Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    বৃশ্চিকচক্র – পিয়া সরকার

    পিয়া সরকার এক পাতা গল্প320 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    জেলনামা – ৩

    জেলে নিহাল সিংয়ের ক্যান্টিনে এই প্রথম এল গণেশ। নিহাল সিং আমেরিকান পাসপোর্ট হোল্ডার, সেখানে থাকাকালীন কোম্পানির বিরাট অঙ্কের টাকা জালিয়াতি করে ইন্ডিয়ায় চলে আসে। আপাতত এক্সট্রাডিশনের কেস চলছে নিহালের উপর। নিহালের উপর জেলের ক্যান্টিন চালানোর দায়িত্ব।

    ক্যান্টিনটায় ঢুকেই গণেশের মুডটা পাল্টে গেল। সিঙ্গারা, বড়াপাও, দইবড়ার সুগন্ধ আসছে ক্যান্টিন থেকে। গণেশ ওর প্লেটে চারটে পরোটা আর দুটো ছোট বাটিতে দই আর আচার নিয়ে বসল। নিহাল সিং দূর থেকে ওকে দেখে হাত নাড়াতে গণেশ বুঝল যে ওর ব্যাপারে আগে থেকেই বলে রাখা আছে।

    চক্কর থেকে কাল ওকে বলা হয়েছিল ওয়ার্ড নম্বর ৬.২ তে শিফ্ট হয়ে যেতে, আর খাবারদাবারের ব্যবস্থাও নিহাল সিংয়ের ক্যান্টিন থেকে করে নিতে। ওয়ার্ড বদল হলে, সাধারণতঃ কারারক্ষীরাই এসে খবর দেয়। এভাবে চক্করে ডেকে আলাদা করে জানানোর রেওয়াজ নেই। গণেশ হিসেব মেলাতে পারছিল না। অ্যাসিন্টার সুপারও পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। শুধু বলেছেন, “কালসে তেরা অচ্ছে দিন শুরু!”

    ক্যান্টিনের ব্যাপারটা কানাঘুষোয় শুনেছিল গণেশ। ট্যাঁকের বা খুঁটির জোর না থাকলে এখানে কেউ ঢোকে না। দিন প্রতি তিরিশ টাকা খরচা করলে এখান থেকে জেলের খাবারে বিশেষ স্বাদের ব্যবস্থা করা যায়, এমনকি খুব সামান্য অর্থের বিনিময়ে একটা হেল্পিং হ্যান্ডও পাওয়া যায়। জেলের খাবার নিয়ে ক্যান্টিনে এসে, স্বাদবদল ঘটানো বা কমন টয়লেট পরিষ্কার করে দেওয়ার কাজ সে-ই করে। সেসবের সুবিধা গণেশ নেবে কিনা এখনও বুঝে উঠতে পারেনি, যেমন বোঝেনি ক্যান্টিনের টাকাই বা কে দেবে!

    গণেশের আরও খিদে পেয়েছিল। কিন্তু নিহাল সিং অন্য কাজে ব্যস্ত দেখে আর কিছু বলল না। এখান থেকে ৬.২ নম্বর ওয়ার্ড ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। আজ সকালেই এই ওয়ার্ডে এসেছে গণেশ। ৬.২ আরেকটা মুলাইজা ওয়ার্ডের মতনই। ছ-মাসের বেশি এখানে কয়েদি থাকে না। কিন্তু যে ওয়ার্ডে সে এতদিন থেকে এসেছে, তার থেকে এর ব্যবস্থা যে অনেকটাই আলাদা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভালো খাবারের সঙ্গে সঙ্গে এখানে হাত পা ছড়িয়ে শোওয়ার জায়গাও পাওয়া যায়। পঞ্চাশ স্কোয়ার ফিট জায়গায় পঁচিশ জনের বদলে পাঁচজন ঘুমায়। একটা কম্বলের বদলে ছটা কম্বল পর পর রেখে গদি বানিয়ে, তার উপর পরিষ্কার বেড-কাভার পেতে শোওয়ার বিলাসিতা গণেশ শেষ কবে দেখিয়েছিল, মনে পড়ে না। একটা সাবান আর শ্যাম্পু সহযোগে ভালো করে স্নানটাও আজ করা গেছে। শান বাঁধানো পরিষ্কার টয়লেটে জামা কাপড় ঝুলানোর হ্যাঙ্গার পর্যন্ত আছে।

    ক্যান্টিন থেকে সেলে ফিরতে ফিরতে গণেশ নানারকম সম্ভাবনার কথা ভাবতে শুরু করল। এক হতে পারে, মদন তালপাড়ে জেলের বাইরে বেরোনোর আগে ওর একটা ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে, কিন্তু সেক্ষেত্রে মদন ওকে কেন কিছু বলে গেল না! নিঃশব্দে কাজ সেরে বেরিয়ে যাবে, মদন তালপাড়ের কলার এত নরমও তো মনে হল না। প্রথমটা যদি বাতিল হয়, তবে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটা একটু কষ্টকল্পনার, তবু একেবারে অসম্ভব নয়। বম্বে চলে আসার আগে লোকাল সোর্স ব্যবহার করে নিষ্কৃতির একটা পথ বার করার চেষ্টা করেছিল গণেশ। তখন আপাতভাবে সবাই মুখ ঘুরালেও এখন হয়তো তাদেরই কেউ…কিন্তু কেন! গণেশের মত পাঁকে পড়া হাতির জন্য কার এত মাথাব্যথা? অথবা, এমন কী হতে পারে পুলিশের মাথায় অন্য কোনো প্ল্যান ঘুরছে? আর্থার রোড জেলে ব্যুরো হ্যান্ডলার বলে সাদা পোশাকের কিছু পুলিশ আসে, তাদের কাজই হল খোঁচড়দের সামলানো। বড়সড় খবরের খোঁজে তারা মদন তালপাড়ের মত লোকের কাছেও আসে। মদনের মত লোকেদের তোয়াজে রাখে। তবে কি গণেশের কাছে আরও কোনো খবরের আশা করছে কেউ? কিন্তু পুলিশ যদি আশা করে যে গণেশকে ব্যবহার করে ইমরান আহমেদের বাকি খোঁজখবরটুকু বার করে নেবে, তবে অন্য সেলে সরালো কেন? যেখানে অনেক কয়েদি, সেখানেই তো খবরাখবরের আদানপ্রদান বেশি! নাহ! ঠিক মিলছে না। সেলের দরজার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল গণেশ। তালাবিহীন গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে চতুর্থ একটা সম্ভাবনার কথা হঠাৎ করেই মাথায় এল গণেশের। আর সেটা মনে পড়তেই বুক শুকিয়ে এল ওর।

    ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে এ.টি.এস এবং এন.আই.এর পক্ষ থেকে যে কেস রেজিস্টার্ড করা হয়েছে, তার অন্যতম প্রধান সাক্ষী হল গণেশ। দীর্ঘ ছমাসের জেরায় আহমেদ সম্পর্কে নানা তথ্য জানার জন্য গণেশকে ক্রমাগত জেরা করেছে পুলিশ। কখনও পশ্চিমবঙ্গের, কখনও মহারাষ্ট্রের পুলিশের একাধিক টিম ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কথা বলেছে গণেশের সঙ্গে। কিন্তু গণেশের মত হ্যান্ডলারের কাছে আহমেদের মত আন্তর্জাতিক মাপের অস্ত্র মাফিয়ার হালহকিকত যে থাকবে না সেটাও পুলিশের বুঝতে সময় লাগেনি। গণেশের মত আরও কিছু হ্যান্ডলারকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে নবগ্রাম ঘটনার পর পরই। যদিও ইমরান আহমেদ এখন নিজে পুলিশের ধরাছোঁওয়ার বাইরে, তবুও গণেশকে জেলে পুষে রেখে দেওয়াটা আহমেদের পক্ষে বিপজ্জনক নয় কি! রাজনীতির পাশা পাল্টাতে কদিন আর লাগে! এখন যে দল আহমেদকে সুরক্ষা দিচ্ছে, তারাই পরবর্তীতে হাত তুলে নিতে পারে। তখন এই কেসটা কাঁটার মত গলায় বিঁধে থাকবে আহমেদের। হয়তো তাই…এভাবে সবার থেকে আলাদা করে দেওয়া হল গণেশকে। হয়তো সবার মাঝে কাজ হাসিল করার থেকে নিরুপদ্রবে গণেশকে সরিয়ে দেওয়া সহজ। হয়তো…হয়তো এই সেলের কয়েদিদের মধ্যেই কেউ…গণেশ চারপাশে একবার তাকিয়ে দেখে। বেশিরভাগই দুপুরের খাবার খেয়ে গড়াচ্ছে, দু তিনজন কোনায় বসে তাস খেলছে। যত ভাবল, চার নম্বর সম্ভাবনাটাই গণেশের মাথায় দুসেরী ইঁটের মত চেপে বসতে লাগল। সারাটা জীবন অনেক শত্রু তৈরি করেছে সে। পুলিশ অথবা বিভিন্ন গ্যাংয়ের লোকজনদের সঙ্গে কাবাডি কাবাডি খেলেই ওর সারাজীবন কেটেছে। খেলাগুলো খেলতে খেলতে নিজের উপর অসীম আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। যাই হয়ে যাক ঠিক সামাল দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে। সুমন্তর মত ছেলেটাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের ছেলের মত গড়ে তুলছিল ও। একমাত্র ভাই, কীভাবে যেন গণেশকে একেবারেই বিশ্বাস করত না। পরিবারপরিজন থেকে দূরে থাকার জন্য শাসিয়েছিল। সুমন্তকেই তাই নিজের মত করে গড়ে তোলার একটা জেদ তৈরি হয়েছিল গণেশের মনে। রোগাপাতলা শ্যামলা ছেলেটাকে দেখলে ওর না জানি কেন নিজের শেষ কৈশোরের কথা মনে পড়ে যেত। সহায়সম্বলহীন শহরে একা একা ঠোক্কর খেয়ে বেড়াচ্ছে যে। ওকে তাই গুরুবিদ্যাটুকু উজাড় করে দিয়েছিল গণেশ। শিষ্যের সেই যোগ্যতাও ছিল। নিখুঁত হিসাব, ঠাণ্ডা মাথা, পুলিশকে কতটুকু খবর ফিল্টার করে জানাতে হবে সেসব বোঝার দক্ষতা, দলের বাকিদের সঙ্গে সংযোগ। শেষের দিকে গণেশ ঠিক করে নিয়েছিল, ধীরে ধীরে সবটাই সুমন্তর হাতে ছেড়ে দেবে। ইদানীং ব্যবসার ক্যাঁচালগুলো আর সেভাবে মাথাতেও নিচ্ছিল না ও। আর সেই ছেলেই, নির্দ্বিধায় গণেশকে পুলিশের হাতে সঁপে দিয়ে গেল! গোপন আস্তানা থেকে জেলে আসা ইস্তক এ কথা কোনোমতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না ওর। দলের সবাই এখন আন্ডারগ্রাউন্ড, পুলিশও সুমন্ত সম্পর্কে উদাসীন। একটা নাম-কে-ওয়াস্তে ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে বটে, কিন্তু সিরিয়াসলি কেউ ওকে খুঁজছে বলে মনে হয় না। নাহলে যে মুল্লুকেই থাকুক, এতদিনে কি ধরা পড়ত না সে! এমনকি ইমরান আহমেদের এত বড় ব্যবসার অর্ধেক মাল হাপিশ করে সে যে এখনও বেঁচে আছে, এটাই বা কম আশ্চর্যের কী!

    সেলের দরজা ঠেলে নিহাল সিং ঢুকল। ক্যান্টিন আপাতত বন্ধ। আবার রাতের খাবারের সময় খুলবে। নিহাল সিংকে দেখে সাধারণ কয়েদির মত মনে হয় না। বিশাল লম্বা চওড়া, মাখনের মত গায়ের রঙ, কাঁধছোঁওয়া চুল পনিটেইল করে বাঁধা, চওড়া বাহুভর্তি কালচে নীল ট্যাটু। নিহাল গণেশের দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে নিজের কোনাটায় চলে গেল। বিশ্রামের সময় এখন। একা গণেশের চোখেই স্বস্তির ঘুম নামছিল না। একটা আবর্তের মত, জীবন ওকে আবার একই জায়গায় এনে ফেলেছে। সেবার গণেশ ফিরেছিল অন্য মানুষ হয়ে, এবার কি জীবন ওকে ফেরার সুযোগ দেবে?

    গরাদের ফাঁক দিয়ে একচিলতে আকাশ দেখা যাচ্ছিল। কাল জেলে হোলির উৎসব। বাইরে ‘বন্দি’ পড়ে যাওয়ার আগের শেষ ব্যস্ততা চলছে। মিষ্টি-মণ্ডল, আবীর, তরল রং কিছুর কমতি নেই। গণেশের সেদিকে মনোযোগ ছিল না। ও আকাশের দিকেই তাকিয়ে ছিল।

    শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় একটা বেগুনি আভা থাকে, হিমেল, ধূসর রাতের পূর্বাভাস বয়ে আনে। গণেশের চোখ এই বেগুনি আলোর গাঢ়ত্ব মাপতে পারে। চোখ বন্ধ করলেও আলোর বিন্দুরা মাথায় দপদপ করে ওঠে। সেই জ্বলতে নিভতে থাকা বিন্দুগুলো দেখতে দেখতে, একুশ বছর আগের আবছা হয়ে আসা এক শীতের রাতের কথা মনে পড়ে গেল ওর।

    .

    ৫ই ডিসেম্বর, ১৯৯৯

    রাত প্রায় আড়াইটা। ডায়মণ্ডহারবার রোডের যে ফালিটা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের হাসপাতাল ছাড়িয়ে সোজা ঠাকুরপুকুর থানার দিকে চলে গেছে, তার থেকে বাঁদিকে নেমে একটু এগোলেই, পুরোনো ট্রাম ডিপোর মাঠ। কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি নারকোটিক সেলের ডিসিপি অনুজ শর্মা, সাব-ইন্সপেক্টর রক্তিম পাল, এবং দু’জন কনস্টেবল সেখানে জিপে বসে মশার কামড় খাচ্ছিলেন। আলফা বিটা কিছুক্ষণ আগেই ওয়ারলেসে একটা ট্রাকের কথা জানিয়েছে। কিন্তু ট্রাকটা পৈলান থেকে জোকার দিকে আসার বদলে আমতলার দিকে চলে যাচ্ছে। আলফা বিটা একটা বটল গ্রীন অ্যাম্বাসাডরে চেপে ট্র্যাক রাখছে ট্রাকটার। সম্পূর্ণ উল্টো দিকে চলতে থাকা এই ট্রাকটা নিয়ে ধন্ধে পড়ে গেছেন অফিসারেরা।

    অনুজ শর্মা ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে সাব-ইন্সপেক্টরকে বললেন, “গণেশের খবর ঠিক তো? নাকি আমরা ভুল ট্রাককে ফলো করছি? নাকি ওরা বুঝে গেছে যে আমরা একটা ফাঁদ পেতেছি?”

    “গণেশের ফোন আসার জন্য অপেক্ষা করছি স্যার। আসলে কাছাকাছি বুথ না পেলে তো ফোন করতে পারবে না।”

    গণেশ হুঁইয়ের খবরের উপর ভিত্তি করে এর আগেও কটা ড্রাগ র‍্যাকেট ধরেছে কলকাতা পুলিশ। এবারেরটাও সিওর শট খবর। মেদিনীপুরের একটা আফিম র‍্যাকেটকে ভালো ডিল করিয়ে দেওয়ার অছিলায় ডায়মন্ডহারবারে ডেকে পাঠিয়েছে গণেশ। খবর আছে কয়েক কোটির ড্রাগ বাজেয়াপ্ত হতে পারে আজ। এই ধরণের প্ল্যানগুলোয় পুলিশের হ্যাপা কম থাকে। পাখি নিজেই হেঁটে এসে ফাঁদে পড়ে।

    আলফা বিটার ওয়ারলেস রেঞ্জের বাইরে চলে গেছে। অনুজ শর্মা অধীর হয়ে উঠছিলেন। .38 টাইটান টাইগার রিভলভারটাকে একবার চেক করে নিলেন। আর ঠিক তখনই, গণেশের ফোনটা এল। একটা অ্যাম্বাসাডরকে ট্রাকটার পিছনে আসতে সে দেখেছে।

    “অ্যাম্বাসাডরটা পুলিশেরই গণেশ। সাদা পোশাকের একজন আছেন। লালবাজারেরই লোক।”

    “তাহলে ওরা হয়তো বুঝতে পেরেছে স্যার। সন্দেহ হয়েছে বলেই গাড়ি উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে।”

    অনুজ শর্মা কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর বললেন, “তুমি এক কাজ করো গণেশ। আলফাবিটার ওয়ারলেস রেঞ্জের বাইরে। সিগন্যাল পাচ্ছি না। তুমি তোমার বাইকটায় ওদের ফলো করো, থামাও আর বলো ট্রাকটার পিছু না নিতে। বদলে তুমি ট্র্যাক রাখো। আর বুথ পেলেই ফোনে জানাও।”

    ফোনটা রেখে অনুজ শর্মা আমতলা থানার এস.এইচ.ওকে একটা ফোন লাগালেন। যদি পাখি উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তবে ওদিক থেকে ফোর্স পাঠাতে হবে। কিন্তু তার আগে অন্য একটা সাদা পোশাকের দল ট্রাকটার পিছনে পাঠানোর দরকার। দলটা তৈরিই ছিল। অনুজের নির্দেশ পাওয়া মাত্র বেরিয়ে পড়ল। শুধুমাত্র গণেশের উপর ভরসা করা যায় না, তাছাড়া ওর বাইকে কতটা পেট্রোল আছে জানেন না অনুজ। মাঝ রাস্তায় থেমে গেলে পাখি ফুরুৎ। সবরকম সম্ভাবনার কথা ভেবে আগের দিন রাতেই, এলাকার তিনটে থানাকে অ্যালার্ট করা হয়ে গেছে অনুজের। সরশুনা, ঠাকুরপুকুর আর আমতলা। নাইট পেট্রোলিং বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। তিনটে থানা থেকে তিনটে আলাদা আলাদা ইন্টারসেপশন পার্টি তৈরী করা হয়েছে। তাদের কাজই হল ট্রাকটার অপেক্ষা করা এবং ওয়ারলেসে খবর পেলেই সময়সুযোগ মত ঝাঁপিয়ে পড়া

    ওয়ারলেসটা আবার বাজছিল। আমতলা থানার দলটার মেসেজ। ওরা বেশ কিছুটা দূর থেকে অন্য একটা মারুতি ওমনিতে চেপে ট্রাকটাকে খেয়াল করছে। অ্যাম্বাসাডরটাকে আর দেখা যাচ্ছে না। তার মানে আলফাবিটাকে খবর দিতে সক্ষম হয়েছে গণেশ। ট্রাকটা এখন একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছে। অ্যাম্বাসাডরটা যে নেই সেটা বোধহয় ওরা লক্ষ করেছে। ওদের সঙ্গে গণেশের কথা হয়ে আছে, ওরা পুরোনো ট্রাম ডিপোর মাঠে ট্রাক ভিড়াবে। একজনকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে দালাল সাজিয়ে মাসখানেক ধরে কথা চলছে। তার সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে আগেই কথা হয়ে আছে। আজ শুধু টাকা নিয়ে মাল তুলে দিলেই ডিল ক্লোজড।

    ওয়ারলেসে আবার সিগন্যাল এল। ট্রাকটা আমতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে উল্টোদিকে জোকার দিকে না ঘুরে ডানদিকে মীরপুরের দিকে যাচ্ছে। মীরপুরের দিকটা ঘিঞ্জি। দু’ দুটো মসজিদ আছে। ট্রাকটা ওদিক থেকে তল্লাট ছেড়ে বেরিয়েও যেতে পারে আবার গাড়ি ঘুরিয়ে জোকার দিকেও আসতে পারে। তল্লাট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে যেন যে কোনো মূল্যে থামানো হয়, ওয়ারলেসে এমনই নির্দেশ দিলেন অনুজ।

    তিনটে ইন্টারসেপশন পার্টিকেই, ট্রাকটার একটা বিবরণ আর ড্রাগ লুকিয়ে রাখার সম্ভাব্য জায়গার কথা জানিয়েছেন তিনি। এই ধরণের ট্রাকগুলোয় ড্রাইভারের কেবিনের পিছনের কাঠের পার্টিশনটার সঙ্গে সমান্তরাল একটা তক্তা লাগানো থাকে। বাইরে থেকে দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই। দুটো তক্তার মাঝামাঝি জায়গায় প্যাকেট প্যাকেট আফিম সাজানো যেতে পারে। মুখোমুখি বোঝাপড়া হলে, ঐভাবেই ট্রাকটাকে সার্চ করতে বলেছেন অনুজ। কিন্তু সবথেকে সুবিধা হয়, গণেশের সঙ্গে হওয়া আগের কথাবার্তার মতো, ট্রাকটা ট্রামডিপোর মাঠে নিজে থেকেই এলে। ক্যাজুয়ালিটি বা গোলাগুলি খরচ বা আসামির পালানোর সম্ভাবনা তিনটেই তাতে কমে। বাধ্য না হলে তাই গুলি খরচা করতে নিষেধ করেছেন অনুজ।

    আলফা-বিটা আর গণেশ বহুক্ষণ ধরে রাস্তায়। গণেশের অবস্থা সবথেকে করুণ, কারণ সে নিজেই নিজের স্কাউট, ড্রাইভার এবং ট্রাবলশুটার। যদি ঠিকঠাক বুঝে থাকে, তবে ট্রাকটার গতিপথ পাল্টাতে দেখলে সে নিজেও বাইক ঘুরিয়ে জোকার দিকে আসার চেষ্টা করবে।

    ওয়ারলেসে এবার আলফাবিটার কল ঢুকল। ট্রাকটা মীরপুর থেকে জোকার দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। পার্টি তার মানে নিঃসন্দেহ হয়েছে। গণেশের তাহলে এক্ষুণি জোকার দিকে চলে আসার দরকার। ট্রামডিপোর মাঠে গণেশকে না দেখলে পার্টির সন্দেহ বাড়বে। ওদের কাছে কী আর্মস আর অ্যামিউনিশন আছে কারুরই জানা নেই। ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে অনুজ আরেকবার ছটফট করে উঠলেন। মীরপুর থেকে এখানে পৌঁছাতে কুড়ি মিনিটের বেশি লাগার কথা না। গণেশ এখন কোথায় আছে, কী করছে সেটা জানা খুব দরকার।

    ঠাকুরপুকুর আর সরশুনা থানার দলটাকে ওয়ারলেসে সতর্ক করলেন অনুজ। ট্রামডিপোর মাঠের দিকে চলে আসতে বলে দিলেন দুটো দলকে। আরও একটা নির্দেশ গেল অনুজের তরফ থেকে— গণেশকে দেখলেই যেন তাকে একটা খবর জানানো হয়।

    ঠিক পনেরো দিন আগে এস.আই রক্তিম পাল গণেশের কাছ থেকে একটা ফোন পায়। উত্তেজিত স্বরে গণেশ জানায়, “চিকেন প্রায় তৈরি, এবার টেবিলে ফেলার দেরি।” গণেশকে বেশ কিছু দিন ধরেই ছিপ ফেলে রাখতে বলা হয়েছিল। ছিপে এবার মাছ গাঁথতেই হবে, এমন একটা জেদ চেপেছিল লালবাজারের অফিসারদের মাথায়।

    “হ্যালো…হ্যালো…আলফাবিটা কলিং…আলফাবিটা…চিকেন ইজ অ্যাবাউট টু ক্লাক…”

    কলটা ঢোকার দশ মিনিটের মধ্যে জোরালো হেডলাইট দেখা গেল রাস্তার মুখটায়। তীব্র আলোর সঙ্গে চোখ অভ্যস্ত হতেই ট্রাকের অবয়বটা চোখে পড়ল। দুজন অফিসার তাদের রিভলবারগুলো হাতে নিলেন। ইন্টারসেপশন পার্টির গাড়িগুলো এখনও এসে পৌঁছায়নি এখানে। অনুজ ঠিক করলেন জিপ থেকে নেমে সরাসরি চার্জ করবেন। অন্য আর কোনো উপায় নেই। আর ঠিক তখনই, ম্যাজিকের মত ট্রাকটার উল্টো দিক থেকে একটা বাইক এসে দাঁড়াল রাস্তায়। অনুজদের জিপ থেকে নামার আগেই গণেশ হুঁই বাইক থেকে নেমে হাত নাড়িয়ে ট্রাকটাকে থামাল। অনুজের জিপ থেকে এস.আই রক্তিম পাল নেমে এগিয়ে গেলেন গণেশের দিকে। হাতে একটা ফেক কারেন্সির ব্যাগ। রক্তিমকে দালাল হিসেবে পরিচয় করাবে গণেশ। তারপর মাল দেখানোর সময় রক্তিম সুযোগ বুঝে ওদের দলের পাণ্ডাকে কব্জায় নিয়ে নেবেন এবং একইসঙ্গে অনুজরা চারদিক থেকে ঘিরে ধরবেন ট্রাকটাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই একই প্ল্যান বারবার রিভাইজ করা হয়েছে।

    নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে অনুজ এবং তার দল সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে শুরু করলেন।

    ট্রাকে মাত্র দুজন। ড্রাইভার গাড়িতে বসে রইল, আর এক জন একটা ছোট ব্যাগ হাতে নেমে এল। গণেশের কাছে একটা রামপুরী ছিল। তার ডগা দিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগের পেটটা ফাঁসিয়ে হাতে একটু স্যাম্পল নিয়ে নাকের গোড়ায় এনে শুঁকে বলল, “বাহ! দারুণ! যা বলেছিলাম পুরোটা এনেছ তো?”

    লোকটা মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ। তোমার লোক কোথায়?”

    “এই তো!” গণেশ ঘুরে পিছন দিকে দেখালো। অন্ধকার ফুঁড়ে রক্তিম পাল দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে। হাতে ব্যাগটা নিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল রক্তিম। আর সময় নেই, এবারই রিভলবারটা বার করে লোকটাকে কব্জা করার পালা। গণেশ আর অনুজ প্রতীক্ষা করে আছেন অনেকক্ষণ থেকে। রক্তিম না জানি কেন ইতস্তত করছিলেন। অনুজ শর্মা হিসাব করছিলেন সময়ের…

    এক সেকেন্ড…দুই সেকেন্ড…তিন সেকেন্ড…পাঁচ সেকেন্ড…

    অবশেষে রক্তিম তার ব্যাক পকেট থেকে রিভলভার বার করে লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে তাক করলেন। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। লোকটা ক্ষিপ্রগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রক্তিমের উপর। রিভলভারটা কেড়ে নিয়েছে ওর হাত থেকে। অনুজ আর বাকি কনস্টেবলরা এগিয়ে গিয়ে ঘিরে ধরার আগেই রক্তিমের মাথায় ঠেকে গেছে রিভলভার। লোকটা শক্তপোক্ত হাতের বাঁধনে রক্তিমের গলাটা পিছন থেকে এমনভাবে ফাঁসিয়ে রেখেছে যে রক্তিমের কোনো প্রতিরোধ কাজ করছে না। অনুজ আর গণেশের থেকে দু হাত দূরেই লোকটা অথচ পরিস্থিতি এমনই, ওরা এক পাও এগোলে রক্তিমের উপর গুলি চলে যাবে। ইতিমধ্যে ট্রাকটা স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে। লোকটাকে ফেলেই মাল নিয়ে চম্পট দেবে। অনুজ পরপর ফায়ার করে চাকা ফাঁসিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটা গোত্তা খেয়ে মাঠের ধারের পাঁচিলে ধাক্কা মারল। ড্রাইভারের সিট থেকে ড্রাইভার লাফিয়ে নেমে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ানো শুরু করতেই কনস্টেবল দুইজন দৌড়ে গেল লোকটার পিছনে।

    রক্তিমের সঙ্গে লোকটার ধস্তাধস্তি বাড়ছিল। অনুজ শর্মা নিজেও ইতস্তত করছিলেন। তিনি গুলি চালিয়ে দিলে লোকটাও ঘাবড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালাবে। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে রয়েছে রক্তিমের মাথা। লোকটার শক্ত পেশীবহুল হাত ওর গলায় এমন ভাবে চেপে বসেছে যে গুলি খেয়ে না হোক, দমবন্ধ হয়েই মরে যাবে রক্তিম। ওর চোখমুখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল। লোকটা রিভলভারের নলটা রক্তিমের কপালে ঠেকিয়ে চিৎকার করে বলল, “এগোলেই দানা খালি করে দেব মাদারচোত।” অনুজ বুঝতে পারছিলেন খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে হবে। নাহলে তাঁর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে লোকটা রক্তিমের কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে পালিয়ে যাবার পথ পেয়ে যাবে। রক্তিম ছটফট করতে করতেই এবার ডান হাত দিয়ে লোকটার রিভলবার ধরা হাতটাকে ধরে মাটির দিকে বাঁকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু লোকটার হাতের জোরের কাছে না পারল না। লোকটার মুখের পেশি কঠোর হচ্ছিল। রক্তিমের চেষ্টাকে বাধা দিতেই দিতেই রিভলবারের নলটাকে আরও মাথার কাছে নিয়ে এল লোকটা। অনুজ একটা চিৎকার করে বলে উঠতে গেলেন, “ডোন্ট শ্যুট…গুলি না…গুলি না…কিন্তু কথাগুলো বলে ওঠার আগেই আর একটা হাত এসে তার হাত থেকে রিভলভার কেড়ে নিয়ে ট্রিগার টিপে দিল। গুলিটা গিয়ে বিধল লোকটার বুকে। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে লোকটা হাতের ফাঁস আলগা করে দিল, তারপর কাটা কলাগাছের মত মাটিতে পড়ে গেল গোটা শরীরটা। গুলিটা চালিয়েই গণেশ হুই থরথর করে কাঁপতে লাগল। রক্তিমকে বাঁচাতে গিয়ে চরম দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেছে সে। রক্তিম ততক্ষণে মুক্তি পেয়ে দম নিচ্ছেন। লোকটা মাটিতে পড়ে আছে ঠিকই কিন্তু তার হাতের মুঠো থেকে রক্তিমের রিভলভার খসে পড়ে যায়নি। বাঁ হাত দিয়ে কাঁপতে থাকা ডান হাত ধরে লোকটা আবার গুলি চালানোর চেষ্টা করল। ততক্ষণে রক্তিম আপার হ্যান্ড পেয়ে গেছেন। গণেশের কাছ থেকে রিভলভার নিয়ে সে পরপর দুবার গুলি চালিয়ে দিল লোকটার উপরে। একটা বুকে, আরেকটা মাথায়। দম নেওয়ার একটা বিকট চেষ্টা করে, ব্যর্থ হয়ে লোকটা অসাড় হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।

    আর ঠিক তখনই, অনুজ শর্মার ওয়ারলেসে কল এল একটা। ড্রাইভার পালিয়েছে। জোকার বিস্তীর্ণ ফাঁকা এলাকায় সে কোথায় কীভাবে অন্ধকারে গা ঢাকা দিল, ধরতে পারেনি দুই জন কনস্টেবল।

    খবরটা শুনতেই গণেশের মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। এই প্রথম একটা অপারেশনে সরাসরি সামনে এল সে। এর আগে সে পুলিশকে সাহায্য করেছে আড়াল আবডাল থেকে। এতদিন পর্যন্ত সে শুধুই পুলিশের খোঁচড় ছিল, এই প্রথমবার তার হাতে খুনোখুনির রক্ত লাগল। অন্ধকার জগতের সীমানায় দাঁড়িয়ে, পুলিশকে দিয়ে সে একাধিক ক্রিমিনালের খুন করিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাউকে মারতে নিজে এই প্রথমবার রিভলবার তুলে নিয়েছে।

    মাটিতে পড়ে থাকা মৃত লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকল গণেশ। লোকটার হলুদ টি-শার্ট রক্তে ভেসে গেছে। মাথায় গুলি করার ফলে মুখমণ্ডলের চেহারাটাও বিকৃত। বুলেটের গুলি মাথার খুলি ভেদ করে চলে যাওয়ার সময় কপালে বিরাট ফুটো করে গেছে।

    “ড্রাইভারটা পালাল কীভাবে স্যার! আমার বিরাট বাঁশ হয়ে গেল। এদের গ্যাংটা আমাকে মার্ক করে রাখবে। আর সুযোগ পেলেই ঠুকে দেবে।” গণেশ নার্ভাসভাবে নিজের পকেট হাতড়ে সিগারেট খুঁজে কাঁপা হাতে জ্বালিয়ে জোরে জোরে টানতে লাগল। গণেশের পালস দ্রুতগতিতে চলছিল। শীতের রাতেও কুলকুল করে ঘাম দিচ্ছিল সারা শরীরে।

    “আরে কিচ্ছু হবে না। আমরা আছি তো। চাপ নিস না।” রক্তিম গণেশের পিঠ থাপড়িয়ে সাহস দিয়ে বললেন। চারপাশের পরিবেশ ক্রমশ পাল্টাচ্ছিল। ইন্টারসেপশন পার্টির মারুতি ভ্যানের হেডলাইট দেখা যাচ্ছিল। লালবাজারের সেই অফিসারও তাঁর জিপে এসে পৌঁছেছেন। অনুজ শর্মার ওয়ারলেস বেজে উঠছিল ঘন ঘন। ট্রাকটার এবার খানাতল্লাশি হবে। ড্রাইভার-কেবিন আর ছাদের সমান্তরালে কোনো কম্পার্টমেন্ট করা আছে কিনা ভালো করে দেখতে নির্দেশ দিচ্ছিলেন অনুজ। চারিদিকে এত কলরবের মধ্যেও গণেশের বুকের মধ্যে একটা ভয় হামাগুড়ি দিয়ে বেয়ে বেয়ে উঠছিল। চড়া হেডলাইটের আলোর মধ্যে একা দাঁড়িয়ে গণেশ খেয়াল করতে পারলো না, অনেক দূর থেকে একজোড়া চোখ ওকে তীব্র দৃষ্টিতে মেপে চলেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইলিয়াড – হোমার
    Next Article বিসাশন – পিয়া সরকার

    Related Articles

    পিয়া সরকার

    বিসাশন – পিয়া সরকার

    October 21, 2025
    পিয়া সরকার

    বিসাশন – পিয়া সরকার

    September 12, 2025
    পিয়া সরকার

    বৃশ্চিকচক্র – পিয়া সরকার

    September 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Our Picks

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }