Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    খাদিজা মিম এক পাতা গল্প236 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বাতাসে গুনগুন – ৩০

    ৩০

    ছেলের বাড়ি থেকে মাত্রই ফিরে এসেছে সবাই। সবাই ক্লান্ত হয়ে যে যার যার জায়গায় বসে গল্প গুজব করছে। নিঝুম, ঈষিতা আর শালুকের মনে তুফান বয়ে যাচ্ছে। সেই তুফান ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে মনের ভিতর লুকিয়ে রাখছে তারা। নিশাত সেই কখন থেকে একটা সুযোগ খুঁজছে ঈষিতার সাথে আলাদা বসে কথা বলার। নাহিদ কি জানালো সেটা জানার জন্য অস্থির হয়ে আছে সে। এ বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ঈষিতা জানিয়ে ছিলো সবাই চলে যাওয়ার পর নাহিদের সাথে কথা বলবে। তাকে বুঝাবে। নাহিদ কি বুঝেছে ওদের কথা? রাজি হয়েছে এই বিয়েতে? কোনো না কোনো মানুষ ওর বোনের আশপাশে ঘুরছেই। কিভাবে কথা বলবে তার বোনের সাথে?

    –রাজি হয়নি?

    — না।

    — বুঝিয়ে বলোনি?

    — হুম।

    — তবুও না?

    –বারবার এক কথা জিজ্ঞেস করছিস কেনো নিম্মি? বারবার জিজ্ঞেস করলে কি আমার উত্তর বদলে যাবে?

    — নিশু সত্যিই কষ্ট পাবে আপু। অনুষ্ঠানে গিয়েছেই যা। খুব অস্থিরতায় ভুগছিলো জানো! ভাইয়া কাজটা ঠিক করছে না। এটা একরকম প্রতারণা হচ্ছে ওর সাথে।

    — আমরা এই ব্যাপারে আর কোনো কথা বলবো না। ভাইয়ার যা খুশি করুক।

    — কিন্তু নিশু তো কষ্ট পাবে। বেচারী আবার একটা ধাক্কা খাবে।

    বারবার এসব আমাকে কেনো বলছিস? যা নিজের ভাইকে গিয়ে বল। আমি তো নাহিদ না। আমাকে বলে লাভ নেই। আমি কিছুই করতে পারবো না। আমরা কিছু করি সেটাও ভাইয়ার পছন্দ না। ও তো স্পষ্ট বলেই দিলো ওর ব্যাক্তিগত ব্যাপারে

    –আমাদের নাক গলানো পছন্দ করে না। তো আমরা কেনো যাবো নাক গলাতে?

    — ভাইয়া এত পর কেনো ভাবে আমাদের? আমরা ওকে কত ভালোবাসি! আর ও শুধু আমাদের দূরে সরাতে চায়।

    — এসব নিয়ে আর কথা বলিস না তো। ভালো লাগছে না শুনতে। এক জায়গা থেকে এসেছিস। যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

    নিঝুম রেগে আছে। ওকে এই ব্যাপারে আর বিরক্ত করা উচিত হবে না। এই মুহূর্তে নিম্মিরও রাগ লাগছে। নাহিদ ভাই মানুষটা এমন কেনো? এই মানুষটা কারো ভালোবাসা বুঝে না। না ঘরের লোকের ভালোবাসা বুঝে, না নিশাতের ভালোবাসা বুঝতে পারছে। একদিন এই ভালোবাসার জন্যই না হাহাকার করতে হয় তার ভাইকে! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো নিম্মি।

    রান্নাঘরটা ফাঁকা হতেই ঢুকে পড়লো নিশাত। ক্ষীন কন্ঠে বোনকে জিজ্ঞেস করলো,

    — উনার সাথে কথা বলেছিলি আপু? কি বলেছে উনি?

    নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে ঈষিতা। মেয়েটার চেহারায় আর কন্ঠে দুশ্চিন্তার তীব্রতা প্রকাশ পাচ্ছে। কি উত্তর দিবে তাকে? যাকে তুই ভালোবাসিস সে তোকে বিয়ে করতে রাজি না এই কথা বলবে? সরাসরি বলবে নাকি একটু ইনিয়ে বিনিয়ে বলবে? কিভাবে বললে একটু সহজভাবে কথাগুলো নিতে পারবে নিশাত?

    –বল না কি বলেছে?

    — আমরা পরে এটা নিয়ে কথা বলি?

    — রাজি হয়নি তাই না?

    –বললাম তো পরে কথা বলি?

    –তোর পরে কথা বলার মানে এটাই দাঁড়ায়। রাজি হলে তুই আমাকে এখনই বলে দিতি।

    চোখে ছলছল পানি নিয়ে বেরিয়ে গেলো নিশাত। নিঝুমের ঘরে যেয়ে কোনোমতে কাপড় পাল্টে মাথা ধরার ভান করে বিছানার এক কোণায় শুয়ে পড়লো নিশাত। কাঁদছে সে। সবার কাছ থেকে কান্না লুকাতেই খাটের এককোণায় গুটিসুটি মেরে পড়ে আছে সে। অনবরত কেঁদে যাচ্ছে আর নাহিদকে একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছে নিশাত। ওপাশ থেকে কেউ ফোনটা রিসিভ করছে না। মানুষটা কোথায় আছে তা নিশাতের জানা নেই। তার সাথে মুখোমুখি কথা বলা খুব দরকার। কেনো এমন করছে সে? তার মনের কথা তো না বলতেই বুঝে যেতো মানুষটা। তাহলে আজ কেনো বুঝতে পারছে না?

    .

    ফাহাদের সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ঈষিতার। মনের উপর বিশাল পাথর চাপা পড়ে আছে। ওর সাথে কথা বলতে পারলে একটু নিজেকে হাল্কা মনে হতো। বোনের বিয়ে নিয়ে মানুষটা ভীষন ব্যস্ত। কাল দুপুরে বিয়ে। গার্লস স্কুলের মাঠে আয়োজন করা হচ্ছে। বাবুর্চিরা আজ রাত থেকেই রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওখানেই বসে আছে ফাহাদ। এমন একটা ব্যস্ত মুহূর্তে ফাহাদকে আর বিরক্ত করতে চায় না ঈষিতা। মনের উপর থাকা পাথরটাকে মনেই চেপে নিয়ে বসে থাকবে সে। বিয়ে শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বসে থাকতে হবে তাকে।

    .

    শালুকের পাশেই শুয়ে আছেন ডলি। নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন তিনি। মানুষটা হয়তো মেয়ের বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেছেন। ঘুম আসছে না শালুকের। তার দেখা স্বপ্নটা আপাতত একটা দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। কত কি ভেবেছিলো এই বিয়ে নিয়ে। সব আশা ভেঙে গেলো। ছেলের প্রতি জমতে থাকা অভিমানগুলো এতবছর আড়াল করতে পারলেও আজ আর আড়াল করতে পারছেন না। এতবছরের আড়াল করা সমস্ত ক্ষোভগুলো যেনো আজ একসাথে ভীড় জমাচ্ছে। কেনো ছেলের অন্যায় আর অবহেলাগুলো বারবার আড়াল করবেন তিনি? ভালোবাসার খাতিরে? কি পেয়েছেন এই ভালোবাসার বিনিময়ে? পাননি তো। অকারণে তার সন্তান তাকে দূরে সরিয়েই গেছে। মায়ের ভালোবাসা তো সে বুঝতে চায়নি। যে বুঝতে চায় না তাকে জোর করে বুঝানোর প্রয়োজন কি? আর কখনো ছেলেকে বুঝাবেন না তিনি। আর কখনো অভিমানগুলো আড়ালে সরিয়ে রাখবেন না। নাহিদের মত আজ থেকে তিনিও অভিমান পুষে রাখবেন।

    রাত তিনটা। নিশাতের ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। ফোন হাতে নিতেই নিশাত দেখতে পেলো স্ক্রিনে নাহিদের নাম ভেসে উঠেছে। তাড়াহুড়ো করে ফোনটা সে রিসিভ করলো। কাঁপা কণ্ঠে বললো,

    –কখন থেকে ফোন করছি আপনাকে! কোথায় আপনি?

    –ছাদে আসো তো।

    –আসছি। এক্ষুনি আসছি।

    খাট থেকে নেমে পা টিপে টিপে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো নিশাত। দরজা পেরিয়েই দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো সে। ছাদের রেলিংয়ের উপর বসে আছে নাহিদ। নিশাত ছুটে এসে নাহিদের সামনে দাঁড়ালো। ফোঁপানো কণ্ঠে নাহিদকে জিজ্ঞেস করলো,

    — কোথায় ছিলেন আপনি?

    –এত কান্নাকাটি করেছো কেনো? চোখ মুখ ফুলিয়ে তো বারোটা বাজিয়েছো চেহারার।

    — এমন করছেন কেনো আমার সাথে?

    — নিশু আমি কি কখনো তোমাকে বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি?

    –বলেননি। কিন্তু আপনার আচরণ তো সেরকমই ছিলো। তাই তো আমি ভেবে নিয়েছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।

    –তুমি যদি আমাকে ভুল বুঝো তাহলে সে দোষ কি আমার?

    –…………………..

    –নিশু, যা বলি মন দিয়ে শুনো। তোমার আমার বিষয়টা নিয়ে প্রচুর ঝামেলা হচ্ছে। আমি কখনোই এসব কল্পনাও করিনি। আমার মনে কখনোই তেমন কিছু ছিলো না। যা কিছু হয়েছে সেটা শুধুই ভুল বুঝাবুঝি। আমাদের সম্পর্কটা এতটাও সিরিয়াসলি নিও না। আমি চাচ্ছি না তুমি কোনো কষ্ট পাও। যাই ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে বাদ দাও সেসব।

    –ভালোবাসি আপনাকে। এটা কি বাদ দেয়ার মত কোনো বিষয়? আপনাকে ছাড়া অস্থির হয়ে যাই। কেমন একটা অশান্তি হতে থাকে। কিভাবে বাঁচবো আপনাকে ছাড়া?

    — তুমি খুবই ইমোশনাল একটা মানুষ। তাই এসব মনে হচ্ছে। একটু চেষ্টা করলেই তুমি এই অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে নিশু।

    — এতই সহজ? চাইলেই যেকোনো অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসা যায়?

    –আবীরকে ভুলতে পারাটাও তোমার জন্য অসম্ভব ছিলো। ওকে কি ভুলে যাও নি? মাত্র তিন চারদিনে ওকে তুমি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে পেরেছো। তাহলে আমাকে কেনো পারবে না?

    — আবীরের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো সেজন্য আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না?

    –ব্যাপারটা মোটেও তেমন না। তোমার সাথে আমার যায় না নিশু। গতকালও তোমাকে বুঝিয়েছি।

    –আমি একদম ম্যাচিউরড মেয়েদের মত চলবো। নিজেকে পুরো বদলে ফেলবো। আপনার অনেক যত্ন নিবো। সংসার সুন্দর করে সামলাবো। আপনাকে অভিযোগের কোনো সুযােগ দিবো না। আপনাকে ভালোবাসি আমি। সব করতে পারবো আপনার জন্য। আপনি শুধু আমার হাতটা ধরে রাখেন প্লিজ। আমাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিবেন না। আপনাকে ছাড়া কোনোকিছু ভাবতে পারি না আমি। একটাবার আমার কথা চিন্তা করে দেখুন।

    –………….

    — আপনি আমার মনের সব কথা না বলতেই বুঝতে পারতেন। এখন কেনো বুঝেন না? আমি কষ্ট পাচ্ছি আপনি দেখতে পাচ্ছেন? আমি মন খারাপ করে থাকলে উঠেপড়ে লাগতেন মন ভালো করার জন্য। এখন যে আমি কাঁদছি আপনার কি কষ্ট হচ্ছে না? আমার মন ভালো করতে ইচ্ছে হচ্ছে না?

    — তোমার এই মন খারাপ দূর করার টনিক আমার কাছে নেই নিশাত। তুমি যা চাচ্ছো এটার পরিণতি কখনোই ভালো হবে না। তুমি ছোট মানুষ তাই বুঝতে পারছো না। দূর থেকে সবকিছুই সুন্দর। কাছে গেলে বুঝা যায় সৌন্দৰ্য্য আসলে কতটুক। একসাথে সংসার করতে গেলে আমাদের দুজনেরই দুজনের প্রতি কিছু না কিছু আকাংক্ষা থাকবে। মানুষের আকাংক্ষা মানুষের বয়সের সাথে বদলায় নিশু। তোমার আর আমার শখ আহ্লাদগুলো কখনোই মিলবে না। দ্বন্দ্বগুলো সেখান থেকেই শুরু হবে। নানান মানুষ নানান কথা বলবে আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে। মেনে নিতে পারবে সেসব? পারবে না। আজেবাজে কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে যাবে। সম্পর্কে তিক্ততা আসতে শুরু করবে। আর পাঁচ বছর পর আমার হবে ৪০ আর তোমার হবে মাত্র ২৪। আমাকে বুড়ো দেখাবে আর তোমার রূপ তখন উপচে পড়া শুরু করবে। তোমার পাশে তখন আমাকে মানাবে? তুমি সহজভাবে মেনে নিতে পারবে আমাকে? পারবে না। এখন আবেগের বশে এসব বলছো। তখন আর এখনকার মত আবেগ থাকবে না। বুঝতে শিখবে তুমি। ম্যাচিউরিটি চলে আসবে তোমার মাঝে। আমার পাশে পা মিলিয়ে হাঁটতে লজ্জা লাগবে তোমার। আরো অনেক ব্যাপার আছে নিশু। চাইলেই এই ব্যাপারগুলো আমরা এড়াতে পারবো না। হাজারো সমস্যা এসে দাঁড়াবে আমার মাঝে। সম্পর্ক দিন দিন নষ্ট হতে থাকবে। ফলাফল হয় তোমার সাথে ডিভোর্স হবে আর নয়তো অসুস্থ একটা সম্পর্ক আমরা বয়ে যাবো মরণের আগ পর্যন্ত।

    –এসব কখনোই হবে না। আমি কখনোই মানুষের কথায় কান দেইনি। নিজের মত চলেছি। আপনার বয়স বেশি এটা আমি জানি। জেনেশুনে বিয়ে করবো সেখানে পরবর্তীতে আপত্তি কেনো করবো?

    — ঝামেলা হবে নিশাত। আমি সব বুঝেই বলছি।

    — আপনি কি আমাকে আমার চেয়ে বেশি চিনেন? অবশ্যই না। এই ধরনের চিন্তা কখনো আমার মাথায় আসবে না। আর কারো কথায় প্রভাবিত হওয়ার মত মানুষ আমি না।

    — সমস্যা তোমার না হলেও আমার হবে। আমি এত ছোট একটা মেয়েকে বউ সাজিয়ে আমার পাশে নিয়ে হাঁটতে পারবো না। আমার বুড়ো বয়সে সদ্য যৌবনে

    পা দেয়া একটা মেয়েকে বউ সাজিয়ে আমি ঘুরতে পারবো না। তুমি লজ্জা না পেলেও আমি পাবো। আমার দ্বারা এমন অযৌক্তিক কাজ করা মোটেই সম্ভব না। সরি নিশাত। হয়তো তোমার কষ্ট হবে। কিন্তু এই কষ্ট আমি তোমার ভালোর জন্যই তোমাকে দিবো। তুমি এখন হয়তো বুঝতে পারছো না। কিন্তু ভবিষ্যতে তুমি ঠিক বুঝতে পারবে।

    কথাগুলো একটানা বলে রেলিং থেকে নেমে চলে আসতে নিচ্ছিলো নাহিদ। পথ আটকে নাহিদের হাত ধরলো নিশাত। দু’চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে তার। মুখ ফুটে কিছু বলছে না সে। নাহিদের দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে।

    — বাচ্চামি করছো নিশাত। একটু সময় নাও দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। তখন মনে হবে নাহিদের সিদ্ধান্তই ঠিক ছিলো। ভাগ্যিস সে বিয়েতে রাজি হয়নি!

    নিশাতের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো নাহিদ। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে সে। নিশাত অপলক নাহিদের চলে যাওয়া দেখছে।

    ৩১

    নাহিদ চলে গিয়েছে। নিঝুমকে বিদায় দিয়েই নাহিদ বাড়ি ফিরে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলো কানাডার উদ্দেশ্যে। যাওয়ার সময় আমজাদ সাহেবের হাত ধরে বলে গেলো,

    –আংকেল, আম্মার সাথে আপনাদের যেসব কথাই হয়েছে সেগুলো মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিন। আসলে আম্মা না বুঝেই কাজটা করে ফেলেছে। আমাকেও জিজ্ঞেস করে নি। জিজ্ঞেস করলে আমি কখনোই এই প্রস্তাব রাখতে দিতাম না। এই বিয়েতে আমার সম্মতি নেই। মনে কোনো কষ্ট রাখবেন না প্লিজ। আমি চাই না আমার কারণে দুই পরিবারের সম্পর্কে কোনো তিক্ততা আসুক। যা কিছু হয়েছে সেসবের জন্য আমি সরি।

    নাহিদের প্রত্যুত্তরে কিছুই বলতে পারেনি আমজাদ সাহেব কিংবা ডলি। যেখানে পাত্র নিজেই এই বিয়েতে রাজি না সেখানে জোর করে কি আর বিয়ে দেয়া সম্ভব? কখনোই না। মেয়েকে এক কোণায় দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে দেখেছেন আমজাদ সাহেব। তার মেয়ে কতটা অসহায় ভঙ্গিতে নাহিদের দিকে তাকিয়ে ছিলো সেটাও দেখেছেন তিনি। নাহিদ সেই চোখের পানি দেখেনি। হয়তো সে দেখতেই চায়নি! মেয়েকে এতটা অসহায় অবস্থায় সহ্য করতে পারছিলেন না আমজাদ সাহেব। কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে সেদিনই মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছেন। ডলিকে রেখে এসেছেন বড় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। ভুলে গেলে চলবে না ঐ বাড়িতে তার আরেক মেয়ে আছে। হুট করে এভাবে স্বপরিবারে চলে আসলে হয়তো ঐ বাড়ির আত্মীয়দের মাঝে কানাঘুষা চলতো। আবার হয়তো এমনও হতে পারতো ঈষিতার স্বামী কিংবা শাশুড়ী ধরে নিতো তাদের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ থেকেই তারা এভাবে বিয়ে বাড়ি ফেলে চলে এসেছে। অকারনে হয়তো ভুল বুঝাবুঝি হতো। ক্ষোভ নেই ঠিক তা না। ক্ষোভ আছে। তবে সেটা একান্তই নাহিদের উপর। বাসার বাদবাকি সদস্য তো আর কোনো অন্যায় করেনি। তাদের প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই আমজাদ সাহেবের। ঐ বাড়ির প্রতিটা মানুষ খুবই সুন্দর মনের। নাহিদও ভালো। তবে এই ছেলেটা তার মেয়েকে এভাবে দূরে সরিয়ে খুবই খারাপ কাজ করেছে। তার মেয়েটা এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলো। কি প্রয়োজন ছিলো ওকে স্বাভাবিক করে আবারও ঐ একই কষ্ট দেয়ার? হতে পারে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। নাহিদের বন্ধুত্বের হাতকে সবাই ভালোবাসা ভেবে নিয়েছে। কিন্তু তার মেয়ে তো খারাপ না। এক দেখাতেই পছন্দ হওয়ার মত মেয়ে। মনে কোনো কুটিলতা নেই। আর তার মেয়ের সবচেয়ে বড় গুন সে ঝগড়া করতে পারে না। একজন পুরুষের জন্য স্বামী হিসেবে এরচেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কি হতে পারে! যেখানে ঘরে ঘরে বউরা ঝাটা হাতে দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে তার মেয়ে ঝগড়াই করতে জানে না। কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে আসলেও সঠিক উত্তর দিতে জানে না। আজ পর্যন্ত নিশাত যতবারই ঝগড়া করছে প্রতিবারই সে হেরেছে এবং বাজেভাবে হেরেছে। স্ত্রীর বিপক্ষে ঝগড়ায় জয়ী হওয়ার সুখ নাহিদ জানে না। ছেলেটা বোকা। চরম বোকা। ওকে বিয়ে করলে ঝগড়ায় জয়ী সবসময় নাহিদই হতে পারতো। তার মেয়ে ইমম্যাচিউরড বলে এতটা হেলায় ফেলায় এই প্রস্তাব সে প্রত্যাখ্যান করলো। একদিন এই মেয়ের জন্যই ওকে আফসোস করতে হবে এমনটাই দৃঢ় বিশ্বাস আমজাদ সাহেবের।

    .

    গাড়িতে বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে নিশাত। ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। কাঁপা কন্ঠে সে বাবাকে বললো,

    — আব্বু, আমাকে ছেড়ে সবাই চলে যায় কেনো? আবীর চলে গেলো, নাহিদ ভাইও চলে গেলো। ওরা দুজনই একটা কথা বলে গেলো আমি ইমম্যাচিউরড। আমার সাথে বাস করা অসম্ভব। কি করেছি আমি? আমাকে ইমম্যাচিউরড কেনো বলে? মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন আমজাদ সাহেব। মুচকি হেসে বললেন,

    — ভালো কিছুর মূল্য আমরা তখনই বুঝি যখন আমরা খারাপটাকে পাশে দেখতে পাই। আমরা যখন শুধু ভালো কিছু হাতের মুঠোয় পেয়ে যাই তখন আমরা তার মূল্যায়ন করতে জানি না। ভেবে নেই এরচেয়ে ভালো কিছু আমি পাবো। কিন্তু যখন খারাপের মুখোমুখি আমরা হই তখন আমরা সেই ভালোর মূল্যায়ন করতে শিখে যাই। তখন মনে হয় এটাই আমাদের জন্য সেরা। আমরা যা পেয়েছি এরচেয়ে ভালো কিছু আমাদের জন্য আর হতেই পারে না। নাহিদ আর আবীর দুইটাই গাধা। তোর মূল্যায়ন ওরা করতে পারেনি। কাঁদিস না। দুই গাধাই যাচাই বাছাই সেরে আবার তোর কাছে ফিরে আসবে তুই দেখিস।

    .

    কিছুক্ষণ আগেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গিয়েছিলো শালুক। শালুকের মাথায় পানি ঢালছেন ডলি। বিড়বিড় করে ডলির কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন তিনি।

    — আপা, আমাকে ক্ষমা করেন। নাহিদ চলে গেছে আপা। ওরে আমি আটকাইতে পারলাম না।

    — অহেতুক চিন্তা বাদ দিন তো। ও চলে গেছে তো কি হয়েছে? আমি ওসব কিছু মাথায় রাখিনি। এটা একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে মাত্র। আপনি এসব নিয়ে ভাবনা বাদ দিন। অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন তো।

    ৩২

    সাতমাস পর কোনো এক বিকেলের গল্প। বেশ ঠান্ডা পড়েছে আজকাল। সারাটা দুপুর বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে একটু আগেই বিছানায় ছেড়ে উঠলো নিশাত। অলস ভঙ্গিতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে সে। আজকাল বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায় নিশাতকে। নাহিদ চলে যাওয়ার পর প্রায় তিনমাস না খেয়ে, না ঘুমিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে কাটিয়েছে। দিনরাত মানুষটাকে কল আর টেক্সট করে গিয়েছে। বারবার একটু কথা বলার জন্য মিনতি করেছে। ওপাশ থেকে একবারের জন্যও কথা বলেনি মানুষটা। একটা টেক্সটের রিপ্লাই পর্যন্ত করেনি। দিনরাত মানুষটার ফেইসবুক টাইমলাইন স্কুল করেই সময় পার করেছে। তারপর একদিন দেখতে পেলো সিমিনের সাথে নাহিদের হাসিখুশি একটা ছবি। আগে যে ওদের দুজনের হাসিখুশি ছবি দেখেনি ঠিক তা না। এর আগেও দেখেছে। তবে সেদিনের ছবিটা ছিলো ভিন্ন। একগাদা বন্ধু বান্ধবের মাঝে দাঁড়িয়ে সিমিনকে আংটি পরিয়ে দিচ্ছে সে। সাথে সাথেই ফোন করেছিলো ঈষিতাকে। ওপাশ থেকে ঈষিতা জানিয়েছিলো নাহিদ ঐ দেশে কাছের কিছু লোকজন নিয়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে সিমিনকে আংটি পড়িয়েছে। আর মাস ছয়েক পর ঐ দেশেই অনুষ্ঠান করে বিয়ে করবে। ঈষিতার উত্তরে আশপাশ থমকে গিয়েছিলো সেদিন। কান্নাটা সেদিনই থেমে গেছে। কষ্টগুলো পুরো বুকজুড়ে কয়েকদিন জেঁকে বসেছিলো। ঠিক সেদিন থেকে কষ্টগুলো একটু একটু করে বুকের একপাশে জমা হতে শুরু করলো। এখন আর কষ্টগুলো বুক জুড়ে নেই। একপাশে গুটিসুটি হয়ে আছে যেটা চাইলেই নিশাত আড়াল করতে পারে। কষ্টগুলোকে একান্তে বসে যত্ন করে পুষে রাখতে পারে। কষ্টের বোঝা যখন একটু বেড়ে যায় তখন ওয়াশরুমের দরজা আটকে কিংবা বালিশে মুখ গুঁজে নীরবে চোখের পানি ফেলতে পারে। আগের মত কারো সামনে নিজের কষ্টগুলো প্রকাশ করতে ভালো লাগে না নিশাতের। সেই সাথে নাহিদকে ঘিরে অনুভূতিগুলোও। মানুষটাকে মনের গহীনে পুষে রাখতেই ভালোবাসে সে। সেইসাথে তাকে ঘিরে কষ্টগুলোও। মনটা তার একান্ত নিজের, নাহিদও তার একান্ত নিজের। থাকুক না মানুষটা মনের গহীনে। একান্ত মনের গহীনে থাকা মানুষগুলোকে নিজের মতো করে ভালোবাসা যায়। মনে মনে সুখের স্মৃতি আঁকা যায়। মনে মনে কষ্ট পাওয়া যায়। রাতভর চোখবুজে কল্পনা করা যায়। হাজারো মানুষের ভীড়ে বসে থেকেও নিশ্চুপ থেকে কথা বলা যায়। কেউ দেখেনা সেই ভালোবাসার মানুষটাকে, কেউ দেখেনা সেই ভালোবাসাটাকে। ভালোবাসার মানুষটা একান্ত নিজেরই থাকে। সবার চোখের আড়ালে। সবার চোখের আড়াল করে কাউকে ভালোবাসাতেও সুখ। শারীরিক উপস্থিতিই কি সব? না তো। ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার। সে তো মনের ভিতরই বাস করে। কাউকে উজাড় করে ভালোবাসার জন্য এতটুক উপস্থিতি কি যথেষ্ট না? সুখে থাকার জন্য এই কি বেশি না? তাছাড়া আমি যাকে ভালোবাসি সেও আমাকে ভালোবাসবে এমন তো কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। থাকুক না ভালোবাসার মানুষটা তার মত করে। যে যেভাবে সুখে থাকতে চায় তাকে সেভাবেই থাকতে দেয়া উচিত।

    আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গভীর মনোযোগে দেখছে নিশাত। নিজেকে আজকাল মহাপন্ডিত মনে হয় তার। আর নয়তো সুখ আর কষ্ট নিয়ে এমন গভীর বিশ্লেষন কেউ করতে পারে নাকি? সেইসাথে বেশ উদারও হয়েছে সে। আর নয়তো ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো হতে দেখে এতটা স্বাভাবিক নিশ্চয়ই থাকতে পারতো না। নিজের ভাবনায় নিজেই মুখ টিপে হাসছে সে। চুলগুলো পাঞ্চক্লিপে আটকে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রান্নাঘরের দিকে গেলো নিশাত। ঠান্ডার দিনে একটু ভাজাপোড়া না খেলে হয় নাকি? আগে অবশ্য ঠান্ডার দিনে ভাজাপোড়া খাওয়ার কোনো অভ্যাস ছিলো না। অভ্যাসটা হয়েছে নাহিদের কথা শুনে। সেই যে একদিন বলেছিলো ভাজাভুজি ছাড়া শীতের দিন জমে না সেই থেকেই একটু পেঁয়াজু কিংবা পাকোড়া না হলে নিশাতের বড্ড অশান্তি হয়। ফ্রিজ থেকে কাঁচামরিচ নিলো সে। রান্নাঘরে থাকা আলু পেঁয়াজের ঝুড়ি থেকে আলু আর পেঁয়াজ নিলো। এক কোণায় থাকা বঠিটা নিয়ে পিড়ি পেতে বসে পড়লো সেগুলো কাঁটতে।

    কলিংবেল বাজছে। পিড়ি ছেড়ে নিশাত উঠে দাঁড়াতেই মাকে দেখা গেলো দ্রুত পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিশাতকে ইশারা করলেন তার উঠতে হবে না। মায়ের ইশারা দেখে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো সে। দরজার ওপাশ থেকে খুব ক্ষীন হয়ে একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। কন্ঠটা তার বহু পরিচিত। তাইতো শব্দ এত ক্ষীন হওয়া সত্ত্বেও চিনতে অসুবিধা হয়নি নিশাতের। কাজ রেখে কোনোমতে হাতটা ধুয়েই দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো সদর দরজার দিকে। জুতা খুলে বাসার ভিতরে ঢুকছে আবীর। পিছনেই মিষ্টির প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে তার দুলাভাই। অবাক ভঙ্গিতে নিশ্চুপ হয়ে আবীরের দিকে তাকিয়ে আছে নিশাত। কেনো এসেছে সে এই বাসায়? তার বিয়ের দাওয়াত দিতে? মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না। মনে তো হচ্ছে তার উপর দিয়ে কোনো ঝড় তুফান গিয়েছে। বিয়ের টেনশনও হতে পারে। মনে মনে একনাগারে আবীর এখানে আসার কারন খুঁজে বেড়াচ্ছে নিশাত। আবীর দাঁড়িয়ে আছে নিশাতের মুখোমুখি। জিজ্ঞেস করলো,

    –কেমন আছো?

    — হুঁ।

    — অবাক হচ্ছো আমাকে দেখে?

    –অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। হঠাৎ তুমি আমার বাসায় এলে?

    –হুম জরুরী কিছু কথা ছিলো।

    –এসো, ভিতরে এসো। বসে কথা বলো।

    আবীর আর তার দুলাভাই গিয়ে বসলো ড্রইংরুমে। ডলি তার মেয়ের হাত চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

    –আবার আসবে এটা কি তুই আগে জানতি?

    –না।

    — এতদিন পরে কেনো এলো?

    — আমি কি জানি! চলো, ভিতরে যাই।

    আবীরের মুখোমুখি বসলেন ডলি আর নিশাত। ঠোঁটে মিথ্যা হাসির রেখা টেনে ডলি জিজ্ঞেস করলেন,

    –তো বাবা, তোমার আব্বা আম্মা ভালো আছে?

    — জ্বি ভালো।

    –তোমার বোনটা তো প্রেগন্যান্ট ছিলো। ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে? মেয়ে হয়েছে আন্টি।

    –সুস্থ আছে তো?

    –জ্বি।

    — আচ্ছা, যাক ভালোই। সবাই ভালো আছে জেনে ভালো লাগলো।

    — আংকেলকে দেখছি না যে!

    তোমার আংকেল তো দোকানে। কর্মচারী একটা ছুটিতে গিয়েছে। ঐখানে সময় দেয়া লাগে।

    –ওহ আচ্ছা।

    নিশাত তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আবীরকে দেখছে। কেনো এসেছে ও? কারণ একদম খুঁজে পাচ্ছে না সে। কয়েক সেকেন্ড উভয়পক্ষ নীরব থাকার পর মুখ খুললো আবীরের দুলাভাই। বললো,

    — আন্টি, কথা তো আসলে আপনার আর আংকেল দুজনের সাথেই বলা দরকার। উনাকে কি একটু বাসায় আসতে বলবেন?

    — কি কথা?

    –আংকেল আসলে বলি?

    –তোমার আংকেল আর আমি একই। তুমি আমাকেই বলো।

    –আসলে আন্টি আবীরের সাথে নিশাতের যা কিছুই দ্বন্দ্ব হয়েছে আমরা চাচ্ছিলাম দ্বন্দ্বটা মিটিয়ে ফেলতে।

    –নিশাত সেসব ভুলে গেছে অনেক আগেই। আমরাও আর মনে ধরে রাখিনি সেসব। আমাদের তরফ থেকে কিছুই নেই। এখানে নতুন করে দ্বন্দ্ব মিটানোর কিছু নেই।

    — আপনি বোধহয় আমার কথা বুঝতে পারছেন না।

    –কি বুঝাতে চাচ্ছো?

    –আমরা চাচ্ছিলাম ওদের সম্পর্কটা আবার ঠিকঠাক করে নিতে। মানে আন্টি আমি এসেছি বিয়ের কথা বলতে।

    — ওদের দুজনের?

    — জ্বি।

    নিশাত আর ডলি একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। এমন কোনো কথা শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না তারা। মেয়ের উত্তর কি হবে তা অজানা নেই ডলির। তাছাড়া যেই ছেলে একবার তার মেয়েকে ফেলে অন্য কারো হাত ধরতে পেরেছে সেই ছেলে আবারও কোথাও যাবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে নাকি? বেশ কঠিন স্বরে নিশাতের মা বললেন,

    — আমি যতদূর জানি আবীর তো অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলো। তো ঐ মেয়ে ছেড়ে আবার আমার মেয়ের কাছে কেনো?

    — ঐটা আসলে আন্টি ও একটা মিসটেক করে ফেলেছিলো।

    –আন্টি আমার কি হয়েছিলো আমি জানি না। অন্যায় হয়ে গিয়েছে আমার। আমি তো আপনারই ছেলে। ছেলেকে মাফ করবেন না আন্টি?

    — দেখো আবীর নিশাতের বিয়ে আমরা অন্য জায়গায় ঠিক করে ফেলেছি।

    .

    মায়ের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে নিশাত। এতবড় মিথ্যা কথাটা তার মা বলে ফেললো! নিশাতের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবীর। আবীরের দুলাভাই ডলিকে জিজ্ঞেস করলো,

    — কবে ঠিক হলো আন্টি?

    –হয়েছে মাস দুয়েক আগে।

    –বিয়ে কবে?

    –এইতো ছেলে দেশে আসলেই বিয়ে হবে।

    — বিদেশ থাকে উনি?

    — হ্যাঁ। ওখানেই সেটেলড। নিশাতকেও নিয়ে যাবে বিয়ের পর

    — ওহ্।

    মাথা নিচু করে নিশ্চুপ বসে আছে আবীরের দুলাভাই। এই কথার প্রত্যুত্তরে কি বলা যায় তা জানা নেই তার। নিজের সোফা ছেড়ে টি টেবিলটা টেনে নিশাতের কাছাকাছি এনে সেটার উপর এসে বসলো আবীর। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

    –তুমি সত্যিই বিয়ে করছো?

    — হুম।

    — বিশ্বাস হচ্ছে না।

    –এখানে বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে আবীর?

    — তুমি কি আমার সাথে রাগ করে অন্য কোথাও বিয়ে করছো? নাকি সম্পূৰ্ণ নিজের সম্মতি আছে?

    — কারো উপর আমার রাগ নেই। তাছাড়া অন্য কারো উপর রাগ করে কেনো আমি বিয়ে করতে যাবো? বিয়ে কি রাগারাগি করে করার বিষয়?

    — আমার উপর সত্যিই তোমার কোনো রাগ নেই?

    — নাহ্। রাগ করতে যাবো কেনো? দিনশেষে তুমিও একটা মানুষ। তোমার নিজস্ব কিছু শখ আহ্লাদ থাকতেই পারে। সেই শখগুলো পূরন করার যোগ্যতা আমার ছিলো না তাই তুমি আমাকে ছেড়ে দিয়েছো। আমি যদি তোমার শখ আহ্লাদগুলো পূরন নাই ই করতে পারি তাহলে আমাকে কেনো তুমি বিয়ে করবে? এটা খুবই বাস্তব যুক্তি আবীর। এখানে আমার রাগ করার কিছুই নেই।

    — তোমার মাঝে সব আছে। আমার জন্য তোমার চেয়ে যোগ্য আর কেউ হতেই পারে না। তোমাকে দূরে সরিয়ে বুঝতে পেরেছি তুমি আমার জন্য কি ছিলে।

    –…………..

    — তোমার যেখানে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেখানে না করে দাও। তুমি আমাকে বিয়ে করো।

    — মানে কি?

    –মানে এটাই তুমি আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।

    –কেনো করতে পারবো না?

    –কেনোর কোনো উত্তর নেই।

    –দেখো আবীর, তোমার মত আমারও নিজস্ব কিছু শখ আহ্লাদ আছে যেগুলো আমার হবু বরই পূরন করতে পারবে। সেই যোগ্যতা তোমার নেই। তুমি চলে যাওয়ার পর আমিও বুঝতে পেরেছি আসলে আমি কি চাই। আমি আমার মনমত মানুষ খুঁজে পেয়েছি আবীর। আমি ওকে ছেড়ে অন্য কোথাও বিয়ে করবো না।

    –আমার যোগ্যতা নেই? কি লাগবে তোমার বলো। কি শখ পূরন করতে হবে বলো। তোমার সব শখ পূরন করবো আমি।

    — পারবে না আবীর। আমি তোমাকে চিনি। তোমার সবটুকুই আমার চেনা।

    — কি করতে হবে একবার বলেই দেখো।

    — কিছুই করতে হবে না। আপাতত চা নাস্তা খেয়ে চলে যাও এতেই চলবে।

    –আন্টি? কার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছেন? কি করেছে ছেলে ওর জন্য?

    — ও তো আমার মেয়ের জন্য কতকিছুই করেছে। সবচেয়ে বড় কথা তুমি আমার মেয়েকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই ছেলেই আমার মেয়েকে সামলে নিয়েছে। এমন একটা গোছানো ছেলেই আমার নিশুর জন্য দরকার ছিলো। আমরা পেয়েছি। তাই আর দেরী করিনি। বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি দুজনের।

    –আর আমি?

    — দেখো, আমরা কেউ ঐ বিয়ে ভাঙবো না। আর ভাঙবো কেনো? ওদের সাথে আমাদের সবদিকে মিলে যায়। তুমি বাবা অন্য কোথাও মেয়ে দেখো।

    — দেখবো না। আমি নিশাতকেই বিয়ে করবো।

    — তুমি কিন্তু এখন পাগলামি করছো। জামাই, তোমার শালা কিন্তু পাগলামি করছে। ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছে আমার ঘরের জিনিসপত্র এখন ভাঙা শুরু করবে। তুমি বাবা ওকে বাসায় নিয়ে যাও।

    চুপচাপ সোফা ছেড়ে উঠে এলো আবীরের দুলাভাই। আবীরের হাত টেনে তুলে বললো,

    — বাসায় চলো আবীর।

    –আপনাকে আব্বা আম্মা পাঠিয়েছে বিয়ের কথা বলার জন্য। আপনি কথা শেষ না করে চলে যাচ্ছেন কেনো?

    — এখানে বলার মত আর কি আছে? নিশাত অন্য কারো সাথে ভালো আছে। তার সাথেই থাকতে চাচ্ছে। ওর আর তোমার রাস্তা এখন আলাদা হয়ে গেছে। এখন তোমার বা আমার কারোরই কিছু বলার নেই। বাসায় চলো।

    — আবীরকে একপ্রকার জোর করেই বাসা থেকে বের করে নিয়ে গেলো তার দুলাভাই। দরজা আটকে এসে নিশাত মুখ টিপে হাসতে হাসতে মা কে বললো,

    –এত সুন্দর নাটক করতে শিখলে কবে আম্মু?

    — এই ধরে নে আজ বিকেল থেকেই।

    ৩৩

    নিম্মির সাথে বসে চা খাচ্ছে ঈষিতা। ভিডিও কলে দুজন মিলে কথা বলছে নিঝুমের সাথে। বিকেলেই ফোন করেছিলো নিশাত। সেই থেকে বিরাট পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে ঈষিতা। তুমুল আনন্দ নিয়ে নিঝুমকে আজ বিকেলে তার বাবার বাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনা বলে যাচ্ছে। ওপাশ থেকে চানাচুর চিবুতে চিবুতে নিঝুম বললো,

    — গাধাটাকে পিটিয়ে দিলো না কেনো?

    — আরেহ্ পিটানোর কি দরকার? ওর মুখের উপর নিশু বলে দিয়েছে নিশুর শখ আহ্লাদ পূরন করার যোগ্যতা এই গাধার নেই এটাই তো ওর জন্য গাল বরাবর থাপ্পড়। হাত দিয়ে মেরে আর কি করবে?

    — তবে আন্টি বুদ্ধিমানের মত কাজ করেছে। বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে এটা বলে ভালোই করেছে। আর নয়তো বিরক্ত করতেই থাকতো।

    — আম্মু নাকি বারবার আবীরের চেহারার বর্ণনা দিয়ে হেসেই যাচ্ছে। বহুদিনের ক্ষোভ………

    ঈষিতা পুরো কথা শেষ করার আগেই কলটা কেটে গেলো। নিঝুমের সিমে কল করেছে নাহিদ। ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট হয়ে ভিডিও কল কেটে গিয়েছে। মুখে থাকা চানাচুর দ্রুত গিলে ফেললো নিঝুম। নাহিদের কল রিসিভ করলো সে।

    –কি ব্যাপার? এত সকালে কল করলে!

    — এমনিই ভালো লাগছে না। ভাবলাম তোর সাথে একটু কথা বলি।

    — ওহ! কন্ঠ শুনে তো মনে হচ্ছে খুব মন খারাপ। কি হয়েছে?

    — নাহ্ তেমন কিছু না। ভালো আছিস তোরা?

    — হ্যাঁ ভালো।

    –বাড়ি যাবি কবে?

    –সামনের সপ্তাহে ফাহাদ ভাই নিতে আসবে।

    –থেকে আসবি তো কয়েকদিন?

    –হুম। সপ্তাহখানেক থেকে আসবো। সিমিন আপু কেমন আছে?

    –তোর শ্বশুড়বাড়িতে সবাই ভালো আছে?

    — সিমিন আপুর সাথে ঝগড়া হয়েছে তোমার?

    চুপ করে রইলো নাহিদ। প্রত্যুত্তরে কিছু বলছে না সে। ওপাশ থেকে ভাইয়ের নিঃশ্বাসের শব্দ শুধু শুনতে পাচ্ছে নিশাত। কিছুটা সময় নীরব থাকার পর নিঝুম বললো,

    — কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে আমাকে বলতে পারো।

    — সিমিন সম্পর্কটা আর আগাতে চাচ্ছে না।

    –কেনো?

    –কিভাবে বুঝিয়ে বলবো আমি বুঝে পাচ্ছি না।

    –যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই বলো।

    — ওর সাথে আমার যাচ্ছে না। ওর সাথে রিলেশনশিপে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মনে হতো ও আমার জন্য পারফেক্ট। ওর মাঝে ম্যাচিউরিটি আছে। হুটহাট ডিসিশন কিংবা পাগলামি করার মত মানুষ না। খুব ভেবেচিন্তে এরপর সিদ্ধান্ত নেয়। কথাবার্তাও খুব বুঝেশুনে বলে। হাজবেন্ডকে আঁচলে বেধে রাখা কিংবা তার সব বিষয়ে নাক গলানো এসব চিন্তাভাবনা ওর নেই। ওর এই ব্যাপারগুলো আমার খুব পছন্দ ছিলো। বলতে পারিস এসব ভেবেই ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি। কিন্তু আজকাল ওর সাথে আমার ঝগড়া হয়। ওর এই ব্যাপারগুলোই আমার পছন্দ হচ্ছে না।

    –যেমন?

    –মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় ওকে নিয়ে খুব পাগলামি করতে। ওর এসব পছন্দ না। বিরক্ত হয়। আমার ইচ্ছে হয় আমার সাথে কেউ ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলুক। ও বলতে চায় না। ওর কাছে এগুলো বাচ্চামি। আমার ইচ্ছে হয় বারবার কেউ আমার খোঁজ নিক। কি করছি, কি খাচ্ছি এসব আরকি। ছোটখাটো যত্নগুলো যেমন হয়। ওর কাছে এগুলো অহেতুক আহ্লাদ মনে হয়। এমনকি আমি যদি ফোন করে এসব জানতে চাই ও বিরক্ত হয়। কখন কোথায় যাচ্ছে, কখন বাড়ি ফিরবে এসব জানতে চাওয়া ওর কাছে খবরদারী মনে হয়। স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মনে হয়। সামনের সপ্তাহে ও ইন্ডিয়ায় ট্যুরে যাবে ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে। আমি চাচ্ছিলাম ও আর আমি যাবো। এটা নিয়ে ওকে একটু জোর করেছি। এটাকে নিয়ে তুমুল বাকবিতন্ডা শুরু করলো। দুদিন কারো সাথে কেউ কথা বলিনি। গত পরশু রাতে আমাকে কল করে বললো আমার সাথে আর রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব না। আমি মুখে ওর মত মেয়ে চাই বললেও আসলে আমি চাই অন্য কাউকে। যাকে চাই তাকেই বিয়ে করা উচিত। এইসব হ্যানত্যান বলে কথা শেষ করলো। গতকাল সকালে এসে আংটি ফিরিয়ে গেলো। সেইসাথে বলে গেলো সম্পর্কটা ওর কাছে বোঝা মনে হচ্ছে। তাই মুক্ত হতে চায়।

    –তোমারও কি এমনই মনে হয়?

    –কিসের কথা বলছিস?

    — তুমি কি সত্যিই মনে মনে অন্য কাউকে চাও?

    –সত্যি বলতে সিমিনকে নিয়ে আমি স্যাটিসফাইড হতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো কি যেনো নেই। কি যেনো পাচ্ছি না। কিছু একটা অভাব। খুব বেশি অভাব। ও কথাগুলো বলার পর বুঝেছি কেনো আমার এমন মনে হচ্ছিলো। গত দু’দিন যাবৎ এসবই ভেবে যাচ্ছি। সত্যিই আমি ওর মতন কাউকে চাই না। চাই অন্য কাউকে। যত ভাবছি ততই একজনের মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ওকে আমি নিজের অজান্তে এতগুলো দিন সিমিনের মাঝে খুঁজেছি। দেখ নিঝু আমি জানি এখন যা বলবো পুরোটাই অন্যায় আবদার। কিন্তু আমি আর নিজের সাথে পারছি না। এখন না বললে হয়তো অনেক বেশী দেরী হয়ে যাবে। হয়তো ওকে চিরতরে হারিয়ে ফেলবো। আমার হয়ে তোকে কাজটা করতেই হবে।

    — কি কাজ? কার কথা বলছো?

    — নিশাত।

    চুপ করে রইলো নিঝুম। কিঞ্চিৎ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে আসছে তার। নাহিদ কি আবদার ধরতে পারে সেটা অগ্রীম আন্দাজ করতে পারছে সে। ওপাশ থেকে নাহিদ আবার বলতে লাগলো,

    — কথা বলিস না কেনো?

    — এখানে কি বলার আছে ভাইয়া?

    –আমি জানি এই বিষয়টা নিয়ে সবাই আমার উপর বাজেভাবে রেগে আছে।

    তবুও হাসিমুখে সবাই আমার সাথে কথা বলে যাচ্ছে। নিশাতকে আমি পছন্দ করি সেটা আমি তখন বুঝতেই পারিনি। বয়সের পার্থক্যের বিষয়টা এমনভাবে মাথায় জেঁকে বসেছিলো যে অন্যকিছু আমি বুঝতেই পারিনি। ও আমাকে পাগলের মত ফোন করতো টেক্সট করতো। আমি একটারও রিপ্লাই দেইনি। এখন মনে হচ্ছে ভুল করে ফেলেছি। বড় রকমের ভুল। আমার একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবা উচিত ছিলো। যেটাকে আমি বারবার বন্ধুত্বের নাম দিচ্ছিলাম সেটা বন্ধুত্ব ছিলো না। আমি ওকে ভালোবাসতাম। সেই শুরুর দিন থেকে ওর প্রতি যেমন টান লাগতো আমার আর কোনো বান্ধবীর প্রতি তো কখনোই এমন টান অনুভব করিনি। ওকে নিয়ে রাত বিরাতে ঘুরে বেড়িয়েছি। ওর হাত ধরে হেঁটেছি। ওর মন খারাপ দেখলে নিজে কষ্ট পেয়েছি। অন্য কারো সাথে এমন সম্পর্ক আমার ছিলো না। সবকিছু আমার চোখের সামনে ছিলো। তবুও আমি বুঝতে পারিনি। নিশাতকে অকারনে অবহেলা করেছি আমি। অকারনে কষ্ট দিয়েছি। আমি জানি ও খুব কেঁদেছে। অনেক অপেক্ষা করেছে আমার সাথে একটু কথা বলার জন্য। আমি সব ঠিক করতে চাই নিঝু। যা হয়েছে সেজন্য আমি সত্যিই অনুতপ্ত। আম্মাকেও আমি কড়া কথা শুনিয়েছি। সেই থেকে আম্মাও আমার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছেন। আমার ওদের দুজনের কাছে মাফ চাওয়া উচিত।

    — কি ঠিক করতে চাও তুমি? নিশাতকে বিয়ে করতে চাও?

    –হ্যাঁ। আমি দেশে আসবো। কিছু কাজ আছে। ভাবছি সেগুলো শেষ করে কাল পরশু টিকিট কনফার্ম করবো। আম্মার সামনে বসে আমি মাফ চাইবো। এতটা রুড বিহেভ আমি আম্মার সাথে না করলেও পারতাম। আম্মাকে নিয়ে ওদের বাসায় যাবো কথা বলতে।

    — বিয়ের কথা?

    –হুম।

    –সবকিছু খুব সহজ তাই না ভাইয়া? তুমি আসবে। আম্মার কাছে মাফ চাইবে। আম্মা সব ভুলে তোমার বিয়ে ঠিক করতে যাবে। আবার নিশাত রাজিও হবে বিয়ে করতে তাই না?

    — আমি তো ভুল স্বীকার করছি।

    –সবকিছু এতটাও সহজ না ভাইয়া। সেইবার আম্মা নিজ থেকে প্রস্তাব দিয়েছিলো। তোমার কারণে বিয়েটা ভাঙতে হয়েছে। এখানে কি আম্মা ছোট হয়নি? হ্যাঁ নিশাতের মা বাবা এ ব্যাপারে কিছু বলেনি আম্মাকে। তবুও তো! আম্মা নিজের কাছেই নিজে ছোট হয়ে গিয়েছে। কতদিন আম্মা অসুস্থ ছিলো তা তুমি জানো? সেখানে তুমি কিভাবে আশা করো আম্মা আবার তোমার প্রস্তাব নিয়ে ঐ বাড়ি যাবে? আর সব কথার শেষ কথা নিশাতের বিয়ে হয়ে গেছে মাসখানেক আগে। ওর সাথে আর কখনোই কিছু হওয়া সম্ভব না।

    চমকে উঠলো নাহিদ। শেষের কথাগুলো শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে। জড়ো কন্ঠস্বরে নিঝুমকে জিজ্ঞেস করলো,

    — বিয়ে হয়ে গেছে মানে?

    — বিয়ে হয়েছে মানে বিয়ে হয়েছে। তুমি সিমিনকে আংটি পরিয়ে ফেলেছো, ওকেই বিয়ে করবে। তো নিশাত বসে থাকবে কার আশায়? ও খুব বেশি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলো। চোখের সামনে তো আর মেয়ের এই হাল বাবা মা সহ্য করবে না তাই না? ভালো ছেলে পেয়েছে তাই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।

    –আমাকে কেউ জানায়নি কেনো?

    –তোমাকে জানালে কি হতো? চলে আসতে সব ফেলে ওকে বিয়ে করতে? নিশাত ভেঙে টুকরো হয়ে গিয়েছিলো। তুমি এসে ওকে জোড়া লাগিয়ে আবার ভেঙে দিলে। সেই তোমাকে কেনো আমরা জানাবো নিশাতের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?

    লাইন কেটে দিলো নাহিদ। কথা বলার নূন্যতম ইচ্ছা কিংবা শক্তি কোনোটাই তার নেই। নিজেকে একজন হেরে যাওয়া অপদার্থ মানুষ মনে হচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সেইমুখ আবারও স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠছে। মানুষটার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো একে একে স্মৃতির দরজায় কড়া নেড়ে যাচ্ছে। চোখ জ্বালা করছে নাহিদের।

    হালকা গরম পাকোড়া মুখ বন্ধ করে চিবুচ্ছেন আমজাদ সাহেব। ঠোঁটের ভাঁজে দুষ্ট হাসির রেখা ফুটে উঠেছে তার। ডলি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,

    –বুঝলে নিশুর বাপ, কি যে শান্তি লাগছে আমার! আমার তো মন চাচ্ছিলো আবীরের একটা ছবি তুলে রাখি তোমাকে দেখানোর জন্য।

    — কিরে নিশু, বলেছিলাম না তোকে ফিরে আসবে। একজন ফিরে এসেছে। দেখলি তো? অপেক্ষা কর, অপেক্ষা কর। কানাডিয়ান গরুটাও ফিরে আসবে।

    –আমি চাই না উনি ফিরে আসুক। উনি উনার মত থাকুক। আমি এভাবেই ভালো আছি।

    ৩৪

    আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখির ডানা ভেঙে গেলে যতটা অসহায় দেখায় আমার নিজেকেও তখন ঠিক ততটাই অসহায় মনে হতো। আমার জীবনটা থমকে গিয়েছিলো। ভেবেছিলাম আর কখনো হয়তো হাসতে পারবো না। তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। তারপর একদিন সকালে আপনি এলেন। আমাকে আবার হাসতে শিখালেন। বাঁচতে শিখালেন। ডানা ভাঙা পাখি যখন লম্বা একটা সময় বাদে আবারও আকাশে উড়তে শুরু করে তখন সে কতটুক খুশি হয় আপনি জানেন? জানেন না বোধহয়। কিন্তু আমি জানি। আমিও তো ডানা ভাঙা পাখির মতই। আমি ঠিক কতটা খুশি ছিলাম তা আপনি জানেন না। কোন সুখের জোয়ারে ভাসছিলাম তাও আপনি জানেন না। আপনার আকাশে আমি উড়ে বেড়াচ্ছিলাম। মাঝে মাঝেই আকাশে ঝড়ো হাওয়া শুরু হতো। মাতাল হাওয়ার ঝড়। সেই ঝড়ে ডানাগুলো আরো একটু মেলে ধরতাম। মাতাল হাওয়ার নেশায় ডুবে মরতে চাইতাম। তারপর একদিন আপনি আপনার আকাশের দরজা বন্ধ করে দিলেন। যেই মানুষটা আমাকে আবারো উড়তে শিখিয়েছিলো সেই মানুষটাই আমাকে আবারো আহত করে মাটিতে ফেলে দিলো। তবে মজার ব্যাপার কি জানেন? এবার আমি নিজেই উঠে দাঁড়িয়েছি। আপন তালে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি। তবে সেটা অন্য কারো আকাশে না, নিজের মনের আকাশে। এখানে দরজা বন্ধ করার কেউ নেই। আমার উড়ে বেড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করারও কেউ নেই। ভালো আছি আমি নিজেকে নিয়ে। খুব ভালো। অবশ্য ভালো থাকার এই ফর্মূলা আপনার কাছ থেকেই শিখেছি। আপনি আমাকে বারবার বলতেন, নিজের মত করে বাঁচতে শিখো নিশু। আপনার এই কথাটা আমি মনে রেখেছি। এখন আমি নিজের মত করেই বাঁচি। নিজের মত করে আপনাকে ভালোও বাসি। আমার এই ভালোবাসায় কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। কোনো স্বপ্নও নেই। আছে শুধু আপনার রেখে যাওয়া অনেকগুলো স্মৃতি…….. শুনেছি আপনি গতকাল সকালে দেশে ফিরেছেন। আপনার সাথে আবারও আমার আগামীকাল দেখা হবে। পুরো দেড় বছর পর! তবে এবারের গল্প ভিন্ন হবে। নিশাত এবার আপনার পিছন পিছন ভালোবাসি বলে ঘুরে বেড়াবে না। আপনার সাথে একটু সময় কাটানোর জন্য সুযোগও খুঁজবে না। নিশাত শিখে গিয়েছে কিভাবে ভালোবাসা আড়াল করতে হয়। কিভাবে দূর থেকে ভালোবাসতে হয়।

    একটানা কথাগুলো লিখে কালো ডায়েরিটা বন্ধ করে দিলো নিশাত। টেবিলের উপর জ্বলতে থাকা ল্যাম্পটা বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো সে। দু’চোখের কোণ বেয়ে পানি ঝরছে তার।

    পুরো বাড়িতে লাইটিং করা হয়েছে। কাল রাতে এই বাড়ির ছোট মেয়ের গায়ে হলুদ। মেহমানের আগমন শুরু হয়েছে সকাল থেকেই। সকালে নাহিদের দুই ফুফুর পরিবার এসেছে। আর বিকেলে এসেছে মেজো খালার পরিবার। নিঝুম বাপের বাড়ি এসেছে গত সপ্তাহেই। গতকাল সকালে ফিরেছে নাহিদ। আগামীকাল আরো অনেকেই আসবে। আসবে নিশাতের পরিবারও। এত মানুষের ভীড়েও শূণ্যতা ভর করছে তার উপর। শুধুমাত্র একজন মানুষের ঘাটতি অথচ মনে হচ্ছে রাজ্যোর সব শূণ্যতা এই বাড়িতে জেঁকে বসেছে। কাল হয়তো নিশাতও আসবে। আবার নাও আসতে পারে। স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত সে। চাইলেই তো আর হুটহাট ছুটে আসা যায় না। তবে আসলেই বা কি? দুজনের রাস্তা তো ভিন্ন হয়ে গেছে আরো বহু আগেই। আচ্ছা গল্পটা একটু ভিন্ন হলে কি হতো? নিশাত একটু অপেক্ষা করলে কি হতো? কিংবা সে নিজেও তো এই একটা বিষয়কে একপাশে রেখে অন্যভাবেও ভাবতে পারতো! কি হতো একটা ইমম্যাচিউরড মেয়ের সাথে সংসার করলে? সুখের তো অভাব হতো না। হ্যাঁ হয়তো মতের অমিল থাকতো। ঝগড়া হতো। কিন্তু ভালোবাসা আর সুখও তো থাকতো। বেঁচে থাকার জন্য কি অতটুকু যথেষ্ট না? সম্পর্কটাকে একটু ভিন্ন নজরে দেখলে হয়তো দুজনের পথ এক থাকতো।

    — ভাইয়া খেতে আসো।

    ঘরে শুয়ে ছিলো নাহিদ। নিঝুমের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়েছে তার। শোয়া থেকে উঠে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। স্যান্ডেল জোড়া পায়ে লাগিয়ে ডাইনিংরুমের দিকে পা বাড়ালো।

    — নিশাতের সঙ্গে আমার ননাশের ছেলেরে দারুন মানাইবো। আপনে ওর আম্মা আব্বার সাথে একটু কথা কন না।

    মায়ের ঘরের সামনে দিয়ে ডাইনিংরুমে যাওয়ার সময় ছোট ফুফুর কথা শুনতে পেয়েই থমকে দাঁড়ালো নাহিদ। সে একটু যা শুনেছে সেটা নিয়ে ঘোর তৈরী হচ্ছে তার মনে। সে কি সঠিক শুনেছে? নিশ্চিত হওয়ার জন্য মায়ের ঘরে ঢুকলো নাহিদ। ভ্রু কুঁচকে মা আর ফুফুকে জিজ্ঞেস করলো,

    — কার বিয়ের কথা হচ্ছে?

    ছেলের প্রশ্নে মুখ ঘুরিয়ে ফেললেন শালুক। ছোট ফুফু হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললেন,

    — নিশাতের সঙ্গে আমার ননাশের ছেলের।

    –কোন নিশাত?

    –ঈষিতার বইন নিশাত।

    –বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে নাহিদের। মায়ের দিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো,

    — আম্মা! নিশুর ডিভোর্স হয়ে গেছে?

    — ভাবী! নিশাতের আগে বিয়া হইছিলো? আপনে তো আমারে কন নাই।

    বোকা বোকা চেহারা নিয়ে ছেলে আর ননদের দিকে তাকাচ্ছেন শালুক। কাকে কি উত্তর দিবেন খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

    মাকে চুপ থাকতে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিংরুমে গেলো নাহিদ। নিঝুম নিম্মি আর ঈষিতা মাত্রই খেতে বসেছে। ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে নাহিদ জিজ্ঞেস করলো,

    — নিশাতের কি ডিভোর্স হয়ে গেছে?

    খাওয়া বাদ রেখে তিনজনই নাহিদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন অদ্ভুত প্রশ্নের জন্য তৈরী ছিলো না কেউই। নিঝুম কোনোমতে নিজেকে সামলে উত্তর দিলো,

    — ডিভোর্স হতে যাবে কেনো? বহাল তবিয়তে সংসার করছে।

    –তাহলে ছোট ফুফু ওর বিয়ের কথা বলছে কেনো?

    –আমরা কি জানি?

    –দেখ, মিথ্যা কথা বলবি না। আমি শুনে এসেছি। নিশাতের কি হয়েছে বল।

    –ওর কিছুই হয়নি।

    — ঈষিতা?

    –জ্বী ভাইয়া?

    — সত্যি কথা বলো।

    –নিঝুম সত্যিই তো বলছে।

    –কখনোই না।

    — হ্যাঁ।

    — না।

    –ফোন দাও নিশাতকে।

    –কেনো?

    –তুমি স্পিকার অন করে ওর হাজবেন্ডের সাথে কথা বলবে। আমি শুনবো।

    — ওর হাজবেন্ড বাসায় নেই।

    –তাহলে ওর হাজবেন্ডের নম্বরে কল করো।

    –ব্যস্ত আছে। এখন কল করা কি উচিত হবে?

    –রাত দশটায় সে কি কাজ করছে?

    –কত কাজই তো থাকতে পারে।

    –অনর্গল মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছো। কেনো বলছো আমি বুঝে পাচ্ছি না।

    –……………

    — আমি যে এখনই এই খবরটা বের করতে পারি তা কি তোমরা জানো?

    –জেনে কি করবে শুনি? তোমার জেনে লাভটা কি? হয়নি ওর বিয়ে। শুনেছো? মিথ্যা বলেছি আমরা। নিশাতের বিয়ে হয়নি।

    — আমাকে এতদিন সবাই মিলে মিথ্যা কেনো বললি নিঝু?

    –সত্যি বললে কি হতো? বিয়ে করতে ওকে? আমরা চাই না ওর সাথে তোমার বিয়ে হোক।

    — কেনো?

    –কারন নিশাত নিজেই চায় না।

    –ও বলেছে তোকে?

    — হ্যাঁ বলেছে।

    –নিশাত এই কথা বলেনি।

    –কাল তো আসছে ও। বলেছে কি বলেনি নিজেই প্রশ্ন করে জেনে নিও।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম
    Next Article রুদ্র – খাদিজা মিম

    Related Articles

    খাদিজা মিম

    রুদ্র – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    খাদিজা মিম

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Our Picks

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }