কামেন ফাইট্! কামেন ফাইট্!
পুরুলিয়ার হোটেল সায়নদীপ বেশ বিলাসবহুল হোটেল। সামনেই সাহেববাঁধ, উনবিংশ শতকে স্থানীয় ব্রিটিশ শাসকদের জল যোগানের সুবিধার জন্য এই বিরাট লেকটি খনন করা হয়েছিল। শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় করে আসে। পুরুলিয়া মিউনিসিপালিটির তরফ থেকে সুবিশাল এই জলাধারে কাশ্মীরের কায়দায় শিকারাভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিকারা পয়েন্টের কাছে একটা দুর্দান্ত ক্যাফে আছে। লেকের নীলচে ধূসর জলে, ক্যাফের নিয়ন লাইট পড়ে রঙবেরঙের বিন্দু জ্বলছিল, নিভছিল।
অভিনন্দন রায় তিনটে ক্যাপুচিনো আর ফিশ অ্যান্ড চিপস অর্ডার দিয়েছিলেন। পুরুলিয়া এস.পি অফিসে সরকারি কাজে এসেছিলেন। এখন উঠেছেন সায়নদীপে, এখান থেকে কাল ভোরে কলকাতা বেরিয়ে যাবেন। বাঁকুড়ার অপারেশনটার পর, ভদ্রলোকের তিনদিন ছুটি মঞ্জুর হয়েছে।
ফিশ অ্যান্ড চিপসের প্লেট থেকে একটা চিপস তুলে মুখে দিয়ে অভিনন্দন আমাদের দিকে তাকালেন। মতিদা আমাকে মেসেজেই ব্রিফ করেছিলেন যে ঠিক কী কী বলতে হবে আর কোথায় আসতে হবে।
“দেবাশিস মাহাতোর ভাই? নিশীথ মাহাতো খুনে বিধু বলে ঐ ছেলেটার সঙ্গে ইনভল্ভড বলে তোমার মনে হচ্ছে? আর ইউ সিওর?” কাটাকাটা উচ্চারণে ডি.আই.জি বলে উঠলেন। ক্ষমতা, সাফল্য আর বুদ্ধিমত্তার অদ্ভুত একটা মিশেল রয়েছে লোকটার মধ্যে। দেখলে সম্ভ্রমে লোকজনের মাথা নুইয়ে আসে।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।
“অ্যান্ড হোয়াট মেকস ইউ থিঙ্ক দ্যাট?”
মতিদা পরবর্তী সাত মিনিটে গত সাতদিনের ঘটনাগুলোর ব্রিফিং দিলেন। অভিনন্দন থুতনিতে হাত দিয়ে সেগুলো চুপচাপ শুনলেন। তারপর বললেন, “কী কী স্টেপস নিয়েছ, লোকটাকে ধরার জন্য?”
“আপাতত আইডেন্টফাই করার চেষ্টা করা হচ্ছে স্যার। ঝালদায় সোর্স লাগানো হয়েছে। ওখানে কেউ জানে না ও কোথায়। একটা ফেক নাম্বার ইউজ করেছে লোকটা, সেটা ট্র্যাক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
অভিনন্দন ঘাড় নাড়িয়ে বললেন, “ওভাবে হবে না। আই নো দিজ টেরেন লাইক পাম অফ মাই ওন হ্যান্ড। খুব টাফ এখান থেকে লোক খুঁজে বার করা। কে কাকে আশ্রয় দিচ্ছে কিছু ধরতে পারবেন না। বিধুকেও যেমন এতদিনে পারেননি।”
মতিদা মাথা নামিয়ে স্যরি বললেন। অভিনন্দন সামান্য বিরক্ত স্বরে বললেন, “দেখুন মতিবাবু, আপনি অনেক সিনিয়র। আমি ডি.আইজি থাকাকালীন একটা কেস এরকম আনসলভড অবস্থায় সি.আই.ডির কাছে চলে যাবে, এটা আমি পার্সোনাল ফেলিওর হিসেবে দেখছি। আমাদের টাইম শর্ট। আপনারা দরকারে বাঘমুণ্ডি বেল্টের প্রতিটা গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে সার্চ করুন। আয়াম সিওর, এরা দুজন লোকাল ব্যাকাপ পাচ্ছে।”
“ওকে স্যার।” মতিদা মাথা নাড়ালেন।
“বাই দ্য ওয়ে,” অভিনন্দন একটা পায়ের উপর আরেকটা পা তুলে দিয়ে খুব রিল্যাক্সড ভঙ্গিতে বসে বললেন, “আমার খুব কৌতূহল হচ্ছে জানতে যে দেবাশিস মাহাতোর মত একটা ড্রেডেড আলট্রাকে আপনাদের হঠাৎ ইনোসেন্ট বলে মনে হল কেন?
মতিদা আমার দিকে তাকালেন। আমি পরিমল সরকারের ভার্শনটা শোনালাম। অভিনন্দন চিন্তিত মুখে দুবার তিনবার হুম হুম শব্দ করলেন।
“এসিপি পুরকায়স্থ স্যারকে আমি একটু সাহায্য করতে বলেছিলাম। হয়তো আপনাকে আমার কথা বলেছেন স্যার।” আমি বললাম।
ডি.আই.জি ভুরু কুঁচকালেন। বললেন, “কে? পি.পি? হ্যাঁ ফোন করে কথা বলবে বলেছিল। কিন্তু আমার সময়-সুযোগের অভাবে হয়ে ওঠেনি।”
“নিশীথ মাহাতোর খুনে যে দিবাকর বিশ্বাস জড়িয়ে যাবে কে জানতো স্যার!” মতিদা মাথা নাড়িয়ে বললেন, “আপনিই তো হেড করেছিলেন স্যার, দিবাকর বিশ্বাসের মিসিং ইনভেস্টিগেশনটা?” মতিদা কফির কাপ নামিয়ে বললেন।
অভিনন্দন রায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বিষণ্ণ হাসলেন। বললেন, “আনফরচুনেটলি ইয়েস। দিবাকর ওয়জ এ ক্লোজ ফ্রেন্ড টু মি। আমরা একই কলেজে পড়াশুনা করেছি। আর আজ বলতে বাধা নেই, শুধু দিবাকরের ইনভেস্টিগেশন নয়, আই হেডেড দ্য হোল সার্চ-আউট অপারেশন এগেস্ট দ্য মাওয়িস্টস ইন দিস রিজিয়ন। দ্যাট ওয়জ কলড অপারেশন রেড হান্ট।”
“ইউ ডিড এ ভেরি ইন্সপায়ারিং জব স্যার।” মতিদা বললেন, “মহান সিংয়ের এনকাউন্টারটা আমরা কেউ ভুলিনি।”
“অল ক্রেডিট গোজ টু মাই টিমমেটস।” ডি.আই.জি অভিনন্দন হেসে বললেন।
“নিশীথ মাহাতোর ব্যাপারটা তো সত্যি স্যার? মহান সিংকে ধরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে লিঙ্কটা উনি দিয়েছিলেন তো?” মতিদা প্রশ্ন করলেন।
“শুধু নিশীথ মাহাতো কেন? একাধিক ইনসাইডার ছিল। সন্ত্রাসের রাজনীতি কি আর বেশিদিন চলতে পারে মতিবাবু? তবে হ্যাঁ, নিশীথ মাহাতো হ্যাড এ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট রোল। তাই ওঁর মৃত্যুতে আমি শকড হয়েছিলাম।”
“শুধু এরা নয়, গণেশ হুঁইকেও ভুললে চলবে না। সে কিন্তু নিশীথ মাহাতো মারা যাওয়ার জাস্ট এক দিন আগে মুম্বাই আর্থার রোড জেলে মারা গেছে। কে বা কারা মেরেছে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।” আমি বলে উঠলাম।
ডি.আই.জি রায় ভুরু কুঁচকে বললেন, “তোমার মনে হচ্ছে এগুলো সব কানেক্টেড?”
“আসলে দ্য পিপলের রিপোর্টটা পড়ছিলাম। হঠাৎ মনে হল এই কানেকশনটার কথা। পুরোটাই কাকতালীয় হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।”
“ঠিকই।” ডি.আই.জি রায় কী যেন চিন্তা করতে করতে সিগারেটটাকে অ্যাশট্রেতে গুঁজে বললেন, “রিসেন্টলি দ্য পিপলের ঐ রিপোর্টটা তো…পড়েছেন নাকি মতিবাবু?”
“কোন রিপোর্টটা বলুন তো স্যার?”
“আরে ঐ পুলিশের প্রাক্তন ইনফর্মার, গণেশ হুঁইয়ের সঙ্গে মাওয়িস্ট লিডার নিশীথ মাহাতোর যোগ। রিপোর্টার ভদ্রলোক কিন্তু বেশ খেটেছেন। আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল, পুলিশের ক্লোজ কেউ ইনফর্মেশন লিক করছে। এত ম্যাসাকার তো এমনি এমনি হয়নি।”
“ঠিক স্যার। আমি তো ভাবছিলাম, লোকটার কী অসীম ক্ষমতা! সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পুলিশকে ও ডাবল ক্রস করে গেছে। অথচ আমরা কিছু বুঝতে পারিনি।”
“পুরুলিয়া পুলিশের সঙ্গে অফিশিয়ালি গণেশ হুঁইয়ের কোনো কানেকশন ছিল না। এটুকু নিশ্চিন্ত থাকুন। ইনফর্মার হিসেবে এ তল্লাটে ওর ভূমিকা আমার জানা নেই।” অভিনন্দনের চোখে আত্মবিশ্বাস চকচকিয়ে উঠল, “হি কুড বি জাস্ট এ আমর্স ডিলার হিয়ার। কিন্তু পুলিশের কোনো ইনসাইডার ওকে তথ্য পাচার করতেই পারে।”
“ঠিক। কিন্তু গণেশ হুঁইকে কে ইনফর্মেশন লিক করতো সেটা পরিষ্কার নয়।” আমি বলে উঠলাম।
অভিনন্দন সরাসরি আমার দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, “হ্যাঁ সেটা আমার কাছেও পরিষ্কার নয়। গিভেন দ্যাট, সেসময় গণেশের অস্তিত্ব আমার জানা ছিল না। রাদার জানা সম্ভব ছিল না। ইনটেলিজেন্সের তরফ থেকে কোনো খবর আসেনি আমাদের কাছে।”
“ঠিকই স্যার। সেসময়কার পরিস্থিতি যা ছিল, আমি নিজে তো দেখেছি।” মতিদা বলে উঠলেন।
“আপনি যেন কোথায় পোস্টেড ছিলেন?”
“পুরুলিয়া সদরে স্যার।”
অভিনন্দন রায় আর মতিলাল মহান্তি নিজেদের মধ্যে পুরোনো কথা বলছিলেন। আমার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরছিল।
ডায়েরির পাতাগুলোর জেরক্সে চোখ বুলালাম। ডি.আই.জি রায়ের দিকে বাড়িয়ে বললাম, “এই কবিতাগুলো আসলে ভাবাচ্ছে আমাকে। কতগুলো শব্দের অর্থ বুঝতে পারছি না। রাজা বলতে দিবাকর বিশ্বাস কাকে মিন করেছেন ক্লিয়ার নয়।”
ডি.আই.জি আমার থেকে কাগজগুলো নিয়ে আরেকবার চোখ বোলালেন। তারপর বললেন, “আমার বেঙ্গলি রিডিং খুব পুওর। বিলাসপুরে স্কুলিং তো। একটু পড়ে শোনাও।”
আমি কটা কবিতা পড়ে শোনালাম। ডি.আই.জি রায় খুব মন দিয়ে শুনলেন।
“দিবাকরের এরকম উদ্ভট শখ ছিল। সরাসরি কথা না বলে, ছন্দে আর হেঁয়ালিতে বলত। হি ওয়জ ভেরি ট্যালেন্টেড অ্যাক্সুয়ালি। বাট আই হ্যাভ নো ক্লু হোয়াট হি মেন্ট হিয়ার।” অভিনন্দন রায় কাঁধ ঝাঁকালেন।
“ডক্টর উমানাথনকে নিয়ে আপনার কী ধারণা স্যার?”
ডি.আই.জি রায় আমার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালেন, তারপর বললেন, বলতে চাইছ?”
“না মানে, সি.আই.ডি ওকে জেরা করেছিল। কারণটা কি শুধুই দেবাশিস মাঁহাতো বা দিবাকর বিশ্বাসের সঙ্গে ওঁর পরিচয়?”
অভিনন্দন রায়ের নীলচে চোখে আবার সেই আভাটা ফুটে উঠল যেটা প্ৰথম দিন এস.পি অফিসে দেখেছিলাম।
“ইউ হ্যাভ গ্রেট ইনটিউশন অফিসার। এই সম্ভাবনার কথা তো কোনো ইনভেস্টিগেশন ফাইলে নেই! ডিড ইউ অ্যাক্সেস সি.আই.ডি ফাইলস?”
“ইয়েস স্যার। বাট এটা জাস্ট এ হাঞ্চ।” আমি বললাম।
অভিনন্দন রায় আমার দিকে তাকিয়ে গভীর হাসলেন। তারপর বললেন, “ডক্টর উমানাথনকে নিয়ে অনেকদিন ধরেই আমার সন্দেহ ছিল। হি হ্যাড দ্য পারফেক্ট চান্স টু বি দ্য ক্লোজ এইড টু দ্য মাওয়িস্টস। পুলিশের নীচুতলাতে ওর বিরাট প্রভাব। গেরিলা জোনগুলোয় বাইরের লোকেদের মধ্যে একমাত্র উমানাথনের অ্যাক্সেস ছিল। মেডিক্যাল ক্যাম্প করতেন বলে, মাওয়িস্টরা ওকে অ্যালাউ করত। সি.আই.ডি ওকে জেরা করেছিল, কিন্তু কোনো লিড পায়নি। আজ এতগুলো বছর পরে তোমার যেমন হাঞ্চ হচ্ছে, ঠিক একই হাঞ্চ আমারও হয়েছিল। আমি সি.আই.ডিকে সে কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু আনফরচুনেটলি পাবলিকের ঝামেলার ভয়ে, মিনিস্ট্রি থেকে নির্দেশ এল যে সলিড এভিডেন্স না থাকলে ছেড়ে দিতে।”
“উনি ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন?”
“বিনা বাক্যব্যয়ে। কোনো চার্জ ফ্রেম করা হয়নি। অথচ ইনসাইডার হওয়ার সবথেকে বেশি সম্ভাবনা ওঁরই ছিল।”
মতিদা একটু উসখুশ করছিলেন। ডি.আই.জি রায় ওঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, “দেখুন মতিবাবু, জনমোর্চার তরফ থেকে ওঁর বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরে অভিযোগ আসছে, নিশীথের সঙ্গে ওঁর বেশ কিছুদিন ধরে গণ্ডগোল চলছে। বিশেষত শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর সেটা চরমে উঠেছিল। কেন সেটা ভেবে দেখেছেন কি?”
মতিদা কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। ডি.আই.জি রায় বলে চললেন, “দেখুন শত্রুতা নানাকারণে হতে পারে। একসময়ে মিলেমিশে কাজ করেছেন, এখন সমীকরণ বদলেছে। হয়তো নিশীথ মাহাতোর পলিটিকাল কেরিয়ার আপরাইজিং দেখে ডক্টর উমানাথন ওঁকে ব্ল্যাকমেইল করছিলেন। নিশীথের বাড়িতে দিবাকর বিশ্বাসের অ্যাটাচি ছিল। নিশীথও হয়ত উল্টো ভয় দেখিয়েছিলেন। এরকমও হতে পারে, বিভিন্ন জায়গা থেকে যে টাকাপয়সা রোজগার করছিল নিশীথ মাহাতো…ইউ নো বাই ভেরিয়াস সোর্সেস, ঘুষ হতে পারে, চাঁদা হতে পারে…উমানাথন সেই টাকার ভাগ চেয়েছিলেন। নিশীথ রাজি হননি। সো আউট অফ রেজ, হি ডিসাইডেড টু কিল নিশীথ মাহাতো উইথ দ্য হেল্প অফ বিধু মাণ্ডি অ্যান্ড শিবাশিস মাহাতো।”
“মানে এদেরকে ব্যবহার করে?” মতিদা সামান্য অবাক হয়ে বললেন।
ডি.আই.জি রায় আবার শ্রাগ করলেন। বললেন, “ভেবে দেখুন। অসম্ভব কি? আপনারা ফর্মাল একটা ইন্টেরোগেশন করুন। আমি এস.পিকে বলে দিচ্ছি।”
“স্যার, উমানাথন এখন বাইরে। কাল সকালে ফিরবেন।”
“তবে স্টেশন থেকেই ওঁকে তুলুন। বিধু আর শিবাশিস কোথায় উনি নিশ্চয়ই জানেন। ইন্টেরোগেট হিম ইন পুরুলিয়া। রঘুরামও থাকতে পারবে।” রাত সাড়ে আটটা বাজছিল। সাহেববাঁধকে ডানদিকে রেখে চওড়া রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে মতিদা বললেন, “অনেককাল আগে একটা হলিউডি সিনেমা .. দেখেছিলাম। খুন খারাপির সিনেমা, দুটো রাইভ্যাল দল। শেষে দেখা গেল যে নায়ক, আমেরিকান সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি পাচার টাচার করার বিরুদ্ধে তদন্ত টদন্ত করে, সে আদতে চীনের এজেন্ট। উমানাথনের ব্যাপারটা আমার তেমন ফিল্মি কায়দার লাগছে।”
মতিদার কথায় হেসে ফেললাম। বললাম, “আপনি বোধহয় ভিলেনের চেয়ারে উমানাথনকে একেবারে বসাতে পারছেন না, তাই না?”
মতিদা আমার কথার উত্তরে কী যেন বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। ওঁর ফোন এল একটা। ফোনে দু একটা কথার পরে, “আচ্ছা আচ্ছা! ও বলরামপুরে….আচ্ছা আচ্ছা…পোস্টমর্টেমে পাঠিয়েছ?” বলে ফোনটায় কিছুক্ষণ কথা বললেন।
ফোনটা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ও অন্য একটা কেসের ব্যাপার। দিব্যজ্যোতির নাম্বারটা একবার দে তো।”
আমি ফোনটা পকেট থেকে বার করতে গিয়ে মতিদার মুখের দিকে তাকালাম। মতিদা যেন হঠাৎ কেমন থমকে গেছেন। মুখটা কেমন যেন রক্তশূন্য সাদা লাগছিল।
“কী হয়েছে মতিদা?”
“ব্যাপারটা আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিল রে। এইমাত্র বলরামপুরের এস.আই একটা পি.এমের ব্যাপারে জানাতে মনে পড়ল।”
“কী কথা?”
“উমানাথনের পুরো নাম নরেন্দ্র কাট্টাসেরি উমানাথন। এন.কে উমানাথন।” আমি মতিদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। যা শুনলাম সেটা ঘিলুতে রেজিস্টার হতে সময় লাগল।
মতিদা চাপা চিৎকার করে বলে উঠলেন, “বুঝছিস না! দিবাকর বিশ্বাসের খাতার রাজা…রাজা শব্দের সমার্থক শব্দ…নরেন্দ্র!”
