Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিপ্রদাস – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    উপন্যাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক পাতা গল্প273 Mins Read0

    বিপ্রদাস

    নয়

    বন্দনা সকালে উঠিয়া দেখিল এই বাড়িটার সম্বন্ধে সে যাহা ভাবিয়াছিল তাহা নয়। মনে করিয়াছিল পুরুষমানুষের বাসাবাড়ি, হয়ত ঘরের কোণে কোণে জঞ্জাল, সিঁড়ির গায়ে থুথু, পানের পিচের দাগ, ভাঙ্গাচোরা আসবাবপত্র, ময়লা বিছানা, কড়ি-বরগায় ঝুল, মাকড়সার জাল—এমনি সব অগোছাল বিশৃঙ্খল ব্যাপার। কাল রাত্রে সামান্য আলোকে স্বল্পকালের মধ্যে দেখাও কিছু হয় নাই, কিন্তু আজ তাহার সুশৃঙ্খল পরিচ্ছন্নতায় সত্যই আশ্চর্য হইল। মস্ত বাড়ি, অনেক ঘর, অনেক বারান্দা, সমস্ত পরিষ্কার ঝকঝক করিতেছে। দ্বারের বাহিরে একজন মধ্যবয়সী বিধবা স্ত্রীলোক দাঁড়াইয়া ছিল, দেখিতে ভদ্রঘরের মেয়ের মত, সে গলায় আঁচল দিয়া প্রণাম করিতেই বন্দনা সঙ্কোচে চঞ্চল হইয়া উঠিল।

    সে বলিল, দিদি, আপনার জন্যেই দাঁড়িয়ে আছি, চলুন, স্নানের ঘরটা দেখিয়ে দিই। আমি এ বাড়ির দাসী।

    বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, বাবা উঠেছেন?

    না, কাল শুতে দেরি হয়েছে, হয়ত উঠতেও দেরি হবে।

    আমাদের সঙ্গে আর দুজন যাঁরা এসেচেন তাঁরা?

    না, তাঁরাও ওঠেন নি।

    তোমাদের বড়বাবু? তিনিও ঘুমুচ্চেন?

    দাসী হাসিয়া বলিল, না, তিনি গঙ্গাস্নান, পূজো-আহ্নিক সেরে কাছারি-ঘরে গেছেন। খবর পাঠাব কি?

    বন্দনা বলিল, না, তার দরকার নেই।

    স্নানের ঘরটা একটু দূরে, ছোট একটা বারান্দা পার হইয়া যাইতে হয়। বন্দনা যাইতে যাইতে কহিল, তোমাদের এখানে বাথরুম শোবার ঘরের কাছে থাকবার জো নেই, না?

    দাসী কহিল, না।মা মাঝে মাঝে কালী-দর্শনের জন্যে কলকাতায় এলে এ-বাড়িতেই থাকেন কিনা, তাই ও-সব হবার জো নেই।

    বন্দনা মনে মনে বলিল, এখানেও সেই প্রবল-প্রতাপ মা। আচার-অনাচারের কঠিন শাসন। সে ফিরিয়া গিয়া কাপড় জামা গামছা প্রভৃতি লইয়া আসিল,কহিল, এখানে দু-চারদিন যদি থাকতে হয়, তোমাকে কি বলে ডাকব? এখানে তুমি ছাড়া আর বোধ হয় কোন দাসী নেই?

    সে বলিল, আছে, কিন্তু তার অনেক কাজ।ওপরে আসবার সময় পায় না।যা দরকার হয় আমাকেই আদেশ করবেন, দিদি, আমার নাম অন্নদা। কিন্তু পাড়াগাঁয়ের লোক, হয়ত অনেক দোষ-ত্রুটি হবে।

    তাহার বিনয়বাক্যে বন্দনা মনে মনে খুশী হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কোথায় তোমার বাড়ি অন্নদা? তোমার কে কে আছে?

    অন্নদা বলিল, বাড়ি আমার এঁদের গ্রামেই—বলরামপুরে। একটি ছেলে, তাকে এঁরাই লেখাপড়া শিখিয়ে কাজ দিয়েছেন, বৌ নিয়ে সে দেশেই থাকে। ভালই আছে দিদি।

    বন্দনা কৌতূহলী হইয়া প্রশ্ন করিল, তবে নিজে তুমি এখনো চাকরি কর কেন, বৌ-ব্যাটা নিয়ে বাড়িতে থাকলেই ত পার?
    অন্নদা কহিল, ইচ্ছে ত হয় দিদি, কিন্তু পেরে উঠিনে। দুঃখের দিনে বাবুদের কথা দিয়েছিলুম নিজের ছেলে যদি মানুষ হয়, পরের ছেলেদের মানুষ করার ভার নেব। সেই ভারটা ঘাড় থেকে নামাতে পারিনে। দেশের অনেকগুলি ছেলে এই বিদেশে লেখাপড়া করে। আমি না দেখলে তাদের দেখবার কেউ নেই।

    তারা বুঝি এই বাড়িতেই থাকে?

    হাঁ, এই বাড়িতে থেকেই কলেজে পড়ে। কিন্তু আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে,আমি বাইরেই আছি, ডাকলেই সাড়া পাবেন।

    বন্দনা বাথরুমে ঢুকিয়া দেখিল ভিতরে নানাবিধ ব্যবস্থা। পাশাপাশি গোটা-তিনেক ঘর,স্পর্শদোষ বাঁচানোর যতপ্রকার ফন্দি-ফিকির মানুষের বুদ্ধিতে আসিতে পারে তাহার কোন ত্রুটি ঘটে নাই। বুঝিল এসব মায়ের ব্যবহারের জন্য। পাথরের মেঝে, পাথরের জলচৌকি, একদিকে গোটা-তিনেক প্রকাণ্ড তাঁবার হাঁড়া, বোধ হয় গঙ্গাজল রাখার জন্য,—নিত্য মাজাঘষায় ঝকঝক করিতেছে—তিনি কবে আসিয়াছিলেন এবং আবার কবে আসিবেন নিশ্চিত কেহ জানে না, তথাপি অবহেলার চিহ্নমাত্র কোথাও চোখে পড়িবার জো নাই। যেন এখানেই বাস করিয়া আছেন এমনি সযত্ন-সতর্ক ব্যবস্থা। এ যে কেবল হুকুম করিয়া, শাসন চালাইয়াই হয় না, তাহার চেয়েও বড় কিছু-একটা সমস্ত নিয়ন্ত্রিত করিতেছে, এ কথা বন্দনা চাহিবামাত্রই অনুভব করিল। এবং এই মা, এই স্ত্রীলোকটি যে এ-সংসারে সর্বসাধারণের কতখানি ঊর্ধ্বে অবস্থিত এই কথাটা সে বহুক্ষণ পর্যন্ত নিজের মনে স্তব্ধ হইয়া দাঁড়াইয়া ভাবিতে লাগিল। গল্পে, প্রবন্ধে, পুস্তকে ভারতীয় নারীজাতির বহু দুঃখের কাহিনী সে পড়িয়াছে, তাহাদের হীনতার লজ্জায় নিজে নারী হইয়া সে মর্মে মরিয়া গেছে—ইহা মিথ্যাও নয়,—কিন্তু এই ঘরের মধ্যে আজ একাকী দাঁড়াইয়া সে-সকল সত্য বলিয়া মানিয়া লইতেও তাহার বাধিল।

    বাহিরে আসিতে অন্নদা হাসিমুখে কহিল, বড্ড দেরি হয়ে গেল যে দিদি, প্রায় ঘণ্টা-দুয়েক, ওঁরা সব নীচে খাবার ঘরে অপেক্ষা করে আছেন। চলুন।

    তোমাদের বড়বাবু কাছারি-ঘর থেকে বেরিয়েছেন?

    হাঁ, তিনিও নীচে আছেন।

    আমাদের সঙ্গে বোধকরি খাবেন না?

    অন্নদা সহাস্যে কহিল, খেলেও ত সেই দুপুরের পরে দিদি। আজ আবার তাও নেই। একাদশী, সন্ধ্যের পরে বোধ হয় কিছু ফলমূল খাবেন।

    বন্দনা কি করিয়া যেন বুঝিয়াছিল এ গৃহে এই স্ত্রীলোকটি ঠিক দাসী জাতীয় নয়। কহিল, তিনি ত আর বামুনের ঘরের বিধবা নয়, একাদশীর উপোস করবেন কোন্‌ দুঃখে? কাল গাড়িতে একাদশী না হোক দশমীর উপবাস ত এমনিই হয়ে গেছে।

    অন্নদা বলিল, তা হোক, উপোস ওঁর গায়ে লাগে না। মা বলেন, আর জন্মে তপস্যা করে বিপিন এ জন্মে উপোস-সিদ্ধির বর পেয়েছে। ওঁর খাওয়া দেখলে অবাক হতে হয়।

    বন্দনা নীচে আসিয়া দেখিল, তাহাদের অভ্যস্ত চা রুটি ডিম প্রভৃতি টেবিলে সুসজ্জিত, এবং পিতা ও সস্ত্রীক পাঞ্জাবের ব্যারিস্টার ক্ষুধায় চঞ্চল। অধৈর্য তাহাদের প্রায় শেষ সীমায় উপনীত, মুহূর্তে খবরের কাগজ ফেলিয়া দিয়া সাহেব অনুযোগের কণ্ঠে কহিলেন, ইঃ—এত দেরি মা, সকালবেলাটায় আর ত কোন কাজ হবে না দেখচি।
    বিপ্রদাস অদূরে বসিয়াছিল; বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, মুখুয্যেমশাই, আপনি খাবেন না?

    বিপ্রদাস কথাটা বুঝিল, হাসিয়া কহিল, চা আমি খাইনে। খাই শুধু ডাল-ভাত। তার সময় এ নয়—আমার জন্যে চিন্তা নেই, তুমি বসে যাও।

    বন্দনা ইহার উত্তর দিল না, পিতা এবং অতিথি দুজনকে উদ্দেশ করিয়া কহিল, আমার অপরাধ হয়ে গেছে। বলে পাঠান উচিত ছিল, কিন্তু হয়নি। খাবার ইচ্ছে আমার নেই, কিন্তু আপনারা আর অপেক্ষা করবেন না—আরম্ভ করে দিন। আমি বরঞ্চ আপনাদের চা তৈরি করে দিই। এই বলিয়া সে তৎক্ষণাৎ কাজে লাগিয়া গেল।

    সকলেই ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। চাকরটা একধারে দাঁড়াইয়াছিল, সে কুণ্ঠিত হইয়া উঠিল। পিতা উদ্বেগের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, অসুখ করেনি ত মা? সস্ত্রীক ব্যারিস্টারসাহেব কি যে বলিবেন ভাবিয়া পাইলেন না।

    বন্দনা চা তৈরি করিতে করিতে কহিল, না বাবা, অসুখ করেনি, শুধু খেতে ইচ্ছে করচে না।

    তা হলে কাজ নেই। কাল বেশী রাত্রের খাওয়াটা বোধ করি তেমন হজম হয়নি। তা ছাড়া দিনের বেলা পিত্তি পড়ে গেল কিনা।

    তাই বোধ হয় হবে। বেলা হলে মুখুয্যেমশায়ের সঙ্গে বসে ডাল-ভাত খাব, এ-বাড়িতে সে হয়ত হজম করতে পারব।

    কথাটায় আর কেহ তেমন খেয়াল করিল না, কিন্তু বিপ্রদাসের মুখের উপর দিয়া যেন একটা কাল ছায়া মুহূর্তের জন্য ভাসিয়া গেল।

    চাকরটা কি ভাবিয়া হঠাৎ বলিয়া ফেলিল, আজ একাদশী; ও-বেলায় দুটো ফলমূল ছাড়া আর ত কিছু খান না।

    বন্দনা এইমাত্র এ কথা শুনিয়া আসিয়াছিল, তথাপি বিস্ময়ের ভান করিয়া বলিল, শুধু ফলমূল? বেশ হালকা খাওয়া। সে-ই বোধ হয় খুব ভাল হবে। না, মুখুয্যেমশাই?

    বিপ্রদাস হাসিয়া ঘাড় নাড়িল বটে, কিন্তু কেহ যে তাহাকে স্বচ্ছন্দে উপহাস করিতে পারে আজ এই প্রথম জানিয়া মনে মনে সে যেন স্তব্ধ হইয়া রহিল। এবং তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া বন্দনাও বোধ করি ইহা অনুভব করিল।

    কাজকর্ম সারিয়া বন্দনা পিতার সহিত যখন বাসায় ফিরিয়া আসিল তখন অপরাহ্নবেলা। সস্ত্রীক ব্যারিস্টারসাহেব যাদুঘর, চিড়িয়াখানা, গড়ের মাঠের ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধ প্রভৃতি কলিকাতার প্রধান দ্রষ্টব্য বস্তুসকল পরিদর্শন করিয়া তখনও ফিরেন নাই। রাত্রের গাড়িতে তাঁহাদের যাইবার কথা, কিন্তু প্রোগ্রাম বদল করিয়া যাত্রাটা আপাততঃ তাঁহারা বাতিল করিয়াছেন।

    রায়সাহেব কাপড় ছাড়িতে তাঁহার ঘরে চলিয়া গেলেন, বন্দনার নিজের ঘরের সম্মুখে দেখা হইল অন্নদার সঙ্গে। সে হাসিমুখে অনুযোগের সুরে বলিল, দিদি, সারাদিন ত না খেয়ে কাটল,—আপনার ফলমূল সমস্ত আনিয়ে রেখেচি, একটু শিগগির করে মুখহাত ধুয়ে নিন, আমি ততক্ষণ সব তৈরি করে ফেলি। কি বলেন?

    কিন্তু বড়বাবু,—মুখুয্যেমশাই? তিনি কৈ?

    অন্নদা কহিল, তাঁর জন্যে ব্যস্ত হবার দরকার নেই দিদি; এ-সব তাঁর রোজকার ব্যাপার। খাওয়ার চেয়ে না-খাওয়াটাই তাঁর নিয়ম।
    কিন্তু কৈ তিনি?

    তিনি গেছেন দক্ষিণেশ্বরে কালীদর্শন করতে। এখুনি আসবেন।

    বন্দনা কহিল, সেই ভাল, তিনি এলেই হবে। কিন্তু বাকী সকলে? তাঁদের কি ব্যবস্থা হলো? চল ত অন্নদা, তোমাদের রান্নাঘরটা একবার দেখে আসি।

    অন্নদা কহিল, চলুন, কিন্তু এ-বেলায় তাঁদের ব্যবস্থা ত রান্নাঘরে হয়নি দিদি, ব্যবস্থা হয়েছে হোটেলে—খাবার সেখান থেকেই আসবে।

    বন্দনা আশ্চর্য হইয়া গেল—সে কি কথা এ পরামর্শ তোমাদের দিলে কে?

    বড়বাবু নিজেই হুকুম দিয়ে গেছেন।

    কিন্তু সে-সব অখাদ্য-কুখাদ্য তাঁরা খাবেন কোথায়? এই বাড়িতে? তোমাদের মা শুনলে বলবেন কি?

    অন্নদা অপ্রতিভ হইয়া উঠিল, কহিল, না, তিনি শুনতে পাবেন না। নীচের একটা ঘরে সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। বাসনপত্র হোটেলওয়ালারাই নিয়ে আসবে, কোন অসুবিধে হবে না।

    বন্দনা বলিল, হুকুম ত দিয়ে গেলেন, কিন্তু তামিল করলে কে? তাঁর কাছে আমাকে একবার নিয়ে যেতে পার?

    সে আর বেশী কথা কি দিদি, চলুন নিয়ে যাচ্চি।

    চল।

    মুখুয্যেদের একটা বড় রকমের তেজারতি কারবার কলিকাতায় চলে। নীচের তলায় গোটা-চারেক ঘর লইয়া অফিস; কেরানী, গোমস্তা, সরকার, পেয়াদা, ম্যানেজার প্রভৃতি ব্যবসায়ের যাবতীয় লোকজন সেখানে কাজ করে, বন্দনা প্রবেশ করিতেই সকলে উঠিয়া দাঁড়াইল। বয়স ও পদমর্যাদার লক্ষণে ম্যানেজার ব্যক্তিটিকে সহজে চিনিতে পারিয়া সে ইঙ্গিতে তাঁহাকে বাহিরে ডাকিয়া আনিয়া কহিল, হোটেলে হুকুম দিয়ে এসেছিলেন কি আপনি নিজে?

    ম্যানেজার ঘাড় নাড়িয়া স্বীকার করিলে কহিল, আর একবার যান তাদের বারণ করে দিয়ে আসুন।

    ম্যানেজার বিস্মিত হইল, ইতস্ততঃ করিয়া কহিল, বড়বাবু ফিরে না আসা পর্যন্ত—

    বন্দনা কহিল, তখন হয়ত আর বারণ করবার সময় থাকবে না। মুখুয্যেমশাই রাগ করলে আমার ওপর করবেন। আপনার ভয় নেই। যান, দেরি করবেন না। এই বলিয়াই সে ফিরিতে উদ্যত হইল, উত্তরের অপেক্ষাও করিল না।

    হতবুদ্ধি ম্যানেজার ভাবিল, মন্দ নয়। বিপ্রদাসের হুকুম অমান্য করা কঠিন, এমন কি অসম্ভব বলাও চলে, কিন্তু এই অপরিচিত মেয়েটির সুনিশ্চিত, নিঃসংশয় শাসন অবহেলা করাও কম কঠিন নয়। প্রায় তেমনি অসম্ভব। ক্ষণকাল বিমূঢ়ের ন্যায় স্তব্ধ থাকিয়া দ্বিধার স্বরে কহিল, আজ্ঞে, যাই তা হলে—নিষেধ করে আসি? কিছু আগাম দেওয়া হয়ে গেছে—

    তা হোক, আপনি দেরি করবেন না। এই বলিয়া সে ফিরিয়া আসিল।
    সন্ধ্যার পরে ফিরিয়া আসিয়া বিপ্রদাস খবর শুনিল। খুশী হইবে কি রাগ করিবে হঠাৎ ভাবিয়া পাইল না। রান্নাঘরে আসিয়া দেখিল, আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ, বন্দনা ছোট একটা টুল পাতিয়া পাচক-ব্রাহ্মণকে লইয়া ব্যস্ত, উঠিয়া দাঁড়াইয়া কৃত্রিম বিনয়ের কণ্ঠে কহিল, রাগের মাথায় ম্যানেজারবাবুকে বরখাস্ত করে আসেন নি ত মুখুয্যেমশাই?

    বিপ্রদাস কহিল, মুখুয্যেমশাই যে এমন বদরাগী এ খবর তোমায় দিলে কে?

    বন্দনা বলিল, লোকে বলে বাঘের গন্ধ এক যোজন দূর থেকে পাওয়া যায়।

    বিপ্রদাস হাসিয়া ফেলিল,—কিন্তু অতিথিদের উপায় হবে কি? এঁদের সকলের যে রাত্রে ডিনার করা অভ্যেস—তার কি বল ত?

    বন্দনা কহিল, যাঁর না হলে নয় তাঁকে লোক দিয়ে হোটেলে পাঠিয়ে দিন। বিলের টাকা আমি দেব।

    তামাশা নয় বন্দনা, এ হয়ত ঠিক ভাল হল না।

    ভাল হতো বুঝি ঐ-সব জিনিস এ-বাড়িতে বয়ে আনলে? মা শুনলে কি বলতেন বলুন ত?

    বিপ্রদাস এ কথা যে ভাবে নাই তাহা নহে, কিন্তু স্থির করিয়া উঠিতে পারে নাই, কহিল, তিনি জানতে পারতেন না।

    বন্দনা মাথা নাড়িয়া বলিল, পারতেন। আমি চিঠি লিখে দিতুম।

    কেন?

    কেন? কখনো যা করেন নি, দুদিনের এই ক’টা বাইরের লোকের জন্যে কিসের জন্যে তা করতে যাবেন? কখখন না।

    শুনিয়া বিপ্রদাস শুধু যে খুশী হইল তাই নয়, বিস্ময়াপন্ন হইল। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, কিন্তু তুমি যে কাল থেকে কিছুই খাওনি বন্দনা। রাগ কি পড়বে না? তাহার কণ্ঠস্বরে এবার একটু স্নেহের সুর লাগিল।

    বন্দনা মৃদুকণ্ঠে জবাব দিল, রাগিয়ে দিয়েছিলেন কেন? কিন্তু শুনুন, আপনার খাবার ফলমূল সব আনানো আছে, ততক্ষণ সন্ধ্যে-আহ্নিক আপনি সেরে নিন, আমি গিয়ে তৈরি করে দেব। কিন্তু আর কেউ যদি দেয়, আমি আজও খাব না তা বলে দিচ্চি।

    আচ্ছা, এস,—বলিয়া বিপ্রদাস উপরে চলিয়া গেল।

    প্রায় ঘণ্টা-খানেক পরে বন্দনা ফলমূল মিষ্টান্নের সাদা পাথরের থালা হাতে লইয়া বিপ্রদাসের ঘরে আসিয়া দাঁড়াইল। অন্নদার হাতে আসন ও জলের গ্লাস। জল-হাতে সমস্তটা সে সযত্নে মুছিয়া ঠাঁই করিয়া দিল।

    বিপ্রদাস বন্দনার পানে চাহিয়া সবিস্ময়ে কহিল, তুমি কি আবার এখন স্নান করলে নাকি?

    আপনি খেতে বসুন, বলিয়া সে পাত্রটা নামাইয়া রাখিল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিরাজবৌ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    Next Article বামুনের মেয়ে – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    Related Articles

    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    চলিত ভাষার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    দর্পচূর্ণ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    May 6, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }