Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল – মিচিও কাকু

    মিচিও কাকু এক পাতা গল্প488 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৮. মহাকাশের আগন্তুক ও ইউএফও

    পুরো মহাবিশ্বে আমরা হয় নিঃসঙ্গ কিংবা তা নই। উভয় চিন্তাই ভয়ানক।

    —আর্থার সি ক্লার্ক

    প্রকাণ্ড এক স্পেসশিপ। লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের একদম ওপরে কয়েক মাইলজুড়ে স্থির হয়ে আছে। স্পেসশিপটিতে পুরো আকাশ ঢাকা পড়ে গোটা শহরে নেমে এসেছে অশুভ আর অদ্ভুত এক আঁধার। বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও একই অবস্থা। পিরিচ আকৃতির ওই দুর্গগুলো বিশ্বের প্রধান প্ৰধান শহরে অবস্থান নিয়েছে। ভিনগ্রহ থেকে আসা এসব জীবকে লস অ্যাঞ্জেলেসে স্বাগত জানাতে উল্লসিত হাজার হাজার দর্শক উঠে পড়েছে আকাশছোঁয়া বহুতল ভবনের চূড়ায়। মহাকাশের অতিথিদের একদম কাছ থেকে স্বাগত জানাতেই হাজির হয়েছে তারা।

    লস অ্যাঞ্জেলেসের আকাশে কয়েক দিন নিঃশব্দে ঝুলে রইল স্পেসশিপটি। অবশেষে একদিন ধীরে ধীরে খুলে গেল স্পেসশিপের পেট তার পরপরই লেজার লাইটের চোখধাঁধানো বিস্ফোরণ ছুড়ে দেওয়া হলো সেখান থেকে। মুহূর্তেই আকাশছোঁয়া বহুতল ভবনটি পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা ধ্বংসযজ্ঞের প্রবল ঢেউ পুরো শহরে আছড়ে পড়তে লাগল। মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই শহরটি পরিণত হলো স্রেফ দগ্ধ আবর্জনায়।

    হলিউডের ইনডিপেনডেন্ট ডেমুভিতে আমাদের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল এলিয়েন বা বহির্জাগতিক ভিনগ্রহের প্রাণীরা। অন্যদিকে ইটি মুভিতে আমাদের স্বপ্ন আর ফ্যান্টাসির প্রতিফলন দেখেছি আমরা। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের ব্যাপারে যুগে যুগে মানুষের আগ্রহ ছিল। এলিয়েনরা অন্য বিশ্বে বাস করে বলে ভাবত মানুষ। ১৬১১ সালে জ্যোতির্বিদ জোহান কেপলার তাঁর লেখা সমনিয়ামউপন্যাসে চাঁদে ভ্রমণ নিয়ে কল্পনার ডালপালা বিস্তার করেছেন। তাতে সেকালের সবচেয়ে সেরা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করেন তিনি। এ রকম ভ্রমণে অদ্ভুত এলিয়েন, গাছপালা ও জীবজন্তুর সঙ্গে দেখা হতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি। তবে মহাকাশে প্রাণ নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বিজ্ঞান ও ধর্ম। বলা বাহুল্য, মাঝে মাঝে এর ফলটা বিয়োগান্ত হয়।

    আরও দেখুন
    রেডিওতে
    জ্যোতির্বিজ্ঞানের
    যোগাযোগে
    টিভিতে
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    যোগাযোগের
    মিউজিক
    যোগাযোগ
    বিজ্ঞানের
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা

    এর কয়েক বছর আগে, ১৬০০ সালে, সাবেক ডমিনিকান পাদরি ও দার্শনিক জিওদার্নো ব্রুনোকে রোমের রাস্তায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। চরম অপমানিত করতে খুঁটিতে বেঁধে পুড়িয়ে মারার আগে উল্টো করে ঝুলিয়ে বিবস্ত্র করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ব্রুনোর কোন শিক্ষাটা এত ভয়ংকর ছিল? তাঁকে একটা সাধারণ প্রশ্ন করা হয়েছিল : বাইরের আকাশে কি প্রাণ আছে? কোপার্নিকাসের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। কোপার্নিকাস না করলেও তিনি বিশ্বাস করতেন, বাইরের আকাশে আমাদের মতো অগণিত জীবজন্তু আছে। (বাইরের আকাশে কোটি কোটি সাধুসন্ত, পোপ কিংবা যিশুখ্রিষ্ট থাকার সম্ভাবনার কথা একবারও চিন্তা করেনি গির্জার অনুসারী। তার বদলে ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারাটাই বেশি সুবিধাজনক বলে মনে হয়েছিল তাদের কাছে। )

    আরও দেখুন
    যোগাযোগ
    যোগাযোগের
    টিভি
    বিজ্ঞানের
    রেডিওতে
    জ্যোতির্বিজ্ঞানের
    মিউজিক
    জ্যোতির্বিদ
    পোর্টেবল স্পিকার
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা

    চার শ বছর ধরে ব্রুনোর এই স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদদের। বর্তমানে কয়েক সপ্তাহ পরপরই ব্রুনো তাঁর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। প্রতি মাসে প্রায় দুবার নতুন কোনো না কোনো এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ আবিষ্কৃত হচ্ছে, যা মহাকাশের অন্য কোনো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। মহাকাশে অন্য নক্ষত্রদের প্রদক্ষিণরত ২৫০-এর বেশি গ্রহ এখন তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ব্রুনোর অনুমিত বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহরা এখন অকাট্যভাবে প্রমাণিত। তবু একটা প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথে বহিঃসৌরজাগতিক গুচ্ছ গুচ্ছ গ্রহ থাকলেও তার মধ্যে কয়টি কোনো জীবের বেঁচে থাকার উপযোগী? কোনো বুদ্ধিমান প্রাণ যদি মহাকাশে থেকেই থাকে, তাহলে সে ব্যাপারে বিজ্ঞান কী বলে?

    আরও দেখুন
    যোগাযোগ
    রেডিওর
    জ্যোতির্বিজ্ঞানের
    যোগাযোগে
    রেডিও
    জ্যোতির্বিদ
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    বৈজ্ঞানিক
    যোগাযোগের
    টিভি

    বহির্জাগতিক জীবের সঙ্গে কাল্পনিক লড়াই নিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের সমাজ বুঁদ হয়ে আছে। এ বিষয়ে বইয়ের পাঠক ও মুভির দর্শকেরাও রোমাঞ্চিত। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা ঘটে ১৯৩৮ সালের ৩০ অক্টোবরে। সেবার মার্কিন দর্শকদের সামনে হ্যালোইন উৎসবে একটি কৌশল খাটানোর সিদ্ধান্ত নেন অরসন ওয়ালেস। সে জন্য বেছে নেন এইচ জি ওয়েলসের ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাহিনির মূল প্লট। সিবিএস ন্যাশনাল রেডিওতে ধারাবাহিকভাবে সংক্ষিপ্ত খবর প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। নাচের মিউজিক বিঘ্নিত করে মাঝখানে ঘোষণাটা বারবার দেওয়া হচ্ছিল। এমনটি চলছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ঘোষণায় বলা হলো, মঙ্গলবাসীরা পৃথিবী আক্রমণ করেছে। এতে সভ্যতা ধ্বংসের মুখে। মঙ্গল থেকে আসা যন্ত্রগুলো নিউ জার্সির গ্রোভার মিলে অবতরণ করেছে। পুরো শহর ধ্বংস করে পৃথিবীর দখল করতে ডেথ রে ছুড়ছে তারা। এমন খবর শুনে লাখ লাখ মার্কিন আতঙ্কে স্রেফ জমে গেল। (সংবাদপত্রে পরে জানানো হলো, এমন খবরে এলাকার লোকজন পড়িমরি করে পালাতে শুরু করায় পুরো এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হয়। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে বসে, তারা বিষাক্ত গ্যাসের ঝাঁজালো গন্ধ পেয়েছিল, এমনকি দূর থেকে আলোর ঝলকও দেখতে পেয়েছে।)

    আরও দেখুন
    রেডিও
    মিউজিক
    যোগাযোগ
    টেলিভিশন
    টিভি
    যোগাযোগে
    বৈজ্ঞানিক
    টিভিতে
    যোগাযোগের
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা

    মঙ্গল নিয়ে মানুষের কৌতূহলের পারদ আরও একবার চূড়ায় ওঠে ১৯৫০-এর দশকে। সেবার মঙ্গল গ্রহে অদ্ভুত এক চিহ্ন দেখতে পান জ্যোতির্বিদেরা। সেটি দেখতে অনেকটা বিশালাকৃতির ইংরেজি এমের ( M ) মতো, যা কয়েক মাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। একজন মন্তব্য করে বসে, হয়তো এই এমের অর্থ মার্স বা মঙ্গল গ্রহ। এর মাধ্যমে পৃথিবীবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে মঙ্গলবাসী। ফুটবল স্টেডিয়ামে চিয়ারলিডাররা যেভাবে নিজের টিমের নাম উচ্চারণ করে, অনেকটা তেমন। (অনেকে রহস্যময়ভাবে বলতে লাগল, এটি এম নয়, ইংরেজি ডব্লিউ (W) বোঝানো হচ্ছে, যা দিয়ে ওয়ার বা যুদ্ধ বোঝায়। সোজা কথায়, এর মাধ্যমে মঙ্গলবাসী পৃথিবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে)। অবশ্য ঝড়ের বেগে যেমন এমের উদয় হয়েছিল, সেভাবেই হঠাৎ সেটি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর এই সাময়িক আতঙ্ক আস্তে আস্তে কমে যায়। সম্ভবত চিহ্নটি উদয় হয়েছিল মঙ্গলে ধূলিঝড়ের কারণে। পুরো গ্রহ ধুলোর আবরণে ঢাকা। ব্যতিক্রম এর ওপর চারটি বিশাল আগ্নেয়গিরির চূড়া। চূড়াগুলো দেখতে কিছুটা এম বা ডব্লিউ অক্ষরের মতো

    প্রাণের সন্ধানে বিজ্ঞান

    রাশভারী কিছু বিজ্ঞানী বহির্জাগতিক প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে অনেক দিন ধরে গবেষণা চালাচ্ছেন। তাঁদের মতে, এ রকম প্রাণ সম্পর্কে চূড়ান্ত কিছু বলা অসম্ভব। তারপরও পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন আর জীববিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে এলিয়েনজীবনের প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা কিছু সাধারণ যুক্তি তুলে ধরতে পারি।

    আরও দেখুন
    জ্যোতির্বিজ্ঞানের
    বিজ্ঞানের
    যোগাযোগ
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    রেডিও
    টিভিতে
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    বৈজ্ঞানিক
    রেডিওতে
    যোগাযোগের

    প্রথমত, এই মহাবিশ্বে প্রাণের উৎপত্তির পেছনে তরল পানির ভূমিকা মুখ্য। ‘পানি অনুসরণ করুন’, এটাই মহাকাশে প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণের খোঁজে জ্যোতির্বিদদের মূলমন্ত্র। অধিকাংশ তরলের চেয়ে ব্যতিক্রম তরল পানি সর্বজনীন দ্রাবক। বিস্ময়করভাবে বিভিন্ন রকম রাসায়নিক পদার্থকে দ্রবীভূত করার ক্ষমতা রাখে পানি। এটি এমন এক আদর্শ মিশ্রণ, যা ক্রমেই জটিল অণু তৈরি করতে পারে। আবার পানি সরল অণুও বটে। কারণ, মহাবিশ্বের যেসব জায়গায় অন্যান্য দ্রাবক বেশ বিরল, সেখানে পানি পাওয়া যায়।

    আরও দেখুন
    বৈজ্ঞানিক
    যোগাযোগ
    রেডিওর
    বিজ্ঞানের
    টেলিভিশন
    যোগাযোগের
    রেডিওতে
    টিভি
    পোর্টেবল স্পিকার
    জ্যোতির্বিজ্ঞানের

    দ্বিতীয়ত, আমরা জানি, কার্বন প্রাণের উৎপত্তির জন্য সম্ভাব্য উপাদান। কারণ এর চারটি বন্ধন আছে। বন্ধনগুলোর মাধ্যমে আরও চারটি পরমাণু একসঙ্গে বেঁধে অবিশ্বাস্য জটিল অণু তৈরি করতে পারে কার্বন। বিশেষ করে, এটি লম্বা কার্বনের শিকল তৈরি করতে পারে, যেটি হাইড্রোকার্বন আর জৈব রসায়নের ভিত্তি। চারটি বন্ধন থাকা অন্যান্য মৌলের এ ধরনের সমৃদ্ধ রাসায়নিক ধর্ম নেই।

    কার্বনের সবচেয়ে অবিস্মরণীয় গুরুত্বটা পাওয়া যায় ১৯৫৩ সালে স্ট্যানলি মিলার ও হ্যারল্ড উরের বিখ্যাত এক পরীক্ষায়। পরীক্ষায় দেখা গেল, প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ত গঠন হয় কার্বন রসায়নের একটি উপজাত থেকে। শুরুতে তাঁরা অ্যামোনিয়া, মিথেন ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিকের একটি মিশ্ৰণ নেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, আদিম পৃথিবীতেও এমন মিশ্রণ ছিল। মিশ্রণটি ফ্ল্যাঙ্কে নিয়ে এর মধ্যে সামান্য বিদ্যুৎপ্রবাহ দেওয়া হয়। এরপর অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। এক সপ্তাহের মধ্যে ফ্ল্যাস্কের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অ্যামিনো এসিড গঠিত হতে দেখা গেল। ওই বৈদ্যুতিক প্রবাহ কার্বনের বন্ধনগুলোকে অ্যামোনিয়া আর মিথেনের মধ্যে ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল। এরপর পরমাণুগুলোকে নতুন করে সাজিয়ে অ্যামিনো অ্যাসিড গঠিত হয়েছিল, যা আসলে প্রোটিনের পূর্বসূরি। এক অর্থে প্রাণের উৎপত্তি হতে পারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এরপর থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড ধূমকেতুর ভেতর ও গভীর মহাকাশের গ্যাসের মেঘেও পাওয়া গেছে।

    আরও দেখুন
    মিউজিক
    যোগাযোগের
    রেডিও
    যোগাযোগ
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    জ্যোতির্বিদ
    পোর্টেবল স্পিকার
    বিজ্ঞান
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    জ্যোতির্বিজ্ঞানের

    তৃতীয়ত, প্রাণের মৌলিক ভিত্তি হলো নিজের অনুলিপি তৈরি করতে পারা অণু, যার নাম ডিএনএ। রসায়নে, সেলফ রেপ্লিকেটিং বা স্ব-অনুলিপি করতে পারা অণু পাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। পৃথিবীতে প্রথম ডিএনএ গঠিত হতে কয়েক শ মিলিয়ন বছর লেগে গিয়েছিল। সম্ভবত সেটি ঘটেছিল গভীর সাগরে। ধরে নেওয়া যায়, কেউ যদি মহাসাগরে মিলার-উরের পরীক্ষাটি এক মিলিয়ন বছর ধরে চালিয়ে যান, তাহলে ডিএনএর মতো অণু স্বতঃস্ফূর্তভাবে গঠিত হতে পারে। এটি হয়তো এমন কোনো স্থান হবে, যেখানে পৃথিবীর প্রথম ডিএনএ অণু আদিম পৃথিবীর ইতিহাসে সংঘটিত হবে। সেটি হবে মহাসাগরের নিচের আগ্নেয়গিরির ফাটলের কাছে। কারণ, এই ফাটলের কার্যক্রমের কারণে সালোকসংশ্লেষণ ও উদ্ভিদ আসার আগে আদিম ডিএনএ অণুর এবং কোষের জন্য একটি উপযোগী শক্তির জোগান আসবে। ডিএনএর পাশাপাশি কার্বনভিত্তিক অন্য অণুগুলো স্বপ্রতিলিপি তৈরি করতে পারে কি না, তা এখনো জানা নেই। তবে মহাবিশ্বের অন্যান্য স্বপ্রতিলিপি তৈরি করতে সক্ষম অণুগুলো সম্ভবত কোনো না কোনোভাবে ডিএনএ অণুর মতো হতে পারে।

    আরও দেখুন
    টিভিতে
    যোগাযোগ
    মিউজিক
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    জ্যোতির্বিজ্ঞানের
    বিজ্ঞান
    রেডিওতে
    পোর্টেবল স্পিকার
    বৈজ্ঞানিক

    কাজেই দেখা যাচ্ছে, প্রাণের জন্য তরল পানি, হাইড্রোকার্বন কেমিক্যাল আর ডিএনএর মতো স্বপ্রতিলিপি তৈরি করতে পারা অণুর দরকার। এই বিস্তৃত শর্ত ব্যবহার করে মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান জীবের উদ্ভবের হার মোটামুটি হিসাব করা যায়। ১৯৬১ সালে মোটাদাগে এ ধরনের হিসাব যাঁরা প্রথম দিকে করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ ফ্রাঙ্ক ড্রেক। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র নিয়ে শুরু করা হলে হিসাব করে দেখা যাবে, এদের মধ্যে আমাদের সূর্যের মতো নক্ষত্র কত শতাংশ। আবার এদের মধ্যে কতটিতে সৌরজগৎ আছে, সেটিও হিসাব করা যাবে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ড্রেক ইকুয়েশন ছায়াপথে সভ্যতার সংখ্যার হিসাব করে বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা একসঙ্গে গুণ করে। এ সংখ্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে :

    আরও দেখুন
    যোগাযোগ
    অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
    জ্যোতির্বিজ্ঞান
    রেডিওর
    মিউজিক
    পোর্টেবল স্পিকার
    টিভি
    টিভিতে
    বিজ্ঞানের
    টেলিভিশন

    -গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র জন্মের হার,

    -এই নক্ষত্রগুলোর কত শতাংশের গ্রহ আছে,

    -প্রতিটি নক্ষত্রে কতটি গ্রহ আছে, যাদের পরিবেশ প্রাণের টিকে থাকার উপযোগী,

    -সত্যিকারের প্রাণের উন্নয়ন হয়েছে এমন গ্রহের সংখ্যা,

    -কত শতাংশ গ্রহে বুদ্ধিমান জীব গড়ে ওঠা সম্ভব,

    -কত শতাংশ জীব যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক ও যোগাযোগের ক্ষমতা রাখে, এবং

    -একটি সভ্যতার কাঙ্ক্ষিত জীবনকাল।

    যুক্তিসম্মত হিসাব করে ও এসব ক্রমের সম্ভাবনার গুণন করলে বোঝা যায়, শুধু মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই ১০০ থেকে ১০ হাজার গ্রহ থাকতে পারে, যেখানে বুদ্ধিমান জীবের আস্তানা হতে পারে। এই বুদ্ধিমান জীবসত্তা যদি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিজুড়ে সুষমভাবে ছড়িয়ে থাকে, তাহলে আমাদের এমন কোনো গ্রহ খুঁজে পাওয়ার প্রত্যাশা করা উচিত, যেটি আমাদের পৃথিবী থেকে মাত্র কয়েক শত আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ১৯৭৪ সালে কার্ল সাগান হিসাব করে দেখেন, শুধু আমাদের ছায়াপথে এ ধরনের ১০ লাখ সভ্যতা থাকতে পারে।

    তাই যাঁরা বহির্জাগতিক সভ্যতার প্রমাণ খুঁজছেন, তাঁদের কাজের বৈধতা দেয় এ ধারণা। বুদ্ধিমান জীবসত্তার উপযোগী গ্রহের এ হিসাব পেয়ে বিজ্ঞানীরা এখন গুরুত্বের সঙ্গে এমন গ্রহ থেকে রেডিও সিগন্যাল পাওয়া যায় কি না, তা খুঁজছেন। সেগুলো অনেকটা আমাদের গ্রহের টিভি ও রেডিও সিগন্যালের মতো। মাত্র গত পঞ্চাশ বছর আমরা এ রকম সিগন্যাল নিঃসরণ করতে শুরু করেছি

    ইটির খোঁজে পাতা কান

    দ্য সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (SETI) বা সেটি প্রজেক্টের কাজ শুরু হয় ১৯৫৯ সালে। পদার্থবিদ গুইসেপ কোকোনি আর ফিলিপ মরিসনের এক প্রভাবশালী গবেষণাপত্রের কারণে সেটি সম্ভব হয়। তাঁদের প্রস্তাব ছিল, ১ থেকে ১০ গিগাহার্জের মাইক্রোওয়েভ কম্পাঙ্কের রেডিয়েশন শনাক্ত করার মাধ্যমে বহির্জাগতিক জীবের সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হতে পারে। (১ গিগাহার্জের নিচের সিগন্যাল দ্রুতগতিসম্পন্ন ইলেকট্রনদের বিকিরণ নিঃসরণের কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। আবার ১০ গিগাহার্জের ওপরের সিগন্যালের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা আছে। সেটি হলো, আমাদের নিজেদের বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন ও পানির অণুর থেকে আসা গোলামাল এ ধরনের যেকোনো সংকেতের সঙ্গে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।) মহাকাশ থেকে আসা সংকেতগুলো শুনতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কম্পাঙ্ক হিসেবে তাঁরা ১৪২০ গিগাহার্জকে নির্বাচন করেন। কারণ, এটিই ছিল মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচুর্যময় মৌল সাধারণ হাইড্রোজেন গ্যাসের নিঃসরণ কম্পাঙ্ক। (এই পরিসরের কম্পাঙ্কের ডাকনাম ‘ওয়াটারিং হোল’ বা পানির উৎস। বহির্জাগতিক যোগাযোগে তাদের উপযোগিতার কথা বিবেচনা করে এমন নাম দেওয়া হয়েছে।)

    আসলে পানির উৎসের কাছে বুদ্ধিমান প্রাণীদের কোনো সংকেতের প্রমাণ অনুসন্ধান হতাশাজনক। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রিন ব্যাংকে ২৫ মিটার রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে সংকেতের খোঁজ করতে ১৯৬০ সালে ফ্রাঙ্ক ড্রেককে প্রজেক্ট ওজমাতে (ওজের রানির নামানুসারে এ নাম) আমন্ত্রণ জানানো হয়। বছরের পর বছর রাতের আকাশ চষে ফেলেও প্রজেক্ট ওজমা কিংবা অন্য প্রজেক্টগুলোতে কখনোই কোনো সংকেতের দেখা মেলেনি।

    সেটি (SETI) গবেষণায় অর্থের জোগান দিতে ১৯৭১ সালে এক উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব দেয় নাসা। প্রজেক্ট সাইক্লোপস নামে সুপরিচিত এ উদ্যোগে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পনেরো শ রাডার টেলিস্কোপ যুক্ত করা হয়। অবাক হওয়ার কিছু নেই, এ গবেষণা থেকেও এখনো কিছু মেলেনি। আরও ন্যায়সংগত কিছু প্রস্তাবেও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল। যেমন মহাকাশের এলিয়েনদের জন্য কোডেড মেসেজ পাঠানো। ১৯৭৪ সালে পুয়ের্তো রিকোর বিশাল আরেসিবো রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে ১৬৭৯ বিটের একটি কোডেড মেসেজ প্রায় ২৫,১০০ আলোকবর্ষ দূরের গ্লোবুলার ক্লাস্টার এম১৩-এর দিকে পাঠানো হয়। সংক্ষিপ্ত এ বার্তায় বিজ্ঞানীরা ২৩×৭৩ মাত্রার গ্রিড প্যাটার্ন বানান, যেটি সৌরজগতে আমাদের অবস্থান দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া এতে ছিল মানুষের ছবি আর কিছু রাসায়নিক ফর্মুলাও। (বিপুল দূরত্বের কারণে বাইরের মহাকাশ থেকে ওই মেসেজের উত্তর আসতে অন্তত ৫২,১৭৪ বছর সময় লাগবে।)

    মার্কিন কংগ্রেসকে এ প্রজেক্টের গুরুত্ব বোঝানো যায়নি। এমনকি ১৯৭৭ সালে ‘ওয়াও’ সিগন্যাল নামে এক রহস্যময় রেডিও সংকেত পাওয়ার পরও বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি তারা। এ সংকেতে কিছু অক্ষর ও সংখ্যা ছিল। তা দেখে মনে হয়েছিল, সেগুলো এলোমেলো নয়, বরং বুদ্ধিমান কোনো জীবের পাঠানো সংকেত। (তারপরও অনেকে ওয়াও সিগন্যাল দেখে বিশ্বাস করতে পারেনি।)

    ১৯৯৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে চরম হতাশায় জ্যোতির্বিদেরা ব্যক্তিগত অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ শুরু করেন। এদের মধ্যে একটি ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে সেটি ইনস্টিটিউট। সেটি (SETI) গবেষণা ও ১২০০ থেকে ৩০০০ মেগাহার্জ সীমার মধ্যে সূর্যের মতো আমাদের প্রতিবেশী এক হাজার নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা প্রজেক্ট ফিনিক্স চালু করে। ড. জিল টার্টার (হলিউডের কন্টাক্টমুভিতে জোডি ফস্টার এই বিজ্ঞানীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন) একসময় এর পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। (এই প্রজেক্টে ব্যবহার করা যন্ত্রপাতিগুলো খুবই সংবেদনশীল। ২০০ আলোকবর্ষ দূরের কোনো বিমানবন্দরের রাডার সিস্টেম থেকে কোনো কিছুর নিঃসরণ শনাক্ত করতে পারে এটি 1)

    আরও অভিনব পদ্ধতিটি হলো SETI@home প্রজেক্ট। বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদেরা ১৯৯৯ সালে এটি চালু করেন। তাঁদের আইডিয়া হলো, যাদের কম্পিউটার অধিকাংশ সময় অলস পড়ে থাকে, এ রকম কয়েক লাখ পিসির মালিকদের তালিকাভুক্ত করা। যারা একটি সফটওয়্যার প্যাকেজ ডাউনলোড করে এতে অংশ নেবে, তারা সবাই টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া রেডিও সিগন্যাল ডিকোড করতে সহায়তা করবে। অংশগ্রহণকারীদের কম্পিউটার স্ক্রিন সেভার যখন সক্রিয় থাকবে, তখন এ কাজটি করা সম্ভব। তাই পিসি ব্যবহারের সময় তাদের কোনো সমস্যা হবে না। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক দেশের ৫ মিলিয়নের বেশি পিসি ব্যবহারকারী এই প্রজেক্টে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে খুব অল্প খরচে বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি খরচের বিদ্যুৎ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। এটিই ইতিহাসে এ পর্যন্ত হাতে নেওয়া সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী সমন্বিত কম্পিউটার প্রজেক্ট। অন্যান্য যেসব প্রজেক্টে বিপুলসংখ্যক কম্পিউটার ব্যবহার করে গণনার প্রয়োজন হয়, সেখানেও এটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে। অবশ্য তারপরও এখনো কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীদের কাছ থেকে SETI@home প্রজেক্ট কোনো সিগন্যাল খুঁজে পায়নি।

    কয়েক দশক কঠোর পরিশ্রমের পরও সেটি গবেষণায় কোনো অগ্রগতি না পেয়ে এর প্রবক্তারা প্রজেক্ট নিয়ে কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েন। সবচেয়ে অনস্বীকার্য ত্রুটি সম্ভবত নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির ব্যান্ডে রেডিও সিগন্যাল খোঁজা। অনেকের মতে, এলিয়েন-জীবন হয়তো রেডিওর বদলে লেজার সিগন্যালও ব্যবহার করে থাকতে পারে। রেডিও সিগন্যালের চেয়ে লেজারের অনেক সুবিধা আছে। কারণ, লেজারের ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অর্থ হলো, একটি তরঙ্গে রেডিওর চেয়ে অনেক বেশি সিগন্যাল একত্র করা যায়। তবে লেজার রশ্মি সঠিক গন্তব্যে পাঠানো গেলেও এবং এতে শুধু একটি ফ্রিকোয়েন্সি থাকলেও সঠিক লেজার ফ্রিকোয়েন্সিতে নিখুঁত টিউন করা কঠিন।

    আরেকটি অনস্বীকার্য ত্রুটি হতে পারে, নির্দিষ্ট রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে নির্ভরশীল ছিলেন সেটি গবেষকেরা। কোথাও যদি এলিয়েন থাকে, তাহলে তারা হয়তো সংক্ষিপ্ত কৌশল ব্যবহার করতে পারে কিংবা ক্ষুদ্রতর প্যাকেজের মাধ্যমে মেসেজ ছড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ এমন কোনো কৌশল, যা এখন আধুনিক ইন্টারনেটে ব্যবহার করা হয়। এ রকম সংক্ষিপ্ত কৌশলের মেসেজ শোনা, যেগুলো বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে পারে, সেগুলোকে আমরা হয়তো শুধু এলোমেলো গোলমাল হিসেবে এতকাল শুনে এসেছি।

    তবে সেটি প্রদত্ত সব নির্দিষ্ট সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হওয়ার পরও, যৌক্তিকভাবে অনুমান করা যায় যে এ রকম সভ্যতা আছে। সেই সঙ্গে ধরে নেওয়া যায়, এই শতাব্দীর কোনো এক সময়ে আমরা বহির্জাগতিক সভ্যতা থেকে আসা কোনো না কোনো সংকেত শনাক্ত করতে পারব। আর তা ঘটলে মানবজাতির ইতিহাসে একটি মাইলফলক হবে।

    ওরা কোথায়?

    সত্যি বলতে, সেটি প্রজেক্ট এখনো মহাবিশ্বে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি। এ কারণে অন্য গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণের সম্ভাবনা সম্পর্কে ফ্রাঙ্ক ড্রেকের সমীকরণ নিয়ে একটু শীতল মনোভাব দেখা দিয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। সম্প্রতি জ্যোতির্বিদ্যাসংক্রান্ত কিছু আবিষ্কার আমাদের মনে এই বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে যে, ১৯৬০-এর দশকে ফ্রাঙ্ক ড্রেক বুদ্ধিমান প্রাণ খুঁজে পাওয়ার যে সম্ভাবনা হিসাব করেছিলেন, তার চেয়ে বাস্তবতা আসলে অন্য রকম। মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণ থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে আগে যা বিশ্বাস করা হতো, বাস্তবতা একই সঙ্গে তার চেয়েও অনেক বেশি আশাজাগানিয়া ও হতাশাজনক।

    প্রথমত, বিভিন্ন নতুন আবিষ্কার আমাদের এই বিশ্বাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে যে, এমন কোনোভাবেও জীবনের আবির্ভাব হতে পারে, যেটা ড্রেক ইকুয়েশনে বিবেচনা করা হয়নি। আগে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, পানি শুধু সূর্যের চারপাশের কোনো গোল্ডিলক জোনেই থাকা সম্ভব। (অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবীর যে দূরত্ব, এটা ঠিক তা-ই। মানে সূর্যের খুব কাছেও নয়, খুব দূরেও নয়। সূর্যের খুব কাছে থাকলে মহাসাগরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। খুব দূরে থাকলে মহাসাগরের পানি জমাট বেঁধে বরফ হয়ে যাবে। একদম মাঝামাঝি জায়গাতে প্রাণের আবির্ভাব হওয়া সম্ভব। একেই বলে গোল্ডিলক জোন। )

    কিন্তু জ্যোতির্বিদেরা একসময় বৃহস্পতি গ্রহের শীতল উপগ্রহ ইউরোপা বরফ আচ্ছাদিত স্তরের নিচেও তরল পানি থাকার প্রমাণ পেলেন। কাজেই আগের ধারণার ওপর এটি ছিল অনেক বড় এক ধাক্কা। ইউরোপা গোল্ডিলক জোনের বেশ বাইরে। তাই দেখা যাচ্ছে, ড্রেক সমীকরণের শর্তগুলোর সঙ্গে এটি মেলে না। আবার টাইডাল ফোর্স বা জোয়ারের বল ইউরোপার বরফের আচ্ছাদন গলিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। এর মাধ্যমে সেখানে স্থায়ী তরল মহাসাগরও সৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতির বিপুল পরিমাণ মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র ইউরোপাকে রাবার বলের মতো চেপে ধরে। বৃহস্পতির চারপাশে ইউরোপার ঘূর্ণনের কারণে উপগ্রহটির কেন্দ্রে গভীর সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। ফলে ইউরোপার বরফে আচ্ছাদন গলিয়ে দিতে পারবে। আমাদের সৌরজগতে শতাধিক উপগ্রহ আছে। মানে, আমাদের সৌরজগতের গোল্ডিলক জোনের বাইরেও জীবের টিকে থাকার উপযোগী উপগ্রহ থাকতে পারে। (এ পর্যন্ত আমাদের সৌরজগতের বাইরে ২৫০টি বড় আকৃতির বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর মধ্যেও বরফে জমাটবাঁধা উপগ্রহ থাকতে পারে, কে জানে যেগুলো প্রাণ ধারণের উপযোগীও হতে পারে।)

    বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই মহাবিশ্বে এমন ভবঘুরে টাইপের গ্রহও থাকতে পারে, যারা হয়তো অন্য কোনো নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরছে না। টাইডাল ফোর্সের কারণে ভবঘুরে গ্রহের চারপাশে ঘূর্ণমান কোনো উপগ্রহের মহাসাগরে বরফস্তরের নিচে তরল পানিও থাকতে পারে, থাকতে পারে প্রাণের অস্তিত্বও। তবে আমাদের প্রচলিত যন্ত্রপাতি দিয়ে এ রকম উপগ্রহ দেখা অসম্ভব। কারণ, কোনো গ্রহ-উপগ্রহ দেখতে আমরা তাদের মাতৃ- নক্ষত্রের আলোর ওপর নির্ভর করি।

    তাই দেখা যাচ্ছে, কোনো সৌরজগতে এ ধরনের উপগ্রহের সংখ্যা হয়তো গ্রহদের চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে। আবার কয়েক লাখ ভবঘুরে গ্রহও থাকতে পারে আমাদের এই ছায়াপথে। এতে বোঝা যায়, মহাবিশ্বে প্রাণ ধারণের উপযোগী গ্রহ-উপগ্রহের সংখ্যা আগের ধারণার চেয়েও অনেক গুণ বেশি হতে পারে। অন্যদিকে বেশ কিছু কারণে কয়েকজন জ্যোতির্বিদ ধারণা করছেন, গোল্ডিলক জোনের মধ্যে থাকা গ্রহগুলোতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা ড্রেক যা হিসাব করেছিলেন, তার তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে।

    প্রথমত, কম্পিউটার প্রোগ্রাম প্রমাণ করেছে, মহাকাশে ধূমকেতু ও গ্রহাণুর চলাচল বা উৎপাত ঠেকাতে কোনো সৌরজগতে বৃহস্পতির মতো আকারের গ্রহের উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। তাতে সৌরজগতে পরিষ্কার অভিযান চলমান থাকে, পাশাপাশি জীবের অস্তিত্বের উপযোগী হয় গ্রহটি। সৌরজগতে বৃহস্পতি না থাকলে ধূমকেতু ও গ্রহাণুর অবিরাম বর্ষণ চলত পৃথিবীতে। তাতে অসম্ভব হয়ে উঠত প্রাণের অস্তিত্ব। ওয়াশিংটন ডিসির কার্নেগি ইনস্টিটিউটের জ্যোতির্বিদ ড. জর্জ ওয়েথারিল হিসাব করে দেখেছেন, আমাদের সৌরজগতে বৃহস্পতি বা শনি গ্রহ না থাকলে, পৃথিবীতে বর্তমানের চেয়ে হাজার গুণ বেশি গ্রহাণু আছড়ে পড়ত। তার মধ্যে প্রতি ১০ হাজার বছরে জীবনের জন্য হুমকিও দেখা যেত (যেমন ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে এমনই এক গ্রহাণুর আঘাতে ডাইনোসর সদলবলে বিলুপ্ত হয়েছিল।) তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রচণ্ড আক্রমণে জীবনের অস্তিত্ব কীভাবে সম্ভব, তা কল্পনা করাও কঠিন।’

    দ্বিতীয়ত, আমাদের গ্রহটির একটা বড়সড় চাঁদ আছে। সেটাও আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। কারণ, আমাদের পৃথিবীর ঘূর্ণন স্থিতিশীল করে তুলেছে উপগ্রহটি। নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রকে কয়েক মিলিয়ন বছরে বিস্তৃত করে, বিজ্ঞানীরা প্রমাণ দেখাতে পারেন, একটা বড় চাঁদ ছাড়া পৃথিবীর অক্ষ হয়তো অস্থিতিশীল হতে পারত। তার ফলে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে জীবনের অস্তিত্ব অসম্ভব করে তুলত। ফরাসি জ্যোতির্বিদ ড. জ্যাকুস ল্যাসকার হিসাব করে দেখেছেন, আমাদের চাঁদটি ছাড়া পৃথিবীর অক্ষ ০ ও ৪৫ ডিগ্রিতে দুলত। ফলে পৃথিবীতে বিরাজ করত চরম আবহাওয়া। স্বভাবত তা হতো জীবন ধারণের পক্ষে অসম্ভব। কাজেই একটি বড় আকারের চাঁদের উপস্থিতির ফ্যাক্টরও ড্রেক সমীকরণের শর্তে ব্যবহার করা উচিত। (মঙ্গলের উপগ্রহ দুটি। সেগুলো মঙ্গলের ঘূর্ণন স্থিতিশীল করার পক্ষে খুব ছোট। সে কারণে মঙ্গল গ্ৰহ হয়তো অতীতে ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিল এবং ভবিষ্যতেও তার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে)।

    তৃতীয়ত, সাম্প্রতিক ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ এটাই নির্দেশ করে, অতীতে অনেকবার পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব নিভে গিয়েছিল। প্রায় দুই বিলিয়ন বছর আগে সম্ভবত পুরোপুরি বরফের চাদরে ঢেকে গিয়েছিল পৃথিবী। অর্থাৎ একটা বরফের গোলকের মতো হয়ে উঠেছিল পৃথিবী, যেখানে জীবন ধারণ ছিল অকল্পনীয়। আবার অন্য কোনো সময়ে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও ধূমকেতুর আঘাতে হয়তো পৃথিবীর সব জীব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কাজেই জীবনের সৃষ্টি ও বিবর্তন আমাদের আগের ধারণার চেয়েও অনেক ভঙ্গুর।

    চতুর্থত, অতীতে বুদ্ধিমান জীব প্রায় বিলুপ্তির কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। ডিএনএর প্রমাণ থেকে দেখা যায়, প্রায় এক লাখ বছর আগে সম্ভবত মাত্ৰ কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার মানুষ টিকে ছিল। বেশির ভাগ প্রাণী থেকে এ প্রজাতি জিনগতভাবে আলাদা হলেও মানুষেরা জিনগতভাবে প্রায় একই ধরনের। প্রাণিজগতের সঙ্গে তুলনা করলে, মানুষেরা পরস্পরের ক্লোন। এ ঘটনা শুধু একভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়, যদি আমাদের ইতিহাসে এমন কোনো বাধা থাকে, যেখানে বেশির ভাগ মানব প্রজাতি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন কোনো আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে পৃথিবীর আবহাওয়া হঠাৎ শীতল হয়ে পুরো মানবজাতির প্রায় সবটা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

    এ ছাড়া আরও কিছু আকস্মিক দুর্ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে, যা পৃথিবীর জীবন ধারণের জন্য জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে :

    একটি শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র : পৃথিবীর প্রাণ ধ্বংস করে দেওয়ার মতো কসমিক রে ও বিকিরণ ঠেকানোর জন্য এটি দরকার।

    গ্রহের ঘূর্ণনের মাঝারি গতি : পৃথিবী যদি খুব ধীরে ঘুরত, তাহলে সূর্যের দিকে থাকা অংশটি উত্তাপে দগ্ধ হতো। অন্য অংশে দীর্ঘকাল শীতে জমাট বেঁধে যেত। আর পৃথিবীর ঘূর্ণন দ্রুত হলে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হতো। যেমন দানবীয় বাতাস ও ঝড়।

    সঠিক অবস্থান বা গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে সঠিক দূরত্ব : পৃথিবী যদি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের খুব কাছে হতো, তাহলে সেখানকার ভয়ংকর বিকিরণ এতে আঘাত করত। আবার কেন্দ্র থেকে খুব বেশি দূরে হলে আমাদের গ্রহটিতে ডিএনএ অণু ও প্রোটিন তৈরির জন্য সমৃদ্ধ মৌলের অস্তিত্বও থাকত না।

    এসব কারণে জ্যোতির্বিদেরা এখন বিশ্বাস করেন, গোল্ডিলক জোনের বাইরের উপগ্রহ বা ভবঘুরে গ্রহগুলোতেও জীবনের অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে গোল্ডিলক জোনে পৃথিবীর মতো জীবন ধারণের উপযোগী গ্রহের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আগের ধারণার চেয়েও অনেক কম। সর্বোপরি ড্রেক সমীকরণের অধিকাংশ হিসাব প্রমাণ করে, এই ছায়াপথে সভ্যতা খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা হয়তো আগের হিসাবের তুলনায় অনেক কম।

    পিটার ওয়ার্ড ও ডোনাল্ড ব্রাউনলি লিখেছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র অণুজীব আর তাদের মতো জীবের অস্তিত্ব থাকাই স্বাভাবিক। এমনকি ড্রেক ও কার্ল সাগানের কল্পনার চেয়েও তা সুলভ হতে পারে। তবে জটিল জীব-প্রাণী আর উন্নত উদ্ভিদ সাধারণ ধারণার চেয়েও বেশ বিরল হতে পারে।’ আসলে ওয়ার্ড ও ব্রাউনলি এই সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন যে এই ছায়াপথে প্রাণের আশ্রয়ের জন্য পৃথিবীটা অনন্য ঘটনা। (অবশ্য তত্ত্বটি আমাদের গ্যালাক্সিতে বুদ্ধিমান প্রাণ খোঁজার প্রচেষ্টাগুলোতে স্রেফ জল ঢেলে দিতে পারে। তারপরও দূরের অন্যান্য ছায়াপথে জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাবনা এখানেও খোলাই রয়েছে।)

    পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজে

    ড্রেক সমীকরণ অবশ্যই পুরোপুরি তাত্ত্বিক। সে জন্য মহাকাশে প্রাণের অনুসন্ধান গতি পেয়েছে এক্সট্রাসোলার প্ল্যানেট বা বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ আবিষ্কারের মাধ্যমে। বহিঃসৌরগ্রহ গবেষণায় বাধা হলো, তাদের নিজস্ব আলো না থাকায় আমাদের যেকোনো টেলিস্কোপের কাছে তারা অদৃশ্য। সাধারণভাবে তাদের মাতৃ-নক্ষত্রের চেয়ে তারা এক মিলিয়ন থেকে এক বিলিয়ন ভাগ নিষ্প্রভ।

    তাদের খুঁজে পেতে তাই জ্যোতির্বিদেরা মাতৃ-নক্ষত্রে ক্ষুদ্র কম্পন বিশ্লেষণ করতে বাধ্য হন। ধারণা করা হয়, বৃহস্পতির মতো বড় আকারের গ্রহ যেকোনো নক্ষত্রের কক্ষপথ পাল্টে দিতে পারে। (একটা কুকুরকে তার লেজের পিছে ছোটার কথা কল্পনা করুন। একইভাবে, মাতৃ-নক্ষত্র ও তার বৃহস্পতির মতো আকারের কোনো গ্রহ পরস্পরের চারদিকে ঘোরার মাধ্যমে পরস্পরের পেছনে ছোটে। টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা এই বৃহস্পতির মতো আকারের গ্রহটি দেখতে পাব না। কারণ, সেটি অন্ধকার। তবে তার মাতৃ- নক্ষত্রটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সেই সঙ্গে সামনে-পেছনে টলমল বা কম্পিত হতে দেখা যাবে তাকে।)

    সত্যিকারের প্রথম বহিঃসৌরগ্রহ পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯৪ সালে। এটি আবিষ্কার করেন পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড. আলেকজান্ডার ওলজজান। ঘূর্ণমান এক পালসার বা এক মৃত নক্ষত্রের চারপাশে ঘূর্ণমান অবস্থায় গ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। সম্ভবত মাতৃ- নক্ষত্রটি একটি সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হওয়ার কারণে দেখে মনে হচ্ছিল গ্রহগুলোও মৃত, ঝলসানো। পরের বছর জেনেভার মাইকেল মেয়র ও দিদিয়ার কুলে নামের দুই সুইস জ্যোতির্বিদ ঘোষণা করেন যে তাঁরা এমন একটি গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন, যার ভর বৃহস্পতির মতো। সেই সঙ্গে সেটি ৫১ পেগাসি নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরছে। এর পরপরই এই ক্ষেত্রটিতে যেন বাঁধভাঙা বন্যা বয়ে গেল। [বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালে জেমস পিবলসের সঙ্গে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মাইকেল মেয়র এবং দিদিয়ার কুলে।—অনুবাদক]

    গত দশ বছরে বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ খুঁজে পাওয়ার সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে। বোল্ডারের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ ব্রুস জ্যাকোস্কির অভিমত হলো, ‘এটা মানবজাতির ইতিহাসে বিশেষ এক সময়। কারণ, আমরাই প্রথম প্রজন্ম যাদের অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আবিষ্কারের সত্যিকারের সম্ভাবনা আছে।’

    এসব সৌরব্যবস্থার কোনোটির সঙ্গে আমাদের নিজেদের কোনো মিল নেই। সত্যি বলতে কি, আমাদের সৌরজগতের সঙ্গে তাদের বেশ অমিল আছে। একসময় জ্যোতির্বিদেরা ভাবতেন, আমাদের সৌরজগৎ মহাবিশ্বজুড়ে অন্যান্য সৌরব্যবস্থার আদর্শ নমুনা, যার কক্ষপথগুলো বৃত্তাকার ও মাতৃ- নক্ষত্রকে ঘিরে তিনটি বলয়যুক্ত গ্রহ আছে। এই বলয় তিনটির মধ্যে নক্ষত্রটির সবচেয়ে কাছের গ্রহটি পাথুরে এলাকায়, পরের অঞ্চলটি গ্যাসীয় দানব আর সবশেষে জমাটবাঁধা বরফস্তূপের ধূমকেতুর বলয়।

    কিন্তু জ্যোতির্বিদেরা বিস্ময় নিয়ে একসময় দেখতে পেলেন, অন্যান্য সৌরব্যবস্থায় কোনো গ্রহই এই সরল সূত্র মানেনি। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, বৃহস্পতির মতো আকারের গ্রহগুলোকে কোনো সৌরব্যবস্থায় মাতৃ-নক্ষত্ৰ থেকে অনেক দূরে পাওয়া যাবে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তার বদলে দেখা গেল, এদের অনেকগুলো মাতৃ-নক্ষত্রের একেবারে কাছে প্রদক্ষিণ করছে (এমনকি তাদের অনেকগুলোর কক্ষপথ বুধের চেয়েও অনেক কাছে), নয়তো তাদের কক্ষপথ চরমভাবে উপবৃত্তাকার। এই দুইয়ের যেকোনো ক্ষেত্রেই গোল্ডিলক জোনে পৃথিবীর মতো ছোট গ্রহের দুইয়ের যেকোনো অবস্থায় থাকা অসম্ভব। বৃহস্পতির মতো আকারের কোনো গ্রহ তার মাতৃ-নক্ষত্রের খুব কাছে থাকার মানে হলো, বৃহস্পতি আকারের গ্রহটি অনেক বড় দূরত্ব থেকে স্থানান্তরিত হয়ে সেখানে এসেছে। ক্রমেই সেটি ওই সৌরব্যবস্থার কেন্দ্রের দিকে সর্পিল বা প্যাচানো পথে এগিয়ে যাচ্ছে (সম্ভবত ধূলির জন্য সৃষ্ট ঘর্ষণের কারণে)। সে ক্ষেত্রে বৃহস্পতি আকারের গ্রহটি ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর মতো ছোট গ্রহের কক্ষপথ ছেদ বা অতিক্রম করে তাকে মহাকাশে সজোরে ছুড়ে ফেলে দেবে। আবার বৃহস্পতি আকারের গ্রহটি যদি চরম উপবৃত্তাকার পথ অনুসরণ করে, তাহলে তার অর্থ হলো, বৃহস্পতি আকারের গ্রহটি নিয়মিতভাবে গোল্ডিলক জোনের ভেতর দিয়ে যায়। এর ফলেও পৃথিবীর মতো কোনো গ্ৰহ মহাকাশে নিক্ষিপ্ত হবে।

    অনুসন্ধানে পাওয়া এসব ফল দেখে গ্রহশিকারি ও জ্যোতির্বিদেরা পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহ আবিষ্কারে বেশ দমে যান। অথচ এ ফলাফল তাঁদের প্রত্যাশিত হওয়ার কথা ছিল। আমাদের যন্ত্রপাতি এতই অপরিপক্ব যে সেগুলো ব্যবহার করে শুধু বড়সড় ও দ্রুতবেগে চলমান বৃহস্পতি আকারের গ্রহ শনাক্ত করা যায়। কারণ, মাতৃ-নক্ষত্রের ওপর তাদের পরিমাপযোগ্য প্রভাব থাকে। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে বর্তমানের টেলিস্কোপগুলো দ্রুতবেগে চলমান দানবীয় গ্রহ শনাক্ত করতে পারে। মহাকাশে আমাদের সৌরজগতের মতো হুবহু কোনো যমজ সৌরজগৎ যদি থাকে, তাহলে তাদের খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের যন্ত্রপাতি এখনো স্কুল।

    কোরোট, কেপলার ও টেরেস্ট্রিয়াল প্ল্যানেট ফাইন্ডার চালু হওয়ার পর হয়তো একসময় এই সীমাবদ্ধতার বদল ঘটবে। এই তিনটি স্যাটেলাইট ডিজাইন করা হয়েছে মহাকাশে পৃথিবীর মতো শত শত গ্রহ খুঁজে বের করার জন্য। যেমন কোরোট আর কেপলার স্যাটেলাইট মাতৃ-নক্ষত্রে অস্পষ্ট ছায়া পরীক্ষা করে দেখবে। পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহ তার মাতৃ-নক্ষত্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো এই ছায়ার সৃষ্টি করে। ফলে ওই মাতৃ-নক্ষত্রের আলো কিছুটা কমে যায়। অন্য সৌরব্যবস্থায় থাকা পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহকে দেখা যায় না। কিন্তু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মাতৃ-নক্ষত্রের আলো কমে যাওয়া শনাক্ত করে এ ধরনের গ্রহ শনাক্ত করা যাবে।

    ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় ফ্রান্সের কোরোট (CoRoT) স্যাটেলাইট (ফরাসি ভাষায় Convection, Stellar Rotation ও Planetary Transits শব্দ তিনটি একত্র করে CoRoT শব্দটি গঠিত)। বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ অনুসন্ধানে একে এক মাইলফলক বলা যায়। কারণ, এটি ছিল প্রথম কোনো মহাকাশভিত্তিক অনুসন্ধানী নভোযান। এর মাধ্যমে পৃথিবীর মতো দেখতে ১০ থেকে ৪০টি গ্রহ খুঁজে পাওয়ার প্রত্যাশা করেন বিজ্ঞানীরা। সেটি করতে পারলে গ্রহগুলো হয়তো গ্যাসীয় দানব নয়, বরং রুক্ষ পর্বতময়ও হতে পারে। আবার হয়তো পৃথিবীর চেয়ে কয়েক গুণ বড়ও হতে পারে সেগুলো। এ ছাড়া বৃহস্পতি আকারের অনেকগুলো গ্রহও আবিষ্কার করে বসতে পারে কোরোট। জ্যোতির্বিদ ক্লদ কাতালা বলেন, ‘সব ধরনের আকার ও প্রকৃতির বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ খুঁজে বের করতে পারবে কোরোট। এ মুহূর্তে ভূপৃষ্ঠ থেকে আমরা যা করতে পারি না, সেটিই করতে পারবে এটি।’ এই স্যাটেলাইট ১ লাখ ২০ হাজার নক্ষত্র স্ক্যান করতে পারবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। [এ অধ্যায়ের শেষে এ-সম্পর্কিত টীকা দেখুন।—অনুবাদক]

    যেকোনো দিন মহাকাশে পৃথিবীর মতো গ্রহের প্রথম প্রমাণ হাজির করতে পারবে কোরোট। হয়তো জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেবে সেটি। ভবিষ্যতে মানুষ হয়তো রাতের আকাশে তাকিয়ে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে একটা ধাক্কা খাবে। একই সঙ্গে মহাকাশে বহুদূরের এলাকায় অগণিত গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনাও উপলব্ধি করতে পারবে তারা। ভবিষ্যতে আকাশের দিকে তাকিয়ে সুদূরের মহাকাশের ওপার থেকে আমাদের দিকে কেউ তাকিয়ে আছে কি না, একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাই ভাবব আমরা।

    এদিকে কেপলার স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণের তারিখ ২০০৮ সালের শেষের দিকে ঠিক করেছে নাসা। স্যাটেলাইটটি এতই সূক্ষ্ম যে তা দিয়ে মহাকাশে কয়েক শ পৃথিবীর আকারের মতো গ্রহ আবিষ্কার করার সম্ভাবনা রয়েছে। মহাকাশে এক লাখ নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা পরিমাপ করবে কেপলার। এর মাধ্যমে কোনো নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যেকোনো গ্রহের গতি শনাক্ত করতে পারবে এটি। চার বছরের নির্ধারিত মিশনে কেপলার পৃথিবী থেকে ১৯৫০ আলোকবর্ষের চেয়েও দূরের নক্ষত্রগুলো বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করবে। [এ অধ্যায়ের শেষে এ-সম্পর্কিত টীকা দেখুন।—অনুবাদক]

    কক্ষপথে উৎক্ষেপণের প্রথম বছরেই স্যাটেলাইটটি মোটামুটি নিম্নোক্ত আবিষ্কারগুলো করতে পারবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা :

    পৃথিবীর আকারের ৫০টি গ্রহ, পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বড় ১৮৫টি গ্রহ ও পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ২২ গুণ বড় ৬৪০টি গ্রহ।

    এদিকে টেরিস্ট্রিয়াল প্ল্যানেট ফাইন্ডারে হয়তো পৃথিবীর মতো আকারের গ্রহ খুঁজে পাওয়ার আরও বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক বছর বিলম্বের পর, স্যাটেলাইটটি ২০১৪ সালে উৎক্ষেপণের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। ৪৫ আলোকবর্ষ দূরের অন্তত ১০০টি নক্ষত্র নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করার কথা এর। দূরের গ্রহগুলো অনুসন্ধানের জন্য এতে দুটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো করোনাগ্রাফ। বিশেষ ধরনের টেলিস্কোপ এই করোনাগ্রাফ, যা দিয়ে মাতৃ-নক্ষত্র থেকে আসা সূর্যালোক ঢেকে দিয়ে তার আলো কয়েক বিলিয়ন ভাগ কমিয়ে আনা যাবে। টেলিস্কোপটি হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে চার গুণ বড় আর ১০ গুণ বেশি নিখুঁত। এই অনুসন্ধানী যানটির মধ্যে দ্বিতীয় যন্ত্রটির নাম ইন্টারফেরোমিটার। এই যন্ত্র দিয়ে আলো তরঙ্গের ব্যতিচার ব্যবহার করে মাতৃ-নক্ষত্র থেকে আসা আলো প্রায় ১ মিলিয়ন ভাগ রোধ করা যাবে।

    অন্যদিকে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইসা তাদের নিজেদের গ্রহ অনুসন্ধানী স্যাটেলাইট ডারউইন উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে। ২০১৫ বা তার পরে এটি কক্ষপথে উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে। এতে তিনটি স্পেস টেলিস্কোপ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ইসার, যার প্রতিটির ব্যাস হবে প্রায় ৩ মিটার। এগুলো একসঙ্গে একটি বড় ইন্টারফেরোমিটার হিসেবে কাজ করবে। এই মিশনেও মহাকাশে পৃথিবী আকৃতির গ্রহ শনাক্ত করা হবে।

    মহাকাশে কয়েক শ পৃথিবী আকৃতির গ্রহ শনাক্তের মাধ্যমে সেটি (SETI) উদ্যোগে মনোযোগ দিতে সহায়তা করতে পারে। কাছের নক্ষত্রগুলোতে এলোপাতাড়ি স্ক্যান করার বদলে জ্যোতির্বিদেরা তাদের উদ্যম ছোট্ট এক নক্ষত্রগুচ্ছের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করতে পারবেন। কে জানে, হয়তো সেগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর কোনো যমজ গ্ৰহ।

    তারা দেখতে কেমন হবে?

    এলিয়েন দেখতে কেমন হবে, তা অনুমান করতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান ব্যবহারের চেষ্টা করেন অনেক বিজ্ঞানী। যেমন আইজ্যাক নিউটন তাঁর চারপাশের জীবজন্তুর দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম অবস্থা (বা দুটি চোখ, দুটি হাত ও দুটি পা) খেয়াল করে খুব অবাক হয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই প্ৰশ্ন জাগে, এটা কি কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা, নাকি স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ?

    বর্তমানে জীববিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, প্রায় অর্ধবিলিয়ন বছর আগে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় প্রকৃতি ক্ষুদ্র গঠন আর ধরন নিয়ে নানা রকম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে। এখান থেকে বহুকোষী জীবজন্তুর আবির্ভাব হয় বলে ধারণা করা হয়। এদের অনেকের স্পাইনাল কর্ড বা সুষুম্না কাণ্ডের আকৃতি ছিল ইংরেজি এক্স, ওয়াই কিংবা জেডের মতো। অন্য অনেকের প্রতিসাম্যতা হয়েছিল স্টারফিশের মতো অরীয়। দুর্ঘটনাক্রমে এদের মধ্যে একটির সুষুম্না কাণ্ডের আকৃতি হয়েছিল ইংরেজি আইয়ের মতো। আর তার প্রতিসাম্যতা ছিল দ্বিপার্শ্বীয়। এরাই পৃথিবীর অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর পূর্বপুরুষ। কাজেই তাত্ত্বিকভাবে কোনো বুদ্ধিমান জীবের জন্য অপরিহার্যভাবে হিউম্যানয়েড বা মানুষের মতো আকৃতির দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম প্রয়োগ করা যায় না। অথচ মহাকাশের আগন্তুক বা এলিয়েন চিত্রায়িত করতে এ ধরনের আকৃতি ব্যবহার করে হলিউড।

    কিছু জীববিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় বিচিত্র ধরনের জীব আবির্ভাবের কারণ হলো শিকার ও শিকারির মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা। অন্য জীবকে গ্রাস করতে পারা প্রথম বহুকোষী জীবের আবির্ভাবে এই দুইয়ের মধ্যে বিবর্তনের গতি বাড়িয়ে দেয়। কারণ, এদের প্রত্যেকে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার মতো এখানেও প্রত্যেক পক্ষই অন্যকে ঠেলে এগিয়ে গিয়েছিল।

    এই গ্রহে প্রাণ কীভাবে আবির্ভূত হয়েছে, সেটি পরীক্ষা করে অনুমান করা যায়, পৃথিবীতে বুদ্ধিমান জীবের উদয় হয়েছে কীভাবে। বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে এসেছেন, বুদ্ধিমান জীবের জন্য সম্ভবত নিচের শর্তগুলো পূরণ হওয়া দরকার :

    ১. তার চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানার জন্য কোনো ধরনের দৃষ্টিশক্তি বা সংবেদশীল প্ৰক্ৰিয়া।

    ২. কোনো কিছু চাপ দেওয়ার জন্য বুড়ো আঙুলের মতো কিছু একটা। এটি কোনো কর্ষিকা বা নখও হতে পারে।

    ৩. কোনো ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা। যেমন ভাষা।

    আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে অনুভব করতে আর একে কাজে লাগাতে (দুটোই আসলে বুদ্ধিমত্তার নির্দেশক) ওপরের তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। তবে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য ছাড়িয়েও যেকোনো কিছু আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারে। টিভিতে এলিয়েনদের যেভাবে দেখানো হয়, আসলে বহিঃসৌরজাগতিক আগন্তুকেরা দেখতে মোটেও মানুষের মতো নয়। আমরা টিভি ও চলচ্চিত্রে শিশুর মতো, পতঙ্গের মতো চোখওয়ালা যেসব এলিয়েন দেখি, সেগুলো আসলে ১৯৫০-এর দশকের বি-গ্রেড চলচ্চিত্র থেকে আসা বলে মনে হয়। এগুলো আমাদের অবচেতনের মধ্যে দৃঢ়ভাবে ঢুকে গেছে।

    (তবে অদ্ভুত এক তথ্য ব্যাখ্যা করতে বুদ্ধিমান জীবের জন্য অনেক নৃতত্ত্ববিদ চতুর্থ আরেকটি মানদণ্ড যোগ করেন। তথ্যটি হলো মানবজাতি বনে-জঙ্গলে টিকে থাকতে হলে যেমন বুদ্ধিমান হওয়ার কথা ছিল, তারা আসলে তার চেয়েও অনেক বেশি বুদ্ধিমান। আমাদের মস্তিষ্ক মহাকাশ ভ্রমণ, কোয়ান্টাম তত্ত্ব আর উচ্চতর গণিত রপ্ত করতে পারে। অথচ জঙ্গলে শিকার করা ও চরে খাওয়ার জন্য এসব দক্ষতা একদম অপ্রয়োজনীয়। তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের এত ক্ষমতা কেন? প্রকৃতিতে আমরা যখন চিতা ও অ্যান্টিলোপের মতো প্রাণীদের জোড়া দেখতে পাই, যারা টিকে থাকার জন্য এসবের বাইরে অসাধারণ দক্ষতার অধিকারী, তখন আমরা দেখতে পাই, তাদের মধ্যে একধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। একইভাবে অনেক বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, এখানেও চতুর্থ আরেকটি মানদণ্ড রয়েছে, সেটি হলো জৈবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যা মানুষকে বুদ্ধিমত্তার দিকে এগিয়ে দিয়েছে। হয়তো এই অস্ত্র প্রতিযোগিতাটি ছিল আমাদের নিজেদের প্রজাতির অন্য সদস্যদের সঙ্গে। )

    পৃথিবীর অসাধারণ বৈচিত্র্যময় জীবগুলোর কথা একবার ভাবুন। উদাহরণস্বরূপ, এদের কোনোটি যদি কয়েক লাখ বছরের জন্য নির্বাচিতভাবে অক্টোপড বা আট পা-ওয়ালা বাচ্চা জন্ম দিতে পারত, তাহলে ধারণা করা যায়, তারা বুদ্ধিমান জীবও হয়ে উঠতে পারবে। (৬০ লাখ বছর আগে আমরা এপস থেকে আলাদা হয়ে গেছি। কারণ, সম্ভবত আমরা আফ্রিকার ক্রমেই বদলে যেতে থাকা আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারিনি। অন্যদিকে অক্টোপাসরা পাথরের নিচে তাদের জীবনযাপনকে বেশ ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে। সে জন্য তারা কয়েক লাখ বছর বিবর্তিত হয়নি।) বায়োকেমিস্ট ক্লিফোর্ড পিকওভার বলেন, ‘আমি যখন অদ্ভুত দেখতে ক্রাস্টেশিয়ান বা খোলসযুক্ত প্রাণী, শোষক-কর্ষিকাযুক্ত জেলিফিশ, অদ্ভুতুড়ে উভলিঙ্গ কেঁচো আর স্লাইম মোন্ডের দিকে তাকাই, তখন আমি জানি ঈশ্বরেরও কৌতুকবোধ আছে। সেটি মহাবিশ্বের অন্য রূপগুলোতে আমরা প্রতিফলিত হতে দেখতে পাব।’

    হলিউড বুদ্ধিমান এলিয়েন জীবকে যখন মাংসাশী হিসেবে চিত্রায়িত করে, সম্ভবত তখন তারা তা সঠিকভাবে বুঝতে পারে। শুধু মাংসখেকো এলিয়েন বক্স অফিসে বড় সফলতার গ্যারান্টি দেয় না, সেই সঙ্গে সেখানে সেটি চিত্রায়ণের সত্যতার উপাদানও থাকতে হয়। সাধারণত শিকারিরা তাদের শিকারের চেয়ে চৌকস হয়। শিকার ধরতে শিকারিরা চতুরভাবে পরিকল্পনা করে, গুটি গুটি পায়ে চলে, লুকিয়ে থাকে ও শিকারকে হঠাৎ আক্রমণও করে বসে। শেয়াল, কুকুর, বাঘ ও সিংহের চোখ তাদের মুখের সামনে থাকে। এর মাধ্যমে তারা শিকারকে ছোঁ মেরে ধরার জন্য মাঝখানের পৌঁছানোর দূরত্ব কতটুকু, তা বুঝতে পারে। দুটি চোখ দিয়ে তারা ত্রিমাত্রিক স্টিরিও-ভিশন ব্যবহার করে শিকারকে লক করতে পারে। অন্যদিকে হরিণ ও খরগোশের মতো শিকারেরা জানে কীভাবে দৌড়াতে হবে। তাদের চোখগুলো থাকে মুখের দুপাশে। এর মাধ্যমে চারপাশে শিকারিকে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে স্ক্যান করতে পারে তারা।

    অন্য কথায়, মহাকাশে বুদ্ধিমান জীব হয়তো শিকারির মুখের সামনে চোখ বা অন্য কোনো সংবেদি অঙ্গ থেকে আরও ভালোভাবে বিবর্তিত হয়ে থাকতে পারে। তারা হয়তো কোনো মাংসাশী, আগ্রাসী ও আঞ্চলিক আচরণের অধিকারী, যেগুলো আমরা নেকড়ে, সিংহ ও পৃথিবীর মানুষের মধ্যে দেখতে পাই। (তবে এ ধরনের জীব যেহেতু পুরোপুরি অন্য ধরনের ডিএনএ ও প্রোটিন অণুনির্ভর, তাই আমাদের খাওয়ার ব্যাপারে কিংবা যৌন সম্পর্ক স্থাপনে তাদের কোনো আগ্রহ না-ও থাকতে পারে।)

    পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে তাদের দেহের আকার কেমন হতে পারে, তা অনুমান করা যায়। ধরে নিই, তারা পৃথিবীর মতো আকারের গ্রহে বাস করে। তাদের গ্রহেও মোটামুটি একই ঘনত্বের পানি আছে। তাহলে স্কেল ল অনুযায়ী, বিশাল আকারের জীব সেখানে আবির্ভাব হওয়া সম্ভব নয়। এই সূত্র অনুযায়ী, কোনো বস্তুর মাপনি বাড়ালে পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলো ব্যাপকভাবে বদলে যাবে।

    দানব আর স্কেল ল

    কিং কংয়ের কোনো অস্তিত্ব যদি সত্যিই থাকত, তাহলে জন্তুটি নিউইয়র্ক শহরে সন্ত্রাস চালিয়ে যেতে পারত না। কারণ, মাত্র এক কদম হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে তার পা ভেঙে যেত। কারণ, কোনো বানরের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ বাড়ানো হলে তার ওজন বাড়বে তার আয়তনের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ তার ওজন বাড়বে ১০x১০x১০=১০০০ গুণ। তাই এতে সে ১০০০ গুণ বেশি ভারী হবে। কিন্তু তার শক্তি বাড়বে তার হাড় ও পেশির পুরুত্বের সাপেক্ষে। তার হাত ও পেশির আড়াআড়ি এলাকা শুধু ওই দূরত্বের বর্গ হিসেবে বাড়বে, বা ১০x১০=১০০ গুণ। অন্য কথায়, কিং কং ১০ গুণ বড় হলে তার শক্তি ১০০ গুণ বাড়বে, কিন্তু ওজন বাড়বে ১০০০ গুণ। কাজেই বানরজাতীয় প্রাণীদের আকার বাড়াতে থাকলে শক্তির চেয়ে তার ওজন অনেক গুণ বেশি বেড়ে যাবে। এর মানে হলো, স্বাভাবিক এপের তুলনায় ১০ ভাগ দুর্বল হয়ে যাবে ওই প্রাণীটি। সে কারণেই তার পা মট করে ভেঙে যাবে।

    আমার বেশ মনে আছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষক পিঁপড়ার শক্তিমত্তা নিয়ে অবাক হতেন। একটা পিঁপড়া তার ওজনের চেয়ে অনেক গুণ বেশি ওজন বহন করতে পারে। আমার শিক্ষক এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলেন, একটা পিঁপড়া যদি একটা বাড়ির সমান বড় হয়, তাহলে সে ওই বাড়িটাও ওপরে তুলতে পারবে। কিন্তু কিং কং নিয়ে এইমাত্র আমরা বুঝতে পারলাম, সেই একই কারণে তার এই অনুমান সঠিক নয়। কোনো পিঁপড়া একটি বাড়ির সমান আকারের হলে তার পা ভেঙে যাবে। কারণ, কোনো পিঁপড়া ১০০০ গুণ বড় করলে সাধারণ পিঁপড়ার তুলনায় ১০০০ গুণ দুর্বল হয়ে যাবে। সে কারণে তার নিজের ওজনের ভারে সে ভেঙে যাবে। (আবার পিঁপড়াটি শ্বাসরোধ হয়েও মারা যেতে পারে। পিঁপড়া তার দেহের বিভিন্ন পাশের ছিদ্রের মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। এই ছিদ্রগুলোর ক্ষেত্রফল তাদের ব্যাসার্ধের বর্গের আকারের হারে বাড়ে। কিন্তু পিঁপড়াটির আয়তন বাড়ে ওই ব্যাসার্ধের ঘনক আকারে। কাজেই এতে একটি পিঁপড়ার দেহের কোষগুচ্ছ ও পেশিতে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয় জোগানের জন্য সাধারণ কোনো পিঁপড়ার চেয়ে ১০০০ গুণ কম বাতাস পাবে। একই কারণে চ্যাম্পিয়ন ফিগারের স্কেটার ও জিমন্যাস্টদের গড়পড়তার চেয়ে অনেক ছোট হন, যদিও অন্যদের মতো তাদের অনুপাতও একই রকম। ভারোত্তোলনের ক্ষেত্রেও লম্বা মানুষদের তুলনায় তাদের পেশির শক্তি আনুপাতিকভাবে অনেক বেশি।)

    স্কেল ল ব্যবহার করে আমরা পৃথিবীর জীবজন্তুর ও মহাকাশের সম্ভাব্য এলিয়েনদের মোটামুটি আকার গণনা করতে পারি। কোনো জন্তুর পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার থেকে নিঃসৃত তাপও বাড়ে। কাজেই জন্তুটির আকৃতি ১০ গুণ বাড়লে তার তাপ হারানোর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ১০x১০=১০০। কিন্তু তার দেহে থাকা তাপের পরিমাণ হবে তার আয়তনের সমানুপাতিক বা ১০x১০x১০=১০০০। কাজেই ছোট জীবের তুলনায় বড় জীব অনেক ধীরে তাপ হারাবে। (এ কারণে শীতকালে আমাদের আঙুল ও কানগুলো অন্য অঙ্গগুলোর আগে জমে যায়। কারণ, এগুলোর আপেক্ষিক পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সবচেয়ে বেশি। একই কারণে ছোট মানুষ, বড় মানুষের তুলনায় দ্রুত ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়। খবরের কাগজ অতি দ্রুত পুড়ে যাওয়ার এটাই ব্যাখ্যা। তাদের তুলনামূলক পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল কম হওয়ার জন্য এটি ঘটে।) আবার এটি ব্যাখ্যা করে, মেরু অঞ্চলের তিমিদের আকৃতি কেন গোলাকার। কারণ, গোলাকৃতি কোনো কিছুর প্রতি একক ভরের সাপেক্ষে সম্ভাব্য পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সবচেয়ে কম। একই কারণে উষ্ণ পরিবেশে পোকামাকড়দের আকৃতি পাতলা হতে দেখা যায়। তাদের প্রতি একক ভরের বিপরীতে পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল তুলনামূলকভাবে বেশি।

    ডিজনির নির্মিত মুভি হানি, আই শাঙ্ক দ্য কিডসতে একটি পরিবারের সদস্যরা কুঁচকে পিঁপড়ার আকৃতিতে পরিণত হয়। ঝড়বৃষ্টির সময় ও অতি ক্ষুদ্র জগতে আমরা বৃষ্টির ফোঁটা খানাখন্দে পড়তে দেখি। পিঁপড়াদের জগতে বৃষ্টির ফোঁটা বাস্তবে অতি ক্ষুদ্র বিন্দু নয়, বরং পানির বিশাল স্তূপের মতো। আমাদের জগতে পানির স্তূপ অস্থিতিশীল ও মহাকর্ষের কারণে তার নিজের ওজনের ভারে চুপসে যায়। কিন্তু অতি ক্ষুদ্র জগতে পৃষ্ঠটান তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সে জন্য পানির স্তূপ সেখানে নিখুঁতভাবে স্থিতিশীল থাকে।

    একইভাবে বাইরের মহাকাশে দূরের গ্রহগুলোতে পদার্থবিদ্যার সূত্র কাজে লাগিয়ে জীবজন্তুর মোটামুটি পৃষ্ঠতল ও আয়তনের অনুপাত হিসাব করা যায়। এসব সূত্র ব্যবহার করে তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়, বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে মহাকাশের এলিয়েনদের দানব হিসেবে চিত্রায়িত করা হলেও তাদের আকৃতি আসলে অনেকটা আমাদের মতোই। (সাগরের পানিতে প্লবতার কারণে তিমি আকৃতিতে অনেক বড় হতে পারে। এটি ব্যাখ্যা করে সাগরতীরে তিমি মারা যায় কেন। কারণ, তিমি তার নিজের ওজনের ভারে থেঁতলে যায়।)

    স্কেল ল-এর অর্থ হলো, যতই অতি ক্ষুদ্র জগতের গভীর থেকে আরও গভীরে ঢুকব, পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো তত বদলে যাবে। কোয়ান্টাম তত্ত্ব এতটা অদ্ভুতুড়ে কেন এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান কেন এটি লঙ্ঘন করে, সেসবের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এতে। তাই স্কেল ল বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে দেখানো বিশ্বের ভেতরে বিশ্বের সেই সুপরিচিত ধারণা বাতিল করে। অর্থাৎ পরমাণুর ভেতরে গোটা মহাবিশ্ব থাকতে পারে, এই ধারণা কিংবা অন্য বিশাল মহাবিশ্বের ভেতরে আমাদের মহাবিশ্বটি একটি পরমাণুর মতো—এই ধারণা বাতিল করে দেয় স্কেল ল। মেন ইন ব্ল্যাক মুভিতে এই ধারণার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মুভিটির শেষ দৃশ্যে ক্যামেরাটি পৃথিবী, অন্য সব গ্রহ, নক্ষত্র আর গ্যালাক্সিগুলো ছেড়ে দূরে সরে যেতে থাকে। এভাবে আমাদের পুরো মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে চলে গিয়ে মহাবিশ্বটি শুধু একটি বলের আকৃতিতে পরিণত হয়। সেটি বিপুল আকারের এলিয়েনদের বিশাল বহির্জাগতিক একটি খেলার অংশ।

    প্রকৃতপক্ষে নক্ষত্রদের বা কোনো গ্যালাক্সির সঙ্গে পরমাণুর মিল নেই। পরমাণুর ভেতরে বিভিন্ন স্তরে থাকা ইলেকট্রনগুলো গ্রহদের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। আমরা জানি, সবগুলো গ্রহ পরস্পরের থেকে একেবারে আলাদা আর তার মাতৃ-নক্ষত্রের চারপাশে যেকোনো দূরত্বে থেকে ঘুরতে পারে। অন্যদিকে পরমাণুতে অতিপারমাণবিক কণাগুলোর সবাই পরস্পরের মতো। তারা পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে যেকোনো দূরত্বে অবস্থান করতে পারে না। (আবার গ্রহের বিপরীতে ইলেকট্রনগুলো অদ্ভুত সব আচরণ দেখায়, যা আমাদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান অমান্য করে। যেমন তারা একই সময়ে দুটি ভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে ও তরঙ্গের মতো আচরণ করতে পারে।)

    উন্নত সভ্যতার পদার্থবিজ্ঞান

    মহাকাশে সম্ভাব্য সভ্যতাগুলোর রূপরেখা কেমন হতে পারে, পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে তা কল্পনা করা সম্ভব। যদি গত এক লাখ বছরে আফ্রিকা থেকে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের পর থেকে আমাদের সভ্যতার গড়ে ওঠার দিকে খেয়াল করি, তাহলে একে শক্তির ব্যবহার বা খরচের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এক কাহিনি হিসেবেও দেখা সম্ভব। রুশ জ্যোতিঃপদার্থবিদ নিকোলাই কার্দাশেভ অনুমান করেছেন, মহাবিশ্বে বহির্জাগতিক সভ্যতা গড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্বও শক্তির খরচের ওপর ভিত্তি করে ভাগ করা যায়। পদার্থবিদ্যার সূত্র ব্যবহার করে তিনি সম্ভাব্য সভ্যতাকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন :

    ১. টাইপ-১ সভ্যতা : নিজেদের গ্রহের সব শক্তি সংগ্রহ করতে পারে এ সভ্যতা। আবার তাদের গ্রহে আসা সব সূর্যালোকও ব্যবহার করতে পারে। তারা হয়তো আগ্নেয়গিরির শক্তির ব্যবহারের পদ্ধতিও জেনে থাকতে পারে। এমনকি নিজেদের গ্রহের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, ভূমিকম্প নিয়ন্ত্রণ আর মহাসাগরে শহর নির্মাণ করতে পারে। মোট কথা, গ্রহের সব শক্তি তাদের হাতের মুঠোয়।

    ২. টাইপ-২ সভ্যতা: যারা তাদের সূর্যের পুরো শক্তি ব্যবহার করতে জানে। এর মাধ্যমে এরা টাইপ-১ সভ্যতার চেয়েও ১০ বিলিয়ন গুণ বেশি ক্ষমতাধর। স্টার ট্রেক সিনেমায় দেখানো দ্য ফেডারেশন অব প্ল্যানেট টাইপ- ২ ধরনের সভ্যতা। এক হিসাবে টাইপ-২ সভ্যতা অমর। কারণ, বিজ্ঞানের জানা কোনো কিছুই (যেমন বরফযুগ, উল্কার আঘাত কিংবা কোনো সুপারনোভা) তাদের ধ্বংস করতে পারবে না। (তাদের মাতৃ-নক্ষত্র কোনো কারণে বিস্ফোরণের মুখে পড়লে তারা অন্য কোনো নক্ষত্র ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হতে পারে, কিংবা তাদের নিজেদের গ্রহটাও হয়তো সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।)

    ৩. টাইপ-৩ সভ্যতা : পুরো ছায়াপথের সব শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে এই সভ্যতা। টাইপ-২ সভ্যতার চেয়ে এরা ১০ বিলিয়ন গুণ বেশি ক্ষমতাধর। স্টার ট্রেক সিনেমায় ব্রগরা, স্টার ওয়ার্সে এম্পায়ার এবং আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজে গ্যালাকটিক সিভিলাইজেশন টাইপ-৩ সভ্যতা। তারা কোটি কোটি নক্ষত্র সিস্টেমে বসতি স্থাপন করতে পারে।

    আবার নিজেদের ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহ্বরের শক্তি ব্যবহার করতে পারে এ সভ্যতা। তারা অবাধে তাদের গ্যালাক্সির এখানে-ওখানে যাতায়াত করতে পারে।

    কার্দাশেভ হিসাব করে দেখেছেন, শক্তি খরচের ক্ষেত্রে প্রতিবছর কয়েক শতাংশ পরিমিত হারে বেড়ে ওঠা যেকোনো সভ্যতা টাইপ-১ থেকে দ্রুতগতিতে পরের ধাপে এগিয়ে যাবে। এটা কয়েক হাজার বছর থেকে ১০ হাজার বছরের মধ্যে ঘটতে পারে।

    আমার লেখা আগের বইয়ে বলেছি, আমাদের নিজেদের সভ্যতা টাইপ ০ (শূন্য) পর্যায়ের (যেমন যন্ত্র চালানোর জন্য আমরা এখনো মৃত উদ্ভিদ, তেল ও কয়লা ব্যবহার করি)। সূর্যের মোট শক্তির মাত্র ক্ষুদ্র এক ভগ্নাংশ আমরা ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখি। কিন্তু আমরা এরই মধ্যে পৃথিবীতে টাইপ-১ ধরনের সভ্যতার সূচনা পর্ব দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ইন্টারনেট হলো টাইপ- ১ টেলিফোন সিস্টেমের সূচনাপর্ব, যা পুরো পৃথিবীকে সংযুক্ত করেছে। টাইপ- ১ অর্থনীতির সূচনা দেখা যেতে পারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে, যার ফলে নাফটার (NAFTA) সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ইংরেজি ভাষা এরই মধ্যে পৃথিবীতে মাতৃভাষার পর অন্যতম দ্বিতীয় ভাষায় পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান, আর্থিক লেনদেন ও বাণিজ্যের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইংরেজি ভাষা। আমার ধারণা, এটি টাইপ-১ ভাষায় পরিণত হয়ে উঠতে পারে,

    যা দিয়ে ভবিষ্যতে ভার্চুয়ালি সবাই কথা বলবে। পৃথিবীর হাজারো বৈচিত্র্যের মধ্যে স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু বিচিত্র সব মানুষের ওপর অতিমাত্রায় আরোপ করতে দেখা যাবে প্ল্যানেটারি কালচার। এটা তরুণ সংস্কৃতি ও বাণিজ্যিকতা দিয়েও প্রভাবিত হয়ে উঠতে পারে।

    একধরনের সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতার মধ্যবর্তী সন্ধিকালের নিশ্চয়তা এখনো অনেক দূরে। তবে টাইপ-০ থেকে টাইপ-১ সভ্যতার

    ভেতরের সন্ধিকাল হয়তো খুবই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। টাইপ শূন্য সভ্যতা এখনো সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ আর বর্ণবাদের মতো ধ্বংসলীলা চলছে, যা তার উত্থানকে চিহ্নিত করতে পারে। আবার এসব গোত্রীয় ও ধর্মীয় উন্মাদনা এই সন্ধিকালকে গ্রাস করবে কি না, তা-ও এখনো নিশ্চিত নয়। (হয়তো আমাদের ছায়াপথে এখনো কোনো টাইপ-১ সভ্যতা দেখতে না পাওয়ার কারণ হতে পারে, কেউই এই সন্ধিকাল পার হতে পারেনি। মানে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে ফেলেছে। কোনো দিন আমাদের সৌরজগতে ঘুরতে বেরিয়ে আমরা হয়তো বিভিন্ন সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করে বসব। তারা হয়তো নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে ফেলেছে। তাদের বায়ুমণ্ডল হয়তো তেজস্ক্রিয় বা খুবই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, যা প্ৰাণ বেঁচে থাকার জন্য একেবারে অনুপযোগী। )

    যে সভ্যতা টাইপ-৩ পর্যায়ে পৌঁছাবে, পুরো ছায়াপথে অবাধে চলাচলের মতো শক্তি আছে তাদের। তারা জানে কীভাবে পুরো ছায়াপথে অবাধে চলতে হয়। ইচ্ছা করলে তারা হয়তো পৃথিবীতেও পৌঁছাতে পারবে। ২০০১ সালে নির্মিত একটি সিনেমার মতো, এমন সভ্যতা হয় স্বপ্রতিলিপি তৈরি করতে পারা রোবট পাঠাতে পারে, যারা গ্যালাক্সিজুড়ে বুদ্ধিমান প্রাণের অনুসন্ধান চালাতে পারবে।

    তবে টাইপ-৩ সভ্যতা হয়তো ইনডিপেনডেন্ট ডে মুভিতে দেখানো এলিয়েনদের মতো নয়। তারা হয়তো আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বা আমাদের ওপর বিজয় অর্জন করতে চায় না। এ সিনেমায় দেখানো সভ্যতা পঙ্গপালের মতো ছড়িয়ে পড়ে, দঙ্গল বেঁধে গ্রহগুলো ঘিরে ফেলে তাদের সম্পদ শুষে নেয়। বাস্তবে বাইরের মহাকাশে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদসংবলিত অসংখ্য মৃত গ্রহ থাকতে পারে। সেখানকার অস্থিরমতি আদিবাসী জনগণের সঙ্গে কোনো বোকার মতো যুদ্ধ না করেই সেখান থেকে এসব সম্পদ সংগ্রহ করা যায়। আমাদের সঙ্গে তাদের আচরণ পিঁপড়ার ঢিবির সঙ্গে আমাদের আচরণের মতোই হতে পারে। আমরা পিঁপড়াদের কাছে নত হতে চাই না এবং তাদের প্রতি যত্নবানও হতে চাই না, শুধু তাদের উপেক্ষা করতে চাই।

    মানুষ যে পিঁপড়াদের আক্রমণ করতে বা নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চায়, এটাই তাদের সবচেয়ে বড় বিপদ নয়। বরং আমরা তাদের ওপর দিয়ে পথ বানিয়ে চলতে চাই, কারণ তারা আমাদের পথের মধ্যেই থাকে। মনে রাখা দরকার, শক্তি খরচ করার ভিত্তিতে টাইপ-২ সভ্যতা আর আমাদের নিজেদের টাইপ-০ সভ্যতার মধ্যে যে দূরত্ব, আমাদের আর পিঁপড়াদের মধ্যেও সেই একই দূরত্ব।

    ইউএফও

    অনেকেই দাবি করে, বহির্জাগতিক জীব ইউএফওতে চড়ে এরই মধ্যে পৃথিবী ঘুরে দেখে গেছে। কিন্তু ইউএফওর কথা শুনলেই বিজ্ঞানীরা সাধারণত চোখ পাকিয়ে এর সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। কারণ, একেকটি নক্ষত্র পরস্পর থেকে বহু দূরে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এমন প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর ইউএফও দেখার দাবি কমেনি এক রত্তিও।

    ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ইউএফও দেখার দাবি অনেক পুরোনো। লিখিত ইতিহাসের শুরুর দিকে এ রকম দাবি দেখা যায়। বাইবেলে এজকেইল নবী রহস্যজনকভাবে আকাশে চক্রের মধ্যে চক্র আছে বলে উল্লেখ করেছেন। একে অনেকেই ইউএফওর কথা বলা হয়েছে বলে বিশ্বাস করে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৫০ সালে মিসরে ফেরাউন তৃতীয় থুতমোসের রাজত্বকালে, সূর্যের চেয়েও উজ্জ্বল ৫ মিটার আকারের এক আগুনের বৃত্তের সঙ্গে সম্পর্কিত এক ঘটনার কথা লিখে রেখেছে মিসরীয়রা। এই বৃত্ত বেশ কয়েক দিন দেখা গিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তা আকাশে উঠে চলে যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ‘৯১ সালে রোমান লেখক জুলিয়াস অবসেকুয়েনস গোলাকার এক বস্তু সম্পর্কে লিখেছেন। সেটি গোলাকার বা বৃত্তাকার ঢালের মতো, যা আকাশে যাচ্ছিল। ১২৩৫ সালে জেনারেল ইউরিটসুম ও তাঁর সেনাবাহিনী অদ্ভুত এক আলোর গোলক দেখে, যেটি জাপানের কিউটোর আকাশে নেচে বেড়াচ্ছিল। ১৫৬১ সালে জার্মানির নুরেমবার্গ থেকে অনেকগুলো বস্তু দেখা যায়, যেন তারা কোনো বিমানযুদ্ধে শামিল হয়েছে।

    অতিসম্প্রতি ইউএফও দেখা নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা চালিয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনী। ১৯৫২ সালে মার্কিন বিমানবাহিনী প্রজেক্ট ব্লু বুক চালু করে যেখানে ইউএফও দেখার মোট ১২ হাজার ৬১৮টি ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এই উপসংহার টানা হয়েছে যে ইউএফও দেখার অধিকাংশ ঘটনা প্রাকৃতিক কোনো ঘটনা, প্রচলিত বিমান কিংবা ধাপ্পাবাজি হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। তবে এর মধ্যে প্রায় ৬ শতাংশকে অজানা কোনো কারণে সংঘটিত হিসেবে গোপন রাখা হয়েছে। তবে কনডন রিপোর্টের উপসংহারে বলা হয়, এ ধরনের গবেষণার কোনো মূল্য নেই। ফলে ১৯৬৯ সালে প্রজেক্ট ব্লু বুক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইউএফও নিয়ে এটাই ছিল মার্কিন বিমানবাহিনীর পরিচালিত বড় পরিসরের সর্বশেষ গবেষণা।

    ২০০৭ সালে ইউএফও-সংক্রান্ত বিপুল নথিপত্র জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় ফরাসি সরকার। ওই প্রতিবেদন ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পেস স্টাডিজ ইন্টারনেটে সহজলভ্য করে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ৫০ বছর ধরে ১৬০০ ইউএফও দেখার ঘটনা। ইউএফএ প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া ১ লাখ পৃষ্ঠার বিবরণ, ফিল্ম ও অডিওটেপও রয়েছে এতে। ফরাসি সরকারের মতে, এসব দাবির ৯ শতাংশকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায়, ৩৩ শতাংশের সম্ভবত অন্য কোনো ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু বাকিগুলোর কোনো ব্যাখ্যা নেই।

    এসব দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে দেখা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। আসলে ইউএফও-সংক্রান্ত বেশির ভাগ রিপোর্ট সতর্কভাবে বিশ্লেষণ করলে তা নিচের ফলাফল হিসেবে বাতিল করে দেওয়া যায় :

    ১. শুক্র গ্রহ, যা চাঁদের পর রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। পৃথিবী থেকে বিপুল দূরত্ব হওয়ার কারণে এ গ্রহটি আপনার চলন্ত গাড়ির সঙ্গে আপনাকে অনুসরণ করছে বলে মনে হয়। চাঁদ যেভাবে আপনাকে অনুসরণ করে বলে মনে হয়, এ গ্রহ নিয়েও একই ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়। কোনো চলন্ত বস্তুর চারপাশের বস্তুর সঙ্গে তুলনা করে আমরা দূরত্ব বিচার করি। চাঁদ ও শুক্র গ্রহ আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে। আবার তাদের তুলনা করার মতো তাদের আশপাশে কিছু নেই। সে কারণে তাদের চারপাশের কোনো বস্তু সাপেক্ষে তারা চলে না। এর ফলে আমাদের এই বিভ্রম তৈরি হয় যেন তারা বুঝি আমাদের অনুসরণ করছে।

    ২. জলাভূমির গ্যাস। কোনো জলাভূমি এলাকায় তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি সেখানকার গ্যাস মাটি থেকে ওপরে ভাসতে থাকে এবং তা সামান্য জ্বলজ্বল করতে পারে। আবার সেখানে একটি বড় ধরনের গ্যাসের প্যাকেট থেকে ছোট গ্যাসের প্যাকেট আলাদা হয়ে থাকতে পারে। তাতে মনে হতে পারে, কোনো মাদার শিপ থেকে ছোট ছোট স্কাউট শিপ বেরিয়ে আসছে।

    ৩. উল্কাপাত। উজ্জ্বল কোনো আলোর আঁকাবাঁকা রেখা রাতের আকাশে চোখের পলকে চলে যেতে পারে। এতে কোনো নভোযান উড়ে গেছে বলে বিভ্রান্তি তৈরির আশঙ্কা থাকে। এই আলোগুলো ভেঙেও যেতে পারে, তাতে আবারও বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে যেন মাদার শিপ থেকে কোনো স্কাউট শিপ বেরিয়ে গেল।

    ৪. বায়ুমণ্ডলীয় বিশৃঙ্খলা। বজ্রপাত ও অস্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় কোনো ঘটনা অদ্ভুত কোনো বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। ইউএফও দেখার বিভ্রান্তিও তৈরি করতে পারে এতে।

    অন্যদিকে বিশ শতক আর একবিংশ শতকে নিচের ঘটনাগুলোও ইউএফও দেখার বিভ্রান্তি তৈরির পেছনের কারণ হতে পারে :

    ১. রাডারের প্রতিধ্বনি। রাডারের তরঙ্গ পাহাড়-পর্বতে বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনিত হয়। এটি রাডার মনিটরে দেখা যেতে পারে। এই তরঙ্গগুলো আঁকাবাঁকা হয়ে দেখা যায় এবং রাডার স্ক্রিনে বিপুল বেগে উড়ে চলছে বলে দেখা যায়। কারণ, এগুলো আসলে প্ৰতিধ্বনি।

    ২. আবহাওয়া ও গবেষণা বেলুন। এক বিতর্কিত রিপোর্টে সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ১৯৪৭ সালে নিউ মেক্সিকোর রসওয়েলে সুপরিচিত এলিয়েন বিধ্বংস্ত হওয়ার যে গুজব প্রচলিত আছে, তার পেছনের কারণ ছিল প্রজেক্ট মোগুল থেকে একটি অনিয়ন্ত্রিত বেলুন। প্রজেক্ট মোগুল ছিল কোনো কারণে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধলে বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষা করার অতি গোপন এক প্রজেক্ট।

    ৩. বিমান। বাণিজ্যিক ও সামরিক বিমানের কারণেও ইউএফও দেখাসংক্রান্ত ঘটনা শুরু হয়েছিল জানা যায়। স্টিলথ বোম্বারের মতো উন্নত কোনো বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে সত্য। অতি গোপন কোনো প্রজেক্ট থেকে সবার নজর সরিয়ে রাখতে মার্কিন সেনাবাহিনী আসলে ফ্লাইং সসার বা উড়ন্ত চাকতির কাহিনিতে উৎসাহ জোগায়। )

    ৪. ইচ্ছাকৃত ধাপ্পাবাজি। ফ্লাইং সসারের ছবি তোলার দাবি করা সবচেয়ে বিখ্যাত ছবিগুলো আসলে ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। সুপরিচিত একটি ছবি ফ্লাইং সসারের জানালা ও ল্যান্ডিং পড় বলে দাবি করা ছবিটি আসলে ছিল চিকেন ফিডার।

    .

    অন্তত ৯৫ শতাংশ ইউএফও দেখার দাবি ওপরের কারণগুলোর মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া যায়। তবে বাকি অল্প কয়েকটির ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন তৈরি করে যেগুলো অব্যাখ্যাত। ইউএফও-সংক্রান্ত সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ঘটনাগুলো (ক নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য প্রত্যক্ষদর্শীর ক্ষেত্রে অনেকবার ঘটেছে এবং (খ) সেগুলোর জন্য প্রত্যক্ষদর্শী ও রাডারের মতো বিভিন্ন উৎসের প্রমাণ রয়েছে। এ ধরনের রিপোর্ট বাতিল করে দেওয়া কঠিন। কারণ, এতে নিরপেক্ষ লোকদের বরাত রয়েছে। যেমন ১৯৮৬ সালে আলাস্কার আকাশে জেএএল ফ্লাইট ১৬২৮ একটি ইউএফও দেখার দাবি করেছিল। এটি তদন্ত করেছিল এফএএ। জেএএল ফ্লাইটের যাত্রীরা ইউএফওটি দেখেছিল। ভূমিতে থাকা রাডারেও শনাক্ত করা হয় সেটি। একইভাবে, ১৯৮৯-৯০ সালের দিকে বেলজিয়ামের আকাশে কালো ত্রিভুজ অনেকগুলো রাডারে ধরা পড়ে, যেটি ন্যাটো ও জেট ইন্টারসেপ্টর দিয়ে ট্র্যাক করা হয়। ১৯৭৬ সালে ইরানের তেহরান শহরের আকাশে আরেকটি ইউএফও দেখার ঘটনা ঘটে। এর কারণে একটি এফ-৪ জেট ইন্টারসেপ্টরে একাধিক সিস্টেম ফেইলর হয়। সিআইএর নথিতে এ রকম ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

    বিজ্ঞানীদের কাছে সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার হলো, রেকর্ডকৃত হাজার হাজার সাক্ষ্যের মধ্যে কোনোটাই এমন কোনো বাস্তব বা ভৌত কোনো প্রমাণ তৈরি করতে পারেনি, যার মাধ্যমে গবেষণাগারে ওই ঘটনাগুলোর ফলাফল নতুন করে তৈরি করা যায়। এলিয়েন কোনো ডিএনএ, এলিয়েনদের কম্পিউটার চিপ কিংবা মর্ত্যে নেমে আসা কোনো এলিয়েনের দৈহিক প্রমাণও কখনো উদ্ধার করা যায়নি।

    এক মুহূর্তের জন্য ভাবা যাক, এ ধরনের ইউএফওগুলো কোনো বিভ্ৰান্তি নয়, বরং তারা বাস্তব নভোযান। তাহলে আমরা নিজেদের প্রশ্ন করতে পারি, এগুলো আসলে কী রকম নভোযান। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ সম্পর্কে যা জানিয়েছে, তাতে নভোযানগুলোর চরিত্র নিচের মতো :

    ১. তারা মধ্য আকাশে আঁকাবাঁকা পথ তৈরি করার জন্য পরিচিত।

    ২. এগুলো পাশ দিয়ে গেলে গাড়ির ইগনিশন বন্ধ করে দেয় ও বৈদ্যুতিক শক্তিতে বাধা সৃষ্টি করে।

    ৩. এগুলো আকাশে নিঃশব্দে ঝুলে থাকতে পারে।

    এর মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্যই পৃথিবীতে আমাদের তৈরি রকেটের বিবরণের সঙ্গে মেলে না। যেমন আমাদের জানা রকেট নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের ওপর নির্ভরশীল (প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে)। তবে ইউএফও দেখার কোনো ঘটনায় এর উল্লেখ দেখা যায় না। আর আঁকাবাঁকা পথে উড়ে চলা উড়ন্ত সসার যে মহাকর্ষ বল বা জি-ফোর্স তৈরি করে, তা পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের চেয়ে এক শ গুণ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হয়। এই বল পৃথিবীর যেকোনো প্রাণীকে চ্যাপ্টা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

    আধুনিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে কি ইউএফওর এ ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করা যায়? আর্থ ভিএস দ্য ফ্লাইং সসার সিনেমায় সব সময়ই ধরে নেওয়া হয় যে এলিয়েনরাই এ ধরনের নভোযান চালাচ্ছে। তবে এ রকম নভোযানের সত্যি কোনো অস্তিত্ব থাকলে সেগুলো মনুষ্যবিহীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি (কিংবা এমন কোনো জীব হতে পারে, যার কিছু অংশ জৈব আর কিছু অংশ যান্ত্রিক)। এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়, এ নভোযান কীভাবে জীবন্ত যেকোনো কিছুকে বিধ্বস্ত করে ফেলতে সক্ষম জি-ফোর্স তৈরি করে।

    যে নভোযান গাড়ির ইগনিশন বন্ধ করতে আর বাতাসে নিঃশব্দে চলাচল করতে পারে, সেটি হয়তো চুম্বকচালিত যান বলে ধারণা করা যায়। চুম্বকশক্তি চালিত যানের সমস্যা হলো চুম্বকের সব সময় দুটি মেরু থাকে, একটি উত্তর মেরু ও আরেকটি দক্ষিণ মেরু। পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্রে কোনো চুম্বক রাখা হলে তা কোনো ইউএফওর বাতাসে ওঠার বদলে ঘুরবে (কম্পাসের কাঁটার মতো)। দক্ষিণ মেরু একদিকে চলবে আর উত্তর মেরু তার বিপরীত দিকে চলার কারণে চুম্বকটি ঘুরতে থাকবে ও কোথাও যেতে পারবে না।

    মনোপোল বা একক মেরুর ব্যবহার এ সমস্যার সম্ভাব্য একটি সমাধান হতে পারে। অর্থাৎ যে চুম্বকের একটিমাত্র মেরু থাকবে, কোনো উত্তর বা দক্ষিণ মেরু থাকবে না। সাধারণত কোনো চুম্বককে দুই ভাগে বিভক্ত করা হলে দুটি মনোপোল পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার বদলে প্রতিটি বিভক্ত অংশ আলাদা চুম্বকে পরিণত হবে, যাদের দুটিতে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বর্তমান থাকবে। মানে দুটি চুম্বকই পরিণত হবে আলাদাভাবে ডাইপোল চুম্বকে। কাজেই চুম্বক অবিরামভাবে বিভক্ত করা হলে, প্রতিটি চুম্বকে সব সময় উত্তর ও দক্ষিণ মেরু পাওয়া যাবে। (একটি ডাইপোল বা দ্বিমেরু চুম্বকে ভেঙে আগের চেয়ে ক্ষুদ্রতর ডাইপোল চুম্বকে বানানোর এই প্রক্রিয়া পারমাণবিক পর্যায় পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে খোদ পরমাণুগুলোও একেকটি ডাইপোল। )

    বিজ্ঞানীদের জন্য সমস্যাটি হলো মনোপোল গবেষণাগারে কখনো বানানো সম্ভব হয়নি। পদার্থবিদেরা তাঁদের যন্ত্রপাতির মধ্যে চলমান মনোপোলের গতিপথের ছবি তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন (এ ক্ষেত্রে একটিমাত্র ব্যতিক্রম আছে। ১৯৮২ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ছবি তোলা হয়েছিল, যা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে)।

    পরীক্ষায় মনোপোল কখনোই তর্কাতীতভাবে না পাওয়া গেলেও পদার্থবিদেরা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করেন যে মহাবিস্ফোরণের পরপর মহাবিশ্ব বিপুল পরিমাণ মনোপোলের অস্তিত্ব ছিল। মহাবিস্ফোরণের সর্বশেষ বিশ্ব- সৃষ্টিতত্ত্বে এ ধারণা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে মহাবিস্ফোরণের পরপরই মহাবিশ্ব যেহেতু বিপুল বেগে স্ফীত হয়েছে, তাই মহাবিশ্বজুড়ে মনোপোলের ঘনত্ব কমে গেছে। কাজেই এগুলো এখন গবেষণাগারে দেখা যায় না। (আসলে বর্তমানে মনোপোলের অভাব পর্যবেক্ষণই পদার্থবিদদের স্ফীত মহাবিশ্বের ধারণার দিকে চালিত করেছে। কাজেই মনোপোলের অবশেষের ধারণাটি পদার্থবিদ্যায় সুপ্রতিষ্ঠিত। )

    তাই অনুমান করে নেওয়া যায়, মহাকাশ ভ্রমণে অগ্রসর কোনো জাতি বাইরের মহাকাশে বিশালাকৃতির জাল ছড়িয়ে মহাবিস্ফোরণের পর অবশিষ্ট থেকে যাওয়া আদিম মনোপোল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা যদি কোনোভাবে যথেষ্ট পরিমাণ মনোপোল সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে ছায়াপথজুড়ে বা কোনো গ্রহে চুম্বকীয় ক্ষেত্র রেখা ব্যবহার করে এবং কোনো এক্সজস্ট তৈরি না করে তারা মহাকাশেও যাতায়াত করতে পারবে। অনেক বিশ্ব-সৃষ্টিতত্ত্ববিদের কাছে মনোপোল নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকার কারণে এ ধরনের কোনো নভোযানের অস্তিত্ব থাকাটা এখন পদার্থবিদ্যার বর্তমান চিন্তাভাবনার সঙ্গে নিশ্চিতভাবে খাপ খায়।

    সবশেষে বলা যায়, মহাবিশ্বের সব জায়গায় স্টারশিপ পাঠাতে যেকোনো এলিয়েন সভ্যতাকে যথেষ্ট উন্নত হতে হবে। বিশেষ করে ন্যানো প্রযুক্তিতে সুদক্ষ হতে হবে। মানে তাদের স্টারশিপ খুব বেশি বড় হওয়ার প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে প্রাণসমৃদ্ধ গ্রহ অনুসন্ধানে এ রকম লাখ লাখ নভোযান পাঠাতে পারবে তারা। জনশূন্য উপগ্রহগুলো এ রকম ন্যানোশিপের জন্য সবচেয়ে ভালো ঘাঁটি হয়ে উঠতে পারে। তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের চাঁদেও হয়তো অতীতে কোনো টাইপ-৩ সভ্যতা এসে থাকতে পারে। অনেকটা ২০০১ সালে নির্মিত এক মুভিতে দেখানো ঘটনার মতো। এ মুভিতে সম্ভবত বহির্জাগতিক সভ্যতা সম্পর্কে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত রূপায়ণ করা হয়েছে। এমনও হতে পারে, চাঁদে অবতরণ করা নভোযানগুলো হয়তো মনুষ্যবিহীন ও রোবটচালিত ছিল। (অস্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তা খুঁজে দেখতে পুরো চাঁদে তন্ন তন্ন করে স্ক্যান করে দেখতে যেমন প্রযুক্তি দরকার, সে পর্যায়ে যেতে আমাদের আরও ১০০ বছর লেগে যাবে। পাশাপাশি অতীতে এলিয়েনদের ন্যানোশিপ পরিদর্শনের প্রাচীন প্রমাণ শনাক্ত করার সক্ষমতা অর্জনেও একই সময় লাগতে পারে। )

    আমাদের চাঁদে সত্যি সত্যিই কোনো এলিয়েন যদি অতীতে এসে থাকে কিংবা সেখানে যদি ন্যানোটেক ঘাঁটি বানিয়ে থাকে, তাহলে হয়তো ব্যাখ্যা করা যাবে ইউএফও কেন অনিবার্যভাবে অনেক বেশি বড় হয় না। অনেক বিজ্ঞানী ইউএফওর বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করেন। কারণ, তাঁরা বর্তমানে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি করা বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত রামজেট ফিউশন ইঞ্জিন, বিশাল লেজারচালিত পাল আর নিউক্লিয়ার পালসড ইঞ্জিনের সঙ্গে বিশাল প্রোপালশন ডিজাইনগুলোর সঙ্গে ইউএফএকে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। কিন্তু ইউএফও একটা জেটবিমানের মতো ছোটও হতে পারে। তবে আগের পরিদর্শনের সময় চাঁদে যদি কোনো স্থায়ী ঘাঁটি রাখা হয়ে থাকে, তাহলে ইউএফওদের বড় হওয়ার দরকার নেই। কারণ, তাদের পার্শ্ববর্তী চাঁদের ঘাঁটি থেকেই জ্বালানি নিতে পারবে। কাজেই ইউএফও দেখার কারণ জনহীন পরীক্ষামূলক শিপও হতে পারে, যা চাঁদের ঘাঁটি থেকে আসতে পারে।

    সেটি (SETI) প্রজেক্টের প্রজেক্টের দ্রুত অগ্রগতি এবং অনেকগুলো বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ আবিষ্কারের কারণে এলিয়েন আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে বলে ধরে নেওয়া যায়। আর সেটি সত্য হলে এলিয়েন বা বহির্জাগতিক জীবের সঙ্গে যোগাযোগ এই শতাব্দীর মধ্যেই হয়তো ঘটতে পারে। এসব কারণে একে প্রথম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এলিয়েন সভ্যতা যদি বহু দূরের মহাকাশে থাকে, তাহলে পরবর্তী অনিবার্য প্রশ্নটি হলো : আমরা কি সত্যিই তাদের কাছে কখনো পৌঁছাতে পারব? আমাদের দূরবর্তী ভবিষ্যৎ কী হবে, যখন সূর্য প্রসারিত হতে থাকবে আর পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলবে? আমাদের গন্তব্য কি সত্যিই নক্ষত্রদের ওপর নির্ভর করে?

    তথ্যনির্দেশ

    কোরোট স্যাটেলাইট : ২০০৬ সালের ২৭ ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণ করা হয় কোরোট স্যাটেলাইট। ফরাসি ভাষায় Convection, Stellar Rotation এবং Planetary Transits শব্দ তিনটি একত্র হয়ে CoRoT শব্দটি গঠিত। শব্দ তিনটির অর্থ যথাক্রমে পরিচলন, নাক্ষত্রিক ঘূর্ণন ও গ্রহসংক্রান্ত চলন। উৎক্ষেপণের তিন মাসের মধ্যে একটি বহিঃসৌর গ্রহ আবিষ্কার করে কোরোট, নাম COROT-1b। উৎক্ষেপণের পর আড়াই বছর কার্যক্রম চলার কথা থাকলেও পরে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে ২০১২ সালে স্যাটেলাইটটির কম্পিউটারে সমস্যা দেখা দেয়। সেটি ঠিক করার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। এতে কোরোটে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্তও উদ্ধার করা যায়নি। ২০১৩ সালের জুনে কোরোট মিশন বন্ধ করা হয় ও পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে সেটি ভস্মীভূত করা হয়। পুরো মিশনে কোরোট ৩২টি বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ আবিষ্কার করে। এ ছাড়া ১০০টিকে গ্রহ হিসেবে নিশ্চিত করার অপেক্ষায় ছিল।

    কেপলার স্যাটেলাইট : ২০০৯ সালের ৭ মার্চ কেপলার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে নাসা। দীর্ঘ ৯ বছরের বেশি কার্যক্রম চলার পর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবরে স্যাটেলাইটটি বন্ধ করা হয়। একই বছর ১৫ নভেম্বর কেপলার নিষ্ক্রিয় করা হয়। দিনটি ছিল জ্যোতির্বিদ কেপলারের ৩৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। স্যাটেলাইটটি ৫৩০,৫০৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ ও ২৬৬২টি বহিঃসৌর গ্রহ শনাক্ত করেছে। টেরিস্ট্রিয়াল

    প্ল্যানেট ফাইন্ডার : এর সংক্ষিপ্ত নাম টিপিএফ। স্যাটেলাইটটি কয়েকবার উৎক্ষেপণের চেষ্টা করেও বারবার তারিখ পেছানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে এর উৎক্ষেপণ একেবারে বাতিল ঘোষণা করে নাসা।

    ডারউইন স্যাটেলাইট : মহাকাশে পৃথিবী আকৃতির গ্রহ অনুসন্ধানে ১৯৯৩ সালে এই মিশনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের দিকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও ২০০৭ সালে এই মিশন বাতিল ঘোষণা করে এশা।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু
    Next Article দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

    Related Articles

    মিচিও কাকু

    প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    দ্য গড ইকুয়েশন : থিওরি অব এভরিথিংয়ের খোঁজে – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    ফিজিক্স অব দ্য ফিউচার – মিশিও কাকু

    November 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }