Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাঁধনহারা – কাজী নজরুল ইসলাম

    কাজী নজরুল ইসলাম এক পাতা গল্প197 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বাঁধনহারা – পরিচ্ছেদ ০৩

    [গ]
    বাঁকুড়া
    ২৬এ জানুয়ারি
    (বিকেলবেলা)
    অথ নরম গরম পত্রমিদম কার্যনঞ্চাগে বিশেষ! বাঙালি পলটনের তালপাতার সিপাই শ্রীল শ্রীযুক্ত নূরুল হুদা বরাবরেষু।…

    বুঝলি নূরু! তোর চিঠি নিয়ে কিন্তু আমাদের বোর্ডিং-এর কাব্যিরোগাক্রান্ত যাবতীয় ছোকরাদের মধ্যে একটা বিভ্রাট রকমের আলোচনা চলেছে। এঁদের সবাই ঠাউরেছেন, তুই একটা প্রকাণ্ড ‘হবু-কবি’ বা কবি-কিশলয়! তোর যে ভবিষ্যৎ দস্তুরমতো ‘ফর্সা’ এবং ক্রমে তুই-ই যে রবিবাবুর ‘নোবেল প্রাইজ’ কেড়ে না নিস, অন্তত তাঁর নাম রাখতে পারবি, এ সিদ্ধান্তে সকলের একবাক্যে সম্মতিসূচক ভোট দিয়েছেন। তবে আমার ধারণা একটু বিভিন্ন রকমের। ভবিষ্যতে তুই কবিরূপে সাহিত্য-মাঠে গজিয়ে উঠবি কিনা, তার এখনও নিশ্চয়তা নেই, – কিন্তু ‘কপি’ হয়েই আছিস। কেননা কবির চেয়ে কপির উপাদানই তোর মধ্যে বেশি! – আর, ছোকরাদের ওই হইচই-এর সম্বন্ধে আমার বিশেষ তেমন বক্তব্য নেই, তবে এইমাত্র বললেই যথেষ্ট হবে যে, উপরে হইহই ব্যাপার! রইরই কাণ্ড!! জর্মানির পরাজয়!!! লেখা থাকলেও ভিতরে সেই – ফসিউল্লার গোলাব-নির্যাস, চারি আনা শিশি। নয়তো সিলেট চুন!

    তাই বলে মনে করিসনে যেন যে, দেঁতো ‘ক্রিটিকের মতো ছোবলে’ তোকে আমি জখম করে দিচ্ছি। আমিও আবার হুজুগে-সমালোচকদের হল্লায় সায় দিয়ে বলছি, কপালের দোষে নিতান্তই যদি তুই সাহিত্য-রথী না হোস, তবে অন্তত সাহিত্য-কোচোয়ান বা গাড়োয়ান হবিই হবি। আর ওই আগেই বলেছি, কবিবর না হোস, কপিবর তো হবিই!

    তুই কবি না হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু আমি যে একজন প্রতিভাসম্পন্ন জবরদস্ত কবি, তাতে সন্দেহ নাস্তি! প্রমাণস্বরূপ, – আমি হলে তোর ওই বর্ষাস্নাতা সাগরসৈকতবাসিনী করাচির বর্ণনাটা কীরকম কবিত্বপূর্ণ ভাষায় করতাম, অবধান কর (যদিও বর্ণনাটি ‘আন্দাজিক্যালি’ হবে।) :

    ঝরা থেমেছে। উলঙ্গ প্রকৃতির স্থানে স্থানে এখনও জলের রাশ থই থই করচে। দেখে বোধ হচ্ছে যেন একটি তরুণী সবেমাত্র স্নান করে উঠেছে, আর তার ভেজা পাতলা নীলাম্বরী শাড়ি ছাপিয়ে নিটোল উন্মুখ যৌবন ফুটে ফুটে বেরিয়েচে! এখনও ঘুনঘুনে মাছির চেয়েও ছোটো মিহিন জলের কণা ফিনফিন করে ঝরছে। ঠিক যেন কোনো সুন্দরী তার একরাশ কালো কশকশে কেশ তোয়ালে দিয়ে ঝাড়চে, আর তারই সেই ভেজা চুলের ফিনকির ঝাপটা আমাদিগকে এমন ভিজিয়ে দিচ্চে! এখনও রয়ে রয়ে ক্ষীণ বিজুলি চমকে চমকে উঠেছে, ও বুঝি ওই সুন্দরের তড়িতাঙ্গ সঞ্চালনের ললিত-চঞ্চল গতিরেখা! আর ওই যে ক্ষান্ত বর্ষণ-স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় মুগ্ধ দু-চারটি গায়ক-পাখির ঈষৎ-ভেসে আসা গুঞ্জন শোনা যাচ্চে, ও বুঝি ওই স্নাতা সুন্দরীর চারু নূপুরের রুনু-ঝুনু কিংবা বলয়-কাঁকনের শিঞ্জিনী! আর ওই যে তার শেফালির বোঁটায়-ছোবানো ফিরোজা রং-এর মলমলের মতো মিহিন শাড়ি আর তাতে ঘন-সবুজ-পাড় দেওয়া, ওতে যেন কে ফাগ ছড়িয়ে দিয়েছে! ও বোধ হয় আবিরও নয় ফাগও নয়, – কোনোও একজন বাদশাজাদা ওই তরুণীর ভালোবাসায় নিরাশ হয়ে ওই দুটি রাতুল চরণতলে নিজেকে বলিদান দিয়েছে আর তারই কলিজার এক ঝলক খুন ফিং দিয়ে উঠে, সুন্দরীর বাসন্তী-বসন অমন করে রক্ত-রঞ্জিত করে তুলেছে, – ওগো, তাই এ সাঁঝ বেলাতে সুন্দরীর মন এত ভারি! –

    কেমন লাগল? দেখলি তো, আমি তোর মতো আর ছোটো কবি নই। কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় রে নূরু, যে, কেউ আমায় চিনতে পারলে না! পরে কিন্তু দেশের লোককে পস্তাতে হবে, বলে রাখচি। তুই হয়তো হাসচিস, কিন্তু আমি বলি কী, তার একটা মস্ত কারণ আছে। রবিবাবুকে ইয়োরোপ আর আমেরিকার লোক যে রকম বড়ো আর উঁচু করে দেখে, আমাদের দেশে সে রকম পারে কি? উলটো, যাঁরা তাঁর লেখার এক কানা-কড়িও বোঝেন না, তাঁরাই আবার যত রকমে পারেন তাঁর নিন্দা করেন যেন এইসব সমালোচক রবি-কবির চেয়ে বহুগুণে শ্রেয়, তবে তাঁরা সেটা দেখাতে চান না, আর দেখালেও নাকি দেশে কেউ সমঝদার নেই! এঁরাই কিন্তু মনে মনে রবিবাবুর পায়ে লক্ষ-হাজার বার সালাম না করে থাকতে পারেন না, তবু বাইরে নিন্দে করবেনই। কাজেই এসব লোককে সমালোচক না বলে আমি বলি পরশ্রীকাতর। এর একটা আবার কারণও আছে; আমরা দিন-রাত্তির ওঁকে চোখের সামনে দেখছি, – আর যাঁকে হরদম দেখতে পাওয়া যায়, এমন একটা ব্যক্তি যে সারা দুনিয়ার ‘মশহুর’ একজন লোক হবেন, এ আমরা সইতে পারিনে। তাই, অধিকাংশ কবিই জীবিতকালে শুধু লাঞ্ছনা আর বিড়ম্বনাই ভোগ করেছেন। ধর, আমার লেখা যদি ছাপার অক্ষরে বেরোয়, তবে অনেকেই ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে যাবে। কারণ, আমারও তাদেরই মতো দুটো হাত দুটি পা। কোনো একটা অতিরিক্ত অঙ্গ, অন্তত পেছনে একটা লেজুড়ও নেই, – যার থেকে আমি একটা এরকম অস্বাভাবিক জানোয়ারে পরিণত হতে পারি! – একদিনকার একটা মজা শোন! একটা উচ্চ মাসিক পত্রিকায় আমার লেখা একটা গল্প প্রকাশিত হতে দেখে আমার এক বন্ধু ভয়ানক অবাক হয়ে আর চটে বলেছিলেন –“আরে মিয়াঁ, হঃ! আমি না কইছিলাম যে, এসব কাগজ লইতাম না? এইসব ফাজিল চ্যাংরারা যাহাতে ল্যাহে, হেই কাগজ না আবার মান্‌ষে পড়ে? আমার চারড্যা ট্যাহা না এক্কেবারে জলে পরলনি!”

    যাক, সৈনিক জীবন কেমন লাগছে? ও জীবন আমার মতো নরম চামড়ার লোকের পোষায় না রে ভাই, তোর মতো ভূতো মারহাট্টা ছেলেদেরই এসব কোস্তাকুস্তি সাজে!

    তুই শুনে খুব খুশি হবি যে, যে-লোকগুলো তোর মতো এমন ‘ধড়ফড়ে’ ইব্‌লিশ ছোকরাকে দু-চোখে দেখতে পারত না, তারাও এখন তোকে রীতিমতো ভয়-ভক্তি করে। তবে তাঁরা এটাও বলতে কসুর করেন না যে, তোদের মতো মাথা-খারাপ শয়তান ছোকরাদেরই জন্যে এ বঙ্গবাহিনীর সৃষ্টি।

    তারপর একটু খুব গুপ্ত কথা। – বুবু সাহেবা আমায় ক্রমাগত জানাচ্ছেন যে, যদি আমার ওজর-আপত্তি না থাকে, তাহলে শ্রীমতী সোফিয়া খাতুনের (ওরফে তাঁর ননদের) পাণিপীড়ন ব্যাপারটা আমার সঙ্গেই সম্পন্ন করে দেন। ওরকম একটা খোশখবর শুনে আমার খুবই ‘খোশ’ হওয়া উচিত ছিল, কেননা তাহলে রবিয়ল মিয়াঁকে খুব জব্দ করা যেত। তিনি আমার ভগ্নিকে বিয়ে করে আইনমতে আমায় শালা বলবার ন্যায্য অধিকারী সন্দেহ নেই, কিন্তু রাত্তির দিন ভদ্র-অভদ্র লোকের মজলিসে মহ্‌ফিলে যদি ওই একই তীব্র-মধুর সম্বন্ধটা বারবার শতেকবার জানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে নিতান্ত নিরীহ প্রাণীরও তাতে আপত্তি করবার কথা। খুব ঘনিষ্ঠ আর সত্যিকার মধুর সম্বন্ধ হলেও লোকে ‘শালা আর শ্বশুর’ এই দুটো সম্বন্ধ স্বীকার করতে স্বতই বিষম খায়, এ একটা ডাহা সত্যি কথা! অতএব আমিও জায়বদ্‌লি বা Exchange স্বরূপ তাঁর সহোদরার পানিপীড়ন করলে তাঁর বিষদাঁত ভাঙা যাবে নিশ্চয়ই, তবে কিনা সেই সঙ্গে আমারও ‘তিন পাঁচে পঁচাত্তর” দাঁত ভাঙা যাবে। কেননা বিশেষ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, আমার ভবিষ্যৎ অঙ্কলক্ষ্মীটি আদৌ গো-বেচারি প্রিয়ভাষিণী নন, বরং তাতে লক্ষ্মীমেয়ের কোনো গুণই বর্তে নাই। সবচেয়ে বেশি ভয়, ইনি আবার ভয়ানক বেশি সুন্দরী, মানে এত বেশি সুন্দরী, যাদের ‘চরণতলে লুটিয়ে পড়িতে চাই’ বা ‘জীবনতলে ডুবিয়া মরিতে চাই’ আর কী! যাদের ঈষৎ আড়চোখো চাউনিতে আমাদের মাথা একেবারে বিগড়ে যায়। যাদের ঠোঁটের কোণে একটু হাসির রেখা দেখে আমরা আনন্দে অস্বাভাবিক রকমের বদন ব্যাদান করে ‘দেহি পদপল্লবমুদারম্’ বলে হুমড়ি খেয়ে পড়ি! – আজকাল ওই ঘোড়া-রোগেই গরিব কাঁচা যুবকগুলো মরছে কিনা! – আর নূরু! লাজের মাথা খেয়ে সত্যি কথা বলতে কী ভাই, অহম্ গরিব নাবালকও ওই রোগেই মরেছে রে ওই রোগেই ম – রে – ছে! জানি না আমার কপালে শেষ পর্যন্ত কী আছে, – মুড়ো ঝ্যাঁটা, না মিষ্টি ঠোনা!

    তোর মত কী? কী বলিস – দেবো নাকি চোখ-মুখ বন্ধ করে বিয়েটা…? (আঃ একটু ঢোক গিলে নিলুম রে!)

    বাড়িতে বাস্তবিকই সকলে বড্ড মুষড়ে পড়েছেন তোর এই চলে যাওয়াতে। আমাদের গ্রামটায় প্রবাদের মতো হয়ে গিয়েছিল যে, তোর আর আমার মতো এমন সোনার চাঁদ ছেলে আর এমন অকৃত্রিম বন্ধুত্ব লোকে নাকি আর কখনও দেখেনি। এক সঙ্গে খাওয়া, এক সঙ্গে পড়তে যাওয়া, এক সঙ্গে বাড়ি আসা, ওঃ, সে কথাগুলো জানাতে হলে এমন ভাষায় জানাতে হয়, যে ভাষা আমার আদৌ আয়ত্ত নয়। ওরকম ‘সতত সঞ্চরমান নবজলধরপটলসংযোগে’ বা ‘ক্ষিত্যপ্‌তেজো পটাক দুম্’ ভাষা আমার একেবারেই মনঃপূত নয়। পড়তে যেন হাঁপানি আসে আর কাছে অভিধান খুলে রাখতে হয়! অবিশ্যি, আমার এ মতে যে অন্য সকলের সায় দিতে হবে, তারও কোনো মানে নেই। আমারও এ বিকট রচনাভঙ্গি নিশ্চয়ই অনেকেরই বিরক্তিজনক, এমনকী অনেকে একে ‘ফাজলামি’ বা ‘বাঁদরামি’ বলেও অভিহিত করতে পারেন, কিন্তু আমার এ হালকা ভাবের কথা – হালকা ভাষাতেই বলা আমি উচিত বিবেচনা করি। তার ওপর, চিঠির ভাষা এর চেয়ে গুরুগম্ভীর করলে সেও একটা হাসির বিষয় হবে বই তো নয়! – যাক, কী বলছিলাম? এখন যখন আমি একা তাঁদের বাড়ি যাই, তখন বুবু সাহেবা আর কিছুতেই কান্না চেপে রাখতে পারেন না। তাঁর যে শুধু ওই কথাটাই মনে পড়ে, এমনি ছুটিতে আমরা দুজনে বরাবর একসঙ্গে বাড়ি এসেছি। তারপর যত দিন থাকতাম, ততদিন বাড়িটাকে কীরকম মাথায় করেই না রাখতাম?…

    হাঁ, আমাদিগকে যে লোক ‘মোল্লা, দোপেঁয়াজা’ বলে ঠাট্টা করত, তুই চলে যাওয়ার পর কিন্তু সব আমায় স্রেফ ‘একপেঁয়াজা মোল্লা বলছে।

    যাক ওসব ছাইপাঁশ কথা – নূরু, কত কথাই না মনে হয় ভাই, কিন্তু বড়ো কষ্টে হাসি দিয়ে তোরই মতো তা ঢাকতে চেষ্টা করি!…আবার কি আমাদের দেখা হবে?

    পড়াশুনায় আমার আর তেমন উৎকট ঝোঁক নেই। আর কিছুতে মন বসে না। যাই, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ইতি –

    কলেজ-ক্লান্ত
    মনুয়র

    সালার
    ৬ই ফাল্গুন
    নিরাপদ্দীর্ঘজীবেষু,

    ভাই নূরুল হুদা, আমার শত স্নেহাশিস জানবে। অনেকদিন চিঠি দিতে পারিনি বলে তুমি তোমার ভাইসাহেবের পত্রে অনুযোগ করে বেশ একটু খোঁচা দিয়েছ। কী করি ভাই, সংসারের সব ঝক্কি এখন আমার ওপর। তুমি তো সব জান, আম্মাজান কিছু দেখেন না। আগে বরং দু-এক সময় তিনি বিষয়-আশয়ের ভালো-মন্দ সম্বন্ধে দুটো উপদেশ দিতেন। এখন তাও বন্ধ। দিন-রাত নমাজ-রোজা নিয়ে নিজের ঘরটিতে আবদ্ধ, আর বাইরে এলেই ওঁর ওপর খুকির তখন ইজারা দখল!

    তারপর তোমার ভাইসাহেবের কথা আর বোলো না। দিনে-রাত্তিরে ‘কমসে কম’ পঁচিশ কাপ চা গিলচেন আর বই নিয়ে, না হয় এসরাজ নিয়ে মশগুল আছেন। ওইসব বলতে গেলেই আমি হই ‘পাড়া-কুঁদুলি, রণচণ্ডী, চামুণ্ডা’ আর আরও কত কী! আমার মতো এই রকম আর গোটা কতক সহধর্মিণী জুটলেই নাকি স্বামীস্বত্বে স্বত্ববান বাংলার তাবৎ পুরুষপালই জব্দ হয়ে যাবেন। কপাল আমার! তা যদি হয়, তাহলে বুঝি যে একটা মস্ত ভালো করা গেল। এ দেশের মহিলারা যখন সহধর্মিণীর ঠিক মানে বুঝতে পারবেন, স্বামীর দোষকে উপেক্ষা না করে তার তীব্র প্রতিবাদ করে স্বামীকে সৎপথে আনতে চেষ্টা করবেন, তখনই ঠিক স্বামী-স্ত্রী সম্বন্ধ হবে। স্বামীকে আশকারা দিয়ে পাপের পথে যেতে দেয় যে স্ত্রী, সে আর যাই হোক, সহধর্মিণী নয়। যাক ওসব কথা, এখন আমার ইতিহাসটা শোনো, আর বলো আমি কী করে কোন্ দিক সামলাই। –সাংসারিক কোনো কথা পাড়তে গেলেই তোমার ভাইসাহেবের ভয়ানক মাথা দপ দপ করে, আর যে কাজেই (য) দু-তিন কাপ টাটকা চায়ের জোগাড় করতে হয়! চা-টা যদি একটু ভালো হল, তবে আর যায় কোথা? একেবারে দিল-দরিয়া মেজাজ! আরাম-কেদারায় সটান শুয়ে পড়েন, আর যা বলব তাতেই ‘হুঁ’। তোমার সদাশিব কথাটা ভয়ানকভাবে খেটেছে ওঁর ওপর। কিন্তু ভাই, এতে তো আর সংসার চলে না। বিষয়-আশয় জমিদারি সব ম্যানেজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে নিজে ভাং-খাওয়া বাবাজির মতো বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকলে কি সব ঠিক থাকে, না কাজেরই তেমনি শৃঙ্খলা হয়? মাথার উপর মুরুব্বি থাকাতে যতদিন যা করেছেন সেজেছে। আমি তো হদ্দ হলাম বলে বলে। কতই আর প্যাঁচা-খ্যাঁচরা করব মানুষকে। একটু বুঝিয়ে বলতে গেলেই মুখটি চুন করে আস্তে আস্তে সেখান হতে সরে পড়া হয়। সেদিনের মতোই একেবারে গুম। সন্ধে নাগাদ আর টিকিটির পর্যন্ত দেখা নাই। আমি তো নাচার হয়ে পড়েছি ওঁকে নিয়ে। পড়তেন জাহাঁবাজ মেয়ের হাতে, তবে বুঝতেন, কত ধানে কত চাল। তুমি যতদিন ছিলে, ততদিন যা এক আধটু কাজকর্ম দেখতেন। তুমি যাওয়ার পর থেকেই উনি এরকম উদাসীনের মতো হয়ে পড়েছেন। – আর তুমিই যে অমন করে চলে যাবে, তা কে জানত ভাই? – আজ আমি সন্তানের জননী, সংসারের নানান ঝঞ্ঝাট আমারই মাথায়, কাজেই চিন্তা করবার অবসর খুব কমই পাই; তবুও ওই হাজার কাজেরই হাজার ফাঁকে তোমার সেই শিশুর মতো সরল শান্ত মুখটি মনে পড়ে আমায় এত কষ্ট দেয় যে, সে আর কী বলব! আজ চিঠি লিখতে বসে কত কথাই না মনে পড়ছে। –

    আমি যখন প্রথম এ ঘরের বউ হয়ে আসি, তখন ঘরটা কি-জানি কেন বড্ড ফাঁকা-ফাঁকা বলে বোধ হত। ঘরে আর কেউ ছেলে-মানুষ ছিল না যে কথা কয়ে বাঁচি। আমাদের সোফি আর পাশের বাড়ির মাহ্‌বুবা তখনও নেহাত ছেলেমানুষ, আর সহজে আমার কাছও ঘেঁষত না। কে নাকি তাহাদের বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, আমি মেমসাহেব!সে কত কষ্টে তাহাদের ভয় ভাঙাতে হয়েছিল।…তারপর কিছুদিন পরে হঠাৎ একদিন তোমার ভাইসাহেব তোমায় আবিষ্কার করে ধরে আনলেন। তুমি নাকি তখন স্কুলে যাওয়ার চেয়ে মিশন, সেবাশ্রম প্রভৃতিতেই ঘুরে বেড়াতে। টোটো সন্ন্যাসী বা দরবেশগোছের কিছু হবে বলে, মাথায় লম্বা চুলও রেখেছিলে; মাঝে মাঝে আবার গেরুয়া বসন পরতে। এইসব অনেক-কিছু কারণে তোমার ভাইসাহেব তোমাকে একজন মহাপ্রাণ মহাপুরুষের মতোই সমীহ করলেও আমি একদিন বলেছিলাম যে, এসব হচ্ছে আজকালকাল ছোকরাদের উৎকট বাজে ঝোঁক আর অন্তঃসারশূন্য পাগলামি। তবে লম্বা চুল রাখবার একটা গূঢ় কারণ ছিল, – সে হচ্ছে, তুমি একজন ‘মোখ্‌ফি’ কবি; আর কবি হলেই লম্বা চুল রাখতে হবে। অবশ্য এ আমি তোমার লুকানো কবিতার খাতা দেখে বলছি তা মনে কোরো না। – তবে তুমি বলতে পার যে, তোমার উদাসীন হবার যথেষ্ট কারণ ছিল। তোমার বাপ-মা সবাই মারা পড়লেন, সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার সমস্ত স্নেহ-বন্ধনই কালের আঘাতে ছিন্ন হয়ে গেল। কিন্তু সত্য বলতে গেলে এসবের পেছনে কি আর একটা নিগূঢ় বেদনা লুকানো ছিল না, ভাই? আগেও আমার ছোটো ভাই মনুর কাছে শুনেছিলাম। তোমাতে আর মনুতে যে খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল তাও ওরই মুখে শুনেছিলাম। তবে সে তোমার যেসব গুণের কথা বলত, তাতে স্বতই লোকের মনে হবার কথা যে, এ ধরনের জীবের বহরমপুরই উপযুক্ত স্থান। কয়েকবার বিপন্নকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে তুলেছিলে, এমন কথা শুনেও আমি বলেছিলাম, ওসব রক্তগরম তরুণদের খামখেয়ালি ফ্যাশন। ওর সঙ্গে একটা উৎকট যশোলিপ্সাও যে আছে, তাও আমি অসংকোচে বলতাম। কিন্তু যেদিন তোমার ভাইসাহেব আর আমার ছোটো ভাইটির সাথে আমাদের ঘরে অসংকোচে নিতান্ত আপন জনের মতো এসে তুমি দাঁড়ালে, তখন বাস্তবিকই এক পলকে আমার ওসব মন্দ ধারণাগুলো একেবারে কেটে গেল। তোমার ওই নির্বিকার ঔদাস্যের ভাসা ভাসা করুণ কোমল দৃষ্টি আর শিশুর মন, অনাড়ম্বর সহজ সরল ব্যবহার দেখে আপনি তোমার ওপর একটা মায়া জন্মে গেল। আর যারা নিজেদের প্রতি এরকম উদাসীন, তাদের প্রতি মায়া না হয়েই যে পারে না। তাই সেদিন আমার বাপ-মা-মরা অনাথ ছোটো ভাইটির সাথে তোমাকেও আমার আরও একটি ছোটো ভাই বলে ডেকে নিলাম।…

    তোমার সরল অট্টহাস্যে এই ঘর একদিন মুখরিত হয়ে উঠেছিল; – গল্পের রহস্যালাপের তোড়ে এই ফাঁকা ঘরকেই তুমি মজলিশের মতো সরগরম করে তুলেছিলে, – সেই ঘর আজও আছে; তবে, তেমনি ফাঁকা! অনাবিল ঝরনাধারার মতো উদ্দাম হাসির ধারায় সে ঘরকে কেউ আর বিকৃত করে না, তাই সে নীরব-নিঝুম এক ধারে পড়ে আছে। আমাদেরও কেউ আর তেমন অনর্থক উৎপাতের জুলুমে তেতো-বিরক্ত করে তোলে না, তেমন-উন্মাদ হট্টগোলে বাড়িকে মাথায় করে তোলে না, তাই আমাদেরও কাজে আর সে প্রাণ সে উৎসাহ নেই! সব যেন মন-মরা! ফাগুন বনের বুকভরা দুষ্টুমির চপলতা যেন অসম্ভাবিত রূপে আসা পৌষের প্রকোপে একেবারে হিম হয়ে গেছে! – এইরকম বিরক্ত হওয়াতেও যে একটা বেশ আনন্দ পাওয়া যেত এ-তো অস্বীকার করতে পাবে না।

    আচ্ছা ভাই নূর! তুমি কেন এমন করে আমাদের না বলে কয়ে চলে গেলে? অবিশ্যি, আমাদের বললে হয়তো সহজে সম্মতি দিতাম না, কিন্তু যদি নিতান্তই জোর করতে আর আমরা দেখতাম যে, তোমার ব্যক্তিগত জীবনে একটা সত্যিকার মহৎ কাজ করতে যাচ্ছ, তাহলে আমরা কি এতই ছোটো যে তোমায় বারণ করে রাখতাম? তোমার গৌরবে কি আমাদেরও একটা বড়ো আনন্দ অনুভব করবার নেই?

    তোমার ভাইসাহেব সদাসর্বদাই শঙ্কিত থাকতেন, – তুমি কখন কী করে বস এই ভেবে; এই নিয়ে আমি কতদিন তাঁকে ঠাট্টা করেছি, এখন দেখছি, ওঁরই কথা ঠিক হল।

    তুমি তোমার প্রাণের অনাবিল সরলতা আর প্রচ্ছন্ন-বেদনা দিয়ে যে সকলকে কত বেশি আপনার করে তুলেছিলে, তা তুমি নিজেও বুঝতে পারনি। তুমি যে অনবরত হাসির আর আনন্দের সবুজ রং ছড়িয়ে প্রাণের বেদনা-অরুণিমার রক্তরাগকে লুকিয়ে রাখতে আর তলিয়ে দিতে চাইতে, এটা আমার কখনও চক্ষু এড়ায়নি। তাই তোমার এই হাসিই অনেক সময় আমায় বড়োই কাঁদিয়েছে। তোমার ওই ঘোর-ঘোর চাউনিতে যে বেদনার আভাস ফুটে উঠত, সে যে সবচেয়ে অরুন্তুদ! – মা-র মতো গম্ভীর লোকও তুমি চলে যাবার পর কত অঝোর নয়নে কেঁদেছেন। তোমার ভাই তো পাথরের মতো হয়ে পড়েছিলেন। খুকি পর্যন্ত কেমন ‘হেদিয়ে’ গিয়েছিল।

    তোমার ভাই বেচারা এখনও আক্ষেপ করে বলেন, – ‘হয়তো আমাদের দোষেই নূরু আমাদের ছেড়ে গেল!’ কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করি না। কেননা সেরকম কিছু তো কোনোদিন ঘটেনি। সত্যি বটে, তুমি অতি অল্পতেই রেগে উঠতে, কিন্তু সেটাকে রাগ বললে ভুল বলা হবে। ওটাকে রাগ না বলে সোজা কথায় বলা উচিত খেপে ওঠা; ঠিক যেন ঘাড়ের ঘুমন্ত একটা ভূতের ঝাঁ করে একটা মাথা নাড়া দিয়ে ওঠা, কাজেই ওতে না রেগে আমরা আমোদই পেতাম বেশি। একটা খ্যাপা লোককে খেপিয়ে যে কত আমোদ, তা যারা খ্যাপাতে জানে তারাই বোঝে। তোমার স্কন্ধবাসী ভূত মহাশয়কে খুঁচিয়ে তাতিয়ে তোলা তাই এত বেশি উপভোগের জিনিস ছিল আমাদের। তবে ‘উনি’ যে তোমায় একটা আবছায়া বলে উপহাস করেন, সেইটাই সত্যি না কি?

    আমায় বড়ো বোন বলে ভাবতে, তাই তোমার দুটি হাত ধরে অনুরোধ করছি, লক্ষ্মী ভাইটি আমার, তোমার সব কথা লিখে জানাবে কি? যেসব কথা নিতান্ত আপত্তিকর বা গোপনীয় যেসব কথা আমি আন্দাজেই বুঝে নেব, তোমায় স্পষ্ট করে খুলে লিখতে বলছি নে। মেয়েদের বিশ্বাসঘাতক বলে বদনাম থাকলেও আমি কথা দিচ্ছি যে, তোমার কোনো কথা কাউকে জানাব না। বড়ো বোনের ওপর এতটুকু বিশ্বাস রাখতে পার কি?

    এখন আমাদের সোফিয়া মাহ্‌বুবা সম্বন্ধে দু-একটা কথা তোমায় জানানো দরকার বলে জানাচ্ছি, বিরক্ত হোয়ো না বা রাগ কোরো না। – লক্ষ্মীটির মতো তখন যদি তাকে তোমার অঙ্কলক্ষ্মী করে নিতে, তবে বেচারিদের আজ এত কষ্ট পেতে হত না। তুমি জান, একে বেচারিদের অবস্থা ভালো ছিল না, – বিপদের উপর বিপদ – সেদিন তার বাবাও আবার সাতদিনের জ্বরে মারা গেছেন। এক মামারা ছাড়া তো তাদের খোঁজ-খবর নেবার কেউ ছিল না দুনিয়ায়, তাই তারা এসে সেদিন মাহ্‌বুবাদের সবকে নিজের ঘরে নিয়ে গেছেন। এত বুঝালাম, অনুরোধ করলাম আমরা, এমনকী পায়ে পর্যন্ত ধরেছি – কিন্তু মাহ্‌বুবার মা কিছুতেই এখানে আমাদের বাড়িতে থাকতে রাজি হলেন না। থাকবেনই বা কী করে? তুমিই তো ওঁদের এ-দেশ ছাড়ালে! যে অপমান তুমি করেছ ওঁদের, যে আঘাত দিয়েছ ওঁদের বুকে, যেরম প্রতারিত করেছ ওঁদের আশালুব্ধ মনকে, তাতে অবস্থাপন্ন লোক হলে তোমার ওপর এর রীতিমতো প্রতিহিংসা না নিয়ে ছাড়তেন না। তাঁদের অবমাননা-আহত প্রাণের এই যে নীরব কাতরানি, তা যদি সবার বড়ো বিচারক খোদার আরশে গিয়ে পৌঁছে তাহলে তার যে ভীষণ অমঙ্গল-বজ্র তোমার আশে-পাশে ঘুরবে, তা ভেবে আমি শিউরে উঠছি, আর দিন-রাত খোদাতায়ালার কাছে তোমার মঙ্গল কামনা করছি। এই মাহ্‌বুবার বাবা হঠাৎ মারা গেলেন, এতে আমরা বলব, তাঁর হায়াত ছিল না – কে বাঁচাবে; কিন্তু লোকে বলছে, তোমার হাতের এই অপমানের আঘাতই তাঁকে পাঁজর-ভাঙা করে দিয়েছিল। আর বাস্তবিক, ওঁরা তো কেউ প্রথমে রাজি হননি বা বড়ো ঘরে বিয়ে দিতে আদৌ লালায়িত ছিলেন না, আমিই না হাজার চেষ্টা-চরিত্তির করে সম্‌ঝিয়ে ওঁদের রাজি করি। তোমার ভাইসাহেব কিন্তু প্রথমেই আমায় ‘বারহ’ মানা করেছিলেন – শেষে একটা গণ্ডগোল হওয়ার ভয়ে, কিন্তু আমি তা শুনিনি। আমি সে সময় এমন একটা ধারণা করেছিলাম, যা কখনও মিথ্যা হতে পারে না। তুমি হাজার অস্বীকার করলেও আমি জোর করে বলতে পারি যে, মাহ্‌বুবাকে দেখে তুমি নিজেও মরেছিলে আর তাকেও মিথ্যা আশায় মুগ্ধ করে তার নারী-জীবনটাই হয়তো ব্যর্থ করে দিলে। অবশ্য তোমাদের মধ্যে স্বাধীনভাবে মেলামেশা এমনকী দেখাশুনা পর্যন্ত ঘটেনি, এ আমি খুব ভালো করে জানি, কিন্তু ওই যে পরের জোয়ান মেয়ের দিকে করুণ-মুগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকা, তার মনটি অধিকার করতে হাজার রকমের কায়দা-কেরদানি দেখানো, এ-সব কীজন্য হত? এগুলো তো আমাদের চোখ এড়ায়নি! খোদা আমাদেরও দু-দুটো চোখ দিয়েছেন, এক-আধটু বুদ্ধিও দিয়েছেন। আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক, আমি বড্ড বুকভরা স্নেহ দিয়েই তোমাদের এ পূর্বরাগের শরম-রঙিন ভাবটুকু উপভোগ করতাম, কারণ আমি জানতাম দু-দিন বাদে তোমরা স্বামী-স্ত্রী হতে যাচ্ছ, আর তাই আমাদের সমাজে এ পূর্বরাগের প্রশ্রয় নিন্দনীয় হলেও দিয়েছি। নিন্দনীয়ই বা হবে কেন? দুইটি হৃদয় পরস্পরকে ভালো করে চিনে নিয়ে বাসা বাঁধলেই তো তাতে সত্যিকার সুখ-শান্তি নেমে আসে! যেমন আকাশের মুক্ত পাখিরা। দেখেছ তাদের দুটিতে কেমন মিল? তারা কেমন দুজনকে দুজন চিনে নিয়ে মনের সুখে বাসা বাঁধে, ঘরকন্না করে। এ দেখে যার চোখ না জুড়ায়, সে পাষাণ, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ হিংসুক। হৃদয়ের এ অবাধ পরিচয় আর মিলনকে যে নিন্দনীয় বলে, সে বিশ্ব-নিন্দুক। যাক সেসব কথা, কিন্তু তুমি কোন্ সাহসে বাঁশির সুরে একটি কিশোরী হরিণীকে কাছে এনে তাকে জালিমের মতো এমন আঘাত করলে! এইখানেই তোমাকে ছোটো ভাবতে আমার মনে বড্ড লাগে! এর মূলে কি কোনো বেদনা কি কোনো-কিছু নিহিত নাই? ধরো, এতে আমার যে অপমান করেছ তা নয়তো স্নেহের অনুরোধে ক্ষমা করলাম, কিন্তু অন্যে সে অপমান সইবে কেন? তাদের তো তার অধিকার দাওনি! আর তোমার যদি বিয়ে করবার একান্তই ইচ্ছা ছিল না, তবে প্রথমে কী ভেবে – কীসের মোহে পড়ে রাজি হয়েছিলে? আবার রাজি হয়ে, যখন সব ঠিকঠাক – তখনই বা কেন এমন করে চলে গেলে? গরীব হলেও তাঁদের বংশমর্যাদা অনেক উচ্চ, এটা তোমার ভাবা উচিত ছিল।

    কিছু মনে কোরো না। বড্ড বুক তোলপাড় করে উঠল, তাই উত্তেজিত হয়ে হয়তো অনেক কর্কশ কথা লিখলাম। তোমার ওপর আমার স্নেহের দাবি আছে বলেই এত কথা এত জোর করে কঠিনভাবে বলতে পারলাম। তাছাড়া বরাবরই দেখেছ আমি একটু অন্য ধরনের মেয়ে। যা সত্যি, অপ্রিয় হলেও তা বলতে আমি কখনও কুণ্ঠিত হই না। যাকে স্নেহ করি, তার অন্যায়টাই বুকে সবচেয়ে বেশি বাজে।

    সোফিয়ার চেয়েও মাহ্‌বুবার ওপর আমার বেশি মায়া জন্মে গেছিল। মেয়েটা যেমন শান্ত তেমনই লক্ষ্মীমেয়ের সমস্ত গুণই তাতে বর্তেছিল। তাছাড়া দরিদ্রতার করুণ সসংকোচ ছায়াপাতে তার স্বভাবসরল সুন্দর মুখশ্রী আরও মর্মস্পর্শী মধুর হয়ে ফুটে উঠত আমার কাছে। সে যেদিন চলে গেল, সোফি সেদিন ডুকরে ডুকরে কেঁদেছিল, তিন চার দিন পর্যন্ত তাকে এক ঢোক পানি পর্যন্ত খাওয়াতে পারিনি, – একেবারে যেন মরবার হাল! মা-ও না কেঁদে পারেননি। আহা, পোড়াকপালিকে কি আজ এমন করে বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হত, যদি তুমি তার সোনার স্বপন এমন করে ভেঙে না দিতে। অভাগি যাবার দিনে আমার গলাটা ধরে কী কাঁদাই না কেঁদেছে! তার দু-চোখ দিয়ে যেন আঁশুর দরিয়া বয়ে গিয়েছে! আর একদিন সে কেঁদেছিল ভাই, লুকিয়ে এমনই গুমরে কেঁদেছিল, যেদিন তুমি যুদ্ধে চলে যাও! – আমার বুক ফেটে কান্না আসচে, এ হতভাগির পোড়াকপাল মনে করে।…সে সোমত্থ হয়ে উঠেছে, সুতরাং তার মামুরা যে তাকে আর থুবড়ো রাখবে তা তো মনে করতে পারিনে, বা ও নিয়ে জোর করেও কিছু বলতে পারিনে। বোধ হয় ওইখানেই কোথাও দেখেশুনে বে-থা দেবে। তাঁদের অবস্থা খুব সচ্ছল হলেও বড্ড কৃপণ, – নাকি পিঁপড়ে চিপে গুড় বের করে। তাই বড়ো দুঃখ আর ভয়ে আমার বুক দুরু দুরু করছে। বানরের গলায় মুক্তোর মালার মতো ও হতচ্ছাড়ি কার কপালে পড়ে, কে জানে! গরিব ঘরের মেয়ে হলেও সে আশরফ ঘরের – তাতে অনিন্দ্যসুন্দরী, ডানাকাটা পরি বললেই হয়, – তার ওপর মেয়েদের যেসব গুণ থাকা দরকার, খোদা তাকে তার প্রায় সমস্তই ডালি ভরে দিয়েছেন। আমিও তাকে সাধ্যমতো লেখাপড়া, বয়নাদি চারুশিল্প, উচ্চশিক্ষা – সব শিখিয়েছি। কেন এত করেছিলাম! আমার খুবই আশা ছিল, তার রূপগুণের ফাঁদে পড়ে তোমার মতন সোনার হরিণ ধরা দেবে, তোমার এই লক্ষ্যহীন, বিশৃঙ্খল বাঁধনহারা জীবনের গতিও একটা শান্ত সুন্দরকে কেন্দ্র করে সহজ স্বচ্ছন্দ ছন্দে বয়ে যাবে, – পাশের মাঠে সবুজ শ্যামলতার সোনার স্মৃতি রেখে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, খোদা করেন আর! কারুর দোষ নেই ভাই, দোষ ওরই পোড়াকপালের – আর সবচেয়ে বেশি দোষ আমার।

    মানুষ শেখে দেখে, নয়তো ঠেকে। আমি জীবনে মস্ত একটা ভুল করতে গিয়ে দস্তুরমতো শিক্ষা পেলাম। নানান দেশের রকমের গল্প উপন্যাস পড়ে আমার একটা গর্ব হয়েছিল যে, লোকচরিত্র বুঝবার আমার অগাধ ক্ষমতা, কিন্তু আমার সকল অহংকার চোখের জলে ডুবে গেল।

    যাক, তোমায় অনেক বকলাম ঝকলাম, অনেক উপদেশ দিলাম, অনেক আঘাত করলাম, তাই শেষে একটা খোশখবর দিচ্ছি, অবিশ্যি সেটার সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে যায়নি, তবে কথায় আছে, ‘খোশখবর কা ঝুটা ভি আচ্ছা!’ কথাটা আর কিছু নয়, – আমার হাড়-জ্বালানো ননদিনি শ্রীমতী সোফিয়া খাতুনের বিয়ে – বিয়ে বিয়ে! আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা, ভবদীয় সখা, শ্রীমান মনুয়রের সঙ্গে! বুঝেছ? মনুর বি. এ. পরীক্ষার ফলটা বেরুলেই শুভ কাজটা শিগগির শিগগির শেষ করে দেব মনে করছি। এবার মনুর দু-দুটো বি.এ পাশ। কথাটা হঠাৎ হল ভেবে তুমি হয়তো অবাক হয়ে যাবে, কিন্তু তাতে অবাক হবার কিছুই নেই, অনেকদিন থেকেই ওটা আমরা ভিতরে ভিতরে সমাধান করে রেখেছিলাম এবং সেই সঙ্গে সবিশেষ সতর্ক হয়েছিলাম যাতে কথাটা তোমাদের দুই ফাজিলের একজনেরও কানে গিয়ে না ঢোকে। কারণ তুমি আর মনু এই দুটি বন্ধুতেই এত বেশি বেয়াদব আর চেবেল্লা হয়ে পড়েছিলে যে, অনেকে শয়তানের ভাইরাভাই বলতেও কসুর করত না। এই বিয়ের কথাটা তোমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করলে তোমরা যে প্রকাশ্যেই ওই কথাটা নিয়ে বিষম আন্দোলন আলোচনা লাগিয়ে দিতে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। আগে নাকি ছেলেরা মুরুব্বিদের সামনে বিয়ের কথা নিয়ে কখনও ‘টুঁ পর্যন্ত করতে সাহস করত না, কিন্তু আজকালকার দু-পাতা ‘ইঞ্জিরি’-পড়া ইঁচড়ে পাকা ডেঁপো ছেলেরা গুরুজনের নাকের সামনে তাদের ভাবী অর্ধাঙ্গিনীর রূপ-গুণ সম্বন্ধে বেহায়ার মতো ‘কাঁকাল কোমর’ বেঁধে তর্ক জুড়ে দেয় – এই হচ্ছে প্রাচীন-প্রাচীনাদের মত। ছিঃ মা, কী লজ্জা!

    সোফিয়ার সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এই যে, সে বোধ হয় আজকাল দর্শন পড়ছে কিংবা অন্য কিছুতেই (?) পড়েছে। কেননা সে দিন দিন যেন কেমন একরকম উন্মনা হয়ে পড়ছে! তোমার দেওয়া ‘উচ্ছল জলদল কলরব’ ভাবটা তার আজকাল একেবারেই নেই। সে প্রায়ই গুরুগম্ভীর হয়ে কী যেন ভাবে – আর ভাবে! তবে এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই, এই যা ভরসা। কেননা মেয়েরা অনেকেই বিয়ের আগে ওরকম একটু মন উড়ু উড়ু ভাব দেখিয়ে থাকেন, এ আমাদের স্ত্রী-অভিজ্ঞতার বাণী। বিয়ের মাদকতা কী কম রে ভাই! হতভাগা তুমিই কেবল এ রসে বঞ্চিত রইলে! তাছাড়া দু-দিন বাদে যাকে দস্তুরমতো গিন্নিপনা করতে হবে, আগে হতেই তাকে এরকম গ্রাম্ভারি চালে ভবিষ্যতের একটা খসড়া চিন্তা করতে দেখে হাসা বা বিদ্রুপ করা অন্যায়, – বরং দুঃখ ও সহানুভূতি প্রকাশ করাই ন্যায়সঙ্গত।

    সোফিয়াকে সেদিন তোমায় চিঠি দেওয়ার জন্যে বলতে গিয়ে তো অপ্রতিভের শেষ হতে হয়েছে আমায়‌! আমার প্রস্তাবটা শুনে যে নাক সিঁটকিয়ে – একটা বিচিত্র রকমের অঙ্গভঙ্গি করে – মুখের সামনে মেম-সাহেবদের মতো চার-পাঁচ পাক ফর-ফর করে ঘুরে – দুই হাত নানান ভঙ্গিতে আমার নাকের সামনে নাচিয়ে একেবারে মুখ ভেঙচিয়ে চেঁচিয়ে উঠল – ‘আমার এত দায় কাঁদেনি –গরজ পড়েনি লোককে খোশামুদি করে চিঠি দিবার!’ আমি তো একেবারে ‘থ’! কথাটা কী জানো? – সে বড্ড বেশি অভিমানী কিনা, তাই এতটুকুতেই রেগে ট্যাসকণার মতো ‘ট্যাঁ ট্যাঁ’ করে ওঠে। তুমি সবাইকে চিঠি দিয়েছ আর তাকেই দাওনি, এবং নাকি নেহায়েৎ বেহায়াপনা করে তার ভাইকে তার বিয়ে না ছাই-পাঁশ সম্বন্ধে কী লিখেছ, এই হয়েছে তার আসল রাগের কারণ। তুমি এখানে থাকলে হয়তো সে রীতিমতো একটা কোঁদল পাকিয়ে বসত, কিন্তু তার কোনো সম্ভাবনা নেই দেখেই সে ভিতরে ভিতরে রাগে এমন গস্ গস্ করছে। এ সকলের সঙ্গে তার আরও কৈফিয়ত এই যে, তার হাতের লেখা নাকি এতই বিশ্রী এবং বিদ্যাবুদ্ধি এতই কম যে, তোমার মতো পণ্ডিতাগ্রগণ্য ধুরন্ধর ব্যক্তির নিকট তা নিয়ে উপহাসাস্পদ হতে সে নিতান্তই নারাজ! এসব তো আছেই, অধিকন্তু তার মেজাজটাও নাকি আজকাল বহাল খোশ-তবিয়তে নেই – অবশ্য আমার মতো ছেঁদো, ছোটো, বেহায়া লোকের কাছে কৈফিয়ত দিলে তার আত্ম-সম্মানে ঘা লাগবে বলে সে মনে করে! য়্যা আল্লাহ্! – কী আর করি ভাই! নাচার!! আমি ভালো করেই জানি যে, এর ওপর আর একটি কথা বললেই লঙ্কাকাণ্ড বেধে যাবে; আমার চুল ছিঁড়ে, নুচে, খামচিয়ে, কামড়িয়ে গায়ে থুথু দিয়ে আমাকে এমন জব্দ আর বিব্রত করে ফেলবে যে তাতে আমি কেন, পাথরের মূর্তিরও বিচলিত হওয়ার কথা!

    বাপরে বাপ! যে জবরদস্ত জালিম জাহাঁবাজ মেয়ে! – আমার তো ভয় হচ্ছে, মনু ওকে সামলাতে পারলে হয়।

    অনেক লেখা হল। মেয়েদের এই বেশি বকা, বেশি লেখা প্রভৃতি কতকগুলো বাহুল্য জিনিস স্বয়ং ব্রহ্মাও নিরাকরণ করতে পারবেন না। আমরা মেয়েমানুষ সব যেন কলের জল বা জলের কল! একবার খুলে দিলেই হল!

    যাক, যা হওয়ার ছিল, হয়েছে। এখন খোদা তোমায় বিজয়ী বীরের বেশে ফিরিয়ে আনুন, এই আমাদের দিন-রাত্তির খোদার কাছে মুনাজাত। যে মহাপ্রাণ, অদম্য উৎসাহ আর অসম সাহসিকতা নিয়ে তরুণ যুবা তোমরা সবুজ বুকের তাজা খুন দিয়ে বীরের মতো স্বদেশের মঙ্গল সাধন করতে, দুর্নাম দূর করতে ছুটে গিয়েছ, তা হেরেমের পুরস্ত্রী হলেও আমাদের মতো অনেক শিক্ষিতা ভগিনীই বোঝেন, তাই আজ অনেক অপরিচিতার অশ্রু তোমাদের জন্যে ঝরছে। এটা মনে রেখো যে, পৌরুষ আর বীরত্ব সব দেশেরই মেয়েদের মস্ত প্রশংসার জিনিষ, সৌন্দর্যের চেয়ে পুরুষের ওই গুণটিই আমাদের বেশি আকর্ষণ করে! – অন্ধ স্নেহ-মমতা বড়ো কষ্ট দিলেও দেশমাতার ভৈরব আহ্বানে তাঁর পবিত্র বেদির সামনে এই যে তুমি হাসতে হাসতে তোমার কাঁচা, আশা-আকাঙ্ক্ষাময় প্রাণটি নিয়ে এগিয়ে গিয়েছ, এ গৌরব রাখবার ঠাঁই যে আমাদের ছোটো বুকে পাচ্চিনে ভাই! আজ আমাদের এক চক্ষু দিয়ে অশ্রুজল আর অন্য চক্ষু দিয়ে গৌরবের ভাস্বর জ্যোতি নির্গত হচ্চে!

    খোদার ‘রহম’ ঢাল হয়ে তোমায় সকল বিপদ-আপদ হতে রক্ষা করুক, এই আমার প্রাণের শেষ শ্রেষ্ঠ আশিস।

    এখন আসি ভাই। খুকি ঘুম থেকে উঠে কাঁদচে! – শিগগির উত্তর দিয়। ইতি –

    তোমার শুভাকাঙ্ক্ষিণী ‘ভাবি’
    রাবেয়া
    শাহ্‌পুর

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমৃত্যুক্ষুধা – কাজী নজরুল ইসলাম
    Next Article ভাঙার গান – কাজী নজরুল ইসলাম

    Related Articles

    কাজী নজরুল ইসলাম

    ব্যথার দান – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    গানের মালা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    যুগবাণী – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    অগ্নিবীণা – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    মহুয়ার গান – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    চক্রবাক – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }