দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম্! দেড়ে দেড়ে দেড়ে!
দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম্! দেড়ে দেড়ে দেড়ে!
পুরুলিয়া স্টেশন থেকে বাঘমুণ্ডি পি.এস পৌঁছাতে সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক। থানার জুরিশডিকশনাল এরিয়াতে গোটা আটটা পঞ্চায়েত, অযোধ্যা পাহাড় তো রয়েইছে, সঙ্গে রয়েছে মাঠাবুরু আর দুয়ারসিনির মত গভীর জঙ্গল। কলকাতা থেকে এ বাদে আর কোনো তথ্য নিয়ে আসিনি।
যে গাড়িটা আমাকে রিসিভ করতে পুরুলিয়া স্টেশনে গিয়েছিল, তার চালক ছেলেটির নাম বিধু মাণ্ডি। রোগাসোগা গড়ন। পঁচিশ ছাব্বিশ বছর বয়স হবে। কালো মিষ্টি মুখে দুটো বিরাট সাইজের চোখ ঝকঝক করছে। স্টেশনের বাইরেই পুরুলিয়া পুলিশের স্টিকার দেওয়া একটা সাদা বোলেরো নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। আমি স্টেশনের বাইরে গিয়ে দাঁড়াতেই পকেট থেকে মোবাইল বার করে ছবি দেখে মিলিয়ে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এল। আজকাল আইডেন্টিফিকেশনের ব্যাপারটা সহজ। বিধু লোকাল ছেলে। এর আগে কোটশিলা থানায় ছিল। দুবছর হল বাঘমুণ্ডিতে। প্রচুর কথা বলে। দশ মিনিটের মধ্যে ওর বাড়ির হালচালের খবর দেওয়া শেষ করে আমার বাড়ির খবরে এসে পৌঁছাতেই আমি রাশ টানলাম।
ধূসর মাটি ততক্ষণে লাল হয়ে উঠেছে। শিমূলিয়া মোড় থেকে বাঁদিকে গেলে টাটানগর আর ডানদিকে বাঘমুণ্ডি। অযোধ্যা পাহাড় ছাড়িয়ে আরও কিছুদূরের পথ। গাড়ি সিরকাবাদ পৌঁছাতেই এক লহমায় ল্যান্ডস্কেপ বদলে গেল। চারিদিকে গাছেদের মাথায় যেন কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। লাল আর কমলার ক্যানভাসে ছিটে ফোঁটা সবুজ। আবিরে রাঙানো প্রকৃতি!
শুধু রাস্তার দুধারে নয়, গোটা অঞ্চল জুড়েই প্রকৃতির অপরূপ পটচিত্র আঁকা; বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে, গীতিতে অনন্য! দূরের রুক্ষ অসমান জমিতে ছোট-বড় পাথুরে টিলা। শিমুল, পলাশ আদৃত গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে সামনে। দূরে পাহাড়ের যে সারি চোখের সামনে ভেসে উঠল, সেই সারিতেই ছুঁচোলো আকৃতির এক শৃঙ্গ সবার মাথা ছাড়িয়ে উপরে উঠেছে। বিধু বলল, “ওর নাম গজাবুরু।”
বোলেরোটা নতুন। তারপর ইস্পাতের মত মসৃণ রাস্তা। বিধু গুনগুন করে একটা গানের সুর ভাঁজছিল। ভাষা অপরিচিত কিন্তু নেশা ধরানো সুর।
“আপনিই এ থানার প্রথম মেয়েছেলে পুলিশ। সিভিক ভলান্টিয়ার আছে তিনজন। এ বাদে সব বেটাছেলে। থাকবেন কি কোয়ার্টারেই?” বিধু স্টিয়ারিং
ঘোরাতে ঘোরাতে বলল।
“না। বাইরে খুঁজব।”
বিধু রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়ে বলল, “এদিককার পরিস্থিতি শান্তই ছিল। সি.আর.পি.এফ এর ব্যাটেলিয়ন চলে গেছে কমাস আগে। তারপর আবার খুচরোখাচরা অশান্তি লেগে আছে। ভালো সময়েই এসে পড়েছেন। গরু চুরি থেকে পুকুর চুরি সবই ধরতে হবে। তবে, একপ্রকার ভালোই। মেয়েছেলেরা ভালো চোরপুলিশ খেলতে পারে।”
“বটে?”
বিধু কোনো উত্তর না দিয়ে ফিক করে হাসল। “শ্যামল স্যারকে তো এখন মনে হয় পাবেন না। মর্গের ওখানেই আটকা পড়ে আছেন সকাল থেকে।”
“কে মারা গেছে? বিশেষ কেউ?”
বিধু আর কোনো উত্তর দিল না। গাড়িটা বেগুনকোদর হয়ে বাঘমুণ্ডির দিকে টার্ন নিল। বেগুনকোদরে একটা নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে। বিধু বলল স্থানীয় মহিলাদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ ও বিপণন কেন্দ্র। সরকার পোষিত কোনো এন.জি.ও রিসেন্টলি কাজটা শুরু করেছে।
অশান্তির আঁচটা পাওয়া গেল বাঘমুণ্ডির কাছাকাছি এসে। বাঘমুণ্ডি থানার এক কিলোমিটার আগে গাড়িটা থামিয়ে দিল বিধু। লোকাল একটা ছেলে কানে কানে কিছু বলে গেল ওর। ঘিঞ্জি এলাকা। দূরের মোড় থেকে একটা জটলার আভাস পেলাম। বিধুর মুখ থেকে কটা শ-কার, ব-কার বেরোল।
“কী হয়েছে?”
“সকালে ফাঁকা ছিল। এখন বোধহয় থানা অবরোধ করে রেখেছে।” বিধু চিবিয়ে চিবিয়ে বলল।
“কারা?” আমি টানটান হয়ে বসে বললাম।
“স্থানীয় লোকজন, কিছু নেতা টেতা আছে।”
“এই ঝামেলাটা কি মর্গের সেই কেসটা নিয়েই?”
“হ্যাঁ, আবার কী!”
বিধু নেমে খবর নিয়ে এল।
“পিছন দিক থেকে যেতে হবে ম্যাডাম। দুদিকের ট্রাফিক পুরো বন্ধ। এদিক থেকে যাওয়ার রিস্ক নেওয়া যাবে না। গাড়িতে হামলা হতে পারে।”
বিধু রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করে একটা গলি পথ ধরল। আধ কিলোমিটার রাস্তা পিছনের গলিঘুঁজি ঘুরে যেতে প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে গেল। থানার পিছন দিকের পাঁচিলে ছোট গেটটা ঠেলে ঢুকতেই মেইন গেটের দিকে নজর চলে গেল। মেইন গেটের সামনে সারা রাস্তা জুড়ে বিরাট জটলা।
মেইন গেট আগে থেকেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেড করা। থানার পাঁচিলের উচ্চতা সাধারণ উচ্চতার থেকে অনেকটা বেশি। পাঁচিলের ঠিক গা বেয়ে ওয়াচপোস্ট বানানো। তার টঙে দুজন কনস্টেবল বসে আছেন। সি.আর.পি.এফ জওয়ান, কনস্টেবল আর সিভিক ভলান্টিয়ার মিলিয়ে প্রায় জনা তিরিশ কর্মী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। নিশ্চয়ই ব্যাক আপ নেওয়া হয়েছে থানা থেকে। প্রায় শ দুয়েক লোকের ভিড় সামলানোর মত ফোর্স থানাগুলোয় থাকে না। তিন চারজন নেতা গোছের লোক জটলার মুখটায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে, পিছন থেকে ঢেউয়ের মত সমস্বরে চিৎকার হচ্ছে, “তদন্ত চাই। তদন্ত চাই।”
আমি এগিয়ে গিয়ে আই-কার্ড দেখাতেই একজন সি.আর.পি.এফ জওয়ান থানার মেইন অফিসটা দেখিয়ে দিল। থানার কমপ্লেক্সটা বড়। ব্যারাক, কোয়ার্টার, রেকর্ডরুম আলাদা আলাদা বিল্ডিংয়ে। একটা আলাদা পাম্প স্টেশন আর ইলেকট্রিকাল সাব স্টেশন রয়েছে। সবমিলিয়ে গোছানো ব্যবস্থা।
অফিসটায় ঢুকতেই থানার পরিচিত দৃশ্যটা চোখের সামনে ফুটে উঠল। হালকা নীল দেওয়ালে গান্ধীজি আর আম্বেদকর ফ্রেমে বাঁধাই হয়ে ঝুলছেন। তার ঠিক নিচেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিরাট বড় মনোগ্রাম। হলদে বর্ডার দেওয়া অর্ধেক লাল ও অর্ধেক ঘন নেভি ব্লু ব্যাকগ্রাউন্ডে লেখা ডাব্লুবিপি। পুলিশ ট্রেনিংয়ের সময় শিখেছিলাম, নিজের উপর কখনও বিশ্বাস হারালে ওই একটাই সিম্বলের দিকে কনসেনট্রেট করতে। কারেজ, ইনটিগ্রিটি, ফেয়ারনেস, সার্ভিস—পুলিশি চাকরির চারটে কোর ভ্যালুজ! চারিদিকে তাকাতেই পরিচিত দৃশ্য আর শব্দগুলো ভিড় করে এল। মালখানা, ইনভেস্টিগেশন রুম, কম্পিউটার রুম, দেওয়ালে ঝোলানো একের পর এক বোর্ডে ক্রাইম চার্ট আর পেন্ডিং কেসের স্ট্যাটিসটিকস, গত চব্বিশ ঘণ্টার অ্যারেস্টেড লিস্ট, সিনিয়র অফিসরদের ফোন নাম্বার, ওয়ারলেস রুম থেকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ফোনকলের শব্দ, ল্যান্ডলাইনের ক্রমাগত বেজে চলা, ডেস্কটপের পুরুলিয়া পুলিশ লেখা স্ক্রিনসেভার, আর সেসব ছাপিয়ে পুরো অফিসটার একটা কেজো গন্ধ! অনুভব করলাম, এই চার দেওয়ালের পরিচিতিটুকুর জন্য, ডাব্লুবিপির মনোগ্রামটা আবার নিজের ইউনিফর্মে দেখার জন্য, বারবার নিজের মধ্যে মাথা চাগাড় দিয়ে ওঠা অন্য এক সংশয়াদীর্ণ আমিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ আট মাস কতটা সতৃষ্ণ ছিলাম!
এস.এইচ.ওর কেবিনের ফাইবারগ্লাসের সেমিট্রান্সপারেন্ট দরজা ভেদ করে দেখা যাচ্ছে কেবিন ফাঁকা। একজন অফিসার একটা স্টিলের চেস্ট অফ ড্রয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোরে হ্যান্ডলগুলো ধরে টানাটানি করছিলেন। আরেকজন ডেস্কের উপর উপুড় হয়ে কিছু কাগজপত্র হাঁটকাচ্ছিলেন। দূর থেকে দেখে মনে হল সেগুলো স্টেটমেন্ট শিট। তিনজন মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার লক-আপের সামনে একটা বেঞ্চে বসে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলেন।
“আপনি দর্শনা বোস?” সামান্য এদিককার কথ্য ভাষার টান আছে গলাটায়। যিনি প্রশ্ন করলেন তাঁর ভুরুটা কুঁচকেই ছিল। স্টেটমেন্ট শিটের পাহাড় থেকে মুখ তুলে আবার প্রশ্ন করলেন, “আপনি তো আজই জয়েন করবেন? বড়বাবু একটা জয়েনিং লেটার জমা নিতে বলেছেন আমাকে। আর থানার ডায়েরিতে জয়েন্ড লিখে সই করে দেবেন। আমার নাম অসীম, অসীম প্রামাণিক, এস.আই, বাঘমুণ্ডি পি.এস।”
অসীম ভুরুটা সোজা করে সামান্য হাসল। বয়সে আমার আশেপাশেই হবে। স্কুলবয় বিল্ড, সরু কাঁধ, অপেশীবহুল চেহারা। চুলগুলো কপালের কাছটায় জড়ো হওয়ায় আরও অল্পবয়স্ক লাগছে।
জয়েনিং লেটার বাড়ি থেকে লিখেই এনেছিলাম, জমা দেওয়ার পরপরই বাকি সবাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হল। এ.এস.আই দিব্যজ্যোতি মণ্ডল, কনস্টেবল গিরিশ ঘরামি ও প্রণব বর্মন, সিভিক ভলান্টিয়ার দীপা আর মধুমিতা। আরও ছজন স্টাফ আছেন। তাঁদের সঙ্গেও ধীরে ধীরে পরিচয় হবে।
অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারে সইসাবুদ সারতে সারতেই বাইরে চূড়ান্ত হট্টগোল শুরু হল।
অসীম আস্তে করে বলল, “বড়বাবু ঢুকেছেন।”
***
“দেখো দর্শনা, গত চারদিন ধরে মাওয়িস্ট পোস্টারের জন্য চারটে থানা হাই অ্যালার্টে। তার মধ্যে আমাদের থানা একটা। ইনফর্মার ছড়ানো ছিল, খবরও টুকটাক আসছে। সেই ভিত্তিতে আমরা এখনও পর্যন্ত লোকাল লেভেলে কিছু লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, বাড়িটাড়ি খানাতল্লাশি হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে দুজন; দুজনই প্রাক্তন সিমপ্যাথাইজার। পুলিশ রিমান্ড পেয়েছি সাতদিনের। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মেইনলি অসীম হ্যান্ডল করছে কেসটা। তারমধ্যে ভবেশ বাউরির কেসটা গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত….”
শ্যামল ব্যানার্জি বাকি কথা শেষ করার আগেই মোবাইল বেজে উঠল। স্ক্রিনটার দিকে চোখ চলে গেল আমার। এস.পি ফোন করেছেন।
“ইয়েস স্যার। ওকে স্যার।” শ্যামল ব্যানার্জীর গলাটা টেন্সড শোনাল। ফোনে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোনটা প্রায় ছুঁড়ে টেবিলের উপর ফেললেন। একটা খিস্তি মারতে গিয়েও অর্ধেক গিলে নিয়ে বললেন, “আমাদের হয়েছে শাঁখের করাত বুঝলে কিনা! অপরাধী সন্দেহে তুলে আনতেও হবে, আবার তার কিছু হলে লোকাল পার্টি, মিডিয়া, তাবড় তাবড় উপরওয়ালা কাউক্কে পাশে পাবে না।”
“থানা ঘেরাও কি শুধু আজকের কেসটার বেসিসেই?”
“না হে! ভিতরে ভিতরে সিদ্ধ হচ্ছিল, আজ সিটি বেজেছে। পাবলিকের আর কী, সিটি বাজালেই হল!” এস.এইচ.ও দুদিন পুরোনো একটা কাগজ বার করে দিলেন। এখন সময় কাগজের জেলার খবরের পাতা। একটা বিশেষ হেডলাইনের দিকে দেখিয়ে বললেন, “এটা পড়ো।”
“মাওবাদী সন্দেহে সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করছে জেলা পুলিশ” হেডলাইনের তলায় দু কলামের খবর। অল ইন্ডিয়া জনমোর্চা কংগ্রেসের জেলা সভাপতির ভাষণ ছেপেছে কাগজে। পুলিশি হেনস্থার ফলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে গ্রামগুলিতে বলে কলাম শেষ করেছেন রিপোর্টার।
“ওহ। এটার রিপাকেশন!” আমি ভুরুটা উঁচিয়ে বললাম।
“আসলে,” অসীম একটু ইতস্তত করে বলল, “ভবেশকে ছমাস আগে একটা চুরির ঘটনায় তুলে আনা হয়। সেবার লকাপে মারধোর করায় ওর বাঁ হাতটা…” এস.এইচ.ওর দিকে তাকিয়ে অসীম চুপ করে গেল।
“আহ! অসীম! এই ঘটনাটার সঙ্গে চুরির ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।”
“তা নেই স্যার। কিন্তু আগেরবার ভবেশের হাতটা না ভাঙলে এবার এত সহজে পুলিশের দিকে আঙুল উঠত না।”
“পুলিশের দিকে আঙুল তোলার কথা তোমার থেকে অন্তত নাই বা শুনলাম!” শ্যামল ব্যানার্জি খিঁচিয়ে বললেন।
এস.এইচ.ও-র কথায় অসীমের মুখটা ছোট হয়ে গেল। ওদের দুজনের অস্বস্তিময় মুখটা দেখে বুঝলাম লকাপে মারধোরের ঘটনা সত্যি একটা ঘটেছিল। অসীম কেন মুষড়ে গেল সেটা অবশ্য বুঝলাম না। কথা ঘোরাতে বললাম, “তাহলে এই কেসটাকে পুলিশি নির্যাতনের সঙ্গে লিঙ্ক করা হচ্ছে?”
শ্যামল ব্যানার্জি যেন কথা খুঁজে পেয়ে বলে উঠলেন, “একদম। পুলিশি নির্যাতনের কথা প্রচার করে ভবেশ বাউরির কেসটায় পলিটিকাল কালার লাগানোর চেষ্টা চলছে।”
“মাওদের প্রাক্তন সিমপ্যাথাইজাররা তো অনেকেই এখন জনমোর্চা কংগ্রেসের সদস্য? মানে বলছেন যে ভবেশকে পোস্টার রাখার সন্দেহে ধরা হয়েছিল বলে, জনমোর্চা থেকে পুলিশি নির্যাতনের রিউমার ছড়ানো হচ্ছে?”
“আরে হ্যাঁ। জনমোর্চা বলছে ওদের লোক বলে আমরা তুলছি, আর জনহিত বলছে পোস্টার নিয়ে পুলিশ সিরিয়াস ধরপাকড় করছে না। বাল, এসব ধরপাকড়ে যে কিছুই হবে না উপরওয়ালারা জানে না? মাঝখানে গ্রামের লোক খেপে যাচ্ছে,” শ্যামল ব্যানার্জির গলা নেমে গেল, “মাস্টারমাইন্ড তো ফুঁসে আছে জঙ্গলে, কোবরা ধরছে না কেন তাকে? ছ-ছটা সি.আর.পি.এফের ভ্যান ওড়ানোর পরও ও শালাকে বাজাতে মালগুলোর পুঁটকি মারা যাচ্ছে? মাঝখান থেকে কটা বাল-ছালকে ধরার অর্ডার বের করে পুলিশের পুরচাতে পুলটিস লাগানোর ব্যবস্থা চলছে। আমাদের এস.পি সাহেবের আবার জনহিতের হোমরাচোমড়াদের সঙ্গে বিশাল তেল কিনা!”
এস.এইচ.ও-র মুখটা বিরক্তিতে ভরে উঠল। ভদ্রলোকের বড়সড় টাক, কপালের অগুনতি ভাঁজ, পাতলা ভুরু, কুঁতকুতে চোখ, কাঁচাপাকা গোঁফ, এ সব ছাপিয়ে একটাই ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। শ্যামল ব্যানার্জি আদ্যোপান্ত বিরক্তির প্রতিমূর্তি।
“ভবেশ বাউরি, মানে ভিকটিমও কি সিমপ্যাথাইজার?”
“আলবাত!” এস.এইচ.ও টেবিল চাপড়িয়ে বললেন। “কুড়ি বছর আগেও ভবেশ হিস্ট্রিশিটার ছিল। তারপর পিপল লিবারেশন গেরিলা আর্মিতে ভিড়ে যায়। ওদের হয়ে ছোটখাটো কাজ কর্ম করত। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর, ও ভালটু খেয়ে লালটু সেজেছিল। পুলিশের চাকরির আশায় ছিল, হয়নি। এদিক ওদিক টুকটাক কাজ করে বেড়াতো। চুরি চামারির অভিযোগ ছিল। আমাদের কাছে পাক্কা খবর ছিল, বাউরির বাড়িতে পোস্টার আছে। সেই মত কাল দুপুরে রেইড হয়। কুড়িটা মত পোস্টারও পাওয়া যায়। ভবেশ তখন বাড়িতে ছিল না। একশ দিনের কাজে গিয়েছিল। এমনিতে কাল রবিবার ছিল। কিন্তু ওর নাকি কীসব কাজ বাকি ছিল। ওকে খুঁজতে ওর কাজের জায়গায় ফোর্স যায়।”
“সেইমত আমি, দুজনের একটা টিম নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসের দিকে যাই। ওখানে আগের দিন অবধি ড্রেনের কাজে ভবেশ বাউরি কাজ করছিল। আমরা যখন পৌঁছাই, তখন প্রায় আড়াইটা বাজে। ও সেখানে তখন ছিল না। কনট্রাক্টরকে ফোন করা হয়। সে বলে ভবেশের কাজে আসার কথা নয়। তবে আড়াইটে নাগাদ ভবেশকে সাইকেলে চেপে মাঠার জঙ্গলের দিকে যেতে দেখেছে সে। কনট্রাক্টর সেসময় বাইকে চেপে অফিসের দিকেই আসছিল। ভবেশ যে কাল পঞ্চায়েত অফিস যায়নি সেকথা দুজন গার্ডও কনফার্ম করেছে।” অসীম কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল।
“কনট্রাক্টরের সঙ্গে ভবেশের কোনো কথা হয়নি রাস্তায়?”
“নাহ। তার বক্তব্য সে গতকাল সকাল থেকে পুরুলিয়া টাউনে ছিল। ভবেশের রবিবার কাজে আসার কথা ছিল না। তাই ভবেশকে সে থামায়নি বা কিছু জিজ্ঞাসা করেনি।”
“তারপর?” অসীমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।
“আমরা অপেক্ষা না করে মাঠা জঙ্গলের দিকে যাই। জঙ্গলের ধার দিয়ে একটা শর্টকাট রাস্তা সোজা স্টেট হাইওয়েতে গিয়ে মিশেছে। ওদিকে একটা রিসোর্ট আছে। চা-বিড়ির দোকানও আছে দু-একটা। আমি নিজে হাইওয়ে ধরে আরও কিছুটা এগোই, বাকি দুজন আশেপাশের দোকানগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু ওর কোনো ট্রেস পাওয়া যায়নি।”
“জঙ্গলের ভিতরে খোঁজা হয়েছিল?”
“না।”
“আর ওর সাইকেলটা?”
“পাওয়া যায়নি।” শ্যামল ব্যানার্জি মাথা নাড়িয়ে বললেন।
এর পরের ঘটনা অসীম প্রামাণিকের মুখ থেকে আগেই শুনেছি। আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ পি.সি.আর ভ্যান থেকে কন্ট্রোল রুমে ফোন যায়। দুজন বিট কনস্টেবল রাস্তায় টহলরত পি.সি.আর ভ্যানকে খবরটা দেয়। পি.সি.আর ভ্যান খবরটা কনফার্ম করে যে একটা বছর পঁয়তাল্লিশের আনআইডেন্টিফায়েড মেল বডি পাওয়া গেছে মাঠার জঙ্গলের ভিতর থেকে। জন্তুজানোয়ারে কিছুটা খুবলে খেয়েছে বডি। কাঠ কুড়াতে গিয়ে দুজন স্থানীয় মানুষ বডিটা দেখতে পেয়েছে। অসীম ডেডবডি উদ্ধার করে এবং ম্যাজিস্ট্রেট আর লোকাল ডাক্তারের উপস্থিতিতে সুরতহাল করে মর্গে চালান করে। স্বভাবতই সেখানে স্থানীয় লোকজন ছিল। বডি উদ্ধার হওয়ার সময় দেখেছে। এরপর লোকাল পার্টির কিছু লোক ভবেশের ফ্যামিলি মেম্বারদের এই বলে খেপিয়ে দেয় যে পুলিশ নাকি ওকে তাড়া করে ধরে ফেলেছিল, তারপর কাস্টডিতে আটকে রেখে টর্চার করার পর ও ফেঁসে গেছে। তারপর নিজের পিছন বাঁচানোর জন্য পুলিশ ভবেশ বাউরির বডি জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে।
“বাউরি…মানে ভবেশ কি গত রাতে বাড়ি ফিরেছিল?” আমি একটু ভেবে জিজ্ঞাসা করলাম।
“নাহ! ওই দুপুরেই ওকে শেষ দেখা গেছে।” অসীম বলল।
“বাড়ির লোক রাতে থানায় কিছু জানায়নি?”
“না। ভবেশ মদ খেয়ে মাঝে মাঝেই বাড়ি ফিরত না। নিশ্চয়ই ভেবেছে সেরকমই কেস। তারপর সক্কালবেলা কোনো নেতা টেতা বাড়িতে গিয়ে মাথাগুলো আচ্ছাসে মুড়িয়েছে। মর্গের সামনে ধর্ণায় বসেছিল মালগুলো। কিছুতেই শালা বোঝানো যাচ্ছে না যে এতে পুলিশের কোনো হাত নেই।” শ্যামল ব্যানার্জি সিগারেটে টান মেরে বললেন।
“কী দাবি কী ওদের?”
“হাসপাতালের বড় ডাক্তারকে অটোপ্সি করতে হবে। ডোম বা অন্য কোনো জুনিয়র ডাক্তার করলে ওরা ডেড-বডি নেবে না।”
“কজ অফ ডেথ কী মনে হচ্ছে?” আমি অসীমকে প্রশ্ন করলাম।
“বলা মুশকিল।” অসীম নাকটা একটু কুঁচকে বলল, “ভবেশের পরনে কিছু ছিল না। বডি আপসাইড ডাউন অবস্থায় ছিল। আমি যখন পৌঁছাই, তখন সকাল আটটা। বডি তখনও কাঠ। দেখলাম, বডির গলায় কোনো স্ট্রাঙ্গুলেশন মার্ক নেই। কাঁধের কাছটা সামান্য খুবলে খেয়েছে জন্তুতে। এছাড়া আর কোনো এক্সটার্নাল ইনজুরি নেই। বড়ির হাত পায়ে কাদা শুকিয়ে লেগে ছিল। চুল হালকা ভেজা। নখ সামান্য নীলচে। অথচ জলে নামার বা জল ঘাঁটার কোনো প্রাথমিক লক্ষণ নেই, আমি আঙুলের ডগাগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি, নখের তলায় কালচে ময়লা ছিল। কিন্তু চামড়া কুঁচকে যায়নি। মনে হল, অন্য কোথাও থেকে ওকে ওইভাবে ক্যারি করে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে গেছে।”
“কিন্তু পুলিশ কাস্টডিতে ডেথ হয়েছে এটা লোকজনের মাথায় ঢুকল কীভাবে? ওর গায়ে কী কোনো দাগটাগ ছিল?”
“আমি বডি উল্টে পাল্টে যা বুঝলাম, বডি ক্রাইমসিনে অনেকক্ষণ পড়ে ছিল। ডেডবডি অতক্ষণ উপুড় হয়ে একই জায়গায় পড়ে থাকলে, গ্র্যাভিটির টানে রক্ত এসে জমাট বাঁধে। মাটির সঙ্গে ওর বডির পয়েন্ট অফ কনট্যাক্টগুলোর চারপাশে বিভিন্ন জায়গায় গোলচে কালশিটে টাইপ দাগ ছিল। যেটা দেখে লোকজনের মনে হয়েছে, ওকে পিটানো হয়েছে। তারপর আগের কেসটার সঙ্গে জড়িয়ে….”
“আচ্ছা!”
“সবথেকে অদ্ভুত ব্যাপার হল ভিকটিমের ডেডবডি থেকে একটা বিশ্রি গন্ধ ছাড়ছিল। মানে ঠিক পচন ধরার গন্ধ নয়, গন্ধটা অন্যরকম।” অসীম ভুরু কুঁচকে
বলল।
“আরে সকাল থেকে তুমি সেই গন্ধে আটকে আছ অসীম! বাউরির গা থেকে বিলিতি সেন্টের গন্ধ বেরোবে আশা করেছিলে নাকি!” এস.এইচ.ও কান খুঁচাতে খুঁচাতে বললেন।
“স্যার! আপনি ঠিক বুঝছেন না।”
“আরে রাখো! আমি ঠিকই বুঝছি। এস.পির ফোন এসেছিল দেখলে তো। নবান্ন থেকে সচিব ফোন করে চাপ দিয়েছেন ধীরে চলার জন্য। এস.পি এখন সুর বদলেছেন। বলছেন ভোটের আগে ব্যালান্স যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয়। বাইরের ভিড়টা ডিসবার্স করার ব্যবস্থা করো।”
“ট্রাফিক তো অনেক আগেই ক্লিয়ার হয়ে গেছে স্যার। আপনি আসার পরপরই আমি গিয়ে কথা বলে এসেছি। আপাতত ডক্টর উমানাথন অটোপ্সি করবেন শুনে ওরা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। শুধু চার পাঁচজন নেতা গোছের দাঁড়িয়ে আছে আপনার সঙ্গে দেখা করে যাবে বলে। কীসব স্মারকলিপি-টিপির ব্যাপার আছে।”
“পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট কবে পাওয়া যাবে?” অসীমকে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরটা দিলেন এস.এইচ.ও।
“পুরুলিয়া হাসপাতালের মড়া কাটা ডাক্তার উমানাথন বলতে পারবে। আমি সাড়ে বারোটা অবধি পিছন মারিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছি। বলেছি আর্জেন্ট বেসিসে করে দিতে। কাল দোল। ডোম পাওয়া যাবে না। আজ বেলায় পোস্টমর্টেম করবেন বলেছেন। যদিও পরশু হোলির ছুটি, তবু রিপোর্ট রেডি রাখবেন বলেছেন। তুমি এক কাজ করো, পরশু মানে বুধবার ফার্স্ট আওয়ারে পুরুলিয়া হাসপাতাল চলে যাও, পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টটা সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটকে জমা দিতে হবে। আর তুমি তো ডি.ডিতে কাজ করে এসেছ। অসীমকে এই কেসটায় হেল্প করো।”
“ইয়েস স্যার।” আমি ঘাড় নেড়ে বললাম।
“বাকি অ্যারেস্টেডদের কী খবর অসীম?” শ্যামল ব্যানার্জি কান খুঁচাতে খুঁচাতে জিজ্ঞাসা করলেন।
“জিজ্ঞাসাবাদ চলছে স্যার। আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”
“বলে ফেলো।”
“নিশীথ মাহাতোকে কি পোস্টারগুলোর ব্যাপারে জেরা করব স্যার?”
“কেন? উনি তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছেন? উপকারই তো করছেন যতদূর জানি।”
অসীম প্রামাণিকের মুখটা কালো হয়ে গেল দেখলাম। নিশীথ মাহাতো কে, আর তাঁর সঙ্গে অসীমের কী সম্পর্ক, তা জানার আগেই একদল লোক হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল অফিসে। হাতে স্মারকলিপি। শ্যামল ব্যানার্জি একগাল হেসে তাঁদের অভ্যর্থনা করলেন। ক্রাইম সিনে যাওয়ার জন্য এস.এইচ.ওর পারমিশন নিয়ে আমি আর অসীম থানা ছাড়লাম।
***
অযোধ্যা পাহাড়ের নামকরণের সঙ্গে হিন্দু পুরাণের যোগ আছে। কথিত আছে, শ্রীরাম বনবাসকালে অযোধ্যা পাহাড়ে আসেন এবং তৃষ্ণার্ত সীতার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পাতালভেদী বাণ দিয়ে জল খুঁড়ে বার করে আনেন। সেই ছিদ্রমুখ থেকে সারা বছর বিড়বিড় করে জল কাটে। পর্যটনের ভাষায় সীতাকুণ্ড, আর বিধুর মত স্থানীয় মানুষের ভাষায় ভুড়ভুড়ি ডাঁড়ি।
অযোধ্যা হিল যাওয়ার পথেই কুদলং সেতু আর শোভা সেতু পেরিয়ে গেলেই রাস্তার বাঁ ধারে মাঠার গভীর জঙ্গল। জিপে পৌঁছাতে সময় লাগল পনের মিনিটেরও কম। বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত অফিস পড়ল তারও অনেক আগে। একনজরে দেখলাম ড্রেন পাকা করার কাজ চলছে। আমাদের সঙ্গে ফরেস্ট অফিস থেকে এক বিট কনস্টেবল এসেছে। ছেলেটার নাম আশুতোষ। বাচ্চা ছেলে। একমুখ হাসি, সাহসী চোখমুখ। দেখে মনে হয় তরতাজা গাছের চারা বৃষ্টিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
অসীমের সঙ্গে টুকটাক কথা হল। ও মাপা কথা বলে। চাকরিতে নতুন। তিনবছর আগে সিধু কানহু বিরসা ইউনিভার্সিটি থেকে ইংলিশে এম.এ করে পুলিশে পরীক্ষা দেয়। অ্যাকাডেমিক দিকে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও চাকরির তাগিদে পেরে ওঠেনি। পথে ডক্টর উমানাথনের বিরাট প্রশংসা করল অসীম। উনি না থাকলে অসীমের নাকি চাকরি পাওয়া হত না।
“ভদ্রলোক কি বাঘমুণ্ডিতে থাকেন?” আমি কৌতূহল প্রকাশ করাতে অসীম জানাল যে ভদ্রলোক পুরুলিয়ায় কাজের সূত্রে থাকেন। বাঘমুণ্ডিতে মাঝে মাঝেই আসেন। স্থানীয় গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প করেন। পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসী কিছু শিক্ষাকেন্দ্র করেছেন নিজের উদ্যোগে। এমনিতে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিনের হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট ভদ্রলোক। প্রায় তিরিশ বছরের উপর পুলিশের সার্জেন হিসাবে কাজ করছেন। সব থেকে বড় কথা, এত গুলো বছর পরেও তাঁর একমাত্র আনুগত্য রয়ে গেছে শুধুমাত্র তাঁর বিষয়ের প্রতি। বছর পাঁচেক আগে রাঙ্গা গায়েন হত্যা কেসে এক ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসারকে কোর্টে ঘোল খাইয়েছিলেন উমানাথন। আইনের জাল কেটে প্রায় বেরিয়ে যাওয়া সেই অফিসার এখন ঘানি টানছেন জেলে।
গাড়িটা একটা টার্ন নিয়ে স্পিড বাড়াল। “গন্ধটা কীসের ছিল অসীম?” আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে বললাম।
“ঠিক বুঝতে পারছি না। ঝাঁঝালো একটা গন্ধ, খুব চড়া নয়, তবে ছিল।” পুলিশ কর্ডন থেকে একটু দূরে গাড়িটা দাঁড় করিয়েছিল বিধু। জঙ্গলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অসীম কথা বলছিল।
ক্রাইম সিনের লোকেশনে বেশ ইন্টারেস্টিং। অসীম বলল, জঙ্গলের প্রায় মাঝামাঝি, যেখানে ডেডবডি পাওয়া গেছে সেই লোকেশনটাকে যদি একটা বিন্দু ধরে নেওয়া যায়, তবে সেই বিন্দুকে ঘিরে দুধারে বিস্তৃত শাল আর সেগুনের বন। ঠিক সমতলভূমি নয়, উঁচু নীচু জমির উপর ঘন শাল সেগুনের জঙ্গল।
বিন্দুর পূর্বদিকে হাইওয়ের দিকটায় বন যেখানে শেষ হচ্ছে, যেখানে আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি সেখানে একটা জলা আছে। এখন বসন্তে শুকনো, কিন্তু বর্ষাতে টইটুম্বুর থাকে বলেই মনে হয়। জলার ধারের রাস্তা সরু। বড়জোড় একটাই সাইকেল যেতে পারে। সরু রাস্তাটা একশ মিটার পর্যন্ত এগিয়ে হাইওয়েতে গিয়ে মিশেছে। এখান থেকে হাইওয়ে ধরে দক্ষিণে গেলে বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত, আরও দক্ষিণতম বিন্দুতে বাঘমুণ্ডি থানা, উত্তরে গেলে হাইওয়ে ন্যাশনাল হাইওয়েতে গিয়ে মিশেছে। স্টেট হাইওয়ে আর ন্যাশনাল হাইওয়ের ইন্টারসেকশনের মুখটায় একটা রিসোর্ট আছে।
“জঙ্গলটা কতটা বড়?”
“বিরাট। লম্বায় প্রায় পনেরো ষোলো কিলোমিটার তো বটেই। ন্যাশনাল হাইওয়ের দিকে শেষ হয়েছে।” আশুতোষ উত্তর দিল।
“আর চওড়ায়?”
“প্রায় সাত আট কিমি।”
“জঙ্গলের ওপারটায় কী আছে?”
এই কথাটার উত্তর অসীম নয়, আশুতোষ দিল, “ঠিক ইমিডিয়েট পরেই কিছু নেই। এই জঙ্গলকে বেড় করে ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে প্রথমে বাঁদিক, তারপর ডানদিকে ঘুরলে আপনি পুরুলিয়ার বিখ্যাত মুররাবুরু মানে পাখি পাহাড়ের সামনে গিয়ে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে আরও ভিতরে গেলে লোকালয়। গ্রামের নাম দসকা, ছোট গ্রাম। স্কুলটুল আছে, আর লোকজনের বাড়িঘর।”
“বাঘমুণ্ডির পঞ্চায়েত অফিস থেকে জঙ্গলের ওপারে যেতে গেলে এই হাইওয়ে ধরেই তো আসতে হয়?”
“সঙ্গে গাড়ি থাকলে তাই। আর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পায়ে চলা পথ আছে। শর্টকাট হয়। যারা কাঠ কুড়োতে আসে তারা ইউজ করে।”
“মানে, এদিকে বাঘমুণ্ডি আর উল্টো দিকে পাখি পাহাড়, এই দুইয়ের মধ্যিখানে জঙ্গলটা দাঁড়িয়ে আছে?”
“একদম।” আশুতোষ দাঁত বার করে হেসে বলল।
“হুম। ভবেশের এই জঙ্গলের দিকে আসার কী কারণ থাকতে পারে?” অসীম একটু ভেবে বলল, “ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এমনিতে মনে হচ্ছে কারুর সঙ্গে দেখা করবে বলে এসেছিল হয়তো।”
“এদিকে কোনো বন্ধুবান্ধবের বাড়ি আছে নাকি? কারুর বাড়িতে গিয়েছিল?”
“এদিকটা তো জনবসতি নেই সেভাবে। এক জঙ্গলের ওপারের দসকা গ্রামে। রিসোর্টের লোকজন বা চায়ের দোকানগুলোয় জিজ্ঞাসা করে কিছু পাইনি।”
“নাহ! মাঠার জঙ্গলের দিকে ভবেশের আসার কারণটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না অসীম।” আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, “এ যেন মনে হচ্ছে, গতকাল দুপুরে কারুর সঙ্গে ওর অ্যাপয়ন্টমেন্ট ফিক্সড ছিল। নাহলে কাজের জায়গায় যাবে বলে বেরিয়ে এত দূরে…আচ্ছা এমনও তো হতে পারে, ওর গেরিলা আর্মির কারুর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল? হয়তো ওর বাড়িতে পুলিশ রেইড করেছে, পোস্টার বাজেয়াপ্ত করেছে সেটা ও জানতে পেরেছিল আর হাইয়ার কমান্ডকে জানাতে গিয়েছিল। তারপর কোনো কারণে ওদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয় আর ভবেশকে মেরে…”
“না মনে হয়,” অসীম আমাকে থামিয়ে বলল, “এই জঙ্গলে মাওয়িস্টরা নেই। তাছাড়া মাওরিস্টদের হত্যার পদ্ধতিটা ঠিক এরকম নয়। সাধারণত বন্দুকই ব্যবহার করে ওরা। আর তাছাড়া মোতিরা পোয়াম এখন এ জেলায় লুকিয়ে, লোকাল কাউকে মেরে ওরা পাবলিক খেপাবে বলে মনে হয় না।”
“হুম! না, আমি জাস্ট সম্ভাবনাগুলোর কথা ভাবছি,” আমি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম।
“রাজনৈতিক কারণে খুন হতে পারে কী?” অসীম আমার মতামত চাইল। “হতে পারে, অসম্ভব নয়। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা এটা রাজনৈতিক খুন নয়।”
আমি একটু অন্যমনস্কভাবে বললাম।
“এত সিওর হচ্ছেন কীভাবে? এরকমও তো হতে পারে, ভবেশের বাড়িতে পোস্টারগুলো প্ল্যান্টেড।”
“মানে তুমি বলছ রাষ্ট্রীয় জনহিত পার্টির কেউ নিজেরাই পোস্টার রেখে পুলিশকে ফোন করে ওকে ধরিয়েছে!” আমি একটু অবাক হয়ে অসীমের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তাহলে বাড়ির লোক পোস্টার রাখার সময় কিছু বলল না কেন?”
“ভবেশ বাউরির বাড়িতে অনেক লোক। সব জ্যাঠতুতো, খুড়তুতো পরিবার একসঙ্গে থাকে। তাদের কার সঙ্গে সড় ছিল কীভাবে জানবেন! তাছাড়া ভবেশ জনমোর্চা কংগ্রেসের গ্রাসরুট লেভেলের সাপোর্টার। স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে ওর ভালোমত যোগাযোগ ছিল। সরকারের বিরুদ্ধে মাওয়িস্ট ইনসার্জেন্সি চাগিয়ে তোলার যে গুজবটা শোনা যাচ্ছে, সেই মত প্ল্যান আর কী! এবার পোস্টার পাওয়া যাওয়ার খবরটা সেদিন যখন ভবেশের কানে পৌঁছায়, সেদিন হয়তো ভবেশ আন্দাজ করতে পেরেছিল এসব কাদের কাজ হতে পারে। কাজের নাম করে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়াটা হয়তো হেস্তনেস্ত করার জন্যই!”
“তুমি বলছ, এই হেস্তনেস্ত করার ফলাফল স্বরূপ মার্ডার?”
“হ্যাঁ।”
“কিন্তু কীভাবে অসীম? বডির যা ডেসক্রিপশন শুনলাম, তাতে মৃত্যুর একাধিক কারণ থাকতে পারে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, কোনো ইন্টারনাল ইনজুরি, বা বিষপ্রয়োগও হতে পারে। এগুলোর একটাও রাজনৈতিক খুনের মোডাস অপারেন্ডির সঙ্গে মিলছে না।”
“হ্যাঁ। সেটা ঠিকই বলেছেন। আসলে পি.এম রিপোর্ট না পাওয়া অবধি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।” অসীম ঠোঁটটা উল্টে বলল।
“আপাতত যদি এটা খুন হয়, তবে খুনের মোটিভ ওপেন এন্ডেড। হয়তো এমন কোনো মোটিভ যা…”
“যা?” অসীম আমার দিকে ঘুরে তাকাল।
“যা আমাদের বর্তমান ভাবনা চিন্তার বাইরে।” আমি ভুরুটা কুঁচকে বললাম, “আচ্ছা, জঙ্গলের ভিতরে ওর সাইকেলটাকে খুঁজেছিলে তোমরা?”
“চোখে পড়েনি। সেভাবে খোঁজাও হয়নি।”
“আজ সকালে ওর ডেডবডি পাওয়া যাওয়ার পরও নয়!”
অসীমকে সামান্য বিরক্ত দেখাল। আমার দিকে তাকিয়ে ও বলল, “সারাদিন তো থানায় ঘেরাওই রয়ে গেলাম, আপনি তো নিজে এসেই দেখেছেন। তদন্ত টদন্ত করার আর সময় পেলাম কোথায়?” আমি স্বচ্ছন্দে তুমিতে নেমে এলেও অসীম এখনও আপনি আজ্ঞে কন্টিনিউ করে যাচ্ছে।
“আসলে সাইকেলটা পাওয়া যাওয়াটা খুব দরকার। আচ্ছা, ওর মোবাইল টাওয়ার লোকেশন কী বলছে?” আমি ওর বিরক্তি উপেক্ষা করে বললাম।
“বার করতে দিয়েছি। খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না। ভবেশ এই এলাকাতেই থাকলে মোবাইল টাওয়ার লোকেশন থেকে আলাদা করে কিছু বোঝা যাবে না।”
“আর ওর কল রেকর্ডটা?”
“ম্যাজিস্ট্রেটের পারমিশন নেওয়া হয়ে গেছে। কাল বেলার দিকে পেয়ে যাব আশা করছি।”
আশুতোষ দূরে জঙ্গলের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল। ছেলেটা বুদ্ধিমান। অসীম আর আমার কথাবার্তার সময় নিজে থেকেই দূরে সরে যায়। ওর দিকে এগোতে এগোতে বললাম, “যে ডাক্তার সুরতহালের সময় ছিলেন, তিনি অ্যাক্স টাইম অফ ডেথ কী বলেছেন?”
“অ্যারাউন্ড ভোর সাড়ে তিনটে-চারটে।”
“দেখ, পরপর ঘটনাক্রম যদি সাজাই তবে ব্যাপারটা এমন, কাল দুপুর দেড়টায় ওকে লাস্ট জীবিত দেখা যায়, তারপর গ্রামের লোক ওর ডেডবডি দেখে আজ সকাল সাড়ে সাতটায়। এই আঠারো ঘণ্টা সময় ও কোথায় ছিল সেটা জানার দরকার। আরেকটা ব্যাপার হল, যদি ধরে নিই মৃত্যু হয়েছে ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ, তবে এই চারঘণ্টা সময় কি ডেডবডি জঙ্গলেই পড়ে ছিল?”
“হ্যাঁ।” অসীম জোর গলায় বলল, “লিভিডিটি আমি স্পষ্ট দেখেছি। ওরকম কালশিটে দাগ, ডেডবডি একমাত্র অনেকক্ষণ পড়ে থাকলেই হয়।”
“হুম। আচ্ছা বিট কনস্টেবলের কী বক্তব্য? ওর সঙ্গে কথা বলা যাবে? মানে সেসময় কোনো অ্যাক্টিভিটি ও দেখেছে নাকি?”
“নাহ! ওর সঙ্গে আমি কথা বলে দেখেছি। এই রাস্তার পুরো স্ট্রেচটা টহল দিয়ে আবার ফিরে আসতে ওর ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। লাস্ট যখন ও টহল দিয়ে যায় তখনও ও কাউকে দেখেনি।”
“টহল দিয়ে ও কোনদিকে যায়?”
“বাঘমুণ্ডি থানার দিকে।”
“আর ন্যাশনাল হাইওয়ের দিকটায়?”
“ওদিকটায় তো রিসোর্ট আছে। লোকজন গেটে থাকে। ওদিক দিয়ে কেউ ডেডবডি নিয়ে আসবে বলে মনে হয় না।”
“গেটের সিকিউরিটি আর টহলদার কনস্টেবল, এই দুজনেরই অজান্তে বডি নিয়ে আসতে পারে কেউ। সেক্ষেত্রে, রিসোর্টের গেটে যদি সিসিটিভি থাকে, তবে ফুটেজ চেক করলে বোঝা যাবে ব্যাপারটা।”
“নেই। রিসেপশনে আছে। গেটে নেই। আমি সকালেই একবার ঢু মেরেছিলাম। তবে গেটে সিকিউরিটি সারারাত তার জায়গায় বসেছিল, টয়লেট করতে ওঠেনি এটা তো হতে পারে না। তার ফাঁকে যদি কেউ নিয়ে আসে।” অসীম বলল।
“হুম। আচ্ছা, এই জঙ্গলে কোন কোন দিক থেকে ঢোকা যেতে পারে? এই জলার ধারে রাস্তাটা দিয়ে যেমন ঢোকা যাবে, এমনি আর কোনো রাস্তা?” আমরা হাঁটতে হাঁটতে আশুতোষের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম।
অসীম একমনে জঙ্গলের দিকটায় তাকিয়েছিল। আমার প্রশ্ন শুনে বলল, “জঙ্গলে ঢোকার তো অনেক পথ হতে পারে ম্যাডাম। এদিকে জলার ধার দিয়ে যেমন ঢুকতে পারে, ওদিকে ন্যাশনাল হাইওয়ের পাশে চাষীদের ক্ষেতখামার আছে, সেসব টপকে জঙ্গলে ঢোকা যায়। আবার কেউ চাইলে দসকার দিক থেকে পাখিপাহাড় হয়েও ঢুকতে পারে। অনেক সম্ভাবনা। আপনার প্রশ্নটার মেরিট ঠিক বুঝতে পারলাম না ম্যাডাম।”
অসীমের কথায় সামান্য খোঁচাটা হজম করে বললাম, “আসলে মেরিটটা প্রশ্নের নয়, পথের। আমি একটু অন্যভাবে বললে হয়তো বুঝবে অসীম।”
“কীরকম?”
“একটা ডেডবডি ডাম্প হয়েছে জঙ্গলে। প্রশ্ন হল কীভাবে তাকে নিয়ে আসা হল। এদিকে যা দেখছি, তা পুরোটাই পায়ে হাঁটা পথ। অন্যদিকগুলোও যদি তাই হয়, তবে গাড়ির সম্ভাবনাটা পুরো নাকচ করতে হবে। আমাদের ইনভেস্টিগেশনের বৃত্তটা অনেকটা ছোট হয়ে আসবে।”
“সব পায়ে হাঁটা পথই ম্যাডাম। এদিক দিয়ে গাড়ি আনার তো কোনো প্ৰশ্নই নেই, রাস্তা তো দেখছেন। হাইওয়ের দিকটা থেকেও আসতে গেলে ক্ষেতখামার। গাড়ি চলবে না। একমাত্র পাখিপাহাড়ের দিক থেকে বা দসকার দিক থেকে যদি কেউ আসে, তবে বাইক বা অন্য গাড়িতে আসতে পারে। কিন্তু বডিটা জঙ্গলের যেখানে পাওয়া গেছে, সেই অবধি কোনো গাড়ি যাবে না।” আশুতোষ বলল।
যদি না…একটা সম্ভাবনা ঝিলিক দিয়ে উঠল মাথায়। অসীমকে বললাম, “তাহলে জঙ্গলের ভিতরটা এখনই একবার চেক করার দরকার অসীম। সাইকেলটা সম্ভবত ওখানেই কোথাও আছে।”
“সাইকেলটা নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন কেন বুঝতে পারছি না ম্যাডাম।” অসীম অসহিষ্ণু স্বরে বলল।
“খুব সিম্পল কারণ অসীম। আমাদের ডিডাকশনে একটা দিক আমরা হয়তো উপেক্ষা করছি। আমরা ধরেই নিচ্ছি ডেডবডি কেউ এদিক থেকে এনে জঙ্গলে ঢুকে ফেলে গেছে। অথচ, এদিকে কেউ কিছুই দেখেনি। বডিটা জঙ্গলের ওদিকটা মানে মুররাবুরুর দিক থেকে আনা যেতে পারে না কি?”
“হ্যাঁ পারে। কিন্তু তার সঙ্গে সাইকেলের কী সম্পর্ক?”
“ডেডবডি কেউ পিঠে করে ক্যারি করে আনেনি নিশ্চয়ই। জঙ্গলের ভিতরে গাড়ি চলে না। তাহলে পায়ে চলা পথে সাইকেলে বেঁধে ডেডবডি আনা অনেক বেশি লজিকাল। আর যেহেতু ভবেশের সাইকেল মিসিং, তাই ওর সাইকেলটাই সে কাজে ব্যবহার করার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে টায়ারের দাগ যদি থেকে থাকে, তবে সাইকেলটা কোনদিক থেকে এসেছিল অন্তত একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে।” আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম।
অসীমের চোখে প্রশংসার একটা আলো ঝলকে উঠেই নিভে গেল। খেয়াল করলাম, ওর চোখমুখ টান টান হয়ে গেছে। সামান্য ঘষা গলায় ও বলল, “চলুন তবে। এখনও ভোরের দিকটা শিশির পড়ে। মাটি ভিজে থাকে। যদি সত্যিই সাইকেলের থিয়োরিটা ঠিক হয়, এখনও ফ্রেশ টায়ারের দাগ পাব।।”
ঘড়িতে আড়াইটে বাজছিল। সূর্যের আলো আর বড়জোর ঘণ্টা চারেক। আমি অসীমের সঙ্গে জোরে পা চালালাম। শালবন থেকে একটা মাতাল হাওয়া এসে জলার জমে থাকা জলে হালকা ঢেউ তুলে দিয়েই সোজা পশ্চিমে পাড়ি দিল। জঙ্গলের ভিতর থেকে নাম না জানা পাখি ট্যাঁ ট্যাঁ করে ডেকে উঠল তারস্বরে।
