Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাঙলা ও বাঙালীর বিবর্তন – অতুল সুর

    লেখক এক পাতা গল্প428 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মঠ মন্দির ও শিল্পপ্রতিভা

    মঠ-মন্দির, স্তূপ ও বিহার মূর্তি ও মন্দির অলংকরণ—এসব নিয়েই বাঙলার স্থাপত্য-ভাস্কর্যের ইতিহাস। বৌধায়ন ধর্মসূত্রে আছে যে যদিও বাঙলাদেশে আর্যাবতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।, তা হলেও তীর্থযাত্রা উপলক্ষে আর্যসমাজের লোকরা বাঙলাদেশে আসত। তীর্থস্থান বললেই আমরা দেবস্থান বুঝি। দেবস্থানের বৈশিষ্ট্য, সেখানে মন্দির বা দেবায়তন থাকা। সুতরাং বাঙলাদেশের প্রাক্-আর্য-কাল থেকেই যে মন্দির বা দেবায়তন ছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তারপর ভগবান বুদ্ধের তিরোভাবের পর তাঁর প্রবর্তিত ধর্মে অনুগামীরা বহু চৈত্য, স্তূপ ও বিহার নির্মাণ করেছিল। স্তূপগুলি ভগবানের উপস্থিতির প্রতীকরূপে শ্রদ্ধা ও ভক্তি পেত। বৌদ্ধ সাহিত্যে উল্লিখিত আছে যে সম্রাট অশোক তাঁর সমগ্র সাম্রাজ্যে আশী হাজার স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। এবং যেহেতু চন্দ্ৰগুপ্ত মৌর্যের সময় থেকেই বাঙলা মৌর্যসাম্রাজ্যভুক্ত ছিল সেহেতু আমরা অনুমান করতে পারি যে তিনি বাঙলাদেশেও এরূপ বহু স্তূপ নির্মাণ করিয়ে ছিলেন।

    প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মণি নদীর (পূর্ব নাম লালুয়া গাঙ) উত্তরে দুটি মঠবাড়ি, প্রাচীন দুর্গের দেওয়াল, বাঁধানো পথ, শিলালিপি, স্বর্ণমুদ্রা, বুদ্ধমূর্তি ও অন্যান্য প্রত্নদ্রব্য মৌর্য-উত্তর যুগের এক সুমহান সভ্যতার নিদর্শন অনাবৃত করেছে। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর প্রারম্ভে চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন, সপ্তম শতাব্দীতে উয়াং চুয়াঙ (৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) ও ই-চিং (৬৭৩ খ্রিস্টাব্দ) বাঙলা দেশে বহু স্তূপ ও বিহার দেখেছিলেন। তার পূর্ববর্তী কয়েক শতাব্দী বাঙলাদেশ গুপ্তসম্রাটগণের অধীন ছিল। গুপ্তসম্রাটগণ ব্রাহ্মণ্যধর্ম প্রসারে বিশেষ প্রয়াসী ছিলেন। সুতরাং তাঁদের আমলে বাঙলাদেশে যে বহু হিন্দুর দেবমন্দির নির্মিত হয়েছিল, তা সহজেই অনুমেয়। অনুরূপভাবে সেনরাজগণের আমলেও হিন্দুর বহু দেব-দেউল নির্মিত হয়েছিল। সম্প্রতি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বামুনপুকুর গ্রামে বল্লালঢিবি নামে সেন-যুগের এক বিরাট ‘পঞ্চরথ’ মন্দির ‘কমপ্লেকস্’-এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তার আগে পালরাজগণের চারশত বৎসরব্যাপী শাসনকালে বৌদ্ধধর্ম বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল, রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা বহু স্তূপ ও বিহার নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু বাঙলার মঠ-মন্দির ও স্তূপ-বিহারের এরূপ সুমহান ইতিহাস থাকলেও এর নিদর্শন খুব বিরল। প্রায় সবই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কারণ, বাঙলা যখন ১২০৪ খ্রিস্টাব্দের পর মুসলমান অধিকারে যায়, তারা ধর্মদ্বেষের বশীভূত হয়ে এদেশের দেব-দেউল সবই বিনষ্ট করেছিল। ওই সব বিনষ্ট দেব-দেউলের উপাদান দিয়ে তারা মসজিদ নির্মাণ করেছিল। মুসলমান আমলে নির্মিত বহু মসজিদ এর সাক্ষ্য বহন করছে। (পরে দেখুন )

    দুই

    বড় স্তূপগুলি বিনষ্ট হলেও মুসলমানদের ধর্মদ্বেষের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে ক্ষুদ্রকায় স্তূপগুলি। দরিদ্র ভক্তগণ যারা দেবতার নিকট ‘মানত’ করত যে তাদের বিশেষ প্রার্থনা বা অভিলাষ পূর্ণ হলে তারা স্তূপ নির্মাণ করে দেবে, অথচ সঙ্গতিতে কুলাত না বড় স্তূপ নির্মাণ করিয়ে দেবার, তারাই এরূপ ক্ষুদ্রকায় স্তূপ নির্মাণ করে ঠাকুরের কাছে উৎসর্গ করত। এরূপ ক্ষুদ্রকায় স্তূপের বোধ হয় সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন হচ্ছে ঢাকা জেলার আসরফপুর গ্রামে রাজা দেবখড়্গোর তাম্রশাসনের সঙ্গে যে ব্রোঞ্জ বা অষ্টধাতুনির্মিত স্তূপটি পাওয়া গিয়েছে। পাহাড়পুরে ও চট্টগ্রামের অন্তর্গত ঝেওয়ারিতে সেরূপ ধাতুনির্মিত স্তূপ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া পাহাড়পুর ও বাঁকুড়ার বহুলাড়াতেও ইষ্টক নির্মিত বহু স্তূপের অধোভাগ আবিষ্কৃত হয়েছে। যোগী-গুম্ফা নামক স্থানে এরূপ পাথরের তৈরি ক্ষুদ্রকায় স্তূপ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু বৃহদাকার কোন স্তূপের নিদর্শন আমরা পাইনি। তবে বৌদ্ধ গ্রন্থের পুঁথিতে আমরা বরেন্দ্রের মৃগস্থাপন স্তূপের ও তুলাক্ষেত্র বর্তমান স্তূপ-এর চিত্র পাই।

    তিন

    বিহারগুলি বৌদ্ধ ভিক্ষুগণের বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হত। চৈনিক পরিব্রাজকদের কাহিনী থেকে আমরা বাঙলাদেশের বহু বিহারের সংবাদ পাই। তবে সেসব বিহারের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেগুলি পাওয়া গিয়েছে সেগুলি থেকেই আমরা ওইসব বিহারের আকার-প্রকার সম্বন্ধে একটা ধারণা করতে পারি। এরূপ এক বিশালকায় বিহারের ধ্বংসাবশেষ পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত হয়েছে। খুব সম্ভবত পালসম্রাট ধর্মপাল অষ্টম শতাব্দীতে ‘সোমপুর বিহার’ নামে যে বিখ্যাত বিহারটি নির্মাণ করেছিলেন এটি তারই ধ্বংসাবশেষ, যদিও এক তাম্রশাসন থেকে আমরা জানতে পারি যে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে এখানে এক জৈন বিহার ছিল। পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত এই বিরাট বিহারের অঙ্গনটি প্রতি দিকে ৬০০ হাত দীর্ঘ ছিল। এতে ১৩ ফুট করে দীর্ঘ ১৭৭টি কক্ষ ছিল। অঙ্গনটির মাঝখানে এক প্রকাণ্ড মন্দির ছিল। ভারতে আজ পর্যন্ত যত বিহারের ধ্বংসবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে সোমপুর বিহারই সর্বাপেক্ষা বৃহৎ

    কুমিল্লার কাছে ময়নামতী নামে যে ছোট ছোট পাহাড় আছে, তার ওপরেও কয়েকটি বিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়াছে। মালদহ জেলার জগদ্দলেও একটি মহাবিহার ছিল।

    চার

    বাঙলার প্রাচীন মন্দির সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান খুবই কম। মাত্র কয়েকটি বৌদ্ধগ্রন্থের পুঁথিতে অঙ্কিত চিত্র ও কতকগুলি প্রস্তরমূর্তিতে উৎকীর্ণ মন্দিরের প্রতিকৃতি থেকেই আমরা প্রাচীন বাঙলার মন্দিরসমূহের গঠনরীতির সম্বন্ধে একটা ধারণা করতে পারি। মন্দিরগুলি সাধারণত সেই রীতিতে নির্মিত হত, ওড়িশায় যা ‘ভদ্র’ ও ‘রেখ’ মন্দির নামে অভিহিত হয়। কোন কোন জায়গায় এই সকল মন্দিরের মাথায় একটি করে স্তূপ স্থাপন করা আরও দুই শ্রেণির মন্দির নির্মাণ করা হত।

    আবিষ্কৃত মন্দির খুব কমই পাওয়া গিয়েছে। বাঁকুড়ার এক্তেশ্বর মন্দিরের অঙ্গনে নন্দীর যে ছোট মন্দিরটি আছে, তা ‘ভদ্র’ রীতিতে গঠিত মন্দিরের একমাত্র নিদর্শন। বর্ধমান জেলার বরাকরে ও বাঁকুড়ার দেহারের মন্দির ‘রেখ’ রীতিতে নির্মিত মন্দিরের নিদর্শন। এই মন্দিরগুলি হয় পাথরের, আর তা নয় তো ইটের তৈরি। ইটের তৈরি মন্দিরের নিদর্শন বর্ধমানের দেউলিয়ার মন্দির, বাঁকুড়ার বহুলাড়ার সিদ্ধেশ্বর মন্দির ও সুন্দরবনের জটার দেউল। আর পাথরের তৈরি মন্দিরের নিদর্শন বাঁকুড়ার দেহারের সর্বেশ্বর ও সল্লেশ্বরের মন্দির। পাহাড়পুরের অঙ্গনের মধ্যে যে বিশাল মন্দিরটি আবিষ্কৃত হয়েছে, তার ঊর্ধ্বভাগ বিলুপ্ত হওয়ায় ওটি ঠিক কোন শ্রেণির মন্দির তা বলা কঠিন। বড় বড় মন্দিরের অনুকরণে ছোট ছোট মন্দিরও নির্মিত হত। রাজশাহী জেলার অন্তর্গত নিমদীঘি ও দিনাজপুরের অন্তর্গত বাণগড়ে প্রস্তর নির্মিত ও চট্টগ্রামের ঝেওয়ারিতে ব্রোঞ্জনির্মিত এরূপ ক্ষুদ্রকায় মন্দির পাওয়া গিয়েছে। শেষোক্ত মন্দিরটি বুদ্ধগয়ার মন্দিরের অনুকরণে নির্মিত। এখানে উল্লিখিত বাণগড়ে জনৈক কাম্বোজ রাজার লিপিযুক্ত প্রস্তরস্তম্ভ ও পালরাজ তৃতীয় গোপালের রাজত্বকালের লেখযুক্ত সদাশিবের প্রস্তরনির্মিত মূর্তি এবং পোড়ামাটির গণেশমূর্তিও পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া মৌর্য-শুঙ্গ-কুশান-গুপ্তযুগের, ইষ্টক নির্মিত বাস্তুগৃহ, দেবমন্দির, দুর্গপ্রাচীর, গৃহপ্রাচীর, শস্যাগার, রক্ষিগৃহ, ভূগর্ভস্থিত সুরঙ্গ, স্নানগার, কূপ প্রভৃতি পাওয়া গিয়েছে, যা ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের মনোরম নিদর্শন। বাণগড়কে অসুররাজ বলির পুত্র বাণের রাজধানী বলা হয়। ইহা দেবীকোট ও কোটিবর্ষের সহিত অভিন্ন।

    পাঁচ

    ভাস্কর্যশিল্পের নিদর্শন হিসাবে বাঙলার বহুস্থানে নানা দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। গোড়ার দিকের মূর্তিগুলি অধিকাংশই পোড়ামাটির মূর্তি। মৌর্যযুগের এরূপ পোড়ামাটির মূর্তি পাওয়া গিয়েছে মহাস্থানগড়ে। শুঙযুগের যক্ষিণীর মূর্তি পাওয়া গিয়েছে বাঁকুড়ায় চন্দ্রবর্মার রাজধানী পুষ্করণায় ও মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্তিতে। কলকাতার নিকটবর্তী চন্দ্রকেতুগড় বা বেড়াচাপায় প্রাপ্ত সূর্যমূর্তি ও মালদহ জেলায় হাঁকরাইল গ্রামের বিষ্ণুমূর্তিটি কুশানযুগের বলে অনুমিত হয়েছে। সুন্দরবনের কাশীপুর ও বগুড়ার দেওরায় প্রাপ্ত সূর্যমূর্তি দুটি গুপ্তযুগের শিল্পরীতি অনুযায়ী গঠিত। অনুরূপভাবে গুপ্তযুগের আদর্শে গঠিত মহাস্থানের নিকট বলাইধাপভিটায় প্রাপ্ত সোনার পাতে ঢাকা অষ্টধাতুনির্মিত একটি মঞ্জুশ্রী। মূর্তি। তবে মূর্তি গঠনে বাঙালীর নিজস্ব শিল্পরীতির একটা বিবর্তন পাওয়া যায়। এর আভাস আমরা পাই দেবখড়্গেঙ্গর রানী প্রভাবতীর লিপিযুক্ত শর্বাণীর ধাতুনির্মিত এক মূর্তিতে ও তার সঙ্গে প্রাপ্ত এক ক্ষুদ্র সূর্যমূর্তিতে ও চব্বিশ পরগনার মণিরহাটে প্রাপ্ত ধাতুনির্মিত এক শিবমূর্তিতে। এ মূর্তিগুলি পালযুগের শিল্পরীতির লক্ষণ সূচনা করে।

    ছয়

    খ্রিস্টীয় নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রবল প্রতাপশালী পালরাজাদের আমলে বাঙলাদেশে ভাস্কর্যের এক নতুন ঘরানা গড়ে উঠেছিল। মূলগতভাবে এই নূতন ঘরান গুপ্তযুগের সারনাথ-ঘরানা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। উত্তরবাঙলায় পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত কয়েকটি ভাস্কর্য উভয় যুগের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। যদিও গুপ্তযুগের সারনাথ-ঘরানার সঙ্গে বাঙলা ভাস্কর্যের এই ঘরানা সংযুক্ত ছিল, তথাপি, উন্নত অবস্থায় এই ঘরানার এক নিজস্ব স্বকীয়তা ছিল। সেজন্য বাঙলার এই ঘরানাকে ভারতীয় ভাস্কর্যের ‘প্ৰাচ্যদেশীয় ঘরানা’ বলা হয়। প্রাচ্যদেশীয় ঘরানারা ভাস্কর্যগুলি বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য এই উভয় ধর্মের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ছিল।

    বাঙলায় বৌদ্ধ ভাস্কর্যের উদ্ভব হয়েছিল তখন, যখন বাঙলাদেশে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্লাবিত হয়েছিল। যে সকল মূর্তি এ যুগের ভাস্করেরা নির্মাণ করেছিলেন, সেসবের বর্ণনা আমরা বৌদ্ধ ‘সাধনমালা’ গ্রন্থসমূহে পাই। বৌদ্ধ পুরুষ-দেবতামন্ডলের অন্তর্ভুক্ত ছিল নানাশ্রেণির বোধিসত্ত্ব মূর্তি, যথা— লোকনাথ, মৈত্রেয়ী, মঞ্জুশী প্রভৃতি। বৌদ্ধ দেবী বা শক্তিমূর্তির মধ্যে আমরা দেখি তারা, মারীচি, প্রজ্ঞাপারমিতা প্রভৃতি। এছাড়া, বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য—এই উভয় ধর্মেরই অন্তর্ভুক্ত কতকগুলি মূর্তি আমরা পাই, যেমন- কুবের, সরস্বতী ও গণেশ মূর্তি।

    প্রাচ্যদেশীয় ঘরানার ব্রাহ্মণ্যধর্মের অন্তর্ভুক্ত মূর্তিসমূহ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত যথা— (১) বৈষ্ণব, (২) শৈব ও (৩) বিবিধ। বিষ্ণুমূর্তি বাঙলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া গিয়েছে। এই সকল মূর্তির অধিকাংশ একাদশ শতাব্দীর। তা থেকে বোঝা যায় যে, ওই সময় বিষ্ণুর আরাধনা বাঙলাদেশে বিশেষভাবে প্রচলিত ছিল। মূর্তি-সম্পর্কিত গ্রন্থসমূহে নানা ধরনের বিষ্ণুমূর্তির উল্লেখ আছে, কিন্তু বাঙলাদেশে যে সকল বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া গিয়েছে তার অধিকাংশই বাসুদেব শ্রেণির। চারিহস্ত বিশিষ্ট এই সকল মূর্তির দক্ষিণের উপর হস্তে আছে গদা ও নিম্নহস্তে চক্র এবং বামের উপর হস্তে আছে চক্র ও নিম্নহস্তে শঙ্খ। কতকগুলি মূর্তির পৃষ্ঠদেশের পাথরফলকের ওপর অঙ্কিত আছে বিষ্ণুর দশাবতারের দৃশ্য। এছাড়া বিষ্ণুর দশাবতার মূর্তি স্বতন্ত্রভাবেও পাওয়া গিয়েছে, বিশেষ করে বরাহ, নরসিংহ, ও বামন অবতার মূর্তি। রাজশাহী মিউজিয়াম রক্ষিত একটি মূর্তিতে বিষ্ণুকে গরুড়ের উপর আসীন অবস্থায় দেখা যায়। এই মূর্তিটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এর দ্বারা প্রকাশ পায় যে, বাঙলার শিল্পীর মূর্তিগঠন সম্বন্ধে শাস্ত্ৰীয় বিধান পরিহার করে স্বভাবসুলভ প্রকাশভঙ্গীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। বাঙলার একশ্রেণির বৈষ্ণর মূর্তিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মদৃশ্য দেখানো হয়েছে। এই সকল মূর্তিতে শয্যা’পরি এক নারীমূর্তির বুকের কাছে এক শিশুকে দেখানো হয়েছে এবং শয্যার নিচে নানারূপ অর্ঘ্য, উভয় পার্শ্বে, নারীমূর্তি ও পৃষ্ঠফলক নানা দেবতার মূর্তিও খোদিত হয়েছে।

    প্রাচ্যদেশীয় শিল্পে শিবমূর্তি কেবল যে লিঙ্গাকারে দেখানো হয়েছে, তা নয়। শিবের বিরূপাক্ষ, তাণ্ডব, ভৈরব প্রভৃতি রূপও দেখানো হয়েছে। অনুরূপভাবে পার্বতীর মূর্তি, দুর্গামহিষমদিনী, চন্ডী ও অর্ধনারীশ্বররূপে নির্মিত হত। এ ছাড়া আর যেসব দেবীমূর্তি আমরা পাই, তার অন্যতম হচ্ছে সপ্তমাতৃকা, বৈষ্ণবী, কার্তিকেয়ানী, মহেশ্বরী, ইন্দ্রাণী, বরদা, চারমুণ্ডা ও গণেশ শক্তি।

    কলকাতায় পূরণচাঁদ নাহারের সংগ্রহশালায় দৃষ্ট এক বিচিত্র শৈব মূর্তির উল্লেখ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় করেছিলেন। মূর্তিটিতে দেখানো হয়েছে এক শায়িত নারীমূর্তির কোলের কাছে এক শিশু এবং শয্যার মাথার দিকে একটি শিবলিঙ্গ। মনে হয়, এখানে শিল্পী ব্রহ্মপুরাণে বর্ণিত এক উপাখ্যান প্রকাশ করবার চেষ্টা করেছেন। এই উপাখ্যান অনুযায়ী উমা তাঁর স্বামীকে চিনতে পারেন কিনা তা পরীক্ষা করবার জন্য শিব শিশুরূপে উমার শয্যা’পরি তাঁর কোলের কাছে শায়িত হয়েছিলেন, কিন্তু উমা তাঁকে দেখামাত্রই চিনতে পেরেছিলেন।

    ব্রাহ্মণ্যধর্ম-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যে সকল মূর্তি বাঙলাদেশের ভাস্কর্যশিল্পে পরিলক্ষিত হয়,তার মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে, সূর্য, গণেশ, ব্ৰহ্মা, গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী ও মনসা মূর্তি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় – অতুল সুর
    Next Article প্রমীলা প্রসঙ্গ – অতুল সুর

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }