Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিপদ – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প63 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বিপদ – ৩

    আফসার সাহেব তিনি দিন পর অফিসে এসেছেন। এই তিন দিনে অনেক কাগজপত্র তাঁর টেবিলে জমা থাকার কথা। তিনি টেবিলে কোনো কাগজপত্র দেখলেন না। এটাকে মোটামুটি অস্বাভাবিক ব্যাপার বলা যেতে পারে। তাঁর মনে একটা ক্ষীণ সন্দেহ হল! সেই সন্দেহ নিজের মনেই চেপে রাখলেন।

    অফিসে তাঁর চেয়ারে বসার পরপর তিনি দুধ ছাড়া এককাপ চা খান। এই চা তাঁর বেয়ারা নাজিম বানিয়ে দেয়। পানি গরম কান্নাই থাকে। তিনি অফিসে ঢোকামাত্র কাপে টী-ব্যাগ দিয়ে তাঁর কাছে নিয়ে আসা হয়।

    অপ্রয়োজনীয় কোনো কথা তিনি নাজিমের সঙ্গে বলেন না। শুধু নাজিম কেন, কারো সঙ্গেই বলেন না। তাঁর মতে অফিস হচ্ছে কাজকর্মের জায়গা, গল্পগুজবের আখড়া না। আজ আফসার সাহেব নিয়মের ব্যতিক্রম করলেন। নাজিম চায়ের কাপ নামিয়ে রাখামাত্ৰ হাসিমুখে বললেন, কেমন আছ নাজিম?

    নাজিম বিস্মিত হয়ে বলল, ভালো আছি, স্যার।

    ভালো থাকলেই ভালো। তুমি থাক কোথায়?

    পুরানা পল্টন!

    বাসায় কে কে আছে?

    স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে আর আমার মা।

    তোমাদের বাসায় কোনো বিড়াল আছে নাকি?

    নাজিম এই প্রশ্নের কোনো মানে বুঝতে পারল না। তাঁর বাসায় বিড়াল আছে কি না এটা স্যার কেন জিজ্ঞেস করলেন? আফসার সাহেব দ্বিতীয় বার প্রশ্নটি করলেন, কী, আছে বিড়াল?

    জ্বি স্যার, একটা আছে।

    কত বড়?

    নাজিম এই প্রশ্নেরও কোনো মানে বুঝল না। বিড়াল কত বড়-তার মানে আবার কী? বিড়াল তো বিড়ালের মতো বড়ই হবে। একটা বিড়াল তো আর বাঘের মতো বড় হবে না, কিংবা ইঁদুরের মতো ছোটও হবে না। নাজিম ক্ষীণ স্বরে বলল, বিড়ালের কথা জিজ্ঞাস করতেছেন কেন স্যার?

    আফসার সাহেব অপ্ৰস্তুত হয়ে বললেন, এমনি জিজ্ঞেস করছি-বিড়াল সম্পর্কে একটা বই পড়ছিলাম তো! পড়তে-পড়তে হঠাৎ,… আচ্ছা এখন যাও।

    বিড়াল সম্পর্কে তিনি যে বই পড়ছেন, এই ঘটনা সত্যি। তিনি ভেবে রেখেছিলেন। বিড়াল বিষয়ে যেখানে যত বই পাবেন, পড়বেন। সমস্ত নিউ মার্কেট ঘেটে একটামাত্র বই পেয়েছেন। উইলিয়াম বেলফোর্ডের ক্যাট ফ্যামিলি? বিহেভিয়ারেলস্টাডিজ। সেবইয়ে বিড়াল সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই নেই। বাঘ, চিতাবাঘের কথায় পাতা ভর্তি। সুন্দর-সুন্দর রঙিন ছবি-আসল ব্যাপার কিছু নেই।

    এসে ঢুকল। ক্ষীণ গলায় বলল, স্যার।

    বই থেকে মুখ তুলে আফসার সাহেব বললেন, কি ব্যাপার?

    বড় সাহেব আপনেরে সালাম দিছেন।

    বই বন্ধ করে আফসার সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।

    ডেল্টা শিপিং করপোরেশনের বড়সাহেবের নাম ইসহাক জোয়ারদার। ছোটখাটো মানুষ। মেজাজ অত্যন্ত খারাপ। আফসার সাহেবকে তিনি দু চোখে দেখতে পারেন না। অবশ্যি কথায়-বার্তায় তা কখনো বুঝতে দেন না।

    স্যার, ডেকেছেন?

    ইসহাক সাহেব হাসিমুখে বললেন, গল্পগুজব করার জন্যে ডেকেছি। কেমন আছেন বলুন। শরীর ঠিক আছে?

    জ্বি।

    তিন দিন অফিসে আসেন নি, তাই ভাবলাম কোনো সমস্যা কি-না।

    জ্বি-না স্যার, কোনো সমস্যা নেই।

    আপনার এক আত্মীয়ের সঙ্গে পার্টিতে দেখা। তাঁকে আপনার ব্যাপারে খুব উদ্বিগ্ন মনে হল।

    কেন?

    বলছিল–আপনার মাথায় কোনো সমস্যা হয়েছে। আপনি নাকি বলে বেড়াচ্ছেন বিড়ালের কথা বুঝতে পারেন?

    আফসার সাহেব চুপ করে রইলেন। ভেবে পেলেন না ঘটনা এত দ্রুত ছড়াচ্ছে কীভাবে? মনে হচ্ছে সপ্তাহখানেকের ভেতর ঢাকা শহরের সব লোক জেনে যাবে। পত্রিকার লোক আসবে ইন্টারড়ু নেওয়ার জন্যে। বলা যায় না, টিভির কোনো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেও তাঁর ডাক পড়তে পারে। টিভি উপস্থাপক একটা বিড়াল নিয়ে স্টুডিওতে উপস্থিত হবেন। চিকুন গলায় বলবেন–সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী, এবার আপনাদের জন্যে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা। আজ আমরা স্টুডিওতে এমন এক ব্যক্তিত্বকে এনেছি যিনি বিড়ালের কথা বুঝতে পারেন বলে দাবি করেন। সেই বিশেষ ব্যক্তিত্বকে হাততালি দিয়ে অভ্যর্থনা করবার জন্যে আপনাদের অনুরোধ করছি। তালি পড়ছে। হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে….

    আফসার সাহেবের চিন্তার সুতো ছিঁড়ে গেল। ইসহাক সাহেব বললেনবিড়ালের কথা বুঝতে পারেন বলে যা শুনছি তা কি সত্যি?

    জ্বি স্যার, সত্যি!

    আই সি, ভেরি ইন্টারেষ্টিং। শুধু কি বিড়ালের কথাই বুঝতে পারেন, না কুকুর, গরু, গাধা, ভেড়া, ছাগল-সবার কথাই বুঝতে পারেন?

    বিড়ালের ব্যাপারটা জানি। অন্যগুলি পরীক্ষা করে দেখি নি।

    আপনি একটা কাজ করুন না কেন? খাতা এবং পেনসিল নিয়ে চিড়িয়াখানায় চলে যান। যে-সব প্রাণীর কথা। আপনি বুঝতে পারেন তাদের নামের বিপরীতে একটা করে টিক চিহ্ন দিন। আমার ধারণা, বিড়ালের কথা যখন বুঝতে পারছেন অন্যদেরটাও ইনশাআল্লাহ্ পারবেন।

    আফসার সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, স্যার, আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন?

    সরি-তা একটু ঠাট্টা অবশ্যি করেছি। ক্ষমা করবেন। আমি যদি বলতাম বিড়ালের কথা বুঝতে পারছি, তাহলে আপনিও আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন।

    না, আমি করতাম না।

    হয়তো-বা করতেন না। যাই হোক, আমি করে ফেলেছি। তার জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনি এক কাজ করুন-অফিস থেকে দিন দশেকের ছুটি নিন।

    আমার ছুটির প্রয়োজন নেই।

    আমার মনে হয় প্রয়োজন আছে। আপনি ছুটি নিন। সাইকিয়াটিস্টকে দিয়ে ভালোমতো চিকিৎসা করান, নয়তো কিছুদিন পর বলা শুরু করবেন-আপনি পিঁপড়ার কথাও বুঝতে পারছেন। আমি ছুটির ব্যবস্থা করে রেখেছি। যদি চান আমি কয়েক জন সাইকিয়াটিক্টের ঠিকানাও আপনাকে দিতে পারি।

    আমি স্যার তার কোনো প্রয়োজন বোধ করছি না।

    আপনি হয়তো করছেন না, আমি করছি! আমি এমন কাউকে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিতে পারি না, যে পশুদের কথা বুঝতে পারে। আমার এমন অফিসার দরকার, যে মানুষের কথা বুঝতে পারবে। আমি লক্ষ করেছি, আমাদের মধ্যে বেশির ভাগই মানুষের কথা বুঝতে পারি না।

    আফসার সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।

    ইসহাক সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, চলে যাচ্ছেন নাকি?

    জ্বি,  চলে যাচ্ছি। আপনার অত্যন্ত অপমানসূচক কথা শুনতে ইচ্ছা করছে না।

    কি করবেন বলুন, আমি তো আর বিড়াল না। বিড়াল হলে হয়তো আমার কথাগুলি খুব অপমানসূচক মনে হত না।

    আফসার সাহেব নিজের ঘরে ঢুকলেন। অসহ্য রাগে শরীর কাঁপছে। রাগ সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। রীতিমতো বমি এসে যাচ্ছে। এই মানুষটি তাঁকে এ-জাতীয় অপমান আগেও করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। এত অপমানের ভেতর চাকরি করার কোনো মানে হয় না। কোনো মানে হয় না। তাঁর কিছু সঞ্চয় আছে। মিরপুরে জায়গা কিনে রেখেছেন। প্রভিডেন্ট ফাণ্ড থেকে লাখ তিনেক টাকা পাওয়ার কথা। বয়স এমন কিছু হয় নি। চেষ্টাচরিত্র করলে আরেকটা চাকরি কি জোগাড় করতে পারবেন না? তিনি কাজ জানেন জাহাজ চলাচল জাতীয় যে-কোনো প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরি পাওয়ার কথা।

    তিনি পি. এ.-কে ডেকে রেজিগনেশন লেটার ডিকটেট করলেন। ড্রাফট দেখে দুটা বানান ঠিক করলেন। চিঠি টাইপ করে আনতে পাঠালেন। পি. এ.ব সাধারণত কোনো কাজই দ্রুত করে না। এই কাজটা সে অত্যন্ত দ্রুত করল। তিনি চিঠিতে সই করলেন। সই করার পর তাঁর গায়ের জ্বালা খানিকটা কমল। মন শান্ত হল। নাজিমকে চা বানাতে বললেন। নাজিম চা বানিয়ে আনল।

    জ্বি স্যার।

    চাকরি ছেড়ে দিয়েছি নাজিম।

    স্যার, শুনেছি।

    কার কাছে শুনলে?

    পি. এ. স্যার চিঠি টাইপ করছিলেন। সবাইকে বলেছেন।

    ও, সবাই তাহলে জানে। ভালো, জানলেই ভালো।

    আফসার সাহেব বিস্মিত হলেন। সবাই জানে, অথচ কেউ এসে তাঁকে বলল না। রেজিগলেশ্বন লেটার না-দেবার জন্যে। এরা কেউ কি তাঁকে পছন্দ করে না? মানুষ হিসেবে তিনি কি এই সামান্য সহানুভূতিটুকুও পেতে পারেন না? দীর্ঘ পনের বছর তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। কাজে ফাঁকি দেন নি। দশটায় অফিসে আসার কথা, দশটায় এসেছেন। পাঁচটা পর্যন্ত অফিস। কোনো দিন পাঁচটা বাজার দশ মিনিট আগে অফিস ছেড়ে যান নি।

    নাজিম।

    জ্বি স্যার।

    চা ভালো হয়েছে, তুমি এখন যাও।

    আফসার সাহেব রেজিগনেশন লেটার পি. এ.-র হাতে জমা দিয়ে অফিস ছেড়ে বের হলেন। তখনো দুপুরে-ল্যাঞ্চের সময় হয় নি। তাঁর মনে ক্ষীণ আশা ছিল শেষ মুহূর্তে হয়তো সবাই এসে ভিড় করবে। তা-ও কেউ করল না।

    তিনি দুপুরে কিছু খেলেন না। বাসায়ও ফিরে গেলেন না। দীর্ঘ সময় রাস্তায়রাস্তায় হাঁটলেন। একসময় ক্লান্ত হয়ে পার্কে ঢুকলেন বিশ্রামের জন্যে। দীর্ঘ আট বছর পর পার্কে এলেন। ঢাকা শহরের পার্কগুলি যে এখনো এত সুন্দর আছে তা তিনি ভাবেন নি। পর্কে বসে থাকতে তাঁর ভালোই লাগল। কিছুক্ষণ আগে ভালো একটা চাকরি ছেড়ে এসেছেন-এই নিয়ে তাঁর মনে কোনো অনুশোচনা বোধ হল না। বরং একধরনের শান্তি অনুভব করলেন। পার্কে বসেই ঠিক করলেন, আজ অন্য দিনের মতো সাড়ে পাঁচটায় বাসায় উপস্থিত হবেন না। নিয়মের ব্যতিক্রম করবেন। একটা ছবি দেখলে কেমন হয়? ছাত্রজীবনে প্রচুর সিনেমা দেখতেন। গত দশ বছরে একটাও দেখেন নি। সিনেমা হলে ঢুকে ছবি দেখতে কেমন লাগে কে জানে!

    তিনি বাড়ি ফিরলেন রাত এগারটায়। শীতের দিনে রাত এগারটা মানে অনেক রাত। মীরা উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় এতটুকু হয়ে গেছেন। চারদিকে খোঁজখবর করছেন। কেউ কিছু বলতে পারছে না। মীরা ভেবে রেখেছেন, সাড়ে এগারটা পর্যন্ত দেখবেন। তারপর হাসপাতালে-হাসপাতালে খোঁজ নেয়া শুরু করবেন।

    আফসার সাহেবকে দেখে আনন্দে তাঁর চোখে প্রায় পানি এসে গেল। সুমী রুমী ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল বাবাকে! সুমী কাঁদো-কাদো গলায় বলল, কোথায় ছিলে বাবা?

    আফসার সাহেব হাসিমুখে বললেন, একটা ছবি দেখলাম।

    কী দেখলে?

    কুকসিনেমা হলে একটা সিনেমা দেখলাম।

    হ্যাঁ, সত্যি।

    কী নাম ছবির?

    ড়াবির সংসার

    কী আছে। ছবিতো?

    মারামুরি-কাটাকাটি, গান-বাজনা, নাচ-সবই আছে। কিছুই বাদ নেই।

    মীরা দীর্ঘ সময় স্বামীর দিকে তাকিয়ে থেকে নরম গলায় বললেন, হাত-মুখ ধুয়ে খেতে এস। তোমার জন্যে আমরা সবাই না-খেয়ে বসে আছি।

    খাবার টেবিলে বসেই আফসার সাহেব বললেন, বিড়ালকে খেতে দিয়েছ?

    মীরা শীতল গলায় বললেন, ঐ-সব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।

    বিড়ালকে কি খাবার দিয়েছ?

    হ্যাঁ।

    ভালোমতো দিয়েছ?

    হ্যাঁ, ভালোমতোই দেওয়া হয়েছে। তুমি ভাত খাও তো!

    কেন জানি খেতে ইচ্ছা করছে না। এক গ্লাস দুধ দাও। দুধ খেয়ে শুয়ে পড়ি।

    ভাত সত্যি খাবে না?

    না।

    মীরা গ্লাসে করে দুধ নিয়ে এলেন। দুধের গ্লাস রাখতে।-রাখতে ইংরেজিতে বললেন, শুনলাম তুমি নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছ?

    হ্যাঁ। কার কাছে শুনলে?

    অফিস থেকে টেলিফোন করে জানিয়েছে।

    এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেবার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজন মনে করলে না?

    জিজ্ঞেস করা তো অর্থহীন। সিদ্ধান্ত নেব আমি। এই সিদ্ধান্ত তুমি তো নিতে পারবে না।

    সংসার চলবে কীভাবে?

    অসুবিধা হবে না, চলবে।

    এই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে! এখন তো আর আট হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া পাবে না-দু-কামরার একটা ঘূপটি ঘর নিতে হবে।

    নেবা মানুষের দিন তো সব সময় সমান যায় না। এখন আমার দিন খারাপ যাচ্ছে।

    আফসার সাহেব দুধের গ্লাস হাতে উঠে দাঁড়ালেন। মীরা বললেন, কোথায় যাচ্ছ?

    তোমরা খাওয়া শেষ করে। আমি বারান্দায় বসি।

    আমাদের সঙ্গে বাস না।

    এখন বসতে ইচ্ছা করছে না। একটু এক-একা থাকি।

    বারান্দায় বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিড়ালটাকে তার বাচ্চা দুটি নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা গেলঃ আফসার সাহেব কান পেতে রইলেন। হ্যাঁ, বুঝতে পারছেন। কথা বুঝতে তাঁর কোনোই অসুবিধা হচ্ছে না।

     

    বাচ্চা বিড়াল : মা, স্যার আজ এত দেরি করে বাসায় এসেছেন কেন?

    মা :বুঝতে পারছি না। ভদ্রলোকের কোনো- একটা সমস্যা হয়েছে।

    বাচ্চা : কী সমস্যা?

    মা : তাঁর স্ত্রী টেলিফোনে কথাবার্তা যা বলছিলেন তাতে মনে হচ্ছে চাকরি নিয়ে সমস্যা। উনি বোধহয় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপদ।

    বাচ্চা: বিপদ কেন?

    মা : চাকরি ছেড়ে দিলে তাঁদের টাকা পয়সার সমস্যা হবে। রাতদিন ঝগড়াঝাঁটি হবে! এখন তা-ও মাঝে-মাঝে খাবারটাবার দেয়-তখন তা-ও দেবে না।

    বাচ্চা : মা, আজ তো এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো খাবার দিল না।

    মা : রাতের খাবার শেষ হোক, তখন দিলে দিতেও পারে।

    বাচ্চা : মা, তোমার কি মনে হয় দেবো?

    মা : বুঝতে পারছি না-দিতেও পারে। বাচ্চা। খুব খিদে লেগেছে মা।

    মা : একটা ইঁদুর মেরে খাওয়াতে পারি-খাবি?

    বাচ্চা : না, রান্না-করা খাবার খাব। মা, ওরা আজ কী রান্না করেছে?

    মা :সিম দিয়ে কৈ মাছ। মাছের সঙ্গে একটু সিম দিলে ভালো হয়-ভেজিটেবল একেবারেই খাওয়া হচ্ছে না।

    বাচ্চা : সিম দিলেও কিন্তু আমি খাব না মা।

    মা : এমনিতেই খাওয়া পাওয়া যাচ্ছে না। তার ওপর যদি এই যন্ত্রণা তোমরা কর, তাহলে তো মুশকিল! সিম যদি দেয় তাহলে খেতে হবে। সিমে অনেক ভিটামিন।

    বাচ্চা : ভিটামিন কী মা?

    মা : এইসব তোমরা বুঝবে না। ভিটামিন খুব প্রয়োজনীয় একটা জিনিস।

     

    আফসার সাহেব উঠে পড়লেন। খাবার ঘরে উঁকি দিলেন। বাচ্চাদের খাওয়া হয়ে গেছে। তারা হাত ধুচ্ছে। মীরার খাওয়া এখনো শেষ হয় নি। আফসার সাহেব বললেন, মীরা, তুমি তো আমাকে মিথ্যা কথা বলেছ।

    মীরা বললেন, কী, মিথ্যা বললাম?

    তুমি বলেছ–বিড়ালদের খাবার দিয়েছ। আসলে দাও নি।

    এটা এমন কোনো মিথ্যা না, যার জন্যে তুমি এমন কঠিনভাবে বাচ্চাদের সামনে আমার কাছে কৈফিয়ত তলব করবে।

    আমাকে মিথ্যা কথা কেন বললে? কেন বললে, বিড়ালদের খাবার দেওয়া হয়েছে?

    তুমি হঠাৎ করে যাতে আপসেট না-হও সে-জন্যেই সামান্য মিথ্যাটা বললাম। তোমার দুশ্চিন্তার কারণ নেই-এক্ষুণি খাবার দিচ্ছি। যদি চাও চেয়ার- টেবিলে দেব। কাঁটা চামচ দেব। সালাদও দেব।

    আফসার সাহেব কঠিন কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। মীরা বললেন, তুমি যে অসুস্থ হয়ে পড়ছি, তা কি তুমি বুঝতে পারছি? জীবনে কোনোদিন তুমি নিজের মেয়েদের খাবারের ব্যাপারে কোনো খোঁজ নাও নি-আজ ব্যস্ত হয়ে পড়েছ বিড়াল নিয়ে অকারণে হৈচৈ করছি। তোমার স্বভাব্যচরিত্র বদলে যাচ্ছে। এক-একা সিনেমা দেখে ফুলে। আমরা দুশ্চিন্তা করতে পারি—এটা একবারও তোমার মনে এল না।

    সরি।

    থাক, সরি বলতে হবে না।

    মীরার রাগ বেশিক্ষণ থাকল না। কিছুক্ষণ পরই নরম গলায় বললেন, কিছু মনে করো না। অনেক কড়া কথা বলে ফেলেছি। আমি দেখতে পাচ্ছি। তুমি একধরনের সমস্যার ভেতর দিয়ে যােচ্ছ। তোমার সঙ্গে আরো শান্ত ব্যবহার করা উচিত ছিল, তা করিনি। আমি লজ্জিত। এস, ঘুমুতে এস। ভয় নেই, তোমার বিড়ালকে খেতে দিয়েছি। দুটো আস্ত কৈ মাছ দিয়েছি।

    আফসার সাহেব বললেন, সঙ্গে সিম দিয়েছ তো?

    সিম?

    হ্যাঁ, সিম। বিড়ালের বাচ্চা দুটো গ্ৰীন ভেজিটেবল একেবারেই খেতে চায় না। অথচ ওদের দরকার।

    মীরা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলেন। খানিকক্ষণ পর স্বামীর হাত ধরে বললেন, এস, ঘুমুতে এস।

    সেই রাতে আফসার সাহেব ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন দেখলেন। ঘুমের মধ্যেই বিকট চিৎকার করতে লাগলেন। মীরা তাঁর গা ঝাঁকাতে-কাকাতে ব্যাকুল হয়ে ডাকতে লাগলেন, কী হয়েছে? এ্যাই, এ্যাই, কী হয়েছে? রুমী সুমীও ঘুম ভেঙে বাবার ঘরে ছুটে এল।

    আফসার সাহেব চোখ মেলতেই মীরা কীদো-কাদো গলায় বললেন, কী স্বপ্ন দেখেছ? কী স্বপ্ন?

    আফসার সাহেব হতচকিত চোখে তাকাচ্ছেন। কিছু বলতে পারছেন না। তাঁর সারা গা ঘামে ভিজে গেছে। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে।

    মীরা বললেন, কী স্বপ্ন দেখলে?

    আফসার সাহেব বসে ক্ষীণ গলায় বললেন, পানি খাব। এক গ্লাস খুব ঠাণ্ডা পানি দিতে বল।

    সুমী পানি আনতে ছুটে গেল।

    আফসার সাহেব তৃষ্ণার্তের মতো পানি পান করলেন। পানির গ্লাস এত উঁচু করে ধরলেন যে কিছু পানি গলা বেয়ে নেমে শার্ট ভিজে গেল। কুদ্দুস, যে থাকে ঘরের অন্য প্রান্তে, সেও উঠে এসেছে। ঘুমের মধ্যে আফসার সাহেব যে ভয়ংকর চিৎকার দিয়েছেন তা ঘরের শেষ পর্যন্ত গিয়েছে।

    মীরা স্বামীর গায়ে হাত রেখে কোমল গলায় বললেন, কী স্বপ্ন দেখেছ?

    আফসার সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, স্বপ্নে দেখেছি, আমি একটা বিড়াল হয়ে গেছি। বিড়াল হয়ে মাঠে ছোটাছুটি করছি। জ্যোৎস্না রাত-আবছাভাবে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। আমি অসম্ভব ক্ষুধার্তা আমি বসে আছি ইঁদুরের গর্তের কাছে। একসময় একটা ইঁদুর বের হল-আমি লাফ দিয়ে ইঁদুরের ওপর পড়লাম। ইঁদুরটাকে ছিঁড়ে টুকরাটুকরা করলাম। আমার সমস্ত মুখে ইঁদুরের রক্ত লেগে গেল।

    মীরা নরম গলায় বললেন, স্বপ্ন হচ্ছে স্বপ্নল স্বপ্ন নিয়ে মাথা ঘামোনর কোনোই কারণ নেই। ভোর হোক, আমরা মিসির আলি সাহেবের কাছে যাব! ওঁকে সব বলব!

    আমি কোথাও যাব না।

    আচ্ছা বেশ, যেতে না-চাইলে যাবে না।

    আমাকে আর এক গ্লাস পানি দাও।

    মীরা পানি নিয়ে এলেন। আফসার সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, মীরা, দেখ আমার হাত দুটায় ইঁদুরের গন্ধ। বিশ্ৰী পচা গন্ধ।

    কী বলছি তুমি।

    হ্যাঁ, সত্যি তাই। এই হাতে আমি ইঁদুর ধরেছি। গন্ধ তো হবেই-তুমি শুঁকে দেখ।

    পাগলামি করো না তো। ঘুমুতে যাও। ভূমি বলছি মনগড়া কথা। তুমি কি ইঁদুর কখনো শুঁকে দেখেছ যে, ইঁদুরের গন্ধ কেমন তা জোন? আরাম করে ঘুমাও তো।

    আফসার সাহেব ঘুমুতে গেলেন না। বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ সাবান দিয়ে হাত ধুলেন। তাতেও তাঁর মন শান্ত হল না। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘ সময় গোসল করলেন। যখন বেরিয়ে এলেন, তখন তাঁর চোখ লাল হয়ে আছে। গা ঈষৎ গরম সম্ভবত জ্বর আসছে। তোয়ালে হাতে মীরা দাঁড়িয়ে আছেন। রুমী সুমীও আছে। তারা যথেষ্ট পরিমাণে ভয় পেয়েছে। তবে চুপ হয়ে আছে, কিছু বলছে না। আফসার সাহেব লক্ষ করলেন-খাবার টেবিলের নিচে দুটো বাচ্চানিয়ে মা-বিড়ালটা বসে আছে। তারা কথা বলছে ফিসফিস করে। তবে তাদের ফিসফিসানি বুঝতে আফসার সাহেবের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

    বাচ্চা বিড়াল : মা, উনার কী হয়েছে?

    মা-বিড়াল : বুঝতে পারছি না।

    বাচ্চা : শীতের সময়, এত ভোরে কেউ গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগবে না?

    মা-বিড়াল : তা তো লাগবেই। দেখছিস না, শীতে কেমন কাপছেন! ভদ্রলোকের কিছু-একটা সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটা আমি বুঝতে পারছি না।

    বাচ্চা : বোঝার চেষ্টা কর না কেন মা? তোমার তো কত বুদ্ধি!

    মা-বিড়াল : বুঝে লাভ কিছু নেই। উনাকে সাহায্য করতে পারব না। আমরা হচ্ছি। পশু। পশু কখনও মানুষকে সাহায্য করতে পারে না।

    বাচ্চা : ভদ্রলোক এত কষ্ট পাচ্ছেন, আমরা কিছুই করব না?

    মা-বিড়াল : প্রার্থনা করতে পারি।

    বাচ্চা : প্রার্থনা কী?

    মা-বিড়াল : প্রার্থনা হচ্ছে সৃস্টিকর্তার কাছে কিছু চাওয়া!

    বাচ্চা : সৃষ্টি কর্তা কে মা?

    মা : যিনি আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন।

    বাচ্চা : আমাদের সবাইকে কে সৃষ্টি করেছেন?

    মা :আহ্‌, চুপ কর তো! দিন-রাত এত প্রশ্নের জবাব দিতে ভালো লাগে না।

    আফসার সাহেব তোয়ালে দিয়ে গা জড়িয়ে শোবার ঘরে ঢুকলেন। মীরা বললেন, গরম এককাপ চা এনে দি?

    দাও।

    মীরা চা বানিয়ে এনে দেখলেন, আফসার সাহেব। আবার সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছেন। মীরাকে দেখে ফ্যাকসেভাবে তাকালেন। ক্লান্ত গলায় বললেন, মীরা, আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি।

     

    মিসির আলিকে আজ অনেক ভদ্র দেখাচ্ছে। আগের দিন খোঁচা-খোঁচা দাড়ি ছিল, আজ ক্লিন শেভূড়। ঘরও বেশ গোছানো। বিছানায় খবরের কাগজ ছড়ানো নেই। চেয়ারে বই গাদা করে রাখা হয় নি। কেরোসিন কুকারটিও অদৃশ্য। টেবিলে সুন্দর টেবিল-ল্যাম্প জ্বলছে। মিসির আলি চেয়ারে বসে টেবিল-ল্যাম্পের আলোয় গভীর মনযোগে পড়ছেন সরীসৃপ-বিষয়ক একটি বই। গত কিছুদিন ধরেই তিনি ক্রমাগত জীবজন্তু সম্পর্কিত বই পড়ে যাচ্ছেন। শুরু করেছিলেন বিড়াল দিয়ে, এখন চলে এসেছেন সরীসৃপে। পড়তে অদ্ভুত লাগছে। আগে তাঁর ধারণা ছিল সাপ ডিম দেয়। সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। এখন দেখা যাচ্ছে কিছু-কিছু সাপডিম দেয় না, সরাসরি বাচ্চা দেয়। চন্দ্রবোড়া এ— রকম একটা সাপ।

    দরজায় শব্দ হচ্ছে। ভিক্ষার জন্যে ভিখিরি এসেছে। মিসির আলিকে দরজা খুলতে হল না। ষোল-সতের বছরের এক ছেলে ভেতর থেকে বের হয়ে দরজা খুলে দিল এবং কাট-কটা গলায় বলল-কাম কইরা ভাত খান। বিনা কমে ভাত নাই! এই ছেলেটির নাম মজনু। তাকে ঘরের কাজকর্মের জন্যে মাসে দেড় শ টাকা বেতনে রাখা হয়েছে। এই বাড়িতে মজনুর আজ সপ্তম দিন। সপ্তম দিনে সে দেখিয়ে দিয়েছে যে সে কোজ জানে। শুধু যে জানে তা নয়-খুব ভালো জানে। মিসির আলিকে এখন আর বিসমিল্লাহ্ হোটেলে ভাত খেতে যেতে হয় না। ঘরেই রান্না হয়। সেই রান্নাও অসাধারণ। খাওয়ার ব্যাপারটায় যে আনন্দ আছে তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। আজ দুপুরে মজনু পাবদা মাছের ঝোল রান্না করেছে। টমেটো এবং মটরশুটি দিয়ে। সেই রান্না খেয়ে মিসির আলি মজনুর বেতন দেড় শ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক শ পঁচাত্তর করে দিয়েছেন!

    মজনু।

    জ্বি স্যার!

    চা বানাও তো দেখি–

    মজনু গম্ভীর গলায় বলল, দুধ, লেবু, না আদা?

    যা ইচ্ছা বানাও।

    আপনার ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা লাগছে। আদা চা খান, শরীরের জন্যে ভালো।

    দাও, আদা-চা দাও

    মজনুর আদা-চা খেয়ে মিসির আলির মন ভালো হয়ে গেল। অসাধারণ ব্যাপার! চা যতটুকু গরম হওয়া দরকার ততটুকুই গরম। ঠাণ্ডাও না, বেশি গরমও না। আদার পরিমাণও যেন মাপা! বীজ আছে, আবার চায়ের স্বাদও নষ্ট হয় নি।

    মজনু।

    জ্বি স্যার।

    আগে কি কোনো হোটেলে কাজটাজ করতে?

    জ্বে-না–

    এত চমৎকার রান্নাবানা শিখলে কীভাবে?

    মজনু জবাব না-দিয়ে ভেতরে চলে গেল। সে রাতের রান্না বসিয়েছে। দুপুরের খাবার সে রাতে দেয় না। রাতে আলাদা রান্না হয়। চায়ে চুমুক দিতে-দিতে মিসির আলি ভাবতে লাগলেন—মজনুর বেতন এক শ পঁচাত্তর না করে পুরোপুরি দু, শ করে দেওয়াই ভালো। যে-কোনোভাবেই হোক, এই ছেলেকে আটকে রাখতে হবে। তাঁর নিজের অর্থনৈতিক সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়েছে। বিলেতে থাকাকালীন তিনি প্রফেসর রেইজেনবার্গের সঙ্গে যুগ্ম-সম্পাদনায় অ্যাবনর্ম্যাল বিহেভিয়ের ইন ফেজ ট্রানজিশন বইটি লিখেছিলেন। সেই বই। এ-বৎসর কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যতালিকাভূক্ত হয়েছে। প্রকাশক ভালো টাকা দিচ্ছে। প্রথম দফায় তিনি পাঁচ হাজার ডলারের একটি চেক পেয়েছেন। সেই চেক ভাঙানো হয়েছে। মার্কেল ষ্টোনের অসম্ভব। সুন্দর টেবিল-ল্যাম্প এবং একটি ড়েকসেট ঐ টাকায় কেনা। মিসির আলি এখন রোজই কিছু-না-কিছু কিনছেন। জিনিসপত্র কেনার ভেতরে যে আনন্দ আছে, তাও তিনি জানতেন না।

    আবার দরজার কড়া নড়ছে।

    মিসির আলির মনে পড়ল সাড়ে চার শ টাকায় তিনি একটা কলিং বেল কিনেছেন। বেলটা এখনো লাগানো হয় নি। মজনুকে পাঠিয়ে একজন ইলেকটিক মিস্ত্রি নিয়ে আসতে হবে। রান্না শেষ হলে ওকে পাঠাবেন।

    মিসির আলি নিজেই দরজা খুললেন। মীরা এবং আফসার সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন! আফসার সাহেবের দৃষ্টি উদভ্ৰান্ত। মনে হয়। গত তিন-চার দিন দাড়ি কাটেন নি।

    মুখভর্তি খোঁচা-খোচা দাড়ি। শরীরও মনে হয় ভেঙে পড়েছে।

    আসুন, ভেতরে আসুন!

    দুজন ঘরে ঢুকলেন। মীরা ক্ষীণ স্বরে বললেন, আপনাকে আবার বিরক্ত করতে এলাম।

    মিসির আলি বললেন, আপনাদের আরো আগেই আসা উচিত ছিল—আপনারা দেরি করে ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছে। আফসার সাহেব, বসুন।

    আফসার সাহেব বসলেন! মিসির আলি বললেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে-আপনার সমস্যা মোটেই কমেনি-বরং বেড়েছে। আমি কি ঠিক বলছি?

    আফসার সাহেব কিছু বললেন না। মীরা বললেন, জ্বি, ঠিক বলছেন।

    প্রাথমিকভাবে আপনার যা বলার আছে বলুন। তারপর আমি কিছু প্রশ্ন করব।

    আফসার সাহেব কিছুই বললেন না। পাথরের মতো মুখ করে বসে রইলেন। মীরা বললেন, গত দু রাত ধরে সে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছে। ভয়াবহ স্বপ্ন।

    কী রকম স্বপ্ন?

    সে বিড়াল হয়ে গেছে। ধরে- ধরে ইঁদুর খাচ্ছে–এইসব স্বপ্ন। মিসির আলি হাসতে-হাসতে বললেন, আমার কাছে স্বপ্নটা খুব ভয়াবহ মনে হচ্ছে না। যদি উল্টোটা স্বপ্নে দেখতেন। অর্থাৎ আপনি ইঁদুর এবং বিড়াল আপনাকে ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খাচ্ছে-তাহলে ত ভয়াবহ হত।

    আফসার সাহেব কঠিন গলায় বললেন, আমি যা দেখছি তা যথেষ্টই ভয়াবহ। আমার পরিস্থিতিতে আপনি নন বলেই বুঝতে পারছেন না।

    আমি খুব ভালো বুঝতে পারছি। পরিবেশ হালকা করার জন্যেই হাসতে-হাসতে কথাগুলি বলেছি। সমস্যা যত বড় হবে, তাকে তাত সহজভাবে গ্রহণ করা উচিত।

    আপনি কি তা করেন?

    হ্যাঁ, করি। একবার ভয়ংকর জটিল একটা সমস্যাকে হাসিমুখে গ্ৰহণ করেছিলাম—সেই গল্প অন্য এক সময় বলব।-আজ। আপনার সঙ্গে কথা বলি। আমি প্রশ্ন করছি, প্রশ্নগুলির জবাব দিন।

    তারাও আগে আমি আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি কেন আমি এ-রকম ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছি?

    মস্তিষ্ক নানান কারণে উত্তেজিত হয়ে আছে। একটা বিষয় নিয়ে ক্রমাগত ভাবছেন।–তাই স্বপ্নে দেখছেন। জেলেদের স্ত্রীরা সব সময় স্বপ্নে দেখে তাদের স্বামীরা নৌকাড়ুবিতে মারা গেছে, কখনো স্বপ্নে দেখে না তারা মারা গেছে রোড অ্যাক্সিডেন্টে। আপনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটছে। ভালো কথা-ফ্রানৎস কাফকার মেটামরফোসিস গল্প কি আপনি পড়েছেন? গল্পে একটা মানুষ আস্তে—আস্তে কুৎসিত একটি পোকা হয়ে যায়।

    না, আমি পড়ি নি। গল্প-উপন্যাস আমি খুব কম পড়ি।

    আচ্ছা, এখন প্রশ্ন-উত্তর পর্বে চলে আসছি। আমি প্রশ্ন করার সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর দেবেন। ভাবার জন্যে সময় নেবেন না। তেবে উত্তর দেবেন। এমন প্রশ্নও আমি করব না। বিড়ালের কথা এখনো বুঝতে পারছেন?

    পারছি।

    আপনি কি এদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?

    না।

    যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন?

    হ্যাঁ। আমি একবার কথা বলার চেষ্টা করেছি।

    বিড়াল বুঝতে পারে নি?

    না।

    কিন্তু বিড়াল তো আপনাদের কথা বুঝতে পারে। অন্তত তাদের কথাবার্তা থেকে নিশ্চয়ই তা বোঝা যায়।

    হ্যাঁ, বোঝা যায়।

    তাহলে আপনার কথা সে বুঝল না কেন?

    জানি না।

    আপনি নিজে কি বিশ্বাস করেন যে আপনি বিড়ালের কথা বুঝতে পারেন?

    হ্যাঁ, বিশ্বাস করি।

    মিসির আলি সিগারেট ধরাতে-ধরাতে বললেন, না, আপনি বিশ্বাস করেন না। অন্য প্রশ্নগুলির জবাব আপনি সঙ্গে-সঙ্গে দিয়েছেন। এই প্রশ্নটির জবাব দিতে বেশ দেরি করেছেন। আপনি যদি পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন যে বিড়ালের কথা। আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে আজ যে- সমস্যা আপনার হচ্ছে সেই সমস্য হত না। আপনি একই সঙ্গে ব্যাপারটা বিশ্বাস করছেন এবং করছেন না। আমি কি ঠিক বলছি?

    হ্যাঁ, ঠিক বলছেন। আমি বিড়ালের কথা বুঝি। তার পরেও আমার মনে সন্দেহ আছে।

    কেন আছে?

    বিড়াল এমন সব কথা বলে যা একটি বিড়াল বলবে বলে মনে হয় না।

    উদাহরণ দিন।

    যেমন ধরুন।–মা-বিড়াল তার বাচ্চাদের জেলি খেতে নিষেধ করছে, কারণ জেলি খেলে দাঁত নষ্ট হবে। কিংবা সে বাচ্চাদের শ্ৰীন ভেজিটেবল খাওয়াতে চাচ্ছে-কারণ তাতে ভিটামিন আছে–

    এ ছাড়াও অন্য কোনো কারণ কি ঘটেছে, যার জন্যে আপনার মনে সন্দেহ হচ্ছে-বিড়ালের কথা আসলে বোঝা যায় না?

    হ্যাঁ, এ-রকম ব্যাপারও ঘটেছে। আমি ইদানীং রাস্তায় প্রচুর হাঁটাহাঁটি করি। বেশ কয়েক বার বিড়ালের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ওরা ম্যাও ম্যাও করেছে, কিন্তু ওদের কোনো কথা আমি বুঝতে পারিনি।

    মিসির আলি বললেন, আপনাদের যদি সময় থাকে আমার সঙ্গে একটা বাড়িতে চলুন। ওদের গোটা তিনেক বিড়াল আছে। আমি দেখতে চাই ওদের কথা। আপনি বুঝতে পারেন। কি না।

    মীরা বললেন, সেটা কি ঠিক হবে? তাঁরা কী না কী মনে করবেন—

    তাঁরা কিছুই মনে করবেন না। আমরা কী জন্যে যাচ্ছি তাও তাঁদের বলা হবে না।

    আফসার সাহেব বললেন, আমার বাসায় চলুন। সেখানে তো বিড়াল আছে।

    সেই বিড়ালের কথা যে আপনি বুঝতে পারেন তা তো বলেছেন, আমি নতুন বিড়াল নিয়ে পরীক্ষা করতে চাই। অবশ্যি অস্বস্তি বোধ করলে থাক।

    না, অস্বস্তি বোধ করছি না। চলুন।

    মিসির আলি মজনুর কাছে বাড়ি বুঝিয়ে দিয়ে রওনা হলেন। মজনু ব্যাপারটা ঠিক পছন্দ করল না। বিরক্ত মুখে বলল, ফিরতে কি দেরি হইব?

    হাঁটা, একটু দেরি হবে।

    রান্না হইছে। ভাত খাইয়া যান।

    না-ভাত এখন খাব না। তুমি একটা ইলেকট্ৰিক মিস্ত্রি ডেকে কলিং বেল লাগিয়ে নিও।

     

    মিসির আলি তাঁর পরিচিত ঐ ভদ্রলোকের বাসায় এক ঘন্টা কাটালেন। তাঁদের বিড়াল তিনটা না, দুটা। একটি অতি বৃদ্ধ। নড়াচড়ার শক্তি নেই। অন্যটি টম ক্যাট। বেশ উগ্র স্বতাবের। এরা অনেক বারই হ্যাঁয়াও হ্যাঁয়াও করল। আফসার সাহেব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বিড়াল দুটিকে দেখলেন। ওদের কথা শুনলেন, কিন্তু ওরা কি বলছে কিছুই বুঝলেন না।

    বাড়ি থেকে বের হয়ে মিসির আলি বললেন, আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে বিড়ালগুলির কথা কিছুই বুঝতে পারেন নি। তাই না?

    হ্যাঁ। আমি কিছুই বুঝি নি। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন-আমি আমাদের বাসার বিড়ালটার কথা বুঝি খুব ভালো বুঝি।

    মিসির আলি বুললেন, আপনি নিজে কি ধরতে পারছেন—আপনার কথায় যুক্তি নেই? আপনি একটিমাত্র বিড়ালের কথা বুঝতে পারছেন, অন্য কোনো বিড়ালের কথা বুঝতে পারছেন না। তা কী করে হয়?

    জানি না। কী করে হয়। মিসির আলি সাহেব, আমি খুব কষ্ট আছি। আপনি আমার কষ্ট দূর করুন। এইভাবে কিছুদিন গেলে আমি পাগল হয়ে যাব। আমার ধারণা, ইতোমধ্যে খানিকটা পাগল হয়েছি।

    মিসির আলি বললেন, আমি আপনার ব্যাপারটা নিয়ে ক্রমাগত ভাবছি। আমি এখনো তেমন কিছু বুঝতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে বুঝতে পারব। রহস্য উদ্ধার হবে।

    কি জন্যে মনে হচ্ছে রহস্য উদ্ধার হবে? তেমন কোনো কারণ কি ঘটেছে?

    না, তেমন কোনো কারণ ঘটে নি। তার পরেও মনে হচ্ছে। আমার প্রায়ই এরকম হয়। একধরনের ইনট্যুশন কাজ করে।

    মিসির আলি হেঁটে-হেঁটে বাসায় ফিরলেন। বাসার সদর দরজা খোলা। মজনু কলিং বেলও লাগায় নি। মিসির আলি ঘরে ঢুকে বড় ধরনের চমক খেলেন-তাঁর ঘর খালি। মজনু সবকিছু নিয়ে ভোগে গেছে ডলার ভাঙিয়ে সাত হাজার টাকা রেখেছিলেন ফটো অ্যালবামের ভেতর–সেই অ্যালবামও নেই। এত ভারি যে মিউজিক সেন্টার—তা-ও নেই। টেবিল-ল্যাম্প, কলিং বোল-তা-ও নেই। শীতবস্ত্রের মধ্যে তাঁর একটা ভালো শাল ছিল-সেটিও নিয়ে গিয়েছে।

    তবে রান্না করে গেছে। টেবিলে সুন্দর করে খাবারুদাবার সাজিয়ে রাখা। পানির গ্লাস, একটা পিরিচে। লবণ, কাঁচামরিচ এবং কাটা শসা রান্না হয়েছে কৈ মাছের দোপিয়াজী, একটা ভাজা এবং ডাল।

    মিসির আলি হাত ধুয়ে খেতে বসে গেলেন। প্রতিটি আইটেম অসাধারণ হয়েছে। খেতে-খেতেই মনে হল অতি ভদ্র, নিপুণ রাঁধুনি এই ছেলেটির সন্ধান বের করা খুব কঠিন না। এই ছেলে কোনো বিদেশির বাড়িতে আগে কাজ করত। কথাবার্তায় প্রচুর ইংরেজি শব্দ-তা-ই বলে দেয়। ইংরেজি শব্দগুলি খাবারদাবার-সংক্রান্ত। কাজেই ধরে নেয়া যায়। সে বাবুর্চি ছিল। চুরির দায়ে তার চাকরি চলে যায়—কিংবা পুলিশ হয়তো তাকে খুঁজছে। সে সাময়িক আশ্রয় নিতে এসেছিল তাঁর কাছে। ছেলেটি যেবাড়িতে কাজ করত, সেই বাড়ি গুলশান এলাকায়। কারণ কথাবার্তায় সে গুলশান মার্কেটের কথা প্রায়ই বলত। সে বলছিল একটা প্ৰেশার কুকার হলে অনেক রকম রান্না সে রাঁধতে পারবে। গুলশান মার্কেটে প্ৰেশার কুকার পাওয়া যায়।

    মজনু এত সব তারি জিনিস নিজের কাছে রাখবে না। যেহেতু বুদ্ধিমান সে, চেষ্টা করবে অতি দ্রুত জিনিসগুলি বিক্রি করে দিতে।

    কোথায় বিক্রি করবে? তার পরিচিত জায়গায়। অবশ্যই গুলশান মার্কেটে। কাজেই এখন একটা বেবিট্যাক্সি নিয়ে তিনি যদি গুলশান মার্কেটে চলে যান তাহলে মজনুকে পাওয়া যাবে!

    মিসির আলি খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে বিছানায় এসে বসলেন। বিস্মিত হয়ে দেখলেন তাঁর বালিশের কাছে একটা পিরচে দু খিলি পান, একটা সিগারেট এবং ম্যাচ রাখা। তিনি পান মুখে দিয়ে সিগারেট ধরালেন এবং মজনুকে ক্ষমা করে দিলেন। এবং তার প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই তাঁর কাছে মনে হল তিনি আফসার সাহেবের রহস্যভেদের কাছাকাছি চলে গেছেন। কিছু জিনিস এখনো জট পাকানো আছে। তবে তা হয়তো-বা খুলে ফেলা যাবে। কয়েকটা ছোটখাটো ব্যাপার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আরো কয়েকটা দিন লাগবে।

    বিছানায় শুয়ে-শুয়ে গান শুনতে ইচ্ছা করছে। মিউজিক সেন্টারটা খুব শখ করে কিনেছিলেন। একটা গানও শোনা হল না। মন-খারাপ লাগছে। মন-খারাপ ভাব কাটানোর জন্যেই আবার র বইটা হাতে নিলেন।

    ভয়ংকর বিষধর এবং একই সঙ্গে অপরূপ সুন্দর সাপের নাম ল্যাকেসিস মিউটা। এই ল্যাটিন নামের বঙ্গানুবাদ হল-নিঃশব্দুনিয়তি। বাৰু, কী সুন্দর নাম! মানুষ যেমন এসেছে বাঁদর থেকে, পাখিরা এসেছে সরীসৃপ থেকে। পাখিদের আদি পিতা-মাতা হচ্ছে সরীসৃপ–ভাবতেও যেন কেমন লাগে।

    মিসির আলি বইয়ের পাতা উন্টে যাচ্ছেন। তাঁর মন-খারাপ ভাব কেটে যাচ্ছে। গান শুনতে ইচ্ছা করছে। গানের কথা মনে পড়তেই আবার খানিকটা মন-খারাপ হল। পূর্ব দামের একটা লং প্লেয়িং রেকর্ড কিনে এনেছিলেন। রেকর্ডটা পড়ে আছে। শোনা হয়নি। এই মুহূর্তে তাঁর শুনতে ইচ্ছা করছে-আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে। পূর্ব দাম এই গানটি কেমন গেয়েছেন কে জানে!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅনীশ – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article ভয় – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }