Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল – মিচিও কাকু

    মিচিও কাকু এক পাতা গল্প488 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩. ফেজার ও মারণ নক্ষত্র

    রেডিওর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বাতাসের চেয়ে ভারী কোনো যন্ত্র ওড়ানোও অসম্ভব। এক্স-রে ধাপ্পাবাজি হিসেবে প্রমাণিত হবে শিগগিরই।

    —পদার্থবিদ লর্ড কেলভিন, ১৮৯৯

    পারমাণবিক বোমা কখনোই বিস্ফোরিত হবে না। বিস্ফোরণ সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে এ কথা বলছি আমি।

    —অ্যাডমিরাল উইলিয়াম লেহি

    ৪-৩-২-১, ফায়ার!

    মারণ নক্ষত্র বেশ প্রকাণ্ড একটা যুদ্ধাস্ত্র। এর আকার আস্ত একটা চাঁদের সমান। প্রিন্সেস লিয়ার নিজের জগৎ, অর্থাৎ অসহায় আলডিরান গ্রহটির একেবারে কাছ থেকে একটা ডেথ স্টার নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তাতে গ্রহটি তেজস্ক্রিয় হয়ে বিপুল বিস্ফোরণে চারদিকে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রহটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ওই সৌরজগতে। কোটি প্রাণের নিদারুণ আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। তাতে এমন এক ভীষণ আলোড়ন ওঠে, যা ছায়াপথটি জুড়েই অনুভব করা যাচ্ছিল।

    আরও দেখুন
    লাইট
    আলোক
    সায়েন্স
    যোগাযোগ
    হিলিয়ামের
    হিলিয়াম
    লেজারের
    বিজ্ঞান
    আলোর
    আলো

    কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্টার ওয়ার্স-এ দেখানো এই ডেথ স্টার বা মৃত নক্ষত্রের মতো মারণাস্ত্র কি আদৌও বানানো সম্ভব? একঝাঁক লেজারের কামানের মতো এ ধরনের কোনো মারণাস্ত্র দিয়ে কি চোখের পলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব আস্ত একটা গ্রহ? লুক স্কাইওয়াকার এবং ডার্থ ভেডারের পরিচালিত সেই বিখ্যাত তলোয়ার সম্পর্কেই-বা কী বলা যায়? আলোকরশ্মি দিয়ে বানানো এই তলোয়ার (লাইট স্যাবার) শক্তিশালী ইস্পাতও কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারে? স্টার ট্রেকের ফেজারের মতো রে-গান কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর জন্য বাস্তবসম্মত কোনো মারণাস্ত্র?

    আরও দেখুন
    হিলিয়ামের
    বিজ্ঞান
    আলোকে
    আলো
    সায়েন্স
    যোগাযোগ
    বিজ্ঞানের
    আলোক
    লেজারের
    হিলিয়াম

    স্টার ট্রেকের লাখো দর্শক এসব দারুণ স্পেশাল ইফেক্ট দেখে চমকে ওঠে। কিন্তু কতিপয় সমালোচকের কঠোর সমালোচনায় একসময় হতাশ হতে হয় দর্শকদের। কারণ, সমালোচকদের বক্তব্য, বিনোদনের জন্য এগুলো বেশ ভালো, কিন্তু বাস্তবে এগুলো করে দেখানো অসম্ভব। চাঁদের আকৃতির গ্রহধ্বংসকারী রে-গানকে উদ্ভট বলে রায় দেন তাঁরা। একইভাবে ঘনীভূত আলোকরশ্মি দিয়ে বানানো সেই অতি ধারালো তলোয়ার, এমনকি ছায়াপথের অনেক অনেক দূর থেকে অনুভূত সেই নিদারুণ আর্তচিৎকারও অসম্ভব। এসব শুনে স্পেশাল ইফেক্ট জগতের ওস্তাদ জর্জ লুকাসও যে সেবার দুঃখ পেয়েছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

    আরও দেখুন
    আলোকে
    বৈজ্ঞানিক
    সায়েন্স
    যোগাযোগ
    লেজারের
    বিজ্ঞান
    হিলিয়াম
    হিলিয়ামের
    আলোক
    বিজ্ঞানের

    বিশ্বাস করা কঠিন হলেও আলোকরশ্মিকে ঠাসাঠাসি করার জন্য প্রাকৃতিক শক্তির কোনো ভৌত সীমানা নেই। পদার্থবিজ্ঞানের এমন কোনো সূত্র নেই, যা মারণ নক্ষত্র বা আলোকরশ্মির তলোয়ার বানাতে বাধা দেয়। আসলে গ্রহধ্বংসকারী গামা রশ্মির বিম খোদ প্রকৃতিতেই বর্তমান। গহিন মহাকাশে দূর থেকে গামা রশ্মির বিস্ফোরক থেকে বিকিরণের বিপুল ঝলক নিমেষেই শুধু বিগ ব্যাংয়ে সংঘটিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, যেকোনো গ্রহকে গামা রশ্মি বিস্ফোরকের লক্ষ্যবস্তুর সীমার মধ্যে রেখে ফায়ার করা হলে তা সত্যিই বিস্ফোরিত হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

    ইতিহাসে রশ্মি মারণাস্ত্র

    গুচ্ছবদ্ধ শক্তিকে লাগাম পরানোর স্বপ্ন আসলে আজকের নয়, এর শিকড় প্রোথিত আছে প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনি ও উপকথায়। গ্রিক দেবতা জিউস মানুষের ওপর বজ্রপাতের বিস্ফোরণ ছোড়ার জন্য বিখ্যাত। নরওয়ে বা নর্স দেবতা থরের ছিল মিওনিয়র নামের জাদুকরি এক হাতুড়ি। সেটি দিয়ে সে বজ্রপাতের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারত। আর হিন্দু দেবতা ইন্দ্র শক্তিগুচ্ছ ছুড়তে পারত তার জাদুকরি বর্শা থেকে।

    আরও দেখুন
    আলোকে
    হিলিয়াম
    সায়েন্স
    আলো
    আলোর
    বিজ্ঞানের
    আলোক
    বৈজ্ঞানিক
    যোগাযোগ
    লাইট

    বাস্তবসম্মত অস্ত্র হিসেবে রে বা রশ্মি ব্যবহারের ধারণা সম্ভবত শুরু হয় গ্রিসের মহান গণিতবিদ আর্কিমিডিসের কাজের মাধ্যমে। প্রাচীন পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের মধ্যে সম্ভবত তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ। নিউটন ও লিবনিজের দুই হাজার বছর আগে তিনি ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন। অবশ্য সেটি ছিল ভুলে ভরা। খ্রিষ্টপূর্ব ২১৪ সালে দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধে রোমান সেনাপ্রধান মার্সিলাসের বাহিনীর বিরুদ্ধে কিংবদন্তির মতো এক লড়াইয়ে সাইরাকাস সাম্রাজ্যকে সাহায্য করেন আর্কিমিডিস। সে সময় তিনি এমন ধরনের একটি প্রতিফলক বানান, যা সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করতে পারত বলে ধারণা করা হয়। এভাবে শত্রুপক্ষের জাহাজগুলো একে একে পুড়িয়ে দেন আর্কিমিডিস। (সেটি ব্যবহারযোগ্য ও কার্যকরী বিম অস্ত্র ছিল কি না, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনো বিতর্ক আছে। কারণ, বিজ্ঞানীদের বেশ কয়েকটি দল আর্কিমিডিসের ওই পদ্ধতি অনুসরণ করে ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল পেয়েছেন।)

    আরও দেখুন
    সায়েন্স
    আলোকে
    আলো
    হিলিয়াম
    লেজারের
    বিজ্ঞান
    বিজ্ঞানের
    যোগাযোগ
    আলোক
    লাইট

    কল্পবিজ্ঞানে প্রথম রে-গান বিস্ফোরণ দেখা যায় ১৮৮৯ সালে এইচ জি ওয়েলসের ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস শিরোনামের ক্ল্যাসিক উপন্যাসে। এতে মঙ্গল গ্রহ থেকে এলিয়েনরা তাদের তেপায়া এক বস্তু থেকে অস্ত্র বের করে তা দিয়ে তাপশক্তির বিম ছুড়ে পৃথিবীর অসংখ্য শহর পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্বকে পদানত করতে সব সময় সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উৎসুক ছিল নাৎসি বাহিনী। সে জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের রে-গান নিয়ে পরীক্ষা চালায়। তার মধ্যে ছিল প্যারাবোলিক আয়নার ওপর ভিত্তি করে বানানো সনিক যন্ত্র, যা শব্দকে কেন্দ্রীভূত করে তীব্র করে তুলতে পারত।

    আরও দেখুন
    বৈজ্ঞানিক
    লেজারের
    লাইট
    আলো
    হিলিয়ামের
    হিলিয়াম
    সায়েন্স
    বিজ্ঞানের
    লেজার
    যোগাযোগ

    কেন্দ্রীভূত আলোকরশ্মি দিয়ে বানানো মারণাস্ত্র সাধারণ জনগণের কল্পনায় ঢুকে পড়ে জেমস বন্ডের হাত ধরে। গোল্ডফিঙ্গার নামের মুভিতে প্রথমবার লেজারের ব্যবহার দেখানো হয়। (কিংবদন্তিতুল্য এই ব্রিটিশ স্পাইকে একটি ধাতব টেবিলে বেঁধে রাখা হয়েছিল। একটি শক্তিশালী লেজার রশ্মি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে তার পায়ের ফাঁক দিয়ে টেবিল গলিয়ে দিচ্ছিল। এভাবে লেজার রশ্মির মাধ্যমে তাকেও দুই টুকরো করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।)

    আরও দেখুন
    বিজ্ঞানের
    আলোক
    যোগাযোগ
    আলো
    লেজারের
    বিজ্ঞান
    লেজার
    বৈজ্ঞানিক
    আলোর
    হিলিয়ামের

    ওয়েলসের উপন্যাসে ওইভাবে রে-গানের ব্যবহার দেখে সেবার উপহাসে ফেটে পড়েন পদার্থবিদেরা। কারণ, ওটা নাকি আলোকবিদ্যার কোনো সূত্র মেনে চলে না। ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ অনুযায়ী, আমাদের চারপাশে যে আলো দেখা যায়, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা এলোমেলো বা বিচ্ছিন্ন। (যেমন এগুলো বিভিন্ন কম্পাঙ্কের ও পর্যায়ের তরঙ্গ একসঙ্গে মিলেমিশে থাকে)। একসময় ভাবা হতো, লেজারের মতো পরস্পর সংযুক্ত, কেন্দ্ৰীভূত, সুষম আলোকরশ্মি তৈরি করা অসম্ভব।

    কোয়ান্টাম বিপ্লব

    কোয়ান্টাম তত্ত্ব আসার পর সবকিছু আমূল বদলে গেল। গ্রহদের গতি ও আলোর আচরণ ব্যাখ্যায় নিউটনের সূত্রগুলো আর ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো একসময় সফল ছিল। কিন্তু বিশ শতক আসার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা গেল সূত্রগুলো সব ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পারে না। পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় কেন, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ধাতু কেন গলে যায়, গ্যাসকে তাপ দিলে তারা আলো নিঃসরণ করে কেন, নির্দিষ্ট বস্তু নিম্ন তাপমাত্রায় কেন অতিপরিবাহীর মতো আচরণ করে—এসব ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলো সূত্রগুলো। এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য দরকার পড়ল পরমাণুর গভীরের গতিবিদ্যা বোঝার। এতেই একটা বিপ্লব দানা পাকিয়ে উঠতে লাগল একসময়। এভাবে প্রায় আড়াই শ বছর পর নিউটনিয়ান পদার্থবিদ্যা ছুড়ে ফেলে নতুন এক পদার্থবিদ্যার প্রসববেদনা ঘোষিত হলো।

    আরও দেখুন
    হিলিয়ামের
    আলোকে
    যোগাযোগ
    বিজ্ঞানের
    আলো
    আলোক
    হিলিয়াম
    বৈজ্ঞানিক
    সায়েন্স
    বিজ্ঞান

    জার্মানিতে ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক প্রস্তাব করেন, নিউটনের ধারণামতো শক্তি অবিছিন্ন নয়। বরং শক্তি আসলে ক্ষুদ্র ও বিছিন্ন গুচ্ছ গুচ্ছ প্যাকেটের মতো। শক্তির এই গুচ্ছকে বলে কোয়ান্টা। এরপর ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন স্বীকার করেন, আলোর মধ্যেও এই অতি ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন গুচ্ছ (বা কোয়ান্টা) থাকে। এই গুচ্ছকে পরে নাম দেওয়া হয় ফোটন। এ সহজ-সরল কিন্তু শক্তিশালী ধারণা ব্যবহার করে ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট বা আলোক- তড়িৎক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন আইনস্টাইন। ধাতব বস্তুর ওপর আলো ফেললে সেখানে ইলেকট্রন নিঃসৃত হওয়ার ঘটনাকে বলে আলোক- তড়িৎক্রিয়া। বর্তমান যুগের টিভি, লেজার, সৌরকোষ আধুনিক ইলেকট্রনিকসের ভিত্তি ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট ও ফোটন। (আইনস্টাইনের ফোটন তত্ত্ব এতই বৈপ্লবিক ছিল যে তার ধারণার সবচেয়ে বড় সমর্থক খোদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কও শুরুতে তা বিশ্বাস করতে পারেননি। আইনস্টাইন সম্পর্কে এক লেখায় প্ল্যাঙ্ক বলেছেন, “তিনি হয়তো মাঝে মাঝে লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি…যেমন, তার আলোক কোয়ান্টার হাইপোথিসিসে, কিন্তু এটি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না।’

    আরও দেখুন
    যোগাযোগ
    লেজার
    আলোকে
    লেজারের
    সায়েন্স
    লাইট
    আলো
    আলোক
    বিজ্ঞান
    আলোর

    এরপর ১৯১৩ সালে পরমাণুর সম্পূর্ণ নতুন এক চিত্র আমাদের সামনে হাজির করেন ড্যানিশ পদার্থবিদ নীলস বোর। তাঁর দেওয়া চিত্রটি যেন সৌরজগতের এক খুদে সংস্করণ। তবে পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো আসলে সৌরজগতের মতো নয়। তারা শুধু বিচ্ছিন্ন কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘোরে। এক শক্তিস্তর থেকে আরেকটি কম শক্তির ছোট শক্তিস্তরে লাফ দেওয়ার সময় ইলেকট্রন শক্তি নিঃসরণ করে ফোটন হিসেবে। আবার ইলেকট্রন বেশি শক্তির বড় শক্তিস্তরে লাফ দিলে বিচ্ছিন্ন শক্তি শোষণ করে।

    আরও দেখুন
    যোগাযোগ
    লেজার
    আলোক
    হিলিয়ামের
    বৈজ্ঞানিক
    বিজ্ঞানের
    হিলিয়াম
    আলো
    লেজারের
    লাইট

    পরমাণু সম্পর্কে প্রায় সম্পূর্ণ তত্ত্ব পাওয়া গিয়েছিল ১৯২৫ সালের দিকে। এটি সম্ভব হয়েছিল কোয়ান্টাম মেকানিকস বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আগমন এবং আরউইন শ্রোডিঙ্গার, ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ও অন্য পদার্থবিদদের বৈপ্লবিক সব কাজের মাধ্যমে। কোয়ান্টাম তত্ত্বমতে, ইলেকট্রন একটি কণা হলেও এর সঙ্গে একটি তরঙ্গও জড়িত থাকে। ফলে ইলেকট্রন একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গের মতো ধর্ম পায়। ইলেকট্রনের তরঙ্গ একটি সমীকরণ মেনে চলে, যাকে বলা হয় শ্রোডিঙ্গারের ওয়েভ ইকুয়েশন বা তরঙ্গ সমীকরণ। এ সমীকরণের মাধ্যমে পরমাণুর ধর্মগুলো, এমনকি বোরের ধারণা করা কোয়ান্টাম লাফও নির্ণয় করা যায়।

    আরও দেখুন
    আলো
    বৈজ্ঞানিক
    যোগাযোগ
    আলোকে
    বিজ্ঞানের
    লেজার
    আলোক
    হিলিয়াম
    বিজ্ঞান
    সায়েন্স

    ১৯২৫ সালের আগে পরমাণুকে রহস্যময় মনে করা হতো। সে কারণে দার্শনিক আর্নেস্ট মাখের মতো আরও অনেকে মনে করতেন, এদের সত্যিকার অস্তিত্ব নেই। ১৯২৫ সালের পর পরমাণুর গতিবিদ্যার গভীরে ডুব দিয়ে দেখা সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণীও করা সম্ভব হয় তার ধর্মগুলোও। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এর অর্থ হলো, আপনার কাছে অনেক বড় একটা কম্পিউটার থাকলে, কোয়ান্টাম তত্ত্বের সূত্র দিয়ে রাসায়নিক উপাদানের ধর্মগুলো আহরণ করা সম্ভব। একই উপায়ে, নিউটনিয়ান পদার্থবিদদের কাছে যদি অনেক বড় কোনো ক্যালকুলেটিং মেশিন থাকে, তাহলে মহাবিশ্বের সব বস্তুর গতি নির্ণয় করতে পারবেন তাঁরা। কোয়ান্টাম পদার্থবিদেরা দাবি করেন, তাত্ত্বিকভাবে মহাবিশ্বের সব পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম নির্ণয় করা সম্ভব। আবার তাঁদের কাছে যদি অনেক বড় ও শক্তিশালী কম্পিউটার থাকে, তাহলে পুরো মানবজাতির ওয়েভ ফাংশন লিখতে পারবেন তাঁরা।

    মেজার ও লেজার

    বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর চার্লস টাউনস আর তাঁর সহকর্মীরা ১৯৫৩ সালে প্রথমবার মাইক্রোওয়েভরূপে সংসক্ত বিকিরণ তৈরি করতে পারেন। এর নাম দেওয়া হয় Maser বা মেজার (মাইক্রোওয়েভ অ্যামপ্লিফিকেশন থ্রু সিমুলেটেড এমিশন অব রেডিয়েশন)। তিনি ও রুশ বিজ্ঞানী নিকোলাই বাসভ ও আলেকজান্দার প্রোকোরভ এ কারণে ১৯৬৪ সালে নোবেল পুরস্কার পান। শিগগিরই তাঁদের ফলাফল দৃশ্যমান আলোর ক্ষেত্রেও সম্প্রসারণ করা হয়। এর মাধ্যমে জন্ম নেয় লেজার। (অন্যদিকে Phaser বা ফেজার হলো একটা কাল্পনিক যন্ত্র, স্টার ট্রেকের মুভির কারণে এটি জনপ্রিয়।)

    লেজারে বিশেষ একটি মাধ্যম ব্যবহার করা হয়, যেটি লেজার বিমকে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠাতে পারে। সে মাধ্যমটি হতে পারে বিশেষ কোনো গ্যাস, ক্রিস্টাল বা ডায়োট। এরপর বাইরে থেকে এই মাধ্যমের ভেতরে শক্তি সঞ্চালন করা হয়, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, রেডিও, আলো কিংবা কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার রূপে। শক্তি সঞ্চালনের এই হঠাৎ অন্তঃপ্রবাহে মাধ্যমটির পরমাণুগুলোতে সঞ্চারিত হয়, তাতে ইলেকট্রনগুলো শক্তি শোষণ করে এবং বাইরের ইলেকট্রন শক্তিস্তরে লাফ দেয়।

    এই উত্তেজিত বা সঞ্চারিত অবস্থায় মাধ্যমটি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এখন এই মাধ্যমের মধ্য দিয়ে কোনো আলোকরশ্মি পাঠানো হলে ফোটনগুলো প্রতিটি পরমাণুতে আঘাত করবে। ফলে নিম্নস্তরে হঠাৎ ক্ষয়প্রাপ্ত হবে পরমাণু। এই প্রক্রিয়ায় আরও ফোটন নিঃসৃত হবে। ফলাফল হিসেবে আরও ফোটন নিঃসরণ করতে ট্রিগার করবে ইলেকট্রনকে। এভাবে ক্রমান্বয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে চুপসে যাওয়া পরমাণু তৈরি হবে। তার সঙ্গে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ফোটন হঠাৎ করে বেরিয়ে আসতে থাকবে এই রশ্মির সঙ্গে। ঝাঁকে ঝাঁকে ফোটনের এই স্রোত ঐকতানে কম্পিত হলে তারা সংসক্ত হয়। মূলত কিছু নির্দিষ্ট পদার্থের ক্ষেত্রে এটি ঘটে।

    (ডমিনোর এক সারির ছবি কল্পনা করুন। টেবিলের সমতলে শুইয়ে রাখা হলে ডমিনোগুলো সর্বনিম্ন শক্তিস্তরে থাকে। কিন্তু ডমিনোগুলোকে খাড়াভাবে দাঁড় করিয়ে রাখলে তারা উচ্চ শক্তিস্তরে থাকে, ঠিক মাধ্যমের পরমাণুর মধ্যে সঞ্চারণ সৃষ্টি করার মতো। এখন একটি ডমিনো ঠেলা দেওয়া হলে ঠিক লেজার বিমের মতোই মুহূর্তেই সব শক্তিকে হঠাৎ ধসিয়ে দেওয়া যায়।)

    কেবল নির্দিষ্ট কিছু পদার্থই এভাবে বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে। শুধু বিশেষ ধরনের পদার্থেই কোনো ফোটন একটি সঞ্চারিত পরমাণুতে আঘাত করলে একটি ফোটন নিঃসৃত হবে, যা আগের ফোটনের সঙ্গে সংসক্ত হবে। এ সংসক্তির ফলে ফোটনের ঝাঁকের মধ্যে সবগুলো ফোটনই ঐকতানে কম্পিত হবে এবং পেনসিলের মতো পাতলা লেজার বিম সৃষ্টি করবে। (অন্যদিকে জনশ্রুতিমতো লেজার বিম সব সময় পেনসিলের মতো পাতলা থাকতে পারে না। যেমন চাঁদে একটি লেজার বিম ছোড়া হলে, তা ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হয়ে সবশেষে কয়েক মাইলজুড়ে বিস্তৃত এক বিন্দু তৈরি করবে।)

    সাধারণ গ্লাস লেজারে হিলিয়াম ও নিয়ন গ্যাসের একটি টিউব থাকে। এ টিউবের ভেতরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হলে টিউবের ভেতরের পরমাণুতে শক্তি সঞ্চারিত হয়। এবার দুটি আয়না ব্যবহার করে বিমটিকে অ্যামপ্লিফাই বা বিবর্ধিত করা হয়। আয়না দুটি দুই প্রান্তে বসানো থাকায় বিমটি আয়না দুটির এপাশে-ওপাশে যাওয়া-আসা করতে পারে। একটি আয়না পুরোপুরি ঝাপসা থাকলেও আরেকটিতে প্রতিবার খুব ক্ষুদ্র পরিমাণ আলো বেরিয়ে যেতে দেয়। এভাবে এমন বিম তৈরি হয়, যা এক প্রান্ত দিয়ে ছুড়ে মারা যায়।

    বর্তমানে প্রায় সব জায়গাতে লেজার দেখা যায়। মুদিদোকান থেকে শুরু করে চেকআউট স্ট্যান্ড, ইন্টারনেট বহনকারী ফাইবার অপটিক থেকে শুরু করে লেজার প্রিন্টার ও সিডি প্লেয়ার, কম্পিউটার—সব জায়গাতেই লেজারের ব্যবহার রয়েছে। চোখের সার্জারিতে, ট্যাটু তুলে ফেলতে, এমনকি কসমেটিক সেলুনেও লেজার ব্যবহার করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, ২০০৪ সালে বিশ্বজুড়ে ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের লেজার বিক্রি হয়েছে।

    লেজার ও ফিউশনের ধরন

    প্রায় প্রতিদিনই নতুন ধরনের লেজার আবিষ্কৃত হচ্ছে। কারণ, বিকিরণ নিঃসরণ করার মতো নতুন নতুন পদার্থ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় নিত্যদিনই। আর তাতে আবিষ্কৃত হচ্ছে মাধ্যমটির মধ্যে শক্তি সঞ্চারণের নতুন নতুন সব উপায়। প্রশ্ন হলো, এসব প্রযুক্তির কোনোটি কি রে-গান কিংবা আলোক তলোয়ার বা লাইট স্যাবার তৈরির উপযুক্ত? মৃত নক্ষত্রে শক্তি সঞ্চারণ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী লেজার বানানো সম্ভব কি? বর্তমানে বিকিরণ নিঃসরণ করা বস্তু আর ওই বস্তুর মধ্যে শক্তি সঞ্চারণ (যেমন বিদ্যুৎপ্রবাহ, তীব্র আলোকরশ্মি, এমনকি রাসায়নিক বিস্ফোরণ) করার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিস্ময়কর লেজার দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে :

    গ্যাস লেজার : এই লেজারগুলোর মধ্যে থাকে হিলিয়াম-নিয়ন লেজার। সাধারণ এই লেজার আমাদের পরিচিত লাল রশ্মি তৈরি করে। বিদ্যুৎপ্রবাহ বা রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চারণ করা হয় এতে। হিলিয়াম-নিয়ন লেজারের শক্তি বেশ দুর্বল। তবে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস লেজার ব্যবহার করে ভারী শিল্পকারখানায় বিস্ফোরণ, কাটিং আর ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া পুরোপুরি অদৃশ্য বিপুল শক্তির বিম সৃষ্টি করা যায় এটি দিয়ে।

    রাসায়নিক লেজার : রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি সঞ্চারণ করা হয় এই শক্তিশালী লেজারগুলোতে। যেমন ইথিলিনের জ্বলন্ত শিখা ও নাইট্রোজেন ট্রাইফ্লুরাইড বা NF3। এই লেজারগুলো বেশ শক্তিশালী হওয়ার কারণে এগুলো সামরিক কাজে ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক লেজার আকাশযুদ্ধে বা স্থলযুদ্ধে ব্যবহার করে মার্কিন সেনাবাহিনী। এগুলো কয়েক মিলিয়ন ওয়াট শক্তি তৈরি করতে পারে। এটি মধ্য আকাশে স্বল্পপাল্লার মিসাইল ভূপাতিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়।

    এক্সজিমার লেজার : রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি সঞ্চারণ করা হয় এই লেজারও। এতে প্রায়ই নিষ্ক্রিয় গ্যাস (যেমন আর্গন, ক্রিপ্টন বা জেনন) ও ফ্লোরিন কিংবা ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। অতিবেগুনি রশ্মি তৈরি করে এই লেজার। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে চিপের অতি ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর খোদাই করতে আর চোখের ল্যাসিক সার্জারিতে ব্যবহার করা যায়।

    সলিড স্টেট লেজার : এ ধরনের প্রথম ব্যবহারোপযোগী লেজার বানানো হয়েছিল ক্রোমিয়াম-স্যাফায়ার রুবি ক্রিস্টাল দিয়ে। ইট্রিয়াম, হলমিয়াম, থুলিয়াম ও অন্যান্য রাসায়নিক যোগ করে অনেক ধরনের ক্রিস্টাল দিয়ে লেজার বিম বানানো যায়। এগুলো উচ্চ শক্তির অতি ক্ষুদ্র স্পন্দনের লেজার আলো তৈরি করতে পারে।

    সেমিকন্ডাক্টর লেজার : সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ডায়োডের ব্যবহার বেশ পরিচিত। ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাটিং ও ঢালাইয়ে তীব্র রশ্মি তৈরি করতে পারে ডায়োড। আবার বিভিন্ন দোকানে চেকআউট স্ট্যান্ডে বিভিন্ন আইটেমের বারকোডের পাঠোদ্ধারে এগুলো ব্যবহৃত হয়।

    ডাই লেজার : এই লেজার জৈব রং হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরা বিশেষভাবে দরকারি। কারণ, এরা অতি ক্ষুদ্র কম্পাঙ্কের আলো তৈরি করতে পারে, যার স্থায়িত্ব মাত্র ১ সেকেন্ডের ট্রিলিয়ন ভাগের ১ ভাগ।

    লেজার ও রে-গান?

    বিভিন্ন ধরনের বাণ্যিজিক ও সামরিক লেজার থেকে শক্তি পাওয়া গেলেও লড়াই বা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের মতো আমাদের কাছে কোনো রে-গান নেই কেন? সায়েন্স ফিকশন মুভিতে একপ্রকার রে-গান আদর্শ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। তাহলে আমরা সেগুলো এখনো বানাতে চেষ্টা করছি না কেন?

    এর সহজ উত্তর হলো পোর্টেবল বা বহনযোগ্য পাওয়ার প্যাকের অভাব। সে জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তির জোগান দিতে সক্ষম ক্ষুদ্র আকৃতির পাওয়ার প্যাক দরকার। আবার সেটি এতই ছোট হতে হবে যে যেন তা হাতের তালুর মধ্যে এঁটে যায়। বর্তমানে এই পরিমাণ শক্তির জোগান দেওয়ার জন্য বড়সড় বাণিজ্যিক পাওয়ার স্টেশন বানাতে হবে। বর্তমানে এ রকম বিপুল শক্তি জোগান দেওয়ার মতো সবচেয়ে ছোট বহনযোগ্য যে সামরিক যন্ত্রটি পাওয়া যায়, সেটি ক্ষুদ্রাকৃতির একটি হাইড্রোজেন বোমা। এটি আপনার লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে সঙ্গে আপনাকেও ধ্বংস করে ফেলতে পারবে।

    এখানে দ্বিতীয় আরেকটি আনুষঙ্গিক সমস্যা হলো লেজিং ম্যাটেরিয়ালের স্থায়িত্ব। তাত্ত্বিকভাবে, লেজারে শক্তি ঘনীভূত করার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, হাতের মুঠোয় রাখার মতো রে-গানের লেজিং ম্যাটেরিয়াল স্থিতিশীল হবে না। যেমন ক্রিস্টাল লেজারে বেশি শক্তি পাম্প করলে তা অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে একসময় ফেটে যায়। তাই কোনো বস্তুকে বাষ্পীভূত করতে কিংবা শত্রুকে অসাড় করতে সক্ষম অতিশক্তিশালী লেজার বানানো দরকার। সে জন্য কোনো বিস্ফোরণের শক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে লেজিং ম্যাটেরিয়ালের স্থিতিশীলতা আর এ ধরনের বাধার সৃষ্টি করবে না। কারণ, এ ধরনের লেজার হয়তো মাত্র একবারই ব্যবহার করা যাবে।

    পোর্টেবল পাওয়ার প্যাক ও স্থিতিশীল লেজিং ম্যাটেরিয়ালের সমস্যার কারণে বর্তমান প্রচলিত প্রযুক্তি দিয়ে হাতের মুঠোয় ধরে চালানোর মতো রে- গান বানানো সম্ভব নয়। অবশ্য রে-গান বানানো সম্ভব, যদি সেগুলো তারের মাধ্যমে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কিংবা ন্যানো প্রযুক্তি দিয়ে হয়তো কোনো দিন মিনিয়েচার ব্যাটারি বানানো যাবে, যা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটানোর মতো শক্তি উৎপাদন করতে পারবে। আবার হাতের মুঠোয় থাকা কোনো যন্ত্রের জন্য হয়তো প্রয়োজনীয় শক্তির জোগানও দিতে পারবে এটি আমরা দেখেছি, বর্তমানে ন্যানো প্রযুক্তি অনেকটাই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। পারমাণবিক পর্যায়ে পারমাণবিক যন্ত্রাংশ তৈরি করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেগুলো আকর্ষণীয় হলেও ব্যবহারযোগ্য নয়। যেমন পারমাণবিক অ্যাবাকাস ও পারমাণবিক গিটার। কল্পনা করা যায়, এই শতাব্দীর শেষে বা পরের শতাব্দীতে বিপুল শক্তি ধারণে সক্ষম মিনিয়েচার ব্যাটারি উপহার দিতে পারবে ন্যানো প্রযুক্তি।

    আলোক তলোয়ারের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা আছে। ১৯৭০-এর দশকে স্টার ওয়ার্স মুভিটি যখন প্রথম মুক্তি পেল, তখন আলোক সেনাবাহিনী শিশুদের কাছে সেরা বিক্রীত খেলনা হয়ে ওঠে। কিন্তু অনেক সমালোচকের মতে, এ রকম যন্ত্র কখনো বানানো সম্ভব হবে না। প্রথমত, আলোকে ঘনীভূত করা অসম্ভব। আলো সব সময় আলোর গতিতেই চলে। তাই একে কখনো কঠিন বানানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, স্টার ওয়ার্সে আলোক তলোয়ারের যেমন ব্যবহার দেখানো হয়, সেভাবে আলোকরশ্মিকে মধ্য আকাশে নিঃশেষ করে ফেলা যাবে না। কারণ, আলোকরশ্মি চিরকাল চলতেই থাকবে। কাজেই সত্যিকারের আলোক তলোয়ার আকাশে ছড়িয়ে পড়বে।

    আসলে প্লাজমা বা অতি উত্তপ্ত আয়োনিত গ্যাস ব্যবহার করে একধরনের আলোক তলোয়ার বানানোর উপায় আছে। প্লাজমাকে এমনভাবে উত্তপ্ত করা সম্ভব, যাতে তা অন্ধকারে জ্বলে উঠতে ও ইস্পাতের ভেতর দিয়েও ছিদ্র তৈরি করতে পারে। প্লাজমা আলোক তলোয়ারে হয়তো কোনো উপায়ে একটি পাতলা ও ফাঁপা দণ্ড বসানো যাবে, যা টেলিস্কোপের মতো ক্রমান্বয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে। এ টিউবের মধ্যে উত্তপ্ত প্লাজমা ছেড়ে দিলে ভেতরের ফাঁপা দণ্ডটি বরাবর সুষমভাবে সাজানো ছোট গর্তগুলোর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যাবে। দণ্ডের ওপরে ও গর্তগুলোর ভেতর দিয়ে বা হাতলের বাইরে প্লাজমা প্রবাহিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলে, অতি উত্তপ্ত গ্যাসের একটি লম্বা ও জ্বলজ্বলে টিউবের আকার ধারণ করবে সেটি। আর ইস্পাতকেও গলিয়ে ফেলার জন্য তা যথেষ্ট। এ যন্ত্রটিকে মাঝে মাঝে প্লাজমা টর্চ বলে উল্লেখ করা হয়।

    কাজেই এমন একটি উচ্চশক্তির যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব, যার সঙ্গে আলোক তলোয়ারের বেশ মিল আছে। কিন্তু রে-গানের জন্য আপনাকে উচ্চশক্তির একটি পোর্টেবল পাওয়ার প্যাক তৈরি করা ছাড়া উপায় নেই। তা না হলে লম্বা একটা তার দরকার হবে, যেটি আলোক তলোয়ারকে সংযুক্ত করবে একটি পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সঙ্গে। কিংবা ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে বিপুল শক্তি সরবরাহ করতে পারা কোনো ক্ষুদ্র পাওয়ার সাপ্লাই বানিয়ে নিতে হবে।

    তাই এভাবে হয়তো এখন একধরনের রে-গান ও আলোক তলোয়ার বানানো সম্ভব। কিন্তু সায়েন্স ফিকশন মুভিতে দেখানো হাতের মুঠোয় ধরা শক্তিশালী অস্ত্র এখনো আমাদের প্রচলিত প্রযুক্তির বাইরে। তবে এ শতাব্দীর শেষে বা পরের শতাব্দীতে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স ও ন্যানোটেকনোলজির নতুন অগ্রগতির মাধ্যমে হয়তো রে-গান বানানো সম্ভব হবে। সে কারণে এটি প্রথম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা।

    মৃত নক্ষত্রের জন্য শক্তি

    স্টার ওয়ার্সমুভিতে দেখানো আস্ত গ্রহ ধ্বংস করতে সক্ষম ও ছায়াপথে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার মতো মৃত নক্ষত্রের লেজার কামান বানাতে দরকার কল্পনাতীত অতি শক্তিশালী লেজার। বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী লেজারের বেশ কিছুর অস্তিত্ব শুধু নক্ষত্রের কেন্দ্রেই দেখা যায়, যা তাপমাত্রা ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়। নক্ষত্রদের এই শক্তি ফিউশন রিঅ্যাক্টর হিসেবে হয়তো একদিন পৃথিবীতে ব্যবহারের উপায় বের করা যাবে।

    নক্ষত্র গঠিত হলে বাইরের মহাকাশে কী ঘটে, তা অনুকরণের চেষ্টা করছে ফিউশন মেশিন। হাইড্রোজেন গ্যাসের আকারহীন বিশাল কোনো বলের মধ্য দিয়ে একটি নক্ষত্রের সূচনা হয়। নক্ষত্রের প্রবল মহাকর্ষ ওই গ্যাসকে সংকুচিত করে ও তাকে উত্তপ্ত করে তোলে; এভাবে ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা চরম পর্যায়ে পৌছায়। যেমন নক্ষত্রটির কেন্দ্রের অনেক গভীরের তাপমাত্রা ৫০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে উঠে যায়। হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসকে পরস্পরের সঙ্গে সবলে আছড়ে ফেলার জন্য এই তাপমাত্রা যথেষ্ট। এভাবেই হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি হয়, সঙ্গে তৈরি হয় বিপুল শক্তি। হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়ামের এই ফিউশনই নক্ষত্রটির শক্তির উৎস। আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=mc^2 অনুযায়ী, এভাবেই কোনো নক্ষত্রে সামান্য পরিমাণ ভর রূপান্তরিত হয়ে বিপুল শক্তি বেরিয়ে আসে।

    পৃথিবীতে ফিউশন বিক্রিয়ায় লাগাম পড়াতে বিজ্ঞানীরা এখন দুটি উপায়ে চেষ্টা করছেন। তবে দুটো পদ্ধতি গড়ে তোলার কাজটি প্রত্যাশার চেয়েও অনেক কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

    ফিউশনে জড়তার বন্ধন

    প্রথম পদ্ধতিকে বলা হয় ইনারশিয়াল কনফাইনমেন্ট বা জড়তার বন্ধন। পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী লেজার ল্যাবরেটরিতে এক টুকরো সূর্য তৈরি করা হয় এ পদ্ধতিতে। নিওডাইমিয়াম গ্লাস কঠিন অবস্থার লেজার নক্ষত্রের কেন্দ্রের মতো চরম তাপমাত্রা তৈরির জন্য আদর্শ। এই লেজার সিস্টেমের আকার বড়সড় কারখানার সমান। এ ছাড়া এতে একগুচ্ছ লেজার থাকে, যা এক সারি সমান্তরাল লেজার বিমকে লম্বা এক টানেলে নিক্ষেপ করতে পারে। এই উচ্চশক্তির লেজার বিম এরপর আঘাত করে গোলকের চারপাশে সাজানো এক সারি ছোট ছোট আয়নায়। লেজার বিমগুলোকে এসব আয়না বেশ সাবধানে সুষমভাবে একটি ক্ষুদ্র, হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ মার্বেলের ওপর ফোকাস করা হয়। (মার্বেলগুলো লিথিয়াম ডিউটেরাইডের মতো পদার্থ দিয়ে বানানো, যা হাইড্রোজেন বোমার সক্রিয় উপাদান)। ক্ষুদ্র মার্বেলগুলোর আকার সাধারণত একটি আলপিনের মাথার সমান আর ওজন মাত্র ১০ মিলিগ্রাম।

    লেজার আলোর বিস্ফোরণ মার্বেলগুলোর পৃষ্ঠতল পুড়িয়ে ফেলে। তাতে পৃষ্ঠতল বাষ্পীভূত হয়ে মার্বেলটি সংকুচিত হয়ে যায়। মার্বেলগুলো চুপসে যাওয়ার কারণে শক ওয়েভের সৃষ্টি হয়, যা মার্বেলগুলোর কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে তার তাপমাত্রা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রিতে নিয়ে যায়। হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসকে সংযুক্ত করে হিলিয়ামে রূপান্তর করতে এই তাপমাত্রা যথেষ্ট এই তাপমাত্রা ও সংকোচন চাপ এতই বেশি হয় যে তা লসনস ক্রাইটেরিয়ন বা লসনের মানদণ্ড পূরণ করে। হাইড্রোজেন বোমা ও নক্ষত্রের কেন্দ্রেও এই একই মানদণ্ড পূরণ করে। (লসনের মানদণ্ড অনুযায়ী, ফিউশন প্রক্রিয়া শুরু করতে কোনো হাইড্রোজেন বোমায়, নক্ষত্রে বা ফিউশন যন্ত্রে তাপমাত্রা, ঘনত্ব ও সময়ে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে। )

    জড়তার বাধা প্রক্রিয়ায় বিপুল শক্তি বেরিয়ে আসে, যার সঙ্গে নিউট্রন ও থাকে। (লিথিয়াম ডিউটেরাইড ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ও সিসার চেয়েও ২০ গুণ বেশি ঘনত্বে পৌঁছাতে পারে।) নিউট্রনের এই বিস্ফোরণ পরে ওই মার্বেল থেকে নিঃসৃত হয়। নিউট্রনগুলো চেম্বারের চারদিকের গোলকীয় পদার্থের আস্তরণে আঘাত করে আস্তরণটিকে উত্তপ্ত করে তোলে। উত্তপ্ত আস্তরণ এরপর পানিকে উত্তপ্ত করে বাষ্পীভূত করে। এই বাষ্প ব্যবহার করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

    তবে কোনো ক্ষুদ্র মার্বেলের ওপর এ রকম তীব্র শক্তি সমানভাবে কেন্দ্রীভূত করতে পারাটাই এখানে মূল সমস্যা। লেজার ফিউশন বানানোর প্রথম গুরুতর প্রচেষ্টাটি ছিল শিব লেজার। ক্যালিফোর্নিয়ায় লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে (এলএলএনএল) বানানো বিশটি লেজার বিম সিস্টেম শিব লেজার ১৯৭৮ সালে কাজ শুরু করে। (হিন্দুদের দেবতা শিবের অনেকগুলো হাত। এই লেজার সিস্টেম নকশাতেও সেটিই অনুকরণ করা হয়েছিল।) শিব লেজার সিস্টেম কর্মক্ষমতা ছিল বেশ হতাশাজনক। তবে লেজার ফিউশন যে প্রযুক্তিগতভাবে কাজ করে, সেটি প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল এটা। পরে নোভা লেজারের মাধ্যমে শিব লেজার সিস্টেম প্রতিস্থাপন করা হয়। সেটি শিব লেজারের চেয়ে দশ গুণ শক্তিসম্পন্ন ছিল। তবে নোভা লেজারও মার্বেলগুলোর উপযুক্ত বিস্ফোরণ শক্তি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। তারপরও এখনকার ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটির (এনআইএফ) গবেষণার পথ দেখিয়েছিল এটি। এলএলএনএলে এই এনআইএফের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৭।

    বিশাল আকৃতির দানবীয় যন্ত্র এনআইএফ চালু করা হয় ২০০৯ সালে। এতে ১৯২টি লেজার বিমের সারি আছে, যা ৭০০ ট্রিলিয়ন ওয়াটের বিপুল শক্তির জোগান দেয়। (উৎপাদিত এই শক্তি প্রায় ৭ লাখ বড় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদিত শক্তিকে একটি একক বিস্ফোরণে কেন্দ্ৰীভূত করার সমান)। হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ মার্বেলে পুরোপুরি বিস্ফোরণ অর্জন করতে এই উন্নত প্রযুক্তির লেজার সিস্টেম ডিজাইন করা হয়েছে। (সমালোচকেরা তারপরও বলেন, নিঃসন্দেহে সামরিক ব্যবহারের জন্য এটি বানানো হয়েছে। কারণ, এটি হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ সিমুলেট করতে পারে। আবার এর মাধ্যমে হয়তো নতুন পারমাণবিক অস্ত্র বা বিশুদ্ধ ফিউশন বোমা তৈরি করাও সম্ভব। এর ফিউশন প্রক্রিয়ার শুরু করার জন্য কোনো ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম বোমার প্রয়োজন নেই।)

    তবে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী লেজার মেশিন বা এনআইএফ লেজার ফিউশন মেশিন থাকার পরও এটি স্টার ওয়ার্সে দেখানো মৃত নক্ষত্রের মতো বিপুল বিধ্বংসী শক্তি তৈরি করতে পারেনি। তাই এ রকম যন্ত্র বানাতে হলে আমাদের অবশ্যই অন্য কোনো শক্তির উৎসের দিকে তাকাতে হবে।

    ফিউশনে চুম্বকীয় বন্ধন

    বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য দ্বিতীয় যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করে মারণ নক্ষত্র প্রবলভাবে সক্রিয় করতে পারেন, তার নাম ম্যাগনেটিক কনফাইনমেন্ট বা চুম্বকীয় বন্ধন। এ প্রক্রিয়ায় একটি চুম্বকীয় ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাসের উত্তপ্ত প্লাজমা ধরা থাকবে। আসলে এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথম বাণিজ্যিক ফিউশন রিঅ্যাক্টরের প্রোটোটাইপ জোগান আসতে পারে। বর্তমানে এ রকম সবচেয়ে উন্নত ফিউশন প্রজেক্ট হলো ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্ট রিঅ্যাক্টর (আইটিইআর)। ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের কাদারেসে ২০০৬ সালে যৌথভাবে আইটিইআর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কয়েকটি দেশ। (এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও ভারত)। হাইড্রোজেন গ্যাসকে ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তুলতে এটি ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ইতিহাসের প্রথম ফিউশন রিঅ্যাক্টর বা চুল্লি হয়ে উঠতে পারে, যা যে পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে তার চেয়ে বেশি উৎপাদন করতে পারবে। ৫০০ সেকেন্ডে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে চুল্লিটি (এখন পর্যন্ত রেকর্ড হলো ১ সেকেন্ডে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন)। আইটিইআর আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে প্রথমবারের মতো তার প্লাজমা উৎপাদন করবে। আর পুরোপুরি সক্রিয়ভাবে কাজ করবে আগামী ২০২২ সালে। ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে এই প্রজেক্টে, যা ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট (ম্যানহাটান প্রজেক্ট ও ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের পর)। [সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্লাজমা পরীক্ষা চালানো শুরু হবে। আর ২০৩৫ সালে পুরোপুরি ডিউটেরিয়াম- ট্রিটিয়াম ফিউশন পরীক্ষা চালানো হবে। এ প্রকল্পে এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।—অনুবাদক]

    আইটিইআর দেখতে কিছুটা বিশাল আকৃতির ডোনাটের মতো, যার ভেতরে হাইড্রোজেন গ্যাস বৃত্তাকারে ঘুরছে। আবার বিশালাকার এক তারের কয়েল ঘুরছে ওই পৃষ্ঠতলের চারপাশে। কয়েলটি অতিপরিবাহী না হওয়া পর্যন্ত তাকে শীতল করা হয়। এরপর বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি তার ভেতর পাম্প করে একটি চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রটি ডোনাটের ভেতরে প্লাজমাকে আটকে রাখবে। এখন ডোনাটটির ভেতরে কোনো বৈদ্যুতিক প্রবাহ দেওয়া হলে নক্ষত্রের মতো তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে উঠবে হাইড্রোজেন গ্যাস।

    আইটিইআর নিয়ে বিজ্ঞানীদের উত্তেজনার কারণ এর মাধ্যমে সস্তায় শক্তি উৎপাদন করা যাবে। ফিউশন রিঅ্যাক্টরের জ্বালানি সাধারণ সমুদ্রের পানি কারণ, এটি হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ। অন্তত কাগজে-কলমে হলেও হয়তো বিরামহীন, সস্তা শক্তি সরবরাহ করতে পারবে ফিউশন।

    তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের কাছে এখনো ফিউশন রিঅ্যাক্টর নেই কেন? সেই ১৯৫০-এর দশকে ফিউশন পদ্ধতির নীলনকশা করা হলেও এটা বানাতে এত দশক লাগছে কেন? আসলে হাইড্রোজেন জ্বালানি সুষমভাবে সংকুচিত করাটাই এখানে চরম সমস্যা। নক্ষত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস নিখুঁত গোলক আকারে সংকুচিত হয়। সে কারণে ওই গ্যাস সমভাবে ও পরিপাটিভাবে উত্তপ্ত হয়।

    এনআইএফের লেজার ফিউশন, সমকেন্দ্রিক লেজার রশ্মি যে মার্বেলের পৃষ্ঠতল পুড়িয়ে দেয়, তা অবশ্যই নিখুঁতভাবে সুষম হতে হবে। এই সুষমতা অর্জন করাই এখন মূল সমস্যা। অন্যদিকে ম্যাগনেটিক কনফাইনমেন্ট মেশিনে, চুম্বকীয় ক্ষেত্রগুলোর উত্তর ও দক্ষিণ দুটো মেরু থাকে। ফলে গ্যাসকে সুষম গোলকীয়ভাবে সংকুচিত করা খুব কঠিন। আমরা শুধু ডোনাট আকৃতির একটি চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করতে পারি। কিন্তু এখানে হাইড্রোজেন গ্যাস সংকুচিত করা অনেকটা বেলুন চুপসানোর মতো। প্রতিবার বেলুনের এক প্রান্তে চুপসানো হলে, বেলুনের অন্য কোথাও বাতাস ফুলে ওঠে। তাই একসঙ্গে বেলুনের সব দিকে সুষমভাবে সংকুচিত করা সত্যিই বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। উত্তপ্ত গ্যাস সাধারণত এই চুম্বকীয় বোতল থেকে বেরিয়ে আসে, এতে তা চুল্লির দেয়াল স্পর্শ করে ও ফিউশনপ্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণেই হাইড্রোজেন গ্যাসকে ১ সেকেন্ডের বেশি সংকুচিত করা খুবই কঠিন।

    বর্তমান প্রজন্মের ফিশন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো কোনো ফিউশন পারমাণবিক চুল্লি বড় ধরনের পারমাণবিক বর্জ্য তৈরি করবে না। (প্রচলিত প্রতিটি ফিশন প্ল্যান্ট বছরে ৩০ টনের মতো উচ্চমাত্রার পারমাণবিক বর্জ্য তৈরি করে। কিন্তু ফিউশন মেশিন থেকে যে পারমাণবিক বর্জ্য তৈরি হয়, তা প্রধানত তেজস্ক্রিয় ইস্পাত। চুল্লিটি শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হলেই কেবল তা পাওয়া যায়।)

    অবশ্য নিকট ভবিষ্যতে ফিউশন পদ্ধতি পৃথিবীর শক্তিসংকট শিগগিরই সমাধান করতে পারবে না। পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়েরে-গিলস ডি গেনস বলেন, ‘আমরা বলতে পারি, সূর্যকে একটি বাক্সের মধ্যে বন্দী করব। আইডিয়াটা চমৎকার তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, এই বাক্সটা কীভাবে বানাতে হবে, তা আমরা এখনো জানি না।’ তবে গবেষকদের ধারণা, সবকিছু ঠিকমতো চলতে থাকলে আগামী ৪০ বছরের মধ্যে আইটিইআর হয়তো বাণিজ্যিকভাবে ফিউশন শক্তি উৎপাদনের দিকে যেতে পারবে। এই শক্তি আমাদের বাসাবাড়িতেও বিদ্যুতের জোগান দেবে। একদিন ফিউশন চুল্লিগুলো আমাদের শক্তি সমস্যা কমিয়ে দেবে ও পৃথিবীতেই নিরাপদে সূর্যের শক্তি নিঃসরণ করতে পারবে।

    তবে কথা হলো, ম্যাগনেটিক কনফাইনমেন্ট ফিউশন রিঅ্যাক্টরও ডেথ স্টার যুদ্ধাস্ত্রের জন্য দরকারি শক্তি জোগান দেওয়ার মতো যথেষ্ট নয়। সে জন্য আমাদের পুরোপুরি নতুন অন্য কোনো নকশার প্রয়োজন।

    নিউক্লিয়ার চালিত এক্স-রে লেজার

    ডেথ স্টার লেজার কামান সিমুলেট করতে বর্তমানের প্রযুক্তিতে আরও কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি হতে পারে হাইড্রোজেন বোমা দিয়ে। তাত্ত্বিকভাবে এক্স-রে লেজারের একটি সারি নিউক্লিয়ার শক্তি ব্যবহার করে আর তা কেন্দ্রীভূত করে যথেষ্ট শক্তি তৈরি করতে পারে। এই শক্তি দিয়ে আস্ত একটি গ্রহ ভস্মীভূত করার মতো যন্ত্র বানানো সম্ভব।

    রাসায়নিক বিক্রিয়ার তুলনায় পারমাণবিক শক্তি প্রায় ১০০ মিলিয়ন গুণ বেশি শক্তি নিঃসরণ করতে পারে। একটি বেসবলের চেয়ে ছোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের এক টুকরো পুরো একটি শহর অগ্নিগোলার মতো পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এখানে এই ইউরেনিয়ামের মাত্র ১ শতাংশ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আগেই আলোচনা করেছি, লেজার রশ্মিতে শক্তি ভরার অনেকগুলো উপায় আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটি হলো একটি নিউক্লিয়ার বোমা ব্যবহার করা।

    বৈজ্ঞানিক গুরুত্বের পাশাপাশি এক্স-রে লেজারের সামরিক গুরুত্বও কম নয়। খুবই ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে এদের পারমাণবিক দূরত্বে অনুসন্ধান চালাতে ও জটিল অণুগুলোর পারমাণবিক গঠন বোঝার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, এসব ক্ষেত্রে সাধারণ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা বেশ কঠিন। কোনো অণুর ভেতরের পরমাণুগুলোতে তাদের গতি ও সঠিক সজ্জা দেখা গেলে আমাদের সামনে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সম্পূর্ণ নতুন একটি জগৎ খুলে যাবে।

    হাইড্রোজেন বোমা এক্স-রে পরিসরে বিপুল পরিমাণ শক্তি নিঃসরণ করার কারণে, এক্স-রে লেজার দিয়েও নিউক্লিয়ার যুদ্ধাস্ত্রগুলোকে শক্তি সরবরাহ করা যেতে পারে।

    এক্স-রে লেজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যে মানুষটি জড়িত ছিলেন, তিনি হাইড্রোজেন বোমার জনক পদার্থবিদ এডওয়ার্ড টেলার

    টেলার সেই পদার্থবিদ, যিনি ১৯৫০-এর দশকে ম্যানহাটান প্রজেক্টের প্রধান রবার্ট ওপেনহাইমারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেন। ওপেনহাইমারের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে তাঁকে হাইড্রোজেন বোমা নিয়ে কাজ করতে বিশ্বাস করা উচিত নয় বলে সেবার সাক্ষ্য দেন টেলার। তাঁর সাক্ষ্যের কারণেই অসম্মানিত হতে হয় ওপেনহাইমারকে। তাঁর সিকিউরিটি ক্লিয়ায়েন্সও বাতিল করা হয়েছিল। এই কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক বিখ্যাত পদার্থবিদ হয়তো কখনোই ক্ষমা করবেন না টেলারকে।

    (টেলারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ শুরু হয় হাইস্কুলে পড়ার সময়। অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতিবস্তু নিয়ে আমি বেশ কিছু পরীক্ষা চালাই। এভাবে সান ফ্রান্সিসকো বিজ্ঞান মেলায় বড় ধরনের এক পুরস্কারও জিতি সেবার। পরে নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্কে ন্যাশনাল সায়েন্স ফেয়ারে যেতে পারি। টেলারের সঙ্গে আমার দেখা হয় সেখানকার স্থানীয় এক টিভিতে। তখন তরুণ মেধাবী পদার্থবিদদের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন তিনি। ক্রমান্বয়ে আমাকে হার্টজ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কলারশিপ দেন টেলার। এটি হার্ভার্ডে আমার কলেজে পড়ালেখার খরচ জুগিয়েছিল। তাঁর পরিবার সম্পর্কেও বেশ জানতাম। কারণ, প্রতিবছর বেশ কয়েকবার বার্কলিতে টেলারের বাড়িতে আমি গিয়েছি।)

    মূলত টেলারের এক্স-রে লেজার হলো ছোট্ট একটি নিউক্লিয়ার বোমা, যার চারপাশে তামার দণ্ড দিয়ে ঘেরা থাকে। এই নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরিত হলে তীব্র এক্স-রের গোলকীয় শক ওয়েভ বেরিয়ে আসে। এই শক্তিশালী রশ্মিগুলো তখন তামার দণ্ডগুলোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা লেজিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে এক্স-রের শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে পরিণত হয় তীব্র রশ্মিতে। এক্স-রের এই তীব্র রশ্মিগুলো এবার শত্রুপক্ষের দিকে ছুড়ে মারা হয়। এ ধরনের কোনো যন্ত্র অবশ্যই শুধু একবারই ব্যবহার করা যায়। কারণ, নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের কারণে এক্স-রে লেজারটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধ্বংস করে ফেলে।

    নিউক্লিয়ার-চালিত এক্স-রে লেজারের প্রাথমিক পরীক্ষাকে বলা হতো ক্যাবরা টেস্ট। ১৯৮৩ সালে ভূগর্ভস্থ খাদের মধ্যে চালানো হয় পরীক্ষাটি। এতে একটি হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এরপর এর এলোমেলো এক্স-রের প্লাবন কেন্দ্রীভূত করে একটি সংসক্ত এক্স-রে লেজার বিম তৈরি করা হয়। শুরুতে পরীক্ষাটি সফলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৩ সালে এটি প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে একটি ঘোষণা দিতে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করেছিল, মানে সেটাকে ঐতিহাসিক বক্তৃতাই বলা যায়। ওই ঘোষণায় তিনি স্টার ওয়ার্সের মতো প্রতিরক্ষা ঢাল তৈরির ইচ্ছা পোষণ করেন। ফলে শত্রুপক্ষের আইসিবিএম ভূপাতিত করতে নিউক্লিয়ার-চালিত এক্স-রে লেজারের মতো কোনো যন্ত্রের সজ্জা তৈরিতে কয়েক মিলিয়ন ডলার ঢালা হয়। (পরে তদন্তে দেখা গেছে, ক্যাবরা টেস্টের সময় পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত ডিটেক্টর ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কারণ, এর রিডিং বিশ্বাসযোগ্য ছিল না।)

    এ রকম বিতর্কিত যন্ত্র ব্যবহার করে কি বর্তমানে আইসিবিএম যুদ্ধাস্ত্র ভূপাতিত করা সম্ভব? হয়তো সম্ভব। কিন্তু এ ধরনের যুদ্ধাস্ত্র নির্মূল করতে শত্রুপক্ষও বিভিন্ন ধরনের সহজ ও সস্তা পদ্ধতি ব্যবহার করে বসতে পারে (যেমন রাডারকে ধোঁকা দিতে শত্রুপক্ষ মিলিয়ন মিলিয়ন সস্তা ফাঁদ ছেড়ে দিতে পারে, কিংবা এক্স-রেগুলোকে বিক্ষিপ্ত করতে তাদের যুদ্ধাস্ত্র ঘোরাতে পারে, কিংবা রাসায়নিক আবরণ নিঃসরণ করতে পারা এক্স-রে বিমের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে)। আবার স্টার ওয়ার্সের প্রতিরক্ষা ঢালের মধ্যে ঢোকার জন্য শত্রুপক্ষের কাছে হয়তো অন্য কোনো যুদ্ধাস্ত্রও থাকতে পারে।

    কাজেই নিউক্লিয়ার-চালিত এক্স-রে লেজার এখন মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতোই অকার্যকর। কিন্তু ধেয়ে আসা কোনো গ্রহাণুর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য কিংবা আস্ত একটি গ্রহকে ধ্বংস করার জন্য ডেথ স্টার বানানোর ক্ষেত্রে এটি কি সম্ভব?

    মারণ নক্ষত্রের পদার্থবিজ্ঞান

    স্টার ওয়ার্স মুভির মতো আস্ত কোনো গ্রহ ধ্বংস করার উপযোগী কোনো যুদ্ধাস্ত্র কি বানানো সম্ভব? তাত্ত্বিকভাবে এর উত্তর হলো, হ্যাঁ, সম্ভব। বিভিন্ন উপায়ে এটি তৈরি করা যেতে পারে। প্রথমত, হাইড্রোজেন বোমা থেকে কী পরিমাণ শক্তি বেরিয়ে আসবে, তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। (হাইড্রোজেন বোমার সঠিক রূপরেখা এখনো টপ সিক্রেট ও ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্ট হিসেবে গোপন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। কিন্তু মোটাদাগে এর রূপরেখা বেশ ভালোভাবেই জানা যায়।) হাইড্রোজেন বোমা আসলে বিভিন্ন পর্যায়ে বানানো হয়। এই পর্যায়গুলোকে সঠিক অনুক্রমে সাজিয়ে প্রায় ইচ্ছেমতো মাত্রার একটি নিউক্লিয়ার বোমা বানানো সম্ভব।

    এর প্রথম পর্যায়টি হলো একটি আদর্শ ফিশন বোমার। এখানে ইউরেনিয়াম-২৩৫-এর শক্তি ব্যবহার করা হয়, যাতে সেখান থেকে এক্স-রের তীব্র ঝলক বেরিয়ে আসে। হিরোশিমা শহরে ফেলা বোমাটিতে যেমনটি ঘটানো হয়েছিল। এই পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় আগে এই এক্স-রে প্রসারমাণ গোলক প্ৰবল বেগে বিস্ফোরণ থেকে বেরিয়ে আসে (কারণ এটি আলোর গতিতে চলাচল করে)। এরপর এক্স-রে এই ঝলককে লিথিয়াম ডিউটেরাইডের এক কন্টেইনারে কেন্দ্রীভূত করা হয়। লিথিয়াম ডিউটেরাইডই হলো হাইড্রোজেন বোমার সক্রিয় উপাদান। (এটি কীভাবে ঘটে, তা এখনো গোপনীয়)। লিথিয়াম ডিউটেরাইডে এক্স-রে আঘাত হানার কারণে এটি চুপসে যায় এবং উত্তপ্ত হয়ে মিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রায় পৌছায়। এতে দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়, যা প্রথমটির তুলনায় অনেক বড়। হাইড্রোজেন বোমা থেকে এক্স-রের বিস্ফোরণ এরপর দ্বিতীয় আরেক খণ্ড লিথিয়াম ডিউটেরাইডে কেন্দ্রীভূত করে তৃতীয় বিস্ফোরণটি ঘটানো যায়। এভাবে একের পর এক লিথিয়াম ডিউটেরাইডের স্তূপ বানিয়ে অকল্পনীয় মাত্রার হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করা যায়। সত্যি বলতে, এ পর্যন্ত বানানো সবচেয়ে বড় হাইড্রোজেন বোমাটির ছিল দুই স্তরের বোমা। ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন সেই বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটায়। এটি ৫০ মিলিয়ন টন টিএনটির সমমানের বোমা ছিল। অবশ্য তাত্ত্বিকভাবে এটি ১০০ মিলিয়ন টন টিএনটির সমমানের বিস্ফোরণ ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল (কিংবা বলা যায়, হিরোশিমায় ফেলা বোমাটির চেয়ে এটি পাঁচ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী।)

    অবশ্য পুরো একটি গ্রহ ভস্মীভূত করা পুরোপুরি ভিন্ন ব্যাপার। সে জন্য কোনো ডেথ স্টার বা মারণ নক্ষত্রকে মহাকাশে এ ধরনের কয়েক হাজার গুণ বেশি এক্স-রে লেজার ছুড়তে হবে। আবার এগুলোর সবটাই লক্ষ্যবস্তুতে একই সময়ে একসঙ্গে ছুড়তে হবে। (তুলনা হিসেবে মনে রাখতে হবে, ঠান্ডা যুদ্ধের চরম সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রত্যেকে প্রায় ৩০ হাজার পারমাণবিক বোমার স্তূপ গড়ে তোলে।) বিপুলসংখ্যক এক্স-রে লেজারের সম্মিলিত শক্তি পৃথিবীর উপরিতল ভস্মীভূত করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কাজেই ভবিষ্যতের কয়েক শত হাজার বছর বয়সী কোনো গ্যালাকটিক সাম্রাজ্যের পক্ষে এ ধরনের যুদ্ধাস্ত্র বানানো হয়তো মামুলি ব্যাপার।

    খুব উন্নত সভ্যতার জন্য এখানে দ্বিতীয় আরেকটি বিকল্প রয়েছে। সেটি হলো গামা রশ্মির বিস্ফোরকের শক্তি ব্যবহার করে একটি মারণ নক্ষত্র বানিয়ে নেওয়া। এ ধরনের মারণ নক্ষত্র যে পরিমাণ বিকিরণের বিস্ফোরণ ঘটাবে, তা শুধু দ্বিতীয় কোনো বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা সম্ভব। গামা রশ্মির বিস্ফোরক বাইরের মহাকাশে প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত হয়। তাই ধরে নেওয়া যায়, উন্নত কোনো সভ্যতা এই বিপুল পরিমাণ শক্তিতে লাগাম পরাতে পারবে। তবে কোনো নক্ষত্র চুপসে যাওয়ার আগে ও কোনো হাইপারনোভা পরিণত হওয়ার আগে নক্ষত্রটির ঘূর্ণন নিয়ন্ত্রণ করেও মহাকাশের যেকোনো বিন্দুতে গামা রশ্মির বিস্ফোরকটিকে লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব হতে পারে।

    গামা রশ্মির বিস্ফোরক

    গামা রশ্মির বিস্ফোরক আসলে প্রথম দেখা যায় ১৯৭০-এর দশকে। পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ শনাক্ত করতে সেবার মার্কিন সেনাবাহিনী ভেলা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে (অর্থাৎ অবৈধ পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের প্রমাণ)। তবে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের কোনো চিহ্ন শনাক্ত করতে না পারলেও ভেলা স্যাটেলাইট মহাকাশে বিপুল পরিমাণ বিকিরণের বিস্ফোরণ শনাক্ত করেছিল। শুরুতে এই আবিষ্কারে পেন্টাগনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন কি তাহলে মহাকাশে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে? পরে নিশ্চিত হওয়া গেল, বিকিরণের এ বিস্ফোরণ সুষমভাবে মহাকাশের সব দিক থেকেই আসছে। তার মানে, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে থেকে এসব বিকিরণ আসছে। কিন্তু এগুলো যদি এক্সট্রাগ্যালাটিক বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরের ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে সত্যি সত্যিই বিপুল শক্তি নিঃসরণ করছে, যা পুরো মহাবিশ্ব আলোকিত করার জন্য যথেষ্ট।

    ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে জ্যোতির্বিদ্যাসংক্রান্ত বিপুল পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত হঠাৎ করে প্রকাশ করে দেয় পেন্টাগন। সেসব দেখে চোখ কপালে ওঠে জ্যোতির্বিদদের। হঠাৎ জ্যোতির্বিদেরা বুঝতে পারলেন, একটা নতুন, রহস্যময় ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে একটি বিষয় তাঁরা বুঝতে পারলেন, বিজ্ঞানের পাঠ্যবইগুলো নতুন করে লিখতে হবে।

    গামা রশ্মি বিস্ফোরণ অদৃশ্য হওয়ার আগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট স্থায়ী থাকে। তাই তাদের শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে বিস্তৃত ধরনের সেন্সর প্রয়োজন। প্রথমত, স্যাটেলাইট প্রাথমিক বিকিরণের বিস্ফোরণ শনাক্ত করে। এরপর তা বিস্ফোরণের সঠিক অবস্থান বা স্থানাঙ্ক পৃথিবীতে পাঠায়। এ অবস্থান বা স্থানাঙ্ক এরপর অপটিক্যাল বা রেডিও টেলিস্কোপে রিলে করা হয়, যা গামা রশ্মির বিস্ফোরণের সঠিক অবস্থানে শূন্য হয়।

    অবশ্য এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য এখনো নিঃসন্দেহে গোপন রাখা হয়েছে। তবু গামা রশ্মির বিস্ফোরণের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি তত্ত্ব হলো, তারা বিপুল শক্তিসম্পন্ন হাইপারনোভা। তারা বিশাল কোনো কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে। ধারণা করা হয়, কোনো দানবীয় কৃষ্ণগহ্বরের গঠনের সময় গামা রশ্মির বিস্ফোরণ হয়।

    কৃষ্ণগহ্বর বিকিরণের দুটি জেট বা ফোয়ারা নিঃসরণ করে, যার একটি উত্তর মেরু ও আরেকটি দক্ষিণ মেরু থেকে। ঠিক ঘূর্ণমান লাটিমের মতো। দূরের কোনো গামা রশ্মি বিস্ফোরক থেকে দেখা বিকিরণ এ ফোয়ারা দুটির একটি, যা পৃথিবীর সমান্তরাল। গামা রশ্মির বিস্ফোরণের এই ফোয়ারা পৃথিবীর দিকে তাক করা থাকলে আর ওই গামা রশ্মি বিস্ফোরক আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশী হলে (পৃথিবী থেকে কয়েক শ আলোকবর্ষ দূরে) তার শক্তি খুবই বেশি হতো। তাতে আমাদের গ্রহের সব জীব নিমেষে ধ্বংস হয়ে যেত।

    প্রাথমিকভাবে গামা রশ্মি বিস্ফোরকের এক্স-রে স্পন্দন একটি বিদ্যুৎ- চুম্বকীয় স্পন্দন তৈরি করবে, যা সব ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিহ্ন করে দেবে। এর এক্স-রে এবং গামা রশ্মির তীব্রতা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ক্ষতিগ্রস্ত করার এবং আমাদের রক্ষাকারী ওজোন স্তর ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এরপর গামা রশ্মি বিস্ফোরকের ফোয়ারা ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবে। ক্রমান্বয়ে তা দানবীয় আগুনঝড়ে রূপ নেবে, যা পুরো গ্রহকে গ্রাস করবে। গামা রশ্মির বিস্ফোরক হয়তো স্টার ওয়ার্সের মতো পুরো গ্রহকে বিস্ফোরিত করবে না। তবে এর কারণে পৃথিবীর সব জীব নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যাবে। পরিণতিতে পড়ে থাকবে শুধু দগ্ধ, নিষ্ফলা একটি গ্রহ।

    বোঝা যাচ্ছে, এমন এক কৃষ্ণগহ্বরকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে হয়তো ঘুরিয়ে দেওয়া আমাদের চেয়ে কয়েক লাখ বছর এগিয়ে থাকা সভ্যতার পক্ষে সহজও হতে পারে। মৃত নক্ষত্র চুপসে যাওয়ার আগে তার দিকে গ্রহগুলোর ও নিউট্রন স্টারের গতিপথ সঠিক কোণে বদলে দিয়েও এটি করা সম্ভব। গতিপথের এই বিচ্যুতি নক্ষত্রটির ঘূর্ণন অক্ষ পাল্টে দেওয়ার জন্য হয়তো যথেষ্ট, যাতে একে নির্দিষ্ট দিকে লক্ষ্যস্থির করা যাবে। কাজেই একটি মৃত নক্ষত্র বড় ধরনের ও অকল্পনীয় রে-গান তৈরি করতে পারবে।

    সংক্ষেপে বলা যায়, শক্তিশালী লেজার ব্যবহার করে বহনযোগ্য বা হাতের মুঠোয় রাখার মতো রে-গান ও আলোর তলোয়ার বানানোকে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে প্রথম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা হিসেবে। তার মানে, এই শ্রেণির অসম্ভাব্যতাকে অদূর ভবিষ্যতে বা হয়তো কয়েক শতাব্দীর মধ্যে সম্ভব করে তোলা যাবে। তবে ঘূর্ণমান কোনো নক্ষত্র একটি কৃষ্ণগহ্বরে বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই তার দিকে লক্ষ্যস্থির করা আর তাকে একটি মৃত নক্ষত্রে পরিণত করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সে কারণে একে দ্বিতীয় শ্রেণির অসম্ভাব্যতা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তার মানে, এটি এমন এক ধরনের অসম্ভাব্যতা, যা নিঃসন্দেহে পদার্থবিজ্ঞানের কোনো সূত্র লঙ্ঘন না করলেও হয়তো ভবিষ্যতে কয়েক হাজার থেকে কয়েক মিলিয়ন বছর পর করা সম্ভব হবে।

    তথ্যনির্দেশ

    নিউক্লিয়াস : পরমাণুর কেন্দ্রীয় অংশ। এখানে শুধু প্রোটন ও নিউট্রন থাকে, যারা শক্তিশালী বল বা সবল নিউক্লীয় বল দ্বারা একত্র থাকে।

    এক্সজিমার : এক্সসাইটেড ডিমার।

    ইলেকট্রন : ঋণাত্মক চার্জযুক্ত একটি কণা, যা একটি পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘোরে।

    নিউক্লিয়ার ফিশন : যে প্রক্রিয়ায় দুটি নিউক্লিয়াসের সংঘর্ষে তারা একত্র হয়ে একটি একক, ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে।

    নিউক্লিয়ার ফিউশন : যে প্রক্রিয়ায় একটি নিউক্লিয়াস ভেঙে বা বিভাজিত হয়ে দুটি বা তার চেয়ে বেশি ছোট নিউক্লিতে পরিণত হয়। এর পরিণতিতে বিপুল শক্তি বেরিয়ে আসে।

    নিউট্রন : প্রায় প্রোটনের মতো একটি কণা। তবে এর কোনো চার্জ নেই। বেশির ভাগ পরমাণুর কেন্দ্রে প্রায় অর্ধেক এই কণা থাকে। তিনটি কোয়ার্ক কণা (দুটি ডাউন আর একটি আপ কোয়ার্ক) দিয়ে একটি নিউট্রন গঠিত।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু
    Next Article দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

    Related Articles

    মিচিও কাকু

    প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    দ্য গড ইকুয়েশন : থিওরি অব এভরিথিংয়ের খোঁজে – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    ফিজিক্স অব দ্য ফিউচার – মিশিও কাকু

    November 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }