Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাক্স রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    উপন্যাস সত্যজিৎ রায় এক পাতা গল্প90 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. এখন রাত সাড়ে নটা

    এখন রাত সাড়ে ন’টা। আমরা ট্রেনে করে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে কাল্‌কার দিকে ছুটে চলেছি। কাল্‌কা থেকে কাল ভোরে সিমলার ট্রেন ধরব। দিল্লী থেকে খেয়ে বেরিয়েছিলাম, তাই আর ট্রেনে ডিনার নিইনি। আমাদের কামরায় আমরা তিনজনেই রয়েছি, তাই একটা আপার বার্থ খালি। অন্য দুজনের কথা জানি না, আমার মনের মধ্যে খুশি ভয় কৌতূহল উত্তেজনা সব মিলিয়ে এমন একটা ভাব হয়েছে যে কেউ যদি জিগ্যেস করে আমার কিরকম লাগছে, তাহলে আমি বলতেই পারব না।

    আমরা তিনজনেই চুপচাপ যে যার নিজের ভাবনা নিয়ে বসেছিলাম, এমন সময় লালমোহনবাবু বললেন, ‘আচ্ছা মিস্টার মিত্তির, খুব ভালো গোয়েন্দা আর খুব ভালো ক্রিমিন্যাল—এই দুটোর মধ্যে বোধহয় খুব একটা তফাত নেই, তাই না?’

    ফেলুদা এত অন্যমনস্ক ছিল যে কোনো উত্তরই দিল না, কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারলাম লালমোহনবাবু কেন কথাটা বললেন। ওটার সঙ্গে আজ বিকেলের একটা ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে। সেটা এখানে বলা দরকার, কারণ ফেলুদার একটা বিশেষ ক্ষমতা এতে আশ্চর্যভাবে প্রকাশ পেয়েছিল।

    ধমীজাকে ভাঁওতা দেবার জন্য লিস্ট অনুযায়ী বাক্সের জিনিসগুলো জোগাড় করতে লাগল মাত্র আধঘণ্টা। শুধু একটা ব্যাপারে এসে ঠেকে গেলাম—বাক্সের ভিতরের জিনিস জোগাড় হলেও আসলবাক্সটা নিয়েই হয়ে গেল মুশকিল।

    নীল রঙের এয়ার ইন্ডিয়ার ব্যাগ পাওয়া যাবে কোত্থেকে? দিল্লীতে আমাদের চেনা এমন একজনও লোক নেই যার কাছে ওরকম একটা ব্যাগের সন্ধান করা যেতে পারে। বাজারে ঠিক ওরকমই দেখতে ব্যাগ পাওয়া যায় বটে, কিন্তু তাতে এয়ার ইন্ডিয়ার লেবেল নেই, আর লেবেল না থাকলে ধমীজা নির্ঘাৎ আমাদের বুজরুকি ধরে ফেলবেন। শেষটায় ফেলুদা দেখি একেবারে এয়ার ইন্ডিয়ার আপিসে গিয়ে হাজির হল। ঢুকেই আমাদের দৃষ্টি গেল কাউন্টারের সামনে চেয়ারে বসা পার্শি টুপি পরা এক ফর্সা বুড়ো ভদ্রলোকের দিকে। ভদ্রলোকের বাঁ দিকে তার চেয়ারের গা ঘেঁষে মাটিতে দাঁড় করানো রয়েছে একটা ঝকঝকে নতুন নীল রঙের এয়ার ইন্ডিয়ার বাক্স। ঠিক যেরকমটি দরকার সেরকম। ইতিমধ্যে অবিশ্যি আমরা একটা নীল রঙের বাজারের ব্যাগ কিনে নিয়েছিলাম।

    ফেলুদা সেটা হাতে নিয়ে কাউন্টারের সামনে গিয়ে বুড়ো ভদ্রলোকের বাক্সের ঠিক পাশেই হাতের বাক্সটা রেখে, কাউন্টারের পিছনের লোকটাকে ওর সব চেয়ে চোস্ত ইংরিজি উচ্চারণে জিগ্যেস করল—‘আপনাদের দিল্লী থেকে কোনো ফ্লাইট ফ্রাঙ্কফুর্টে যায় কি?’ লোকটা অবিশ্যি তখুনি ফেলুদাকে খবরটা দিয়ে দিল, আর ফেলুদাও তক্ষুনি থ্যাঙ্ক ইউ বলে যাবার সময় এমন কায়দা করে বুড়োর ব্যাগটা তুলে নিয়ে সেই সঙ্গে পা দিয়ে আস্তে ঠেলা দিয়ে নিজের ব্যাগটা বুড়োর ব্যাগের জায়গায় রেখে দিল যে, আমার মনে হল ফেলুদার হাত সাফাইটাও তার বুদ্ধির মতোই ঝকঝকে পরিষ্কার। এটাও বলা দরকার যে বাক্স হাতে পাওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফেলুদার কারসাজির ফলে সেই বাক্স আর তার ভিতরের জিনিসপত্রের যা চেহারা হল, তা দেখে ধমীজার চোদ্দপুরুষও সন্দেহ করবে না যে তার মধ্যে কোনো ফাঁকি আছে।

    ফেলুদা এতক্ষণ খাতা খুলে বসেছিল, এবার সেটা বন্ধ করে আমাদের এই ছোট্ট কামরার ভেতরেই পায়চারি শুরু করে আপন মনেই বলে উঠল, ‘ঠিক এই রকম একটা কম্পার্টমেন্টেই ছিলেন ওঁরা চারজন…’

    কখন যে কোন জিনিসটা ফেলুদার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে সেটা বলা শক্ত। অনেক সময় কেন যে করে সেটা বলা আরো শক্ত। যেমন জলের গেলাসগুলো। কামরার দেয়ালে জানালা ও দরজার দুদিকে আঙটা লাগানো আছে, আর তার মধ্যে বসানো আছে চারটে জলের গেলাস। ফেলুদা একদৃষ্টে চেয়ে আছে তারই একটা গেলাসের দিকে।

    ‘ট্রেনে উঠলে আপনার ঘুম হয়, না হয় না?’ হঠাৎ ফেলুদা প্রশ্ন করল জটায়ুকে। জটায়ু, একটা জলহস্তীর মতো বিশাল হাই তুলতে গিয়ে মাঝপথে থেমে হেসে বলল, ‘ঝাঁকুনিটা মন্দ লাগে না।’

    ফেলুদা বলল, ‘জানি। কিন্তু সকলের পক্ষে এই ঝাঁকুনিটা ঘুমপাড়ানির কাজ করে না। আমার এক মেসোমশাই সারারাত জেগে বসে থাকতেন ট্রেনে। অথচ বাড়িতে খেয়েদেয়ে বালিশে মাথা দিলেই অঘোর নিদ্রা।’

    হঠাৎ দেখি ফেলুদা এক লাফে বাঙ্কে উঠে গেছে। উঠেই প্রথমে রীডিং লাইটটা জ্বালল। তারপর সেটার সামনে এলেরি কুইনের বইটা (যেটা দিল্লী স্টেশন থেকে ধমীজার বাক্সে রাখার জন্য কিনতে হয়েছে) খুলে ধরে কিছুক্ষণ পাতা উলটে দেখল। তারপর কিছুক্ষণ একেবারে চুপ করে শবাসনের ভঙ্গিতে শুয়ে সীলিঙের আলোর দিকে চেয়ে রইল। ট্রেন অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলেছে, বাইরে মাঝে মাঝে দু-একটা বাতি ছাড়া আর কিচ্ছু দেখা যায় না। লালমোহনবাবুকে জিগ্যেস করতে যাচ্ছিলাম, তিনি যে অস্ত্রটার কথা বলেছিলেন সেটা কখন আমাদের দেখাবেন, এমন সময় ভদ্রলোক বললেন, ‘একটা ভুল হয়ে গেছে। ডাইনিং কারের লোকটাকে জিগ্যেস করে দেখতে হবে ওদের কাছে সুপুরি আছে কিনা। না থাকলে কোনো স্টেশন থেকে কিনে নিতে হবে। ধমীজার কৌটোর মাল মাত্র একটিতে এসে ঠেকেছে।’

    লালমোহনবাবু পকেট থেকে কোডাকের কৌটোটা বার করে ঢাকনা খুলে হাতের উপর কাত করলেন। কিন্তু তা থেকে সুপুরি বেরোল না।

    ‘আচ্ছা আপদ তো! স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ভেতরে রয়েছে, অথচ বেরোচ্ছে না।’

    এবার লালমোহনবাবু কৌটোটা হাতের তেলের উপর ঝাঁকাতে শুরু করলেন, আর প্রত্যেক ঝাঁকুনির সঙ্গে একটা করে শালা বলতে লাগলেন। কিন্তু তাও সুপুরি বেরোল না।

    ‘দিন তো মশাই!’

    কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ফেলুদা এক লাফে বাঙ্ক থেকে নেমে এক ছোবলে লালমোহনবাবুর হাত থেকে হলদে কৌটোটা ছিনিয়ে নিল। জটায়ু, এই আচমকা আক্রমণে থ।

    ফেলুদা নিজে কৌটোটাকে একবার ঝাঁকিয়ে কোনো ফল হল না দেখে তার ডান হাতের কড়ে আঙুলটা কৌটোর ভিতরে ঢুকিয়ে চাড় দিতেই একটা খচ শব্দ করে সুপুরিটা আলগা হয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ল।

    এবার ফেলুদা কৌটোর মুখে নাক লাগিয়ে বলল—‘কৌটোর তলায় আঠা লাগানো ছিল। সম্ভবত অ্যার‍্যালডাইট।’

    বাইরে করিডরে পায়ের আওয়াজ।

    ‘তোপসে, শাট দ্য ডোর!’

    আমি দরজাটা এক পাশে ঠেলে বন্ধ করার সময় এক মুহূর্তের জন্য দেখতে পেলাম আমাদের দরজার সামনে দিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেল যন্তর মন্তরের সেই কালো চশমা পরা আর কানে তুলো গোঁজা বুড়ো।

    ‘স্‌ স্‌ স্‌ স্‌…’

    ফেলুদার মুখ দিয়ে একটা তীক্ষ্ণ শিসের মতো শব্দ বেরোল।

    সে সুপুরিটা হাতের তেলোয় নিয়ে একদৃষ্টে সেটার দিকে চেয়ে আছে।

    আমি এগিয়ে গেলাম ফেলুদার দিকে।

    স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে জিনিসটা আসলে সুপরি নয়। একটা অন্য কিছুর গায়ে ব্রাউন রং লাগিয়ে তাকে কতকটা সুপুরির মতো দেখতে করা হয়েছে।

    ‘বোঝা উচিত ছিল রে তোপ্‌সে!’ ফেলুদা চাপা গলায় বলে উঠল। ‘আমার অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল। আই হ্যাভ বিন এ ফুল!’

    এবার ফেলুদা তার হাতের কাছের জলের গেলাসটা আংটা থেকে বার করে নিয়ে তার মধ্যে সুপুরিটাকে ডুবিয়ে আঙুল দিয়ে ঘষতে লাগল। দেখতে দেখতে জলের রং খয়েরী হয়ে গেল। ধোয়া শেষ হলে পর জিনিসটাকে জল থেকে তুলে রুমাল দিয়ে মুছে ফেলুদা সেটাকে আবার হাতের উপর রাখল।

    এতক্ষণে বুঝতে পারলাম, যেটাকে সুপুরি বলে মনে হচ্ছিল সেটা আসলে একটা নিখুঁতভাবে পলকাটা ঝলমলে পাথর। চলন্ত ট্রেনের ঝাঁকুনিতে সেটা ফেলুদার ডান হাতের উপর এপাশ ওপাশ করছে, আর তার ফলে কামরার এই আধা আলোতেই তার থেকে যা ঝলকানি বেরোচ্ছে, তাতে মনে হয় বুঝি হীরে।

    আর সত্যিই যদি তাই হয়, তাহলে বলব এত বড় হীরে আমি জীবনে কখনো দেখিনি, আর লালমোহনবাবুও দেখেননি, আর ফেলুদাও দেখেছে কিনা সন্দেহ।

    ‘এ-এটা কি ডা-ডাই-ডাই…’

    লালমোহনবাবুর মাথাটা যে গণ্ডগোল হয়ে গেছে সেটা তাঁর কথা বলার ঢং থেকেই বুঝতে পারলাম। ফেলুদা পাথরটা হাতের মুঠোয় নিয়ে এক লাফে উঠে গিয়ে দরজাটা লক করে দিয়ে আবার জায়গায় ফিরে এসে চাপা গলায় বলল, ‘এমনিতেই তো মৃত্যুভয় দেখাচ্ছে, আপনি আবার তার মধ্যে ডাই ডাই করছেন?’

    ‘না—মানে—’

    যে রেটে এই বাক্সের পিছনে লোক লেগেছে, তাতে হীরে হওয়া কিছুই আশ্চর্য না। তবে আমি তো আর জহুরী নই।’

    ‘তাহলে এর ভ্যা-ভ্যা’

    ‘হীরের ভ্যালু সম্বন্ধে আমার খুব পরিষ্কার জ্ঞান নেই। ক্যারেটের একটা আন্দাজ আছে—কোহিনূরের ছবি অ্যাকচুয়েল সাইজে দেখেছি। আন্দাজে মনে হয় এটা পঞ্চাশ ক্যারেটের কাছাকাছি হবে। দাম লাখ-টাখ ছাড়িয়ে অনেকদূর চলে যাবার কথা।’

    ফেলুদা এখনো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পাথরটাকে দেখছে। আমি চাপা গলায় জিগ্যেস করলাম, ‘ধমীজার কাছে এ জিনিস গেল কী করে?’

    ফেলুদা বলল, ‘লোকটা আপেলের চাষ করে, আর ট্রেনে ডিটেকটিভ বই পড়ে—এ ছাড়া যখন আর বিশেষ কিছুই জানা যায়নি, তখন প্রশ্নটার জবাব আর কী করে দিই বল।’

    এতক্ষণে লালমোহনবাবু মোটামুটি গুছিয়ে কথা বলতে পারলেন—

    ‘তাহলে এই পাথর কি সেই ধমীজার কাছেই ফেরত চলে যাবে?’

    ‘যদি মনে হয় এটা তারই পাথর, তাহলে যাবে বই কি।’

    ‘তার মানে আপনার কি ধারণা এটা তার নাও হতে পারে?’

    ‘সেটারও আগে একটা প্রশ্ন আছে। সেটা হল, বাংলাদেশের বাইরে এই ভাবে টুকরো করে এই ধরনের সুপুরি খাওয়ার রেওয়াজটা আদৌ আছে কিনা!’

    ‘কিন্তু তাহলে—’

    ‘আর কোনো প্রশ্ন নয়, তোপ্‌সে। এখন কেসটা মোড় ঘুরে নতুন রাস্তা নিয়েছে। এখন কেবল চারিদিকে দৃষ্টি রেখে অতি সন্তর্পণে গভীর চিন্তা করে এগোতে হবে। এখন কথা বলার সময় নয়।’

    ফেলুদা বুক পকেট থেকে ওয়ালেট বার করে একটা zip-ওয়ালা অংশ খুলে তার মধ্যে পাথরটা ভরে ওয়ালেটটা আবার পকেটে পুরে উপরের বাঙ্কে উঠে গেল। আমি জানি এখন আর তাকে বিরক্ত করা চলবে না। লালমোহনবাবু কী যেন একটা বলতে যাচ্ছিলেন, আমি তাঁকে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে থামিয়ে দিলাম। ভদ্রলোক তখন আমাকেই বললেন, ‘জানো ভাই—রহস্য গল্প লেখা ছেড়ে দেবো ভাবছি।’

    আমি বললাম, ‘কেন? কী হল?’

    ‘গত দু’দিনের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটল, সে সব কি আর বানিয়ে লেখা যায়, না ভেবে বার করা যায়? কথায় বলে না—ট্রুথ ইজ স্ট্রঙ্গার দ্যান ফিকশন।’

    ‘স্ট্রঙ্গার না, কথাটা বোধহয় স্ট্রেঞ্জার।’

    ‘স্ট্রেঞ্জার?’

    ‘হ্যাঁ। মানে আরো বিস্ময়কর।’

    ‘কিন্তু স্ট্রেঞ্জার মানে তো আগন্তুক। ও, না না—স্ট্রেঞ্জ, স্ট্রেঞ্জার, স্ট্রেঞ্জেস্ট…’

    আমি একটা কথা ভদ্রলোককে না বলে পারলাম না। জানতাম এটা বললে উনি খুশি হবেন।

    ‘আপনার জন্যেই কিন্তু হীরেটা পাওয়া গেল। আপনি সুপুরি খেয়ে কৌটো খালি করে দিয়েছিলেন বলেই তো তলা থেকে ওই নকল সুপুরিটা বেরোল।’

    লালমোহনবাবু কান অবধি হেসে ফেললেন।

    ‘তাহলে আমারও কিছু কনট্রিবিউশন আছে বলছ, অ্যাঁ? হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ—’

    তারপর আরেকটু ভেবে বললেন, ‘আমার কী বিশ্বাস জানো তো? আমার বিশ্বাস তোমার দাদা এই হীরের ব্যাপারটা গোড়া থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, আর তাই কেসটা নিলেন। নইলে ভেবে দেখ—দু’বার দু’বার বাক্স চুরি হল, কিন্তু দু’বারই আসল জিনিসটা আমাদের কাছেই রয়ে গেল। আগে থেকে জানা না থাকলে কি এটা হয়?

    সত্যিই তো! লালমোহনবাবু ভালই বলেছেন। ওই সুপুরির কৌটো এখনো চোরেরা নিতে পারেনি। দিল্লীতে হোটেলের ঘরে ঢুকে বাক্স চুরির গোঁয়ার্তুমিও মাঠে মারা গেছে। হীরেটা এখনো আমাদের হাতে, মানে ফেলুদার পকেটে।

    তার মানে শয়তানদের হাত থেকে এখনো রেহাই নেই।

    হয়ত সিমলায় গিয়েও নেই…

    এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। ঘুমটা যখন ভাঙল তখন বোধহয় মাঝরাত্তির। ট্রেন ছুটে চলেছে কালকার দিকে। বাইরে এখনো অন্ধকার। আমাদের কামরার ভিতরেও অন্ধকার। তার মানে ফেলুদাও ঘুমোচ্ছে। উল্টোদিকে লোয়ার বার্থে জটায়ু। রীডিং ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে হাতের ঘড়িটা দেখব, এমন সময় চোখ পড়ল দরজার দিকে। দরজার ঘষা কাঁচের উপর আমাদের দিক থেকে পর্দা টানা রয়েছে। সেই পর্দার বাঁ পাশে একটা ফাঁক দিয়ে কাঁচের খানিকটা অংশ দেখা যাচ্ছে। সেই কাঁচের উপর পড়েছে একটা মানুষের ছায়া।

    মানুষটা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কী যেন করছে।

    একটুক্ষণ চেয়ে থাকার পর বুঝলাম, সে হাতলটা ধরে ঠেলে দরজাটাকে খোলার চেষ্টা করছে। জানি দরজা লক করা আছে, খুলতে পারে না, কিন্তু তাও আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো।

    কতক্ষণ এইভাবে চলত জানি না, হঠাৎ পাশের সীট থেকে লালমোহনবাবু ঘুমের মধ্যে ‘বুমের‍্যাং’ বলে চেঁচিয়ে ওঠাতে লোকটার ছায়াটা কাঁচের উপর থেকে সরে গেল।

    বেশ বুঝতে পারছিলাম যে এত শীতের মধ্যেও আমি দস্তুরমতো ঘেমে গেছি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅসাধারণ | Ashadharon
    Next Article ফেলুদা এণ্ড কোং – সত্যজিৎ রায়

    Related Articles

    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }