Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিপ্রদাস – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    উপন্যাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক পাতা গল্প273 Mins Read0

    বিপ্রদাস

    এগার

    রাত্রের গাড়িতে আসিতেছে মেজদি এবং সঙ্গে আসিতেছে দ্বিজদাস। বন্দনার আনন্দ ধরে না। সেদিন দিদির শ্বশুরবাড়িতে নিজের আচরণের জন্য সে মনে মনে বড় লজ্জিত ছিল, অথচ প্রতিকারের উপায় পাইতেছিল না। আজ অত্যন্ত অনিচ্ছাতেও তাহাকে পিতার সঙ্গে বোম্বাইয়ে ফিরিয়া যাইতে হইত, অকস্মাৎ অভাবিত পথে এ সমস্যার মীমাংসা হইয়া গেল। টেলিগ্রামের কাগজখানা বন্দনা অনেকবার নাড়াচাড়া করিল, অন্নদাকে পড়িয়া শুনাইল এবং উৎসুকভাবে অপেক্ষা করিয়া রহিল পিতার জন্য—এই ছোট্ট কাগজখানি তাঁহার হাতে তুলিয়া দিতে। বিপ্রদাস বাড়িতে নাই, খোঁজ লইয়া জানিল কিছুক্ষণ পূর্বে তিনি বাহিরে গেছেন। এ ব্যবস্থা তিনিই করিয়াছেন সুতরাং তাঁহাকে জানাইবার কিছুই নাই, তবু একবার বলিতেই হইবে। অথচ এই বলার ভাষাটা সে মনে মনে আলোচনা করিতে গিয়া দেখিল কোন কথাই তাহার মনঃপূত হয় না। আনন্দ-প্রকাশের সহজ রাস্তাটা যেন কখন বন্ধ হইয়া গেছে। বহুনিন্দিত জমিদার-জাতীয় এই কড়া ও গোঁড়া লোকটিকে তাহার শুরু হইতেই খারাপ লাগিয়াছিল, এখনো তিনি যথেষ্টই দুর্বোধ্য, তথাপি ধীরে ধীরে তাহার মনের মধ্যে একটা পরিবর্তন ঘটিতেছিল। সে দেখিতেছিল এই মানুষটির আচরণ পরিমিত, কথা স্বল্প, ব্যবহার ভদ্র ও মিষ্ট, তবু কেমন একটা ব্যবধান তাঁহার প্রত্যেকটি পদক্ষেপে প্রতি মুহূর্তেই অনুভব করা যায়। সকলের মাঝখানে থাকিয়াও সে সকলের হইতে দূরে বাস করে।

    আশ্রিত পরিজন, দাসী-চাকর, কর্মচারিবর্গ সকলে ইহাকে শ্রদ্ধা করে, ভক্তি করে, কিন্তু সর্বাপেক্ষা বেশী করে ভয়। তাহাদের ভাবটা যেন এইরূপ—বড়বাবু অন্নদাতা, বড়বাবু রক্ষাকর্তা, বড়বাবু দুর্দিনের অবলম্বন, কিন্তু বড়বাবু কাহারও আত্মীয় নয়। পিতৃবিয়োগে তাঁহাকে দায় জানান যায়, কিন্তু পুত্রের বিবাহ-উৎসবে আহারের নিমন্ত্রণ করা চলে না। এই ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধটুকু তাহারা ভাবিতে পারে না।

    কাল বন্দনা রান্নাঘরের দাসীটিকে সরল ও কিঞ্চিৎ নির্বোধ পাইয়া কথায় কথায় ইহার কারণ অনুসন্ধান করিতেছিল, কিন্তু অনেক জেরা করিয়াও কেবল এইটুকুই বাহির করিতে পারিল যে, সে ইহার হেতু জানে না, শুধু সকলেই ভয় করে বলিয়া সে-ও করে। এবং অপরকে প্রশ্ন করিলেও বোধ করি এই উত্তরই মিলিত। মুখুয্যেপরিবারে এ যেন এক সংক্রামক ব্যাধি। সেদিন ট্রেনের মধ্যে দৈবাৎ সেই ক্ষুদ্র ঘটনাটুকু অবলম্বন করিয়া বিপ্রদাসের বলিষ্ঠ প্রকৃতি বন্দনার কাছে ক্ষণিকের জন্য দেখা দিয়া আবার সম্পূর্ণ আত্মগোপন করিয়াছে। গাড়ির মধ্যে সেদিন কাছে বসিয়া হাস্য-পরিহাসের কত কথাই হইয়া গেল, কিন্তু আজ মনেই হয় না সেই মানুষটিই এ-বাড়ির বড়বাবু।

    হঠাৎ নীচে হইতে একটা গোলমাল উঠিল, কে একজন ছুটিয়া আসিয়া খবর দিল তাহার পিতা রায়সাহেব স্টেশন হইতে ফিরিয়াছেন খোঁড়া হইয়া। বন্দনা জানালা দিয়া উঁকি মারিয়া দেখিল পাঞ্জাবের ব্যারিস্টার ও তদীয় পত্নী দুইজনে দুই বগল ধরিয়া সাহেবকে গাড়ি হইতে নীচে নামাইতেছেন। তাঁহার এক পায়ের জুতা-মোজা খোলা ও তাহাতে খান দুই-তিন ভিজা রুমাল জড়ানো। প্লাটফর্মে ভিড়ের হুড়ামুড়িতে কে নাকি তাঁহার পায়ের উপর ভারী কাঠের বাক্স ফেলিয়া দিয়াছে। লোকজনে ধরাধরি করিয়া তাঁহাকে উপরে তুলিয়া বিছানায় শোয়াইয়া দিল,—দরোয়ান ছুটিল ডাক্তার ডাকিতে,—ডাক্তার আসিয়া ব্যান্ডেজ বাঁধিয়া ঔষধ দিল,—বিশেষ কিছু নয়, কিন্তু কিছুদিনের জন্য তাঁহার চলা-হাঁটা বন্ধ হইল।
    পরদিন বিকালে সতী আসিয়া পৌঁছিল, বন্দনা কলরবে অভ্যর্থনা করিতে গিয়া থমকিয়া দাঁড়াইয়া দেখিল মোটর হইতে অবতরণ করিতেছে শুধু মেজদি নয়, সঙ্গে আছেন শাশুড়ী—দয়াময়ী। উচ্ছ্বসিত আনন্দকলরোল নিবিয়া গেল, বন্দনা আড়ষ্টভাবে কোনমতে একটা প্রণাম সারিয়া লইয়া একধারে সরিয়া দাঁড়াইতেছিল; কিন্তু দয়াময়ী কাছে আসিয়া আজ তাহার চিবুক স্পর্শ করিয়া চুম্বন করিলেন, হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ভাল আছ ত মা?

    বন্দনা মাথা নাড়িয়া সায় দিল,—ভাল আছি। মা, হঠাৎ, আপনি এসে পড়লেন যে?

    দয়াময়ী বলিলেন, না এসে কি করি বল ত? আমার একটি পাগলী মেয়ে রাগ করে না খেয়ে চলে এসেচে, তাকে শান্ত করে বাড়ি ফিরিয়ে না নিয়ে গেলে নিজে শান্তি পাই কৈ মা?

    বন্দনা কুণ্ঠিত হাস্যে কহিল, কি করে জানলেন আমি রাগ করে এসেচি?

    দয়াময়ী বলিলেন, আগে ছেলেমেয়ে হোক, আমার মত তাদের মানুষ করে বড় করে তোল, তখন আপনিই বুঝবে মেয়ে রাগ করলে কি করে মায়ে জানতে পারে।

    কথাগুলি তিনি এমন মিষ্টি করিয়া বলিলেন যে বন্দনা আর কোন জবাব না দিয়া হেঁট হইয়া এবার তাঁহার পা ছুঁইয়া প্রণাম করিল। উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, বাবা বড় অসুস্থ মা।

    অসুস্থ? কি হয়েচে তাঁর?

    পায়ে আঘাত লেগে কাল থেকে শয্যাগত, উঠতে পারেন না। এই বলিয়া সে দুর্ঘটনার হেতু বিবৃত করিল।

    দয়াময়ী ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন,—চিকিৎসার কোন ত্রুটি হয়নি ত? চল ত কোন্‌ ঘরে তোমার বাবা আছেন আমাকে নিয়ে যাবে। আগে তাঁকে দেখে আসি গে, তারপরে অন্য কাজ। এই বলিয়া তিনি সতীকে সঙ্গে করিয়া বন্দনার পিছনে পিছনে উপরে উঠিয়া রায়সাহেবের ঘরে প্রবেশ করিলেন। আজ তাঁহার পায়ের বেদনা বিশেষ ছিল না, ইঁহাদের দেখিয়া বিছানায় উঠিয়া বসিয়া নমস্কার করিলেন। দয়াময়ী হাত তুলিয়া প্রতিনমস্কার করিয়া সহাস্যে কহিলেন, বেইমশাই, পা ভাঙলো কি করে, কোথায় ঢুকেছিলেন?

    সতী ও বন্দনা উভয়েই অন্যদিকে মুখ ফিরাইল, রায়সাহেব নিরীহ মানুষ, প্রতিবাদের সুরে বুঝাইতে লাগিলেন যে, কোথাও ঢুকিবার জন্য নয়, স্টেশন প্লাটফর্মে বিনাদোষে এই দুর্গতি ঘটিয়াছে।

    দয়াময়ী হাসিয়া বলিলেন, যা হবার হয়েচে, এখন থাকুন দিন-কতক মেয়েদের জিম্মায় ঘরে বন্ধ। পাছে একটা মেয়েতে শাসন করে না উঠতে পারে তাই আর একটিকে টেনে আনলুম বেয়াই। দুজনে পালা করে দিন-কতক সেবা করুক।

    রায়সাহেব তাহাই বিশ্বাস করিলেন এবং এই অনুগ্রহ ও সহানুভূতির জন্য বহু ধন্যবাদ দিলেন।

    আবার দেখা হবে,—যাই এখন হাত-পা ধুই গে, এই বলিয়া বিদায় লইয়া দয়াময়ী নিজের ঘরে চলিয়া গেলেন।
    দ্বিতীয় মোটরে আসিয়া পৌঁছিল, দ্বিজদাস ও তাহার ভ্রাতুষ্পুত্র—বাসুদেব। মেজদির ছেলেকে বন্দনা সেদিন দেখিতে পায় নাই। সে ছিল পাঠশালায় এবং তাহার ছুটির পূর্বেই বন্দনা বাড়ি হইতে চলিয়া আসিয়াছিল। পিতামহীকে ছাড়িয়া বাসু থাকে না, তাই সঙ্গে আসিয়াছে এবং তাঁহারি সঙ্গে বাড়ি ফিরিয়া যাইবে।

    কাকা পরিচয় করাইয়া দিলে বাসুদেব প্রণাম করিল। বন্দনার পায়ে জুতা দেখিয়া সে মনে মনে বিস্মিত হইল, কিন্তু কিছু বলিল না। আট-নয় বছরের ছেলে কিন্তু জানে সব।

    বন্দনা সস্নেহে বুকের কাছে টানিয়া লইয়া জিজ্ঞাসা করিল, আমাকে চিনতে পারলে না বাসু?

    পেরেচি মাসীমা।

    কিন্তু তুমি ত ছিলে তখন পাঁচ-ছ’ বছরের ছেলে—মনে থাকবার ত কথা নয় বাবা?

    তবু মনে আছে মাসীমা, তোমাকে দেখেই চিনতে পেরেছিলুম। আমাদের বাড়ি থেকে তুমি রাগ করে চলে গেলে, আমি ফিরে গিয়ে তোমাকে দেখতে পেলুম না।

    রাগ করে চলে যাবার কথা তুমি কার কাছে শুনলে?

    কাকাবাবু বলছিলেন ঠাকুরমাকে।

    বন্দনা দ্বিজদাসের প্রতি চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, রাগ করার কথা আপনিই বা জানলেন কি করে?

    দ্বিজদাস কহিল, শুধু আমিই নয়, বাড়ির সবাই জানে। তা ছাড়া আপনি লুকোবার ত বিশেষ চেষ্টা করেন নি।

    বন্দনা বলিল, সবাই আমার রাগ করাটাই জানে, তার কারণটা কি জানে?

    দ্বিজদাস বলিল, সবাই না জানুক আমি জানি। রায়সাহেবকে একলা টেবিলে খেতে দেওয়া হয়েছিল বলে।

    বন্দনা বলিল, কারণটা যদি তাই-ই হয়, আমার রাগ করাটা আপনি উচিত বিবেচনা করেন?

    দ্বিজদাস কহিল, করি, যদিচ তাঁদেরও আর কোন উপায় ছিল না।

    আপনি আমার বাবার সঙ্গে বসে খেতে পারেন?

    পারি। কিন্তু দাদা বারণ করলে পারিনে।

    পারেন না? কিন্তু আপনাকে বারণ করার অধিকার দাদার আছে মনে করেন?

    দ্বিজদাস বলিল, সে তাঁর ব্যাপার, আমার নয়। আমার পক্ষে দাদার অবাধ্য হওয়া আমি অনুচিত মনে করি।

    বন্দনা কহিল, যা কর্তব্য বলে বোঝেন তা করার কি আপনার সাহস নেই?

    দ্বিজদাস ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, দেখুন এ ঠিক সাহস অ-সাহসের বিষয় নয়। স্বভাবতঃ আমি ভীতু লোক নই, কিন্তু দাদার প্রকাশ্য নিষেধ অবজ্ঞা করার কথা আমি ভাবতে পারিনে। ছেলেবেলায় বাবার অনেক কথা আমি শুনিনি, দণ্ডও পাইনি তা নয়, কিন্তু আমার দাদা অন্য প্রকৃতির মানুষ। তাঁকে কেউ কখন উপেক্ষা করে না।

    উপেক্ষা করলে কি হয়?

    কি হয় আমি জানিনে, কিন্তু আমাদের পরিবারে এ প্রশ্ন আজও ওঠেনি।

    বন্দনা কহিল, মেজদির চিঠিতে জানি দেশের জন্যে আপনি অনেক কিছু করেন যা দাদার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। সে-সব করেন কি করে?

    দ্বিজদাস কহিল, তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও তাঁর নিষেধের বিরুদ্ধে নয়। তা হলে পারতুম না।
    বন্দনা মিনিট দুই-তিন নীরবে থাকিয়া কহিল, দিদির চিঠি থেকে আপনাকে যা ভেবেছিলুম তা আপনি নয়। এখন তাঁকে ভরসা দিতে পারব, তাঁদের ভয় নেই। আপনার স্বদেশ-সেবার অভিনয়ে মুখুয্যেবংশের বিপুল সম্পদের এক কণাও কোনদিন লোকসান হবে না। দিদি নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

    দ্বিজদাস হাসিয়া বলিল, দিদির লোকসান হয় এই কি আপনি চান?

    বন্দনা বিব্রত হইয়া কহিল, বাঃ—তা কেন চাইব! আমি চাই তাঁদের ভয় ঘুচুক, তাঁরা নির্ভয় হোন।

    দ্বিজদাস কহিল, আপনার চিন্তা নেই, তাঁরা নির্ভয়েই আছেন। অন্ততঃ দাদার সম্বন্ধে এ কথা নিঃসঙ্কোচে বলতে পারি, ভয় বলে কোন বস্তু তিনি আজও জানেন না। ও তাঁর প্রকৃতি-বিরুদ্ধ।

    বন্দনা হাসিয়া বলিল, তার মানে ভয় জিনিসটা সবটুকু বাড়ির সকলে মিলে আপনারাই ভাগ করে নিয়েচেন, তাঁর ভাগে আর কিছুই পড়েনি—এই ত!

    শুনিয়া দ্বিজদাসও হাসিল, কহিল, অনেকটা তাই বটে। তবে আপনাকেও বঞ্চিত করা হবে না, সামান্য যা অবশিষ্ট আছে সেটুকু আপনিও পাবেন। তিনি-চারদিন একসঙ্গে আছেন, এখনও তাঁকে চিনতে পারেন নি?

    বন্দনা কহিল, না। আপনার কাছ থেকে তাঁকে চিনতে শিখব আশা করে আছি।

    দ্বিজদাস কহিল, তা হলে প্রথম পাঠ নিন। ঐ জুতোজোড়াটি খুলে ফেলুন।

    চাকর আসিয়া বলিল, মা আপনাদের ওপরে ডাকচেন।

    চলিতে চলিতে বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, হঠাৎ মা এসেছেন কেন?

    দ্বিজদাস বলিল, প্রথম, কৈলাস-যাত্রা সম্বন্ধে মামীদের সঙ্গে পরামর্শ করা; দ্বিতীয়, আপনাকে বলরামপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেখবেন, যেন না বলে বসবেন না।

    বন্দনা বলিল, আচ্ছা, তাই হবে।

    দ্বিজদাস কহিল, মার সামনে আপনাকে মিস রায় বলা চলবে না। আপনি আমার বয়সে ছোট—বৌদিদির ছোট বোন—অতএব নাম ধরেই ডাকব। যেন রাগ করে আবার একটা কাণ্ড বাধাবেন না।

    বন্দনা হাসিয়া বলিল, না, রাগ করব কেন? আপনি আমার নাম ধরেই ডাকবেন। কিন্তু আপনাকে ডাকবো কি বলে?

    দ্বিজদাস বলিল, আমাকে দ্বিজুবাবু বলেই ডাকবেন। কিন্তু দাদাকে মুখুয্যেমশাই বলা মানবে না। তাঁকে সবাই বলে বড়দাদাবাবু,—আপনাকেও ডাকতে হবে বড়দাদা বলে। এই হ’ল আপনার দ্বিতীয় পাঠ!

    কেন?

    দ্বিজদাস বলিল, তর্ক করলে শেখা যায় না, মেনে নিতে হয়। পাঠ মুখস্থ হলে এর কারণ প্রকাশ করব,— কিন্তু এখন নয়।

    বন্দনা কহিল, মুখুয্যেমশাই কিন্তু নিজে আশ্চর্য হবেন।

    দ্বিজদাস বলিল, হলেও ক্ষতি নেই, কিন্তু মা বৌদিদি এঁরা বড় খুশী হবেন। এটা সত্যিই দরকার।

    আচ্ছা, তাই হবে।

    সিঁড়ির একধারে জুতা খুলিয়া রাখিয়া বন্দনা দয়াময়ীর ঘরে গিয়া উপস্থিত হইল। পিছনে গেল দ্বিজদাস ও বাসুদেব। তিনি তোরঙ্গ খুলিয়া কি একটা করিতেছিলেন এবং কাছে দাঁড়াইয়া অন্নদা বোধ করি গৃহস্থালীর বিবরণ দিতেছিল। দয়াময়ী মুখ তুলিয়া চাহিলেন, কিছুমাত্র ভূমিকা না করিয়া সহজ-কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার গা ধোয়া, কাপড় ছাড়া হয়েচে মা?

    হাঁ মা, হয়েছে।

    তা হলে একবার রান্নাঘরে যাও মা। এতগুলি লোকের কি ব্যবস্থা বামুনঠাকুর করচে জানিনে—আমিও আহ্নিকটা সেরে নিয়েই যাচ্ছি।

    বন্দনা নীরবে চাহিয়া রহিল, তিনি সেদিকে দৃষ্টিপাতও করিলেন না, বলিলেন, দ্বিজুর শরীরটা ভালো নেই, সকালেও ও কিছু খেয়ে আসেনি। ওর খাবারটা যেন একটু শিগগির হয় মা। এই বলিয়া তিনি অন্নদাকে সঙ্গে করিয়া পূজার ঘরের দিকে চলিয়া গেলেন, বন্দনার উত্তরের জন্য অপেক্ষাও করিলেন না।

    বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, কি অসুখ করল?

    দ্বিজদাস কহিল, সামান্য একটু জ্বরের মত।

    কি খাবেন এ বেলা?

    দ্বিজদাস কহিল, সাগু বার্লি ছাড়া যা দেবেন তাই।

    বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, রান্নাঘরে যাব, শেষকালে কোন গোলযোগ ঘটবে না ত?

    দ্বিজদাস বলিল, না। অন্নদাদিদি সেই পরিচয়ই বোধ হয় আপনার দিয়েছেন। ওঁর কথা মা কখন ঠেলতে পারেন না।—ভারী ভালবাসেন। ম্লেচ্ছ অপবাদটা বোধ করি আপনার কাটল।

    বন্দনা কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, খুব আশ্চর্যের কথা।

    দ্বিজদাস স্বীকার করিয়া বলিল, হাঁ। ইতিমধ্যে আপনি কি করেছেন, অন্নদাদিদি কি কথা মাকে বলেছেন জানিনে কিন্তু আশ্চর্য হয়েছি আপনার চেয়েও ঢের বেশী আমি নিজে। কিন্তু আর দেরি করবেন না, যান, খাবার ব্যবস্থা করুন গে। আবার দেখা হবে।
    এই বলিয়া দুইজনেই মায়ের ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিরাজবৌ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    Next Article বামুনের মেয়ে – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    Related Articles

    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    চলিত ভাষার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    দর্পচূর্ণ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    May 6, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }