Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বৃশ্চিকচক্র – পিয়া সরকার

    পিয়া সরকার এক পাতা গল্প320 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কথায় কাটে কথার প্যাঁচ

    বাঘমুণ্ডি থানার ইন্টেরোগেশন রুমটা ছোট আর নোংরা। একটা ধুলোমাখা চ্যাটচেটে টেবল, একটা কানাভাঙা চেয়ার, আর একটা ফাঁকা মিনারেল ওয়াটারের বিশ লিটারের জার। কোনো জানালা নেই, ঘুলঘুলি মেঝে থেকে দশ ফুট উঁচুতে। বিদেশে হলে সন্দেহভাজনের জেরা করা তো দূরের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেস হয়ে যেত।

    আজ সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টি পড়ছে। মতিদা এখনও আসেননি। আমি হাতের রুলারটা টেবিলে নামিয়ে রাখলাম। হেমন্ত ছেলেটার বয়স তিরিশের নিচে। উচ্চতা কমের দিকে, পাঁচ পাঁচ হবে। বাদামি কোঁকড়া চুলগুলোয় ক্রু-কাট দেওয়ায় চুলগুলো মাথার উপরে গজাল বনের মত দাঁড়িয়ে আছে। ছোট চোখ, ঘন ভুরু, খাড়াই নাক। তামাটে রঙ। কিছুক্ষণ আগে, বাইরের দরজা থেকে উঁকি মেরে দেখে গেছি, হেমন্ত সামনে পিছনে মাথা দুলিয়ে, পাদুটোকে অস্থিরভাবে নাচিয়ে চলেছে।

    জেরাকক্ষের পরিবেশটাকে খানিকটা ইচ্ছা করেই এমন বেরঙিন, বিধ্বস্ত রাখা হয় আমাদের দেশে। টেবিল, চেয়ার, দেওয়ালের এমন নাদানখাস্তা দশা বাজেট কাটের জন্য নয়, বরং সন্দেহভাজনের মনে উৎকণ্ঠা জাগানোর জন্য; বেশিক্ষণ একা বসিয়ে রাখলে এই ঘর সব কিছু গিলে নিতে আসে, হলিউডের হরর মুভির থেকে কোনো অংশে কম ভয়ানক অভিজ্ঞতা নয়।

    আমি চেয়ারটা ঠেলে সামনে বসতেই হেমন্তর চোখের মণি দুটো ছিটকে সামনের দিকে ঝুলে পড়ল। সামান্য সিঁটকে পিছন দিকে সরেও গেল বোধহয়। ছেলেটা নার্ভাস। আমি সামান্য হেসে বললাম, “কেমন আছ হেমন্ত?”

    “ঠিক আছি।” হেমন্ত মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল।

    “চা বা কফি কিছু নেবে? কোল্ড ড্রিংকস?”

    “না, না!” হেমন্ত সরতে সরতে চেয়ারের কোণে ওর পাছাটুকু জাস্ট ঠেকিয়ে বসেছিল।

    “ক…কী ব্যাপারে ডেকেছেন?”

    “এক মিনিট। আজকাল আমাদের নিজেদের সেফটির জন্য সিসিটিভিতে সব রেকর্ড হয়। জানো তো? যা বলবে, সব রেকর্ড হচ্ছে।” আমি দেওয়ালে লাগানো ক্যামেরাটার দিকে দেখিয়ে বললাম।

    “আমার কি উকিল লাগবে?” হেমন্ত শুকনো ঠোঁট চেটে বলল।

    আমি খাতায় ওর নামধাম লিখছিলাম। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “কেন? তুমি কি কিছু করেছ?”

    “না, মানে উকিল নেয় লোকে শুনেছি।”

    “হ্যাঁ। নিতেই পারো। উকিল এসে আর কী করবে, বলবে আমার মক্কেল এই প্রশ্নের উত্তর দেবে না। সেই একই কথা আমি তোমাকে বলছি। তোমার যে প্ৰশ্ন পোষাবে না তার উত্তর দেবে না। যা দেবে, সেটার অডিও রেকর্ডিং হবে, লেখা হবে, তুমি সই করবে আর কোর্টে সেটা প্রমাণ হিসেবে দাখিল করবে পুলিশ। বুঝতে পারলে?”

    “আপনারা মারধোর করবেন নাকি?” হেমন্তর শঙ্কা যাচ্ছিল না।

    “পাগল নাকি! তাহলে কি তোমায় ক্যামেরার সামনে বসাতাম? তার জন্য আলাদা ঘর আছে।”

    “ওহ!”

    “উকিল ডাকব?”

    “না, না। ঠিক আছে।”

    “ওকে। তাহলে শুরু করা যাক?”

    “হ্যাঁ…মানে এই জেরাটা কি দোকানে ডাকাতি নিয়ে?”

    আমি হেসে বললাম, “আরে দাঁড়াও, দাঁড়াও। জেরার তো কিছু পদ্ধতি আছে, প্রশ্ন তৈরি থাকে, সেসব জিজ্ঞাসা করতেই হয়। চুরি, ডাকাতি, খুন, যাই হয়ে থাক, সবেতেই আসবো।”

    “খুন!” হেমন্ত শিউরে উঠল।

    আমি যেন শুনিইনি এমন করে বললাম, “একদম গোড়া থেকে শুরু করা

    যাক। তুমি কতদিন কাজ করছ দোকানে?”

    “দুবছর হবে।” হেমন্ত স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছিল।

    “কী কী কাজ করো?”

    “সবরকমই করি ম্যাডাম। ঝাড়ু দেওয়া, জিনিসপত্রের হিসেব রাখা, কাস্টোমার আসলে মালপত্র দেখানো, ক্যাশ দেখা…”

    “হোলির দিন মানে বুধবার, তোমার কটায় ডিউটিতে যাওয়ার কথা ছিল?” আমি লিখতে লিখতে ওর দিকে তাকালাম।

    হেমন্ত একটা টানা শ্বাস নিয়ে মাথাটা পিছন দিকে হেলালো, তারপর বলল, “ওই দেড়টা নাগাদ।”

    “রোজ এরকম সময়েই দোকানে আসো?”

    “না, না। আমি তো রাতে দোকানে থাকি। সকালে দশটা নাগাদ দোকান খুলি। তারপর দুপুরে স্যার আসলে আমি বাড়ি যাই। আবার রাত আটটা নাগাদ আসি।”

    “পরশু রাতে ছুটি নিয়েছিলে?”

    হেমন্ত ঘাড় নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।

    “মঙ্গলবার রাতে যখন দোকান থেকে বেরোও তখন তোমার স্যার কী করছিলেন?”

    “হিসেবপত্র করছিলেন।”

    “এটা কটার সময়?”

    “সাড়ে এগারোটা নাগাদ।”

    “আচ্ছা। আর কাল যখন দোকানে পৌঁছালে তখন কী দেখলে?”

    হেমন্ত আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “বৌদিকে দেখলাম। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।”

    “কী করছিলেন?”

    “ফোন করছিলেন।”

    “তারপর তোমাকে দেখে কী বললেন?”

    “বললেন, তুই এসেছিস? আমি তোর স্যারকে অনেকক্ষণ ধরে ফোনে পাচ্ছি না। দোকানটা খোল তাড়াতাড়ি।”

    “আচ্ছা। তারপর?”

    “তারপর আমি শাটার খুলে ভিতরে ঢুকলাম। আমার পেছন পেছন বৌদি।”

    “দোকান তো রোজ দশটায় খোলে? তোমার সন্দেহ হয়নি এত বেলায় শাটার ফেলা কেন?”

    “না… মানে আমি ভেবেছি স্যার, কাছেপিঠে কোথাও গেছেন। স্যারের কাছেও তো আরেকটা চাবি থাকত।”

    “দোকানে ঢুকে কী দেখলে?”

    “প্রথমে কিছু বুঝিনি,” হেমন্ত ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলছিল, “তারপর ঘরের কোণে নজর গেল, দেখলাম আলমারির কাচ ভাঙা। মাটিতে ছড়ানো। রক্তের ফোঁটা চারিদিকে।”

    “খাটের পাশের স্টুলে রাখা আধখাওয়া থালাটা নজরে পড়েনি আগে? শাটার খুলে ঢুকে তো ওটাই আগে নজরে পড়ে?” আমি ভুরু কুঁচকালাম।

    “ও হ্যাঁ, হ্যাঁ। ওটাও দেখেছি।” হাতের তেলো দিয়ে মুখ মুছল হেমন্ত “আচ্ছা। তারপর কী হল?”

    “তারপর আমরা পিছন দিকের দরজাটার দিকে গেলাম। স্যার ঘরে ছিলেন না। স্যারকে খুঁজতে খুঁজতে দরজার কাছে গিয়ে দেখি….”

    “দাঁড়াও….দরজাটা কি খোলা ছিল?”

    “পাল্লাটা আধখোলা হয়ে ছিল।” হেমন্ত একটু ভেবে বলল।

    “আচ্ছা। তারপর?”

    “দেখি দেওয়ালে আর মেঝেতে…অনেক রক্ত।” হেমন্তর গলা বুজে এল। “কোনদিকের দেওয়ালে রক্ত দেখলে?”

    হেমন্ত চোখ বুজে মনে করার চেষ্টা করল।

    “ডানদিকের দেওয়ালে।”

    “তুমি কোনদিকে মুখ করেছিলে?”

    “দরজার দিকে।”

    “হুম। তারপর কী হল?”

    “তারপর…তারপর আমি বৌদিকে বললাম যে দোকানে বোধহয় ডাকাতি

    হয়েছে।” হেমন্ত মুখটা নামিয়ে ফেলল।

    “বৌদি কী বললেন?”

    “হ্যাঁ?”

    “বলছি, বৌদি কী বললেন?”

    হেমন্ত যেন সম্বিত ফিরে পেল।

    “হ্যাঁ, বৌদি তখন স্যারকে ফোন করছিল। বারবার।”

    “আশেপাশের দোকানে খবর দাওনি তোমরা কেউ? বা বাইরে থেকে এসে কেউ উঁকিঝুঁকি মারেনি?”

    “শাটার নামানো ছিল।”

    “মানে তুমি দোকানে ঢুকেই শাটার নামিয়ে দিয়েছিলে?”

    “না।”

    “তবে?”

    “বৌদি দোকানে ঢুকে বলল।”

    “বৌদি বলল শাটার নামাতে?”

    “হ্যাঁ।” হেমন্তর মুখটা সাদা সাদা লাগছিল।

    “কী বলল সেটা ঠিক করে বলো।”

    “বললেন শাটার নামিয়ে দিতে। লোকজন ঢুকে যাবে।”

    “লোকজন ঢুকলে কী হবে জিজ্ঞাসা করোনি?”

    “না।”

    “কেন!”

    “মাথা কাজ করছিল না।”

    “তোমরা পাশের দোকানদারদেরও ডেকে আনোনি?”

    “হ্যাঁ…এনেছি তো।” হেমন্ত ঠোঁট চেটে বলল।

    “সে তো বেশ দেরিতে। প্রায় দুটো সোয়া দুটো নাগাদ। এতক্ষণ কী করছিলে?”

    হেমন্ত চমকে তাকাল আমার দিকে।

    আমি ধমকে বললাম, “বলো কী করছিলে?”

    হেমন্ত ধমকানি খেয়ে তটস্থ হয়ে বলল, “আসলে বৌদি ফোন করছিল। বলল, আমি ফোন করে সবাইকে জানাচ্ছি। বাইরের লোক এখনই ডেকে আনিস না। পুলিশকে খবর দিতে হবে।”

    “তারপরেও পুলিশে খবর পৌঁছেছে তিনটে নাগাদ। এই এতক্ষণ সময়ে ফোন করেও পুলিশে জানাওনি কেন?”

    “না…না…মানে…” হেমন্ত ঘাবড়ে গিয়েছিল।

    “কী হল বলো? এত দেরি হল কেন?”

    “না…মানে আসলে আমি ভেবেছি বৌদি ফোন করে ডাকবে।”

    আমি লেখা থামিয়ে পিছনের চেয়ারে হেলান দিয়ে হেমন্তকে ভালো করে লক্ষ করলাম। ছেলেটার কপালে বিড়বিড়ে ঘাম; দ্রুত আমার থেকে চোখ সরিয়ে নিল।

    “তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে হেমন্ত? কিছু লুকাচ্ছ?”

    ও আঁতকে উঠে বলল, “না না! কী লুকাব?”

    আমি সামনে ঝুঁকে বললাম, “আচ্ছা একটু অন্য প্রশ্ন করি। সেদিন তুমি কি পরে ছিলে?”

    “আমি?”

    “হ্যাঁ।”

    “জিনসের প্যান্ট। আর সাদা একটা জামা।”

    “কী রঙের জিন্স?”

    “নীল রঙের। সেসব তো পুলিশ সেদিনই নিয়ে রেখেছে।”

    “হুম। পরীক্ষাটরীক্ষা হবে তো।”

    “কীসের পরীক্ষা?”

    “কতকিছুর পরীক্ষা হয়। আঙুলের ছাপ, জুতোর ছাপ, জামাকাপড়ের সুতো। কলকাতা থেকে টিম এসেছে।”

    “ওহ!”

    “আচ্ছা, দোকানে অত রক্তারক্তি দেখে বৌদির রিঅ্যাকশন কেমন ছিল? ভয় পেয়েছিলেন? কান্নাকাটি করছিলেন?”

    “হ্যাঁ। ভয় পেয়েছিলেন।”

    “কাঁদছিলেন?”

    হেমন্ত শূন্যদৃষ্টিতে তাকাল।

    “কাঁদছিলেন না?”

    “হ্যাঁ কাঁদছিলেন।” হেমন্ত বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকাল। “হুম। আচ্ছা ঐ আলমারিতে কত টাকা ক্যাশ ছিল?”

    “তিরিশ হাজার।” হেমন্ত খুব তাড়াতাড়ি উত্তর দিল।

    “হুম। কিন্তু বিক্রি তো হয়েছে পনের হাজারের। মানে আরও পনের হাজার এক্সট্রা ছিল?” কাষ চা

    “হ্যাঁ।”

    “ড্রয়ারে যে টাকা নেই সেটা প্রথমে কে দেখেছিল?”

    “বৌদি…বৌদিই।” হেমন্ত একটু ভেবে উত্তর দিল।

    “আচ্ছা এই দুদিনের বিক্রির টাকা পুরোটাই ড্রয়ারে রেখেছিলেন? এক আধ হাজার এদিক ওদিক হয়নি!”

    “না।” হেমন্ত ঢোঁক গিলে বলল।

    “হুম। বিক্রির টাকা বাদে কত টাকা এক্সট্রা থাকত ড্রয়ারে তা তুমি খবর রাখতে?”

    “না…মানে সেদিন স্যার বলেছিলেন।”

    “এত টাকা সবসময় এক্সট্রা থাকত দোকানে?”

    “না।” হেমন্ত যন্ত্রের মত দুদিকে মাথা নাড়াল।

    “তবে সেদিন যে ছিল?”

    হেমন্ত অসহায় ভঙ্গিতে চারিদিকে তাকাল, “বলল, আমি জানি না।”

    বাইরের দরজায় একটা ঠকঠক আওয়াজ হল। মতিদা মুখ বাড়িয়ে বাইরে

    ডাকলেন।

    “বলুন মতিদা, ইয়ে স্যার।”

    “আহা! আবার স্যারট্যার কেন? দাদাই তো ঠিক ছিল।” মতিদা স্নেহের সুরে বললেন।

    “বলুন।” আমি হেসে তাকালাম।

    “কীরকম চলছে?”

    “কিছু গণ্ডগোল আছে মতিদা। বেশ কিছু স্টেটমেন্টে…” আমি অন্যমনস্কভাবে বললাম, “মানে ছেলেটার বডি ল্যাংগুয়েজ ঠিক নৰ্মাল নয়…”

    “ওহ! মানে বাঘ তাজা রক্তের গন্ধ পেয়েছে বলছ?”

    আমি হাসিমুখে বললাম, “না, মানে ঠিক তা নয়, তবে জেরাটা কন্টিনিউ করলে কিছুটা বোঝা যাবে।”

    “তুমি কিছু নোট ডাউন করেছ?”

    “হ্যাঁ। একটা সামারি, আমার যা যা মনে হয়েছে। আর এমনিতে পুরোটা মোবাইলে রেকর্ডেড আছে।”

    “ওকে। আসলে একটা কথা ছিল।”

    “কী? বলুন না?”

    “সোনালি মাহাতো এসেছেন। আমার মনে হয়, ওঁর জ়েরাটা তুমি যদি শুরু করো তবে বেটার হবে। আমি আর বিভাস এদিকটা সামলে নিচ্ছি বরং…”

    “ওকে স্যার।”

    “সোনালি মাহাতো পাশের ঘরে আছেন। তুমি শ্যামলকে একটু পাঠিয়ে দাও।”

    “ওকে।”

    শ্যামল ব্যানার্জিকে ডাকতে হল না। উনি পাশের ঘরে ছিলেন। আমি ঢুকতেই উনি যেন ছিটকে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। চোখের কোণ দিয়ে দেখলাম উনি সোনালি মাহাতোকে ফিসফিস করে কীসব বলছিলেন। সোনালি অন্যদিকে তাকিয়ে বসেছিল। অফিসিয়ালি শ্যামল ব্যানার্জীর এই কেসটায় আর থাকার দরকার নেই। তবুও উনি কী করছেন বুঝে পেলাম না। আমি গিয়ে গলা খাঁকড়াতেই মেয়েটি আমার দিকে তাকাল। কালো শাড়ি আর লাল ব্লাউজ, সাধারণ সাজ। শুধু চোখের দৃষ্টি খর।

    “নমস্কার। আমার সঙ্গে তোমার আগে দেখা হয়েছে। আমার নাম দর্শনা বোস। তোমার নাম সোনালি তো?”

    “হ্যাঁ।” অসন্তুষ্ট ভঙ্গিতে উত্তর এল”

    “নিশীথবাবুর ব্যাপারে কটা প্রশ্ন করব।”

    “নতুন কী প্রশ্ন করবেন? যা বলার আমি অনেকবার বলেছি।”

    “প্রশ্ন করাটা আমাদের কাজ। যে কথা একবারে সাধারণ লোক বিশ্বাস করে, আমরা একই কথা বারবার উল্টাই পাল্টাই।”

    “আপনি বারবার জিজ্ঞাসা করলেও আমার উত্তর পাল্টাবে না।”

    “জানি। তবে সেটা যাচাই করে নেওয়াই আমার কাজ।”

    “বলুন কী জানবেন।”

    “তোমার বয়স কত?”

    “উনত্রিশ।”

    “বাবার নাম?”

    “জোনাকি প্রামাণিক।”

    “পড়াশুনা কতদূর করেছ?”

    “গ্রাজুয়েট। এম.এ পড়া শেষ হয়নি।”

    “কোন কলেজ?”

    “নিস্তারিণী উইমেনস কলেজ।”

    “নিশীথবাবুর সঙ্গে কতদিন হল বিয়ে হয়েছে?”

    “চার বছর।”

    “তোমার বাপের বাড়ি কোথায়?”

    “বড়েরিয়ায়।”

    বড়েরিয়ার নামটা কোথায় যেন শুনেছি হাতড়ানোর চেষ্টা করলাম। তারপর মনে পড়ল, অসীমেরও বাড়ি একই গ্রামে

    “বাপের বাড়িতে কবে গিয়েছিলে?”

    “দোলের চারদিন আগে।”

    “তোমার বাপের বাড়িতে কে কে আছেন?”

    “মা, বাবা, ভাই।”

    “আর এখানে?”

    “এখানে শুধু আমার স্বামী।”

    “তোমাদের বয়সের গ্যাপ অনেক। কীরকম সম্পর্ক ছিল?”

    “ভালোই ছিল।”

    “নিশীথবাবু লোক কেমন ছিলেন?”

    “ভালো লোক ছিলেন।”

    “কতটা ভালো?”

    “অত ভাবিনি।” মেয়েটি খুব বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল।

    “এগুলো তো খুব নিরীহ প্রশ্ন। এত বিরক্ত হচ্ছো কেন? নিশীথবাবুর কাজকর্ম কে দেখাশোনা করত? কোনো কাছের মানুষ?”

    “উনি নিজেই করতেন। দিনরাত খাটতেন।”

    “তাও, এমন কেউ যাকে উনি বিশ্বাস করতেন?”

    “কেউ সেরকম ছিল বলে জানি না। আমার স্বামী সহজে কাউকে বিশ্বাস করতেন না। লোকজনের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক ছিল, বন্ধুত্ব ছিল না।”

    “আর তোমার সঙ্গে?”

    সোনালি আমার দিকে চোখ তুলে তাকাল। তারপর বলল, “ভালই সম্পর্ক ছিল।”

    “কীরকম ভালো? মনের দিক থেকে ঘনিষ্ঠ ছিলে কি?”

    “অত জানি না। তবে খারাপ সম্পর্ক ছিল না।”

    “উনি তোমাকে যথেষ্ট সময় দিতেন? ব্যস্ত থাকলেও নিস্পৃহ ছিলেন কি?” সোনালি আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসল। তারপর বলল, “আমাদের সম্পর্ক কেমন ছিল তার সঙ্গে এই ঘটনার কী সম্পর্ক?”

    আমি স্থির দৃষ্টিতে সোনালির দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও অস্বস্তিতে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

    “সম্পর্ক হয়ত আছে। দুপুরে কটায় তুমি দোকানে পৌঁছাও?”

    “দেড়টায়।”

    “এর আগে তুমি ওঁকে ফোনে ট্রাই করেছিলে?”

    “বললাম তো করেছি। পাইনি।”

    “তোমার চিন্তা হয়নি?”

    “হয়েছিল। কিন্তু সেটা প্রমাণ করব কীভাবে?”

    “নিশীথ মাহাতোর সঙ্গে এর মধ্যে কারুর তর্কাতর্কি, ঝগড়া ইত্যাদি হয়েছে?

    কোনো হুমকি ফোন, টাকার দাবি ইত্যাদি?”

    সোনালি যেন একটু চমকে তাকাল। তারপর বলল, “না। আমি জানি না।”

    “কোনো অস্বাভাবিক ফোন?”

    “না।”

    “ঠিক করে ভেবে বল।”

    “আমার এত প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগছে না। একই কথা বারবার কী বলব?”

    “প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর না পেলে পুলিশ তোমাকে কাস্টডিতে নেবে। তারপর দফায় দফায় জেরা চলবে। সেটা তোমার ভালো লাগবে?”

    “কেন আমি কী করেছি?”

    “সেটাই তো বোঝার চেষ্টা করছি। তুমি কো-অপারেট না করলে বাধ্য হয়ে আমাকে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।”

    “ঠিক আছে। বলুন।”

    “তোমার স্বামীর একটা অতীত ছিল। সেই অতীতের কোনো কথা প্রসঙ্গক্রমে তোমার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন?”

    “না। কারুর সঙ্গেই আলোচনা করতেন না। একবার খবরের কাগজ থেকে ইন্টারভিউ নিতে এসেছিল, উনি না করে দিয়েছিলেন।”

    “অতীতের সঙ্গীসাথী তো অনেকেই ছিলেন। কারুর সঙ্গে যোগাযোগ?”

    “গোটা পুরুলিয়াই ওঁর পরিচিত। কার কী অতীত ছিল আমি কীভাবে

    জানব?”

    “এবার একটা প্রশ্ন সরাসরি করব। সরাসরি উত্তর দেবে।”

    “কী জানতে চান বলুন।”

    “তুমি দেড়টার সময় দোকানে ডাকাতির খবর পাও। কিন্তু থানায় আসো তিনটেয়। কেন?”

    “আমি ফোনে সবাইকে চেষ্টা করছিলাম।” সোনালি সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল। “দেড়ঘন্টা ধরে?”

    “আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কী করব।”

    “কাকে কাকে চেষ্টা করেছিলে?”

    “অত মনে নেই। প্রথমে ওঁকে বেশ কয়েকবার, তারপর আত্মীয় পরিচিত সবাইকেই।”

    “তোমার কারুর উপর সন্দেহ হয়?”

    “আমার কার উপর সন্দেহ হবে?”

    “তুমি কি জানতে যে দোকানে কত টাকা ছিল?”

    “আমি কী করে জানব?” মেয়েটার গলায় জিদের আভাস দেখা দিল।

    “তবে থানায় এসে তিরিশহাজার টাকা লোপাট হওয়ার কথা বললে যে?”

    “আমাকে হেমন্ত বলেছিল।”

    “হুম। ক্যাশবাক্স মানে ড্রয়ারটা প্রথমে কে দেখেছিল?”

    “হেমন্তই।”

    “ভেবে বলো। ক্যাশবাক্স কে প্রথম দেখেছিল?”

    “ভেবে দেখেছি। হেমন্তই প্রথম দেখেছিল।” মেয়েটি রুক্ষভাবে বলল।

    “তুমি মিথ্যা কথা বলছ।”

    “আপনি ঠিক ভাবে কথা বলুন।” মেয়েটা ফুঁসে উঠে বলল।

    “আমি তো উত্তেজিত হওয়ার মত কোনো কথা বলিনি।”

    “আপনি না জেনেই আমাকে মিথ্যাবাদি বলছেন।”

    “কারণ তুমি প্রথম থেকে সব কথা ঠিক বলছ না। পুলিশকে ঠিক করে খুলে না বললে সমস্যায় পড়বে।”

    “আমি সব ঠিকই বলেছি।”

    বাইরের দরজায় আবার আওয়াজ হল। দরজায় আবার মতিদা!

    “কী হয়েছে দাদা?”

    মতিদার মুখ থমথম করছিল। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “একটা খুব খারাপ খবর আছে দর্শনা।”

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইলিয়াড – হোমার
    Next Article বিসাশন – পিয়া সরকার

    Related Articles

    পিয়া সরকার

    বিসাশন – পিয়া সরকার

    October 21, 2025
    পিয়া সরকার

    বিসাশন – পিয়া সরকার

    September 12, 2025
    পিয়া সরকার

    বৃশ্চিকচক্র – পিয়া সরকার

    September 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Our Picks

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }