Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বৃশ্চিকচক্র – পিয়া সরকার

    পিয়া সরকার এক পাতা গল্প320 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    আদিম কালের চাঁদিম হিম

    টেবিলের উপর নিশীথ মাহাতোর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা জিনিসগুলো রাখা ছিল। বিশেষ কিছু না, খানদশেক ফাইল, অজস্র রিসিপ্ট, ডাক্তারি কিছু ডকুমেন্ট এবং একটি অ্যাটাচিকেস। কী গুরুত্ব থাকতে পারে এগুলোর! অ্যাটাচিকেস আর ডায়েরিটা সোনালি কোনোদিন দেখেনি বলছে।

    বাদামি ডায়েরিটার পাতা আরেকবার উল্টে দেখলাম। সামনে পিছনে কোথাও মালিকের নাম লেখা নেই। হলদে হয়ে যাওয়া পাতায় নীল, সবুজ, কালো, লাল বিভিন্ন রঙয়ের কালি ব্যবহার করে লেখা। ট্যাঁশ গরু, আহ্লাদী, কুমড়োপটাশ, কাঠবুড়োর ছবি কোনোটা পেনসিল স্কেচ, কোনোটা প্যাস্টেল করা। ডায়েরিটায় এন্ট্রি শুরু হয়েছে ৫ই জুন ২০০৪, শেষ হয়েছে ২০শে আগস্ট, ২০০৫। সেসময় নিশীথ মাহাতো এরিয়া কমান্ডার ছিলেন। কার লেখা হতে পারে এই ডায়েরি! কোনো মাস্টারমশাইয়ের কি? যিনি সুকুমারের মত শিশুপাঠ্য ছড়া লিখতেন? নিজের খেয়ালে গোটা ডায়েরি জুড়ে আঁকিবুকি কেটে গেছেন ভদ্রলোক। প্রথম দিকের ছড়াগুলো চনমনে …

    “চলতে গিয়ে কেউ যদি চায়
    এদিক ওদিক ডাইনে বাঁয়
    ধাইধপাধপ চলবে গোলা
    দেওয়ালজোড়া কানের মেলা”

    পরেরগুলো একটু বিষণ্ণতা মাখা, যেমন এটা…

    “বিদঘুটে রাত্তিরে ঘুটঘুটে ফাঁকা,
    গাছপালা মিশমিশে মখমলে ঢাকা।
    জটবাঁধা ঝুলকালো বটগাছতলে,
    ধকধকে জোনাকির চকমকি জ্বলে,
    ছায়াগুলো কানেকানে ফিশফাশ হাসে,
    রোগারোগা মুখে শুধু দানা-পানি ঠোসে,
    পুবদিকে মাঝ রাতে ছোপ দিয়ে রাঙা
    গরীবের চাঁদ ওঠে আধখানা ভাঙা।”

    বা শেষের যে কবিতাটি! সেটা বাকিগুলোর থেকে কেনই বা এত অন্যরকম!

    “মিথ্যে লড়াই মিথ্যে ফাইট
    ভেল্কি, ফাঁকি, অলরাইট।
    শেকহ্যান্ড আর দাদা বল
    সব শোধবোধ ঘরে চল।”

    হতাশা, অপ্রাপ্তি, বঞ্চনার ছাপ স্পষ্ট কবিতাটায়! ডায়েরি লেখাটা কেমন যেন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেছে। নিশীথ মাহাতো কেন এতগুলো বছর ধরে এই ডায়েরি নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছেন! আদৌ কোনো গুরুত্ব আছে কী! ঘটনাক্রম যেদিকে এগোচ্ছে, সেদিকে এগোতে এই ডায়েরির রহস্যোদ্ধার কতটা জরুরী তা বোঝা যাচ্ছে না। মতিদা যদি কিছু বলতে পারেন।

    অসীম, সোনালি আর নিশীথের ছায়া ত্রিকোণটা থেকে কেসটাকে সরিয়ে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। নিশীথ মাহাতোর চরিত্রটাকে মনে মনে একটা ব্লেডের তলায় রেখে নিপুণহাতে কাঁটাছেড়া করতে ইচ্ছা করছিল। পনের বছর আগে যে মানুষ সশস্ত্র প্রতিষ্ঠানবিরোধী, পনের বছর পর সে দমদার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব! বিধুর কথাগুলো মনে পড়ল। চাপা রাগ, ক্ষোভ জমে জমে সত্যি কি এমন ভয়াবহ খুনের কারণ তৈরি হয়! কত গভীরে গিয়ে সেই রাগের কারণ খুঁজতে হবে তা বুঝতে পারছিলাম না। মূল সমস্যা তথ্যপ্রমাণের অভাব। গিরগিটির মত ভোলবদল করা, সমাজসেবার আড়ালে সাধারণ মানুষের অসহায়তার সুযোগ নেওয়া, ভুঁইফোড় রিসোর্টের গ্রাসে গরীবলোকের জমিকে সহজে বিলিয়ে দেওয়া লোকটাকে খুন করার ইচ্ছা নিশ্চয়ই অনেকজনের হয়েছিল, কিন্তু ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রূপ দিল কে! ডায়েরিটার দিকে আবার নজর পড়ল। এর মালিকেরও কি নিশীথের প্রতি রাগ ছিল? যদি থাকে তবে নিশীথ ডায়েরিটাকে স্যুভেনির বানিয়ে নিজের কাছে রেখেছিলেন কেন! সেটা তো তাঁর চরিত্রবিরোধী। পুড়িয়ে দিলেই সমস্যা মিটে যেত।

    নিশীথ মাহাতোর কল রেকর্ডসে চোখ বুলাতে শুরু করলাম। সেরাতে রাত সাড়ে এগারোটার পর কোনো কল হয়নি। অসীম যদি খুন না করে থাকে, তবে কে সেই ব্যক্তি যার জন্য নিশীথ মাহাতো গভীর রাতে পিছনের দরজা খুললেন। কেন খুললেন!

    একটা খুন হল, খুনের সম্ভাব্য কারণ আন্দাজ করা যাচ্ছে, অথচ সূত্র নেই। নিজেকে সেই ফুটবলারের মত মনে হল, যার সামনে গোলপোস্ট তো রয়েছে কিন্তু ফুটবলটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। পাশে দিব্যজ্যোতি বসে মোবাইলে খুটুর খুটুর করছিল, ওর সঙ্গে এদিক ওদিকের কথা বলতে শুরু করলাম। কিন্ত মোল্লার দৌড় মসজিদ অবধি। ঘুরে ফিরে কথা সেই অসীম, সোনালি আর নিশীথ মাহাতোতে গিয়ে ঠেকল। কেসটায় পরকীয়ার গন্ধ লেগে যাওয়ায় পুলিশ মহলেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

    পাশের ঘর থেকে শ্যামল ব্যানার্জির চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসছিল। পুলিশের একটা পি.সি.আর ভ্যান থানার কাছে খারাপ হয়েছিল। সেটাকে সারিয়ে পুরুলিয়া ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব ছিল বিধুর উপর। পুরুলিয়া থেকে ফোন করে বলেছে, যে গাড়িটা সদ্য গ্যারেজ থেকে সারিয়ে পাঠানো হয়েছে, সেটায় নাকি একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিধুর নাম ধরে গালিগালাজ করছিলেন এস.এইচ.ও। থানা থেকে পেমেন্টের জন্য টাকা নিয়ে গেছে অথচ ঠিকমত কাজ করায়নি। আমার খারাপ লাগলেও চুপ করে থাকলাম। যে ছেলে সম্পূর্ণ অপরিচিত একজনকে নিজের পকেট থেকে টাকা খরচা করে ভাবরাভাজা খাওয়ায়, সে সামান্য কটা টাকা ঝেঁপে দেওয়ার জন্য এরকম করবে আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।

    সাতটা বেজে গিয়েছিল। ওয়ারলেসের বিপ বিপ, হুটারের শব্দ, বহু মানুষের হাঁটাচলা, থানার করিডরের কম পাওয়ারের বাল্বের আলো, দূরের কোনো মাইক থেকে ভেসে আসা গানের ক্ষীণ আওয়াজ…এ সবই আমাকে আরও ক্লান্ত করে তুলছিল। রুমে ফিরে একপ্রস্থ রান্নাবান্না করতে হবে ভেবে গায়ে জ্বর আসছিল। হঠাৎ বিভাসকে দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকছে। এক কনস্টেবলকে আমি আর মতিদা কোথায় জিজ্ঞাসা করল। কিছু একটা সমস্যা হয়েছে ভেবে, আমি উঠে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ালাম।

    বিভাস আমাকে দেখতে পেয়েছিল। হাঁটার স্পিড বাড়িয়ে, এগিয়ে এসে হাতে একটা পেন ড্রাইভ তুলে দিল। ওর চোখ মুখ বলছিল কিছু একটা আশ্চর্য জিনিস পাওয়া গেছে, থ্রিলার সিনেমার ঠিক মাঝামাঝি যেমন সিনেমার গতিপথটা বোঝা যায়।

    ডেস্কটপে ড্রাইভটা থেকে প্লে করতেই একটা নাইট ভিশন ফুটেজ দেখতে পেলাম। ডেটটা ২৮শে মার্চ, সোমবার। দোলের আগের দিন। স্ক্রল করে টাইমটা সাতটা কুড়িতে নিয়ে এল বিভাস, আর স্ক্রিনের দৃশ্যে সাদা পাঞ্জাবী পায়জামা পরা এক ব্যক্তিকে দেখা গেল। বাইক থেকে নেমে চারিদিকে দেখতে দেখতে খয়রাবেড়ার জলের দিকে এগিয়ে গেল। পিছনে আরেকজনকে দেখতে পেলাম। হীরক দত্ত দ্রুত পা চালিয়ে আসছেন লেকের দিকে। সাদা পাঞ্জাবির লোকটার হাতে একটা মাঝারি মাপের পুঁটুলি মত ছিল। আরেকবার চারিদিকে তাকিয়ে জলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। তারপর পিছনে ঘুরতেই হীরক দত্তর সঙ্গে দেখা হল। হীরকবাবু এগিয়ে গিয়ে কী একটা জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিলেন, লোকটা উত্তর না দিয়ে দ্রুত পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। হীরকবাবু লোকটাকে থামিয়ে কী যেন জিজ্ঞাসা করতে গেলেন, লোকটা এবার হাত দিয়ে হীরক দত্তকে সরিয়ে দ্রুত বাইকের দিকে এগিয়ে গেল। বাকিটা নিরঞ্জনের জবানবন্দীর মত। টাল সামলাতে না পেরে হীরকবাবু পড়ে গেলেন। বিভাস এই পয়েন্টে এসে ভিডিও পজ করে দিল।

    জুম টুল ব্যবহার করে ম্যাগনিফাই করে, আবার প্লে করল। সাদা পাঞ্জাবির লোকটার মুখ এবার প্রায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।

    “কী মনে হচ্ছে?” আমি বিভাসের দিকে তাকিয়ে বললাম।

    ও মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি সিওর।”

    ওর সঙ্গে আমার অর্থবহ দৃষ্টি বিনিময় হল, আমি মতিদাকে ফোন করার জন্য মোবাইলটা তুললাম।

    ***

    “এতে নতুন কী লাভ হবে বুঝছি না।” মতিদা বিরক্তিতে মাথা নাড়ালেন। ভিডিও থেকে ফ্রেম ফ্রিজ করে একটা প্রিন্টআউট বার করা হয়েছিল। সাদা পাঞ্জাবিতে নিশীথ মাহাতো বাইক থেকে নামছেন।

    “সোনালি মাহাতোকে এটা দেখিয়েছ? কিছু বলতে পারল?” মতিদা জিজ্ঞাসা করলেন।

    “না। কিছু জানে না বলছে। তাছাড়া সেসময় ও…”

    “বাপের বাড়িতে ছিল। জানি আমি।” মতিদা আমাকে থামিয়ে দিলেন। ওঁর ঠোঁটদুটো ভাঁজ হয়ে একটা বিশেষ আকার নিয়েছিল, যাতে বুঝলাম মতিদা ছবিটা নিয়ে ভাবছেন।

    “কী ফেলতে এসেছিল সেটা জেনে কী লাভ হবে দর্শনা? কতকিছু হতে পারে…কেসের সঙ্গে লিঙ্কটা করতে হবে তো…” মতিদা সরাসরি আমার দিকে তাকালেন।

    আমার ভিতরে ভিতরে অসহায় লাগছিল। যদি সম্ভব হত, আজই এখনই খয়রাবেড়ার জলে ডুবুরি নামাতাম। আপাতত এই হাঞ্চটুকুকে জাস্টিফাই করার জন্য মনের ভিতরে ঘুঁটি সাজাচ্ছিলাম।

    “আসলে অসীমকে নিয়ে একটা ডাউট থেকেই যাচ্ছে…” আমি একটু কিন্তু কিন্তু করে বললাম।

    “কীসের ডাউট! এখন তো মোটিভটা আরও স্পষ্ট। ঘুষের টাকা নিয়ে মন কষাকষি, রাগারাগি…তারপর খুন। ডাউট কোথায় বল?”

    “অসীমের মতো একজন অফিসার এত কাঁচা কাজ করবে বলে বিশ্বাস হয় না, আমি আপনাকে আগেই একথা বলেছি। তাছাড়া বড়ি কীভাবে অকুস্থল থেকে সরানো হল? মার্ডার ওয়েপন কী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তো এখনও পাইনি আমরা!”

    “সেটা তদন্তসাপেক্ষ। আমাদেরই ফেলিওর। অসীমকে এস.পি অফিসে জেরা করা হচ্ছে, নিশ্চয়ই কিছু বেরিয়ে আসবে।” মতিদা কাঠ কাঠ ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন।

    “আর ওর জামাকাপড়ের ফরেন্সিক রিপোর্ট এসেছে?”

    “নাহ। মিনিমাম দু সপ্তাহ লাগবে।”

    “ওহ!”

    আমার কণ্ঠস্বরে বোধহয় সামান্য ধৈর্যচ্যুতি মিশেছিল, মতিদা ভুরু তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “এছাড়া আর কিছু বলবি?”

    আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, “হ্যাঁ…অসীম ওর স্টেটমেন্টে বলেছে যে যখন ও পলাশপ্রিয়ায় ঢোকে, তখন নিশীথ মাহাতো হিসেব করছিলেন। খেতে বসেছিলেন নিশ্চয়ই তার পরে, যেহেতু খাবারের আধখাওয়া থালাটা স্টুলে রাখা ছিল। তর্কাতর্কি করতে করতে খাবার খাবেন না ধরে নিচ্ছি।”

    মতিদা চোখ কুঁচকে শুনছিলেন। ফাইল থেকে কী মনে হওয়াতে পি.এম রিপোর্টটা বার করলেন। দু পাতা উল্টিয়ে বললেন, “হুম। নিশীথের পেটে অপাচ্য খাবার পাওয়া গেছে।”

    “তার মানে আততায়ী অসীমের বেরিয়ে যাওয়ার পরে আসতে পারে? যখন নিশীথ খেতে বসেছেন?”

    মতিদা হেসে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বললেন, “অসীম যদি নিজেই ঘুরে আসে, তবে তোর এই যুক্তিটা খাটছে না দর্শনা।”

    আমি মরিয়া হয়ে বললাম, “খাটছে মতিদা। অসীম যদি খুনী হয়, তবে লাখখানেক টাকা ফেলে গেল কেন? বোনের বিয়ের জন্য লোনের টাকা থেকে তুলে এনেছিল এক লাখ, এত সহজে ছেড়ে যাবে! আমি সিওর কারেন্সিগুলোর নাম্বার অসীমের ব্যাঙ্ক উইথড্রয়ালের সঙ্গে মিলে যাবে।”

    মতিদা যুক্তিটা মনের মধ্যে নিয়ে নাড়াচাড়া করলেন। তারপর বললেন, “তুই কী চাইছিস বল?”

    “একটা ডুবুরি নামান খয়রাবেড়াতে। আমার বিশ্বাস এই কেসের লিঙ্ক, লেকের জলের অতলে তলিয়ে আছে।”

    “বেশ। এই লাস্ট কিন্তু। কোনোকিছু সাবস্ট্যানশিয়াল না পাওয়া গেলে অসীমের বিরুদ্ধে চার্জশিট ফাইনাল করে ফেলব। তুই কিন্তু ব্যাগড়া দিতে পারবি না।” আমি ফিকে হেসে বললাম, “অগত্যা।”

    ***

    খয়রাবেড়ার আসল নাম কায়রাবেড়া। স্থানীয় ভাষায় কায়রা মানে কলা, আর বেড়া মানে জঙ্গল। পুরুলিয়া জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট হয়ে ওঠার পরপরই, স্থানীয় উপভাষায় দেওয়া নামগুলো বদলে গেছে। মুররাবুরু হয়েছে পাখি পাহাড়, পাটালবাঁধ হয়েছে মার্বেল লেক, ঠুড়গা ড্যাম হয়েছে টুরগা ড্যাম। স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ আছে বিস্তর।

    খয়রাবেড়ার জল সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতি এত নির্জন এখানে, যে দূরে একটা কাক ডাকলেও শোনা যায়। পথে পলাশের জঙ্গল পেরিয়ে এসেছি। আগুনরঙা পলাশে অসহ্য রূপসী চারধার, দেখলে চোখ ঝলসে যায়। লেকের জল বরং স্নিগ্ধ, ঘন সবুজ তার রঙ। লেকের ঠিক পিছনে বনপলাশী রিসোর্ট আর সেই অভিশপ্ত পাহাড়। চেমতাবুরু আর বারা পাহাড়ের শৃঙ্গ দেখা যায় নিচ থেকে।

    খয়রাবেড়ার টলটলে জলে ডুবুরি অনেকক্ষণ ধরে তোলপাড় করছিল। এপার ওপার হাতড়িয়ে বিরাট লেকের জলে হাবুডুবু খাচ্ছিল ওরা। মধ্যিখানটায় জল বেশ গভীর। লেকের জল যে নিস্তরঙ্গ থাকে তাও নয়। বনপলাশীর নিজস্ব বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। ট্যুরিস্টরা সে সুবিধা নেন। এছাড়াও সেচ দপ্তর ক্যানালে জল ছাড়লে লেকের জল কমে বাড়ে। জিনিসটা ভেসে যদি কোথাও চলে গিয়ে না থাকে, তবে ঝিলের নিচে পাঁকে আটকে থাকার আশা আছে।

    বেলা গড়াচ্ছিল। ঘড়ি প্রায় সকাল দশটা ছুঁই ছুঁই। আমরা সাতটা থেকে এখানেই পড়ে ছিলাম। ব্রেকফাস্ট হয়নি। দুজন ডুবুরি নেমেছিল, কিছু পায়নি তারা। এই লোকটি তৃতীয়। বারবার ডুব দিচ্ছে আর কিছুক্ষণ পর পর দম ছেড়ে উঠে আসছে।

    মতিদা একটা চেয়ারে বসে খানিকক্ষণ তদারকি করে উঠে গেছেন। বিভাস দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আমি একা ঠায় দাঁড়িয়েছিলাম। যত সময় গড়াচ্ছিল, হতাশা জাঁকিয়ে বসছিল। লেকের জল ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করে পাড়ে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাচ্ছিল।

    মতিদা কোথা থেকে ঘুরে পাশে এসে দাঁড়ালেন। হাতের ঘড়ি দেখে বললেন, “তাহলে উঠে আসতে বলি?”

    আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে হ্যাঁ বললাম। আর ঠিক তখনই ঝিলের উত্তর পশ্চিম কোণ থেকে হাতটা উঠল। ডুবুরি সংকেত দেখাল কিছু পাওয়া গেছে। মিনিট দশেক পরে, নীল প্লাস্টিকে মোড়া, সাদা নাইলন দড়ি দিয়ে বাঁধা একটা ভারি প্যাকেট জল থেকে তুলে এনে আমাদের পায়ের কাছে ফেলল ডুবুরি।

    প্যাকেটটা খুলতে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। বিভাসের মুখ থেকে একটাই শব্দ বেরোল, “গাঁড় মেরেছে!” কথাটা বলে বিভাস মতিদার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল।

    কিন্তু মতিদা এতই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে ওঁর কানে সেকথা ঢুকল না। অস্ফুট স্বরে বললেন, “এগুলো কী!”

    নীল প্লাস্টিকে মোড়া প্যাকেটটায় একটা লোহার ছোট সলিড রডের সঙ্গে মানবশরীরের গোটাকয়েক হাড় রাখা। পাঁজরের হাড়, হাতের আলনা, রেডিয়াস, পায়ের ফিমার বোন এগুলো চিনতে পারলাম। হাড়গুলো ক্ষয়ে গিয়েছে বেশ, দেখে মনে হল কোনো হিউমিড জায়গায় রাখার ফলে ছিদ্রযুক্ত হয়ে গিয়েছে। হাড়গুলোকে ডুবিয়ে রাখার জন্য লোহার রডের সঙ্গে ফেলা হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ থাকল না।

    মতিদা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। রুমাল দিয়ে ঘাড় মুছে বললেন, “কেস তো জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। কিছু বুঝতে পারছিস?”

    আমি হাড়গুলো ক্লোজলি দেখছিলাম। হলদেটে রঙের হাড়গুলো ক্ষয়ের ফলে বিশ্রীভাবে বিকৃত। দেখে মনে হয় চাপ পড়লেই গুড়ো গুড়ো হয়ে যাবে। মানুষের হাড় তো নিশ্চয়ই, কিন্তু এই কটা কেন! গুনে দেখলাম সাকুল্যে ১৩ ১৪টা টুকরো হবে। বাকিগুলো তবে কোথায় গেল!”

    বিভাস প্লাস্টিকটার সামনে উবু হয়ে বসে দেখছিল। একটা হাড় সাবধানে হাতে তুলে নিয়ে বলল, গায়ে কী সব কালচে ছোপ লেগে আছে স্যার। এরকম তো আগে দেখিনি!”

    মতিদা গম্ভীর হয়ে ভাবছিলেন। বিভাস হাড়গুলোকে দেখতে দেখতে বলল, “ইতালির এক পাগল খুনীর কথা পড়েছিলাম স্যার। লোকটা সারা জীবনে সাঁইত্রিশটা খুন করে বডিগুলোকে নিজের বাড়ির উঠোনে পুঁতে দিয়েছিল। তারপর সেগুলো স্কেলিটন হয়ে গেলে, সেগুলো থেকে হাড়গোড় খুলে খুলে শহরের এদিক ওদিক ফেলে রাখতো। পুলিশ খুঁজে খুঁজে হয়রান হত। কিন্তু নিশীথ মাহাতো কেন গোনাগুনতি হাড় এনে লেকের জলে ফেললেন, সেটা তো বুঝছি না স্যার!”

    মতিদা বিভাসের কথাটা একেবারে উড়িয়ে দিলেন না। বললেন, “বডি পার্টস কেটে এদিক ওদিক ছড়িয়ে রাখার অনেক কেস হিস্ট্রি পাবে। পনেরো ষোলো বছর আগে আমাদের পুরুলিয়াতেই এসব হতে দেখেছি। কিন্তু হাড় এভাবে…”

    আমি হাড়গুলো আইডেন্টিফিকেশনের কথা ভাবছিলাম। পুলিশ অ্যানালে এরকম বহু কেসের কথা পড়েছি। সম্ভাব্য ভিকটিমের নাম জানা গেলে, তার ছবির ফেশিয়াল ফিচারের সঙ্গে খুলির ছবির ডিজিটাল সুপারইমপোজিশন ঘটিয়ে বহু ক্ষেত্রে আইডেন্টিফাই করা হয়েছে। বাঘা বাঘা সফ্টওয়্যারের যুগে এখন এসব জল ভাত। কিন্তু কঙ্কালটা যদি পুরো না পাওয়া যায়, বিশেষতঃ খুলিটাই যদি গায়েব থাকে, তবে কীভাবে আইডেন্টিফিকেশন সম্ভব!

    মতিদার দিকে তাকিয়ে বললাম, “ফরেন্সিকে দেওয়া যাক। অন্তত কত বছরের পুরোনো তো জানা যাবে। তার থেকে যদি কোনো সূত্র পাই…”

    মতিদা মাথা নাড়িয়ে বললেন, “অ্যাপ্রক্সিমেট টাইম অফ ডেথ, মৃত্যুর সময় ভিকটিমের বয়স, তার থেকে মিসিং পার্সনস ফাইল, তার পর সম্ভাব্য সালের লিস্ট থেকে ভিকটিমকে খুঁজে বার করা…লম্বা প্রসেস। এক মাসের মধ্যে চার্জশিট রেডি না করলে তোর আমার কারুর চাকরিই থাকবে না দর্শনা! তদন্ত করার সুযোগ পাব কিনা বলতে পারছি না।”

    “তাহলে বেলগাছিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করি স্যার?” বিভাস পাশ থেকে বলল।

    মতিদা গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, “উমানাথনকে একবার পাঠা। ইনফর্মালি যদি কিছু বলতে পারেন, তারপর বেলগাছিয়ায় দে। ওখান থেকে তো পনের দিনের আগে কিছু জানা যাবে না। অত সময় নেই।”

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইলিয়াড – হোমার
    Next Article বিসাশন – পিয়া সরকার

    Related Articles

    পিয়া সরকার

    বিসাশন – পিয়া সরকার

    October 21, 2025
    পিয়া সরকার

    বিসাশন – পিয়া সরকার

    September 12, 2025
    পিয়া সরকার

    বৃশ্চিকচক্র – পিয়া সরকার

    September 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Our Picks

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }