Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান – মরিস বুকাইলি

    খন্দকার মাশহুদ-উল-হাছান এক পাতা গল্প323 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. যীশুকে গ্রেফতারের বিস্তারিত বিবরণ

    যীশুকে গ্রেফতারের বিস্তারিত বিবরণ

    “তখনই প্রধান-পুরোহিতেরা ও ইহুদীদের প্রাচীনবর্গ কাইয়াফা নামক মহাপুরোহিতের প্রাঙ্গণে একত্র হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিল, ছলে-বলে যীশুকে হত্যা করতে হবে। তবে, এটা পর্বের সময় নয়, পিছে লোকদের মধ্যে গোলমাল হতে পারে’।(মথি ২৬ : ১-৫)।

    তখন বারোজনের একজন, যাকে যিহূদা ঈস্কারিয়োতলা হয়, সে প্রধান পুরোহিতদের কাছে গিয়ে বলল :

    “আপনারা আমাকে কি দিতে চান, আমি তাকে আপনাদের হাতে তুলে দেব? তখন তারা তার হাতে ত্রিশটি রৌপ্যমুদ্রা দিল এবং সেই সময় থেকেই সে যীশুকে তাঁদের হাতে তুলে দেয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগল।” (মথি, ২৬ : ১৪-১৬)।

    যদিও আগেই বলা হয়েছে, মাত্র ত্রিশটি রৌপ্যমুদ্রার জন্য যিহূদা নিশ্চয় এ কাজটি করেননি। কারণ ছিল অন্যকিছু।

    এ সম্পর্কে মনস্তত্ত্ববিদদের অনেকেই মনে করেন, যিহূদার এ কাজটি ছিল সাইকোলজিক্যাল। তার মনস্তাত্ত্বিক মনের একটি বিচিত্র খেলা। তিনি ছিলেন শিক্ষিত লোক, সবকথা তার যাচাই করে নেবার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। যীশুর অন্য শিষ্যদের মতো যা দেখছেন, যা শুনছেন, সবই নির্বিচারে ধ্রুব সত্য বলে মেনে নেয়াটা বোধহয় তার ধাতে ছিল না। লেখাপড়া জানার অভিশাপ মনে সন্দেহ জাগা, মনে মনে তর্কবিতর্ক করা, বাছবিচার করা, যাচাতে যাওয়া ইত্যাদি; যা তারও উপর বর্তেছিল। তাই, যিহূদা যীশুকে ইহুদীশাস্ত্রে লেখা মেশায়া বলে নিঃসন্দেহে মেনে নিতে পারেননি। যদিও, যীশুর অন্য শিষ্যদের মধ্যেও অনেকেই তাকে মেশায়া বলে ধরতে পারেননি, যদিও তারা ইহুদীদের রাজা মেশায়া বলে মেনে নিতে একটুও দ্বিধাসংকোচ করেননি। যিহূদা দেখলেন, তিনি ইহুদী পুরাণে মেশায়ার যে বর্ণনা পড়েছেন, যীশুর সঙ্গে তার কোথাও কোন মিল নেই। যীশু, ক্ষমাশীল, করুণাময়। তাঁর ব্যবহারও তো রাজার মত উগ্র দাম্ভিক নয়। তিনি মানুষকে বিনীত হতে, নিরভিমান হতে, মারমুখো না হতে শিক্ষাদান করেন। তিনি রোমানদের বিরুদ্ধে কখনও একটি কথাও বলেন না। তিনি কি করে ইহুদীদের রোমানদের কবল থেকে উদ্ধার করে তাদের দুর্গতি নাশ করবেন? খুব সম্ভব, এরকম নানা চিন্তা-বিচিন্তা যিহূদাকে একেবারে অস্থির করে তুলেছিল।

    মূলত, ভুল হয় মেশায়া কথাটার অর্থ নিয়ে, সকল ইহুদীর মত যিহূদার কাছেও মেশায়া’ হচ্ছেন : পার্থিব দুর্গতি থেকে ইহুদীদের উদ্ধারকর্তা, রাজা। যীশুর কাছে মেশায়ার অর্থ মোক্ষদাতা, যিনি অমৃতলোকের সন্ধান দেন, অনন্ত জীবনের পথ দেখান, পাপতাপ, দুঃখ-শোক, বিবাদ-বিসংবাদ হরণ করে নিয়ে জগতকে শান্তিতে ভরে দেন। যিহুদা সেই মেশায়াকে একেবারেই বুঝে উঠতে পারেননি। তাছাড়া, যীশু যে এখন অতি সাবধানে, অতি সন্তর্পণে চলাফেরা করছেন, আত্মগোপন করে রয়েছেন, যিহূদার সেটা কোনভাবেই মনঃপুত হচ্ছে না। পুরাণে তো আছে, মেশায়াকে কেউ কিছু করে উঠতে পারবে না। ধরতে ছুঁতেই পারবে না তো মেরে ফেলা। দেখা যাক, যীশুকে ধরিয়ে দিলে পুরোহিতেরা তাঁকে বাঁধতে পারবেন কিনা? ভোজপর্বে যীশুর কথায় তার মনে হল যে, দীর্ঘকাল ধরেই তাদের এই অজ্ঞাতবাস চলতে থাকবে। তখনই যিহূদার মনস্থির হয়ে গেল। সুসমাচার রচয়িতা লকের ভাষায়:

    তখন শয়তান এসে ঈষ্কারিয়োতীয় নামক যিহূদার মনে প্রবিষ্ট হল (২২: ৩)।

    পথে যেতে যেতে যিহুদা নিশ্চয় ভাবলেন যে, যীশু যদি সত্যিই মেশায়া হন তো ঋত্বিক-পুরোহিত-আচাৰ্য্য-উপাধ্যায় সবাই মিলে তাঁদের সমগ্র বলপ্রয়োগ করে তার কেশাগ্রেরও কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। শাস্ত্র কখনও মিথ্যা হতে পারে না। কিন্তু যদি যীশু মেশায়া না হন…? যাকগে সে কথা … দূর হোক সে-চিন্তা …।

    যিহূদা সর্বপ্রধান যাজক যোসেফ কাইয়াফার কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং যীশুর গোপন আস্তানার সন্ধান বলে দিতে রাজী হলেন। কিন্তু মাত্র ত্রিশটি রৌপ্যমুদ্রার লোভে নয়, মনের এক নিদারুণ সংশয় নিরসনের জন্য। যাহোক, যিহূদার সাহায্যে জনসাধারণের অজান্তে গোপনেই যীশুকে ধরে ফেলার সুযোগ আছে বুঝে পুরোহিতেরা তাদের পূর্বপরিকল্পনা বদলে ফেলে নিস্তারপর্ব শুরু হওয়ার আগেই সবকিছু শেষ করে ফেলার আয়োজন করল।

    শত্রুর সম্মুখীন যীশু:

    “যখন তিনি কথা বলছেন, তখন যিহূদা, সেই বারোজনের একজন এল, এবং তার সাথে প্রধান পুরোহিতদের ও ইহুদীদের প্রাচীনবর্গের নিকট হতে বিস্তর লোক খড়গ ও লাঠি নিয়ে এল। যে তাঁকে সমর্পণ করল, সে তাদের এই বলে সংকেত দিয়েছিল, আমি যাকে চুম্বন করব, তিনিই সেই ব্যক্তি। তোমরা তাকে ধরো। সে তখনই যীশুর কাছে গিয়ে বলল, গুরু, মঙ্গল হোক, আর তাকে চুম্বন করল। যীশু তাকে বললেন, বন্ধু, যা করতে এসেছ, কর। তখন তারা কাছে এসে যীশুর উপরে হস্তক্ষেপণ করে তাঁকে ধরল।” (মথি, ২৬ : ৪৭-৫০)।

    যীশুর বিচার মহাপুরোহিতের সামনে :

    “যারা যীশুকে ধরেছিল, তারা তাঁকে মহা-পুরোহিত কাইয়াফার নিকট নিয়ে যায়। সেই স্থানে ধর্মগুরুরা ও প্রাচীনবর্গও সমবেত হয়। (মথি, ২৬ : ৫৭)। প্রধান পুরোহিতেরা ও সমস্ত মহাসভা যীশুকে প্রাণদণ্ড দেবার জন্য তাঁর বিপক্ষে মিথ্যেসাক্ষ্য অন্বেষণ করল, কিন্তু অনেক মিথ্যেসাক্ষী উপস্থিত হলেও তেমন সাক্ষ্য পাওয়া গেল না। শেষে দু’জন উপস্থিত হল; তারা বলল, এ বলেছিল, আমি ঈশ্বরের মন্দির ভেঙ্গে ফেলতে পারি আর তিনদিন পরে তা নির্মাণ করতে পারি। তখন মহা-পুরোহিত দাঁড়িয়ে তাঁকে বলল, তুমি কি কোন উত্তর দেবে না? এরা তোমার বিপক্ষে কেন সাক্ষ্য দিচ্ছে? কিন্তু যীশু নীরব, তাতে মহাপুরোহিত তাঁকে বলল, আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্যি দিয়ে বলছি, আমাদের বল, তুমি সেই ঈশ্বরের পুত্র কিনা। যীশু তাঁকে বললেন, ‘আপনিই বললেন।… এতে মহা-পুরোহিত আপনার বস্ত্র ছিঁড়ে বলল, এ ঈশ্বর-নিন্দা করল, আমাদের সাক্ষীতে আর দরকার কি? তোমরা ঈশ্বর-নিন্দা শুনলে; তোমাদের কি তাই মনে হয়? তারা উত্তরে বলল, “সে মৃত্যুর যোগ্য।” (মথি, ২৬: ৫৯-৬৬)।

    উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মহাপুরোহিতের সামনে যীশুর বিচার-প্রহসনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে সাক্ষ্য সংগ্রহ করে প্রাথমিক বিচারে তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা। তবে মহাপুরোহিত কাইয়াফা এ কথা ভালভাবেই জানতেন, যীশু এমন কোন কাজ করেননি, যা সত্যিই ইহুদী ধর্মের বিরুদ্ধে যায়, যার জন্য ইহুদী অনুশাসন অনুসারে তাকে প্রাণদণ্ড দেয়া যায়। আর ইহুদী বিচার-সভা কারও প্রাণদণ্ড দিলেও তা কার্যকর করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না রোমান শাসনকর্তা ঐ দণ্ড মঞ্জুর করেন। এ কারণে তিনি যীশুকে দেশাধ্যক্ষ পীলাতের নিকট সমর্পণ করার নির্দেশ দেন।

    সুসমাচার রচয়িতা মথি বলেন:

    “আর প্রভাত হলে প্রধান পুরোহিতেরা ও ইহুদীদের প্রাচীনবর্গ সকলে যীশুর বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করল, যেন তার প্রাণদণ্ড দিতে পারে; আর তাকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে দেশাধ্যক্ষ পীলাতের হাতে সমর্পণ করল।” (মথি, ২৭ : ১-২)।

    তখন রোমান শাসনকর্তা পীলাত ইহুদীদের নিস্তার-পর্ব উপলক্ষে জেরুজালেমেই ছিলেন। তিনি মূলত ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী হেরোদ-১ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নুন নগরী সিজারিয়াতে বাস করতেন। শুধু ইহুদীদের বড় বড় তিনটি পর্বের সময়ই জেরুজালেমে এসে থাকতেন। ইহুদীদের সবচেয়ে বড় উৎসব নিস্তার-পর্বের সময়ে দিক-বিদিকের ইহুদীরা জেরুজালেমে এসে উপস্থিত হত। আর বহুলোক একত্র হলে ছোট কি বড় একটা-না–একটা দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেঁধেই যেত। তাই তখন তিনি কিছুদিন জেরুজালেমে অবস্থান করে রোমান সৈন্যদের পাহারায় বসিয়ে শাস্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করতেন।

    পীলাতের আদালতে যীশুর বিচার :

    “…লোকেরা যীশুকে কাইয়াফার কাছ থেকে দেশাধ্যক্ষের প্রাসাদে নিয়ে গিয়ে … তারা যেন কলুষিত না হয়ে নিস্তার-পর্বের ভোজ আহার করতে পারে, সেজন্য তারা নিজেরা প্রাসাদে প্রবেশ করল না। অতএব, পীলাত বাইরে এসে তাদের কাছে বললেন, তোমরা এই লোকের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ এনেছ? তারা উত্তরে তাকে বলল, এ যদি অপরাধী না হত আমরা আপনার হাতে এঁকে সমর্পণ করতাম না।” –(যোহন, ১৮ : ২৮-৩০)।

    “পীলাত বিচারাসনে বসলে, তাঁর স্ত্রী (প্রাকুলা, দূত মারফত) পত্র পাঠালেন, সেই ধার্মিকের সাথে তোমার কোন সংস্রব না হোক, কারণ আমি আজ রাতে স্বপ্নে তার জন্য অনেক দুঃখভোগ করেছি।” (মথি, ২৭ : ১৯)। পীলাত এতে ভীত হলেন এবং যীশুর ধার্মিকতায় বিশ্বাসী হয়ে তাঁকে কৌশলে মুক্তি দেবার পথ খুঁজতে লাগলেন। যেহেতু, “তারা যে হিংসাবশতঃ তাঁকে সমর্পণ করেছে, তা তিনি জানতেন।” (মথি, ২৭ : ১৮)।

    “পর্বের সময় দেশাধ্যক্ষের এই রীতি ছিল যে, লোকেরা যাকে দাবী করত এমন একজন বন্দীকে তিনি মুক্ত করে দিতেন। তখন যীশু বরাব্বা নামক তাদের একজন বিশেষ বন্দী ছিল। অতএব, তারা একত্র হলে, পীলাত তাদের বললেন, তোমরা কি চাও, আমি কাকে মুক্ত করে দেব, যীশু বরাব্বাকে না যাকে খ্রিস্ট বলে সেই যীশুকে?” (মথি, ২৭: ১৫-১৭)।

    “প্রধান পুরোহিত ও প্রাচীনবর্গ লোকদের প্ররোচিত করল যেন তারা বরাব্বাকে চেয়ে নেয় এবং যীশুকে নাশ করে। সুতরাং, দেশাধ্যক্ষ যখন তাদের পুনর্বার বললেন, তোমরা কি চাও, এ দুজনের মধ্যে কাকে মুক্ত করে তোমাদের দেব? তখন তারা বলল, বাব্বাকে। পীলাত তাদের বললেন, তবে যীশু, যাকে খ্রিস্ট বলে, তার বিষয়ে কি করব? তারা সবাই বলল, তাঁকে ক্রুশে দেয়া হোক। দেশাধ্যক্ষ তাদের বললেন, কেন, সে কি অপরাধ করেছে? কিন্তু তারা আরও বেশি চিৎকার করে বলল, তাঁকে ক্রুশে দেয়া হোক।” (মথি, ২৭ : ২০-২৩)।

    বাইবেলের পূর্বোক্ত বর্ণনায়, যীশুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্বন্ধে জানা যায়, তাদের অভিযোগগুলোর মূলে কোন সত্য ছিল না। ইহুদীরা বিশেষতঃ ইহুদী পণ্ডিত-পুরোহিত ও সমাজপতিরা যীশুর শিক্ষার ফলে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তির এবং শাসন-শোষণের সুযোগ-সুবিধের ক্ষতি হচ্ছে দেখে, হিংসেবশতঃ তাঁর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। পীলাতও যে এ ধরনের বিশ্বাস করতেন, মথির প্রদত্ত বিবরণ থেকে তাও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

    ইহুদীরা যখন যীশুকে ক্রুশে আবদ্ধ করার জন্য চরম হৈ-হল্লা শুরু করে দিল, পীলাত তখন বললেন, “কেন, সে কি অপরাধ করেছে?”

    মূলত, পীলাত যে যীশুকে একজন ধার্মিক ও নিরপরাধ ব্যক্তি বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, এতে কোনই সন্দেহ নেই। তাঁর স্ত্রীর স্বপ্ন থেকেও বুঝা যাচ্ছে, যীশুর প্রাণরক্ষার জন্য বিশেষভাবে ব্যাকুল হয়ে পড়াই ছিল তার পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। মার্কের পনেরো অধ্যায়েও অনুরূপ বর্ণনাই লিপিবদ্ধ আছে। সুতরাং, লুক রচিত সুসমাচার থেকে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ের উল্লেখ করা হল:

    “আর তারা তাঁর বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করলো, আমরা জেনেছি যে এই লোকটি আমাদের জাতিকে বিপথগামী করছে, কৈসরকে কর দিতে নিষেধ করেছে, আমি খ্রিস্ট, রাজা। (লুক, ২৩ : ২)। পীলাত আবার রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করলেন এবং যীশুকে ডেকে বললেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা? যীশু তাঁকে উত্তর দিলেন, আপনি কি নিজ থেকে এটা বলছেন, না অন্যেরা আমার বিষয়ে এ কথা আপনাকে বলে দিল? পীলাত উত্তর দিলেন, আমি কি ইহুদী? তোমার স্বজাতীয়েরা ও প্রধান পুরোহিতেরা আমার হাতে তোমাকে সমর্পণ করেছে; তুমি কি করেছ; যীশু উত্তর দিলেন আমার রাজ্য এ জগতের নয়, আমার রাজ্য যদি এ জগতের হত, তবে যাতে আমি ইহুদীদের হাতে সমর্পিত না হই, সেজন্য আমার অনুচরেরা প্রাণপণে সংগ্রাম করত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমার রাজ্য এ স্থানের নয়। পীলাত তাঁকে বললেন, তবে কি তুমি ইহুদীদের রাজা? যীশুর উত্তর, আপনিই বলছেন, আমি রাজা। সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেবার জন্যই আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং জগতে এসেছি; যে-কেউ সত্যের অনুগত সে আমার কথা শুনে। পীলাত তাঁকে বললেন, ‘সত্য কি? এই বলে তিনি আবার বাইরে ইহুদীদের নিকট গেলেন ও তাদের বললেন, “আমি এর কোনই দোষ পাচ্ছিনে।” (যোহন, ১৮ : ৩৩-৩৮)। কিন্তু ইহুদীরা পীলাতের মুখে যীশুর নির্দোষিতার ঘোষণা বারবার শুনে তারা তার বিরুদ্ধে নতুনভাবে অভিযোগ উপস্থিত করল, “তারা আরও জিদ করে বলতে লাগল, এই ব্যক্তি সমগ্র যিহূদীয়ায় এবং গালীল থেকে শুরু করে এই স্থান পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে প্রজাবৃন্দকে উত্তেজিত করে তুলেছে। পীলাত গালীলের কথা শুনে লোকটি গালীলীয় কিনা জিজ্ঞেস করলেন, আর যীশু হেরোদের অধিনস্থ লোক, তা জানতে পেরে তিনি তাঁকে হেরোদের নিকট পাঠালেন; তখন হেরোদও জেরুজালেমে ছিলেন। (লুক, ২৩ : ৫-৭)।

    বর্ণিত রয়েছে যে, ‘পীলাত যীশুকে হেরোদের কাছে পাঠিয়েছিলেন’–এই হেরোদ হচ্ছেন গালিলী প্রদেশ ও জর্ডনের পূর্বপারের দক্ষিণ অঞ্চল পেরিয়া প্রদেশের রাজা অ্যান্টিপাস হেরোদ। তিনি রাজা হেরোদের তৃতীয় পুত্র। রাজা হেবোদ সাঁইত্রিশ বছর রাজত্ব করে সত্তুর বছর বয়সে দারুণ অশান্তি ভোগ করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হন। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে শুয়েই তিনি এক উইল করে তার বিস্তৃত রাজ্য তাঁর তিন জীবিত পুত্রের মধ্যে ভাগ করে দেন। বড় ছেলে আরকেলস পান জুডিয়া, স্যামেরিয়া আর ইডুমিয়া। দ্বিতীয় পুত্র ফিলিপ পান জর্ডন নদীর পূর্ব পারের সমস্ত উত্তর অঞ্চল। পরবর্তীকালে সিজেরিয়া ফিলিপাই এ অঞ্চলের রাজধানী ছিল। তৃতীয় পুত্র অ্যান্টিপাস পান গালিলী প্রদেশ ও জর্ডনের পূর্ব পারের দক্ষিণ অঞ্চল পেরিয়া প্রদেশ। এভাবে বিস্তৃত রাজ্য ভাগ করে দিলেও হেরোদ তার উইলের এগজিকিউটর করে যান সম্রাট অগাস্টাসকে। এরপর রাজা হেরোদ মারা যেতে না যেতেই সারা প্যালেস্টাইন জুড়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে। এই বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে আরকেলস তিন হাজার ইহুদীকে হত্যা করে ফেলে। এরপর ব্যাপারটা চরম আকার ধারণ করলে আরকেলস তার বন্ধু সিরিয়ার রোমান গভর্নরের উপর তার রাজ্যভার চাপিয়ে দিয়ে স্বয়ং ম্রাটের সাথে দেখা করতে যান রোমে। এক দল মাতব্বর ইহুদীও তখনই সম্রাটের কাছে দরবার করতে যান, যেন হেরোদ-পুত্রদের কেউ রাজত্ব করতে না পারে। বরং, ম্রাট যেন নিজেই সমগ্র প্যালেস্টাইনের শাসনভার গ্রহণ করেন। তারা ভেবেছিলেন, পুরাকালে পারস্য সম্রাটের অধীনে তারা যেমন আনন্দে ছিলেন, রোম সম্রাটের হাতে পড়লে ঠিক তেমনটিই সুখে থাকবেন। কিন্তু ম্রাট ইহুদী মাতব্বরদের কথায় কান না দিয়ে মোটামুটি হেরোদের উইলের শর্তগুলো বজায় রাখলেন। তবে তিনি আরকেলসকে জুডিয়া বা স্যামেরিয়ার ঠিক রাজা করলেন না এবং রাজা নাম গ্রহণ করারও অধিকার তাঁকে দিলেন না। আর একটু নীচুদরের শাসনকর্তার পদে নামিয়ে তার পদবী দিলেন ইহুদীদের কুলপতি। ফিলিপ আর অ্যান্টিপাস নিজ নিজ অঞ্চলের শাসনকর্তা রয়ে গেলেন। তবে জর্ডন নদীর ওপারের গ্রীক শহরগুলো নিয়ে কোপোলিস বলে যে অঞ্চল গড়ে উঠেছিল, তা সিরিয়ার রোমান বড়লাট (Viceroy)-এর শাসনাধীন হয়ে গেল।

    ইহুদীদের কুলপাতিরূপে আরকেলস রোম থেকে ফিরে এসে প্রায় দশ বছর শাসন চালিয়েছিলেন। ওই দশ বছরে তার অত্যাচারের মাত্রা এমনই বেড়ে যায় যে জুডিয়া আর স্যামেরিয়ার মানুষ একজোট হয়ে নিজেদের ক’জন বাছা বাছা প্রধানকে রোমে পাঠালো ম্রাটের কাছে নালিশ জানাতে। সম্রাট সব শুনে একটি বিহিত করার লক্ষ্যে আরকেলসকে তৎক্ষণাৎ রোমে ডেকে পাঠালেন। আরকেলস রোমে আসার সাথে সাথে তাকে ফ্রান্সে নির্বাসিত করে দেয়া হলো। জুডিয়া, স্যামেরিয়া ও ইজুমিয়া সিরিয়ার রোমান বড়লাটের অধীনে চলে গেল। একজন বিচক্ষণ রোমান রাজপুরুষ বড়লাটের নিচে তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি (Procurator) হিসেবে এসব প্রদেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন। ইনিই নতুন নিয়মের পরিভাষায় ‘দেশাধ্যক্ষ’ নামে অভিহিত হয়েছেন।

    যাহোক, যীশু হেরোদ অ্যান্টিপাসের অধীনস্থ লোক, তা জানতে পেরে পীলাত তাঁকে হেরোদের নিকট পাঠিয়ে দেন।

    “যীশুকে দেখে হেরোদ তো অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ, তার বিষয়ে অনেক কথা শুনে তিনি অনেকদিন থেকে তাকে দেখতে ইচ্ছেপোষণ করছিলেন, আর তার সাধিত কোন লক্ষণ দেখার আশা করছিলেন।” (লুক, ২৩ : ৮)। সুতরাং, “তিনি যীশুকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করলেন … আবার পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।” (লুক, ২৩ : ৯, ১৯)।

    ফলে, ইহুদীদের রাজনৈতিক আন্দোলনের বিপরীত ফল ফলল। মূলতঃ হেরোদ যীশুকে দেখে আনন্দিত হলেন এবং অপেক্ষমাণ প্রধান পুরোহিত ও ধর্মগুরুদের উপেক্ষা করে তিনি তাঁকে অক্ষতদেহে পীলাতের নিকট ফেরৎ পাঠালেন এবং তারপরেই–

    “পীলাত সমস্ত প্রধান পুরোহিত ও অধ্যক্ষ সকলকে এবং জাতীর লোককে ডেকে একত্র করলেন ও তাদের বললেন, লোকটি জাতিকে বিপথগামী করছে বলে তোমরা তাঁকে আমার সামনে উপস্থিত করেছ; আর আমি তোমাদের সাক্ষাতে অনুসন্ধান করে, তোমরা এর নামে যে যে দোষারোপ করেছ তার কোনও দোষ এরমধ্যে পাইনি; হেরোদও পাননি, কারণ তিনি তাঁকে আমাদের কাছে ফেরৎ পাঠিয়েছেন, বাস্তবিক প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন কাজ এ করেনি; অতএব, আমি তাকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব।” (লুক, ২৩ : ১৩-১৬)।

    সুতরাং, আঞ্চলিক শাসনকর্তা পীলাত যীশুকে নির্দোষ ও নিরপরাধী বলে ঘোষণা করেছেন, ইহুদীয়ার রাজা হেরোদও নিরপরাধী বলে তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিয়েছেন। তাই স্পষ্টভাবে জানা যায়, এ অবস্থায় ধার্মিক, নিরপরাধ ও নিঃসহায় যীশুকে ক্রুশে টাঙ্গিয়ে হত্যা করার নিষ্ঠুর আদেশ দেয়া বা কোনপ্রকারে তার সহায়তা করা শাসনকর্তাদের কারওপক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব বলে বিবেচিত হতে পারে না।

    পরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনা :

    ইতিপূর্বে জানা গেছে, প্রাদেশিক শাসনকর্তা পীলাত ও রাজা হেরোদ কেউই যীশুকে কোনওপ্রকারে অপরাধী সাব্যস্ত করেননি, তাকে ক্রুশে দিয়ে বধ করার দায়িত্বও তারা গ্রহণ করেননি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থায় তাঁকে এ দণ্ডদানের ব্যবস্থা করার ভার অর্পিত হয়েছিল কার বা কাদের উপর? কেউ কেউ অনুমান করতে পারেন, পীলাত যখন তাঁকে ক্রুশে টাঙ্গিয়ে বধ করতে প্রস্তুত হননি, বরং তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছেন, অন্যদিকে ইহুদীরা যখন তাকে ক্রুশে দিয়ে বধ করার জন্য চরমভাবে উৎসুক হয়ে উঠেছিল, তখন সঙ্গতভাবে অনুমান করা যায়, ইহুদীরাই তাঁকে ক্রুশে দিয়ে নিহত করেছিল। তবে এমন অনুমান করা সঙ্গত হবে না। কারণ, প্রধানত যে বাইবেলকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টানদের মৌলিক বিশ্বাস ও সংস্কারগুলোর বিচার আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছি, তাতে এই অনুমানের বিপরীত প্রমাণই পাচ্ছি। সাধু যোহনের বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে–ইহুদীদেরকে কোনপ্রকারে নিরস্ত করতে না পেরে, “পীলাত তাদেরকে বললেন, তোমরাই একে নিয়ে যাও, নিজেদের ব্যবস্থামতে এর বিচার কর। ইহুদীরা তাকে বলল, কারও প্রাণনাশ করা আমাদের পক্ষে বিধেয় নয়।” (যোহন, ১৮ : ৩১-৩২) –এ থেকে জানা যায়, যীশুকে ক্রুশে দেয়ার ভার ন্যস্ত হয়েছিল সম্পূর্ণভাবে পীলাতের উপর, ইহুদীদের উপর নয়। মথির বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে যে, “তখন দেশাধ্যক্ষের সৈন্যেরা যীশুকে … ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য নিয়ে গেল।” (মথি, ২৭: ২৭-৩১)

    কিছুটা অবান্তর হলেও এখানে পাঠকদেরকে পীলাতের ঘোষণাটি আবার স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত : “বাস্তবিক প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন কাজ এ করেনি। অতএব আমি তাকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব।” (লুক, ২৩ : ১৫-১৬)।

    পাঠকদের অবগতির জন্য এখানে ঐতিহাসিক একটি প্রতিবেদন পত্রস্থ করাও প্রয়োজন? এই প্রতিবেদনটি যীশুর নির্দোষিতার স্বপক্ষে এবং তাঁকে রক্ষা করার অভিপ্রায়ে গভর্নর পীলাত মহামান্য তাইবেরিয়াস সিজার-এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। চামড়ার উপর লেখা সেই প্রতিবেদনটি এখনও রোমের ভ্যাটিক্যান লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। আর এর ইংরেজি অনুবাদটি সংরক্ষিত আছে লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, ওয়াশিংটনে। স্প্যানিস দার্শনিক আন্দ্রেজ ফিবার কাইজার-এর পুস্তক থেকে প্রতিবেদনটি গ্রন্থস্থ করা হল:

    তাইবেরিয়াস সিজার সমীপে—

    “গালীলে ঈশ্বর প্রেরিত এক যুবকের আবির্ভাব ঘটে, যে তার প্রভুর নামে নতুন আইন ঘোষণা করে–আইনটি হলো নম্রত্ব। প্রথম আমি মনে করেছিলাম ঐ যুবকের অভিপ্রায় হল জনসাধারণকে রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলা। কিন্তু আমার ধারণা অনতিবিলম্বে ভুল প্রমাণিত হয়। নাসরতীয় যীশু ইহুদীদের চেয়ে রোমানদের প্রতিবেশি ভ্রাতৃত্বসুলভভাবে কথা বলেন।

    একদিন আমি লক্ষ্য করলাম, একজন যুবক গাছে ঠেস দিয়ে শান্তভাবে সম্মিলিত কিছু লোকের সাথে কথা বলছেন। ওরা আমাকে বলল, লোকটি যীশু। যেহেতু লোকটিকে আমি বিরক্ত করতে চাইনি; তাই আমি নিজের পথে পা বাড়ালাম; শুধু আমার সচিবকে বললাম, ওদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা শোন।

    পরে আমার সচিব আমাকে বলল, লোকটির বক্তব্যের সাথে আমার পঠিত দার্শনিক গ্রন্থাবলীর বক্তব্যের কোন মিল নেই। এবং লোকটি জনসাধারণকে উচ্ছন্নে ঠেলে দিচ্ছে না, এমনকি তাদের ক্ষেপিয়েও তুলছে না। এ জন্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যীশুকে রক্ষা করতে হবে। তার ইচ্ছানুসারে আচরণের কথা বলার ও সভা ডাকার স্বাধীনতা ছিল। এ সীমাহীন স্বাধীনতার জন্য ইহুদীরা ক্ষেপে যায়। কিন্তু দরিদ্রের কোন ক্ষত হয়নি। আবার ধনী ও ক্ষমতাবানরা এতে অস্বস্তিবোধ করে। পরবর্তীতে যীশুকে একটি পত্র লিখি–ফোরাম (Forum) এ তাঁর সাক্ষাৎকার প্রার্থনা করে। তিনি এসেছিলেন। এই অসাধারণ ব্যক্তিটিকে আমি কিছুটা বুঝতে চেষ্টা করি। তাঁর অবয়ব বা চরিত্রে দোষণীয় কিছু ছিল না। তার উপস্থিতিতে আমি গভীর শ্রদ্ধাবোধ করি। তিনি আমাদের সবাইকে তাঁর সারল্য, নম্রতা ও প্রেম দ্বারা প্রভাবিত করেন। হে মহান সম্রাট এ-সবই নাসরতীয় যীশু সম্বন্ধে ভাবনার বিষয়। এবং আমি এ বিষয়ে আপনাকে বিস্তারিত অবগত করলাম। আমার অভিমত হল যীশু কোন অপরাধমূলক কাজ করেননি। আমাদেরকে স্বীকার করতেই হবে যে, যীশু বাস্তবিকই ঈশ্বর সেবক।

    আপনার অনুগত ভৃত্য,
    পন্তিয়াস পীলাত”

    যাহোক, যীশুকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করতে দেশাধ্যক্ষ পীলাত আদৌ প্রস্তুত ছিলেন না এবং বিপুল ইহুদী-জনতার সামনে নিজের সেই সংকল্পকে প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করতেও তিনি কুণ্ঠিত হননি। পক্ষান্তরে, ঐতিহাসিক বিচারালোচনার দ্বারা এ সত্যটিই অনাবিলরূপে ভাস্বর হয়ে উঠেছে যে, যীশুর প্রাণরক্ষার জন্য পীলাত প্রথম থেকেই সচেষ্ট হন এবং এতোদ্দেশ্যে তিনি যীশুর প্ৰকত শিষ্য হাওয়ারীদেরকে প্রথম থেকে সহায়তা করেও আসছিলেন। এ দাবীর স্বপক্ষে সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ বাইবেলে রয়েছে। উপস্থিত ইহুদীদের কারও প্রাণ নাশ করা আমাদের পক্ষে বিধেয় নয়–এই সাধুতার কারণ সম্বন্ধে দু’একটি কথা বলে যায় :

    পীলাতের প্রস্তাবের উত্তরে ইহুদীরা বলছে, “কারও প্রাণনাশ করা আমাদের পক্ষে বিধেয় নয়।” কিন্তু অন্য লোকের কথা দূরে থাকুক, আল্লাহর প্রেরিত নবী-রসূলদেরকে হত্যা করতেও তারা পূর্বে কোনদিনই দ্বিধাবোধ করেনি। তাদের ধর্মীয় ইতিহাসেও এর অনেক নজীর আছে। এ অবস্থায়, বিশেষতঃ যীশুকে হত্যা করার জন্য তাদের এই ব্যাকুল ব্যগ্রতা সত্ত্বেও তারা নিজেদের শাস্ত্রীয় ব্যবস্থানুসারে যীশুকে ক্রুশে টাঙ্গিয়ে বধ করতে অসম্মত হন বিশেষ দুটো কারণে। প্রথমত, রাজ-শক্তির বিরূপ মনোভাব, প্রকাশ্যভাবে যীশুর বিরুদ্ধে উত্থান করার মত সৎ-সাহস এই কাপুরুষ জাতির ছিল না। দ্বিতীয়ত, তখন স্বয়ং ইহুদী সমাজে আন্তঃবিদ্রোহ উপস্থিত হওয়ার প্রবল আশংকা এবং যীশুর প্রকৃত শিষ্য হাওয়ারীদের সুসংহত ও সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের প্রবণতা।

    যাহোক, পীলাত যখন ঘোষণা করলেন, বাস্তবিক প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন কাজ এ করেনি; তাই আমি তাকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব, তখন তিনি লোকদের বললেন :

    “দেখ, আমি এঁকে তোমাদের নিকট বাইরে আনছি যেন তোমরা জানতে পার, আমি এঁর কোন দোষ পাচ্ছি না।” (যোহন, ১৯ : ৪)।

    কিন্তু প্রধান পুরোহিতেরা ও অনুচরেরা চেঁচিয়ে বলল, “কুশে দাও, কুশে দাও।” পীলাত তাদের বললেন, “তোমরা নিজেরা এঁকে নিয়ে গিয়ে ক্রুশবিদ্ধ কর; কারণ এঁর কোন দোষ আমি পাচ্ছি না।”

    ইহুদীরা তাকে উত্তর দিল, আমাদের এক বিধি-ব্যবস্থা আছে, আর আমাদের ব্যবস্থানুসারে তাঁর মৃত্যু হওয়া উচিত কারণ এ নিজেকে ঈশ্বর-পুত্র বলে দাবী করেছে। পীলাত এ কথা শুনে অত্যন্ত ভীত হলেন; তিনি আবার রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে যীশুকে বললেন, তুমি কোথা থেকে এসেছ? কিন্তু যীশু তাঁকে কোন উত্তর দিলেন না। এতে পীলাত তাঁকে বললেন, তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না? তুমি কি জান না, তোমাকে মুক্ত করার ক্ষমতা আমার আছে আর তোমাকে ক্রুশবিদ্ধ করার ক্ষমতাও আমার আছে? যীশু তাকে উত্তর দিলেন, উর্ব থেকে তোমাকে দেয়া না হলে, আমার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার কোন ক্ষমতাই তোমার থাকত না; এজন্য তোমার হাতে যে আমাকে সমর্পণ করেছে, তারই পাপ বরং গুরুতর।” (যোহন, ১৯ : ৬-১১)।

    “এরপরে পীলাত তাকে মুক্তিদান করতে চেষ্টা করলেন (যোহন, ১৯ : ১২)। তিনি আবার বাইরে গিয়ে ইহুদীদের কাছে বললেন, আমি এর কোনই দোষ পাচ্ছি না; তোমাদের এক রীতি আছে যে, নিস্তার-পর্বের সময় আমি একজনকে মুক্ত করে তোমাদের দিই? তারা সবাই আবার চেঁচিয়ে বলল, এঁকে যদি মুক্তিদান করেন, তবে আপনি কৈসরের বন্ধু নন। যে কেউ আপনাকে রাজা বলে প্রতিপন্ন করে, সে কৈসরের বিরোধী। একথা শুনে পীলাত যীশুকে বাইরে এনে, যে স্থানকে শিলাস্ত রণ বলে (ইব্রীয় নাম ‘গাব্বাথা) সেই স্থানে বিচারাসনে বসলেন। সেদিন নিস্তারপর্বের আয়োজনের দিন, বেলা প্রায় ছয় ঘটিকা, পীলাত তাদের বললেন, এই দেখ, তোমাদের রাজা। তারা চিৎকার করে বলল, দূর কর, এঁকে ক্রুশে দাও। পীলাত তাদের বললেন, তোমাদের রাজাকে কি ক্রুশবিদ্ধ করবে? প্রধান পুরোহিতেরা উত্তর দিল, কৈসর ব্যতীত আমাদের রাজা নেই।” (যোহন, ১৯ : ১২-১৫)।

    “পীলাত তখন দেখলেন, এতে কোন লাভ হচ্ছে না, বরং আরও গোলমাল হচ্ছে, তখন পানি নিয়ে তিনি লোকদের সামনে হাত ধুয়ে বললেন, এই ধার্মিকের রক্তপাতের সম্বন্ধে আমি নির্দোষ; তোমরাই তা বুঝবে। তাতে সকল তোক উত্তরে বলল, তাঁর রক্তপাতের দায়িত্ব আমাদের ও আমাদের সন্তানদেরই উপরে বর্তুক। তখন তিনি বরাব্বাকে মুক্ত করে তাদের দিলেন এবং যীশুকে চাবুক মেরে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য তাদের হাতে সমর্পণ করলেন। (মথি, ২৭ : ২৪-২৬)। তখন দেশাধ্যক্ষের সৈন্যেরা যীশুকে … ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য নিয়ে গেল। (মথি, ২৭ অধ্যায়)।

    “সৈন্যেরা কাঁটার একটি মুকুট গেথে তাঁর মস্তকে দিল এবং তাঁকে ‘বেগুনী’ রংয়ের পোশাক পরাল।” (যোহন, ১৯ : ২)। তারা যখন তাকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন কুরীণী নিবাসী শিমোন নামে একটি লোক পল্লীগ্রাম থেকে আসছিল, তাকে ধরে তারা তার কাঁধে ক্রুশ রাখল, যেন সে যীশুর পিছনে পিছনে তা বহন করে।” (লুক, ২৩ : ২৬)।

    “আরও দু’জন দুষ্কৃতিকারী হত হওয়ার জন্য তাঁর সাথে নীত হল।” (সূক, ২৩ : ৩২)। যোহন বলেছেন, তিনি নিজের ক্রুশ নিজে বহন করে মাথার খুলির স্থান, যাকে ইব্রীয় ভাষায় গগথা বলে, এক্ষেত্রে, উপস্থিত হলেন।” (১৯ : ১৭)।

    সুতরাং দেখা যায়, ইহুদী পণ্ডিত-পুরোহিতদের ষড়যন্ত্র সার্থক হলে কুশে টাঙ্গানোর জন্য দেশাধ্যক্ষের নির্দেশ প্রকাশ্যভাবে ঘোষিত হল অর্থাৎ, ইহুদী পণ্ডিত-পুরোহিতেরা যীশুকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করতে না পারলেও এবং পীলাত যীশুকে নির্দোষ জানলেও ইহুদী জনগণ এবং বিশেষ করে পণ্ডিত পুরোহিতদের চাপে পড়ে যীশুকে ক্রুশের শান্তি দিতে বাধ্য হলেন।

    অতঃপর যীশুকে সৈন্যদের হাতে সমর্পণ করা হলে যথারীতি তার মাথায় কাঁটার তাজ পরান হল, তাঁর পরিহিত বস্ত্র অপহৃত হল এবং নিজের ক্রুশ নিজে বহন করে তিনি গগথা বদ্ধভূমির পানে এগিয়ে গেলেন দুজন দুকৃতপরায়ণ অপরাধীর সহচররূপে।

    যীশুর জয়যাত্রা:

    খ্রিস্টান লেখকদের মতে, এখান থেকে শুরু করে যীশুর জীবন অবসানের শেষ অধ্যায়। কিন্তু, নিরপেক্ষ সংস্কারমুক্ত চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করলে জানা যাবে যে, বস্তুতঃ গলগথা থেকে শুরু হয় যীশুর নবীজীবনের প্রথম বিজয় অভিযান পীলাত ও হাওয়ারীদের সম্মিলিত উদ্যোগ আয়োজনের বাস্তব রূপায়ন।

    ইহুদী যাজক, পুরোহিত এবং ইহুদী সমাজের জনসাধারণ বা নিজেদের ষড়যন্ত্রের সাফল্যগর্বে আত্মহারা হয়ে ছুটে এসেছিল গগথার বধ্যভূমিতে, যীশুর ‘অভিশপ্ত’ জীবনের শেষ তামাশা দেখতে। কিন্তু সেখানে এসে তারা দেখতে পেল, ক্রুশের উপর পীলাতের যে ‘চার্জসীট বা অপরাধ-পত্র’ টাঙ্গানো হয়েছে, তাতে লেখা আছে, ‘নাসরতীয় যীশু, ইহুদীদের রাজা’। সুসমাচার রচয়িতাদের বিবরণ থেকে এও জানা যাচ্ছে যে, স্থানীয় জনসাধারণের সবাই যাতে ঐ চার্জ সীটটি পড়তে ও বুঝতে পারে, সেজন্য তা লেখা হয়েছিল, হিব্রু, রোমান ও গ্রীক ভাষায়। এই সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে ইহুদীদের যে কিরূপ দুরবস্থা ঘটেছিল, তা সহজেই অনুমেয়। তখন তারা দিশেহারা হয়ে পীলাতের নিকট উপস্থিত হল এবং তাকে বলল, “ইহুদীদের রাজা এই কথা বাদ দিয়ে লিখে দিন, এই ব্যক্তি বলত আমি ইহুদীদের রাজা। এথেকে জানা গেল, পীলাতও বধ্যভূমির নিকটবর্তী কোন স্থানে অবস্থান করছিলেন। সে যাই-হোক, পীলাতের সকল উদ্যোগ আয়োজন তখন সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। কাজেই তিনি আর ইহুদী বিদ্রোহের আশংকায় ভীত’ হলেন না, বরং সুদৃঢ় ভাষায় জানিয়ে দিলেন, “আমি যা লিখেছি, তা লিখেছি।” আরবি সুসমাচারে এখানে কাদ’ শব্দ থাকাতে শীলাতের উক্তির অনুবাদ হবে, যা লিখেছি, ঠিক লিখেছি (কাদ কৃদিবাতুন) অর্থাৎ, তার আর কোন পরিবর্তন ঘটতে পারবে না। যীশুর অনুকূলে, পীলাতের এই দৃঢ়তা থেকে ভাবী অবস্থার একটি স্পষ্ট আভাষ পাওয়া যায়। ইহুদীরাও এটা বুঝতে পেরেছিল এবং এজন্য সাধ্যমত সতর্কতা অবলম্বন করতেও কটি করেননি। কিন্তু যীশুর শিষ্য হাওয়ারীরাও চুপ করে বসে থাকেননি। তাদের দূরদর্শিতা ও কর্মকুশলতার পরিচয় পরবর্তী ঘটনাক্রম থেকে জানা যাবে।

    যাহোক, দিনের তৃতীয় ঘটিকায় তারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করল। তার দোষ পত্রে লেখা হল ইহুদীদের রাজা’। তার সাথে তারা দু’জন দস্যুকেও ক্রুশবিদ্ধ করল, একজনকে তাঁর ডানপাশে, আর একজনকে তাঁর বামপাশে দিল (মার্ক, ১৫: ২৫-২৭; মোহন, ১৯ : ১৮)।

    যীশু উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করে বললেন, ‘এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী’ অর্থাৎ ‘প্রভু, প্রভু আবার কেন আমায় পরিত্যাগ করেছ?’ (মার্ক, ১৫ : ৩৪; মথি, ২৭ : ৪৬)। তাতে যারা সেখানে উপস্থিত ছিল … একথা শুনে তাদের মধ্যে একজন অমনি দৌড়ে গিয়ে একটি স্পঞ্জ নিল, তা ‘সিরকা’ দিয়ে সিক্ত করল এবং একগাছা নলে লাগিয়ে তা যীশুকে পান করতে দিল’ (মার্ক, ১৫ : ৩৬)। সেইস্থানে সিরকাপূর্ণ একটি পান পাত্র ছিল। (যোহন, ১৯ : ২৯)।

    “আয়োজনের দিন ছিল বলে, বিশ্রাম-বারে দেহগুলো যাতে ক্রুশের উপর না থাকে। কারণ, সেই বিশ্রাম-বার বিশেষ দিন ছিল–এজন্য ইহুদীরা (রাষ্ট্রীয় বিধান অনুসারে) পীলাতের নিকট অনুরোধ করল যেন পা ভেঙ্গে দিয়ে তাদের সরান হয়। তাতে সৈনিকেরা এসে সেই প্রথম জনের পা ভাঙ্গল এবং যীশুর সাথে ক্রুশবিদ্ধ সেই অন্যজনেরও ভাঙ্গল; তারা যীশুর নিকট এসে, তিনি ইতিমধ্যে মরে গেছেন মনে করে, তার পা ভাঙ্গতে বিরত রইল; কিন্তু সৈন্যদের একজন বর্শা দিয়ে তাঁর পার্শ্বদেশ বিদ্ধ করল; আর তখনই তরল রক্ত বের হল।” (যোহন, ১৯ : ৩১-৩৪)।

    ইতিপূর্বে দেখা গেছে,

    “পীলাত সমস্ত প্রধান পুরোহিত ও অধ্যক্ষ সকলকে এবং জাতির, লোককে ডেকে একত্র করলেন ও তাদের বললেন, লোকটি জাতিকে বিপথগামী করছে বলে তোমরা তাকে আমার সামনে উপস্থিত করেছ; আর আমি তোমাদের সাক্ষাতে অনুসন্ধান করে, তোমরা এঁর নামে যে যে দোষারোপ করেছ তার কোনও দোষ এর মধ্যে পাইনি; হেরোদও পাননি; কারণ তিনি তাঁকে আমাদের কাছে ফেরৎ পাঠিয়েছেন; বাস্তবিক প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন কাজ এ করেনি; অতএব আমি তাকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব।” (লুক, ২৩ : ১৩-১৬)।

    সুতরাং, বাইবেল থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, পীলাত যীশুকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করতে কখনো প্রস্তুত ছিলেন না এবং বিপুল ইহুদী জনতার সামনে নিজের এই সংকল্পকে প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করতেও তিনি কুণ্ঠিত হননি। যীশুর প্রাণরক্ষার জন্য তিনি বাস্তবে যা করেছিলেন, তার কয়েকটি প্রমাণ নিমে উদ্ধৃত করা হলঃ

    এক. পীলাত যীর বিচার উদ্দেশ্যমূলকভাবে শুক্রবারে করেছিল এবং তার রায়কে কার্যকর করার জন্য সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেদিনই আদেশ জারী করেছিল, কারণ সে জানত যে পরদিন পবিত্র সাবাত এবং যীশুকে শুক্রবার সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই ক্রুশ থেকে নামিয়ে নিতে হবে।

    দুই. যীশুকে ক্রুশে দেয়ার পূর্বে এবং পরেও সিরকা এবং মদ জাতীয় দ্রব্য পান করতে দেয়া হয়, যাতে তিনি বেহুশ থাকেন এবং তার কষ্ট কম হয়।

    তিন. ইহুদীদের ব্যবস্থাশাস্ত্রে নির্দেশিত (দ্বি: বিঃ ২১ : ২২-২৩)। মুসার বিধি-ব্যবস্থায় বর্ণিত বিধানের যাতে ব্যতিক্রম করা না হয় সেজন্য ইহুদীদের অনুরোধে পীলাতের নির্দেশে তাঁর সৈনিকেরা যীশুর সাথে ক্রুশবিদ্ধ দু’ব্যক্তির পা ভাঙ্গে, কিন্তু যীশুর পা ভাঙ্গতে বিরত থাকে।

    পীলাত যে কেমন সতর্কতার সাথে নিজের প্রতিজ্ঞা পালন করে আসছিলেন, শেষোক্ত ঘটনাটিই তার উজ্জ্বল প্রমাণ। এর কৈফিয়ত দিতে গিয়ে খ্রিস্টান লেখকদের কেউ কেউ যে-সব যুক্তি প্রদান করেন, তার সারমর্ম এই যে, রাজকীয় সৈনিকেরা মনে করেছিল যে যীশু ইতিমধ্যে মরে গেছেন, সুতরাং তাঁর পা ভাঙ্গার প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যীশুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই যে দেশাধ্যক্ষ পীলাতের ইঙ্গিত অনুসারে তার সৈনিকেরা যীশুর ভাঙ্গতে বিরত হয়েছিল ঐশ কাহিনীর আনুষঙ্গিক বিবরণ থেকেই তা প্রমাণিত হয়।

    “ক্রুশে যীশুর মৃত্যু হয়েছিল, অথচ তার পা ভাঙ্গা হয়নি”–এই পরস্পর বিরোধী উক্তির কৈফিয়ৎ দিতে গিয়ে খ্রিস্টান প্রচারকেরা বাইবেলের নিমোক্ত উক্তিটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন :

    “এসব ঘটল, যেন এই শাস্ত্রীয় বচন পূর্ণ হয় : তাঁর একখানি অস্থিও ভাঙ্গা হবে না।” (যোহন, ১৯ : ৩৬)।

    কিন্তু যোহন এখানে যে শাস্ত্রীয় বচনের বরাত দিয়েছেন, তার সাথে যীশুর ক্রুশে মৃত্যু বা তার পা না ভাঙ্গার বিন্দুমাত্রও সম্বন্ধ সংস্রব নেই। যীশুর পরবর্তীকালে, অর্থাৎ পৌত্তলিক রোমান ও গ্রীক জাতির সাথে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় আচার-ব্যবহার সম্বন্ধে যে আপোষ-নিষ্পত্তি হয়, তার মর্যাদা রক্ষার জন্য তল্কালীন খ্রিস্টান প্রধানরা নিজেদের শাস্ত্রে ও সমাজ-জীবনের বিভিন্ন স্তরে যেসব বিকৃতি করেছিল, যোহনের এই বিবরণটি তার একট সুস্পষ্ট নজীর।

    বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝানোর জন্য যোহনের আলোচ্য উক্তিটি উদ্ধৃত করে দেয়া হল। যীশুর ভাঙ্গা প্রসঙ্গে যোহন বলছেন, “এসব ঘটল, যেন এই শাস্ত্রীয় বচন পূর্ণ হয়–তার একখানি অস্থিও ভাঙ্গা হবে না”–এর মাধ্যমে যোহন বোঝাতে চাচ্ছেন যে, ইহুদী ধর্মশাস্ত্রে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে কুশে যীশুর একখানি অস্থিও ভাঙ্গা হবে না। প্রচলিত বাইবেলগুলোর টীকায় উক্ত ধর্মশাস্ত্রের পরিচয় দেয়ার জন্য তাদের পাঠকবর্গকে যাত্রা পুস্তকের বারো অধ্যায়ের তেতাল্লিশ পদ দেখার উপদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যোহনের বর্ণিত ঘটনার সাথে যাত্রা পুস্তকের ঐ বর্ণনার বিন্দুমাত্রও সম্বন্ধ সংস্রব নেই। বনিইস্রায়ীল জাতি দীর্ঘ চারশ’ ত্রিশ বছর মিসর রাজের গোলামী-শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকার পর, যে রাতে হযরত মুসার নেতৃত্বে মিসর থেকে পালিয়ে আসেন, সেই রাতে তারা তাড়িশূন্য পিঠে তৈরি করেছিলেন এবং তা খেয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করেন। এই পবিত্র রাতের স্মৃতি রক্ষার্থে তারা প্রতিবছর ঐ দিনে ‘নিস্তার-পর্ব’ নামে একটি পর্বোত্সব বা ‘ঈদ’ পালন করে থাকেন। এই ধর্মীয় উৎসবে যেসব পশুবলি (কোরবানী) দেয়া হবে, তার মাংসাদির ব্যবহার সম্বন্ধে মোশির ‘যাত্রা পুস্তকে’ কয়েকটি বিধি-নিষেধ প্রকাশিত হয়েছে। এই ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণভাবে পরবর্তীতে উদ্ধৃত করা হচ্ছে, পাঠক সাধারণ এর মাধ্যমে যোহনের বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীর প্রকৃত স্বরূপটি অবগত হতে পারবেন। যাত্রা-পুস্তকের আলোচ্য অধ্যায়ে বলা হয়েছে :

    “আর সদাপ্রভু মোশি ও হারুণকে বললেন, নিস্তার-পর্বের বলির বিধি এই–অন্য জাতীয় কোন লোক তা ভোজন করবে না। কিন্তু কোন ব্যক্তির যে দাস রৌপ্য দ্বারা ক্রীত হয়েছে, সে যদি ছিন্নত্বক হয়, তবে খেতে পাবে; প্রবাসী কিংবা বেতনভোগী তা খেতে পাবে না। তোমরা এক গৃহমধ্যে তা ভোজন করো; সেই মাংসের কিছুই ঘরের বাইরে নিয়ে যেয়ো না; এবং তার একখানি অস্থিও ভেঙ্গো না।” (যাত্রা পুস্তক, ১২ : ৪৩-৪৬)।

    এসব নির্দেশ খ্রিস্টজন্মের তের-চৌদ্দশ বছর পূর্বে মুসা ও হারুণকে নিস্তার পর্বের বলি বা কোরবানীকৃত পশুসমূহের অস্থি ও মাংসের ব্যবহার সম্বন্ধে দেয়া হয়। এরমধ্যে কোরবানীকৃত পশুর হাড় ভাঙ্গতে নিষেধ করা হয়েছিল মুসার সমসাময়িক ইহুদীদেরকে। এরসাথে যীশুর ক্রুশে আবদ্ধ হওয়ার বা তার পা না ভাঙ্গার বিন্দুমাত্রও সম্বন্ধ-সংস্রব নেই। আসল কথা এই যে, যীশুর পরবর্তী সুসমাচার লেখকেরা তাদের আবিষ্কৃত অভিনব খ্রিস্টধর্মের সমর্থন-সংগ্রহের আগ্রহাতিশয্যের ফলে, এভাবে নিজেদেরকে বিচারের দৃষ্টিতে হেয় করে ফেলেছেন। পূর্বেই বলা হয়েছে, পীলাতের আদেশ অনুসারে তাঁর সৈন্যেরা অন্য দু’জন অপরাধীর পা ভেঙ্গে দিয়েছিল; কিন্তু যীশুর পা ভাঙ্গতে বিরত হয়েছিল। সে সময়ের পূর্বেই যীশু মরে গেছেন বলে তারা বিরত থাকে–এটা পরবর্তীকালের একটি দুষ্ট কল্পনা। যীশুর সাথী অপরাধীদ্বয় যে তখনও বেঁচেছিল, এটা তারাও স্বীকার করেছেন; আর পীলাতের সতর্কতা ও সহানুভূতি সত্ত্বেও যীশু তাদের পূর্বেই মরে গেলেন, এর কোনই কারণ থাকতে পারে না। কোন ব্যক্তিকে কুশে দিলে সে একদিনে মরত না। ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় অনেকে সাতদিন পর্যন্ত জীবিত থাকত। ক্রুশ শূল নয়, পরন্তু ত্রিশুল কাঠ, যাতে অপরাধী ব্যক্তির হাত, পা ও স্বন্ধের চামড়া টেনে পেরেক ঠুকে টাঙ্গিয়ে দেয়া হত। যাহোক, যীশুকে মাত্র কয়েক ঘন্টা ক্রুশে রাখার পর নামানো হয়। যখন তাঁকে ক্রুশ থেকে নামানো হল তার পূর্বে একজন সৈনিক বর্শা দিয়ে তার পার্শ্বদেশে আঘাত করল, আর সাথে সাথে তরল রক্ত বের হল (যোহন, ১৯ : ৩৪)।

    উল্লেখ্য যে, লন্ডনে মুদ্রিত বৃটিশ ও বিদেশী বাইবেল সোসাইটির যোহন লিখিত সুসমাচারের ১৯ অধ্যায় ৩৪ পদের এই বর্ণনার অর্থ তখনও যীশু জীবিত ছিলেন। কারণ, কোন মৃতদেহ থেকে রক্ত বের হয় না, বরং কোন দেহে রক্তের বর্তমান তা জীবনের অভ্রান্ত লক্ষণ।

    একটু দৃষ্টিপাত করলেই স্পষ্ট হয়, নিস্তার-পর্বের বলিকৃত পশুর অস্থির ভাঙ্গার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল যীশু-জন্মের তের-চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে হযরত মুসার সময়। অধিকন্তু, সে আদেশে বলা হয়েছে : বলিকৃত পশুর একখানি অস্থিও তোমরা ভেঙ্গো না। পক্ষান্তরে, সাধু যোহন খ্রিস্ট-জন্মের তের-চৌদ্দশ’ বছর পূর্বের ঐ আদেশের উল্লেখ করেছেন : বলিকৃত পশুর স্থলে আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ঈসার উপর অকর্মক ক্রিয়া হিসেবে ‘তার’ স্থলে ‘তাঁর’ বসিয়ে ‘নির্দেশের’ স্থলে ‘সংবাদ’ হিসেবে ‘তাঁর একখানি অস্থিও ভাঙ্গা হবে না’ বলে।

    যাহোক, পীলাত ও হেরোদ উভয়েই যীশুকে নিরপরাধী বলে স্বীকার করেছেন এবং রক্তলোলুপ ইহুদীদের পৈশাচিক কবল থেকে রক্ষা করার জন্য যীশুর প্রকৃত শিষ্য হাওয়ারীদেরকে গোপনে সাহায্য-সহায়তাও করেছিলেন। হাওয়ারী-সমাজ সম্বন্ধে আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়ার পূর্বে ভূমিকা হিসেবে একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করা হচ্ছে :

    যীশু যখন ইহুদীদের দ্বারা গ্রেফতার হলেন, “তখন শিষ্যরা তাকে পরিত্যাগ করে পালিয়ে গেল” (মখি, ২৬ : ৫৬; মার্ক, ১৪ : ৫০), প্রধানতঃ এরইফলে কুশের ব্যাপারে কোন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য-বিবরণ সুসমাচার চতুষ্টয়ের কোন স্থানে দেখা যায় না। পরবর্তী যুগের এই সুসমাচারগুলোতে যেসব বিবরণ পাওয়া যায়, সেসব অনেক পরবর্তী সময়ের সংকলন এবং খ্রিস্টান-প্রধানদের নব আবিষ্কৃত প্রায়শ্চিত্তবাদ বা Atonment theory-কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই এই মতবাদের আবিষ্কার হয়েছিল।

    যীশু যখন গ্রেফতার হলেন, “তখন শিষ্যরা তাকে পরিত্যাগ করে পালিয়ে গেল” বাইবেলের এই বর্ণনাকে সম্পূর্ণ সত্য বলে গ্রহণ করা যায় না। প্রকৃত কথা এই যে, যীশুর আবির্ভাবের প্রথম অবস্থা থেকেই শক্তগ্রীব’, ইহুদী জাতি তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে আসছিল। তার প্রভাব প্রতিপত্তি ক্রমশঃ বেড়ে চলছে দেখে অবশেষে যীশুকে তারা হত্যা করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। এজন্যই যীশুকে তারা যুগপৎভাবে রাজদ্রোহী ও ইহুদীদের বিপথগামী করছে বলে সমাজে এবং রাজদরবারে অভিযোগ আনা হয়।

    সাধারণ নিয়মানুসারে যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একদল ছিল সত্যিকার ধর্ম পরায়ণ, সত্যিকার বিশ্বাসী ও আত্মসমর্পিত মুসলিম’। আর একদল ছিল লঘুচেতা ও ছদ্মবেশী বিশ্বাসঘাতক। এই শেষোক্তদলের লোকেরাই যীশুর বিপদের সূচনা দেখে পালিয়ে যায় আর তাদের অনেকেই তাকে ইহুদীদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। এমনকি, বিপদের চরম অবস্থায় এই ভণ্ডের দল তার প্রতি হীন ব্যবহার করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।

    পক্ষান্তরে, যীশুর সত্যিকার শিষ্য ‘হাওয়ারীদল ইহুদীদের দূরভিসন্ধি প্রথম থেকেই সতর্কতার সাথে অনুসরণ করে আসে এবং অনতিবিলম্বে যীশুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যে রোমান আদালতে উপস্থিত করা হবে, তাও তারা অবগত ছিল।

    উপরে যাদের সম্বন্ধে ইঙ্গিত করা হল, তাদের অবস্থা সম্বন্ধে সন্ধান নিলে জানা যাবে যে, গ্রীক দর্শন, বিজ্ঞান বিশেষতঃ দ্রব্যগুণ ও চিকিৎসাশাস্ত্রের সাথে তারা সুপরিচিত ছিল। পীলাত যদি ইহুদীদের আন্দোলনে ভীত হয়ে পড়েন এবং যীশুকে ক্ৰশে টাঙ্গিয়ে নিহত করার আদেশ দিয়ে বসেন, সে অবস্থায় যীশুকে রক্ষা করার আর কোনই উপায় থাকবে না এটা তারা ভাল করেই বুঝেছিল, পীলাত ও অন্যান্য রাজকীয় কর্মচারীদের সাথে তারা মোটামুটিভাবে একটি ব্যবস্থাও করে রেখেছিল। এমনকি, ক্রুশে আবদ্ধ করে নিহত করার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের জন্য তদানীন্তন দণ্ড-বিধিতে ‘পা ভেঙ্গে দেয়া’ ইত্যাদি যে সমস্ত প্রাথমিক শাস্তির ব্যবস্থা ছিল, যীশুর প্রতি যাতে সেসবের প্রয়োগ না হতে পারে, তার ব্যবস্থাও তারা পূর্বথেকেই করে রেখেছিল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপদবীর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস – খগেন্দ্রনাথ ভৌমিক
    Next Article ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025
    Our Picks

    সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম

    October 28, 2025

    অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স ও অন্যান্য প্রসঙ্গ – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025

    আলস্যের জয়গান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 28, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }