Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বকুলকথা – আশাপূর্ণা দেবী

    লেখক এক পাতা গল্প547 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২৬. একখানা অনামী পত্রিকার পৃষ্ঠা

    একখানা অনামী পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টে উল্টে দেখছিলেন অনামিকা দেবী। এ পত্রিকাটি কোনোদিন অনামিকা দেবীর দৃষ্টিগোচরে আসেনি, নামও শোনেন নি কখনো, এবং পত্রিকার চেহারা দেখে অন্ততঃ ওই না দেখা বা না-শোনার জন্য লোকশান-বোধ আসছে না।

    তবু মন দিয়েই দেখছিলেন।

    কারণ এখানি অনামিকা দেবীর একজন হিতৈষী বন্ধু নিজের–খরচায় কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। হঠাৎ এমন একটা আজেবাজে পত্রিকা যত্ন করে পাঠিয়ে দেবার হেতু প্রথমটা বুঝতে পারেননি অনামিকা দেবী। যে অধ্যাপক বন্ধুটি পাঠিয়েছেন তার যে সাহিত্য রোগ আছে এমন সন্দেহ করবার কোন কারণ কোনোদিন ঘটেনি, কাজেই একথা ভাবলেন না–বোধ হয় ওনার কোনো লেখা ছাপা হয়েছে–

    তবে?

    যে ছেলেটিকে দিয়ে পাঠানো হয়েছিল, অনামিকা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কিছু বলে দিয়েছেন নাকি? কিংবা কোনো চিঠিপত্র?

    সে সবিনয়ে জানালো, না। তারপর আভূমি প্রণাম করে বিদায় নিলো।

    বইটা খুলে দেখতে পেলেন অনামিকা দেবী, বন্ধুর যা বলবার বইয়ের ভিতরেই লিখে দিয়েছেন। সূচীপত্রের পৃষ্ঠার মাথায় লাল পেন্সিলে লেখা রয়েছে–২৩ পৃঃ দ্বিতীয় কলমটা লক্ষ্য করবেন। কী স্পর্ধা দেখুন!

    অনামিকা একটু হেসে পাতা ওল্টালেন।

    অনামিকা দেবীর অনেক ভক্ত পাঠক আছে, অনেক হিতৈষী বন্ধুও আছেন। ওঁরা এ ধরনের কাজ মাঝে মধ্যে করে থাকেন! অনামিকার লেখা সম্পর্কে কোথাও কোনো সমালোচনা দেখলেই তারা হয় টেলিফোনযোগে জানিয়ে দেন, নয় সেই কাগজখানাই পাঠিয়ে দেন। যদি উঃ সমালোচনা অনামিকার চোখ এড়িয়ে যায় বা তেমন খেয়াল না করেন, তাই তাদের এই ব্যাকুল প্রচেষ্টা।

    অবশ্য সব সমালোচনাই যে তাদের ব্যাকুল করে তা নয়। সমালোচনার মধ্যে অনামিকা সাহিত্যকে ভূপাতিত করবার চেষ্টা অথবা নস্যাৎ করবার চেষ্টা দেখলেই তাদের বন্ধু-হৃদয়। ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

    বাংলার বাইরে অবস্থিত বন্ধুরাও অনেক সময় ডাকব্যয় খরচা করে করে এই মহৎ বন্ধুকৃত্য করে থাকেন। মহৎ ইচ্ছাই সন্দেহ নেই। অনামিকাকে কে কি বলছে, তার রচনা সম্পর্কে কার ক ধারণা, এটা অনামিকার জানা দরকার বৈকি। নইলে ভুল সংশোধনের চেষ্টা আসাবে কী করে?

    অনামিকার দৃষ্টিভঙ্গী অবশ্য (বন্ধুকৃত্য সম্পর্কে) আলাদা, তার কোনো বন্ধু সম্পর্কে বিরূপ কোনো সমালোচনা দেখলে তিনি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন, আহা ওর চোখে যেন পড়ে। সভাসমক্ষে সে প্রসঙ্গ উঠলে স্রেফ মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে বলেন, কই, দেখিনি তো? পড়িনি তো! পত্রিকাগুলো জানেন, বাড়ি ঢুকতে-না-ঢুকতেই বাড়ির বাইরে বেড়াতে চলে যায়।

    যাক, সকলের দৃষ্টিভঙ্গী তো সমান নয়।

    পত্রিকার নাম ভস্মলোচন।

    নামটার মৌলিকত্ব আছে।

    অনামিকা দেবী দেখলেন, জনৈক ছদ্মনামী সমালোচক রীতিমত উষ্ণ হয়ে লিখছেন যারা ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে বাংলা-সাহিত্যের হাটের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন, পত্রিকা সম্পাদকদেরই উচিত তাদের বয়কট করা। তাদের এই লোভ ও নির্লজ্জতার প্রশ্রয়দাতা পত্রিকা-সম্পাদকদের কাছে আমার নিবেদন, তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত লেখকদের নামের মোহ ত্যাগ করে তারা সাহিত্যের হাটে নতুন মুখ ডেকে আনুন। প্রতিষ্ঠার অহঙ্কারে ওই নামী রে যে কী রাবিশ পরিবেশন করছেন তা সম্পাদকদের অনুধাবন করে দেখতে অনুরোধ করি।

    এই যে বর্তমান সংখ্যা বেণুমর্মরে শ্ৰীমতী অনামিকা দেবীর একটি ছোট গল্প প্রকাশিত হয়েছে, কী এটি? এর কোন মাথামুণ্ডু আছে? কোনো যুক্তি আছে? নায়ক কেন অমন অদ্ভুত আচরণ করে বসলো–তার কোনো ব্যাখ্যা আছে? যা খুশি চালাবার অধিকার লাভ করলেই কি সেই অধিকারের অপব্যবহার করতে হয়? আগে শ্রীমতী অনামিকার লেখা যে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, যে মননশীলতা দেখা যেতো, আজ আর তার চিহ্ন চোখে পড়ে না।

    আসল কথা–তেল ফুরোবার আগেই আলো নিভিয়ে দেবার শিক্ষা এঁরা লাভ করেন। অনামিকা দেবী প্রমুখ বর্তমানের কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের নাম করে ভদ্রলোক বলেছে, এক সময়কার পাঠক এঁদেরকে নিয়েছিল, তখন এঁরা যথেষ্ট যশ-খ্যাতি এবং অর্থ অর্জন করেছিলেন, আজ এঁদের যশ নির্বাপিত, খ্যাতি বিলুপ্ত, তবু ওই শেষ বস্তুাড ই দেহে ঘাঁটি আগলে পড়ে না থেকে আসর ছেড়ে বিদায় নেবার সভ্যতা শেখাচ্ছেন না। ওঁদের জন্যই তরুণদের কাছে সুযোগের দরজা বন্ধ, দরজার মুখে ওঁদেরই ভিড়।

    ভাষাটি জ্বালাময়ী সন্দেহ নেই। আর তাজা রক্ত সন্দেহ নেই।

    অনামিকা দেবী একটু হেসে কাগজখানা সরিয়ে রেখে ওই ছদ্মনামী সমালোচকের উদ্দেশে মনে মনে বললেন, ওহে বাপু, তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে সাহিত্যের হাটে এসে পড়া এইসব লেখকগোষ্ঠী যখন হাটের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল, পূর্বতন প্রতিষ্ঠিতেরা কি বিবেক তাড়িত হয়ে অথবা সভ্যতাতাড়িত হয়ে এদের জন্যে আসন ছেড়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন? বলেছিলেন কি–এসো বৎস, এই নাও আমার ছত্রমুকুট, এখন থেকে তোমাদের দিন!

    আস্তে আস্তে হাসিটা মিলিয়ে গেল।

    ভাবলেন, কিন্তু অভিযোগটার মূলে কি ভিত্তি নেই? সত্যিই কি প্রথম জীবনের মতো সময় দিতে পারছেন তিনি? সময়ের কল্যাণেই না লেখার মননশীলতা, নিখুত নিপুণতা, সূক্ষ্মতা, চারুতা? ছুটতে ছুটতে কি শিল্পকর্ম নিটোল হয়ে উঠতে পারে?

    নিজের ইদানীংকালের লেখায় নিজেই তো লক্ষ্য করেছেন অনামিকা, বড় বেশী দ্রুত ভঙ্গীর ছাপ। লেখাটা হাতছাড়া করে দিয়ে মনে হয়, হয়তো আর একটু মাজা-ঘষার দরকার ছিল।

    কিন্তু সেই দরকারের সময় দিচ্ছে কে?

    অজস্র পত্রপত্রিকায় ভরা এই আসরে প্রায় প্রতিদিনই জন্ম নিচ্ছে আরো পত্রিকা। এ যুগের তরুণদের প্রধান ‘হবি’ পত্রিকা প্রকাশ।…যেনতেন করে একখানা পত্রিকা প্রকাশ করতে হবে। আর আশ্চর্য, সকলেরই দৃষ্টি এই তৈল ফুরিয়ে যাওয়া হতভাগ্য প্রতিষ্ঠিতদের দিকেই। প্রত্যাশা পূরণ না হলে তারা ব্যথিত হয়, ক্ষুব্ধ হয়, ক্রুদ্ধ হয়, অপমানিত হয়।

    অতএব যাহোক কিছু দাও।

    এই যাহোকের দাবী মেটাতে মেটাতে কলমও চালাক হয়ে উঠতে চায়। যাহোক দিয়েই সারতে চায়। চাওয়াটা অসঙ্গত নয়, সকলেরই একটা ক্লান্তি আছে।

    তাছাড়া

    কলমটা টেবিলে ঠুকতে ঠুকতে ভাবতে থাকেন অনামিকা দেবী, এ যুগের আমরা কী বিরাট একটা ঝড়ের সঙ্গে ছুটছি না? আমাদের কর্মে মর্মে জীবনে, জীবনযাত্রায়, আমাদের বিশ্বাসে, মূল্যবোধে, রাষ্ট্রচেতনায়, সমাজব্যবস্থায়, শিক্ষায়, সংস্কারে অহরহ লাগছে না ঝড়ের ধাক্কা? প্রতিমুহূর্তে আমরা আশান্বিত হচ্ছি আর আশাহত হচ্ছি। সোনার মূল্য দিয়ে সোনা কিনে হাতে তুলে দেখছি রাং। অভিভূত দৃষ্টি মেলে দেবতার দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখে পড়ছে দেবতার পা কাদায় পোঁতা।

    এই চোখ-ধাঁধানো ঝড়ের ধুলোর মাঝখানে উৎক্ষিপ্ত বিভ্রান্ত মন নিয়ে ছুটতে ছুটতে কোথায় বসে রচিত হবে আগের আদর্শের মননশীলতা?

    এ যুগের পাঠকমনও তত দ্রুতগামী।

    তবু নিজের সপক্ষের যুক্তিতে আমল দিতে চাইলেন না অনামিকা। বেদনার সঙ্গেই স্বীকার করলেন আগের মতো লেখার মধ্যে সেই ভালবাসার মনটি দিতে পারছেন না। যে ভালবাসার মনটি অনেক বাধা, অনেক প্রতিবন্ধকতা, অনেক দুঃখ পার করে করে বহন করে নিয়ে চলতো তার আত্মপ্রকাশের সাধনাকে।

    তবে কি সত্যিই কলম বন্ধের সময় এসেছে? বিধাতার অমোঘ নির্দেশ–আসছে ছদ্মনামীর ছদ্মবেশে। ছেলেবেলায় ছেলেখেলার বশে কলমটা হাতে নিলেও, কোথাও কোনোখানে বুঝি একটা অঙ্গীকার পালনের দায় ছিল, ছিল কোনো একটা বক্তব্য, সে অঙ্গীকার কি পালন করতে পেরেছেন অনামিকা? পাঠক-হৃদয়ে পেশ করতে পেরেছেন সেই বক্তব্য?

    নাকি সেগুলো পড়ে আছে ভাড়ার ঘরের তালাবন্ধ ভারী সিন্দুকের ভিতর, অনামিকা শুধু আপাতের পসরা সাজিয়ে জনপ্রিয়তার হাটে বেচাকেনার ঝুলি নিঃশেষিত করছেন?

    কিন্তু বক্তব্য কি শুধু পুঁজিতেই থাকে?

    দিনে দিনে জমে ওঠে না সে?

    আপাতের পসরায় সাজানো হয় না তাকে?

    যখন শম্পা ছিল, মাঝেমাঝেই বলতো, তুমি ওই সব পিতামহী প্রপিতামহীদের গল্প রেখে দিয়ে আমাদের নিয়ে গল্প লেখো দিকিন? স্রেফ এই আমাদের নিয়ে। আমরা যারা একেবারে এই মুহূর্তে পৃথিবীতে চরে বেড়াচ্ছি। নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ে যাকে বলে তোমার গিয়ে উদ্বেলিত হচ্ছি, নিজেদের ভয়ঙ্ক ভয়ঙ্কর উৎকট জালা-যন্ত্রণা নিয়ে ছটফটাচ্ছি।

    অনামিকা তখন হেসে বলেছিলেন, ও বাবা, তোদের আমি চিনি? শম্পা পা দোলাতে দোলাতে বলেছিল, চিনতে হবে। এড়িয়ে গেলে চলবে না। শম্পার কথাটা মনে পড়তেই একটা কথা মনে পড়ল।

    কতদিন যেন চলে গেছে শম্পা।

    অনামিকা বলবার সুযোগ পেলেন না, তবে এ যুগের পরম প্রতীক তোকে নিয়েই হাত পাকাই আয়।

    সেদিন একটা আলোচনা-সভায় আধুনিক সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে বসে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই একটি উদ্ধত তরুণ সভানেত্রীকে উদ্দেশ করে বলে উঠলো, এখনকার যুগকে নিয়ে আপনি লিখতে চেষ্টা করবেন না মাসীমা। ওটা আপনার এলাকা নয়। এ যুগের ছেলেমেয়েরা হচ্ছে বারুদের বস্তা, বুঝলেন? তারা অসভ্য উদ্ধত বেয়াড়া, কিন্তু ভেজাল নয়। তারা সৎ এবং খাঁটি।

    অনামিকা ভেবেছিলেন, এইখান থেকেই কি আমি এ যুগকে চেনা শুরু করবো? নাকি ওই অসভ্যতা অভব্যতা ঔদ্ধত্য বেয়াড়ামিটাও একটা চোখ-ধাঁধানো মেকী জিনিস? যাতে ওদের নিজেদেরও চোখ বেঁধে আছে?

    ছেলেরা আরো বললো, আপনি জানেন আমরা এ যুগের ছেলেরা কোন ভাষায় কথা বলি? আপনাদের ওই রঙিন পাখির সোনালী পালক-গাঁজা সুসভ্য ভাষা নয়। যে পোশাক পালিশ ছাড়া নগ্ন ভাষা, বুঝলেন? ধারণা আছে আপনার এ সম্বন্ধে? গিয়ে বসেছেন কোনো দিন আমাদের মধ্যে?

    সভানেত্রী হেসে বলেছিলেন, লেখকদের আর একটা চোখ থাকে জানোতা? কাজেই তোমাদের আড্ডায় গিয়ে না বসলেও, ধারণা হয়তো আছে। কিন্তু ওই তোমাদের পোশাক ছাড়াটাড়াগুলো নিজের হাতে লেখবার ক্ষমতা আছে বলে মনে হয় না।

    তবে? ছেলেটা বিজয়গর্বে বলেছিল, সেইজনেই বলছি–এটা আপনার এলাকা নয়। না বুঝে বারুদে হাত দিতে যাবেন না।

    এরাই ডেকে নিয়ে গেছে সভানেত্রীকে, ফুলের মালাটালাও দিয়েছে। অতএব হাসতেই হবে। হাসতে হয় ‘অমৃতং বালভাষিতং’ নীতিতে।

    তবু প্রশ্ন উঠছে মনে।

    এরাই কি সব?

    এদের নিয়েই কি যুগের বিচার?

    শম্পাটার ওপর মাঝে মাঝেই ভারী রাগ হয়। সেদিনও হয়েছিল। শম্পাটা থাকলে ডেকে বলতে পারতেন, ওহে, বারুদের বস্তার তুমিও তো একটি নমুনা? এখন বল দেখি এ বারুদ তোমরা আত্মরক্ষার কাছে লাগাবে, না আত্মধ্বংসের কাজে?

    কি যে করছে কোথায় বসে কে জানে! ভাবতে ভাবতে আবার নিজের দিকে ফিরে তাকালেন।

    নাঃ, সত্যিই হয়তো এবার কলমকে ছুটি দেবার সময় এসেছে, সত্যিই হয়তো ফুরিয়ে এসেছেন তিনি।

    ভাবলেন, নাহলে লিখে আর সেই আনন্দবোধ নেই কেন? কেন মনে হয় রাজমিস্ত্রীর ইটের পর ইট সাজানোর মতো এ কেবল শব্দের পর শব্দ গেঁথে চলেছি?

    ঘরের পূর্ব দেয়ালে একটা বুককেসে অনামিকার বইয়ের এক কপি করে রাখা আছে। আছে শম্পারই প্রচেষ্টায়। অবিশ্যি প্রথম দিকের বইগুলো সব নেই। দেখে রেগে গিয়েছিল শম্পা, এ কী অবহেলা? একটা করে কপিও রাখবে তো?

    অনামিকা হেসে বলেছিলেন, তুই যে তখন জন্মাসনি, বুদ্ধি দেবার কেউ ছিল না

    তবু ওর চেষ্টাতেই অনেকগুলো হয়েছে।

    সেইগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলেন অনামিকা, এও ওজন হিসেবে কম নয়। কিন্তু অনামিকর হঠাৎ মনে হল, সবই বৃথা কথার মালা গাঁথা। যে অঙ্গীকার ছিল, তা পালন করা হয়নি। করবার ক্ষমতা হয়নি। যে কথা বলবার বিনা তা বলা হয়নি।

    আবার একটু হাসি পেলো।

    যা পেরেছি, আর যা পারিনি, কিছুই তো দাঁড়িয়ে থাকবে না। এ যুগ দ্রুতগতির যুগ, তাই মুহূর্তে সব সাফ করে ফেলে। পরক্ষণেই ভুলে যায়।

    অধ্যাপক সাহিত্যিক অমলেন্দু ঘটকের কথা মনে পড়লো।

    ক্লাসে পড়াতে পড়াতে হার্ট-অ্যাটাকে মারা গেলেন, ক’দিনেরই বা কী সেটা? মৃত্যুর সদ্য আঘাতের মুখে মনে হয়েছিল, দেশ কোনোদিনই বুঝি এ ক্ষতি সামলাতে পারবে না। ভেঙে পড়েছিল দেশ, ভেঙে পড়েছিল দেশের মানুষ।

    কতো ফুল, কতো মালা, কতো শোকসভা! কতো শোকপ্রস্তাব! আশ্চর্য, এই বছরখানেকের মধ্যেই যেন দেশ অমলেন্দু ঘটকের নামটা পর্যন্ত বিস্মৃত হয়ে গেছে!

    আর স্মৃতিরক্ষা কমিটি? সে যেন ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

    অথচ নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে কী গভীর মূল্যবোধ ছিল অমলেন্দু ঘটকের। অমরত্বের স্বপ্ন ছিল তার মনে।

    অমলেন্দু ঘটককেই যদি লোকে মাত্র তিনশো পঁয়ষট্টিটা দিনের মধ্যেই ভুলে যেতে পারলো, অনামিকাকে দুটো দিন মনে রাখবারই বা দায় কার?

    একটি সহকর্মীর বিয়োগ একটি বড় শিক্ষা। নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়া যায় তা থেকে। অভিযোগের কিছু নেই, ধূলির প্রাপ্য খাজনা তো ধূলিকেই দিতে হয়।

    সব কথার মাঝখানে কেমন করে যেন শম্পার কথা মনে এসে যায়, সব চিন্তার মধ্যে শম্পার মুখ!

    ইচ্ছে হল খুব চেঁচিয়ে, শম্পা যেখানে আছে যেন তার কানে যায়, অমনি জোরে চেঁচিয়ে বলেন, শম্পা, আমি তোদের যুগকে আর কিছু জানি না জানি, জেনে ফেলেছি তোদের এই যুগ বড় নিষ্ঠুর। এই পরিচয়টাই বোধ হয় তার সব থেকে স্পষ্ট পরিচয়।

    ইচ্ছে হচ্ছে চুপ করে একটু বসে থাকতে, কিন্তু সময় কই? ওই ভস্মলোচন-টাই উল্টে দেখে নিতে থাকেন খানিক খানিক।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসুবর্ণলতা – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article প্রথম প্রতিশ্রুতি – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }