Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিচিত চিন্তা – আহমদ শরীফ

    আহমদ শরীফ লেখক এক পাতা গল্প450 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বাংলা সাহিত্যের ইসলামমুখী ধারা

    মুসলমানদের ভারত অধিকার ভারতবর্ষের সামাজিক ও কৃষ্টির ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইতিপূর্বে শক-হুঁণদল এসেছিল; ভারতবাসীরা অনায়াসে তাদের গ্রহণ করতে পেরেছিল। কিন্তু বহিরাগত পাঠান-মুঘলকে এদেশীয় সমাজ আত্মস্থ করতে পারেনি। তার কারণ মুসলমানেরা শুধু বিশেষ আকৃতি, প্রকৃতি ও বাহুবল সম্বল করে আসেনি, এনেছিল যুক্তি-নির্ভর এবং প্রত্যয়-দৃঢ় ধর্ম, সমাজ, আচার আর রাষ্ট্রাদর্শ–যার সামাজিক ও পারমার্থিক প্রভাব ছিল অসাধারণ–এত অসাধারণ যে, তা আজকের দিনের বোলশেভিকবাদের চাইতেও সর্বগ্রাসী এবং আণবিক বোমার চাইতেও বিস্ময়কর। ফলে মুসলমানদের এক দেহে লীন করা সম্ভব হয়নি কোনোমতেই। কিন্তু আচার-নিষ্ঠ ব্রাহ্মণ্যধর্মও পর্যদস্ত হবার নয়; এর অন্তর্নিহিত শক্তিই এই নবশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবার যোগ্য ছিল। তাই ভারতীয় সনাতন ধর্ম জখম হল নানাভাবে কিন্তু লুপ্ত হল না। ফলে ব্রাহ্মণ্যধর্ম না হল ইসলামে বিলীন, না পারল মুসলমানদের বিলীন করতে। বিজেতা ও বিজিতদের তথা শাসক ও শাসিতদের মধ্যেকার এ স্নায়ুবিক দ্বন্দ্ব দেখা দিল বড়ই তীব্র হয়ে। কেউ কাকেও না পারে গ্রহণ করতে, না পারে গ্রহণ করাতে। অবস্থাটা যেন কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমান। উভয় পক্ষই বুঝল–এ অবস্থা অসহ্য, এর আশু সমাধান প্রয়োজন। বর্ণাশ্রম কণ্টকিত অনুদার রক্ষণশীল হিন্দু সমাজেও ভাঙন ধরল ইসলামের সাম্য-ভ্রাতৃত্বের চুম্বকাকর্ষণে।

    এ সমস্যার সমাধানার্থ শুরু হল সমাজ-চেতন মনীষীদের সাধনা। ধর্ম সমন্বয়ের ও ঐক্যের বাণী ভারতের সর্বত্র ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। রামানন্দ, নানক, কবির, একলব্য, দাদু, চৈতন্য ও সম্রাট আকবর থেকে গান্ধী পর্যন্ত এ ধারার সাধনা অব্যাহত ছিল। এ পথে গান্ধীর রামধূন সঙ্গীতকে শেষ প্রয়াস বলে ধরে নেয়া চলে। এইসব মনীষীদের যা ছিল সচেতন প্রয়াস, অশিক্ষিত জনসাধারণের অবচেতন মনে তার প্রতিক্রিয়া ছিল শ্লথ ও মন্থর। তাই সাতশ বছরের এ একাগ্র সাধনা আশানুরূপ ফলপ্রসূ হয়নি। মনীষীদের দূরদৃষ্টি জনসাধারণের মধ্যে ছিল একান্তই দুর্লভ। তাই সমঝোতা হল, বন্ধুত্ব হল, আত্মীয়তাও না হয়েছে তা নয়, কিন্তু এ বন্ধনসূত্র দৃঢ় ছিল কোথাও। ফলে যেহেতু গড়ন ভঙ্গিতে পারে আছে কত খল, সেহেতু অল্লোপরিষদ থেকে রামধূন সঙ্গীত পর্যন্ত সবকিছুর আবেদন কার্যক্ষেত্রে বারবার ঠুনকো কাঁচের মতো অসার প্রতিপন্ন হয়েছে।

    বলেছি, অশিক্ষা ও অদূরদর্শিতার দরুন জনসাধারণের মনে ঐক্য ও সমন্বয় প্রয়াস সচেতনভাবে কার্যকর হয়নি। সেইজন্যে যদিও এখানে সেখানে পারস্পরিক প্রভাবে অজান্তে সংস্কার ও কৃষ্টিগত সংমিশ্রণ ঘটেছিল, তথাপি আচরণে না হোক উভয়পক্ষের স্বধর্মনিষ্ঠা ও স্বধর্ম মাহাত্মগর্ব প্রবল ছিল। ফলে তারা ঘাটে-মাঠে ও হাটে-বাটে মিলেছে, কেননা জীবিকা ছিল তাদের অভিন্ন, কিন্তু জীবনদর্শনে মেলেনি। কাজে মিলেছে, ভাগ্যও ছিল একসূত্রে গাঁথা; তাই পণ্য দিয়েছে, কিন্তু প্রেম দেয়নি; সহায়তা করেছে কিন্তু সোহাগ দেখায়নি। একে অপরের পাশে ছিল, কেউ কেউ কাকেও মনের কাছে পায়নি। কেননা মন ছিল বিচ্ছিন্ন ও বিপরীতমুখী।

    এইরূপে অধিকাংশের গোঁড়ামির ফলে স্বল্প-সংখ্যকের উদারতার ক্ষীণধারা কখনও সুপ্ত কখনও বা লুপ্তই হয়ে গিয়েছে। তবু যাঁরা আশাবাদী, তারা কোনোদিন হাল ছাড়েননি। তাই মধ্যযুগের ধর্মসাধকগণ থেকে বাঙলাদেশের বাউল-মুর্শিদপন্থীরা পর্যন্ত এবং সে-যুগের রাষ্ট্রসাধক আকবর থেকে এ যুগের গান্ধী তক্‌ সকলেই আন্তরিকভাবে সমঝোতা-সমন্বয় সাধনা করে গেছেন।

    চণ্ডীদাস বলেছেন : সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। আর একজন লোক-সঙ্গীতকার বলেছেন :

    নানা বরণ গাভীরে ভাই একই বরণ দুধ।
    জগৎ ভ্রমিয়া দেখিলাম একই মায়ের পুত।

    কিন্তু জনসমাজে এসব বাণী আশানুরূপ সমাদর পায়নি। নাড়া দেয়নি মস্তিস্কে, সাড়া জাগায়নি হৃদয়ে, আলোড়ন আনেনি সমাজে। তাই হিন্দুর ধর্মশাস্ত্রের কাহিনী মাতৃভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে উদারপন্থীরা প্রবল বাধা পেয়েছিলেন–অস্টাদশ পুরাণানি রামর্শ চরিতানি চ ভাষায়াং মানবঃ শ্রুত্বা রৌরবং নরকং ব্রজেৎ।] তেমনি মুসলমান লেখকরাও স্বজাতি থেকে কম ধমক খাননি। ষোলো শতকের কবি সৈয়দ সুলতান বলেন–না বুঝে বাঙ্গালী সবে আরবি বচন তাই আপনা দীনের বোল এক না বুঝিলা। এবং

    যে সবে (মৌলবীরা) আপনা বোল না পারে বুঝিতে।
    পঞ্চালী রচিলু করি আছএ দূষিতে ॥
    মোনাফেক বলে মোরে কিতাবেতু কাড়ি।
    কিতাবের কতা দিলুম হিন্দুয়ানি করি ॥ ….
    তেকারণে কত কত পশুবুদ্ধি নরে।
    কিতাব ভাঙ্গিলু করি দোষএ আমারে।

    কিন্তু কোনো বাধাই টিকল না, কারণ কবির আত্মবিশ্বাস ছিল দৃঢ় এং সত্যোপলব্ধি সম্বন্ধে ছিলেন স্বয়ং নিঃসন্দেহ-মমাহোর মনের ভাব জানে করতারে। এবং এজন্যেই তিনি পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে বলেছেন–নবীবংশ ও সবে মেরাজ —

    এ দুই পুস্তক যেই পালিবারে পারে।
    আল্লার গৌরব হৈব তাহার উপরে ॥

    এমনি বিশ্বাস নিয়ে মালাধর বসুও বলেছেন :

    পুরাণ পড়িতে নাই শূদ্রের অধিকার।
    (তাই) পাঁচালী পড়িয়া তর এ ভব সংসার ॥

    এইরূপে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে মধ্যযুগে জায়নুদ্দিন, সৈয়দ সুলতান মোহাম্মদ খান, শেখচান্দ, সাবিরিদ খান, আবদুল হাকিম প্রভৃতি বহু মুসলমান কবি একদিকে যেমন রসুল ও ইসলাম বিষয়ক নানা গ্রন্থ রচনা করেছেন, তেমনি আবার তারা গোরক্ষবিজয়, জ্ঞানপ্রদীপ, সুরতনামা, যোগকালন্দর, হরগৌরী-সংবাদ, নুরজামাল, জ্ঞানসাগর প্রভৃতি তত্ত্ব-সাহিত্য এবং রাধা কৃষ্ণবিষয়ক পদাবলী রচনা করে হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের মৌলিক ঐক্য সন্ধানে প্রয়াস পেয়েছেন। সুতরাং সেইযুগে একদিকে উদারপন্থীদের সমন্বয় ও মিলন মোহ এবং অপরদিকে গোড়াদের বঙ্গভাষাপ্রীতির অভাব বাংলা সাহিত্যের ইসলামমুখিনতার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

    ইংরেজ আমলে পাশ্চাত্যাদর্শে আধুনিক সাহিত্যধারা শুরু হল। এই যুগেও আমরা মীর মশাররফ হোসেন প্রভৃতির মধ্যে স্বধর্ম ও স্বজাতিনিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় জাতীয়তা আর সংস্কারের প্রভাবও দেখতে পাই। বিষাদ-সিন্ধুতে স্বর্গমর্তের হিন্দুয়ানি কল্পনা প্রশ্রয় পেয়েছে। তারই সমসাময়িক কবি শামসুদ্দিন সিদ্দিকীর ভাবলাভ কাব্যের পারমার্থিক সংগীতের কালার সাক্ষাৎ মিলে। আশ্চর্য এই যে, এঁরা বঙ্কিমচন্দ্রের সমসময়ের হলেও বঙ্কিমের তথাকথিত মুসলমান বিদ্বেষের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ হিন্দুর অকল্যাণ কামনা করেননি।

    আবার সৈয়দ সুলতান সে-যুগে যে-বাধা পেয়েছিলেন, এ-যুগে কোরআনের বঙ্গানুবাদেও সে বাধা বেশ কিছুকাল প্রবল ছিল। তাই আধুনিক যুগে কোরআনের প্রথম অনুবাদ ও রসুলের জীবনী রচিত হয় হিন্দুর দ্বারা। কৃষ্ণকে মুসলমান-লেখক অন্যতম পয়গম্বর বলে স্বীকৃতি দিতেও কুণ্ঠিত হননি। এভাবে নজরুল ইসলামের কাব্যে আমরা শেষবারের মতো হিন্দু-মুসলিমের মিলন-প্রয়াস লক্ষ্য করি। তবু এ-যুগের বিকাশোন্মুখ ধর্ম ও জাতীয়তাবোধের ফলস্বরূপ আমরা মোজাম্মেল হকের জাতীয়ফোয়ারা, কায়কোবাদের অমিয়ধারা এবং ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মুসলিমঐতিহ্যপ্রধান স্পেনবিজয়, অনল প্রবাহ প্রভৃতি কাব্য-কবিতা পেয়েছি। কিন্তু তাদের এ প্রয়াস খুব সচেতন ছিল না, মূলত হালীর মুসদ্দস ও সৈয়দ আহমদের আলীগড় আন্দোলনের পরোক্ষ প্রভাবেই তাদের সাধনা শুরু হয়। কিন্তু মুসলমানদের আচরণে না হোক, আস্থার দিক থেকে এতটুকু স্বধর্মচ্যুতি ঘটেনি কোনোদিন। এই সময়েই ইমাম গাজ্জালীর কিমিয়া-ই সাদৎএর অনুবাদ সৌভাগ্য স্পর্শমণিও প্রচারিত হল। শুধু তাই নয়, তিতুমিরের আযাদীস্বপ্নের এবং যুক্তিবাদীদের ওহাবী আন্দোলনের প্রভাবও তাঁদের উপর কিছু কম ছিল না।

    এইরূপ দুই বিরুদ্ধ আদর্শের ঠেলাঠেলিতে অবশ্য ইসলামও টিকে ছিল, মুসলমানও বেঁচে ছিল, কিন্তু ইসলামমুখী মনোভাবের তীব্রতা কোথাও ফুটে ওঠেনি। তাই আমাদের সাহিত্যে সাম্প্রত পূর্বযুগে নিরবচ্ছিন্ন ইসলামমুখিতার নিদর্শন নেই।

    অত্যাধুনিক যুগে নজরুল ইসলাম ইসলামবিষয়ক অনেকগুলো গান এবং কয়েকটি কবিতা লিখেছেন। এগুলো থেকে অনেক মুসলমান পাঠক ও কয়েকজন লেখক ইসলামী প্রেরণা পেয়েছেন। তবে অপ্রিয় হলেও এখানে বলা আবশ্যক যে, নজরুল ইসলাম প্রথমত বাঙালি তথা ভারতীয় জাতীয়তায় (হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে) বিশ্বাসী ছিলেন। দ্বিতীয়ত তার মধ্যে বিশ্বমুসলিম জাতীয়তাবোধ ছিল না। তার কারণ, তাঁর কাব্য-প্রেরণার উৎস ও লক্ষ্য ছিল মানবনিষ্ঠা। তার ধর্মবোধও ছিল মানবনিষ্ঠ। তিনি ছিলেন একান্তভাবে স্বদেশপ্রেমিক, স্বজাতি (ভারতবাসী)-নিষ্ঠ ও নিপীড়িত মানবতার দরদী কবি। এই স্বদেশ ও মানবনিষ্ঠ কাব্যসাধনার আনুষঙ্গিক ফলস্বরূপ আমরা তাঁর কাছে ইসলামী কবিতা ও গানগুলি পেয়েছি। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা ও প্রেরণা ইসলাম-প্রীতিপ্রসূত নয় বরং তীব্র আযাদী-বাঞ্ছা ও মানবতাবোধের পরিচয় ও পরিপূরক। সুতরাং কবির জিঞ্জির মুসলিম কবিতার সমষ্টি বলে বিজ্ঞাপিত হলেও আসলে ওটা তা নয়।

    যা হোক, কয়েকজন লেখক এর মধ্য থেকেই ইসলামের শিক্ষায় ও মুসলিম ঐতিহ্যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে নজরুলের সমসাময়িক গোলাম মোস্তফাই প্রথম। কিন্তু তার রচনায় গণচিত্তে প্রেরণার তরঙ্গ তুলবার মতো তীব্রতা ছিল না। তিনি নিজে উদ্বোধিত হয়েছিলেন সন্দেহ নেই, কিন্তু পাঠকসাধারণকে অনুপ্রাণিত করবার সামর্থ্য ছিল না তাঁর কলমের। শাহাদৎ হোসেনের লেখার আবেদনও পাঠকচিত্ত স্পর্শ করেনি। তারপর অনেক পরে বাঙলা সাহিত্যক্ষেত্রে এলেন বেনজীর আহমদ। তিনি বিপ্লবী কবি বলে একসময় পাঠকসাধারণের অকুণ্ঠ অভিনন্দন পেয়েছেন। তার ইসলাম ও মুসলমান বিষয়ক কবিতাগুলো কিশোর ও তরুণ-হৃদয়ে সাড়া জাগাতে সমর্থ হয়েছিল। ভাবে ও ভাষায় তিনি নজরুলেরই মানসসন্তান। কিন্তু নজরুলের মতো অফুরন্ত প্রাণময়তা ও উচ্ছ্বাস-প্রাচুর্য তাঁর ছিল না। ফলত তিনি যেমনি অতর্কিতে সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তেমনি অকস্মাৎ যেন আত্মগোপন করেছেন। ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্যানুসারী আর দুজন কবি হচ্ছেন ফররুখ আহমদ ও সৈয়দ আলী আহসান। ফররুখ আহমদের মধ্যে ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্যমোহ তীব্র আবেগ জাগিয়েছিল। অনুরাগের সঙ্গে অবচেতন ভাবালুতা তাঁকে আবেগমুখর এবং সংবেদনশীল সৃষ্টিপ্রবণ করেছে। ইসলামের উন্মেষযুগের মুসলমানদের প্রাণময়তা ও জীবনবাদ মুগ্ধ করেছে তাকে। তাই তিনি হেরার রাজ তোরণের ও নারঙ্গীবনের স্বপ্ন দেখেন এবং সে-স্বপ্ন আজকের দিনে বাস্তবে রূপায়িত করবার অভিলাষও যেন পোষণ করেন। এইজন্যে তাঁকে Revivalist বলা যেতে পারে। কোনো জিনিসের Form ও Spirit এক বস্তু নয় এবং তাদের অনন্যপেক্ষ সত্তা উপলব্ধি সম্ভব। ইসলামকে যে-অর্থে আমরা চিরকালের সর্বদেশের চিরমানবের ধর্ম বলি, তা হচ্ছে ইসলামের spirit বা শিক্ষার মূলসূত্রগুলোর চিরমানবের সমাজে প্রযোজ্য হবার যোগ্যতা। অর্থাৎ আমাদের প্রয়োগবিধি ও জীবনপ্রণালী বদলাবে কিন্তু আদর্শ, উদ্দেশ্য ও নীতি অপরিবর্তিত থাকবে। কালে কালে প্রয়োগ-ধারা পালটাবে, কিন্তু নীতি ও লক্ষ্য থাকবে স্থির-অচঞ্চল। কাজেই Revival-এর প্রয়াস শুধু অবান্তর নয়, অনভিপ্রেতও বটে। যারা শুধু আত্মা (spirit) নয়, বহিঃরূপেরও (Form) পুনরাবর্তনের পক্ষপাতী, আজকের দুনিয়ায় তাঁদের অভিলাষ হয়তো পূর্ণ হবার নয়। ফররুখ ইসলাম-পূর্ব ও ইসলামোত্তর আরবি ঐতিহ্যের গৌরব-গর্বী। ফররুখের এই আরব ঐতিহ্য-প্রেরণাজাত সাতসাগরের মাঝি, হাতেম ও নৌফেল, হাতেমতায়ী, সিরাজুমমুনিরা বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যে-ঐতিহ্যানুগ অবচেতন ভাবালুতা ফররুখের কাব্যপ্রেরণার উৎস, সৈয়দ আলী আহসানের মধ্যে সে-ভাবালুতা ছিল না, অর্থাৎ তিনি ইসলাম বা মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতি মোহগ্রস্ত নন, তাঁর কাব্যসাধনা ছিল আদর্শানুশীলনের সচেতন প্রয়াস মাত্র। এ কারণে তাঁর কবিতা আবেগমুখর নয় বরং বিদগ্ধমনের প্রয়াসচিহ্নিত। এজন্যেই বোধ হয় তাঁর এ ধারার কাব্যসাধনা চাহার দরবেশের সাথী হয়ে গহন বনে পথ হারিয়ে ফেলেছে।

    এদেরই প্রায় সমসময়ে আমরা তালিম হোসেনকে পেলাম। তাঁর প্রেরণার উৎস ইসলাম বা মুসলিম ঐতিহ্যবোধ নয়–বরং মুসলিম জাতীয়তাবোধ। তাঁর আযাদীর স্বপ্ন ও উল্লাসজাত পাকিস্তানী কবিতা ও গান বিভাগপূর্ব বাঙলাদেশে পাঠকসাধারণের অজস্র প্রশংসা অর্জন করেছে।

    নজরুলোত্তর এ ধারার কবিগণ ১৯৩০ সালের মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতত্ত্ব ও ১৯৪০ সালের পাকিস্তান পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে কাব্যসাধনা আরম্ভ করেন। এইক্ষেত্রে ইকবালের কাব্যসমূহ তাদের প্রেরণার পরিপোষক ছিল। ধর্মবোধের পরিসরে বিশ্বমুসলিম জাতীয়তা ও সমাজবোধ অর্জনই ছিল ইকবাল-কাব্যের মূল সুর। তিনি যথার্থই উপলব্ধি করেছেন–আচারিক ও আনুষ্ঠানিক ধর্ম সবসময় সমাজকেন্দ্রিক; এবং পারমার্থিক বা আধ্যাত্মিক সাধনা জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে প্রজ্ঞাদৃষ্টি লাভের সহায়ক। আমরাও স্বীকার করি যে, ধর্মবোধ সামাজিক প্রয়োজনে অপরিহার্য। ইকবালের শেকওয়া, আরারে খুদী ও রমুজে বেখুদী প্রভৃতির লক্ষ্যও এই। ইকবালের কর্ম ও কাব্য-প্রেরণায় হালী ও সৈয়দ আহমদের প্রভাব প্রবল ও প্রকট। বস্তুত তিনি তাদের স্বপ্নকেই সার্থক করে তুলতে চেয়েছেন। ইকবাল তাদের যোগ্যতম মানস-সন্তান।

    মধ্যযুগে ও নজরুলপূর্ব আধুনিক যুগে বাঙলা সাহিত্যের ইসলামমুখী যে-ধারার কথা উল্লেখ করেছি, তা মুখ্যত ধর্মানুরাগজাত। নজরুলের সম-সময়ে তা ছিল প্রধানত সমাজবোধানুষঙ্গিক এবং পরবর্তীকালে অর্থাৎ বেনজীর আহমদের কাল থেকে তা হল নিছক জাতীয়তা, সমাজবোধ ও আযাদী প্রেরণাপ্রসূত। আযাদী-উত্তর যুগে এ আবার শুধু রাষ্ট্র ও সমাজাদর্শের বাহনই যে হয়েছে, তা আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং এ ধারার কাব্য-সাহিত্যকে যদিও আমরা ইসলামমুখী ধারা নামে অভিহিত করেছি, তবু বিভিন্ন যুগে এ সাহিত্যের প্রেরণা, ব্যঞ্জনা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ভিন্ন। ভিন্ন ছিল। অতএব আপাতদৃষ্টিতে বিষয়সাদৃশ্যে এ সাহিত্য একক ধারার অন্তর্গত বলে মনে হলেও আসলে বিভিন্ন যুগের এ সাহিত্যের মধ্যে কোনো ভাবগত মৌলিক ঐক্য নেই।

    পাকিস্তান অর্জনের পর থেকে জনসাধারণের ইসলাম ও মুসলিম তমদুন-প্রীতি সর্বত্র আলোড়ন জাগিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামমুখী কর্মপ্রেরণা ও সাহিত্য সাধনার অভাবে ঘোচেনি। আজকের যুগে জীবন-সমস্যা উৎকট আকারে দেখা দিয়েছে, তাতে নিতান্ত বেঁচে থাকার সাধনা ছাড়া অন্য সাধনা ঠাই পাবার কথা নয়। জাতি ও শ্রেণীসংগ্রামে আজকের পৃথিবী জর্জরিত ও মুমূর্ষ। যে-দেবতা বর দিতে পারে না, তার পূজা হয় না। আজকের অধার্মিকতা আস্থাহীনতার জন্য তত নয়, যতটা ক্ষোভ, নৈরাশ্য ও জেদজাত! এই সব কারণেই ইসলামমুখী সাহিত্য-সাধক আজ দেশে নিতান্ত বিরল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচট্টগ্রামের ইতিহাস – আহমদ শরীফ
    Next Article আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট – আহমেদ রিয়াজ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }