Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিদায় দে মা ঘুরে আসি – জাহানারা ইমাম

    জাহানারা ইমাম এক পাতা গল্প41 Mins Read0

    বিদায় দে মা ঘুরে আসি – ৪

    ৪

    ২৮ অক্টোবর ডিআইটি ভবনের একেবারে সাততলায় বোমা ফাটল। টাওয়ারের একদিকে মস্ত একটা গর্ত হয়ে গেছে। ঐ বিল্ডিঙেই টেলিভিশন-স্টেশন, সেখানে নিরাপত্তার মহা কড়াকড়ি। সদর ফটকে মিলিটারি-পুলিশ তো আছেই, প্রতি তলায় ওঠার সিঁড়ির মুখেও পাহারা। এতসব ফাঁকি দিয়ে বিচ্ছুরা কী করে যে একেবারে সাততলায় গিয়ে বোমা ফাটাল, সে একটা রহস্য বটে!

    এইসব খবর যত মায়ের কানে আসে, তত তাঁর মনের ভেতর থেকে কষ্ট, হতাশা, রাগ উবে যায়। ২৯ আগস্টের গ্রেপ্তারের পর মাত্র কয়েকটা দিন ঢাকা শহর নিথর ছিল। তারপরই আবার বিচ্ছুরা কিলবিল করতে শুরু করেছে।

    ৩১ অক্টোবর হঠাৎ একটা মর্মান্তিক দুঃসংবাদ মায়ের কানে আসে। খালেদ মোশাররফ নাকি যুদ্ধে মারা গেছেন। খবর শুনে বাবা-মা দুজনেই ভীষণ ভেঙে পড়েন। রুমীদের গ্রেপ্তারের ধাক্কা একটু-একটু করে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, ঢাকার বুকে গেরিলাদের বিভিন্ন তৎপরতায় মনের মধ্যে একটু-একটু করে আশার সঞ্চার হচ্ছে; এর মধ্যেই আবার এ কী বিনা মেঘে বজ্রপাত!

    খালেদের মৃত্যু মানেই সেক্টর টু-র গেরিলাবাহিনীর মাথার ওপর থেকে চাল উড়ে যাওয়া। খালেদ মোশাররফের পরিশ্রম আর চেষ্টার ফলেই দুই নম্বর সেক্টরে নিয়মিত সেনাবাহিনীর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বিরাট গেরিলাবাহিনী। দেশের অন্যসব জায়গা থেকে তো বটেই—বিশেষ করে ঢাকার যত শিক্ষিত, স্বাস্থ্যবান, টগবগে, বেপরোয়া ছেলে— সবাই এসে জড়ো হয়েছে এই সেক্টর টু-তে। খালেদ মোশাররফ কেবল তাদের সেক্টর কম্যান্ডারই নন, খালেদ মোশাররফ তাদের হিরো। যতগুলো ছেলে সেক্টরে রাখার অনুমতি ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছেলেকে আশ্রয় দিতেন খালেদ। নির্দিষ্টসংখ্যক ছেলের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ রেশন দুইগুণ বেশি ছেলে ভাগ করে খেত। খালেদ বলতেন, ‘ঢাকায় গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য আমার প্রচুর ছেলে দরকার। অথচ আওয়ামী লীগের ক্লিয়ারেন্স, ইউথ ক্যাম্পের সার্টিফিকেট বা ভারত সরকারের অনুমোদন পেরিয়ে যে কয়টা ছেলে আমাকে দেওয়া হয়, তা যথেষ্ট নয়।’ তাই খালেদ বাদলকে বলতেন, ‘যত পারো, সরাসরি ছেলে রিক্রুট করে সোজা আমার কাছে নিয়ে আসবে। এই যুদ্ধ আমাদের জাতীয় যুদ্ধ। দলমত নির্বিশিষে যারাই দেশের জন্য যুদ্ধ করতে আসবে, তাদের সবাইকে আমি সমানভাবে গ্রহণ করব।’

    .

    বাদল তাই করত। বাদল আর তার দুই বন্ধু সেই ২৭ মার্চেই ঢাকা ছাড়ে। তারা প্রথম থেকেই খালেদ মোশাররফের সঙ্গে। খালেদের পরামর্শ এবং প্রেরণাতেই বাদল বারে বারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা এসেছে। ঢাকার তরুণদের সংগঠিত করেছে। তার সহায়তায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে একে-একে ওপারে গেছে শাহাদত চৌধুরী, ক্যাপ্টেন আকবর, ক্যাপ্টেন মালেক, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার, কাজী, মায়া, ফতে, দুলু, গাজী, জিয়া, আনু এবং আরো বহু শত ছেলে। সেক্টর টু-র খাতায় যত ছেলের নাম থাকত, তার চেয়ে অনেক বেশি ছেলেকে খালেদ ক্যাম্পে রেখে গেরিলা ট্রেনিং দিতেন, ঢাকা পাঠাবার জন্য তৈরি করতেন। তিনশ’ ছিলের রেশন ছ’শ ছেলে ভাগ করে খেত। খালেদ এভাবে গেরিলাবাহিনী তৈরি না করলে ঢাকার গেরিলা ত ৎপরতায় এত সাফল্য আসত কি না, সন্দেহ। ২৯ আগস্ট এতগুলো গেরিলা ধরা পড়ার পারও, মাত্র দেড়-দুই সপ্তাহের মধ্যেই অজস্র, প্রচুর গেরিলা ঢাকার বিভিন্ন দিক দিয়ে শহরে ঢুকছে, অ্যাকশান করছে, পাক-আর্মিকে নাস্তানাবুদ করছে, সামরিক সরকারের ভিত্তি নড়িয়ে দিচ্ছে, অবরুদ্ধ দেশবাসীর মনোবল বাড়িয়ে দিচ্ছে, এটাও সম্ভব হচ্ছে খালেদেরই দূরদর্শিতার জন্য।

    সেই খালেদ মোশাররফ যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হয়েছে? খালেদের মৃত্যুসংবাদে মা-র মনের মধ্যে রুমীর শোক দ্বিগুণ উথলে উঠে। দূরে একটা গ্রেনেড ফাটল। কোনো এক রুমী, এক বদি, এক জুয়েল এই রৌদ্র ঝলমল বিকেলে মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে কোথাও আঘাত হানল। স্বাধীনতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খালেদ মোশাররফের হাতে গড়া গেরিলারা।

    খালেদ নেই, রুমী নেই, জুয়েল নেই। কিন্তু যুদ্ধ আছে, স্বাধীনতার যুদ্ধ। ক’টা দিন মা-র খুব অসহ্যে কাটল। কিন্তু সব দুঃখের শেষে একটুখানি স্বস্তি আছে। ৪ নভেম্বর একটা সুখবর পাওয়া গেল— খালেদ মারা যাননি, যুদ্ধে সাংঘাতিক জখম হয়েছেন। কিন্তু বেঁচে আছেন।

    মা দুই হাত ওপরে তুলে শোকর গোজারি করেন : খোদা, তুমি অপার করুণাময়। দিন কেটে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে গেরিলা-অ্যাকশান ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন সরকারি অফিসে, স্কুলে বোমা বিস্ফোরণ, প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যাঙ্ক লুট—খানসেনারা পাগলের মতো হয়ে উঠেছে। তাদেরকে ‘মুকুত’-এর ভূতে ধরেছে। সন্ধ্যার পর তারা তাদের ছাউনি থেকে ভয়ে বেরোয় না। পূর্ব বাংলার চারধারে সবগুলো সীমান্তেও যুদ্ধ খুব প্রচণ্ডভাবে চলছে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের চাপ যতই বাড়ছে, পাকিস্তান সরকার ততই এটাকে ভারতীয় হামলা বলে খবর কাগজে জোর প্রচার চালাচ্ছে।

    ঢাকা শহরেও কেমন একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব এসে গেছে। ৫ নভেম্বর হঠাৎ সরকারি আদেশে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে রাতে নিষ্প্রদীপের মহড়া হল একঘণ্টার জন্য। ক’দিন পরে কাগজে দেখা গেল— সরকারি, বেসরকারি সব বাড়িঘরের পাশে ট্রেঞ্চ খোঁড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের আর বেশি দেরি নেই। একদিকে বিহারি ও রাজাকারদের মধ্যে কেনাকাটার ধুম পড়েছে; অন্যদিকে বিচ্ছুরা নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররমে শাড়ি-গহনার দোকানে বোমা ফাটাচ্ছে।

    .

    মা’র কিচ্ছু ভালো লাগে না। বিচ্ছুদের উৎপাতে পাক-সরকার খ্যাপা কুকুরের মতো হয়ে উঠেছে। সব রাগ এসে পড়েছে অবরুদ্ধ নগরবাসীর ওপর। যেভাবে পারছে, তাদের নাজেহাল করছে। অপমান করছে। ২৭ রমজান শবেকদরের রাতে মোমিন মুসলমানরা ঠিকমতো আল্লার ইবাদতও করতে পারেনি। ও রাতে কারফিউ ছিল না, শবেকদর বলেই। মুসল্লিরা সারারাত মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি ক’রে ফজরের নামাজ প’ড়ে তারপর বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু সরকার হঠাৎ ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কারফিউ জারি করে দিল। ফজরের আজান পড়বে পৌনে ছ’টায়। মুসল্লিরা সবাই হুড়মুড়িয়ে বাড়ির পানে দৌড় দিয়েছেন। ফজর নামাজ পর্যন্ত থাকার উপায় কই? তাহলে তো মসজিদেই আটকা পড়ে থাকতে হবে। তাই শরীফ আর জামীও বাড়ি ফিরে এসেছে। শবেকদর বলে আজ অফিসও ছুটি। কাল সারারাত জেগে সবাই নামাজ পড়েছেন, আজ দিনে একটু ঘুমোবেন। কিন্তু সে সুযোগও কেউ পেলেন না। ন’টার দিকে মাইকে ঘোষণা শোনা গেল— যার-যার বন্দুক, পিস্তল আছে, লাইসেন্সসহ নিয়ে মেইন রোডে আসুন। অতএব সবাই আবার ছুটল বড় রাস্তায়, যার-যার বন্দুক-পিস্তল ঘাড়ে ক’রে।

    শরীফ, জামীও তাদের দুটো বন্দুক, একটা পিস্তল আর লাইসেন্সগুলো নিয়ে এলিফ্যান্ট রোডে গেল। দেখে সারা পাড়ার লোক অস্ত্র হাতে বড় রাস্তাজুড়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারফিউ বলে রাস্তা ফাঁকা— তাই রাস্তাজুড়ে সবাই দাঁড়িয়েছে। রাস্তার মাঝখানে খানসেনারা টেবিল-চেয়ার পেতে সবার কাছ থেকে বন্দুক-পিস্তল-লাইসেন্স সব জমা নিয়ে প্রত্যেককে আবার রসিদ লিখে দিল। এইসব শেষ হতে বিকেল চারটে বাজল। শরীফ যখন ফিরল, তার সারামুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি, দুই চোখ লাল। গতকাল সারারাত মসজিদে জাগা, আজ সারাদিন গোসল, বিশ্রাম কিছু নেই, অস্ত্র হাতে সারাদিন রোদে দাঁড়িয়ে থাকো। শীতের রোদ হলেও রোজা রেখে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকা খুবই কষ্টকর। জামীর মুখ দেখে মনে হচ্ছে, তার জ্বর এসেছে।

    রুমীর জন্যে মাঝে মাঝে মা’র মনে এমন হাহাকার জাগে যে, তখন আর কিছু ভালো লাগে না তাঁর। রুমীকে আর কি কখনো দেখবেন তিনি? রুমীর একটা ফটো বের করে একটা স্ট্যান্ডে লাগিয়ে অনেকক্ষণ চেয়ে রইলেন সেটার দিকে। কতদিন দেখেননি ওই প্রিয় মুখ। এই কি ছিল বিধিলিপি? রুমী কি কেবলি ছবি হয়ে রইবে তাঁর জীবনে? আর কি ফিরে পাবেন না তাকে? রুমী যে সবসময় জীবনানন্দ দাশের কবিতা আবৃত্তি করত :

    আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে- এই বাংলায়
    আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে।

    রুমী, তোমাকে আসতেই হবে আবার ফিরে।

    মা চোখ মুছে ছবিটার নিচে একটুকরো কাগজে বড় বড় অক্ষরে লিখলেন : আবার আসিব ফিরে—এই বাংলায়। ফটোটা রাখলেন নিচতলায় বসার ঘরের কোণার টেবিলে। আগামীকাল ঈদ। অনেক মানুষ আসবে ঈদ মিলতে। তারা সবাই এসে দেখবে রুমী কেমন কোমরে হাত দিয়ে দৃপ্তভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে সদর্পে ঘোষণা করছে— আবার আসিব ফিরে, এই বাংলায়।

    ঈদের দিনে রুমীদের বাড়িতে কোনো আয়োজন নেই। কারো জামাকাপড় কেনা হয়নি, দরজা-জানালার পর্দা কাচা হয়নি, ঘরের ঝুল ঝাড়া হয়নি। বসার ঘরে টেবিলে রাখা হয়নি আতরদানি। শরীফ, জামী ঈদের নামাজও পড়তে যায়নি। কিন্তু মা ভোরে উঠে ঈদের সেমাই, জর্দা রেঁধেছেন। যদি রুমীর সহযোদ্ধা কেউ আজ আসে এ বাড়িতে? বাবা-মা ভাই-বোন-পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো গেরিলা যদি রাতের অন্ধকারে আসে এ বাড়িতে? তাদেরকে খাওয়ানোর জন্যে মা রেঁধেছেন পোলাও, কোর্মা, কোপ্তা, কাবাব। তারা কেউ এলে মা চুপিচুপি নিজের হাতে বেড়ে খাওয়াবেন। তাদের জামায় লাগিয়ে দেবার জন্যে একশিশি আতরও তিনি কিনে লুকিয়ে রেখেছেন।

    .

    ঘটনা একটু দ্রুতই ঘটছে কিছুদিন থেকে। ২৩ নভেম্বর হঠাৎ খবরের কাগজে বড় বড় শিরোনামে দেখা গেল : ভারতের সর্বাত্মক আক্রমণ।

    পাকিস্তানি সামরিক-জান্তা মুক্তিবাহিনীর ঠেলা সামলাতে না পেরে এখন সব দোষ ভারতের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।

    মা’র কিছু ভালো লাগে না। এখন আর খবরের কাগজে চোখ বোলাতেও ইচ্ছে করে না। কত আর একতরফা মিথ্যে কথা পড়া যায়? স্বাধীনবাংলা বেতারের অনুষ্ঠান ছাড়া রেডিও শোনেনই না। ২৯ আগস্টের পর থেকে টিভি খুলতে দেননি কাউকে। এখন মা খালি বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করেন। জিন্না এভিনিউ, বায়তুল মোকাররমে ফুটপাতে চাদর বিছিয়ে বহু ছোট দোকানি গরম কাপড়-চোপড় নিয়ে বসে। সেখানে গিয়ে খুঁজে খুঁজে মা সোয়েটার কেনেন, মাফলার কেনেন, মোজা কেনেন। আগে শুধু ওষুধ আর সিগারেট কিনতেন। টাকার সঙ্গে ওগুলোই পাঠাতেন। এখন শীত এসে গেছে। গরম কাপড় দরকার। বাবা বলেছেন খুব ছোট ছোট প্যাকেট করতে। যাতে ছেলেদের নিতে সুবিধে হয়। যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তাই মা খুব ছোট ছোট প্যাকেট করেন— একটা সোয়েটার, একটা মাফলার, একজোড়া মোজা। অবশ্য মোজা যে খুব কাজে লাগে তা নয়। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধার জুতোই নেই। রুমী, আলম, কাজীদের মুখে শুনেছিলেন— যুদ্ধক্ষেত্রে বেশির ভাগ ছেলে লুঙি, গেঞ্জি পরে যুদ্ধ করে। খালি পায়ে কাদাপানি পার হয়ে যায়। ভাঙা চাড়ায়, কাচে পা কেটে যায়। ঊরুতে, কোমরে জোঁক কামড়ে ধরে। তবু মা মোজাও কেনেন। মোজা পাঠান। অন্তত নিজেকে ‘তো ভোলানো যায়— তাঁর ছেলেরা এই শীতে জুতো-মোজা পরে যুদ্ধ করছে।

    কবে যুদ্ধ শেষ হবে? মা’র যে আর সহ্য হয় না। আগস্ট মাসে রুমী আসার পর জিজ্ঞেস করেছিলেন, ওরে, আর কতদিন এমন চলবে? রুমী হেসে বলেছিল, ‘কী যে বলো আম্মা, যুদ্ধ তো কেবল শুরু। জানো না, ভিয়েতনামে কত বছর ধরে যুদ্ধ চলেছিল?’ মা শিউরে উঠে বলেছিলেন, ‘তাহলে কষ্টেই মরে যাব রে। এই বছরের মধ্যে যুদ্ধ শেষ না হলে আর বাঁচব না।’

    কে জানে, যুদ্ধ কবে শেষ হবে।

    কেন যুদ্ধ হয়? কেন মায়ের বুক খালি করে ছেলেরা যুদ্ধে যায়?

    কেন হাসি-হাসি মুখ করে ছেলেরা বলে— ‘বিদায় দে মা ঘুরে আসি’? ওরা তো জানেই, সবাই ফিরে আসতে পারবে না, তবু কেন ওরা অমন হাসি-হাসি মুখে মায়ের বুক-ভরা ভালোবাসা পেছনে ফেলে যুদ্ধে চলে যায়? স্বাধীনতার যুদ্ধে যেতে হয় বলে।

    .

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম
    Next Article বুকের ভিতর আগুন – জাহানারা ইমাম

    Related Articles

    জাহানারা ইমাম

    একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    August 13, 2025
    জাহানারা ইমাম

    নিঃসঙ্গ পাইন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    সাতটি তারার ঝিকিমিকি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বুকের ভিতর আগুন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    নয় এ মধুর খেলা – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }