আমাদেরই বেলতলাতে নেড়া সেথা খেলতে আসে
পুরুলিয়া জুড়ে এখন শিবপুজোর ধূম চলছে। চৈত্র সংক্রান্তি এগিয়ে আসছে। গ্রামে গ্রামে গাজন উৎসব হবে। বাঘমুণ্ডিতে লহরিয়া শিব মন্দিরে বিরাট মেলা বসে। চারদিন ধরে ফলার, জাগরণ, ভগতা-ঘুরা, তেল-হলদা, নানারকমের ক্রিয়াকর্ম হয়। কনস্টেবল গিরীশ ঘরামি অসম্ভব ঈশ্বরবিশ্বাসী। চৈতগাজনের সময়, ‘বুড়হা-বাবার’ আশীর্বাদ পাওয়ার লোভে নিজেও গায়ে লোহার কাঁটা ফুটিয়েছে। চড়ক গাছে উঠে পাকও মেরেছে। গিরীশের গল্প শুনতে শুনতে ইমেইলগুলোয় চোখ বুলাচ্ছিলাম। অজস্র ব্যর্থতার মধ্যে, সাফল্য মাঝে মাঝে রুপোলি ডানায় ভর করে উড়ে আসে। ইনবক্সের মেইলগুলো থেকে উঁকি মারে। দুটো তেমনই মেইল আমার অ্যাকাউন্টে এসে পৌঁছেছে। প্রথমটা ভবেশ বাউরির সাইকেলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিপোর্ট, যা নিশীথ মাহাতোর সঙ্গে হুবহু ম্যাচ করে গেছে। দ্বিতীয় রিপোর্টটা পড়ে গভীর একটা স্বস্তি পেলাম। অসীমের শার্টের হাতায় যে ব্লাড স্টেইন পাওয়া গেছে তা একমাত্র ওর ব্লাডগ্রুপের সঙ্গে ম্যাচ করছে। মেইল দুটোর রেসিপিয়েন্ট মতিদা, সিসিতে আমি।
পাশের ঘর থেকে শ্যামল ব্যানার্জির উত্তপ্ত বাক্যালাপ ভেসে আসছিল। পিসিআর ভ্যানটা যে গ্যারেজে গিয়েছিল, সেখানে আজ সকালে গিয়েছিলেন। বিধু কিছু একটা করেছে, যেটার জন্য বাপ-ঠাকুর্দা তুলে খিস্তি দিচ্ছিলেন এস.এইচ.ও। দরজার আড়াল থাকায় পরিষ্কার শোনা যাচ্ছিল না। চিৎকার চেঁচামেচির শব্দটাকে চাপা দিয়ে দিল দিব্যজ্যোতির মোবাইলের রিংটোন। ওর বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল। ফোনে ওর কথা শুনতে শুনতে নানা কথা মনে আসছিল। ফোন রেখে দিব্যজ্যোতি টিফিনবাক্স খুলে এগ চাউমিন বার করল। কাগজে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে জিজ্ঞাসা করলাম, “দিব্যজ্যোতি, রাজা শব্দটা শুনলে তোমার মাথায় কী কী আসে?”
ডিমের কুসুম ভেঙে মুখে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “রাজা? মানে কিং বলছেন?”
“হ্যাঁ। মানে শব্দটা শুনলে তোমার মাথায় প্রথমে কী আসে?”
একটু ভেবে দিব্যজ্যোতি বলল, “শাসক। দণ্ডমুণ্ডের অধিকর্তা, কোনো জায়গার অধীশ্বর।”
“হুম। এ বাদে?”
ও ভুরু কুঁচকে ভাবার একটু সময় নিল। তারপর বলল, “জাতি বা শ্রেণির মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ তাঁকেও হয়ত বলা যেতে পারে। মানে ইংরেজরা তো শুনেছি, শ্রেষ্ঠত্ব বিচার টিচার করে রাজা, রায়বাহাদুর এসব খেতাব টেতাব দিত। কেন বলুন তো?”
আমি দিব্যজ্যোতিকে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারলাম না। দিবাকর বিশ্বাসের কবিতায় রাজা শব্দটা আমাকে বিশ্রীভাবে ভাবাচ্ছিল। আমাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে দেখে দিব্যজ্যোতি আরেকটু ভেবে বলল, “ম্যাডাম, গল্প, উপন্যাস, গান বা নাটকের রেফারেন্স ব্যবহার করা যাবে?”
“হ্যাঁ বলো না, কিছু মনে পড়লে।”
দিব্যজ্যোতি একটু লজ্জা-লজ্জা মুখে বলল, “আসলে আমার তো বাংলা ছিল কলেজে। নাটক করতাম। রক্তকরবীর কথা মনে পড়ে গেল। সেই যে যক্ষপুরীর রাজা, যার রাজধর্ম প্রজাশোষণ; যার অর্থলোভ দুর্দম—তার লোভের আগুনে পুড়ে মরে সোনার খনির শ্রমিকরা।”
“হুম।”
“মানে, এটা জাস্ট একটা রেফারেন্স দিলাম। আবার ধরুন, ঐ গানটা, “রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান, মোদের খাটো করে রাখেনি কেউ কোনো অসত্যে..”
“আমরা সবাই রাজা?”
“হ্যাঁ। এখানে কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আবার এমন রাজার কথা বলছেন যিনি সাধারণের মধ্যে মিশে থাকেন, এখানে রাজা কিন্তু ত্রাসের রাজত্ব চালান না…মানে রাজা শব্দের ব্যঞ্জনাটাই পালটে যাচ্ছে। তিনি সবার রাজা কারণ দিনের শেষে সবার পথ তাঁর পথে মিশে যাচ্ছে।”
“বাহ!” আমি হাসি হাসি মুখে দিব্যজ্যোতির দিকে তাকিয়ে বললাম, “তোমার তো বাংলায় ভালো দখল!”
“থ্যাঙ্কু ম্যাডাম।” দিব্যজ্যোতির গাল লাল হয়ে গিয়েছিল।
আমি উঠে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ালাম। দিবাকর বিশ্বাসের কবিতার রাজা কে? রাজা নামধারী কেউ? নাকি রাজা নামের আড়ালে কোনো গভীর ব্যঞ্জনা লুকিয়ে আছে! তিনি যে সময় আদিবাসীদের সঙ্গে মিশতেন, সেসময় তাদের দণ্ডমুণ্ডের অধিকর্তা নিশীথ মাহাতো। তাকে তো তিনি রাজা নন, বরং রাতের ছায়া বলে উল্লেখ করেছেন। তবে রাজা কে? সে কি আলাদা লোক নাকি আমার ব্যাখ্যায় ভুল হল! রাজা কেন কানা…কানা রাজা…এর অর্থ কী! ভাবতে ভাবতে এত অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম যে সন্দীপের ফোনটা আসতে, চমকে হাত থেকে মোবাইল ফেলে দিচ্ছিলাম। ফোনটা তুলতেই ও বলল, “কী হাল তোমার? মেসেজ করেছি, নট সিন ফর লং টাইম। ঠিক হো তো?”
“হ্যাঁ। ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?” ওকে উত্তর দিলাম। “ফির সে আপনি, আজ্ঞে। ইতনা ফর্মালিটিকি কেয়া জরুরত হ্যায়?”
“কোনো দরকারি কথা ছিল?” আমি ওকে থামিয়ে বললাম।
“ওহ ইয়েস, ইয়েস ম্যাডাম ডিটেকটিভ। দিবাকর বিশ্বাসের খুলিতে যে বুলেটটা ছিল তার ব্যালিস্টিক রিপোর্ট চলে এসেছে। বাট, দ্য এক্সপার্ট হ্যাজ সাম ডাউট। হি হ্যাজ টু কনফার্ম অন সাম মোর পয়েন্টস। ফর্মাল রিপোর্ট কদিন পরে পাবে।”
“আপাতত আনঅফিসিয়ালি যতটা জানা গেছে বলো।”
“বুলেট শ্যুট হুয়া হ্যায় জিরো পয়েন্ট থ্রি-টু শুটার আই.ও.এফ রিভলবারসে। বুলেটকে সারফেসপে সিক্স ব্রড গ্রুভ, আর স্পিনিং এর ডিরেকশন লেফ্ট হ্যান্ড। লেড-অ্যান্টিমনিকা অ্যালয়সে বনা সলিড চিজ হ্যায়। ইতনে সালো কে বাদ ভি কুছ নেহি হুয়া। মেকিং দ্য রিপোর্ট ওয়জ নট দ্যাট ডিফিকাল্ট, যিতনা হামনে শোচা থা।” সন্দীপ বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল।
ট্রেনিংয়ের সময় যেটুকু পড়াশুনা করেছিলাম তাতে বুঝলাম গ্রুভ অর্থাৎ বুলেটের গায়ের ক্ষত, যেগুলো ফায়ার আর্ম থেকে শ্যুট করার সময় বুলেটের গায়ে তৈরি হয়। ফায়ার করলে বুলেট যেদিকে ঘোরে সেটাই ওর স্পিনিং এর ডিরেকশন। প্রত্যেক ধরণের রিভলবারের ক্ষেত্রে এই ব্যালিস্টিক রিপোর্ট আলাদা আলাদা। এমনকি আলাদা কোম্পানির ক্ষেত্রে বুলেটের গায়ের গ্রুভের সংখ্যা, আর স্পিনিংয়ের ডিরেকশন পাল্টে যায়।
“সবটাই তো বলে দিয়েছে। আবার কনফিউশন কিসের?” আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।
“কেয়া মালুম ম্যাডামজি! এক্সপার্ট বহত সিনিয়ার আদমি হ্যায়। উসনে বোলা কে ম্যাডামকো বোলো থোড়া ইন্তেজার করে, কুছ ফ্যাক্টস চেক করনা হ্যায় উসকো।”
সন্দীপের ফোনটা রেখে মতিদাকে ফোন করলাম। অনাগ্রহ নিয়ে বুলেটের ব্যালিস্টিক রিপোর্ট শুনলেন। অসীম আর নিশীথ সংক্রান্ত মেইল পড়েছেন জানালেন। তারপর আসল বোমাটি ফাটল। মতিদা জানালেন, এসপি বলেছেন আর পাঁচদিনের মধ্যে চার্জশিট তৈরি করতে না পারলে, কেস সি.আই.ডির হাতে চলে যাবে। স্বয়ং সি.এমের নাকি এমন ইচ্ছা।
***
বেলা চারটে বাজছিল। প্রচণ্ড গরমের ফলে এইসময় থানায় একটা ঝিমানো ভাব আসে। আমার ঝিম আসলেও চার্জশিটের হুড়কোতে মাথাটা অশান্ত হয়েছিল। তদন্ত ব্যাপারটাকে তলিয়ে ভাবতে গেলে সেটা আদতে স্লগ ওভারের ব্যাটিংয়ের মত নয়। ঠিকঠাক টেকনিক আর পেশাদারিত্বের মিশেল। তদন্তের দীর্ঘ সময়ে যখনই এই আপ্তবাক্যটি ভুলে যাই, তখনই ব্যোমকেশের শরণাপন্ন হই। গতকাল রাতে আরেকবার ব্যোমকেশ সমগ্র নিয়ে বসেছিলাম। নবগ্রামের মৌপিয়া হালদার মার্ডার কেসে যখন শেষ অবধি ধৈর্য রাখা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখনও ব্যোমকেশ এগিয়ে এসেছিলেন। স্বভাবত স্বল্পভাষী, ফরসা, সুশ্রী সুগঠিত চেহারার ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু মৃদু হাসতেন। খুব সামান্য দৃশ্য যা হয়তো চোখ এড়িয়ে গেছে, খুব অকিঞ্চিৎকর কোনো কথা যা হয়তো মনে সেভাবে ছাপ ফেলেনি, খুব সহজ কোনো সমাধান যা হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়, এতই সহজ যে হয়তো তার কথা কেউ চিন্তাই করেনি, ব্যোমকেশ তাঁর সব কটি কেসে শুধু সেদিকে পথনির্দেশ করে গেছেন।
আমি নিশীথ মাহাতোর হত্যার ব্যাপারটা আবার গোড়া থেকে ভাবছিলাম। এখনও পর্যন্ত যে সুতোগুলো এদিক ওদিক ঝুলছে, তার মধ্যে অন্যতম হল নিশীথ মাহাতোর দোকান থেকে বডি কীভাবে খয়রাবেড়ার জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হল। চিরুণী তল্লাশির পরও এমন কোনো গাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়নি, যার কোনো সন্দেহজনক গতিবিধি আছে। নিশীথ মাহাতোর মৃত্যু হয়েছে রাত বারোটা থেকে আড়াইটের মধ্যে। তাকে হেমন্ত জীবিত দেখেছে রাত সাড়ে এগারোটায়। এগারোটায় তাকে জীবিত দেখেছে একাধিক স্থানীয় লোকজন। রাত সাড়ে দশটা থেকে সেই ভোর অবধি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। মতিদা দেখেছেন, আমি দেখেছি, আরও টিম মেম্বাররা দেখেছেন। ডেস্কটপে আবার একই ভিডিও চালিয়ে দেখতে শুরু করলাম।
রাত সাড়ে দশটা নাগাদ একটা স্যান্ট্রো বেরোচ্ছে। খয়রাবেড়ার দিক থেকে বাঘমুণ্ডির দিকে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এটি জনৈক অগ্নিমিত্র সরকারের, ফ্যামিলি নিয়ে সারারাত ড্রাইভ করে কলকাতা ফিরছেন। এর পর একটা ট্যুরিস্ট বাস। গতিবিধি নর্মাল। রাত এগারোটার পর থেকে ট্রাফিক কমে আসছে। দু একটা টুকটাক প্রাইভেট গাড়ি। খাতা মিলিয়ে দেখলাম এদেরও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। এর পর দীর্ঘ ব্রেক। বারোটা নাগাদ একটা সাইকেল পাস হচ্ছে। তারপরেই রাত বারোটা চল্লিশে একটা পি.সি.আর ভ্যান। সোজা চলে যাচ্ছে খয়রাবেড়ার দিকে। রাত দেড়টা নাগাদ একইপথে ফিরেছে। তার পর আর কোথাও কিছু নেই। ভোর চারটে থেকে আবার ট্রাফিক শুরু হয়েছে।
নাহ! কিচ্ছু সন্দেহজনক নেই! আমি হতাশ হয়ে মাউজটা ঠেলতে সন্ধে আটটা সাতাশের টাইমফ্রেমে গিয়ে মাউজটা ফ্রিজ হয়ে গেল। হ্যাং করে গেল ডেস্কটপ। যতই কার্সরটাকে ঠেলে সাড়ে দশটার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, কিছুই হয় না। মিনিট পাঁচেকের চেষ্টার পর কম্পিউটার অপারেটরকে ডেকে পাঠালাম। সে এসে সব দেখে টেখে বলল, একই ফ্রেম বারবার ফ্রিজ করে করে দেখার ফলে সিস্টেম হ্যাং করেছে। গোটা রাতের ফুটেজটা রান করলে, নর্মাল হয়ে যাবে। সে ডেস্কটপে পুরো ফাইলটা চালিয়ে চলে গেল। আমি মরা মাছের মত চোখ করে সেগুলো দেখতে থাকলাম।
রাত নটা থেকেই বাঘমুণ্ডিতে স্থানীয় মানুষের যাতায়াত কমতে থাকে। সাইকেল, ঠ্যালা গাড়ি, বাইক দু চারটে। সামনে ভোট বলে কন্ট্রোল রুম থেকে বাড়তি সতর্কতার জন্য রাউন্ড দেওয়া হচ্ছে। রাত সাড়ে নটা নাগাদ আবার একটা পি.সি.আর ভ্যানকে দেখা যাচ্ছে বাতি জ্বালিয়ে খয়রাবেড়ার দিকে যেতে। তার পর আরও কিছু বাইক আর প্রাইভেট কার। আমি একভাবে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বসেছিলাম। হঠাৎ মাথার মধ্যে বিদ্যুৎপ্রবাহ হল।
রাত সাড়ে নটায় যে পি.সি.আর ভ্যানটা রাউন্ড দিতে দিতে খয়রাবেড়ার দিকে গেল, সে ফিরল কখন? বারোটা চল্লিশের ফুটেজে তো আবার একটা ভ্যানকে বাঘমুণ্ডি থেকে খয়রাবেড়ার দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে। দেড়টা নাগাদ যদি সেটা ফেরে, তবে এই ভ্যানটা কোথায় গেল? ফিরল কোনটা? সাড়ে নটারটা না বারোটা চল্লিশেরটা? দুবার যাচ্ছে অথচ ফিরছে একবার! দুটো ভ্যান নাকি একই পথে? কিন্তু তা তো হওয়ার কথা নয়! অন্যপথেও ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আগের দিনই মতিদা বলছিলেন, রাউন্ড দিয়ে এই পথে ফেরত আসে ভ্যানগুলো।
আমার মনের মধ্যে একটা সম্ভাবনা বিষাক্ত কাঁটার মত ফুটল। আর্তচিৎকারের মত কেউ ভিতর থেকে বলে উঠল, যা ভাবছি তা যেন না হয়! কোনোভাবেই না হয়। যন্ত্রচালিতের মত কন্ট্রোল রুম ফোন করলাম। ২৯ শে মার্চ রাত সাড়ে নটা নাগাদ বাঘমুণ্ডিতে কোনো পি.সি.আর ভ্যান পাস করেছে? উত্তর এল হ্যাঁ। ফিরেছে কটায়? ভোর তিনটা নাগাদ।
পি.সি.আর ভ্যান দুটো। কন্ট্রোল রুম বলল পুরোনোটা ২৭ তারিখে বাঘমুণ্ডি থানায় দেহ রেখেছিল বলে নতুনটাকে পাঠানো হয়েছিল। পি.সি.আর ভ্যানের লোকজনকে প্রশ্ন করায় নিশ্চয়ই ফাঁক থেকে গেছে। তারা সাড়ে নটা নাগাদ খয়রাবেড়ার দিকে গেছে। অর্থাৎ তারা যখন গভীর রাতে নিশীথের কোনের সামনে দিয়ে পাস করেছে, তখন তারা খয়রাবেড়া থেকে ফিরছিল। ওদিকে যাচ্ছিল না। অন্য একটা ভ্যান এই ফাঁকটুকুর মধ্যে…
আমি দরদর করে ঘামছিলাম। বিভাসের নাম ধরে জোরে ডেকে উঠলাম। এত জোরে যে ও চমকে হাত থেকে চায়ের ভাড় ফেলে দিল।
“থানার ফুটেজ কোন ক্যামেরায় পাব?” আমি চেয়ার থেকে উঠে জিজ্ঞাসা করলাম।
ও থতমত খেয়ে বলল, “থানার ফুটেজ!”
“হ্যাঁ।”
একটু পরে যে ফ্রেমটা আমার চোখের সামনে ফুটে উঠল তাতে দেখা গেল, ২৭ তারিখ গভীর রাতে বিধু ভ্যানটা গ্যারেজ থেকে বার করছে। পর পর কদিনের ফুটেজ ঘেঁটে দেখা গেল গাড়িটা ফেরত এসেছে দু তারিখে।
বিভাস হতভম্ব হয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “সব কিছু এত চোখের সামনে ছিল; কিছুই ধরতে পারিনি!”
“কী হয়েছে একটু বলবেন?”
আমি ওর কথার উত্তর দিলাম না। শ্যামল ব্যানার্জি কেবিনে ছিলেন, পারমিশনের তোয়াক্কা না করেই ঢুকে গেলাম।
“গ্যারেজের ব্যাপারটা…সকালে কী যেন বলছিলেন?” আমি উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছিলাম।
শ্যামল ব্যানার্জি টিফিন খাচ্ছিলেন। খুব বিরক্ত স্বরে বললেন, “কোন গ্যারেজ?”
“পি.সি.আর ভ্যান যে গ্যারেজে ছিল, সকালে আপনি কী বলছিলেন ওই ব্যাপারে?”
এস.এইচ.ও একটা বোতল থেকে ঢকঢক করে জল খেয়ে বললেন, “কী আবার বলব! এঞ্জিনের কী একটা পার্ট রিপ্লেস করতে হত। লোকালি সেই পার্টস ছিল না বলে গ্যারেজ থেকে তিনচারদিন রেখে দিতে বলেছিল গাড়িটা। বিধু গাড়ি তো রাখেইনি, কোথায় রেখেছিল সেও ঠিক করে বলছে না। নিজে কোথা থেকে জোড়াতালি মেরে ঠিক করে থানায় দিয়ে গেছে। বলেছি বলে মুখের উপর চোপা করছে…আর কী বলব…সবই রক্তের দোষ…সব ছোটজাতের ছেলেপুলে চাকরি পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে…”
কেবিনের দরজাটা বন্ধ করে বেরিয়ে এলাম। শ্যামল ব্যানার্জির বিষাক্ত কথাগুলোকে ওপারে ছেড়ে। বিভাস আমার সামনে মুখ চুন করে দাঁড়িয়েছিল। ওর প্রশ্নের উত্তর ও পেয়ে গেছে।
