এইবারে বাণ চিড়িয়া নামা— চট্
বৃষ্টি ক্রমাগত হয়েই চলেছিল। আমাদের জিপটা বাঘমুণ্ডির ঘন জঙ্গলের পথে এগোচ্ছিল। এ পথেই চেমতাবুরু শৃঙ্গ দেখা যায়, এ পথেই খয়রাবেড়া লেক।
“দাঁতালের আক্রমণে গতকাল দুই যুবক যুবতী মারা গেছে। দলমা থেকে চলে আসে তো এদিকে। বুনো হাতির গতিপথ বুঝতে বনদপ্তরের লোকজন আজ সকালে রেকি করছিল। তারাই নিশীথ মাহাতোর ডেডবডিটা আবিষ্কার করেছে।”
এই জঙ্গলের পথ এত সরু যে দুটো গাড়ি মুখোমুখি ঢুকে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম হয়। মতিদা ওয়ারলেসে ট্র্যাফিক রেস্ট্রিক্ট করার অর্ডার দিচ্ছিলেন। চেমতাবুরুর নিচে খয়রাবেড়া ড্যাম। চেমতাবুরু ছাড়াও গজাবুরু, কীর্তনীয়া, সিন্দ্রোলিয়া, প্রক্রিয়া পাহাড়, ব্লুম বেরি হিলসে ঘেরা এরিয়াটা। ডুংরির গায়ে এবং তলদেশ জুড়ে ঘন সবুজ জঙ্গল। আমাদের গাড়িটা খয়রাবেড়া বনপলাশী রিসোর্টকে পিছনে ফেলে সরু রাস্তাটা ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার এগিয়ে একটা পাথুরে ঢিবির পাশে গিয়ে দাঁড়াল। এখান থেকে বাকিটা হেঁটে উঠতে হবে।
রাস্তাটা খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে গেছে। আসলে ধরাবাঁধা রাস্তা নয়; যে যেভাবে পারে উঠবে। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁচড় পাচড় করে জংলী বুনো লতা মাড়িয়ে উঠেই বাঁদিকে নজর গেল। দুজন কনস্টেবল জায়গাটা কর্ডন করে রেখেছে। একটা আড়াইফুট লম্বা পাথরের আড়ালে পাঁচফুট বাই দুফুটের ঢালু একটা জায়গা, পাথরের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। জায়গাটার পাশ দিয়ে জমি আবার ঢালু হয়ে নেমে গেছে। সেখানে পাথরের ঢালে ঢালে ঘন জঙ্গল।
চারিদিক নিস্তব্ধ। বৃষ্টিটা একটু থেমেছে। কোথা থেকে যেন কাক ডাকছিল। যত এগোতে থাকলাম, কাকের কর্কশ চিৎকার স্পষ্ট হল। পাথরের ঢিবিটার গায়ে একটা বাবলা গাছ ছিল। কাকটা আমরা এগিয়ে দাঁড়াতেই উড়ে চলে গেল। আমি আরও এক পা এগিয়ে ঢিবিটার ওপারে কী আছে দেখার জন্য মুখ বাড়ালাম। আর সঙ্গে সঙ্গে পেটের মধ্যেটা ফাঁকা হয়ে গেল। এত দিনের ডিউটিতে এত নৃশংস কোনো কিছু কোনোদিন দেখিনি। পচা গন্ধে বমি উঠে এল। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এল। সামনের দিকে তাকিয়ে যা দেখছিলাম, তার আকার আয়তন ঠিক করে বুঝে উঠতে দেরি হল।
জমিটায় সদ্য মাটি কেটে একটা দুমিটার মত গভীর খাদ করা হয়েছে। বেশ কটা বাঁশের ফলা মাটিতে গাঁথা। আর সেই ফলাগুলোর মাথায় ঝুলছে একটা মানুষ। বাঁশের সূঁচালো ফলাগুলোয় তার উলঙ্গ শরীর এফোঁড় ওফোঁড়। ফলাগুলো যেখানে যেখানে বিঁধেছে, তার চারপাশে পুরু হয়ে রক্ত জমাট বেঁধেছে। উপুড় হয়ে থাকা, ঝুলন্ত শরীরটার ঘাড়ের কাছটা খুবলে খেয়েছে কোনো প্রাণী। সারা গায়ে থিকথিক করছে পোকা। মাথার পিছনদিকটায় রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। আমার হাঁটুদুটো কাঁপছিল। দূর থেকে একটা গাড়ির আওয়াজ পেলাম।
মতিদা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরে সামলে বললেন, ‘এ তো পানজি স্টেক!”
আমি আবার নিচে তাকিয়ে দেখলাম। বাঁশের কঞ্চিগুলো বেশ মোটা মোটা। তার ডগাগুলো অতি যত্নে চেঁছে সূঁচালো করা হয়েছে। গর্তটার চারপাশে কিছু ডালপালা পড়ে আছে। গর্তের মাটি কাদাটে। আমি আমার মুখ থেকে ঘাম মুছে বললাম,
“পানজি স্টেক কী?”
“গেরিলা ওয়ারফেয়ার টেকনিক। অরিজিনালি বড় জাতের প্রাণী মারার শিকার পদ্ধতি। মানুষ মারতে প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধে। খুব রিসেন্টলি ছত্রিশগড়ের মাওয়িস্টরা ইউজ করছে। কাঠের মধ্যে তিন চার ইঞ্চির পেরেক পুঁতে পথে ফেলে রাখে। গাছের পাতা দিয়ে ক্যামোফ্লেজ করা। পা পড়লে শেষ। কাউকে মারার হলে বাঁশের এরকম ফলা ব্যবহার করে। মেরে আধমরা করে ঝুলিয়ে রাখে। তারপর একটু একটু করে ব্লাড লস হয়ে মৃত্যু। ভয়ংকর পরিণতি!”
“মাই গড!”
“এই ধরণের বাঁশ এখানকার জঙ্গলে পাওয়া যায়। এখানেই তৈরি হয়েছে স্টেকগুলো।” মতিদার চেহারায় স্বভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত একটা ভয় আর গ্লানির ছাপ পড়েছিল। নিশীথ মাহাতোর ডেডবডির দিকে তাকিয়ে মতিদা বললেন, “কী ব্যাপার হল বলো তো! আবার কি নতুন করে সব শুরু হল?”
কিছু সম্মিলিত পায়ের শব্দ দ্রুত এগিয়ে আসছিল। একটু পরেই তিনজন অফিসারের সঙ্গে এক দীর্ঘদেহী, কৃষ্ণাঙ্গ, মানুষকে দেখতে পেলাম।
“উমানাথন।” মতিদা অস্ফুটে বললেন।
ডক্টর উমানাথন এগিয়ে এসে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, “কী ব্যাপার, জরুরি তলব যে?”
***
নিশীথ মাহাতোর ডেডবডি সরাতে সরাতে বেলা ঢলে এল। সমস্যা অনেকগুলো। এক বিকট গন্ধে কনস্টেবলদের পেটের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসছিল। দ্বিতীয় হল বডিটাকে পানজি স্টেকগুলোর থেকে মুক্ত করা। দুটো অপশন ছিল। এক বাঁশের ফলাগুলোকে মাটি থেকে উপড়ে ফেলা। দ্বিতীয়টা হল ফলাগুলো থেকে বডিটাকে টেনে বার করে আনা। উমানাথন অনেক ভেবে, দ্বিতীয়টার পক্ষে রায় দিলেন।
দীর্ঘক্ষণের কাজের পর একটা ঝিম মত এসেছিল সবার। বিকেলের শেষ আলোয় ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত, চিন্তিত, ক্ষুধার্ত মুখগুলো চুপচাপ কাজ করে চলছিল। বিশাল একটা ক্রাউড জমেছিল ক্রাইমসিনের চারধারে। ফোর্স দিয়ে সেসব হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিডিয়ার লোককেও এত অবধি অ্যালাউ করা হচ্ছে না। তবে যেভাবেই হোক, ক্রাইম সিনের ফুটেজ তারা জোগাড় করবেই, এ কথা জানা। জনমোর্চা কংগ্রেসের জেলা সভাপতি একঘণ্টা আগে ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে গেছেন। সাধারণত এই ধরণের ঘটনায় বিরোধী পার্টির সঙ্গে একটা চাপানউতোর চলে। গুলিগোলা চালিয়ে পলিটিকাল মার্ডার হলে তো কথাই নেই। মিডিয়াকে ব্যবহার করে নিজেদের অস্ত্রে শান দেন নেতারা। তবে, নিশীথ মাহাতোর খুনটা এত নৃশংস, যে কোনো পক্ষ থেকেই ইমিডিয়েট কোনো কমেন্ট আসবে বলে মনে হয় না। জেলা সভাপতির স্তম্ভিত, বিভ্রান্ত চেহারা দেখে মনে হল পার্টিও বোধহয় ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ টেকনিক অবলম্বন করবে।
মতিদা আমার সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ আলোচনা করছিলেন। ডগ ইউনিট কোনো স্মেল পায়নি। এই পথে কোনো ট্যুরিস্ট আসে না। বনদপ্তরের লোক মাঝে মাঝে টহল দেয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে পাণ্ডববর্জিত জায়গা। আশেপাশের জায়গাগুলো থেকেও সেরকম কোনো ক্লু পাওয়া গেল না। গতটায় পায়ের ছাপ লাগলেও বৃষ্টি পড়ে কাদা হয়ে সব নষ্ট হয়ে গেছে। আশেপাশের কাটা ডালপালাগুলো দিয়ে গর্তটা ঢেকে আড়াল করা ছিল। যথাসময়ে সেগুলো সরিয়ে, বডি উপর থেকে ডাম্প করে ফেলা হয়েছে।
“কিছু কি বুঝতে পারলি দর্শনা?” মতিদা হাতের কপিটায় কাটাকুটি কাটতে কাটতে জিজ্ঞাসা করলেন। মতিদার গলায় আনপ্রফেশনাল তুইটা শুনতে ভালো লাগছিল।
“আপনি যা বুঝেছেন তার থেকে বেশি কিছু না। খুব ওয়েল প্ল্যানড একটা মার্ডার! মোটামুটি তিনটে সিদ্ধান্তে আপাতত পৌঁছানো যাচ্ছে!”
মতিদা আমার দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন।
“এক, যে বা যারা এটা করেছে তারা নিশীথবাবুর প্রতিটা অ্যাক্টিভিটি ক্লোজলি খেয়াল করেছে। দুই, খুনী প্রথম থেকেই নিশীথ মাহাতোকে মারতেই চেয়েছে। কিডন্যাপিংয়ের এক ও একমাত্র উদ্দেশ্য এটাই ছিল। টাকা মিসিং থাকাটাকে আমি এই ভয়ানক খুনের ব্যাকগ্রাউন্ড বলে ভাবতে পারছি না।” আমি চুপ করে গেলাম।
“তুই তিনটে সিদ্ধান্তর কথা বলেছিলি।”
“খুনী শুধু নিশীথ মাহাতোর প্রাণ নিতেই চায়নি। সে ভয়ঙ্কর একটা মৃত্যু ডিজাইন করেছিল। জানি না এভাবে কতক্ষণ নিশীথ মাহাতো বাঁশের ফলার উপর ঝুলেছিলেন। হয়তো ডাক্তার বলতে পারবেন।”
উমানাথন একমনে কাজ করেছিলেন। সেদিকে তাকিয়ে মতিদা অন্যমনস্কভাবে বললেন, “খুব বীভৎস একটা মৃত্যু, দর্শনা।”
“হ্যাঁ মতিদা।”
“মাওয়িস্টরা ছাড়া আর কে এভাবে! কিন্তু এবার তো কোনো ক্লেইম নেই ওদের তরফে! ঠিক বুঝতে পারছি না।”
“হেমন্ত আর সোনালি মাহাতোর স্টেটমেন্ট কিন্তু মিলছে না মতিদা। আরও গ্রিল করলে রেলিভ্যান্ট কিছু বেরিয়ে আসবে।” আমি বললাম।
“আমরা সবাই তো এখানে। বিভাসকে বলে এসেছি দফায় দফায় হেমন্তকে জেরা করতে। সোনালির ব্যাপারটা কাল তুমি আর আমি সামলে নেব।”
উমানাথন হাতের গ্লাভস খুলে এগিয়ে আসছিলেন। কনস্টেবলরা প্রতিটা বাঁশের ফলা প্লাস্টিকে মুড়িয়ে সাইডে সরিয়ে রাখছিল। নিশীথ মাহাতোর বডিটাকে চিত করা হয়েছে। সারা শরীর সাদা, ফ্যাটফ্যাটে। মুখের চামড়া কুঁচকে রয়েছে, অথচ চোখদুটো ফুলে বীভৎস আকার ধারণ করেছে। নাকের ফুটো আর কষের ধার থেকে শুকনো রক্ত লেগে রয়েছে মুখে। ইন্টারনাল অর্গান রাপচারের চিহ্ন এসব।
“টাইম অফ ডেথ অ্যাপ্রক্সিমেটলি এইট্টি আওয়ারস এগো। কজ অফ ডেথ অবভিয়াস। হি ওয়াজ পুট অ্যালাইভ অন দিজ স্টেকস। পি.এমে বাকিটা লিখবো।” উমানাথন আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন। ভদ্রলোকের শান্ত বডিল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বোঝার উপায় নেই উনি টানা চারঘন্টা কাজ করে এসেছেন। চোখদুটো লালচে, অথচ চকচক করছে। আমি হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে বললাম, “নমস্কার। বিধুর কাছে থেকে আপনার কথা অনেক শুনেছি। অসীমের কাছ থেকেও।”
বিধু বা অসীমের নামে ভদ্রলোকের মুখে আলাদা কোনো এক্সপ্রেশন ফুটে উঠল না। খুব তীব্রদৃষ্টি নিয়ে উনি নিশীথ মাহাতোর ডেডবডি দেখছিলেন। ঠিক কী যেন ওঁর চোখে দেখলাম…উল্লাস আর জিঘাংসা মিলে মিশে যে আবেগটা তৈরি হয়, তার ছাপ অন্য কোথাও না পড়লেও, চোখের তারায় আর হাতের মুঠোয় পড়ে। ডক্টর উমানাথন ওঁর মুঠোদুটো শক্ত করে ছিলেন।
আমি বলে উঠলাম, “নিশীথ মাহাতোকে তো চিনতেন? কী মনে হয়?” উমানাথনের মুখে খুব চাপা একটা হাসি খেলে গেল। তারপর বললেন, “পুলিশকে খুনের তদন্তে সাহায্য করতে পারি, ততটা বোধহয় চিনতাম না।”
মতিদার ফোন বাজছিল। কানে লাগিয়ে বললেন, “হ্যাঁ পাওয়া গেছে…. জেরাটা কন্টিনিউ করছ তো?” ওপাশ থেকে যে কথা এল সেটা শুনে ভুরু কুঁচকে বললেন, “কী বলছ বুঝতে পারছি না।”
বিভাস বোধহয় আবার কোনো কথা বলল। মতিদা খুব উত্তেজিত হয়ে বললেন, “হোয়াট!”
মতিদা কান থেকে ফোন নামিয়ে আমার দিকে তাকালেন। দুচোখে অবিশ্বাসের দৃষ্টি।
***
হেমন্ত মাথাটা খিমচে ধরে বসেছিল। চোখদুটো টকটকে লাল, মুখে কালি পড়ে গেছে। মতিদা চেয়ার টেনে সামনে বসে বললেন,
“যা বলছিস ভেবেচিন্তে বলছিস?”
হেমন্ত হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। ভাঙা গলায় বলল, “আমি আর পারছি না স্যার। আমি কিছু করিনি। আমাকে ছেড়ে দিন স্যার।”
“টাকাটা কোথায়?” মতিদা চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন।
“বাড়িতে স্যার। আমি একটাকাও খরচা করিনি, মাক্কালি বলছি স্যার।”
“প্রথম থেকে বল। একটা কথাও যেন মিস না হয়। নাহলে সোজা ঠাণ্ডা ঘরে চালান হয়ে যাবি, কেউ টের পাবে না হেমন্ত।” মতিদার গলায় বরফের শীতলতা।
“বলছি স্যার। সেদিন দুপুরে দোকান খুলে দেখি আলমারির কাচ ভাঙা। সারা ঘরে রক্ত ছড়িয়ে। বৌদি তখন স্যারের ফোন বারবার ট্রাই করছিল।”
“শুধু স্যারকেই ফোন করছিল?”
“আরও কার কার নাম্বার ট্রাই করেছে জানি না।” হেমন্ত হাঁপাচ্ছিল।
“তারপর বল।”
“তারপর বৌদি আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আগের রাতে কটায় বেরিয়েছি? বেরোনোর সময় কাউকে দেখেছি কিনা?”
“তুই কী বললি?”
“বলেছি তো স্যার। আগের স্যারকে গত দুঘন্টা ধরে বলেছি।” হেমন্ত কাঁচুমাচু মুখ করে বলল।
“শালা বানচোদ!” মতিদা উঠে কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগালেন হেমন্তকে। “যতবার জিজ্ঞাসা করব ততবার বলবি হারামি।”
“স্যার…” হেমন্ত থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “অসীম স্যার এসেছিলেন দোকানে। আমি বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগেই।”
“কোন অসীম?”
“স্যার থানার অসীম স্যার।”
“তুই চিনিস?”
“হ্যাঁ স্যার। আগেও এসেছেন অনেকবার।”
“ঠিক করে বল। তোর দাঁত ভেঙে দেব মেরে।” মতিদা বাঘের মত এগিয়ে গেলেন হেমন্তর দিকে। হেমন্ত হাত তুলে নিজের মুখ বাঁচালো।
বিভাস মতিদার কানে কানে কিছু একটা বলল। আমি জানতাম ও কী বলছে। সোনালি মাহাতোর কল রেকর্ডস অলরেডি আমি দেখে ফেলেছি। দেড়টা থেকে আড়াইটে অবধি অসীমের নাম্বারে ট্রাই করেছে মেয়েটি। ফোন সুইচড অফ ছিল। আর নিশীথ মাহাতোর কল রেকর্ডসে জ্বলজ্বল করছে অসীমের নাম্বার। রাত এগারোটা পনেরোয় কল করেছে অসীম। বিভাসের এই পয়েন্টে সন্দেহ হয়, আর ও হেমন্তকে চেপে ধরে।
মতিদা কল লিস্টের পাতা উল্টে গম্ভীর হয়ে গেলেন।
“টাকাটার কী হল বল!”
“বৌদি…বৌদি…” হেমন্ত ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল, “বৌদি বলল এই ড্রয়ারের টাকাগুলো তুই রাখ। পুলিশ কিছু বললে বলবি ড্রয়ারে এত টাকা ছিল, এখন নেই। নিজেই আলমারি থেকে বাক্সগুলো বার করে মেঝেতে ছড়িয়ে দিল। বলল, অসীম স্যারকে দেখেছি কাউকে বলার দরকার নেই।”
“ড্রয়ারে কত টাকা ছিল কী করে গুনলি?”
“গুনিনি স্যার; যা ছিল সব ব্যাগে করে বাড়ি নিয়ে এসলাম। এখনও জানি না কত টাকা আছে।”
“তাহলে তিরিশ বললি কেন?”
“বৌদি বলল।’
“বৌদি টাকা গুনেছিল?”
“না।”
“তবে?”
“বিল বই দেখে বলল, যা আছে তুই নিয়ে যা হেমেন। শুধু পুলিশকে বলবি, টাকা ছিল এখন নেই।”
“এতক্ষণ ধরে সাজানো কথা বলছিলিস কেন?”
হেমন্ত মুখ গুঁজে থাকল। কোনো উত্তর দিল না। “টাকার লোভ?”
“আমি খুব গরীব স্যার। দোকানে পাঁচ হাজার টাকা পাই। বাড়িতে এগারোটা মেম্বার। ঠিকমত খাবার জোটে না।” হেমন্ত হু হু করে কেঁদে উঠল।
শ্যামল ব্যানার্জি দরজা ঠেলে ঢুকলেন। মুখে একটা হাসি হাসি ভাব। মতিদার কাছে এসে বললেন, “অসীম হোলির দিন ডিউটিতে আসেনি। পরের দিনও নয়। ওর ডান হাতটা কিন্তু কেটে গেছে স্যার। এখনও ব্যান্ডেজ জড়ানো। কোথাও গিয়ে হাতাহাতি করেছিল নাকি…” বাঘমুণ্ডি থানার এস.এইচ.ও তাঁর কথা শেষ করলেন না। তাঁর এবড়োখেবড়ো দাঁতের উপর নরমাংস ভক্ষণের মত উদগ্র উল্লাস কিলবিল করে উঠল।
