Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল – মিচিও কাকু

    মিচিও কাকু এক পাতা গল্প488 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৯. স্টারশিপ

    বিজ্ঞানীদের দুর্বিনীত লক্ষ্য কত উদ্ভট দূরত্বকে গন্তব্য বানাতে পারে, তার অন্যতম উদাহরণ চাঁদে যান পাঠানোর মতো নির্বুদ্ধিতা। এমন একটি চিন্তা একেবারেই অসম্ভব বলে মনে হয়।

    এ ডব্লিউ বিকারটন, ১৯২৬

    সব সম্ভাবনার মধ্যে মানবজাতির সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপারটি হলো, মহাকাশের বাইরে গেলে তারা এক সূর্য থেকে আরেক সূর্যে স্থানান্তরিত হতে থাকবে। এ সম্ভাবনা কখনো বিনষ্ট হবে না। আর তাই জীবন, বুদ্ধিমত্তা ও মানবজাতির উৎকর্ষের কখনো শেষ নেই। এ অগ্রগতি চিরন্তন।

    —কনস্টানটিন ই সিওলকোভস্কি, রকেটের জনক

    অদূর ভবিষ্যতে কোনো একদিন পৃথিবীতে আমরা শেষ দিনটি কাটাব। আজ থেকে কয়েক বিলিয়ন বছর পর একদিন গোটা আকাশ তীব্র আগুনে ছেয়ে যাবে। আমাদের সূর্য ফুলেফেঁপে জ্বলন্ত এক নরকে পরিণত হবে, যা গোটা আকাশ ছেয়ে যাবে এবং আকাশের সবকিছু গ্রাস করবে। পৃথিবীর তাপমাত্রার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসাগরের সমস্ত পানি উত্তপ্ত হয়ে স্রেফ বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। সেখানে পড়ে থাকবে শুধু দগ্ধ, ক্ষতবিক্ষত আর বিরান স্থলভূমি। পাহাড়-পর্বতগুলো গলে গলে তরলে পরিণত হবে। সেগুলো অচিরেই রূপ নেবে দগদগে লাভায়। একসময় যেখানে জীবন্ত প্রাণোচ্ছল সব শহর দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে এসব গলিত লাভা প্রবাহিত হতে থাকবে।

    পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো অনুযায়ী, পৃথিবীর নির্মম এই চিত্র অনিবার্য। পৃথিবী একসময় সূর্যের তীব্র অগ্নিশিখার গ্রাসেই মারা যাবে। এটি পদার্থবিজ্ঞানের একটি সূত্র।

    এই বিপর্যয় সংঘটিত হবে আগামী পাঁচ বিলিয়ন বছরের মধ্যে। মহাজাগতিক সময়সূচির বিশাল বিস্তৃতির কাছে মানবসভ্যতার উত্থান ও পতন অতি সামান্য ঘটনা। একদিন আমাদের এই পৃথিবী ছেড়ে যেতেই হবে, নয়তো এখানেই ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে। কাজেই পৃথিবীর অবস্থা যখন অসহনীয় হয়ে উঠবে, তখন মানবজাতি বা আমাদের উত্তরসূরিরা তা কীভাবে মোকাবিলা করবে?

    গণিতবিদ ও দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল একবার বলেছিলেন, ‘কোনো আগুন, কোনো বীরত্ব, কোনো ভাবনা বা অনুভূতির তীব্রতা কোনো প্রাণকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না। সব যুগের পরিশ্রম, সব সাধনা, সব অনুপ্রেরণা, দুপুরের মতো মানুষের প্রতিভার প্রখরতা সৌরজগতের প্রকাণ্ড মৃত্যুর ভেতর বিলুপ্তি হওয়ার জন্য নির্ধারিত। মানুষের অর্জনের সব আশ্রয়স্থল অবশ্যই অনিবার্যভাবে মহাবিশ্বের ধ্বংসস্তূপের নিচে সমাধিস্থ হবে।’

    ইংরেজি ভাষায় আমার কাছে অন্যতম গভীর চিন্তাশীল একটি অনুচ্ছেদ এটি। তবে রাসেল কথাটা এমন এক যুগে লিখেছিলেন, যখন রকেট শিপকে অসম্ভব বলে ভাবা হতো। আমাদের যে একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে, বর্তমানে সে সম্ভাবনা আর মোটেও কষ্টকল্পিত নয়। কার্ল সাগান একবার বলেছিলেন, আমাদের ‘দুটি গ্রহের প্রজাতি’ হয়ে ওঠা উচিত। পৃথিবীতে জীবন এতটাই মূল্যবান যে, তিনি বলেন, কোনো বিপর্যয় ঘটার আগেই আমাদের অন্তত বাসযোগ্য অন্য কোনো গ্রহে চলে যাওয়া উচিত। চলমান গ্রহাণু, ধূমকেতু ও পৃথিবীর কক্ষপথের কাছে অন্যান্য ধ্বংসাবশেষের মাঝখানে পৃথিবী ঘুরে চলেছে। এদের যেকোনোটির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে আমাদের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।

    আসন্ন বিপর্যয়

    কবি রবার্ট ফ্রস্ট একবার প্রশ্ন তোলেন, আগুন না হয় তুষারের কারণে পৃথিবীর পরিসমাপ্তি হবে। পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলো ব্যবহার করে বেশ যৌক্তিকভাবে অনুমান করা যায়, কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এই বিশ্বের কীভাবে পরিসমাপ্তি হতে পারে।

    কয়েক মিলিয়ন বছরে মানবসভ্যতার জন্য একটি বিপদ হলো নতুন বরফযুগের আবির্ভাব। সর্বশেষ বরফযুগ শেষ হয়েছে ১০ হাজার বছর আগে। পরেরটি আসতে পারে এখন থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার বছরের মধ্যে। এতে উত্তর আমেরিকার অধিকাংশ এলাকা আধমাইল পুরু বরফের স্তরে ঢেকে যেতে পারে। সাম্প্রতিক অতি ক্ষুদ্র আন্তমহাজাগতিক সময়কালের মধ্যে মানবসভ্যতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আর এ সময়টায় পৃথিবী অস্বাভাবিক উষ্ণ ছিল। কিন্তু এ ধরনের চক্র চিরকাল স্থায়ী হতে পারে না।

    লাখ লাখ বছরে পৃথিবীর সঙ্গে বিশালাকৃতির উল্কা বা ধূমকেতুর সংঘর্ষে ব্যাপক বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে। সর্বশেষ এ রকম বড় বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছিল ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে। তখন প্রায় ৬ মাইল বিস্তৃত একটি বস্তু মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপে আঘাত হানে। ফলে প্রায় ১৮০ মাইল ব্যাসের এলাকাজুড়ে বিশাল এক খাদের সৃষ্টি হয় এবং পৃথিবীতে সেকালের প্রভাবশালী জন্তু ডাইনোসরদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ওই সময়ে আরেকটি মহাজাগতিক সংঘর্ষ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

    এখন থেকে কয়েক বিলিয়ন বছর পর আমাদের সূর্য ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়ে বড় হতে থাকবে। শেষমেশ পৃথিবীকে গ্রাস করবে তা। আসলে আমাদের হিসাবে, সূর্য পরবর্তী বিলিয়ন (১০০ কোটি) বছরে এখনকার চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ উষ্ণ হবে। সেই সঙ্গে চরমভাবে অগ্নিগর্ভ করে তুলবে আমাদের পৃথিবীকেও। তারপর আগামী ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) বছরে পৃথিবীকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলবে সূর্য। তখন আমাদের সূর্য এক লোহিত দানব নক্ষত্রে পরিণত হবে। পরিণামে আক্ষরিক অর্থেই সূর্যের আবহমণ্ডলের মধ্যে ঢুকে যাবে আমাদের প্রিয় পৃথিবী।

    আবার এখন থেকে ১০ বিলিয়ন বছর পর মৃত্যু হবে আমাদের সূর্য ও মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির। কারণ, আমাদের সূর্য একসময় তার হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম জ্বালানি ফুরিয়ে ফেলবে। তখন সূর্য সংকুচিত হয়ে পরিণত হবে অতি ক্ষুদ্র এক শ্বেতবামন নক্ষত্রে। এরপর তা ক্রমেই শীতল হতে হতে শূন্যস্থানের মধ্যে একসময় একটি বিধ্বস্ত কালো পারমাণবিক বর্জ্যের স্তূপে পরিণত হবে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ একসময় সংঘর্ষে লিপ্ত হবে তার সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সঙ্গে। এই অ্যান্ড্রোমিডা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চেয়ে অনেক অনেক বড়। কাজেই মিল্কিওয়ের সর্পিল বাহুগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। পরিণামে আমাদের সূর্য নিক্ষিপ্ত হতে পারে গভীর মহাকাশে। গ্যালাক্সি দুটির এই সংঘর্ষ আর তাদের একীভূত হওয়ার আগে তাদের কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহ্বরগুলো মৃত্যুকালীন চূড়ান্ত নাচ দেখাতে শুরু করবে।

    ভবিষ্যতের এমন বিক্ষুব্ধ অবস্থায় মানবজাতিকে টিকে থাকতে হলে আমাদের সৌরজগৎ থেকে একদিন অবশ্যই প্রতিবেশী কোনো নক্ষত্রে পালিয়ে যেতেই হবে, নয়তো এখানেই ধ্বংস হতে হবে। প্রশ্ন হলো, সেটি কীভাবে করা সম্ভব? প্রতিবেশী নক্ষত্রগুলোতে কেমন করে যাওয়া যাবে? আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র ব্যবস্থা আলফা সেন্টুরাই পৃথিবী থেকে ৪ আলোকবর্ষ দূরে। আমাদের বর্তমান মহাকাশ কর্মসূচির ভিত্তি হলো রাসায়নিক প্রোপালশন রকেট। প্রচলিত এই রকেট মাত্র ঘণ্টায় ৪০ হাজার মাইল বেগে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু এই বেগে চলতে গেলে সবচেয়ে কাছের এই নক্ষত্রে পৌঁছাতে আমাদের সময় লেগে যাবে ৭০ হাজার বছর।

    বর্তমানের মহাকাশ কর্মসূচি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আমাদের বর্তমান কালের তুচ্ছ সক্ষমতা আর মহাবিশ্ব অভিযান শুরু করতে প্রয়োজনীয় সত্যিকার কোনো স্টারশিপের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়ে গেছে। ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে চাঁদে অভিযান শুরু হয়। এরপর থেকে আমাদের মানুষবাহী মহাকাশ কর্মসূচিতে পৃথিবী থেকে মাত্র ৩০০ মাইল ওপরের কক্ষপথে স্পেস শাটল ও ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে নভোচারী পাঠানো হয়েছে। তবে ২০১০ সালের মধ্যে স্পেস শাটল স্থগিত করে অরিয়ন স্পেসক্র্যাফট চালু করার পরিকল্পনা করছে নাসা। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে নভোচারীদের আবারও চাঁদে নেওয়া হবে। দীর্ঘ ৫০ বছর বিরতির পর এটি করা হবে। চাঁদের মাটিতে মানুষের জন্য একটি স্থায়ী ঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে নাসার। এরপর হয়তো মঙ্গলে মানুষবাহী মিশন পরিচালনা করা হতে পারে।

    অন্য নক্ষত্রগুলোতে আমরা কখনো যদি পাড়ি দিতে চাই, তাহলে নতুন ধরনের রকেটের নকশা অবশ্যই খুঁজে দেখতে হবে। হয় আমাদের রকেটের থ্রাস্ট বাড়াতে হবে, নয়তো রকেটের সক্রিয়তার সময় বাড়াতে হবে। যেমন একটি বড় রাসায়নিক রকেটের থ্রাস্ট কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড হলেও তা মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য জ্বলতে পারবে। অন্যদিকে অন্যান্য রকেট নকশায়, যেমন আয়ন ইঞ্জিনের (পরের প্যারায় আলোচনা করা হয়েছে) থ্রাস্ট দুর্বল হলেও তা বাইরের মহাকাশে কয়েক বছর ধরে চলতে পারবে। রকেটের বেলায় খরগোশকেও হারিয়ে দিতে পারে কচ্ছপ।

    আয়ন ও প্লাজমা ইঞ্জিন

    রাসায়নিক ইঞ্জিনের চেয়ে আয়ন ইঞ্জিন বেশ আলাদা। রাসায়নিক ইঞ্জিনের মতো এ ইঞ্জিনগুলো হঠাৎ অতি উত্তপ্ত গ্যাসের নাটকীয় বিস্ফোরণ ঘটায় না। তবে প্রচলিত রকেটগুলো সামনের দিকে এগিয়ে চলে এই অতি উত্তপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে। আসলে তাদের থ্রাস্ট অধিকাংশ সময় আউন্সে মাপা হয়। এগুলো এতটা দুর্বল যে পৃথিবীতে কোনো একটি টেবিলের ওপরে এদের রাখা হলে চলতে পারে না। তবে মহাকাশে শূন্যস্থানে অনেক বছর ধরে সক্রিয় থাকতে পারে এগুলো।

    আদর্শ আয়ন ইঞ্জিন দেখতে টিভির ভেতরে থাকা টিউবের মতো। একটি উত্তপ্ত ফিলামেন্ট বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমে উত্তপ্ত হয়, যা আয়নিত পরমাণুর (যেমন জেনন) রশ্মি তৈরি করে। এটিই রকেটের শেষ প্রান্ত দিয়ে ছুড়ে দেওয়া হয়। উত্তপ্ত, বিস্ফোরক গ্যাসের পরিবর্তে আয়ন ইঞ্জিন আয়নের পাতলা, স্থির প্রবাহের ওপর চড়ে যাত্রা করে।

    ডিপ স্পেস-১ নামের একটি অনুসন্ধানী যান সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় ১৯৯৮ সালে। এতে নাসার এনএসটিএআর (NSTAR) আয়ন থ্রাস্টার মহাকাশে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। মোট ৬৭৮ দিন চালানো হয় আয়ন ইঞ্জিনটি। এর মাধ্যমে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে আয়ন ইঞ্জিন। এদিকে স্মার্ট-১ নামের অনুসন্ধানী যানে আয়ন ইঞ্জিনের পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সিও। আবার জাপানের হায়াবুসা স্পেস প্রোব একটি গ্রহাণুর পাশ দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। সেটি ছিল চারটি জেনন আয়ন ইঞ্জিনচালিত। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও আয়ন ইঞ্জিন আন্তগ্রহের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান চালাতে সক্ষম (অবশ্য এটা এখনই জরুরি নয়)। আসলে এই আয়ন ইঞ্জিন হয়তো একদিন আন্তগ্রহগুলো যাতায়াতের জন্য প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠবে।

    আয়ন ইঞ্জিনের আরও শক্তিশালী সংস্করণ হলো প্লাজমা ইঞ্জিন। যেমন ভিএএসআইএমআর (ভেরিয়েবল স্পেসিফিক ইমপালস ম্যাগনেটোপ্লাজমা রকেট), যা মহাকাশে চলাচলের জন্য প্লাজমার শক্তিশালী জেট ব্যবহার করে। এটি নকশা করেছেন নভোচারী ও প্রকৌশলী ফ্রাঙ্কলিক চাং-ডিয়াজ। এ ইঞ্জিন বেতার তরঙ্গ ও চুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে হাইড্রোজেন গ্যাসকে ১ লাখ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে তোলে। এই অতি উত্তপ্ত প্লাজমা রকেটের শেষ প্রান্ত দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়। পরিণামে উল্লেখযোগ্য থ্রাস্ট বা ধাক্কার সৃষ্টি হয়। কয়েকজন প্রকৌশলীর প্রত্যাশা, মঙ্গল অভিযানের শক্তি সরবরাহে ব্যবহার করা সম্ভব হবে প্লাজমা ইঞ্জিন। এতে মঙ্গল-যাত্রার সময়কাল বেশ খানিকটা কমিয়ে মাত্র কয়েক মাসে নামিয়ে আনা যাবে। কিছু নকশায় ইঞ্জিনের প্লাজমায় শক্তি সরবরাহ করতে ব্যবহার করা হয়েছে সৌরশক্তি। অন্য নকশাগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে নিউক্লিয়ার ফিশন (যা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। কারণ, এতে মহাকাশে থাকা নভোযানে বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক বস্তু ব্যবহার করা যা হয়, দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে)।

    তবে আয়ন কিংবা প্লাজমা/ভিএএসআইএমআর ইঞ্জিনের কোনোটাই আমাদের অন্য কোনো নক্ষত্রে নিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তি নেই। সে কারণে আমাদের পুরোপুরি নতুনভাবে প্রোপালশনের ডিজাইন করতে হবে। কোনো স্টারশিপের নকশার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধাটি হলো, সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রে যাওয়ার জন্যও আমাদের বিপুল পরিমাণ জ্বালানির দরকার। আবার দূরবর্তী কোনো গন্তব্যে স্টারশিপটি পৌঁছানোর জন্যও লাগে অনেক দীর্ঘ সময়।

    সৌরপাল

    একটি উপায়ে হয়তো এ সমস্যার সমাধান করা যাবে, সেটি হলো সৌরপাল বা সোলার সেইল। সূর্যের আলো থেকে খুব অল্প পরিমাণে হলেও কিছু স্থির চাপ বেরিয়ে আসে। এ চাপের মাধ্যমে মহাকাশে বিশাল পাল চালানোর জন্য যথেষ্ট। সৌরপালের ধারণা বেশ পুরোনো। বিখ্যাত জোতির্বিদ জোহানেস কেপলার ১৬১১ সালে তাঁর সোমনিয়াম গ্রন্থে এ বিষয় উল্লেখ করেছিলেন।

    সৌরপালের পেছনের পদার্থবিজ্ঞান সহজ হলেও বাস্তবে মহাকাশে চলতে সক্ষম সৌরপাল বানানোর ব্যাপারে এখনো তেমন অগ্রগতি নেই। ২০০৪ সালে সফলভাবে ছোট আকারের দুটি সৌরপালের প্রোটোটাইপ মহাকাশে মোতায়েন করে জাপানের রকেট। প্ল্যানেটারি সোসাইটি, কসমস স্টুডিও ও রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস ২০০৫ সালে বারেন্টস সাগর থেকে একটি সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করে কসমস-১ সৌরপাল। কিন্তু সৌরপালটি বহনকারী ভোলনা রকেটটি উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হয়। পরিণামে সৌরপালটি শেষমেশ কক্ষপথে পৌঁছাতে পারেনি। (এর আগে ২০০১ সালে উপ- কক্ষপথেও সৌরপাল উৎক্ষেপণ চেষ্টা ব্যর্থ হয়।) তবে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপানের এম-ভি রকেট ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এক সৌরপাল সফলভাবে কক্ষপথে পাঠায়। অবশ্য সৌরপালটি পুরোপুরি খোলেনি।

    সৌরপাল প্রযুক্তির উন্নয়নের অবস্থা দুঃখজনকভাবে বেশ ধীরগতির। তারপরও সৌরপাল প্রবক্তাদের আরেকটি আইডিয়া আছে, যা তাদের অন্য ক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারে। আইডিয়াটি হলো : চাঁদের মাটিতে বিপুল পরিমাণ লেজারের সারি তৈরি করা, যা সৌরপালে লেজারের তীব্র রশ্মি ছুড়ে দেবে। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী নক্ষত্রে যাওয়া সম্ভব। এ রকম আন্তনাক্ষত্রিক সৌরপালের পদার্থবিজ্ঞান সত্যিকার অর্থেই বিস্ময়কর। এই পালের আকৃতি হবে আড়াআড়িভাবে কয়েক শ মাইল। আবার এর পুরোটাই বানাতে হবে বাইরের মহাকাশে। এদিকে চাঁদের মাটিতে বানাতে হবে কয়েক হাজার গুণ শক্তিশালী লেজার রশ্মি। সেগুলোকে কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েক দশক পর্যন্ত অবিরামভাবে রশ্মি ছুড়তে সক্ষম হতে হবে। (হিসাবে দেখা গেছে, সৌরপালে ছোড়ার জন্য লেজার রশ্মির যে শক্তি দরকার, তার পরিমাণ বর্তমানে বিশ্বে উৎপাদিত বিদ্যুৎ শক্তির চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী হতে হবে।)

    তাত্ত্বিকভাবে বিশাল আকৃতির আলোর পাল হয়তো আলোর গতির অর্ধেক গতিতে চলতে পারবে। এতে একটি সৌরপাল প্রতিবেশী নক্ষত্রে পৌঁছাতে সময় নেবে মাত্র আট বছর। এ ধরনের প্রোপালশন সিস্টেমের সুবিধাটি হলো, এটি সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। এ রকম সৌরপাল তৈরির জন্য হয়তো পদার্থবিজ্ঞানের নতুন কোনো সূত্র আবিষ্কার করতে হবে না। তবে প্রধান সমস্যাটি হলো অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত। আড়াআড়িভাবে এক শ মাইল বিস্তৃত একটি সৌরপাল তৈরির প্রকৌশলগত সমস্যা রয়েছে, আবার হাজারখানেক শক্তিশালী লেজার রশ্মি চাঁদে স্থাপন করা এই মুহূর্তে কঠিন কাজ। এর জন্য যে রকম প্রযুক্তি দরকার, তার জন্য হয়তো আরও এক শতাব্দী লেগে যাবে। (আন্তনাক্ষত্রিক সৌরপালের আরেকটি সমস্যা হলো ফিরে আসা। অন্য কোনো নক্ষত্র থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসতে বহু দূরের কোনো চাঁদে দ্বিতীয় আরেকটি শক্তিশালী লেজার সারি তৈরি করতে হবে। নয়তো কোনো নক্ষত্রের চারপাশের কক্ষপথে দ্রুতবেগে দুলতে থাকবে নভোযানটি। বাটুল বা গুলতির মতো এটি ব্যবহার করে যথেষ্ট গতি অর্জন করে সেখান থেকে ফিরে আসা যাবে। এরপর চাঁদের লেজার ব্যবহার করে পৃথিবীতে অবতরণ করা যাবে সৌরপালের গতি কমিয়ে।)

    রামজেট ফিউশন

    অন্য নক্ষত্রে আমাদের বহন করতে আমার সবচেয়ে প্রিয় প্রযুক্তি রামজেট ফিউশন। হাইড্রোজেনের পরিমাণ মহাবিশ্বে বিপুল। তাই মহাকাশে ভ্রমণ করার সময় হাইড্রোজেন সংগ্রহ করে নিতে পারবে রামজেট ইঞ্জিন। আসলে এর মাধ্যমে অফুরান রকেট জ্বালানি পাবে এই ইঞ্জিন। একবার হাইড্রোজেন সংগ্রহ করার পর তা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হবে। একে যথেষ্ট উত্তপ্ত করতে হবে, যাতে হাইড্রোজেন ফিউজ বা একীভূত হয়। এভাবে থার্মোনিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে পাওয়া যাবে বিপুল পরিমাণ শক্তি।

    রামজেট ফিউশন ইঞ্জিনের প্রস্তাব দেন পদার্থবিদ রবার্ট ডব্লিউ বাসার্ড, ১৯৬০ সালে। একে জনপ্রিয় করে তোলেন কার্ল সাগান। বাসার্ড হিসাব করে দেখেছেন, রামজেট ইঞ্জিনের ওজন হবে প্রায় ১০০০ টন। তাত্ত্বিকভাবে এটি 1g বলের স্থিতিশীল থ্রাস্ট বজায় রাখতে পারবে, যাকে ভূপৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে থাকার সঙ্গে তুলনা করা যায়। রামজেট ইঞ্জিন যদি এক বছরের জন্য 1g ত্বরণ বজায় রাখতে পারে, তাহলে তা আলোর বেগের ৭৭ শতাংশ অর্জন করতে পারবে। আন্তনাক্ষত্রিক ভ্রমণ আক্ষরিক অর্থেই সম্ভব করতে এই গতি যথেষ্ট।

    রামজেট ফিউশন ইঞ্জিনের প্রয়োজনীয় উপাদান সহজে হিসাব করে বের করা যায়। প্রথমত, মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন গ্যাসের গড় ঘনত্ব আমরা জানি। আবার 1g ত্বরণ পেতে কতটুকু হাইড্রোজেন গ্যাস পোড়াতে হবে, তা-ও মোটামুটি হিসাব করে বের করে ফেলা যায়। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে, হাইড্রোজেন গ্যাস সংগ্রহ করতে আমাদের সংগ্রাহক যন্ত্রের আকার ঠিক কত বড় হতে হবে। যৌক্তিক কিছু অনুমানের মাধ্যমে দেখানো যায়, গ্যাস সংগ্রাহকের ব্যাস হবে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। অবশ্য এত বড় সংগ্রাহক যন্ত্র পৃথিবীতে বানানো হয়তো কঠিন হতে পারে। তাই একে মহাকাশে বানিয়ে নিলে ওজনশূন্যতার জন্য তুলনামূলক কম সমস্যা হতে পারে।

    তত্ত্ব অনুযায়ী, রামজেট ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য সামনে এগিয়ে যেতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত বহু দূরের ছায়াপথের নক্ষত্র ব্যবস্থায় পৌঁছাতে পারবে। আইনস্টাইনের মতে, যেহেতু রকেটের ভেতরে সময় ধীরগতির হয়ে যায়, তাই অনেক বড় দূরত্বে পৌঁছানোর জন্য যাত্রীদের ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হবে না। স্টারশিপের ভেতরের ঘড়ি অনুযায়ী, ১২ বছরের জন্য 1g ত্বরণ অর্জন করার পর সেটি পৌঁছাতে পারবে ৪০০ আলোকবর্ষ দূরের প্লেইডেস স্টার ক্লাস্টারে। আর ২৩ বছরে স্টারশিপটি পৌছাবে পৃথিবীতে ২০ লাখ আলোকবর্ষ দূরের অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে। তাত্ত্বিকভাবে স্টারশিপটির যাত্রীদের জীবদ্দশাতেও তা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারবে (অবশ্য তত দিনে পৃথিবীতে পার হয়ে যাবে কয়েক বিলিয়ন বছর)।

    ফিউশন বিক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এক অনিশ্চয়তা আছে। ফ্রান্সের দক্ষিণে আইটিইআর ফিউশন রিঅ্যাক্টর বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখানে শক্তি বের করে আনতে দুটি বিরল হাইড্রোজেন (ডিউটেরিয়াম ও ট্রাইটিয়াম) একীভূত করা হবে। মহাকাশে প্রচুর পরিমাণ থাকা হাইড্রোজেনে একটি প্রোটন থাকে, যার চারপাশে একটি ইলেকট্রন ঘুরছে। রামজেট ফিউশন ইঞ্জিনকে প্রোটন-প্রোটন ফিউশন বিক্রিয়া থেকে শক্তি বের করে আনতে হবে। পদার্থবিদেরা কয়েক দশক ডিউটেরিয়াম-ট্রাইটিয়াম ফিউশন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করলেও প্রোটন-প্রোটন ফিউশন প্রক্রিয়া এখনো ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। কারণ, প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন ও এতে কম শক্তি বের করে আনা যায়। কাজেই তুলনামূলক কঠিন প্রোটন-প্রোটন ফিউশন পদ্ধতিতে দক্ষতা অর্জন করাও আগামী দশকগুলোর জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। (প্রকৌশলীদের প্রশ্ন, রামজেট ইঞ্জিন আলোর কাছাকাছি গতিতে চলার সময় ড্রাগ ইফেক্ট বশে আনতে পারবে কি না। )

    প্রোটন-প্রোটন ফিউশন পদ্ধতি নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও অর্থনীতি সমাধান না করা পর্যন্ত রামজেট ইঞ্জিনের ব্যবহারের সম্ভাব্যতা নিয়ে সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন। তবে যেকোনো নক্ষত্র অভিযানে সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে এ নকশাটি সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে।

    নিউক্লিয়ার ইলেকট্রিক রকেট

    মার্কিন অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন (এইসি) প্রজেক্ট রোভারের অধীনে নিউক্লিয়ার রকেটকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে শুরু করে ১৯৫৬ সালে। তাত্ত্বিকভাবে, কোনো নিউক্লিয়ার ফিশন রিঅ্যাক্টর বা চুল্লি হাইড্রোজেনের মতো গ্যাসকে চরম তাপমাত্রায় নিয়ে যায়। এরপর এই গ্যাস রকেটের এক প্রান্ত নিয়ে সজোরে বের হয়ে যেতে দিয়ে রকেটটি সম্মুখগতি অর্জন করে।

    পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নিউক্লিয়ার জ্বালানির বিষাক্ত বিস্ফোরণের ঝুঁকির কারণে নিউক্লিয়ার রকেট ইঞ্জিনের আদি সংস্করণ রেলপথের ওপর আড়াআড়িভাবে রাখা হয়েছিল। এভাবে রকেটটির দক্ষতা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ১৯৫৯ সালে প্রজেক্ট রোভারের অধীনে পরীক্ষা চালানো প্রথম নিউক্লিয়ার রকেট ইঞ্জিনটি ছিল কিউয়ি ওয়ান (অস্ট্রেলিয়ার উড়তে না পারা পাখির নামে এর নামকরণ করা হয়েছে)। ১৯৬০ সালে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিন ফর রকেট ভেহিকেল (NERVA) বানানোর জন্য এইসির সঙ্গে যোগ দেয় নাসা। এটিই প্রথম কোনো নিউক্লিয়ার রকেট, যা উলম্ব বা খাড়াভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। আবার এই নিউক্লিয়ার রকেটটি পরীক্ষামূলকভাবে নিম্নাভিমুখে উৎক্ষেপণ করে দেখা হয়েছে ১৯৬৮ সালে।

    এই গবেষণার ফলাফল মিশ্র। রকেটটি খুবই জটিল ও প্রায়ই লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনের তীব্র কম্পনে প্রায়ই ফাটল দেখা দেয় জ্বালানি প্রকোষ্ঠে। ফলে রকেটটি ভেঙে যায়। আরেকটি স্থায়ী সমস্যাও দেখা দেয় উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বলন্ত হাইড্রোজেনের ক্ষয়ের কারণে। এসব কারণে নিউক্লিয়ার রকেট কর্মসূচি ১৯৭২ সালে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    [এ পারমাণবিক রকেটের আরও একটি সমস্যাও আছে। পারমাণবিক বোমার মতো এখানেও ধাবমান পারমাণবিক বিক্রিয়া হয়। অবশ্য বাণিজ্যিকভাবে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে এখন মিশ্রিত নিউক্লিয়ার জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। এগুলো হিরোশিমায় ফেলা বোমার মতো বিস্ফোরিত হয় না। অন্যদিকে এ পারমাণবিক রকেটে সর্বোচ্চ সম্মুখগতি তৈরি করতে উচ্চতর সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। তাতে এটি ক্ষুদ্র পারমাণবিক বিস্ফোরক তৈরি করে চেইন রিঅ্যাকশনে বিস্ফোরিত হতে পারে। এ নিউক্লিয়ার রকেট কর্মসূচি যখন প্রায় স্থগিতের পথে, তখন সর্বশেষ পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা রকেটটিকে একটা ছোট পারমাণবিক বোমার মতো করে উড়িয়ে দিতে চাইলেন। সে জন্য কন্ট্রোল রড (এটি নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে) সরিয়ে নেন। রিঅ্যাক্টরটি সুপারক্রিটিক্যাল পর্যায়ে এসে আগুনের গোলার মতো বিস্ফোরিত হলো। নিউক্লিয়ার রকেট কর্মসূচির এই অপমৃত্যুর অসাধারণ দৃশ্য ভিডিও করা হয়েছিল। অবশ্য এ ঘটনায় খুশি হতে পারেনি রাশিয়াও। এই স্টান্টবাজিকে লিমিটেড টেস্ট ব্যান ট্রিটির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করেছিল তারা। এই চুক্তি অনুযায়ী ভূপৃষ্ঠের ওপরে কোনো পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ নিষিদ্ধ। ]

    মার্কিন সেনাবাহিনী বছরের পর বছর পর্যায়ক্রমে নিউক্লিয়ার রকেট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। এ রকম গোপন একটি প্রজেক্টের নাম ছিল টিম্বারউইন্ড নিউক্লিয়ার রকেট। ১৯৮০-এর দশকে এটি ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীর স্টার ওয়ার্স প্রজেক্টের একটি অংশ। (ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট কর্তৃক এর অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশদ প্রকাশের পর এটি বাদ দেওয়া হয়। )

    নিউক্লিয়ার ফিশন নিয়ে প্রধান উদ্বেগ হলো এর নিরাপত্তা। মহাকাশ যুগের ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও রাসায়নিকভাবে বুস্টার রকেটগুলো মাত্ৰ প্ৰায় ১ শতাংশ বিপর্যয়কর ব্যর্থতার মুখে পড়েছে। (চ্যালেঞ্জার আর কলম্বিয়া স্পেস শাটলে দুটি বিপর্যয়ও রয়েছে এ ব্যর্থতার হারের মধ্যে। দুর্ভাগ্যক্রমে এতে ১৪ জন নভোচারী মারা যান।)

    তারপরও গত কয়েক বছরে নিউক্লিয়ার রকেট নিয়ে গবেষণা আবারও চালু করেছে নাসা। ১৯৬০-এর দশকে NERVA প্রোগ্রামের পর এটাই প্রথমবার। ২০০৩ সালে নতুন এক প্রজেক্ট চালু করে। এর নামকরণ করা হয়েছে মানবজাতিকে প্রথম আগুন এনে দেওয়া গ্রিক দেবতা প্রমিথিউসের নামে। প্রমিথিউস প্রোগ্রামের জন্য ৪৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০০৫ সালে। অবশ্য এই বরাদ্দ থেকে ২০০৬ সালে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমানো হয়। তবে এ প্রজেক্টের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।

    নিউক্লিয়ার পালসড রকেট

    ভবিষ্যতের আরেকটি সম্ভাবনা হলো স্টারশিপকে চালাতে একগুচ্ছ মিনি নিউক্লিয়ার বোমা ব্যবহার করা। প্রজেক্ট ওরিয়নে মিনি পারমাণবিক বোমা রকেটের পেছন দিক দিয়ে ধারাবাহিকভাবে বের করে আনা হয়েছিল, যাতে নভোযান এই মিনি হাইড্রোজেন বোমার কারণে সৃষ্ট ধাক্কা চলতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে, এ ধরনের নকশায় কোনো নভোযান আলোর গতির কাছাকাছি বেগে পৌঁছাতে সক্ষম। ১৯৪৭ সালে আসলে প্রথম এই নকশার জন্ম হয়েছিল স্টানিস্লা উলামের মাথায়। তিনিই প্রথম হাইড্রোজেন বোমার নকশা করতে সহায়তা করেন। আইডিয়াটি পরে আরও উন্নয়ন করেন টেড টেইলর (মার্কিন সেনাবাহিনীর নিউক্লিয়ার যুদ্ধাস্ত্রের প্রধান ডিজাইনারদের মধ্যে অন্যতম তিনি) আর প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির পদার্থবিদ ফ্রিম্যান ডাইসন।

    এই আন্তনাক্ষত্রিক রকেটের জন্য ১৯৫০-এর দশকের শেষে ও ১৯৬০- এর দশকে বিস্তারিত হিসাব-নিকাশ করা হয়েছিল। হিসাবে দেখা গেল, এ রকম স্টারশিপে চড়ে প্লুটোতে যেতে-আসতে সময় লাগবে এক বছর। কারণ, এ স্টারশিপের সর্বোচ্চ গতিসীমা আলোর প্রায় ১০ শতাংশ। কিন্তু এই বেগেও আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রটিতে যেতে সময় লাগবে ৪৪ বছর। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমন রকেট দিয়ে চালিত স্পেসশিপ বা স্পেস আর্ককে কয়েক শতাব্দী মহাকাশে ভ্রমণ করতে হতে পারে। সেখানে মাল্টিজেনারেশনাল যাত্রী থাকবে। স্পেসশিপে তাদের সন্তানেরা জন্মাবে ও পুরো জীবন ব্যয় করবে, যাতে বংশধরেরা প্রতিবেশী নক্ষত্রে পৌঁছাতে পারে।

    ১৯৫৯ সালে জেনারেল অ্যাটমিক নামের এক প্রতিষ্ঠান একটি প্রতিবেদনে ওরিয়ন স্পেসক্র্যাফটের আকার কতটুকু হতে পারে, তার হিসাব দেখায়। সুপার ওরিয়ন নামের সবচেয়ে বড় সংস্করণটির ওজন হতে পারে ৮ মিলিয়ন টন। এর ব্যাসার্ধ হবে ৪০০ মিটার। এতে শক্তি জোগাবে ১০০০টির বেশি হাইড্রোজেন বোমা।

    এই প্রজেক্টের বড় একটি সমস্যা ছিল উৎক্ষেপণ করার সময় নিউক্লিয়ার দূষণের সম্ভাবনা। ডাইসন হিসাব করে দেখেন, প্রতিবার উৎক্ষেপণের সময় নিউক্লিয়ারের প্রভাবে ১০ জন মানুষের মারাত্মক ক্যানসার হতে পারে। আবার প্রতি উৎক্ষেপণে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় পালস বা ইএমপি এতটাই বেশি হতে পারে যে তাতে পার্শ্ববর্তী বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের শর্টসার্কিট ঘটাতে পারে।

    ১৯৬৩ সালে লিমিটেড টেস্ট ব্যান ট্রিটি স্বাক্ষর হওয়ায় এ প্রজেক্টের মৃত্যুঘণ্টা বেজে যায়। ক্রমান্বয়ে প্রজেক্টটির প্রধানতম চালিকা শক্তি, অর্থাৎ নিউক্লিয়ার বোমার ডিজাইনার টেড টেইলর হাল ছেড়ে দেন। (একবার তিনি আমাকে বলেছিলেন, যখন তিনি বুঝতে পারলেন, মিনি নিউক্লিয়ার বোমার পেছনের পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরাও একসময় বহনযোগ্য নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়ে ফেলতে পারবে, তখন ওই প্রজেক্ট নিয়ে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। এটি খুব বিপজ্জনক বলে মনে হওয়ায় শেষমেশ প্রজেক্টটি বাতিল করা হয়। এই নাম এখন টিকে আছে ওরিয়ন মহাকাশযানে। ২০১০ সালে স্পেশ শাটলের পরিবর্তনে একে বেছে নেয় নাসা।

    নিউক্লিয়ার-চালিত রকেটের ধারণাটি ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কিছুটা পুনর্নির্মাণ করে ব্রিটিশ ইন্টারপ্ল্যানেটারি সোসাইটি। এর নাম ছিল প্রজেক্ট ডিডেলাস। পৃথিবী থেকে ৫.৯ আলোকবর্ষ দূরের বার্নার্ড নক্ষত্রে পৌছাতে সক্ষম মানুষবিহীন স্টারশিপ বানানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে এতে প্রাথমিক গবেষণা করা হচ্ছিল। (বার্নাড নক্ষত্র বেছে নেওয়ার কারণ, এতে একটি গ্রহ আছে বলে ধারণা করা হয়। এরপর থেকে জ্যোতির্বিদ জিল টার্টার ও মার্গারেট ট্রানবুল প্রাণ ধারণের উপযোগী গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে এমন প্রতিবেশী ১৭,১২৯টি নক্ষত্রের তালিকা করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক নক্ষত্র ১১.৮ আলোকবর্ষ দূরের এপসিলন ইন্ডি এ।)

    প্রজেক্ট ডেডিলাসের জন্য পরিকল্পিত রকেট শিপটি এত বড় ছিল যে তা মহাকাশে নির্মাণ করা লাগত। এর ওজন হতো ৫৪ হাজার টন, যার প্রায় সবটুকুই রকেটের জ্বালানির ওজন। রকেট শিপটি ৪৫০ টন ওজনের মালামাল নিয়ে আলোর গতির ৭.১ শতাংশ গতি অর্জন করতে সক্ষম। প্রজেক্ট ওরিয়নে ছোট ফিশন বোমা ব্যবহৃত হতো। অন্যদিকে প্রজেক্ট ডেডিলাসে ডিউটেরিয়াম/হিলিয়াম-৩-এর মিশ্রণে ইলেকট্রন বিমের মাধ্যমে প্রজ্বলিত করে মিনি হাইড্রোজেন বোমা ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছিল। কঠিন সব প্রযুক্তিগত সমস্যা ও নিউক্লিয়ার প্রোপালসন সিস্টেম নিয়ে উদ্বেগের কারণে প্রজেক্ট ডেডিলাসও অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি রাখা হয়েছে।

    স্পেসিফিক ইমপালস ও ইঞ্জিনের দক্ষতা

    প্রকৌশলীরা মাঝেমধ্যেই স্পেসিফিক ইমপালসের কথা উল্লেখ করেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ইঞ্জিনের নকশার দক্ষতার শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। ইঞ্জিনের জ্বালানির ভরের প্রতি এককের জন্য ইঞ্জিনের ভরবেগের পরিবর্তন দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয় স্পেসিফিক ইমালস। কাজেই যে ইঞ্জিনের দক্ষতা যত বেশি, তা দিয়ে কোনো রকেটকে মহাকাশে নিয়ে যেতে তত কম জ্বালানির প্রয়োজন। নির্দিষ্ট সময়ে ক্রিয়াশীল ওই বলের কারণে ভরবেগ সৃষ্টি হয়। রাসায়নিক রকেটগুলোর থ্রাস্ট অনেক তীব্র হলেও এই রকেট মাত্র কয়েক মিনিট কার্যকর থাকতে পারে। সে জন্য এর স্পেসিফিক ইমপালস খুব কম। আয়ন ইঞ্জিন অনেক বছর কার্যকর থাকে। সে কারণে খুব অল্প থ্রাস্ট (ধাক্কা) থাকা সত্ত্বেও এই ইঞ্জিনের স্পেসিফিক ইমপালস অনেক বেশি।

    স্পেসিফিক ইমপালসকে সেকেন্ডের হিসাবে পরিমাপ করা হয়। প্রচলিত কোনো রাসায়নিক রকেটের স্পেসিফিক ইমপালস সাধারণত ৪০০-৫০০ সেকেন্ড হতে পারে। (রাসায়নিক রকেটের সর্বোচ্চ স্পেসিফিক ইমপালস অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল ৫৪২ সেকেন্ড। জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন, লিথিয়াম আর ফ্লোরিনের মিশ্রণ ব্যবহার করে এই ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল।) স্মার্ট-১ আয়ন ইঞ্জিনের থ্রাস্টারের স্পেসিফিক ইমপালস ১৬৪০ সেকেন্ড। আর নিউক্লিয়ার রকেটের স্পেসিফিক ইমপালস পাওয়া যায় ৮৫০ সেকেন্ড।

    কোনো রকেটের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ স্পেসিফিক ইমপালস হতে পারে আলোর বেগের সমান। এর স্পেসিফিক ইমপালস হবে প্রায় ৩০ মিলিয়ন। নিচের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের রকেট ইঞ্জিনের স্পেসিফিক ইমপালস দেখানো হয়েছে।

    রকেট ইঞ্জিনের ধরন স্পেসিফিক ইমপালস
    কঠিন জ্বালানি রকেট ২৫০
    তরল জ্বালানি রকেট ৪৫০
    আয়ন ইঞ্জিন ৩০০০
    VASIMR প্লাজমা ইঞ্জিন ১০০০ থেকে ৩০,০০০
    নিউক্লিয়ার ফিশন রকেট ৮০০ থেকে ১০০০
    নিউক্লিয়ার ফিউশন রকেট ২৫০০ থেকে ২০,০০০০
    নিউক্লিয়ার পালস রকেট ১০,০০০ থেকে ১০ লাখ
    অ্যান্টিম্যাটার রকেট ১০ লাখ থেকে ১ কোটি

    (তাত্ত্বিকভাবে, লেজার পাল ও র‍্যামজট ইঞ্জিনের স্পেসিফিক ইমপালস অসীম। কারণ, এতে কোনো রকেট জ্বালানি লাগে না। অবশ্য তাদের অন্য ধরনের সমস্যা আছে।)

    স্পেস এলিভেটর

    এসব রকেট নকশায় অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে অন্যতম গুরুতরটি হলো, এগুলোর আকৃতির বিশাল ও অনেক ভারী। তাই এদের ভূপৃষ্ঠে বানানো সম্ভব নয়। সে কারণে কিছু বিজ্ঞানী এসব রকেট মহাকাশে বানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। মহাশূন্যে ওজনহীনতার কারণে অসম্ভব রকম ভারী বস্তুও নভোচারীরা অনেক সহজে ওঠানামা করতে পারবেন। তবে মহাকাশে এগুলো বানানো অনেক খরুচে ব্যাপার বলে এরই মধ্যে ইঙ্গিত করেছেন অনেক সমালোচক। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পুরোটা নির্মাণ সম্পন্ন করতে ১০০ বারের মতো মহাশূন্যে শাটল মিশন চালাতে হয়েছিল। আর এর নির্মাণ খরচ দাঁড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ব্যয়বহুল বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট। আন্তনাক্ষত্রিক মহাকাশ পাল কিংবা র‍্যামজেট মহাশূন্যে বানাতে এর চেয়ে অনেক গুণ খরচ করতে হবে।

    তবে বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখক রবার্ট হেইনলেন বলতে পছন্দ করেন যে যদি ভূপৃষ্ঠের ১৬০ কিলোমিটার ওপরে ওঠা সম্ভব হয়, তাহলে সৌরজগতের যেকোনো জায়গায় যাওয়ার কাজটা অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে যায়। কারণ, যেকোনো উৎক্ষেপণের প্রথম ১৬০ কিলোমিটারেই পৃথিবীর মহাকর্ষ থেকে রকেটকে মুক্ত হতে হয়। আর এতেই খরচ লাগে সবচেয়ে বেশি। এরপর রকেট শিপ প্লুটো বা তার সীমানা ছাড়িয়ে যেকোনো জায়গায় ভিড়তে পারে।

    ভবিষ্যতে এই খরচ ব্যাপক কমানোর একটি উপায় হতে পারে স্পেস এলিভেটর বানানো। দড়ি বেয়ে মহাশূন্যে ওঠার ধারণা বেশ পুরোনো। যেমন রূপকথার জ্যাক অ্যান্ড দ্য বিনস্টক গল্পে এমনটি দেখা যায়। দড়িটিকে যদি মহাশূন্যের অনেক দূরে পাঠানো সম্ভব হয়, তাহলে বাস্তব হয়ে উঠতে পারে এটি। এরপর পৃথিবীর ঘূর্ণনের সেন্ট্রিফিউগাল বল বা কেন্দ্রাতিগ বলের মাধ্যমে মহাকর্ষ বলকে কাটানোর জন্য যথেষ্ট হতে পারে। তাতে দড়িটি কখনো আর নিচে পড়বে না। দড়িটি জাদুকরিভাবে খাড়াভাবে শূন্যে উঠে যাবে এবং একসময় তা হারিয়ে যাবে মেঘের ফাঁকে। (একটা দড়িতে বাধা বলের কথা ভাবুন। বলটি মহাকর্ষকে তুচ্ছ করে বলে মনে হয়, কারণ কেন্দ্রাতিগ বল (কেন্দ্রবিমুখী বল) একে ঘূর্ণনের কেন্দ্র থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। একইভাবে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে একটি লম্বা দড়ি বাতাসে ঝুলে থাকবে।) দড়িটিকে ধরে রাখতে পৃথিবীর ঘূর্ণন ছাড়া আর কিছুর প্রয়োজন নেই। তত্ত্ব অনুযায়ী, যে কেউ এই দড়ি বেয়ে ওপরে উঠে মহাশূন্যে আরোহণ করতে পারবে। নিউইয়র্কের সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ফিজিকস কোর্স নেওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝেমধ্যে এ ধরনের একটি দড়িতে টান নির্ণয় করার সমস্যা দিই আমরা। সহজেই দেখানো যায়, দড়ির টান এতই হবে যে তা একটি ইস্পাতের তারও ছিঁড়ে ফেলতে পারবে। সে কারণেই স্পেস এলিভেটর বানানো অসম্ভব বলে অনেক দিন ধরে মনে করা হচ্ছে।

    স্পেস এলিভেটর নিয়ে প্রথম যে বিজ্ঞানী গুরুত্বের সঙ্গে গবেষণা করেছেন, তিনি হলেন ভবিষ্যদ্রষ্টা রুশ বিজ্ঞানী কনস্টানটিন সিলোকোভস্কি। আইফেল টাওয়ার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮৯৫ সালে তিনি মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত এক টাওয়ারের কল্পনা করেন। আর ওই টাওয়ারটি মহাশূন্যে পৃথিবীর সঙ্গে একটি স্বর্গীয় দুর্গকে সংযুক্ত করবে। সেটি ভূপৃষ্ঠে বানানো শুরু হবে এবং প্রকৌশলীরা ধীরে ধীরে সেই স্পেস এলিভেটরটিকে মহাশূন্যে বিস্তৃত করবেন।

    ১৯৫৭ সালে রুশ বিজ্ঞানী ইউরি আরষ্টুটানভ এর সমাধান হিসেবে বলেন, স্পেস এলিভেটরকে আসলে উল্টো করে বানাতে হবে। অর্থাৎ একে মহাশূন্য থেকে শুরু করতে হবে। তিনি মহাকাশের ৩৬ হাজার মাইল দূরের জিওস্টেশনারি কক্ষপথে একটি স্যাটেলাইটের কল্পনা করেছিলেন। সেখানে স্যাটেলাইটটি আপাতভাবে স্থির হয়ে থাকবে। আর সেখান থেকে পৃথিবীতে একটি তার ফেলে দেওয়া হবে। এরপর ভূপৃষ্ঠে নোঙর করে রাখা হবে ওই তারটিকে। কিন্তু এই স্পেস এলিভেটরের শিকলটির প্রায় ৬০ থেকে ১০০ গিগাপ্যাসকেল (জিপিএ) টান সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। ইস্পাত প্রায় ২ জিপিএ টানেই ভেঙে যায়। কাজেই এ ধারণাটি এখনো বাস্তবে পরিণত করা যায়নি।

    স্পেস এলিভেটরের ধারণাটিকে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় করেন আর্থার সি ক্লার্ক। তাঁর ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত দ্য ফাউন্ডেশন অব প্যারাডাইস উপন্যাসে এটি প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া রবার্ট হেইনলেন ১৯৮২ সালে তাঁর ফ্রাইডে উপন্যাসে স্পেস এলিভেটরের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু এরপর এর আর কোনো অগ্রগতি না থাকায় ধারণাটি বলতে গেলে স্রেফ মাঠে মারা গেছে।

    রসায়নবিদেরা যখন কার্বন ন্যানোটিউব আবিষ্কার করলেন, তারপর এই দৃশ্যপট লক্ষণীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯১ সালে নিপ্পন ইলেকট্রিকের সুমিও ইজিমার গবেষণার কারণে হঠাৎ এই বিষয়ে সবার আগ্রহে বাড়িয়ে দিয়েছে (অবশ্য কার্বন ন্যানোটিউবের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৫০-এর দশকে। তবে সে সময় একে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।) বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ইস্পাতের তারের চেয়েও কার্বন ন্যানোটিউব অনেক বেশি শক্ত, কিন্তু ওজনে অনেক হালকা। আসলে স্পেস এলিভেটরের জন্য যে ধরনের শক্ত বস্তু দরকার, এগুলোর দৃঢ়তা তার চেয়ে বেশি। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, কার্বন ন্যানোটিউব ফাইবার ১২০ জিপিএ চাপ সহ্য করতে পারবে, যা কিনা ভঙ্গুর বিন্দুর চেয়ে বেশ এগিয়ে। এই আবিষ্কার স্পেস এলিভেটর নির্মাণে নতুন করে আশা জুগিয়েছে।

    ১৯৯৯ সালে নাসার একটি গবেষণার কারণে স্পেস এলিভেটর নিয়ে সবাই এখন গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে শুরু করেছে। এখন এমন এক রিবনের কথা কল্পনা করা হচ্ছে, যা প্রায় ১ মিটার প্রশস্ত ও ৪৭ কিলোমিটার লম্বা হবে। ১৫ টন মালামাল পৃথিবীর কক্ষপথে বহন করে নিয়ে যাওয়া যাবে এর মাধ্যমে। এ ধরনের স্পেস এলিভেটর স্পেস ট্রাভেলসংক্রান্ত অর্থনীতি পাল্টে দিতে পারে রাতারাতি। এর কারণে স্পেস ট্রাভেলের খরচ বিস্ময়করভাবে ১০ হাজার গুণ কমেও যেতে পারে। আর সেটি হবে বৈপ্লবিক এক পরিবর্তন।

    বর্তমানে পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথে এক পাউন্ড ওজনের বস্তু পাঠাতে ১০ হাজার মার্কিন ডলার বা তার চেয়েও বেশি খরচ হয় (মোটামুটি সোনার দাম বলা যায়)। প্রতিটি স্পেস শাটল মিশনে খরচ হয় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্পেস এলিভেটর এই খরচ কমিয়ে প্রতি পাউন্ডে ১ মার্কিন ডলারে নামিয়ে আনতে পারে। মহাকাশ কার্যক্রমে খরচের এই অতি দরকারি হ্রাস করার মাধ্যমে স্পেস ট্রাভেলের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এলিভেটরের সাধারণ একটি সুইচ টিপেই বিমানের সমান ভাড়ায় তাত্ত্বিকভাবে একটি এলিভেটরকে মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়া যাবে।

    মহাশূন্যে যাওয়ার উপযোগী স্পেস এলিভেটর তৈরির আগে আমাদের বেশ কিছু কঠিন বাস্তবিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। বর্তমানে গবেষণাগারে তৈরি করা বিশুদ্ধ কার্বন ন্যানোটিউব ফাইবার ১৫ মিলিমিটারের চেয়ে লম্বা বানানো যায়নি। স্পেস এলিভেটর বানাতে চাইলে এমন কার্বন ন্যানোটিউব বানানো দরকার, যার দৈর্ঘ্য হবে কয়েক হাজার মাইল লম্বা। অবশ্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি শুধুই এক যান্ত্রিক সমস্যা। কিন্তু সমস্যাটি এমনই কঠিন আর নাছোড়বান্দা যে এর সমাধান ছাড়া স্পেস এলিভেটর বানানো কোনোভাবে সম্ভব নয়। তবু কয়েক দশকের মধ্যে অনেক লম্বা কার্বন ন্যানোটিউব বানানোর প্রযুক্তিতে আমরা দক্ষ হয়ে উঠব বলে বিশ্বাস করেন অনেক বিজ্ঞানী।

    দ্বিতীয়ত, কার্বন ন্যানোটিউবে মাইক্রোস্কোপিক ভেজালের কারণে অনেক লম্বা তার বানানো সমস্যাজনক হয়ে উঠতে পারে। ইতালির পলিটেকনিক অব তুরিনের নিকোলা পুগনো হিসাব করে দেখেছেন, কার্বন ন্যানোটিউবে একটি পরমাণু সঠিক সারিতে না বসলে তার শক্তি কমে যায় ৩০ শতাংশ। সর্বোপরি পারমাণবিক পরিসরের ত্রুটি কার্বন ন্যানোটিউব তারের দৃঢ়তা ৭০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। এতে স্পেস এলিভেটরের জন্য সর্বনিম্ন যে গিগাপ্যাসকেলের দৃঢ়তা দরকার, তার চেয়েও নিচে নেমে যায়।

    স্পেস এলিভেটর নিয়ে বাণিজ্যিক আগ্রহ তৈরি করতে, দুটি আলাদা পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছে নাসা। (১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আনসারি এক্স-প্রাইজের মতো করে এই পুরস্কার দুটোর নকশা করা হয়েছে। মহাশূন্যে যাত্রী বহনযোগ্য বাণিজ্যিক রকেট নির্মাণে এটি সফলভাবে বাণিজ্যিক উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহ জোগাতে পেরেছিল। ২০০৪ সালে এই এক্স-প্রাইজ জিতেছে স্পেসশিপ ওয়ান নামের একটি প্রতিষ্ঠান।) নাসা-ঘোষিত এই পুরস্কারকে বলা হয় বিম পাওয়ার চ্যালেঞ্জ ও টেথার চ্যালেঞ্জ। বিম পাওয়ার চ্যালেঞ্জে বিভিন্ন দলকে একটি শিকলে ঝোলানো অন্তত ২৫ কিলোগ্রামের একটি মেকানিক্যাল ডিভাইস সেকেন্ডে ১ মিটার গতিতে ৫০ মিটার দূরে পাঠাতে হয়। শুনতে সহজ মনে হলেও এখানে এই ডিভাইসটি কোনো জ্বালানি, ব্যাটারি কিংবা বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে না। তার বদলে রোবট ডিভাইসটি সৌরকোষ, সোলার রিফ্লেকটর, লেজার বা মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে শক্তির জোগান পায়। এগুলোই আসলে মহাকাশের জন্য সবচেয়ে উপযোগী শক্তির উৎস।

    অন্যদিকে টেথার চ্যালেঞ্জে, প্রতিটি দলকে অবশ্যই ২ মিটার লম্বা টেথার বা শিকল তৈরি করতে হয়, যার ওজন কোনোভাবেই ২ গ্রামের বেশি হবে না। আবার শিকলটিকে অবশ্যই আগের বছরের শিকলের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি ওজন বহন করতে সক্ষম হতে হবে। মহাশূন্যে ১ লাখ কিলোমিটার তার বিছানোর জন্য হালকা কিন্তু শক্ত বস্তু তৈরির গবেষণায় উৎসাহ জাগানোর উদ্দেশ্যেই এ চ্যালেঞ্জের আয়োজন করা হয়। এই পুরস্কারের মূল্য দেড় লাখ, ৪০ হাজার ও ১০ হাজার মার্কিন ডলার। (২০০৫ সালে এ প্রতিযোগিতার প্রথম বছরে কেউই পুরস্কার জিততে পারেনি।)

    সফল স্পেস এলিভেটর মহাকর্ষ কর্মসূচিতে বিপ্লব বয়ে আনলেও এ রকম যন্ত্রে কিছু বিপত্তিও আছে। যেমন, পৃথিবীর কাছের স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর চারপাশে ঘোরার সময় তাদের গতিপথ বারবার বদলে যায় (কারণ, এদের ঠিক নিচেই পৃথিবী ঘুরছে)। এর মানে এসব স্যাটেলাইট ক্রমেই ঘণ্টায় ১৮ হাজার মাইল বেগে স্পেস এলিভেটরের সঙ্গে সংঘর্ষের মুখে পড়বে। এই গতি স্পেস এলিভেটরের শিকল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এসব বিপর্যয় এড়াতে ভবিষ্যতে হয়তো স্যাটেলাইটের ডিজাইন এমন করতে হবে, যাতে তার সঙ্গে ছোট রকেটও থাকে। আর এই রকেটগুলো যাতে স্পেস এলিভেটরের চারপাশে ঘুরে যেতে পারে। অথবা এলিভেটরের শিকলটির সঙ্গে এমন কোনো ছোট রকেট জুড়ে দিতে হবে, যাতে কোনো স্যাটেলাইট তার কাছে এলে শিকলটি সরে যেতে পারে।

    আবার অতি ক্ষুদ্র উল্কার সঙ্গে সংঘর্ষও আরেকটি সমস্যা। স্পেস এলিভেটর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে অনেক ওপরে থাকার কারণে এটি ঘটবে। পৃথিবীর এ বায়ুমণ্ডল উল্কা থেকে আমাদের রক্ষা করে। অতি ক্ষুদ্র উল্কার সংঘর্ষ আগাম অনুমান করা যায় না। তাই স্পেস এলিভেটরে অবশ্যই অতিরিক্ত ঢাল যুক্ত করতে হবে। আবার ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের মতো পৃথিবীর অস্থির আবহাওয়াও এতে বাজে প্রভাব ফেলতে পারে।

    স্লিংশট ইফেক্ট

    কোনো বস্তুকে আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে ছুড়ে দেওয়া বোঝাতে স্লিংশট ইফেক্ট শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয়। মহাকাশে অনুসন্ধানী নভোযান পাঠানোর সময়, নাসা মাঝেমধ্যে তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রহের চারপাশে ঘুরিয়ে নেয়। এর মাধ্যমে নভোযানগুলো স্লিংশট ইফেক্ট ব্যবহার করে তাদের গতিবেগ বাড়িয়ে নিতে পারে। এভাবে মূল্যবান জ্বালানি খরচ বাঁচায় নাসা। ভয়েজার নভোযান এভাবে সৌরজগতের প্রায় শেষ প্রান্তের কাছের গ্রহ নেপচুনে পৌঁছেছিল।

    প্রিন্সটনের পদার্থবিদ ফ্রিম্যান ডাইসন বলেন, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো দুটি নিউট্রন স্টার খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা পরস্পরের চারপাশে বিপুল বেগে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই নিউট্রন স্টারের খুব কাছে গিয়ে তাদের চারপাশে ঘোরার পর আমরা মহাকাশে নিজেদের ছুড়ে দিতে পারব। এভাবে আলোর গতির তিন ভাগের এক ভাগ গতি অর্জন করা সম্ভব। এর ফলে হয়তো মহাকর্ষ ব্যবহার করে অতিরিক্ত গতি অর্জন করে আলোর গতির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব আমরা। কাগজে-কলমে বেশ কাজে দেয় এটি।

    অন্য অনেকে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন যে আলোর কাছাকাছি গতি অর্জন করতে আমরা আমাদের সূর্যের চারপাশেই ঘুরতে পারি। আসলে স্টার ট্রেক ফোর : দ্য ভয়েজ হোম-এ এন্টারপ্রাইজের ক্রুরা যখন ক্লিনগন শিপ হাইজ্যাক করে তখন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপর আলোর বাধা অতিক্রম করতে সূর্যের কাছে গিয়ে সময়ের অতীতে ফিরে যায় তারা। হোয়েন ওয়ার্ল্ডস কলাইড মুভিতে, পৃথিবী একবার এক গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের হুমকির মুখে পড়ে। বিপর্যয় থেকে বাঁচতে একটি বিশাল রোলার কোস্টার বানিয়ে তাতে চড়ে পৃথিবী থেকে পালিয়ে যান বিজ্ঞানীরা। এক রকেট শিপ রোলার কোস্টার থেকে নেমে একসময় বিপুল গতিবেগ অর্জন করে। তারপর রোলার কোস্টারের নিচ দিয়ে চারপাশে ঘুরপাক খেয়ে তীব্র বেগে মহাকাশে নিক্ষিপ্ত হয়।

    সত্যি বলতে কি, মহাকর্ষ ব্যবহার করে গতিবেগ অর্জনের এই দুটি পদ্ধতির কোনোটিই মহাকাশে আমাদের কাজে লাগবে না। (শক্তির সংরক্ষণশীল নীতি। রোলার কোস্টারের নিচে গিয়ে এরপর আবার আগের জায়গায় এসে আমরা আসলে শেষ পর্যন্ত একই বেগেই থাকছি বা শুরুর বেগেই থাকছি। সুতরাং এখানে আসলে কোনো শক্তি অর্জিত হচ্ছে না। একইভাবে স্থির সূর্যের চারপাশে পাক খেয়েও আমরা আসলে শুরুর বেগেই থাকব।) তবে ডাইসনের দুটি নিউট্রন স্টার ব্যবহারের পদ্ধতি হয়তো কাজেও লাগতে পারে। কারণ, নিউট্রন স্টার খুব দ্রুতবেগে ঘুরপাক খায়। কোনো নভোযান এই স্লিংশট ইফেক্ট ব্যবহার করে কোনো গ্রহ বা নক্ষত্রের গতি থেকে শক্তি অর্জন করতে পারে। কিন্তু তারা স্থির হলে স্লিংশট ইফেক্ট কাজ করবে না।

    ডাইসনের প্রস্তাবিত পদ্ধতি কাজের হলেও এ মুহূর্তে এটি পৃথিবীবন্দী বিজ্ঞানীদের কোনো কাজে লাগবে না। কারণ, সে জন্য আমাদের ঘূর্ণমান নিউট্রন স্টারে যাওয়ার উপযোগী স্টারশিপ দরকার।

    রেল গানের মাধ্যমে মহাকাশে

    মহাশূন্যে বিস্ময়কর গতিতে কোনো বস্তু ছুড়ে দেওয়ার আরেকটি সৃজনশীল পদ্ধতি হলো রেল গান। আর্থার সি ক্লার্ক ও অন্য লেখকেরা বিজ্ঞান কল্পগল্পে এ বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। স্টার ওয়ার্সের মিসাইল শিল্ডের অংশ হিসেবেও এটি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

    কোনো বস্তু বা ক্ষেপণাস্ত্রকে উচ্চ বেগে ছুড়ে দিতে রকেটের জ্বালানি বা গানপাউডারের পরিবর্তে রেল গানে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় শক্তি ব্যবহার করা হয়।

    এর গঠন বেশ সহজ। একটি রেল গানে দুটি সমান্তরাল তার বা রেল থাকে, সঙ্গে থাকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যা দুটি তারের সঙ্গে জুড়ে ইউ আকৃতি গঠন করে। মাইকেল ফ্যারাডেও জানতেন, বিদ্যুতের প্রবাহ কোনো চুম্বকীয় ক্ষেত্রে রাখা হলে একটি বল অনুভব করা যায়। (আসলে এটি ইলেকট্রিক মোটরের ভিত্তি।) এই তারগুলোর মধ্যে এবং একই সঙ্গে ওই ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্য দিয়ে কয়েক মিলিয়ন অ্যাম্পিয়ার বৈদ্যুতিক শক্তি পাঠিয়ে রেলের চারপাশে সৃষ্টি করা হয় বিপুল শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র। চুম্বকীয় ক্ষেত্রটি এরপর ক্ষেপণাস্ত্রটিকে রেলের ওপর দিয়ে বিপুল বেগে চালিয়ে নিয়ে যায়।

    রেল গান বেশ সফলভাবে ধাতব বস্তুকে বিপুল বেগে সংক্ষিপ্ত দূরত্বে নিয়ে যেতে পারে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, তাত্ত্বিকভাবে একটি সরল রেল গান কোনো ধাতব ক্ষেপণাস্ত্রকে ঘণ্টায় ১৮ হাজার মাইল বেগে ছুড়ে দিতে পারবে। তাতে পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথে চলে যেতে পারবে ক্ষেপণাস্ত্রটি। তত্ত্ব অনুযায়ী, নাসার পুরো রকেট ফ্লিটকে রেল গান দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায়, যা পেলোড বা মালামাল পৃথিবী থেকে কক্ষপথে নিয়ে যেতে পারবে।

    রাসায়নিক রকেট ও বন্দুকের বিপরীতে রেল গানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুবিধা রয়েছে। একটি রাইফেলে প্রসারণশীল গ্যাস একটি বুলেটকে ধাক্কা দিতে পারে, কিন্তু শক ওয়েভের গতির কারণে তার চূড়ান্ত বেগ সীমাবদ্ধ। অবশ্য জুল ভার্ন তাঁর ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন নামের ক্ল্যাসিক উপন্যাসে গানপাউডার ব্যবহার করে নভোচারীদের চাঁদে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সহজেই হিসাব করা যায়, গানপাউডার ব্যবহার করে যে গতি অর্জিত হবে, তা আসলে চাঁদে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গতির ভগ্নাংশ মাত্র। তবে রেল গান শক ওয়েভের গতির কারণে সীমাবদ্ধ নয়।

    কিন্তু রেল গানেরও কিছু সমস্যা রয়েছে। এটি বস্তুকে এতই দ্রুত ত্বরণ ঘটায় যে সেগুলো সাধারণত বাতাসের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় চ্যাপ্টা হয়ে, যায়। রেল গানের ব্যারেল থেকে যে প্রক্রিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে দেওয়া হয় তাতে মারাত্মকভাবে বিকৃত হয়ে যায় পেলোড বা মালামাল। কারণ, ক্ষেপণাস্ত্রটি যখন বাতাসে আঘাত হানে, সেটা অনেকটা ইটের দেয়ালে আঘাত হানার মতো। আবার রেলের পাশাপাশি বিপুল ত্বরণও পেলোড বিকৃত করার জন্য যথেষ্ট। ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে ট্র্যাকও নষ্ট হয়ে যায়। তাই ট্র্যাকও নিয়মিত পাল্টাতে হয়। আবার কোনো নভোচারীর ওপর মহাকর্ষ বল এতই বেশি হয় যে তাতে তার দেহের সব হাড় ভেঙে তিনি মারাও যেতে পারেন।

    চাঁদের মাটিতে রেল গান স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে কোনো রেল গানের ক্ষেপণাস্ত্রের বেগ মহাকাশের শূন্যস্থানের ভেতর দিয়ে কোনো বাধা ছাড়াই চলতে পারবে। কিন্তু তারপরও রেল গানের বিপুল ত্বরণের কারণে পেলোড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক অর্থে রেল গান হলো লেজার পালের ঠিক উল্টো। কারণ, লেজার পাল তাদের চূড়ান্ত গতিবেগ অর্জন করে দীর্ঘ সময় পর। রেল গানের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। কারণ, ছোট্ট জায়গায় তারা অনেক বেশি শক্তি ধারণ করে।

    রেল গান ব্যবহার করে প্রতিবেশী কোনো নক্ষত্রে বস্তু পাঠানো বেশ ব্যয়বহুল। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব হলো, রেল গানকে মহাকাশে নির্মাণ করা। মানে, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় রেল গান বানিয়ে নেওয়া। তাতে সূর্য থেকে এটি সৌরশক্তি সংরক্ষণ করতে পারবে। তারপর এই শক্তিকে অতি দ্রুত রেল গানে ব্যবহার করে ১০ টন পেলোড আলোর এক-তৃতীয়াংশ গতিবেগে পাঠানো যাবে। এর ত্বরণ হবে ৫০০০ g সন্দেহ নেই, এ রকম বিপুল ত্বরণে একমাত্র শক্তিশালী রোবটিক পেলোডের পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব।

    মহাকাশ ভ্রমণের বিপদ

    বলা বাহুল্য, স্পেস ট্রাভেল কোনো পিকনিক নয়। মঙ্গল গ্রহে কিংবা অন্য কোনো গ্রহে ভ্রমণরত মানুষবাহী ফ্লাইটের জন্য হাজারো বিপদ ওত পেতে রয়েছে। কয়েক লাখ বছর ধরে পৃথিবীতে জীবন রয়েছে নিরাপদ এক আশ্রয়ের মধ্যে। এই গ্রহের ওজোন স্তর পৃথিবীকে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করছে, সৌরতরঙ্গ/সৌরবায়ু ও মহাজাগতিক রশ্মি থেকে রক্ষা করছে এর চুম্বকীয় ক্ষেত্র। আবার পৃথিবীর ঘন বায়ুমণ্ডল উল্কা থেকে সুরক্ষা দেয়। এর কারণেই উল্কা পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। পৃথিবীতে যে মৃদু তাপমাত্রা ও বায়ুচাপ দেখা যায়, তা আমাদের আমলে নিতে হবে। কিন্তু গভীর মহাকাশে মহাবিশ্বের অধিকাংশ জায়গা বিক্ষুব্ধ এবং সেখানে ক্ষতিকর বিকিরণ বলয় আর ভয়ানক সব উল্কার রাজত্ব—সেই বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতেই হবে।

    মহাকাশ ভ্রমণের প্রথম যে সমস্যাটি সমাধান করতে হবে, সেটি ওজনহীনতা। দীর্ঘ মেয়াদে ওজনহীনতা নিয়ে রুশদের গবেষণায় দেখা গেছে, এতে দেহ মূল্যবান খনিজ ও রাসায়নিক হারায়। আর সেটি প্রত্যাশার চেয়েও অনেক দ্রুত ঘটে। এমনকি স্পেস স্টেশনে কঠোর ব্যায়াম কর্মসূচির পরও রুশ নভোচারীদের হাড় ও পেশি এতই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে তারা পৃথিবীতে ফিরে শিশুর মতো কোনোমতে হামাগুড়ি দিতে পারতেন। দীর্ঘ সময় মহাকাশে ওজনহীন অবস্থায় থাকার পরিণতি হলো পেশির দুর্বলতা, কঙ্কালতন্ত্রের ক্ষয়, লোহিত রক্তকণিকার নিম্নমুখী উৎপাদন, দেহের নিম্নমুখী প্রতিরক্ষা সাড়া ও ফুসফুসতন্ত্রের ক্রমহ্রাসমান কার্যকারিতা।

    মঙ্গলে অভিযানে সময় লাগতে পারে কয়েক মাস থেকে এক বছর। এতে আমাদের নভোচারীদের সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর প্রতিবেশী নক্ষত্রগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে এসব সমস্যা হয়ে উঠতে পারে আরও মারাত্মক। ভবিষ্যতের স্টারশিপে সে কারণে ঘূর্ণনব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এর মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে মহাকর্ষ সৃষ্টি করা যায় সেন্ট্রিফিউগাল বলের মাধ্যমে। তাতে নভোযানের মানুষগুলো টিকে থাকতে পারবে। এতে ভবিষ্যতের স্টারশিপগুলোর ব্যয় ও জটিলতা বেড়ে যাবে অনেক গুণ।

    দ্বিতীয়ত, মহাকাশে অতি ক্ষুদ্র উল্কাগুলো প্রতি ঘণ্টায় অনেক হাজার মাইল বেগে চলাফেরা করছে। এদের থেকে সুরক্ষার জন্য স্টারশিপগুলোকে অতিরিক্ত ঢাল ব্যবহার করতে হবে। স্পেশ শাটলের নিবিড় পরীক্ষায় প্রমাণ দেখা গেছে, অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও সম্ভাব্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব আসতে পারে এসব অতি ক্ষুদ্র উল্কা থেকে। ভবিষ্যতে স্পেসশিপগুলোতে ক্রুদের জন্য বিশেষভাবে অতিরিক্ত শক্তিশালী চেম্বার রাখতে হবে।

    মহাকাশের বিকিরণের মাত্রা আগে যে রকম ভাবা হতো, বাস্তবে তার চেয়েও অনেক বেশি। যেমন ১১ বছরের সৌরকলঙ্কের চক্রে সৌরবায়ু থেকে বিপুল পরিমাণ মারাত্মক প্লাজমা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। অতীতে এ ঘটনার কারণে সম্ভাব্য প্রাণঘাতী অতিপারমাণবিক কণার প্রবল স্রোতের বিরুদ্ধে স্পেস স্টেশনের নভোচারীরা বিশেষ সুরক্ষাব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিল। স্পেস ওয়াকের সময় এ ধরনের সৌর নির্গমন মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। (এমনকি লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত সামান্য ট্রান্স- আটলান্টিক ট্রিপে প্রতিটি যাত্রার সময়ও প্রতি ঘণ্টায় প্রায় এক মিলিরেম বিকিরণ নিঃসৃত হয়। এ যাত্রায় আমাদের ওপর যে পরিমাণ বিকিরণ নিঃসৃত হয়, তা প্রায় দাঁতের এক্স-রে করার মতো।) অন্যদিকে গভীর মহাশূন্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও চুম্বকীয় ক্ষেত্র আমাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না। তাতে বিকিরণ আমাদের জন্য ভয়াবহ এক সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।

    বিলম্বিত দৈহিক সক্রিয়তা

    এ পর্যন্ত রকেটের যেসব নকশা নিয়ে আলোচনা করলাম, তার একটি গ্রহণযোগ্য সমালোচনা হলো, নিকটবর্তী কোনো নক্ষত্রে যেতে এ রকম স্টারশিপ বানানো গেলেও সে জন্য সময় লেগে যেতে পারে কয়েক দশক থেকে কয়েক শতাব্দী। এ ধরনের কোনো অভিযানের জন্য বহু প্রজন্মের ক্রু যুক্ত থাকার দরকার হবে। তাদের উত্তরসূরিরাই হয়তো পৌঁছাতে পারবে কাঙ্ক্ষিত চূড়ান্ত গন্তব্যে।

    এর একটি সমাধান দেখানো হয়েছে এলিয়েন অ্যান্ড প্ল্যানেট অব দ্য এপস-এর মতো কিছু মুভিতে। সেটি হলো মহাকাশ অভিযাত্রীদের সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন বা বিলম্বিত দৈহিক সক্রিয়তা অভিজ্ঞতার মধ্যে থাকা। অর্থাৎ তাদের দেহের তাপমাত্রা এমন সতর্কভাবে কমিয়ে আনা, যতক্ষণ না তার দৈহিক কার্যপ্রণালি প্রায় থেমে যায়। যেসব প্রাণী হাইবারনেট করে বা শীতনিদ্রা যায়, তারা প্রতিবছর শীতে এই প্রক্রিয়া কাজে লাগায়। নির্দিষ্ট কিছু মাছ ও ব্যাঙ বরফের মধ্যে জমে কঠিন হয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এরপর তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তারা সেখান থেকে লাফিয়ে চলে যায়।

    এই আগ্রহোদ্দীপক ঘটনা নিয়ে গবেষণা করা জীববিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এসব প্রাণীর প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিফ্রিজ বা জমাট বাঁধাবিরোধী উপাদান তৈরির ক্ষমতা আছে। এগুলো পানির ফ্রিজিং পয়েন্টকে (যে তাপমাত্রায় পানি জমে বরফ হয়) নিচে নামিয়ে দেয়। এই প্রাকৃতিক অ্যান্টিফ্রিজ হিসেবে মাছের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন থাকে আর ব্যাঙের মধ্যে থাকে নির্দিষ্ট গ্লুকোজ। রক্তের মধ্যে এসব প্রোটিন চলাচলের কারণে মেরু অঞ্চলের মাইনাস ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মাছ টিকে থাকতে পারে। ব্যাঙের মধ্যে উচ্চ মাত্রার গ্লুকোজ বজায় রাখার ক্ষমতা তৈরি হয়। এর ফলে বরফ স্ফটিক হয়ে যাওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে তারা। তাদের দেহের বাইরের অংশ জমে কঠিন অবস্থায় চলে গেলেও ভেতরের কোনো কিছু জমাট বাঁধে না। এভাবে তাদের দেহের একটি হ্রাসমান পর্যায়ে হলেও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল রাখতে পারে।

    তবে এ ক্ষমতায় অভিযোজিত হওয়ার ক্ষেত্রে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সমস্যা রয়েছে। মানুষের টিস্যু জমাট বেঁধে গেলে কোষের ভেতরে বরফের ক্রিস্টাল বা স্ফটিক গঠিত হতে থাকে। বরফের স্ফটিক বাড়তে থাকলে সেগুলো কোষঝিল্লির ভেতর ঢুকে কোষঝিল্লি ধ্বংস করে দেয়। (তাই মৃত্যুর পর যেসব তারকা তরল নাইট্রোজেনে তাঁদের মাথা ও দেহ জমাট বাঁধিয়ে রাখতে চান, তাঁদের আরেকবার ভেবে দেখা উচিত।)

    এসব সমস্যা সত্ত্বেও সম্প্রতি সীমিত পরিসরে কিছু অগ্রগতির খবর পাওয়া গেছে। যেসব স্তন্যপায়ী প্রাণী সাধারণত হাইবারনেট করে না (ইঁদুর ও কুকুর), তাদের সীমিত পরিসরে সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন করে দেখা হয়েছে। ২০০৫ সালে পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কুকুরের রক্ত বরফশীতল এক বিশেষ মিশ্রণের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে তাদের জীবিত করতে সক্ষম হন। তিন ঘণ্টা ধরে ক্লিনিক্যালি ডেড থাকা কুকুরগুলোর হার্ট পুনরায় সচল করার পর তারা আবারও জীবিত হয়ে ওঠে। (এই ঘটনার পর বেশির ভাগ কুকুরই সুস্থ ছিল। তবে কিছু কুকুর ব্রেন ড্যামেজে আক্রান্ত হয়।)

    ওই বছরই হাইড্রোজেন সালফাইড থাকা একটি চেম্বারে কিছু ইঁদুর রেখে পরীক্ষা চালান বিজ্ঞানীরা। তাদের দেহের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কমিয়ে আনা হয়েছিল প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে। ফলে ইঁদুরগুলোর বিপাকক্রিয়ার হার স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ শতাংশ কমে যায়। শূকর ও ইঁদুরকে হাইড্রোজেন সালফাইড ব্যবহার করে ২০০৬ সালে সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন অবস্থায় রাখেন বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতলের চিকিৎসকেরা।

    ভবিষ্যতে এ ধরনের পদ্ধতি হয়তো গুরুতর দুর্ঘটনা বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে। রোগীকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত চিকিৎসকদের জন্য হয়তো সময় থামিয়ে দেবে সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন। তবে নভোচারীর ওপর এ রকম কৌশল ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে আরও কয়েক দশক বা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। কারণ, নভোচারীদের জন্য হয়তো কয়েক শতক টিকে থাকার মতো সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশনের প্রয়োজন।

    ন্যানোশিপ

    বিভিন্ন নক্ষত্রে আমাদের পৌঁছানোর এ ছাড়া আরও অনেকগুলো উপায় থাকতে পারে। সেগুলো আরও উন্নত ও এখন পর্যন্ত অপ্রমাণিত সব প্রযুক্তি। সাধারণত এসব প্রযুক্তি নিয়ে বিজ্ঞান কল্পকাহিনির গণ্ডির মধ্যে আলোচিত হয়। এগুলোর মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব হলো ন্যানো প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে মানুষবিহীন অনুসন্ধানী নভোযান। এ আলোচনায় আমি অনুমান করে নিয়েছি, স্টারশিপের জন্য প্রয়োজন বিশাল আকৃতির যন্ত্র, যেগুলো বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করবে। পাশাপাশি স্টার ট্রেক সিরিজের এন্টারপ্রাইজ স্টারশিপের মতো সেগুলো নক্ষত্রগুলোতে বিপুলসংখ্যক অভিযাত্রী বহন করতে পারবে।

    কিন্তু শুরুতে বহুদূর নক্ষত্রগুলোতে আলোর কাছাকাছি বেগে ক্ষুদ্র মানুষবিহীন অনুসন্ধানী নভোযান পাঠানো তুলনামূলক বেশি সুবিধাজনক হয়ে উঠতে পারে। আগেই বলেছি, ভবিষ্যতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষুদ্রাকৃতির নভোযান বানানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করবে ও তাদের ভেতরের যন্ত্রপাতি হবে অণুর সমান। এগুলো অতি হালকা হওয়ার কারণে আয়ন খুব সহজে আলোর কাছাকাছি বেগ অর্জন করতে পারে। গবেষণাগারে সাধারণ ভোল্টেজ ব্যবহার করে এমন ফল পাওয়া গেছে। বিশালাকৃতির বুস্টার রকেটের বদলে এগুলোকে হয়তো বিদ্যুৎ- চুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে আলোর কাছাকাছি গতিতে কোথায় পাঠানো যাবে। এর মানে, ন্যানোবটকে আয়নিত করা হলে ও কোনো চুম্বকীয় ক্ষেত্রে রাখা হলে তা মসৃণভাবে আলোর কাছাকাছি বেগে চলতে থাকবে। মহাকাশে ঘর্ষণজনিত বাধা না থাকায় ন্যানোবট এরপর নোঙর ফেলতে পারবে বিভিন্ন নক্ষত্রে। এভাবে বৃহৎ আকৃতির স্টারশিপে উদ্ভূত অনেকগুলো সমস্যা বেশ দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। মানুষবাহী বিশাল আকৃতির স্টারশিপ বানানো ও চালানোর বিপুল খরচের সামান্য অংশ ব্যয় করে মানুষবিহীন বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ন্যানোবট স্পেসশিপ পার্শ্ববর্তী নক্ষত্র ব্যবস্থায় পৌঁছাতে পারবে।

    এ ধরনের ন্যানোশিপ ব্যবহার করে প্রতিবেশী নক্ষত্রগুলোতে যাওয়া যাবে। মার্কিন এয়ারফোর্সের অবসরপ্রাপ্ত অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জেরাল্ড নোর্ডলির মতে, সৌরপালে ধাক্কা দিয়ে মহাশূন্যে চালিয়ে নেওয়ার কাজেও ব্যবহার করা যাবে একে। নোর্ডলির বলেন, ‘আলপিনের মাথার মতো ছোট আকৃতির একগুচ্ছ নভোযান উড়ে চলবে আর তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখবে। এদের কার্যত একটি ফ্ল্যাশলাইট দিয়েও ধাক্কা দেওয়া সম্ভব।’

    তবে ন্যানো স্টারশিপেও কিছু ঝামেলা আছে। গভীর মহাকাশে বিদ্যুৎ ও চুম্বকীয় ক্ষেত্রের কারণে নির্ধারিত পথ থেকে বিচ্যুত হতে পারে তারা। এ ধরনের বলক্ষেত্রের সঙ্গে যাতে কোনোভাবে প্রভাবিত না হয়, সে জন্য ওই ন্যানোশিপকে পৃথিবীতেই খুবই উচ্চ ভোল্টেজে ত্বারিত করতে হবে। এর ফলে সহজে আর বিচ্যুত হবে না তারা। দ্বিতীয়ত, আমরা হয়তো ঝাঁকে ঝাঁকে কয়েক লাখ এ ধরনের ন্যানোবট স্টারশিপ পাঠাতে পারি। এর মাধ্যমে তাদের একটি নির্দিষ্টসংখ্যক ন্যানোবট যাতে অন্তত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সে নিশ্চয়তা থাকবে। প্রতিবেশী নক্ষত্রগুলোতে অনুসন্ধান চালাতে ঝাঁকে ঝাঁকে ন্যানোবট স্টারশিপ পাঠানোর ব্যাপারটা অনেকের কাছে অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে। তবে এ ধরনের স্টারশিপ অনেক সস্তা হয়ে উঠবে একসময়। তাই এ রকম কোটি কোটি ন্যানোশিপ বানানো সম্ভব। তবে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাবে হয়তো তাদের অতি সামান্য অংশই।

    প্রশ্ন হলো, এসব ন্যানোশিপের চেহারা কেমন হবে? নাসার সাবেক প্রধান ড্যান গোল্ডিনের মতে, এগুলো হবে কোকের ক্যান আকৃতির। অন্যদের মতে, স্টারশিপগুলো সুইয়ের মতো হতে পারে। পেন্টাগন অনেক দিন ধরে স্মার্ট ডাস্ট বা ধুলো তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। স্মার্ট ধুলো আসলে ধুলো আকারের কণা, যাদের ভেতরে অতি ক্ষুদ্র সেন্সর থাকবে। যুদ্ধ পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক তথ্য পেতে সেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে স্প্রে করা হতে পারে। ভবিষ্যতে স্মার্ট ধুলো পার্শ্ববর্তী নক্ষত্রে পাঠানো হতে পারে বলে ধরে নেওয়া যায়।

    ধুলো আকারের ন্যানোবটের ইলেকট্রিক সার্কিট বানানো হবে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত ছাপ দেওয়ার টেকনিক ব্যবহার করে। এতে ৩০ ন্যানোমিটারের মতো ছোট আকৃতির বস্তু বানানো সম্ভব। অর্থাৎ এর মাধ্যমে মোটামুটি ১৫০টি অণু আড়াআড়ি স্থাপন করা যাবে। এসব ন্যানোবটকে চাঁদের মাটি থেকে চালু করা হবে রেল গান কিংবা কণা ত্বরক যন্ত্র দিয়ে। কণা ত্বরণ যন্ত্র অতিপারমাণবিক কণাকে প্রায় আলোর কাছাকাছি গতিতে পাঠাতে পারে। মহাকাশে কোটি কোটি ন্যানোবট পাঠানোর জন্য এসব যন্ত্রকে অবশ্যই বেশ সস্তা হতে হবে।

    এগুলো নিকটবর্তী কোনো নক্ষত্রব্যবস্থায় পৌঁছালে ন্যানোবটগুলো সেখানকার জনশূন্য বা নিষ্প্রাণ কোনো চাঁদে অবতরণ করতে পারবে। চাঁদের মহাকর্ষ কম হওয়ার কারণে সেখানে সহজেই অবতরণ করতে আর সেখান থেকে ফিরে আসতে পারবে ন্যানোবট। আবার এসব চাঁদের স্থিতিশীল পরিবেশের কারণে এটিই হয়ে উঠতে পারে অভিযান চালানোর জন্য আদর্শ ঘাঁটি। ওই চাঁদে প্রাপ্ত খনিজ ব্যবহার করে ন্যানোবট দিয়ে বানানো যেতে পারে ন্যানোফ্যাক্টরি। এভাবে হয়তো একটি শক্তিশালী রেডিও স্টেশন বানানো যাবে, যা পৃথিবীতে তথ্য পাঠাতে পারবে। কিংবা ন্যানোফ্যাক্টরি এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে, যা নিজের কোটি কোটি প্রতিলিপি বানিয়ে ওই সৌরব্যবস্থায় অনুসন্ধান চালাবে এবং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য নক্ষত্রেও অভিযান চালাবে। এভাবে একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে থাকবে তারা। এই শিপগুলো রোবটিক হওয়ার কারণে এদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কোনো দরকার হবে না। বরং রেডিও স্টেশন ব্যবহার করে তারা তথ্য পাঠাতে থাকবে।

    এইমাত্র যে ন্যানোবটের কথা বললাম, এদের মাঝেমধ্যে নিওম্যান প্রোবও বলা হয়। এই নাম দেওয়া হয়েছে বিখ্যাত গণিতবিদ জন ভন নিওম্যানের নামানুসারে। নিজের প্রতিলিপি বানাতে সক্ষম টুরিং মেশিনের গণিত সমাধান করেছিলেন তিনি। তাত্ত্বিকভাবে, নিজস্ব প্রতিলিপি বানাতে সক্ষম এ রকম ন্যানোবট স্পেসশিপ হয়তো শুধু পার্শ্ববর্তী নক্ষত্রগুলোতেই নয়, বরং পুরো গ্যালাক্সিতেই অনুসন্ধান চালাতে পারবে। ক্রমান্বয়ে পুরো এলাকায় কয়েক ট্রিলিয়ন ন্যানোবট থাকতে পারে, তারা সূচকীয় হারে বা প্রায় আলোর বেগে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এই প্রসারমাণ এলাকার ভেতর ন্যানোবটগুলো কয়েক হাজার বছরের মধ্যে পুরো গ্যালাক্সিতে কলোনি স্থাপন করে ফেলতে পারবে।

    এক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ন্যানোশিপের এই আইডিয়াটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের অধ্যাপক ব্রায়ান গিলক্রিস্ট। একটি ব্যাকটেরিয়া আকারের ন্যানোশিপ বানাতে গবেষণার জন্য সম্প্রতি নাসার ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড কনসেপ্ট থেকে ৫ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছেন তিনি। সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রিতে যে ছাপ দেওয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি লাখ লাখ ন্যানোশিপ বাহিনী বানানোর পরিকল্পনা করছেন। মাত্র কয়েক ন্যানোমিটার চওড়ার অতি ক্ষুদ্র ন্যানোকণা বের করে দিয়ে এসব ন্যানোশিপ চালিত হতে পারবে নিজে নিজেই। কোনো বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ন্যানোকণাগুলো শক্তির জোগান পাবে, অনেকটা আয়ন ইঞ্জিনের মতো। প্রতিটি ন্যানোকণার ওজন একটি আয়নের তুলনায় কয়েক হাজার গুণ বেশি হওয়ার কারণে প্রচলিত আয়ন ইঞ্জিনের চেয়ে এই ইঞ্জিনগুলো অনেক বেশি ধাক্কা তৈরি করতে পারবে। কাজেই ন্যানোশিপের ইঞ্জিনের সুবিধা প্ৰায় আয়ন ইঞ্জিনের মতো হলেও এর থেকে বাড়তি যে সুবিধাটুকু পাওয়া যাবে সেটি হলো, এর অনেক বেশি থ্রাস্ট। গিলক্রিস্ট এরই মধ্যে এই ন্যানোশিপ বানানোর জন্য কিছু যন্ত্রাংশে ছাপ দিতে শুরু করেছেন। এভাবে তিনি একটি সিলিকন চিপের ভেতর ১০ হাজার আলাদা থ্রাস্টার রাখতে পারবেন। আর এর আকার হবে মাত্র ১ সেন্টিমিটার। তাঁর তৈরি ন্যানোশিপ বহরের দক্ষতা পরীক্ষা করার জন্য শুরুতে তিনি সেগুলো সৌরজগতের ভেতরেই কোথাও পাঠাতে চান। তবে ক্রমেই এসব ন্যানোশিপ কোনো নক্ষত্রে যাওয়ার জন্য প্রথম বহর হয়ে উঠতে পারে।

    নাসা ভবিষ্যতের যেসব প্রযুক্তি নিয়ে জল্পনাকল্পনা করছে, তার মধ্যে গিলক্রিস্টের পরিকল্পনাটি অন্যতম। কয়েক দশক নিষ্ক্রিয় থাকার পর সম্প্রতি নাসা আন্তনাক্ষত্রিক ভ্রমণ নিয়ে কিছু গুরুতর প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। এর মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য প্রযুক্তি ছাড়াও রয়েছে চমকপ্রদ আরও কিছু প্রযুক্তি। ১৯৯০ দশকের শুরুতে বার্ষিক অ্যাডভান্সড স্পেস প্রোপালশন রিসার্চ ওয়ার্কশপের আয়োজক ছিল নাসা। এ সময় নামকরা ইঞ্জিনিয়ার ও পদার্থবিদদের দল এসব প্রযুক্তি বাছাই করেন। আবার ব্রেকথ্রু প্রোপালশন ফিজিকস প্রোগ্রাম আরও উচ্চাভিলাষী। এ প্রোগ্রামে আন্তনাক্ষত্রিক ভ্রমণে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার সম্পর্ক অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অবশ্য এখানে এখনো কোনো ঐকমত্য না থাকলেও তাদের বেশির ভাগ কর্মসূচি মনোযোগ দিয়েছে লেজার পাল ও বিভিন্ন ধরনের ফিউশন রকেটের মতো শীর্ষ প্রযুক্তিগুলোতে।

    স্পেসশিপ ডিজাইনে ধীরগতির হলেও স্থিতিশীল উন্নয়নের কারণে বেশ যৌক্তিকভাবে অনুমান করা যায়, প্রথম মানুষবিহীন অনুসন্ধানী নভোযান হয়তো এই শতাব্দীর শেষ দিকে কিংবা পরের শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রতিবেশী কোনো নক্ষত্রে পাঠানো সম্ভব হবে। সে কারণে এখানে একে প্রথম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

    অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতিবস্তু ব্যবহার করে ডিজাইন করা স্টারশিপ হবে সবচেয়ে শক্তিশালী। অবশ্য এখনো এটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতো শোনালেও পৃথিবীতে এরই মধ্যে প্রতিবস্তু তৈরি করা গেছে। বলা বাহুল্য, ভবিষ্যতে কোনো একদিন হয়তো কার্যকরী মানুষবাহী স্টারশিপের জন্য সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ডিজাইনটিও মিলে যাবে।

    তথ্যনির্দেশ

    প্রোটন : নিউট্রনের মতো একটি কণা। তবে এ কণা ধনাত্মক চার্জযুক্ত। বেশির ভাগ পরমাণুর কেন্দ্রে এ কণা প্রায় অর্ধেক থাকে। এ কণা তিনটি কোয়ার্ক (দুটি আপ এবং একটি ডাউন কোয়ার্ক) দিয়ে গঠিত।

    নিউট্রন তারা : শীতল নক্ষত্র, যা একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর কিছু সময় অবশিষ্ট থাকে। একটি নক্ষত্রের কেন্দ্রে প্রধান পদার্থগুলো চুপসে ঘন ভরের নিউট্রনে পরিণত হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

    কণা ত্বরক যন্ত্র : কণা ত্বরক যন্ত্র বা পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটর যন্ত্রের সাহায্যে বিদ্যুৎ-চুম্বক ব্যবহার করে চার্জিত কণাগুলোকে অনেক বেশি শক্তি দান করে গতিশীল করতে পারে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু
    Next Article দ্য লাস্ট ডন – মারিও পুজো

    Related Articles

    মিচিও কাকু

    প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস : বিকল্প মহাবিশ্বের বিজ্ঞান ও আমাদের ভবিষ্যৎ – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    দ্য গড ইকুয়েশন : থিওরি অব এভরিথিংয়ের খোঁজে – মিচিও কাকু

    November 10, 2025
    মিচিও কাকু

    ফিজিক্স অব দ্য ফিউচার – মিশিও কাকু

    November 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }