হয়েছে গোডেলের অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য উপেক্ষা করে। অর্থাৎ এটা স্বতঃসিদ্ধ যে বর্তমানের কাজগুলোতে স্বনির্দেশিত কোনো বিবৃতি তৈরি করে না।

    একইভাবে কোনো থিওরি অব এভরিথিংও হয়তো গড়ে তোলা সম্ভব, যা পর্যবেক্ষক/পর্যবেক্ষণ দ্বিধাবিভক্তি থেকে স্বাধীন থেকে জানা সব পরীক্ষা ব্যাখ্যা করতে পারবে। এ-জাতীয় কোনো থিওরি অব এভরিথিং হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারবে মহাবিস্ফোরণের জন্ম থেকে শুরু করে আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সবকিছু। তা-ই যদি হয়, তাহলে পর্যবেক্ষক ও পর্যবেক্ষণের মধ্যবর্তী মিথস্ক্রিয়া কীভাবে বর্ণনা করা হবে, তা অধ্যয়নের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আসলে থিওরি অব এভরিথিংয়ের একটি মানদণ্ড এমন হওয়া উচিত যেন তা পর্যবেক্ষক ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে যেভাবে বিভাজন তৈরি করি, তা থেকে স্বাধীন থাকে।

    আবার প্রকৃতি হয়তো অফুরান ও সীমাহীন হতে পারে, এমনকি এটি বেশ কয়েকটি নীতির ওপর ভিত্তি করে হলেও। দাবা খেলার কথা ভাবুন। অন্য কোনো গ্রহ থেকে আসা কোনো এলিয়েনকে শুধু দাবা খেলা দেখে এর নিয়ম- কানুন নির্ণয়ের কথা জিজ্ঞেস করুন। কিছুক্ষণ পর এলিয়েন বুঝে ফেলতে পারবে বড়ে, গজ ও রাজার চাল কীভাবে দিতে হয়। এই খেলার নিয়ম সসীম ও সরল। কিন্তু সম্ভাব্য খেলার সংখ্যা সত্যিই বিপুল হতে পারে। একইভাবে প্রকৃতির নিয়মকানুনও হয়তো সসীম ও সরল হতে পারে, কিন্তু এই নিয়মের প্রয়োগ হয়তো অফুরন্ত হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হলো পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো খুঁজে বের করা।

    কিছু ক্ষেত্রে আমরা ইতিমধ্যে অনেক ঘটনার সম্পূর্ণ তত্ত্ব পেয়ে গেছি। আলোর জন্য ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের কোনো ত্রুটি আজ পর্যন্ত কেউ খুঁজে পায়নি। স্ট্যান্ডার্ড মডেলকে প্রায়ই ‘থিওরি অব অলমোস্ট এভরিথিং’ বা প্রায় সর্বজনীন তত্ত্ব নামে ডাকা হয়। কিছু সময়ের জন্য ভাবুন, আমরা মহাকর্ষ বল থামিয়ে দিতে পারি। তাহলে মহাকর্ষ বাদে অন্য সব ঘটনার জন্য স্ট্যান্ডার্ড মডেলই হয়ে উঠবে সবচেয়ে নিখুঁত তত্ত্ব। তত্ত্বটি বিশ্রী হতে পারে, কিন্তু এটি বেশ কাজের। এমনকি অসম্পূর্ণতার উপপাদ্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও আমাদের কাছে নিখুঁতভাবে যুক্তিযুক্ত একটি থিওরি অব এভরিথিং আছে (মহাকর্ষ বাদে)।

    আমার কাছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, শুধু একটি কাগজের পৃষ্ঠায় যে কেউ জানা সব ভৌত ঘটনার নিয়ন্ত্রণকারী সূত্রগুলো লিখে ফেলতে পারবে, যার আওতার বিস্তৃতি ১০৪৩ গুণ। এর আওতায় রয়েছে ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের সবচেয়ে দূরবর্তী কসমস থেকে শুরু করে কোয়ার্ক ও নিউট্রিনোর অতি ক্ষুদ্র জগৎ। এই টুকরো কাগজে দুটি সমীকরণ থাকবে, আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্ব আর স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সমীকরণ। আমার ধারণা, প্রকৃতির মৌলিক পর্যায়ে এটি চূড়ান্ত সরলতা ও ঐকতান উন্মোচন করে। মহাবিশ্ব হয়তো বিকৃত, এলোমেলো বা খামখেয়ালি হতে পারে। কিন্তু তারপরও আমাদের কাছে সম্পূর্ণ, সুসংগত ও সুন্দর হিসেবে ধরা দেয় এটি

    নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী স্টিভ ওয়েনবার্গ আমাদের থিওরি অব এভরিথিংয়ের অন্বেষাকে উত্তর মেরুতে অভিযান চালানোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। কয়েক শতাব্দী ধরে প্রাচীন নাবিকেরা মানচিত্র নিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু তাতে উত্তর মেরু অনুপস্থিত ছিল। কম্পাসের সব কাঁটা ও চার্ট মানচিত্রে হারিয়ে যাওয়া অংশের দিকে তাক করা। তারপরও কেউই সেই জায়গায় যায়নি। একইভাবে, আমাদের সব তথ্য আর তত্ত্ব থিওরি অব এভরিথিং বা সর্বজনীন তত্ত্বের দিকে তাক করা। এটিই আমাদের সমীকরণগুলোর হারিয়ে যাওয়া অংশ।

    এখানে সব সময়ই আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে কিছু ব্যাপার থাকবে। সেগুলো অন্বেষণ করা অসম্ভব (যেমন ইলেকট্রনের নির্দিষ্ট অবস্থান বা আলোর গতির সীমার বাইরের বিশ্ব)। কিন্তু আমার দৃঢ়বিশ্বাস, মৌলিক সূত্রগুলো জানা সম্ভব আর তা সসীম। আসন্ন বছরগুলোতে পদার্থবিজ্ঞান সবার কাছে সবচেয়ে উত্তেজক হয়ে উঠতে পারে। কারণ, মহাবিশ্বে আমরা নতুন প্রজন্মের পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটর, স্থানভিত্তিক মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তকরণ যন্ত্র ও অন্যান্য প্রযুক্তি দিয়ে অনুসন্ধান চালাতে থাকব। আমরা এখনো জ্ঞানের শেষ প্রান্তে পৌঁছাইনি, তবে নতুন পদার্থবিজ্ঞানের সূচনালগ্নে রয়েছি। কিন্তু এই অনুসন্ধানে আমরা যেটাই খুঁজে পাই না কেন, সেখানে সর্বদাই আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন কোনো দিগন্ত অপেক্ষা করে থাকবে।

    তথ্যনির্দেশ

    পাইক্রাস্ট : একধরনের খাবার। এর ওপরে রুটির শক্ত স্তর থাকে।

    পরম শূন্য : সম্ভাব্য সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ তাপমাত্রায় বস্তুর মধ্যে কোনো তাপশক্তি থাকে না। প্রায় -২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কেলভিন স্কেলে শূন্য।

    স্ট্রিং তত্ত্ব : এ তত্ত্বে কণাকে অতি ক্ষুদ্র সুতার তরঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতাগুলোর দৈর্ঘ্য আছে, কিন্তু কোনো মাত্রা নেই। তত্ত্বটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দুটোকে ঐক্যবদ্ধ করে। একে সুপারস্ট্রিং থিওরিও বলা হয়।

    এম-তত্ত্ব : পাঁচটি স্ট্রিং থিওরির সবগুলো ঐক্যবদ্ধকারী একটি তত্ত্ব। এ ছাড়া এই তত্ত্বে অতিমহাকর্ষকেও একটি একক তাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যে আনা হয়েছে। কিন্তু তত্ত্বটি এখনো পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি

    গোডেলের অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য : ১৯৩১ সালে গণিতের প্রকৃতিসম্পর্কিত বিখ্যাত অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য প্রমাণ করেন গণিতবিদ কার্ট গোডেল। এই উপপাদ্যমতে, বর্তমান কালের গণিতের মতো প্রচলিত যেকোনো স্বতঃসিদ্ধ সিস্টেমের মধ্যে কিছু প্রশ্ন সব সময় অনড় থেকেই যায়। সিস্টেমটি যে স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে সংজ্ঞায়িত, সেগুলোর ভিত্তিতে এই প্রশ্নগুলো প্রমাণও বা অপ্রমাণও করা যায় না।

    পরিভাষা

    অণু molecules

    অতিকণা বা সুপারপার্টিকেল superparticle

    অতিক্ষুদ্র জগৎ microworld

    অতিতন্ত্র বা সুপারস্ট্রিং superstring

    অতিপরিবাহিতা superconductor

    অতিপারমাণবিক কণা subatomic particle

    অতিবেগুনি বিকিরণ ultraviolet radiation

    অনিশ্চয়তার নীতি Uncertainty principle

    অবিরাম গতিযন্ত্র Perpetual motion machines

    অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য Incompleteness theorem

    অসীম infinite

    অ্যানথ্রোপিক প্রিন্সিপাল বা মানুষসম্পর্কিত নীতি Anthropic principle

    আধান বা চার্জ charge

    আন্তমাত্রিক interdimensional

    আপেক্ষিক তত্ত্ব Theory of relativity

    আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব Theory of general relativity

    আলোকবর্ষ light-years

    আসন্নতা approximation

    ইলেকট্রন electron

    উপকণা sub-particle

    ঋণাত্মক চার্জ বা আধান negative charge

    ওয়েভ ফাংশন বা তরঙ্গ অপেক্ষক wave function

    এক মেরু বা মনোপোল monopole

    এনট্রোপি বা বিশৃঙ্খলা entropy

    এম-থিওরি M-theory

    কণা ত্বরকযন্ত্র particle accelerators

    কণা শনাক্তকারী যন্ত্র Particle Detector

    কম্পন vibrations

    কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা Copenhagen interpretation

    কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা Artificial intelligence

    কৃষ্ণগহ্বর Black holes

    কালুজা তত্ত্ব Kaluza’s theory

    কোয়ান্টাম কম্পিউটার quantum computer

    কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিকস Quantum Chromodynamics

    কোয়ান্টায়িত quantized

    কোয়ার্ক quarks

    গুপ্তবস্তু Dark matter

    গ্লুয়ন gluons

    গোল্ডিলক জোন Goldilocks zone

    গোলক sphere

    ঘাত power

    ঘূর্ণন বা স্পিন spin

    চতুর্থ মাত্রা fourth dimension

    চুপসে যাওয়া বা ভেঙে পড়া collapse

    চুম্বকীয় ক্ষেত্র Magneticfield

    জিনগত ত্রুটি genetic error

    টুরিং টেস্ট Turing test

    ট্রানজিস্টর transistors

    ডপলার প্রভাব Doppler effect

    তরঙ্গ wave

    তরঙ্গ সমীকরণ wave equation

    তরঙ্গায়িত waving

    তাপগতিবিদ্যা Thermodynamics

    ধনাত্মক চার্জ positive charge

    ধ্রুবক constants

    নিউরন neurons

    নিঃসরণ emit

    নিউট্রন Neutron

    নিউক্লিয়াস Nucleus

    পজিট্রন positron

    নিউট্রিনো Neutrino

    পঞ্চম মাত্রা fifth dimension

    পরম শূন্য absolute zero

    পরম সময় absolute time

    পরমাণু atom

    পরশপাথর philosopher’s stone

    পর্দা membrane

    পর্যবেক্ষক observer

    প্রতিকণা antiparticle

    প্রতি-কোয়ার্ক বা অ্যান্টিকোয়ার্ক antiquarks

    প্রমিত মডেল বা স্ট্যান্ডার্ড মডেল Standard Model

    প্রাক্-মহাবিস্ফোরণ pre-big bang

    প্রোটন proton

    প্লাজমা Plasma

    প্ল্যাঙ্ক শক্তি Planck energy

    বহুবিশ্ব many worlds

    বহুবিশ্ব বা মাল্টিভার্স multiverse

    বায়ুশূন্য vacuum

    ব্যাসার্ধ radius

    বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব Cosmology

    বিকল্প ভবিষ্যৎ alternative futures

    বিপরীত বর্গীয় সূত্র Inverse-square law

    বুদ্ধিমত্তা intelligence

    বৃহত্তর জগৎ macroworld

    ভেঙে যাওয়া collapses

    ভৌত তত্ত্ব physical theory

    মহাকর্ষ gravity

    মহাকর্ষ তরঙ্গ gravity wave

    মহাকাশীয় দূরত্ব astronomical distances

    মহাজাগতিক চেতনা cosmic consciousness

    মহাজাগতিক ধ্রুবক Cosmological constant

    মহাজাগতিক রশ্মি Cosmic ray

    মহাবিস্ফোরণ Big bang

    মুরের সূত্র Moore’s law

    মেরুকরণ polarization

    ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ Maxwell’s equations

    শক্তি power

    শক্তির সংরক্ষশীলতা conserving energy

    শব্দার্থবিদ্যা বা সিম্যানটিকস semantics

    শিশু মহাবিশ্ব baby universes

    শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ Schrodinger equation

    সংসক্ত coherent

    সচেতনতা consciousness

    সমান্তরাল মহাবিশ্ব Parallel universes

    সম্পর্কহীন বা অসংগতি decoherence

    সসীম ভর finite mass

    সুপারস্ট্রিং থিওরি Superstring theory

    সুতা বা স্ট্রিং string

    সুষম মহাবিশ্ব uniform universe

    স্বনির্দেশিত self-referential

    স্থান-কাল বা দেশকাল space-time

    স্থানিক spatial

    স্ট্রিং থিওরি String theory

    সিনটেক্স syntax

    স্নায়বীয় neural

    স্ফীতি inflation

    স্ফীতি দশা বা পর্যায় inflationary phase

    স্ফীতিশীল মহাবিশ্ব inflationary universe

    স্ববিরোধিতা বা প্যারাডক্স paradox

    হিগস বোসন Higgs bosons

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু
    Next Article দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

    Related Articles

    মিচিও কাকু

    প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    দ্য গড ইকুয়েশন : থিওরি অব এভরিথিংয়ের খোঁজে – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    ফিজিক্স অব দ্য ফিউচার – মিশিও কাকু

    November 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }