Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বকুলকথা – আশাপূর্ণা দেবী

    লেখক এক পাতা গল্প547 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২৮. পারুলের অবকাশ গেছে

    পারুলের অবকাশ গেছে বলে কি সেই আত্মমগ্নতায় ডুবে যাওয়া রোগটা তার বোনের ঘাড়ে এসে ভর করল?

    বকুল তো কখনো এমন শুয়ে বসে অলসভাবে স্মৃতিচারণ করে না। বকুলের এত সময়ই বা কোথায়? বকুল তো কবে থেকেই অনামিকা দেবী নামের জামাটা গায়ে দিয়ে ছুটছে আর ছুটছে। বকুলকে পাঠকসমাজ এখনো ফেলে দেয়নি।

    তবু বকুল জানে একদিন দেবে ফেলে, অনায়াসে ঠোঁট উল্টে বলবে, না বাবা, ওঁর লেখা আর পড়া যায় না! সেই মনস্তত্ত্বের তত্ত্ব নিয়ে কথার ফেনা আর ফেনানো! যেন মানুষ নামের জীবটার শুধু মনই আছে, রক্তমাংসের একটা দেহ নেই!

    এ ধরনের মন্তব্য অন্যের সম্বন্ধে কানে এসেছে, অতএব বোঝা শক্ত নয়, অনামিকার সম্বন্ধেও এ মন্তব্য তোলা আছে। তখন শুধু সম্পাদকের খাতায় যে নিমন্ত্রণের তালিকা আছে, সেই তালিকার খাতিরেই মাঝে মাঝে এক একটা নিমন্ত্রণ পত্র আসবে, সামাজিক নিমন্ত্রণের মত। কারণ বিজ্ঞাপনদাতারা কতকৃগুলো নাম মুখস্থ করে রেখেছে, সেগুলোই তারা ভাল বোঝ। আধুনিক অতি-আধুনিকদের নাম মাথামোটা কারবারী লোকেদের কানে ঢুকতে দেরি হয়।

    তখন সেই সামাজিক দায়ে লেখা ছাপা হলেও, পাঠক অনামিকা নামের ফর্মাটা উল্টে ফেলে চোখ ফেলবে অন্যত্র! প্রকাশকরা যাঁরা নাকি এখনো হাঁটাহাঁটি করছেন, তারা বইটা ছাপতে নিয়েও ফেলে রেখে উঠতি নামকরাদের বইগুলো আগে ছাপবেন।

    এ হবেই। এ নিয়তি।

    এ নিয়তি তো চোখের সামনেই কত দেখছেন অনামিকা দেবী। লাইব্রেরীতে যাঁর বই পড়তে পেতনা, লাইব্রেরীরা এখন তার বই কিনতে চায় না, পয়সাটা মিথ্যে আটকে রাখবে বলে। জনপ্রিয়র দেবতা তো জনগণ! তারা যদি একবার মুখ ফেরান, তাহলেই তো হয়ে গেল।

    অনামিকা দেবীর দেবতা এখনো হয়তো বিমুখ হননি, কিন্তু হতে কতক্ষণ? অনামিকা চুপচাপ শুয়ে সেই দেবতাদের কথা চিন্তা করেন।

    না, ভাগ্যের কাছে অকৃতজ্ঞ হবেন না তিনি। সামান্য সম্বল নিয়ে এই হাটে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, বিনিময়ে পেয়েছেন অগাধ অবিশ্বাস্য।

    মন পূর্ণ হয়ে আছে কানায় কানায়। ওই ভালবাসার দানেই নিজের অক্ষমতার গ্লানি মুছে যায়, মনে হয় কী পেয়েছি আর না পেয়েছি তার হিসেব করতে বসে দুঃখ ডেকে এনে কী হবে? যা পেয়েছি তার হিসেব করার সাধ্য আমার নেই।

    ভিড় করে আসে অনেক মুখ।

    ভালবাসার মুখ।

    ভিড় করে আসে নিজের সৃষ্ট চরিত্ররাও। এরা আর ছায়া নয়, মায়া নয়, বঞ্চনা নয়, আস্ত এক-একটা মানুষ।

    অনামিকা জানেন, প্রকৃতপক্ষে ওরা অনামিকার সৃষ্টিও নয়। ওরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টি করেছে! ওদের নিজস্ব সত্তা আছে, ওরা নিজের গতিতে চলে। অনামিকাই ওদের নিয়ন্তা এমন ভুল ধারণা অনামিকার নেই।

    হয়তো অনামিকার পরিচিত জগতের কারো কারো ছায়ার মধ্যে থেকে তারা বিকশিত হয়ে ওঠে, কলম তার অনুসরণ করে চলে মাত্র। অনামিকার ভূমিক: ষ্টার নয়, দর্শকের।

    তিনি যে শুধু এই সমাজকেই দেখে চলেছেন তা নয়, তার রচিত চরিত্রদেরও দর্শক তিনি।

    তাই পারুলের অভিযোগে অক্ষমতা জানিয়ে চিঠি লেখেন অনামিকা, বকুল নিজে এসে ধরা না দিলে বকুলের কথা লেখা হবে না সেজদি। সে আজও পালিয়ে বেড়াচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো কোনদিনই তার কথা লেখা হবে না, কারণ বকুল বড় মুখচোরা, বড় কুণ্ঠিত। নিজেকে প্রকাশ করতে সে লজ্জায় মারা যায়।

    অনামিকার ভক্ত পাঠককুলের এখন আর অজানা নেই অনামিকা বকুলের ছদ্মবেশের নাম, তাই তারা অনামিকার রচিত চরিত্রদের মধ্যে থেকে বকুলকে খুঁজে বেড়ায়, আগ্রহে উদ্ভাসিত মুখে প্রশ্ন করে, এর মধ্যে কে বকুল?

    অনামিকা মৃদু হেসে বলেন, জানি না ভাই। আমিও তো সে বকুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

    কিন্তু অনামিকা কি শুধু বকুলকেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন? আবাল্যের এই সাধনায় আরো একটা জিনিস কি খুঁজে বেড়াচ্ছেন না? খুঁজে বেড়াচ্ছেন না কেন এই তার জানা জগতের সমাজে আর জীবনে এত বেদনা, এত অবিচার, এত নিরুপায়তা?

    আর খুঁজে বেড়াচ্ছেন না ঝকঝকে রাংতামোড়া জীবনের অন্তরালে কী শ্মশানের ভস্মরাশি?

    তবু আজ মনে হচ্ছে হয়তো আরো দেখার ছিল। দুঃসহ বেদনাভারাক্রান্ত পৃথিবীকে যতটা দেখেছেন অনামিকা, হয়তো ততটা দেখাননি তার আলোর দিকটা।

    আলোও আছে বৈকি।

    আছে আনন্দ, আছে বিশ্বাস, আছে প্রেম, আছে সততা।

    শুধু তারা তীব্র শিখায় চোখ ধাঁধায় না বলেই হয়তো চোখে কম পড়ছে। অনামিকার মনে পড়ে সেই ছেলেটার মুখ, যে একদিন তার প্রথম কবিতা ছাপা হওয়া পত্রিকাখানা নিয়ে দেখাতে এসেছিল। তার মুখে যেন বিধাতার আশীর্বাদের আলো।

    এমন কত ছেলেই তো আসে।

    আজকের ছেলেদের প্রধান হবিই তো সাহিত্য।

    রাশি রাশি ছেলে আসে তাদের নতুন লেখা নিয়ে। অবশ্যই শুধুই যে দেখাতে আসে তা নয়, আসে একটা অবোধ আশায়ভাবে উনি ইচ্ছে করলেই ছাপিয়ে দিতে পারবেন।

    ‘উনি’র ক্ষমতা সম্পর্কে বোধ নেই বলেই ভাবে। আর শেষ পর্যন্ত ওঁকে সহানুভূতিহীনই ভাবে। হয়তো কোথাও জায়গা না পেয়েই ওরা নিজেরা জায়গা তৈরি করে নিতে চায়, তাই রোজ রোজ পত্রিকার জন্ম হচ্ছে দেশে।

    দু’এক সংখ্যা বেরিয়েও যদি তার সমাধি ঘটে ঘটুক, তবু তো কয়েকটি ছেলের চিন্তার শিশুগুলি আলোর মুখ দেখতে পেল।

    বাংলাদেশের শিশুমৃত্যুর হার নাকি কমে গেছে। পবিত্র শিশুরা হয়তো সেই হার বজায় রাখার চেষ্টা করছে। ওই ক্ষীণকায় পত্রিকাগুলি হাতে নিয়ে ওরা যখন আসে, তখন ওদের মুখে যে আহ্লাদের আলো ফোটে, সেই কি তুচ্ছ করবার?

    তবু সেই একটা ছেলেকে খুব বেশী মনে আছে। অথচ আশ্চর্য, নামটা মনে নেই। মনে আছে চেহারাটা, শ্যামলা রং, পাতলা লম্বা গড়ন, চুলগুলো রুক্ষুরুক্ষু, কপালে একটা বেশ বড়সড় কাটার দাগ, আর তীক্ষ্ণ নাকওয়ালা মুখেও একটা আশ্চর্য কমনীয়তা।

    তার কবিতা তাদের নিজেদের পত্রিকায় বেরোয়নি, বেরিয়েছিল একটি নামকরা পত্রিকায়। কেমন করে এই অসাধ্য সাধন করেছিল সে তা সে-ই জানে। কেবলমাত্র লেখার গুণের জোরেই যে এটা হয়ে ওঠে না সে তো সকলেরই জানা।

    গুণটা যে আছে সেটা তাকিয়ে দেখছে কে?

    তা হয়তো তার ভাগ্যে এমন কেউ দেখেছিলেন, যার হাতে সেই গুণটুকুকে আলোয় এনে, ধরবার ক্ষমতা ছিল। যাই হয়ে থাক, ছেলেটির সেই মুখ ভোলবার নয়।

    বলেছিল, জানেন, জীবনে যদি আমার আর একটাও লেখা ছাপা না হয়, তাহলেও দুঃখ থাকবে না আমার!

    অনামিকা বলেছিলেন, সে কী!

    হ্যাঁ, সত্যিই বলছি আপনাকে। আমার পারিবারিক জীবনের কথা আপনি জানেন না। সেখানে অনেক বঞ্চনা, অনেক দুঃখ, অনেক অপমান। তবু মনে হচ্ছে–সব কষ্ট সহজে সইবার ক্ষমতা আমার হবে আজ থেকে।

    কথাগুলো অবশ্যই অতি আবেগের, তবু কেন কে জানে হাসি পায়নি, অতি আবেগ বলেও মনে হয়নি। যেন ওর মধ্যে একটা দৃঢ় প্রত্যয় কাজ করছে।

    কবিতাটা প্রেমেরই অবশ্য, তবে আধুনিক ভঙ্গীতে তো সেই প্রেমকে ধরাছোঁয়া যায় না, তবু অনামিকার মনে হয়েছিল ছেলেটা কি ওই কবিতার মধ্যে দিয়ে তার প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিল?

    নামটা মনে নেই এই দুঃখ।

    নতুন নতুন কিছু শক্তিশালী কবি দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু তাদের চেহারাটা তো দেখতে পাচ্ছেন না! কে জানে কার কপালে রাজটাকার মত সেই কাটার দাগটা!

    ছেলেদের মধ্যে এই সাহিত্যের হবি যতটা বেশী, মেয়েদের মধ্যে তার সিকির সিকিও নয়।

    তবে মেয়েদের মধ্যে থেকেও কি খাতার বোঝা নিয়ে কেউ আসে না? খাতার বোঝা আর প্রত্যাশার পাত্র নিয়ে?

    আসে। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখেছেন অনামিকা দেবী, তারা মেয়ে নয়, প্রায় কেউই, তারা সংসারের পোড়-খাওয়া গৃহিণী, অবমানিতা বধূ। হয়তো প্রৌঢ়া, হয়তো মধ্যবয়সী।

    সারাজীবনের তিল তিল সঞ্চয় ওই খাতাগুলি।

    কিন্তু ওগুলির যে কোনোদিনই আলোর মুখ সেথার সম্ভাবনা নেই, সেকথা তাদের বল কষ্ট হয়। আর সত্যি বলতে–তখন হয়াৎ নিজেকে ভারী স্বার্থপর মনে হয় অনামিকা দেবীর।

    যেন তিনি অনেকের প্রাপ্য ভাগ দখল করে বসে আছেন। প্রাচুর্যের আহার্যপাত সামনে নিয়ে বসে দরিদ্রের দীন অন্নপাত্র চোখ পড়ে গেলে যেমন লাগে, অনেকটা যেন তেমনি

    সেই বৌটির কথা মনে পড়ছে, তার নামও মনে আছে। অথচ খুব সাধারণ নাম–সবিতা। তার লেখাও অবশ্য তেমনি। বলতে গেলে কিছুই নয়, কিন্তু তার ধারণা ছিল, পাঠকদের চোখের সামনে আসতে পাচ্ছে না বলেই সে লেখার জয়জয়কার হবার সুযোগ পাচ্ছে না। অতএব যেমন করেই হোক-~

    এই মূঢ় প্রত্যাশায় বৌটা বাপের বাড়ি গিয়ে লুকিয়ে গহনা বিক্রী করে একটা চটি বই ছেপে বসলো।

    তারপর আর কি! লাঞ্ছনা গঞ্জনা ধিক্কারের শেষ নেই।

    তার স্বামী বলেছিল, যে মেয়েমানুষ এতখানি দুঃসাহস করতে পারে, সে পরপুরুষের সঙ্গে বেরিয়েও যেতে পারে।

    ফলে এই হল, বেচারী বোটা তার সারাজীবনের যত প্রাণের বস্তু সব আগুনে ফেলে দিল, আগুনে ফেলে দিল সেই পাঁচশো কপি বইও।

    সবিতার সেই মুখটা মনে পড়ে। এসে বলেছিল, মাসিমা, নিজে হাতে ছেলেকে চিতায় দিয়ে এলাম। অনামিকা বলেছিলেন, ছি ছি, এ কি বলছো! সন্তানের মা তুমি–

    ও বলেছিল, সে সন্তান তো আমার একার নয় মাসিমা। সে তার বাপের, তার বংশের, তার পরিবারেব, তার সমাজের। এইটুকুই ছিল আমার একান্ত নিজের।

    এই সব ব্যর্থ জীবনের কতটুকুই বা প্রকাশ হয়!

    দিন চলে দিনের নিয়মে, ঋতুচক্র আবর্তিত হয় চিরন্তন ধারায়, জাগতিক কাজকর্মগুলিও চলে অনাহত গতিতে।

    সমাজতন্ত্রের বহুবৈচিত্র্যময় লীলাখেলার খাজনাটিও অব্যাহত ধারায় যুগিয়ে চলতে হয় সমাজবদ্ধ জীব হতভাগ্য মানুষকে।

    কোথায় কার কখন আসছে শ্ৰতি-ক্লান্তি, আসছে বিতৃষ্ণা-বিমুখতা, কে তার দিকে তাকিয়ে দেখে? কে বোঝে কে হাঁপিয়ে উঠেছে, মুক্তি চাইছে।

    না, সে কেউ ভাবে না, বোঝে না, দেখে না। সমাজে খাজনার বড় দায়। আপনার যখন এক মেঘমেদুর সন্ধ্যায় একা বসে আপন নিভৃত জীবনের সুখ-দুঃখের স্মৃতির মধ্যে তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে, তখন হয়তো আপনাকে অমোঘ এক বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আলো বাজনা শব্দ আর মানুষের ভিড়ের মধ্যে গিয়ে আছড়ে পড়তে হবে। চেনা লোকের সঙ্গে দেখা হওয়ার আহ্বাদে শতমুখ হতে হবে আপনাকে।

    হয়তো কোনো দিন আপনার এক অকারণ খুশীর মন নিয়ে জানলার ধারে বসে কবিতা পড়তে বাসষ হচ্ছে, তখন হয়তো আপনার আত্মীয়-কন্যার নবজাত শিশুটির মুখ দেখতে ছুটতে হবে দূরবর্তী কোনো নার্সিং হোমে?

    অথবা হয়তো কোনো এক উজ্জল বৈশাখের বিকেলে আপনার কোনো প্রিয় বন্ধুর বাড়ী বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে একটু আড্ডা দিয়ে আসতে, তখন পিসতুতো পিসিমার শবযাত্রার সঙ্গে শোভাযাত্রী হয়ে গিয়ে পৌঁছতে হবে মহাশ্মশানে।

    মোটা কথা নিজেকে নিয়ে একা পড়ে থাকবার উপায় নেই। সমাজের ট্যাক্স যোগান দিয়ে চলতেই হবে।

    অতএব অনামিকাকে পুলক সঙ্ঘের বার্ষিক সাহিত্যসভার উদ্বোধনে যেতে হয়েছিল তখন, যখন শম্পা নামের একটা চিরকালের মেয়ের মুখটা স্মরণ করে প্রাণটা হাহাকার করছে। সে প্রাণ ছুটে যেতে চাইছে তার সন্ধানে।

    কিন্তু নতুন করে হঠাৎ কেন এই হাহাকার?

    তা আছে কারণ।

    আজই বাড়িতে একটা পোস্টকার্ড এসে জানিয়ে দিয়ে গেছে–আমি মরিনি, বেঁচে আছি।

    হ্যাঁ, নাম-সম্বোধনহীন শুধু ওই একটি লাইন। এ চিঠির দাবিদার কে জানার উপায় নেই, কোথাও কারো নাম নেই। ঠিকানার অংশটুকুতে শুধু গোটা গোটা করে লেখা ঠিকানাটুকুই।

    তবে?

    এই চিঠিটুকুকে ‘আমার’ বলে দাবি কে করতে পারে?

    হিসেবমত কেউই পারে না। অথবা ওই ঠিকানার বাসিন্দারা সকলেই পারে।

    তবু অনামিকার মনে হচ্ছিল, আমিই দাবিদার।

    কিন্তু কোনখান থেকে চিঠিটা পোস্ট করা হয়েছে কিছুতেই ধরা গেল না। কালিমাবিহীন স্বাধীন সরকারের ডাক-বিভাগ যথারীতি স্ট্যাম্পের উপর একটি অস্পষ্ট ছাপের ভগ্নাংশটুকু মাত্র দেগে দিয়ে কর্তব্য সমাধা করেছে।

    যেন ওই এক লাইন লেখাটা পাঠিয়ে যে মজা করেছে, সেই দুষ্টু মেয়েটা ডাক-কর্মচারীদের শিখিয়ে দিয়েছে–স্পষ্ট করে ছাপ মেরো না, আমি তাহলে ধরা পড়ে যাব।

    অথচ ওই কথাটুকু তার লিখে জানাবার ইচ্ছেটি হয়েছে এতদিনে।

    আমি মরিনি, আমি বেঁচে আছি।

    এ কার হাতের লেখা? এ কোন স্বর্গলোকের কথা?

    ছোড়দা ক্লান্ত গলায় বললেন, অন্য পাড়া থেকেও পোস্ট করা অসম্ভব নয়।

    ছোটবৌদি সেই অক্ষর কটাকে পাথরে খোদাই করার মত মনের মধ্যে খোদাই করে ফেলেও, আর একবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলেন, আচ্ছা বকুল, হাতের লেখাটা ঠিক তার বলে মনে হচ্ছে তোমার? কোনো বাজে লোকের কারসাজি বলে মনে হচ্ছে না তো?

    কী যে বল! ওর হাতের লেখা ভুল হবে? মনটা ভাল কর বৌদি, খবর যখন একটা দিয়েছে

    যখন এই প্রসঙ্গ নিয়ে অনামিকার সঙ্গে তাঁর ছোড়দা-ছোটবৌদির আলোচনা চলছে, ঠিক তখনই এই পুলক সঙ্খের গাড়ি এলো।

    আমোঘ অনিবার্য এই গাড়ি।

    যেতে পারব না বলার প্রশ্ন ওঠে না।

    অনামিকা বলে গেলেন, আচ্ছা, তোমরা চেষ্টা করে দেখো—

    অনামিকা বেরিয়ে গেলেন।

    পুলক সঙ্ঘের সমস্ত পুলকের ভার বহন করতে হবে এবার।

    চলন্ত গাড়িতে ভাবতে ভাবতে চলেন অনামিকা, এই খবর দেওয়াটার মধ্যে কোন্ মনস্তত্ত্ব কাণ্ড করছে।

    ও কি খুব কষ্টে পড়েছে। তাই আর না পেরে ফিরে আসতে চাইছে?

    ও কি আপরাধবোধে পীড়িত হয়ে এতদিনে—

    ওর কি হঠাৎ সবাইয়ের জন্যে মন কেমন করে উঠেছে?

    চশমাটা খুলে মুছলেন অনামিকা।

    আর যখন আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে গিয়ে বসলেন, তখন সহসা মনে পড়ে গেল একদিন আমি নির্মল মারা গেছে শুনেও সভায় এসে অবিচল ভাবে সমস্ত কাজ করে গিয়েছিলাম।

    অথচ আজ ও বেঁচে আছে খবর পেয়ে এত ভয়ানক বিচলিত হচ্ছি যে কিছুতেই মন, বসাতে পারছি না! কবে এত দুর্বল হয়ে গেলাম আমি?

    তবু অভ্যাসগত ভাবে হয়েও গেল সব।

    মঞ্চ থেকে নেমে আসতে আসতে হেঁকে ধরল অটোগ্রাফ-শিকারীর দল। আর তাদের আবদার মিটিয়ে যখন ঠিক গাড়িতে উঠতে যাচ্ছেন, হঠাৎ পিছন থেকে কে বলে উঠল, আমায় একটা অটোগ্রাফ!

    কে? কে?

    কে বলল একথা?

    অনামিকা গাড়ির দরজাটা ধরে নিজেকে সামলে নিয়ে আশপাশের ভিড়ের দিকে তাকালেন। অনামিকার মনে হল সব মুখগুলো যেন একরকম–ঝাপসা ঝাপসা!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসুবর্ণলতা – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article প্রথম প্রতিশ্রুতি – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }