Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিচিত চিন্তা – আহমদ শরীফ

    আহমদ শরীফ লেখক এক পাতা গল্প450 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    রবীন্দ্ৰমানসের স্বরূপ সন্ধানে

    ০১.

    ১৯৬১ সনে বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথের উপর পাশ্চাত্য প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে বিপন্ন। হয়েছিলেন। হয়তো তাঁর উক্তিতে সৌজন্যের অভাব ছিল, হয়তো ছিল রুক্ষতা। নইলে তিনি চক্রব্যুহে পড়বেন কেন! রবীন্দ্র-পাঠক-সমালোচক সবাই জানেন, রবীন্দ্রনাথের উপর য়ুরোপের প্রভাব প্রচুর। সমালোচকরা তা কখনো গোপন রাখেননি, ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বাঁকিয়ে বলেছেন মাত্র। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং এ প্রভাব সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন, তিনি কোথাও গোপন করবার চেষ্টা করেছেন বলে তো মনে হয় না। বুদ্ধদেব বসুর কথাগুলো বড় কাটা কাটা ছিল, তিনি রেখে- ঢেকে বলবার চেষ্টা করেননি। ঋজু-পষ্ট কথায় শক্ত বাড়ে। বুদ্ধদেব বসু তাই নিন্দা-গালি পেয়েছেন। মানস-সংকীর্ণতা যাদের রয়ে গেছে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে প্রাচীন ভারতের ও ঔপনিষদিক ঋষির আধুনিক রূপান্তর হিসেবে গ্রহণ করে আনন্দিত ও গৌরবান্বিত হতে চান। বুদ্ধদেব বসুর মন্তব্যে তাঁরাই হয়েছিলেন অসহিষ্ণু।

    .

    ০২.

    পাশ্চাত্য রেনেসাঁসের ছোঁয়া প্রথম যে বাঙালির অন্তরে লেগেছিল তিনি রামমোহন রায়। এই রামমোহনের ভক্ত ছিলেন দ্বারকানাথ আর ভাব-শিষ্য ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। রামমোহনের মনীষা ও উদারতা এঁদের ছিল না বটে, কিন্তু রামমোহন পশ্চিমের যে-জানালা খুলে দিলেন, তা বন্ধ করবার সাধ্য ছিল না কারো। রবীন্দ্রনাথ আশৈশব পেয়েছিলেন পশ্চিমের এই বাতায়নিক হাওয়া। তাঁর বড়ভাইরা বাড়িটাকে পাশ্চাত্য শিল্প, সাহিত্য ও সংগীত চর্চার কেন্দ্র করে তুলেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের নিজের উক্তিতে প্রকাশ: আমি এসেছি যখন … (বাড়িতে) নতুন কাল সবে এসে নামল। –এ নতুন কাল পরিচয়ের অপেক্ষা রাখে। তাছাড়া য়ুরোপীয় রেনেসাঁসের বিভায়, ফরাসি বিপ্লবের মহিমায় এবং তাঁর সমকালীন প্রতীচ্য বুর্জোয়া সমাজের কল্যাণবুদ্ধি ও আত্মার ঐশ্বর্য দর্শনে তিনি মুগ্ধ ছিলেন। এ মানস-সম্পদ আহরণে তাঁর প্রযত্নও কম ছিল না। ইংরেজকে তিনি জেনেছেন য়ুরোপের চিত্তদূতরূপে, মানুষের মূল্য, মানুষের শ্রদ্ধেয়তা হঠাৎ এত আশ্চর্য বড়ো হয়ে দেখা দিল কোন্ শিক্ষায়?… বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি সম্বন্ধেও ঠিক সেই একই কথা।… প্রতি দিন জয় করেছে সে জ্ঞানের জগৎকে, কেননা তার বুদ্ধির সাধনা বিশুদ্ধ, ব্যক্তিগত মোহ থেকে নির্মুক্ত। (কালান্তর)।

    কোনো বা কারো ভাব-চিন্তা-আচরণ নিজের মতো করে গ্রহণ করা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। স্বীকরণ বা স্বাঙ্গীকরণও সামর্থ্য-সাপেক্ষ কাজ। সে সবাই পারে না–সাধারণে পারে না। তার জন্যেও প্রতিভার প্রয়োজন। অন্যদের সঙ্গে তুলনা করলেই এক্ষেত্রে রবীন্দ্রপ্রতিভার অসামান্যতা বোঝা যাবে।

    .

    ০৩.

    নতুনকে বরণ করার ব্যাকুলতা সত্ত্বেও ঈশ্বরগুপ্ত যে নতুনকে গ্রহণ করতে পারলেন না, সে তো শক্তির অভাবে নয়– শিক্ষার অভাবে। আসলে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বাঙালির চোখ ধাঁধিয়ে ছিল, মন রাঙাতে পারেনি; তাই অমন যে বিদ্বান ও প্রাণবান মধুসূদন, তিনিও পারলেন না কোলরিজ-ওয়ার্ডসওয়ার্থ-শেলী-কীটস্-টেনিসনের ভাবাকাশের ভাগী হতে। বিএ পাস হেম-নবীনও পেলেন না গীতিকবিতার প্রাণের সন্ধান। বিহারীলালের সম্ভাবনাও যে তাত্ত্বিকতার মরুবালিতে দিশা হারাল, সে তো ইংরেজি না-জানার জন্যেই। দেবেন্দ্রনাথ সেন কিংবা অক্ষয়কুমার বড়ালের গীতোচ্ছাসেও কৃত্রিম অনুকৃতি যতটা আছে, আত্মার সাড়া নেই ততটা। আর কত বলব!

    রামমোহনের পরে পাই বিদ্যাসাগর ও অক্ষয় দত্তকে, যারা য়ুরোপীয় ভাব-চিন্তা ও বিজ্ঞানকে বরণ করবার জন্যে ছিলেন উন্মুখ, কিন্তু তাঁরা সৃজনশীল নন। সৃজনশীল প্রতিভা নিয়ে যিনি য়ুরোপকে নিজের মতো করে এবং প্রয়োজন বুদ্ধি নিয়ে গ্রহণ করতে জেনেছিলেন, তিনি বঙ্কিমচন্দ্র। তার কথা পরে হবে। তার আগে খাস ঠাকুর পরিবারেই দেখা যাক। দেবেন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথ কিংবা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যে হিন্দুয়ানীর উপরে উঠতে পারলেন না, সেকি ঔপনিষদিক জ্ঞানের অভাবে! তা হলে মানতেই হবে, গাহিকাশক্তি ও গ্রহণের আগ্রহ থাকা চাই। মনের দুয়ার খুলে দিয়ে চিত্তলোকে আসন পেতে দেবার মতো সংস্কার-মুক্তি ও উদারতা না থাকলে কোনো নতুনকেই বরণ করা যায় না পাওয়া যায় না নতুনের প্রসাদ!

    নতুনের তরঙ্গাভিঘাত গায়ে দাগ কাটতে পারে কিন্তু মনে রঙ লাগাতে পারে না। তার প্রমাণ দুশ বছর ধরে ঘরে-বাইরে দেখা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য-প্রভাবিত আধুনিক জীবনের কিছুই গ্রহণ করতে পারেনি টোল-মাদ্রাসার লোক। এসব যে তারা এড়িয়ে চলে, সে কি মন্দ বলে, না বিচারশক্তির অভাবে? সে-জগতে এখনো মধ্যযুগ– এখনো বিদিশার নিশা কেন, ইংরেজি ভাষাবাহী আলোর অভাবেই তো। য়ুরোপের চিত্তদূত ইংরেজ বা ইংরেজির সঙ্গে পরিচয় না ঘটলে আমরা কি অন্তহীন মধ্যযুগ অতিক্রম করতে পারতাম, পাশ্চাত্য প্রভাব ব্যতীত আফ্রো-এশিয়ার কোথাও মধ্যযুগের অবসান ঘটেছে কি? এ সত্য অস্বীকার করে লাভ নেই যে, পাঁচশ বছর আগে সূর্য উদিত হয়েছে পশ্চিমে–সেই যেদিন ইতালিতে রেনেসাঁসের শুরু। পাঁচশ বছর ধরে ভাব-চিন্তা-জ্ঞানের রশ্মি বিকীর্ণ হচ্ছে পশ্চিম থেকেই। সে-রশ্মি থেকে যে মুখ ফেরাবে সেই বেঁচে-বর্তে থাকার অধিকার থেকে নিজেকে করবে বঞ্চিত। বিজাতীয় বলে সঞ্জীবনী-রশ্মির আলোয় অবগাহনে লজ্জাবোধ করা নির্বোধের আহাম্মকি মাত্র। কেননা কল্যাণপ্রসূ ভাব-চিন্তা-জ্ঞান চন্দ্র-সূর্যের মতোই মানুষ অবিশেষের সাধারণ সম্পদ। আকাশে চন্দ্র-সূর্যের স্থিতি অনুসারে প্রভাবের তারতম্য ঘটে, কিন্তু প্রয়োজনের হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না।

    .

    ০৪.

    প্রতীচ্য প্রভাবিত জীবনচেতনা দুইভাবে প্রকটিত হয়েছে। একটা হচ্ছে প্রতীচ্য চিন্তা ও আদর্শকে সোজাসুজি স্বাঙ্গীকরণের প্রয়াস–এ প্রয়াস ছিল রামমোহন, বিদ্যাসাগর, সৈয়দ আহমদ, রবীন্দ্রনাথ ও জওয়াহেরলাল নেহেরুর।

    আর একটি ছিল গ্রহণ-বর্জনের মধ্যপন্থায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয় প্রয়াস–এটি মূলত নির্মাণ ক্রিয়া নয়–মেরামতি কর্ম। এ আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র, সৈয়দ আমীর আলী, জালালউদ্দিন আফগানী, ইকবাল, গোখেল, তিলক, গান্ধী প্রমুখ।

    এ দ্বিতীয় দলের জাতীয় অভিমান অত্যন্ত প্রবল ছিল। তারা প্রকাশ্যে য়ুরোপীয় কিছু গ্রহণ করতে অপমান বা লজ্জাবোধ করতেন। তাই তাঁরা খিড়কিদোর দিয়েই য়ুরোপকে জানালেন সম্ভাষণ, বরণ করলেন নেপথ্যে কিন্তু সমাদরে। এঁদের মধ্যে আবার বঙ্কিম, ইকবাল ও গান্ধীর স্বাদেশিক ও স্বাজাতিক চেতনা ছিল প্রায় উগ্র-গোঁড়ামিরই নামান্তর। এরা আধুনিক জীবনচেতনা এবং অগ্রগতির ইঙ্গিত ও পাঠ লাভ করলেন য়ুরোপ থেকে, কিন্তু ঠাটটা রাখতে চাইলেন পুরোপুরি দেশী–যাতে মনে হবে দেশের অবহেলিত পুরানো ঐতিহ্য ও আদর্শরূপ গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়ার ফলেই যেন দেহের জরা ঘুচে এল যৌবনের উত্তাপ, মনের জড়তা ঘুচে জাগল প্রাণের সাড়া, কুটিরের জীর্ণতা ছাপিয়ে এল প্রাসাদের জৌলুস।

    .

    ০৫.

    বঙ্কিম-সাহিত্যেও মিলবে আমাদের এ ধারণার সমর্থন। বঙ্কিমচন্দ্রের ধর্মতত্ত্ব-অনুশীলনী-কৃষ্ণচরিত্র সাম্যবাদ রচনার পেছেনে যে জীবনচেতনা, আদর্শ ও প্রেরণা ক্রিয়া করেছে, তা তিনি দেশ থেকে পাননি। তাঁর লোকরহস্য বা কমলাকান্তের দপ্তরে যে দৃষ্টির পরিচয় মেলে, তা ইংরেজি-না-জানা লোকে লভ্য নয়। বিদ্যাসাগরের বহুবিবাহ নিরোধ আন্দোলনে বঙ্কিমচন্দ্র যোগ দেননি, কিন্তু য়ুরোপীয় monogamy তার মন হরণ করেছিল। নইলে, এই বহুপত্নীকতা ও উপপত্নীকতার দেশে বঙ্কিমচন্দ্র বিষবৃক্ষ, কপালকুণ্ডলা ও কৃষ্ণকান্তের উইল-এর মতো tragedy রচনা করতে পারতেন না। সমাজে যা সমস্যাই নয় বরং রীতি, তা-ই তাঁর উপন্যাসে জীবন-বিধ্বংসী প্রাণ বিনাশী সমস্যা হয়ে উঠল কী করে! ইংরেজ civilian ও তাঁদের পত্নীরাই ছিল বঙ্কিমের আদর্শ নারী-পুরুষ। তাই মাতৃঘটিত কলঙ্কের দায়ে যে বধূ পরিত্যক্তা হল, পরপুরুষের সঙ্গে যে দস্যুবৃত্তি বা রাজনীতি করে বেড়াল, সেই প্রফুল্ল আবার উনিশ শতকী হিন্দুর ঘরে সমাদরে বৃতা হল, প্রতিষ্ঠিতা হল সগৌরবে। এ উদারতা কি ভারতীয়? কাজেই বঙ্কিমচন্দ্রের হিন্দুয়ানী অনেকটা ভেতরের কোট-প্যান্টালুনের উপর ধুতি-চাদর পরার মতো। ইকবালের ইসলামী জীবনও অনেকটা এরূপ। আর একটি লক্ষণীয় বিষয়–উনিশ বিশ শতকে প্রতীচী প্রভাবিত হিন্দুর জীবনচেতনা গীতার আদর্শ ও প্রভাবের প্রলেপে বিকাশ লাভ করেছে। রেনেসাঁসের মর্মবাণী, মানবমূল্য বা মানবমহিমা–তাঁদের উদ্বুদ্ধ করেনি। বঙ্কিম-বিবেকানন্দ, অরবিন্দ-সুভাষচন্দ্র কিংবা গোখেল তিলক-গান্ধী সবাই গীতাপন্থী। কেবল রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ, জওয়াহের লালে প্রত্যক্ষ করি ব্যতিক্রম। কেননা তারা য়ুরোপীয় রেনেসাসের আত্মার সন্ধান পেয়েছিলেন। সাগর যে দেখেছে, সরোবরে কি তার মন ওঠে!

    .

    ০৬.

    য়ুরোপীয় রেনেসাঁসের চরম ফল মানবতাবোধ তথা মনুষ্যত্ব ও মানবমহিমার উপলব্ধি। একালে নিৰ্বর্ণ মানবতায় দীক্ষা খ্রীস্টান য়ুরোপ থেকেই আসে– আসলে আসে বুর্জোয়া য়ুরোপ থেকে। এই বুর্জোয়া সমাজ রেনেসাঁসের ঐতিহ্যে লালিত। য়ুরোপীয় বুর্জোয়া সমাজের স্বর্ণযুগে রবীন্দ্রনাথের কৈশোর-যৌবন কেটেছে। তখন য়ুরোপীয় কবি, মনীষী, দার্শনিক বিজ্ঞানীদের ভাব, চিন্তা ও জ্ঞানের দীপ্তিতে রবীন্দ্রনাথ আকৃষ্ট নন কেবল, একেবারে অভিভূত। য়ুরোপীয় আত্মার ঐশ্বর্যে তিনি মুগ্ধ! রবীন্দ্র প্রকৃতির অনুগ ছিল বলে বিশ্বমানবের অদ্বয় সত্তায় তার আস্থা দৃঢ়তর হয়। প্রকৃতি প্রীতি রবীন্দ্র- স্বভাবের অঙ্গ। সৌন্দর্য আমার পক্ষে সত্যিকার নেশা, আমাকে সত্যি সত্যি ক্ষেপিয়ে তোলে। (ছিন্ন পত্রাবলী পৃ. ২৫)।

    বৈচিত্র্যের মধ্যে একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক সত্তার বোধ তাঁর কৈশোরেই জাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্ভোগের মাধ্যমেই তাঁর চিত্তে বিশ্বাত্মার ধারণা দানা বাঁধে। এই ঐক্যবোধের বিকাশে প্রকৃতি ও জীবজগতে একক সত্তা এবং একাত্মার বোধ জন্মে। এ কাব্যিক-চেতনাই য়ুরোপীয় মনীষার প্রভাবে মানবাত্মার অভিন্নতায় ও মানবমহিমায় উদ্দীপ্ত হয়ে নির্বৰ্ণ বিশ্বমানবপ্রেমরূপে মহিমান্বিত হয়। য়ুরোপ থেকে পাওয়া এই ঔদার্যবোধ, এই বিশ্বাত্মবোধ এবং মানব নির্বিশেষের সহযোগ ও সহঅবস্থান নীতির সাদৃশ্য ও সমর্থন খুঁজে পেয়েছেন কবি উপনিষদে, বুদ্ধের বাণীতে, মধ্যযুগের সন্তদের সাধনায় ও বাউলের কণ্ঠনিঃসৃত গানে! এসব ভারতের নিজস্ব সাধনা ও মনীষার ফসল।

    উপনিষদ থেকে বাউলের বাণী অবধি কোনোটাই ভারতে অজ্ঞাত ছিল না। শঙ্কারাচার্য উপনিষদকে জনপ্রিয় করেছিলেন, কিন্তু এগুলো আধ্যাত্মিক ছাড়া অন্য তাৎপর্যে কখনো গৃহীত হয়নি। এদেশে। বৌদ্ধধর্ম যেমন তার জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে; উপনিষদ যেমন স্মৃতি, পুরাণ ও গীতার চাপে পড়ে গুরুত্ব হারিয়েছে; সন্তক-পন্থীরা তেমনি সমাজচ্যুত হয়ে মঠে-মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। অতএব এগুলোকে নতুন তাৎপর্যে গ্রহণ করার প্রেরণা ও দীক্ষা রবীন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন য়ুরোপ থেকেই। তাঁর কাব্য-নাটকের প্রতিপাদ্য হয়েছে ঔপনিষদিক বিশ্বাত্মবাদ, বৌদ্ধ করুণা ও মৈত্রীতত্ত্ব, সন্ত-বাউলের প্রীতি ও অধ্যাত্ম জিজ্ঞাসা। এই বোধের আলোকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, নির্দেশ করেছেন সমাজ সংগঠনের উপায়, আদর্শ খুঁজেছেন রাজনীতির, ব্যাখ্যা করেছেন মানুষের ধর্ম, দিশা পেয়েছেন জীবনচর্যার।

    মনুষ্যত্ব ও মানবমহিমা ঘোষণাই ছিল রবীন্দ্রনাথের ব্রত। বৌদ্ধ ও হিন্দু ভারত থেকে তিনি এই মানবমহিমা প্রকাশের উপযোগী উপকরণ সংগ্রহ করেছেন। তাই ত্যাগে বা ক্ষমায়, দুঃখে বা দ্রোহে, সেবা বা সহিষ্ণুতায়, চরিত্রে বা প্রত্যয়ে, প্রীতিতে বা প্রেমে, আত্মসম্মানে বা কর্তব্যনিষ্ঠায়, শ্রদ্ধায় বা অনুরাগে, আদর্শ চেতনায় বা সংকল্পে, আত্মিক বিশ্বাসে বা ন্যায়সত্যের প্রতিষ্ঠায় মানুষ যেখানে মহৎ সেই কাহিনী, ঘটনা বা চিত্ৰই তিনি তাঁর রচনার অবলম্বন করেছেন। অর্থাৎ আধুনিক য়ুরোপীয় জীবনচেতনা প্রাচীন ভারতীয় কাহিনীর মাধ্যমে আজকের বাঙালির উদ্দেশে পরিব্যক্ত। বঙ্কিমচন্দ্র প্রভৃতির মতো মানুষ যেখানে ক্রোধ, ক্ষোভ, স্বার্থ ও হিংসাবশে বাহুবল সম্বল করে দ্বন্দ্ব সংঘাত-সংগ্রামে রত, তেমন ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক কাহিনী বা ঘটনা অবলম্বনে জাতীয় শৌর্যবীর্য ও গৌরব প্রকটনে তিনি উৎসাহ বোধ করেননি।

    .

    ০৭.

    রবীন্দ্রনাথের এই জীবনদৃষ্টি–এই আদর্শচেতনা য়ুরোপ থেকে পাওয়া এবং রেনেসাঁসের দান। আমরা–বাঙালিরা জানি, গীতাঞ্জলি রবীন্দ্রনাথের সর্বোৎকৃষ্ট কাব্য নয়–এমনকি জনপ্রিয় কাব্যও নয়। অথচ য়ুরোপে রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠা গীতাঞ্জলির কবিরূপেই। কেননা গীতাঞ্জলিতে অধ্যাত্মতত্ত্ব আছে, যা য়ুরোপে নতুন ও প্রয়োজন। বিশেষ করে বুর্জোয়াসমাজ যখন ধনে-মনে কাঙাল হয়ে উঠছে, আত্মধ্বংসী সাম্রাজ্যিক দ্বন্দ্বে যখন রাজ্যগুলো পরস্পরের উপর মরণবাণ ছোড়বার জন্যে তৈরি, বুদ্ধিজীবীরা ও হৃদয়বান মানুষেরা যখন স্বস্তি-শান্তির উপায় সন্ধানে অস্থির; য়ুরোপীয় বিবেকের সেই মৃত্যু-মুহূর্তে গীতাঞ্জলি অধ্যাত্মরস সিঞ্চন করে বিক্ষুব্ধ আত্মার জ্বালা নিবারণে ক্ষণিকের জন্যে সহায়ক হয়েছিল।

    তাঁর অন্যান্য কাব্য-গল্প-উপন্যাস কিংবা নাটক য়ুরোপে তেমন সমাদৃত হয়নি। কেননা সেসবের মধ্যে যে বাণী আছে, তা য়ুরোপে দুর্লভ নয়–অজ্ঞাতও নয়, বরং য়ুরোপের মানস সম্পদের প্রতিচ্ছবি। রবীন্দ্র-রচনায় যেখানে অধ্যাত্মবুদ্ধি ও তত্ত্বরস আছে, য়ুরোপ তাকেই দুর্লভ সম্পদ জ্ঞানে বরণ করে আনন্দিত হয়েছে।

    এ যুগে রবীন্দ্রনাথ আমাদের চোখে প্রাচ্যের মহত্তম প্রতিভা, শ্রেষ্ঠ মনীষী, প্রতীচ্য আত্মার দূত, আধুনিকতার বাণীবাহক, মানবতা, মানবিকতা ও বিশ্বজনীনতার উদগাতা যুগন্ধর ও যুগস্রষ্টা। কিন্তু য়ুরোপের চক্ষে তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠকবি ও মনীষী মাত্র।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচট্টগ্রামের ইতিহাস – আহমদ শরীফ
    Next Article আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট – আহমেদ রিয়াজ

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }