Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল – মিচিও কাকু

    মিচিও কাকু এক পাতা গল্প488 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৫. টেলিপ্যাথি

    আপনি যদি কোনো একটি দিনের মধ্যে উদ্ভট কিছু খুঁজে না পান, তাহলে সেটি কোনো দিনই নয়।

    —জন হুইলার

    যারা অদ্ভুত কিছুর চেষ্টা করে যায়, তারাই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।

    —এম সি অ্যাশার

    এ ই ভন ভোগের স্ল্যান উপন্যাসে টেলিপ্যাথির বিপুল সম্ভাবনা ও এর শক্তি সম্পর্কে আমাদের রহস্যময় ভীতি তুলে ধরা হয়েছে।

    উপন্যাসের প্রধান চরিত্র জোমি ক্রস এক স্ল্যান। বিলুপ্তপ্রায় সুপারইন্টেলিজেন্ট টেলিপ্যাথ জনগোষ্ঠী হলো স্ল্যান।

    ক্ষিপ্ত একদল মানুষের কাছে নিষ্ঠুরভাবে খুন হয় তার বাবা-মা। মানুষগুলো সব রকম টেলিপ্যাথদের ভয় পেত ও ঘৃণাও করত। কারণ, টেলিপ্যাথরা তাদের বিপুল শক্তি কাজে লাগিয়ে মানুষদের ব্যক্তিগত আর সবচেয়ে গোপন চিন্তাভাবনায় হানা দিতে পারত। তাই স্ল্যানদের পশুর মতো নির্দয়ভাবে খুঁজে বেড়াতে লাগল মানুষেরা। মাথা থেকে লতার মতো একধরনের প্রত্যঙ্গ বেরিয়ে থাকত স্ল্যান। সেটা দেখে তাদের সহজে শনাক্ত করা যেত। বইটির কাহিনিতে জোমি অন্য স্ল্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, যারা হয়তো পালিয়ে মহাকাশে চলে যাবে। কারণ, মানুষেরা ডাইনি শিকার করার মতো তাদেরও পুরোপুরি নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছিল সেবার।

    আরও দেখুন
    গণিত
    কম্পিউটারের
    কম্পিউটারে
    রেডিওর
    গাণিতিক
    বিজ্ঞানে
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    কম্পিউটারকে
    বেতার
    বৈজ্ঞানিক

    ঐতিহাসিকভাবে মাইন্ড রিডিং বা মন পড়তে পারার ক্ষমতা এতই গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবা হয়েছে যে, এর সঙ্গে প্রায়ই দেব-দেবীদের জড়িয়ে ফেলা হয়। যেকোনো দেবতার মৌলিক শক্তির অন্যতম হলো অন্যদের মন পড়তে পারার ক্ষমতা আর তাদের গভীর প্রার্থনার উত্তর দেওয়া। অন্যের মন ইচ্ছেমতো পড়তে পারা সত্যিকার টেলিপ্যাথ সহজে সম্পদশালী ও পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারবে। এমনকি সে ওয়ালস্ট্রিট ব্যাংকারদের মনের ভেতর ঢুকে তাদের ব্ল্যাকমেল করতে পারবে। আবার প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও দমন করতে পারবে খুব সহজে। কোনো দেশের সরকারের নিরাপত্তার জন্য সে হয়ে উঠবে হুমকি। বিনা আয়াশে সে হাতিয়ে নিতে পারবে জাতির স্পর্শকাতর গোপন তথ্য। স্ল্যানদের মতো তাকেও সবাই ভয় পাবে এবং হয়তো পাকড়াও করা হবে।

    আরও দেখুন
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    রেডিওর
    কম্পিউটারকে
    গাণিতিক
    কম্পিউটারের
    রেডিও
    বিজ্ঞানের
    যোগাযোগ
    বৈজ্ঞানিক
    কম্পিউটার

    আইজাক আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজকে বলা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্যিক বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। এতে এক সত্যিকারের টেলিপ্যাথের বিপুল ক্ষমতা তুলে ধরা হয়েছে। এক গ্যালাকটিক সাম্রাজ্য হাজার বছর শাসনের পর ভেঙে পড়ে ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। সেকেন্ড ফাউন্ডেশন নামে বিজ্ঞানীদের এক গুপ্ত সমাজ জটিল সমীকরণ ব্যবহার করে ভবিষ্যদ্বাণী করে, সাম্রাজ্যটির ক্রমে পতন হবে। সুদীর্ঘ ৩০ হাজার বছরের অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে সভ্যতাটি। বিজ্ঞানীরা তাঁদের সমীকরণের ওপর ভিত্তি করে সভ্যতার পতন মাত্র কয়েক হাজার বছরে নামিয়ে আনতে তৈরি করেন বিশদ পরিকল্পনার এক খসড়া। কিন্তু এরপরও বিপর্যয় আঘাত হানে। তাঁদের বিস্তারিত সমীকরণ একটা ঘটনার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়। সেটি ছিল মিউল নামের এক মিউট্যান্টের জন্ম। অনেক দূর থেকেও অন্যদের মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারত মিউল। তাই সে গ্যালাকটিক সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণের দখল করতে সক্ষম হয়। এই টেলিপ্যাথি থামানো না হলে গ্যালাক্সিটি ৩০ হাজার বছরের বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতায় ধ্বংস হবে।

    আরও দেখুন
    গণিত
    বিজ্ঞানে
    গাণিতিক
    যোগাযোগ
    কম্পিউটার
    বিজ্ঞানের
    বিজ্ঞান
    রেডিওর
    কম্পিউটারকে
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা

    বিজ্ঞান কল্পকাহিনিটি টেলিপ্যাথি-সম্পর্কিত দারুণ সব গল্পে ভরা হলেও এর বাস্তবতা অনেক বেশি জাগতিক। কারণ, চিন্তা হলো ব্যক্তিগত ও অদৃশ্য। কয়েক শতাব্দী হাতুড়ে ডাক্তার ও প্রতারকেরা সাধারণ কৌশল খাটিয়ে আমাদের ভদ্রতা ও সরলতার সুযোগ নিয়েছে। ম্যাজিশিয়ান ও মনস্তত্ত্ববিদেরা দর্শকসারি থেকে তাদের ছদ্মবেশী সঙ্গীকে ব্যবহার করেছে। আর এই ছদ্মবেশী সঙ্গীর মনের কথা পড়েছেন মনস্তত্ত্ববিদেরা।

    আরও দেখুন
    বিজ্ঞান
    কম্পিউটারের
    সায়েন্স
    রেডিও
    গণিত
    যোগাযোগ
    কম্পিউটারকে
    কম্পিউটার
    বিজ্ঞানে
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা

    আসলে বেশির ভাগ ম্যাজিশিয়ান ও মনস্তত্ত্ববিদের পেশার ভিত্তি হলো বিখ্যাত হ্যাটের কৌশল। হ্যাটের ভেতরে লোকজন তাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা এক টুকরো কাগজে লিখে জমা রাখে। এরপর প্রতিটি টুকরো কাগজে কী লেখা রয়েছে, তা না দেখে বলে দর্শকদের রীতিমতো চমকে দেন ম্যাজিশিয়ান। এই সুদক্ষ কৌশলের বেশ সরল এক ব্যাখ্যা রয়েছে।

    আরও দেখুন
    যোগাযোগ
    বিজ্ঞান
    বেতার
    কম্পিউটারের
    কম্পিউটারকে
    গাণিতিক
    কম্পিউটারে
    কম্পিউটার
    বিজ্ঞানে
    বৈজ্ঞানিক

    মজার ব্যাপার হলো, ইতিহাসে অন্যতম বিখ্যাত এক টেলিপ্যাথির ঘটনায় কোনো ছদ্মবেশী দর্শক জড়িত ছিল না, জড়িত ছিল একটি প্রাণী। ক্লেভার হ্যান্স নামের একটি ঘোড়া ১৮৯০-এর দিকে ইউরোপিয়ান দর্শকদের বিস্মিত করে। দর্শকদের অবাক করে দিয়ে ক্লেভার হ্যান্স জটিল সব গণিত কষে ফেলতে পারত। কেউ যদি ক্লেভার হ্যান্সকে জিজ্ঞেস করত ৪৮-কে ৬ দিয়ে ভাগ করো, তাহলে ঘোড়াটি ৮ বার খুর দিয়ে শব্দ করত। ক্লেভার হ্যান্স আসলে ভাগ, গুণ, ভগ্নাংশের যোগ, বানান, এমনকি সংগীতের সুরও শনাক্ত করতে পারত। ক্লেভার হ্যান্সের ভক্তরা ঘোষণা করে, অনেক মানুষের চেয়েও সে বুদ্ধিমান বা সে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ক বেছে নিত।

    আরও দেখুন
    সায়েন্স
    রেডিও
    গণিত
    বিজ্ঞানে
    রেডিওর
    কম্পিউটারের
    বেতার
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    বৈজ্ঞানিক
    গাণিতিক

    কিন্তু ক্লেভার হ্যান্স চতুর কৌশলের কিছু ছিল না। ক্লেভার হ্যান্সের পাটিগণিতে দারুণ দক্ষতা তার প্রশিক্ষককেও একসময় বোকা বানায়। ১৯০৪ সালে নামকরা মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক সি স্ট্রাম্পকে ডাকা হয় ঘোড়াটি বিশ্লেষণের জন্য। ঘোড়াটির সঙ্গে কোনো চতুর কৌশল বা ঘোড়াকে সংকেত দেওয়ার কোনো কৌশল জড়িত আছে কি না, তা খুঁজে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। এটি করা হয়েছিল জনসাধারণের আগ্রহের কারণে। তিন বছর পর স্ট্রাম্পের শিক্ষার্থী মনোবিজ্ঞানী ওস্কার ফান্সট কিছু কঠিন পরীক্ষা চালান। শেষ পর্যন্ত ক্লেভার হ্যান্সের গোপন রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। ঘোড়াটি আসলে তার প্রশিক্ষকের সূক্ষ্ম অভিব্যক্তি খেয়াল করত। প্রশিক্ষকের অভিব্যক্তির সূক্ষ্ম পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত সে পায়ের খুর দিয়ে আঘাত করত। অভিব্যক্তির পরিবর্তন হলে সে খুর চালানো থামাত। ক্লেভার হ্যান্স মানুষের মন পড়তে পারত বা পাটিগণিত করতে পারত; কারণ, সে লোকজনের মুখের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষক ছিল।

    আরও দেখুন
    বিজ্ঞানের
    কম্পিউটারকে
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    গাণিতিক
    কম্পিউটারের
    বিজ্ঞানে
    কম্পিউটার
    বিজ্ঞান
    বেতার
    গণিত

    লিখিত ইতিহাসে এ ছাড়া আরও কিছু টেলিপ্যাথিক জীবজন্তুর দেখা মেলে। ১৫৯১ সালের প্রথম দিকে মরক্কো নামের একটি ঘোড়া ইংল্যান্ডে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তার মাধ্যমে ঘোড়ার মালিক ধনী হয় যান। দর্শকসারি থেকে লোক বাছাই করে, বর্ণমালার অক্ষরগুলোর নির্দেশ করে, এক জোড়া ছক্কার সংখ্যাগুলো যোগ করে দেখাত। ঘোড়াটি এতই উত্তেজনা সৃষ্টি করে যে, শেক্সপিয়ার তাঁর লাভ’স লেবার লস্ট নামের এক নাটকে ‘ড্যান্সিং হর্স’ নামে অমর করে রেখেছেন তাকে।

    আরও দেখুন
    গাণিতিক
    কম্পিউটারে
    কম্পিউটার
    কম্পিউটারকে
    বৈজ্ঞানিক
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    যোগাযোগ
    সায়েন্স
    রেডিওর
    বেতার

    আবার সীমিত অর্থে জুয়াড়িরা মানুষের মন পড়তে পারে। কোনো ব্যক্তি যখন আনন্দদায়ক কিছু দেখে, তখন স্বভাবত তার চোখের তারা বড় হয়। অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখলে ওই ব্যক্তির (বা কোনো গাণিতিক হিসাব করলে) চোখের তারা সংকুচিত হয়ে আসে। জুয়াড়িরা তার উল্টো দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড়ের চোখের তারার এই বড় হওয়া বা সংকুচিত হওয়া দেখে তার আবেগ বুঝতে পারে। জুয়াড়িরা কালো রঙের চশমা পরার অন্যতম কারণ চোখের তারা অন্যদের কাছ থেকে গোপন করা। আবার একটি লেজার রশ্মি কোনো ব্যক্তির চোখের তারায় ফেলে তার প্রতিবিম্ব কোথায় পড়েছে, তা বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিটি কোথায় তাকিয়ে আছে, তা নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করা যায়। লেজার লাইটের বিন্দুর প্রতিবিম্বের গতি বিশ্লেষণ করে কোনো ব্যক্তি কীভাবে ছবি স্ক্যান করে, তা-ও জানা যায়। এই দুটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে কোনো ব্যক্তির ছবি স্ক্যান করার সময় তার অনুমতি ছাড়াই তার আবেগীয় প্রতিক্রিয়া বোঝা যায়।

    সাইকিক গবেষণা

    টেলিপ্যাথি ও অন্যান্য প্যারানরমাল ঘটনা নিয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালায় সোসাইটি ফর সাইকিক্যাল রিসার্চ। ১৮৮২ সালে লন্ডনে গড়ে তোলা হয় এ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। (মেন্টাল টেলিপ্যাথি শব্দটি ওই বছর প্রথম ব্যবহার করেন ওই সোসাইটির সহযোগী এফ ডব্লিউ মেয়ার।) সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্টদের বেশ কজন ছিলেন উনিশ শতকের অন্যতম নামকরা ব্যক্তি। প্রতিষ্ঠানটি এখনো টিকে আছে। অনেক প্রতারকের দাবির স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিষয়গুলো প্রায়ই অধ্যাত্মবাদী আর বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে। কারণ, অধ্যাত্মবাদীরা প্যারানরমাল বা অস্বাভাবিক ঘটনায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। অন্যদিকে ওই ঘটনাগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীরা আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে দেখতে চান।

    আরও দেখুন
    বিজ্ঞানে
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    বৈজ্ঞানিক
    রেডিওর
    গণিত
    সায়েন্স
    কম্পিউটারকে
    বিজ্ঞানের
    রেডিও
    কম্পিউটার

    সোসাইটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক গবেষক ড. জোসেফ ব্যাংক রাইন সাইকিক ঘটনাগুলো নিয়ে প্রথম পদ্ধতিগত ও যথাযথ গবেষণা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২৭ সালে রাইন ইনস্টিটিউট (এখন রাইন রিসার্চ সেন্টার নামে পরিচিত) গড়ে তোলেন তিনি। কয়েক দশক ধরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী লুইজা প্রথমবারের মতো কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা চালান যুক্তরাষ্ট্রে। এসব পরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্যারাসাইকোলজিক্যাল ঘটনা ছিল। সেগুলো কিছু জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। রাইন তাঁর প্রথম বইতে এক্সট্রাসেন্সরি পারসেপসন বা ইএসপি শব্দটি প্রথম চালু করেন।

    আরও দেখুন
    বিজ্ঞানে
    গাণিতিক
    যোগাযোগ
    রেডিওর
    বেতার
    কম্পিউটার
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    বিজ্ঞান
    কম্পিউটারের
    কম্পিউটারকে

    রাইনের গবেষণাগার আসলে সাইকিক গবেষণার একটা মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছে। তাঁর সহযোগী ড. কার্ল জেনার পাঁচটি সংকেতের কার্ড সিস্টেম তৈরি করেন। এটি এখন জেনার কার্ড নামে পরিচিত। টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা পরীক্ষা করতে এই কার্ড ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ফলাফলে টেলিপ্যাথির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অতি অল্পসংখ্যক পরীক্ষা দেখে মনে হয়, ক্ষুদ্র হলেও প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে, যেগুলোকে সত্যিকার দৈবঘটনা বলে ব্যাখ্যা করা যায় না। সমস্যা হলো, এই পরীক্ষাগুলো আবার অন্য গবেষকেরা প্রায়ই নতুনভাবে করে দেখতে পারেন না।

    আরও দেখুন
    বৈজ্ঞানিক
    বেতার
    বিজ্ঞানের
    বিজ্ঞান
    সায়েন্স
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    বিজ্ঞানে
    রেডিওর
    কম্পিউটারকে
    রেডিও

    রাইন তীব্রভাবে তাঁর খ্যাতি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করলেও লেডি ওয়ান্ডার নামের এক ঘোড়ার সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। সে কারণে তাঁর খ্যাতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘোড়াটি টেলিপ্যাথির চোখধাঁধানো কিছু কাজ করে দেখাতে পারত। যেমন খেলনা বর্ণমালার ব্লকে পা দিয়ে ঠকঠক শব্দ করা। এভাবে দর্শকেরা মনে মনে যা চিন্তা করে, তাই সে অক্ষরগুলো দিয়ে শব্দ তৈরি করত। আপাতভাবে মনে হয়, রাইন ক্লেভার হ্যান্সের প্রভাব সম্পর্কে কিছু জানতেন না। ১৯২৭ সালে রাইন লেডি ওয়ান্ডারকে বিশদভাবে পরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে আসেন, ‘এই টেলিপ্যাথির একমাত্র ব্যাখ্যা হলো, অজ্ঞাত কোনো প্রক্রিয়ায় মানসিক প্রভাব স্থানান্তর করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে মিলতে পারে, এমন কিছুই পাওয়া যায়নি। আবার ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত অন্য কোনো অনুমানও এখানে ধোপে টেকে না।

    অবশ্য পরে মিলবোর্ন ক্রিস্টোফার লেডি ওয়ান্ডারের টেলিপ্যাথিক ক্ষমতার সত্যিকার উৎস উদ্ঘাটন করেন। ঘোড়ার মালিক খুব সূক্ষ্মভাবে চাবুকের মাধ্যমে ঘোড়ার কাছে বার্তা পাঠাত। এভাবে লেডি ওয়ান্ডার তার খুর ঠকঠক করা থামাত। (তবে লেডি ওয়ান্ডারের টেলিপ্যাথি ক্ষমতার সত্যিকার উৎস উদ্ঘাটনের পরও রাইন বিশ্বাস করেন, ঘোড়াটির সত্যিই টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা ছিল। হয়তো কোনোভাবে তার ওই ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। সে কারণে তার মালিক ওই চতুর কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

    অবসর নেওয়ার প্রায় দ্বারপ্রান্তে এসে রাইনের খ্যাতি চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। সে সময় তিনি এমন এক উত্তরসূরি খুঁজছিলেন, যে তাঁর ইনস্টিটিউটের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবে। এ ব্যাপারে আশানুরূপ প্রার্থী ছিলেন ড. ওয়াল্টার লেভি। ১৯৭৩ সালে তাঁকে নিয়োগ দেন রাইন। ক্ষেত্রটিতে ক্রমে উঠতি তারকা হয়ে উঠছিলেন ড. লেভি। কিছুদিন আগে চাঞ্চল্যকর এক গবেষণায় তিনি দেখান, ইঁদুর টেলিপ্যাথিক ক্ষমতার মাধ্যমে কম্পিউটারে জেনারেট হওয়া এলোমেলো সংখ্যা পরিবর্তন করতে পারে। তবে সন্দেহপ্রবণ ল্যাব কর্মীরা একদিন আবিষ্কার করল, পরীক্ষার ফল বদলে দিতে ড. লেভি সবার অজান্তে রাতের বেলা ল্যাবে লুকিয়ে ছিলেন। হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। আরও পরীক্ষায় দেখা গেল, ইঁদুরের টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা নেই। ফলে ড. লেভিকে অসম্মানের সঙ্গে ওই ইনস্টিটিউট থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

    টেলিপ্যাথি ও স্টার গেট

    প্যারানরমাল ঘটনায় আগ্রহের পারদ ভয়াবহ বেড়ে যায় ঠান্ডা যুদ্ধের সময়। সে সময় টেলিপ্যাথি, মননিয়ন্ত্রণ ও দূরবর্তী দর্শন নিয়ে অসংখ্য গোপন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। (অন্যের মন পড়ে শুধু মনের মাধ্যমে দূরের কোনো জায়গায় দেখার পদ্ধতিকে বলা হয় রিমোট ভিউয়িং বা দূরবর্তী দর্শন।) সিআইএর আর্থিক সহায়তায় অসংখ্য গোপন গবেষণার সাংকেতিক নাম ছিল স্টার গেট (যেমন সান স্ট্রেক, গ্রিল ফ্লেম ও সেন্টার লেন)। গবেষণাটি শুরু হয় ১৯৭০ সালে। সিআইএ যখন জানতে পারল, সোভিয়েত ইউনিয়ন সাইকোট্রোনিক গবেষণায় বছরে ৬০ মিলিয়ন রুবল খরচ করছে, তখন এ গবেষণা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় তারাও। তাদের আশঙ্কা ছিল, সোভিয়েত হয়তো ইএসপি ব্যবহার করে মার্কিন সাবমেরিন ও সেনাঘাঁটি, গুপ্তচর শনাক্ত করতে ও গোপন নথিপত্র পড়তে পারবে।

    সিআইএর জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয় ১৯৭২ সালে। মেনলো পার্কের স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআরআই) রাসেল টার্গ ও হ্যারল্ড পুথোফ এর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। শুরুতে এক সাইকিক ক্যাডারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, তিনি যাতে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে যুক্ত হতে পারেন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে এই স্টার গেটে। সেখানে বেতুনভুক্ত ছিল ৪০ জনের বেশি কর্মী, ২৩ জন রিমোট ভিউয়ার আর তিনজন সাইকিক।

    বছরে ৫ লাখ মার্কিন ডলার বাজেট নিয়ে ১৯৯৫ সালের মধ্যে সিআইএ কয়েক শ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ প্রজেক্ট পরিচালনা করে, যার সঙ্গে কয়েক হাজার রিমোট ভিউয়িং সেশনও ছিল। রিমোট ভিউয়ারদের বিশেষ করে নিচের প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা হয়েছিল :

    – লিবিয়ার বোমা হামলার আগে ১৯৮৬ সালে কর্নেল গাদ্দাফির অবস্থান শনাক্ত করা

    – উত্তর কোরিয়ায় ১৯৯৪ সালে প্লুটোনিয়ামের মজুত খুঁজে বের করা

    – ১৯৮১ সালে ইতালিতে রেড ব্রিগেড কর্তৃক অপহৃতদের খুঁজে বের করা

    – আফ্রিকায় বিধ্বস্ত সোভিয়েত তু-৯৫ বোমারু বিমানের অবস্থান শনাক্ত করা

    ১৯৯৫ সালে আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চকে (এআইআর) এই কর্মসূচির মূল্যায়ন করতে বলে সিআইএ। জবাবে এসব কর্মসূচি স্রেফ বন্ধ করার সুপারিশ করে এআইআর। ‘গোয়েন্দাদের কাছে এর কোনো মূল্য আছে বলে এখনো কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ এআইআরের কর্মকর্তা ডেভিড গসলিন এ কথা লিখেছেন।

    স্টার গেটের সমর্থকেরা গর্ব করে, অনেক বছর ধরে ‘এইট মার্টিনি’ ফলাফল অর্জন করেছিল (অর্থাৎ ফলাফল এতই আকর্ষণীয় ছিল যে, তা কাটিয়ে উঠতে আপনাকে আট বার মার্টিনি পান করতে হবে)। তবে সমালোচকেরা বলেন, রিমোট ভিউয়িংয়ের সিংহভাগই অর্থহীন, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য তৈরি করে করদাতাদের অর্থ নষ্ট করেছে। আর বাকিরা এতই অস্পষ্ট আর সাধারণ কথা বলেছে যে সেগুলোকে যেকোনো অবস্থার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। এআইআর রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্টার গেটের সবচেয়ে চমকপ্রদ ‘সাফল্য’ এমন সব রিমোট ভিউয়াদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যাঁরা ইতিমধ্যেই পরিচালিত ওই সব গবেষণার সঙ্গে বেশ পরিচিত ছিলেন। সে কারণে তাঁরা হয়তো আগের শেখা এমন সব অনুমান কাজে লাগান, যেগুলো বেশ যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।

    শেষ পর্যন্ত সিআইএ সিদ্ধান্তে পৌঁছে, স্টার গেট এমন কোনো তথ্যই আবিষ্কার করতে পারেনি, যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কোনো গোয়েন্দা তৎপরতায় কাজে লাগাতে পারে। সে কারণে তারা প্রজেক্টটি বাতিল করে। (গুজব আছে, উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সাদ্দাম হোসেনের অবস্থান শনাক্ত করতে রিমোট ভিউয়ারদের কাজে লাগিয়েছিল সিআইএ। অবশ্য তাদের সব চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। )

    ব্রেন স্ক্যান

    একই সময় বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, মস্তিষ্কের কাজের পেছনে কিছু পদার্থবিজ্ঞান আছে। উনিশ শতকে তাঁরা সন্দেহ করেন, মস্তিষ্কের ভেতর বৈদ্যুতিক সংকেত স্থানান্তরিত হয়। ১৮৭৫ সালে রিচার্ড কার্টন আবিষ্কার করেন, মাথায় ইলেকট্রোড স্থাপন করে মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত অতি ক্ষুদ্ৰ বৈদ্যুতিক সংকেত শনাক্ত করা যায়। এটা পরে ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফের (ইইজি) উদ্ভাবনের দিকে নিয়ে যায়।

    তাত্ত্বিকভাবে মস্তিষ্ক একপ্রকার ট্রান্সমিটার, যার মাধ্যমে আমাদের চিন্তা অতি ক্ষুদ্র বৈদ্যুতিক সংকেত ও বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ রূপে ছড়িয়ে পড়ে। এই সংকেত ব্যবহার করে অন্যের চিন্তা পড়ার কিছু সমস্যাও আছে। প্রথমত, সংকেতগুলো খুব দুর্বল, যা মিলিওয়াট পরিসরের। দ্বিতীয়ত, এ সংকেত অর্থহীন কথাবার্তায় ভরা, যা এলোমেলো গোলমাল থেকে আলাদা করা যায় না। শুধু আমাদের চিন্তার স্কুল তথ্য এই গোলমাল থেকে সংগ্রহ করা যায়। তৃতীয়ত, এসব সংকেতের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক অন্যদের মস্তিষ্ক থেকে একই রকম বার্তা গ্রহণ করতে পারে না। সবশেষে আমরা যদি এই দুর্বল সংকেত কোনোভাবে গ্রহণ করতে পারতাম, তবু সেগুলো বোধগম্য করে তোলা যেত না। সাধারণ নিউটনিয়ান ও ম্যাক্সলিয়ান পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে রেডিওর মাধ্যমে টেলিপ্যাথি সম্ভব বলে মনে হয় না।

    অনেকের বিশ্বাস, টেলিপ্যাথি হয়তো পঞ্চম বলের মাধ্যমে কার্যকর হয়। পঞ্চম এ বলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাই’ বল। কিন্তু প্যারাসাইকোলজির সমর্থকেরাও কবুল করেছেন, তাঁদের কাছে সাই বল সম্পর্কে কোনো সুদৃঢ় ও পুনরায় পরীক্ষা করার মতো প্রমাণ নেই।

    তবে এর মাধ্যমে একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে : কোয়ান্টাম তত্ত্ব টেলিপ্যাথি সম্পর্কে কী বলে?

    গত দশকে নতুন কোয়ান্টাম যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি আমরা। এর মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চিন্তাশীল কোনো মস্তিষ্কের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখতে পেরেছি। শীর্ষস্থানীয় এই কোয়ান্টাম বিপ্লব হলো পিইটি (পজিট্রন-এমিশন টোমোগ্রাফি) এবং এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং) ব্রেন স্ক্যান। পিইটি (PET) স্ক্যান করা হয় তেজস্ক্রিয় চিনি রক্তে ঢুকিয়ে। এই চিনি মস্তিষ্কের সেসব অংশে ঘনীভূত হয়, যে অংশগুলোর চিন্তা প্রক্রিয়ায় সক্রিয় থাকতে শক্তি দরকার। তেজস্ক্রিয় চিনি পজিট্রন নিঃসরণ করে (অ্যান্টিইলেকট্রন), যা খুব সহজে যন্ত্রপাতি দিয়ে শনাক্ত করা যায়। তাই এভাবে জীবন্ত মস্তিষ্কে প্রতিকণার পথের নকশা বানানো যায়। এভাবে চিন্তার প্যাটার্নও শনাক্ত করা যায়। আবার মস্তিষ্কের কোন অংশ কোন কাজে জড়িত, তা-ও নিখুঁতভাবে আলাদা করা যায়।

    এমআরআই (MRI) মেশিনও একইভাবে কাজ করে, পার্থক্য শুধু এটি আরও নিখুঁত। কোনো রোগীর মাথা একটা বড় ডোনাট আকারের চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে রাখা হয়। চুম্বকীয় ক্ষেত্রটি মস্তিষ্কের ভেতরের পরমাণুর নিউক্লিওগুলোকে ক্ষেত্ররেখায় সমান্তরালভাবে সাজায়। রোগীকে একটা রেডিও পালস পাঠিয়ে এসব নিউক্লিও কম্পিত হয়। নিউক্লিওগুলোর সজ্জা উল্টে গেলে তারা অতি ক্ষুদ্র রেডিও প্রতিধ্বনি নিঃসরণ করে, যা শনাক্ত করা যায়। এর মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর উপস্থিতি বোঝা যায়। যেমন মস্তিষ্কের সক্রিয়তার সঙ্গে অক্সিজেনের ব্যবহার জড়িত। কাজেই এমআরআই মেশিন অক্সিজেনযুক্ত রক্তের উপস্থিতি শনাক্ত করে চিন্তার প্রক্রিয়া আলাদা করতে পারে। যেখানে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত যত বেশি ঘনীভূত হবে, মস্তিষ্কের ওই অংশে মানসিক সক্রিয়তা তত বেশি হয়। (বর্তমানে ফাংশনাল এমআরআই মেশিন [fMRI ] মস্তিষ্কের অতি ক্ষুদ্র এলাকায় সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে ১ মিলিমিটারজুড়ে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে। এ কারণে জীবন্ত মস্তিষ্কে চিন্তার ধরন শনাক্ত করতে এই যন্ত্রগুলো আদর্শ হয়ে উঠেছে।)

    এমআরআই লাই ডিটেক্টর

    এমআরআই মেশিন ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একদিন হয়তো জীবন্ত মস্তিষ্কের বিস্তৃত রূপরেখার পাঠোদ্ধার করতে পারবেন। মাইন্ড রিডিংয়ের সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে কেউ মিথ্যা বলছে কি না, তা-ও নির্ধারণ করা যাবে।

    কিংবদন্তি অনুসারে, কয়েক শতাব্দী আগে বিশ্বের প্রথম মিথ্যা ধরার যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন ভারতের এক পুরোহিত। তিনি সন্দেহভাজনকে ও একটি জাদুকরি গাধা একটি তালাবদ্ধ ঘরে রাখতেন। এরপর সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জাদুকরি গাধার লেজ টানার নির্দেশ দেওয়া হতো। এতে গাধাটি যদি কথা বলতে শুরু করে, তার মানে সন্দেজভাজন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী। অন্যদিকে গাধাটি নীরব থাকার মানে সন্দেহভাজন ব্যক্তি সত্যি কথা বলছে। (তবে পুরোহিত গোপনে গাধার লেজে কালি মাখিয়ে দিতেন।)

    সন্দেহভাজন লোকটিকে ঘর থেকে বের করে আনার পর স্বাভাবিকভাবে সে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করত। কারণ, গাধাটির লেজ টানার সময় গাধাটি কথা বলে না। কিন্তু পুরোহিত সন্দেহভাজনের হাত পরীক্ষা করে দেখতেন। তার হাতে কোনো কালি লেগে না থাকলে বোঝা যেত সে মিথ্যা বলছে। (মাঝেমধ্যে মিথ্যা ধরার যন্ত্র ব্যবহারের হুমকিও খোদ যন্ত্রটি ব্যবহারের চেয়ে বেশি কার্যকর হতো।)

    আধুনিক কালের জাদুকরি গাধা তৈরি করা হয় ১৯১৩ সালে। মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম মার্সটন এক লোকের রক্তচাপ পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, মিথ্যা বলার সময় রক্তচাপ বেড়ে যায়। (রক্তচাপ সম্পর্কে এই পর্যবেক্ষণ আসলে আরও অনেককাল আগের। সেকালে কোনো সন্দেহভাজনকে প্রশ্ন করার সময় তদন্তকারী তার হাত ধরে রাখত।) এ ধারণাটি কাজে লাগানো হয়েছিল বেশ দ্রুতই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগও শিগগিরই নিজস্ব পলিগ্রাফ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলে।

    কয়েক বছর পর স্পষ্ট বোঝা গেল, সাইকোপ্যাথরা মিথ্যা ধরার যন্ত্রকে বোকা বানাতে পারে। কারণ, নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনাটি ছিল সিআইএর ডাবল এজেন্ট অ্যালড্রিম আমেসের। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে তিনি বিপুল অর্থ পকেটস্থ করেন। আবার অসংখ্য মার্কিন এজেন্ট হত্যা ও মার্কিন নিউক্লিয়ার নেভির গুপ্ত খবর পাচার করতেন তিনি। বেশ কয়েক দশক সিআইএর একের পর এক লাই ডিটেক্টর পরীক্ষায় পার পেয়ে যাচ্ছিলেন আমেস। একইভাবে পার পেয়ে যাচ্ছিলেন সিরিয়াল কিলার গ্যারি রিজওয়ে। গ্রিন রিভার কিলার হিসেবে কুখ্যাত গ্যারি অন্তত ৫০ নারীকে হত্যা করেছিলেন।

    ২০০৩ সালে মার্কিন ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস একটি লাই ডিটেক্টরের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে কোনো লাই ডিটেক্টরকে বোকা বানানোর ও নির্দোষ মানুষকে মিথ্যাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার সব উপায়ের তালিকা করা হয়।

    তবে লাই ডিটেক্টর যদি শুধু দুশ্চিন্তার মাত্রা পরিমাপ করে, তাহলে মস্তিষ্ক পরিমাপের ব্যাপারটি কী? মিথ্যা ধরার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ খতিয়ে দেখার ধারণার সূচনা হয় ২০ বছর আগে। নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পিটার রোসেনফেল্ডের গবেষণার মাধ্যমে। পর্যবেক্ষণে তিনি দেখতে পান, মানুষের মিথ্যা বলার প্রক্রিয়ায় ইইজি স্ক্যানে আলাদা প্যাটার্ন দেখা যায়। ওই মানুষ যখন সত্য কথা বলে, তার তুলনায় পি৩০০ ওয়েভে এই প্যাটার্নের পার্থক্য পাওয়া যাচ্ছে। (মস্তিষ্ক যখন কোনো অভিনব বা সাধারণের বাইরে কোনো কিছুর মুখোমুখি হয়, তখন প্রায়ই এই পি৩০০ ওয়েভ উদ্দীপিত হয়।)

    এমআরআই স্ক্যান ব্যবহার করে মিথ্যা শনাক্তের ধারণাটি এসেছে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল ল্যাংলেবেনের মাথা থেকে। ১৯৯৯ সালে তিনি খবরের কাগজে এক খবর দেখতে পান। সেখানে বলা হয়, যেসব শিশু মনোযোগের ঘাটতিজনিত সমস্যায় ভুগছে, তারা মিথ্যা বলতেও সমস্যায় পড়ছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানতেন, তথ্যটা ভুল। এ রকম শিশুদের মিথ্যা বলতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আসলে সত্যকে বাধা দিতে সমস্যা হয়েছিল তাদের। ‘তারা শুধু ঝোঁকের মাথায় সবকিছু বলে ফেলেছিল।’ স্মৃতিচারণা করে বলেন ল্যাংলেবেন। তিনি অনুমান করেন, মিথ্যা বলার সময় মস্তিষ্ক প্রথমে সত্য বলা থেকে নিজেকে থামিয়ে দেয় ও তারপর ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়। তিনি বলেন, ‘আপনি অনর্গল মিথ্যা কথা বলেন, তখন আপনাকে সত্যের কথা মাথায় রাখতেই হবে। কাজেই এতে বোঝা যায়, এতে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা আরও বাড়ে।’ অন্য কথায়, মিথ্যা বলা বেশ পরিশ্রমের কাজ।

    কলেজশিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মাধ্যমে ও তাদের মিথ্যা কথা বলার অনুরোধ জানানোর মাধ্যমে, ল্যাংলেবেন শিগগিরই দেখতে পান, মিথ্যা বলার সময় মস্তিষ্কের বেশ কিছু জায়গায় সক্রিয়তা বেড়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রন্টাল লোব (এখানে উচ্চতর চিন্তা ঘনীভূত হয়), টেম্পোরাল লোব ও লিম্বিক সিস্টেম (এখানে আবেগগুলো প্রক্রিয়াজাত হয়)। বিশেষত, সামনের সিঙ্গুলেট জাইরাসে (এটি সংঘাতের সমাধান ও প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধের সঙ্গে সম্পর্কিত) অস্বাভাবিক কার্যকলাপ খেয়াল করেন তিনি।

    কেউ মিথ্যা বলছে, নাকি বলছে না, তা নির্ধারণে কিছু নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা চালান তিনি। এসব পরীক্ষা বিশ্লেষণে সংগতিপূর্ণ সফলতার হার ৯৯ শতাংশ পাওয়ার দাবি করেন (যেমন কলেজশিক্ষার্থীদের তিনি বিভিন্ন তাসের পরিচয় সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলতে বলেছিলেন)।

    প্রযুক্তিটিতে আগ্রহ এতই সুস্পষ্ট যে এই সেবা জনসাধারণকে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ‘নো লাই এমআরআই’ নামের এক কোম্পানি তাদের প্রথম কেসটি গ্রহণ করে ২০০৭ সালে। এক ব্যক্তি তাঁর ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বসেন। কারণ, কোম্পানির দাবি, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর খাবারের দোকানে আগুন দিয়েছেন। (এফএমআরআই স্ক্যানে দেখা গেছে, তিনি আসলে আগুন জ্বালাননি।)

    ল্যাংলেবেনের কৌশলের সমর্থকদের দাবি, আগের জমানার লাই ডিটেক্টরের তুলনায় এ কৌশল অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। কারণ, মস্তিষ্কের প্যাটার্ন পাল্টানো আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেসব মানুষ নিজের পালস রেট আর ঘামের নিয়ন্ত্রণ করার প্রশিক্ষণ নিতে পারে, তারাও নিজের মস্তিষ্কের প্যাটার্ন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর সমর্থকেরা ইঙ্গিত করেছেন, ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের এই যুগে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করার মাধ্যমে অগণিত মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে।

    মিথ্যা শনাক্তে এ প্রযুক্তির আপাতসফলতার হার দাবি সত্ত্বেও সমালোচকেরা ইঙ্গিত করেন, এফএমআরআই আসলে মিথ্যা ধরতে পারে না। তাঁদের দাবি, কেউ যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন এ প্রযুক্তি শুধু তার মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। আবার যন্ত্রটি ভুল ফলাফলও দিতে পারে। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি সত্য কথা বলার সময় খুব দুশ্চিন্তায় থাকে, তাহলে এ রকম ভুল ফলাফল পাওয়া যাবে। এফএমআরআই শুধু কোনো ব্যক্তির দুশ্চিন্তা শনাক্ত করতে পারে এবং ভুলভাবে দেখায় যে তিনি মিথ্যা কথা বলছেন। ‘ছলচাতুরী থেকে সত্যকে আলাদা করতে পরীক্ষার ব্যাপারে তীব্র আকাঙ্ক্ষা বিজ্ঞানে নিন্দিত হবে,’ বলে সতর্ক করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোবায়োলজিস্ট স্টিভেন হাইম্যান।

    কিছু সমালোচকের দাবি, সত্যি টেলিপ্যাথের মতো সত্যিকার লাই ডিটেক্টর সাধারণ সামাজিক মিথস্ক্রিয়াকে অস্বস্তির মুখে ঠেলে দেবে। কারণ, নির্দিষ্ট পরিমাণ মিথ্যা একটি সমাজে তৈলাক্ত গ্রিজের মতো কাজ করে, যা সমাজের চাকা সচল রাখতে সহায়তা করে। আমাদের বস, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্বামী বা স্ত্রী, প্রেমিকা ও সহকর্মীদের যে প্রশংসা করি, তা যদি কোনোভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়, তাহলে আমাদের সম্মান হয়তো মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। সত্যি লাই ডিটেক্টর আমাদের পারিবারিক সব গোপনীয়তা, গুপ্ত আবেগ, অবদমিত ইচ্ছা ও গোপন পরিকল্পনা ফাঁস করে দিতে পারে। বিজ্ঞান কলামিস্ট ডেভিড জোনস বলেন, প্রকৃত লাই ডিটেক্টর পারমাণবিক বোমার মতো। একে চূড়ান্ত অস্ত্র হিসেবে সংরক্ষিত রাখাই ভালো। একে যত্রতত্র মোতায়েন করা হলে সামাজিক জীবন অসম্ভব হয়ে উঠবে।’

    সর্বজনীন অনুবাদক

    চিন্তারত মস্তিষ্কের চমকপ্রদ ছবির ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের স্ক্যান সম্পর্কে অনেকে যথাযথ সমালোচনা করেছেন। কারণ, বিচ্ছিন্ন, স্বতন্ত্র চিন্তা পরিমাপে এগুলো সাধারণভাবে খুব স্থূল। আমরা যখন সরল কোনো মানসিক কাজ করি, তখন সম্ভবত কয়েক লাখ নিউরন একসঙ্গে সক্রিয় হয়। এফএমআরআই এই কর্মকাণ্ডকে শুধু একটি ফুটকি হিসেবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলে। মস্তিষ্ক স্ক্যানকে প্রচণ্ড হইচইপূর্ণ কোনো ফুটবল খেলায় উপস্থিত হয়ে পাশে বসে থাকা কোনো ব্যক্তির কথা শোনার চেষ্টার সঙ্গে তুলনা করেছেন এক মনোবিজ্ঞানী। হাজার হাজার দর্শকের গোলমালে ওই ব্যক্তির শব্দ হারিয়ে যায়। যেমন কোনো এফএমআরআই মেশিন দিয়ে নির্ভরযোগ্যভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব মস্তিষ্কের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় ভোক্সেল। কিন্তু প্রতিটি ভোক্সেল কয়েক মিলিয়ন নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। তাই কোনো ব্যক্তির চিন্তাকে আলাদা করার জন্য এফএমআরআই মেশিনের সংবেদনশীলতা যথেষ্ট ভালো নয়।

    বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে মাঝেমধ্যে ইউনিভার্সেল ট্রান্সলেটর বা সর্বজনীন অনুবাদক দেখানো হয়। এই যন্ত্র কোনো ব্যক্তির চিন্তা পড়তে পারে। এরপর তা সরাসরি ঢুকিয়ে দিতে পারে অন্য আরেকজনের মনে। কিছু সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসে এলিয়েন টেলিপ্যাথরা তাদের চিন্তা আমাদের মনে ঢুকিয়ে দেয়। আমাদের ভাষা না বুঝলেও কাজটা করতে পারে এলিয়েনরা। ১৯৭৬ সালে নির্মিত সায়েন্স ফিকশন সিনেমা ফিউচারওয়ার্ল্ড-এ এক মহিলার স্বপ্ন টিভি পর্দায় সরাসরি দেখানো হয়েছিল। ২০০৪ সালে জিম ক্যারির এটারনাল সানসাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড সিনেমায় দেখা যায়, চিকিৎসকেরা যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি চিহ্নিত করে সেগুলো মুছে ফেলছেন।

    ‘এ ক্ষেত্রটি নিয়ে সবার মধ্যে এ রকম ফ্যান্টাসি রয়েছে’, এমন মন্তব্য করেন জার্মানির লিপজিগের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের নিউরোসায়েন্টিস্ট জন হাইনেস। ‘তবে আপনি যদি ও রকম কোনো যন্ত্র বানাতে চান, তাহলে আমি নিশ্চিত, আপনাকে প্রতিটি নিউরন নিয়ে আলাদা কাজ শুরু করতে হবে।’

    একটি নিউরন থেকে আসা সংকেত শনাক্ত করা যায় না বলেই এখন কিছু মনোবিজ্ঞানী পরবর্তী বড় কাজটি করার চেষ্টা করছেন। সেটি হলো আলাদা বস্তুর কারণে সৃষ্ট এফএমআরআই প্যাটার্নকে আলাদা করা ও গোলমাল কমিয়ে আনা। যেমন, আলাদা শব্দের জন্য সৃষ্ট এফএমআরআই প্যাটার্ন শনাক্ত করা হয়তো সম্ভব হবে। তারপর ‘চিন্তার অভিধান’ বানানো যাবে।

    নির্বাচিত কিছু ছোট বস্তুর (যেমন কার্পেন্ট্রি যন্ত্রপাতি) সৃষ্ট এফএমআরআই প্যাটার্ন শনাক্ত করতে পেরেছেন কার্নেগি-মেলোসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্সেল এ জাস্ট। তাঁর দাবি, ‘আমাদের কাছে ১২টি ধরন আছে। এই ১২টি ধরনের মধ্যে কোনটি ভাবনার সঙ্গে জড়িত, তা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়।’

    তাঁর সহকর্মী কম্পিউটারবিজ্ঞানী টম মিশেল নির্দিষ্ট পরীক্ষায় এফএমআরআই স্ক্যানের মাধ্যমে পাওয়া মস্তিষ্কের জটিল প্যাটার্ন শনাক্ত করতে নিউরাল নেটওয়ার্কের মতো কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি পরীক্ষা আমার খুব পছন্দের, সেটি হলো শব্দ খোঁজা এটি মস্তিষ্কের সবচেয়ে স্বাতন্ত্র্যমূলক কার্যকলাপ তৈরি করে।

    কিন্তু আমরা কখনো চিন্তার অভিধান তৈরি করতে পারলেও সর্বজনীন অনুবাদক তৈরি করা আরও বহু দূরের ব্যাপার। সর্বজনীন অনুবাদক আমাদের মন থেকে আরেকজনের মনের ভেতর সরাসরি চিন্তা ঢুকিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু এফএমআরআই মেন্টাল ট্রান্সলেটরকে অনেকগুলো কঠিন ধাপ পার হতে হবে। প্রথমে নির্দিষ্ট এফএমআরআই প্যাটার্ন চিনে সেগুলো ইংরেজিতে রূপান্তর করতে হবে। তারপর ইংরেজি শব্দগুলোকে ঢুকিয়ে দিতে হবে লক্ষ্যবস্তুতে। এই অর্থে, এ ধরনের কোনো যন্ত্র স্টার ট্রেকে দেখা ‘মাইন্ড মেল্ড’-এর সঙ্গে কোনোক্রমেই মিলবে না (কিন্তু তারপরও এটি স্ট্রোক আক্রান্তদের জন্য খুবই উপকারী হয়ে উঠবে)।

    হাতে বহনযোগ্য এমআরআই স্ক্যানার

    এত কিছুর পরও প্রমাণ সাইজের এফএমআরআই মেশিন কার্যক্ষেত্রে টেলিপ্যাথির ক্ষেত্রে আরেকটি বড় বাধা। যন্ত্রটি অনেক বড়, আবার এর দামও কয়েক মিলিয়ন ডলার। যন্ত্রটি পুরো একটি ঘরের জায়গা দখল করে আর ওজন কয়েক টন। এমআরআই মেশিনের প্রধান অংশ হলো বিশাল ডোনাট আকৃতির ম্যাগনেট, যার ব্যাস কয়েক মিটার। এ অংশটি কয়েক টেসলার বিপুল পরিমাণ ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। (চুম্বকীয় ক্ষেত্রটি এতই বিশাল যে দুর্ঘটনাক্রমে যন্ত্রটি চালু হওয়ায় হাতুড়ি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ বাতাসে উড়ে গিয়ে একবার কয়েকজন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছিল।)

    সে কারণে সম্প্রতি নতুন এক প্রযুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ ইগর সাভুকোভ ও মাইকেল রোমালিস। হয়তো একদিন এটি হাতে বহনযোগ্য এমআরআই মেশিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে। সেই সঙ্গে এফএমআরআই মেশিনের দাম কমিয়ে দিতে পারবে এক শ ভাগের এক ভাগ। তাঁদের দাবি, বিশাল আকৃতির এমআরআই চুম্বকের বদলে সুপারসেনসিটিভ পারমাণবিক ম্যাগনেটোমিটার ব্যবহার করা হবে। অতি ক্ষুদ্র চুম্বকীয় ক্ষেত্র শনাক্ত করতে পারবে এই ম্যাগনেটোমিটার।

    হিলিয়াম গ্যাসের মধ্যে রাখা উত্তপ্ত পটাশিয়াম বাষ্প থেকে প্রথমে একটি চুম্বকীয় সেন্সর তৈরি করেছেন সাভুকোভ ও রোমালিস। পরে পানির নমুনায় (মানবদেহের অনুকরণ করতে) একটি দুর্বল চুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে ওই পানিতে রেডিও পালস পাঠান তাঁরা। এতে পানির অণু কম্পিত হয়। কম্পিত পানির অণু প্রতিধ্বনিত হয়ে পটাশিয়াম ইলেকট্রনগুলোও একইভাবে কম্পিত করবে। এই কম্পন শনাক্ত করা যাবে আরেকটি লেজার দিয়ে। এভাবে তাঁরা এক গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল পান : দুর্বল চুম্বকীয় ক্ষেত্রও প্রতিধ্বনি তৈরি করতে পারে, যা সেন্সর শনাক্ত করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রমাণ সাইজের দানবীয় চুম্বকীয় ক্ষেত্রকে দুর্বল ক্ষেত্র দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে। শুধু তা-ই নয়, মুহূর্তেই ছবি তুলতে পারবে এটি (যেখানে প্রতিটি ছবি তুলতে এমআরআই মেশিনের লাগে অন্তত ২০ মিনিট)।

    তাঁরা তত্ত্ব দিয়েছেন, এমআরআইয়ে ছবি তোলা একসময় ডিজিটাল ক্যামেরার মতো সহজ হয়ে যাবে। (তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বাধাও রয়েছে। একটি সমস্যা হলো, যার ছবি তোলা হবে ও মেশিন দুটোকেই বাইরে বিচ্যুত হওয়া চুম্বকক্ষেত্রগুলো থেকে রক্ষা করতে হবে।)

    এমআরআই মেশিন যদি বাস্তবে পরিণত হয়, তাহলে তাদের হয়তো ছোট আকারের কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট বাক্যাংশ, শব্দ বা বাক্য ডিকোড করতে সক্ষম সফটওয়্যার লোড করা যাবে। এ ধরনের যন্ত্র হয়তো বিজ্ঞান কল্পকাহিনিগুলোতে দেখানো অত্যাধুনিক টেলিপ্যাথিক যন্ত্রের মতো অতটা সূক্ষ্ম না হলেও তার কাছাকাছি কিছু একটা হবে।

    নিউরাল নেটওয়ার্ক হিসেবে মস্তিষ্ক

    কিন্তু ভবিষ্যতের বৈপ্লবিক কোনো এমআরআই মেশিন কি কোনো দিন প্রকৃত টেলিপ্যাথির মতো একেবারে প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ছবিসহ আমাদের ভাবনা নিখুঁতভাবে পড়তে পারবে? তা এখনো পরিষ্কার নয়। অনেকের যুক্তি, এমআরআই মেশিন আমাদের চিন্তাভাবনার শুধু অস্পষ্ট রূপরেখা পাঠোদ্ধার করতে পারবে। কারণ, আমাদের মস্তিষ্ক সত্যিকার কম্পিউটার নয়। একটি ডিজিটাল কম্পিউটারে গণনা নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ। আবার এটি খুব কঠোর কিছু নিয়মকানুন মেনে চলে। অন্যদিকে ডিজিটাল কম্পিউটার টুরিং মেশিনের সূত্র মেনে চলে। টুরিং মেশিন এমন এক মেশিন, যার মধ্যে থাকে একটি সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ), ইনপুট ও আউটপুট। একটি সেন্ট্রাল প্রসেসর (যেমন পেন্টিয়াম চিপ) ইনপুটের একটি নির্দিষ্টসংখ্যক সেট সম্পাদন করতে পারে ও তা থেকে একটি আউটপুট তৈরি করে। সে কারণে ‘চিন্তাভাবনা’ সিপিইউতেই স্থানীয়ভাবে সীমাবদ্ধ।

    অন্যদিকে আমাদের মস্তিষ্ক ডিজিটাল কম্পিউটার নয়। আমাদের মস্তিষ্কে কোনো পেন্টিয়াম চিপ, সিপিইউ, উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ও সাবরুটিন নেই। কম্পিউটারের সিপিইউ থেকে কোনো ট্রানজিস্টর সরিয়ে ফেলা হলে, তা বিকল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অতীতে বেশ কিছু ঘটনায় দেখা গেছে মানুষের মস্তিষ্কের অর্ধেক অংশ অকেজো হয়ে গেলেও বাকি অর্ধেক অংশ দায়িত্ব নিতে পারে।

    মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে আসলে লার্নিং মেশিনের বেশি মিল। অর্থাৎ এটি নিউরাল নেটওয়ার্ক, যা নতুন কোনো কাজ শেখার পর অনবরত তার নিজের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করে। এমআরআই গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, মস্তিষ্কের ভেতরে চিন্তাভাবনা টুরিং মেশিনের মতো কোনো নির্দিষ্ট এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মস্তিষ্কজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। এটি আসলে নিউরাল নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্য। এমআরআই স্ক্যানে দেখা গেছে, চিন্তাভাবনা অনেকটা পিংপং খেলার মতো। এতে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ক্রমান্বয়ে আলোকিত হয় এবং মস্তিষ্কের চারপাশে বৈদ্যুতিক সক্রিয়তা ওঠানামা করে।

    মস্তিষ্কের অনেকগুলো অংশে চিন্তাভাবনা ছড়ানো ও বিক্ষিপ্ত থাকে। সে কারণে বিজ্ঞানীরা সর্বোচ্চ যেটুকু করতে পারবেন, তা হলো ভাবনার একটি অভিধান সংকলন করা। সেটি হবে নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা ও নির্দিষ্ট ইইজি বা এমআরআইয়ের প্যাটার্নের মধ্যে সাদৃশ্য স্থাপন করা। অস্ট্রিয়ান বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার গার্ট ফুটচেলার একটি কম্পিউটারকে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট প্যাটার্ন ও চিন্তাভাবনা চেনার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সে জন্য ইইজিতে পাওয়া। বা মাইক্রো তরঙ্গের দিকে নজর দেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে . তরঙ্গ নির্দিষ্ট পেশির নড়াচড়ার ইচ্ছার সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি তাঁর রোগীদের একটি আঙুল তুলতে, হাসতে বা ভ্রুকুটি করতে বলেন। এ সময় কোনো μ তরঙ্গ সক্রিয় তা রেকর্ড করা হয় কম্পিউটারে। প্রতিবার রোগীরা কোনো মানসিক কাজ করলে কম্পিউটার বেশ সতর্কভাবে μ তরঙ্গের প্যাটার্ন রেকর্ড করে। এই প্রক্রিয়া বেশ কঠিন ও ক্লান্তিকর। কারণ, আপনাকে বেশ সতর্কভাবে কৃত্রিম তরঙ্গ তৈরি করে যেতেই হবে। তবে ফুর্টচেলার এভাবে সরল নড়াচড়া আর মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট প্যাটার্নের মধ্যে মিল খুঁজে বের করতে পেরেছেন।

    এমআরআইয়ের ফলাফলের সঙ্গে যুক্ত করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রচেষ্টা হয়তো চিন্তাভাবনার বিশদ অভিধান তৈরির পথে নিয়ে যাবে। ইইজি বা এমআরআই স্ক্যানের নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার হয়তো প্যাটার্নগুলো শনাক্ত করতে ও কোনো ব্যক্তি কী চিন্তা করছে, তা-ও উদ্‌ঘাটন করতে পারবে। অন্তত সাধারণ অর্থেও এটি সত্য হতে পারে। এ ধরনের ‘মাইন্ড রিডিং’ নির্দিষ্ট ↓ তরঙ্গ ও এমআরআই স্ক্যানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করবে। কিন্তু অভিধানটি আপনার চিন্তাকে নির্দিষ্ট শব্দে চিহ্নিত করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েই যায়।

    চিন্তার বিচ্ছুরণ

    মোটাদাগে বলা যায়, আমরা যদি কোনো দিন অন্য কারও চিন্তার রূপরেখা পড়তে পারি, তাহলে এর বিপরীতও কি করা সম্ভব? অর্থাৎ আপনার চিন্তাভাবনা কি অন্য কারও মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে? উত্তর হ্যাঁ হবে বলে মনে হয়। বেতার তরঙ্গ সরাসরি মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে ছুড়ে দেওয়া যায়। আমাদের জানা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কাজ নিয়ন্ত্রণকারী এলাকা উত্তেজিতও করা যায় এর মাধ্যমে।

    গবেষণাটি শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে। মৃগীরোগীদের মস্তিষ্কে কানাডার নিউরোসার্জন ওয়াল্ডার পেনফিল্ডের সার্জারির মাধ্যমে এটি শুরু হয়। তিনি দেখতে পান, ইলেকট্রোড দিয়ে মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের নির্দিষ্ট এলাকায় উত্তেজিত করা হলে মানুষ অদ্ভুত কথাবার্তা শুনতে পায়। আবার ভূতের মতো কিছু অপচ্ছায়াও দেখতে পায় তারা।

    মনোবিজ্ঞানীরা আগে থেকে জানতেন, মস্তিষ্কে মৃগীরোগ-সংক্রান্ত আঘাতের কারণে অতিপ্রাকৃত শক্তি কাজ করছে বলে অনুভব করে রোগীরা তারা মনে করে, শয়তান ও দেবদূতেরা তাদের চারপাশের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করছে। (মনোবিজ্ঞানীরা তত্ত্ব দিলেন, মস্তিষ্কের এই এলাকা উত্তেজিত করা হলে হয়তো একই রকম অভিজ্ঞতা হয়, যা বিভিন্ন ধর্মের ভিত্তি। অনেকের সন্দেহ, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ফরাসি সেনাবাহিনীকে একা হাতে বিজয় এনে দেওয়া জোয়ান অব আর্ক হয়তো মাথায় কোনো আঘাতের কারণে এমন কোনো রোগে ভুগছিল।)

    এ অনুমানের ভিত্তিতে অন্টারিওর সুদবুরির নিউরোসায়েন্টিস্ট মাইকেল পারসিঙ্গার তার দিয়ে সংযুক্ত এক বিশেষ ধরনের হেলমেট বানিয়েছেন। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা, যাতে রেডিও ওয়েভ মস্তিষ্কের ভেতর ছুড়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতির মতো বিশেষ ধরনের চিন্তা ও আবেগ টেনে বের করে আনা যায়। নিউরোসায়েন্টিস্টরা জানেন, বাঁ দিকের টেম্পোরাল লোবের নির্দিষ্ট ধরনের আঘাতের কারণে মস্তিষ্কের বাঁ পাশ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। আবার এতে মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধ থেকে আসা কর্মকাণ্ডগুলোকে ‘আরেকজনের’ কাছ থেকে আসছে বলে মনে হতে পারে। এই আঘাতের কারণে এমন অনুভূতিও জন্মাতে পারে, ঘরে ভূতের মতো কোনো আত্মা ঘোরাফেরা করছে। কারণ, তখন মস্তিষ্ক, নিজেরই অন্য পাশের উপস্থিতি বেমালুম ভুলে যায়। কোনো ব্যক্তির বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে তার মস্তিষ্কের অন্য গোলার্ধের কর্মকাণ্ডকে শয়তান, দেবদূত, ভিনগ্রহের প্রাণী কিংবা ঈশ্বর বলেও ভাবতে পারে।

    ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় সংকেতকে নিখুঁতভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে ছুড়ে দেওয়া যাবে, যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে নির্দিষ্ট কাজ। এ ধরনের সংকেত অ্যামিগডালাতে ছুড়ে দিয়ে টেনে বের করে আনা যাবে নির্দিষ্ট কোনো আবেগ। আবার মস্তিষ্কের অন্য এলাকা উত্তেজিত করে কোনো ছবি দেখানো বা চিন্তা মাথায় আনা যাবে। কিন্তু এ-সম্পর্কিত গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে।

    মস্তিষ্কের মানচিত্র

    কিছু কিছু বিজ্ঞানী হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের মতো ‘নিউরন ম্যাপিং প্ৰজেক্ট’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টে মানুষের জিনোমের সব কটি জিনের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে নিউরন ম্যাপিং প্রজেক্টে মানুষের মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনের অবস্থান শনাক্ত করা হবে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করা যাবে, যেখানে দেখানো হবে নিউরনের প্রতিটি সংযোগ। তাই সত্যিই প্রজেক্টটি অনেক বড়। কারণ, মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়নের বেশি নিউরন রয়েছে। আবার প্রতিটি নিউরন অন্য আরও কয়েক হাজার নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত। ধরে নেওয়া যায়, এমন একটি প্রজেক্ট সম্পন্ন হলে নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা কীভাবে নির্দিষ্ট নিউরাল পথে উদ্দীপত হয়, তার বোধগম্য মানচিত্র তৈরি করা যাবে। এমআরআই স্ক্যান ও ইইজি তরঙ্গ ব্যবহার করে পাওয়া চিন্তার অভিধান একত্র করে সহজে নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনার নিউরাল কাঠামোর পাঠোদ্ধার করা যাবে। এভাবে নির্ধারণ করা যাবে, নির্দিষ্ট শব্দ বা মানসিক চিত্রের কারণে কোন নিউরন সক্রিয় হয়। তাই এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট চিন্তা, তার এমআরআইয়ে প্রকাশ ও নির্দিষ্ট নিউরনের উদ্দীপনার কারণে মস্তিষ্কে চিন্তার উদয় হওয়ার মধ্যকার সম্পর্কও আবিষ্কৃত হবে।

    ২০০৬ সালে এ ব্যাপারে ক্ষুদ্র এক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয় অ্যালেন ইনস্টিটিউট ফর ব্রেন সায়েন্স (মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেনের স্থাপিত)। এর আগে, ইঁদুরের মস্তিষ্কে জিনের প্রকাশের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছিল তারা। এ মানচিত্রে কোষীয় পর্যায়ে ২১ হাজার জিন বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। মানুষের মস্তিষ্কের জন্যও এ রকম মানচিত্র তৈরির ব্যাপারে তারা আশাবাদী। ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান মার্ক টেসিয়ার-ল্যাভিগনি বলেন, ‘অ্যালেন ব্রেন অ্যাটলাস সম্পূর্ণ হলে মেডিকেল সায়েন্স বা মস্তিষ্ক গবেষণা বড় এক ধাপ সামনে এগিয়ে যাবে।’ যারা মানবমস্তিষ্কের মধ্যে নিউরাল সংযোগ বিশ্লেষণ করতে চায়, তাদের জন্য এই মানচিত্র অপরিহার্য বস্তুতে পরিণত হবে। অবশ্য সত্যি নিউরন ম্যাপিং প্রজেক্টের জন্য এই ব্রেন অ্যাটলাস বেশ ছোটখাটো বলে মনে হয়।

    সংক্ষেপে বলা যায়, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ও ফ্যান্টাসি গল্পে দেখানো প্রাকৃতিক টেলিপ্যাথি বর্তমানে অসম্ভব। এমআরআই স্ক্যান ও ইইজি তরঙ্গ ব্যবহার করে সরল কিছু চিন্তা পড়া যায়। কারণ, গোটা মস্তিষ্কে চিন্তাপ্রক্রিয়া বেশ জটিলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আসন্ন দশক বা শতাব্দীর মধ্যে এ প্রযুক্তি কতটা উন্নত হবে? অনিবার্যভাবে চিন্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনুসন্ধানে বিজ্ঞানের সক্ষমতা সূচকীয় হারে বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকবে আমাদের এমআরআই ও অন্যান্য স্পর্শকাতর যন্ত্রগুলোর সংবেদনশীলতাও। এভাবে বিজ্ঞান একসময় মস্তিষ্কের চিন্তা ও আবেগের প্রক্রিয়ার জায়গায়গুলোকে অতি সূক্ষ্মভাবে চিহ্নিত করতে পারবে। কম্পিউটারের বিপুল ক্ষমতা দিয়ে এই তথ্য-উপাত্ত অতি নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করবে বলে আশা করা যায়। চিন্তাভাবনার অভিধানে বিপুলসংখ্যক চিন্তার প্যাটার্নকে শ্রেণিবদ্ধ করা সম্ভব হবে। সেখানে এমআরআই পর্দার বিভিন্ন ধরনের চিন্তার প্যাটার্নের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা বা অনুভূতির মিল পাওয়া যাবে। অবশ্য এমআরআই প্যাটার্ন ও চিন্তা হয়তো পুরোপুরি কখনোই মেলানো সম্ভব হবে না। তবু চিন্তার অভিধান সঠিকভাবে সাধারণ চিন্তাভাবনাকে নির্দিষ্ট বিষয়ে শনাক্ত করতে পারবে। অন্যদিকে এমআরআই চিন্তার প্যাটার্ন নিউরোনাল ম্যাপে নিখুঁতভাবে দেখানো সম্ভব হবে, যেটি মস্তিষ্কে কোন নিউরন কোন নির্দিষ্ট চিন্তা তৈরি করতে উদ্দীপ্ত করছে, তা বোঝা যাবে।

    কিন্তু মস্তিষ্ক কম্পিউটার নয়, বরং নিউরাল নেটওয়ার্ক (এখানে চিন্তা মস্তিষ্কজুড়ে ছড়িয়ে থাকে) হওয়ার কারণে চূড়ান্তভাবে আমরা একটা বাধার মুখোমুখি হব। বাধাটি হবে মস্তিষ্ক নিজেই। কাজেই বিজ্ঞান চিন্তাশীল মস্তিষ্কের যতই গভীর থেকে গভীর অনুসন্ধান চালাক আর আমাদের চিন্তাপ্রক্রিয়ার কিছু অংশের পাঠোদ্ধার করুক না কেন, বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে প্রতিশ্রুত ‘চিন্তা পড়া’ পুরোটা কখনো সম্ভব হবে না। সে কারণে সাধারণ অনুভূতি ও চিন্তার প্যাটার্ন পড়ার সক্ষমতাকে প্রথম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা হিসেবে গণ্য করেছি। আর আমাদের মনের চিন্তাপ্রক্রিয়া আরও নিখুঁতভাবে পড়ার সক্ষমতাকে গণ্য করেছি দ্বিতীয় শ্রেণির অসম্ভাব্যতা হিসেবে।

    কিন্তু এমন কোনো সরাসরি উপায় হয়তো থাকতেও পারে, যেখানে মস্তিষ্কের বিপুল ক্ষমতা ব্যবহার করা সম্ভব। দুর্বল ও সহজে বিক্ষিপ্ত হওয়া রেডিও ব্যবহারের বদলে কেউ কি তখন সরাসরি মস্তিষ্কের ভেতরের নিউরন ব্যবহার করতে পারবে? সেটি যদি সম্ভব হয়, আমরা তখন সাইকোকাইনেসিসের মতো আরও বিপুল কোনো ক্ষমতার অর্গল খুলে দিতে পারব।

    তথ্যনির্দেশ

    বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ : বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গকে কম্পাঙ্কের পার্থক্যের ভিত্তিতে বেতার তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, অবলোহিত রশ্মি, দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনি রশ্মি, রঞ্জন রশ্মি (এক্স-রে) ও গামা রশ্মি ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায়।

    হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট : সংক্ষেপে এইচজিপি। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় দলগত জীববৈজ্ঞানিক প্রকল্প এটি। এ গবেষণা প্রকল্পে মানুষের ডিএনএর নিউক্লিওটাইড বেস পেয়ারের সিকোয়েন্স বের করতে কাজ শুরু হয়। সেই সঙ্গে দৈহিক ও কার্যকর সব জিনের ম্যাপিং ও তা শনাক্ত করা ছিল এ প্রকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ১৯৯০ সালে শুরু হয়ে ২০০০ সালে তা শেষ হয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু
    Next Article দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

    Related Articles

    মিচিও কাকু

    প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    দ্য গড ইকুয়েশন : থিওরি অব এভরিথিংয়ের খোঁজে – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    ফিজিক্স অব দ্য ফিউচার – মিশিও কাকু

    November 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }