কেউ জানে না এ-সব কথা কেউ বোঝে না কিছু
থানায় টিভিতে গমগমে স্বরে গণেশ হুঁই হত্যারহস্যের ‘সনসনিখেজ খুলাসা’ দেখাচ্ছিল ন্যাশনাল নিউজচ্যানেলগুলোয়। খুলাসা অর্থাৎ পর্দাফাঁস। জানা গেছে, থানার আধিকারিকরাই ঘুষ নিয়ে সম্প্রতি ওয়ার্ড চেঞ্জ করেছিলেন গণেশের। ভিড়ে ঠাসা ওয়ার্ড থেকে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা ওয়ার্ডে। এরকম টাকার বিনিময়ে ওয়ার্ড পরিবর্তন প্রায়শই হয় জেলে। কিন্তু এবারের ঘটনাটা অন্যরকম। যারা ঘুষ নিয়েছিলেন তাদের জেরা করা হচ্ছে। একান্তে খুন করা সহজ বলেই কি এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? ঘুষ দিল কে? পুলিশ মদন তালপাড়ে নামে এক সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করছে। তালপাড়ে ভারত জুড়ে জাঁকিয়ে বসা অস্ত্রপাচার চক্রের মূল পাণ্ডা ইমরান আহমেদের ডানহাত বলে দাবি করা হচ্ছে চ্যানেল সূত্রে। গণেশ হুঁই হত্যায় ইমরান আহমেদের হস্তক্ষেপ ছিল বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানতে পারেনি মুম্বাই পুলিশ। বাইরের কোনো যোগাযোগের সম্ভাবনা এখনই নাকি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
একই খবর বারবার বিভিন্নভাবে পরিবেশন করার কায়দায়, একটা উত্তেজক পরিবেশ তৈরী হয়েছিল। থানার প্রত্যেকে হাঁ করে সেই খবর গিলছিল। আমি উঠে এসে বাইরে দাঁড়ালাম। একই জায়গায় বারবার আটকে যেতে ভালো লাগছিল না আমার।
পনের বছর আগে গণেশ হুঁইয়ের পুরুলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের আভাস দিয়েছেন নিরঞ্জন। একটা অস্বস্তি তৈরী হয়েছে মনে। নিশীথের হত্যার সঙ্গে গণেশদার মৃত্যুর সময়টা কেন মিলে গেল! কোনো সম্বন্ধ আছে নাকি আমি অতিকল্পনা করছি। উত্তর মিলছিল না।
“আপনাকে ডাকছেন।” পিছন থেকে একজন কনস্টেবল ডাকল।
মতিদা আজ সকাল থেকে থানায় পড়েছিলেন। অজস্র ডকুমেন্টেশনের কাজ বাকি। আমি কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ফোনটা বাড়িয়ে বললেন, “এটা শোন।”
মতিদা কল রেকর্ড করে রাখতেন জানতাম। প্লে বাটন প্রেস করতে দুজনের কথা শোনা গেল।
উমানাথন বিরক্ত স্বরে বলছেন, “আরে আমাকে কি তোমরা ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো পেলে? এতদিন ডেডবডি পাঠাতে, এখন হাড়গোড় পাঠাচ্ছ!”
“আহা! চটছেন কেন?” মতিদা বলে উঠলেন। “যদি কিছু আলো-টালো ফেলতে পারেন, তাই পাঠানো…বুঝতেই পারছেন কলকাতার উপর ভরসা করে থাকলে দেরি হয়ে যাবে…”
“শোনো মতি, ডাক্তার হলেই সে সব ব্যাপারে এক্সপার্ট ওপিনিয়ন দিতে পারে না। যাই হোক, পাঠিয়েছ যখন তখন চেষ্টা করে দেখেছি। মেল এজেড অ্যারাউন্ড ৩০ টু ৪৫, আর ফিমারের সাইজ দেখে পাঁচফুট দশের কাছাকাছি হাইট প্রেডিক্ট করতে পারছি আপাতত।”
“টাইম অফ ডেথ?”
“বলা মুশকিল। হাড়গুলোর অবস্থা সাংঘাতিক। এখানে যথেষ্ট ইকুইপমেন্ট নেই, বেলগাছিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করো। আর…আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।” উমানাথন দম নিলেন।
“বলুন স্যার।”
“হাড়ের গায়ে ফরেন মেটিরিয়ালের ডিপোজিট ছিল। প্যাথোলজিস্টকে দিয়ে কনফার্ম করেছি। ওগুলো কিন্তু ফিসেস, একদম কাঁচা মল লেগে ছিল! হাড়গুলো সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয়েছে নাকি!
মতিদা কল রেকর্ডার বন্ধ করে আমার দিকে তাকালেন। আমি কোনো কথা বললাম না। আমার মাথার মধ্যে একটা ঘড়ি হঠাৎ-ই টিকটিক টিকটিক শব্দ তুলে জোরে ঘুরতে শুরু করেছিল।
সোনালি মহিলা লকাপে বসে বসে ঝিমোচ্ছিল। ওকে গিয়ে উঠিয়ে বললাম, “তোমাদের বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে…রিসেন্টলি কোনো কাজ হয়েছিল?”
ঘুম জড়ানো চোখে ওর আমার কথা বুঝতে অসুবিধা হল। শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে।
আমি ওর কাঁধ ধরে বললাম, “কী জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দাও। বাড়িতে পায়খানার ট্যাঙ্কে কোনো কাজ হয়েছিল?”
ও শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলল, “ফাটল ধরেছিল ট্যাঙ্কে। ঢাকনার কাছে। ঠিক করাতে বলেছিলাম।”
“এটা কতদিন আগের কথা!” আমি খুব উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। “বেশিদিন নয়। মাসখানেক। গন্ধ আসছিল খুব। আমিই ফাটলটা দেখেছিলাম।”
“মাসখানেক ধরে এটা সারানো হয়নি?”
সোনালি মুখ বেঁকিয়ে বলল, “আমি কী করব? বললেই বলতেন…এখন অসুবিধা আছে। পরে হবে।”
“তারপর?”
“দোলের সময় বললেন চার পাঁচদিনের জন্য বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে, বললেন ট্যাঙ্কের কাজ করিয়ে রাখবেন।
“সে কাজ হয়েছিল?”
“কই আর! ফাটলটা তো যে-কে সেই আছে। কিন্তু আপনি এগুলো জানতে চাইছেন কেন?” সোনালি খুব অবাক হয়ে বলল।
***
ভবেশ বাউরির ফাইলে রাখা পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা অসীমের ডেস্ক থেকে খুঁজে বার করতে সময় লাগল পাঁচমিনিট। মতিদা ঝড়ের গতিতে রিপোর্টটা পড়ে আমার দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, “এটাও কি তোর সেই কী বলে…হাঞ্চ?”
আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম না। ভবেশের ডেডবডিটা চোখের উপর ভাসছিল। ঘাড়ের কাছে খুবলানো মাংস, নীলচে নখ, নিথর শরীর! ডেথ ডিউ টু অ্যাসফিক্সিয়া, কজড বাই ইনহেলেশন অফ সিউয়েজ গ্যাস মেইনলি হাইড্রোজেন সালফাইড।
মতিদা একটা সিগারেট ধরিয়েছিলেন। পি.এম রিপোর্টের পাতা উল্টে বললেন, “নিশীথ লোকটার অতীতের সঙ্গে ভবেশ বাউরির অতীতের একটা কানেকশন আছে তো বটেই। সেপটিক ট্যাঙ্কে হাড়গোড় পাওয়া যাওয়াটাও নিশ্চয়ই আকস্মিক নয়। প্রশ্ন হল, লোকটা ভবেশকেই কেন ট্যাঙ্কে নামাল?”
আমি পরপর ঘটনাক্রমগুলো জুড়ছিলাম। মতিদার দিকে তাকিয়ে বললাম, “সেপটিক ট্যাঙ্কে ফাটল হয়েছিল। নিশীথ জানত ট্যাঙ্কে হাড়গোড় আছে। তা নাহলে ও নানা বাহানায় কাজটা পিছিয়ে দিত না। ট্যাঙ্কটা সারাতেই হত। মিস্ত্রী এসে ঢাকনা খুলে প্লাস্টারিংয়ের কাজ করত। হয়ত কিছুটা অংশ ভাঙা পড়ত। ও কোনো রিস্ক নিতে চায়নি। বেগতিক দেখে নিশীথ ঠিক করল যে মিস্ত্রী নামানোর আগে হাড়গুলো সরাতে হবে। ঠিক?”
মতিদা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ।”
“এবার ভবেশ গেল। হাড়গোড় কটা বেরও করল। তারপর দমবন্ধ হয়ে মারা গেল। বিপদ বুঝে নিশীথ ওকে সাইকেলে বেঁধে মাঠার জঙ্গলে ফেলে এল। বডি ডাম্প করার আগে যথাসম্ভব জল ব্যবহার করে গায়ের নোংরা ধুয়ে দিল।”
“এভিডেন্স? কোর্ট এভিডেন্স চাইবে।” মতিদা অ্যাশট্রেতে সিগারেটের ছাই ফেলতে ফেলতে বললেন।
“ভবেশের সাইকেলের কভারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে। ম্যাচ করাতে দিয়েছি।”
“সাবাশ!” মতিদা হেসে বললেন।
আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের একটা অদ্ভুত জোয়ার এসেছিল। নবগ্রামের ঘটনাটার পর থেকে যেটা নিজের শিরায় শিরায় অনুভব করতে ভুলে গিয়েছিলাম। মতিদাকে বললাম, “এবার আপনার প্রশ্ন। ভবেশকেই কেন নামাল নিশীথ? এক্ষেত্রে আমার ডিডাকশন হল, শুধু নিশীথ মাহাতো নয়, ভবেশ বাউরিও সেপটিক ট্যাঙ্কের হাড়গোড়ের কথা জানত। নাহলে কাজটায় যাওয়ার আগে এত ঢাক ঢাক গুড়গুড় রাখত না। নিজের মোবাইল অফ করে ও সাধারণের ধরা ছোঁওয়ার বাইরে থাকতে চেয়েছিল।”
“হুম, এটা নিঃসন্দেহে খুব গুরুতর কথা বললি।” মতিদা মাথা নাড়িয়ে বললেন, “সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
একটা সাদা কাগজ সামনে পড়েছিল। তাতে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে বললাম, “শুধু এটাই নয় মতিদা। আসল গুরুতর ব্যাপার হল, বাকি হাড়গোড়গুলো সম্ভবত ট্যাঙ্কেই পড়ে আছে। সেগুলো সরানোর অবকাশ হয়নি। লোক নামাতে হবে।”
মতিদা এই প্রথমবার আমার প্রস্তাবে একবারেই রাজি হয়ে গেলেন। মোবাইলে কার নাম্বার ডায়াল করতে করতে বললেন, “নিশীথ তবে ভবেশকে টাকাপয়সার লোভ দেখিয়ে হাড় সরাতে নামিয়েছিল ধরে নিতে হবে।”
মতিদার কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মত নয়। কিন্তু আমার মন বলছিল ব্যাপারটা অত সহজ নয়। ভবেশ বাউরির ফাইলটা ঘাঁটতে ঘাঁটতে বললাম, “অসীম বলেছিল ভবেশ একটা টাইম পিরিয়ড জুড়ে মিসিং ছিল। থানা থেকে ওকে তুলতে যাওয়ায় পায়নি। সেটার রিপোর্টটা এই ফাইলে থাকার কথা…”
মতিদা আমার থেকে ফাইলটা হাত বাড়িয়ে নিলেন। প্রথম দিকের পাঁচ ছটা পেজ উল্টে একটা বিশেষ পাতা বার করে বললেন, “এই তো! পোস্টার লাগানোর চার্জ; ফেরার দেখানো হয়েছে।”
আমি ঝুঁকে পড়ে কাগজটা দেখলাম। ২০০৫ এর ২১শে অগাস্ট ওর বাড়িতে রেইড হয়। অসীম বলেছিল ২০১০ নাগাদ ও ফিরে আসে। আমার মাথায় এই ২১শে আগস্ট সংখ্যাটা গেঁথে গেল। কোথায় যেন কাছাকাছি একটা সংখ্যা দেখেছি!
মতিদা ভবেশ বাউরির ফাইল উল্টাতে উল্টাতে বললেন, “যা বুঝছি, ভবেশ চিরকাল ছোটখাটো কাজকর্মই করেছে। মাওয়িস্ট পোস্টার লাগানো, অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া, চর হিসেবে খবর পৌঁছানো…সবই টাকাপয়সার বিনিময়ে। ডিরেক্ট লাইন অফ অ্যাকশনে ছিল না কোনোদিনই।”
আমি মতিদার কথা শুনেও শুনছিলাম না। সংখ্যার রহস্যটা কেটে গিয়েছিল। অস্ফুটে বলে উঠলাম, “আশ্চর্য!”
“কী আশ্চর্য?” মতিদা অবাক হয়ে বললেন।
“না, ভবেশ কেন ঐ সময়েই ফেরার হল ভাবছি।”
মতিদা হতাশভঙ্গিতে বললেন, “ঐ লাইনে যাস না বাপু। ফেরারের পিছনে অনেক কারণ থাকে, টাকাপয়সা মেরে পালিয়ে যাওয়া, মাওদের নিজেদের সদস্যদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্ধ, ফ্যামিলিগত সমস্যা…ঠক বাছতে গাঁ উজোড় হওয়ার জো হবে।”
“না, না সেসব ভাবছি না। আসলে অসীম খোঁজ নিয়েছিল যে ও ১০ সাল নাগাদ ফেরত আসে।”
“তাতে কী?”
“এই পাঁচ বছর কেন ও গ্রামে ছিল না সেটা নিয়ে এনকোয়ারি হয়নি?”
মতিদা হেসে বলল, “ধুর! তখন পুলিশ নিজের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া। রোজ গোলাগুলি চলছে, ল্যান্ডমাইন ফাটছে। সেসময় কে কোথায় চলে যাচ্ছে অত
তদন্ত করার অবকাশ কোথায়!”
“হুম। খুবই আশ্চর্য একটা সমাপতন বুঝলেন!”
“কীরকম?” মতিদা নড়েচড়ে বসলেন।
“আপনাকে যে ডায়েরিটার কথা বলেছিলাম, সেটার শেষ এনট্রি দুহাজার পাঁচ সালের আগস্টের কুড়ি তারিখ। দুটোর মধ্যে কোনো যোগ আছে নাকি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। ডায়েরিটা আনিয়ে রেখেছি মালখানা থেকে। একটু দেখুন।”
“দুহাজার পাঁচ…দুহাজার পাঁচ…” মতিদা যেন কী মনে করার চেষ্টা করলেন। “কোনো এন.জি.ও কর্মী বা প্রাথমিক শিক্ষক নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন সেসময়, আপনার কিছু মনে আছে?”
মতিদা অবাক হয়ে ডায়েরিটা নিজের দিকে টেনে নিলেন। পাত। উল্টাতে উল্টাতেই মুখের অভিব্যক্তি দ্রুত বদলাতে শুরু করল। শেষে ডায়েরিটা বন্ধ করে খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন।
আমার গোয়েন্দা মস্তিষ্ক বলছিল, ডায়েরিটার রহস্য সম্পর্কে মতিদা অনেক কিছু জানেন।
***
টাইমস নিউজ নেটওয়ার্ক/ আগস্ট ২১, ২০০৫, ০৩.২৫ আই.এস.টি
কোলকাতা: এন.জি.ও কর্মীর ছদ্মবেশে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে কর্মরত এক পুলিশ ইন্সপেক্টরকে গতকাল, শুক্রবার অপহরণ করা হয়েছে।
শনিবারের শেষবেলা অবধি, পুলিশ তদন্ত চালায় এবং সূত্রের সন্ধানে স্থানীয় গ্রামবাসী, যাদের মাও সংযোগ আছে বলে পুলিশ মনে করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মাওরিস্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অপহৃত পুলিশ ইন্সপেক্টরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া অবধি, কোনো সমাধানসূত্র মেলেনি। যদিও আই.বির সোর্সমারফত জানা যায়, যে মাওবাদীরা অপহৃত পুলিশ অফিসারের স্ত্রীকে যোগাযোগ করে, তাঁকে তাঁর স্বামীর ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে।
দিবাকর বিশ্বাস, রাজ্য আই.বির ইন্সপেক্টর র্যাঙ্ক অফিসার, অযোধ্যা পাহাড়ে দীর্ঘ এক বছর ধরে যাতায়াত করতেন। পুরুলিয়াতে মাওবাদী সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য তাঁকে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছিল বলে জানা গেছে। তিনি অযোধ্যা পাহাড় সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষামূলক কাজে স্থানীয় স্তরে একটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছিলেন বলে জানা যায়।
সিনিয়র অফিসাররা অবশ্য দিবাকর বিশ্বাসের আন্ডারকভার হিসেবে কাজ করার খবর অস্বীকার করেছেন। “উনি একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ব্যক্তিগত কাজে অযোধ্যা যেতেন।” একটি সূত্র থেকে এমন বক্তব্য এলেও, আইবি দপ্তরে জোর কানাঘুঁষো যে ডিপার্টমেন্ট তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপের খবর রাখত। পুলিশ সূত্র মারফত জানা গেছে যে শুক্রবার গভীর রাত অবধি দিবাকরবাবুর মোবাইল সক্রিয় ছিল, তারপরেই তাঁর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা যায়নি।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র পুলিশ অফিসারের বক্তব্য অনুযায়ী, “বাঘমুণ্ডি অঞ্চলে সরকার থেকে একটি ফ্লাশ আউট অপারেশন প্ল্যান করা হয়েছিল। দিবাকর বিশ্বাস, এই অঞ্চলের সবথেকে কর্মদক্ষ অফিসার ছিলেন। তাই তাঁকে মাওবাদী সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে পাঠানো হয়। এই অ্যাসাইনমেন্টটিকে গোপনীয়তার মোড়কে এমন ভাবে মুড়ে রাখা হয় যে সিনিয়র কিছু পুলিশ এবং আই.বি অফিসার ছাড়া আর কেউই তাঁর উপস্থিতি সম্পর্কে জানতেন না।
আদতে নৈহাটির বাসিন্দা, দিবাকর বিশ্বাসের সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী বর্তমান। তিনি আপাতত কথা বলার অবস্থায় নেই বলে তাঁর সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।”
.
মতিদা আমাকে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মোবাইল আর্কাইভ থেকে খবরটা পড়িয়ে বললেন, “মোটামুটি এই হল খবর। তোকে একবার একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার কথা বলছিলাম, এটা সেটাই।”
“ওহ!”
মতিদা ডায়েরিটার মধ্যে গভীরভাবে ঢুকে পড়েছিলেন। দশ বছরের দমবন্ধকরা একটা সময়কাল হাতড়ে আতঙ্কের স্মৃতিগুলো তুলে আনছিলেন। থেমে থেমে বললেন…
“সেসময় পুরুলিয়া পুলিশের অবস্থা খারাপ, একের পর এক ব্যর্থতা আসছে। সরকারি তরফে গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য মোবাইল অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হল। ল্যান্ডমাইন দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী আর নিরাপত্তারক্ষী সমেত উড়িয়ে দেওয়া হল। পুলিশের জিপ ওড়ানো, আর্মস অ্যান্ড অ্যামিউনিশন লুট, র্যানসমের বদলে কিডন্যাপিং, এ তো রোজকার ঘটনা ছিল। পুলিশের প্রতিটা মুভমেন্টের খবর রাখত আলট্রারা। এদিকে, আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছিলাম। প্রতি সপ্তাহে মাওদের অস্ত্র ঢোকার খবর পেতাম আমরা। কিন্তু জায়গায় পৌঁছানোর আগেই, সেসমস্ত বামাল হাওয়া। ঠিক এমন সময়ে দিবাকর বিশ্বাস জঙ্গলমহলে আসেন।”
“কিন্তু এই ডায়েরির মালিক দিবাকর বিশ্বাস সেটায় আপনি সিওর?”
“হ্যাঁ। রোজনামচায় যেভাবে শিশুদের পড়াশুনার কথা লেখা হয়েছে, তাতে এই ডায়েরির মালিক দিবাকর বিশ্বাস ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।”
“ভদ্রলোককে আর পাওয়া যায়নি? মানে নিদেনপক্ষে ডেডবডিও? মানে মাওরা তো জেনারেলি মেরে টেরে বডি পাবলিকলি ফেলে রাখত জানি।” আমি একটু অবাক হয়ে বললাম।
মতিদা মাথা নেড়ে বললেন, “নাহ বডি পাওয়া যায়নি। এদিকে মহান সিং কিন্তু প্রেসে বিবৃতি দিয়ে দিবাকর বিশ্বাসকে অপহরণের কথা অস্বীকার করেছিল। বলেছিল ওদের তরফ থেকে দিবাকর বিশ্বাসের স্ত্রীকে কোনো ফোন করা হয়নি।”
“মানে মাও হাইকমান্ডের এই খুনের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল না!”
“হাইকমান্ড না জানলেও লোকাল লেভেলে জানতো না, তা হয় না। লোকাল লেভেলে সব অ্যাক্টিভিটিই যে হাইকমান্ডকে জানানো হত, ব্যাপারটা তেমন নয়। নিশীথ মাহাতো এরিয়া কমান্ডার ছিল। বাঘমুণ্ডি আর ঝালদা বেল্ট দেখত। পুলিশের ধারণা ছিল, দেবাশিস মাহাতো বলে একজন আলট্রা লিডার দিবাকর বিশ্বাসের অপহরণের সঙ্গে জড়িত। সে ছেলেটা ছিল নিশীথের ডান হাত। কিন্তু দেবাশিস মাহাতোও ফেরার হয়ে গেল।”
“আপনি ছিলেন নাকি সার্চ টিমে?”
“না। আমি তখন পুরুলিয়া সদরে পোস্টেড। তবে লোকাল ছেলে তো, খোঁজ রাখতাম। আমাদের ডি.আই.জি অভিনন্দন রায়, উনি তখন ডি.এস.পি ছিলেন। উনি সার্চ টিমে ছিলেন। পরে সি.আই.ডি নেমেছিল। কিন্তু দেবাশিস মাহাতো বা দিবাকর বিশ্বাসকে পাওয়া যায়নি।”
“স্ট্রেঞ্জ!”
“হুম। সবটাই।”
“আমি একটা জিনিস ভাবছি আসলে। এই কেসটায় এখনও পর্যন্ত কটা নাম পর পর উঠে আসছে। দেবাশিস মাহাতো, নিশীথ মাহাতো, দিবাকর বিশ্বাস আর…”
“আর?”
“ভবেশ বাউরি মতিদা! ঠিক ঐ সময়েই ওর ফেরার হওয়াটা…”
আমি কথা বলতে বলতে থেমে গেলাম। মতিদার দিকে তাকিয়ে বললাম, “নিশীথ মাহাতোর বাড়ি থেকে এই ডায়েরি, আর সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে হাড়গোড়…এটা কোনো নির্দিষ্ট দিকে ইন্ডিকেট করছে না কি?!”
মতিদা আমার চোখে চোখ মেলালেন। বড় বড় চোখের দৃষ্টিগুলো কিছুক্ষণ স্থির হল। তারপর বললেন, “একশবার! আমার স্থির বিশ্বাস হাড়কটা দিবাকর বিশ্বাসের। এবং তাঁকে হত্যায় দেবাশিস মাহাতো ছাড়াও হাত ছিল নিশীথ মাহাতো আর ভবেশ বাউরির। ভবেশ বাউরি পেটি ক্রিমিনাল। তাকে বোধহয় বডি ডিসপোজ করতে ব্যবহার করেছিল ওরা। সেসময় পোস্টার লাগানোর কাজে পুলিশ ভবেশকে ধরতে গেলে সে ভয় পেয়ে ফেরার হয়ে যায়। পরে সব ঠাণ্ডা হলে আবার ফিরে আসে।”
“ঠিক মতিদা। আমারও এটাই বিশ্বাস। তাই বিপদে পড়তে ভবেশকেই আবার কাজে নিযুক্ত করা হয়।”
মতিদা আমার দিকে তাকিয়ে একটা অস্বস্তির হাসি হাসলেন। তারপর বললেন, “ভুলো না তুমি পুলিশ। তুমি জানো, শুধু বিশ্বাসে কিছু হয় না। বিশ্বাসটাকে প্রামাণ্য না করে তুললে জলে ঘটি ডুববে না।” মতিদা সিরিয়াস কথা বলার সময় তুই থেকে তুমিতে শিফ্ট হয়ে যান।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম। দিবাকর বিশ্বাসের বাকি স্কেলিটাল রিমেইনস না পাওয়া গেলে এই ডিডাকশন আমরা প্রমাণ করতে পারব না। রিমেইনস পাওয়া গেলেও, এত বছরের হিউমিড পরিবেশে থাকার ফলে সেগুলো আদৌ রিকনস্ট্রাকশন করা যাবে কিনা, সেটাও বিশাল ডাউটফুল। মতিদাকে বললাম, “দিবাকর বিশ্বাসের কোনো পুরোনো ছবি পাওয়া যাবে না? ফাইলে নিশ্চয়ই থাকবে।”
“তুই কি ডিজিটাল সুপারইমপোজিশনের কথা ভাবছিস?”
“হ্যাঁ। মানে আদৌ সেটা যদি সম্ভব হয়!”
“ছবি থাকা তো উচিতই। আমি প্রথমে সেপটিক ট্যাঙ্কে লোক নামানোর ব্যবস্থা করছি। যদি কিছু পাওয়া যায়, তারপর না হয় ফটো বার করে নেক্সট স্টেপ নেওয়া যাবে। কিন্তু তার আগে এই পুরো ঘটনা এস.পিকে জানাতে হবে।” মতিদা ফোনটার দিকে হাত বাড়ালেন।
“ও বাবা! তবে তো ইনভেস্টিগেশন আটকে দেবে মতিদা। এখনকার শাসক দল ঘনিষ্ঠ, জেলার অন্যতম মুখ প্রাক্তন আই.বি অফিসারের খুনের সঙ্গে যুক্ত— এ কথা কি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফ্ল্যাশ করতে দেবে?” আমি হতাশ স্বরে বললাম।
মতিদা ফোনে ডায়াল করতে করতে বললেন, “তুই এগো। আমি আছি।”
“কিন্তু!”
মতিদা আমাকে থামিয়ে বললেন, “দিবাকর বিশ্বাসের যখন অপহরণ হয়, তখন তাঁর বয়স তেত্রিশ। আমরা সমবয়সী। আমরা পুলিশ নিশ্চয়ই। কিন্তু কারুর ছেলে, কারুর ভাই, কারুর স্বামীও তো বটে! তাঁর জায়গায় আমিও তো হতে পারতাম। আমারও পুরো সংসার ভেসে যেতে পারত।”
***
থানায় আজ দিব্যজ্যোতির জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিরিয়ানির প্যাকেট আনা হয়েছিল। আমি বিরিয়ানি একেবারেই পছন্দ করি না। আতরের গন্ধে গা গুলিয়ে আসে। আমার প্যাকেটটা পড়েই ছিল। মাথার মধ্যে নানা কথা ঘুরছিল। এতদিনের ছিন্নবিছিন্ন সূত্রগুলো কোথায় যেন গিঁট বাধছে এবার। কলেজে থাকতে স্যার পড়াতেন অভিসারী আলোকরেখা। বর্তমান আর অতীতের অন্ধকার গর্ভ থেকে আমার আলোকরেখারা উঠে এসে একটি বিন্দুতে মেলার চেষ্টা করছে এতদিনে।
এস.পি অফিস অবশ্য দিবাকর বিশ্বাসের স্কেলিটাল রিমেইনস নিয়ে খুব একটা উৎসাহ দেখায়নি। মতিদাকে ফোনে বলা হয়েছে, আমাদের কেসটা নিশীথ মাহাতোর খুন নিয়ে। তদন্ত যেন স্ট্রিক্টলি সে পথেই চলে।
টেবিলে বাদামী ডায়েরিটা পড়ে ছিল। এখনও বুঝতে পারছি না, নিশীথ ডায়েরিটাকে না পুড়িয়ে নিজের কাছে স্যুভেনির হিসেবে রেখেছিল কেন! এরকম বিপদজনক একটা এভিডেন্স যত্ন করে রেখে দেওয়ার অর্থ কী!
ডায়েরির পাতাগুলো উল্টালাম। ডায়েরির মালিকের পরিচয় জানার পর থেকে কবিতাগুলোর মানে একটু একটু করে বুঝতে পারছিলাম। দিবাকর বিশ্বাস নতুন কোনো আবোলতাবোল লিখে যান নি। গুরুদেব ব্যোমকেশের বহ্নিপতঙ্গ মনে পড়ে গেল। অবদমিত আবেগ যা মানুষ প্রকাশ্যে আনতে পারে না, তা কোনো না কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করে ফেলে। দিবাকর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মাধ্যমটা কবিতা ছিল। তাঁর পেশা তাঁকে মন্ত্রগুপ্তির পাঠ দিয়েছিল। কিন্তু মন চোরাপথে ফাঁক খুঁজে নিয়েছিল।
লিখেছিলেন,
“আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা—
ছায়ার সঙ্গে কুস্তি ক’রে গাত্রে হল ব্যথা!
ছায়া ধরার ব্যবসা করি তাও জানো না বুঝি?
সবার থেকে দুষ্ট ছায়া, রাতের ছায়া খুঁজি।
ছায়ার সঙ্গে কুস্তি করে এমনি এমনি তাঁর গায়ে ব্যথা হয়নি, তাঁকে ছায়া ধরতেই পাঠানো হয়েছিল। বিদঘুটে রাত্তিরে, ঘুটঘুটে ফাঁকা অন্ধকারে, বটগাছের তলায় জটলারত যে সব মানুষেরা কানেকানে ফিশফাশ করে তাদের পরিচয় দিতে যে কেন ছায়ার মত শব্দ ব্যবহার করেছিলেন তা সহজবোধ্য। দিবাকর বিশ্বাস শুধুমাত্র দক্ষ পুলিশ অফিসার ছিলেন না, রসিক এবং সংবেদনশীল মনের মানুষ ছিলেন তা ডায়েরিটা পড়লে বোঝা যায়।
পুরো জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদি হামলায় বিপর্যস্ত গরীব সাধারণ মানুষের ভাগ্যাকাশে যে চিরকাল আধখানা চাঁদই উঠেছে তা তাঁর কবিতায় স্পষ্ট। এমনকি সবার থেকে দুষ্ট ছায়া, রাতের ছায়া যে কে তা বোঝা যাচ্ছে খুব সহজে। রাতের ছায়া বলতে নিশ্চয়ই তৎকালীন এরিয়া কমান্ডার নিশীথ মাহাতোর কথা বলেছেন দিবাকর। দেওয়ালজোড়া কানের মেলা অর্থে বোধহয় মাওবাদী চর থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। শুধু বুঝতে পারছি না একটাই জিনিস। রাজা নামধারী ব্যক্তির পরিচয়! তার সঙ্গে কোন খেলাই বা খেলতে নেমেছিলেন দিবাকর? রাজা সম্পর্কে দিবাকরের মনের ভাবও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। দিবাকর যেন রাজার বন্ধু, শুভাকাঙ্খী। রাজা বাংলার বাইরের লোক বলে বহু যত্ন করে যাকে আবোলতাবোলের প্রতিটা ছড়া আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়েছেন দিবাকর। অথচ শেষের দিকের বেশ কটা কবিতা পড়ে মনে হচ্ছে, রাজার প্রতি তাঁর বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা কোথায় যেন হোঁচট খেয়েছে। রাজা যেন কানা হয়ে গেছেন, ছায়া চোখে পড়ছে না। শেষ পাতায় যেন খুব কষ্টে লিখেছেন,
“মিথ্যে লড়াই মিথ্যে ফাইট
ভেল্কি, ফাঁকি, অলরাইট।
শেকহ্যান্ড আর দাদা বল
সব শোধবোধ ঘরে চল।”
আমার সামনে একটা সাদা কাগজ ছিল। তাতে পেন দিয়ে কতগুলো বিন্দু বসিয়েছিলাম। বিন্দুগুলোর উপর নাম লিখলাম, ভবেশ বাউরি, দেবাশিস মাহাতো, নিশীথ মাহাতো, গণেশ হুঁই, দিবাকর বিশ্বাস এবং রাজা! এরা প্রত্যেকে একই সময়ে একই জায়গায় অবস্থান করছে। প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের স্পষ্ট যোগাযোগ। গণেশ হুই মাওদের অস্ত্রচালান করতে থাকে। মাওদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে আসেন দিবাকর বিশ্বাস। সম্ভবত তার ছদ্মবেশ ধরা পড়ে যায় তাঁর
মৃত্যুর আগে। এখানে জুড়ে যাচ্ছে দেবাশিস মাহাতোর নাম। সে দিবাকর বিশ্বাসকে নিয়ে নিশীথ মাহাতোর কাছে নিয়ে যায়। দিবাকর বিশ্বাস খুন হয়ে যায়। তারপর কী হয়! দেবাশিস মাহাতো কেন ফেরে না, কেন মাওদের প্রচলিত অভ্যাসের বাইরে গিয়ে দিবাকর বিশ্বাসকে গুমখুন করা হয়, কেন ঘটনার ১৫ বছর পর খুন হয় এই ঘটনার কুশীলবেরা! নিরঞ্জন বলেছিলেন, বম্বেতে গণেশ হুই, আর পুরুলিয়ায় নিশীথ মাহাতো! মৃত্যুতেও এরা এক হয়ে গেছেন। এ কি শুধুই সমাপতন? খুনি কি দিবাকর বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ কেউ? পানজি স্টেকের উপর নিশীথ মাহাতোর হত্যা, অতীতের কোনো প্রতিশোধস্পৃহা থেকে করা?
পেনটা দিয়ে রাজা নামটার পাশে একটা বিরাট কোশ্চেনমার্ক ঝোলালাম। নিরঞ্জনের কথা মনে পড়ে গেল, ঈশ্বরের অদৃশ্য হাত! মনে মনে ঠিক করলাম, এসিপি প্রবীর পুরকায়স্থর সাহায্য নেব। বিশেষত সি.আই.ডি ইনভল্ভড যেখানে, সেখানে এত বছরের পুরোনো ঘটনার ময়নাতদন্তে রাজ্য পুলিশের সিনিয়র অফিসার ছাড়া এগোনো অসম্ভব। ডি.আই.জি অভিনন্দন রায়কে অ্যাপ্রোচ করা যেত, কিন্তু উনি কতটা আমার থিয়োরিকে পাত্তা দেবেন সেটা বুঝতে পারলাম না।
ফোনে বিভাসের মেসেজ ঢুকল। ওকে নিশীথের বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক স্ক্যাভেঞ্জিংয়ের দায়িত্বে লাগিয়েছিলেন মতিদা। মেসেজটা খুলে পড়ার আগে একটা ডিপ ব্রিদিং করলাম। যদি খবর নেগেটিভ হয়, তবে যে পথে ভাবছি, সে পথ ছেড়ে আবার নতুন পথ খুঁজতে হবে। সবুজ হোয়াটসঅ্যাপ আইকন টিপে বিভাসের মেসেজ খুললাম। জ্বলজ্বল করছে একটি সুসংবাদ, “বোনস, স্কাল এন্ড স্কেলিটাল রিমেইনস ফাউন্ড ফ্রম সেপটিক ট্যাঙ্ক। সেম ইজ ডেসপ্যাঁচড টু বাঘমুণ্ডি পি.এস। ফার্দার অ্যাডভাইজ সলিসিটেড।”
