Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিচিত চিন্তা – আহমদ শরীফ

    আহমদ শরীফ লেখক এক পাতা গল্প450 Mins Read0

    অতীন্দ্রিয়লোকে রবীন্দ্রনাথ [কবি-জীবনের শেষ পর্যায়]

    ০১.

    রবীন্দ্রনাথ শেষজীবনে জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভূমি ও ভূমার অনুভূতি সংমিশ্রণে এক অতীন্দ্রিয় লোকের সন্ধান পেয়েছেন। আমরা জানি রবীন্দ্র-প্রতিভারশ্মি বিচিত্র ধারায় হৃদয় ও মনের এবং জগৎ ও জীবনের আনাচে-কানাচে অলিতে-গলিতে প্রবিষ্ট হয়েছে; অদেখা-অজানা ও অভাবিত বিষয়ও তাঁর প্রতিভারশিপাতে উজ্জ্বল ও প্রত্যক্ষীকৃত হয়েছে।

    কিন্তু পত্রপুট, ও সেকুঁতির পূর্বপর্যন্ত তিনি হৃদয় দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, intuition দিয়েই জগৎ ও জীবন, সৃষ্টি ও স্রষ্টা, হৃদয় ও মন, মানুষ ও প্রকৃতি এবং রূপ ও সৌন্দর্যের অন্তর্নিগূঢ় রহস্যাবিষ্কারে তৎপর ছিলেন। এ সময়কার বিশ্বমানবতা ও বিশ্বপ্রকৃতির সাথে একাত্মবোধ ছিল একান্তভাবে তাঁর হৃদয়াবেগপ্রসূত। তখন ছিলেন তিনি অনুভাবক, শেষজীবনে হলেন দ্রষ্টা। তখন তিনি হৃদয়, মন, বুদ্ধি দিয়ে করতেন অনুভব, শেষজীবনে করলেন প্রজ্ঞাদৃষ্টি দিয়ে দর্শন। যা ছিল নিছক অনুভূতি, তা-ই হল উপলব্ধি। তখন বলেছেন :

    হৃদয় আজি মোর কেমনে গেল খুলি
    জগৎ আসি সেথা করিছে কোলাকুলি।

    এ সময় বলতে পারতেন–

    দিঠি না জানি কেমনে গেল খুলি
    ত্রিভুবন আবরণ করিছে খোলাখুলি।

    আমরা সিন্ধু, বসুন্ধরা, প্রবাসীর কবি রবীন্দ্রনাথকে দেখেছি; সোনার তরী ও চিত্রা জীবনদেবতার পূজারী রবীন্দ্রনাথকে জানি, গীতাঞ্জলি, গীতালি ও গীতিমাল্যের কবি অধ্যাত্মধর্মী রবীন্দ্রনাথের সাথেও আমাদের অপরিচয় নেই; রূপ, সৌন্দর্য ও প্রণয়ের কবি রবীন্দ্রনাথও অপরিচিত নন, জীবনবেত্তা ও মানবতার কবি রবীন্দ্রনাথের সাথে ঘনিষ্ঠতাও বহুদিনের। কিন্তু এই বিশ্বানুভূতি, এই সৃষ্টি ও স্রষ্টায় যোগসূত্র সন্ধান, এই অধ্যাত্মসাধনা, এই জীবন ও প্রণয়ধর্মের রহস্য আবিষ্কার প্রভৃতির ভিত্তি ছিল জিজ্ঞাসা, হৃদয়াবেগ, বিস্ময়, বুদ্ধি ও intuition :

    তবু জানি, অজানার পরিচয় আছিল নিহিত
    বাক্যের আর বাক্যের অতীত
    (জন্মদিনে–১২)

    তখন :  শুধু বালকের মন নিখিল প্রাণের পেত নাড়া
    আকাশের অনিমেষ দৃষ্টির ডাকে দিত সাড়া
    তাকায়ে রহিত দূরে।
    রাখালের বাঁশির করুণ সুরে
    অস্তিত্বের যে বেদনা প্রচ্ছন্ন রয়েছে।
    নাড়ীতে উঠিত নেচে।
    (জন্মদিন—-৯৯)

    সেজন্যে আমরা তখন তাঁকে সর্বদা বিস্মিত, সম্মোহিত, আনন্দিত, ব্যাকুলিত, বিচলিত অথবা ব্যথিত দেখতে পেতাম।

    যিনি ছিলেন কল্পনা, আশা ও অনুভূতি-প্রদীপ্ত মহাসাধক, তিনিই শেষজীবনে হলেন জগৎ ও জীবনের রহস্যজ্ঞ ত্রিকালদ্রষ্টা মহর্ষি। তিনি এখন আর আশা-কাতর, শঙ্কা-ভীরু সাধক নন, বরং মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি। শান্ত ও অবিচলিতভাবে তিনি কখনো ভূমার দিকে কখনো ভূমির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ : করেছেন, কখনো ধরার ধূলার হাসি-কান্নায় যোগ দিচ্ছেন, কখনো দ্যুলোকের অভিযাত্রী হচ্ছেন। তাঁর নিরাসক্ত ভারমুক্ত মন–জীবন, জীবন দেবতা, মৃত্যু প্রভৃতির রহস্যসূত্র আবিষ্কারের আনন্দে, সত্য-লাভের পরম তৃপ্তিতে এ লোকে ও লোকাতীতে আসা-যাওয়া করছিল।

    যতই তিনি মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছিলেন ততই এই সুখ-দুঃখময় মানব-সংসারের নতুন রূপ, নতুন অর্থ এবং বিশ্ববিধাতার নিগূঢ় অস্তিত্ব ও তাঁর লীলা-বৈচিত্র্যের গভীরতর অর্থ এবং স্বীয় সত্তার রূপ, মৃত্যুর রহস্য তাঁর কাছে সুপ্রকাশিত হচ্ছিল।

    সেই অজানার দূত আজি মোরে নিয়ে যায় দূরে,
    অকূল সিন্ধুরে নিবেদন করিতে প্রণাম
    সকল সংশয় তর্ক যে-মৌনের গভীরে ফুরায়।
    (জন্মদিনে–১২)

    জীবনের শেষপ্রান্তে উদাসীন শিবের মতো এই প্রজ্ঞা-দৃষ্টি কবির সাধনায় পরিণতি দান করেছে। তিনি বিস্ময় ও জিজ্ঞাসা নিয়ে জীবন আরম্ভ করেছিলেন, আর প্রত্যয় ও তৃপ্তিতে তার জীবন সমাপ্তি পেয়েছে। আমরা বিশেষ করে তাঁর শেষ তিনটে কাব্য : রোগশয্যায়, আরোগ্য ও জন্মদিনের কথাই বলছি। কিন্তু আগে থেকেই এ আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। পত্রপুটের কাল থেকেই কবি ক্রমশ এই সুখ-দুঃখময় মানব- সংসারের গভীরতর সত্তার এবং বিশ্ববিধাতার নিগূঢ় অস্তিত্ব গভীরভাবে ও নতুনরূপে উপলব্ধি করছিলেন। তাই তার কাছে ভূলোক ও দ্যুলোকের পার্থক্য-ব্যবধান ঘুচে গিয়েছিল : এ-দ্যুলোক মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধূলি। এতে তিনি দেশহীন, কালহীন আদিজ্যোতির ধ্যান করবার সুযোগ পেলেন, সেই ধ্যানের দৃষ্টিতে জগৎ ও জীবন, সৃষ্টি ও স্রষ্টা, এককথায় ভূমি ও ভূমার রহস্য অদ্ভুতভাবে উদঘাটিত হয়েছে।

    .

    ০২.

    কবি নিরবচ্ছিন্ন অধ্যাত্মসাধনায় জগৎ-জীবনের সত্য আবিষ্কার করেননি, মানবচিত্তের সাধনাতেই তা সম্ভব হয়েছে।

    মানব চিত্তের সাধনায়
    গূঢ় আছে যে সত্যের রূপ।
    সেই সত্য সুখ দুঃখ সবের অতীত
    তখন বুঝিতে পারি,
    আপন আত্মায় যারা।
    ফলবান করে তারে।
    তারাই চরম লক্ষ্য মানব সৃষ্টির;
    একমাত্র তারা আছে, আর কেহ নাই।
    (রোগশয্যায়-২৯)।

    এ চিত্ত-সাধনায় চৈতন্য-জ্যোতি শুধু অন্তরে আবদ্ধ নয়, চরাচরে পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে (এই চৈতন্য-জ্যোতির নাম আত্মা) এবং তা জগৎ-রহস্য উদঘাটিত করে–

    যে চৈতন্যজ্যোতি
    প্রদীপ্ত রয়েছে মোর অন্তর গগনে,
    নহে আকস্মিক বন্দী প্রাণের সংকীর্ণ সীমানায়
    আদি যার শূন্যময়, অন্তে যার মৃত্যু নিরর্থক,
    মাঝখানে কিছুক্ষণ
    যাহা কিছু আছে, তার অর্থ যাহা করে উদ্ভাসিত।
    এ চৈতন্য বিরাজিত আকাশে আকাশে
    আনন্দ অমৃতরূপে
    আজি প্রভাতের জাগরণে
    এ বাণী গাঁথিয়া চলে সূর্য গ্রহ তারা
    শৃঙ্খলিত ছন্দসূত্রে অনিঃশেষ সৃষ্টির উৎসবে।
    (রোগশয্যায়-২৮)।

    এভাবে      তিনি উপলব্ধি করলেন :

    আনন্দ অমৃত রূপে বিশ্বের প্রকাশ।
    অন্তহীন দেশকালে পরিব্যাপ্ত সুত্যের মহিমা।
    যে দেখে অখণ্ড রূপে
    এ জগতে জন্ম তার হয়েছে সার্থক।
    (রোগশয্যায়-২৬),

    এবং—

    যে চেতনা উদ্ভাসিয়া উঠে
    প্রভাত আলোর সাথে
    দেখি তার অভিন্ন স্বরূপ,

    কেননা—

    আকাশ আনন্দপূর্ণ না রহিত যদি
    জড়তার নাগপাশে দেহ-মন হইত নিশ্চল।
    (রোগশয্যায়-৩৬)

    এই উপলব্ধিতেই—-

    এ দ্যুলোক মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধুলি।
    (আরোগ্য-১)

    এবং —-

    পরম সুন্দর আলোকের স্নান পুণ্য প্রাতে।
    অসীম অরূপ
    রূপে রূপে স্পর্শমণি।
    রসমূর্তি করিছে রচনা,
    সব কিছুর সাথে পশে মানুষের প্রীতির পরশ
    অমৃতের অর্থ দিয়ে তারে।
    মধুময় করে দেয় ধরণীর ধূলি,
    সর্বত্র বিছায়ে দেয় চির-মানবের সিংহাসন।..
    (আরোগ্য-২)

    .

    ০৩.

    একদিকে ভূমার এইরূপ উপলব্ধি, অন্যদিকে ভূমির মানব-সংসারের বিচিত্র জীবন-প্রবাহও কবিকে নতুন দৃষ্টি ও প্রজ্ঞা দান করেছে। মূলত এ তার চিত্ত-সাধনার দুটো শাখা : সৃষ্টির রহস্য-চেতনা আর মানব-ঐতিহ্য মন্থন। একসাথে চলল রূপ আর অরূপের সাধনা।

    মানব-ইতিহাসের বাণী আজ তাঁর কাছে সুস্পষ্ট। কেননা কবি দ্রষ্টা। তিনি দেখেছেন :

    মানব আপন সত্তা ব্যর্থ করিয়াছে দলে দলে।
    বিধাতার সংকল্পের নিত্যই করেছে বিপর্যয়।
    ইতিহাসময়
    সেই পাপে, আত্মহত্যা অভিশাপে আপনার সাধিছে বিলয়।
    (জন্মদিনে–২২)

    অভ্রভেদী ঐশ্বর্যের চূর্ণীভূত পতনের কালে,
    দরিদ্রের জীর্ণদশা বাসা তার বাঁধিবে কঙ্কালে
    (জন্মদিনে–২২)

    আবার—

    দুঃখে দুঃখে পাপ যদি নাহি পায় ক্ষয়
    প্রলয়ের ভস্মক্ষেত্রে বীজ তার রবে সুপ্ত হয়ে
    নূতন সৃষ্টির বক্ষে
    কণ্টকিয়া উঠিবে আবার।
    (রোগশয্যায়–৩৮)

    অন্যায়েরে টেনে আনে অন্যায়েরই ভূত।
    ভবিষতের দূত।
    (জন্মদিনে–১৬)

    সুতরাং

    এ পাপযুগের অন্ত হবে তখনই যখন
    মানব তপস্বী বেশে
    চিতাভস্ম শয্যাতলে এসে
    নবসৃষ্টি ধ্যানের আসনে
    স্থান লবে নিরাসক্ত মনে,
    (জন্মদিনে–২১)

    এবং
    আত্মার অমৃত অন্ন করিবারে দান

    যাঁরা সাধনা করেছিলেন :

    অকৃতার্থ হন নাই তারা
    মিশিয়া আছেন সেই দেহাতীত মহাপ্রাণ মাঝে
    শক্তি যোগাইছে যাহা অগোচরে চির-মানবেরে
    তাহাদের করুণার স্পর্শ লভিতেছি।
    আজি এই প্রভাত আলোকে
    তাঁহাদের নমস্কার করি। (জন্মদিনে–১৭)

    মৃত্যু এসে একদিন তাকে বিচ্ছিন্ন করে নেবে রূপ জগৎ হতে জীবন মিলে যাবে অচিহ্নিত কালের পর্যায়ে (জন্মদিনে-৪)। তাই কবি অনুভব করছেন।

    জীবনের সর্বশেষ বিচ্ছেদ বেদনা (আরোগ্য–৪)

    এবং

    হিংস্ররাত্রি যে চুপি চুপি অন্তরে প্রবেশ করে।
    হরণ করিতে থাকে জীবনের গৌরবের রূপ (আরোগ)-৭)।

    তা-ই কবিকে বিচলিত করে এবং অনাগত কালে বেঁচে থাকবেন না বলেও কবি ব্যথিত হচ্ছেন :

    সে আমার ভবিষ্যৎ
    যারে কোনো কালে পাই নাই
    যার মধ্যে আকাক্ষা আমার
    ভূমিগর্ভে বীজের মতন
    অঙ্কুরিত আশা লয়ে
    দীর্ঘরাত্রি স্বপ্ন দেখে ছিল
    অনাগত আলোকের লাগি। (রোগশয্যায়-২২)।

    কিন্তু এসব ক্ষণস্থায়ী, কেননা কবি জেনেছেন :

    প্রভাতের প্রসন্ন আলোকে
    দুঃখ বিজয়ীর মূর্তি দেখি আপনার
    জীর্ণ দেহ দুর্গের শিখরে। (আরোগ্য–৭)

    এবং

    প্রভাতে প্রভাতে পাই আলোকের প্রসন্ন পরশে
    অস্তিত্বের স্বর্গীয় সম্মান।
    জ্যোতিস্রোতে মিলে যাক রক্তের প্রবাহ,
    নীরবে ধ্বনিত হয় দেহে মনে
    জ্যোতিষ্কের বাণী। (রোগশয্যায়–৩২)

    অপূর্ব আলোকে মানুষ
    দেখিছে তার অপরূপ ভবিষ্যের রূপ
    সাবিত্রী পৃথিবী এই আত্মার মর্তনিকেতন, (জন্মদিনে–৫)

    এই মর্ত্যলীলাক্ষেত্রে সুখে দুঃখে
    অমৃতের স্বাদ পেয়েছি তো ক্ষণে ক্ষণে
    বারে বারে অসীমেরে দেখেছি সীমার অন্তরালে
    বুঝিয়াছি, এ জন্মের শেষ অর্থ ছিল সেইখানে।
    সেই সুন্দরের রূপে
    সে সংগীতে অনির্বচনীয়। (জন্মদিনে–১৩)

    কিন্তু

    আকাশবাণীর সাথে প্রাণের বাণীর।
    সুর বাঁধা হয় নাই পূর্ণ সুরে।
    ভাষা পাই নাই। (রোগশয্যায়-৩)

    সুতরাং কবির এই যা দুঃখ, কেননা—

    বৈদিক মন্ত্রের বাণী
    কণ্ঠে যদি থাকিত আমার
    মিলিত আমার স্তব
    স্বচ্ছ এই আলোকে আলোকে
    ভাষা নাই ভাষা নাই। (আরোগ্য–৩)

    তাই কবি কণ্ঠে জেগেছে আকুল আবেদন :

    করো করো অপাবৃত্ত হে সূর্য, আলোক আবরণ
    তোমার অন্তরতম পরম জ্যোতির মধ্যে দেখি
    আপনার আত্মার স্বরূপ। (জন্মদিনে–১৩)।

    এবং

    হে সবিতা তোমার কল্যাণতম রূপ।
    করো অপাবৃত্ত,
    সেই দিব্য আবির্ভাবে
    হেরি আমি আপন আত্মারে মৃত্যুর অতীত। (জন্মদিনে–২৩)

    .

    ০৪.

    উপরি উদ্ধৃত কবিতাদ্বয়ে এবং রোগশয্যায় কাব্যের ২৬, ২০ আরোগ্য কাব্যের ৩২ এবং জন্মদিনে কাব্যের ২৭ সংখ্যক কবিতায় সূর্যকেই সৃষ্টির মূলীভূত কারণরূপে কল্পনা করা হয়েছে :

    পাঠায়েছি নিঃশব্দ বন্দনা
    সেই সবিতারে যার জ্যোতিরূপে প্রথম পুরুষ
    মর্তের প্রাঙ্গণতলে দেবতার দেখেছি স্বরূপ।

    তাই কবি সূর্যকেই সম্বোধন করেছেন উপরোক্ত ও অন্যান্য বহু কবিতায় :

    হে প্রভাত সূর্য।
    আপনার শুভ্রতম রূপ
    তোমার জ্যোতির কেন্দ্রে হেরিব উজ্জ্বল (রোগশয্যায়–১৫)

    শুধু নিজের নয়, কবি সবকিছুর রূপ সূর্যের আলোকেই প্রত্যক্ষ করেছেন : (রোগশয্যায়–৫, ১৬, ২১, ২৪, ২৬, ২৭, ৩২, ৩৩) এবং এইভাবে পুরোপুরি মেনে নিয়েছেন :

    আলোকের অন্তরে যে আনন্দের পরশন পাই
    জানি আমি তার সাথে আত্মার ভেদ নাই,
    এক আদি জ্যোতি উৎস হতে
    চৈতন্যের পূণ্যস্রোতে
    আমার হয়েছে অভিষেক,
    ললাটে দিয়েছে জয়লেখ,
    জানায়েছে, অমৃতের আমি অধিকারী
    পরম আমির সাথে যুক্ত।
    পেতে পারি বিচিত্র জগতে
    প্রবেশ লভিতে পারি আনন্দের পথে। (আরোগ্য–৩২)

    আদি জ্যোতির সাতে    সবিতার জ্যোতি আর আত্মার চৈতন্যের জ্যোতির কোনো পার্থক্য নেই। তাই কবি কামনা করেছেন :

    সমস্ত কুহেলিকা ভেদ করে
    চৈতন্যের শুভ্র জ্যোতি সত্যের অমৃতরূপ করুক প্রকাশ,
    যে সংসারের ক্ষুব্ধতার স্তব্ধ-ঊর্ধ্ব লোকে
    নিত্যের যে শান্তিরূপ তাই যেন দেখে নিতে পারি,
    আর-এ জন্মের সত্য অর্থ স্পষ্ট চোখে জেনে যাই যেন
    সীমা তার পেরবার আগে। (আরোগ্য–৩৩)

    কবির অভিলাষ পূর্ণ হয়েছিল। তবু কবি বলেন :

    এ বিশ্বেরে ভালবাসিয়াছি,
    এ ভালোবাসাই সত্য, এ জন্মের দান,
    বিদায় নিবার কালে
    এ সত্য অম্লান হয়ে মৃত্যুরে করিবে অস্বীকার। (রোগশয্যায়-২৬)

    এবং

    আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়ো
    এই শেষ কথা বলে
    যাব আমি চলে। (মৃত্যুঞ্জয়)

    এইভাবে কবি ভূলোকে-দ্যুলোকে এবং মহাশূন্যতায় ও মহাপূর্ণতায় বিচরণ করেছেন পরিপূর্ণ আনন্দে, তৃপ্তিতে এবং বিশ্বাসে। তাই এ দ্যুলোক মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধুলি।

    এবং সেজন্যেই মহা অজানার পরিচয় ও সম্মুখে শান্তি পারাবারের সন্ধান পেয়েও কবি যে মধুর মর্ত্যজীবন পেছনে ফেলে যাচ্ছেন সে জীবনের অধিদেবতাকে নম্র নমস্কারে কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং যারা বন্ধুজন তাদের হাতের পরশে মর্ত্যের অন্তিম প্রীতিরসে জীবনের চরম প্রসাদ এবং মানুষের শেষ আশীর্বাদ নিয়ে যেতেও কম লালায়িত ছিলেন না।

    .

    ০৫.

    বক্তব্য উদ্ধৃতি-বহুল হল। তার কারণ আমরা কবির রচনায় কবিকে দেখতে চেয়েছি। বিশ্লেষণের মাধ্যমে বুঝতে চাইনি। বার্ধক্যে যখন আবেগ হয়েছে নিঃশেষিত, প্রজ্ঞা পেয়েছে বৃদ্ধি, মনন হয়েছে সূক্ষ্ম এবং পরিবেশ-চেতনা পেয়েছে প্রাধান্য-তখনকার রচনা এগুলো। তাই এতে বিজ্ঞানবুদ্ধি, দার্শনিকতত্ত্ব, ইতিহাসের শিক্ষা ও কল্যাণ-চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করেছে কবির মন ও মত। এখানে চিত্তের চাইতে চিন্তা, আবেগ ছাপিয়ে উদ্বেগ, মনের উপরে মস্তিষ্ক, ভাবের চেয়ে ভাবনা, প্রাণ থেকে প্রজ্ঞা প্রবল হয়েছে–দেখতে পাই। এজন্যে অভিভূতি অপেক্ষা আবেগের তারল্য, কবিত্বের চেয়ে কথকতার প্রাধান্য, ভাবের চাইতে ভঙ্গির জৌলুস এবং অনুভবের চেয়ে মননের ঔজ্জ্বল্যই প্রকাশ পেয়েছে বেশি। এখানে কবি অনেকাংশে বক্তা ও বেত্তা। মানুষ ও মানুষের সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম ও আদর্শই এখানে কবির মন ও মনন অধিকার করে রয়েছে। তাই এখানে সবিতা একাধারে বিজ্ঞানীর জগৎ-কারণ, অধ্যাত্মবাদীর দেবতা ও মানব-ইতিহাসের সাক্ষী। বার্ধক্যে রবীন্দ্রনাথ মুখ্যত মনীষী আর গৌণত কবি। তাঁর রচনাও তাই কবিতাশ্রয়ী জার্নাল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচট্টগ্রামের ইতিহাস – আহমদ শরীফ
    Next Article আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট – আহমেদ রিয়াজ

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }