Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বৃশ্চিকচক্র – পিয়া সরকার

    পিয়া সরকার এক পাতা গল্প320 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    গন্ধবিচার

    জঙ্গলের ভিতর তাপমাত্রা বাইরের থেকে বেশ কয়েক ডিগ্রী কম। তবুও দরদর করে ঘামছিলাম। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পথ চলছি। ঘন সবুজের ফাঁকে ফাঁকে লালচে কমলা পশ্চিম আকাশ উঁকি মারছে। জঙ্গলের এদিকটায় পলাশ গাছ সেরকম চোখে পড়ছে না, বরং বিরাট আকারের শাল গাছগুলো শ্যাওলাকালো প্রেতের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে নিস্তব্ধে। মাঝে মাঝে ঝোপের ফাঁক থেকে নাম না জানা লাল কমলা বেগুনি নানা রঙের ফুল উঁকি মারছে। আমরা আঁকাবাকা, শুকনো, বিবর্ণ ঘাসজমি পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি। পায়ে হাঁটা শুড়ি পথের উপর এখানে সেখানে ঘাস গজিয়েছে। সারি সারি শাল আর সেগুন গাছ গা ঘেঁষাঘেষি করে সরু পথটার দুধারে দাঁড়িয়ে; পায়ের তলায় সামান্যই নগ্ন মাটি দেখা যাচ্ছে। এখানে বনবিভাগের তরফ থেকে প্ল্যান্টিং করা হয়েছে। তাই শুধুই শাল আর সেগুন। আশুতোষ বলল, অর্জুন, শিশু, কেঁদ, আসন— গাছের ভ্যারাইটি এখানে প্রচুর। জঙ্গলটা খানিকটা সমতলভূমিতে ছড়ানো, খানিকটা অসমান ঢালে। এখানে জঙ্গলের ঘনত্ব সামান্য কম, দূরে দক্ষিণপশ্চিমে ছোট ছোট ডুংরিপাহাড়ের গা বেয়ে আরও ঘন হয়ে বিছিয়ে গেছে। সমতলভূমির গা লাগোয়া টিলাগুলো দেখলে মনে হয়, একদল আদিম সরীসৃপ প্রবল বেগে নামতে নামতে হঠাৎ কারুর অদৃশ্য ইশারায় সমতলের সামনে এসে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

    “এই সব জঙ্গলে কী ধরণের জন্তু জানোয়ার থাকে?” আশুতোষকে জিজ্ঞাসা করলাম।

    “মেইনলি ভাল্লুক, আর হায়েনা। বাপ কাকার কাছে শুনেছি আগে নেকড়ে টেকড়েও ছিল। আর আছে হাতি, মাঝে মাঝেই নেমে আসে।”

    “বডি খুবলে খেয়েছে কোন জন্তু? ভাল্লুক?”

    আশুতোষ হেসে ফেলল। বলল, “না, না ম্যাডাম। ভাল্লুক পুরো নিরামিশাষী প্রাণী। হায়েনার কাজই মনে হল।”

    “এই জঙ্গলে হায়েনা আছে জানতাম না!”

    “আছে। মাঠার বনে যেমন আছে, ওদিকে চেমতাবুরুর দিকে আরও ঘন জঙ্গল, সেখানে আরও বেশি সংখ্যায় আছে।”

    কতগুলো পাখি একনাগাড়ে টি-টি করে ডেকেই চলেছিল। তাদের আওয়াজটা এতক্ষণ ক্ষীণ শোনা যাচ্ছিল, এবারে কাছে আসতে স্পষ্ট হয়েছে। অসীম মনযোগ দিয়ে মাটি দেখতে দেখতে এগোচ্ছিল। পথের উপর শুকনো পাতা ঝরে পড়ে আছে। মাঝে মাঝেই ঝাঁঝালো বুনো গন্ধে নাক ভার হয়ে যাচ্ছে। উঁচু নীচু ঢালগুলোয় অনেকখানি উন্মুক্ত মাটি পেলেও, যা আমরা খুঁজছি তা এখনও পাইনি। অসীমকে একটু অস্থির লাগছিল। একমাত্র আশুতোষই নির্বিকারে হাতের লাঠিটা দিয়ে ঝোপঝাড় সরাতে সরাতে হাঁটছিল। কিছু পশুর পায়ের ছাপ, এমনকি মানুষের পায়ের ছাপ পাওয়া গেলেও টায়ারের কোনো চিহ্ন নেই।

    “ভবেশের বাড়ি কোন দিকটায় অসীম?” মস্ত বড় দুটো জ্যাকারান্ডা গাছের পাশ কাটাতে কাটাতে জিজ্ঞাসা করলাম।

    “অযোধ্যার দিকে।”

    “ওর বাড়ির লোক কী বলছে? কারোর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল?”

    “ওর বাড়ির লোক কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।” অসীম একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল।

    “আচ্ছা, একটা কথা বলো, ভবেশ বাউরির রাজনৈতিক পরিচয় বাদে, ব্যক্তিগত তথ্য কতটা কী পাওয়া সম্ভব? মানে ওর রোজকারের রুটিন, কোথায় কোথায় যেত, কার কার সঙ্গে মিশত, এগুলো নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসবে। তুমি ভবেশকে চিনতে কি?”

    অসীম মাথা নাড়িয়ে বলল, “না, চিনতাম না। এমনিতে উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। পাকা কামধান্ধাও কিছু করে না। যখন যেমন পায়, তখন তেমন করে। তবে পুরোনো ফাইল ঘাঁটতে গিয়ে একটা তথ্য পেয়েছিলাম, জানি না সেটা কতটা প্রাসঙ্গিক।”

    “কী তথ্য?”

    “দুহাজার পাঁচ সালের কথা। তখন আমাদের এলাকায় ইনসার্জেন্সি চরমে। লোকজনকে গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ভবেশ বাউরি আর আরও অনেকের বিরুদ্ধে সেসময় থানায় এফ.আই.আর রেজিস্টার করা হয়েছিল। পেটি ক্রাইমে। পোস্টার বিলানো তার মধ্যে অন্যতম। বাকিদের পাওয়া গেলেও, ভবেশ আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে গিয়েছিল। তারপর প্রায় বছর তিনেক পর, মামলা ঠাণ্ডা হলে ফিরে আসে। পার্মানেন্টলি নয়, মাঝে মাঝে আবার গায়েব হয়ে যেত। তারপর এগারোর পর থেকে পাকাপাকি থাকা শুরু করে।”

    “আচ্ছা! ইন্টারেস্টিং!”

    “হ্যাঁ। এই ছবছর ও কোথায় ছিল, ওর পরিবারের খরচ খরচা কে চালাচ্ছিল এসব কিছুই জানা নেই।” অসীম আমার দিকে তাকিয়ে বলল।

    আমি অসীমের কথাগুলো মাথায় নাড়াঘাঁটা করছিলাম।

    “ঘটনাটা বহু পুরোনো। তবু, এই মৃত্যুর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকতেই পারে। সেটা আরও তথ্য না পেলে বলা সম্ভব নয়। আপাতত সেদিন কাজ থেকে বেরিয়ে ও কী করল, কোথায় গেল সেটা জানা বেশি দরকার। কনট্রাক্টর লোকটি ওকে কোথায় দেখেছে যেন?”

    “রিসোর্টের কাছে।”

    “যাক। তার মানে এটুকু অন্তত বলা যায় যে ভবেশ বাউরি খুব বেশি দূরে যাওয়ার প্ল্যান করে বেরোয়নি। তাহলে সাইকেল নিয়ে বেরোত না। এবার বাকিটা টাওয়ার লোকেশন।”

    “হুম। জঙ্গলের ওপারে তো লোকবসতি নেই। এক যদি ও দসকায় কারুর সঙ্গে দেখা করতে যায়।”

    “কত দূর ওটা জঙ্গল থেকে?”

    “তিন চার কিলোমিটার হবে। তবে, জঙ্গল ক্রস করেই লোকবসতি ঠিক না থাকলেও, একটা মিউজিয়াম মত আছে। মুররাবুরুর সামনেই। আদিবাসী শিল্প সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি হচ্ছিল। এখন কাজ বন্ধ আছে। গেটে সিকিউরিটি একজন থাকে। সে যদি কিছু দেখে থাকে!”

    “খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না অসীম। কাজটা হয়েছে ভোরবেলায়। সেসময় কি আর সিকিউরিটি গেটে বসেছিল?”

    অসীম ঘাড় নাড়িয়ে বলল, “কাল একবার দসকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। যদি কেউ কিছু জানে।”

    “হুম। লোকটা এদিকে কোথায় এসেছিল জানতে পারলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যেত। আমার মনে হয় আরও খুঁটিয়ে লোকজনকে জেরা করলে জানা যাবে।”

    আমরা জঙ্গলের মধ্যে একটা সরু খালের কাছে এসে পৌঁছেছিলাম। আশুতোষ বলল, ছোটখাটো একটা ঝোরা আছে কাছেই। এখন শীতে শুকিয়ে গেছে। খালে জলের অবস্থাও তথৈবচ। খালটা পার হতেই খাড়াই একটা ঢালের মুখোমুখি এলাম। সেই ঢাল থেকে প্রায় আধমাইল দূরে, যেখানে ঢালটা ক্ষয়ে গিয়ে মাটিতে গিয়ে মিশেছে, নুড়ি পাথর আর লম্বা লম্বা নলখাগড়ার ঘাসে ভরা একটা জমি নজরে পড়ল।

    “আসুন, পৌঁছে গেছি।” অসীম ঢাল বেয়ে নামতে নামতে বলল।

    কটা কেঁদ গাছকে বের করে হলুদ টেপ লাগানো হয়েছে; উঁচু উঁচু গাছের ক্যানোপির ছায়ায় জায়গাটা স্যাঁতসেতে, অন্ধকার। একটা মোটা গাছের গুড়ির নিচে থকথকে রক্ত, এখন শুকিয়ে কালচে হয়ে পড়ে আছে। জায়গাটায় ঘন ঘাস, আর বড় বড় আগাছা। পুলিশের আর স্থানীয় লোকেদের পায়ের চাপে আগাছাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

    “বডি কি মাটিতে শোওয়ানো ছিল?” অসীমকে জিজ্ঞাসা করলাম।

    “হ্যাঁ।”

    “ভিকটিমের কোনো পার্সোনাল বিলংগিংস, যেমন ঘড়ি বা চটি…ছিল?”

    “কিচ্ছু না…পরনে একটা সুতোও ছিল না।”

    “আঙুলগুলো নীলচে বললে তাই না?”

    “কালচে নীল। লিভিডিটির জন্য হতে পারে কি?” অসীম আমার দিকে তাকাল।

    আমি একটু ভেবে বললাম, “কোনোদিন শুনিনি। পি.এম রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি সেইজন্য।” অসীমের প্রশ্নটা আমার মনেও ঘুরপাক খাচ্ছিল। পিছনের খাড়াইটার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। ডেডবডি নিয়ে সাইকেলে করে ওই খাড়াই টপকে এদিকে আসা দুঃসাধ্য কাজ। ঘড়িতে সাড়ে চারটে বাজছিল। পথশ্রমের ক্লান্তিতে আমরা অবসন্ন হয়ে পড়ছিলাম। এর পরে যদি আর কোনো ক্লু না পাওয়া যায় তবে কেসটা ঝুলে যাবে।

    অসীম হাঁটুমুড়ে রক্তের দাগের কাছে বসে ছিল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চলুন, এবার বাকিটুকুও দেখা যাক।”

    চারধারের আগাছা ঠেলে আমরা এগিয়ে চললাম। আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম। এদিকে গাছপালার প্রকৃতি আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে। শাল গাছ কম, বরং কুল, খেজুর, ছাতিম জাতীয় গাছ চোখে পড়ছে। কিছু ঝোপঝাড়ও রয়েছে শেয়ালকাঁটার। মানুষের যাতায়াতের ছাপ এদিকে কম। যত এগোচ্ছিলাম তত সাফল্যের সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছিল। ঢালটার ওপারে নরম মাটি থাকলেও এপারে প্রায় কোমর সমান ঘাস।

    “ভেজা নরম মাটি না পেলে কোনো লাভ হবে না। বেকার পরিশ্রম করছি মনে হয়।” অসীম মাটির দিকে দেখতে দেখতে অস্থিরভাবে বলল।

    ঠিক তখনই আশুতোষের দিকে নজর গেল আমার। ও অনেকটা এগিয়ে গিয়ে মাটির দিকে চোখ ফেলে কী যেন দেখছে। আমাদের দিকে চোখ পড়তেই ও হাতের ইশারায় আমাদের ডাকল।

    সামনে জমির ঢালটা নিচের দিকে নেমে আবার উপরে উঠেছে। উপরের দিকের ঢালটায় এবড়োখেবড়ো পাথরের টুকরো ছড়ানো। আশুতোষের ইশারায় তড়িঘড়ি সেদিকে গিয়ে দেখি, এক বিঘত মতো জায়গায় ন্যাড়া নরম মাটি, যেন আমাদেরই প্রতীক্ষায় বুক মেলে পড়ে রয়েছে।

    “এখানে মাটির তলায় ছোট কোনো কূপ আছে ম্যাডাম। পাথরের বুকের জমা জল, মাটির কোনো ফুটো দিয়ে বেরিয়ে আসে। আমাদের সীতাকুণ্ডতে যেমন হয়। বর্ষা হলে এখানে জলের ধারা দেখতে পেতেন। বসন্ত বলে সামান্যই ধারা, মাটিটাকে খালি ভিজোচ্ছে। এদিকটায় দেখুন।” আশুতোষ সামনে আঙুল দিয়ে দেখাল।

    আশুতোষের নির্দেশ করা দিকটায় তাকাতেই উত্তেজনায় গলা থেকে অস্ফুট কিছু শব্দ বেরিয়ে গেল। সামনে লালমাটির জমিতে সাইকেলের টায়ারের দাগ জ্বলজ্বল করছে। মাটির রাস্তাটা ধরে টানা কিছুটা জায়গা জুড়ে টায়ারের দাগ রয়েছে। “অদ্ভুত, জাস্ট অদ্ভুত!” বলে আমি অসীমের কাছ থেকে ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা নিয়ে দাগগুলোর দিকে তাক করলাম। দু-ইঞ্চি বেড়ের টায়ারের দাগ, নরম মাটিতে তেঁতুলপাতার মত দাগ ফেলেছে। ঠিক তার সমান্তরালেই আর একটা দাগ, আগের দাগটাকে কেটে বেরিয়ে, খানিক দূরে গিয়ে আবার সমান্তরাল হয়ে গেছে।

    “কী বুঝছেন?”

    “এই দাগটা দেখছ?” আমি অসীমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। অসীম আমার হাত থেকে আতশ কাচটা নিয়ে দেখল। বলল, “হ্যাঁ। পাশাপাশি দুটো টায়ারের দাগ। কিন্তু এ থেকে কিছু প্রমাণ হয় না।”

    “হয় হয়তো। বেশ অনেকটা বোঝা যাচ্ছে।”

    অসীম একবার অবিশ্বাসী চোখে আমার দিকে তাকিয়েই ফিক করে হেসে ফেলল।

    “সাইকেলের দাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে!”

    আমি আতশ কাচটা ওর হাত দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ! তুমিও বুঝবে।”

    “কীভাবে!” অসীমকে একটু বিভ্রান্ত দেখাল।

    “ডানদিকের দাগটা দেখ, আঁকাবাঁকা দাগ। এবার দাগের ডেপথটা খেয়াল কর।”

    অসীম আমার কাছ থেকে আতশ কাচ চেয়ে নিয়ে আবার তাক করল দাগটার উপর।

    “কিছুটা অন্তর অন্তর দাগটা গভীর ভাবে পড়েছে।” অসীম মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে বলল।

    “স্কেল আছে?”

    “নাহ! নিয়ে আসা হয়নি।”

    “ওকে। আমি আন্দাজে বলছি কিছুটা। ট্রেইলটা খেয়াল করে দেখলে বুঝবে, প্রায় দশ সেন্টমিটারের ইন্টারভ্যালে দাগ গভীরভাবে পড়ছে। এর থেকে কী ইন্টারপ্রেট করা যায়?”

    অসীম আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর বলল, সাইকেলের চাকা যখন ঘোরে, তখন প্রত্যেকবারের ঘোরাতে ওরকম মাপ মত জমিই টাচ করে। এবার দুটো টায়ার একই লাইন বরাবর গেছে, অথচ একটা ইন্টারভ্যাল অন্তর গভীর দাগ পড়েছে মানে…”

    “মানে একটা টায়ার অতটাও মাটি আঁকড়ে বসেনি, যতটা আরেকটা বসেছিল। তাই তো?” আমি সামান্য হেসে ওর দিকে তাকালাম।

    “তার মানে পিছনের ক্যারিয়ারে কোনো ভারি কিছু চাপানো ছিল! তাই গভীর ছাপ পড়েছে?” অসীমের গলাটায় এতক্ষণে আবার উত্তেজনার ছাপ পেলাম।

    “হ্যাঁ। এবং সেই ভারি জিনিসটি প্রিসাইজলি আমাদের ডেডবডি। এবার পাশের বাঁদিকের দাগটা দেখ। সমান ডেপথ। এবং সাইকেল চলেছে সোজা। কোনো ভারি জিনিস চাপানোর ফলে এঁকেবেঁকে নয়। আগের দাগগুলোকে ইন্টারসেক্ট করেছে ফেরত আসার সময়।”

    অসীম আতশ কাচ দিয়ে দাগগুলো আবার দেখল। আর কোনো মন্তব্য করল না।

    “শুধু তাই নয়, আমার বিশ্বাস ঢালটার মুখের কাছে গেলে লোকটার পায়ের ছাপ পাওয়া যাবে। ডেডবডি নিয়ে ঢাল বেয়ে নামতে গেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ার সম্ভাবনা।”

    অসীম মাথা নাড়াল। বলল, “হ্যাঁ। হয়তো ডেডবডি সমেত সাইকেলটাকে নামিয়েছে, তারপর খালি সাইকেল নিয়ে এ পথে ফিরেছে।”

    ঢালের মুখটায় সত্যি সত্যিই একটা চটির কটা ছাপ পাওয়া গেল। কিন্তু নুড়ি পাথর আর ঝুরো মাটি থাকায় সে দাগ খুব অস্পষ্ট।

    “চটির দাগের প্যারিসের কাস্ট তুলে লাভ নেই। পায়ের পুরো ছাপ পড়েনি। বরং সাইকেলটাকে খোঁজা যাক, নাকি? “আমি অসীমের দিকে তাকিয়ে বললাম। “আমি একটা জিনিস বুঝছি না, ফেরার সময় সাইকেলটা দূরে রাখতে যাবে কেন? ডেডবডির কাছেই তো ফেলে রাখতে পারত!”

    “ভিকটিমের বডির কাছে সাইকেল ফেলে রাখলে আইডেন্টিফাই করা সহজ হত বলে। পরে ফাঁকতালে এসে সাইকেলটার কোনো ব্যবস্থা করত। গভীর জঙ্গলে বডি ফেলে রাখলে জন্তু জানোয়ারে খেয়ে শেষ করে দেবে, এমন প্ল্যান করেই বডি এখানে ডাম্প করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সাইকেলটা কাছে রাখলে উদ্দেশ্যটাই সফল হত না।”

    “হায়েনাগুলো খুব সামান্যই খুবলে খেয়েছে। দেখে মনে হয়েছে হঠাৎই খাওয়া বন্ধ করে চলে গেছে। বডিতে কোনো টানাটানি, হেঁচড়াহেঁচড়ির দাগ নেই। খুবই স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার এটা!”

    “স্ট্রেঞ্জ নয়। আমার মনে হয়, যে ঝাঁঝালো গন্ধটা তুমি পেয়েছিলে, সেই একই গন্ধের কারণেই সুযোগ পেয়েও হায়েনাগুলো ভবেশ বাউরির বড়ির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েনি।”

    অসীম আর কিছু বলল না। টায়ারের দাগ ধরে বেশ কিছু দূর এগোতেই দাগ হঠাৎ হারিয়ে গেল। আরও কিছুটা এগোলে জমির স্লোপ ক্রমাগত নিচের দিকে নেমে গেছে। দূরে পশ্চিমে তাকালে একটা উঁচু টিলাকে দেখা যাচ্ছে। তার গায়ে অস্পষ্ট কার্ভিং। মুররাবুরু অর্থাৎ পাখি পাহাড়ই হবে ওটা। অসীম আর আশুতোষ আমাকে ফেলে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল। সাইকেলটা চোখে পড়ল ওদেরই। ঘন খেজুর গাছের সারির পিছনে মাটিতে শোওয়ানো অবস্থায় পড়ে আছে। রুমাল দিয়ে হ্যান্ডল ধরে সাইকেলটা উঠিয়ে দেখা গেল, হ্যান্ডলটা বেঁকে গেছে। নতুন সাইকেল। রুপালি আর নীল রঙের রড, সবুজ সিট কভার। অ্যাভনের সাইকেল। পিছনের কেরিয়ারে লাল রঙের নাইলন দড়ি বাঁধা।

    “হুম। টায়ারের ছাপের সঙ্গে মাটির ছাপের ডিজাইন মিলে যাচ্ছে।” অসীম বলল।

    “থানায় একটা খবর পাঠাও অসীম। টায়ারের দাগগুলোর মেজারমেন্ট নিতে হবে। সাইকেলের হ্যান্ডলে বা সিটে ফিঙ্গারপ্রিন্টও থাকবে আশা করছি। আর ভবেশ বাউরির বাড়ির লোককে ডেকে পাঠাও। সাইকেলটা আইডেন্টিফাই করে যাক।”

    ***

    ঘরটা খুলতেই একটা ভ্যাপসা গন্ধে নাকটা ভরে গেল। একটাই রুম, অ্যাটাচড কিচেন আর টয়লেট। কোয়ার্টারে থাকতে স্বচ্ছন্দ নই বলে বিধু ঠিক করে দিয়েছে। ঘরটার এক কোণে একটা ফোল্ডিং খাট পাতা। আর একটা কাঠের পাল্লা দেওয়া আলকোভ। এ বাদে দ্বিতীয় সরঞ্জাম নেই। কাঁধের ব্যাগটা মাটিতে ফেলে খাটটায় বসলাম। জানালাগুলো খুললেই ভ্যাপসা গন্ধটা বেরিয়ে যায়, তবুও খাটে বসে সেই গন্ধটাই আবার শুঁকলাম। সিঁথির কাছে যে ওল্ড এজ হোমটা বাবা থাকে, সে ঘরটার গন্ধ অনেকটা এমন। আমার বাবাও নিজের ঘরের জানালা খোলে না।

    ছ’মাসের সাসপেনশন পিরিয়ডে বারবার সিঁথির ওই ঘরটায় ছুটে গেছি। কী খুঁজতে গেছি, আদৌ যা খুঁজেছি তা কোনোদিন হারিয়েছিল কিনা, আদৌ তা পেয়েছিলাম কিনা…মনে নেই। লোকে বলে বিপর্যয়ে পায়ের তলার মাটি সরে যায়। আমার পায়ের তলায় আদৌ মাটি বলতে কোনোদিন কিছু ছিল না। যা ছিল, ঢেউয়ের তোড়ে বালির মত সরসর করে সরে গেছে। তবু এই তিরিশ বছরের কাছাকাছি পৌঁছে, নির্লজ্জের মত আবার নতুন করে সবকিছু ঘেঁটে, সরিয়ে দেখতে ইচ্ছা করল। মনুষ্যত্বের প্রতি যেটুকু বিশ্বাস বাকি ছিল, তা তখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাবা বলে ডাকি যে লোকটাকে, তার কাছ থেকে একচিলতে আশ্রয় যদি পাওয়া যায়, সেই বা কম কী! কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদার জন্য যে নরম সম্পর্কটুকু দরকার হয়, তা নেই জানি। তবে বারবার ভাবি, বাবার মুখ থেকে নিরাসক্তির আবরণটা টেনে খুলে দিতে পারলে কত ভালো হত! সেই আবরণ যা গণেশদা সম্পর্কে সবটুকু জেনেও একটুও পাল্টায়নি। সেই আবরণ যা আমি সাসপেনশন পেয়ে পুরুলিয়া চলে আসাতেও একইরকম দুর্ভেদ থেকে গেছে। সেই আবরণ যাকে ছিন্নভিন্ন করার ইচ্ছাটাকে লালন করতে করতে আমি ভিতরে ভিতরে ফুঁসে উঠি, দামাল কোনো জন্তুর মত আক্রোশে গর্জাই, অথচ মুখে…মুখে একটি কথাও বলতে পারি না। দর্শনা বোসের একটা পিকচার পার্ফেক্ট ফ্রেম আছে। সেই ফ্রেমটা খুলে নিজেকে মুক্তি দিতে পারে, দর্শনার তেমন সাহস নেই। সেই ফ্রেমটায় দর্শনা বোসের একটাই পরিচয়, সে একজন পুলিশ অফিসার। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে দু তারার ইউনিফর্মটা পরলেও, কীভাবে যেন এই চাকরির সঙ্গে জড়িত যাবতীয় হ্যারাসমেন্ট, অপমান, শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক ক্লেশ সব তুচ্ছ করে তার মনে একটাই আলো জেগে থাকে। সত্যিটাকে জানার, তার খিদেটা কিছুতেই কোনো পরিস্থিতিতে কমে যায় না। মায়ের ঘটনাটা নিয়ে নৈর্ব্যক্তিকভাবে অনেক ভাবার চেষ্টা করেছি। মাকে নিয়ে অকারণ অধিকারবোধে ভুগি না আর। তার ব্যক্তিগত জীবনে অন্য পুরুষের অস্তিত্ব নিয়ে অকারণ শুচিবাই নেই আমার। মায়ের যাওয়ার পর, মাকে মা কম, মানুষ হিসেবে বেশি ভাবতে শিখেছি। কিন্তু সেই মানুষটাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, মা দু নৌকায় পা দিয়ে চলার মানুষ নয়। বাবার সঙ্গে তাঁর সুখী দাম্পত্য ছিল। কোনোদিন কোনো অপূর্ণতা দেখিনি তাঁর মধ্যে। বহুবার বাবার সঙ্গে প্রেমের খুনসুটি করতে করতে আমার সামনে ধরা পড়ে গেছে, লজ্জা পেয়েছে। তাই তার প্রতি যে অভিযোগটা উঠেছে, সেটা বারবার মিথ্যে মনে হয়েছে আমার। কিন্তু অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ করার কোনো সূত্র হাতে নেই। বাকি সব যদি মিথ্যেও হয়, লোকটিকে মা বাড়ির অন্দরমহল অবধি ঢুকতে দিয়েছিল, এই সত্যিটা অস্বীকার করা যায় না। লোকটি মার অপরিচিত ছিল না, এটাও সত্যি। অতএব, বাইরের কোনো উটকো লোকের সঙ্গে মাকে জড়িয়ে পুরো ঘটনাটা সাজিয়েছিল গণেশদা, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। পুরোনো কেস ফাইল ঘেঁটে যা বুঝেছি, লোকটির পরিচয় বার করার একটা চেষ্টা করেছিল পুলিশ। কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। বাবা নিজে থেকে কেসটায় আগ্রহ না দেখাতে, পুলিশ একটা গয়ংগচ্ছ তদন্ত করে। হয়তো, তদন্ত বেশি এগোতেও বাধা দিয়েছিল বাবা। লোকটার পরিচয় একমাত্র জানত আমার মা আর জানত গণেশদা।

    বাবা চাইলেই আমাকে সাহায্য করতে পারত। প্রত্যেক ইনফর্মার যখন এই পেশায় আসে, তখন তাদের কিছু বাঁধাধরা পুলিশ অফিসার থাকে। খোঁচড়দের বেশিরভাগেরই একটা অন্ধকার জীবন থাকে। নিজেরা কাদায় না ডুবলে, সেই কাদার বাকি সরীসৃপদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তারা একাধিক শত্রু বানায়, ফিক্সড কোনো মাসিক রোজগার না থাকায় অর্থকষ্টে ভোগে। যেসব অফিসারদের তারা খবর জোগায়, তারা বিপদে আপদে ইনফর্মারদের দেখে রাখেন, আর্থিক বা সামাজিক সুরক্ষার দায় কিছুটা হলেও মেটানোর চেষ্টা করেন। গণেশদার মত ইনফর্মার নেটওয়ার্ক তৈরী করতে দীর্ঘ বছরের অধ্যবসায় আর বরফের মত ঠাণ্ডা মাথা দরকার। প্রায় কুড়ি বছর ধরে গণেশদা এই সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল, আর তার প্রথম কয়েক বছরের ইতিহাসের মধ্যে চাপা পড়ে আছে আমার মার মৃত্যুরহস্যের গিঁট। সেইসময় কোন পুলিশ অফিসাররা গণেশদার হেল্প নিতেন, অন্য কোন খবরিদের সঙ্গে গণেশদার পরিচয় ছিল, তার খোঁজ দিতে পারতেন একমাত্র বাবা। গত ছ’মাস ধরে গণেশদার সঙ্গে দেখা করার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে আমার। এদিকে, এ.টি.এসের জালে গণেশ হুঁই ধরা পড়ার পর, বাকি অফিসাররাও ওর নাম শুনলেই কোঁৎ পাড়ছেন। এমনকি এসিপি পুরকায়স্থ পর্যন্ত, মায়ের এই ঘটনার ব্যাপারে আমার কোনো সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কেঁচো খুঁড়তে যেখানে কেউটে বেরোচ্ছে, সেখানে পনেরো বছর পুরোনো তামাদি মামলায় কে আর মাথা গলায়!

    হাতের ফোনটা বেজে উঠল। কলার আইডি দেখাচ্ছে সন্দীপ শ্রীবাস্তব। প্রচুর ধৈর্য নিয়ে ভদ্রলোক এখনও মাঝে মাঝেই মেসেজ করেন। টুকটাক কথা বলি, ইচ্ছে হলে বলি না। আপনি থেকে তুমিতে গড়ালেও মধ্যের দেওয়াল তুলে রাখতেই ভালোবাসি। এখন যেমন একেবারেই কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না। ফোনটা বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেল।

    উঠে গিয়ে এবার জানালাটা খুললাম। এক ঝলক দমকা বাতাস এসে শরীর জুড়িয়ে দিল। দূরে কোথাও একটা মাদল বাজছে। আশে পাশে প্রচুর ট্যুরিস্ট এখানে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রিসোর্টের সংখ্যা। সেখানে রাতে ট্যুরিস্টদের মনোরঞ্জনের জন্য আদিবাসীরা ছৌনাচ দেখান। মদোমাতাল শহুরেরা কেউ কেউ কোমর দোলান, কেউ সেসব নাচগান লাইভ রেকর্ড করে ফেসবুকে শেয়ার করেন। এক-দুদিনের জন্য ভূমিপুত্রদের সান্নিধ্য, তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া, যা বুঝি খুব ‘ইন-থিং’। আশুতোষ বলছিল, সংস্কৃতি পর্ব মিটে গেলে নাচগানের রেট নিয়ে মনকষাকষি চলে। যে টাকায় রফা হয়েছিল, তাতে মাপা সময়ের মনোরঞ্জনে মন ভরে না অনেকসময়। ধামসা মাদলের শব্দ মিলিয়ে যায়, শহুরে হা হুতাশ জেগে থাকে।

    থানার খুব কাছেই চড়িদা গ্রাম, ছৌ নাচের মুখোশ তৈরী হয়। বিধু সেসব জায়গা আমাকে ঘুরিয়ে দেখাতে খুব উৎসাহী। দশ বছর হল আপাতভাবে আতঙ্কের পরিবেশ বিদায় নিয়েছে এখান থেকে। এগারো সালের আগে এ অঞ্চলে স্কুল, ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই তালা ঝুলত। মাওয়িস্টরা বনধ ডাকত ঘন ঘন। গোটা জেলা জুড়ে খুন, জখম নিয়মিত ঘটনা ছিল। সরকারী আধিকারিক, পুলিশ অফিসারদের অপহরণের খবর হেডলাইনে আসত বারবার। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পালটে জঙ্গলমহল শান্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি কতটা বদলেছে তা হলপ করে বলা শক্ত। অন্তত বিধুর মত স্থানীয় ছেলেরা তাই মনে করে।

    মনটা ঘুরে ফিরে ভবেশ বাউরির মৃত্যুতে চলে যাচ্ছিল। লোকটার মৃত্যুটা সাধারণ মৃত্যু নয়। খুন। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে কিনা সেটা ভাবার বিষয়। অসীম রাজনৈতিক অ্যাঙ্গল দিয়ে ভাবলেও, রাজনৈতিক খুনের মোডাস অপারেন্ডি ভবেশের খুনের সঙ্গে মিলছে না। ডেডবডি সর্বসমক্ষে রেখে মানুষের মনে ভয়সঞ্চারের চেষ্টা নেই, বরং ডেডবডি গোপনে জঙ্গলে ডাম্প করার চেষ্টা হয়েছে। বাউরির আঙুলের কালচে নীল দাগগুলো আমাকে ভাবাচ্ছে। ঝাঁঝালো গন্ধটাও। পি.এম রিপোর্টটা খুব তাড়াতাড়ি দরকার। পরশু যত সকালে সম্ভব! অ্যালার্ম দেওয়ার জন্য ফোনটার দিকে হাত বাড়াতেই আবার বেজে উঠল ফোনটা। রাত সাড়ে দশটা বাজে। শ্রীবাস্তব মালটার কী কোনো কাজ নেই! ফোনটা তুলে দু-চারটে কড়া কথা শোনাব ভেবে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ‘নিরঞ্জন সেন কলিং।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইলিয়াড – হোমার
    Next Article বিসাশন – পিয়া সরকার

    Related Articles

    পিয়া সরকার

    বিসাশন – পিয়া সরকার

    October 21, 2025
    পিয়া সরকার

    বিসাশন – পিয়া সরকার

    September 12, 2025
    পিয়া সরকার

    বৃশ্চিকচক্র – পিয়া সরকার

    September 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Our Picks

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }