Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিপদ – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প63 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বিপদ – ৪

    আফসার সাহেব গত দু দিন ধরে নিজের ঘর থেকে বের হচ্ছেন না! ঘরের সব কটা জানালা বন্ধ, পর্দা ফেলা দিনের বেলাতেও ঘর অন্ধকার হয়ে আছে। তিনি খাবার খেতে খাবার টেবিলেও যাচ্ছেন না। খাবার নিয়ে মীরা তাঁর ঘরে যাচ্ছেন। আফসার সাহেব ঠিকমতো খাচ্ছেনও না। অল্প কিছু মুখে দিয়েই বলছেন, খিদে নেই। মীরা বিরাট বিপদে পড়েছেন। কি করবেন বুঝতে পারছেন না বাচ্চাসহ বিড়ালটাকে কস্তায় ভরে আবার ফেলে দিয়ে আসা হয়েছে। এবার কাছে কোথাও নয়, গাড়ি করে একেবারে জয়দেবপুরে।

    মীরা অবশ্যি আফসার সাহেবকে বলেছেন-বিড়ালগুলিকে বাসার বাইরে রাখা হয়েছে। মীরা ভেবেছিলেন এটা শুনে আফসার সাহেব রেগে যেতে পারেন। খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার-রাগেন নি। বরং এই প্রসঙ্গে কোনো কথাও বলেন নি। মনে হচ্ছে বস্তায় ভরে ফেলে দিয়ে আসার ব্যাপারটা তিনিও আন্দাজ করছেন।

    আত্মীয়স্বজনরা ক্রমাগত আসছে। কেউ-কেউ দিনের মধ্যে দু বার তিন বার আসছে। মীরার বেশির ভাগ সময় এবং শক্তি ব্যয় হচ্ছে যেন তারা আফসার সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে না-পারেন। আত্মীয়স্বজনরা খুব বিরক্ত হচ্ছেন। কেউ-কেউ রােগও করছেন। আফসার সাহেবের এক মামা কঠিন গলায় মীরাকে বললেন, তুমি ওকে লুকিয়ে রাখলে তো লাভ হবে না। ওর চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন।

    মীরা বললেন, চিকিৎসা হচ্ছে। আপনি তো চিকিৎসক না। আপনি যাবেন—ঐ সব কথা মনে করিয়ে দেবেন। আমি চাই না সে বিড়াল নিয়ে ভাবুক।

    আমি বিড়াল নিয়েই যে কথা বলব, তা তোমাকে কে বলল?

    আপনি কী নিয়ে কথা বলবেন?

    কথা বলার বিষয়ের কি অভাব আছে? আমি পলিটিক্স নিয়ে কথা বলব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলব। এতে ওর উপকার হবে। পুরো ব্যাপারটা ভুলে থাকতে পারবে। ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা তো কোনো সমাধান না।

    মীরা তাঁকে ঘরে ঢুকতে দিয়েছেন। তিনি চেয়ারে বসতে-বসতে প্ৰথম যে কথাটা বললেন তা হচ্ছে-আচ্ছা বাবা, বিড়ালের সঙ্গে কী কী কথা তোমার হয়েছে গুছিয়ে বল। কোনো কিছু বাদ দেবে না। দরকার আছে।

    শুধু যে আত্মীয়রা আসছে তা নয়-আত্মীয়দের আত্মীয়, তাদের আত্মীয়া মুখচেনা মানুষ,পড়ার মানুষ! পড়ার মানুষদের পরিচিত মানুষ। টেলিফোন সারাক্ষণইবাজছে। মীরা টেলিফোন ধরেন—এমন সব কথাবার্তা তিনি শোনেন যে তাঁর চোখে সত্যি পানি এসে যায়।

    পত্রিকার অফিস থেকেও টেলিফোন এল সাপ্তাহিক চক্রবাকের প্রতিবেদক টেলিফোন করেছেন। মীরা টেলিফোন ধরলেন।

    আপনি কি আফসার সাহেবের কী?

    জ্বি।

    আমি সাপ্তাহিক চক্ৰবাক থেকে বলছি।

    কি ব্যাপার, বলুন।

    আমরা খবর পেয়েছি আপনাদের বাড়িতে একজন বিড়ালে রূপান্তরিত হয়েছেন। তাঁর সারাগায়ে সাদা-সাদা লোম বেরিয়েছে লেজ গজিয়ে গেছে। কথাটা কি সত্যি।

    আপনার কি ধারণা। এ-রকম খবর সত্যি হতে পারে?

    জগতে অনেক অদ্ভুত-অদ্ভুত ঘটনা তো ঘটে।

    ঘটলেও আমাদের এখানে ঘটে নি।

    যদি না-ঘটে তাহলে এ-রকম একটা গুজব কী করে রটল?

    আমি জানি ৎ কী করে রটল।

    আচ্ছা ঠিক আছে -আমি ক্যামেরাম্যান নিয়ে আসছি।–আপনার এবং যার সম্পর্কে এই গুজব রটেছে তার একটা ইন্টারতভ্যু নিতে চাই।

    কেন?

    গুজবের উপর একটা নিউজ করব।

    মীরা টেলিফোন নামিয়ে রেখে খানিকক্ষণ কাঁদলেন। সবচেয়ে ভালো হত এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও আশ্ৰয় নেওয়া—তা সম্ভব হচ্ছে না! আফসার সাহেব বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি নন। তাঁকে এখান থেকে সরাতে হলে জোর করে সরাতে হবে।

    মীরার ডাক্তার ভাই সাৰ্ব্বক্ষণিকভাবেই এ-বাড়িতে আছে। সে আফসার সাহেবের সঙ্গে বেশ ক বার কথা বলার চেষ্টা করেছে। কোনো লাভ হয় নি।

    আফসার সাহেব কড়া চোখে তাকিয়েছেন-কোনো জবাব দেন নি। মীরার কথাবাতাঁর জবাব দেওয়াও তিনি ইদানীং বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু রুমী সুমী কিছু জিজ্ঞেস করলে জবাব দেন।

    রুমী বাবার ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে বলল, বাবা, আসব?

    আফসার সাহেব বললেন, আয়।

    রুমী ভয়ে-ভয়ে ভেতরে ঢুকল।

    কেমন আছ বাবা?

    ভালো আছি।

    তোমাকে এমন বিশ্ৰী দেখাচ্ছে কেন?

    দাড়ি-গোঁফ কামাচ্ছি না, কাজেই বিশ্ৰী দেখাচ্ছে।

    কামাচ্ছ না কেন বাবা?

    ইচ্ছা করছে না।

    কোন ইচ্ছা করছে না?

    জানি না। সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে!

    বাবা, আমি কি তোমার পাশে বসব?

    বস।

    রুমী ভয়ে-ভয়ে বসল। বাবার হাতের ওপর হাত রাখল।

    বাবা।

    কী মা?

    সবাই বলছে তুমি নাকি বিড়াল হয়ে গেছ। তুমি কি বিড়াল হয়েছ?

    না মা।

    তাহলে সবাই এ-রকম মিথ্যা কথা বলছে কেন?

    তা তো জানি না।

    তোমার চোখ লাল কোন?

    ঘুম হচ্ছে না। এর জন্যে চোখ লাল।

    ঘুম হচ্ছে না কেন বাবা?

    ঘুমুলেই দুঃস্বপ্ন দেখি–এই জন্যে ঘুমুতে ইচ্ছা করে না। ঘুম আসেও না।

    তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?

    এখনো হই নি, তবে খুব শিগুগিরই হয়ে যাব বলে মনে হচ্ছে।

    না, হবে না। মামা তোমার জন্যে খুব বড়-বড় ডাক্তার এনেছেন। তাঁরা তোমার চিকিৎসা করবেন।

    চিকিৎসা করে আমার কিছুই করতে পারবে না। কারণ আমার কোনো অসুখ হয় নি।

    তুমি কি আপনা-আপনি সেরে উঠবে?

    তা-ও তো মা জানি না।

    মহসিন বেশ ক জন ডাক্তার এনেছে। ডাক্তারা নানানভাবে আফসার সাহেবকে পরীক্ষা করেছেন। তেমন কিছুই পাননি। প্ৰেশার স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি। সেটা তেমন কিছু না। আচার-আচরণেও তেমন কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। ঘুম খুব কম হলে রিফ্লেক্স অ্যাকশান শ্লথ হয়ে যায়-তা হয়েছে। এর বেশি কিছু না। ডাক্তারদের সবারই ধারণা, ভালোমতো রেষ্ট হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

    মহসিন মীরাকে বলল, যে করে হোক এই বাড়ি থেকে দুলাভাইকে বের করতে হবে। এখানে থাকলে তীর রেষ্ট হবে না। মাছির মতো লোকজন তন- ভিন্ন করছে!

    মীরা বললেন, আমি বললে কিছু হবে না। আমি অনেক বলেছি।

    মুখে বললে যদি না-হয়, তাঁকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাড়ির আবহাওয়া যা, তাতে যে-কোনো সুস্থ লোকও পাগল হয়ে যাবে।

    মহসিন খুব ভুল বলে নি। বাড়ির সামনে একদল দুষ্ট ছেলে জটলা পাকাচ্ছে। তারা মাঝে-মাঝে বিড়ালের মতো ম্যাঁয়াও- ম্যাঁয়াও করে চিৎকার করছে। মানুষ মাঝেমাঝে খুব হৃদয়হীনের মতো আচরণ করে।

    মহসিন বলল, আপা, তুমি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব গুছিয়ে রােখ। আমি রাত দশটার পর মাইক্রোবাস নিয়ে আসব। এর মধ্যে একটা ফ্ল্যাট-বাড়ি ঠিক করে রাখব। তোমাদের সেখানে নিয়ে তুলব। আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানবে না তোমরা কোথায় আছ। আমি আমার স্ত্রীকে পর্যন্ত বলব না।

    কিন্তু তোর দুলাভাই? সে তো যেতে রাজি হবে না।

    আমি রাজি করাচ্ছি।

    মহসিন শোবারের ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে বলল, আসব দুলাভাই?

    আফসার সাহেব বললেন, না।

    মহসিন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকাল। আফসার সাহেব বললেন, আমি তো নিষেধ করেছিলাম ভেতরে আসতে।

    ইমার্জেন্সির সময় বাধা-নিষেধ কাজে লাগে না। এখন হচ্ছে সুপার ইমার্জেন্সি। দুলাভাই, আমি জানি, আপনি আমাকে পছন্দ করেন না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে, আমি আপনাকে পছন্দ করি আপনি অতি সৎ, শাস্ত্ৰনীতি অক্ষরে-অক্ষরে মেনে-চলা একজন মানুষ। আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না যে এখন আপনার চরম দুঃসময় যাচ্ছে। এ-রকম কিছুদিন চললে আপনি পাগল হয়ে যাবেন। আপনাকে বাসা ছেড়ে গোপন কোনো জায়গায় যেতে হবে।

    আমি তো কোনো অপরাধ করি নি যে পালিয়ে থাকব।

    আপনার যুক্তি এক শ ভাগ সত্যি—আপনি কোনো অপরাধ করেননি। আমাদের এই সমাজটা এমন যে বেশির ভাগ শাস্তিই আমাদের বিনা অপরাধে পেতে হয়। এখানে শুধু যে আপনি একা শাস্তি পাচ্ছেন তাই না-আপনার মেয়ে দুটাও শাস্তি পাচ্ছে ওরা স্কুলে যেতে পারছে না। বাইরে গিয়ে খেলতে পারছে না। মুখ কালো করে ঘুরছে এবং কাঁদছে। ওদেরকে এই ঝামেলা থেকে মুক্ত করার জন্যে হলেও বাড়ি ছাড়তে আপনার রাজি হওয়া উচিত।

    ভেবে দেখি।

    হ্যাঁ, ভেবে দেখুন। খুব ভালো করে ভাবুন। বাড়ি ছাড়ার পক্ষে আরেকটি বড় যুক্তি আপনাকে দিচ্ছি। আপনার চাকরি নেই। এত বড় বাড়িতে আপনি এখন আর থাকতে পারেন না। ছোট বাড়ি নিতে হবে। আমি তেমনি ছোটখাটো একটা বাড়ি আপনার জন্যে দেখব।

    আফসার সাহেব চুপ করে রইলেন।

    মহসিন বলল, আমি এখন চলে যাচ্ছি। রাত দশটায় এসে সবাইকে নিয়ে যাব। দ্বিতীয় কোনো কথা শুনব না। যদি আপত্তি করেন জোর করে নিয়ে যাব।

    রাত দশটায় মহসিন মাইক্রোবাস নিয়ে এল। আফসার সাহেব নিঃশব্দে গাড়িতে গিয়েবসলেন। কোনো আপত্তি করলেন না। তাঁরা গিয়ে উঠলেন গেণ্ডারিয়ার এক ফ্ল্যাটবাড়িতে। মহসিন করিৎকর্মী লোক। কিছু আসবাবপত্র এনে বাড়ি আগেই সাজিয়ে রেখেছে। এগার-বার বছরের একটা কাজের মেয়ে ঘর ঝাঁট দিচ্ছে।

    নতুন বাসা খুব ছোট না-তিনটা রুম। বারান্দাটা ছোট হলেও শোবার ঘরটা বেশ বড়। অনেক উঁচু ছাদ। খোলামেলা ভাব আছে।

    মহসিন বলল, দুলাভাই, আপনার বাসা পছন্দ হয়েছে?

    আফসার সাহেব বললেন, হ্যাঁ, হয়েছে।

    এই বাড়ির সবচেয়ে বড় সুবিধা কী, জানেন?

    না।

    এই বাড়ির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে বাতাস। দখিন-দুয়ারি বাড়ি। শীত-কাল বলে টের পাচ্ছেন না। গরমকাল আসুক, দেখবেন ফু-ফু করে বাড়িতে হাওয়া খেলবে। আমার এক বন্ধু আগে এই বাড়িতে থাকত, তার কাছে শুনেছি।

    আফসার সাহেব তেমন কোনো উৎসাহ দেখালেন না। আবার অনুৎসাহও দেখালেন না। মহসিন টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে এসেছিল। রাতে তাই খাওয়া হল। আফসার সাহেব অনেক দিন পর ভালোমতো খাওয়াদাওয়া করলেন।

    মহসিন মীরাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলল, আপা, এই বাড়ির আসল সুবিধার কথা এখন তোমাকে গোপনে বলে যাচ্ছি। এই বাড়ির আসল এবং একমাত্র সুবিধা হচ্ছে—তিনতলা ফ্ল্যাটের কোনো ফ্ল্যাটে বিড়াল নেই। তোমার ঐ বিড়ালও পথ খুঁজে খুঁজে এ-বাড়িতে আসবে না। বুঝতে পারছ?

    পারছি।

    এখন তোমাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে, দুলাভাইকে ভালোমতো ঘুমানোর সুযোগ করে দেওয়া। ঠিকমতো ঘুমূলেই নাৰ্ভ শান্ত হয়ে যাবে। নাৰ্ভ শান্ত হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে।

    মীরা বললেন, আজ রাতটা তুই থেকে যা মহসিন, নতুন জায়গা, ভয়ভয় লাগছে।

    আমি থাকব। দুলাভাইকে ঘুম পাড়ানোর দায়িত্বও আমার। আজ রাত নিয়ে তুমি চিন্তা করবে না।

    মহসিন শোবার ঘরে গিয়ে বসল। আফসার সাহেব চুপচাপ সিগারেট টানছেন। তাঁকে আজ তেমন অস্থির বোধ হচ্ছে না। রুমী সুমী তাঁর পাশেই কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমুচ্ছে।

    মহসিন বলল, দুটা ফ্রিজিয়াম খেয়ে আজ সারা রােত আপনি মড়ার মতো ঘুমুবেন, বুঝতে পারছেন?

    আফসার সাহেব বললেন, অষুধ খেয়ে কোনো লাভ নেই, ঘুম আসবে না। ঘুমুলেই দুঃস্বপ্ন দেখব-এই টেনশানে আমার ঘুম আসে না।

    আজ টেনশন করতে হবে না। আমি সারা রাত আপনার বিছানার পাশে জেগে। বসে থাকব। যখনই আপনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন, আমি আপনাকে ডেকে তুলব।

    বুঝবে কী করে আমি স্বপ্ন দেখছি কি না?

    স্বপ্ন দেখার সময় মানুষের চোখের পাতা কাঁপতে থাকে। একে বলে rapidleye movement, সংক্ষেপে REM। যখনই দেখব আপনার চোখের পাতা কাঁপছে, আমি আপনাকে ডেকে তুলব। আমার ওপর আপনি বিশ্বাস রাখুন, আমি আপনার খাটের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসব।

    মহসিন আসলেই তাই করল।

    আফসার সাহেব ঘুমের অষুধ খেয়ে ঘুমুতে গেলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, মাথা বুলিশে ছোঁয়ানোমাত্র ঘুমিয়ে পড়লেন, এবং চমৎকার একটা স্বপ্ন দেখলেন।–স্বপ্নেও তিনি ঘুমুচ্ছিলেন। ঘুম ভাঙলে তিনি চোখ মেললেন। লক্ষ করলেন, তিনি একটা বেতের ভাঙা সুটকেসের ভেতর শুয়ে আছেন। তাঁর শীত লাগছে। বেশ শীত লাগছে। তিনি মানুষ নন-বিড়াল। সূৰ্যটকেসের ভেতর থেকে উঠে এলেন। খিদে পেয়েছে। খাবারের সন্ধানে যাওয়া উচিত। নানান রকম খাবারের স্ত্ৰাণ পাচ্ছেন। একটা পাউরুটির টুকরার ঘ্রাণ আসছে। পাউরুটিতে মাখন লাগানো মাখনের ঘ্রাণও পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কিছু পিঁপড়া পাউরুটিতে আছে। তিনি পিঁপড়ার ঘ্রাণও পাচ্ছেন। কোথায় যেন চা ফেলে দিয়েছে। সেই চা শুকিয়ে মেঝেতে সরের মতো পড়েছে। তার গন্ধও নাকে আসছেঃ মেঝের ঐ অংশ চেটে দেখা যেতে পারে। রান্নাঘরের ডাষ্টবিনে কিছু ভাত আছে। তবে ভাত নষ্ট হয়ে গেছে। টক গন্ধ আসছে। আশ্চর্যের ব্যাপার, এক জায়গায় বসে তিনি সারা বাড়িতে কোথায় কি খাবার আছে তার গন্ধ পাচ্ছেন। তিনি হাই তুললেন। কোন কোন খাবার খাবেন তা মনে-মনে গুছিয়ে নিলেন। এইবার ইঁদুরের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। একটা মা-ইন্দুর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বের হয়েছে। শুধু গন্ধ দিয়ে তিনি প্রতিটি ইঁদুরকে আলাদা-আলাদা করে চিনতে পারছেন। মাটা ভয়ংকর বদ। একে মারার চেষ্টা করবেন। না, থাক। ছোট-ছোট বাচ্চা আছে। কী দরকার? খিদেও চলে গেছে। ঘুম পাচ্ছে। তিনি আবার বেতের সুটকেসে ঢুকে পড়লেন। স্বপ্নের মধ্যেই আবার ঘুম এসে গেল। ঘুম ভাঙািল রাত তিনটায়। আফসার সাহেব বিছানায় উঠে বসলেন। বিস্মিত হয়ে দেখলেন, মহসিন চেয়ারের হাতলে মাথা রেখে অকাতরে ঘুমুচ্ছে। তার নাকও ডাকছে।

    আফসার সাহেব সাবধানে বিছানা থেকে নামলেন। বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। অবাক হয়ে লক্ষ করলেন, বারান্দার শেষ প্রান্তে বিড়াল একটা মাত্র বাচ্চা নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। আফসার সাহেব ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললেন। আর ঠিক তখন বিড়ালের কথা শুনতে পেলেন।

    বাচ্চা : মা, দেখ-দেখ, উনি বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন।

    মা : দেখছি।

    বাচ্চা : আমরা যে বাসা খুঁজে-খুঁজে এখানে চলে এসেছি তা দেখে উনি কি খুশি হয়েছেন?

    মা : না।

    বাচ্চা : আমার ভাইটা যে মারা গেছে তা কি উনি বুঝতে পারছেন মা?

    মা : মানুষ অসম্ভব বুদ্ধিমান, আমরা দু জন মাত্র এসেছি। তাই দেখে তো বোঝা উচিত।

    বাচ্চা : আমাদের মনে যে খুব কষ্ট তা কি উনি বুঝবেন মা?

    মা :না। পশুদের কষ্ট মানুষ কখনো বোঝে না।

    বাচ্চা : এখন তাঁরা কি আমাদের আবার কস্তায় ভরে ফেলে দেবেন?

    মা : দিতে পারে। আবার না-ও দিতে পারে। যখন দেখবে আমরা এত কষ্ট করে। পুরনো বাসায় গিয়েছি, সেখানে তাঁদের না-পেয়ে গন্ধ শুঁকে-শুঁকে এই জায়গায় এসেছি।–তখন অবাক হয়ে আমাদের রাখতেও পারে।

    বাচ্চা : খিদে পেয়েছে মা।

    মা : ঘুমিয়ে পড়া ঘুমিয়ে পড়লে খিদে লাগবে না।

    বাচ্চা : মা।

    মা : কি?

    বাচ্চা : ভাইটির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে মা। কাঁদতে ইচ্ছা করছে।

    মা : কাঁদতে ইচ্ছা করলে কাঁদ।

    আফসার সাহেব শুনলেন বিড়ালের বাচ্চাটা কাঁদছে। এই কান্না অবিকল মানবশিশুর কান্নার মতো। অফিসার সাহেবের চোখে পানি এসে গেল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅনীশ – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article ভয় – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }