Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ফেলুদা এণ্ড কোং – সত্যজিৎ রায়

    উপন্যাস সত্যজিৎ রায় এক পাতা গল্প123 Mins Read0

    গোসাঁইপুর সরগরম – ৪

    পরদিন সকালে গ্রামটা ঘুরে দেখে আমরা জাগরণী ক্লাবের বাড়িতে সিরাজদ্দৌলা নাটকের রিহার্শাল দেখতে গেলাম। ফেলুদা অভিনেতাদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ক্যানেডিয়ান থিয়েটার সম্বন্ধে একটা ছোটখাটো বক্তৃতা দিয়ে ফেলল। সেখানেই আলাপ হল গোসাঁইপুরের একমাত্র মূকাভিনেতা বেণীমাধবের সঙ্গে। বললেন শুক্কুরবার বিকেলে আমাদের বাড়িতে এসে তাঁর আর্ট দেখিয়ে যাবেন। ‘দেখবেন স্যার, ফ্ল্যাট ছাতের উপর সিঁড়ি বেয়ে ওঠা দেখিয়ে দেব, ঝড়ের মধ্যে মানুষের অভিব্যক্তি কীরকম হয়, স্যাড থেকে ছ’রকম চেঞ্জের মধ্যে দিয়ে হ্যাপিতে নিয়ে যাওয়া সব দেখিয়ে দেব।’

    বিকেলে সেগুনহাটির মেলা দেখতে গেলাম। সেখানে নাগরদোলায় চড়ে, চা চিকেন কাটলেট আর রাজভোগ খেয়ে স্পাইডার লেডির বীভৎস ভেলকি দেখে, সাড়ে তেরো টাকার খুচ্‌রো জিনিস কিনে গোসাঁইপুর যখন ফিরলাম তখন ছ’টা বাজে। আকাশে আলো আছে দেখেই বোধহয় ফেলুদা বলল একবার মল্লিকবাড়িতে জীবনবাবুর সঙ্গে দেখা করে যাবে। তুলসীবাবু বললেন বাড়ি গিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন।

    সদর দরজায় পৌঁছানোর আগেই জীবনবাবু বেরিয়ে এলেন; বললেন ওঁর ঘরের জানালা দিয়েই অনেক আগেই আমাদের দেখতে পেয়েছেন। তারপর ফেলুদার প্রশ্নের উত্তরে বললেন যে নতুন কোনও খবর নেই। ‘আপনাদের বাগানটা একটু দেখতে পারি?’ ‘নিশ্চয়ই’, বললেন জীবনবাবু, ‘আসুন আমার সঙ্গে।’

    বাগানটা অবিশ্যি ফুলের বাগান নয়, এখানে বেশির ভাগই বড় বড় গাছ আর ফলের গাছ। ফেলুদা ঘুরে ঘুরে কী দেখছে তা ওই জানে! একবার এক জায়গায় থেমে মাটিটার দিকে যেন একটু বেশিক্ষণ ধরে দেখল। এরই ফাঁকে আবার মল্লিকবাড়ির দোতলার পিছনের বারান্দা থেকে ‘কে রে, কে ওখানে?’ বলে জীবনবাবুর ঠাকুমা চেঁচিয়ে উঠলেন। তাতে জীবনবাবুকে আবার উলটে চেঁচিয়ে বলতে হল, ‘কেউ না ঠাকুমা—আমরা।’ ‘ও, তোরা’, উত্তর দিলেন ঠাকুমা, ‘আমি রোজই যেন দেখি কারা ঘুর ঘুর করে ওখানে।’

    ‘আপনার ঠাকুমার দৃষ্টিশক্তি কেমন?’ জিজ্ঞেস করল ফেলুদা।

    ‘খুবই কম’, বললেন জীবনবাবু, ‘এবং তার সঙ্গে মানানসই শ্রবণশক্তি!’

    ‘বাগান এমনিতে তেমন দেখাশোনা হয় না?’

    ‘ওই ভোলানাথবাবুই যা দেখেন।’

    ‘রাত্রে লোক থাকে এদিকে?’

    ‘রাত্রে? মাথা খারাপ! রাত জেগে বাগানে টহল দেবে এরা?’

    ‘সদর দরজায় তালা দেওয়া থাকে আশা করি?’

    ‘ওটা ভোলানাথবাবুর ডিউটি। তবে আমি থাকলে আমিই চাবি বন্ধ করি, চাবি আমার কাছেই থাকে।’

    ‘ভোলানাথবাবুর সঙ্গে আলাপ হয়নি; তাঁকে একবার ডাকতে পারেন!’

    ভোলানাথবাবুকে দিনের আলোয় দেখে মনে হল তিনি শহুরে লোকের মতো ধুতি শার্ট পরলেও তাঁর চেহারায় এখনও অনেকখানি তাঁর পূর্বপুরুষের ছাপ রয়ে গেছে। খালি গা করে মাঠে নিয়ে, হাতে লাঙল ধরিয়ে দিলে খুব বেমানান হবে না। আমরা বাড়ির সামনে বাঁধানো পুকুরের ঘাটে বসে কথা বললাম। বর্ষার জলে পুকুর প্রায় কানায় কানায় ভরে আছে আর সারা পুকুর ছেয়ে আছে শালুকে। নবীন বলে একটি চাকরকে লেবুর সরবত আনতে বললেন জীবনবাবু। চারিদিক অদ্ভুত রকম নিস্তব্ধ, কেবল দূরে কোত্থেকে জানি চিঁ চিঁ করে শোনা যাচ্ছে ট্রানজিস্টারে গান। ওটা না হলে সত্যিই যেন মনে হত আমরা কোন আদ্যিকালে ফিরে গেছি।

    ‘মৃগাঙ্কবাবু আপনাদের বাড়িতে একবারই এসছেন?’ ভোলানাথবাবুকে জিজ্ঞেস করল ফেলুদা।

    ‘সম্প্রতি একবারই এসেছেন।’

    ‘আর আগে?’

    ‘আগেও এসেছেন কয়েকবার। কাটোয়া থেকে আষাঢ় মাসে মদন গোসাঁইর দল এল, তখন মৃগাঙ্কবাবুই তাদের নিয়ে এসে কর্তাকে কেত্তন শুনিয়ে যান। এমনিতেও বার কয়েক একা আসতে দেখেছি; মনে হয় কর্তা একটা কুষ্ঠি ছ’কে দেবার কথা বলেছিলেন।’

    ‘সে কুষ্ঠি হয়েছে?’

    ‘আজ্ঞে তা বলতে পারব না।’

    ‘এবার যে এলেন, তার ব্যবস্থা কে করল?’

    ‘আজ্ঞে কর্তার নিজেরই ইচ্ছা ছিল, আর কবিরেজ মশাইও বললেন, আর—আজ্ঞে, আমিও বলেছিলাম।’

    ‘আপনার তো যাতায়াত আছে ভটচায বাড়িতে?’

    ‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’

    ‘ভক্তি হয়?’

    ভোলানাথবাবুর মাথা হেঁট হয়ে গেল।

    ‘আজ্ঞে কী আর বলব বলুন। আমার মেয়ের নাম ছিল লক্ষ্মী, যেমন নাম তেমনি মেয়ে, এগারোয় পড়তে না পড়তে ওলাউঠোয় চলে গেল। মৃগাঙ্কবাবু শুনে বললেন, সে কেমন আছে জানতে চাও তার নিজের কথায়?’

    ভোলানাথবাবু অন্ধকারে ধুতির খুঁটে চোখ মুছলেন। তারপর সামলে নিয়ে বললেন, ‘সেই মেয়েকে নামিয়ে আনলেন ভটচায মশাই। মেয়ে বললে ভগবানের কোলে সে সুখে আছে, তার কোনও কষ্ট নাই। মুখে বললে না অবিশ্যি, কাগজে লেখা হল। সেই থেকে…’

    ভোলানাথবাবুর গলা আবার ধরে গেল। ফেলুদা ব্যাপারটাকে আর না বাড়িয়ে বলল, ‘এ বাড়িতে আত্মা নামানোর সময় আপনি ছিলেন?’

    ‘ছিলাম, তবে ঘরের মধ্যে ছিলাম না, দরজার বাইরে। ভেতরে কেবল কর্তামশাই আর ভটচায মশাই আর নিত্যানন্দ ছাড়া কেউ ছিলেন না। মা ঠাকরুন যেন জানতে না পারেন এইটে বলে দিয়েছিলেন কর্তামশাই, তাই দরজায় পাহারা থাকতে হল।’

    ‘তা হলে আপনি কিছুই শোনেননি?’

    ‘আজ্ঞে দশ মিনিট খানেক চুপচাপের পর মধু সরকারের বাঁশ বনের দিক থেকে যখন শেয়াল ডেকে উঠল সেই সময় যেন কার্তামশাইয়ের গলায় শুনলাম—কেউ এলেন, কেউ এলেন? তারপর আর কিছু শুনিনি। সব হয়ে যাবার পর ভটচায মশাইকে নিয়ে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।’

    সরবত খাওয়া শেষ করে একটা চারমিনার ধরিয়ে ফেলুদা বলল, ‘দুর্লভ মল্লিকের লোক আপনাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল সে কথা মনে পড়ে?’

    ভোলানাথবাবুর উত্তর এল ছোট্ট দুটো কথায়।

    ‘তা পড়ে।’

    ‘আপনার মনে আক্রোশ নেই?’

    ফেলুদাকে এ ধরনের ধাক্কা-মারা প্রশ্ন করতে আগেও দেখেছি। ও বলে এই ধরনের প্রশ্নের রিঅ্যাকশন থেকে নাকি অনেক কিছু জানা যায়। ভোলানাথবাবু জিভ কেটে মাথা হেঁট করলেন। তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললেন, ‘এখন মাথাটা ঠিক নেই তাই, নইলে কর্তামশাইয়ের মতো মানুষ ক’জন হয়?’

    ফেলুদা আর কোনও প্রশ্ন করল না। ভোলানাথবাবু একটুক্ষণ অপেক্ষা করে বললেন, ‘যদি অনুমতি দেন—আমি একটু ভটচায মশাইয়ের বাড়ি যাব।’

    ফেলুদা বা জীবনবাবুর কোনও আপত্তি নেই জেনে ভদ্রলোক চলে গেলেন। জীবনবাবু একটু উস্‌খুস্‌ করছেন দেখে ফেলুদা বলল, ‘কিছু বলবেন কি?’

    ‘আপনি কিছুটা অগ্রসর হলেন কিনা জানার আগ্রহ হচ্ছে।’

    বুঝলাম ভদ্রলোক নিজের সম্বন্ধে বিশেষ চিন্তিত।

    ফেলুদা বলল, ‘ভোলানাথবাবুকে বেশ ভালো লাগল।’

    জীবনবাবুর মুখ শুকিয়ে গেল। ‘তার মানে আপনি বলতে চান—’

    ‘আমি নিশ্চয়ই বলতে চাই না আপনাকে আমার ভালো লাগে না। আমি বলতে চাই শুধু দু-একটা খটকার উপর নির্ভর করে তো খুব বেশি দূর এগোনো যায় না—বিশেষ করে সেই খটকাগুলোর সঙ্গে যখন মূল ব্যাপারটার কোনও সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে না। এখন যেটা দরকার সেটা হল কোনও একটা ঘটনা যেটা—’

    ‘কে রে, কে ওখানে?’

    ফেলুদার কথা থেমে গেল, কারণ ঠাকুমা চেঁচিয়ে উঠেছেন। আওয়াজটা এসেছে বাড়ির পিছন দিক থেকে। চারদিক নিস্তব্ধ বলে গলা এত পরিষ্কার শোনা গেল।

    ফেলুদা দেখলাম মুহূর্তের মধ্যে সোজা বাগানের দিকে ছুটছে। আমরাও তার পিছু নিলাম। লালমোহনবাবু এতক্ষণ পুকুরের দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে গান গাইছিলেন। তিনিও দেখলাম সঙ্গে সঙ্গে দিলেন ছুট।

    তিনটে টর্চের আলোর সাহায্যে আমরা বাগানে গিয়ে পৌঁছলাম। ফেলুদা এগিয়ে গেছে, সে পশ্চিমের পাঁচিলের গায়ে একটা ধসে যাওয়া অংশের পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে টর্চ ফেলে রয়েছে। ‘কাউকে দেখলেন?’ জীবনবাবু প্রশ্ন করলেন।

    ‘দেখলাম, কিন্তু চেনার মতো স্পষ্ট নয়।’

    আধঘণ্টা ধরে মশার বিনবিনুনি আর কামড় আর ঝিঁঝির কান ফাটানো শব্দের মধ্যে সারা বাগান চষে যেটা পাওয়া গেল সেটা একটা চরম রহস্য। সেটা হল বাগানের উত্তর দিকের শেষ মাথায় একটা গাছের গুঁড়ির পাশে একটা সদ্যখোঁড়া গর্ত। তার মধ্যে যে কী ছিল বা কী থাকতে পারে সে ব্যাপারে জীবনবাবু কোনওরকম আলোকপাত করতে পারলেন না। লালমোহনবাবু অবিশ্যি সোজাসুজি বললেন গুপ্তধন, কিন্তু জীবনবাবু বললেন তাঁদের বংশে কস্মিনকালেও গুপ্তধন সম্বন্ধে কোনও কিংবদন্তি ছিল না। ফেলুদা যে কথাটা বলল সেটাও আমার কাছে পুরোপুরি রহস্য।

    ‘জীবনবাবু, আমার মনে হচ্ছে আমরা এই ঘটনাটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’

    আমরা কিছুক্ষণ হল খাওয়া-দাওয়া সেরে আমাদের ঘরে এসে বসেছি। আজ বেশ কাহিল লাগছে; বুঝতে পারছি অন্ধকারে বনবাদাড়ে ঘোরাটা সহজ কাজ নয়। আমার আর লালমোহনবাবুর পায়ে বেশ কয়েক জায়গায় ডেটল দিতে হয়েছে। কারণ আগাছার মধ্যে কাঁটা-ঝোপও ছিল বেশ কয়েকটা।

    একমাত্র ফেলুদাকে দেখে মনে হচ্ছে তার মধ্যে কোনও পরিবর্তন নেই। সে আজ তার খাতা খুলেছে। গায়ে ওডোমস লাগিয়ে বালিশে বুক দিয়ে শুয়ে কী যেন হিজিবিজি লিখছে। লালমোহনবাবু একটা হাই অর্ধেক তুলে থেমে গেলেন, কারণ ফেলুদা একটা প্রশ্ন করেছে—লালমোহনবাবুকে নয়, তুলসীবাবুকে। তুলসীবাবু আমাদের জন্য পান নিয়ে ঢুকছেন।

    ‘তুলসীবাবু, আপনি যদি একজন মহৎ লোককে একটা লোক ঠকানো ফন্দি বাতলে দেন, সে-লোক যদি সে ফন্দি কাজে লাগায়, তা হলে তাকে কি আর মহৎ বলা চলে?’

    তুলসীবাবু ভ্যাবাচ্যাকা ভাব করে বললেন, ‘ওরে বাবা, আমি মশাই এসব হেঁয়ালি-টেয়ালিতে একেবারেই অপটু। তবে হ্যাঁ, মহৎ লোক অত নীচে নামবেন কেন? নিশ্চই নামবেন না।’

    ‘যাক্‌’, বলল ফেলুদা, ‘আমি খুশি হলাম জেনে যে আপনি আমার সঙ্গে এক মত।’

    একেই তো প্যাঁচালো রহস্য, সেটাকে ধোঁয়াটে কথা বলে ফেলুদা আরও পেঁচিয়ে দিচ্ছে, আমি তাই ও নিয়ে আর একদম চিন্তা না করে মশারির ভিতর ঢুকলাম। কিন্তু চিন্তা করব না ভাবলেই কি আর মন থেকে চিন্তা পালিয়ে যায়? আমার নিজের মনেই যে প্রশ্ন জমা হয়েছে একগাদা। শ্যামলালবাবুর পায়ে কাদা কেন? কে পাঠিয়েছে ঠগীর ফাঁস আর হুম্‌কি চিঠি? ঠাকুমা কাকে দেখে চেঁচালেন আজকে? বাগানের গর্তে কী ছিল? আত্মার উত্তর লেখা কাগজ দেখালেন না কেন মল্লিকমশাই?……গতকালের মতো আজও বিছানায় পড়তে না পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কেবল তফাতটা এই যে গতকাল এক ঘুমে রাত কাবার, আর আজ চোখ খুলে দেখি তখনও অন্ধকার।

    আসলে ঘুমটা ভেঙেছে একটা চিৎকারে। সেটার জন্য দায়ী বোধহয় লালমোহনবাবু, কারণ তিনি খাটের উপর বসে আছেন মশারির বাইরে, সামনের খোলা জানালার গরাদের ভিতর দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়েছে তাঁর মুখের উপর, আর স্পষ্ট দেখছি তাঁর চোখ গোল হয়ে গেছে।

    ‘বাপ্‌রে বাপ্‌, কী স্বপ্ন, কী স্বপ্ন!’ বললেন লালমোহনবাবু।

    ‘কী দেখলেন আবার?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    ‘দেখলুম আমার ঠাকুরদা হরিমোহন গাঙ্গুলীকে……একটা সংবর্ধনা সভা, তাতে ঠাকুরদা স্পিচ দিলেন, তারপর আমার গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে বললেন, এই দ্যাখ্‌, কেমন রোমাঞ্চকর মালা দিলাম তোকে—আর আমি দেখছি সেটা ফুলের মালা নয় তপেশ, সেটা—ওরেব্বাস্‌রে বাস্‌—সেটা খুদে খুদে রক্তবর্ণ নরমুণ্ড দিয়ে গাঁথা!’

    ‘এমন চমকার ব্রাহ্ম মুহূর্তে আপনি এই সব উদ্ভট স্বপ্ন দেখছেন?’

    আশ্চর্য! ফেলুদা যে তার খাটে নেই সেটা এতক্ষণ খেয়ালই করিনি। সে ছাতের দরজা দিয়ে ঘরে এসে ঢুকল; বুঝলাম সে যোগব্যায়াম করছিল। যাক্, তা হলে সকাল হয়ে গেছে।

    ‘কী করব বলুন,’ বললেন লালমোহনবাবু, ‘আপনার ওই রক্তবরণ আর আত্মারাম আর সংবর্ধনা মিলে এমন জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে আমার মধ্যে।’

    আমরা উঠে পড়লাম। তুলসীবাবু কি এখনও ঘুমোচ্ছেন? ছাতে এসে দেখি পুব দিকটা সবে ফরসা হয়েছে, তার ফলে চাঁদের আলোটা ফিকে লাগছে। দু’তিনটে তারা এখনও পিট্‌-পিট্‌ করছে, কিন্তু তাদের মেয়াদও আর বেশিক্ষণ নয়। দাঁতন দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করব বলে কিছু নিমের ডাল ভেঙে রেখেছিলাম—ফেলুদা বলে দোকানের যে কোনও টুথব্রাশ আর পেস্টের চেয়ে দশ গুণ বেশি ভালো—তারই একটা চিবিয়ে রেডি করছি, এমন সময় শুনলাম পরিত্রাহি চিকার।

    ‘মিত্তির মশাই! মিত্তির মশাই!’

    ভোলানাথবাবুর গলা। আমরা দুদ্দাড় করে নীচে গিয়ে হাজির হলাম। ‘সর্বনাশ হয়ে গেছে!’

    ভোরের আকাশে ভদ্রলোকের ফ্যাকাশে মুখ আরও ফ্যাকাশে লাগছিল। ‘কী হয়েছে?’ ফেলুদা দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল।

    ‘কাল রাত্তিরে বাড়িতে ডাকাত পড়ে সব লণ্ডভণ্ড। সিন্দুক খালি। কর্তামশাইয়ের হাত-পা-মুখ বেঁধে রেখেছিল। আমাকেও বেঁধেছিল, সকালে ছোটবাবু এসে খুলে দিলেন। আপনি শিগ্‌গির আসুন!’

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাক্স রহস্য – সত্যজিৎ রায়
    Next Article যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    Related Articles

    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }