Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাঙালি মুসলমানের মন – আহমদ ছফা

    লেখক এক পাতা গল্প150 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ভবিষ্যতের ভাবনা

    মানুষ গড়েছে সভ্যতা। রেশম কীট যেমন করে তন্ময় সাধনায় তৈরি করে গুটি। গত, গত যুগের মানুষের শ্রমের ভাষা, ধ্যানের ধ্বনি, বীর্যের ব্যঞ্জনা, আমাদের তন্ত্রীতে দোল দিয়েছে, জাগিয়ে তুলেছে ভাবনার সুবর্ণ লহরী। বিজ্ঞানের দীপ্তি, দর্শনের আলোক, সাহিত্যের মৈত্রী এবং বাণিজ্যিক লেনদেনের সুচারু ব্যবস্থা আমাদের যুগকে করেছে মহীয়ান, মনীষাকে প্রখর এবং বুদ্ধিকে দিয়েছে মহাপৃথিবীর উদার দিগন্তে মুক্তি। নিজেকে এমন বিচিত্রভাবে জানার প্রয়াস আর কখনো দেখা যায়নি মানুষের ইতিহাসে। মানুষের বস্তুসঞ্জাত কল্পনা বস্তুর অন্তর থেকেই ঠিকরে বের করে এনেছে অপরিসীম শক্তিসম্পন্ন পরমাণু কণা। বস্তুর সঙ্গে পরিচয়, বস্তুর শক্তিকে আয়ত্ত করার ইতিহাসই সভ্যতার ইতিহাস। তাতে প্রবল সৃষ্টিশীল আরেকটা জাগরণ কখন ঘটবে? যার অভিঘাতে মুছে যাবে মানুষের চোখের ঘোর। শুদ্ধরূপে বস্তুর স্বরূপ উপলব্ধি করে জীবনের সঙ্গে বস্তুর সার্থক মিতালী পাতাতে সক্ষম হবে মানুষ। মানুষে মানুষে সহজ সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা করে, চিন্তাকে আরো সূক্ষ্ম, আরো বস্তুনিষ্ঠ করার ভাবঘন মৈত্রীতে যুগের হৃৎপিণ্ড চঞ্চল হয়ে উঠেছে এই বুঝি ফেটে পড়ে।

    পূর্বপুরুষের সৃষ্টিশীল চেতনার স্পর্শ আমাদের চেতনাতে এসেছে হীরকের জ্যোতি আর সৃষ্টিশীলতায় জেগেছে নাড়া খাওয়া অনুরণন। একইভাবে উত্তর পুরুষ হিসেবে তাদের অন্তরলালিত তমিস্রারও আমরা উত্তরাধিকারী। আলো টানছে সামনে, অন্ধকার পেছনে। এক দিকচিহ্নহীন গোলকধাঁধার বাসিন্দা এ যুগের মানুষ। সভ্যতার মহীরুহে কি নতুন মুকুল ধরবে? নাকি প্রকৃতির স্নেহ বন্ধন থেকে মূলশুদ্ধ খসে পড়বে প্রবালদ্বীপের মতো মানুষের গড়া এ সভ্যতা। তা আমরা জানিনে। জানিনে বলেই ভয়, জানিনে বলেই সংশয়। উত্তরণের পথ হয়তো আছে, কিন্তু আনাড়ির চোখে ধরা পড়ার কথা নয়। বর্তমান মুহূর্তে মানুষের অসহায়তার দিকটাই প্রবল হয়ে চোখে পড়ছে। ইতিহাসের প্রত্যেক উত্তরণকালে অসহায়তাই যুগিয়েছে। সাহস, প্রেরণা দিয়েছে বাস্তবের মুখোমুখি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে এবং মৈত্রী ভাবনায় উর্বরা করেছে মন। কিন্তু প্রত্যাসন্ন কাল সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলবার যো নেই। কারণ যে কঠিন ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ইতিহাসের সংকটকালে লড়েছে মানুষ, তাই-ই এখন টলটলায়মান। এখন প্রতিটি জাতি প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরের মতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। পারস্পরিক হিংসাবিদ্বেষের গোড়ায় জল ঢালতে গিয়ে সারা শরীর অস্ত্রময় রণোন্মাদ ডাইনোসরকুল যেমন ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্মূল হয়েছে, মানবকুলেরও তেমনি একটা সামগ্রিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বৈকি!

    ইতিহাসের অতীত থেকে মানুষ যুদ্ধ করে আসছে। কিন্তু পূর্বের যুদ্ধসমূহের ব্যাপ্তি ছিল সীমিত, বিশেষ জাতি এবং বিশেষ দেশের সীমানায়। তখনো মারণাস্ত্রের ব্যবহার হতো। দেদার মানুষ যেত মারা। বিধবা এবং পুত্রহীনা জননীর করুণ বিলাপ বাতাসে ধ্বনিত হতো। সমগ্র মানবজাতির বুকে তীব্র হলাহল মেশানো এতবড় একটা শক্তিশেল হয়ে কখনো দেখা দেয়নি যুদ্ধ। এরপর যদি যুদ্ধ লাগে অবস্থা কি হবে? সভ্যতার ভিত্তিমূল ধসে যাবে কিনা, প্রতিটি শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর চোখে একটা বেদনার্ত জিজ্ঞাসার চিহ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। মানুষের হাতে যে পরিমাণ অস্ত্র জমা আছে, শুধু সে-সবের সদ্ব্যবহার করলে আমাদের পৃথিবীর মতো কয়েকটি গ্রহকে জীবজন্তুহীন করে ফেলা মোটেও অসম্ভব নয়। যুদ্ধ যে লাগবে না, এমন কথা কে বলতে পারে? বিজ্ঞান এবং কারিগরিবিদ্যায় উন্নত জাতিসমূহের সঙ্গে সঙ্গে জাগরণশীল জাতিগুলোও প্রতিরক্ষার ব্যয় বাড়িয়ে চলছে, জনসংখ্যর একাংশকে উপোস রেখে অস্ত্র ক্রয় করছে। কারিগরিবিদ্যা এবং বিজ্ঞানে অল্প-স্বল্প দক্ষতা অর্জন করেছে, এমন অনেক জাতি রাতারাতি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়ার জন্য কাঁপালিক সাধনায় মেতে উঠেছে। বিশ্বের দিকে দিকে জমছে প্রচণ্ড উত্তাপ। স্নায়ুযুদ্ধের তলায় চাপা পড়ছে শুভবুদ্ধি। কোনো কোনো অঞ্চলের বিষধোয়া চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। অনুমান করতে কষ্ট হয় না ধোয়ার মধ্য থেকে আগুন জ্বলে ওঠার পুরোপুরি সম্ভাবনা বর্তমান। যদি তাই হয় সমগ্র জাতির জনসাধারণের কল্পনাকে খাট করে অথবা জাতিকে উপোস রেখে, হিংসা প্রতিহিংসার ওমে’তা দেয়া যে বোমাগুলো কোটি কোটি মুদ্রা ব্যয় করে তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোর কি ব্যবহার হবে না? যদি না হয়,অপর্যাপ্ত অর্থ এবং মানুষের এযাবৎকালের বস্তুবীক্ষণের সবচাইতে সূক্ষ্ম সিদ্ধি যাতে মিশেছে সে মহামূল্য পারমাণবিক বোমা ইত্যাদি দিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রনায়কেরা কি ব্রেকফাস্ট করবেন?

    একদিকে গ্রহান্তরের শ্যামের বাঁশী, আরেকদিকে বিনাশের সর্বনাশা ইঙ্গিত । দুমেরুর কোন্ দিকে তাকাবে মানুষ? প্রত্যাশা নিয়ে অভাবনীয় সাফল্যের চূড়োর পানে তাকাতে দোষ নেই। কিন্তু ইতিমধ্যে যদি যুদ্ধ লেগে যায়, পারমাণবিক অস্ত্র ছোঁড়াছুঁড়ি হয়ে যায়, তাহলে তো সব কিছুর ইতি। আবার নৈরাশ্যবাদের সঙ্গে প্রেম জমিয়ে ধীরে ধীরে অজগরের শ্বাসের টানে ছুটে চলা ভয়ার্ত হরিণের মতো এগিয়েও একই পরিণতিতে পৌঁছানো যায়। সুতরাং বিনা আয়াসে ভাবা যায়, রেশম কীটের মতো নিজের গড়া সভ্যতার আবেষ্টনীর মধ্যে, নিজেরই উদ্ভাবনী শক্তির তাপে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে মানুষ। কিন্তু মানুষ মানুষই, রেশম কীট নয়। সামগ্রিকভাবে মানুষকে দু-চূড়ান্ত পরিণতির দিকে ধাবিত করছে যে শক্তি সে হলো মানুষের শ্রম, সাধনা, জ্ঞান এবং বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের পথ ধরে চিন্তা করলে মানব-সভ্যতার নতুন প্রত্যুষের কল্পনা করে চাঙ্গা হয়ে ওঠা যায়, আবার দান্তের নরকেও অবতরণ করা যায়। কোন পথ কাঙ্ক্ষিত?

    স্বভাবতই মানুষ কল্যাণ চায়। অপরের কল্যাণ চাইবার মতো উদারতা এবং দূরদৃষ্টি অনেকের নেই, এ কথা সত্য। কিন্তু মানুষ নিজের কল্যাণ, নিজের দেশের, নিজের জাতির,নিজের দলের কল্যাণ অবশ্যই চায়। এমনকি যুদ্ধ করার পেছনেও থাকে মানুষের আত্মকল্যাণবোধ। এ আত্মকল্যাণবোধের তাড়নায় জাতিসমূহ সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে, জনসংখ্যার একাংশকে উপোস রেখে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে। অতীতে জাতিসমূহ উকট আত্মকল্যাণবোধের তাগিদেই যুদ্ধ করেছে এবং বর্তমানেও সে একই বোধের উগ্র উন্মাদনায় যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের ইতিহাস মানুষের খণ্ডিত কল্যাণবোধের ইতিহাস। আদিতে গোত্রদেবতাদের নামে, পরে ধর্মের নামে, তারপরে দেশের নামে, নীতির নামে, দর্শনের নামে,একটানা মানুষে মানুষে সংঘাত চলেই আসছে। অতীত ইতিহাসের রক্তমাখা অধ্যায়গুলোর দিকে তাকালে মানুষের ভেদবুদ্ধিজনিত অজ্ঞতা স্পষ্টতই চোখে পড়ে। কি ঠুনকো কারণেই না একেকটি জাতি সংগ্রাম করেছে। যে দেবতা, ধর্ম, নীতি, দর্শন এবং সাম্রাজ্যের জন্য অপরের রক্ত নিয়েছে এবং নিজের রক্ত ঢেলেছে মানুষ, তার প্রায় সবগুলো আজকে অর্থহীন হয়ে পড়েছে। পূর্বযুগের বিশ্বাস, নীতি, মূল্যবোধ, দর্শন এবং জীবনচেতনা সম্পূর্ণভাবে পাল্টেছে। মানুষের সাধনা, শ্রম এবং প্রতিভার স্নিগ্ধ সাহস বিশ্বের এবং জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিতে তাকাতে অনুপ্রাণিত রয়েছে। তার ফলে পুরনো চিন্তার খাত বদলে নতুন প্রবাহে ধাবিত হয়েছে মানুষের চেতনা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে হিটলার জার্মান জাতিকে আর্য সাম্রাজ্য এবং মুসোলিনী ইটালিয়ানদের পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার উন্মাদনায় মাতাল করতে পেরেছিল বলেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এত ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। আজকের দিনে যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক বিবেকসম্পন্ন জার্মান কিংবা ইটালীয়ান হিটলার মুসোলিনীকে শুধু উন্মাদ ছাড়া কিছুই মনে করবে না। মানবজাতির লিখিত এবং অলিখিত ইতিহাসের চার ভাগের তিন ভাগ এমনি পাগলামোতে ঠাসা। তাতে করে বিঘ্নিত হয়েছে মানুষের বিকাশ। সুস্থ সক্ষম ব্যক্তিরা সমরক্ষেত্রে নিহত হয়েছে, জাতিতে জাতিতে সহযোগিতার পথ রুদ্ধ হয়েছে, একপেশেভাবে বেড়েছে বুদ্ধি, বিজ্ঞানীদের সাধনায় এসেছে বাধা, মানবতাবাদীরা নির্যাতিত হয়েছে। যে-কোনো নরহন্তা কলেকৌশলে অথবা ছলে-বলে আপন দলের লোকদের পশুবলে বলীয়ান করতে পেরেছে, তারাই আল্লাহ্ কিংবা ধর্ম, সাম্রাজ্য অথবা স্বদেশ ইত্যাদির নামে প্রতিবেশী দেশের উপর বর্বর আক্রমণ চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘাতকেরাই বিজয়ী অথবা বীর হিসেবে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র। মানুষের উপলব্ধিতে পূর্ণতা যখন আসবে, তখন এ সকল বীরপুরুষেরা ঠ্যাং-ভাঙা টোটেম দেবতার মতো শ্রদ্ধার আসন থেকে ছিটকে পড়বে। অবশ্য ইতিহাস বিচারের নিরিখটাও তখন পাল্টাবে ।

    মানুষের ইতিহাসের আরো একটি দিক আছে। সে হলো-বিজ্ঞান, শিল্প, কলা এবং দর্শনের দিক। এতে কোনো জাতির সিলমোহর নেই। এক জাতির সুচেতনার সঙ্গে মিশেছে আরেক জাতির নির্মাণবুদ্ধি কলার সঙ্গে দর্শন, এদেশের বিজ্ঞান ও দেশে গিয়ে তরঙ্গ তুলেছে। সামগ্রিকভাবে মানুষের সৃষ্টিশীলতার বিচিত্র সংক্রমণেই সভ্যতা ষোলকলায় পুষ্টি লাভ করেছে। মৈত্রীভাবনা মানুষে মানুষে সহযোগিতার পথ প্রসারিত করেছে, এক জাতির চিন্তার অভিঘাতে আরেক জাতির কুসংস্কার ঝরাপাতার মতো ঝরে পড়েছে। ভারতে-চীনে, ভারতে-ইরানে, ইরানে-মিশরে, মিশরে-গ্রিসে, গ্রিসে-রোমে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে মনে মনে যে সহযোগিতার ফল তাই আধুনিক বিশ্ববোধ। বুদ্ধির সহযোগিতায় আধুনিক দর্শন এবং বস্তুবিজ্ঞানের সহযোগিতায় আধুনিক বিশ্বদৃষ্টি বিকশিত হয়েছে। আধুনিক জগতের রূপায়ণে আট কি দশজন মৌলিক আবিষ্কারকের দান অসামান্য হলেও বহু দেশের, বহু যুগের চিন্তা, মনন এবং আবিষ্কারের ফসল মন্থন করতে পেরেছেন বলেই তারা মানুষের বাস্তব সিদ্ধিকে আরো এক কি দুধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে সভ্যতার সৌরভ বলতে যা বুঝি আমরা, সে হলো মাত্র গুটিকয় মানুষের মন মগজ খোঁচানো অন্বেষা,জবাব এবং হৃদয়ে হৃদয়ে সহযোগিতার সুফল। অতীতে এ সহযোগিতার পথ বহুলভাবে উন্মুক্ত ছিল না। দেশাভিমান, জাত্যাভিমান, ঐতিহ্যাভিমান, ঐশ্বর্যাভিমান পাহাড়ের মতো মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেকটি জাতিই নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে, জীবনযাত্রার সুবিধার জন্য যখনই অপরের সহযোগিতার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, অপরকে দাসে পরিণত করে তার শ্রম, অর্থ, ফসল আত্মসাৎ করা ছাড়া আর কোনো মহত্তর পদ্ধতির কথা চিন্তা করতে পারেনি। মজার কথা হলো, অপরকে ক্রীতদাস বানিয়ে, তাকে পশুর মতো খাঁটিয়ে, তার যথাসর্বস্ব লুণ্ঠন করে দেবতার বিজয় ঘোষণা করেছে। কিন্তু অবাধে মানুষের সৃষ্টিশীলতা, জাতির সঙ্গে জাতির যদি মেশামেশি হতো অতীতে, তাহলে এতদিনে পৃথিবীর মানুষ মহাশূন্যের অনেকগুলো গ্রহে হয়তো উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেই ফেলত।

    বিগত যুগে মানুষ যা উপলব্ধি করতে পারেনি, এ যুগে মানুষের তা হৃদয়ঙ্গম করার সময় এসে গেছে। কেননা মানুষের সৃষ্টিশীলতা এবং পাশবিক প্রবৃত্তি এখন পরস্পরের মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বীর বেশে দণ্ডায়মান। মানুষকেই পছন্দ করতে হবে দুটির একটি। হয়তো সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে সকল মানুষকে, পৃথিবীর মাটিতে দিতে হবে অধিকার। উন্নত জাতিসমূহ অনুন্নত জাতিগুলোকে তাদের বাস্তবসিদ্ধি এবং মননের সমৃদ্ধির অংশীদার করে তুলতে হবে। এ না হলে দেশ, ধর্ম, নীতি, দর্শন, সম্প্রদায় ইত্যাদি কতক গালভরা সুন্দর শব্দের অন্তরাল থেকে পাশবিক প্রবৃত্তি আপনাআপনি প্রকটিত হয়ে পড়বে। তা যদি হয়, সহজেই ধরে নেয়া যায়, পৃথিবীতে মানুষের দিন ফুরিয়ে এল। পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী রাষ্ট্রগুলোও ধীরে ধীরে এ সত্য উপলব্ধি করছে। এক জাতি ও এক বিশ্বের চেতনা দেশে দেশে আলোড়নের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। শুভবুদ্ধি এবং কল্যাণচেতনার নিরিখে পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উত্তাপ প্রশমিত করা সম্ভব, কিন্তু বর্তমানেও পৃথিবীর জাতিসমূহের চালিকাশক্তির পেছনে যতটুকু রয়েছে কুসংস্কার ততটুকু সুচেতনা নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত জাতি অনুন্নত জাতির সম্পদ লুট করছে, বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য অটুট রাখার জন্য সামরিক ঘাঁটির প্রতিষ্ঠা করছে এক শিবির, আরেক শিবিরও পাল্টা সামরিক জোট গঠন করছে আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য। বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের সরকারগুলো আপনাপন দলীয় স্বার্থরক্ষার জন্য জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশকে সকল রকমের সুযোগ হতে বঞ্চিত করছে। এ বঞ্চিতদের দল জেগে ওঠে যদি কোনোদিন সিংহাসন ধরে হেঁচকা টান দেয়, এ ভয়ে সবসময় যুদ্ধের সম্ভাবনাকে জিইয়ে রেখেছে। যখনই দেশে তেমন কোনো পরিস্থিতি দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গেই বিদেশী শত্রুর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে, দেশপ্রেম, জাতিপ্রেম, ধর্মপ্রেম ইত্যাদির নামে পত্রিকা, রেডিও টেলিভিশন এ সবের মাধ্যমে অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে বিজাতি বিদেশীর বিরুদ্ধে, প্রচার অভিযান চালিয়ে জনসাধারণের মন এমনভাবে বিষিয়ে দেয় যে, জাতিতে জাতিতে সহযোগিতার কথা বলে যারা, তাদেরকে অতি সহজে দেশদ্রোহী জাতিদ্রোহী এবং ধর্মদ্রোহী বলে চিহ্নিত করতে ক্ষমতাসীন দলের বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয় না। জনসাধারণের সংগঠিত কুসংস্কারই রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুসংস্কারের সঙ্গে আপোস করে যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা সমগ্র জাতিকে নরহত্যার প্রচণ্ড উন্মাদনায় মাতিয়ে রাখে। এ ছাড়া গত্যন্তর নেই কোনো। ফলে জাতিতে জাতিতে বৈরীতার রূপ তীব্র হয়ে উঠছে। বিশ্বে বিষফেঁড়ার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য যারা কায়েম রাখতে চায়, এসকল বিষফোঁড়া রগড়ে রগড়ে ক্ষতকে আরো দগদগে করে তুলছে। বাণিজ্যের প্রয়োজনে সভ্যতাকে শুধু মুষ্টিমেয় শহরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, মানুষকে যন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত রেখে যন্ত্রের দাস করেছে। স্তরের পর স্তর কুসংস্কার, তার উপর রাষ্ট্রযন্ত্র, রাষ্ট্রনায়কেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যুক্তিহীন কুসংস্কারকেই লালন করেন অথবা করতে বাধ্য হন। এ অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে তৃতীয় মহাযুদ্ধকে প্রতিহত করার সকল রকম উপায় ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হবে।

    অথচ মানবজাতির বেঁচে থাকার জন্য এ যুদ্ধকে অবশ্যই রুখতে হবে নয় শুধু, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকেই বিনষ্ট করতে হবে। এককভাবে কোনো জাতির শান্তি প্রচেষ্টাতে আসবে না কোনো সুফল। সমস্ত জাতি মিলে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে, সেজন্য জীবনবিনাশী সকল রকমের সংস্কার এবং বিশ্বাস উপড়ে ফেলা একান্তই প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে উন্নত জাতি এবং অনুন্নত জাতি উভয়েরই সমান দায়িত্ব। সভ্যতা, সংস্কৃতি,কলকারখানা ইত্যাদিকে এমনভাবে বিকেন্দ্রিত করতে হবে, যাতে করে বিশ্বের প্রতিটি জাতি, এমনকি উপজাতি পর্যন্ত সভ্যতার প্রভায় প্রভাময় হয়ে উঠতে পারে। যন্ত্রকে সব সময়েও মানুষের দাস করে রাখতে হবে এবং সৃষ্টিশীলতাকে উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। কারণ শোধিত বিদ্বেষই সৃষ্টিশীলতা, উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে সৃষ্টিশীল চেতনাই বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়। জাতিতে জাতিতে যে প্রতিহিংসা বিরাজমান, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার অবসান ঘটাতে হবে। মানব সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণভাবে জীবন-ঘনিষ্ঠ করে তুলতে হবে। তা ছাড়া সামরিক ব্যয়ের বেশির ভাগ অর্থ জনকল্যাণের জন্য ব্যয় এবং একাংশ মহাশূন্য অভিযান তহবিল, মেরু অভিযান, মরু অভিযান, সাগর থেকে খাদ্য উৎপাদন ইত্যাদি পরিকল্পনাতে ব্যয় করলে সৃষ্টিশীলতার অভিঘাতে মানুষ নতুন মানসিকতার অধিকারী হয়ে উঠবে। ক্রমাগত সাধনা এবং সিদ্ধি যেমন পশু-মানুষকে কিয়ৎ পরিমাণে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষে পরিণত করেছে, তেমনি নব বিশ্ববোধে উদ্দীপ্ত, নিজেই বস্তুচেতনার অধিকারী মানুষ বিচারবুদ্ধিকে সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করতে পারবে এবং যুদ্ধ করার প্রাগৈতিহাসিক বৃত্তিও ধীরে ধীরে ভুলে যাবে।

    এ হয়তো কঠিন,খুবই কঠিন কাজ। কুসংস্কারের সঙ্গে আপোসকারী, রাষ্ট্রযন্ত্রের দণ্ডধর, দলীয় এবং শ্ৰেণীস্বার্থের প্রতিভূ রাষ্ট্রনায়কদের খণ্ডিত উপলব্ধি এবং লোভের কারণে পারমাণবিক বোমার আঘাতে নিহত হওয়ার চাইতে কঠিন নয় নিশ্চয়ই। ধর্ম, স্বর্গ, সৃষ্টিকর্তা ইত্যাদির ফসিল বিশ্বাস এবং জীবন্ত বিশ্বাসকে শল্যচিকিৎসকের মতো অস্ত্রোপচার করে চেতনা থেকে হেঁটে ফেলতে পারলেই মানবিক কল্পনা ঈর্ষার বদলে সৃষ্টিশীলতার দিকে আপনিই ধাবিত হবে।

    ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সৃষ্টিশীলতার উপরই বিশ্বাস রাখতে হবে। সৃষ্টিশীলতাই মুক্তির দিশারী ।

    ১৯৬৭

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleযদ্যপি আমার গুরু – আহমদ ছফা
    Next Article সূর্য তুমি সাথী – আহমদ ছফা

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }