Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বিশ্বাসের ভাইরাস – অভিজিৎ রায়

    লেখক এক পাতা গল্প349 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৬. নারী: ধর্ম-ভাইরাসের প্রধানতম শিকার

    ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটি ঘটনা। সৌদি আরবের এক হতভাগ্য নারী তার এক স্কুল-বন্ধুর কাছে থেকে একটি ছবি আনতে গিয়ে সেই বন্ধু আর তার ৬ জন সাঙ্গপাঙ্গদের দ্বারা ধর্ষিত হন। এ ধরণের কোন ঘটনায় ধরে নেয়া হয় যে, ধর্ষণকারীর শাস্তি হবে। অন্তত ধর্ষিতাকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় আইন হতভাগ্য মেয়েটির পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বিধি বাম। সৌদি আইনে (যার মূল ভিত্তি হচ্ছে ইসলামের শরিয়া), হতভাগ্য নারীটিই উল্টে বিচারের রায়ে দুশোটি বেতের আঘাত পেয়েছেন।

    ছবি। পেজ ১৫২

    চিত্র: সৌদি আরবে ধর্ষণকারীর বদলে ধর্ষিতাকেই বেত্রাঘাত করার হয়। [১৪০]

    ব্যাপারটা হয়তো অনেককেই অবাক করবে। কিন্তু যারা ধর্মের আইনকানুনগুলো জানেন, তাদের অবাক করেনা। ইসলামী আইনে ধর্ষণ প্রমাণ করার জন্য চার জন পুরুষ’ চাক্ষুষ সাক্ষীর বিধান রয়েছে। কোরআনের সুরা নিসায় (৪:১৫) বর্ণিত আছে–

    ‘তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা (ব্যভিচারের) দুষ্কর্ম নিয়ে আসবে, তাদের (বিচারের) ওপর তোমরা নিজেদের মধ্যে থেকে চারজন সাক্ষী যোগাড় করবে, অতঃপর সে চারজন লোক যদি ইতিবাচক সাক্ষ্য প্রদান করে তাহলে সে নারীদের তোমরা ঘরের ভেতর অবরুদ্ধ করে রাখবে, যতদিন না, মৃত্যু এসে তাদের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেয়, অথবা আল্লাহতায়ালা তাদের জন্যে অন্য কোনো ব্যবস্থা না করেন।’

    আর সাক্ষীরা যদি নারী হন তাহলে একজন পুরুষ সাক্ষীর পরিবর্তে দুই জন মহিলা সাক্ষী নেওয়া যেতে পারে। বলা বাহুল্য, আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন পরীক্ষার (যেমন ডিএনএ কিংবা অন্যান্য মেডিকেল টেষ্ট ইত্যাদি) কোন স্থান শরিয়া আইনে নেই।

    সাক্ষী হিসেবে যে একজন পুরুষ সমান দুজন নারী তা কোরআনে (সুরা বাকারা, ২:২৮২) সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখিত আছে–

    “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋণের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গত ভাবে তা। লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া এবং ঋণ গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অত:পর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দুর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গত ভাবে লিখাবো দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়…’।

    এখানে লক্ষণীয় যে, এ ধরণের সাক্ষী সাবুদের ক্ষেত্রে দুজন পুরুষ সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে। দুজন পুরুষ না পাওয়া না গেলে মহিলাদের দিয়ে কাজ চলতে পারে, তবে একজন পুরুষের বদলে সেক্ষেত্রে দুজন নারীর সাক্ষ্য নেওয়া যেতে পারে। পুরুষ ছাড়া কেবল মহিলাদের সাক্ষী কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাথে অন্তত একজন পুরুষ থাকতেই হবে। যারা কোরআনের মধ্যে সব সময় নারী-পুরুষের সাম্য খুঁজে পান, যারা বৈষম্যের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করেন, তারা এর কী জবাব দেবেন? গবেষকেরা বলেন, নারীরা চিন্তায় চেতনায় পুরুষদের থেকে হীন, তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল, তাদের বিচার বুদ্ধি কম, তারা ঠিকমত সাক্ষ্য দিতে পারবে না এই ভাবনা থেকেই মূলত— দুজন নারীর সাক্ষ্যকে একজন পুরুষের সমতুল্য করা হয়েছে[১৪১]।

    এখন বোধ হয় পাঠকেরা বুঝতে পারছেন, সৌদি আরবে ধর্ষিতার শাস্তি হওয়ার মূল কারণ। তিনি অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে আসলে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেন যে তিনি বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। ইসলামি আইনে ‘জেনা’ হলো, ব্যভিচার, বিবাহ-বহির্ভূত যৌনমিলন, ধর্ষণ ও পতিতাবৃত্তি। এ পর্যায়ে উল্লেখিত সাক্ষী যোগাড় করে ধর্ষণ প্রমাণ করতে না পারলে সাধারণত নারীটিকেই জেনা’র দায়ে শাস্তি দেয়া হয়। এটাই ইসলামী আইন।

    অনেকে বলেন, সৌদি আরবের এই ঘটনায় শাস্তি বরং কমই দেয়া হয়েছে। ক’ বছর আগে সোমালিয়ার একটা ঘটনার কথা পড়েছিলাম, সেখানে এধরণের ধর্ষণের ঘটনায় ১৩ বছরের একটা মেয়েকে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল- ইসলামী আইন মোতাবেকই এই শাস্তি কার্যকর হয়েছিল। হাদিস থেকে দেখা যায়, নবী মুহাম্মদ (দঃ) তাঁর জীবদ্দশায় ‘রজম (পাথর মেরে হত্যা) নামক অমানবিক-নৃশংস শরিয়ার আইনটির দ্বারা বহু ব্যভিচারী নরনারীকে পাথর মেরে হত্যা করেছিলেন। একটি হাদিসের উদাহরণ দেয়া যাক–

    হজরত আস্ শাবানী থেকে বর্ণীত- ‘আমি আব্দুল্লাহ বিন আবু আউফকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আল্লাহর রাসুল কি ‘রজম’ বিধান (পাথর মেরে হত্যা) কারো উপর প্রয়োগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সুরা নুর’ নাজিল হওয়ার আগে না পরে। তিনি বললেন, তা জানিনা।

    হজরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ আল আনসারী বর্ণনা করছেন- বনি আসলাম গোত্রের একজন বিবাহিত লোক এসে নবীজীর কাছে চারবার বলল যে সে একজন নারীর সাথে অবৈধ সঙ্গম করেছে। নবীজী তাকে পাথর মেরে হত্যার আদেশ দিলেন, যেহেতু সে বিবাহিত ছিল। পাথর মারায় আমিও অংশ গ্রহণ করেছিলাম। মুসালা’য় তাকে পাথর মারা শুরু হলো। পাথরের আঘাত সহ্য করতে না পেরে লোকটি দৌড়ে পালাতে থাকলো, আমরা তাকে দৌড়ায়ে আল্ হারা’য় ধরে ফেললাম এবং সেখানেই তাকে পাথর মেরে হত্যা করলাম। (সহি বোখারী শরিফ, ভলিউম ৮, বুক ৮২, নম্বর ৮০৫)।

    এ সংক্রান্ত আরো কিছু হাদিস দেখা যাক। যেমন, সহি বুখারী ৪/৫৬/৮২৯:

    ‘আব্দুল্লাহ বিন উমর বর্ণিত: ইহুদিরা আল্লাহর রসুলের কাছে এসে জানায় যে, তাদের এক পুরুষ ও নারী অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়েছে। নবী তাদেরকে বলেন, “তাউরাতে পাথর ছুড়ে হত্যা সম্পর্কে কী আইনি শাস্তির বিধান রয়েছে?” তারা জবাব দেয়, “আমরা শুধুই তাদের অপরাধ ঘোষণা করি এবং তাদেরকে চাবুক মারি।” আব্দুল্লাহ বিন সালাম বললেন, “তোমরা মিথ্যে বলছো; তাউরাতে পাথর ছুড়ে হত্যার বিধান রয়েছে। তারা তাউরাত আনল এবং তাদের একজন পাথর ছুড়ে হত্যার আয়াতটিকে হাত দিয়ে আড়াল করে তার আগের ও পরের আয়াতটি পড়ল। আব্দুল্লাহ বিন সালাম তাকে বললেন, “তোমার হাত সরিয়ে নাও।” সে হাত সরিয়ে নিলে দেখা গেল সেখানে পাথর ছুড়ে হত্যার আয়াতটি লিখা আছে। তখন তারা বলল, “মুহাম্মদ সত্য বলেছে; তাউরাতে পাথর ছুড়ে হত্যার আয়াত আছে।” নবী তখন নির্দেশ দিলেন। যে, তাদের উভয়কে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হোক। আব্দুল্লাহ বিন উমর বলেন, “আমি দেখলাম পুরুষটি মহিলার উপর ঝুঁকে পড়ে তাকে পাথর থেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছে।”[১৪৪]

    কিংবা সহিহ মুসলিম ১৭/৪২০৭:

    ‘ইমরান বিন হুসেন জানান যে, জুহাইনা সম্প্রদায় থেকে এক মহিলা আল্লাহর নবীর কাছে এসে বলে যে, সে ব্যভিচারের মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। সে বলে, “আল্লাহর রাসুল, আমি এক অপরাধ করেছি যার শাস্তি আমাকে ভোগ করতে হবে, সুতরাং আমাকে সে শাস্তি দিন।” আল্লাহর রাসুল তার মালিককে ডেকে বললেন, “সন্তানের প্রসব পর্যন্ত ওকে ভালমত দেখাশুনা করিও; তারপর আমার কাছে নিয়ে এসো।” সে নবীর নির্দেশ মুতাবেক কাজ করল। তারপর আল্লাহর রাসুল তার সম্পর্কে শাস্তি ঘোষণা করলেন। এবং মহিলার কাপড় দিয়ে তাকে বেধে নবীর নির্দেশ মোতাবেক পাথর ছুড়ে হত্যা করা হলো।

    সোমালিয়ার ঐ ঘটনা ইসলামী আইন কানুন মেনেই হয়েছিল, বলাই বাহুল্য। ক’দিন আগে দুবাইয়ের আরেকটা ঘটনা পড়েছিলাম– নরওয়ের এক স্থপতি নারী ধর্ষণের অভিযোগ করার পর শরিয়া নিয়মে উপযুক্ত সংখ্যক চাক্ষুষ সাক্ষী দ্বারা প্রমাণ করতে না পারার কারণে (ডিএনএ রিপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট সব কিছু থাকা সত্ত্বেও) উল্টে তাকেই ১৬ মাসের জেল দেয়া হয়, যদিও আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত মুক্তি পান তিনি।

    এধরণের ঘটনা আছে বহু। নারীকে প্রাপ্য মর্যাদা তো দূরে থাকুক, সামান্য অধিকারটাও দেয়া হয়নি। বরং অন্যের অপরাধে দেয়া হয়েছে শাস্তি। সুরা নাহল- আয়াত ৪৩ (১৬:৪৩), সুরা হজ্ব আয়াত ৭৫ (২২:৭৫) এ আল্লাহ স্পষ্ট করেই বলেছেন–

    ‘নারীকে কোনদিন নবী-রসুল করা হবে না।

    সুরা ইউসুফ, আয়াত ১০৯ (১২:১০৯)–এও একই বক্তব্য:

    ‘আপনার পূর্বে আমি যতজনকে রসুল করে পাঠিয়েছি, তারা সবাই পুরুষই ছিল জনপদবাসীদের মধ্য থেকে, আমি তাদের কাছে ওহী প্রেরণ করতাম।

    এ ধরনের অনেক হাদিসের কথাই আমরা জানি। এগুলো পড়লে একটা শিশুও বুঝবে যে, আল্লাহর দৃষ্টিতে নারী এবং পুরুষ মোটেই সমান নয়। ইসলাম আসলে ভয়াবহভাবেই পুরুষতান্ত্রিক এবং নারী-বিদ্বেষী- হযরত মোহাম্মদ নিজেই বহুবার বলেছেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমি পুরুষের জন্য মেয়েদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর ফিতনা ও বিপর্যয় রেখে যাইনি।” (বোখারী ও মুসলিম)[১৪৭]।

    নারীর উৎপত্তি হয়েছে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে– বাইবেলের এই মিথকে বুকে ধারণ করে নবী বিধান দিয়েছেন”:

    ‘নারীদের প্রতি বন্ধুত্বমূলক আচরণ করো কারণ তাদেরকে বুকের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে, বুকের বাঁকা হাড়, যদি তুমি তাকে সোজা করতে চাও তবে তা ভেঙে যাবে; আর যদি তুমি কিছুই না করো, তবে সে বাঁকাই থেকে যাবে।

    ইসলামী পণ্ডিতেরা এক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের কথায় জোর দিলেও মূলত বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্ট হবার কারণে নারীরা স্বভাবেও বাঁকা— এটাই হাদিসটির মূল সুর।

    কোরআনে মেয়েদের সংজ্ঞায়িতই করা হয়েছে শস্যক্ষেত্র হিসেবে তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্যে (সন্তান উৎপাদনের) ফসলক্ষেত্র, তোমরা তোমাদের এই ফসলক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই গমন করো … (সূরা আল বাকারা, ২:২২৩)। আর স্বামী বিছানায় ডাকার সাথে সাথে নারীকে সাড়া দিতে হবে, এর উল্লেখ করে নবী বলেন[১৪৮]—

    ‘স্বামী তাহার স্ত্রীকে স্বীয় বিছানায় আসিবার জন্য ডাকিলে যদি স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয় (এবং স্বামী তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়) তবে ভোর পর্যন্ত সারা রাত্র ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীর প্রতি লানৎ ও অভিশাপ করিতে থাকেন।” (বোখারী ও মুসলিম)[১৪৯]।

    দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে স্বামী রাত্রে ঘরে ফিরলে স্ত্রী যেন তার যৌনকেশ উত্তমরূপে শেভ করে রাখে বলে বিধান দিয়েছেন নবী[১৫০]—

    নবী বলেছেন— “যদি তুমি রাত্রিতে (তোমার শহরে প্রবেশ কর (দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে), সাথে সাথে গৃহে প্রবেশ করো না যে পর্যন্ত না প্রবাসী ব্যক্তির স্ত্রী তার যৌনকেশ শেভ করে এবং আলুলায়িত কুন্তলা তার কেশগুলিকে ভালভাবে বিন্যস্ত করে।”

    বিভিন্ন হাদিসে আরো বলা আছে একজন স্ত্রী যদি উটের পিঠে কিংবা রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে, তারপরেও স্বামীর যৌনচাহিদার প্রতি সে অবজ্ঞা করতে পারবে না–

    “যদি কোন ব্যক্তি সঙ্গমের ইচ্ছায় নিজের স্ত্রীকে আহ্বান করে, তবে সে যেন তাহার নিকট উপস্থিত হয়, যদিও সে উনুনের উপর (রন্ধন কার্যে ব্যাপৃত) থাকে” (তিরমিজী)

    আরো বলা আছে, যেসব বিষয়ের মধ্যে খারাপ ও শয়তানি জিনিস লুকিয়ে থাকে তা হলো: বাড়ি, নারী ও ঘোড়া। নবী এও বলেছেন সেই ব্যক্তি কোনোদিন উন্নতির মুখ দেখবে না যে নারীর কাছে তার গোপন কথাগুলো বলে, কিংবা সেই জাতি কখনো উন্নতি করবে না যে জাতি নারীকে নেত্রী হিসেবে গ্রহণ করে”। স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে”, যদি কুষ্ঠরোগে আপনার স্বামীর দেহ পচে ফেটে যায়,রক্ত ও পুঁজ সেখান থেকে পড়তে থাকে আর আপনি তাতে মুখ লাগিয়ে চুষে চুষে নেন,তবুও স্বামীর হক পুরোপুরি আদায় হবে না।

    কিন্তু স্বামীদের জন্য এতকিছু করার পরও মৃত্যুর পর নারীদের অধিকাংশই যে দোজখের আগুনে পুড়বে, সেটা উল্লেখ করতেও ভোলেননি নবীজি:

    ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে অসাল্লাম বলিয়াছেন দোয়খ পরিদর্শনকালে আমি দোযখের দ্বারে দাঁড়াইলাম এবং জানিতে পারিলাম যে, দোযখীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হইবে। (বোখারী শরিফ, ২১১)

    সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে যেমন নারী-পুরুষে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তেমনি করা হয়েছে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রেও। সুরা নিসা অনুযায়ী উত্তরাধিকার সূত্রে বাবা-মার কাছ থেকে একজন পুরুষ সন্তান যা পাবে, মেয়ে সন্তান পাবে তার অর্ধেক। কোরআনে (৪:১১) আছে,

    ‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অত:পর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অত:পর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যেতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ।

    বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইনেও (১৯৬১) বলা আছে, একটি মেয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে যা পাবে তা একটি ছেলের অর্ধেক। বোঝাই যায় কোরআন এবং সুন্নার আলোকে আইন করা হয়েছে বলেই এই বৈষম্য।

    অনেক মুসলিম স্কলার’ আছেন, যারা বলতে চান, মেয়ে বড় হয়ে যেহেতু স্বামীর সম্পত্তি পায়, তাই পিতার সম্পত্তি তাকে কম দেওয়া হয়েছে। এগুলো আসলে ছেলে ভুলানো ছড়া। নন্দিনী হোসেন তার পুরুষ রচিত ধর্মে বিকলাঙ্গ নারী’ প্রবন্ধে এই যুক্তি খণ্ডন করে বলেন—

    ‘আধুনিক বিশ্বে বহু নারী উপার্জনক্ষম। অনেকেই স্বামীদের থেকেও বেশী রোজগার করেন, তাদের অনেককেই স্বামীর উপার্জনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হয় না। মেয়েদের অনেকেই আজ বহুজাতিক কোম্পানির সিইও, এমনকি রাষ্ট্রক্ষমতার-ও শীর্ষে ছিলেন, কিংবা এখনো আছেন। এদের কাছে ওই আয়াতগুলো বোকা বোকাই লাগবে। আর তা ছাড়া এমন অনেক নারীই আছেন যারা বিয়েই করেননি, কিংবা করবেন না। মেয়েদের বড় হয়ে স্বামী থাকতেই হবে– এটা কি ধ্রুব সত্য নাকি?”

    অনেকেরই হয়তো মনে আছে আওয়ামীলীগ সরকার ২০১১ সালের এপ্রিলের দিকে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কী বিপদেই না পড়েছিল। উত্তরাধিকার সম্পদে নারী পুরুষের সমান অধিকার চলে আসবে ভেবে হুঙ্কার দিয়ে রাস্তায় নেমেছিল মুফতি ফজলুল হক আমিনীরা। ইসলাম বিপন্ন ভেবে রাস্তাঘাট বন্ধ করে অবরোধ করে একাকার করে ফেলেছিল। আমিনীর রণ-হুংকার শুনে- হাসিনা, মতিয়া থেকে শুরু করে আওয়ামী মন্ত্রী-মিনিস্টার সবাই সমস্বরে জানান দিতে থাকেন, এই নারী-নীতির সাথে নাকি কোরআন-সুন্নাহর কোন বিরোধ নাই। ইসলামিস্টদের চাপে বাতিল হয়ে গেল উত্তরাধিকার সম্পদে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের প্রশ্ন।

    আরেক আলেম হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমেদ শফী মেয়েদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করে পত্রপত্রিকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। তার ওয়াজে তিনি বলেছেন,

    ‘মেয়েরা তেঁতুলের মত, কখনো কখনো তেঁতুলের থেকেও বেশী খারাপ! তাদের দেখলে ছেলেদের মুখ থেকে লালা বের হয়,ছেলেদের দিলের মধ্যে লালা বের হয় এবং যাকেই ছেলেরা দেখে তাকেই বিয়ে করতে ইচ্ছা হয়, লাভ ম্যারেজ করতে ইচ্ছা হয়’!

    কেবল ইসলাম ধর্মে নয়, সকল ধর্মেই মূলত কম বেশি একই অবস্থা। হিন্দু ধর্মের প্রসঙ্গে আসা যাক। হিন্দুধর্মের মূল গ্রন্থ বেদ। এজন্য অনেকে হিন্দুধর্মকে বৈদিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। হিন্দুধর্মের বেদ চারটি; যথা ঋগ্বেদ, সামবেদ, অথর্ব বেদ ও যজুর্বেদ। এই যজুর্বেদ দুই। ভাগে বিভক্ত–একটি হচ্ছে কৃষ্ণযজুর্বেদ বা তৈত্তরীয় সংহিতা অন্যটি শুক্লযজুর্বেদ; এই শুক্লযজুর্বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত, একটি শতপথ ব্রাহ্মণ এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদ। শুক্লযজুর্বেদের অন্তর্গত শতপথ ব্রাহ্মণে নারীকে তুলনা করা হয়েছে এভাবে, “সে ব্যক্তিই ভাগ্যবান, যার পশু সংখ্যা স্ত্রীর সংখ্যার চেয়ে বেশি” (২/৩/২/৮)। পরের আরেকটি শ্লোকে পাওয়া যায় হিন্দু ধর্মের দৃষ্টিতে নারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান; “বজ বা লাঠি দিয়ে নারীকে দুর্বল করা উচিৎ, যাতে নিজের দেহ বা সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার না থাকতে পারে” (৪/৪/২/১৩)। এর থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্যের আর প্রয়োজন আছে? বৃহদারণ্যক উপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেন, “স্ত্রী স্বামীর সম্ভোগ কামনা চরিতার্থ করতে অসম্মত হলে প্রথমে উপহার দিয়ে স্বামী তাকে ‘কিনবার’ চেষ্টা করবে, তাতেও অসম্মত হলে হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে মেরে তাকে নিজের বশে আনবে” (৬/৪/৭, ১/৯/২/১৪)। দেবীভাগবত-এ নারীর চরিত্র সম্পর্কে বলা আছে (৯:১) : “নারীরা জেঁকের মত, সতত পুরুষের রক্তপান করে থাকে। মুখ পুরুষ তা বুঝতে পারে না, কেননা তারা নারীর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। নারীদের সম্পর্কে উচ্চারিত হয়েছে চরম অবমাননাকর কিছু শ্লোক মনুসংহিতায়। কিছুদিন আগে রণদীপ বসু মুক্তমনা ব্লগে সিরিজ আকারে লিখেছিলেন, ‘অস্পৃশ্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং একজন বাবাসাহেব’ নামের আট পর্বের একটি সিরিজ। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন,

    ‘পৃথিবীতে যতগুলো কথিত ধর্মগ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে মনে হয় অন্যতম বর্বর, নীতিহীন, শঠতা আর অমানবিক প্রতারণায় পরিপূর্ণ গ্রন্থটির নাম হচ্ছে হিন্দুদের মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতা’।

    কথাটি মিথ্যে নয়। মনুর দৃষ্টিতে নারী স্বভাব-ব্যভিচারিণী, কামপরায়ণা; কাম, ক্রোধ, পরহিংসা, কুটিলতা ইত্যাদি যত খারাপ দোষ আছে, সবই নারীর বৈশিষ্ট্য, এগুলো দিয়েই নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে-! যেমন, মনুসংহিতার একটি শ্লোকে (২: ২১৩) বলা হয়েছে–

    স্বভাব এষ নারীণাং নরাণামিহ্ দূষণম্।
    অতোহৰ্থান প্রমাদ্যন্তি প্রমদাসু বিপশ্চিতঃll

    অর্থাৎ, ইহলোকে (শৃঙ্গার চেষ্টার দ্বারা মোহিত করে) পুরুষদের দৃষিত করাই নারীদের স্বভাব; এই কারণে পণ্ডিতেরা স্ত্রীলোক সম্বন্ধে কখনোই অনবধান হন না।

    আরো বলা হয়েছে—

    মাত্রা স্বভ্রা দুহিত্ৰা বা না বিবিক্তাসনো ভবেৎ।
    বলবানিন্দ্রিয়গ্রামো বিদ্বাংসমপি কৰ্ষতি।। (২:২১৫)।

    অর্থাৎ, মাতা, ভগিনী বা কন্যার সাথে কোনও পুরুষ নির্জন গৃহাদিতে বাস করবে না, কারণ এদের চিত্ত এতোই চঞ্চল যে, এরা বিদ্বান ব্যক্তিকেও আকর্ষণ করে কামের বশবর্তী করে তোলে।

    মনু সংহিতা মতে, নারীর কর্তব্য গৃহকর্ম এবং সন্তান উৎপাদন (৯:২৬)। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যই নারী এবং সন্তান উৎপাদনার্থে পুরুষ সৃষ্টি হয়েছে (৯:৯৬)। নারী মন্ত্রহীন, অশুভ (৯:১৮), নারীদের জন্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত-অমল্ক (২:৬৬); কন্যা, যুবতী, রোগাদি পীড়িত ব্যক্তির হোম নিষিদ্ধ এবং তা করলে তারা নরকে পতিত হয় (১১:৩৭)!

    স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে–

    বিশীলঃ কামবৃত্তো বা গুণৈবা পরিবর্জিতঃ
    উপচর্যঃ স্ট্রিয়া সাধা সততং দেববৎ পতিঃ।। (৫:১৫৪)

    বাংলা করলে দাঁড়ায়, স্বামী দুশ্চরিত্র, কামুক বা নিষ্ঠুণ হলেও তিনি সাধ্বী স্ত্রী কর্তৃক সর্বদা দেবতার ন্যায় সেব্য।

    কোনো নারী (স্ত্রী) যদি স্বামীকে অবহেলা করে, ব্যভিচারিণী হলে সংসারে তো নিন্দিত হবেই সেই সাথে যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ইত্যাদি রোগেও আক্রান্ত হবে। শুধু তাই নয় পরজন্মে শৃগালের গর্ভে জন্ম নিবে সেই নারী (৫:১৬৩-১৬৪); শুধু স্বামীর সেবার মাধ্যমেই নারী স্বর্গে যাবে (৫:১৫৫)। সার্ধী নারী কখনো জীবিত অথবা মৃত স্বামীর অপ্রিয় কিছু করবেন না (৫:১৫৬)। স্বামী মারা গেলে স্ত্রী সারা জীবন ফলমূল খেয়ে দেহ ক্ষয় করবেন, কিন্তু অন্য পুরুষের নামোচ্চারণ করবেন না। (৫:১৫৭)। অথচ স্ত্রী মারা গেলে দাহ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করেই স্বামী আবার দার পরিগ্রহ করবেন (৫:১৬৮)।

    আমাদের চারপাশের প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে বৌদ্ধধর্মকে অপেক্ষাকৃত উদার, অহিংস এবং প্রগতিশীল বলে মনে করা হয়। কিন্তু বৌদ্ধশাস্ত্র নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করলে নারীদের সম্পর্কে যে ধারণা আমরা পাই, তাকে আর যাহোক প্রগতিশীল বলার কোন উপায় নেই। এত জ্ঞানবান, এত দয়াবান, অহিংসার প্রচারক বলে বুদ্ধকে প্রচার করা হয়েছে, তিনি তার সঙ্ঘে কোন নারী ভিক্ষু রাখতে চাননি। পরে অবশ্য তিনি মত পরিবর্তন করেন, নারীরা সঙ্ঘে ঢোকার অনুমতি পায়, কিন্তু তিনি নস্ট্রাডামুসের মত ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন যে, মেয়েদের সংঘে ঢোকানোর ফলে বৌদ্ধ জামানার আয়ুষ্কাল নাকি অর্ধেকে নেমে আসবে।

    গৌতম বুদ্ধের সময়কাল আনুমানিক ৫৬৩– ৪৮৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। কিন্তু বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে, তিনি এর আগেও বহু বার মানুষ অথবা জীবজন্তুর রূপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছেন, এবং প্রত্যেকবারই পরম জ্ঞান অর্থাৎ বোধি লাভ করে বোধিসত্ত্ব হয়েছেন। সেই অতীত বুদ্ধ’দের জীবনের থেকে নেওয়া শিক্ষামূলক কাহিনি-সংগ্রহ, যেগুলো ‘জাতিস্মর’ গৌতম বুদ্ধ তার জীবনে শিষ্যদের শুনিয়েছেন, সেই সংকলন হল ‘জাতক। অবশ্য কোন্ জাতকগুলি বুদ্ধেরই বলা, আর কোগুলি পরবর্তী সংযোজন, তা অবশ্য বিতর্ক সাপেক্ষ। কিন্তু যা বিতর্ক সাপেক্ষ নয়, তা হল সেই সময়ে উঠে আসা পুরুষতান্ত্রিক সমাজচিত্র এবং নারীদের প্রতি মানসিকতা।

    মুক্তমনা সদস্য নিলয় নীল সম্প্রতি একটি চমৎকার সিরিজ লিখেছেন মুক্তমনায় ‘বৌদ্ধশাস্ত্রে পুরুষত’ নামে। বছর খানেক আগে আরেক মুক্তমনা ব্লগার কৌস্তুভ আরেকটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, ‘জাতক ও কামিনী’ নামে এ লেখাগুলো থেকে বৌদ্ধধর্মের যে স্বরূপ প্রকাশিত হয়, তা সত্যই অস্বস্তিকর ঠেকবে অনেকের কাছেই।

    বৌদ্ধশাস্ত্রের ৫৩৬ নম্বর জাতক– নাম কুণাল জাতক। এই জাতকের প্রধান চরিত্র হল কুণাল যার মুখ নিঃসৃত বানী থেকে আমরা নারীদের সম্পর্কে জানতে পারি। কুণাল বলেন নারী কখনই বিশ্বাসযোগ্য নয়, নারী স্বভাবতই বিশ্বাস ঘাতিনী। নারী কোন ভাবেই প্রশংসার যোগ্য নয়। পৃথিবী যেমন সকলের আধার তেমনি নারীও কামাচারে পাত্রপাত্র বিচার করে না। কুণালের মুখে উচ্চারিত হয় নীতি গাথা:

    “সদা রক্ত মাংস প্রিয়, কঠোর হৃদয়,
    পঞ্চায়ুধ, জ্বরমতি সিংহ দুরাশয়।
    অতিলোভী, নিত্য প্রতিহিংসা পরায়ণ,
    বধি অন্যে করে নিজ উদর পুরণ।
    স্ত্রীজাতি তেমতি সর্বপাপের আবাস,
    চরিত্রে তাদের কভু করো না বিশ্বাস।”

    তার মানে, পুরুষের কখনোই নারীর চরিত্রে বিশ্বাস করা উচিত নয়। কুণালের মতে, নারীকে বেশ্যা, কুলটা বললেই সব বলা হয় না, নারী প্রকৃত পক্ষে এরও অধিক কিছু। নারীরা হল–

    –উন্মুক্ত মলভাণ্ডের মতো দুর্গন্ধ যুক্ত।

    –বিষমিশ্ৰিত মদিরার মতো অনিষ্টকারী।

    –কুটিলা সাপের মতো দুই জিহ্বা বিশিষ্ট।

    — পাতালের ন্যায় অতল গভীর।

    –রাক্ষসীর ন্যায় সন্তোষহীন।

    –অগ্নির ন্যায় সর্বগ্রাসিনী।

    –নদীর ন্যায় সর্ববাহিনী।

    –বায়ুর ন্যায় যথেচ্ছগামিনী।

    — বিষবৃক্ষের ন্যায় বিষফল প্রসবিনী।

    নারীরা যে মলের মতো দুর্গন্ধময়, এ সম্পর্কে কুণাল বলেন,

    “নারী হল উন্মুক্ত মলভাণ্ডের ন্যায়। উন্মুক্ত মলভাণ্ড দেখিলে মাছি সেখানে ঝাঁপ দিবেই। তাকে রোহিত করা কষ্টকর। কিন্তু একজন জ্ঞানী মানুষ সব সময় এই মলভাণ্ডের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করে তা এড়িয়ে চলে। তদ্রুপ নারীরূপ মলভাণ্ডে মাছিরূপ পুরুষ ঝাঁপ দিবেই, কিন্তু একজন জ্ঞানী ভিক্ষু এই উন্মুক্ত মলভাণ্ডরূপ নারীদের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করিয়া তাদের সদাই পরিত্যাগ করেন।”

    কুণাল তার নীতিগাথায় আরো বলেন

    “চৌর, বিষদিগ্ধসুরা, বিকখি বণিক
    কুটিল হরিণ শৃঙ্গ, দ্বিজিহ্বা সর্পিণী
    প্রভেদ এদের সঙ্গে নেই রমণীর।
    প্রতিচ্ছন্ন মলকুপ, দুষ্কর পাতাল।
    দুস্তোস্যা রাক্ষসী, যম সর্বসংহারক
    প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।
    অগ্নি, নদী বায়ু, মেরু (পাত্রপাত্রভেদ
    জানে না যে) কিংবা বিষবৃক্ষ নিত্যফল
    প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।”

    অন্ধভূত-জাতকের মূল কথাই হল, “রমণীরা নিতান্ত অরক্ষণীয়া”। এখানে আমরা দেখি, বোধিসত্ত্ব এক রাজা ছিলেন, এবং তার পুরোহিতের সঙ্গে নিয়মিত পাশা খেলতেন। খেলার সময় একটি গান গেয়ে চাল দিতেন, এবং গানটির সত্যতা-বলে প্রতিবারই জিততেন। সেটির অংশবিশেষ:

    “পাপাচার পরায়ণ জানিবে রমণীগণ,
    স্বভাব তাদের এই নাহিক সংশয়;
    যখনই সুবিধা পায়, কুপথে ছুটিয়া যায়,
    ধৰ্ম্মে মতি তাহাদের কভু নাহি হয়।”

    দুরাজান (দুয়ে)–জাতক এর ছোটগল্পে একটি কবিতা আছে এরকমের:

    “ভাল যদি বাসে নারী, হইও না হৃষ্ট তায়;
    যদি ভাল নাহি বাসে, তাতেই কী আসে যায়?
    নারীর চরিত্র বুঝে হেন সাধ্য আছে কার?
    বারিমাঝে চলে মাছ, কে দেখিবে পথ তার?”

    তার পরের ছোট গল্পটি হল অনভিরতি-জাতক। এর বক্তব্য এর কবিতাটিতেই স্পষ্ট–

    “নদী, রাজপথ, পানের আগার উৎস, সভাস্থল আর,
    এই পঞ্চস্থানে অবাধে সকলে ভুঞ্জে সম অধিকার।

    তেমনি রমণী ভোগ্যা সকলের, কুপথে তাহার মন;
    চরিত্রস্খলন দেখিলে তাহার, রোধে না পণ্ডিত জনা”

    বিদূরপণ্ডিত জাতকে আছে:

    “নারীর চরিত্র হায়, কে বুঝিতে পারে?
    অসতী প্রগলভা বলি জানি সবাকারে।
    কামিনী কামাগ্নি তাপে জবে দগ্ধো হয়
    উচ্চে নীচে সমভাবে বিতরে প্রণয়।
    খাবার প্রস্তুতে বিচার নাই আগুনের ঠাই
    নারীর প্রেমে পাত্রপাত্র ভেদ জ্ঞান নাই।
    অতএব ত্যাজি হেন জঘন্য সংসার
    সন্ন্যাসী হইবো এই সংকল্প আমার।”

    নারীর প্রতি সুআচরণের লক্ষণীয় প্রকাশ ঘটে যুদ্ধবন্দিনীদের ক্ষেত্রে। ইসলামের দৃষ্টিতে বহুগামী পুরুষের কাছে নারী শুধুই সম্ভোগের বস্তু, সে জন্য দেখা যায় ইসলামী সৈনিকদের জন্য যুদ্ধবন্দি সধবা, বিধবা, বিবাহিত, অবিবাহিত সব নারীকে হালাল করা হয়েছে (কোরআন ৪: ২৪)। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহানবী থেকে শুরু করে হজরত আলী, হজরত ওসমান, হজরত ওমর সবাই যুদ্ধবন্দি নারী উপভোগ করেছেন, কখনোবা উপপত্নী বানিয়েছেন। কোরআনে বলা আছে— তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী (দাস, দাসী এবং যুদ্ধবন্দিনী)— আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন” (৪:২৪)–!

    এ সমস্ত আয়াতের সুস্পষ্ট প্রকাশ আমরা লক্ষ্য করি আমরা নবী মুহম্মদের জীবনে। ইবনে সাদের প্রথম দিককার জীবনী-সঙ্কলন কিতাব আত তাবাকাত (Kitaab at Tabaqaat al Kabeer) থেকে জানা যায়, মহানবী তার শেষ দশ বছরে অন্তত ৭৪ টি হামলা যুদ্ধ (আরবিতে গাজওয়া) সম্পন্ন করেছিলেন- আল তাবারি নবী মুহাম্মদ (দঃ) তাঁর জীবনে ঘটা যে ষাটটি যুদ্ধের কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন তার ‘তারিক আল রসুল ওয়া আল মুল্লুক’ গ্রন্থে, এর মধ্যে। উঁহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ ছাড়া সবগুলোই ছিল আক্রমণাত্মক–মুহম্মদের প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাক তার “সিরাত রসুলাল্লাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, মুসলমানরা বানু হাওয়াজিন গোত্রকে পরাজিত করার পরে প্রায় ৬ হাজার নারী ও শিশুর দখল নিয়ে নেয়। যুদ্ধ থেকে সংগৃহীত নারীরা ইসলামী যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টিত হয়। যেমন, ৬২৭ সালের এপ্রিল মাসে বানু কুরাইজার উপর অভিযানের সময় রায়হানা নামের এক সুন্দরী ইহুদি নারীকে নবী নিজের জন্যেই নির্বাচিত করেন। রায়তা নামের সুন্দরী বন্দিনীটি হযরত আলী তার জন্য নেন, জয়নাব নামের আরেক যুদ্ধবন্দি নারী পড়ে আবার হযরত ওসমানের ভাগে। হযরত ওমর আবার তিনি নিজে না নিয়ে ভোগ করার জন্যে তা প্রিয় পুত্র আব্দুল্লাহর হাতে তুলে দেন বলে কথিত আছে। শুধু রায়হানা নয়, জাওয়াহিরা এবং সাফিয়া নামে আরও দুই রক্ষিতা ছিল নবীর। জওয়াহিরা তার হাতে আসে বানু আল-মুস্তালিক অভিযান থেকে, সাফিয়া আসে খায়বারের বানু নাজির গোত্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান থেকে। এমনকি কিছু হাদিসে উল্লিখিত আছে যে, যুদ্ধজয়ের পর স্বামীর সামনে স্ত্রীকে অধিগ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন মহানবী। কোন কোন সাহাবী বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে বিরত থাকতে চাইছিলেন, কারণ তাদের স্বামীরা ছিল জীবিত, কিন্তু মহানবী উপায় বাৎলে দিলেন, তার যদি স্বামী থেকে থাকে, বন্দি হওয়ার পর সে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে। (কোরআন-৪:২৪, সহি মুসলিম-৮:৩৪৩২)।

    সহি মুসলিম, বুক নং-৮, হাদিস নং-৩৪৩২:

    আবু সাইদ আল খুদরি (রাঃ) বলেছেন যে হুনায়েনের যুদ্ধকালে আল্লাহর রাসুল (দঃ) আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠান। তারা তাদের মুখোমুখি হলো এবং তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো। যুদ্ধে পরাজিত করার পর কিছু বন্দি তাদের হাতে আসল। রাসুলুল্লার কিছু সাহাবি ছিলেন যারা বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে বিরত থাকতে চাইলেন, কারণ তাদের স্বামীরা ছিল জীবিত, কিন্তু বহু ঈশ্বরবাদী। তখন মহান আল্লাহ এ সম্পর্কিত আয়াতটি নাজেল করলেন- “এবং বিবাহিত নারীগণ তোমাদের জন্যে অবৈধ, তবে যারা তোমাদের দক্ষিণ হস্তের অধিকারে আছে তাদের ছাড়া।”

    মুহম্মদ যখন প্রথম জীবনে দরিদ্র ছিলেন, প্রভাব প্রতিপত্তি তেমন ছিলো না, তিনি খাদিজার সাথে সংসার করেছিলেন। খাদিজা ছিলেন বয়সে মুহম্মদের ১৫ বছরের বড়। কিন্তু পরবর্তী জীবনে মুহম্মদ অর্থ, বৈভব এবং সমরাঙ্গনে অবিশ্বাস্য সফলতা অর্জন করার পর অপেক্ষাকৃত কম বয়সী সুন্দরী নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হন। খাদিজা মারা যাওয়ার সময় মহানবীর বয়স ছিল ৪৯। সেই ৪৯ থেকে ৬৩ বছর বয়সে মারা যাবার আগ পর্যন্ত তিনি কমপক্ষে হলেও ১১ টি বিয়ে করেন এর মধ্যে আয়েশাকে বিয়ে করেন আয়েশার মাত্র ৬ বছর বয়সের সময়। তখন মুহম্মদের বয়স প্রায় ৪৮। এ ছাড়া তার দত্তক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করেন (সে সময় আরবে দত্তক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করার রীতি প্রচলিত ছিল না, কিন্তু মুহম্মদ আল্লাহকে দিয়ে কোরআনের ৩৩:৪, ৩৩:৩৭, ৩৩:৪০ সহ প্রভৃতি আয়াত নাজিল করিয়ে নেন); এ ছাড়া আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিষ্টান শাসক মুকাকিসের কাছ থেকে পাওয়া ক্রীতদাসী মারিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। মারিয়া মুহম্মদের স্ত্রী হাফসার দাসী হিসেবে থাকতেন। মারিয়ার সাথে মুহম্মদের গোপন সম্পর্ক (সে সময় তিনি হাফসাকে মিথ্যে কথা বলে ওমরের বাড়ি পাঠিয়েছিলেন বলে কথিত আছে-) হাফসা এবং আয়েশাকে রাগান্বিত করে তুলেছিলো; যুদ্ধবন্দি হিসেবে জুয়ারিয়া এবং সাফিয়ার সাথে সম্পর্ক পরবর্তীতে নানা রকম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন বৈধ অবৈধ পথে নারীর দখল নিতে মুহম্মদ আগ্রাসী হয়েছিলেন তখনই যখন তার অর্থ প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণে।

    হিন্দু ভাইয়েরা যদি এগুলো শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসেন, তাহলে বলতেই হয় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে দুঃসংবাদ। প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়সে মুহম্মদের ৬ বছর বয়সী নাবালিকার সাথে পাণিগ্রহণের ঘটনা শুনে ‘বিকৃত যৌনসম্পন্ন মনে হয়, তাহলে তাদের অনুরোধ করব হিন্দু পুরাণ টুরানে একটু চোখ বোলাতে। মুহম্মদের তার পুত্র বধু জয়নবের সাথে সম্পর্ককে যদি অনৈতিক ধরা হয়, তবে ব্রহ্মা নিজ মেয়ে শতরূপার সাথে মিলনকে কিভাবে নেয়া যায়? মৎস্যপুরাণে লেখা আছে ব্রহ্মা নাকি একদিন তার নিজের মেয়ে শতরূপাকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারেন নি। হিন্দুদের আদি মানব মনুর জন্ম হয় ব্রহ্মা আর শতরূপার মিলন থেকেই। শুধু ব্ৰহ্মাই নয়, নিজ মেয়ের সাথে মিলনের কাণ্ড ঘটিয়েছে দেবতা প্রজাপতিও। উষা ছিলেন প্রজাপতি কন্যা। প্রজাপতি ঊষার রূপে কামাসক্ত হন, এবং মিলিত হতে চান। তখন উষা মৃগীরূপ ধারণ করেন। প্রজাপতি মৃগরূপ ধারণ করে তার সাথে মিলিত হন (মৈত্ৰায়ন সংহিতা ৪/২/২২)।

    হিন্দুরা ভগবান ডেকে যাকে পুজো করেন— সেই ভগবান ব্যাপারটাই অশ্লীল। ‘ভগবান’ বলতে ঈশ্বরকে বোঝানো হলেও এটি আসলে হচ্ছে দেবরাজ ইন্দ্রের একটি কুখ্যাত উপাধি। তিনি তার গুরুপত্নী অহল্যার সতীত্ব নষ্ট করায় গুরুর অভিশাপে তার সর্বাঙ্গে একহাজার ‘ভগ’ (স্ত্রী যোনি) উৎপন্ন হয় এবং তাতে ইন্দ্রের নাম ‘ভগবান’ (ভগযুক্ত) হয়। ভগবান শব্দটি তাই ইন্দ্রের ব্যভিচারের একটি স্মারকলিপি, নিন্দনীয় বিশেষণ।

    হিন্দু ধর্মের শ্রদ্ধেয় চরিত্রগুলো– ইন্দ্র থেকে কৃষ্ণ পর্যন্ত প্রত্যেকেই ছিলেন ব্যভিচারী। জলন্ধরের স্ত্রী বৃন্দা ও শঙ্খচূড়ের স্ত্রী তুলসীকে প্রতারিত করে বিষ্ণু তাদের সাথে মিলিত হয়েছেন। সপ্তর্ষির সাত স্ত্রীকে দেখে অগ্নি একসময় কামার্ত হয়ে পড়েন। আসলে ওই বিকৃত কল্পনাগুলো করেছিল বৈদিক যুগের পুরুষেরা। তারা নিজেরা ছিল কামাসক্ত, বহুপত্নীক এবং অজাচারী; তাই তাদের কল্পনায় তৈরি দেব-দেবীগুলোও ছিল তাদের মতই চরিত্রের। এজন্যই সমস্ত হিন্দু ধর্মের বই পুস্তক গুলোতে শুধু অযাচিত কাম আর মৈথুনের ছড়াছড়ি। পান থেকে চুন খসলে সে সময়কার মুনি ঋষিরা রাগে কাঁপতে কাঁপতে শাপ দিতেন। বিয়ে করতেন। তারপরও রাজাদের আমন্ত্রণে হাজির হতেন রানিদের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করতে। সুন্দরী অপ্সরা আর বারবনিতা দেখলে এতই উত্তেজিত হয়ে যেতেন যে রেতঃপাত হয়ে যেতো। আর সেখান থেকেই নাকি সন্তান জন্মাত। অগস্ত্য, বশিষ্ঠ, দ্রোণের জন্মের উদাহরণগুলোই এর প্রমাণ।

    মুহম্মদের ২০/২২ জন স্ত্রী নিয়ে মুসলিম-বিদ্বেষীরা নরকগুলজার করেন, কিন্তু তারা হয়তো ভুলে যান, পদ্মপুরাণ অনুসারে (৫/৩১/১৪) শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা ষোল হাজার একশ। এদের। সকলেই যে গোপবালা ছিলেন তা নয়, নানা দেশ থেকে সুন্দরীদের সংগ্রহ করে তার হারেমে’ পুরেছিলেন কৃষ্ণ।

    অশ্বমেধ যজ্ঞ বলে একটা যজ্ঞ প্রচলিত ছিল প্রাচীন কালে। এ নিয়ে কথা কিছু বলা যাক। বাজসনেয়ী সংহিতার ২২-২৩ অধ্যায় থেকে জানতে পারা যায়, অশ্বমেধ যজ্ঞে প্রধান পুরোহিত প্রধান রাণীর সঙ্গে প্রকাশ্যে যজ্ঞ-ক্ষেত্রের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে মিলনে মেতে উঠতেন। অন্যান্য পুরোহিতরা যৌন-মিলনের নানা উত্তেজক দৃশ্যের বর্ণনা দিতে থাকতেন উচ্চস্বরে। সব মিলিয়ে (অশ্বমেধ যজ্ঞের) পরিবেশটা হল জীবন্ত খিস্তি-খেউড় সহযোগে তা রিলে কর যজ্ঞে হাজির নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন-উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া। পরবর্তী যুগে অশ্বমেধ যজ্ঞে পুরোহিতের জায়গা নেয় যজ্ঞের অশ্বটি। যজ্ঞে নাকি প্রধানা রানী অশ্বের লিঙ্গটি নিয়ে নিজের যোনির সাথে স্পর্শ করাতেন। অজাচার সংক্রান্ত এ সমস্ত ব্যাপার স্যাপার বাইবেলেও আছে ঢের।

    বাইবেলে (এবং কোরআনে) বিশ্বাসী ধার্মিকেরা বিবর্তন তত্ত্বের বদলে আদম হাওয়ার কথা ফলাও করে প্রচার করেন। বিবর্তন নাকি খুব খারাপ, আর আদম হাওয়ার গল্প খুব ভাল। আমরা ছোটবেলায় ধর্মগ্রন্থে পড়েছি আদম-হাওয়ার দুই সন্তান হাবিল, কাবিলের কথা। আমরা ধরে নিয়েছি দুটো মানুষ, তাদের সন্তানরা মিলে সারা পৃথিবী মানুষে মানুষে ছেয়ে ফেলেছে। তবে এখানেই থেমে না গিয়ে আরেকটু সামনে আগালে, আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই একটা গভীর প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের হতে হয়। তাদের সন্তান উৎপাদনটা ঠিক কীভাবে হলো? সে সময় ভাইবোনে সঙ্গম ছাড়া আমাদের মানবজাতি কি তৈরি হতে পারে? যদিও আদম হাওয়ার কয়জন ছেলে মেয়ে ছিল তা নিয়ে কেউ নিশ্চিত নন, কিন্তু ইহুদী ইতিহাসবিদ জোসেফাসের অনুমান, আদমের তেত্রিশজন পুত্র এবং তেত্রিশজন কন্যা ছিল। আবার কারো কারো মতে পৃথিবীতে আগমনের পর তাঁদের ১৪০ জোড়া সন্তান হয়েছিল। কেউ বা বলেন, তাদের সন্তান সংখ্যা ছিল ৩৬১টি–এর মধ্যে একমাত্র নবী শীস ব্যতীত সবাই নাকি জন্মেছিল জোড়ায়। আদম ও হাওয়ার গর্ভে প্রতিবার নাকি একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্ম নিত। বয়ঃসন্ধি হবার পরে ছেলেটির সাথে পূর্বে জন্ম নেওয়া মেয়ের এবং মেয়েকে পূর্বে জন্ম নেওয়া ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া হতো। কিংবা তারা বিয়ে করতো যমজ বোনকেই। বাইবেলের মতে, কাবিল ও হাবিল দুজনেই নিজেদের যমজ বোনকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু তৃতীয় বোন আকলিমাকে বিয়ে করা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হলে, এবং ঈশ্বর কাবিলের দান প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিলে, কাবিল একটা সময় হাবিলকে হত্যা করে।পবিত্র বাইবেলেই এটাকে উল্লেখ করেছে মানবেতিহাসের প্রথম হত্যা হিসেবে। বোঝাই যায়, আদম হাওয়ার গল্প সত্যি হয়ে থাকলে পৃথিবীতে আমরা এসেছি অজাচার, কলহ, হত্যা খুন ধর্ষণ আর প্রতারণার মধ্য দিয়ে। এসেছি ঠিক সেই পথ ধরে, যেটাকে খোদ ধর্মগুলোই ‘চরম অনৈতিক’ বলে মনে করে।

    হাবিল কাবিলের উপাখ্যানের বাইরেও বাইবেলে আছে হাজারটা অজাচার প্রমোট করা উপাখ্যান। তার মধ্যে আব্রাহাম এবং সারার পরিণয়ের কথা উল্লেখ্য। সারা ছিলেন আব্রাহামের বোন (হাফ সিস্টার)। তাকেই বিয়ে করেছিলেন আব্রাহাম। বাইবেলে আয়াত উদ্ধৃত করি– ‘সারা আমার স্ত্রী, আবার আমার বোনও বটে। সারা আমার পিতার কন্যা বটে, কিন্তু আমার মাতার কন্যা নয়’(আদি পুস্তক, ২০:১২)। বাইবেলে আছে অষম এবং যেকেবদের কথাও। যেকেবদ ছিলেন অম্লমের পিসি এবং একই সাথে তার স্ত্রী (যাত্রাপুস্তক, ৬:২০)। বাইবেল (সামুয়েল ২ ১৩) থেকে আমরা পাই অম্নোন এবং তামরের কাহিনি। অম্লোন ছিলেন দাউদের পুত্র এবং তামর ছিল তার বোন। অম্লোন তাকে মনে মনে কামনা করতেন। শিমিযের পুত্র যোনাদব অম্নোনের বন্ধু ছিলেন। যোনাদবের পরামর্শে অম্লোন একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন, তামর তার বাসায় সেবা সুস্ৰষা করতে আসলে সুযোগ বুঝে অম্লোন তাকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের পর বাড়ি থেকে বের করে দেয় (সামুয়েল ২:৮-১৫)। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে লুত এবং তার কন্যাদের অজাচারের কাহিনি।এই কাহিনির সূত্রপাত হয়েছিল যখন ঈশ্বর অনৈতিকতার অপরাধে সডোম এবং গোমরাহ নগরী ধ্বংস করেন। যদিও বাইবেলে কোথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, মোল্লারা খুব নিশ্চিত হয়েই বলেন নগর ধ্বংসের কারণ ছিল ‘সমকামিতা। তা ভাল। সমকামিতার কারণে নগর ধ্বংস করলেন যে ঈশ্বর, তিনিই আবার পিতা এবং কন্যাকে অজাচারে উৎসাহিত করে মানব জাতি টিকিয়ে রাখার সুমহান উদ্যোগ নিলেন, এবং একে উদযাপিত করলেন আনন্দের সাথেই। ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় বাইবেলের আদি পুস্তকে (আদিপুস্তক ১৯: ২৯ ৩৮)। কাহিনিটা এরকমের :

    ঈশ্বর (সডোম এবং গোমরাহ) উপত্যকার সমস্ত নগর ধ্বংস করলেন। কিন্তু ঈশ্বর ঐ নগরগুলি ধ্বংস করার সময় অব্রাহামের কথা মনে রেখেছিলেন এবং তিনি অব্রাহামের ভ্রাতুস্পুত্রকে ধ্বংস করেন নি। লুত ঐ উপত্যকার নগরগুলির মধ্যে বাস করছিলেন। কিন্তু নগরগুলি ধ্বংস করার আগে ঈশ্বর লুতকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

    পয়গম্বর লুত যোয়ার শহরে গিয়ে এক পাহাড়ে দুই মেয়েকে নিয়ে বাস করতে লাগলেন। তিনি শহরে বাস করতে ভয় পাচ্ছিলেন আর আর সেই কারণে পাহাড়ের একটি গুহায় বাস করতে লাগলেন।

    বড় কন্যাটি তার ছোট বোনটিকে বললো, “আমাদের পিতা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। এবং নগরী ধ্বংস হয়ে যাবার পর আমাদের সন্তানাদি দিতে পারে এমন অন্য পুরুষ এখানে নেই। চল আমরা আমাদের বাবাকে মদ খাইয়ে করিয়ে মাতাল করে ফেলি এবং তার সাথে সঙ্গমের বন্দোবস্ত করি– যাতে করে আমরা আমাদের বাবার বীজকে সংরক্ষণ করতে পারি। আমাদের পরিবার রক্ষা করার জন্যে আমরা এইভাবে আমাদের পিতার সাহায্য নেব!”

    অতঃপর তারা সেই রাত্রে তাদের বাবাকে মদ্যপান করালো এবং প্রথম কন্যাটি তার সাথে রাত্রি যাপন করলো। কখন মেয়েটি আসলো, রাত্রি যাপন করলো এবং উঠে চলে গেলো, তিনি (পয়গম্বর লুত) কিছুই জানতে পারলেন না।

    পরের রাত্রে প্রথম কন্যাটি তার ছোট বোনটিকে বললো, “গত রাত্রে আমি পিতার সঙ্গে এক বিছানায় শুয়েছি। আজ রাতে আবার তাকে দ্রাক্ষারস পান করিয়ে বেহুঁশ করে দেব। তাহলে তুমি তাঁর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করতে পারবে। এভাবে আমরা সন্তানাদি পেতে আমাদের পিতার সাহায্য নেব। এতে আমাদের বংশধারা অব্যাহত থাকবে”।

    অতঃপর সেই রাত্রেও তারা তাদের বাবাকে মদ্যপান করালো এবং ছোট কন্যাটি তার সাথে রাত্রি যাপন করলো। কখন মেয়েটি আসলো, রাত্রি যাপন করলো এবং উঠে চলে গেলো, তিনি (পয়গম্বর লুত) কিছুই জানতে পারলেন না।

    আর এভাবেই পয়গম্বর লুতের দুই মেয়ে তাদের পিতার ঔরসজাত সন্তান গর্ভে ধারণ করলো। প্রথম কন্যার গর্ভে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হলো– যার নাম রাখা হলো মোয়াব। তিনিই হলেন মোয়াবাইটস জাতির পিতা (অর্থাৎ তার বংশধরেরা মোয়াবাইটস নামে পরিচিতি লাভ করলো)। ছোট কন্যাটিও এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। তার নাম বিন্-অম্মি। বর্তমানে যে অম্মোন জাতি আছে তাদের আদিপুরুষ হলেন বিন্-অম্মি।

    এই হচ্ছে বাইবেলের সুমহান নৈতিকতার কাহিনি। নারী নিপীড়নেও যেন ধর্মগুলো একেবারে ‘আয় তব সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি। হিন্দু ধর্ম শেখায়, নারীর অধরে পীযুষ আর হৃদয়ে হলাহল, এ জন্যই তাদের অধর আস্বাদন এবং হৃদয়ে পীড়ন করা কর্তব্য। নারীর শুধু হৃদয়ে পীড়ন করাই নয়, শারীরিক নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে, শতপথ ব্রাহ্মণের ৪/৪/২/১৩ নং শ্লোকে : “বজ বা লাঠি দিয়ে মেরে নারীকে দুর্বল করা উচিৎ, যাতে নিজের দেহ বা সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার না থাকতে পারে”; বৃহদারণ্যক উপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেন : “স্ত্রী স্বামীর সম্ভোগকামনা চরিতার্থ করতে অসম্মত হলে প্রথমে উপহার দিয়ে স্বামী তাকে ‘কেনার চেষ্টা করবে, তাতেও অসম্মত হলে হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে মেরে তাকে নিজের বশে আনবে” (৬/৪/৭, ১/৯/২/১৪ দ্রঃ)। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই বিধানটা ইসলাম ধর্মের সাথেও যেন একেবারে মিলে যায়। নারীকে প্রহার করার জন্য আল্লাহ বিধান দিয়েছেন কোরআন শরিফের সুরা নিসায়: “ওয়াল্লা-তি তাখা-ফু-না নুশু-জাহুন্না ফাআ-জিহুন্না ওয়াহজুরু-হুন্না ফি আলমাদা-জিয়ি ওয়াদরিবুহুন।” বাংলা হচ্ছে, নারী যদি পুরুষের অবাধ্য হয়, যদি নারী বিদ্রোহ করে, তাদেরকে প্রথমে বুঝাও, তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে তোমার বিছানায় আসতে নিষেধ করো, তাতেও যদি বশ না মানে, তাদেরকে প্রহার করো (সুরা ৪, নিসা, আয়াত ৩৪)।

    নারীকে আজ বেঁচে উঠতে হবে। বেরুতে হবে এই প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের নাগপাশ থেকে। নিজেকে গড়ে তুলতে হবে এই সমস্ত নারীবিদ্বেষী ভাইরাসের এন্টিবডি হিসেবে। আশার কথা বর্তমানে বহু রাষ্ট্রই এই সব মধ্যযুগীয় বিশ্বাসের ভাইরাস প্রতিরোধ করে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। পেছনে পড়ে রয়েছে কেবল কিছু মুখচেনা ‘ভাইরাস আক্রান্ত রাষ্ট্র। সেখানে মেয়েরা গৃহবন্দি থাকে। গাড়ি চালাতে পারে না, পুরুষদের সাথে বাইরে কাজ করতে পারে না, আবৃত করে রাখতে হয় সর্বাঙ্গ। কখনো চার সতীনের সাথে ঘর করে, কখনো বা থাকতে হয় কোন বাদশাহর হারেমের অংশ হয়ে। পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তান, সৌদি আরবের মত রাষ্ট্রগুলোতে জেনা এবং হুদুদ আইন ধর্ষনকারীদের রক্ষা কবচ হিসবে ব্যবহৃত হয়। ধর্ষণ প্রমাণ করার জন্য চারজন সাক্ষী’ প্রায় কোন ক্ষেত্রেই মেয়েটির পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব হয় না, ফলে শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ধর্ষণকারীর ঘটে মুক্তি, আর ‘জেনা’ করার দায়ে মেয়েটার কপালে জুটে ‘শরিয়ার রজম’। অনেক সময় দেখা যায়, মেয়েটির পরিবারই হতভাগ্য মেয়েটিকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয় পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য।

    ধর্মগুলোর রচয়িতা পুরুষ। কোন ধর্মই যেহেতু নারীর প্রয়োজনে বা নারীর কল্যাণে সৃষ্টি হয়নি; নারীর ধর্ম-কাতরতা আর ধর্ম-মাদকতা তাই দূর করা প্রয়োজন, তাদের নিজেদেরই কল্যাণের জন্য। ধর্ম রচিত হয়েছে পুরুষদের দ্বারা, পুরুষদের জন্য, নারীর কল্যাণের জন্য নয়। বেগম রোকেয়া এ প্রসঙ্গে আমাদের অবনতি’ প্রবন্ধে দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলেন–

    যখনই কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তাহার মস্তক চুর্ণ হইয়াছে। আমরা প্রথমত যাহা মানি নাই, তাহা পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়া শিরোধার্য করিয়াছি। আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষ-গন ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করিয়াছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষোচিত বিধি-ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।

    ধর্মে বিশ্বাস রেখে পুরুষের সমান অধিকারও দাবি করাটা নারীদের জন্য অনেকটা সোনার পাথরবাটির মতোই হাস্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ধর্ম আঁকড়ে থাকতে গেলে এর চেয়ে বিপরীত চিত্র আশা করা যায় না। কারণ ধর্ম নারীকে পুরুষের সমান অধিকার দেয়নি। অশিক্ষিত মোল্লা, পুরোহিতরা দেবে এমন ভাবনা হাস্যকর। তারা নারীদের উন্নয়নের কথা ভাবে না, বরং তারা ধর্ম নামক প্রতিষ্ঠানের সর্বাঙ্গীণ সেবাদাস। নন্দিনীর মতে, ‘খোদ ‘ধর্ম বিষয়টাই উপড়ে ফেলতে পারলে, মানব সভ্যতা রক্ষা পেলেও পেতে পারে। নন্দিনীর মত অন্য সকল নারীরা এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, তত তাড়াতাড়ি হয়তো ঘটবে বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে মুক্তি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিকল্প বিপ্লব : যে ভাবে দারিদ্র কমানো সম্ভব – অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article ভালোবাসা কারে কয় – অভিজিৎ রায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }