Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিচিত চিন্তা – আহমদ শরীফ

    আহমদ শরীফ লেখক এক পাতা গল্প450 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কেজো ও অকেজো সাহিত্য

    জার্নাল কাব্য হয় কি-না কিংবা কাব্য জার্নাল হতে পারে কি-না এ নিয়ে তর্ক চলতে পারে। কিং নিরর্থক। কেননা, পরিণামে স্বীকার করতেই হবে যে জার্নালও সাহিত্য হয়, আর সাহিত্যও জার্নাল হতে পারে। এ-কথা এমন নিঃসংশয়ে বলতে পারছি, রবীন্দ্রনাথের শেষের দশ-বারো বছরের রচনার নজির সামনে রয়েছে বলেই।

    এ যদি সত্য হয়, তাহলে জটিল কথার জাল না-পেতেই বলা যায় সাহিত্যের দুই তত্ত্ব দুইরূপ, একটি তার ব্যবহারিক ও প্রাত্যহিক দিক, অপরটি তার আত্মিক ও চিরন্তন রূপ। এমনকি শক্তিমানের হাতে পড়লে একাধারেই দুইরূপ–দুইতত্ত্ব পাওয়া যেতে পারে; শেক্সপীয়র-ভিক্টর হুগো-গ্যেটে-টলস্টয় ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে তার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এবং বড়-ছোট সব লেখকেরই সার্থক রচনায় এর প্রমাণ কিছু কিছু মিলবে।

    যেহেতু মানুষের কোনো আচরণই স্থানিক, কালিক ও ব্যক্তিক প্রভাব-নিরপেক্ষ নয়, সেহেতু প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পারিবেশিক প্রভাব রচনায় না-থেকেই পারে না। সাধারণভাবে বলতে গেলে, চিন্তার উৎপত্তি ঘটে পরিবেশ থেকেই। Thought-provoke করাবার কারণ সবসময়ই আবেষ্টনীর মধ্যে ব্যাপ্ত থাকে। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে কোনো ভাবই নিরূপ-নিরপেক্ষ হতে পারে না, যেমন আগুন হতে পারে না নিরবলম্ব। কাজেই চিন্তার জাগরণ যখন আপেক্ষিক এবং তা পরিবেষ্টনী-উদ্ভূত–তথা সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র-সংস্কারপ্রসূত অন্তত সে-সংস্কার সংপৃক্ত, তাহলে। মানবিক আচরণে নির্জলা নিরূপ-নিরপেক্ষ কিছু আরোপ করা অসম্ভব। এদিক দিয়ে যাচাই করলে আমরা দেখতে পাব যে মানুষের ভাব-চিন্তা-অনুভূতি বাহ্য প্রয়োজন, প্রেরণা বা উত্তেজনা জাত–তা স্কুলও হতে পারে, আবার এমন সূক্ষ্মও হয়, যা সচেতনভাবে ঠিক উপলব্ধি করা যায় না। কিন্তু অবচেতনার প্রভাবে অভিভূতি আনে। যা স্কুল তা বাহ্য প্রয়োজন মিটায়। যা সূক্ষ্ম ও পরোক্ষ তা দিয়ে ব্যবহারিক জীবনের কোনো কাজই হয় না হয়তো। যেমন কেজো কিছু হয় না ফুল বা পাতাবাহারের গাছ দিয়ে। কাজেই দেখা যাচ্ছে সাহিত্যও দুই প্রকার-কেজো আর অকেজো। অপ্রয়োজনের প্রয়োজন বোঝানো সহজ নয়, তেমনি অকেজো সাহিত্যের কার্যকরতা দেখানো কঠিন। তবে বলা যায়, জীবনে সুন্দরের যে-স্থান, মনে অকেজো সাহিত্যেরও সে-চাহিদা। আজ স্বার্থবুদ্ধির ফেরে পড়ে দুনিয়ার লোক কেজো সাহিত্যের অনুরাগী হয়ে উঠেছে। অকেজো সাহিত্যের নামে তারা চরম অবজ্ঞায় নাক সিটকায়। তাদের বক্তব্য অনেকটা এরকম : অন্নের কাঙাল চাষীর ধান-পাটের চাষই জীবনের ব্রত। কেননা ক্ষুধার অন্ন যোগাড় করাই তার লক্ষ্য। সে যদি ধান-পাট ক্ষেতে ফুলের বাগান করার শখ করে, তাহলে তা হবে তার পক্ষে আত্মহত্যার সামিল। তাকে আমরা বলব মূর্খ, বিকৃতবুদ্ধি কিংবা নির্বোধ। সে ঘৃণ্য। আজকের দিনে সমস্যা-বিমূঢ় কাঙাল মানুষ তাই কেজো সাহিত্যের পক্ষপাতী। তাদের মতে সাহিত্য-বিলাসের পরিবেশ পৃথিবীতে আজ দুর্লভ। তাই রসকৈবল্যাদর্শের প্রতি তারা মারমুখো। তারা সংখ্যাগুরু। কাজেই সবাই তাদের দাপটে কাবু-খামোশ হয়ে আছে।

    তাই বলে অকেজো সাহিত্য আজও অনর্থক নয় এবং কোনোকালেই একেবারে নিরর্থক মনে হবে না। কেননা তেমনি নির্বুদ্ধিতা হবে রমনার্থীনে ধানচাষ করবার আয়োজন করলে। ধান-পাটের প্রয়োজন যতই গুরুতর হোক, ফুল-বাগানের সাথে তার তুলনা হতে পারে না যেমন তুলনা হয় না লোহায়-সোনায় ফুল-বাগানের বিরোধিতা যদি করতে হয়, তা হলে তা অসামর্থ্যের অজুহাতেই করব, অপ্রয়োজনের বলে নয়। ধান-পাটে জৈব-প্রয়োজন মিটে, ওটি চাষীরও জীবনের লক্ষ্য নয়–means to an end মাত্র। আমরা উপায়কেই লক্ষ্য ঠাওরেছি, আমাদের জীবনের বিড়ম্বনা এখানেই। ধান-পাট উপলক্ষ মাত্র–লক্ষ্য তো নিশ্চিত মানসানন্দ উপভোগ। বাগান সে চাহিদা। মিটায়। কাজেই যেখানে জৈব-প্রয়োজনের শেষ, মানস-আয়োজনের সেখানেই শুরু। অতএব, অকেজো সাহিত্য কেবল উঁচুস্তরের নয়, যথার্থ কাজেরও; কেবল উপভোগের. নয়, পরম উপকারেরও।

    সমস্যাবিমূঢ় কাঙাল মানুষের অসামর্থ্যকে ঢাকবার জন্যে, আঙুর ফল টক শ্রেণীর যুক্তি দিয়ে মহৎ প্রয়োজনের আয়োজনকে তাচ্ছিল্য দেখাবার আস্ফালনেই কেবল আমাদের আপত্তি।

    যে-অর্থে আমাদের ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রয়োজনের; সে-অর্থে সাহিত্য কোনো কালে প্রয়োজন ছিল না–হতে পারে না। সাহিত্য করে কয়জন, আর পড়ে কয়জন? সাহিত্যই জীবনের অপরিহার্য সামগ্রী যে নয়, তার প্রমাণ (অশিক্ষিতের তো কথাই নেই) শিক্ষিত লোকদের গুটিকয়জনই সাহিত্য পড়ে। এবং তাও সারাজীবনে পড়ে কয়খানা? যারা পড়ে না, তারা জীবনে উপভোগ উপলব্ধির অসম্পূর্ণতাও অনুভব করে না। কাজেই সাহিত্যাদি কলা এমনিতেই কেজো জীবনের বাইরে। তাহলে যা আদপেই কেজো নয়, তাকেই কাজে লাগানোর এত আয়োজন কেন? কথাটা বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করা যাক।

    জনমনে সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্রচেতনা দানের জন্যে কিংবা স্বদেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ, কল্যাণবুদ্ধি জাগানোর জন্যে, অথবা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের ইঙ্গিত কিংবা প্রেরণা যোগাবার জন্যেই যে সাহিত্য হওয়া উচিত, সে সম্বন্ধে আজকাল জীবন-সচেতন মানুষ মাত্রই একমত। এ যে-রচনায় নেই তা ব্যর্থ। এ-ই তাঁদের সুচিন্তিত অভিমত। আমরা তো স্বীকার করেছি যে কেজো সাহিত্যও আছে। আমাদের আপত্তি হচ্ছে প্রথমত কেজো সাহিত্যই একমাত্র সাহিত্য নয়, দ্বিতীয়ত কেজো সাহিত্য নিতান্ত কেজো বলেই মহৎ নয়, তৃতীয়ত কেজো সাহিত্য সৃষ্টি করাই কারো ব্রত হওয়া উচিত নয়। কেন, এবার তা-ই বলছি। শোনা যায় এবং ঘটা করে সারা দুনিয়ার নানা সাহিত্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে শোনানোও হয় যে সমাজ সংস্কারে, ধর্ম-প্রচারে, পীড়ন-অপসারণে, আযাদী অর্জনে, রাষ্ট্রগঠনে, মতবাদ গড়নে,বিপ্লব-বিদ্রোহ সৃজনে, সংস্কৃতির উন্নয়নে, জাগরণ আনয়নে কিংবা সামগ্রিকভাবে জাতীয় চেতনা দানে কেজো সাহিত্যের মতো এমন অব্যর্থ অস্ত্র আর নেই। ঘরে বসে কলম পেষো, কাগজে ছেপে দাও, ব্যস, জাদুর মতো অভীষ্ট ফল ফলে গেছে!

    কিন্তু প্রচার-সাহিত্য ছাড়া এসব ব্যাপারে সাফল্যের আর কোনো উপায় নেই, কিংবা সাহিত্যের মাধ্যমে প্রচারই একমাত্র পন্থা তা মানা যাবে না, কেননা আমরা চোখের সামনেই দেখছি, এক জায়গার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খবরই অন্যত্র দাঙ্গা বাধানোর পক্ষে যথেষ্ট। অশিক্ষিতের দেশ কঙ্গোও যখন স্বাধীন হয়, খবরের কাগজে পরিবেশিত লুমুম্বা-হত্যার কেবল সংবাদই যদি উত্তেজনা সৃষ্টির প্রচুর কারণ হয়ে ওঠে কিংবা সম্পাদকীয় মন্তব্যই উত্তেজনা ও প্রেরণাদান তথা বিদ্রোহ-বিপ্লব ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণিত হয়, তাহলে চেতনা দানের সাহিত্য অপরিহার্য বলে মানি কী করে? যেখানে স্বার্থ, গরজ ও পীড়ন সেখানে মনটি এমনিতেই Time-bomb-এর মতো তৈরি হয়েই থাকে, সামান্য উত্তেজনা কিংবা যোগ্য নেতৃত্বে গণশক্তি ফেটে পড়েই। এ আমাদের দেখা-জানা কথা। কাজেই কেজো সাহিত্য যে খুব কাজের তা ধ্রুব নয়। এক্ষেত্রে বরং রাজনীতিকের বক্তৃতাই বিশেষ কার্যকর। ভালো বক্তার ভালো লিখিয়ে হওয়া সম্ভব, কিন্তু বড় বক্তা বড় লিখিয়ে নন।

    এবার অকেজো সাহিত্যের কথায় আসা যাক। ধর্মে, সমাজে ও রাষ্ট্রে আদর্শানুগত্য ও মতবাদনিষ্ঠা কেবল ভালো নয়, অতি প্রয়োজনীয়ও বটে। তাতে করে নিয়ম-নীতির বেষ্টনীর মধ্যে জীবন নির্বিঘ্নে উপভোগ করা সম্ভব ও সহজ হয়, তাতে মানুষের হাতে মানুষের লাঞ্ছনা-পীড়নের আশঙ্কা কমে। এতে করে সজ্জন, সচ্চরিত্র ও সুনাগরিকের সংখ্যা বাড়ে। এককথায় ব্যবহারিক জীবনের বাস্তব material ও লাভের ব্যাপারে একরকম নিশ্চিন্তই হওয়া যায়। কেজো জীবনের বাইরেও যে একটা মনোজগৎ রয়েছে! উপভোগ-উপলব্ধির নিবিড়তম যে-কেন্দ্র, তাতে কেজো কথার দাম নেই। সে হল অকাজের কাজী, অপ্রয়োজনের প্রয়োজন নিয়ে তার কারবার। সে স্কুল কিছু গ্রহণ করে না। হয়তো বা সহ্যও করে না। তার কাজ নির্যাস নেয়া, সেটি অবিমিশ্রতায় নিরূপ  না হলেও স্বরূপে তাকে ধরা মুশকিল। ফুল গাছেই জন্মায়, তবু ফুল আর গাছ এক নয়; তেমনি বাহ্যঘটনা, পরিবেশ ও আচরণই সে-উপলব্ধি ও বয়সের ভিত্তি বা প্রসূতি, তবু মা-মেয়ের আদর্শে মিল খুঁজে পাওয়া ভার। কতটা স্বপ্নের মতোই। এ অবচেতন মনের লীলা। মনস্তাত্ত্বিক না হলে এ মনোরসের বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। যে-কারণে ফটো চিত্রকলা নয়, নক্সা সাহিত্য নয়, সে-কারণেই। কেজো সাহিত্য বিশুদ্ধ সাহিত্য নয়। কেজো সাহিত্যের বড় দোষ তার স্থূলতা ও বাস্তবানুরক্তি। আমরা এ-কথা হয়তো সবাই মানি যে প্রত্যক্ষকে পরোক্ষ করে তোলা এবং খণ্ড, ক্ষুদ্র ও তুচ্ছকে সমগ্রতার মর্যাদা ও গুরুত্ব দানই সাহিত্যের কাজ। কাজেই জীবনের রোজনামচা যেমন জীবনী নয়, সত্যকথার পদ্যরূপ যেমন সাহিত্য নয়, তেমনি কোনো ব্যবহারিক প্রয়োজন-মিটানো স্থূলতা এবং সাময়িকতাও অকেজো সাহিত্যের অবলম্বন হতে পারে না। কেননা অকেজো সাহিত্য যে-মনের খোরাক, তার সম্পর্ক পরিবেষ্টনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ নয়–পরোক্ষ। কথাটা ব্যাখ্যা করে বলি, সমাজ ধর্ম-রাষ্ট্র ও ধন-জন-মান প্রভৃতি আমাদের জৈবিক প্রয়োজনেরই অবলম্বন। এ জীবনে দেশ আছে, ধর্ম আছে, আইন আছে, সংস্কার আছে এবং আছে আরো কত কি। আমরা এসব নীতিশাসনের হাজারো গিঁঠাতে বাঁধা। আমাদের একটি মনোজীবনও আছে, যেখানে দেশ-কাল-সমাজ-ধর্ম শাসন-নিয়ম কোনোটারই বন্ধন স্বীকার করিনে, বলা যায় এসবের অস্তিত্বই অনুভব করিনে। কাজেই সেখানে কোনো আদর্শবাদ কিংবা কিছুতে ঐকান্তিক নিষ্ঠার প্রশ্নই ওঠে না। সেখানে প্রাকৃতিক ঋতুবৈচিত্র্য নেই, স্থান-কালের তফাৎ নেই। এখানে যে-বোধ আছে তাকে বলা যায় মানবিক-বোধ। তা সচেতন নয়–সুপ্ত। একে বলা যায় Radical Humanism বা মৌল মানবিকতা। একে সযত্নে লালন করলে, সচেতনভাবে এর পোষকতা করলে পাই Rational Humanism বা বোধিসম্পন্ন মনুষ্যত্ব। এ মনুষ্যত্বের কাছে কালিক, ভৌগোলিক কিংবা সামাজিক বাছ-বিচার নেই। মৌল মানবিকতা বীজ হলে মনুষ্যত্ব হবে ফল। দেশ, কাল ও জাতিচেতনার ঊর্ধ্বে সর্বমানবিক, রসনিষ্যন্দী সাহিত্য এ বোধেরই সন্তান। যাতে মানুষ আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি। কারণ বিপুলা পৃথিবীর নিরবধি কালের মানস-সঞ্চয় নিয়ে এর কারবার। এ হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রাণের সাথে মিলায় প্রাণ। আবহমান কালের বুকে ধ্রুব হয়ে দাঁড়াবার কেরামতি থাকে এর। এক অবিচ্ছিন্ন যোগসূত্র দিয়ে এ খণ্ড-ক্ষুদ্র ও তুচ্ছকে সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে করে এক অদ্বয় চেতনার আবেশে মানুষ আনন্দলোকের অধিকার পায়, যেখানে দাঁড়িয়ে সে বলতে পারে এবং বলেও–এ জীবন মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধুলি, এখানে যা দেখেছি যা পেয়েছি তুলনা তার নাই। তখন সব সুন্দর এবং সুন্দর সর্বব্যাপী। তখন লোভে সুন্দর, ক্ষোভে সুন্দর, স্নেহে সুন্দর, প্রেমে সুন্দর, আনন্দে সুন্দর, বেদনায় সুন্দর। তখন দুবৃত্ত সুন্দর, নিপীড়িত সুন্দর, খল সুর, ছলও সুন্দর। তখন কেড়ে খাওয়া আর সেধে দেওয়া–দুই-ই সমান, দুই-ই অপরূপ। এমনি বোধের অধিকারী হলেই মানুষ হয় জীবনরসিক। তখন সে দৃশ্যজগতের সবকিছু থেকেই। কেবল আনন্দের উপাদানই পায়–সে-আনন্দে দৈবিক, মানবিক কিংবা আসুরিক বলে কোনো পরিমাণ বা স্তরভেদ থাকে না। একালের এক স্বীকৃত মহৎ লিখিয়ের মুখে তাই শুনি–আমি চোখ মেলে যা দেখলুম, চোখ আমার তাতে কখনো ক্লান্ত হলো না। বিস্ময়ের অন্ত পাইনি। চরাচরকে বেষ্টন করে অনাদিকালের যে অনাহত বাণী অনন্ত কালের অভিমুখে ধ্বনিত, তাতে আমার মনপ্রাণ সাড়া দিয়েছে; মনে হয়েছে, যুগে যুগে এ বিশ্ববাণী শুনে এলুম। আমি ভালোবেসেছি এ জগৎকে, আমি প্রমাণ করেছি এ মহৎকে। আমি কামনা করেছি মুক্তিকে।

    ইনি আরো বলেন–

    এ কথা যখন জানি
    মানবচিত্তের সাধনায়
    গূঢ় আছে যে সত্যের রূপ
    সেই সত্য সুখ দুখ সবের অতীত।
    তখন বুঝিতে পারি
    আপন আত্মায় যারা
    ফলবান করে তারে
    তারাই চরম লক্ষ্য মানব সৃষ্টির।

    এসবকিছুর মূলে রয়েছে সামগ্রিক ভালোবাসা, নির্বিচার প্রেম–এই হচ্ছে জীবনরস, একে যে নিতে শিখেছে তাকেই বলি জীবনরসিক। তার চিত্তকে একটিমাত্র বোধই আচ্ছন্ন করে রাখে, সে জানে–

    এ বিশ্বেরে ভালোবাসিয়াছি
    এ ভালোবাসাই সত্য,–এ জন্মের দান।
    বিদায় নেবার কালে
    এ সত্য অম্লান হয়ে মৃত্যুরে করিবে অস্বীকার।

    শাদামাটা কথায় বলা যায়, মনের এ স্তর হচ্ছে জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে সূক্ষ্ম অনুভূতি ও উপলব্ধির স্তর, To know all is to Pardon all কথাটি যে-বোধের পরিচয় দেয়, আমরা সে-বোধের স্বরূপটিকেই Rational Humanism বা বোধিসম্পন্ন মনুষ্যত্ব বলছি। পূর্ণাঙ্গ জীবনালেখ্য দেয়া কিংবা নিখুঁত জগৎ উদ্ঘাটন করা, এমনি মনুষ্যত্বেই সম্ভব।

    আমি কবি, তর্ক নাহি জানি। এ বিশ্বেরে দেখি তার সমগ্র স্বরূপে। মহৎ সাহিত্যিকের লক্ষ্য, সাধ্য ও ব্রত এ-ই। অতএব এক্ষেত্রে আদর্শানুগত্য, জাতি ও সমাজ-চেতনা প্রভৃতি অবাঞ্ছিত কথা। আদর্শানুগত্য মহৎ সৃষ্টির তো বটেই, ভালো সৃষ্টিরও পরিপন্থী। মন যার মুক্ত নয়, চিন্তা তাঁর। স্বাধীন হতে পারে না। আর স্বাধীন চিন্তা যেখানে অসম্ভব, সেখানে অনুভূতি খণ্ড আর উপলব্ধি পঙ্গু হবেই। কাজেই তাকে সত্য, সমগ্র ও সুন্দর ধরা দেয় না। তেমন লেখক, জাতীয় কবি হতে পারেন, সমাজ-দরদী ঔপন্যাসিক হতে পারেন, জনপ্রিয় মনীষীও হতে বাধা নেই, কিন্তু মানুষের : আত্মিক মিলন-ময়দানে তাঁর স্বীকৃতি নেই–সেখানে তিনি অচেনা–অবাঞ্ছিতও। পারিবারিক জীবনে ব্যক্তিক স্বার্থচেতনা যেমন পরিবারের অশান্তি ও বিপর্যয় ঘটায়, তেমনি স্বাজাত্য ও স্বারাষ্ট্রবোধ দেশে দেশে দ্বন্দ্ব-সংঘাত জিইয়ে রাখে। আজকের দুনিয়ার বারো আনা দুঃখের উৎস এটিই। আজ যখন পৃথিবীর ভৌগোলিক বাধা মুছে গেছে, রাজার রাজ্য উঠে গেছে, মানুষ রাষ্ট্রিক সীমাও অপসারণের স্বপ্ন দেখছে, তখন গোত্র, সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র-সীমা-চেতনাপ্রসূত আদর্শবাদ কিংবা মতবাদ-প্রবণতা মনুষ্য মনন ও প্রগতির বাধা বৈকী! জাতীয় নয়–আন্তর্জাতিকতাই এ যুগের সাধ্য হওয়া উচিত–তাহলেই আশু মঙ্গল। বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতা নিয়েও যেমন পৃথিবী অখণ্ড, তেমনি দুনিয়ার মানুষের মনন ও আচার বৈচিত্র্য স্বীকার করেই মানুষ একজাত অর্থাৎ United in diversity–শতবছর পরে হলেও নিশ্চয়ই কোনো একপ্রকারের বিশ্বরাষ্ট্র গড়ে উঠবে। কাজেই দূরদৃষ্টি যার আছে, সে কেন বৃথা সাধনায় জীবন নষ্ট করবে!

    বলেছি, আদর্শানুগত্য জীবনের আর আর ক্ষেত্রে বিশেষ ফলপ্রসূ, কিন্তু মানসসৃষ্টির ক্ষেত্রে অভিশাপ। স্রষ্টা নিজেকে কোথাও বিকোতে পারে না, তার স্বাধীনতা কারও কাছে বন্ধক রাখা যায় না। তাহলে প্রতিমুহূর্তে তাকে আত্মপ্রতারণা করতে হয়। কারণ আদর্শ বিচ্যুতির ভয়ে সে তার উপলব্ধির সত্যকে প্রকাশ করতে পারে না। অকৃত্রিম কাঞ্চন ফেলে, সে গিটিকে সোনা করবার বিড়ম্বনায় আত্মনিয়োগ করে। এতে হয়তো কেজো সাহিত্য সৃষ্টি হয়–কাজেও লাগে, কিন্তু অকেজো সাহিত্য হতেই পারে না। কেজো সাহিত্য হচ্ছে বেগুন-ক্ষেত আর অকেজো সাহিত্য ফুলবাগান। যার যা রুচি ও প্রয়োজন, সে তা-ই করবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচট্টগ্রামের ইতিহাস – আহমদ শরীফ
    Next Article আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট – আহমেদ রিয়াজ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }