Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বুদ্ধদেব গুহর প্রেমের গল্প

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প183 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    পাখিরা জানে না

    —বুঝলাম তো ইংরেজিতে বলে salt-lick। বাংলায় কী বলে?

    রুনা কোমরে হাত দিয়ে অর্জুন গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে সুজনকে শুধোল।

    সুজন বলল, বলছি। বলে, একটা সিগারেট ধরাল, তারপর গাছের নীচের একটা পাথরে বসে বলল, বাংলায় বলে নোনামাটি। বনের জানোয়ারদের আফিঙের মতো নেশা লাগে। রোজ একবার করে এই পাহাড়ি মাটিতে নুন চাটতে না এলে হরিণ সম্বরদের ঘুম হয় না।

    —আমি তো হরিণও নই, সম্বরও নই। আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন?

    —বলব, বলব। সব বলব। সুজন বলল।

    রুনা ওর চশমাপরা কাটা বুদ্ধিদীপ্ত মুখটি তুলে সুজনের চোখে তাকিয়ে রইল। তারপর আবার বলল, অ্যাই বলো-না কেন এনেছ?

    সুজন হাত ঘুরিয়ে চারদিকে দেখাল, বলল, কেন? জায়গাটা তোমার ভালো লাগছে না? একপাশে পাহাড়-গাছগাছালি, কত পাখি ডাকছে, প্রজাপতি উড়ছে, কাচপোকা গুনগুন করছে, শীতের দুপুরের লজ্জাবতী রোদ তোমার গায়ে এসে পড়েছে। বাতাসে জিরহুল আর ফুলদাওয়াইয়ের গন্ধ ভেসে আসছে। তোমার ভালো লাগছে না?

    রুনা বলল, আমি কি বলেছি ভালো লাগছে না?

    —তাহলে শোনো, বলছি। এই হল আমার Confessional আর তোমাকেই আমার সাক্ষী করব। আমি ক্রিশ্চান নই, আমি কোনো গির্জায় যাইনি কখনো। আমি শুধু এই নির্জন নদী, পাহাড়, বনকে চিনি আর তোমাকে চিনি। কোনো অচেনা স্যাঁতসেঁতে গির্জার উঁচু সিলিংঅলা ঠাণ্ডাঘরে কোনো গম্ভীর পাদরির সামনে নতজানু হয়ে ভয়ে ভয়ে আমার দোষ স্বীকার করার চেয়ে আদিগন্ত আকাশের নীচে এই সবুজ আস্তরণের আড়ালে নোনামাটির পাশে, তোমার কাছে হাঁটু-গেড়ে বসে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার অপরাধ স্বীকার করা অনেক সহজ বলেই তোমাকে আজ ডেকে এনেছি এখানে।

    রুনা প্রথমে কেমন অস্বস্তিভরা চোখে চারদিকে চাইল, তারপর বলল, কী যে পাগলামি করো জানি না। দাদা-বউদি ঘুম থেকে উঠলে হয়তো খোঁজাখুঁজি করবেন। সমস্ত বাংলো তোলপাড় করবেন।

    —করবে না, করবে না। তুমি কি এখনও ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী আছ নাকি? তা ছাড়া তারা নিজেরা এখন এমন সুব্যস্ত আছে যে, তোমার খোঁজ করবার সময় নেই তাদের।

    —ভারি খারাপ তো তুমি। ফিরে চলো-না। বলে দেব।

    —তা দিয়ো। আমি ভয় করি না। সত্যি কথা বলতে কী, আমি এখন আর কিছুকেই কাউকেই ভয় করি না।

    —তুমি তো বীরপুরুষ।

    —বীরপুরুষ নই। বরঞ্চ দায়িত্বজ্ঞানহীন বলতে পারো। এখন কীরকম যেন হয়ে গেছি।

    —ওরকম ছটফট করছ কেন? চুপ করে একটুক্ষণও কি বসে থাকতে পারো না? রুনা ধমকে বলল।

    সুজন পাঞ্জাবি-পায়জামা গুটিয়ে শালটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আসনপিঁড়ি হয়ে বসে পড়ল পাথরটায়। বলল, এই বসলাম।

    তারপর অনেকক্ষণ ওরা দু-জনে চুপচাপ নোনামাটির দিকে চেয়ে বসে রইল।

    মন্থর হাওয়াটা লালমাটিতে আর পাথরে শুকনো শালপাতাগুলোকে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে মচমচানি তুলে বনে বনে আলতো পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একঝাঁক টিয়া কাছের একটা শাল গাছের সমস্ত পাতা যেন ছেয়ে বসেছে। ট্যাঁ-ট্যাঁ-ট্যাঁ করে নিজেদের মনে কত কী বলছে।

    রুনা বলল, শীতের দুপুরের রোদটা দারুণ লাগে, না?

    —দারুণ। ঠিক তোমার মতো। রোদে বসে ঘরে গেলে যেমন শীত অনেক বেশি লাগে, তুমি কিছুক্ষণ কাছে কাছে থেকে তারপর চলে গেলে আমার মনের ঘরের বরাবরের শীতটা হঠাৎ একেবারে অসহ্য লাগে। দু-এক দিনের জন্যে কেন যে তুমি আমার কাছে আসো তা তুমিই জানো।

    রুনা কথাটা চাপা দিয়ে বলে উঠল, এবার দেখছি তোমারও কপালের পাশে দু-একটা রুপোলি রেখা ঝিলিক মারছে। জানো, আমিও যখন সমস্ত দিন ক্লাস নেওয়ার পর বাড়ি এসে চশমা খুলে আয়নার সামনে দাঁড়াই তখন চোখের নীচের গভীর কালো রেখাগুলি আমাকে কেবলই মনে পড়িয়ে দেয়—বেলা পড়ে আসছে—বেলা পড়ে আসছে—বেলা পড়ে আসছে। জানো, একথা ভাবতে ভালো লাগে না। আমার দু-এক জন ছাত্রীর পর পর বিয়ে হয়ে গেল। বুঝলে মশাই? কথাটা মনোযোগ দিয়ে শোনো—আমার ছাত্রীদেরও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আমাকে কি তুমি এখনও ছেলেমানুষ ভাববে?

    —তোমাকে ছেলেমানুষ কোনোদিনও ভাবিনি।

    —তবে কি ছোটোবেলা থেকেই আমি বুড়ি ছিলাম?

    রুনা দুষ্টমিমাখা চোখে হেসে বলল।

    সুজন হাসল, বলল, জানি না। হয়তো তাই ছিলে। তারপর একটু গম্ভীর হয়ে থেকে বলল, তোমার যখন তোমার ছাত্রীদের মতো বয়স ছিল, ইচ্ছে করলে তুমি তো তখনই স্বয়ংবরা হতে পারতে। রুনা রায়ের তো অ্যাডমায়ারারের অভাব ছিল না।

    —হয়তো পারতাম। কিন্তু সকলের বোধ হয় সব কিছু হয় না। আমি হয়তো সবাই যে-সময়ে যা চায় তা চাইনি। ঠিক করেছি কী ভুল করেছি জানি না। সত্যি। এখন মাঝে মাঝে ভাবি, তোমাকেই-বা এমন কষ্ট দিলাম কেন এতদিন, এবং নিজেই-বা অন্য এক-জনের জন্যে এত বছর এত কষ্ট পেলাম কেন? জানো সুজন, আমার মনে হয় সব কিছুরই শেষ আছে। দেখিই-না শেষ কী আছে।

    এই অবধি বলে রুনা থেমে গেল। বলল, কই, তুমি যা বলবে বলে এতদূরে হাঁটিয়ে আনলে তা তো এখনও বললে না?

    সুজন একটু চমকে উঠল মনে হল। তারপর বলল, রুনা আমি সত্যিই এমন কিছু বলব তোমাকে, যা শুনলে তুমি হয়তো আমাকে খুব ঘেন্না করবে, তুমি হয়তো ভাববে এতদিন তুমি একজন নোংরা লোকের ভালোবাসা পেয়েছ।

    রুনা অধৈর্য গলায় বলল, আঃ বলোই-না। কী যে গৌরচন্দ্রিকা করছ তখন থেকে।

    সুজন একবার কাশল, বলল, বলছি। আমি একবার বলা আরম্ভ করলে তুমি কিন্তু আমাকে থামিয়ে দেবে না। থামিয়ে দিলে আমি সত্যি সত্যি একেবারে থেমে যাব, আমি আর কিছুতেই শুরু করতে পারব না।

    —কালকে, মানে কাল রাতের কথা বলছি রুনা। তুমি মনোযোগ দিয়ে শোনো আমি যা বলছি।

    আগে-না, আমার ঘুমও খুব গাঢ় ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস আমি ভালো ঘুমোতে পারিনি। সারাদিন কাজেকর্মে থাকি। বিকেলের পর থেকে এত ক্লান্তি লাগে যে, মনে হয় রাতে বিছানায় শোব আর ঘুমোব। কিন্তু যেই বিছানায় শুই তোমার মুখ, তোমার চোখ, তোমার হাসি, তোমার কথা বলা, তোমার সবকিছু মাথার মধ্যে ভিড় করে আসে। রোজ, রোজ রাতে। আমি চোখ বুজে থাকি। পাছে চোখ খুলে অন্ধকারকে দেখতে হয়, সেই ভয়ে! বারে বারে পাশ ফিরে শুই—ঘুমোবার চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না।

    কখনো-বা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। বাংলোর হাতার ঝাঁকড়া মহুয়া গাছের ডালে অন্ধকারে কোনো নাম-না-জানা নিরাবয়ব পাখি নড়েচড়ে বসে। গেটের কাছে, মহুয়া মিলনের রাস্তায় জোনাকির ঝাঁক নি:শব্দে ওড়ে। জানলা দিয়ে তারাভরা আকাশ দেখা যায়। দূরের নদীর পাশে হিমেল হাওয়ায় হায়না ডেকে বেড়ায় হা:-হা: করে। বুকের মধ্যেটা কেমন কেমন করে।

    রুনা উঠে দাঁড়িয়ে কী-একটা বলতে গেল। সুজন বাধা দিয়ে বলল, আমাকে শেষ করতে দাও, তুমি ইন্টারাপ্ট কোরো না।

    রুনা আবার পাথরটায় বসে পড়ল, বসে দুটো হাত কোলের ওপর রেখে মাটির দিকে চেয়ে বসে রইল।

    সুজন বলতে লাগল। এসব তো গেল রোজকার কথা। এতে কোনো নতুনত্ব নেই। কালকের কথা বলি।

    তুমি শুয়ে পড়লে। বিধুদা-বউদি শুয়ে পড়ল। তারপর অনেক সময় কেটে গেল। ঘুমোতে পারলাম না। আমি জানতাম তুমি আমার ঘরের দিকের দরজা ভেজিয়ে শুয়েছ, বন্ধ করোনি। নতুন জায়গায়, জঙ্গলে তোমার ভয় করে, তুমি আমাকে বলেওছিলে।

    মশারির ভেতর ভূতের মতো কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে নিজেকে আমি কতক্ষণ কত বকলাম, কত বোঝালাম, বললাম, ‘ঘুমিয়ে পড়ো। ঘুমিয়ে পড়ো। সুজন চ্যাটার্জি ঘুমিয়ে পড়ো।’ তবু ঘুম এল না। নিজেকে অন্ধকারে বার বার অনেক কিছু শুধোলাম, কোনো স্পষ্ট উত্তর পেলাম না।

    তারপর, কী যেন হয়ে গেল রুনা। আমার শিক্ষার দম্ভ-রুচি-গর্ব সব যে আমার কোথায় ভেসে গেল। আস্তে আস্তে চোরের মতো তোমার ঘরে ঢুকলাম। তারপর….। সে যেন কত যুগ, মনে হল কত যুগ-যুগান্ত, পা টিপে টিপে হেঁটে তোমার ঘরের দৈর্ঘ্যটুকু পেরোলাম, মশারির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।

    বাইরের বারান্দায় হ্যাজাকটা তখন ফ্যাকাশে হলুদ মুখে জ্বলছিল। হঠাৎ হ্যাজাকটার দিকে চোখ পড়তে আমার মনে হল, ও যেন আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি এমন চৌর্যবৃত্তি করতে পারি ওর যেন তা বিশ্বাস হচ্ছিল না। সুজন যে এমন দুর্জন হবে তা ভাবতেও পারছিল না।

    রুনা, তুমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ো না, প্লিজ, আমার মুখের দিকে তাকিয়ো না। আমি তাহলে গুছিয়ে বলতে পারব না।

    তারপর শোনো, আমি তোমার মশারিটা আস্তে আস্তে তুললাম সাবধানে। মনে হল, তুমি খুব জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছ। তুমি তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছিলে। তোমার বেণিটা বালিশের ওপর দিয়ে বিছানার একপাশে মাথার দিকে জড়ানো ছিল। তোমার হারের লকেটটা একদিকে ঝুলে ছিল। তোমার বুকে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে কম্বলের নীচে কাঁপছিল। হ্যাজাকের আলো জানলা দিয়ে তোমার মুখে এসে পড়েছিল। আমি অনেকক্ষণ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তোমার ঠোঁটের ঢেউ, তোমার চশমা ছাড়া ক্লান্ত চোখ, তোমার টিকালো নাক, তোমার শান্ত কপাল, সব—সব আমি অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম, যেন তোমাকে কখনো আগে দেখিনি। তুমি নড়লে না, চড়লে না, তুমি ঘন-ঘুমে অঘোরে শুয়ে রইলে। তারপর…রুনা সেই শীতের রাতে তোমাকে একটা উষ্ণতার পাখি বলে মনে হল, তোমার সুন্দর তুমিকে দেখে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল। আমার ভীষণ জলপিপাসা পেল।

    জানো রুমা, আমার মনে হল, হঠাৎ আমার মনে হল, চাঁদের পিঠ থেকে দেখা ছোটো সুন্দর ঘূর্ণায়মান পৃথিবীটাকে যেন আমি মুঠি ভরে ধরে ফেলেছি, পৃথিবীতে আমার যা-যা চাইবার ছিল আমি সব ভুলে গেছি, সেই ক্ষণটুকুর প্রাপ্তিতে শুধু বুঁদ হয়ে আমি তোমার ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে বসে আছি।

    জানো, সেইমুহূর্ত অবধি খুব ভালো লেগেছিল।

    এমন সময় হঠাৎ, একেবারে হঠাৎই—আমার জ্ঞান ফিরে এলে—আমার আবাল্য বিবেক তার ফোলা ফোলা গলা নিয়ে যাত্রাদলের বিবেকের মতো ঢিলেঢালা পোশাক পরে মুখে সুবুদ্ধির রং মেখে হাত নেড়ে আমাকে মরালিটির গান শোনাতে লাগল।

    তারপর তোমার বুকে মুখ রেখে অনেকক্ষণ আমি কাঁদলাম। বার বার প্রার্থনা করলাম, তুমি ঘুম ভেঙে উঠে আমাকে ওখানেই আবিষ্কার করো। আমাকে মারো, আমাকে অপমান করো, তোমার দাদা-বউদিকে ঘুম থেকে তুলে সব বলে দাও, আমাকে লাতেহারের কোতোয়ালির পুলিশে ধরিয়ে দাও, যা খুশি তুমি আমাকে তাই শাস্তি দাও।

    কিন্তু তোমার এমনই ঘুম যে, তুমি ঘুমিয়েই রইলে। তুমি যদি তখনও ঘুম ভেঙে উঠতে, আমাকে হাতেনাতে ধরে অন্ধকারের লজ্জাহীনতায় শাস্তি দিতে, যদি দাঁতে দাঁতে চেপে আমাকে বলতে, জানোয়ার, বলতে অসভ্য, জংলি, দুশ্চরিত্র—তবুও বোধ হয় আমার এত লজ্জা, এত অপমান হত না রুনা।

    এখন এক-আকাশ আলোর নীচে বসে, দিনের বেলায়, তোমার সামনে তোমার দিকে মুখ করে আমাকে দুঃস্বপ্নের মতো গত রাতের কথা বলতে হচ্ছে। আমাকে তুমি ক্ষমা কোরো না রুনা। তুমি আমাকে মারো, তুমি আমার গায়ে থু থু দাও। কাল রাতের পর থেকে আমি এক ভীষণ অস্বস্তিতে আছি রুনা, তোমার কাছে ভীষণ ছোটো, বরাবরের মতো ছোটো হয়ে গেছি।

    রুনা পাথরে বসে, মাটির দিকে চেয়ে পায়ের নখ দিয়ে মাটিতে দাগ কাটছিল। শালবনের পাতায় পাতায় ঝাঁপ দিয়ে দিয়ে একফালি রোদ পিছলে এসে রুনার মুখে পড়েছিল। রুনা একটা খয়েরি জংলা কাজের বাটিকের শাড়ি পরে ছিল। গায়ে সাদা শাল।

    রুনা কোনো কথা বলল না। মুখ নীচু করে পায়ের নখ দিয়ে মাটিতে দাগই কেটে চলল।

    সুজন কিছুক্ষণ চুপ করে মাটির দিকে চেয়ে হঠাৎ যেন অধৈর্যে ফেটে পড়ল, দু-হাত দু-দিকে ছুড়ে বলল, কী? তুমি ভেবেছ কী? চুপ করে থেকে আমাকে ক্ষমা দেখিয়ে তুমি মহৎ হবে? প্রতিমুহূর্ত তুমি আমাকে অনেক শাস্তি দাও রুনা, সেসব শাস্তির কথা তুমি জানো না। তোমার কাছ থেকে কোনোরকম দয়া চাই না আমি। না, দোহাই তোমার, আমাকে কঠিন কিছু বলো—কঠিন কিছু।

    বলতে বলতে, সুজন দু-হাতে মুখ ঢেকে রুনার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে লাগল। কয়েক পা গিয়ে রুনার দিকে পেছন ফিরে একটা বুড়ো শাল গাছের গুঁড়ির পাশে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল।

    রুনা এতক্ষণে মুখ তুলল। মুখ তুলে অনেকক্ষণ একদৃষ্টে পেছনফেরা সুজনের দিকে তাকিয়ে থাকল।

    বেশ কিছুক্ষণ পর রুনা ডাকল ওকে। অ্যাই শোনো, আমার কাছে এসো। তোমার সঙ্গে কথা আছে।

    সুজন এল না। তবুও তেমনিভাবে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে রইল।

    রুনা পাথর ছেড়ে উঠে ওর কাছে গিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড়াল। তারপর দু-হাত দিয়ে সুজনের মুখ ঢাকা দু-হাত নামিয়ে দিয়ে রুনা হঠাৎ বলে উঠল, আমি তখন জেগে ছিলাম সুজন।

    তারপর সুজনের হাত ধরে টেনে পাথরগুলোর কাছে নিয়ে যেতে যেতে খুব আস্তে আস্তে বলল, ‘আমি মহৎ নই সুজন, আমার তোমাকে ক্ষমা করার কোনো প্রশ্নই নেই।’

    কাল তুমি যেই দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলে অমনি আমি চোখ বন্ধ করে মড়ার মতো শুয়ে রইলাম। তার আগে আমি জানলা দিয়ে বারান্দায় ঝোলানো হ্যাজাকটার দিকে চেয়ে ছিলাম। ওটার চারপাশে নানারকম বড়ো বড়ো পোকা উড়ছিল, তাই দেখছিলাম। আমার ভয় করছিল, আমি ঘুমোতে পারছিলাম না।

    তুমি দরজা ঠেলে এলে, আমার কাছে এলে, আমার মুখের কাছে মুখ নিলে, আমি চোখ বুজে শুয়ে থেকে তোমার মুখের সিগারেটের গন্ধ পেলাম, তারপর তুমি যখন যা বললে, তাই করলে….।

    সুজন, ক্ষমা করার কথা ওঠে না এতে। হয়তো তুমিই ক্ষমা করবে আমাকে। ক্ষমা করা উচিত। কাল তুমি যখন আমার কাছে, আমার বুকের কাছে, আমার বুকে মুখ রেখে আমাকে জড়িয়ে রইলে, আমি জানি তুমি তখন কাঁদছিলে। তোমার গাল বেয়ে তোমার চোখের জল আমার গলায় গড়িয়ে পড়েছিল। তুমি জানো না, আমার সমস্ত শরীর, আমার সমস্ত মন শুধু আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল একমাত্র অমোঘ পরিণতির দিকে—তোমাকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে, তোমার সঙ্গে কাঁদতে।

    কেন যে পারলাম না জানি না। হয়তো আমি জেগে গেলে তুমি লজ্জা পাবে এই ভয় আমার মনে ছিল, অথবা জানি না, আমি হয়তো ভয় পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম, শরীরের ছাইচাপা আগুনে ফুঁ দিলে হয়তো আমার নিজের ইচ্ছায় তা আর নিভবে না।

    এই অবধি বলে রুনা থেমে গেল।

    পরক্ষণেই হঠাৎ বলে উঠল, তুমি কেন আমাকে নিয়ে তোমার যা খুশি করলে না সুজন? পরে যা হত হত। আমি কি বুঝি না যে, তুমি আমাকে চেয়ে চেয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছ? অথচ তুমি জানো, ভালো করেই জানো যে, আমিও একজনকে চেয়ে চেয়ে তোমার মতোই ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমরা দু-জনেই অত্যন্ত ক্লান্ত। আমাদের পথ এক, কিন্তু গন্তব্য অন্য। তুমি যদি তোমার যা খুশি তাই করতে, আমরা না-হয় এই দীর্ঘ শীতল পথের মাঝামাঝি এসে উষ্ণ আশ্রয়ে কিছুক্ষণ দু-জনকে দু-জনে বুকে জড়িয়ে জিরিয়ে নিতাম।

    এই ক্লান্তি আমারও অসহ্য লাগে। তোমার মতো, যা মনে হয় তা গুছিয়ে চিঠিতে লিখতে পারি না আমি, কিন্তু আমার মনেও তো কথা জমে, আর ক্লান্তিও তো ক্লান্তি; আমার যন্ত্রণাও তো যন্ত্রণা। তুমি কেন আমাকে বোঝো না সুজন? তুমি কেন কোনো দিন আমাকে একটুও বুঝলে না?

    তারপর আর কেউ কোনো কথা বলল না। ওরা দু-জনের দু-দিকে মুখ করে বসে রইল। দুপুরের হাওয়ায় শুকনো পাতা উড়তে লাগল।

    রুনার মনে হল, ওরা দু-জনে দাঁড় বেয়ে একটি নদীতে অনেক দূরে চলে এসেছিল। মাঝনদীতে এসে দু-জনের হাত থেকেই কোনো দৈবদুর্বিপাকে দাঁড় দুটি জলে পড়ে গেছে। ওরা দু-জনে দাঁড়বিহীন নৌকায় বসে চারদিকের ঢেউয়ের দিকে চেয়ে আছে। নৌকাটা ঘুরছে, টলমল করছে। ঠিক ভয়ে নয়, কী এক অনামা শীতল অনুভূতিতে রুনার মন ভরে আছে।

    অনেকক্ষণ পর রুনা বলল, আমরা দু-জনেই দু-জনকে ক্ষমা করে দিই বুঝলে সুজন? তুমি আমাকে, আর আমি তোমাকে। দু-জনে দু-জনকে যা দিতে চেয়েছিলাম তা দিতে পারিনি বলে ক্ষমা করে দিই।

    সুজন যেন ঘুম ভেঙে উঠে বলল, কাল হয়তো আমরা দু-জনেই ভুল করেছিলাম। আজ সে ভুল শোধরানো যায় না রুনা?

    রুনা যেন ভয় পেল। ভয়-পাওয়া গলায় বলল, তা হয় না।

    এমনভাবে দু-জনের কাছে দু-জনে ধরা পড়ার পরে আজ রাতের প্রাঞ্জল অন্ধকারে সে আর হয় না। কাল হলে অন্য কিছু হত, সিণ্ডারেলার স্বপ্নের মতো, ঠাকুমার ঝুলির গল্পের মতো—আমি রাজকন্যা হয়ে পদ্মফুলের পালঙ্কে ঘুমোতাম, তুমি ভিনদেশি রাজকুমার হয়ে আমাকে চুরি করতে আসতে। আফটার অল সে ব্যাপারটা অনেক রোমান্টিক হত। ভেবে দ্যাখো সুজন, জীবনে তুমি, আমি সকলে যা-কিছু অনুক্ষণ করি বা করাই তার সবটাই স্থূল—Utterly gross—তাই জীবনের দু-একটি প্রধান প্রধান ঘটনাও রোমান্টিক না হয়—তার চেয়ে সুজন, সে দুর্ঘটনা না ঘটাই ভালো।

    এইটুকু বলে রুনা থেমে গেল। রুনা হাঁপাতে লাগল। রুনার মনে হল ও যেন এক্ষুনি ওকে, নিজেকে, খুব কঠিন কিছু বুঝিয়ে উঠল। আজকাল রুনা বোঝে যে, ছাত্রীদের কিছু বোঝানো অনেক সহজ নিজেকে কিছু বোঝানোর চেয়ে।

    কেউ এরপর আর কোনো কথা বলল না। রুনা বুকের কাছে দু-হাঁটু জড়ো করে হাঁটুর ওপর চিবুক রেখে নোনামাটির দিকে চেয়ে রইল।

    সুজন অনেকগুলো কাঠি নষ্ট করে শেষপর্যন্ত সিগারেট ধরাল।

    রোদ পড়ে এসেছে। নোনামাটির ওপর শাল গাছের ছায়াগুলো দীর্ঘতর হয়েছে। একটি ঠাণ্ডা সোঁদা ভাব মাটি থেকে আস্তে আস্তে উঠতে আরম্ভ করেছে। ওরা দু-জনেই নোনামাটির ওপর শাল গাছের প্রলম্বিত ছায়ার দিকে চেয়ে অপস্রিয়মাণ উষ্ণতার কথা ভাবতে লাগল।

    এমন বিকেলে সকলের মনেই একটা শীতার্ত একাকিত্ব এসে বাসা বাঁধে। যে-একাকিত্ব প্রত্যেকের একান্ত নিজস্ব। যে একাকিত্ব সম্বন্ধে বাইরের কারও কিছুই করণীয় থাকে না।

    একঝাঁক ময়ূর নি:শব্দে পায়ে হেঁটে নোনামাটির পাশ অবধি এল। তারপর হঠাৎ ওদের দেখতে পেয়ে বড়ো বড়ো ডানা ও ল্যাজ ঝাপটাতে ঝাপটাতে কেঁয়া কেঁয়া রব তুলে পশ্চিমের দিকের জঙ্গলে উড়ে গেল।

    অনেকক্ষণ পর সুজন বলল, চলো উঠি এবারে। বেলা পড়লেই জানোয়ার আসতে শুরু করবে এখানে নোনামাটিতে। এখানে আর না থাকাই ভালো।

    রুনা নিস্পৃহ গলায় বলল, চলো।

    ওরা দু-জনে জঙ্গলে বিকেলের লালমাটির পথ হাঁটতে লাগল পাশাপাশি।

    কিছুক্ষণ হাঁটার পর সুজন রুনার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে যেন নি:শব্দে কোনো প্রশ্ন করল।

    রুনা নি:শব্দ উত্তরে সুজনের হাতে ওর হাত দিয়ে চাপ দিল।

    ওরা কথা না বলে হাঁটতে লাগল।

    সুজনের হাতের আঙুলগুলির সঙ্গে ওর আঙুলগুলি ছুঁয়েই রাখল রুনা।

    হঠাৎ সুজন বলে উঠল, আচ্ছা রুনা, ওকে তুমি ভালো করে শিক্ষা দিতে পারো না? শিক্ষা দেওয়া যাকে বলে।

    রুনা চমকে উঠে বলল, কাকে?

    —কাকে আবার? যে তোমাকে এতদিন ধরে এমনভাবে কষ্ট দিচ্ছে তাকে।

    রুনা এক ঝলক রোদের মতো হেসে উঠল, বলল, বেচারির কী দোষ! সব দোষ আমার। প্রথম দিন থেকেই তো ও আমাকে মানা করে এসেছে, বার বার মানা করেছে। বলেছে, আমাকে কত বুঝিয়েছে যে, বিবাহিতা লোককে ভালোবাসলে কপালে অনেক দুঃখ। ও তো সবসময়ই বলে অন্যকে দুঃখ দিয়ে নিজে কখনো সুখী হওয়া যায় না। ও যখন সেরকম ভাবে সুখী হতে চায় না তো ওকে দোষ দিয়ে কী লাভ বলো?

    তা ছাড়া শিক্ষা দেবার কথাই যদি বলো, তো তুমি আমাকে শিক্ষা দাও না কেন? আমি জানি আমিও তো তোমাকে কম কষ্ট দিইনি। অবশ্য কোনো কষ্টই আমি ইচ্ছা করে দিইনি। কিন্তু তুমি পেয়েছ। আমার জন্যেই পেয়েছ, পাচ্ছ। তুমি আমাকে শিক্ষা দাও না কেন? আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারো না কেন? একবার রাগ করে চিঠি লিখলে দশবার ক্ষমা চেয়ে চিঠি লেখো কেন? এই কেন-র জবাব দাও।

    —জবাব নেই। সুজন বলল। আমি তোমাকে দুঃখ দেবার কথা ভাবতে পারি না।

    রুনা বলল, আমিও হয়তো তাকে দুঃখ দেবার কথা ভাবতে পারি না। তারপর বলল, এসব কথা এখন থাক। আমার কপালের পাশের শিরাগুলো দপ দপ করছে। বড়ো কষ্ট পাচ্ছি সাইনাসাইটিসে।

    —ডাক্তার দেখাও, অনেক কষ্ট তো এমনিতে পাচ্ছ। আবার অসুখবিসুখের কষ্ট কেন? নিস্পৃহ গলায় বলল সুজন।

    রুনা সেকথা গায়ে না মেখে বলল, জানো, তোমার জন্যে একটি ফুল পুলওভার বুনছি। তোমাকে দারুণ মানাবে।

    —বুনো না।

    —কেন?

    —আমার অনেক সোয়েটার, পুলওভার আছে। যা চাই মুঠি উপুড় করে তা যখন কোনোদিন দিতে পারলে না, তখন এসব থাক না।

    —তুমি ওরকম কোরো না। সত্যি বলছি, আমার খারাপ লাগে। তুমি ভালো করেই জানো যে, আমার খারাপ লাগে।

    —তাহলেও পুলওভার চাই না আমার। তার চেয়ে কোনো বই বা রেকর্ড কিনে রেখো। পরের বার কলকাতা গেলে নিয়ে আসব। কিছুদিন আগে Lara’s theme পাঠিয়েছিলে। মনে আছে? কী যেন নাম রেকর্ডটার?

    ‘Somewhere my love’—রুনা বলল।

    ওই রেকর্ডটা শুনলে বুকের মধ্যেটা কেমন যেন করে। তোমার কথা মনে হয়। তুমি যেন Lara।

    রুনা হেসে উঠল, বলল, আমি Lara হলেই তুমি যদি Doctor Zhivago -র মতো কেউ হতে পারো তাহলে আমি Lara হতে রাজি।

    সুজন অন্যদিকে চেয়ে বলল, সুযোগ দিলে কোথায়? আমি কী হতে পারতাম আর কী হতে পারতাম না, তা নিয়ে তুমি কখনো ভেবেছ? তোমার ভাববার সময় কই? অথচ আমি—।

    —থাক, এসব অনেক বার বলেছি।

    রুনা সুজনের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, আমার সুন্দর সুজন, তুমি জানো না, তুমি কিছু বোঝো না। যখন উল-কাঁটা নিয়ে বসি, তখনই তোমার কথা ভাবি, তোমাকে চোখের সামনে দেখতে পাই, দেখি তুমি আমার সোয়েটার গায়ে দিয়ে জিপ চালিয়ে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছ, কাজ দেখে বেড়াচ্ছ, তুমি আদিবাসী কাঠুরেদের সঙ্গে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছ, তুমি আকাশে সিগারেটের ধোঁয়ার রিং ছুড়ছ—সব—সব। এসব কি একেবারে কিছুই নয়? এসবের দাম নেই?

    জানি না। আমি জানি না। সুজন বলল।

    তোমার হয়তো মনে নেই, গতবার তুমি যখন কলকাতায় গেছিলে, আমার ঘরে, আমার সাধের সরষেরঙা বেডকভারটার ওপরে কফি ঢেলে ফেলেছিলে মনে আছে? তোমাকে কত করে বললাম, ঘরের কোণের ইজিচেয়ারটায় বোসো, তুমি শুনলে না। ভীষণ হাসতে হাসতে তুমি কাপসুদ্ধ কফি ঢেলে ফেললে, চাদরটায় দাগ হয়ে গেল। কী হাসি হাসছিলে। বাবা! আচ্ছা, তোমার মনে আছে কী নিয়ে তুমি অত হাসছিলে?

    —না। আমার মনে নেই। এত ছোটো ছোটো টুকরো টুকরো কথা আমার মনে থাকে না।

    —আমার থাকে। আমরা ‘মাই ফেয়ার লেডি’ দেখতে গেছিলাম। তুমি সিনেমা থেকে ফিরে রেক্স হ্যারিসনকে নকল করে আমাকে ফোনেটিক্স শেখাচ্ছিলে। ব্যাস, হাসতে-হাসতে…..।

    —তোমার আজ কী হয়েছে সুজন?

    —কিছু তো হয়নি।

    রুনা বলল, তোমার কাছে যা অবান্তর আমার কাছে তা হয়তো নয়। তা ছাড়া সব কথা মনে থাকে না। শুধু তোমার কথা মনে থাকে। এবং আর এক জনার কথা। তুমি জানো না সুজন, সেই বেডকভারটার কফির দাগ ধোপাবাড়ি দিয়েও ওঠেনি বলে আমি ভীষণ খুশি। যেদিনই ওই চাদরটা পাতি, সেদিনই তোমার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে যায়, সেদিন তোমার জন্মদিন ছিল, আমার কিনে দেওয়া একটি সিল্কের হাওয়াইশার্ট পরে আধশোয়া ভঙ্গিতে তুমি খাটে বসেছিলে, পাশের ফ্ল্যাটের হাসিদির রেডিয়োতে কণিকা ব্যানার্জির গান হচ্ছিল, সব যেন চোখের সামনে দেখতে পাই, শুনতে পাই।

    তোমার কথা মনে পড়ে। তোমার জন্যে মনটা ভীষণ খারাপ লাগে যখন বেডকভারটা পাতি।

    রুনা আবার বলতে লাগল, জানো সুজন, এই যে তোমার কথা ভাবি, সবসময়ে আমার মনে হয় তুমি হেঁটে বেড়াচ্ছ, হাত নেড়ে কথা বলছ, তুমি সিগারেট খাচ্ছ। এই যে সাত দিন তোমার চিঠি না এলে ডাক-পিয়োনের ওপর রেগে যাই, যখনই একটু অবকাশ পাই—অফ পিরিয়ডে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে, কলের ঝরঝরানি শুনতে শুনতে চান করতে করতে তখনই তোমার কথা এই যে ভাবি—আমার মনে হয় এর নামই ভালোবাসা। আমার ভালোবাসা এইরকমই। তোমাকে যা সবসময় দিই—দিতে পারি—তা কিছুই নয়। কিছুই নয় বলে, দু-হাতে তুমি ঠেলে সরিয়ে দাও—আর যা তোমাকে দিতে পারি না তারজন্যে সবসময় তুমি আমাকে অপমান করো।

    —অপমান করার কথা বললে অন্যায় করবে রুনা। আমি তোমাকে কোনোদিন অপমান করিনি। করতে চাইনি। তুমি একজন সুন্দরী ভদ্রমহিলার স্বামী এবং দশ বছরের একটি ছেলের বাবাকে ভালোবেসে—সেই ইনকনসিডারেট লোকটিকে ভালোবেসে— তোমার জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়টুকু নষ্ট করলে এবং তারসঙ্গে আমার জীবনটাও নষ্ট করে দিলে। বলো তুমি? একথা সত্যি না? তুমি তো প্রতিমুহূর্তে আমার সমস্ত অস্তিত্বকেই অপমান করো, করছ। আমিও যে একটা মানুষ, একথাই তুমি কোনোদিন ভেবে দেখোনি। এটা অপমান করা নয়? এর চেয়ে বেশি অপমানের কথা তো আমি ভাবতে পারি না। সত্যিই তুমি আমার সমস্ত জীবনটা নষ্ট করেছ।

    —কেউ কারও জীবন নষ্ট করতে পারে বলে আমার মনে হয় না সুজন। তুমি বিনা কারণে আমাকে দোষ দিয়ো না।

    —দোষ দেব না কেন? তুমি যে তাই করেছ।

    রুনা সুজনের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চশমাটা খুলে শাড়ির আঁচল দিয়ে একটু মুছে নিল। তারপর আস্তে আস্তে, যেন কথাগুলো বলতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে, এমনভাবে বলল, জানো সুজন, কারও জীবন নষ্ট করার কথা জানি না। তবু বলব, তাকে ভালোবেসে শুধু কষ্টই পেয়েছি, আর তোমাকে ভালোবেসে শুধুই আনন্দ। তোমার আমার যে সম্পর্ক সেটা তার-আমার সম্পর্কের চেয়েও অনেক বড়ো সম্পর্ক, একটা অন্য সম্পর্ক। কাল রাতে চোরের মতো তোমাকে আমার ঘরে ঢুকতে হয়েছিল, অথচ তোমাকে যা দিয়েছি আমি, সবসময় দিই, তার তুলনায় তুমি যা চুরি করতে গেছিলে তা হয়তো একেবারে কিছুই নয়। অথচ দ্যাখো, আমার বিশ্বাস, তুমি না হয়ে যদি সে কাল আমার পাশের ঘরে শুয়ে থাকত—জানি না সুজন, হয়তো আমিই তোমার মতো চুরি করে তার কাছে যেতাম।

    এ নিয়ে আমি অনেক দিন ভেবেছি সুজন। আমার আজকাল কেমন যেন একটা দৃঢ় ধারণা হয়ে গেছে যে, জীবনে ভালোবাসা পাওয়াটাই সব নয়, শুধু ভালোবাসা পেয়েই মন ভরে না। নিজে আবেগে, আশ্লেষে, আনন্দে তীব্রভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারাটাও অনেকখানি। তুমি যার কথা বলছ, সে আমাকে যেমন চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে, অত্যন্ত নির্লজ্জের মতোই বলছি, তার ভালোবাসা আমার সমস্ত শরীরে জ্বালা ধরিয়ে আমার সমস্ত সত্তায় অস্বস্তি ভরিয়ে আমাকে যেমনভাবে ডাক দেয়, তেমন করে কেউ কোনোদিন আমাকে আকর্ষণ করেনি, ডাকেনি। ঠিক তাকে যেমন করে ভালোবাসি, তেমন করে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারলাম না। সজ্ঞানে সে ছাড়া আমি কারও বুকে শুয়ে থাকার কথা ভাবতেও পারি না সুজন। তার ভালোবাসা আমার সমস্ত জীবনময় রংমশালের মতো জ্বলে, জ্বালায়—অথচ তোমার ভালোবাসা এই জঙ্গলের শান্ত ছবির মতো আমার মনকে এক সুন্দর শান্তিতে ভরে দেয়। অথচ দ্যাখো, আমি তোমাদের দু-জনকেই চাই। অথচ! কত অন্যরকম ভাবে চাই।

    সুজন অনেকক্ষণ কোনো কথা বলল না।

    রুনা বলল, কী? কিছু বলছ না যে?

    সুজন হাঁটতে হাঁটতে বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলল, তুমি হয়তো বক্তৃতা দেবার সময় ভাবো তোমার ছাত্রীদের সামনে বক্তৃতা করছ। কিন্তু তোমার ছাত্রীরা সবকিছু যত সহজে বোঝে, আমি বুঝি না। আমি শুধু এটুকু বুঝি যে, তুমি স্বার্থপর। বেশ স্বার্থপর। নিজের কথা ছাড়া অন্য কারও কথা তুমি কখনো ভাবনি।

    রুনা সেই আসন্ন সন্ধ্যার মতো একচিলতে বিষণ্ণ হাসি হাসল; শুকনো গলায় বলল, তা তো তুমি বলবেই।

    —বলব না? একশো বার বলব। তুমি অত্যন্ত খারাপ—বাজে, অত্যন্ত স্বার্থপর মেয়ে।

    রুনা চমকে উঠে বলল, কী বললে?

    সুজন আবার কেটে কেটে বলল, তুমি একটি সস্তা, বাজে মেয়ে। তোমাকে ভুল বুঝে আমার সমস্ত জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।

    রুনা যেন কেঁপে উঠল। যেন ডাঙায়-তোলা মাছের মতো হাঁ করে নিশ্বাস নিল। মুখে কিছু বলল না।

    সুজন এবার বেশ ঘৃণার সঙ্গে বলল, আমি সত্যিই জানি না, তুমি আমার কাছে আস কেন? এত বছর আমাকে এমনভাবে প্রতিমুহূর্তে ফেরানোর পর তবু তুমি এদেশে আছ কেন? তুমি দূরে কোথাও চলে যেতে পারো না? কোনো চাকরি নিয়ে? দূরে, এত দূরে যে, কখনো আর তোমাকে দেখতে হয় না। প্রতিমুহূর্তে তুমি আমারই চোখের সামনে দিয়ে তোমার প্রেমিকের কাছে যাবে, আমারই সামনে সবসময় তার কথা বলবে, এ আর আমার সহ্য হয় না রুনা। কোনোদিন অন্য কারও প্রেমিকাকে ভালোবাসতে চাইনি। তোমাকে একটুও সহ্য করতে পারি না। আজকাল একমুহূর্তও সহ্য করতে পারি না।

    রুনা অনেকটা পথ কোনো কথা বলল না, তারপর হঠাৎ যেন অন্ধকারে কিছু খুঁজে পেয়েছে এমনিভাবে ওর কাঁধে ঝোলানো অফ-হোয়াইট রঙা ব্যাগটা হাতড়ে হাতড়ে কী-একটা কাগজ বের করে সুজনের হাতে দিল। বলল, মনীষার চিঠি।

    সুজন বিরক্ত গলায় বলল, কী? লিখেছে কী?

    রুনা আস্তে আস্তে বলল, আমার বাইরে যাওয়ার সব ঠিক হয়ে গেছে সুজন। এবার আমি এখানে এসেছিলাম কেবল এই কথাটাই তোমাকে জানাতে। আমার ভয় ছিল, তুমি দুঃখ পাবে, তুমি হয়তো বাধা দেবে। তোমাকে কথাটা বলি বলি করেও এ পর্যন্ত বলতে পারিনি। ঠিক করেছিলাম, কথাটা তোমাকে এখানে জানানো যাবে না এভাবে। ভেবেছিলাম এভাবে জানালে হয়তো তুমি শুনবে না। তোমার দিক থেকে যে-কোনো আপত্তি নেই একথাটা তুমি নিজে থেকে বলে আমাকে যে কীভাবে বাঁচালে তুমি জানো না সুজন। আমারও ভালো লাগে না। আমিও দূরে যেতে চাই, যেখানে কোনো চেনা লোক নেই।

    এই অবধি একনিশ্বাসে বলে ফেলে রুনা বলল, বাংলো তো আর বেশি দূর নেই, আমি একটু বসলাম, বুঝলে। আমার মাথার যন্ত্রণাটা ভীষণ বেড়েছে।

    একটি ক্ষীণা পাহাড়ি নদী পথের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। তার ওপরের কালভার্টের ওপর রুনা বসে পড়ল। কালভার্টের নীচ দিয়ে কুলকুল করে জল বইছে। গাছের ছায়া দু-পাশে ঝুঁকে পড়েছে নদীতে। সামনেই পথটা একটা বাঁক নিয়েছে। তার সামনে অনেকখানি ফাঁকা জায়গা। বাজরা আর সরষে লেগেছে সেখানে। হলুদ আর সবুজে সমস্ত পাহাড়তলিটিকে গালচে-ছাওয়া মনে হচ্ছে। দূরে শিরিনবুরুর পাহাড় দেখা যাচ্ছে। নদীর জলে গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে দু-একফালি রোদ এসে পড়েছে। সেই পড়ন্ত রোদের দিকে চেয়ে রুনা চুপ করে বসে রইল।

    সুজন রুনার দেওয়া বিদেশের টিকিটমারা চিঠিটা খুলতে খুলতে বলল, তুমি বাইরে যাবে তাতে আমি দুঃখ পাব কেন? তুমি কী করবে না-করবে তাতে আমার কী?

    বলেই চিঠিটা খুলে দু-হাতে ধরে পড়তে লাগল।

    সমস্ত জঙ্গল আর পাহাড়তলি পাখিদের কলকাকলিতে ভরে উঠেছে। রুনা পাহাড়তলির দিকে আর একবার তাকাল। তারপর চশমাটাকে খুলে আবার কাচ দুটোকে আঁচল দিয়ে মুছল। ওর চোখে কী যেন হয়েছে। চশমাটায় কেবলই ঝাপসা দেখে।

    এমন সময় সুজন রুনার কাছে এসে কালভার্টে ওর পাশে বসে পড়ল। চিঠিটা মেলে ধরে অবিশ্বাস্য গলায় শুধাল, তুমি চলে যাবে? ব্রিটিশ গায়ানাতে?

    রুনা আস্তে আস্তে বলল, হ্যাঁ। বললাম তো তোমাকে। তারপর মুখ না তুলেই বলল, জানুয়ারির উনিশে যাব। সব ঠিক হয়ে গেছে। আমার যা কোয়ালিফিকেশন তাতে এমন সুযোগ আর হবে না।

    ভালো চাকরি। অ্যাপার্টমেন্ট ওরা দেবে। পাঁচ বছর পর পর হোম লিভ। মনীষা যা লেখে, ওখানকার ক্লাইমেটও নাকি ভালো। অনেকটা আমাদেরই মতো। শীত নেই বললেই চলে। তারপর একটু থেমে বলল, যদি সময় পাও এবং ইচ্ছে করে তাহলে আমার কাছে একবার বেড়াতে যেয়ো। তোমার এখানে তো কত বার আমি বেড়িয়ে গেলাম। যদি……।

    রুনা! সুজন চিৎকার করে উঠল। রুনা তুমি জানো যে, তুমি যাবে না।

    রুনা অবাক হয়ে মুখ তুলল। বলল, বা:, কী যে বলো! সব ঠিকঠাক হয়ে গেল, কত কষ্ট করে টাকাপয়সা সব জোগাড় করলাম—এখন যাব না কেন? তা ছাড়া এখানে আমার আছেটা কী? কে আছে আমার? সুজন, আমার তো কোনো পিছুটান নেই। আমি যাব।

    তুমি যাবে না, তুমি যাবে না, বলতে বলতে চিঠিটাকে হঠাৎ হাতের মুঠোয় পাকিয়ে মুঠো করে জলে ছুড়ে ফেলে দিল সুজন। দোমড়ানো চিঠিটা জলের ওপর একবার নেচে উঠে পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে ভেসে গেল।

    রুনা দাঁড়িয়ে উঠে বলল, ইস কী করলে বলো তো? ওর মধ্যে যে অনেক কিছু দরকারি ইনফরমেশন ছিল। কী করলে তুমি?

    —রুনা আমি জানি তুমি যাবে না। তুমি যেতে পারবে না।

    রুনা বসে পড়ে বেশ শক্ত গলায় বলল, আমি জানি যে, আমি যাব। তুমি আমাকে মানা করবার কে? আর মানা করলেই-বা তা আমি শুনব কেন? অনেক দিন হল। এবার আমি আমার নিজের দিকে তাকাব। আমার নিজের দিকে তাকাবার সময় হয়েছে এবার।

    —রুনা তুমি যাবে না।

    আমি যাব, যাব, যাব।

    সুজন হঠাৎ বাচ্চাছেলের মতো কেঁদে উঠল, কেঁদে হাঁটু গেড়ে বসে রুনার কোলে মাথা রেখে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগল। ‘তুমি যাবে না রুনা, তুমি যাবে না, তুমি যাবে না রুনা’—বলতে বলতে মাথাটা ওর কোলে এপাশ-ওপাশ করতে লাগল।

    রুনা কথা না বলে, স্থির হয়ে বসে রইল। পাহাড়তলির দিকে মুখ করে।

    রুনা নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করল।

    সুজন একেবারে ভেঙে পড়ে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলতে লাগল, তোমার কাছ থেকে আমি আর কিছু চাই না রুনা, আর কোনোদিন কিছু চাইব না, তোমার যাকে খুশি তুমি তাকে ভালোবাসো, আমাকে শুধু মাঝে মাঝে তোমাকে একটু দেখতে দিয়ো, মাঝে মাঝে আমার কাছে এসো। তুমি অত দূরে যেয়ো না রুনা, তোমাকে মাঝে মাঝে না দেখতে পেলে—তোমার পায়ে পড়ি রুনা, তুমি যেয়ো না। তুমি ওখানে যেয়ো না।

    ওর কোল থেকে মুখটা তুলে সুজন তবু বলল, রুনা তুমি কথা দাও-আমাকে তুমি কথা দাও যাবে না ।রুনা কথা দাও ।

    রুনা এতক্ষণ শক্ত ও স্থির হয়ে বসে ছিল, এখন কী করবে বুঝতে না পেরে হঠাৎ দু-হাত দিয়ে সুজনের মাথার চুলে হাত বোলাতে লাগল। দু-হাতে ওর মাথাটা ধরে রইল অনেকক্ষণ। বলল, সুজন ওঠো, সুজন কী ছেলেমানুষি করছ? আমরা কি এখনও ছেলেমানুষ আছি?

    রুনার খুব নার্ভাস লাগতে লাগল নিজেকে।

    ওর কোল থেকে মুখটা তুলে সুজন তবু বলল, রুনা তুমি কথা দাও—আমাকে তুমি কথা দাও যাবে না। রুনা কথা দাও।

    রুনা কোনো উত্তর দিল না। চুপ করে বসে উদাস চোখে চেয়ে রইল।

    কতকগুলো লম্বা গলাঅলা পাখি, পাহাড় আর উপত্যকাটার মধ্যে গ্লাইডিং করে ভেসে বেড়াচ্ছিল। ওরা ডানা নাড়াচ্ছে না একটুও। ওই শান্ত পাহাড়ি পটভূমিতে ওর মনের এক বিষণ্ণতম মুহূর্তে ওদের ভেসে বেড়ানো দেখতে দেখতে রুনার চোখের কোণ জলে ভরে উঠল।

    ওর মনে হল, ওই নাম-না-জানা পাখিগুলোর মতো ও ও বুঝি ভেসে বেড়াচ্ছে। শাড়ি পরার পর থেকে, বড়ো হওয়ার পর থেকে ও ইচ্ছের ডানা নাড়া একেবারে ভুলে গেছে। কোথায় বাসা ছিল ভুলে গেছে, কোথায় যে বাসা বাঁধবে তাও সঠিক জানা নেই। এদিকে সন্ধে হয়ে আসছে, উষ্ণতা মরে যাচ্ছে, শীতের রাতের নিশ্চিত কালো হাত ওর দিকে ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে, তবুও এখনও ওই পাখিদের মতো ও ভেসেই বেড়াচ্ছে।

    রুনার দু-গাল চোখের জলে ভেসে যেতে লাগল।

    চশমার কাচ দুটো আবার একেবারে ঝাপসা হয়ে গেল।

    রুনা বুঝতে পারল না, সে এখন কী করবে। ওর কী করা উচিত।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজংলিমহল – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article চম্পাঝরন – বুদ্ধদেব গুহ

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }