Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    খাদিজা মিম এক পাতা গল্প236 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বাতাসে গুনগুন – ২৫

    ২৫

    আর মাত্র চারদিন। এরপরই এই বাড়ির বড় মেয়ে রওয়ানা হবে শ্বশুরবাড়িতে। তার কয়দিন পরই এই বাড়িতে নিশাত বউ হয়ে পা রাখবে। নিঝুমের বিয়ের খবর পুরো দুনিয়ার লোকে জানলেও নিশাত নাহিদের বিয়ের ঘটনা পুরোটাই গোপন এই বাড়ির গুটিকয়েক লোক ছাড়া আর কেউই জানে না। স্বয়ং নাহিদও না।

    গতকাল দুপুরেই ঈষিতার মা-বাবা এসেছে এ বাড়িতে। তাদের আসার কথা ছিলো গায়ে হলুদের দিন সকালে। কিন্তু শালুক আর ঈষিতার তাড়া পেয়ে গতকালই চলে এলেন এখানে। গতকাল সন্ধ্যায় সুযোগ বুঝে নিজ ঘরে বসে তাদের কাছে নাহিদের জন্য নিশাতের হাত চেয়েছেন শালুক। মেয়ের এই বিয়েতে সম্মতি আছে জেনে কোনো আপত্তিই করেননি আমজাদ সাহেব। কিন্তু দোটানায় ভুগছিলেন নিশাতের মা। শালুককে হ্যাঁ বা না কিছুই জানাননি তিনি। শুধু বলেছিলেন একরাত সময় চান তিনি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। ছেলের বয়স নিয়ে বড্ড দ্বিধায় ছিলেন তিনি। গতকাল সারারাত ধরে মাকে বিভিন্ন দিক থেকে বুঝিয়েছে ঈষিতা। মেয়ের মধ্যেও ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন তিনি। কয়দিন আগে যেই মেয়ে ডিপ্রেশনে ডুবে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো সেই মেয়ে মাত্র কয়দিনে সেখান থেকে পুরোপুরিভাবে বের হয়ে এসেছে। ডলি ভেবে নিয়েছিলেন তার মেয়ে হয়তো আর কখনো নিজেকে সামলে উঠতে পারবে না, আর কখনো স্বাভাবিক হবে না। মেয়ে আবার স্বাভাবিক হয়েছে এটাই তার কাছে অনেক। বয়সের দিকটা বাদ দিলে বাদবাকি সবই ঠিকাছে। ছেলে দেখতে ভালো, বাহিরে সেটেলড, স্বভাব চরিত্রও ভালো। আর সবচেয়ে বড় কথা এই পরিবার মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য খুবই নির্ভরযোগ্য। মেয়ের এখানে খুব বেশি কষ্ট হবে না এটা তিনি ভালো করেই জানেন। সারারাত ঈষিতার সাথে শলা পরামর্শের পর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এখানেই ছোট মেয়েকেও বিয়ে দিবেন। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শালুক আর আমজাদ সাহেবকে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সে। সেই থেকে প্রচন্ড খুশি মনে আছেন শালুক। খুশিতে আজ পা যেনো মাটিতে লাগছে না তার! নিঝুমকে বিদায় করে বিয়ের দিন রাতেই নাহিদের সাথে চূড়ান্ত ফয়সালায় বসবেন তিনি। বিয়ের তারিখটা ঠিক করবেন সেদিনই। নাহিদ যদি বলে এখন শুধু আকদ করবে তো আকদই করাবেন। অথবা যদি বলে বউ একেবারে নিয়ে আসবে তো সেটাই হবে। তবে বিয়ে করতেই হবে। বিয়ে না করিয়ে নাহিদকে এবার ছাড়ছেন না তিনি।

    রাত সাড়ে দশটা। নাহিদের সাথে পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে বসে আছে নিশাত। সেদিনের মত আজ আর জোছনার আলো নেই। আছে কৃত্রিম আলো। নিঝুমের বিয়ে উপলক্ষে পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে মরিচা বাতি দিয়ে। বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে বাল্ব লাইট। বাড়ির বাহিরে কোনো অংশই অন্ধকার নেই। বাড়ির পিছনের অংশের গাছগুলোতেও লাগানো হয়েছে মরিচাবাতি। আর থেমে থেমে লাগানো হয়েছে বাল্ব লাইট। নাহিদ চলে যাবে বিয়ের সপ্তাহ দুয়েক পর। এই ভেবে খানিকটা মন খারাপ নিশাতের। মানুষটার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তার। লোকটার পাশে দুদন্ড কথা না বললে বড্ড হাসফাঁস লাগে। সারাদিনে একবার হলেও তার পাশে বসে একটু কথা বলা চাই ই চাই নিশাতের। সে চলে গেলে তো তার পাশে আর বসা হবে না। যখন তখন ইচ্ছে হলেও কথা বলা হবে না। সেখানে গিয়ে তো কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে। তখন? তখন কি হবে? কেমন হবে তখনকার সময়গুলো? ছুটে যেতে ইচ্ছে হবে না তার কাছে? হ্যাঁ, ইচ্ছে হবেই তো। আচ্ছা নাহিদও কি এমনটাই ভাবছে?

    –কি ভাবো নিশু?

    –আপনি কখন ফ্রি থাকেন?

    –ফ্রি’ই তো আছি।

    –এখানের কথা বলছি না। কানাডায় কোন সময়টাতে ফ্রি থাকেন?

    — সারাদিন ফ্রি আবার সারাদিনই ব্যস্ত।

    — মানে? আমি তো আর জব করি না ওখানে। নিজের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। কর্মচারী আছে একটা। কাস্টমার আসলে ও দেখাশুনা করে। আমি ক্যাশে বসে শুধু টাকা গুনি। যদি কখনো দোকানে কাস্টমার বেশি থাকে তখন ওর সাথে আমিও কাজে লেগে যাই। বাঁধাধরা কোনো সময় আমার নেই যে ঐ সময়টায় ব্যস্ত থাকবো।

    — আপনার সাথে যদি কথা বলতে ইচ্ছে হয় তখন কি করবো?

    –কল করবে।

    –যে কোনো সময়?

    –যখন খুশি তখন দিও। ২৪ ঘন্টা আমার ম্যাসেঞ্জার অন থাকে। সিম নম্বরটাও দিয়ে যাবো। এখন তুমি ম্যাসেঞ্জারে কল করো কিংবা সিম নম্বরে সেটা তোমার খুশি।

    –কাজের সময় কল করলে বিরক্ত হবেন না?

    –অন্য কেউ হলে বিরক্ত হবো। কিন্তু তোমার সাথে তো আর অন্যদের সমান হিসাব না। যখন খুশি কল বা ম্যাসেজ দিও। আমি যদি ব্যস্ত থাকি তাহলে ম্যাসেজে জানিয়ে দিবো।

    চুপ হয়ে আছে নিশাত। নাহিদ ওকে ভালোবাসে সেটা বারবার তার কথায় আর কাজে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু সরাসরি একবারও বলেনি। কেনো বলেনা মানুষটা? একটাবার ভালোবাসি বললে কি হয়? হ্যাঁ নিশাত জানে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে বিলাপ করার মানুষ নাহিদ না। রুম্পাকেও সে সচরাচর ভালোবাসি বলতো না। তার মতে, ভালোবাসি কথাটা বলা এত জরুরি না। কতটা ভালোবাসি সেটা আমার কাজেই প্রকাশ পাবে। এমনটাই নাহিদ বলেছিলো নিশাতকে। তবুও তো একবার হলেও ভালোবাসি কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারে মানুষটা। নিশাতের যে কথাটা শোনার বড্ড সাধ সেটা কি এই মানুষটা বুঝে না? যেই মানুষটা ওকে এত বুঝে সেই মানুষটা কেনো এটা বুঝে না তার মুখে একবার ভালোবাসি শোনার জন্য অপেক্ষা করছে এই মেয়েটা।

    ২৬

    সকাল থেকেই মেহমানদের আনাগোনা শুরু হয়েছে এ বাড়িতে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মেহমানরা আসছে স্বপরিবারে। আজ সন্ধ্যায় নিঝুমের গায়ে হলুদ। কাছের আত্মীয়গুলো চলে এসেছে আজই। একটু দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা আসবে বিয়ের দিন সকালে কিংবা আগের দিন। নাহিদের খোঁজ নেই সকাল থেকেই। ফাহাদও নিরুদ্দেশ। কাজ করতে করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে এ বাসার লোকজন। রান্নার তদারকীতে আছে ঈষিতার মা আর শাশুড়ী। বাদবাকি সমস্ত কাজ সামাল দিচ্ছে ঈষিতা, নিম্মি আর বাড়ির কাজের লোক দুটো। নিম্মির মামীরা টুকটাক সাহায্য করে যাচ্ছে। আর নিশাত এটা সেটা এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করছে বোনকে। বড় কোনো দায়িত্ব তার কাঁধে দেয়া হয় না। কারন শালুকের মতে নিশাত এখনও ছোট, আর ডলির মতে নিশাত একটা অকাজের ঢেঁকি। গোছানো কাজ নষ্ট করাই এই মেয়ের কাজ। এত ঝামেলার মাঝে বড় কোনো দায়িত্ব মেয়ের কাঁধে দিয়ে বিপাকে পড়তে চান না তিনি।

    রান্নাঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশাত। আনমনে ডান-পা টা নাচিয়ে যাচ্ছে। আশপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেসব নিয়ে আপাতত তার মাথা ব্যথা নেই। তার মাথা ব্যথা হচ্ছে নাহিদ। সকাল ১০ টায় নাস্তা সেরে কোথায় বেড়িয়েছে এখনও আসার কোনো খবর নেই। ফোনটাও বাসায় রেখে গেছে। ভালো লাগে নাকি উনাকে ছাড়া? পুরো ঘর ভরা মানুষ। তবুও কেমন খালি খালি লাগছে।

    — নিশু, বাটিটা ধর। ডাইনিং টেবিলে জলদি দিয়ে আয়। পৌণে দুইটা বেজে গেছে। ফাহাদের ফুফা মামারা খেতে বসবে।

    মায়ের কথায় নাহিদ নামক অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এলো সে। মায়ের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে ডাইনিংরুমের দিকে আসার পথে প্লাজোর ডান পায়ের নিচের অংশের সাথে বাম-পা পেঁচিয়ে হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ে গেলো নিশাত। সেইসাথে ভেঙে গেলো হাতে থাকা মাংসসহ কাঁচের বাটি। আওয়াজ পেয়ে রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন শালুক আর ডলি। নিম্মি তড়িঘড়ি করে নিশাতকে উঠিয়ে দাঁড় করালো। শালুক আতকিংত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

    — ব্যথা পাইছো মা? সাবধান! সাবধান! কাঁচ ঢুকবো পায়ে। মুনিয়াআআ… জলদি কাঁচগুলা সরা এখান থেইকা।

    মেয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ডলি। মাকে আড় চোখে দেখছে নিশাত। সরাসরি তাকানোর সাহস হচ্ছে না তার। লজ্জা লাগছে খুব। সবার সামনে এভাবে পড়ে যাওয়াটা খুবই নির্মম একটা ঘটনা বলে মনে হয় নিশাতের। দূরে দুইটা বাচ্চা ওকে নিয়ে হাসছে। এটা দেখে আরো লজ্জায় পড়ে যাচ্ছে সে।

    — ওর দিকে আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আন্টি?

    নিশাতের পিছনে নাহিদ দাঁড়িয়ে। মাত্রই বাসায় পা রেখেছে সে। এসেই দেখে তরকারী আর ভাঙা কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। নিশাতের জামায় শরীরে তরকারীর ঝোল লেগে আছে।

    একরাশ বিরক্তি ভরা কন্ঠে ডলি অভিযোগ করলেন,

    — তাকাবো না! এতবড় মেয়ে হয়েছে সামান্য একটা বাটি কেনো রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিল পর্যন্ত আনতে পারলো না? ও কি ছোট এখনো?

    –আমি কি ইচ্ছা করে ফেলেছি নাকি?

    — তর্ক করবি না বেয়াদব।

    — তুমি পড়ে গেলে কিভাবে নিশু?

    –প্লাজোর সাথে হোঁচট খেয়ে।

    — প্লাজোর সাথে হোঁচট খায় কিভাবে মানুষ?

    — ওর মত অকর্মাগুলোই প্লাজোর সাথে হোঁচট খায়।

    — এখানে এত রাগ দেখানোর কি আছে আন্টি? ও তো আর ইচ্ছা করে পড়ে যায়নি। হতে পারে প্লাজোর সাইজ বেশি লম্বা ছিলো। এজন্য হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছে।

    — হ্যাঁ একটু লম্বা ছিলো। আমি তো কোমড়ের অংশে গুঁজে নিয়ে খাটো করেছিলাম। কিভাবে যেনো নিচে নেমে এলো। মা তুমি সবসময় আমাকে বকো। না বুঝেই বকতে থাকো। নাহিদ ভাই তোমার চেয়ে ভালো আমাকে বুঝে। সুযোগ পেলেই আমাকে বকতে থাকো। ভালো লাগে না আমার। আমি চলে যাবো নাহিদ ভাইয়ের সাথে।

    হেসে ফেললেন ডলি। বললেন,

    — হ্যাঁ একেবারে দিয়ে দিবো ওর কাছে। ওকে যেহেতু এত পছন্দ ওর কাছেই থাকিস। এ্যাই নাহিদ, এবার যাওয়ার সময় ওকে নিয়ে যাবে তোমার সাথে?

    — হ্যাঁ, আমার বড় লাগেজের ভিতর ভরে ওকে নিয়ে যাবো। আর আপনার কাছে ফেরত পাঠাবো না।

    — ওকে নিলে তোমারই ক্ষতি। খাটে বসে রাজরাণীর মত খাবে। কোনো কাজ করবে না। কাজ পারলে তো করবে! ওকে কোনো কাজের দায়িত্ব দিলেও বিপদ। তোমার গুছানো কাজ বিগড়ে দিয়ে আসবে। আপদ একটা!

    –ওকে আপনারা এখনও চিনতেই পারেন নি। ও সবই পারবে। একটু অস্থির স্বভাবের তো! তাই একটু গড়মিল করে ফেলে। আমার কাছে দিয়ে দিন। ছয়মাস আমার সাথে থাকুক। সব শিখিয়ে পড়িয়ে নিবো। ছয়মাস পর নিজের মেয়েকে আর নিজেই চিনতে পারবেন না।

    — আহারে ছেলে! আমার মেয়েকে আমি পেলে পুষে বড় করেছি। আমি জানি ও কি! এখন থেকে তো দূর থেকে দেখছো তাই ভালোই লাগছে। নিয়ে দেখো নিজের কাছে। তখন বুঝবে সেধে সেধে আপদ ঘাড়ে চাপিয়েছো।

    — আম্মু, তুমি কিন্তু আমাকে খুব অপমান করছো। কিভাবে পারো নিজের মেয়ের নামে এত বদনাম করতে!

    কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো নিশাত। চোখে পানি ছলছল করছে তার। এভাবে নাহিদের সামনে ওকে অপমান করার মানে আছে কোনো? শালুক হাত চেপে ধরে ডলিকে বললো,

    — কি শুরু করলেন? আসেন তো ভিতরে। বাটিতে তরকারী সাজান। শুধু শুধু মেয়েটারে রাগাইতেছেন।

    — তবুও যদি একটু মেয়েসুলভ আচরন করতে শিখে!

    নাহিদের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো নিশাত। করুন চেহারা নিয়ে বললো,

    — আম্মু কি বললো শুনেছেন? আমি নাকি ছেলে!

    .

    সজোরে হেসে উঠলেন ডলি আর শালুক দুজনই। রান্নাঘরের দরজা দাঁড়িয়ে হাসছে নিম্মিও।

    কন্ঠে আরো একটু অভিযোগ ঢেলে বললো,

    –ওরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।

    প্রচন্ড গতিতে হাসি পেলেও হাসতে পারছে না নাহিদ। বহুকষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখে নিশাতকে বললো,

    — উনি কখন বললেন তুমি ছেলে?

    –একটু আগেই তো বললো।

    — উনি বলেছেন তুমি মেয়েসুলভ আচরন করো না। মানে হচ্ছে তুমি ঘরোয়া কাজে পটু না। তোমার বয়সী অন্যসব মেয়েরা যতটা কাজ পারে ততটা তুমি পারো না উনি সেটা বুঝিয়েছেন।

    — আমার হাত থেকে নাহয় একটা বাটি পড়ে ভেঙেই গেছে তাই বলে আমাকে এত কঠিন কথাটা বলে ফেলবে? আমি মেয়েসুলভ আচরন করি না! আমি!

    — ঠিকই তো আন্টি! একটা বাটি নাহয় পড়েই গেছে। তাই বলে এত কঠিন কথা বলবেন আপনি?

    — এ্যাই, ন্যাকা কান্না বন্ধ কর। যা গোসলে, যা।

    –দেখেছেন? নূন্যতম দয়া মায়া নেই। আমাকে আবার ধমকাচ্ছে।

    — আপনি খুবই নির্দয় আন্টি।

    — দুনিয়া থেকে দয়া ভালোবাসা সব উঠে গেছে। মা আজকাল মেয়েকে এভাবে অপমান করে! ছিঃ!

    কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নিশাত। ও বের হওয়া মাত্র অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো নাহিদ। ডলি হাসতে হাসতে নাহিদকে বললেন,

    — কি বুঝলে?

    — বুঝেছি আরো অনেক আগেই। ও খুবই মজাদার একটা ক্যারেক্টার আন্টি।

    — আরো কত রঙ তামশা করে বাসায়! এই মেয়ের মনে আবেগের শেষ নেই। এই যুগের মেয়েদের কখনো দেখেছো শাবানার বাংলা ছবি দেখে কাঁদতে? ও কাঁদে ওর বাপ বাংলা সিনেমার পোকা। টিভি ছেড়ে দিয়ে বাংলা সিনেমা দেখবে। নিশাতও বাপের সাথে ঘেঁষে বসে থাকে। কোনো কষ্টের সিন দেখলে বাপকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে আর বলে, “এই নায়িকার এত কষ্ট কেনো আব্বু?” এটার বাপও কম যায় না। মেয়েকে বসে বসে বুঝায়, ভালো মানুষের দুনিয়াতে কষ্ট বেশি বুঝলি।

    নাহিদ পাগলের মত হেসে যাচ্ছে। হাসির তোড়ে কথা বলতে পারছে না সে। ডলি আবার বললেন,

    — দম নাও বাবা। দম নাও, দম নাও। হাসি কিছু বাঁচিয়ে রাখো। এটা শুনেই

    এভাবে হাসছো! ওর আরো অনেক ঘটনা আছে। ওগুলো শুনলে তো বোধহয় হাসতে হাসতে দম আটকে মারা যাবে।

    — এমন কাহিনি তো আগে শুনিনি। কি রে নিম্মি? এই ঘটনা জানতি তুই?

    –হ্যাঁ জানতাম তো।

    –বললি না যে?

    –ওর আরো কত কাহিনিই আছে। কয়টা বলবো তোমাকে? বলতে বলতে সারাদিন পার হয়ে যাবে। বিয়ের মেহমানদের নিয়েও যথেষ্ট আতংকে আছে ও। যদি কারো মাথা থেকে আবার ওর মাথায় উকুন চলে যায় তখন কি হবে?

    –তোকে বলেছে এই কথা?

    — এখন পর্যন্ত চারবার বলেছে।

    — সেদিন তোদের চুড়ি কিনতে গেলাম না?

    — হুঁ।

    — রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আচ্ছা আপনি যে আমাকে গায়ে হলুদে শাড়ী পরতে বলেছেন, আমার যদি অনুষ্ঠানের মাঝে শাড়ী খুলে যায় তখন?

    — তুমি কি বললে?

    — স্বান্তনা দিয়েছি কিছু হবে না তোমার। পার্লার থেকে মেয়ে এনে তোমাকে শাড়ী পরানো হবে। ওরা খুব ভালো শাড়ী পরায়।

    — আমার মেয়েটা অন্যসব মানুষের তুলনায় একটু বেশিই বোকা। নিজে নিজে কোনো কাজ সামলাতে পারে না। বুদ্ধি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ওকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়। বিয়ের পরও এমনই থাকে কি না কে জানে? এমন থেকে গেলে তো সংসার করতে পারবে না ঠিকমত

    — ও যথেষ্ট সরল মানুষ। তাই এত বুঝে না। আর ওর বিয়ে নিয়ে এখনই কেনো ভাবছেন? ও যথেষ্ট ছোট। যাক না আরো তিন চার বছর। ততদিনে দেখবেন অনেকটাই ঠিক হয়ে গেছে।

    নাহিদের উত্তরে চুপ হয়ে গেলেন ডলি। তিন চার বছর মানে? নাহিদ কি এখন বিয়ের জন্য না করছে? সে আরো তিন চার বছর অপেক্ষা করতে চায়? শালুকের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। শালুকও তাকিয়ে আছেন ডলির দিকে।

    .

    নিঝুমের ঘর থেকে ডাক এলো নাহিদের। সিমিনের কল এসেছে। তড়িৎ গতিতে নিঝুমের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো নাহিদ। সে বের হওয়া মাত্রই ডলি বললো,

    আপা, ছেলো তো বোধহয় এখন বিয়ে করতে রাজি না।

    — না, রাজি হবে না কেনো?

    — বলল তো তিন চারবছরের কথা।

    –ও তো জানে না আমরা বিয়ের কথা বলছি। এখন আগ বাড়িয়ে তো আর বলতে পারে না এখনি আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করবো।

    — হ্যাঁ, সেটাও একটা কথা। কি জানি! আমিই হয়তো ভুল ভাবছি।

    ২৭

    বেগুনী রঙের জামদানী পরেছে নিশাত। সাথে রুপার গহনা। খোপায় ফুলও জড়িয়েছে সে। ঈষিতা একদম আঁটসাট করে শাড়ী পরিয়ে দিয়েছে ওকে। মোট আটটা সেফটিপিন দিয়ে শাড়ী আটকে দিয়েছে ওর। তবুও হাঁটতে গিয়ে মনে হচ্ছে যেনো এই বুঝি শাড়ী খুলে গেলো! হাঁটতে অসুবিধাও হচ্ছে বেশ। তবুও শাড়ী পরে থাকতে হবে ওকে। নাহিদের প্রথম উপহার এটা। নিজে পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। কিন্তু কোথায় সে? নিজের ঘরে তো নেই। ছাদেও নেই। বাহিরে গেলো কি? এসব ভাবতে ভাবতেই সে কল করলো নাহিদের নম্বরে। ওপাশ থেকে তার নম্বর ওয়েটিং দেখাচ্ছে। পরপর চারবার কল করলো নিশাত। নাহিদ অন্য কোথাও কথা বলেই যাচ্ছে। চটে যাচ্ছে নিশাত। কি এত কথা অন্যপাশে? এদিকে যে একজন শাড়ী গয়না পরে তার জন্য অপেক্ষা করছে সে খেয়াল কি তার আছে? একটু রিসিভ করে বললেই তো হয় কোথায় আছে সে? পাঁচবারে কল রিসিভ করলো নাহিদ। বেশ বিরক্তিভরা কন্ঠে ওপাশ থেকে বললো,

    — কি সমস্যা নিশাত?

    — কি সমস্যা মানে?

    –বারবার কল করছো কেনো? কি হয়েছে?

    –আপনি এভাবে কেনো কথা বলছেন?

    — জরুরী কিছু বলবে?

    ফোনটা কেটে দিলো নিশাত। মুহূর্তেই চোখের কোনে পানি জমে গেলো ওর। এরকম ব্যবহার কেনো করলো মানুষটা? কি এমন অপরাধ করে ফেলেছে যে এমন আচরন করতে হবে?

    .

    — নিশাত, আমার নাহিদরে দেখছো কোথাও?

    পিছন থেকে জিজ্ঞেস করলেন শালুক। কোনোমতে নিজের চোখজোড়া আড়াল করে বললো,

    — জানি না আন্টি।

    ওপাশ থেকে নাহিদের মামাতো ভাই বললো,

    — নাহিদ ভাই তো ঘাটের ঐদিকে। আমরা আতশবাজি ফুটাতে গিয়েছিলাম। তখন দেখলাম কার সাথে যেনো কথা বলছে।

    — কার সাথে কথা বলে?

    — সিমিন নাকি মিনমিন কে যেনো! নামটা তো বোধ হয় এমনই শুনেছিলাম।

    চট করেই রাগ বেড়ে গেলো নিশাতের। এই মেয়ের সাথে কথা বলছে? এজন্য ওর ফোন রিসিভ করেনি? দিনের মধ্যে কয়বার ফোন করে এই মেয়েটা? কেনো করে? এত কিসের কথা নাহিদের সাথে? ফোন করলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতেই থাকে। সেই কবে থেকে এই মেয়ের কাজকর্ম লক্ষ্য করছে নিশাত। আজ একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো। নাহিদ কেনো ওর চেয়ে বেশি ঐ মেয়েকে ইমপরট্যান্স দিবে? এত কেনো কথা বলবে ওর সাথে? নিশাত আজ ওর জন্য শাড়ী পরেছে এখন নাহিদ শুধু ওকেই দেখবে। আর কাওকে সময় দিতে পারবে না। সিমিনকে তো একদমই না। কোনোমতে শাড়ী সামলে পুকুরঘাটে রওয়ানা হলো নিশাত।

    .

    প্রচন্ড অস্থির দেখাচ্ছে নাহিদকে। ঘাটের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পায়চারী করে বেড়াচ্ছে সে। হাত নেড়ে নেড়ে ঐপাশে সিমিনের সাথে কথা বলছে। কি কথা বলছে সেসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই নিশাতের। যেই মাথাব্যথা আছে সেটা হচ্ছে নাহিদের ফোনটা এই মুহূর্তে নিজের কব্জায় আনা। পায়ের হিলগুলো খুলে, দুহাতে শাড়ী উঁচু করে আগলে নিয়ে তড়িৎ গতিতে নাহিদের মুখোমুখি দাঁড়ালো নিশাত। ছোঁ মেরে নাহিদের কান থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো সে। ফোনে চলতে থাকা কলটা কেটে দিলো। নাহিদ উঁচুস্বরে ধমকে উঠলো।

    — এটা কেমন অসভ্যতা?

    — সিমিনের সাথে আপনার এত কিসের কথা? কত কথা বলেন এই মেয়ের সাথে? আমি আপনাকে কতগুলো কল করলাম সেগুলো রিসিভ না করে ওর সাথে কথা বলেই যাচ্ছেন। সমস্যা কি আপনার?

    –ফোন দাও নিশাত।

    — দিবো না। আপনি এখন আর ওর সাথে কথা বলতে পারবেন না। আমার সাথে কথা বলবেন।

    –তোমাকে আমি ফোন দিতে বলেছি।

    — ঐ মেয়েটার জন্য আমাকে ধমকাচ্ছেন আপনি? আমার চেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট ও?

    .

    মেজাজ ভয়ংকর আকার নিয়েছে নাহিদের। নিশাতের হাত থেকে টান মেরে ফোনটা নিজের হাতে নিলো সে। দাঁত কিটমিট করতে করতে বললো,

    — চড় মেরে সব দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব। আমি কার সাথে কথা বলবো আর কার সাথে বলবো না এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি কথা বলার মাঝে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে কেটে দেয়ার তুমি কে? এত সাহস কে দিলো তোমাকে? তোমার পাগলামি ছাগলামি সব মেনে নেই বলে যা খুশি তা করে যাবে? যাও, বাসায় যাও। আমার আশপাশে যেনো আজকে তোমাকে না দেখি।

    .

    দুচোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে নিশাতের। মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে সে। ফোনে কথা বলতে বলতে নাহিদ পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। যে মানুষটা এতদিন ওর মনের সব কথা বুঝতো, ওর মনের খোড়াক মিটাতো সেই মানুষটার কাছে এমন ব্যবহার কখনো স্বপ্নেও আশা করেনি নিশাত। খোপার ফুলগুলো টেনে ছিঁড়তে ছিঁড়তে দৌঁড়াচ্ছে সে। থাকবে না সে আর এখানে। নাহিদ চলে যেতে বলেছে, সে চলেই যাবে। এখুনি বাবাকে নিয়ে ঢাকা রওয়ানা হবে সে। কিছুদূর যাওয়ার পরই শাড়ীর সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। ধুপ করে আওয়াজ পেতেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো নাহিদ। নিশাত মাটিতে পড়ে আছে। ফোনটা রেখেই দৌঁড়ে এগিয়ে এলো সে। নিশাতের দুই কাঁধে ধরে দাঁড় করিয়ে বললো,

    — শাড়ী পরে হাঁটতেই পারো না। দৌঁড় দিতে কে বলেছে তোমাকে?

    –আমি চলে যাবো। এখুনি যাবো। থাকবো না আপনার আশপাশে। বাবাকে নিয়ে এখুনি ঢাকা চলে যাবো।

    —চলে যাবে কেনো? বকা দিয়েছি তাই?

    — হ্যাঁ।

    –জরুরী কথা বলছিলাম। খুব জরুরী কথা। এমন সময় ফোনটা এসে কেড়ে নিয়ে নিলে। রাগ উঠে গিয়েছিলো আমার। তাই বকা দিয়েছি। সরি।

    হেঁচকি তুলে কাঁদছে নিশাত। নাহিদের প্রতিউত্তরে কিছুই বলছে না সে। নিশাতের গাল মুছে দিতে দিতে নাহিদ বললো,

    — কান্নাকাটি করে চেহারার কি হাল করেছো দেখো! কাজল লেপ্টে একদম ভূত দেখাচ্ছে তোমাকে। কত সুন্দর দেখাচ্ছিলো তখন! আর এখন পুরোপুরি পেত্নি। নাহিদ কথাটা শেষ করতে না করতেই ঝড়ের গতিতে নিশাত জড়িয়ে ধরলো তাকে। এক নিঃশ্বাসে বলতে থাকলো,

    — ভালোবাসি আপনাকে। অন্য মেয়েকে আপনি আমার চেয়ে বেশি ইমপরট্যান্স দিচ্ছেন দেখলে আমার সহ্য হয় না। মনে হয় যেনো আমার নাহিদকে কেউ আমার কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। আপনি ঐ মেয়েটাকে আজ থেকে এত ইমপরট্যান্স দিবেন না। আর ঐ যে কথাটা বললেন আপনার আশপাশে যেনো আমি না যাই এটা আর কখনো আমাকে বলবেন না। কষ্ট হয় আমার। আপনার আশপাশে আমি থাকবো না তো কে থাকবে?

    .

    স্তব্ধ হয়ে আছে নাহিদ। নিশাতের সমস্ত কথা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। বিশ্রী রকমের এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সে। এমন বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো সে হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। আলতো হাতে নিজেকে নিশাতের কাছ থেকে সরিয়ে নিলো সে। মিনমিনে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

    — কিসব বলে যাচ্ছো?

    — কিসব মানে?

    –আমাকে ভালোবাসো!

    –হ্যাঁ বাসি। আপনি এত অবাক কেনো হচ্ছেন?

    –একটু হুঁশ জ্ঞান করে তো কথা বলো!

    –আপনি এমনভাবে বলছেন মনে হচ্ছে যেনো আপনি কিছুই জানেন না। মজা করছেন আপনি তাই না?

    –মজা কেনো করতে যাবো? এটা কি মজা করার মত কোনো বিষয়? এগুলো কি বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে বসে আছো?

    — আমি আপনাকে ভালোবাসি এটা বাজে চিন্তা কেনো হবে? আপনিও তো

    –আমাকে ভালোবাসেন। সেটা বাজে না হলে আমারটা কেনো বাজে হবে?

    –আমি তোমাকে ভালোবাসি কে বললো?

    — এখানে বলাবলির কি আছে? আপনি আমাকে যেভাবে মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছেন, যেভাবে কেয়ার করেছেন এমনটা তো ভালোবাসার মানুষই করে।

    –কে শিখিয়েছে এসব তোমাকে? বন্ধুর জন্যও আমরা এতটা যত্নই নেই। শুধুমাত্র প্রেমিকারই এমন যত্ন নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তোমাকে আমি বন্ধু হিসেবেই সব করেছি।

    –আমার মন ভালো করার জন্য উঠেপড়ে লেগে থাকা, হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো, নদীর পাড়ে আমাকে নিয়ে ভোর হতে দেখা, আমার জন্য ছোট ছোট খুশি এনে দেয়া এগুলো সব কি শুধু বন্ধুত্বের খাতিরেই ছিলো?

    — বন্ধুত্ব না তো আর কি? তোমার আমার মাঝে এরচেয়ে বেশি গভীর সম্পর্ক কিভাবে আশা করো তুমি?

    — আমি আশা করি না। আমি এটাকে গভীর সম্পর্কই মানি।

    — কিভাবে সম্ভব নিশাত? তুমি আমার সাথে….?

    –কেনো? কি সমস্যা আমার মাঝে?

    — তুমি আমার চেয়ে কত বছরের ছোট আন্দাজ আছে তোমার?

    –হ্যাঁ জানি।

    — তাহলে তুমি কিভাবে এমন একটা সম্পর্কের কথা ভাবছো?

    –বয়স ছাড়া আর কোনো সমস্যা আছে?

    –এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। ১৬ বছরের পার্থক্য কোনো ছোটখাটো পার্থক্য না। তোমার আমার চিন্তাধারায় আকাশ পাতাল পার্থক্য। তুমি রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বিভোর থাকো। আর আমার স্বপ্নগুলো ধূসর হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার সাথে কোনোদিক দিয়েই তোমার মিলে না নিশাত

    –এতদিন মিলেছে কিভাবে?

    –বন্ধু হিসেবে ঘুরাঘুরি করা আর এক ছাদের নিচে বাস করা এক বিষয় না। শুধু বন্ধুত্ব দিয়ে সংসার চলে না। সংসারের জন্য আরো অনেক কিছু প্রয়োজন।

    সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোঝাপড়া। যেটা তোমার আমার মাঝে হবে না

    –আপনি আমাকে যথেষ্ট ভালোভাবে বুঝেন। আমি মুখ ফুটে না বলতেই আপনি আমার কথা বুঝে নেন।

    — আমি বুঝি। কিন্তু তুমি আমাকে বুঝো?

    –একসাথে চলতে চলতে সব বুঝে নিবো।

    –পাগলের মত কথা বলে যাচ্ছো। তুমি যেটাকে ভালোবাসা বলছো সেটা ভালোবাসা না। সাময়িক মোহ মাত্র। তুমি আবীরকে ভালোবাসতে। মাত্র কয়েকদিনের পার্থক্যে কেউ কাউকে ভুলে অন্যকে ভালোবাসতে পারে? এটা সম্ভব? মোটেই না। আবীরের পরিবর্তে তুমি আমার সাথে সময় কাটাচ্ছো, ঘুরাফেরা করছো এটা আমার প্রতি তোমাকে একটু দুর্বল করে ফেলেছে। আর কিচ্ছু না। এসব ভালোবাসা টালোবাসা তো একদমই না। মাথা থেকে এসব ঝেরে ফেলো নিশাত।

    — আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি।

    কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা মোহ সেটার পার্থক্যই তো এখনও বুঝতে শিখোনি। তাহলে তোমার সাথে আমার মিল হবেটা কোথায়। তুমি এখনও অনেক ইমম্যাচিউর। হাতে পায়েই যা লম্বা হয়েছো। এখনও ম্যাচিউর হওনি। মোহকে ভালোবাসার নাম দিও না। আগে নিজেকে বুঝতে শিখো। নিজের মনের কথাগুলো বুঝতে শিখো। এরপর নাহয় ভালোবাসার কথা বলতে এসো। আর আমি তোমাকে শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখেছি। তোমাকে নিয়ে অন্য কিছু কখনোই ভাবিনি। মনে আর কোনো ভুল ধারণা রেখো না প্লিজ।

    — আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?

    –আবারও একই কথা বলছো। এটা কি মজা করার মত কোনো বিষয়?

    — এতদিনে এতকিছু কি তাহলে সব মিথ্যা?

    — বন্ধুত্বকে ভালোবাসার নাম দিও না।

    বোকার মত চেহারা নিয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে নিশাত। এতদিনের এতকিছু মিথ্যা কিভাবে হতে পারে? শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরে কেউ এতকিছু কিভাবে করতে পারে? যেই অনুভূতির ছোঁয়াগুলো নাহিদের কাছ থেকে সে পেয়েছিলো সেগুলো ভুল হয় কিভাবে? এতক্ষণ হেঁচকি তুলে কাঁদলেও আপাতত আর কাঁদছে না সে। বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে গেলো হয়তো কান্নারা আর চোখের কোণে ভীড় জমাতে পারে না।

    .

    –বাসায় চলো নিশাত। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সবাই তোমাকে খুঁজবে। নিশাতের হাত ধরে বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে নাহিদ। এটা সেই হাত যে হাত ধরে আরো বহুবার এই মানুষটার পিছনে হেঁটেছে সে। বরাবরের মত আজও সে এই হাতের ভাঁজে যত্ন আর ভালোবাসার স্পর্শই খুঁজে পাচ্ছে। এটা কি ভালোবাসা না? এতদিনের সমস্ত অনুভূতি কি তবে সত্যিই সব মিথ্যে?

    ২৮

    ফ্লোরে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে নিশাতের শাড়ী আর কাঁচের চুড়ি। কয়েকটা চুড়ি ভেঙেও গেছে। গলার হার, কানের দুল, পায়ের নূপূরগুলো ছড়িয়ে আছে খাটের একেক প্রান্তে। খাটের এক কোণায় গুটিসুটি হয়ে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে নিশাত। পাগল মনে হচ্ছে তার নিজেকে। কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না সে। মাথা খুব ঝিমঝিম করছে তার। নাহিদকে তার চাই। চাইই চাই। ভালোবাসে না বললেই হলো? বাসবে না কেনো? কিসের বয়সের অযুহাত দেখাচ্ছে সে? কেনো দেখাবে? একটা মানুষকে এভাবে পাগল করে দিয়ে এখন বলবে ভালোবাসি না এটা কেমন কথা?

    .

    বাহির থেকে দরজার লক খুলে ভিতরে এলো ঈষিতা। ঘরে ঢুকেই সে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো পুরো ঘর এলোমেলো হয়ে আছে। তারচেয়ে বড় ঘটনা হলো নিশাতের বিধ্বস্থ অবস্থা হয়ে আছে। খোপা থেকে অর্ধেক চুল বের হয়ে পিঠের উপর পড়ে আছে। কাজল আইলাইনার লেপ্টে গাল পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। হেঁচকি তুলে কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা। দরজা পুনরায় লক করে তড়িৎ গতিতে খাটে উঠে এলো ঈষিতা। বোনকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।

    — কি হয়েছে তোর? এভাবে কাঁদছিস কেনো?

    — উনি আমাকে ভালোবাসে না।

    –কে ভালোবাসে না?

    — নাহিদ ভাই।

    নিশাতকে বুক থেকে সরিয়ে মুখোমুখি তাকিয়ে রইলো তার দিকে। ঈষিতার ভ্রুগুলো আপনাআপনিই কুঁচকে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ঈষিতা জিজ্ঞেস করলো,

    — কি হয়েছে উনার সাথে?

    — উনাকে ভালোবাসি বলেছিলাম। উনি বললো সেভাবে কখনো উনি আমাকে দেখেন নি।

    –তো কিভাবে দেখেছে?

    — শুধুমাত্র বান্ধবী।

    — বান্ধবী!

    –হ্যাঁ। উনার বন্ধুত্বকে আমি ভুল ভেবেছি। ঐটা ভালোবাসা না, শুধুমাত্র বন্ধুত্ব। এত বয়সের পার্থক্যে নাকি ভালোবাসার সম্পর্ক হয় না।

    –এতদিন উনি যেভাবে তোকে সময় দিয়েছে, সম্পর্কটা যদিক এগিয়ে নিয়ে গেছে সেটা বন্ধুত্ব কিভাবে হয়? তুই নাহয় ভুল বুঝেছিস। আমরা পুরো ঘরসুদ্ধ লোকজন কি ভুল বুঝেছি? আমরা সবাই এত বোকা? কিছু বুঝি না?

    —আমি জানি না আপু। উনাকে আমি ভালোবাসি। উনাকে আমার চাই। উনাকে এনে দে আপু।

    –উনি তোর সাথে মজা করেনি তো?

    — না। – সিওর?

    — বললো তো।

    .

    নিশাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ঈষিতা। দৃঢ় কণ্ঠে নিশাতকে বললো,

    — ঘরভর্তি মানুষ নিশু। একটু শান্ত হো। মনের ঝড়টা আপাতত মন পর্যন্ত আটকে রাখ। সবাই খুঁজছে তোকে। কোনোমতে অনুষ্ঠানটা শেষ করে আসি। আজ রাতেই মায়ের সাথে আমি কথা বলবো। কান্না থামা। মুখ ধুয়ে আয়। আপু তোকে আবার সাজিয়ে দিচ্ছি।

    — কিন্তু আমার তো কান্না পাচ্ছে। কান্না আটকাবো কিভাবে? উনাকে দেখলে তো আরো কান্না পাবে।

    — কান্নাকাটির কিছু হয়নি। কথা তুই বলেছিস উনার সাথে। আমরা তো বলিনি। পুরো ঘরের মানুষ আশা নিয়ে বসে আছে উনার সাথে তোর বিয়ে দিবে। সবার কথা ফেলবে কিভাবে উনি? ধরে নিলাম উনি তোকে ভালোবাসে না। উনার তোকে ভালোবাসা লাগবেও না। শুধু বন্ধুত্ব দিয়েও সংসার করা যায়।

    –সবাই আমাদের বিয়ের কথা ভাবছে?

    — হ্যাঁ। আমার শাশুড়ী নিজে প্রস্তাব দিয়েছে আব্বু আম্মুর কাছে। সবাই রাজি। এতগুলো মানুষকে নাহিদ ভাই না করবে কিভাবে?

    কান্না থেমেছে নিশাতের। এখন একটু শান্তি শান্তি লাগছে। ঈষিতার কথায় ভরসা পাচ্ছে সে। চোখ মুছতে মুছতে সে বললো,

    — কথা বলবি তো আজ রাতে?

    –আমি আজই আম্মাকে বলবো। হয় আম্মা এখন নাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলবে আর নয়তো বিয়ে শেষ হওয়ার পর। ঘরভর্তি মানুষ। বুঝতেই তো পারছিস। কথা তুললেই এখন হাউমাউ চলবে। একটু সহ্য কর। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই একটু স্বাভাবিক থাক।

    –আমি মুখ ধুয়ে আসছি। আমাকে সাজিয়ে দে। আজকেই বলবি কিন্তু আন্টিকে।

    — হ্যাঁ, আজকেই বলবো। আর শোন, এখনই আব্বু আম্মুকে এসব বলার প্রয়োজন নেই। আম্মু রাজি হচ্ছিলো না। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করিয়েছি।

    –আম্মুর কি সমস্যা?

    — বয়সের পার্থক্য।

    –এটা নিয়ে সবাই এত বাড়াবাড়ি করছে কেনো?

    –কথা বাদ দে। জলদি মুখ হাত ধুয়ে নে। আমাকে উপরে যেতে হবে।

    ওয়াশরুমে চলে গেলো নিশাত। বেসিনের আয়নায় নিজেকে দেখে ঘষে ঘষে মুখ থেকে কালি উঠাচ্ছে। ফ্লোর থেকে শাড়ী চুড়ি উঠিয়ে নিচ্ছে ঈষিতা। শাড়ীর সেফটিপিনগুলো কোথায় ছিটকে পড়েছে কে জানে?

    বোনকে হলুদ লাগিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে নাহিদ। মনটা বেশ অস্থির হয়ে আছে। নিশাত এমন কিছু ভেবে বসবে এটা আশা করেনি সে। কি থেকে কি হয়ে গেলো! তবে যাই হয়েছে ভালো হয়নি। কাঁদছিলো মেয়েটা। ওকে কাঁদাতে চায়নি নাহিদ। চেয়েছিলো আবীর নামক একটা কীটের স্মৃতি থেকে বের করে আনতে। আবীর ছাড়াও সে নিজের মত করে বাঁচতে পারবে তা শিখাতে। কিন্তু আবীরের জায়গা তো মেয়েটা ওকে দিয়ে দিলো। এটা সম্ভব না। কোনোভাবেই না। এত ছোট একটা মেয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে দুটো জীবন নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। নিশাত এত সহজে ওকে ছাড়ছে না সেটা ভালোই আন্দাজ করতে পারছে সে। ওর কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়াই ভালো। চোখের সামনে দেখলে আরো কষ্ট বেশি কষ্ট পাবে। কোনোমতে নিঝুমের বিয়ে শেষ করেই চলে যেতে হবে এখান থেকে। নিশাতের অনুভূতিগুলো আর কোনোভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না।

    ২৯

    পুরো বাড়ি খালি। সবাই গিয়েছে নিঝুমের শ্বশুরবাড়ি। আজ নিঝুমের বরের গায়ে হলুদ। বাড়িতে রয়ে গেছে শুধু নাহিদ, নিঝুম, ঈষিতা আর শালুক। নাহিদ আর ঈষিতারও যাওয়ার কথা ছিলো। শালুক ওদের দুজনকে যেতে বারণ করেছেন। ঐ বাড়িতে দায়িত্ব পালন করার জন্য ফাহাদ আছে, এই বাড়ির আরো মুরুব্বিরা আছে। সেখানে ঈষিতা আর নাহিদ না গেলেও চলবে। নিঝুমের বিয়ে ছাড়াও আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেটা আজই মিটিয়ে নেয়া উচিত। এজন্যই নাহিদ আর ঈষিতাকে এ বাড়িতে রেখে দেয়া। গতকাল রাতেই শাশুড়িকে বিস্তারিত জানিয়েছে ঈষিতা। সেই থেকে বড্ড অস্থির হয়ে আছেন তিনি। ইচ্ছে হচ্ছিলো গতকাল রাতেই ছেলেকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে। বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে কথা বাড়াতে চাননি তিনি। আজ বিকালের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। সবাই চলে যেতেই নিজের ঘরে ডেকে এনেছেন ছেলেকে। বিগত দশ মিনিট যাবৎ ছেলেকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আয়ত্তে আনার বিভিন্ন চেষ্টা করার পর একটা পর্যায়ে রেগে গেলেন তিনি। উঁচুস্বরে নাহিদকে বললেন,

    — আমি মেয়ের বাবা মায়ের সাথে কথা বইলা ফেলছি। এখন যদি আমি বলি আমার ছেলে রাজি না আমার ইজ্জত কই থাকবে?

    — তুমি কেনো আমাকে জিজ্ঞেস না করে উনাদের সাথে কথা বলতে?

    –মেয়েরে নিয়া তো তুমি কম নাটক করো নাই বাপ! এই নাটকরে যে তুমি দিনশেষে বন্ধুত্বের নাম দিবা তা তো আমরা কল্পনা করি নাই।

    — আমি কি এমন আচরন করেছি নিশাতের সাথে যে তোমরা বলছো ওর সাথে আমি প্রেম করেছি?

    — কি করো নাই? মেয়েটারে তুমি যেমনে এতদিন নিজের পাশে পাশে রাখছো, ঘুরছো ফিরছো, যত্নআত্তি করছো এগুলা কি প্রেমর মধ্যে পড়ে না? আমি তোমারে কয়েকদিন দেখছি তুমি ওর হাত ধইরা ঘুরো। সেদিন দেখলাম তুমি ওর চুল বাঁইধা দিলা। রাতের বেলা ওরে নিয়া পুকুরঘাটে ঘুরছো সে কথাও আমার কানে আসছে। নিম্মি বললো কয়েকদিন আগে তুমি ওরে পিছন থেইকা জড়ায়া ধইরা ঘুড়ি উড়ানোও শিখাইছো।

    — আমি ওকে জড়িয়ে ধরিনি আম্মা। ওর পিছনে দাঁড়িয়ে নাটাই ধরে রেখেছিলাম।

    — কাছাকাছি তো ছিলা। তোমার বুকের সাথে ওর পিঠ তো লাগছে। আরো অনেক ঘটনা আছে নাহিদ। তুমি ভাইবো না আম্মা বুড়া হয়ে গেছে। এসব আম্মার চোখে পড়ে না। আম্মা সবই দেখি। তোমারে এতদিন ছাড় দিয়া রাখছি কারন আমি ভাবছি তুমি ওরে বিয়ে করতে চাও। আমিও আশায় বইসা ছিলাম আমার ছেলে এত বছর পর কোনো মেয়ে পছন্দ করছে আমি তার সাথেই ছেলে বিয়ে দিবো। নিঝুমের বিয়ের জন্য আমি চুপ ছিলাম। এখন তোমার বিয়ে নিয়া আমি আগাইতে চাচ্ছি আর তুমি অস্বীকার করতাছো তুমি ওরে ভালোবাসো না! এই সমস্ত আচরণ কোন হিসাবে তুমি বন্ধুত্বের নাম দাও। আমার ফাহাদেরও মেয়ে বন্ধু আছে, দুই মেয়েরও ছেলে বন্ধু আছে। কই আমার তো কখনো মনে হয় নাই ওগুলার সাথে আমার ছেলে মেয়ের বোধ হয় প্রেম চলে। তোমার বেলাতেই কেন আমার মনে হইলো? নিশ্চয়ই তোমার আচরণে আমি এমন কিছু দেখছি।

    — তুমি ভুল বুঝতেছো আম্মা।

    –আচ্ছা যাও, ধরলাম আমি ভুল বুঝতাছি। তুমি ওরে বন্ধুর মতই দেখছো। এখন তুমি তোমার বন্ধুরে বিয়া করবা।

    — এটা কেমন কথা বলো? এই বাচ্চাকে আমি বিয়ে করবো কিভাবে?

    — কিসের বাচ্চা? তোমার কি ওকে কোলে নিয়া ঘুরতে হবে?

    ও সংসার করার মত জ্ঞান এখনো হয়নি।

    — তুমি নিজেই গতকাল দুপুরে নিশুর মাকে বলছো তোমার কাছে ছয়মাসের জন্য দিয়া দিতে। তুমি সব শিখায়া নিবা ওকে। বলো নাই?

    — হ্যাঁ বলেছি।

    –তো হইলোই। এতদিন বন্ধুরে সামলাইছো এখন বিয়া কইরা নিয়া বউ সামলাও। ছয়মাস খুব বেশি সময় না। ছয়মাস তুমি তোমার বন্ধুর জন্য একটু কষ্ট সহ্য করতেই পারো।

    — কিসব যুক্তি দেখাচ্ছো আম্মা?

    –আম্মা তোমার ভালো চিন্তা করেই বলতাছি। নিশাতরে বিয়া করো। সুখী হবা। এই মেয়ের সবই ভালো। খালি একটু বুঝে কম। এটা সমস্যা না। ও একটু বেশি সহজ সরল তাই এমন করে। এগুলা ঠিক হইয়া যাবে। খালি একটু সময়ের ব্যাপার। এমন পরিস্থিতি মানায়া নেয়ার মত ধৈর্য্য তোমার আছে আমি জানি।

    — আমি জেনেশুনে কেনো মানাতে যাবো আম্মা? যেখানে আমি ম্যাচিউরড একটা মেয়ে বিয়ে করে সংসারের শুরু থেকেই সুখে থাকতে পারবো সেখানে কেনো একটা ইমম্যাচিউরড বাচ্চাকে বিয়ে করে মানিয়ে চলতে যাবো?

    — দেখো ভাইয়া, তুমি যেভাবে ইমম্যাচিউরড বলছো নিশাতকে ও কিন্তু এতটাও ইমম্যাচিউরড না। হ্যাঁ হয়তো একটু বোকা বোকা প্রশ্ন করে, পরিস্থিতি সামলে উঠতে জানে না। কিন্তু সংসার করতে পারবে না বা তোমাকে কষ্টে রাখবে ব্যাপারগুলো কিন্তু এমন না। ও তোমার প্রতি খুব বেশি দূর্বল হয়ে গেছে। খুব পছন্দ করে তোমাকে। তুমি কষ্ট পাবে এমন কিছু কখনো করবে না এতটুক নিশ্চিত থাকতে পারো। রইলো কথা ওর ইমম্যাচিউরিটির, এগুলো সময় আর পরিস্থিতির সাথে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি বিষয়টা যত গভীরভাবে দেখছো ততটা গভীর না।

    –নাহিদ ভাই, আপনি যদি এখন ওকে এসব কথা বলেন ও কি এটা মানতে পারবে? আবীরের কাছ থেকে এত বড় ধাক্কাটা খেলো। আপনি এসে ওকে আগলে ধরলেন। এখন সেই আপনি যদি ওকে দূরে সরাতে চান ওর অবস্থা কি হবে একটু ভেবে দেখেন।

    — তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মানুষ ঈষিতা। তুমি তো একটু যুক্তিসঙ্গত কথা বলো।

    –আমি কি অযৌক্তিক কথা বললাম?

    –তোমার বোনের সাথে কোনদিক দিয়ে আমার যায় একটু বলো তো?

    –আমার বোন কি খারাপ? আপনার অনুপযুক্ত?

    –আমি তোমাকে সেসব বুঝাইনি। আমার বয়স ৩৫। আর ওর মাত্র ১৯। তোমরা এই অস্বাভাবিক অমিলটাকে কিভাবে এত স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছো?

    —হ্যাঁ জানি এটা অস্বাভাবিক। কিন্তু নিশাত তো আপনার সাথে ভালো আছে। আপনিও ওর সাথে ভালো থাকবেন। ওর সাথে সময় কাটাতে কি আপনার ভালো লাগে না আপনিই বলুন?

    — তুমি সময় কাটানোর সাথে সংসার করার সাথে তুলনা করছো! কিভাবে? দুটো কি এক হলো?

    –হ্যাঁ দুটো এক না। কিন্তু মনের মিল আছে দেখেই তো আপনাদের দুজনের একসাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে। এটা কি সংসার করার জন্য যথেষ্ট না।

    — এখন আমরা সংসার করছি না। দূরে আছি। বন্ধু হিসেবে আছি। এভাবে হয়তো ভালো লাগছে। সংসারে গেলে অনেক কিছু বদলে যায়। তখন এই ভালো লাগা আর থাকবে না। এখন তুমি কি বলছো বিয়ে করে দুজন অসুখী হয়ে সারাজীবন জ্বলতে থাকি?

    — নিশাতের দিকটা একটু বিবেচনা করুন তো? ওর এখন আপনাকে ছাড়া কষ্ট হবে না?

    — যেই মানুষটা প্রাক্তন প্রেমিককে ভুলে কয়েকদিনের পরিচয়ে অন্য কারো প্রতি দূর্বল হয়ে যায় সে অনুভূতির কি বুঝে বলো তো ঈষিতা? আমি সরি কথাটা শুনতে খারাপ লাগছে। কিন্তু কথা তো বাস্তব। এত দ্রুত অনুভূতি কিভাবে বদলায়? ও অনুভূতির এখনো কিছু বুঝেই না ঈষিতা। ও এখনও একটা বাচ্চা। ওর আমার সাথে সময় কাঁটাতে ভালো লাগে এটাকেই ও ধরে নিচ্ছে আমাকে ভালোবাসে।

    নাহিদের কথায় চেহারা লাল হতে শুরু করেছে নিঝুমের। ভ্রু জোড়া ক্রমশ কুঁচকে আসছে তার।

    মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঈষিতা। দৃঢ় কণ্ঠে নাহিদকে বললো,

    –আপনাকে এই কথার দাঁতভাঙা জবাব আমি দিতে পারতাম নাহিদ ভাই। আপনি বড় ভাই। তার উপর আপনার তো আবার এই বাড়ির লোকদের প্রতি পূর্বের ক্ষোভও রয়ে গেছে। আমি এই বাড়ির বউ মানুষ হয়ে আপনাকে কথাগুলো শোনালে হয়তো আপনার হজম হবে না। ভাবতে পারেন বাড়ির বউ হয়ে বাড়ির ছেলেকে কিভাবে কথাগুলো শোনালাম। পরে হয়তো আপনার ক্ষোভ আরো বাড়বে আমাদের উপর। থাক, আমার এখানে আর কথা না বলাই ভালো। আম্মা, আপনিও বাদ দেন এসব। নাহিদ ভাইকে ম্যাচিউরড মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়েন আমার নিশু এখনো বাচ্চা। অনুভূতি বদলায় খুব দ্রুত। এইজন থেকে সেইজনে অনুভূতি বদলায়। বড় হোক, অনুভূতি কি বুঝতে শিখুক এরপর আমরা নিশুকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবো।

    — তুমি কথাটা বাজে দিকে ঘুরাচ্ছো ঈষিতা।

    নাহিদের কথার কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ঈষিতা।

    .

    মায়ের পাশেই বসে ছিলো নিঝুম। খাট থেকে নেমে আসলো সে। নাহিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,

    — ভাবীর উচিত ছিলো তোমাকে উত্তরটা দিয়ে যাওয়া। উত্তরটা এবার আমি দিয়ে যাই। বন্ধুত্ব কেমন হয় সেসব জ্ঞান আমাদের দিতে এসো না। একটা মেয়েকে যদি তুমি বিয়েই না করবে তাকে এত কাছে টানার মানে কি ছিলো? মেয়েটাকে দূর্বল করে দিয়ে এখন বলছো ওকে তুমি বিয়ে করতে পারবে না! ও সংসার করার উপযুক্ত না! আর অনুভূতি বদলায় মানে কি? তুমিই তো চেয়েছিলে ওর আবীরের জন্য ওর অনুভূতি বদলে যাক। চাওনি তুমি?

    — হ্যাঁ চেয়েছি। কিন্তু আমি তো চাইনি ও আমার প্রতি দূর্বল হোক।

    –তুমি ওর সাথে যেমন আচরন করেছো তাতে কি তোমার প্রতি দূর্বল হওয়া স্বাভাবিক না? আবীরকে অন্যভাবেও ভুলানো যেতো। আমাদের ফ্রেন্ডদেরও ব্রেকআপ হয়। আমরাও ওদেরকে সাপোর্ট দিয়ে ঐ কষ্ট থেকে বের করে আনি। সাপোর্ট দেয়ার নাম করে এতটাও যত্ন করি না কিংবা কাছে টানিনা যাতে মানুষটা আমার প্রতি দূর্বল হয়ে যায়। একটা মেয়েকে মাঝর রাতে তুমি পুকুর ঘাটে নিয়ে জোনাকি পোকা দেখাও, জোছনা দেখাও। হাত ধরে তাকে সেঁচের পানিতে ভেজাও। ওকে নিয়ে আলাদা রিকশায় বসে ঘুরে বেড়াও। শেষরাতে নদীর ঘাটে নিয়ে যাও বেড়াতে। এগুলো সবই বন্ধুত্বের নমুনা তাই না। নিজে ওকে প্রেমে পড়ার রাস্তা চিনিয়ে এখন বলছো ও কেনো ঐ রাস্তা ধরে হাঁটছে! অলরেডি ভেঙে যাওয়া একটা মানুষকে আবারও ভেঙে গুঁড়ো করার ব্যবস্থা করছো তুমি।

    –তুমি এটারে খালি বন্ধুত্ব কেন বলতাছো আসলেই বুঝতাছি না। এটা বন্ধুত্ব হইলে প্রেম কোনটা? আরো গভীর কিছুরে তুমি প্রেম বলো?

    –ছোট একটা ইস্যু কোত্থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আম্মা? তোমরা এই যুগের মানুষ হয়েও চিন্তাভাবনা এমন আজব কেনো?

    –হ্যাঁ আমরা আজবই। তোমার মত তো আর বিদেশে থাকি না। এখনও গ্রামেই থাকি। গ্রাম একটা আজব জায়গা। তাই আমাদের চিন্তাভাবনাও আজব।

    — মেজাজ খারাপ করবি না তো নিঝু।

    –আমাদের উপর তো তোমার এমনিতেই মেজাজ খারাপ থাকে। আজকে ১২ বছর যাবৎই আমাদের উপর তোমার মেজাজ খারাপ। অকারণেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। এবার নাহয় কারনবশতই মেজাজ খারাপ হোক।

    — পুরান কথা কেনো ঘাটানো হচ্ছে খুঁজে পাচ্ছি না।

    –কারন সেইবারের মত এবারও তুমি তোমার দোষ দেখতে পাচ্ছো না। সেইবার অন্য কারো দোষের শাস্তি আমাদেরকে তুমি এতবছর ধরে দিয়ে আসছো। আর এখন নিজের ভুলের শাস্তি অন্য একটা মেয়েকে দিবে। কি করেছে ও? কি এমন ইমম্যাচিউরড বিহেভিয়ার করে ফেলেছে যে ওকে বিয়ে করা যাবে না? বিয়ে যেহেতু করবেই না তাহলে এত কাছে কেনো টানলে সেটার উত্তর দাও।

    আমি কারো কাছে এত কৈফিয়ৎ দিতে বাধ্য না। আমি কাকে বিয়ে করবো কাকে করবো না সেটা একান্ত আমার সিদ্ধান্ত। অন্য কেউ সেখানে নাক গলাতে পারবে না।

    — সিদ্ধান্ত আমি নিছি। তুই নিশাতকেই বিয়া করবি। এখানে সুখী হবি তুই।

    আগামী শুক্রবারই আমি তোর আকদ করাবো। অনেক দেখছি তোর তামশা। আর না। বয়স হইছে তোর। তোর একটা গতি করা আমার দায়িত্ব। ঐ এক ঘটনা মনে রাইখা যুগ যুগ একা কাটানোর কোনো অর্থ হয় না। এসব ঝাড় মাথা থেইকা। বিয়ার প্রস্তুতি নে।

    — এখন কি তুমি আমাকে জোর করবা?

    — হো, আমি জোরই করবো।

    — বিয়ে যদি করতে হয় তাহলে আমি সিমিনকে বিয়ে করবো। ও অনেক আগেই আমাকে প্রপোজ করেছে। আমি হ্যাঁ বললে নেক্সট ফ্লাইট ধরে দেশে চলে আসবে আমাকে বিয়ে করতে। ও যথেষ্ট ম্যাচিউরড পার্সন। শান্তিমত সংসার করা যাবে। বিয়ে করলে ওকেই করবো। দুই সপ্তাহ সময় দাও। ওকে আসতে বলি। ওর সাথে বিয়ের আয়োজন করো। নিশাতের সাথে না।

    — তোর ঐ সিমিনরে আমার পছন্দ না।

    — বিয়ে তো আমি করবো। তুমি তো করবা না।

    — তুই ওরে ভালোবাসোস?

    — না। মেয়ে হিসেবে ওকে ভালো লাগে এজন্য করবো।

    — যেহেতু ভালোবাসা নাই তাইলে ওরে বিয়া করারও দরকার নাই। নিশাতরেও

    –তোর ভাল্লাগে। আমাদেরও ভাল্লাগে। তুই ওরেই বিয়ে করবি।

    –তুমি বললেই তো আমি শুনবো না।

    –কেনো শুনবি না? আমি তোর কেউ না? আমার কথার কোনো দাম নাই?

    –একটু আগে আমি কি বলছি তুমি শুনো নাই বোধ হয়। আমার ব্যাপারে কেউ নাক গলাবে এটা আমার মোটেই পছন্দ না। এমনকি তুমিও না। বহুবছর আগে তোমাদের সাথে নিয়েই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। প্রতিদানে যা পেয়েছি তা আজীবনেও ভুলতে পারবো না। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আমার নিজের মত করেই বাঁচবো। ফের কোনোদিন আমার কোনো সিদ্ধান্তে তোমাদের কাউকে নাক গলাতে দিবো না। আমি আমার মত আছি। আমাকে আমার মত বাঁচতে দাও। নিশাতকে আমার কাঁধে ঝুলিয়ে দয়া করে আমাকে বিপদে ফেলো না।

    — আম্মা যে নিশাতের আব্বা আম্মার সাথে কথা বলে ফেললো সেটার কি হবে? আম্মার সম্মান নষ্ট হবে না?

    — আমি তো বলিনি যাও গিয়ে কথা বলো। কেউ সেধে সেধে নিজের সম্মান নষ্ট করলে আমি কি করতে পারি? দেখ ভাই এটা নিয়ে আমি আর কোনো কাঁদা ছুড়াছুড়ি করতে চাই না। আছিই আর একটা রাত। আগামীকাল রাত তিনটায় আমার ফ্লাইট। টিকিট বুকড হয়ে গেছে আমার। আমি চলে যাচ্ছি। কাল তোর বিয়ে শেষ করেই আমি রওয়ানা হবো। আমি আর কোনো নাটক দেখতে চাই না প্লিজ!

    .

    নীরবে কাঁদছেন শালুক। ছেলের এমন রুক্ষ আচরন নতুন কিছু না। আগেও দেখেছেন তিনি। তবে এবার একটু বেশি হয়ে গেলো। সন্তানের কাছে এতটাও আশা করেননি শালুক। নিঝুম দাঁত মুখ শক্ত করে বললো,

    — আম্মার সম্মান নিয়ে তোমার মাথাব্যথা নেই তাই না? ঠিকাছে। তোমার কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি কি আশা করা যায়। এইবার তো শিক্ষা নাও আম্মা। এতদিন ছেলে আচরনে বুঝাতো তুমি আমি আমরা কেউ তার আপন না। তবু ছেলের জন্য দরদ কমেনি তোমার। এই ছেলের জন্য দিনের পর দিন কেঁদে বুক ভাসিয়েছো। এতদিন আচরনে বুঝিয়েছে, আজ তো একদম স্পষ্ট বলেই দিলো। আরো কাঁদবে ছেলের জন্য? আরো অপেক্ষা করবে ছেলের জন্য কবে ছেলে দেশে আসবে? কবে তাকে একনজর দেখতে পাবে? কার জন্য কাঁদো? কার জন্য নামাজের বিছানায় বসে এত দোয়া করো? ওর জন্য? ও আমাদের আপন ভাবে না আম্মা। এবার ওকেও আমাদের ওর মত ছেড়ে দেয়া উচিত।

    চোখের পানি মুছতে মুছতে কাঁপা কণ্ঠে শালুক বললেন,

    — তুমি যে আমাদেরকে সেই কবেই বাদ দিয়া দিছো সেটা আমি আরো আগেই বুঝতে পারছি। মুখ ফুইটা বলার বাকি রাখছিলা এই যা। এতদিন মুখ ফুইটা বলো নাই তাই আমিও মিথ্যা আশা নিয়া থাকতাম নাহিদ আমাদের ভালোবাসে। আমি জানতাম আমার ধারণা মিথ্যা। তবুও মনে মনে বুঝ দিতাম। ঐ যে কথায় আছে না, পাগলের সুখ মনে মনে। আমিও তো পাগলই। আমার সন্তানদের পাগলের মত ভালোবাসি। এখন বাপ তুমি যেহেতু আমাদের নাক গলানো পছন্দ করো না তাইলে আমরা আর কি বলতে পারি? যাও তুমি তোমার নিজের জায়গায়। নিজের মত থাকো, বাঁচো। নিজের পছন্দ মত বিয়ে শাদী করো বা চিরকুমার থাকে এগুলা সব এখন তোমার ইচ্ছা। আজকের পর থেইকা আম্মা আর তোমাকে কিছু বলবো না। তোমার কোনো বিষয়ে আমি নাকও গলাবো না। যাও তুমি। নিজের ঘরে যাও। যা যা গোছগাছ করার কইরা নাও।

    মা আর বোনের কথাগুলো কাঁটার মত বিঁধে গেছে নাহিদের গায়ে। এভাবে খুঁচিয়ে কথা বলার কোনো অর্থ ছিলো না। এরা এত বেশি ইমোশনাল কেনো খুঁজে পায় না নাহিদ। দুনিয়াতে ইমোশনের কোনো জায়গা নেই এই সরল বাক্যটা তারা কবে বুঝবে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম
    Next Article রুদ্র – খাদিজা মিম

    Related Articles

    খাদিজা মিম

    রুদ্র – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    খাদিজা মিম

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Our Picks

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }