Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান – মরিস বুকাইলি

    খন্দকার মাশহুদ-উল-হাছান এক পাতা গল্প323 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২৩. সৃষ্টিতত্ত্ব : আদিপুস্তক

    সৃষ্টিতত্ত্ব : আদিপুস্তক

    ফাদার ডি ভক্স-এর গবেষণা অনুসারে, বাইবেলের ‘আদিপুস্তক’-সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে দুটি ভিন্নধর্মী রচনা একইসঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে। সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে এই যে দুটি আলাদা রচনা–এই বিষয়টির উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা। কেননা, এই বিষয়টি সম্পর্কে অনেক বাইবেল-পাঠকেরই তেমন কোন ধারণা নেই।

    আগেই বলা হয়েছে, সৃষ্টিতত্ত্ব-সম্পর্কিত ‘আদিপুস্তকের প্রথম বক্তব্যের রচয়িতা হলেন, জেরুজালেম উপাসনালয়ের যাজক-পুরোহিতবর্গ। এসব রচনার সময়কাল হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী। এসব রচনা ‘সেকেরডোটাল’ পাঠ হিসেবে পরিচিত। আদিপুস্তকের দুটি বিবরণের মধ্যে এই সেকেরডোটাল রচনা বেশ দীর্ঘ। আদিপুস্তকের দুটি বিবরণের মধ্যে এই রচনার শুরু। এতে একে একে স্থান পেয়েছে আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি, পৃথিবীর সৃষ্টি, প্রাণিজগতের সৃষ্টি এবং শেষ পর্বে বা চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থানলাভ করেছে মানুষের সৃষ্টি-সম্পর্কিত বিবরণ। তবে, মানবসৃষ্টির এই বর্ণনা খুবই সংক্ষিপ্ত।

    সৃষ্টিতত্ত্ব-সম্পর্কিত বাইবেলের দ্বিতীয় বর্ণনাটি হচ্ছে, জেহোভিস্ট আমলের রচনা। এই রচনার সময়কাল হচ্ছে, খ্রিস্টপূর্ব নবম অথবা দশম শতাব্দী। সেকেরডোটাল বিবরণের পরপরই আদিপুস্তকে স্থানলাভ করেছে এই জেহোভিস্ট রচনা এবং এই জেহোভিস্ট রচনায় মানবসৃষ্টি-সংক্রান্ত বিবরণ তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ। যাহোক, এখানে ‘রিভাইজড স্ট্যান্ডার্ড ভার্সন অব দি বাইবেল’ থেকে ‘আদিপুস্তকের’ এই বিবরণ তুলে ধরা হচ্ছে। (বাংলা রূপান্তরে বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা “পবিত্র বাইবেল–পুরাতন ও নতুন নিয়ম”-এর ‘আদিপুস্তকের’ প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে উদ্ধৃত) :

    “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন। পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল। এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে অবস্থান করিতেছিল।”–অধ্যায় ১, বাণী ১ ও ২ :

    “পরে ঈশ্বর কহিলেন, দীপ্তি হউক, তাহাতে দীপ্তি হইল। তখন ঈশ্বর দীপ্তি উত্তম দেখিলেন এবং ঈশ্বর অন্ধকার হইতে দীপ্তি পৃথক করিলেন। আর ঈশ্বর দীপ্তির নাম দিবস ও অন্ধকারের নাম রাত্রি রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে প্রথম দিবস হইল।”–বাণী ৩ থেকে ৫ :

    “পরে ঈশ্বর কহিলেন, জলের মধ্যে বিতান হউক ও জলকে দুইভাবে পৃথক করুক। ঈশ্বর এইরূপে বিতান করিয়া বিতানের উস্থিত জল হইতে বিতানের অধঃস্থিত জল পৃথক করিলেন, তাহাতে সেইরূপ হইল। পরে ঈশ্বর বিতানের নাম আকাশমণ্ডল রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে দ্বিতীয় দিবস হইল।”–বাণী ৬ থেকে ৮ :

    “পরে ঈশ্বর কহিলেন, আকাশমণ্ডলের নিচস্থ সমস্ত জল এক স্থানে সংগৃহীত হউক ও স্থল সপ্রকাশ হউক; তাহাতে সেইরূপ হইল। তখন, ঈশ্বর স্থলের নাম ভূমি ও জলরাশির নাম সমুদ্র রাখিলেন। আর ঈশ্বর দেখিলেন যে, তাহা উত্তম। পরে ঈশ্বর কহিলেন, ভূমি, তৃণ, বীজোৎপাদক ঔষধি ও সজীব স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী ফলের উৎপাদক ফলবৃক্ষ, ভূমির উপরে উৎপন্ন করুক; তাহাতে সেইরূপ হইল। ফলতঃ ভূমি-তৃণ স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী বীজোৎপাদক ঔষধি স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী সজীব ফলের উৎপাদক বৃক্ষ উৎপাদন করিল, আর ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে তৃতীয় দিবস হইল।”–বাণী ৯ থেকে ১৩ :

    “পরে ঈশ্বর কহিলেন, রাত্রি হইতে দিবসকে বিভিন্ন করণার্থে আকাশমণ্ডলের বিতানে জ্যোতির্গণ হউক; সে-সমস্ত চিহের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিবসের ও বৎসরের জন্য হউক, এবং পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য দীপ বলিয়া আকাশমণ্ডলের বিতানে থাকুক, তাহাতে সেইরূপ হইল। ফলতঃ ঈশ্বর দিনের উপর কর্তৃত্ব করিতে এক মহাজ্যোতিঃ ও রাত্রির উপরে কর্তৃত্ব করিতে তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এক জ্যোতিঃ এই দুই বৃহৎ জ্যোতিঃ, এবং নক্ষত্রসমূহ নির্মাণ করিলেন। আর পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য, এবং দিবস ও রাত্রির উপরে কর্তৃত্ব করণার্থে, এবং দীপ্তি হইতে অন্ধকার বিভিন্ন করণার্থে ঈশ্বর ঐ জ্যোতিসমূহকে আকাশমণ্ডলের বিতানে স্থাপন করিলেন এবং ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে চতুর্থ দিবস হইল।”–বাণী ১৪ থেকে ১৯ :

    “পরে ঈশ্বর কহিলেন, জল নানা জাতীয় জঙ্গম প্রাণিবর্গে প্রাণিমত হউক এবং ভূমির ঊর্ধ্বে আকাশমণ্ডলের বিতানে পক্ষিগণ উড়ুক। তখন ঈশ্বর বৃহৎ তিমিগণের ও যে নানাজাতীয় জঙ্গম প্রাণিবর্গে জল প্রাণিময় আছে, সে সকলের এবং নানাজাতীয় পক্ষীর সৃষ্টি করিলেন। পরে ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম। আর ঈশ্বর সে সকলকে আশীর্বাদ করিয়া কহিলেন, তোমরা প্রাণবন্ত ও বহুবংশ হও, সমুদ্রের জল পরিপূর্ণ কর, এবং পৃথিবীতে পক্ষিগণের বাহুল্য হউক এবং আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে পঞ্চম দিবস হইল।”–বাণী ২০ থেকে ২৩ :

    “পরে ঈশ্বর কহিলেন, ভূমি নানাজাতীয় প্রাণিবর্গ অর্থাৎ স্ব স্ব জাতি, অনুযায়ী গ্রাম্যপশু, সরীসৃপ ও বন্যপশু উৎপন্ন করুক; তাহাতে সেইরূপ হইল। ফলতঃ ঈশ্বর স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী যাবতীয় ভূচর সরীসৃপ নির্মাণ করিলেন; আর ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম।”–বাণী ২৪ থেকে ৩১ :

    পূর্বে গ্রন্থিত হয়েছে যে, আরো বর্ণিত রয়েছে, পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মাণ করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষিদের উপরে, পশুদের উপরে কর্তৃত্ব করুক। পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্তিতেই মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেনঃ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।”

    পরে ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্বাদ করিলেন, ঈশ্বর কহিলেন,

    “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্তৃত্ব কর। ঈশ্বর আরো কহিলেন, দেখ, আমি সমস্ত ভূতলে স্থিত যাবতীয় বীজোৎপাদক ঔষধি ও যাবতীয় সজীব ফলদায়ী বৃক্ষ তোমাদিগকে দিলাম, তাহা তোমাদের খাদ্য হইভে। আর ভূচরের যাবতীয় পশু ও আকাশের যাবতীয় পক্ষী ও ভূমিতে গমনশীল জাতীয় কীট এই সকল প্রাণীর আহারার্থ হরিৎ ঔষধিসকল দিলাম। তাহাতে সেইরূপ হইল।”

    “পরে ঈশ্বর আপনার নির্মিত বস্তুসকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে ষষ্ঠ দিবস হইল।”

    সৃষ্টি-সংক্রান্ত বর্ণনা অবশ্য এখানেই শেষ হয় নাই। দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম তিন-চারটি বাণীতেও এ বিষয়ের বর্ণনা স্থানলাভ করেছে। যেমন–

    “এইরূপে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং এতদুভয়স্থ সমস্ত বস্তুব্যুহ সমাপ্ত হইল। পরে ঈশ্বর সপ্তম দিনে আপনার কৃতকার্য হইতে নিবৃত্ত হইলেন, সেই সপ্তম দিনে আপনার কৃত সমস্ত কার্য হইতে বিশ্রাম করিলেন। আর ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন, কেননা সেই দিনে ঈশ্বর সৃষ্ট ও কৃত সমস্ত কার্য হইতে বিশ্রাম করিলেন।”

    “সৃষ্টিকালে যেদিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী ও আকাশমন্ডল নির্মাণ করিলেন, তখনকার আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর বৃত্তান্ত এই।”…

    বাইবেলের আদিপুস্তকে বিশ্বসৃষ্টি সম্পর্কে দ্বিতীয় বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে প্রথম বর্ণনার পরে পরেই :

    “সৃষ্টিকালে যেদিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল নির্মাণ করিলেন, তখনকার আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর বৃত্তান্ত নেই। সে সময়ে পৃথিবীতে ক্ষেত্রের কোন উদ্ভিদ হইত না, আর ক্ষেত্রের কোন ঔষধি উৎপন্ন হইত না; কেননা, সদাপ্রভু ঈশ্বর পথিবীতে বৃষ্টি বর্ষাণ নাই, আর ভূমিতে কষিকর্ম করিতে মনুষ্য ছিল না। আর পথিবী হইতে কুজঝটিকা উঠিয়া সমস্ত ভূতলকে জলসিক্ত করিল। আর সদাপ্রভূ ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে (অর্থাৎ মানুষকে) নির্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন। তাহাতে মনুষ্য সজীব হইল।” (সূত্র ও পবিত্র বাইবেল, আদিপুস্তক, ২ : ৪-৭)

    অতঃপর বাইবেলের ৮ থেকে ১৭নং বাণীতে ভূ-স্বর্গের বর্ণনা রয়েছে এবং এরপর প্রাণিজগৎ ও নারী-সৃষ্টির বিবরণ দেয়া হয়েছে এভাবে :

    “আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, মনুষ্যের একাকী থাকা ভালো নয়। আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্মাণ করি। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকা হইতে সকল বন্যপশু ও আকাশের সকল পক্ষী নির্মাণ করিলেন, পরে আদম তাহাদের কি কি নাম রাখিবেন, তাহা জানিতে সে-সকলকে তাঁহার নিকট আনিলেন, তাহাতে আদম যে সজীব প্রাণীর যে নাম রাখিলেন, তাহার সে নাম হইল। আদম যাবতীয় গ্রাম্যপশুর ও খেচর পক্ষীর ও যাবতীয় বন্যপশুর নাম রাখিলেন, কিন্তু মনুষ্যের জন্য তাহার সহকারিণী পাওয়া গেল না। পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ঘোর ড্রিায় মগ্ন করিলে তিনি নিদ্রিত হইলেন, আর তিনি তাহার একখানা পঞ্জর লইয়া মাংস দ্বারা সে স্থান পুরাইলেন। সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম হইতে গৃহীত সেই পঞ্জরে এক স্ত্রী নির্মাণ করিলেন ও তাহাকে আদমের নিকট আনিলেন। তখন আদম কহিলেন, এবার (হইয়াছে); ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস, ইহার নাম নারী হইবে, কেননা ইনি নর হইতে গৃহীত হইয়াছেন। এই কারণে মনুষ্য আপন পিতামাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে। তখন আদম ও তাহার স্ত্রী উভয়ে উলঙ্গ থাকিতেন, আর তাহাদের লজ্জাবোধ ছিল না।” –দ্বিতীয় অধ্যায়, বাণী ১৮ থেকে ২৫ :

    সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বাইবেলের পর্যালোচনা

    বিশ্বসৃষ্টি ও মানুষের আদি উৎস-সংক্রান্ত বাইবেলের আদিপুস্তকের উদ্ধৃত বক্তব্যসমূহের একাধিক পর্যায়ে গরমিল সচেতন কোন পাঠকের নজর এড়াবার কথা নয়। বিশেষত, মানুষের সেই মানুষ পুরুষ হোক বা নারী হোক–আদি উৎস-সম্পর্কিত বিষয়ের সামঞ্জস্যহীনতা খুবই প্রকট। দ্বিতীয়ত, পৃথিবীতে বিভিন্ন জীব-জানোয়ারের আবির্ভাবের তুলনায় মানুষের আবির্ভাবের সময়কালের গরমিলও অস্বাভাবিক নয়। তদুপরি, মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে বাইবেলে যে ধারণা দেয়া হয়েছে, যেকোন তাৎপর্যেই তার অর্থ খুঁজে বের করা মুশকিল। বিশেষ করে বাইবেলের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদসমূহের প্রেক্ষপটে এই অর্থ নির্ণয় সত্যি দুরূহ। তবে, যদি বাইবেলের এসব বক্তব্য সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় আনা যায়, তবে সে-সবের একটা অর্থ যে দাঁড়ায় না, তা নয়। এই কারণেই এখানে এই পর্যালোচনায় বাইবেলের উভয় পাঠ বা রচনার উদ্ধৃতি তুলে ধরা হল? এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুপ্রতিষ্ঠিত তথ্যাবলীর নিরিখে আলাদা আলাদাভাবে বাইবেলের ওইসব বক্তব্যের তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হল :

    জেহোভিস্ট পাঠ : পর্যালোচনা

    বাইবেল আদিপুস্তকের জেহোভিস্ট রচনায় শুধু একবারই পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল সৃষ্টির বিষয়টা উল্লিখিত হয়েছে। পক্ষান্তরে, সেখানে প্রাধান্য দিয়ে আলোচিত হয়েছে মানুষ-সৃষ্টির বিষয়টি। কিন্তু কথা সেটি নয়। কথা হচ্ছে, বাইবেলের এই জেহোভিস্ট রচনায় বিশ্বসৃষ্টির কাহিনী যেভাবে শুরু করা হয়েছে, তা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সত্যের সঙ্গে আদৌ। অসঙ্গতিপূর্ণ। যেমন, আদিপুস্তকের এই জেহোভিস্ট পাঠে বলা হয়েছে যে, মানুষ যখন সৃষ্টি হয়েছিল তখন পৃথিবীতে গাছপালার কোন অস্তিত্ব ছিল না এবং তখনও সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষাণনি, আর ভূমিতে কৃষিকর্ম করিতে মনুষ্য ছিল না।”

    এই বর্ণনায় আরও দেখা যাচ্ছে, বিধাতা “ধূলির মানুষকে” মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এ বক্তব্যের দ্বারা পৃথিবীর মাটি থেকে মানব-সৃষ্টির উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং এই প্রতীকী বর্ণনার দ্বারা মাটিকে মানব-সৃষ্টির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ, উপরের এতদালোচনায় অপেক্ষাকৃত আধুনিক রচনা সেকেরভোটাল পাঠে মানুষের সৃষ্টিতে মৃত্তিকার কোন উল্লেখ পর্যন্ত নেই।

    জীবজগতের আদি উৎস সম্পর্কে ‘রিভাইজড স্ট্যান্ডার্ড ভার্সন অব বাইবেলের (১৯৫২) জেহোভিস্ট রচনায় বলা হয়েছে।

    “সদাপ্রভু ঈশ্বর সকল বন্য পশু ও আকাশের সকল পক্ষী সৃষ্টি করিলেন।” (বাণী ১৯)

    এখানে কিন্তু এই সকল বন্য পশু ও পাখির আদি উৎস সম্পর্কে তেমন কিছুই বলা হয়নি। পক্ষান্তরে, ফরাসী ভাষার বাইবেলের (ইকুমেনিক্যাল ট্রান্সলেশন অব দি বাইবেল) একই বাণীতে বলা হয়েছে। এভাবে সদাপ্রভু ঈশ্বর পুনরায় মৃত্তিকা হইতে বন্য পশুসকল ও আকাশের পক্ষীসকল সৃষ্টি করিলেন। (বাংলা বাইবেলের ১৯৭৩ সংস্করণের বক্তব্যও অনেকটা ফরাসী বাইবেলের অনুরূপ) অর্থাৎ ফরাসী (এবং বাংলা) বাইবেল থেকে দেখা যাচ্ছে, সকল জীবন্ত যেমন প্রাণী মানুষ পশু-পাখি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়েছিল মাটি থেকে। অন্যদিকে ইংরেজি, ফরাসী (কিংবা বাংলা) বাইবেলে মানুষ সৃষ্টির কতকাল আগে অথবা কতকাল পরে জন্তু-জানোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। বাইবেলের উভয় পাঠে অবশ্য দেখা যায়, “তাহাদের কি কি নাম রাখিবেন তাহা দেখার জন্য (স্রষ্টা) সেই সকলকে তাহার (আদমের) নিকট আনিলেন]” এরদ্বারা অবশ্য বলা হচ্ছে না যে, জন্তু-জানোয়ার মানুষের আগে-না-পরে সৃষ্টি হয়েছিল। জেহোভিস্ট পাঠের শেষপর্যায়ে নারীকে পুরুষের দেহাংশ থেকে সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে। সেকেরডোটাল পাঠে অবশ্য এ সম্পর্কে বিস্তারিত কোন বিবরণ নেই।

    বলা অনাবশ্যক যে, জেহোভিস্ট পাঠ এ ধরনের প্রতীকীর ব্যবহারের জন্য বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। যেমন, মানুষ যে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি সেই বিষয়টার উপরে এর লেখকদের সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের প্রতীকী বক্তব্যের শব্দচয়নেও বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যেমন, প্রথম মানুষের নাম হচ্ছে, আদম। এই ‘আদম’ শব্দটি হিব্রু ভাষায় কালেকটিভ নাউন বা সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (আকারে একবচন কিন্তু অর্থে বহুবচন)। এই ‘আদম’ শব্দটি এসেছে ‘আদামা’ শব্দ থেকে, যার অর্থ “মৃত্তিকা”।… … … …

    এ কথা স্বীকার্য যে, মানুষ তার অস্তিত্বের জন্য মৃত্তিকার উপরে নির্ভরশীল। এভাবে আরো একটি প্রতীকী শব্দ এই জেহোভিস্ট পাঠে বিদ্যমান। শব্দটি হচ্ছে, ‘প্রত্যাগমন’। ‘মানুষের পতনের’ অধ্যায়ে (আদিপুস্তক, ৩১, ১৯-২০ আদম সন্তান ও সমস্ত জীবন্তবস্তুর ভাগ্যলিপি অভিন্ন বলে বাইবেল-লেখক উল্লেখ করেছেন। বলেছেনঃ “সকলে একস্থানে যাইবে, সকলে ধূলি হইতে এবং সকলে ধূলিতে মিশিয়া যাইবে।” (বাংলা বাইবেলে আছে : “তুমি তো তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিভেদ প্রতিগমন করিবে।” এখানে বহুবচন অনুপস্থিত।

    মৃত্তিকায় মানুষের এই প্রত্যাগমনের বিষয়টি গীত-সংহিতায় (১০৪, বাণী ২৯) পুনরুলিখিত হয়েছে; এবং বুক অব জব বা ইয়োব পুস্তকেও (৩৪, ১৫) এই ধারণার উল্লেখ দেখা যায়।

    এ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হল, মৃত্যুর পর মানুষের ভাগ্যে কি ঘটবে, বাইবেলের সেই বর্ণনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ ধর্মীয় অর্থ আরোপ করা হয়েছে। অন্যকথায়, এভাবেই আদিপুস্তকের জেহোভিস্ট পাঠে মানুষের আদি উৎপত্তিস্থলকে তার শেষ প্রত্যাবর্তনস্থল হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। মোদ্দাকথা, এই যে, গোটা বিষয়টাকে এই বর্ণনায় জাগতিক কোন বিষয় হিসেবে গ্রহণের বিন্দুমাত্র অবকাশ থাকছে না। সুতরাং, তা থেকে ধর্মীয় কোন তাৎপর্য খুঁজবারও কোন প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে না। অর্থাৎ, বর্ণিত এই বিষয়টা পরিপূর্ণরূপে নিরেট একটি ধর্মীয় ভাবধারার রূপ পরিগ্রহ করেছে।

    বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, জেহোভিস্ট পাঠে পৃথিবী ও আকশমণ্ডল সৃষ্টির বিষয়টা অত্যন্ত সাদামাটাভাবে বর্ণিত হয়েছে? কিভাবে সেই সৃষ্টিকর্ম সম্পাদিত হয়েছিল তার কোন বিবরণ সেখানে স্থান পায়নি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপদবীর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস – খগেন্দ্রনাথ ভৌমিক
    Next Article ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Our Picks

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }