Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিচিত চিন্তা – আহমদ শরীফ

    আহমদ শরীফ লেখক এক পাতা গল্প450 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বাউল সাহিত্য

    বাউল সাহিত্য

    ইদানিং বাউল মত ও গান আমাদের চেতনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। কেবল তা-ই নয়, নানা কারণে এসব আমাদের ভাবিয়েও তুলছে। সম্প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টায় বিপুল সংখ্যক গান সংগৃহীত হয়েছে। সাড়ে তিনশ বছরে ধরে দেশের জনসমাজের এক অংশ এমনি নিষ্ঠার সঙ্গে যে জীবনচর্যার এ বিপুল আয়োজনে এতদূর এগিয়ে গেছে, সে-সম্পর্কে আমরা অবহিত ছিলাম না। লোকচক্ষুর অন্তরালে লোকান্তরে প্রসারিত জীবনবোধের পরিচয়বাহী এই কাকলিকুঞ্জে প্রবেশ করে, এই সুরসমুদ্রে অবগাহন করে বিস্ময় মানি। বাউলের অনুচ্চ কণ্ঠের লীলায়িত ভঙ্গিমার সুরপ্রবাহে মন ভাসিয়ে দিলে দূরলোকের উদাস-করা যে ধ্বনি চিত্তবীণায় ঝঙ্কার তোলে তা’ মন ও আত্মার গ্লানি মুছে দিলে অভিভূতির এক শান্ত-আবহ আনে। এক আনন্দ-সুন্দর জীবন-কল্পনায় চিত্তের ক্লিন্নতা ঘুচে যায়। মাটির মমতাকে তুচ্ছ জেনে উৎকণ্ঠ মন-বলাকা পাখা মেলে নতুন-পাওয়া দিগন্তহীন গগন পানে। বিস্ময়মুগ্ধ চিত্তে ভাবছি, — এ নিয়ে আমরা কী করব! ভোগের পঙ্কে মজেও যখন মনে করছি অমৃতস্নান হচ্ছে, তখন আবেকওসরের উপযোগ-বুদ্ধি নিশ্চিতই হারিয়েছি।

    দেশের প্রাকৃতজন যখন ফলপ্রসূ চাষে নিরত, তখন শিক্ষিতগণ নিষ্ফল উদ্যান রচনায় ব্যস্ত। মহৎ জীবনের যে-বীজ প্রাকৃত মনে উপ্ত ও পল্লবিত, এমনকি ফলন্তও, তখনো বিরূপ শিক্ষিত মন বিজ্ঞানবুদ্ধির জপবারি সিঞ্চনে চিত্তমরু শীতল করবার ব্যর্থ সাধনায় রত।
    বাউলমত যদি আদ্যিকালের ইতিকথা হত তাহলে পরিহারযোগ্য ঐতিহ্য মনে করতাম। কিন্তু আজকের মানুষের এক অংশের জীবন-দর্শনের প্রতি এমনি উদাসীন থাকা দায়িত্ববোধের অভাবই জ্ঞাপন করবে। Materialism ও Spiritualism-এর দ্বন্দ্বে যখন দুনিয়ার মানুষের মন অস্থির ও অসুস্থ, যখন নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিপর্যস্ত, যখন পৃথিবীর কল্যাণকামী চিত্ত অবক্ষয়ের নিরূপ যন্ত্রণায় কাতর — মানস দ্বন্দ্বে বিক্ষত, মানুষ যখন স্বস্তির নিদান লাভের আগ্রহে উন্মুখ ও উৎকণ্ঠ, বিমূঢ় শিল্পী ও মনীষীরা যখন দিশাহারা; তখন এই আধ্যাত্মবাদ-নির্ভর নিশ্চিন্ত মনের অবিচল প্রসন্ন-প্রশান্তি আমাদের ভাবিয়ে তুলবেই। বস্তুবাদ (তথা ভোগবাদ কিংবা ঐহিত জীবনবাদ) ও আধ্যাত্মবাদের দ্বৈত্ব বোধে পুষ্ট দ্বান্দ্বিকবোধের টানাপড়েনে উত্ত্যক্ত ও বিকৃতিবুদ্ধি মানুষ আমরা। আমাদের কাছে বাউলের জীবনচর্যা অত্যন্ত অর্থবহ — জীবনের সুষ্ঠ মূল্যায়নের ইঙ্গিতবাহী এবং আজকের প্রতিবেশে জীবনাদর্শ নির্ণয়ের সহায়ক। বাউলগান আমাদের ক্ষণে ক্ষণে স্মরণ করিয়ে দেয় জীবনের মূল রয়েছে গভীরে, গতি হচ্ছে অনন্তে আর সম্ভাবনা আছে বিপুল।

    প্রখ্যাত বাউল কবি ও সাধক লালন শাহ্‌, পাগলা কানাই, শেখ মদন বাউল প্রমুভের নাম ও তাঁদের পদ শিক্ষিতসমাজে পরিচিত লাভ করেছে। সুফী মতবাদের লৌকিক আচারিক রূপ এঁদের পদরচনার ধারাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে। অধ্যাত্ম ও মরমী চিন্তার ঐশ্বর্যের সঙ্গে সহজ কাব্যসৌন্দর্যমণ্ডিত মানবিক বোধই বাউল সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য।

    আজ এখানে দুজন স্বল্প-পরিচিত বাউল কবি সম্বন্ধে আলোচনা করছি।

    বাউল ফুলবাসউদ্দীন ও তাঁর সাগরেদ নসরুদ্দীন বা নসরুল্লাহ্‌র বিপুল সংখ্যক পদ পাওয়া গেছে। এজন্যে তাঁরা বিশেষ আলোচনার দাবীদার। এখনো হয়তো তাঁদের গান সংগ্রহের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে তাঁদের জনপ্রিয় পদগুলি সংগৃহীত হয়ে গেছে এমন ধারণা পোষণ করা হয়তো অযৌক্তিক নয়। কারণ, ভালো গানই জনপ্রিয় হয়, জনপ্রিয় গানই বেশি চালু থাকে আর সেগুলাই প্রথমে সংগ্রাহকের হাতে পড়ে।

    ফুলবাসউদ্দীনের গুরু বিনোদ, শিষ্য নসরুদ্দীন। তিনজনই কবি ও সাধক। নসরুদ্দীন ওরফে নসরুল্লাহ্‌র পদে উল্লেখিত মরিয়ম (আত্মবোধন) ও নিসারুন (সাঁইতত্ত্ব) হয়তো তাঁর দুই সাধন-সঙ্গিনীর নাম। বাউলের সাধন-সঙ্গীনী প্রয়োজন। পরকীয়া হলেই ভালো। কিন্তু মুসলমান বাউল স্বকীয়া তথা স্ত্রীকেই সাধারণত সাধন-সঙ্গিনী করে। কাজেই মরিয়ম ও নিরারুন হয়তো নসরুদ্দীনের স্ত্রীই। মরিয়মও কবি। তাঁর আত্মবোধনমূলক একটি গান পাওয়া গেছে:

    –“মাঝিকে আগে রাজি কর, সাঁতার দিলে প্রাণে বাঁচতে পার।”

    বাউল কবিদের মধ্যে বহুল পরিচয়ের ফলে আমরা লালনকেই শ্রেষ্ঠ বলে জানি এবং মানি। কিন্তু অন্য অনেক কবিই যথার্থ তাত্ত্বিক ও সুকবির খ্যাতি ও মর্যাদা পাবার যোগ্য। ফুলবাস ও নসরকে এ-শ্রেণীর কবি বলেই মনে করি। জগৎ, জীবন ও স্রষ্টার যে-রহস্য উদঘাটনে আত্মার আকুলতা, আত্মনিমগ্ন ভাবে-বিভোর বাউলকবি সে-রহস্য-দ্বার উন্মোচনে অবিচল নিষ্ঠায় সদানিরত। পিঁপড়ের সমুদ্র-সাঁতারের আকাঙ্খার মতো ক্ষুদ্র মানুষের অসীমের সীমা খোঁজার এ প্রয়াসও চির-অসাফল্যে বিড়ম্বিত। অকূলে কূল পাবার আকুলতা প্রকাশেই এর সার্থকতা। কেননা, এতেই আত্মার আকুতি আনন্দময় প্রয়াসে নিঃশেষ হবার সুযোগ পায়। ইরানি কবির জবানীতে ‘জগৎ হচ্ছে একটি ছেঁড়া পুথি — এর আদি গেছে খোওয়া, অন্ত রয়েছে অলিখিত।’ কাজেই এর আদি-অন্তের রহস্য কোনোদিনই জানা যাবে না। তবু অবোধ মন বুঝ মানে না, তাই ঘরও নয়, গন্তব্যও নয়; পথ চলে, পথের দিশা খুঁজে, পথ বাড়ানোর খ্যাপামি একে পেয়ে বসে। এই মোহময়ী মরীচিকাই দিগন্তহীন আকাশচারিতার আনন্দে অভিভূত রাখে। জীবনে আকাঙ্খার এই প্রদীপ্ত আগেব, এই আনন্দিত অভিভূতিই যথালাভ।

    বাউল এই খ্যাপামির শিকার। তাই তার অশান্ত চিত্তে জিজ্ঞাসার শেষ নেই, বিভিন্ন যুক্তি ও তথ্য প্রয়োগে সে নানাভাবে স্রষ্টার, সৃষ্টির ও জীবনের দিশা খোঁজে। সিএ আকুল জিজ্ঞাসার স্বাক্ষর হচ্ছে এক-একটি পদ। বাউল গানের প্রথম চরণেই এক-একটি মুহূর্তের এক-একটি ভাব-বুদবুদের সাক্ষ্য রয়েছে; কখন কোনো তত্ত্ব মনকে নাড়া দিচ্ছে, প্রাণে সাড়া জাগাচ্ছে তা ঐ প্রথম চরণ থেকেই আঁচ করা যায়।

    ফুলবাসের মুখেও সে অনাদিকালের প্রশ্ন–‘তুমি আমার কে হও, শুনি?’ কিন্তু তিনি তো এ প্রশ্নের জবাব পান না। অন্যেরা কী পেয়েছে? তাই আবার তাদের কাছে জিজ্ঞাসা– ‘সাঁই-এর কী রূপ দেখে স্থির তোরা?’ দয়াল সাঁইও আবার ভক্তকে দেখার জন্যে উৎকণ্ঠ, তাই তিনি বলেন–

    “একবার আয় দেখিরে, তোমায় নয়ন ভরে দেখি
    তোমার মতন ভক্ত পেলে, আমি হৃদমন্দিরে রাখি।
    আমি নিজ শক্তি তোমায় দিয়ে
    থাকব তোমার অধীন হয়ে
    আত্মা আত্মায় মিশায়ে হব আমি সুখী।”

    কবির এমন উপলব্দি বেশিক্ষণ টেকে না। আকাশচারী দুরন্ত মন আবার মাটিতে নেমে আসে, জৈব-সমস্যার কথা ভাবে, তখন গোহারী জানায়:

    দেখে তোমার কাজগুলা
    যায় না কো সাঁই দয়াল বলা
    তোমার দয়াল নামের এমনি গুণ,
    পান্তা ভাতে মেলে না নুন;
    কেউ খায় ঘৃত মাখন কার কান্ধে দেও ঝোলা,
    কার নাহি জোটে খেটেখুটে,
    পড়ে থাকে ছেঁড়া চটে,
    দিবারাতি নানান কষ্টে, শোক-অনলে হয় কয়লা।
    কেউ সুখ-সাগরে ডুব দিয়া রয়,
    কারো কেঁদে কেঁদে জনম যায়,
    ফুলবাস উদ্দীন ভাবে সদাই–কার নামে ‘জপি মালা!’

    কোনো যুক্তি দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়েই আল্লাহ্‌কে লাভ করতে হবে। নিজের চিত্তের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করাই মানুষের ব্রত; কেননা আল্লাহ ‘যখন গড়েছিল আদম, এক চিজ রেখেছে কম — এই ভালোবাসার কাম।

    আর,         'জপতপ, ভজন সাধন, সে ধন বিনে (ভালোবাসা) সব অকারণ
                   আবার যদিও শুনি আলিফে লাম লুকায় যেমন, এই মানুষে সাঁই
                                                                  আছে তেমন,
                   জাতে আর সিফাতে খোদা, মিশে সদায়
    এবং          'কুলুবেন মোমিন আরশ আল্লাতালা'
                   কোরানেতে আছে খোলা,
                   যেদিকে ফিরাই আঁখি, সেইদিকে তোমারে দেখি
                   যেখানে ফুল সেখানে বাস, থাকে মিশামিশি,
                   তবে কেন দেও না দেখা বল, করি কী উপায়।
                   ...সাঁই-এর আজব লীলা আমার বুঝার সাধ্য নাই।
                   আহাদে আমহদ হল মোহাম্মদে লুকাইল
                   আদমরূপে প্রকাশ হল, তিনে হল এক বরণ।

    কবি তাঁর মনের মধ্যে এর উত্তর খুঁজে পান:

    সাঁই আমার আসমান জমিন, পবন-পানি কভু ছাড়া নয়।…
    …..মোকামে আছে রব সাঁই আমি দেখিতে শুনিতে পাই,
    সে যে ‘বাক্‌’-রূপেতে খেলছে সদায়
    যে দেখেছে তাঁর প্রাণ জুড়ায়,
    ছয় মোকামে ছয় লতিফাতে,
    চার ঘণ্টা করিয়া তাতে
    বিরাজ করেন সেই যে রব সাঁই
    বেখুদী হবে যে জন সেই তো পাবে দরশন।

    বাউল সাধনায় পরম গুরু হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ্‌। যেমন:

    আমি ডাকি তোমায় বারংবার
    এসে আমায় দেও গো দিদার
    তুমি বিনে কেউ নাই আমার
    ওগো মুরশীদ খোদা।

    সাধনতত্ত্ব বিষয়ে ফুলবাস বলেন:

    সাদেকী প্রেমিক হলে, কামরতি তাহার থাকে না
    সহস্র দলে উজান চলে, কামত্যাগী প্রেমিক যেজন।
    সুজন হলে উজান চলে, নাহি টলে রতিমাসা।

    আত্মাতত্ত্ব:

    জনমভর যত্ন করে একদিনও দেখলাম নারে
    আমি এই দেখবার আশায় ফাঁদ পাতিলাম
    তবু পাখি পড়ে না ফাঁদে, ‘পুড়ুত’ করে উড়ে যায়।
    জীবনের এই হচ্ছে বিড়ম্বনা।

    অভেদ তত্ত্ব:

    জাত বিজাতি যে বাছে
    তার চেয়ে আর বোকা কে আছে?
    আর ব্রহ্মাণ্ডময় একই খোদা–
    এই মানুষ ছাড়া নয়কো জুদা
    এক চিজেতে সবাই পয়দা,
    ধাঁধায় পড়ে ঘুরতেছে।
    বামুন কায়েত হাড়ি মুড়ি
    একই জলে হলেন শুচি
    সেখানে নাই বাছাবাছি
    সকলে শুচি হচ্ছে।
    আর চন্দ্র সূর্য নক্ষত্রগণ
    এই মাটির উপরে সবারি আসন
    এক মনিবের সব প্রজাগণ
    ফুলবাস উদ্দীন ভাবতেছে।

    এই অভেদ-দৃষ্টি লাভ করা কেবল লোকান্তরে প্রসারিত জীবন অধ্যাত্মবাদীর পক্ষেই সম্ভব। বাউলেরা বৈষ্ণবদের মতো সমাজ প্রতিবেশ সম্বন্ধে উদাসীন নয়। বাউল গানে ব্যবহারিক জীবনের নানা বস্তু থেকে রূপকাদি গৃহীত হয়েছে। সাধারণত দেহতত্ত্ব ও আত্মবোধন বিষয়ক গানেই রূপপ্রতীকের আধিক্য দেখা যায়। বাউলেরা জীবনকে নৌকা এবং দুনিয়াকে দরিয়া ভাবতে বিশেষ অভ্যস্ত।

    ফুলবাসের শিষ্য নসরুদ্দীনের ধারণায়, আল্লাহ্‌ ভক্তবৎসল। আল্লাহ্‌ বলেন:

    ‘আমি ভক্তের অধীন আছি চিরকান
    ধনী মানী দুঃখী তাপীরে — কাহাকেও ভাবি না ভিন।
    যেভাবে রাখে যেবা জন,
    তার কাছে রই তেমনি মতন,
    যোগাই তাহার মন।’

    নসরুদ্দীনের সৃষ্টিতত্ত্ব:

    নীর হইতে নূরের আকার ধরে,
    আলিফ রূপে সেই পরওয়ার
    আহাদ নামটি হল তাহার
    নূর-নিরঞ্জন যারে কয়
    আলিফের ‘কালেব’ হইতে
    আহাদ এল মিম রূপেতে
    আহমদ রয় মিমের মধ্যে
    মিমরূপে সেই জগৎ সাঁই
    মিম ফেটে হয় মোতির মতন
    সেই নূরে আদম হয় চেতন
    জাতে জাতে এল তখন
    পেল বিবি আমেনায়।

    নসরের মতে:

    দেহের বিচে দেখ আছে আজব কারখানা
    তিনশত ষাট দিয়ে জোড়া করেছে দেহ খাড়া
    দুই খুঁটি একটি আড়া — বেড়া চারখানা
    দশ দরজা আট কুঠুরি — চার কুতুব ষোলো প্রহরী
    বায়ান্ন গলি, তিপান্ন বাজার, তের নদী সাত সমুদ্দর
    তাহার মধ্যে চোদ্দটা ঘর, কেউ করে না তাহার খবর —
    তিন উজির তিন বাদশা তার, এক মনিব দুই খরিদ্দার
    দালাল তাহার দুইজনা।
    দেহের খবর বড় খবর
    তিন তারেতে হচ্ছে সব খবর।
    বারো বুরুজ সাত সিতারা,
    দেহের ভিতর আছে পোরা।

    আর দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে বিভিন্ন শক্তির অধীন। নসরের ভাষায়:

    ওয়াজেবল অজুদের মাঝি — রহমানি নফস আছে
    ওয়াহেদল অজুদের বিচে — মাতাইন্না নফস রয়
    আর মমকেনল অজুদের ধারা — বাস করে নফস আম্মারা
    মমতেনাল অজুদে পোরা, লওমা সেই নফস কয়
    মলহেমা বলে যারে, আরফেল অজুদে ফিরে
    পাঁচ অজুদকে চিনতে পারলে নসর কয়, অধর ধরা যায়।
    স্বরূপ-রূপে নিয়ে নয়ন চেতন হয়ে দেখ এবার
    মিমমোকামে ভজন সাধন, ‘হাহুতে’ সেই সাঁই-এর আসন।

    নসরের কাছে জীবন ও স্রষ্টার অভেদতত্ত্ব এরূপ:

    আমি দুগ্ধ তুমি মাখন, আমি পাথর তুমি আগুন
    আমি ফুল তুমি ঘ্রাণ — রাখছি জাত সিফাতে
    চাঁদের চাঁদনী যেমন, সূর্যের মধ্যে ধূপের কিরণ।
    আবের মধ্যে বিজলি গোপন, এইরূপে রয় জাত সিফাতে
    জাতে সিফাত সিফাতে জাত, আমি তুমি নয়কো তফাত
    তুমি আছ নসরের সাথ, খেতে শুতে পথে যেতে।

    এখানে সুমধুর কবিত্বে তত্ত্বকথা কাব্যকথার রূপ নিয়েছে।
    রসিক কবির প্রতিবেশ-চেতনা ও তীক্ষ্ণদৃষ্টির পরিচয় মেলে বাঙালি মুসলমানের জীবনচত্র অঙ্কনের প্রয়াসে:

    বাঙলা দেশের জঙলা মুসলমান
    কই মানে হাদিস-কোরান।
    সুদ-ঘুষ-জেনায় মত্ত, বেপর্দা নারী যত
    তাদের হাতে সবাই খান।
    দারি ছাঁটে এ্যালবার্ট-কাটে
    শার্ট কোর্ট ঘড়ি পকেটে
    কেউ দেয় লেংটি এঁটে
    চশমা চোখে হাতে ঘড়ি
    তামাক খান না — পান বিড়ি
    তহ্‌বন-টুপির নাইকো মান।

    পানিই জগৎ-কারণ — এ-কথা বলতে গিয়ে পানি-মাহাত্ম্য বর্ণন প্রসঙ্গে ফলমূলের একটি ফিরিস্তি দিয়েছেন কবি:

    পানিতে হল এ সংসার
    এই যে পানি দেহ খানি, সৃষ্টি করলে সাঁই আমার
    নীরাকারে ডিম্বরূপে ভেসেছিলেন সাঁই
    পানি হতে আসমান-জমিন চৌদ্দ ভুবন হয়।
    পানির আড়া পানির বেড়া পানি ছাড়া কে এবার।
    রাই সরিষা, মটর, মশুরী, তিল গোঁজা ছোলা
    ক্ষীরা-কুমড়া-তরমুজ-শশা আর কলা
    পেয়ারা-পেঁপে-পোস্তদানা, পানির ‘পরে জন্ম তার
    মহুরী-শুপারী, এলাজ-কস্তুরী, বরবটি ধোঁধল
    লিচু পিচু গোলাপ জাম, হচ্ছে রাম পটল,
    হেট্‌ কাবাজারী রাই-খেশারী ডুমুর ডালিম হয় এবার।
    আম জাম হয় কাঁঠাল এই বাঙলাদেশে
    করমচা কামরাঙা ভালো, খেলে জ্বর আসে
    আইফল-নাশপাতি ভালো বাংলা দেশে পাওয়া ভার
    আছে আঙুর কিনে খেজুর পয়সা জোটে না
    লঙ্কা খেলে পেট জ্বলে খাও বরফদানা
    নসের বলে পানি নইলে চল্‌বে না আর এ সংসার।

    প্রার্থনাসূচক গানগুলোতে নসরের ভক্তহৃদয়ের আবদার, অভিমান, গোহারী ও মিনতি চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। যেমন:

    ১. (তুমি) ভক্ত হতে প্রকাশিত, ভক্ত না থাকিলে কে ডাকিত
    তুমি মনিব আমি যে দাস, আমা হতে তোমার নাম প্রকাশ
    ২. রহমান নাম কেন তোমার
    পাপীকে যদি না কর উদ্ধার।

    পরিশেষে আমারও কবির সাথে প্রার্থণায় যোগ দিয়ে প্রাণের কথা নিবেদন করি:

    তুমি দয়া কর দয়াময়
    দীনহীনে ডাকে যে তোমায়
    তোমার আশায় চিরদিন এ যৌবন বয়ে যায়
    দিনে দিনে ফুরাল দিন, আমার ভাবতে ভাবতে
    তনু যে ক্ষীণ
    আমায় কী ভাবেতে ভেবছ ভিন আমি কী তোর কেহ নয়
    কত সহে জীবনে, আমি পুড়ে মলাম আশকৎআগুনে
    দেবা পার কত দিনে — দীনহীন নসরে কয়।

    পরিণামে সব মানবাত্মারই এক আবেদন, একই মিনতি! অপরিমেয় রূপপ্রতীকের প্রয়োগ বাউল গানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচট্টগ্রামের ইতিহাস – আহমদ শরীফ
    Next Article আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট – আহমেদ রিয়াজ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }