Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বাসনা কুসুম – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প272 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪. সবে পুবে আলো ফুটেছে

    সুনীতি ঝিঁঝির ঘরের দরজায় টোকা দিলেন। টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল। সুনীতি দেখলেন, দরজাটা ভেজানোই ছিল। ঝিঁঝি জানলার সামনে বসেছিল, পেছনের পাহাড়তলির দিকে চেয়ে।

    দরজা খুলে যেতেই, ঝিঁঝি জানলা ছেড়ে সরে এল।

    বলল, এত সকালে উঠলে যে, মা!

    বাঃ। তোকে তো বলেইছিলাম কাল। আজ আমিই চা করছি। তুই মুখচোখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিয়ে এক কাপ চা খেয়ে একবার যা, শিরীষের কাছে। লজ্জাও করে। অথচ ও ছাড়া, কার কাছেই বা যেতে বলতে পারি।

    কেন? জগামামা-মামামার কাছেই তো যেতে পারি। ফোনটা যদি ওঁদের বাড়ি থেকে করতে হয় তবে আবার অন্য মুরুব্বি ধরা কেন?

    আসলে শিরীষের কাছে যেতে ওর ভীষণ-ই লজ্জা করছিল। কোন মুখ নিয়ে যাবে? নীলোৎপলের না-আসাটা যে, ঝিঁঝির পক্ষে কতবড়ো অপমানকর ব্যাপার তা সুনীতি বুঝবেন না। বুঝবেন, অন্যরকম করে। ঝিঁঝির মনে এই মুহূর্তে যে, কী হচ্ছে তা উনি মা হয়েও বুঝবেন না।

    তা নয়। শিরীষ কথা বলে খুব সুন্দর। ওর মধ্যে একেবারেই ‘গ্রাম্যতা দোষ নেই। ও যে, মনোয়া-মিলন’-এর মতো একটা জংলি জায়গাতে থাকে, তা ওর কথাবার্তা, ব্যবহারে বোঝাই যায় না।

     

     

    সেটা হয় ওর পড়াশুনো ও গান শোনার জন্যে। ওর আসল বন্ধু হচ্ছে, বই ও ক্যাসেট। তাই হয়তো অমন হয়। কিন্তু শুধু সেইজন্যেই কি, ওকে এই সাতসকালে গিয়ে বিরক্ত করতে হবে? করাটা কি আমাদের পক্ষে সম্মানের হবে, মা?

    অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন

    সুনীতির কণ্ঠস্বর রুক্ষ লাগল। বললেন, বিরক্ত কি তবে শুধু আমাকেই হতে হবে? তোদের যদি এতই মান-সম্মান জ্ঞান, এতই কনসিডারেশান অপরের প্রতি, তাহলে তোরা যা ভালো মনে করিস, কর। আমি আর এ-নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। সম্মানের কি কিছু অবশিষ্ট আছে এখনও?

    ঝিঁঝি এক পলক মায়ের মুখের দিকে চেয়ে কী ভাবল। তারপর বলল, যাচ্ছি। চা খাব না মা। রোজ তো আমি চা খাইও না সকালে।

    একটু পরই চোখমুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে ঝিঁঝি বেরিয়ে পড়ল। সাইকেলটা নিতে পারল না। কারণ, সেটা ঝাণ্ডুর ঘরেই থাকে রাতের বেলা। আর ঝাণ্ডুও কাল তার বস্তির লোকেদের সঙ্গে তার ভাগের ‘ফেরাইড-রাইস আর চিলি-চিকেনওয়া’ নিয়ে চলে গেছে। যদিও বলে গেছে, ভোরে উঠেই চলে আসবে।

     

     

    গেটের চাবিটা বসার ঘরের দেওয়ালে একটি মাউন্ট-করা শম্বরের শিং-এ ঝোলানো থাকে। চাবিটা নিয়ে, গেটটা খুলে চাবিটা নিজের ব্লাউজের মধ্যে ফেলে গেটটা এমনি বন্ধ করে, বেরোল ও। ঘণ্টেমামা তখনও ঘুমোচ্ছিলেন।

    এখন প্রতিদিন-ই গরম বাড়ছে। রোদটা উঠলেই চিটপিট করতে থাকবে শরীর।

    গরম বাড়ছে তার মাথার মধ্যে। মাঝে মাঝেই মনে হয়, স্বনির্ভর না হলে, মেয়ে হয়ে এদেশে জন্মানো আজকের দিনেও বড়ো পাপের। অথচ লেখাপড়া একটু শিখেছে বলেই, শুধু মেয়ে বলেই একজন পুরুষের ওপরে সারাজীবন নির্ভর করতে হবে পুরো ভবিষ্যৎ-জীবন, এই কথাটা ভাবলেও ভীষণ ঘৃণা বোধ করে ও। অথচ কী যে করবে, তাও ভেবে পায় না। মাঝে মাঝে ভাবে, একদিন মাকে কিছু না বলে, রাঁচিতে চলে যায়। কলেজের প্রত্যেক বন্ধুদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে একটা চাকরির চেষ্টা করে। কিন্তু মা! মায়ের কী হবে? সে ছাড়া তো মায়ের কেউ-ই নেই। সাধারণভাবে পাশ করা বি.এ.কে, কে, কী এমন চাকরি দেবে, যাতে মা-মেয়ে দু-জনেই রাঁচিতে থাকতে পারে। জানাশোনা থাকলেও না-হয় হত। আজকাল জানাশোনা, ধরাধরি, সংযোগ, ঘুসঘাস ছাড়া নাকি কিছুই হয় না।

    অথচ ও কিন্তু সত্যিই কোনোদিন-ই চাকরি করতে চায়নি। ছেলেবেলা থেকেই ভেবেছিল যে, সুন্দর দেখতে না-হলেও সুন্দর মনের, উদার, শিক্ষিত, সুরুচিসম্পন্ন, রস-বোধসম্পন্ন স্বামীর সঙ্গে, সে স্বামী-সন্তান-সংসার নিয়েই ব্যতিব্যস্ত থেকে, সামান্য সাধ নিয়েই জীবনটা কাটাবে। কিন্তু সেই চাওয়া পূরিত হওয়া তো চাকরি পাওয়ার চেয়েও অনেক-ই কঠিন। এখন বুঝেছে। ক্রমশই এই জানাটা ওর ভেতরের সব ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে।

     

     

    শিরীষের ‘দাঁড়কাকের বাসাতে’ ও যখন, গিয়ে পৌঁছোল তখন রোদ ওঠেনি। হেঁটে আসতে মিনিট পনেরো লাগল।

    দরজায় কড়া নাড়তেই কালু ‘ভুক ভুক’ করে দৌড়ে এল। এবং তার পেছনে পেছনে, নিশ্চয়ই শিরীষ। আওয়াজে বুঝল।

    দরজা খুলতেই ঝিঁঝি দেখল, চৈতি-সকালের সূর্য-না-ওঠা কোমল নরম আলোর মধ্যে এক-দরজা শিরীষ।

    ওর দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গেল ঝিঁঝি। কখনো খালি গায়ে দেখেনি শিরীষকে। ওর শরীরটা যে, এমন সুগঠিত, ওর গায়ের রংটাও যে, এমন সাহেবদের-ই মতো, তা জামা কাপড় পরা অবস্থাতে একটুও বোঝা যায় না। কিংবা কে জানে, ও হয়তো বুঝতে চায়ওনি কখনো।

    পায়জামা-পরা, খালি-গা, টকটকে-শরীর, বুকভরতি কুচকুচে-কালো চুল, সরু কোমর, চওড়া বুক, যেমন সুগঠিত বাহু তেমন-ই হাতের কবজি, আঙুলগুলিও।

    এই দু-হাতেই শিরীষ সাইকেল-এর হ্যাঁণ্ডেল ধরে কতদিন ঝিঁঝিকে তার সাইকেলের রডে বসিয়ে নিয়ে গেছে কোথায়-না-কোথায়, অথচ ভালো করে নজর করে দেখেনি ঝিঁঝি কিছুই। বেশি কাছে থাকলে বোধ হয় অন্যকে ভালোভাবে দেখা যায় না।

     

     

    তুই! এত সকালে! কী রে! শিরীষ বলল, অবাক হয়ে এবং না-হয়েও।

    তারপর-ই বলল, আয়। আয়। ভিতরে এসে বোস। অতিথি নারায়ণ। পথে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার মা যে, ওপর থেকে আমাকে অভিসম্পাত দেবেন। বোস। বোস।

    বলেই, বেতের চেয়ারটা দেখিয়ে দিল। দু-টিমাত্র বেতের চেয়ার। রং-ওঠা, ভাঙা-চোরা। মধ্যে একটা সেন্টার-টেবল। বেতের-ই। তারও একটা পায়া ভেঙে যাওয়াতে একদিকে ঝুঁকে আছে। পায়ের নীচের দিকে বেতের বাঁধন খুলে গিয়ে কোঁকড়া মতো হয়ে গেছে। তার-ই মধ্যে লম্ফ ঝম্ফ করছে কালু। ল্যাজ নাড়ছে। ফটাফট’ শব্দ উঠছে চেয়ার-টেবলের পায়াতে ল্যাজের বারি লেগে।

    এই কালু, মার খাবি তুই চুপ করে না বসলে। চুপ করে বোস। তুই কি চিনিস-না ঝিঁঝিকে?

    বলেই বলল, এত সকালে নিশ্চয়ই চা খেয়ে আসিসনি। চা খাবি তো? চা-ই করছিলাম। দাঁড়া এক মিনিট। আগে বুড়ি-মাইকে দুধটা দিয়ে আসি। উনুনে বসিয়েছি। কাল সকাল থেকেই বুড়ি মাই-এর জ্বর। রাতে স্টেশন থেকে ফিরে দেখি গা পুড়ে যাচ্ছে। ক্রোসিন দিয়ে দিয়ে রেখেছি। সারারাত ছটফট করেছে মাথার যন্ত্রণায়। পা টিপে দিলাম আমি আর কালু মিলে। মাথাও টিপে দিলাম আমি। এই শেষরাতের দিকেই একটু ঘুমিয়েছে। সারারাত ওর সঙ্গে আমরাও জেগে।

     

     

    কালু পা টিপে দিল মানে?

    ঝিঁঝি বলল অবাক হয়ে।

    কালু ভালো পা টেপে। ওর শরীরের সমস্ত ওজনটুকু চাপিয়ে দেয়, পেছন ফিরে; যেখানে ব্যথা সেখানে। আরাম লাগে খুব। তোের জ্বর যদি হয় কখনো তবে খবর দিস, কালুকে নিয়ে যাব। দেখিস!

    ঝিঁঝি কথা না বলে, শিরীষের দিকে চেয়ে রইল মুগ্ধ দৃষ্টিতে। আশ্চর্য! ও ওর খুব-ই বন্ধু। বলতে গেলে, ওর একমাত্র বন্ধু এখানে। অথচ আজ পর্যন্ত একদিনও এই বাড়ির ভেতরে ঢোকেনি। একা-পুরুষ থাকে বলেই হয়তো। সমাজ, সংসার, ওর আজন্ম মেয়েলি-সংস্কার, যুগযুগ-ধরে সঞ্চিত ভয়-ই হয়ত ওকে ঢুকতে দেয়নি। সুনীতিও আভাসে-ইঙ্গিতে বলে রেখেছিলেন, না-ঢুকতে। অথচ কত দিনে-রাতে অন্ধকারে বা চাঁদে ওরা পাহাড়ে বসে অসীম নির্জনতায় কাটিয়েছে একে-অপরের সান্নিধ্যে। ভাবছিল, পুরুষ ও নারীর দেহঘটিত সমস্ত ব্যাপার-ই চিরদিন-ই আগল-দেওয়া ঘরের মধ্যেই সংঘটিত হয়েছে বলেই বোধ হয় ঘরকে এত ভয়; বাহিরকে নয়।

     

     

    ঝিঁঝি চেয়ারে একবার বসেই উঠে পড়ে বলল, দুধটা আমাকে দে। আমি খাইয়ে আসছি। বুড়ি-মাকে।

    তুই খাওয়াবি?

    আনন্দে যেন মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল শিরীষের।

    তারপর-ই বলল, তুই যেখানে বসে আছিস, লক্ষ্মী মেয়ের মতো সেখানেই বসে থাক। একদিন, একবেলা আমাকে সাহায্য করে কী-বা লাভ হবে? মধ্যে দিয়ে, আমার অভ্যেস-ই খারাপ হয়ে যাবে। রোজ যদি-আমার দায়িত্বর ভার নিতে পারতিস তাহলে না-হয় তোকে অনুমতি দেওয়া যেত। এসব-ই ঘরের মানুষের কাজ। ক্ষণিকের-অতিথির নয়। বোস। চা আনছি আমি।

    বলেই বলল, কিছু কি খাবি? চায়ের সঙ্গে? আমি কিন্তু দারুণ ওমলেট ভাজতে পারি। আর চিড়েভাজাও। কড়াইশুটি, ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা আর পেঁয়াজকুচি দিয়ে ভালো হয় যদিও, তবে গরমের সময় তো এখন। ধনেপাতা বা ওসব কোথায় পাওয়া যাবে? তবে, তোকে চিনেবাদাম দিয়ে ভেজে দিতে পারি, সঙ্গে একটু কারিপাতা ফেলে। খাবি?

    ঝিঁঝি দু-দিকে মাথা নাড়ল।

     

     

    শোয়ার সময়ে দু-বিনুনি করে শুয়েছিল। মাথা নাড়ানোতে বেণি দু-টিও দুলে উঠল দু পাশে।

    শিরীষ বুড়ি-মাইকে দুধ খাইয়ে এসেই, হাত ধুয়ে দু-জনের জন্যে গেলাসে করে চা আর ঝাল-বিস্কিট এনে সামনে রাখল। একটা প্লেটে করে চা আর বিস্কিট দিল কালুকেও উঠোনের কোণে, কালুর খাবার জন্যে যে, অ্যালুমিনিয়ামের থালাটি রাখা আছে, তার ওপরে।

    খা ঝিঁঝি। ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আর চিনি লাগবে, কি না বলিস। বলে, নিজেও নিজের গ্লাস তুলে নিয়ে চুমুক দিল চায়ে। এক চুমুক দিয়েই বলল, স্যরি। দেখ। আমি-না একটা ছোটোলোক। বলেই, এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে দেওয়ালে ঝোলানো কালকের ছাড়া-শার্টটা পরে এল। হেসে বলল, অসভ্যতা মার্জনীয়।

    ঝিঁঝি তবুও কিছু বলল না। কিন্তু শিরীষ জামা পরে ওর চেনা শিরীষ হয়ে-ওঠাতে ঝিঁঝির মধ্যে স্বাভাবিকতা ফিরে এল।

    আধ-গেলাস চা খাওয়া হতে-না হতেই, ঝিঁঝি বাইরের একটা লম্বা গাছ দেখিয়ে বলল, ওটা কী গাছ রে?

    কোনটি?

     

     

    একটা হলুদ-বসন্ত পাখি ঠিক সেই সময়েই উড়ে এসে বসল, সেই গাছটির উঁচু ডালে। ঝিঁঝি আঙুল দিয়ে দেখাল, ওইটা। যেটাতে পাখি এসে বসল।

    ওঃ ওটা। তাই বল।

    ভারি সুন্দর তো গাছটা।

    হতেই হবে। ওটা যে, আমিই!

    তুই মানে?

    শিরীষ রে, শিরীষ।

    তাই?

    সত্যিই যেন, মিল খুঁজে পেল ঝিঁঝি ওই গাছের সঙ্গে এই চৈত্র-সকাল বেলার শিরীষের।

     

     

    চায়ের গ্লাসটা শেষ করেই শিরীষ বলল, এবার চল তাহলে জগদাদের বাড়ি।

    কী করে জানলি? তুই?

    শিরীষ বাঁ-হাতের আঙুল দিয়ে মাথার বাঁ-দিকে টোকা মেরে দেখাল।

    পরক্ষণেই বলল, কিন্তু জগদাদের বাড়ির ফোন খারাপ ছিল। এখন ভালো হয়েছে কি না বলতে পারব না। তা ছাড়া কী বলতে হবে-না হবে, তা কাকিমার কাছ থেকে জেনে এসেছিস তো? বলাতে হবে মাধাদাকে দিয়েই। জগাদা টরেটক্কা করে দিলে নীলোৎপল আর এমুখো হবে না।

    কাল তোর খুব-ই কষ্ট হয়েছে না রে? অতঘণ্টা গাড়ি লেট। এদিকে বাড়িতে রোগিণী।

    তা কী আর করা যাবে! তোর কারণে যে, আমার কত এবং কতরকমের কষ্ট তা তোর বোঝার-ই কোনো ক্ষমতা নেই। তোর শুধু এই কষ্টটুকুই চোখে পড়ল? সত্যি! নীলোৎপল কি জানে যে, সে কতখানি ভাগ্যবান? রাজকুমারী কুন্তী তার জন্যে বনফুল কুড়িয়ে নিয়ে, ফুলের মালা গেঁথে এই ‘মনোয়া-মিলন’-এ বনবাসে তাকে বরণ করার জন্যে বসে আছে যে, তাও কি সে জানে? বোকা একটা!

     

     

    কালকে মিথ্যে কথা বলেছিলি কেন? ঝাণ্ডুকে? আমি শুনেই বুঝেছিলাম যে, কথাটা মিথ্যে।

    কোন কথাটা?

    তোর পেটের অসুখ।

    হাসল শিরীষ। বলল, হ্যাঁ, মিথ্যা বলেছিলাম। তুই ঠিক-ই ধরেছিস।

    কিন্তু কেন?

    যেহেতু তোর বুদ্ধি আছে সেহেতু, এও ভেবেছিলাম যে, তুই এই মিথ্যে বলার কারণটাও বুঝবি।

    ঝিঁঝি মুখ নামিয়ে নিল।

    প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে শিরীষ বলল, ব্যাপারটা কী জানিস। আমার হচ্ছে কুকুরের পেট। আর কালু তো জেনুইন কুকুর-ই। ঝাণ্ডুর কাছে যা শুনলাম, ফেরাইড রাইস আর চিলি চিকেনওয়া’ ওসব আমাদের পেটে সহ্যই হত না। কুকুরের পেটে যে ঘি সয় না, তা জানিস না বুঝি? আমি কি নীলোৎপল? তার পেটে যা সয় তা কি আমার পেটে সয়?

     

     

    ঝিঁঝি চুপ করে রইল।

    শিরীষ বলল, চল, এবারে বেরোই।

    এই কালু, বুড়ি-মাইকে দেখবি।

    কালু ল্যাজ নাড়িয়ে জানাল যে, দেখবে।

    বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে শিরীষ বলল, রডে বসবি? না ক্যারিয়ারে?

    দাঁড়া। চল একটু দূর অবধি হেঁটে যাই। বুদ্ধিটা গুলিয়ে যাচ্ছে। মা যে, কী করেন। মা-রও কোনো দোষ নেই। এরজন্যে দায়ী ঘণ্টেমামাই। এই ফোন করার আইডিয়াটা ঘণ্টেমামার-ই।

    তাঁরা তো বলেইছেন যে, বৃহস্পতিবার আসবেন।

    কী ইরেসপনসিবল ভেবে দেখ একবার।

    এরকম ভাবাটা কিন্তু ঠিক নয়। কত জরুরি কাজেই না আটকে পড়তে হয় মানুষকে। তার ওপরে অতবড়ো ব্যবসাদার বলে কথা! ওঁর দিকটা একটু ভাববার চেষ্টা কর। মানুষকে ‘বিচার না করেই বাতিল করার মধ্যে কোনো যুক্তি নেই কিন্তু। ভেবে দেখ। আমি তো বলব, ভদ্রলোক প্রচন্ড রেসপনসিবল। মাস্টারমশাই-এর কাছে খবরটা এসেছে বাড়কাকানা থেকে। তার মানে বাড়কাকানাতে খবর এসেছে গোমো থেকে। সম্ভবত গোমোতে ধানবাদ থেকে এবং ধানবাদে কলকাতা থেকে। ট্রেন আসতে-না-আসতে খবরটাও স্টেশন মারফত এসে যে, পৌঁছেছে এটাই তো একটা মিরাকল। হ্যাঁ। এটা ঠিক যে, জিনিসপত্র ফেলা গেল, অপেক্ষা উৎকণ্ঠা; প্রতীক্ষা অর্থনাশ সব-ই সত্যি। কিন্তু আমার কথাই ভাব একবার। তোর বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে আমার ঝিঁঝিকে হারানো। এতবড় একটা ঘটনা বা দুর্ঘটনা, যাই বল; ঘটতে যাচ্ছে তারজন্যে তোরা কেউ-ই একটুও ঝক্কি-ঝামেলা পোয়াতে রাজি নোস। এটা তো হয় না।

    তুই কী বলিস? যাব না জগামামার বাড়িতে?

    যাব না কেন? চল। আমি তো এসব ব্যাপারে মতামত দিতেই পারি না। যে-কেউই ভাববে আমার ভেস্টেড-ইন্টারেস্ট আছে এ-বিয়ে ভেস্তে দেওয়ায়।

    কেন? তোর কী ইন্টারেস্ট?

    না, না, আমার নয়; লোকের কথা বলছি। আমার ইন্টারেস্ট থাকলে তুই কি আর এতদিনেও জানতে পারতিস না? তুই তো বোকা নোস। তুই-ই বল।

    বলটাকে অত্যন্ত বুদ্ধিমানের মতো শিরীষ ঝিঁঝির কোর্টেই ঠেলে দিল।

    ঝিঁঝি আরও বুদ্ধির পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে পাকা অভিনেত্রীর মতো বলল, কী যে, হেঁয়ালি হেঁয়ালি কথা বলিস তা বুঝতেই পারি না।

    শিরীষ কথা ঘুরিয়ে বলল, ফোন করে মাধবদাকে কী বলতে বলবি ওঁদের?

    ‘দেখুন মশাই! আমাদের খুব হেনস্থা করেছেন। যা করেছেন তো করেছেন-ই। কিন্তু সেদিনও যদি না আসেন তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। এই তো বলবি। এখন তুই-ই বল, যেখানে সম্বন্ধ করে বিয়ে হওয়ার কথা হচ্ছে, সেখানে কনেপক্ষ বরপক্ষকে কখনো এমন কথা, এমন করে বলতে পারেন? আলটিমেটাম দিতে পারেন এমন? বললে, তাঁরা কী ভাববেন? হয়তো আসবেন-ই না, শুধু এই টেলিফোনের-ই অপরাধে।

    আমি কী বলব। আমার এত অপমান, মানে, কী যে, বলব! ইচ্ছে করে যে, তোদের বাড়ির পেছনের ওই শিরীষগাছটা থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে যাই।

    ছিঃ ছিঃ। ভুলেও ও কর্ম করিস না ঝিঁঝি। তুই তো মরবি, মরে আমাকেও মেরে যাবি। ছেলেবেলায় কেত্তন শুনেছিলাম। রাধা তমাল গাছ নিয়ে কীসব খেদোক্তি করেছিলেন-না? তমাল গাছে কী ঝুলিয়ে রাখতে, নাকি নিজেই ঝুলে যেতে চেয়েছিলেন? ভালো মনেও তো নেই। হাজার গাছ থাকতে শিরীষগাছ কেন? তোকে আমি খুব ভালো অন্য গাছ ঠিক করে দেব। দয়া করে শিরীষগাছে ঝুলিস না।

    ঝিঁঝি হেসে ফেলল, এত মন খারাপের মধ্যেও ফিক করে।

    শিরীষ বলল, নে, চল। জগদাদের বাড়ি যাই। তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি ঠিক ম্যানেজ করব। তুই শুধু দেখবি। ঘটনার বর্ণনা দিলেই, যেকোনো বুদ্ধিমান মানুষ-ই আমি যা, বললাম, তাই বলবেন।

    দেখ। কী বলেন ওঁরা।

    অস্ফুটে বলল, ঝিঁঝি।

    বলেই, সাইকেলে উঠে পড়ল। শিরীষের সামনে, রডেই বসল। শিরীষের জামা-খোলা বুক দেখেছে আজকে ঝিঁঝি। কেন জানে না, নিজের অজানতেই আজ কি একটু বেশি পিছিয়ে বসল রডটার ওপরে? যাতে নিজের পিঠটা, অসমান পথে ঝাঁকুনি লাগলে শিরীষের বুকের সঙ্গে লাগে? আসলে, ভালো করে উঠে বসার মতো উঁচু কোনো কিছু ছিল না তাই এক হ্যাঁচকাতে বসতে গিয়ে একটু এগিয়েই বসে পড়েছিল।

    ব্রিজমোহন সিং-এর বাড়ির সামনে পৌঁছোল সাইকেলটা। ব্রিজমোহনবাবু দাঁতন করছেন নিমের ডাল দিয়ে। সন্দিগ্ধ চোখে তাকালেন। ওই ভদ্রলোক ওদের বন্ধুত্বটা ভালো চোখে দেখেন না।

    ঝিঁঝি বলল, তোদের বাড়িতে প্রথমবার ঢুকলাম, তোর শোবার ঘরটা দেখালি না তো আমাকে।

    দুর। কী দেখতিস। ব্যাচেলরস ডেন?’ অগোছালো। বই ছড়ানো-ছেটানো চারধারে। ক্যাসেট। তা ছাড়া, আমার ঘরে যে-মেয়ে ঢুকবে প্রথমে, সে আমার বউ-ই। তুই কি আমার বউ যে, তোকে আমার ঘরে ঢোকাব?

    অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন

    বোকার মতো কথা বলিস না।

    বোকার মতো কেন বলছিস? আমি তো বোকাই। আমার মতো বোকা সংসারে খুব কমই আছে।

    ঝিঁঝি উত্তর দিল না কোনো।

    জগাদাদার বাড়ি পৌঁছে শিরীষ পুরো মিস্টার পেঁপেদু থেকে, পেঁপের ঝুড়ি থেকে যা জগাদা-মাধাদারা নিজের চোখেই সেদিন দেখেছিলেন; তারপর ঘণ্টেমামার অধঃপতন থেকে একেবারে মাস্টারমশায়ের সন্দেশ-প্রেরণ পর্যন্ত সবিস্তারে বলে গিয়ে জগাদা মাধাদাদের পরামর্শ চাইল এমন করে; যেন, কাকিমাই ওঁদের পাঠিয়েছেন।

    জগাদা সব শুনে বললেন, ওই ঘণ্ডেডা লোক টিরডিন-ই বারফাট্টাই কডে গেল। বৌডি ডডি আমাডেড আগে একবাড বলটেন। কোনো খোঁড় কবড না কডে, ওই ঘণ্টেবাবুড কটাটেই বউডি টিটিকে…

    শিরীষ বলল, সকাল বেলাই তো আপনাদের ডেকে নিয়ে আসার ভার দেওয়া ছিল, আমার-ইওপরে। কে বলতে পারে! হয়তো কাকিমার মনে কোনো প্রিমনিশান এসে থাকবে। বোঝেন-ই তো! মায়ের মন।

    ওঁরা নাও আসতে পারেন, এমন একটা সন্দেহ হয়ে থাকবে হয়তো তাই আগে থাকতে বলেননি। বলল, যা-হয়রানিটা কাকিমার, ঝিঁঝির এবং আমারও হল, তার ভাগ আপনাদেরও নিতে হত। বুঝতেই তো পারেন জগাদা, আপনারা ছাড়া সত্যিই তো কেউই নেই আমাদের। আপনারাই তো আমাদের সকলের গার্জেন। মুরুব্বি। কাকিমা তো আপনাদের ভরসাতেই এখানে আছেন।

    কটাটা টিক। কিন্টু বায়া, টুমিও ডডি গার্ডেন বলে মানো আর বউডিও ডডি মানেন, টাহলে টো আমার কাঠে একটা ঠট-কার্ট ঠেল–একেবাডে কুইক…লিলপড্য-ফড্যর কাঠে ডাবাড় ডডকার কী ঠেল?

    শিরীষ তাড়াতাড়ি কথা কেড়ে বলল, না, না। জগাদা, আগে এই ব্যাপারটার একটা সুষ্ঠু পরিণতি না, কী যেন বলে, তাই হয়ে যাক। যদি না হয়, তখন আপনি আপনার কুইক-মিক্স না কুইক-ফিক্স কী বললেন, তা চেষ্টা করে দেখবেন।

    যদিও, কী আপনি বলছেন তা আমি কিছুই বুঝছি না। ঝিঁঝি, তুই কি বুঝেছিস?

    ঝিঁঝি মাথা নেড়ে বলল, কী বলছিস?

    টালে একন টোমডা আমাকে কী কডটে বলো?

    আপনি কাকিমাকে আপনার মতামত ও অ্যাডভাইস জানিয়ে একটা চিঠি লিখে দিন। আমি সেই চিঠি নিয়ে গিয়ে কাকিমাকে নিজে হাতে দেব। এখন-ই। বোঝেন-ই তো! সারারাত জেগে কাটিয়েছেন। অতজনের খাবার ফেলা গেল এই বাজারে। আমার বয়ে-আনা পেঁপেগুলো পচে ফেনাভাত হয়ে যাবে। একঝুড়ি কাঁচকলা। ইশ।

    টিক আটে। টিক আটে।

    জগাদা বললেন।

    চিঠিটা নিয়ে যখন, ওরা ঝিঁঝিদের বাড়ি ‘মহুয়া’তে ঢুকল তখন, সুনীতি ভেতরে ছিলেন। ঘণ্টেমামা, বসার ঘরে একটা চেয়ারে বসে টেবলের ওপর মচকানো পা-টি তুলে বসে জম্পেশ করে চিড়ের পোলাও খাচ্ছিলেন।

    ওদের দেখেই চেঁচিয়ে বললেন, বউদি, ওরা এয়েছে।

    সুনীতি মনে মনে বিরক্ত হয়েছিলেন। আগামী বিদ্যুত্বর অবধি ঘণ্টেবাবু অতিথি হয়েই থাকবেন। তা ছাড়া, বহুদিন পুরুষহীন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াতে সবসময়ে একজন বাইরের মানুষ বাড়িতে থাকায়, ন্যায্য কারণেই অস্বস্তিতে পড়েছিলেন উনি। খাওয়া-দাওয়াটা বড়োকথা নয়। মা-মেয়ে-ঝাণ্ডু যা-খাবেন তা উনিও খাবেন। কিন্তু ওঁর এই সর্বক্ষণ ঘরে বসে থাকা আর হাঁক-ডাক আদৌ সুনীতির পছন্দ হচ্ছিল না।

    সুনীতি ভেতর থেকে এলেন। বললেন, বোসো শিরীষ। তোমার জন্যেই চিঁড়ের পোলাউ করেছি। বেশি ঝালও দিইনি আজ। পেট কেমন আছে?

    ভালো। বলেই, চিঠিটা বের করে দিল শিরীষ।

    কার চিঠি? নীলোৎপলের?

    না। মাথা নাড়ল শিরীষ।

    তবে?

    জগাদার।

    জগাবাবু চিঠি দিলেন। কেন?

    পড়ে দেখো মা। চিঠিতে কী আছে তা তো আমরা জানি না।

    পড়লেই বুঝতে পারবেন। আমাদের তাঁর সেরেস্তাতে বসিয়ে রেখে ভেতরের ঘরে গিয়ে এই চিঠি লিখে গালা দিয়ে সিল করে আমাকে দিলেন আপনাকে দেবার জন্যে। শিরীষ বলল।

    চিঠিটা পড়তে শুরু করেছিলেন সুনীতি ভুরু কুঁচকে। কিন্তু পড়তে-পড়তেই ভুরু স্বাভাবিক হয়ে এল, মুখের চামড়া, নরম, মসৃণ হয়ে এল–আবার।

    চিঠিটা পড়া শেষ করে বললেন, জগাবাবু ঠিক-ই বলেছেন। আমিও তো ফোন করার কথা ভাবিনি। ঘণ্টেবাবুই তো শোরগোল তুললেন কাল রাতেই। আমারও চিন্তাশক্তি সব গুলিয়ে গেল বাবা।

    ঝিঁঝি, যা, হাত ধুয়ে শিরীষের জন্যে নিয়ে আয় চিড়ের পোলাও বেড়ে। তোমাদের তো অনেক-ই সময় লাগল বাবা।

    বাড়িতে যা ঝামেলা ছিল কাকিমা। বুড়ি-মাই-এর খুব জ্বর। সারারাত পা-মাথা টিপে দিতে হল। সকালে দুধ গরম করে দুধ খাইয়ে তারপর নিজের জন্যে একটু চা করে, চা খেয়ে, তারপর-ইবেরোলাম। তা ছাড়া, ঝিঁঝিও তো হেঁটেই গেছিল। সাইকেলে গেলে…

    হ্যাঁ। ঝাণ্ডুর জন্যে। সাইকেলটা ঘরে বন্ধ করে নিজে…

    ‘ফেরাইড-রাইস ঔর চিলি-চিকেনওয়া’…

    সুনীতি অবাক হয়ে বললেন, আশ্চর্য! তুমি জানলে কী করে?

    ঝাণ্ডু তো স্টেশানেই বলল যে, এতগুলো ফেরাইড-রাইস আর চিলি-চিকেনওয়া বরবাদ হবে।

    তাই? হেসে ফেললেন সুনীতি।

    ভেতর থেকে ট্রে হাতে করে বাইরের ঘরে আসতে আসতে ঝিঁঝি সুনীতির মুখে হাসি দেখে খুবই আনন্দিত হল। মা, গোমড়া মুখে থাকলে একেবারেই ভালো লাগে না ওর। শিরীষের অনেক গুণের মধ্যে এটাও একটা গুণ। ওর রসবোধ। যেখানেই থাকে ও, বা যায়; সেখানকার গুমোট কেটে যায়। তবে ওর নিজের মনের মধ্যে কী হয়, তা একমাত্র শিরীষ-ই জানে। যারা অন্যদের হাসায় তাদের মধ্যে অনেকেই নিজের বুকে জমে-থাকা কান্না নিয়ে ফেরে।

    চা খাবে তো বাবা, না কফি?

    কফি থাকলে খেতে পারি।

    তবে আমিও আর এক কাপ খাব।

    ঘণ্টেমামা বললেন।

    শিরীষ, চিড়ের পোলাও খেতে খেতে বলল, ঘণ্টেমামা, আপনার এই মহিলা-মহলে দম নিশ্চয়ই একেবারে বন্ধ হয়ে আসছে। কেন্দুপাতার জঙ্গলে সারাজীবন আউটডোর লাইফ কাটিয়ে এমন বন্দিজীবন কি আর ভালো লাগে? তাও আবার আগামী বুধবার পর্যন্ত।

    তা যা বলেচ বাবা। সত্যিই এই মহিলা-মহলে হাঁপিয়ে উঠেচি এই দেড় দিনেই।

    তাহলে দম নেওয়ার জন্যে আপনি আপনার ডালটনগঞ্জেই গিয়ে আবারও ফিরে আসতে পারেন। ওখানে আপনার কাজ কে সামলাবে?

    না, কাজ অবশ্য আচে। তবে তুমি বলেচ ভালোই। কিন্তু এই পা-টা। পা-টাই তো বাধ সেধেছে না!

    আমি কাল রাত থেকে ভেবে ভেবে, একটা মধ্যপন্থা বের করেছি।

    সেটা কী বাবা?

    আপনি পুরুষ মহলেই চলুন। এ কটা দিন আপনি আমার সঙ্গেই থাকবেন। মামা-ভাগনে যেখানে, বিপদ নাই সেখানে। কী বলেন!

    হা। হা। তা যা বলে।

    আপনি শুনেছি দারুণ রাঁধেনও। বুড়ি-মাই সব জোগাড় করে দেবে আর আপনি বসে বসে রাঁধবেন। নড়াচড়া করতে হবে না। সব-ই একেবারে হাতের কাছে। আর যদি অনুমতি করেন তো ঝিঁঝি, কাকিমা, জগাদা মাধাদাদেরও খেতে নেমন্তন্ন করে দেব আপনার হাতের রান্না, আমার দাঁড়কাকের বাসাতে।

    রান্নার অভ্যেস একেবারে ছেল না যে, তা নয়। কিন্তু তোমার মামিমা একেবারেই সে, অভ্যেসটির দপারপা করেছেন। তোমরা যদি ডালটনগঞ্জ আসো কখনো, তাহলে খাওয়াতে পারি মনোমতো করে।

    নেমন্তন্ন তো আর কোনোদিনও করলেন না। বলছেন, যখন তখন যাওয়া যাবে একবার। ডালটনগঞ্জ এখান থেকে যেতে অসুবিধের কী? ট্রেনে চড়ব, আর নামব। বলেই বলল, তা কী ঠিক করলেন বলুন।

    আজকের দিনটা ভেবে নিই বাবা। আজকের দিন চলে গেলে তো থাকবে আর ছ-দিন। তাই হোক। ছ-ছটি দিন মামাবাবুকে সেবা করার সুযোগ পাওয়া যাবে। এই বা আমার কম সৌভাগ্য কী?

    স্টেশনে যদি চেয়ার-টেয়ার বসিয়ে আমাকে ট্রেনে তুলে দিতে পারতে আমি তাহলে ওখান থেকে একেবারে যে-রাতে ওঁরা আসবেন, সেই বৃহস্পতিবারেই ভোরের গাড়িতে না-হয় এসে পৌঁছে যেতাম।

    সুনীতি বললেন, ছাড়ন তো আপনি শিরীষের কথা। জলে তো আর পড়েননি। তবে শিরীষের সঙ্গে গিয়ে যদি থাকতে চান, মানে তাতে যদি আপনার সুবিধে হয়; তবে অন্য কথা।

    ‘দাঁড়কাকের বাসা’তে যদি থাকতে না চান তবে আপনি তো জগাদাদের বাড়িতেও সাক্ষাৎ পুরুষ-সিংহদের গুহায় থাকতে পারেন গিয়ে এই মহিলামহল ত্যাগ করে।

    না বাবা। টক্কা টরে শুনতে হবে জগাবাবুর আর শিকারের গল্প শুনতে হবে মাধবাবুর। তার চেয়ে, যেকোনো শাস্তিই ভালো।

    অমন করে বলবেন না ঘণ্টেমামা। ওঁরা দুজনেই মানুষ হিসেবে চমৎকার।

    তা কি আমি অস্বীকার করছি? কিন্তু তাদের মনুষ্যত্বে গিয়ে পৌঁচোবার পরেই যে, বিস্তর বাধা। মাঝপথেই যে-ফেঁসে যাব।

    ঝিঁঝি নিজের খাবার ও সুনীতির খাবারও নিয়ে এল। তারপর কফি করতে গেল ভেতরে, নিজে দু-চামচ মুখে তুলে।

    ঘণ্টেমামা বললেন, আর পা মচকাবার শক-এ এবং ‘স্যার’রা না-আসার শক-এ আমার খেয়াল-ই হয়নি যে, পরের বিদ্যুত্বার মানে এক সপ্তাহ বাদ। সত্যিই তো! এক সপ্তাহ এখানে পড়ে থেকে করবই বা কী?

    আপনি চলে যাবেন? যাবেন কেন? আমার সঙ্গে থাকুন-ই না ক-দিন। রাঁধব-বাড়ব, গান শুনব দু-জনে মিলে। মজাই হবে। আপনার কেন্দুপাতার জঙ্গলের জীবনে একটা চেঞ্জ আসবে। আমিও আপনার গল্প শুনতে পারব। জঙ্গলের পোকা’র গল্প শোনার ভাগ্য ক-জনের হয়?

    না রে ভাই, মনটাই উচাটন হয়ে গেছে।

    কিন্তু আপনি যদি গিয়ে বুধবার ভোরে না ফিরে আসেন মানে, আসতে না পারেন, তাহলে কাকিমার অবস্থাটা কী হবে একবার ভেবেছেন?

    আরে বাবা! আমি কী অত্ত ইরেসপনসিবল, স্যারেদের মতো? নেহাত নীলোৎপল ছেলেটা হিরের টুকরো আর আমার ঝিঁঝি মায়ের কথা আর কী বলব!

    আর টিকটিকির কথা কিছু বলবেন না?

    টিকিটিকি! কোন টিকটিকি?

    ওই যে! টিকটিকির কথা ট্রেনে বলেছিলেন।

    ভীষণ-ই লজ্জিত ও অপদস্থ হয়ে ঘণ্টেমামা বললেন, ও-হো-হোঃ1 ছাড়ো তো ওসব কতা।

    টিকটিকি? সে আবার কী?

    সুনীতি ও ঝিঁঝি সমস্বরে বললেন।

    ও সে আছে এক, মানে নেই; কী যেন বলে, মানে থাকতে পারত; যাক সেসব কথা। শিরীষ বলল।

    তারপর-ই বলল, আমি এখন চলি তাহলে কাকিমা।

    কী হল? আজ তো তোমার ছুটি, ঝিঁঝি বলছিল।

    হ্যাঁ। গদির ডিউটি থেকে ছুটি কিন্তু অন্য সব কাজ-ই তো আজ। ঘরের ভাঁড়ারে কী আছে, কী নেই? বুড়ি-মাইয়ের জ্বরের রেমিশান হল কি না, নিজের জামা-কাপড় কাঁচা, কালুকে সাবান দিয়ে চান করানো, ঘর গোছানো, উঠোন বারান্দা সব ভালো করে পরিষ্কার করা; একটু গান শোনা, একটু বই পড়া। তারপর বিকেলে যাব গুঞ্জনকে পড়াতে।

    অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন

    সে কে?

    সে পুনমচাঁদজির বড়োমেয়ে।

    পুনমচাঁদজি কে?

    শেঠ চিরাঞ্জিলালের মুনিম।

    মেয়েটা কত বড়ো?

    ঝিঁঝির থেকে একটু ছোটো।

    বিয়ে দেয়নি কেন?

    বিয়ে দিতে নাকি পাঁচ লাখ টাকা লাগে ওদের সমাজে। গুঞ্জন ছাড়া আরও দুটি মেয়ে। আছে পুনমচাঁদজির। বিবাহযোগ্যা।

    তবে কী হবে?

    কী হবে? তা ঈশ্বর-ই জানেন।

    মেয়েটা কিছু করে না কেন? চাকরি-বাকরি?

    চাকরি কোথায় পাবে? লেখা-পড়াও তো করেনি। যারা করেছে, তারাও কি পাচ্ছে চাকরি?

    ঝিঁঝি অপাঙ্গে একবার তাকাল শিরীষের দিকে। ওই মন্তব্যে তার প্রতি একটু খোঁচা ছিল।

    শিরীষ আবার বলল, ওঁরা আবার নিজেদের সমাজের বাইরে বিয়ে দেন না। নইলে, আমিই বিয়ে করতাম ওকে কাকিমা। দেখতে-শুনতেও ভালো, খুব-ই সুসভ্য, স্কুল-কলেজে না পড়লেও খুব সপ্রতিভ এবং সহজাত বুদ্ধি আছে। কী যে, কাজের মেয়ে কী বলব! রান্না বান্না, সেলাই-ফোঁড়াই, যত্ন-আত্তি, বড়ি-দেওয়া, পাঁপড়-দেওয়া…

    তুমি এমন মেয়ের সঙ্গে ঘর করতে পারতে? ওইসব-ই কি সব?

    আমার যা-যোগ্যতা, তাতে অমন মেয়ে পাওয়াই ঢের। সুখে তো রাখবে। শুধু কাজটা করব আর বাকি সময় পায়ের ওপর পা তুলে, নইলে ঘণ্টেমামার মতো টেবিলের ওপর পা তুলে বসে; বই পড়ব আর গান শুনব। ঘড়ি-ঘড়ি চা, সঙ্গে গরম গরম পকৌড়া, যখন যা খেতে ইচ্ছে হবে সেই খাবার। মা চলে যাবার পর তো, খাবার-দাবার সুখ সব গেছে। আহা ভাবলেই সুখে মরে যাই। কিন্তু আমার কপালে কি অত সুখ আছে কাকিমা? তা ছাড়া আমার বিয়ে করতে তো কোনো অসুবিধাই নেই। কারণ, আমার গার্জেন তো আমিই। মনস্থিরটা করে ফেললেই হয় আর কী। পুনমচাঁদজিও মুক্ত হতেন।

    অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন

    সত্যিই তোমার একটা বউয়ের খুব-ই দরকার। বুড়ি-মাই তো সাহায্য কিছুমাত্র করতেই পারে না, উলটে তোমাকেই দেখতে হয় তাকে।

    তা কী করব কাকিমা? মায়ের তিরিশ বছরের আয়া। সেও মাতৃসমা। আর তার যে, কেউ নেইও।

    কেন? ছেলে ছিল তো একটা। গোমিয়াতে ভালো চাকরি করত-না?

    হ্যাঁ। সে গোমিয়াতেই থাকে এবং এখন আরও ভালো চাকরি করে কিন্তু সে মাকে নেয় । দেখে না। ওদেরও ‘ভদ্রলোকের’ রোগে ধরেছে। ছেলে আমেরিকায় ফুটানি করে আর মা-বাবা কলকাতায় না খেতে পেয়ে মরেন এমন কত কেস জানি আমি। লোভ কাকিমা; সব শিল্পনগরীর, মহানগরের আকাশে ‘লোভ’ উড়ে বেড়ায়। যারা একদিন দু-বেলা ডাল-রুটিকেই সুখের পরাকাষ্ঠা বলে জানত, তারাই সেখানে গিয়ে পলিয়েস্টার ফাইবারের জামাকাপড়, পাখা, ফ্রিজ, টিভি এমনকী ভি.সি.আর.-এর স্বপ্ন দেখে। ওপরে তাকাবার কি কোনো শেষ আছে কাকিমা! আসলে ‘সুখ’ জিনিসটা যে, কী সে, সম্বন্ধে সম্ভবত গরিব-বড়োলোক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কারোরই কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। অথচ সুখের সন্ধানেই আমরা জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সাঁতরে বেড়াই।

    সত্যিই কী দুঃখ বেচারির!

    সুনীতি বললেন। বুড়ি-মাইকে আমি গরিব ছেলে হলেও দেখি। তবুও বুড়ি-মাই হয়তো দুঃখীই! কিন্তু তার ছেলে ঝুমরা বা আমি বা ঝিঁঝি বা ঘণ্টেমামা বা আপনিও কি সুখী? ‘সুখ’ বলে যা আমরা জানি তাই কি সুখ? তা ছাড়া সুখ কী? সুখ যে, ঠিক কী, তা নিয়ে আমরা কেউই কি কোনোদিনও ভাবি? ভাবার সময় পাই?

    বাঃ বাঃ। বেড়ে কতা বলো তো তুমি শিরীষ। ভাববার মতো কতা বটে হে।

    ঘণ্টেমামা মচকানো পা নাড়িয়ে, চিড়ের পোলাওয়ের ডিশটা নামিয়ে রেখে বললেন।

    ভাবনা-চিন্তা এসব তো মানুষদেরই জন্যে ঘন্টেমামা! জঙ্গলের অথবা নর্দমার পোকাদের জন্যে তো নয়।

    ঘণ্টেমামা একটা ধাক্কা খেলেন কথাটাতে। ঝিঁঝি বা সুনীতি জানালেনও না। ধাক্কাটা কেন এবং কোথায়?

    ঘণ্টেমামা কথাটা হজম করে বললেন, বাঃ বাঃ, বেশ বলেচ হে।

    আচ্ছা কাকিমা, আমি এবার উঠি। চললাম ঘন্টেমামা। মন ঠিক করলেই খবর দেবেন ঝাণ্ডুকে দিয়ে একটা। আমি এসে আপনাকে নিয়ে যাব।

    আচ্ছা বাবা।

    সাইকেলে উঠে পেছন ফিরে ঝিঁঝির দিকে হাত তুলল শিরীষ। তারপর প্যাডল করতে লাগল। মহুয়ার’ গেট পেরিয়ে বাইরে পড়ে হঠাৎ-ই ও আবিষ্কার করল যে, ওর মধ্যে যে এমন নিষ্ঠুরতা ও প্রতিশোধস্পৃহা ছিল সে সম্বন্ধে ও সম্পূর্ণ অনবহিত ছিল আজ সকালের আগে। ঘণ্টেমামা না হয় নীলোৎপলের প্রশংসাতে পঞ্চমুখই হয়েছিলেন কিন্তু তা বলে তাঁকে এমন আঘাত করাটা ওর অনুচিত হয়েছে। এমন ব্যবহার ওর চরিত্রানুগও নয়।

    ভাবছিল শিরীষ যে, ওর নিজের চরিত্রের খবর কতটুকু ও নিজে জানে! কোনো মানুষই কি জানেন?

    কিছুদিন হল গুঞ্জনের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ করছে শিরীষ। একটা ছটফটানি ভাব। নরাধমও ইদানীং মাঝে-মাঝেই আসে পুনমচাঁদজির বাড়িতে।

    শিরীষ বোঝে যে, এতে পুনমচাঁদজিরও হাত আছে। বাবাদের অসহায়তার কতরকম হয় বা বাবাদের কতরকম হয় তা শিরীষ জানে না। নিজে বাবা নয় বলেই। তবে, অনুমান করতে পারে।

    কন্যায়দায়গ্রস্ত পুনমচাঁদজির অসহায়তার কথা ও বুঝতে পারে কিন্তু গুঞ্জনের মানসিকতা বোঝে না।

    কিছুদিন হল গুঞ্জন যে, শুধু ছটফট করে, তাই নয়। এ-ও লক্ষ করেছে শিরীষ যে, যখন ই ও যায় ওকে পড়াবার জন্যে গুঞ্জন বাড়িতে একাই থাকে। ওর বোনেরা প্রায়ই থাকে না। মুন্নি-তিন্নি কোথায় গেছে তা তো জিজ্ঞেসও অবশ্য করে না শিরীষ। গুঞ্জনও বলে না।

    পড়াশোনা তো থোড়িই হয়। তবে শিরীষ বোঝে যে, গুঞ্জনের প্রায়-বন্দিনি, আলো হাওয়াহীন মনের একমাত্র জানলা সে-ই। গদিঘরের জানলায় বনবেড়ালের মতো তক্কে তকে থাকে নরাধম। আর গুঞ্জনের মনের জানালায় শিরীষ-ই শুধু শরতের মেঘের মতো আসা যাওয়া করে।

    গুঞ্জনের বাড়ি, কাজ এবং ওদের বাড়ির ব্ল্যাক-অ্যাণ্ড-হোয়াইট ছোট্ট ‘টেলেরামা টিভির বাইরেও যে, মস্ত একটা জগৎ পড়ে আছে, সেই জগতের প্রতিভূ হয়েই শিরীষ এসে পৌঁছোয়, প্রতিসপ্তাহে একবার করে ওদের বাড়িতে।

    সেদিন অনেকক্ষণ ধরে কী করে ‘রোকড়’ মেলাতে হয়, তা শিখিয়ে দেওয়ার পর গুঞ্জন বলল, এই দেখুন। কেমন ইংরিজি শিখেছি। লিখেছি।

    দেখি।

    গুঞ্জন খাতাটা এগিয়ে দিল। দিয়েই মুখ নীচু করে ফেলল। খাতা মানে, চিরাঞ্জিলালের ডুপ্লিকেট ক্যাশমেমো জড়ো করে স্টেপলার দিয়ে স্টেপল-করা বাণ্ডিল। যে-সমস্ত বিক্রির ক্যাশমেমো একনম্বর খাতাতে ওঠানো হয় না, যেসব বিক্রির সেইসব ক্যাশমেমো এইভাবে সদব্যবহার করে পুনমচাঁদজি। এইসব মেমো কোনো অহিতার্থীর হাতে পড়লে ইনকাম-ট্যাক্স বা সেলস-ট্যাক্স-এও লাগিয়ে দিলে বাঘে-ছোঁওয়া আঠারো ঘা হয়ে যাবে। যাতে, বাইরের কারো হাতে না পড়ে সে জন্যেও এই অভিনব উপায়ে ওইসব ডুপ্লিকেট মেমো ব্যবহার করা হয়। একেই বোধ হয় পশ্চিমি দেশের মানুষেরা গার্বেজ-রিসাইক্লিং’ করা বলেন।

    শিরীষ খাতাটা টেনে নিয়ে দেখল, গুঞ্জন লিখেছে; I love you!

    ও মুখ তুলতেই গুঞ্জন ফিক করে হেসে দিল।

    কিন্তু হাসিটা কেমন আড়ষ্ট দেখাল।

    মনে হল, শিরীষের।

    মন ভুলও বুঝতে পারে।

    খাতাটা দিন। আরও একটা শিখেছি।

    শিরীষ কথা না বলে, খাতাটা এগিয়ে দিল।

    গুঞ্জন লিখল। I love Pawan. লিখেই, স্থিরদৃষ্টিতে শিরীষের চোখে চেয়ে রইল।

    মালিকের ছেলেকে ভালোবাসার মতো অপরাধ আর কী থাকতে পারে? গুঞ্জনের দৃষ্টিটা ধীরে ধীরে কুয়াশার মতো অস্পষ্ট হয়ে গেল দেখে, ভাবল, শিরীষ।

    তুমি পবনকে দেখেছ?

    শিরীষ শুধোল।

    নাঃ।

    না দেখেই…

    শেঠানির কাছে ফোটো দেখেছি। দেখতে অনেকটা বিনোদ খান্নার মতো।

    সে আবার কে?

    বিনোদ খান্না। চেনেন না?

    না তো! কে সে? সিমেন্ট ফ্যাক্টরির নতুন ম্যানেজার নাকি?

    সচ। ক্যা কঁহু ম্যায়! আপ সাচমুচ এক আজীব আদমি হেঁ শিষবাবু।

    বোকার মতো শিরীষ বলল, দিন-রাত টিভি-র সামনে বসে থাকছ বুঝি আজকাল? সিনেমা বা টি.ভি. স্টার ছাড়াও পৃথিবীতে দেখার কত কী আছে! তুমি কখনো নীল-ডুংরিতে গেছ? নীল-টোংড়ির চুড়োতে উঠেছ?

    বিষাদগ্রস্ত গলাতে ও বলল, কোথায়ই বা যাই! নিয়ে যাবেন আমাকে একদিন শিষবাবু? দু-বেলার নাস্তা আর দোপেহর আর রাতের খানাপিনা সকলের জন্যে বানিয়ে দিনগুলো তো এমনি করেই চলে যাচ্ছে। বোনগুলি তো কোনো কম্মের নয়। সব-ই আমার ঘাড়ে।

    নিয়ে যাব, যদি তোমার বাবা যেতে দেন। তারা আজ কোথায়? সাড়া পাচ্ছি না যে। আজকাল প্রায়-ই দেখি, থাকে না বাড়িতে।

    পাশের বাড়িতে সিং সাহেবের কাছে গেছে। কালার টি.ভি. আছে তো বড়ো স্ক্রিনের।

    তাই?

    ওখানে আজ ‘খাবসুরতি’ দেখবে ওরা।

    সেটা কী জিনিস?

    আরে! সিনেমা।

    ও। কিন্তু এখন তো সিনেমার সময় নয়।

    ভি. সি. আর. আছে যে, সিং সাহেবের। মোটর ভেহিকলস-এর ইনসপেক্টর সাব হচ্ছেন তো উনি। পয়সা কোথায় রাখবেন তার জায়গা নেই। ফারিয়াগঞ্জে তাঁর এক শালাবাবু থাকেন তিনি সেলট্যাক্সের বড়োবাবু। এই বিহার জায়গা হচ্ছে হিরের-খনি। যারা খুঁড়তে জানে তারা ক্রমাগত খুঁড়ে যাচ্ছে। ফাড়িয়াগঞ্জের সেই বাড়িতে এয়ারকুলারভি আছে, মারুতি গাড়ি। সিং চাচা একদিন নিয়ে গেছিলেন আমাদের। খুব ভাব দু-জনের। জরুকা ভাই ইকতরফ, সারি দুনিয়া দুসরি তরফ। মুন্নি আর তিন্নির সঙ্গে সিং সাহেবের শালার দুই ছেলের লটর-পটর হয়ে গেছে। ওরা এসেছে ফারিয়াগঞ্জ থেকে গতরাত্রে। আজ সারাদিন তো মুন্নি আর তিন্নি ওখানেই।

    তুমি যাও না?

    নাঃ।

    কেন?

    ওরা ওদের মতে, আমি আমার মতো। আমার ভালো লাগে না।

    তাই? কিন্তু সিং সাহেবের মোটরসাইকেল তো দেখলাম না বাইরে। উনি নেই?

    তবে আর বলছি কী? চাচা তো গেছেন গোয়াতে দু-দিনের জন্যে চাচিকে নিয়ে রিস্তেদারের বাড়ি। কী, তওহার আছে। আর অমনি শালার বেটারা এসে হাজির। ওরা কীসব ক্যাসেট নিয়ে এসেছে সঙ্গে করে। বুলু-ফিলিমের। তাই ওরা মুন্নি-তিন্নিকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেখছে। তাতে যা-থাকে বলে ওরা, তা কি সত্যি শিষবাবু? আমার তো শুনলেই গা ঘিনঘিন করে।

    শিরীষ বিরক্ত মুখে বলল, জানি না। আমি তো দেখিনি কখনো। দেখবার ইচ্ছেও নেই।

    পুনমচাঁদজি কোথায়? তিনি কি জানেন? এসব?

    জানেন, আবার জানেনও না। জানেন ঠিক-ই। তবে দেখান যে, জানেন না।

    কেন, ভাব দেখাবেন কেন?

    যে-করেই হোক একটা হিল্লে হয়ে গেলেই তো হয় মেয়েদের। তিন-তিনটে মেয়ে ঘাড়ে। বাবাকে দোষ দিই না কোনো। আর কী খাটনি তা তো আপনি জানেন-ই শেঠ-এর কাজে। সকাল চারটেয় ওঠে–শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা। চান করে, পুজো করে। তারপরে পাঁচটার সময়ে আমার হাতে বানানো দুধের ঘটিতে চা পাতা–ফেলে ফোঁটানো এককাপ চা আর একমুঠো মাঠরি খেয়েই চলে যায় কাজে। বারোটার সময়ে দুপুরে খেতে আসে। স্রিফ দো ফুলকা, একটু ডাল, আর একটা সবজি। একটার বেশি সবজি বানাবার অবস্থাও তো নেই আমাদের। কোনোদিন হয়তো-বা একটু কাড়হি। কোনোদিন একটু দহি। ব্যস।

    বিকেলেও তো পুনমচাঁদজি খান না কিছুই।

    শিরীষ বলল।

    নাঃ গদিতেই তো খান। ঠিক এককাপ চা।

    আর রাতে?

    রাতেও দো ফুলকা ঔর থোরিসি সবজি। ঔর ডাল। বাস।

    তবে তোমার রান্নার এত গল্প শোনাচ্ছিলে কেন?

    বাবা না খেলে কী হয়? আমিও খুব কম-ই খাই। কিন্তু মুন্নি তিন্নি! এক একটা রাক্ষস! কাজের মধ্যে তো খালি খাওয়া। বাবার না আছে দেখার সময়, না শাসন করার। উচ্ছন্নে গেল মেয়ে দুটো একেবারে।

    তোমার উচ্ছন্নে যেতে ইচ্ছে করে না?

    শিরীষ শুধোল।

    গুঞ্জন মুখ তুলে চাইল। শিরীষের চোখে চোখ রাখল। টায়ে টায়ে। যাতে চাউনির একটুও উপচে পড়ে অপাত্রে না নষ্ট হয়, এমনভাবে।

    বলল, না শিষবাবু। আমি আমার মতো। আমি ওদের মতো নই।

    তুমি কার মতো?

    বললাম যে, আমি আমার-ই মতো।

    বলেই বলল, আচ্ছা, ঝিঁঝিদিদি কেমন আছে?

    তুমি চেনো নাকি ঝিঁঝিকে?

    চিনি, মানে আলাপ তো নেই। আমি একদিন লাডসারিয়া চাচার বাড়ি থেকে আসছি এমন-ই এক বিকেলে, আপনার সাইকেলের রড-এ বসে হাসতে হাসতে হাসতে চলে যেতে দেখেছিলাম। দু-জনেই খুব হাসছিলেন আপনারা। হাসতে হাসতে ঝিঁঝিদিদি আপনার বুকের ওপর ঢলে পড়ছিলেন। তারপরেও দেখেছি দু-তিনদিন।

    তাই?

    হ্যাঁ! বাড়ি এসে বাবাকে শুধোলাম। বাবার জ্বর ছিল। সেদিন গদিতে যাননি। বাবার জন্যে দাওয়াই আনতেই গিয়েছিলাম চাচিজির কাছে। বাবা বলল, যে ওঁর নাম ঝিঁঝি। কেমন আছে ঝিঁঝিদিদি?

    ভালোই। তার বিয়ের সম্বন্ধ হয়েছে। বর আসার কথা ছিল গতকাল। আসতে পারেনি। আগামী বৃহস্পতিবারে আসবে।

    বর?

    হ্যাঁ।

    সে কী। আমি তো ভেবেছি…আপনার সঙ্গেই বিয়ে হবে।

    কেন? অমন ভাবলে কেন?

    বাঃ! আপনারা দু-জনে অমন হাসছিলেন যে!

    হাসলেই কি বর-বউ হতে হবে?

    না। ঠিক তা নয়। তবে…

    তোমার হাসি ভালো লাগে না? কেউ হাসলে তোমার মন খুশি হয় না?

    সত্যি কথা বলব?

    নিশ্চয়ই। সত্যি নয় তো কি মিথ্যে বলবে?

    না। হয় না খুশি।

    খুশি হও না তুমি?

    না।

    কেন?

    কেন হব? যার জীবনে একটুও সুখ নেই, সে অন্যর সুখ দেখে খুশি হয়েই বা কেন?

    শিরীষ চুপ করে থাকল।

    গুঞ্জনের মুখটি শেষবিকেলের আলোতে রাঙিয়ে উঠেছিল। ও হাসলে, ওর দুই গালেই টোল পড়ে, চিবুকের একটু ওপরে দুটি খাঁজ পড়ে–পাতলা ভাঁজ। ভারি সুন্দর দেখায় তখন।

    হাটিয়াতে কেনা একটি সস্তা বেগুনি-রঙা মিলের শাড়ি পরেছিল গুঞ্জন। সঙ্গে একটু একটু ছিঁড়ে-যাওয়া একটা সাদা-রঙা ব্লাউজ। ম্যাচ-ট্যাচ করে শাড়ি পরার বিলাসিতা ওদের নেই। যা জোটে, তাই পরে। অথচ যৌবন এমন-ই এক সাংঘাতিক ব্যাধি যে, সেই ব্যাধিতে ভিখিরি থেকে কুকুরি সকলেই সমানভাবে আক্রান্ত হয়।

    আশ্চর্য, বিধুর এক বিষণ্ণতা, এই শেষবিকেলের নরম আলোর-ই মতো; গুঞ্জনের মুখময় ছড়িয়ে ছিল। মৌটুসি পাখিগুলো বারোমেসে জবা গাছটার রাশ রাশ ফুলে নড়ে-চড়ে ঘুরে ফিরে টুসকি মেরে মেরে ফুল চুষছিল। কাছেই, হঠাৎ ইঞ্জিন স্টার্ট-করা মার্সিডিস ট্রাকের ঘড়ঘড় আওয়াজও সেই সুন্দর বিকেলকে আচমকা খুন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। কোনো কোনো মুহূর্তের এমন-ই সৌন্দর্য থাকে, যার কাছে কর্কশ শব্দ তো অতিতুচ্ছ, মৃত্যুও হেরে যায়, দু-হাত নামিয়ে; লড়াই না করেই।

    ঝিঁঝিদিদিটা খুব বোকা আছে! বলল, গুঞ্জন।

    কেন? হঠাৎ এই কথা?

    তোমাকে ওর ভালো লাগল না? আশ্চর্য তো!

    তা, আমি কী করে বলব! হয়তো লাগে কিংবা লাগেও না। যদি লাগেও তো কী?

    তাহলে তোমাকেই তো বিয়ে করতে পারত।

    ভালোলাগার অনেকইরকম হয় গুঞ্জন। তুমি ঠিক বুঝবে না।

    কেন? বুঝব না কেন? আমি আনপড় হতে পারি কিন্তু আমিও তো মেয়ে। একজন মেয়ের মনের কথা বুঝতে পারব না?

    বলেই, বলল, ভালোলাগার বুঝি অনেকরকম হয়? কী জানি বাবা! আমি জানি না। ঝিঁঝিদিদির কথা না-হয় বাদই দিলাম, আপনার কেমন লাগে? ঝিঁঝিদিদিকে?

    শিরীষ একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমার?

    হ্যাঁ। আপনার।

    ভালো। ভালোই তো লাগে।

    আপনি কোনোদিন ঝিঁঝিদিদিকে কিছু কি বলেছিলেন?

    কী বলব?

    বিব্রত বোধ করল খুব শিরীষ। পুনমচাঁদজির মেয়ে গুঞ্জনের এই প্রত্যাশিত পৌনঃপুনিক গুঞ্জনে ও কী যে বলবে, কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে, ভেবে পেল না। তা ছাড়া, এসব বিষয় তো গুঞ্জনের এক্তিয়ার-বহির্ভূতও।

    মানে, কখনো বলেছিলেন কি ঝিঁঝিদিদিকে যে, আপনি ওঁকে…

    চমকে উঠল শিরীষ। পুনমচাঁদজির ‘অশিক্ষিত মেয়ের কাছে এমনভাবে ধরা পড়বে যে, তা কখনো ভাবেনি।

    দু-ধারে মাথা নাড়াল শিরীষ। প্রয়োজনাতিরিক্ত জোরে।

    আপনি কি ভেবেছিলেন যে, ঝিঁঝিদিদি আপনাকে মুখ ফুটে বলবেন যে, আপনাকে ওঁর ভীষণ ভালো লাগে। বলবেন, ভালোবাসেন আপনাকে? আপনি কি ভেবেছিলেন, এই কথা উনিই বলবেন?

    তারপরে শিরীষকে বিন্দুমাত্র প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়েই বলল, ছেলেদের মতো নয় মেয়েরা। মেয়েরা অনেক কিছুই পারে আবার অনেক কিছু পারেও না। ও-কথা, মুখ ফুটে যদি, অতসহজে বলাই যেত; তাহলে শুধু ঝিঁঝিদিদিই বা কেন? হয়তো…আ…মানে, অনেকেই হয়তো…

    চমকে উঠল শিরীষ। এবং ঠিক সেই সময়েই পাগলা কোকিলটা বাজারের মধ্যের দাঁড়িপাল্লা আর মালের বস্তা আর হিসেব-নিকেশ, এইমাত্র মিল-করা ‘রোকড়’ সব গোলমাল করে দিয়ে প্রচন্ড জোরে তিনবার ডেকে উঠে উঠোনের একচিলতে আকাশের ওপর দিয়ে উড়ে গেল।

    বাক্যটি শেষ করেই, যেন ফুরিয়ে গিয়েই; গুঞ্জন একদৌড়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল।

    কিছুক্ষণ স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে রইল শিরীষ।

    তারপর আলোভরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘরের অন্ধকারকে উদ্দেশ করে বলল, আমি আজ আসছি গুঞ্জন। আমি আর নাও আসতে পারি। এই দেড়বছরে যতটুকু শেখার তা শিখে গেছ।

    বলামাত্রই, গুঞ্জন ঘরের ভেতর থেকে দৌড়ে বাইরে এল। তার দু-চোখে জল ছিল। ওই গুঞ্জনের মধ্যেই যে, এই গুঞ্জনও ছিল তা আগে কখনোই লক্ষ করেনি শিরীষ। একজন প্রেমিকা-নারীকে আবিষ্কার করে আবারও চমকে উঠল ও। ভয় পেল ভীষণ। মেয়েরা বড়ো আশ্চর্য!

    গুঞ্জন বলল, আসবেন না কেন শিষবাবু? ভালোবাসা কি পাপ? আমি তো কিছুই চাইনি আপনার কাছ থেকে। আপনার ভালোবাসা তো চাইনি। আমি শুধু ভালোবাসতে চেয়েছি আপনাকে।

    এ বড়োই সাংঘাতিক জিনিস গুঞ্জন। পাপ কি না জানি না কিন্তু এ সাপ অবশ্যই। শাপও। সাপের চেয়েও বেশি বিষ ভালোবাসার। সব ভালোবাসাই মধুর নয়। এ-খেলনা নয়, গুঞ্জন। তোমাকে আমি বুঝিয়ে বলতে পারব না। পুনমচাঁদজি আমাকে খুব-ই বিশ্বাস করেন। আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না।

    একজন মানুষকে বাঁচানো আর বিশ্বাসকে মারা কি একই জিনিস শিষবাবু?

    বাক্যবন্ধটিতে চমকে উঠল শিরীষ। কার মধ্যে যে, কে থাকে! গুঞ্জন যে, এমন করে কথা বলতে পারে স্বপ্নেও ভাবেনি।

    আপনি সপ্তাহে যে, আধঘণ্টার জন্যে আসেন, সেইটুকুই আমার পুরো সপ্তাহের একমাত্র আনন্দ। আপনাকে দেখে, আপনাকে নিজে হাতে চা করে খাইয়ে, আপনাকে মিছিমিছি চটিয়ে দিয়ে; আপনাকে হাসিয়ে…আমি ঠিক বোঝাতে পারব না।

    ঠিক এমন-ই সময়ে গদির দিক থেকে কে যেন, হঠাৎ কেশে উঠল। নকল কাশি।

    গুঞ্জনের ভুরুদু-টি সঙ্গে সঙ্গে বাঁকা হয়ে উঠল। মুখ বিরক্তিতে ভরে উঠল।

    ঘাড় ঘুরিয়ে শিরীষ ওই দিকে, তাকাতেই বুঝল যে, নরাধম, জানলার সামনেই ছিল। ও ঘাড় ঘুরোতেই সরে গেল সেখান থেকে।

    গুঞ্জন গলা নামিয়ে বলল, ওই লোকটা ভালো নয় শিষবাবু। বাবা আজকাল প্রায় রোজই বাইরে থাকে সারাদিন। মানে, শেঠের কাজে মনোয়া-মিলনের বাইরে যায়। আপনি তো জানেন-ই।মুন্নি-তিন্নিও থাকে নিজেদের নিয়ে। কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়। খাবার সময়ে খেতে আসে। বাড়িতে আমি একাই থাকি। আপনি আমাকে বাঁচাতে না চান তো বাঁচাবেন না কিন্তু আমাকে মারবেন না শিষবাবু। আপনার গোড় লাগি। ওই পুরুষোত্তম কোনোদিন ঝুড়ি চাপা সাদা কবুতরকে হুলো বেড়াল যেমন করে পালক ছিন্নভিন্ন করে রক্তাক্ত করে খেয়ে যায়, লুটপাট করে যায় শরীর এবং মনকে; ও আমাকে তেমনি করেই খেয়ে যাবে কোনোদিন। আপনি আসা বন্ধ করলে বাবা ওকেই ঠিক করবে আমাকে পড়াবার জন্যে। ইতিমধ্যে একদিন এ-নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল। নিজেদের জাতের লোক। ‘জান-চিন’ পরিবার। বাবার উদ্দেশ্য অন্য। কিন্তু ওর যে, কী উদ্দেশ্য তা আমার বুঝতে বাকি নেই। বাবা খাতা বুঝতে পারে, খাতা পেটা ধার বুঝতে পারে, একনম্বর দু-নম্বরের হিসাব বুঝতে পারে কিন্তু মানুষ বোঝে না। কথা দিন আপনি যে, আসবেন আগামী বৃহস্পতিবারে?

    গুঞ্জনের মুখের দিকে চেয়ে একমুহূর্ত ভাবল শিরীষ। তারপর গদিঘরের জানলার দিকে চাইল একবার। পরক্ষণেই কী ভেবে বলে উঠল, আসব গুঞ্জন। তোমার ভয় নেই।

    আমার ভয় আমার জন্যে নয়। আমার ভয় আপনার-ই জন্যে। ওই লোকটা আপনার জানও নিয়ে নিতে পারে। সাংঘাতিক খারাপ মানুষ ও।

    তুমি জানলে কী করে?

    আমি ওর চোখ দেখেই বুঝি। বাবা ওকে কালও বাড়িতে এনেছিল। বাবা বড়োবোকা শিষবাবু। অথবা, বেশি চালাক। মেয়েদের পার করার চিন্তাতে বাবা আমাকে গলা টিপে মেরেও দিতে পারে হয়তো। হয়তো এই পুরুষোত্তমের সঙ্গে বিয়েও দিয়ে দিতে পারে। যদি ওই প্রস্তাবও কখনো ওঠে আমি আত্মহত্যা করব। কারণ ও বিয়ে করার কিছুদিন পরে নিজেই আমাকে পুড়িয়ে মারবে। আপনি জানেন না আমাদের সমাজের গরিবদের কথা। বাঙালিদের ধারণা মাড়োয়ারিমাত্রই বড়োলোক। আমাদের সমাজে যে, কী গরিবি, কী অসাম্য, কী অবিচার এখনও আছে…

    বোকার মতো কথা বলো না। আত্মহত্যা করে ভীরুরা।

    ভুল কথা। আত্মহত্যা করতে যে-সাহসের দরকার হয়, সেই সাহস কম মানুষের-ই থাকে। কত কষ্টে যে, কোনো মানুষে আত্মহত্যা করে তা কি একবারও ভেবে দেখেছেন? যার বাঁচার একটুও উপায় আছে সে কি কখনো করতে যায় আত্মহত্যা? বড়ো নিরুপায়, বড়ো অসহায় সে অভাগারা। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কার যেতে ইচ্ছে করে? যেখানে ফুল আছে, পাখি আছে, ভালোবাসা আছে, আপনার মতো মানুষ আছেন সেই জায়গা ছেড়ে যেতে কি ইচ্ছা করে?

    এসব আলোচনা পরে হবে কখনো। তোমার মনে যদি কখনো ভয় হয়–কোনো কিছুর-ই জন্যে-তুমি সোজা আমার কাছে চলে আসবে–কোনো দ্বিধা করবে না–আমাকে যে করেই হোক খবর দেবে একটা–সঙ্গে সঙ্গে আমি চলে আসব। কোনো ভয় নেই তোমার। তুমি কি আমার বাড়ি চেনো?

    প্রয়োজনে চিনে নেব। চিনি না, তবে বাবার কাছে শুনেছি, স্টেশনে যাবার রাস্তাতে মস্ত তেঁতুলগাছ আছে একটা, তার বাঁ-দিকে…

    আমি যাবার সময়ে, মুন্নি-তিন্নিকে কি ডেকে দিয়ে যাব? সন্ধে তো হয়ে এল।

    না, না। থাকুক ওরা যেখানে আছে। ওরা আমার মতো নয়। ওরা ওদের-ই মতো। ওদের কোনো সাহায্যের দরকার নেই আমার। সকলেই আলাদা আলাদা, প্রত্যেকেই প্রত্যেক্যের মতো। ওরা যাতে মজা পায়, যাতে ওদের আখের অথবা সর্বনাশ ওরা তাই করুক। তা ছাড়া, বাবা তো প্রায়-ই বলে, মুন্নি তিন্নি কত ‘এসমার্ট’–আমিই একটা অপদার্থ, কেবলি’। বাবার দু-মেয়ের হিল্লে তো হয়ে যাবেই। সে হিল্লে যেমন-ই হোক। বাবার ঘাড় থেকে নামলেই হল। সমাজে; অরক্ষণীয়া কন্যার বাবা হিসেবে দুর্নাম না-হলেই হল। চোখের আড়ালে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে যা-খুশি তাই করুক। শাশুড়ি ননদে পুড়িয়েই মারুক নয়, বেশ্যাবৃত্তি করেই খাক। যেখানেই গরিবি সেখানেই সমাজ বড়ো নিষ্ঠুর শিষবাবু। তুমি শরবাবুর বই দিয়েছিলে আমাকে পড়তে ‘পল্লীসমাজ’ হিন্দি–।  সমাজ, কিন্তু, বিশেষ করে এই গ্রামগঞ্জে এবং গরিবের সমাজ, শরৎবাবুর দিন থেকে আদৌ বেশিদূর এগোয়নি। যে যাই বলুক।

    অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন

    ভুল। একথা ভুল। দেশ অনেক-ই এগিয়েছে।

    শিরীষ, রাজনৈতিক নেতাদের মতো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মিথ্যে বলল।

    একটু থেমে বলল, এসবের আলোচনা করা যাবে পরে, অন্যদিন।

    একটু দাঁড়ান শিষবাবু।

    বলেই, ঘরের ভেতরে চলে গেল গুঞ্জন। ভেতর থেকে একটি পিরিচ নিয়ে এল। পিরিচে জল ভরে তাতে হাসনুহানা ফুল রেখে দিয়েছিল।

    মুখ নামিয়ে বলল, প্রতিবছর-ই আরও পরে ফোঁটা শুরু হয় কিন্তু কেন জানি না এবার তাড়াতাড়ি ফুটছে। আপনার জন্যে রেখে দিয়েছিলাম। আসলে রোজ-ই রাখি কিছু না কিছু। আপনাকে কখনো দিতে পারিনি সাহস করে। আজ লজ্জার মাথা যখন চিবিয়েই খেলাম তখন দেব নাই বা কেন?

    অন্যদিন, আপনি চলে যাওয়ার পরে, আপনাকে উৎসর্গ-করা ফুল আমি আমার বালিশের নীচে নিয়ে শুই। কখনো চাঁপা, কাঁঠালিচাঁপা, কনকচাঁপা, বর্ষাকালে কদম, বেলি, জুই; শীতে গোলাপ। এমন বসন্তে, মহুয়া, করোঞ্জ।

    কী করব এই ফুল?

    ভেজে খাবেন। সচ। আজীব আদমি হ্যায় আপ!

    তারপর বলল, আজ আপনি আপনার বালিশের নীচে এই মুঠিভর হাসনুহানা রেখে, শুয়ে শুয়ে আমার কথা ভাববেন। আমি যেমন রোজ আপনার কথা ভাবি ঘুমুবার আগে। ফুলের গন্ধের সঙ্গে আমার ভাবনা মিশে যাবে, যেমন করে আপনার ভাবনা মিশে যায় আমার মাথাতে রোজ রাতে!

    ফুল কোথায় পেলে?

    ইচ্ছে করেই বেরসিকের মতো বলল শিরীষ। মুনিম পুনমচাঁদজির মেয়ের মধ্যে যে, এত কাব্য, এত প্রেম আছে, বিশ্বাস করতে তখনও অসুবিধা হচ্ছিল ওর।

    যে চায়, সে ঠিক-ই পায়। ফুলওয়ালিই জানে, ফুল কোথায় পাওয়া যায়।

    ফুলগুলি কীসে নেবে ভাবছিল এমন সময়ে গুঞ্জন একটি মহুলান পাতার দোনা এনে দিল ভেতর থেকে তাতে ভেজা ফুলগুলি তুলে দিয়ে বলল, বুকপকেটে রাখুন। যেতে যেতে বুক হয়তো ভেজা ফুলে একটু ভিজে যাবে। আমার বুকও রোজ রাতে ভেজে। নিজের-ই চোখের জলে।

    শিরীষ অবাক হয়ে চেয়েছিল গুঞ্জনের দিকে।

    গুঞ্জন বলল, লজ্জার মাথা আমি সত্যিই চিবিয়ে খেয়েছি। এরপরে জানি না কী করে বাঁচা হবে আমার। আমি মরলে, আমার শব যখন চাট্টি নদীর ধারের শ্মশানে দাহ হবে, আপনি আসবেন কিন্তু। নইলে ‘পেতনি’ হয়ে আপনাকে বহত জ্বালাব বলে দিচ্ছি।

    শিরীষ সাইকেলটা ঠেলে নিয়ে উঠোনের দরজার দিকে যেতে যেতে বলল, চলি।

    কিন্তু একটা কথা বলে যান শিষবাবু। সত্যি করে বলবেন কিন্তু।

    কী?

    আপনি ঝিঁঝিদিদিকে ভালোবাসেন। তাই-না?

    জানি না গুঞ্জন।

    মিথ্যে বলবেন না। আপনার চোখ-ই বলছে।

    আমি চলি।

    যাওয়া বলতে নেই, আসুন।

    বলেই, গুঞ্জন দরজার একটি কপাট মেলে দিয়ে বেগুনি শাড়ির নরম আভায় আসন্ন সন্ধ্যাকে আরও বিধুর বিষণ্ণ করে দাঁড়িয়ে রইল।

    শিরীষ আবারও ‘চলি’ বলে, সাইকেলে উঠতে উঠতে ভাবছিল, এই দরজা দিয়েই তো কতবার ও, এ-বাড়িতে এসেছে এবং গেছে কিন্তু আজ সন্ধের পর থেকে এই যাওয়া-আসার প্রকৃতি কত ভিন্ন হয়ে যাবে। আবারও কি আসা উচিত হবে এখানে? নিরাপদ হবে?

    বাজার পেরিয়ে ফাঁকা এলাকাতে পড়েই মনে হল, প্লেট-ভরতি লোভ-জাগানো খাবার কেউ এগিয়ে দিলে বিনাবাক্যে ‘না’ করা যায়, টাকার বাণ্ডিল দিলেও তাও সহজে প্রত্যাখ্যান করা যায়, কোনো নারী তার শরীর, মন-বিবর্জিত শরীর নিবেদন করলেও নিজের শরীর মনকে কুঁকড়ে নিয়ে পিছিয়ে গিয়ে তাও নিতে অস্বীকার করতে পারা হয়তো যায়; কিন্তু কেউ অকৃত্রিম মনোজ ভালোবাসা, হাসনুহানা ফুলের সঙ্গে দিলে তা ফিরিয়ে দেওয়াটা যে, কত বড়ো কঠিন কাজ, কত দুঃখবহ কাজ; তা এই মুহূর্তের আগে ও কখনোই ভেবে দেখেনি।

    হৃদয়ের অর্ঘ্য ফেরানো বড়োই মুশকিল, মানুষ হিসেবে নিজে নিতান্তই হৃদয়হীন না হলে।

    তা ছাড়া, যে, তার চিকন পবিত্র করপুটে করে সেই শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছে তার যোগ্যতা বিচারের যোগ্যতা গ্রহীতারও বোধ হয় কখনোই থাকে না। শুধুমাত্র প্রেম-ই, নিবেদকের সমস্ত অসম্পূর্ণতা-অযোগ্যতাকে হৃদয়ের নির্মল পবিত্রতায় ধুয়ে-মুছে নিয়ে যেতে পারে। সেই নিবেদনের দীপ্তিতে নিবেদকের অপারগতার অকৌলীন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ বোধ হয় বড়ো আশ্চর্য দান! দাতা ও গ্রহীতা দু-জনেই আকস্মিক অভিভূতির আচমকা গতিজাড্যতে অনবধানে ভেসে যায় নিরুদ্দেশে, পরিণতি সম্বন্ধে সম্পূর্ণই অনবহিত হয়েও।

    মানুষের রক্তর যেমন কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই, প্রেমও নিজেই স্বরাট, অন্যান্য এবং বিশিষ্ট এক প্রজাতি। প্রেম-এর প্রজাতিতে কোনো শ্রেণিবিন্যাস নেই। ধর্মের কচকচি নেই। জাত-পাত নেই। পৃথিবীর সব ধর্মের-ই বড়ো ধর্ম হচ্ছে প্রেম। তা মানুষের প্রতি প্রেম-ই হোক, কী ঈশ্বরের প্রতি।

    গুঞ্জনের প্রেম বড়োই বিপদগ্রস্ত করেছে শিরীষকে। বড়োই বিপদ তার। এমন দুর্ঘটনা যে, ঘটতে পারে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি আগে।

    গুঞ্জনের দেশ রাজস্থানের আলোয়ার-এ। অনেক গল্প করেছে গুঞ্জন ওর দেশের। ওর ছেলেবেলার। ওদের দারিদ্রর। ওর মরে-যাওয়া মায়ের। জাতে ওরা গোয়ালা। ও যখন ছোটো ছিল, পনেরো বছর অবধি ও গোরু চরাত। দারিদ্র ছিল চরম, কিন্তু তবুও কী সুন্দর, খোলামেলা, ভাবনাহীন প্রকৃতি-সম্পৃক্ত ছিল সেইসব দিন! যৌবনকে দারিদ্র্যও ছুঁতে পারে না কলুষিত করতে পারে না।

    মনোয়া-মিলনের পথে সাইকেল চালাতে চালাতে যেন, দেখতে পেল শিরীষ এমনি এক আসন্ন-সন্ধ্যায় হাতে পাঁচন-বাড়ি নিয়ে শতচ্ছিন্ন, রাজস্থানি ঘাগরাপরা, অনির্বচনীয় সারল্য ভরা মুখের একটি মেয়ে তার গোরুদের নিয়ে ঊষর চারণভূমি থেকে ফিরে আসছে গ্রামের দিকে। গোরুর খুরে খুরে ধুলো উড়ছে। গোধূলিবেলায় শেষপ্রহরের সূর্য উজ্জ্বল নরম আলোর করুণ চিরুনি বোলাচ্ছে পায়ে-চলা পথপাশের বাবলার ডালে। দূরে দেখা যাচ্ছে, উঁচু পাঁচিল ঘেরা আলোয়ার শহর, দুর্গ। মন্দিরের সন্ধ্যারতির ঘণ্টা বাজছে। গুঞ্জনের পালের গোরুদের মধ্যে একটি ডেকে উঠল ‘হাম্বা’ করে। গুঞ্জন মুখ ঘুরিয়ে দেখল। তার চুলের ঢল নেমেছে গালের ওপরে। মুখ-ঘোরানোতে বুকের ওড়না খসে গিয়ে কচি-বুক আড়াল-করা কাঁচুলি বেরিয়ে পড়ল। আবার ওড়না ঠিক করে নিল গুঞ্জন। মুহূর্তের জন্যে তার মুখ সেই সাঁঝবেলাতে এক, দৈবী-দীপ্তি পেল যেন!

    আশ্চর্য। গুঞ্জনের-ই মুখে শোনা তার ছেলেবেলার গল্প আজকে কতদিন পরে চিত্রকল্প হয়ে ফিরে এল শিরীষের স্মৃতিতে। কী নিখুঁত অনুপুঙ্খতাতে।

    রাজস্থানের আলোয়ারের সুন্দরী, সপ্রতিভ, বুদ্ধিমতী এক রাখাল-বালিকা বড়ো দেরি করে ফেলল এই ‘মনোয়া-মিলন’-এ এসে পৌঁছোতে।

    বনে অথবা মনে, সময়মতো না পৌঁছোতে পারলে সব-ই গন্ডগোল হয়ে যায়।

    গুঞ্জনের জন্যে ভীষণ-ই মন খারাপ হয়ে গেল শিরীষের। ঝিঁঝির জন্যেও হয়। বুড়ি-মাই এর জন্যে হয়। কালুর জন্যেও হয়। কালু কুকুর না হয়ে মানুষ হলে কী ভালোই হত। মাঝেমধ্যেই ভাবে শিরীষ।

    কিন্তু হত কী?

    এও ভাবে।

    মনখারাপ, এমনকী, ঘণ্টেমামার জন্যেও হয়।

    ঘণ্টেমামার আসল সমস্যাটা এক্সটেনশনের। ডালটনগঞ্জের হরিরামবাবুর কাছে শুনেছে শিরীষ যে, এ-বছরই ঘণ্টেমামাকে রিটায়ার করতে হবে। হরিরামবাবু আচ্ছরাম কালখফ লাক্ষা কোম্পানিতে কাজ করেন। যদি ঝিঁঝির সঙ্গে নীলোৎপলের বিয়েটা ঘটিয়ে দিতে পারেন তাহলে ঘণ্টেমামার চাকরির মেয়াদ আরও পাঁচবছর কমপক্ষে বেড়ে যাবে। মুখ্যত সেই কারণেই, এই হরকত।

    তবে এটাকে দোষের মধ্যে বা মতলব-এর মধ্যে গণ্য করে না শিরীষ। নিজের ভালো কে না চান! বিয়ে-থাও করেছেন খুব দেরি করে। ছেলেটি এখনও পড়ছে। পড়াশুনোতেও কিছু আহামরি নয়! মেয়েটি তো বেশ ছোটোই। নয়-দশ বছরের। তাই চিন্তা হওয়ারই কথা। আর রিটায়ার করলেও এমন কিছু লাখ লাখ গ্র্যাচুইটি, পি-এফ, পেনশন পাবেনও না যে, সেই টাকায় দিন গুজরান হবে। ওসব আদৌ আছে কী নেই, ওঁদের কোম্পানিতে তাই বা কে জানে! হয়তো হেড-অফিসের কর্মচারীদের জন্যে আছে। জঙ্গলে জঙ্গলে যারা থাকেন তাঁদের কথা আর কে ভাবেন! অথচ প্রয়োজনটা, জীবনের ঝুঁকিটা; তাঁদের-ই সবচেয়ে বেশি। এদেশের সবকিছু সুযোগ-সুবিধাই শহর-ভিত্তিক।

    বেচারি ঘণ্টেমামা!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভালো লাগে না – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article প্রথম প্রবাস – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }